hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলাম

লেখকঃ মাওলাই মোস্তাফা বারজাওয়ী

শরী‌‘আর দৃষ্টিকোণে পরিবেশের প্রতি অনাচার বলতে কী বুঝায়? এর প্রকারগুলো কী? এবং ইসলাম কীভাবে মানুষের আচরণকে শুদ্ধ ও পরিশীলিত করেছে?
বিশৃঙ্খলা: বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে পরিবেশগত বিশৃঙ্খলা একটি ব্যাপক শব্দ। দূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘনই এর আওতাভুক্ত।

বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে পরিবেশের ওপর অনাচার এমন একটি ব্যাপক ধারণা যা দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘনকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনাচারের মধ্যে রয়েছে শুষ্কতা তথা মরুকরণ। ইদানীং যা ভূপৃষ্ঠে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কর্তৃক ভূমির অনিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজের পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। তদুপরি দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে শুষ্ক ভূমি ও মরুকরণ বৃদ্ধি পাবে।

ইসলাম পরিবেশ বা প্রকৃতিতে যে কোনো অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিকভাবে পরিবেশের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করে তাও নিষিদ্ধ করেছে। চাই তা যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ নিক্ষেপের মাধ্যমে হোক, যা মানুষের বসবাসের পৃথিবীর সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলোকে বিনষ্ট করে। কারণ পরিবেশের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সরাসরি সম্মিলিত মানবতার ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের হুমকি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]

“নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ০৯-১০]

নিচের বাণীটির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরঅবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,

﴿وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيُفۡسِدَ فِيهَا وَيُهۡلِكَ ٱلۡحَرۡثَ وَٱلنَّسۡلَۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَسَادَ ٢٠٥ ﴾ [ البقرة : ٢٠٥ ]

“আর যখন সে ফিরে যায়, তখন যমীনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফাসাদ ভালোবাসেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [ البقرة : ٦٠ ]

“তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর এবং পান কর আর তোমরা ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৬০]

বরং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রবণতার মৌলিক নিয়ম হলো আল্লাহর টেনে দেওয়া সীমা অতিক্রম করা, যা ধ্বংস ও বিনাশের দিকে নিয়ে যায়। বরং তা মানুষের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যদি না আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে না রাখেন। এ কথাই বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَعْلاَهَا ، فَكَانَ الَّذِى فِى أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِى أَعْلاَهَا ، فَتَأَذَّوْا بِهِ ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى ، وَلاَ بُدَّ لِى مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَ أَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ»

“আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পালনকারী ও তাঁর আল্লাহ নির্দেশ অমান্যকারীর দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তিদের ন্যায় যারা একটি বড় জাহাজে আরোহণ করেছে। লটারির মাধ্যমে জাহাজের তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতঃপর কিছু লোক জাহাজের উপর তলায় আর কিছু লোক জাহাজের নিচ তলায় অবস্থান নিয়েছে। নিচ তলার লোকদের যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন তারা ওপরে আসে এবং ওপর তলায় অবস্থানকারীদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে।  তারা ভাবল যদি আমরা আমাদের (নিচের) অংশে ছিদ্র করে নেই (যাতে ওপরে যাওয়ার পরিবর্তে ছিদ্র থেকেই পানি নেওয়া যায়) এবং আমরা উপরের লোকদের কষ্ট না দেই (তবে কতই না উত্তম হয়)। এমতাবস্থায় যদি উপরস্থ লোকেরা নিচের লোকদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেয় এবং তাদেরকে তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত না করে (আর তারা ছিদ্র করে ফেলে) তবে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা তাদের হাত ধরে ফেলে (যে, ছিদ্র করিতে দেব না) তবে তারা নিজেরাও বাঁচবে এবং অন্য মুসাফিরগণও বেঁচে যাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৮৬।]

অপব্যয় ও অপচয়: এ উভয় নিন্দনীয় প্রবণতাকে সত্য ধর্ম ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আর এটিই বিশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলাকারীদের শিক্ষার মূল অংশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿...... وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [ الاسراء : ٢٦، ٢٧ ]

“.......আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৬-২৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ ، وَلاَ مَخِيلَةٍ» .

“তোমরা আহার করো, পান করো, পরিধান করো এবং সদাকা করো, অপচয় ও অহংকার করা ছাড়া”। [সহীহ বুখারী, পোশাক অধ্যায়।]

‘তালাওউছ’ বা দূষণের আভিধানিক অর্থ: লিসানুল আরব নামক (আরবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য) অভিধানে ‘লাওছ’ শব্দের অধীনে বলা হয়েছে, ‘তালাওউছ’ শব্দের অর্থ মলিন বা কদর্য হওয়া। যেমন বলা হয়, খড়ের দ্বারা মাটি এবং চুন দ্বারা বালি দূষিত হয়েছে। বলা হয়, সে তার কাপড়কে মাটি দ্বারা দূষিত করেছে। আরও বলা হয়, পানি দূষিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দূষিত করার অর্থ কদর্য করা। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরব: ৩/৪০৮-৪০৯।]

‘তালাওউছ’ বা দূষণের পারিভাষিক অর্থ: মানুষ কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশ অভ্যন্তরে কোনো শক্তি বা দ্রব্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটানো, শেষাবধি যা ক্ষতিকর প্রভাব রাখে এবং মানুষের সুস্থতাকে হুমকির সম্মুখীন করে। যা জীবনীশক্তির উৎসসমূহ কিংবা পরিবেশের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায়। পরিবেশের সঠিক উপভোগকে করে প্রভাবিত। এবং পরিবেশের অন্য বৈধ ব্যবহারগুলোকেও করে বাধাগ্রস্ত। [মুহাম্মদ মারছি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১০৫।]

দূষণ বলতে আরও বুঝায়: পরিবেশের কিছু উপাদানকে স্তূপীকৃত করার প্রক্রিয়াকে যা এ পরিবেশ বা তৎসংশ্লিষ্ট নানা জীবন্ত উপাদানকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। যেমন, মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ। [ড. আবদুল কারীম আলী আবদু রাব্বিহী, ‘মুকাদ্দামা ফী ইকতিসাদিয়্যাতিল বিআ’, সিলসিলাতু আলামিন বিআ’।]

সাধারণভাবে দূষণ বলতে বুঝায়: পরিবেশ মণ্ডলের নান্দনিকতায় বিকৃতি ঘটানো। চাই তা বিশৃঙ্খলা, অপচয়, অপব্যয়, বিনাশ ও কলুষিত বা যা-ই করার মধ্য দিয়েই হোক না কেন।

তবে পরিবেশগত ভারসাম্য পরিভাষাটি যাকে অধিকাংশ বাস্তুবিদই মনে করেন একটি সমসাময়িক অর্থ, এর প্রচলন দুই বিশ্বযুদ্ধের পর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই আহ্বান এ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, যা আমাদের মহান শরী‘আত প্রবর্তন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী:

﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [ المائ‍دة : ٣٢ ]

“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩২]

এখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্র নামক ওই দেশটির প্রতি দৃষ্টি দিন যারা নিজেদেরকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবী করে এবং বানোয়াট ও অসত্য তথ্যের মাধ্যমে তা প্রচারের চেষ্টা করে। হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের দিক থেকে এই দেশটিই কিনা সারা বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। ক্যাটরিনা নামক ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার বর্ণবাদী মানসিকতার কুৎসিত চেহারা তুলে ধরেছে। এ ঝড়ের সময় কৃষ্ণাঙ্গদের জড়ো করা হয় স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে। পক্ষান্তরে শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ ও অক্ষত এলাকায়।

ঠিকই বলে কোথায় স্বর্গ আর কোথায় মর্ত্য। কোথায় আসমানী ধর্ম আর কোথায় শয়তানী ধর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَاۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلۡكَٰفِرِينَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٢٢﴾ [ الانعام : ١٢٢ ]

“যে ছিল মৃত, অতঃপর আমরা তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মতো যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না? এভাবেই কাফিরদের জন্য তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করা হয়।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]

আর কবি কত চমৎকারই না বলেছেন,

أَلَمْ تَرَ أَنَّ السَّيْفَ يَنْقُصُ قَدْرُهُ

إِذَا قِيلَ إِنَّ السَّيْفَ أَمْضَى مِنَ العَصَا

‘তুমি কি দেখ নি তরবারির মর্যাদা কমে যায়,

যদি বলা যে সে লাঠির চেয়েও বেশি কার্যকর।’

শুধু আয়াতই নয় একাধিক হাদীস রয়েছে শান্তি ও পরিবেশগত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এসব জানার পর পাশ্চাত্য ও সংগঠিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? ইসলাম কি সন্ত্রাসের ধর্ম নাকি শান্তির? আর জীবনের নিরাপত্তা এবং নূর ও হিদায়াতের দীনের প্রচার ভূপৃষ্ঠের সকল মানুষের মধ্যে নাকি দৃষ্টিশক্তিবান অন্ধদের মধ্যে?

রাবা‘ ইবন রাবী‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى غَزْوَةٍ فَرَأَى النَّاسَ مُجْتَمِعِينَ عَلَى شَىْءٍ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « انْظُرْ عَلَى مَا اجْتَمَعَ هَؤُلاَءِ؟ » . فَجَاءَ فَقَالَ : عَلَى امْرَأَةٍ قَتِيلٍ فَقَالَ : « مَا كَانَتْ هَذِهِ لِتُقَاتِلَ » . قَالَ وَعَلَى الْمُقَدِّمَةِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « قُلْ لِخَالِدٍ لاَ تَقْتُلَنَّ امْرَأَةً وَلاَ عَسِيفًا» .

“এক (তাবূক) যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। এ যুদ্ধে তিনি তাঁর সাহাবীদের কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে একত্রিত হতে দেখলেন। তিনি একজনকে পাঠালেন এবং বললেন, ‘এরা কিসের ওপর এভাবে একত্রিত হয়েছে?’ তিনি এসে বললেন, একজন নিহত মহিলার সামনে। তিনি বললেন, ‘এ তো হত্যাযোগ্য ছিল না।’ বর্ণনাকারী বলেন, অগ্রবর্তী দলে ছিলেন খালেদ ইবন অলীদ। তিনি তাঁর কাছে একজনকে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, ‘তুমি খালেদকে বলবে সে যেন কোনো নারী বা শ্রমিককে হত্যা না করে।” [আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৬৬৯; বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, হাদীস নং ১৮৫৭০।]

এদিকে মুতার যুদ্ধে রওনা হবার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন:

«وَلاَ تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلاَ صَغِيرًا ضَرَعًا وَلاَ كَبِيرًا فَانِيًا وَلاَ تَقْطَعُنَّ شَجَرَةً وَلاَ تَعْقِرُنَّ نَخْلاً وَلاَ تَهْدِمُوا بَيْتًا» .

“তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না, আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩১।]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ إذَا بَعَثَ جُيُوشَهُ ، قَالَ : لاَ تَقْتُلُوا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বাহিনী প্রেরণ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।” [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়।]

আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। তাঁর খিলাফতকালের প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণকালে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন,

«يا أيها الناس، قفوا، أوصيكم بعشر فاحفظوها عني : لا تخونوا ولا تغلوا ولا تغدروا، ولا تمثلوا ولا تقتلوا طفلاً صغيراً، ولا شيخاً كبيراً ولا امرأة، ولا تعزقوا نخلاً ولا تحرقوه، ولا تقطعوا شجرة مثمرة، ولا تذبحوا شاة ولا بقرة، ولا بعيراً إلا لمآكله . وسوف تمرون بأقوام قد فرغوا أنفسهم في الصوامع فدعوهم وما فرغوا أنفسهم له» .

“হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) বিকৃত করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে।” [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক: ১/৫২; তারীখুত তাবারী।]

এই অমূল্য উপদেশগুলোকে ইসলামের জিহাদের আদবের ক্ষেত্রে সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। এর সবগুলোই পরিবেশ সংরক্ষণের বিধানসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। এমনকি অসুবিধাজনক অবস্থাতেও। ইয়াহূদী অস্তিত্ব রাষ্ট্র কি মুসলিমের দেশ জবর দখলে, তাদের সম্মান হরণে এ ধরনের নীতি ও আদর্শ উপস্থাপন করতে পারবে? তারা কি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে হত্যা করে না? নুয়ে পড়া বৃদ্ধের জীবন হরণ করে না?

আর যুদ্ধক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে পরিবেশ ও এর উপাদানসমূহ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তাহলে তো স্বাভাবিক অবস্থায় এসব রক্ষায় তাঁর উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলাই বাহুল্য। এ কারণেই সুন্নতে নববীকে দেখা যায় পরিবেশ রক্ষার পুনঃপৌনিক আহ্বানে ভরপুর।

সামান্য ধারণা দেবার জন্য কিছু বলা যাক। দেখুন আল-কুরআনুল কারীম কোনো ভেষজপ্রস্তুত বিদ্যা বা চিকিৎসা শাস্ত্রে গ্রন্থ নয়। কোনো প্রকৌশল বিদ্যা বা বিজ্ঞান গ্রন্থও নয়। তথাপি ইসলাম এসেছে দীন ও দুনিয়া তথা ইহ ও পরকাল উভয়টার জন্য। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَا مِنۡ غَآئِبَةٖ فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٍ ٧٥﴾ [ النمل : 75]

“আর আসমান ও যমীনে এমন কোন গোপন বিষয় নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৭৫]

ভূপৃষ্ঠে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এর অবতরণ। যে সমাজটি পরিবেশ, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক এমনকি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও হবে পূর্ণাঙ্গ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন