hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মদিনা শরিফের ফজিলত জিয়ারত ও অবস্থানকালীন আদব

লেখকঃ আব্দুল মুহসিন বিন হামাদ আল আববাদ আল বদর

১৪
বিদআতি জিয়ারত নিম্নরূপ
এক : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকা। তার নিকট সাহায্য চাওয়া। প্রয়োজন পূরণ ও মুসিবত দূর করার আবেদন জানানো। অথবা আরো এমন কিছু জিনিস চাওয়া, যেগুলো একমাত্র আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো নিকট প্রার্থনা করা যায় না। কারণ, দোয়া হল ইবাদত। ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

الدعاء هو العبادة . ( وهو حديث صحيح أخرجه أبوداود والترمذي وغيرهما , وقال الترمذي : حديث حسن صحيح .)

‘দোয়াই এবাদত।’ (এটি সহিহ হাদিস। আবু দাউদ, তিরমিজি ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। সহিহ।)

এবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক বা অধিকার। আল্লাহ তাআলার অধিকারের কোন জিনিস আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কাউকে নিবেদিত করা জায়েজ নয়। কারণ, এটা আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক। একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে আবেগাপ্লুত হয়ে কামনা করা যাবে, ডাকা যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দোয়া করা যাবে, তাকে ডাকা যাবে না। তদ্রূপ, অন্যান্য কবর বাসীদের জন্য দোয়া করা যাবে। তাদেরকে ডাকা যাবে না।

আমরা জানি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবরে ‘কবরী হায়াত’ নিয়ে জীবিত আছেন, যে হায়াত শহীদদের হায়াতের চেয়ে অবশ্যই পূর্ণ ও উচ্চ-স্তরের। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত এ’হায়াতের ধরন কেউ জানে না। এ’হায়াত মৃত্যুর পূর্বের হায়াত, পুনরুত্থান ও প্রত্যাবর্তন পরবর্তী হায়াতের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। সুতরাং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকা, তার কাছে ফরিয়াদ করা জায়েজ নয়। কেননা এটা এবাদত। এবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য। যেমন আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।

দুই : নামাজি ব্যক্তির ন্যায় উভয় হাত বুকের উপর রেখে দাঁড়ানো। এ কাজ না জায়েজ। কেননা, এটা আত্মসমর্পণ ও আল্লাহ তাআলার জন্য উৎসর্গিত অবস্থা। এ কেবল নামাজের ভিতর পালন করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যে মুহূর্তে মুসল্লিগণ দাঁড়িয়ে তাদের রবের সাথে কথোপকথনে মশগুল থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম যখন তার কাছে আসতেন, তখন সালাম করার সময় নিজেদের হাত বুকের উপর রাখতেন না। যদি এটা ভাল হত, আমাদের আগে তারাই পালন করতেন ।

তিন : কবরের পাশের দেয়ালে ও জানালায় হাত বুলান। তদ্রূপ মসজিদ বা অন্য বস্ত্তর কোন স্থানে হাত বুলান। এটা না জায়েজ। কারণ এর পক্ষে কোন হাদিস নেই। আদর্শ পূর্বসূরীগণের আমলও এর প্রতি কোনোরূপ প্রমাণ বহন করে না। এটা এবাদতে শিরক প্রবেশের মাধ্যম বা ওসিলা। যে তা পালন করে সাধারণত সে বলে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহববতে করি। আমরা বলি, প্রত্যেক মোমিনের অন্তরে পিতা-মাতা, সন্তান ও সমস্ত মানুষের মহববতের চেয়ে অধিক মহববত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য থাকা ওয়াজিব। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين .( رواه البخاري ومسلم .)

‘তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে পিতা-মাতা ও সমস্ত মানুষ হতে প্রিয় না হব।’ (বোখারি ও মুসলিম)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহববত আপন জীবনের চেয়ে বেশি থাকা ওয়াজিব। যেমন সহিহ বোখারিতে হজরত ওমরের হাদিসে আছে, নিজের জান, পিতা-মাতা ও সন্তান হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অধিক মহববত থাকা ওয়াজিব। কারণ, যে সমস্ত নেয়ামত আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দান করেছেন, তার হাতে, তাকে ওসীলা করেই দান করেছেন। যেমন—ইসলামের নেয়ামত, সঠিক ও শুদ্ধ পথ পাওয়ার নেয়ামত। অন্ধকার হতে আলোয় উত্তরণের নেয়ামত। এটা সব চেয়ে বড় ও মূল্যবান নেয়ামত। যার সমতুল্য কোন নেয়ামত হতে পারে না।

কিন্তু এ মহববতের নিদর্শন দেয়ালের উপর ও জানালার উপর হাত বুলান নয়। বরং, তার নিদর্শন হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা ও তার সুন্নতের উপর আমল করা। কারণ ইসলাম ধর্ম বৃহৎ দু’টি নীতির উপর নির্ভরশীল।

প্রথমটি: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো এবাদত করা যাবে না।

দ্বিতীয়টি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিধান নিয়ে এসেছেন, একমাত্র সে অনুসারে আল্লাহ তাআলার এবাদত করতে হবে। আর এটাই لاإله إلا الله এর সাক্ষী ও محمد رسول الله এর সাক্ষীর দাবি।

কোরআনুল কারীমে একটি আয়াত আছে। কতিপয় ওলামায়ে কেরাম যার নাম করণ করেছেন ‘আয়াতুল ইমতিহান’ অর্থাৎ পরীক্ষার আয়াত। সে আয়াতটি হল, আল্লাহ তাআলার বাণী—

قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم . ( آل عمران :৩১)

‘আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ তাআলাকে মহববত কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তাআলা তোমাদের মহববত করবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরায়ে আলে ইমরান-৩১)

হাসান বসরী রহ. ও অন্যান্য আদর্শ পূর্বসূরীগণ বলেছেন, কোন এক সম্প্রদায় মনে করেছিল যে, তারা আল্লাহ তাআলাকে মহববত করে। আল্লাহ তাআলা এই আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন।

ابتلاهم ‘তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন।’ যাতে মিথ্যাবাদী হতে সত্যবাদী পৃথক ও স্পষ্ট হয়ে যায়। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহববতের দাবি করে, তার উচিত এ দাবির প্রমাণ পেশ করা। আর সে প্রমাণ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ।

ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ আয়াতে কারীমা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যে মুহাম্মদের তরীকায় না থেকে আল্লাহ তাআলার মহববতের দাবি করে, তাদের ব্যাপারে মীমাংসাকারী। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সে সমস্ত কথা ও কাজে শরীয়তে মুহাম্মদী ও নববী দ্বীনের অনুসরণ করবে না, বাস্তবিক পক্ষে সে মিথ্যাবাদী। যেমন বিশুদ্ধ কিতাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত, তিনি বলেন—

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد . ( رواه مسلم .)

‘যে এমন আমল করবে, যেরূপ সাদৃশ্য আমাদের আমল নেই, সে আমল পরিত্যক্ত।’ (মুসলিম।)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে,

قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم . ( آل عمران :৩১)

‘আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ তাআলাকে মহববত কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তাআলা তোমাদের মহববত করবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরায়ে আলে ইমরান-৩১)

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রতি মহববতের যে দাবি তোমরা করছ, তার চেয়ে উত্তম জিনিস অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার মহববত তোমাদের জন্য আরো বেশি সৌভাগ্য বয়ে আনবে। এ প্রথমটির তুলনায় বড় ও সম্মানজনক। যেমন প্রজ্ঞাবান কোনো আলেম বলেছেন, সম্মান এতে নয় যে, তুমি মহববত করবে। বরং সম্মান হল তুমি মাহবুব বা মহববতের পাত্র হবে। অতঃপর তিনি হাসান ও অন্যান্য আকাবেরদের বাণী নকল করেছেন।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমুউ শরহুল মুহাজ্জাব’-এ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের দেয়ালে হাত বুলান ও চুমু দেয়ার ব্যাপারে বলেছেন, সাধারণ মানুষের সীমা লঙ্ঘন ও এ ধরনের আমলের কারণে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। কারণ আনুগত্য, আমল একমাত্র হাদিস ও ওলামাদের প্রদর্শিত নির্দেশনা মুতাবিক করতে হবে। সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য লোকদের সৃষ্ট আমল এবং তাদের মূর্খতার প্রতি বিন্দু মাত্র ভ্রূক্ষেপ করা যাবে না।

বোখারি ও মুসলিমে হজরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

من أحدث في ديننا هذا ما ليس منه فهو رد .

‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছুর আবিষ্কার করবে, যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যাজ্য।’ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় আছে,

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد .( رواه مسلم .)

‘যে এমন আমল করল যার সাদৃশ্য আমাদের আমলে নেই, তা পরিত্যক্ত।’ (মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

لاتجعلوا قبري عيدا , وصلوا علي , فإن صلاتكم تبلغني حيثما كنتم . ( رواه أبوداود بإسناد صحيح .)

‘তোমরা আমার কবরকে ঈদে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরুদ পড়। কারণ তোমরা যেখানে থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে।’ (হাদিসটি সহিহ সনদে ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছেন।)

হজরত ফুযায়েল ইবনে আয়ায রহ. প্রসিদ্ধ এক উক্তি করেছেন, যার মর্মার্থ এই যে, তুমি হেদায়েতের পথ অনুসরণ করো। স্মরণ রাখবে ! সত্যপথের কম যাত্রীর কারণে ভেঙে পরবে না বা বিষণ্ণ হবে না। গোমরাহির রাস্তা হতে দূরে থাক, খবরদার ! বিপদগামীদের আধিক্যের দ্বারা প্রভাবন্বিত হবে না, ধোঁকা খাবে না।

যার অন্তরে এ ধারণা আসে যে, হাত বুলান বা এ ধরনের অন্য কোন আমল করা অধিক বরকতের উপায়। এটা তার মূর্খতা ও উদাসীনতার পরিচয়। কারণ, বরকত একমাত্র ঐ সমস্ত জিনিসে যা শরিয়ত অনুযায়ী সম্পাদিত হয়। শরিয়তের বিরোধিতা করে, কীভাবে সম্ভব বরকতের আশা করা ?

চার: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর তওয়াফ করা। এ কাজ হারাম। কারণ আল্লাহ তাআলা একমাত্র মর্যাদা পূর্ণ কাবা শরীফের চার পার্শ্ব ব্যতীত অন্য কোথাও তওয়াফের অনুমোদন দেননি। এরশাদ হচ্ছে,

وليطوفوا بالبيت العتيق . ( الحج :২৯.)

‘তারা যেন সু-সংরক্ষিত ঘরের তওয়াফ করে।’ (সূরা হজ:২৯)

সুতরাং, মর্যাদাপূর্ণ কাবা শরীফের চতুর্পার্শ্ব ব্যতীত অন্য কোথাও তওয়াফ করা যাবে না। যেমন প্রবাদে বলা হয়—‘প্রত্যেক স্থানে আল্লাহ তাআলার অনেক নামাজ আদায় কারী আছেন।’ তদ্রূপ বলা হয় ‘প্রত্যেক স্থানে আল্লাহ তাআলার অনেক দানকারী আছেন।’ প্রত্যেক স্থানে আল্লাহ তাআলার অনেক রোজাদার আছেন।’ প্রত্যেক স্থানে আল্লাহ তাআলার অনেক জিকির কারী আছেন।’ কিন্তু এরূপ বলা হয় না—‘প্রতিটি স্থানে আল্লাহ তাআলার অনেক তওয়াফকারী আছেন। কারণ, তওয়াফ একমাত্র সুসংরক্ষিত ঘর কাবার বৈশিষ্ট্য।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, মুসলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, বায়তুল মামূর ব্যতীত তওয়াফ করা নিষিদ্ধ। সুতরাং, বায়তুল মাক্বদিসের পাথর তওয়াফ করা, রাসূল এর হুজরা মোবারক তওয়াফ করা, আরাফার ময়দানে অবস্থিত গম্বুজ তওয়াফ করা বা অন্য কিছু তওয়াফ করা অবৈধ বা জায়েজ নয়।

পাঁচ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের নিকট আওয়াজ উঁচু করা। এর অবকাশ নেই। কারণ, আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় মোমিনদেরকে আদব শিখিয়েছেন। তিনি বলেন—

يا أيها الذبن آمنوا لاترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي ولا تجهروا له بالقول كجهر بعضكم لبعض أن تحبط أعمالكم وأنتم لاتشعرون (২) إن الذين يغضون أصواتهم عند رسول الله اولئك الذين امتحن الله قلوبهم للتقوى لهم مغفرة وأجر عظيم .( الحجرات :২-৩)

‘মোমিনগণ ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সে-রূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমল বাতিল হয়ে যাবে। তোমরা বুঝতেও পারবে না। যারা আল্লাহ তাআলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নিচু করে, আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তর সমূহকে তাকওয়ার জন্য যাচাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য ক্ষমাও মহাপুরষ্কার।’ (সুরায়ে হুজুরাত:২-৩)

অতএব জিয়ারতকারীর এ আদব রক্ষা করতে হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত অবস্থায় যেমন সম্মানের পাত্র, মৃত্যুর পরেও অনুরূপ সম্মানের পাত্র।

ছয়: মসজিদের ভিতর অথবা বাইরে দূর থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরকে সামনে রেখে দাঁড়ানো ও সালাম করা। শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ. তার ‘মানসাক’ নামক কিতাবে বলেছেন। এ আমল দ্বারা রাসূল এর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তার নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তে অহমিকার পরিচয় বেশি পাওয়া যায়।

আরো জ্ঞাতব্য যে, মদিনায় আগমনকারী অনেকে আত্মীয়স্বজনের দ্বারা এ ওসীয়তপ্রাপ্ত হন যে, আমার সালাম রাসূলের নিকট পৌঁছে দিয়ো। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদিসে এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই যার কাছে এ ধরনের দরখাস্ত করা হবে, তার বলা উচিত, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠাও, ফেরেশতারা তোমার দরুদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছিয়ে দেবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

إن لله ملائكة سياحين يبلغوني عن أمتي السلام . ( وهو حديث صحيح رواه النسائي وغيره .)

‘আল্লাহ তাআলার বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা রয়েছেন, যারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে দেয়।’ (এটি সহিহ হাদিস। ইমাম নাসায়ী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

لاتجعلوا بيوتكم قبورا , ولا تتخذوا قبري عيدا , وصلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم . ( وهو حديث صحيح رواه ابوداود وغيره .)

‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে ঈদ বানিয়ো না। অর্থাৎ উৎসবের স্থান। তোমরা আমার উপর দরুদ পাঠাও। কারণ তোমরা যেখানে থাকো তোমাদের দরুদ আমার নিকট পৌঁছে।’ (এটি সহিহ হাদিস। ইমাম আবু দাউদ রহ. ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন।)

আরো জ্ঞাতব্য যে, হজ, ওমরা ও জিয়ারতের মাঝে অঙ্গাঙ্গি কোন সম্পর্ক নেই। যে ব্যক্তি হজ করতে অথবা ওমরা করতে এসেছে, তার মদিনায় আসা ছাড়া নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বৈধ। অনুরূপ যে মদিনায় এসেছে, তার হজ অথবা ওমরা করা ছাড়া নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বৈধ। আবার একই সফরে হজ-ওমরা ও জিয়ারত সম্পন্ন করা নির্দ্বিধায় বৈধ ও যথার্থ।

যে সমস্ত হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর জিয়ারতের ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন—

من حج ولم يزرني فقد جفاني . ( الحديث .)

‘যে হজ করল কিন্তু আমার জিয়ারত করল না, সে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করল।’ (আল হাদিস।)

من زارني بعد مماتي فكأنما زارني في حياتي .( الحديث .)

‘যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার জিয়ারত করল, সে প্রায় আমার জীবদ্দশায় জিয়ারত করল।’ (আল হাদিস।)

من زارني وزار أبي إبراهيم في عام واحد ضمنت له على الله الجنة . ( الحديث .)

‘যে ব্যক্তি একই বৎসর আমার এবং আমার পিতা ইব্রাহীমের জিয়ারত করল, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে গেলাম।’ (আল হাদিস।)

من زار قبري وجبت له شفاعتي . ( الحديث .)

‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।’ (আল হাদিস।)

এ হাদিস ও এর মত অন্যান্য হাদিস দলিলের অযোগ্য। কারণ, এগুলো জাল কিংবা খুবই দুর্বল সনদের হাদিস। হাদিস বিশারদগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। যেমন দারা কুতনী, উকাইলী, বায়হাকী, ইবনে তাইমিয়্যাহ ও ইবনে হাজার রহ. প্রমুখ।

আল্লাহ তাআলার বাণী—

ولو أنهم إذ ظلموا أنفسهم جاءوك فاستغفروا الله واستغفر لهم الرسول لوجدوا الله توابا رحيما . ( النساء :৬৪)

‘সে সব লোক যখন নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছিল, তখন যদি তারা আপনার কাছে আসতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যদি তাদের জন্য ক্ষমার সুপারিশ (ইস্তেগফার) করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাকারী ও মেহেরবান রূপে পেত।’ (সূরা নিসা-৬৪)

নফ্স জুলুমে আক্রান্ত হলে বা এস্তেগফারের উদ্দেশ্যে রাসূলের কবরের উদ্দেশ্যে জেয়ারত করার কোন দলিল উক্ত আয়াতে পাওয়া জায় না। কেননা, আয়াতের বর্ণনা প্রসঙ্গ মুনাফেকদের ব্যাপারে। দ্বিতীয়ত একমাত্র জীবদ্দশাতেই তার কাছে গমন করা যেতে পারে। কারণ সাহাবায়ে কেরাম রা. ক্ষমা চাওয়ার—ইস্তেগফারের—মুহূর্তে ক্ষমার সুপারিশের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে আসতেন না। এ বিধান মতেই হজরত ওমর রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশার নিয়ম পরিবর্তন করেছেন এবং যখন অনাবৃষ্টির শিকার হয়েছেন, হজরত আববাস রা. এর দোয়ার ওসীলা দিয়ে বলেছেন—

اللهم إنا كنا إذا أجدبنا توسلنا إليك بنبينا فتسقينا , وإنا توسلنا إليك بعم نبينا فاسقنا . قال فيسقون . ( أخرجه البخاري في صحيحه .)

‘হে আল্লাহ ! যখন আমরা অনাবৃষ্টির শিকার হতাম, আমাদের নবীর মাধ্যমে আপনার নিকট দোয়া করতাম, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতেন। এখানে আমরা আমাদের নবীর চাচার মাধ্যমে আপনার নিকট দোয়া করছি, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। বর্ণনা কারী রাবী বলেন. অতঃপর তাদের বৃষ্টি দেয়া হত।’ (বোখারি)

যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা তার মৃত্যুর পরে দোয়া করানো জায়েজ হত, হজরত ওমর রা. তা পরিত্যাগ করে হজরত আববাস রা.-এর মাধ্যমে দোয়া করাতেন না। ইমাম বোখারি রহ. তার কিতাবে হজরত আয়েশা রা. হতে যে হাদিসটি ‘কিতাবুল মারদাতে’ (অসুস্থ ব্যক্তিদের অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন, সে হাদিসটিও একথা প্রমাণ করে। হজরত আয়েশা রা. (প্রচন্ড মাথা ব্যথায় ) বলেছেন, ورأساه ! ‘হায় মাথা!’ (বোঝাচ্ছেন তিনি মারা যাবেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ذلك لوكان وأنا حي فأستغفر لك وأدعولك ‘যদি এমন হয়ে যায়’ (তুমি মারা যাও) আর আমি জীবিত থাকি, তাহলে তোমার জন্য আমি মাগফিরাত চাইব ও দোয়া করব।’ পরক্ষণই হজরত আয়েশা রা. বলেন, واثكلياه ! ‘হায়! আমি অসহায়!’ (যেহেতু হজরত আয়েশা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথায় কোন সান্ত্বনা পাননি) والله إني لأظنك تحب موتي ....( الحديث ) ‘আল্লাহর শপথ ! আমি মনে করছি, আপনি আমার মৃত্যু পছন্দ করেন।’ সংক্ষিপ্ত হাদিস।

যদি মৃত্যুর পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে দোয়া ও ইস্তেগফার নেয়া যেত, তাহলে এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে হজরত আয়েশা রা.-এর মৃত্যুবরণ করা, অথবা আয়েশা রা.-এর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু বরণ করার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকত না।

যে সমস্ত হাদিস সাধারণত কবরের জিয়ারত প্রমাণ করে, সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতও প্রমাণ করে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী—

زوروا القبور , فإنها تذكرة الآخرة .( أخرجه مسلم في صحيحه .)

‘তোমরা কবর জিয়ারত কর, কেননা, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেবে।’ (মুসলিম)

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে লম্বা সময় অবস্থান করা উচিত নয়। বেশি বেশি জিয়ারত করাও উচিত নয়। কারণ, এর দ্বারা সীমা-লঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ি হয়। আল্লাহ তাআলা তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, ফেরেশতারা প্রত্যেক স্থান হতে তার নিকট উম্মতের সালাম নিয়ে আসবে। তার কোন উম্মতকে এ বৈশিষ্ট্য প্রদান করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

إن لله ملائكة سياحين يبلغوني عن أمتي السلام .

‘আল্লাহ তাআলার কতিপয় বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছে, যারা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেয়।’

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

لاتجعلوا بيوتكم قبورا , ولاتتخذوا قبري عيدا , وصلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم .

‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আমার কবরকে ঈদ- উৎসবস্থল- বানিয়ো না। তোমরা আমার উপর দরুদ পাঠাও, কারণ তোমরা যেখানে থাক তোমাদের দরুদ আমার নিকট পৌঁছে।’ তিনি যেহেতু স্বীয় কবরকে ঈদ-উৎসবের-জায়গা বানাতে নিষেধ করেছেন, তাই এমন পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন, যা ঈদের আদলে হতে পারে। যেমন তিনি বলেছেন—

وصلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم .

‘তোমরা আমার উপর সালাম পাঠাও, তোমরা যেখানে থাক তোমাদের সালাম আমার কাছে পৌঁছে। অর্থাৎ ফেরেশতাদের মাধ্যমে।’

জান্নাতুল বাক্বীর কবর ও উহুদের শহীদদের কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব, যদি শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হয়। বেদআতি পদ্ধতিতে হলে হারাম।

শরিয়ত সম্মত জিয়ারত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে জিয়ারতের ব্যাপারে যে বর্ণনা এসেছে, তা হুবহু যে জেয়ারতে পালন করা হয় এবং যার ভিতর জিয়ারতকারী জীবিত ব্যক্তির কল্যাণ ও জিয়ারতকৃত মৃত ব্যক্তির কল্যাণ নিহিত থাকে, তা-ই শরিয়ত সম্মত জিয়ারত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন