HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ফজরের সালাত ও কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক উপকরণ
লেখকঃ ড. রুকাইয়্যাহ বিনতে মুহাম্মদ আল-মাহারিব
নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আমরা তার প্রশংসা করি, তার নিকট সাহায্য চাই, তার নিকট ইস্তেগফার করি এবং তার নিকট হিদায়েত তলব করি। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের পাপ কর্ম ও নফসের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়েত দান করেন তার কোন গোমরাহকারী নেই, এবং তিনি যাকে গোমরাহ করেন তার কোন হিদায়েতকারী নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক-তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। [ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত “খুতবাতুল হাজাহ”র অনুবাদ।]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ ال عمران : 102]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে-ইমরান: (১০২)]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [ النساء : ١ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক”। [সূরা নিসা: (১)]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [ الاحزاب : ٧٠، ٧١ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]
অতঃপর, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে রয়েছে ফেতনার আধিক্য ও পাপের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ মানুষ নিজের দীনকে এড়িয়ে চলছে। দীনকে আঁকড়ে ধরা তাদের জন্য আগুনের কয়লা আঁকড়ে ধরার ন্যায় কঠিন, অথচ দীন থেকে দূরে থাকা তাদের অনিষ্ট ও ধ্বংসের কারণ। আর দীনকে আঁকড়ে ধরে ইবাদাত ও নেক আমল আঞ্জাম দেয়া তাদের সফলতা ও মুক্তির একমাত্র উপায়। এ কথা সত্য যে, আমাদের ইবাদাতের ফলে আল্লাহর রাজত্বে সামান্য বৃদ্ধি হবে না, বরং আমরাই উপকৃত হব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাব। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [ التحريم : ٦ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকুল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা তাহরীম:(৬)]
আল্লাহর হিকমতের দাবি তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন উভয়ের জন্য নির্দিষ্ট মখলুক। যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তারা জান্নাতি, যারা কুফরি করে ও পাপাচারে লিপ্ত হয় তারা জাহান্নামি। এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত ইনসাফ। আল্লাহ কখনো মুমিনদের ঈমান বিনষ্ট করেন না, যেমন তিনি কাফেরদের শাস্তি ব্যতীত ছেড়ে দেন না।
আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করে তার জন্য কিছু আমল দিয়েছেন, যা খুব সহজ ও কষ্টহীন। যাকে তিনি তাওফিক দেন, যে তার উপকরণ গ্রহণ করে, সে অনায়াসে তা সম্পাদনে সক্ষম হয়। আর যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের তাবেদারি করে অথচ আল্লাহর কাছে পার পাওয়ার তামান্না রাখে, তার জন্য তা কঠিন ও কষ্টকর। যদি সে তওবা করে ও শয়তানের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়, তাহলে তার জন্যও সহজ।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ ال عمران : 102]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে-ইমরান: (১০২)]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [ النساء : ١ ]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক”। [সূরা নিসা: (১)]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [ الاحزاب : ٧٠، ٧١ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল”। [সূরা আহযাব: (৭০-৭১)]
অতঃপর, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে রয়েছে ফেতনার আধিক্য ও পাপের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ মানুষ নিজের দীনকে এড়িয়ে চলছে। দীনকে আঁকড়ে ধরা তাদের জন্য আগুনের কয়লা আঁকড়ে ধরার ন্যায় কঠিন, অথচ দীন থেকে দূরে থাকা তাদের অনিষ্ট ও ধ্বংসের কারণ। আর দীনকে আঁকড়ে ধরে ইবাদাত ও নেক আমল আঞ্জাম দেয়া তাদের সফলতা ও মুক্তির একমাত্র উপায়। এ কথা সত্য যে, আমাদের ইবাদাতের ফলে আল্লাহর রাজত্বে সামান্য বৃদ্ধি হবে না, বরং আমরাই উপকৃত হব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাব। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [ التحريم : ٦ ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকুল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা তাহরীম:(৬)]
আল্লাহর হিকমতের দাবি তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন উভয়ের জন্য নির্দিষ্ট মখলুক। যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তারা জান্নাতি, যারা কুফরি করে ও পাপাচারে লিপ্ত হয় তারা জাহান্নামি। এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত ইনসাফ। আল্লাহ কখনো মুমিনদের ঈমান বিনষ্ট করেন না, যেমন তিনি কাফেরদের শাস্তি ব্যতীত ছেড়ে দেন না।
আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করে তার জন্য কিছু আমল দিয়েছেন, যা খুব সহজ ও কষ্টহীন। যাকে তিনি তাওফিক দেন, যে তার উপকরণ গ্রহণ করে, সে অনায়াসে তা সম্পাদনে সক্ষম হয়। আর যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের তাবেদারি করে অথচ আল্লাহর কাছে পার পাওয়ার তামান্না রাখে, তার জন্য তা কঠিন ও কষ্টকর। যদি সে তওবা করে ও শয়তানের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়, তাহলে তার জন্যও সহজ।
এক. আমল ফরয, যা থেকে মুসলিম কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, যা তাকে অবশ্যই পালন করতে হয়, কোন অবস্থায় ত্যাগ করার সুযোগ নেই। এ প্রকার আমলের উপর নির্ভরতা হল জান্নাতে প্রবেশ করার সনদ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা, যেমন ঈমান আনা আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলদের প্রতি, আখেরাত দিবসের প্রতি ও ভালো-মন্দ তাকদীরের প্রতি; সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের সিয়াম পালন করা ও সামর্থ্য হলে বায়তুল্লাহ শরীফের হজ করা।
দুই. নফল আমল, যা মুসলিম সাধ্যানুসারে পালন করে, যা তার উপর ওয়াজিব নয়, ত্যাগ করলে পাপী হবে না। অবশ্য তা আদায়ের ফলে আল্লাহর নৈকট্য বাড়ে, সাওয়াব ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়, জান্নাতে উঁচু স্তর লাভ হয়। জান্নাত বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট, এক একটি স্তর আসমান ও যমিনের দূরত্বের সমান।
নফল আমল সুন্নাত ও আদব-আখলাকে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা ফরয আমলকে নফল আমলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, বরং তার নৈকট্য ফরয আমলের উপর নির্ভরশীল, নফল দ্বারা শুধু মহব্বত ও নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে কুদসিতে এর বর্ণনা দিয়ে বলেন:
«يقول الله عز وجل : ما تقرَّب إليَّ عبدي بأحبَّ مما افترضته عليه، ولا يزالُ عبدي يتقرَّبُ إليَّ بالنوافل حتى أحبَّه، فإذا أحببتُه كنتُ سمعَه الذي يَسْمَعُ به وبصرَه الذي يُبْصرُ به ويدَه التي يبطشُ بها ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينَّه، ولئن استعاذني لأعيذنه» . متفق عليه .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার বান্দার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে প্রিয় কোন আমল দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে ফলে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, আমি তার কর্ণে পরিণত হই যার দ্বারা সে শোনে, তার চোখে পরিণত হই যার দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যার দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যার দ্বারা সে হাঁটে। যদি সে আমার নিকট প্রার্থনা করে আমি অবশ্যই তাকে প্রদান করি। যদি সে আমার নিকট আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি”। [বুখারি ও মুসলিম।]
কে আল্লাহর নৈকট্য চায় না?! কে আল্লাহর প্রিয় হতে পছন্দ করে না?! সকলেই আশা করে তার নৈকট্য, হতে চায় প্রিয় পাত্র, কিন্তু সবাই কি ফরয দ্বারা তার নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয়, সক্ষম হয় নফল দ্বারা তার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটাতে, যে কারণে আল্লাহ তাকে মহব্বত করবে, তার কর্ণ ও চোখে পরিণত হবে, সে আল্লাহর দেখায় দেখবে ও তার শ্রবণে শ্রবণ করবে?!
নিশ্চয় এ ফযিলত অর্জনের জন্য চাই ত্যাগ ও পরিশ্রম, অলসের এতে কোন অংশ নেই, অকর্মরা এ ময়দানে কখনো সফল হয় না। এখানে চাই ত্যাগ, প্রবৃত্তি ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ।
আমি আমার ভাইদের বলতে চাই, জীবন পুরোটাই ক্লান্তিতে ভরা, তাতে কারো স্বস্তি নেই। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَقُلۡنَا يَٰٓـَٔادَمُ إِنَّ هَٰذَا عَدُوّٞ لَّكَ وَلِزَوۡجِكَ فَلَا يُخۡرِجَنَّكُمَا مِنَ ٱلۡجَنَّةِ فَتَشۡقَىٰٓ ١١٧ ﴾ [ طه : ١١٧ ]
“অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম, নিশ্চয় এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন তোমাদের উভয়কে জান্নাত থেকে কিছুতেই বের করে না দেয়, তাহলে তোমরা দুর্ভোগ পোহাবে”। [সূরা ত্বহা: (১১৭)]
আমরা পরিশ্রম করি ও দুর্ভোগ পোহাই সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের পরিশ্রম ও দুর্ভোগ কি চির শান্তি ও স্বস্তির জন্য, যা কখনো নিঃশেষ হবে না, যার নাম জান্নাত, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি, কোন মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত উদয় হয়নি!
নিশ্চয় বর্তমান যুগে আমরা আখেরাত অন্বেষণে শিথিলতা করছি, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছি ও তার জন্য ঘাম ঝরাচ্ছি। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের চিন্তায় সারা রাত নির্ঘুম কাটাই, সকালে উঠে বাড়ি-ঘর পর্যবেক্ষণ অথবা দোকান-পাট দেখা শোনায় মগ্ন হই। অনেক ছাত্র-ছাত্রী সারা রাত পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য জাগ্রত থাকে, সকালে ফজরের সময় ঘুমায়?! বরং পার্থিব স্বার্থ ব্যতীত তারা রাতের অল্প কিংবা এক দশমাংশ সময়ের জন্যও উঠে দাঁড়ায় না।
এ যুগে আমরা আল্লাহর ইবাদাতে খুব ত্রুটি করছি! যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ফজরের সালাত। আপনি হয়তো এমন যুবককে দেখবেন না যে, ফজরের আযান শুনেই উঠে দাঁড়িয়েছে জামাতের সাথে দু’রাকাত সালাত আদায়ের জন্যে, যা দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম। আর ফজরের এক ঘণ্টা পূর্বে সালাতে দণ্ডায়মান অবস্থায় কোন যুবকের দেখা মিলা প্রায় অসম্ভব, যে আল্লাহর রহমতের প্রার্থনা করছে, আখেরাতের শাস্তি থেকে পানাহ চাচ্ছে, নিজ রবের সাথে মোনাজাত করছে, তার নিকট নিজের অবস্থা, অভাব ও দুর্বলতা প্রকাশ করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করছে।
ফজরের সালাত ও তার জামাতে শিথিলতা প্রদর্শন এবং কিয়ামুল লাইলের প্রতি উদাসীনতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, আমি আমার ভাই ও বোনদের প্রতি এ পুস্তিকা দ্বারা কতক উপদেশ প্রদান করি। এতে আমি অলসতার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পেয়েছি, হয়তো আল্লাহ আমাদের থেকে অমিল ও ফাসাদ দূর করবেন, অথবা আমাদেরকে কল্যাণের দিকে পরিচালিত করে নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত হাওয়ার তাওফিক দিবেন।
এ পুস্তিকায় আমি নিম্নের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব:
ক. ফজরের সালাতের প্রতি শিথিলতা প্রদর্শন।
খ. ফজরের সালাতে উপস্থিতির সুফল ও অনুপস্থিতির কুফল।
গ. কিয়ামুল লাইলের ফযিলত।
ঘ. দুনিয়া ও আখেরাতে কিয়ামুল লাইলের উপকারিতা।
ঙ. কিয়ামুল লাইলের সহায়ক উপকরণ।
চ. কিয়ামুল লাইল ত্যাগকারীকে সতর্ক করা।
ছ. কিয়ামুল লাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ।
জ. কিয়ামুল লাইলে সালাফদের আদর্শ। [এ অধ্যায়ে লেখিকা আবু নুয়াঈম রচিত, “হিলইয়াতুল আউলিয়া” ও গাজালি রচিত, “এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন” থেকে বেশ কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যা নির্ভরযোগ্য ও সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক বিশুদ্ধ নয়, তাই অনুবাদ থেকে এ অধ্যায়টি বাদ দেয়া হয়েছে। অনুবাদক।]
দুই. নফল আমল, যা মুসলিম সাধ্যানুসারে পালন করে, যা তার উপর ওয়াজিব নয়, ত্যাগ করলে পাপী হবে না। অবশ্য তা আদায়ের ফলে আল্লাহর নৈকট্য বাড়ে, সাওয়াব ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়, জান্নাতে উঁচু স্তর লাভ হয়। জান্নাত বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট, এক একটি স্তর আসমান ও যমিনের দূরত্বের সমান।
নফল আমল সুন্নাত ও আদব-আখলাকে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা ফরয আমলকে নফল আমলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, বরং তার নৈকট্য ফরয আমলের উপর নির্ভরশীল, নফল দ্বারা শুধু মহব্বত ও নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে কুদসিতে এর বর্ণনা দিয়ে বলেন:
«يقول الله عز وجل : ما تقرَّب إليَّ عبدي بأحبَّ مما افترضته عليه، ولا يزالُ عبدي يتقرَّبُ إليَّ بالنوافل حتى أحبَّه، فإذا أحببتُه كنتُ سمعَه الذي يَسْمَعُ به وبصرَه الذي يُبْصرُ به ويدَه التي يبطشُ بها ورجله التي يمشي بها، ولئن سألني لأعطينَّه، ولئن استعاذني لأعيذنه» . متفق عليه .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার বান্দার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে প্রিয় কোন আমল দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে ফলে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, আমি তার কর্ণে পরিণত হই যার দ্বারা সে শোনে, তার চোখে পরিণত হই যার দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যার দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যার দ্বারা সে হাঁটে। যদি সে আমার নিকট প্রার্থনা করে আমি অবশ্যই তাকে প্রদান করি। যদি সে আমার নিকট আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি”। [বুখারি ও মুসলিম।]
কে আল্লাহর নৈকট্য চায় না?! কে আল্লাহর প্রিয় হতে পছন্দ করে না?! সকলেই আশা করে তার নৈকট্য, হতে চায় প্রিয় পাত্র, কিন্তু সবাই কি ফরয দ্বারা তার নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয়, সক্ষম হয় নফল দ্বারা তার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটাতে, যে কারণে আল্লাহ তাকে মহব্বত করবে, তার কর্ণ ও চোখে পরিণত হবে, সে আল্লাহর দেখায় দেখবে ও তার শ্রবণে শ্রবণ করবে?!
নিশ্চয় এ ফযিলত অর্জনের জন্য চাই ত্যাগ ও পরিশ্রম, অলসের এতে কোন অংশ নেই, অকর্মরা এ ময়দানে কখনো সফল হয় না। এখানে চাই ত্যাগ, প্রবৃত্তি ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ।
আমি আমার ভাইদের বলতে চাই, জীবন পুরোটাই ক্লান্তিতে ভরা, তাতে কারো স্বস্তি নেই। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَقُلۡنَا يَٰٓـَٔادَمُ إِنَّ هَٰذَا عَدُوّٞ لَّكَ وَلِزَوۡجِكَ فَلَا يُخۡرِجَنَّكُمَا مِنَ ٱلۡجَنَّةِ فَتَشۡقَىٰٓ ١١٧ ﴾ [ طه : ١١٧ ]
“অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম, নিশ্চয় এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন তোমাদের উভয়কে জান্নাত থেকে কিছুতেই বের করে না দেয়, তাহলে তোমরা দুর্ভোগ পোহাবে”। [সূরা ত্বহা: (১১৭)]
আমরা পরিশ্রম করি ও দুর্ভোগ পোহাই সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের পরিশ্রম ও দুর্ভোগ কি চির শান্তি ও স্বস্তির জন্য, যা কখনো নিঃশেষ হবে না, যার নাম জান্নাত, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি, কোন মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত উদয় হয়নি!
নিশ্চয় বর্তমান যুগে আমরা আখেরাত অন্বেষণে শিথিলতা করছি, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছি ও তার জন্য ঘাম ঝরাচ্ছি। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের চিন্তায় সারা রাত নির্ঘুম কাটাই, সকালে উঠে বাড়ি-ঘর পর্যবেক্ষণ অথবা দোকান-পাট দেখা শোনায় মগ্ন হই। অনেক ছাত্র-ছাত্রী সারা রাত পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য জাগ্রত থাকে, সকালে ফজরের সময় ঘুমায়?! বরং পার্থিব স্বার্থ ব্যতীত তারা রাতের অল্প কিংবা এক দশমাংশ সময়ের জন্যও উঠে দাঁড়ায় না।
এ যুগে আমরা আল্লাহর ইবাদাতে খুব ত্রুটি করছি! যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ফজরের সালাত। আপনি হয়তো এমন যুবককে দেখবেন না যে, ফজরের আযান শুনেই উঠে দাঁড়িয়েছে জামাতের সাথে দু’রাকাত সালাত আদায়ের জন্যে, যা দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম। আর ফজরের এক ঘণ্টা পূর্বে সালাতে দণ্ডায়মান অবস্থায় কোন যুবকের দেখা মিলা প্রায় অসম্ভব, যে আল্লাহর রহমতের প্রার্থনা করছে, আখেরাতের শাস্তি থেকে পানাহ চাচ্ছে, নিজ রবের সাথে মোনাজাত করছে, তার নিকট নিজের অবস্থা, অভাব ও দুর্বলতা প্রকাশ করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করছে।
ফজরের সালাত ও তার জামাতে শিথিলতা প্রদর্শন এবং কিয়ামুল লাইলের প্রতি উদাসীনতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, আমি আমার ভাই ও বোনদের প্রতি এ পুস্তিকা দ্বারা কতক উপদেশ প্রদান করি। এতে আমি অলসতার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পেয়েছি, হয়তো আল্লাহ আমাদের থেকে অমিল ও ফাসাদ দূর করবেন, অথবা আমাদেরকে কল্যাণের দিকে পরিচালিত করে নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত হাওয়ার তাওফিক দিবেন।
এ পুস্তিকায় আমি নিম্নের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব:
ক. ফজরের সালাতের প্রতি শিথিলতা প্রদর্শন।
খ. ফজরের সালাতে উপস্থিতির সুফল ও অনুপস্থিতির কুফল।
গ. কিয়ামুল লাইলের ফযিলত।
ঘ. দুনিয়া ও আখেরাতে কিয়ামুল লাইলের উপকারিতা।
ঙ. কিয়ামুল লাইলের সহায়ক উপকরণ।
চ. কিয়ামুল লাইল ত্যাগকারীকে সতর্ক করা।
ছ. কিয়ামুল লাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ।
জ. কিয়ামুল লাইলে সালাফদের আদর্শ। [এ অধ্যায়ে লেখিকা আবু নুয়াঈম রচিত, “হিলইয়াতুল আউলিয়া” ও গাজালি রচিত, “এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন” থেকে বেশ কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যা নির্ভরযোগ্য ও সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক বিশুদ্ধ নয়, তাই অনুবাদ থেকে এ অধ্যায়টি বাদ দেয়া হয়েছে। অনুবাদক।]
আমার বিশ্বাস এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, ফজর সালাতের জমাতে উপস্থিতি অথবা ঠিক সময়ে ফজর আদায়কারীর সংখ্যা অন্য ফরজের তুলনায় খুব কম। যারা মাগরিব অথবা এশার সালাতে মুসল্লিদের পর্যবেক্ষণ করেন, তারা যদি ফজর সালাতের মুসল্লিদের দেখেন, তাহলে খুব সহজে এ পার্থক্য বুঝবেন ও উপস্থিতির ব্যবধান নিরূপণে সক্ষম হবেন।
সন্দেহ নেই যারা ফজর সালাত আদায় করেন, তাদের সংখ্যা মাগরিব সালাত আদায়কারীদের এক চতুর্থাংশের কম হবে, [“মাজাল্লালুত দাওয়াহ” পত্রিকায় (২০/১০/১৪১১হি.) তারিখে “ফজর সালাতের মুসল্লিদের সংখ্যা এক চতুর্থাংশ” শিরোনামে একটি কলাম ছাপা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন ইমামের সাক্ষাতকারও রয়েছে, যারা স্বয়ং মুসল্লিদের ব্যবধান প্রত্যক্ষ করেছেন। দেখুন: (১২৯০) সংখ্যা।] এরূপ কেন?!
সকল ফরয কি ফজরের সমান নয়? সকল সালাতের সাওয়াব কি সমান নয়? তবে কেন এ বিভক্তি? বরং ফজর সালাতের কিছু ফযিলত রয়েছে যা অন্য সালাতের নেই, যেমন আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন, তাই ফজর সালাতকে সালাতে মাশহুদাহ বলা হয়, কারণ এ সালাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। যে ফজর সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে পূর্ণ রাত সালাত আদায় করল, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আর আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন ফজর সালাত উপস্থিতির সালাত, ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [ الاسراء : ٧٨ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন । নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়”। [সূরা ইসরা: (৭৮)]
মুফাসসিরগণ বলেছেন: এখানে “কুরআনুল ফাজর” দ্বারা উদ্দেশ্য ফজর সালাত। “কুরআনাল ফাজর” বলার কারণ এ সালাতে অধিক কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। আর এ সালাতে দিন-রাতের ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন, তাই এ সালাতকে মাশহুদাহ বলা হয়, অর্থাৎ ফেরেশতাদের উপস্থিতির সালাত। [তাফসীরে শাওকানী।]
নিশ্চয় এ অলসতা আল্লাহর ক্রোধের কারণ। কেন ক্রোধের কারণ হবে না, অথচ তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, আর তার বান্দারা তার সাক্ষাত, মোনাজাত ও তার নিকট প্রার্থনার উপর ঘুম ও আরামকে প্রাধান্য দেয়! অথচ তিনি বরকতময়, সম্মানিত ও মহা মহীয়ান।
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ থেকে কোথায় অবস্থান করছি? অথচ তার পূর্বাপর সকল পাপ মোচন করে দেয়া হয়েছে, তবুও তিনি দীর্ঘ কিয়াম করতেন, তার দু’পা ফুলে যেত। মুগিরা ইব্ন শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন:
«قام رسولُ الله صلى الله عليه وسلم حتى تفطَّرت قدماه فقيل له : أمَا قد غُفر لك ما تقدَّم من ذنبك وما تأخَّر؟ قال : «أفلا أكون عبدًا شكورًا» . متفق عليه .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে তার দু’পা ফুলে গেল, তাকে বলা হল: আপনার কি পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়নি? তিনি বললেন: “আমি কি শোকর গোজার বান্দা হবো না”। [বুখারি ও মুসলিম।]
গাজালি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন: এ কথার অর্থ হল তার অধিক মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান, কারণ শোকর দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ ٧ ﴾ [ ابراهيم : ٧ ]
“যদি তোমরা শোকর আদায় কর, আমি তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দিব” [সূরা ইবরাহীম: (৭)]। [ইহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন: (১/৩৫৩)]
এ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের ইবাদতে কি পরিমাণ মগ্ন ছিলেন, অথচ তার উপর পাহাড়ের চেয়ে কঠিন বাণী নাযিল হত:
﴿ إِنَّا سَنُلۡقِي عَلَيۡكَ قَوۡلٗا ثَقِيلًا ٥ ﴾ [ المزمل : ٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি এক অতিভারী বাণী নাযিল করছি”। [সূরা মুযযামমিল: (৫)]
আল্লাহু আকবার!! এরপরও তার উপর নাযিল হয়েছে:
﴿ وَإِن كَادُواْ لَيَفۡتِنُونَكَ عَنِ ٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ لِتَفۡتَرِيَ عَلَيۡنَا غَيۡرَهُۥۖ وَإِذٗا لَّٱتَّخَذُوكَ خَلِيلٗا ٧٣ وَلَوۡلَآ أَن ثَبَّتۡنَٰكَ لَقَدۡ كِدتَّ تَرۡكَنُ إِلَيۡهِمۡ شَيۡٔٗا قَلِيلًا ٧٤ إِذٗا لَّأَذَقۡنَٰكَ ضِعۡفَ ٱلۡحَيَوٰةِ وَضِعۡفَ ٱلۡمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيۡنَا نَصِيرٗا ٧٥ ﴾ [ الاسراء : ٧٣، ٧٥ ]
“আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, আমি তোমাকে যে ওহী দিয়েছি, তা থেকে তারা তোমাকে প্রায় ফিতনায় ফেলে দিয়েছিল, যাতে তুমি আমার নামের বিপরীত মিথ্যা রটাতে পার এবং তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত। আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। তখন আমি অবশ্যই তোমাকে আস্বাদন করাতাম জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব। তারপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না”। [সূরা ইসরা: (৭৩-৭৫)]
আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি র্শিক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। সূরা যুমার: (৬৪)
এখানেই শেষ নয়, আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ ٦٧ ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত করেন না”। [সূরা মায়েদা: (৬৭)] এখানেই শেষ নয়, আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ حَتَّىٰ يُثۡخِنَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ تُرِيدُونَ عَرَضَ ٱلدُّنۡيَا وَٱللَّهُ يُرِيدُ ٱلۡأٓخِرَةَۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٧ لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمۡ فِيمَآ أَخَذۡتُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٦٨ ﴾ [ الانفال : ٦٧، ٦٨ ]
“কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমিনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। (৬৭) আল্লাহর লিখন অতিবাহিত না হয়ে থাকলে, অবশ্যই তোমরা যা গ্রহণ করেছ, সে বিষয়ে তোমাদেরকে মহাআযাব স্পর্শ করত”। [সূরা আনফাল: (৬৭-৬৮)]
আল্লাহু আকবার! কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতগুলো ধারণ করলেন?! নিশ্চয় ইহা ধৈর্য ও অন্তরে গভীর ইমানের প্রমাণ। ইহা আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার মোজাহাদা, তার শরীয়তকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করার সাধনা, যা তার প্রতি পরিপূর্ণ মহব্বতের প্রমাণ।
এ জন্যই তিনি রাতের দুই তৃতীয়াংশ, অর্ধেক ও এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন। বিনয়াবনত ও ক্রন্দন করে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। নিশ্চয় চোখের নীরবতা, রাতের অন্ধকার ও স্তব্ধতা ভেঙ্গে আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মান হওয়া তার প্রতি গভীর মহব্বতের প্রমাণ। অথচ আল্লাহ তার পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ হচ্ছে প্রিয়জনের সাথে মোনাজাতের স্বাদ, যা আস্বাদনকারী ব্যতীত কেউ বুঝতে সক্ষম নয়।
সন্দেহ নেই, আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মানের ফলে অন্তরে তৃপ্তি মিলে, চেহারায় নূর ভাসে, আল্লাহর তার ওপর সন্তুষ্ট হন, তাকে দেখে তিনি হাসেন, কারণ সে আরামের বিছানা ও সুন্দর স্ত্রীদের ত্যাগ করে তার সমীপে দাঁড়িয়েছে।
কেন সন্তুষ্ট হবেন না, তিনিই তো বলেছেন:
﴿ مَّا يَفۡعَلُ ٱللَّهُ بِعَذَابِكُمۡ إِن شَكَرۡتُمۡ وَءَامَنتُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمٗا ١٤٧ ۞لَّا يُحِبُّ ٱللَّهُ ٱلۡجَهۡرَ بِٱلسُّوٓءِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ إِلَّا مَن ظُلِمَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا ١٤٨ ﴾ [ النساء : ١٤٧، ١٤٨ ]
“যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আন তাহলে তোমাদেরকে আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন? আল্লাহ পুরস্কার দানকারী, সর্বজ্ঞ। মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী”। [সূরা নিসা: (১৪৭-১৪৮)]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা চিন্তা করুন, আল্লাহর বাণী: “যদি তোমরা শোকর আদায় কর”, আরো চিন্তা করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أفلا أكون عبدًا شكورًا» .
“আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবো না”।
শোকর গুজার বান্দা হতে চাই, শুধু মুখের কথা ও অন্তরের ইচ্ছা যথেষ্ট নয়, ইবাদাত ও আমল দ্বারা তার প্রমাণ দিতে হবে। আমরা রাতের এক বা এক-চতুর্থাংশ ঘণ্টা ব্যাপী আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের কি শোকর আদায় করি?!
আমরা অনেকে মুখে-অন্তরে আল্লাহর শোকর আদায় করি, কিন্তু যখন আমলের কথা বলা হয়, তখন বলি: আল্লাহ আমাদের হিদায়াত করুন ও আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
হিদায়াত ও মাগফেরাতের দোয়া জরুরী সন্দেহ নেই, কিন্তু হিদায়াত ও মাগফেরাতের জন্য আমরা কি ত্যাগ করি বা তার জন্য প্রস্তুত আছি?!
আমরা যদি তার জন্য প্রস্তুত থাকি, তাহলে তার উপায় ও উপকরণ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে উপকারী বস্তু শিক্ষা দিন, এবং যা শিক্ষা দিয়েছেন তার দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন।
সন্দেহ নেই যারা ফজর সালাত আদায় করেন, তাদের সংখ্যা মাগরিব সালাত আদায়কারীদের এক চতুর্থাংশের কম হবে, [“মাজাল্লালুত দাওয়াহ” পত্রিকায় (২০/১০/১৪১১হি.) তারিখে “ফজর সালাতের মুসল্লিদের সংখ্যা এক চতুর্থাংশ” শিরোনামে একটি কলাম ছাপা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন ইমামের সাক্ষাতকারও রয়েছে, যারা স্বয়ং মুসল্লিদের ব্যবধান প্রত্যক্ষ করেছেন। দেখুন: (১২৯০) সংখ্যা।] এরূপ কেন?!
সকল ফরয কি ফজরের সমান নয়? সকল সালাতের সাওয়াব কি সমান নয়? তবে কেন এ বিভক্তি? বরং ফজর সালাতের কিছু ফযিলত রয়েছে যা অন্য সালাতের নেই, যেমন আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন, তাই ফজর সালাতকে সালাতে মাশহুদাহ বলা হয়, কারণ এ সালাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। যে ফজর সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে পূর্ণ রাত সালাত আদায় করল, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আর আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন ফজর সালাত উপস্থিতির সালাত, ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [ الاسراء : ٧٨ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন । নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়”। [সূরা ইসরা: (৭৮)]
মুফাসসিরগণ বলেছেন: এখানে “কুরআনুল ফাজর” দ্বারা উদ্দেশ্য ফজর সালাত। “কুরআনাল ফাজর” বলার কারণ এ সালাতে অধিক কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। আর এ সালাতে দিন-রাতের ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন, তাই এ সালাতকে মাশহুদাহ বলা হয়, অর্থাৎ ফেরেশতাদের উপস্থিতির সালাত। [তাফসীরে শাওকানী।]
নিশ্চয় এ অলসতা আল্লাহর ক্রোধের কারণ। কেন ক্রোধের কারণ হবে না, অথচ তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, আর তার বান্দারা তার সাক্ষাত, মোনাজাত ও তার নিকট প্রার্থনার উপর ঘুম ও আরামকে প্রাধান্য দেয়! অথচ তিনি বরকতময়, সম্মানিত ও মহা মহীয়ান।
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ থেকে কোথায় অবস্থান করছি? অথচ তার পূর্বাপর সকল পাপ মোচন করে দেয়া হয়েছে, তবুও তিনি দীর্ঘ কিয়াম করতেন, তার দু’পা ফুলে যেত। মুগিরা ইব্ন শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন:
«قام رسولُ الله صلى الله عليه وسلم حتى تفطَّرت قدماه فقيل له : أمَا قد غُفر لك ما تقدَّم من ذنبك وما تأخَّر؟ قال : «أفلا أكون عبدًا شكورًا» . متفق عليه .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে তার দু’পা ফুলে গেল, তাকে বলা হল: আপনার কি পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়নি? তিনি বললেন: “আমি কি শোকর গোজার বান্দা হবো না”। [বুখারি ও মুসলিম।]
গাজালি –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন: এ কথার অর্থ হল তার অধিক মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান, কারণ শোকর দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ ٧ ﴾ [ ابراهيم : ٧ ]
“যদি তোমরা শোকর আদায় কর, আমি তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দিব” [সূরা ইবরাহীম: (৭)]। [ইহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন: (১/৩৫৩)]
এ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের ইবাদতে কি পরিমাণ মগ্ন ছিলেন, অথচ তার উপর পাহাড়ের চেয়ে কঠিন বাণী নাযিল হত:
﴿ إِنَّا سَنُلۡقِي عَلَيۡكَ قَوۡلٗا ثَقِيلًا ٥ ﴾ [ المزمل : ٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি এক অতিভারী বাণী নাযিল করছি”। [সূরা মুযযামমিল: (৫)]
আল্লাহু আকবার!! এরপরও তার উপর নাযিল হয়েছে:
﴿ وَإِن كَادُواْ لَيَفۡتِنُونَكَ عَنِ ٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ لِتَفۡتَرِيَ عَلَيۡنَا غَيۡرَهُۥۖ وَإِذٗا لَّٱتَّخَذُوكَ خَلِيلٗا ٧٣ وَلَوۡلَآ أَن ثَبَّتۡنَٰكَ لَقَدۡ كِدتَّ تَرۡكَنُ إِلَيۡهِمۡ شَيۡٔٗا قَلِيلًا ٧٤ إِذٗا لَّأَذَقۡنَٰكَ ضِعۡفَ ٱلۡحَيَوٰةِ وَضِعۡفَ ٱلۡمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيۡنَا نَصِيرٗا ٧٥ ﴾ [ الاسراء : ٧٣، ٧٥ ]
“আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, আমি তোমাকে যে ওহী দিয়েছি, তা থেকে তারা তোমাকে প্রায় ফিতনায় ফেলে দিয়েছিল, যাতে তুমি আমার নামের বিপরীত মিথ্যা রটাতে পার এবং তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত। আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। তখন আমি অবশ্যই তোমাকে আস্বাদন করাতাম জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব। তারপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না”। [সূরা ইসরা: (৭৩-৭৫)]
আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [ الزمر : ٦٤ ]
“আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি র্শিক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। সূরা যুমার: (৬৪)
এখানেই শেষ নয়, আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ ٦٧ ﴾ [ المائدة : ٦٧ ]
“হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত করেন না”। [সূরা মায়েদা: (৬৭)] এখানেই শেষ নয়, আরও নাযিল হয়েছে:
﴿ مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ حَتَّىٰ يُثۡخِنَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ تُرِيدُونَ عَرَضَ ٱلدُّنۡيَا وَٱللَّهُ يُرِيدُ ٱلۡأٓخِرَةَۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٦٧ لَّوۡلَا كِتَٰبٞ مِّنَ ٱللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمۡ فِيمَآ أَخَذۡتُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٦٨ ﴾ [ الانفال : ٦٧، ٦٨ ]
“কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমিনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। (৬৭) আল্লাহর লিখন অতিবাহিত না হয়ে থাকলে, অবশ্যই তোমরা যা গ্রহণ করেছ, সে বিষয়ে তোমাদেরকে মহাআযাব স্পর্শ করত”। [সূরা আনফাল: (৬৭-৬৮)]
আল্লাহু আকবার! কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতগুলো ধারণ করলেন?! নিশ্চয় ইহা ধৈর্য ও অন্তরে গভীর ইমানের প্রমাণ। ইহা আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার মোজাহাদা, তার শরীয়তকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করার সাধনা, যা তার প্রতি পরিপূর্ণ মহব্বতের প্রমাণ।
এ জন্যই তিনি রাতের দুই তৃতীয়াংশ, অর্ধেক ও এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন। বিনয়াবনত ও ক্রন্দন করে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। নিশ্চয় চোখের নীরবতা, রাতের অন্ধকার ও স্তব্ধতা ভেঙ্গে আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মান হওয়া তার প্রতি গভীর মহব্বতের প্রমাণ। অথচ আল্লাহ তার পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ হচ্ছে প্রিয়জনের সাথে মোনাজাতের স্বাদ, যা আস্বাদনকারী ব্যতীত কেউ বুঝতে সক্ষম নয়।
সন্দেহ নেই, আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মানের ফলে অন্তরে তৃপ্তি মিলে, চেহারায় নূর ভাসে, আল্লাহর তার ওপর সন্তুষ্ট হন, তাকে দেখে তিনি হাসেন, কারণ সে আরামের বিছানা ও সুন্দর স্ত্রীদের ত্যাগ করে তার সমীপে দাঁড়িয়েছে।
কেন সন্তুষ্ট হবেন না, তিনিই তো বলেছেন:
﴿ مَّا يَفۡعَلُ ٱللَّهُ بِعَذَابِكُمۡ إِن شَكَرۡتُمۡ وَءَامَنتُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمٗا ١٤٧ ۞لَّا يُحِبُّ ٱللَّهُ ٱلۡجَهۡرَ بِٱلسُّوٓءِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ إِلَّا مَن ظُلِمَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا ١٤٨ ﴾ [ النساء : ١٤٧، ١٤٨ ]
“যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আন তাহলে তোমাদেরকে আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন? আল্লাহ পুরস্কার দানকারী, সর্বজ্ঞ। মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী”। [সূরা নিসা: (১৪৭-১৪৮)]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা চিন্তা করুন, আল্লাহর বাণী: “যদি তোমরা শোকর আদায় কর”, আরো চিন্তা করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أفلا أكون عبدًا شكورًا» .
“আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবো না”।
শোকর গুজার বান্দা হতে চাই, শুধু মুখের কথা ও অন্তরের ইচ্ছা যথেষ্ট নয়, ইবাদাত ও আমল দ্বারা তার প্রমাণ দিতে হবে। আমরা রাতের এক বা এক-চতুর্থাংশ ঘণ্টা ব্যাপী আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের কি শোকর আদায় করি?!
আমরা অনেকে মুখে-অন্তরে আল্লাহর শোকর আদায় করি, কিন্তু যখন আমলের কথা বলা হয়, তখন বলি: আল্লাহ আমাদের হিদায়াত করুন ও আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
হিদায়াত ও মাগফেরাতের দোয়া জরুরী সন্দেহ নেই, কিন্তু হিদায়াত ও মাগফেরাতের জন্য আমরা কি ত্যাগ করি বা তার জন্য প্রস্তুত আছি?!
আমরা যদি তার জন্য প্রস্তুত থাকি, তাহলে তার উপায় ও উপকরণ নিয়ে আলোচনা করা যাক। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে উপকারী বস্তু শিক্ষা দিন, এবং যা শিক্ষা দিয়েছেন তার দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন।
মুসলিম ভাই, ফজর সালাত আদায়ে সহায়ক উপকরণ হচ্ছে তার ফযিলত জানা। বিভিন্ন হাদিসে এসেছে মসজিদে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা একাকী সালাতের চেয়ে উত্তম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاةُ الرجل في جماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمسًا وعشرين ضعفًا؛ ذلك إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرجَ إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة؛ لم يَخْطُ خُطْوَةً إلا رُفعت له بها درجةٌ وحُطَّ عنه بها خطيئةٌ، فإذا صَلَّى لم تزل الملائكةُ تصلي عليه ما دام في مصلَّاه ما لم يحدث : اللهمَّ ارحمه . ولا يزال في صلاة ما انتظر الصلاة» . متَّفَقٌ عليه .
“জামাতের সাথে ব্যক্তির সালাত তার ঘরের সালাত ও বাজারের সালাতের তুলনায় পঁচিশগুণ ফজিলত রাখে। তার কারণ যখন সে অযু করে, খুব সুন্দরভাবে অযু করে, অতঃপর মসজিদের জন্য বের হয়, সালাত ব্যতীত অন্য কারণে নয়, তার প্রতি কদমে মর্তবা বৃদ্ধি পায় ও পাপ মোচন করা হয়। সালাত শেষ হলে ফেরেশতাগণ তার জন্য ইস্তেগফার করে, যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ও তার অযু ভঙ্গ না হয়। তারা বলে: “হে আল্লাহ তাকে রহম কর”। আর যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ সালাতেই থাকে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি মারফু সনদে বর্ণনা করেন:
«مَنْ سَرَّه أن يَلْقَى اللهَ غدًا مسلمًا فليحافظ على هؤلاء الصلوات حيث يُنادى بهنَّ؛ فإنَّ الله – تعالى - شرع لنبيِّكم - صلى الله عليه وسلم - سننَ الهدى وإنهنَّ من سنن الهدى» . رواه مسلم .
“যে ব্যক্তি চায় যে, আগামীকাল সে আল্লাহর সাথে মুসলিম অবস্থায় সাক্ষাত করবে, সে যেন ফরয সালাত ঠিকমত আদায় করে যেখানে আযান দেয়া হয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিদায়াতের পথ বাতলে দিয়েছেন, নিশ্চয় তা হিদায়াতের পথ”। [মুসলিম]
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের সাথে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখবে, আল্লাহ অতিশীঘ্র তাকে নিজ ছায়ায় ছায়া দান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«سبعةٌ يُظلُّهم اللهُ بظلِّه يومَ لا ظلَّ إلا ظلّه ...». وذكر منهم : «ورجلٌ قلبُه معلَّقٌ بالمساجد» . متَّفق عليه .
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ নিজের ছায়ায় ছায়া দান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না ...,” তাদের মধ্যে উল্লেখ করেন: “ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পর্কিত”। [বুখারি ও মুসলিম।]
মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি হলে জামাতের ফযিলত বৃদ্ধি হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وإن صلاةَ الرجل مع الرَّجل أزكى من صلاته وحدَه، وصلاته مع الرَّجلين أزكى من صلاته مع الرجل، وما هو أكثرُ فهو أحبُّ إلى الله تعالى» . أخرجه أبو داود وحسَّنه الألبانيُّ .
“ব্যক্তির সালাত অপর ব্যক্তির সাথে তার একাকী সালাতের তুলনায় উত্তম। দু’জন ব্যক্তির সাথে তার সালাত একজন ব্যক্তির সাথে তার সালাতের তুলনায় উত্তম। সংখ্যা যত বেশী হবে, আল্লাহর নিকট তত প্রিয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন, যুদ্ধের কঠিন, ভয়ানক ও বিপদসংকুল মুহূর্তেও তিনি জামাত ত্যাগ করননি, তবে পরিস্থিতির কারণে জামাতের আকৃতি পরিবর্তন হত। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি জামাতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন, জামাতের নির্দেশ দিতেন ও তার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি বলেন:
«مَنْ صَلَّى أربعين يومًا في جماعة يدركُ التكبيرةَ الأولى كَتَبَ اللهُ له براءتان؛ براءةً من النَّار وبراءةً من النِّفاق» . أخرجه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতের সাথে তাকবীরে উলাসহ সালাত আদায় করে, আল্লাহ তাকে দু’টি মুক্তির সনদ দেন: জাহান্নাম ও নিফাক থেকে মুক্তির সনদ”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
ফজর সালাত অন্যান্য সালাতের চেয়ে অধিক ফযিলতপূর্ণ। এ জন্য তাতে হাজির হতে অধিক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, যে ব্যক্তি ফজর সালাত যত্নসহ আদায় করে, অন্যান্য সালাতে অধিক গুরুত্ব দেয় সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [ الاسراء : ٧٨ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন । নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়”। [সূরা ইসরা: (৭৮)]
এখানে প্রথমে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অতঃপর বিশেষভাবে ফজর সালাত উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ তা ‘সালাতে মাশহুদা’ তথা ফেরেশতাদের উপস্থিতির সালাত। ফজর সালাতে সময় দিন-রাতের ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন, তাই এ সালাতের ফযিলত ও বরকত অধিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ ﴾ [ البقرة : ٢٣٨ ]
“তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে”। [সূরা বাকারা: (২৩৮)]
“সালাতে উস্তা” সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। কেউ বলেছেন ফজর সালাত, কেউ বলেছেন আসর সালাত। অনেকে আসর সালাতকে প্রধান্য দিয়েছেন। কারণ বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থে আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
( كُنَّا نراها الفجر حتى سمعتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يومَ الأحزاب : «شَغَلُونا عن الصَّلاة الوُسْطَى صلاة العصر ملأ اللهُ أجوافهم وقبورَهم نارًا» .
[আমরা ফজর সালাতকে ‘উস্তা’ তথা মধ্যম সালাত মনে করতাম, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের দিন বলেন: “তারা আমাদেরকে সালাতে উস্তা তথা আসর সালাত থেকে বিরত রেখেছে, আল্লাহ তাদের পেট ও কবরকে জাহান্নামের আগুনে ভরে দিন”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فهو في ذمَّة الله، فلا يطلبنَّكم اللهُ من ذمَّته بشيء؛ فإنَّ مَنْ يَطْلُبُه من ذمَّته بشيء يدركه، ثم يكبُّه على وجهه في نار جهنمَ» . رواه مسلم؛
“ফজরের সালাত যে আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায়, অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মাদারিতে হস্তক্ষেপের ধরুন তোমাদেরকে জবাবদিহি না করে, কারণ যে তার জিম্মাদারিতে হস্তক্ষেপ করবে, আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন, অতঃপর চেহারায় ভর করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন”। [মুসলিম।] অর্থাৎ ফজর সালাত আদায়কারী আল্লাহর নিরাপত্তা ও আশ্রয়ে, তার পিছু নেয়া বা তাকে কষ্ট দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যে তা করবে, আল্লাহ তাকে কঠোরভাবে জবাবদিহি করবেন, আল্লাহ যাকে জবাবদিহি করবেন সে পলায়নের জায়গা পাবে না। [আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন সাহিহে মুসলিম।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى العشاءَ في جماعة فكأنَّما قام نصفَ اللَّيْل، ومَنْ صَلَّى الصُّبْحَ في جماعة فَكَأنَّما قامَ الليلَ كلَّه» رواه مسلم .
“যে এশার সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত কিয়াম করল, আর যে ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«مَنْ صَلَّى البَردين دخل الجنةَ» . متفق عليه .
“যে ফজর ও আসর সালাত আদায় করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [বুখারি ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«لَنْ يَلجَ النَّارَ أحدٌ صلَّى قبلَ طلوع الشَّمس وقبل غروبها» . رواه مسلم،
“যে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্য উদিত হওয়ার পরে সালাত আদায় করে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”। [মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«بَشِّر المشَّائين في الظُّلَم إلى المساجد بالنُّور التَّامِّ يومَ القيامة» . أخرجه أبو داود والتِّرمذيُّ وابنُ ماجه، وصحَّحه الألباني .
“অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিন”। [আবু দাউদ, তিরমিযি, ইব্ন মাযাহ, হাদিসটি আলবানি সহিহ বলেছেন।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لو يَعْلم الناسُ ما في النِّداء والصَّفِّ الأَوَّل ثمَّ لم يَجدوا إلا أن يَسْتَهموا لاستهموا، ولو يَعْلمون ما في التَّهْجير لاستبقوا إليه، ولو يعلمون ما في العَتْمَة – صلاة العشاء – والصُّبْح – صلاة الفجر - لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا» . متَّفقٌ عليه .
“মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযিলত জানত, অতঃপর লটারি ব্যতীত অংশ গ্রহণের সুযোগ না পেত, তাহলে অবশ্যই তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। তারা যদি দ্রুত মসজিদে যাওয়ার ফযিলত জানত, তাহলে দ্রুত যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত। তারা যদি এশা ও ফজর সালাতের ফযিলত জানত, তাহলে অবশ্যই তাতে অংশ গ্রহণ করত, যদিও উপুড় হয়ে হয়”। [বুখারি ও মুসলিম।]
অনুরূপ ফজর সালাত নিয়মিত আদায়কারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর দর্শন লাভ করে ধন্য হবে। জারির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসে ছিলাম, হঠাৎ তিনি চাঁদের দিকে তাকালেন, অতঃপর বললেন:
«أَمَا إنَّكم سَتَرَوْنَ ربكم كما ترون هذا لا تُضامون ولا تضاهون في رؤيته، فإن استطعتم أن لا تُغلَبوا على صلاة قبلَ طلوع الشمس وقبلَ غروبها فافعلوا» . ثم قال : ﴿ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوعِ ٱلشَّمۡسِ وَقَبۡلَ غُرُوبِهَاۖ ١٣٠ ﴾ [ طه : ١٣٠ ] . رواه البخاريُّ .
“জেনে রেখ, তোমরা অতিসত্বর তোমাদের রবকে দেখবে যেমন এ চাঁদ দেখছ, তাকে দেখতে ভীর ও ঠাসাঠাসি হবে না। যদি তোমরা সূর্য উদিত ও সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত ঠিক সময়ে আদায়ে সক্ষম হও, তাহলে তাই কর। অতঃপর বলেন: “এবং তাসবীহ পাঠ কর তোমার রবের প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমে, সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে” [সূরা ত্বহা: (১৩০)]। [বুখারি।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম, এবার ধারণা করুন ফজরের ফরযের ফযিলত কিরূপ?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«رَكْعَتا الفجر خيرٌ من الدُّنْيا وما فيها» . رواه مسلم .
“ফজরের দু’রাকাত দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম”। [মুসলিম।] যে আরও অধিক নেকি অর্জন করতে চায়, সে যেন ফজর সালাত শেষে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বসে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى الفجرَ في جماعة ثم قعد يذكر الله حتى تطلع الشمسُ ثم صلَّى ركعتين كانت له كأجر حجَّة وعمرة تامَّة تامَّة تامَّة» . رواه التِّرْمذيُّ وحسَّنَه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজর সালাত আদায় করল, অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকল, অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করল, তার পরিপূর্ণ হজ ও ওমরার সাওয়াব হবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
এসব সাওয়াব তার জন্য যে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সালাত আদায় করে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো অধিক দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ঘুমের ঘোরে রাত কাটায় ও ফজরের সালাতে অলসতা করে তাদেরকে আল্লাহ মুনাফিক বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ ﴾ [ النساء : ١٤٢ ]
“আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদেরকে দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে”। [সূরা নিসা: (১৪২)]
প্রিয় পাঠক, এবার লক্ষ্য করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ফজর সালাত ও জামাত ত্যাগকারীকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ ﴾ [ مريم : ٥٩ ]
“তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে”। [সূরা মারইয়াম: (৫৯)]
এখানে সালাত বিনষ্ট করা অর্থ কি বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে আলেমগণ বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন। কেউ বলেছেন নির্দিষ্ট সময়ে আদায় না করা, কেউ বলেছেন সালাতের শর্ত পুরণ না করা, কেউ বলেছেন জামাত ত্যাগ করা, তবে প্রত্যেক অভিমত এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়। [আদওয়াউল বায়ান, লি শানকিতি, দেখুন সূরা মারইয়ামের তাফসীর।] তিনি আরও ইরশাদ করেন:
﴿ فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ ٤ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥ ﴾ [ الماعون : ٤، ٥ ]
“অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, (৪) যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী”। [সূরা মাউন: (৪-৫)]
এখানে ‘সাহুন’ অর্থ সব সময় কিংবা অধিকাংশ সময় সালাতে দেরি করা, অথবা সালাতের রুকনে ত্রুটি করা, অথবা তাতে বিনয়ীভাব না থাকা, তবে সকল অর্থই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। [ইব্নে কারিস, তাফসীর সূরা মাউন: (৪/৬৮১)]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لقد هَمَمْتُ أن آمرَ فتيتي فيجمعوا لي حزمًا من حطب، ثم آتي قَوْمًا يُصَلُّون في بيوتهم ليست بهم علَّةٌ فَأَحْرقها عليهم» . رواه مسلم .
“আমি ইচ্ছা করেছি আমার যুবকদের নির্দেশ দিব, তারা আমার জন্য লাকড়ি জমা করবে, অতঃপর আমি তাদের নিকট যাব যারা বিনা কারণে ঘরে সালাত আদায় করে এবং তাদেরকে ঘরসহ জ্বালিয়ে দিব”। [মুসলিম।]
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ سمع النداءَ فلم يَمْنَعْه من اتِّباعه عذرٌ - قالوا : وما العذرُ؟ قال : خوفٌ أو مرضٌ - لم تُقْبَلْ منه صلاتُه التي صَلَّى» . رواه ابنُ داود وابنُ حبَّان في صحيحه وصحَّحَه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করল, অতঃপর কোন ওজর তাকে আযানের অনুসরণ থেকে বিরত রাখল না”, তারা বলল: ওজর কি? তিনি বললেন: “ভয় অথবা অসুস্থতা”। তার সালাত কুবল হবে না, যা সে আদায় করেছে”। [ইব্ন আবু দাউদ, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু সনদে বর্ণিত:
«ولو أَنَّكم صَلَّيتم في بيوتكم كما يصلي هذا المتخلف في بيته لتركتم سنةَ نبيِّكم، ولو تركتم سنةَ نبيِّكم لَضَلَلْتُم» رواه مسلم .
“যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর, যেমন জামাত ত্যাগ করে এ ব্যক্তি ঘরে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ত্যাগ করবে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ত্যাগ কর তাহলে গোমরাহ হবে”। [মুসলিম।]
স্বপ্ন বর্ণনার হাদিসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«... إنَّا أَتَيْنا على رجل مضطجع وإذا آخرُ قائمٌ عليه بصخرة، وإذا هو يهوي بالصَّخْرَة لرأسه فيثلغ رأسه فيتدهد الحجرُ ... أما الرجلُ الأولُ الذي أتيت يُثْلَغُ رَأْسُه بالحجر فإنَّه الرَّجلُ يأخذُ القرآنَ فيرفضه وينامُ عن الصَّلاة المكتوبة» . رواه البخاريُّ .
“... আমরা এক শায়িত ব্যক্তির নিকট আসলাম, যার নিকট অপর ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে। যখন সে তার মাথায় পাথর দ্বারা আঘাত করে, তার মাথা থেঁতলে যায় অতঃপর নিক্ষেপকারীর নিকট পাথর ফিরে আসে... প্রথম ব্যক্তি যার মাথা পাথর দ্বারা থেঁতলে দেয়া হত, সে ঐ ব্যক্তি যে কুরআন হাতে নিয়ে দূরে নিক্ষেপ করত ও ফরয না পড়ে ঘুমিয়ে যেত”। [বুখারি।]
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«ما من ثلاثة في قرية ولا بدو لا تقام فيهم الصَّلاةُ إلا قد اسْتَحْوَذَ عليهم الشَّيطانُ، فعليك بالجماعة؛ فإنَّما يأكل الذِّئبُ القاصيةَ» . رواه أبو داود والنَّسائيُّ وحسَّنَه الألبانيُّ .
“যে গ্রাম কিংবা জনপদে তিন জন্য ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে সালাতের জামাত হয় না, তাদের উপর অবশ্যই শয়তান প্রভাব বিস্তার করবে। অতএব তুমি জামাত আঁকড়ে ধর, কারণ বাঘ দলছুট বকরিকেই খায়”। [আবু দাউদ, নাসায়ি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
হে আল্লাহর বান্দা সতর্ক হন, আপনি দলছুট বকরির ন্যায় শয়তানের আক্রমণের শিকার হবেন না। জামাতের সাথে সালাত আদায় করুন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরুন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা নূর: (৬৩)]
প্রিয় পাঠক, কিয়ামতের দিন দু’দল ব্যতীত তৃতীয় কোন দল হবে না। এক দল মুমিন অপর দল কাফির। তাদের উভয়ের আমল যেমন সমান নয়, প্রতিদানও সমান হবে না। আপনি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হতে চান? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَفَمَن كَانَ مُؤۡمِنٗا كَمَن كَانَ فَاسِقٗاۚ لَّا يَسۡتَوُۥنَ ١٨ أَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡمَأۡوَىٰ نُزُلَۢا بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٩ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُواْ فَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَآ أُعِيدُواْ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمۡ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٠ وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَدۡنَىٰ دُونَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَكۡبَرِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢١ ﴾ [ السجدة : ١٨، ٢١ ]
“যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মত? তারা সমান নয়। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের বাসস্থান হবে জান্নাত, তারা যা করত তার আপ্যায়ন হিসেবে। আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আযাবের পূর্বে লঘু আযাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে”। [সূরা সেজদা: (১৮-২১)]
প্রিয় পাঠক, সতর্ক হন, আপনার জন্য বলছি, আপনি রবের দিকে ফিরে যান, ঠিক সময়ে সালাত আদায় করুন ও ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্রতী হন। তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بَِٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [ السجدة : ٢٢ ]
“আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। [সূরা সেজদা: (২২)]
আমরা যদি আমাদের পূর্ব পুরুষদের অবস্থা পর্যালোচনা করি, দেখব তারা জামাতের প্রতি খুব যত্নশীল ছিলেন। সহসা তাদের থেকে তাকবীরে তাহরীমা ছুটত না। তারা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। তারা ফরয আদায় করে নফলের প্রতি মনোযোগী ছিলেন, বরং তারা একে অপরকে কিয়ামুল লাইলের কারণে ভৎর্সনা করতেন, ফজরের সালাত তো বটেই। এভাবে তারা দুনিয়ার নেতৃত্ব, সম্মান ও কর্তৃত্বের মালিক হয়েছেন। যদি বর্তমান যুগের মুসলিম তাদের পূর্বাস্থায় ফিরে যায়, তারা তাদের ন্যায় নেতৃত্বের মালিক হবে, যা ফজরের জামাতে উপস্থিত হওয়া ব্যতীত সম্ভব নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صلاةُ الرجل في جماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمسًا وعشرين ضعفًا؛ ذلك إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرجَ إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة؛ لم يَخْطُ خُطْوَةً إلا رُفعت له بها درجةٌ وحُطَّ عنه بها خطيئةٌ، فإذا صَلَّى لم تزل الملائكةُ تصلي عليه ما دام في مصلَّاه ما لم يحدث : اللهمَّ ارحمه . ولا يزال في صلاة ما انتظر الصلاة» . متَّفَقٌ عليه .
“জামাতের সাথে ব্যক্তির সালাত তার ঘরের সালাত ও বাজারের সালাতের তুলনায় পঁচিশগুণ ফজিলত রাখে। তার কারণ যখন সে অযু করে, খুব সুন্দরভাবে অযু করে, অতঃপর মসজিদের জন্য বের হয়, সালাত ব্যতীত অন্য কারণে নয়, তার প্রতি কদমে মর্তবা বৃদ্ধি পায় ও পাপ মোচন করা হয়। সালাত শেষ হলে ফেরেশতাগণ তার জন্য ইস্তেগফার করে, যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ও তার অযু ভঙ্গ না হয়। তারা বলে: “হে আল্লাহ তাকে রহম কর”। আর যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ সালাতেই থাকে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি মারফু সনদে বর্ণনা করেন:
«مَنْ سَرَّه أن يَلْقَى اللهَ غدًا مسلمًا فليحافظ على هؤلاء الصلوات حيث يُنادى بهنَّ؛ فإنَّ الله – تعالى - شرع لنبيِّكم - صلى الله عليه وسلم - سننَ الهدى وإنهنَّ من سنن الهدى» . رواه مسلم .
“যে ব্যক্তি চায় যে, আগামীকাল সে আল্লাহর সাথে মুসলিম অবস্থায় সাক্ষাত করবে, সে যেন ফরয সালাত ঠিকমত আদায় করে যেখানে আযান দেয়া হয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিদায়াতের পথ বাতলে দিয়েছেন, নিশ্চয় তা হিদায়াতের পথ”। [মুসলিম]
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের সাথে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখবে, আল্লাহ অতিশীঘ্র তাকে নিজ ছায়ায় ছায়া দান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«سبعةٌ يُظلُّهم اللهُ بظلِّه يومَ لا ظلَّ إلا ظلّه ...». وذكر منهم : «ورجلٌ قلبُه معلَّقٌ بالمساجد» . متَّفق عليه .
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ নিজের ছায়ায় ছায়া দান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না ...,” তাদের মধ্যে উল্লেখ করেন: “ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পর্কিত”। [বুখারি ও মুসলিম।]
মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি হলে জামাতের ফযিলত বৃদ্ধি হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وإن صلاةَ الرجل مع الرَّجل أزكى من صلاته وحدَه، وصلاته مع الرَّجلين أزكى من صلاته مع الرجل، وما هو أكثرُ فهو أحبُّ إلى الله تعالى» . أخرجه أبو داود وحسَّنه الألبانيُّ .
“ব্যক্তির সালাত অপর ব্যক্তির সাথে তার একাকী সালাতের তুলনায় উত্তম। দু’জন ব্যক্তির সাথে তার সালাত একজন ব্যক্তির সাথে তার সালাতের তুলনায় উত্তম। সংখ্যা যত বেশী হবে, আল্লাহর নিকট তত প্রিয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন, যুদ্ধের কঠিন, ভয়ানক ও বিপদসংকুল মুহূর্তেও তিনি জামাত ত্যাগ করননি, তবে পরিস্থিতির কারণে জামাতের আকৃতি পরিবর্তন হত। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি জামাতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন, জামাতের নির্দেশ দিতেন ও তার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনি বলেন:
«مَنْ صَلَّى أربعين يومًا في جماعة يدركُ التكبيرةَ الأولى كَتَبَ اللهُ له براءتان؛ براءةً من النَّار وبراءةً من النِّفاق» . أخرجه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতের সাথে তাকবীরে উলাসহ সালাত আদায় করে, আল্লাহ তাকে দু’টি মুক্তির সনদ দেন: জাহান্নাম ও নিফাক থেকে মুক্তির সনদ”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
ফজর সালাত অন্যান্য সালাতের চেয়ে অধিক ফযিলতপূর্ণ। এ জন্য তাতে হাজির হতে অধিক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, যে ব্যক্তি ফজর সালাত যত্নসহ আদায় করে, অন্যান্য সালাতে অধিক গুরুত্ব দেয় সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [ الاسراء : ٧٨ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন । নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়”। [সূরা ইসরা: (৭৮)]
এখানে প্রথমে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অতঃপর বিশেষভাবে ফজর সালাত উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ তা ‘সালাতে মাশহুদা’ তথা ফেরেশতাদের উপস্থিতির সালাত। ফজর সালাতে সময় দিন-রাতের ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন, তাই এ সালাতের ফযিলত ও বরকত অধিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ ﴾ [ البقرة : ٢٣٨ ]
“তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে”। [সূরা বাকারা: (২৩৮)]
“সালাতে উস্তা” সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। কেউ বলেছেন ফজর সালাত, কেউ বলেছেন আসর সালাত। অনেকে আসর সালাতকে প্রধান্য দিয়েছেন। কারণ বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থে আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
( كُنَّا نراها الفجر حتى سمعتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يومَ الأحزاب : «شَغَلُونا عن الصَّلاة الوُسْطَى صلاة العصر ملأ اللهُ أجوافهم وقبورَهم نارًا» .
[আমরা ফজর সালাতকে ‘উস্তা’ তথা মধ্যম সালাত মনে করতাম, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের দিন বলেন: “তারা আমাদেরকে সালাতে উস্তা তথা আসর সালাত থেকে বিরত রেখেছে, আল্লাহ তাদের পেট ও কবরকে জাহান্নামের আগুনে ভরে দিন”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فهو في ذمَّة الله، فلا يطلبنَّكم اللهُ من ذمَّته بشيء؛ فإنَّ مَنْ يَطْلُبُه من ذمَّته بشيء يدركه، ثم يكبُّه على وجهه في نار جهنمَ» . رواه مسلم؛
“ফজরের সালাত যে আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায়, অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মাদারিতে হস্তক্ষেপের ধরুন তোমাদেরকে জবাবদিহি না করে, কারণ যে তার জিম্মাদারিতে হস্তক্ষেপ করবে, আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন, অতঃপর চেহারায় ভর করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন”। [মুসলিম।] অর্থাৎ ফজর সালাত আদায়কারী আল্লাহর নিরাপত্তা ও আশ্রয়ে, তার পিছু নেয়া বা তাকে কষ্ট দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যে তা করবে, আল্লাহ তাকে কঠোরভাবে জবাবদিহি করবেন, আল্লাহ যাকে জবাবদিহি করবেন সে পলায়নের জায়গা পাবে না। [আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন সাহিহে মুসলিম।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى العشاءَ في جماعة فكأنَّما قام نصفَ اللَّيْل، ومَنْ صَلَّى الصُّبْحَ في جماعة فَكَأنَّما قامَ الليلَ كلَّه» رواه مسلم .
“যে এশার সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত কিয়াম করল, আর যে ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«مَنْ صَلَّى البَردين دخل الجنةَ» . متفق عليه .
“যে ফজর ও আসর সালাত আদায় করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [বুখারি ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«لَنْ يَلجَ النَّارَ أحدٌ صلَّى قبلَ طلوع الشَّمس وقبل غروبها» . رواه مسلم،
“যে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্য উদিত হওয়ার পরে সালাত আদায় করে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”। [মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
«بَشِّر المشَّائين في الظُّلَم إلى المساجد بالنُّور التَّامِّ يومَ القيامة» . أخرجه أبو داود والتِّرمذيُّ وابنُ ماجه، وصحَّحه الألباني .
“অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিন”। [আবু দাউদ, তিরমিযি, ইব্ন মাযাহ, হাদিসটি আলবানি সহিহ বলেছেন।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لو يَعْلم الناسُ ما في النِّداء والصَّفِّ الأَوَّل ثمَّ لم يَجدوا إلا أن يَسْتَهموا لاستهموا، ولو يَعْلمون ما في التَّهْجير لاستبقوا إليه، ولو يعلمون ما في العَتْمَة – صلاة العشاء – والصُّبْح – صلاة الفجر - لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا» . متَّفقٌ عليه .
“মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযিলত জানত, অতঃপর লটারি ব্যতীত অংশ গ্রহণের সুযোগ না পেত, তাহলে অবশ্যই তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। তারা যদি দ্রুত মসজিদে যাওয়ার ফযিলত জানত, তাহলে দ্রুত যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত। তারা যদি এশা ও ফজর সালাতের ফযিলত জানত, তাহলে অবশ্যই তাতে অংশ গ্রহণ করত, যদিও উপুড় হয়ে হয়”। [বুখারি ও মুসলিম।]
অনুরূপ ফজর সালাত নিয়মিত আদায়কারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর দর্শন লাভ করে ধন্য হবে। জারির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসে ছিলাম, হঠাৎ তিনি চাঁদের দিকে তাকালেন, অতঃপর বললেন:
«أَمَا إنَّكم سَتَرَوْنَ ربكم كما ترون هذا لا تُضامون ولا تضاهون في رؤيته، فإن استطعتم أن لا تُغلَبوا على صلاة قبلَ طلوع الشمس وقبلَ غروبها فافعلوا» . ثم قال : ﴿ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوعِ ٱلشَّمۡسِ وَقَبۡلَ غُرُوبِهَاۖ ١٣٠ ﴾ [ طه : ١٣٠ ] . رواه البخاريُّ .
“জেনে রেখ, তোমরা অতিসত্বর তোমাদের রবকে দেখবে যেমন এ চাঁদ দেখছ, তাকে দেখতে ভীর ও ঠাসাঠাসি হবে না। যদি তোমরা সূর্য উদিত ও সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত ঠিক সময়ে আদায়ে সক্ষম হও, তাহলে তাই কর। অতঃপর বলেন: “এবং তাসবীহ পাঠ কর তোমার রবের প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমে, সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে” [সূরা ত্বহা: (১৩০)]। [বুখারি।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম, এবার ধারণা করুন ফজরের ফরযের ফযিলত কিরূপ?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«رَكْعَتا الفجر خيرٌ من الدُّنْيا وما فيها» . رواه مسلم .
“ফজরের দু’রাকাত দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম”। [মুসলিম।] যে আরও অধিক নেকি অর্জন করতে চায়, সে যেন ফজর সালাত শেষে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বসে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى الفجرَ في جماعة ثم قعد يذكر الله حتى تطلع الشمسُ ثم صلَّى ركعتين كانت له كأجر حجَّة وعمرة تامَّة تامَّة تامَّة» . رواه التِّرْمذيُّ وحسَّنَه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজর সালাত আদায় করল, অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকল, অতঃপর দু’রাকাত সালাত আদায় করল, তার পরিপূর্ণ হজ ও ওমরার সাওয়াব হবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
এসব সাওয়াব তার জন্য যে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সালাত আদায় করে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো অধিক দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ঘুমের ঘোরে রাত কাটায় ও ফজরের সালাতে অলসতা করে তাদেরকে আল্লাহ মুনাফিক বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ ﴾ [ النساء : ١٤٢ ]
“আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদেরকে দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে”। [সূরা নিসা: (১৪২)]
প্রিয় পাঠক, এবার লক্ষ্য করুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ফজর সালাত ও জামাত ত্যাগকারীকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ ﴾ [ مريم : ٥٩ ]
“তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে”। [সূরা মারইয়াম: (৫৯)]
এখানে সালাত বিনষ্ট করা অর্থ কি বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে আলেমগণ বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন। কেউ বলেছেন নির্দিষ্ট সময়ে আদায় না করা, কেউ বলেছেন সালাতের শর্ত পুরণ না করা, কেউ বলেছেন জামাত ত্যাগ করা, তবে প্রত্যেক অভিমত এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়। [আদওয়াউল বায়ান, লি শানকিতি, দেখুন সূরা মারইয়ামের তাফসীর।] তিনি আরও ইরশাদ করেন:
﴿ فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ ٤ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥ ﴾ [ الماعون : ٤، ٥ ]
“অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, (৪) যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী”। [সূরা মাউন: (৪-৫)]
এখানে ‘সাহুন’ অর্থ সব সময় কিংবা অধিকাংশ সময় সালাতে দেরি করা, অথবা সালাতের রুকনে ত্রুটি করা, অথবা তাতে বিনয়ীভাব না থাকা, তবে সকল অর্থই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। [ইব্নে কারিস, তাফসীর সূরা মাউন: (৪/৬৮১)]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لقد هَمَمْتُ أن آمرَ فتيتي فيجمعوا لي حزمًا من حطب، ثم آتي قَوْمًا يُصَلُّون في بيوتهم ليست بهم علَّةٌ فَأَحْرقها عليهم» . رواه مسلم .
“আমি ইচ্ছা করেছি আমার যুবকদের নির্দেশ দিব, তারা আমার জন্য লাকড়ি জমা করবে, অতঃপর আমি তাদের নিকট যাব যারা বিনা কারণে ঘরে সালাত আদায় করে এবং তাদেরকে ঘরসহ জ্বালিয়ে দিব”। [মুসলিম।]
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ سمع النداءَ فلم يَمْنَعْه من اتِّباعه عذرٌ - قالوا : وما العذرُ؟ قال : خوفٌ أو مرضٌ - لم تُقْبَلْ منه صلاتُه التي صَلَّى» . رواه ابنُ داود وابنُ حبَّان في صحيحه وصحَّحَه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করল, অতঃপর কোন ওজর তাকে আযানের অনুসরণ থেকে বিরত রাখল না”, তারা বলল: ওজর কি? তিনি বললেন: “ভয় অথবা অসুস্থতা”। তার সালাত কুবল হবে না, যা সে আদায় করেছে”। [ইব্ন আবু দাউদ, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু সনদে বর্ণিত:
«ولو أَنَّكم صَلَّيتم في بيوتكم كما يصلي هذا المتخلف في بيته لتركتم سنةَ نبيِّكم، ولو تركتم سنةَ نبيِّكم لَضَلَلْتُم» رواه مسلم .
“যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর, যেমন জামাত ত্যাগ করে এ ব্যক্তি ঘরে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ত্যাগ করবে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ত্যাগ কর তাহলে গোমরাহ হবে”। [মুসলিম।]
স্বপ্ন বর্ণনার হাদিসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«... إنَّا أَتَيْنا على رجل مضطجع وإذا آخرُ قائمٌ عليه بصخرة، وإذا هو يهوي بالصَّخْرَة لرأسه فيثلغ رأسه فيتدهد الحجرُ ... أما الرجلُ الأولُ الذي أتيت يُثْلَغُ رَأْسُه بالحجر فإنَّه الرَّجلُ يأخذُ القرآنَ فيرفضه وينامُ عن الصَّلاة المكتوبة» . رواه البخاريُّ .
“... আমরা এক শায়িত ব্যক্তির নিকট আসলাম, যার নিকট অপর ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে। যখন সে তার মাথায় পাথর দ্বারা আঘাত করে, তার মাথা থেঁতলে যায় অতঃপর নিক্ষেপকারীর নিকট পাথর ফিরে আসে... প্রথম ব্যক্তি যার মাথা পাথর দ্বারা থেঁতলে দেয়া হত, সে ঐ ব্যক্তি যে কুরআন হাতে নিয়ে দূরে নিক্ষেপ করত ও ফরয না পড়ে ঘুমিয়ে যেত”। [বুখারি।]
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«ما من ثلاثة في قرية ولا بدو لا تقام فيهم الصَّلاةُ إلا قد اسْتَحْوَذَ عليهم الشَّيطانُ، فعليك بالجماعة؛ فإنَّما يأكل الذِّئبُ القاصيةَ» . رواه أبو داود والنَّسائيُّ وحسَّنَه الألبانيُّ .
“যে গ্রাম কিংবা জনপদে তিন জন্য ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে সালাতের জামাত হয় না, তাদের উপর অবশ্যই শয়তান প্রভাব বিস্তার করবে। অতএব তুমি জামাত আঁকড়ে ধর, কারণ বাঘ দলছুট বকরিকেই খায়”। [আবু দাউদ, নাসায়ি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
হে আল্লাহর বান্দা সতর্ক হন, আপনি দলছুট বকরির ন্যায় শয়তানের আক্রমণের শিকার হবেন না। জামাতের সাথে সালাত আদায় করুন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরুন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]
“তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা নূর: (৬৩)]
প্রিয় পাঠক, কিয়ামতের দিন দু’দল ব্যতীত তৃতীয় কোন দল হবে না। এক দল মুমিন অপর দল কাফির। তাদের উভয়ের আমল যেমন সমান নয়, প্রতিদানও সমান হবে না। আপনি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হতে চান? আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَفَمَن كَانَ مُؤۡمِنٗا كَمَن كَانَ فَاسِقٗاۚ لَّا يَسۡتَوُۥنَ ١٨ أَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡمَأۡوَىٰ نُزُلَۢا بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٩ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُواْ فَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَآ أُعِيدُواْ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمۡ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٠ وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَدۡنَىٰ دُونَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَكۡبَرِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢١ ﴾ [ السجدة : ١٨، ٢١ ]
“যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মত? তারা সমান নয়। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের বাসস্থান হবে জান্নাত, তারা যা করত তার আপ্যায়ন হিসেবে। আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আযাবের পূর্বে লঘু আযাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে”। [সূরা সেজদা: (১৮-২১)]
প্রিয় পাঠক, সতর্ক হন, আপনার জন্য বলছি, আপনি রবের দিকে ফিরে যান, ঠিক সময়ে সালাত আদায় করুন ও ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্রতী হন। তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بَِٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [ السجدة : ٢٢ ]
“আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী”। [সূরা সেজদা: (২২)]
আমরা যদি আমাদের পূর্ব পুরুষদের অবস্থা পর্যালোচনা করি, দেখব তারা জামাতের প্রতি খুব যত্নশীল ছিলেন। সহসা তাদের থেকে তাকবীরে তাহরীমা ছুটত না। তারা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। তারা ফরয আদায় করে নফলের প্রতি মনোযোগী ছিলেন, বরং তারা একে অপরকে কিয়ামুল লাইলের কারণে ভৎর্সনা করতেন, ফজরের সালাত তো বটেই। এভাবে তারা দুনিয়ার নেতৃত্ব, সম্মান ও কর্তৃত্বের মালিক হয়েছেন। যদি বর্তমান যুগের মুসলিম তাদের পূর্বাস্থায় ফিরে যায়, তারা তাদের ন্যায় নেতৃত্বের মালিক হবে, যা ফজরের জামাতে উপস্থিত হওয়া ব্যতীত সম্ভব নয়।
আমাদের প্রতি আল্লাহ মেহেরবান যে, তিনি নফলের বিধান দিয়েছেন, যেন ফরযের ত্রুটিগুলো দূর হয় ও আমাদের আমলের পাল্লা ভারী হয়। আল্লাহ প্রত্যেক ফরযের ত্রুটি দূর করার জন্য তার অনুরূপ নফলের বিধান দিয়েছেন। সালাত দীনের খুঁটি, তার পূর্ণতার জন্য আল্লাহ নফলের বিধান দিয়েছেন। ফরযের পর উত্তম সালাত কিয়ামুল লাইল। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«إنَّ أولَ ما يُحاسب به العبدُ يوم القيامة من عمله صلاتُه؛ فإنْ صلحت فقد أفلحَ وأنجحَ، وإن فسدت فقد خاب وخسر؛ فإن انتقص من فريضته شيءٌ قال الرَّبُّ - عزَّ وجلَّ : انظروا هل لعبدي من تَطَوُّع فيكمل بها ما انتقص من الفريضة، ثمَّ يكونُ سائر عمله على ذلك» . رواه التِّرمذيُّ وأبو داود وابن ماجه وصحَّحه الألبانيُّ .
“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার আমলের মধ্যে তার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত ঠিক হয়, তাহলে সে নাজাত পাবে ও মুক্ত হবে। আর যদি তার সালাত বিনষ্ট হয়, তাহলে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরযের অংশ কম হয়, আল্লাহ বলবেন: দেখ আমার বান্দার নফল আছে কি-না, যার দ্বারা ফরযের ঘাটতি পুরো করা যায়। অতঃপর অন্যান্য আমলের হিসেবে এভাবে হবে”। [তিরমিযি, আবু দাউদ, ইব্ন মাজাহ, হাদিসটি শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন:
«ما تقرَّب إليَّ عبدي بأحبَّ مما افترضته عليه، ولا يزالُ عبدي يتقرَّبُ إليَّ بالنوافل حتى أحبَّه، فإذا أحببتُه كنتُ سمعَه الذي يَسْمَعُ به ...». متفق عليه .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার বান্দার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে প্রিয় কোন আমল দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্যে অগ্রসর হতে থাকে এক পর্যায়ে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, আমি তার কর্ণে পরিণত হই যার দ্বারা সে শোনে...”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আল্লাহ তা‘আলা প্রথম কিয়ামুল লাইল ফরয করেছেন, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীগণ এক বছর কিয়াম করেন, আল্লাহ বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا ٢ ﴾ [ المزمل : ١، ٢ ]
“হে চাদর আবৃত! (১) রাতে সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া”। [সূরা মুযযামমিল: (১-২)]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
" فإنَّ اللهَ افترض قيامَ اللَّيل في أَوَّل هذه السورة فقام نبيُّ الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه حولاً، وأمسك اللهُ خاتمتَها اثني عشر شهرًا حتى أنزل اللهُ في آخر هذه السُّورة التَّخْفيفَ، فصار قيامُ اللَّيْل تَطَوُّعًا بعدَ فريضة . رواه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার প্রথমে কিয়ামুল লাইল ফরয করেছেন, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীগণ এক বছর কিয়াম করেন, অতঃপর বারো মাস পর আল্লাহ এ সূরার শেষ আয়াত নাযিল করে সহজ করেন, ফলে ফরয কিয়ামুল লাইল নফলে পরিণত হয়”। [মুসলিম।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾ [ الاسراء : ٧٨، ٧٩ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন”। [সূরা ইসরা: (৭৮-৭৯)]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর আল্লাহ তাহাজ্জুদের উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ তুমি ঘুমের পর দাঁড়াও। তোমার জন্য তা অতিরিক্ত, অর্থাৎ অন্যান্য ফরযের উপর এটা অতিরিক্ত ফরয। কেউ বলেছেন: উম্মতের ন্যায় তার উপরও তাহাজ্জুদ নফল। মুজাহিদ ও কাতাদাহ এ অভিমত প্রকাশ করেছেন। [সংক্ষিপ্ত তাফসীরে বগভী।] আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَسَبِّحۡهُ وَإِدۡبَٰرَ ٱلنُّجُومِ ٤٩ ﴾ [ الطور : ٤٨ ]
“আর রাতের কিছু অংশে এবং নক্ষত্রের অস্ত যাবার পর তার তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা তুর: (৪৮)] তিনি অন্যত্র বলেন:
﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَٱسۡجُدۡ لَهُۥ وَسَبِّحۡهُ لَيۡلٗا طَوِيلًا ٢٦ ﴾ [ الانسان : ٢٦ ]
“আর রাতের একাংশে তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হও এবং দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা ইনসান: (৪৮)]
কিয়ামুল লাইলের প্রতি এসব নির্দেশ মোস্তাহাব পর্যায়ভুক্ত, যেমন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব আল্লাহ আপনার উপর যা ওয়াজিব করেছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। এ ওয়াজিবই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, যার দ্বারা আপনি তার নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হবেন। আপনি দুর্বল বান্দা, আপনার রবের ক্ষমা, করুণা, প্রতিদান ও সাওয়াবের ভিখারি, অতএব রাতের আধারে নফলের প্রতি মনোযোগ দিন। কারণ ফরযের পর তাই সর্বোত্তম ইবাদত। স্মরণ করুন কিয়ামুল লাইল মুমিন বান্দাদের গুণ, যাদের তিনি প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ করেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [ السجدة : ١٦ ]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে”। [সূরা সেজদা: (১৬)] পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রতিদান উল্লেখ করেছেন, যা তাদের আমল থেকে মহান। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٧ ]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কি জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজদা: (১৭)]
কি মহান নিয়ামত ও মহৎ প্রতিদান! তার তুলনায় আমাদের আমলের কি মূল্য?! মুমিন ব্যক্তি যদি এ নিয়ামতের কথা স্মরণ করে আমল করে, তাহলে সে কোন ক্লান্তি অনুভব করে না, বরং জান্নাতে বসবাস করার অতুলনীয় স্বাদ আস্বাদন করে, যা আল্লাহর ইবাদাতে রাত-জাগা ব্যতীত অর্জন হয় না। রাতের অন্ধকারে ইবাদাতকারী বান্দাদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন:
﴿ قُلۡ ءَامِنُواْ بِهِۦٓ أَوۡ لَا تُؤۡمِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهِۦٓ إِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ يَخِرُّونَۤ لِلۡأَذۡقَانِۤ سُجَّدٗاۤ ١٠٧ وَيَقُولُونَ سُبۡحَٰنَ رَبِّنَآ إِن كَانَ وَعۡدُ رَبِّنَا لَمَفۡعُولٗا ١٠٨ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [ الاسراء : ١٠٧، ١٠٩ ]
“বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে”। [সূরা ইসরা: (১০৭-১০৯)] তাদের আরো একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি:
﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [ الذاريات : ١٧، ١٨ ]
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত”। [সূরা যারিয়াত: (১৭-১৮)] তিনি আরো বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدٗا وَقِيَٰمٗا ٦٤ ﴾ [ الفرقان : ٦٤ ]
“আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে”। [সূরা ফুরকান: (৬৪)]
প্রিয় ভাই ও বোন, এসব গুণাবলি আল্লাহকে মহব্বতকারী মুমিন বান্দাদের। আমরা যেন তাদের ন্যায় আমল করে আল্লাহর নৈকট্য ও মহব্বত অর্জনে ব্রতী হই, তাই তিনি তাদের গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার উত্তম পন্থা কিয়ামুল লাইল। সর্বাগ্রে তা অর্জন করেছেন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞إِنَّ رَبَّكَ يَعۡلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدۡنَىٰ مِن ثُلُثَيِ ٱلَّيۡلِ وَنِصۡفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ وَطَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَۚ ٢٠ ﴾ [ المزمل : ٢٠ ]
“নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও”। [সূরা মুযযাম্মিল: (২০)] নিশ্চয় তাদের আমল আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আহযাব: (২১)]
প্রিয় পাঠক, আপনি কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নশীল হন, তাতে আত্মনিয়োগ করুন ও তার প্রতি মনোযোগী হন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক হাদিস লক্ষ্য করুন:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أفضلُ الصِّيام بعدَ رمضانَ شهرُ الله المحرمُ، وأفضلُ الصَّلاة بعد الفريضة صلاةُ اللَّيل» . رواه مسلم .
“রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম মহররম মাসের সিয়াম। আর ফরযের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত”। [মুসলিম।]
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داود؛ كان ينامُ نصفَ الليل ويقومُ ثلثه وينامُ سدسه، ويصومُ يومًا ويفطر يومًا» . متَّفق عليه .
“আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সালাত দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত, তিনি রাতের অর্ধেক ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও এক দিন ইফতার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
সালেম ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন:
«يا محمدُ عش ما شئتَ؛ فإنك ميتٌ، واعمل ما شئت فإنَّك مجزيٌّ به، وأحبب من شئتَ فإنَّك مفارقه، واعلم أنَّ شرفَ المؤمن قيامُ الليل، وعزَّه استغناؤه عن الناس» . رواه الحاكم والطبرانيُّ، وحسَّنه الألبانيُّ .
“হে মুহাম্মদ, যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকুন, অবশেষে আপনি মারা যাবেন। যা ইচ্ছা আমল করুন, তার প্রতিদান অবশ্যই আপনাকে দেয়া হবে। যাকে ইচ্ছা মুহাব্বত করুন, আপনি তাকে অবশ্যই ছেড়ে যাবেন। জেনে রাখুন, মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইলে। কিয়ামুল লাইলে রয়েছে তার সম্মান ও মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা”। [হাকেম ও তাবরানি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
سُئل رسولُ الله صلى الله عليه وسلم : أيُّ الصلاة أفضلُ؟ قال : «طول القنوت» . رواه مسلم . والقنوتُ : القيامُ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কোন সালাত সর্বোত্তম? তিনি বলেন: “লম্বা কুনুত”। [মুসলিম।] অর্থাৎ দীর্ঘ কিয়াম। আল্লাহর যে বান্দা রাতে কিয়াম করে, সে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। হাদিসে এসেছে:
«أقربُ ما يكون الرَّبُّ من العبد في جوف اللَّيْل الآخر؛ فإن استطعتَ أن تكونَ ممَّن يذكرُ الله في تلك السَّاعة فكُن» . رواه الترمذي وصححه الألباني .
“বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় রাতের শেষ ভাগে। যদি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার যারা আল্লাহকে রাতের শেষ ভাগে স্মরণ করে তাহলে হয়ে যাও”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কুরআনধারী ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا حسد إلا في اثنتين رجل آتاه الله القرآن فهو يتلوه آناء الليل وآناء النهار ..» متفق عليه .
“কোন ঈর্ষা নেই শুধু দু’জন ব্যক্তি ব্যতীত, এক ব্যক্তি আল্লাহ যাকে কুরআন দান করেছেন, সে দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে তা তিলাওয়াত করে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
নিশ্চয় কিয়ামুল লাইলের ফজিলত জ্ঞাত ব্যক্তি কখনো মূর্খ ব্যক্তির ন্যায় নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা যুমার: (৯)]
অতএব আসুন এসব আয়াত ও হাদিস থেকে উপদেশ গ্রহণ করে আমরা জ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত হই।
«إنَّ أولَ ما يُحاسب به العبدُ يوم القيامة من عمله صلاتُه؛ فإنْ صلحت فقد أفلحَ وأنجحَ، وإن فسدت فقد خاب وخسر؛ فإن انتقص من فريضته شيءٌ قال الرَّبُّ - عزَّ وجلَّ : انظروا هل لعبدي من تَطَوُّع فيكمل بها ما انتقص من الفريضة، ثمَّ يكونُ سائر عمله على ذلك» . رواه التِّرمذيُّ وأبو داود وابن ماجه وصحَّحه الألبانيُّ .
“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার আমলের মধ্যে তার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত ঠিক হয়, তাহলে সে নাজাত পাবে ও মুক্ত হবে। আর যদি তার সালাত বিনষ্ট হয়, তাহলে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরযের অংশ কম হয়, আল্লাহ বলবেন: দেখ আমার বান্দার নফল আছে কি-না, যার দ্বারা ফরযের ঘাটতি পুরো করা যায়। অতঃপর অন্যান্য আমলের হিসেবে এভাবে হবে”। [তিরমিযি, আবু দাউদ, ইব্ন মাজাহ, হাদিসটি শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন:
«ما تقرَّب إليَّ عبدي بأحبَّ مما افترضته عليه، ولا يزالُ عبدي يتقرَّبُ إليَّ بالنوافل حتى أحبَّه، فإذا أحببتُه كنتُ سمعَه الذي يَسْمَعُ به ...». متفق عليه .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার বান্দার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে প্রিয় কোন আমল দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্যে অগ্রসর হতে থাকে এক পর্যায়ে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, আমি তার কর্ণে পরিণত হই যার দ্বারা সে শোনে...”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আল্লাহ তা‘আলা প্রথম কিয়ামুল লাইল ফরয করেছেন, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীগণ এক বছর কিয়াম করেন, আল্লাহ বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا ٢ ﴾ [ المزمل : ١، ٢ ]
“হে চাদর আবৃত! (১) রাতে সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া”। [সূরা মুযযামমিল: (১-২)]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
" فإنَّ اللهَ افترض قيامَ اللَّيل في أَوَّل هذه السورة فقام نبيُّ الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه حولاً، وأمسك اللهُ خاتمتَها اثني عشر شهرًا حتى أنزل اللهُ في آخر هذه السُّورة التَّخْفيفَ، فصار قيامُ اللَّيْل تَطَوُّعًا بعدَ فريضة . رواه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার প্রথমে কিয়ামুল লাইল ফরয করেছেন, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীগণ এক বছর কিয়াম করেন, অতঃপর বারো মাস পর আল্লাহ এ সূরার শেষ আয়াত নাযিল করে সহজ করেন, ফলে ফরয কিয়ামুল লাইল নফলে পরিণত হয়”। [মুসলিম।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِدُلُوكِ ٱلشَّمۡسِ إِلَىٰ غَسَقِ ٱلَّيۡلِ وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾ [ الاسراء : ٧٨، ٧٩ ]
“সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন”। [সূরা ইসরা: (৭৮-৭৯)]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর আল্লাহ তাহাজ্জুদের উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ তুমি ঘুমের পর দাঁড়াও। তোমার জন্য তা অতিরিক্ত, অর্থাৎ অন্যান্য ফরযের উপর এটা অতিরিক্ত ফরয। কেউ বলেছেন: উম্মতের ন্যায় তার উপরও তাহাজ্জুদ নফল। মুজাহিদ ও কাতাদাহ এ অভিমত প্রকাশ করেছেন। [সংক্ষিপ্ত তাফসীরে বগভী।] আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَسَبِّحۡهُ وَإِدۡبَٰرَ ٱلنُّجُومِ ٤٩ ﴾ [ الطور : ٤٨ ]
“আর রাতের কিছু অংশে এবং নক্ষত্রের অস্ত যাবার পর তার তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা তুর: (৪৮)] তিনি অন্যত্র বলেন:
﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَٱسۡجُدۡ لَهُۥ وَسَبِّحۡهُ لَيۡلٗا طَوِيلًا ٢٦ ﴾ [ الانسان : ٢٦ ]
“আর রাতের একাংশে তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হও এবং দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা ইনসান: (৪৮)]
কিয়ামুল লাইলের প্রতি এসব নির্দেশ মোস্তাহাব পর্যায়ভুক্ত, যেমন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব আল্লাহ আপনার উপর যা ওয়াজিব করেছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। এ ওয়াজিবই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, যার দ্বারা আপনি তার নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হবেন। আপনি দুর্বল বান্দা, আপনার রবের ক্ষমা, করুণা, প্রতিদান ও সাওয়াবের ভিখারি, অতএব রাতের আধারে নফলের প্রতি মনোযোগ দিন। কারণ ফরযের পর তাই সর্বোত্তম ইবাদত। স্মরণ করুন কিয়ামুল লাইল মুমিন বান্দাদের গুণ, যাদের তিনি প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ করেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ [ السجدة : ١٦ ]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে”। [সূরা সেজদা: (১৬)] পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রতিদান উল্লেখ করেছেন, যা তাদের আমল থেকে মহান। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٧ ]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কি জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজদা: (১৭)]
কি মহান নিয়ামত ও মহৎ প্রতিদান! তার তুলনায় আমাদের আমলের কি মূল্য?! মুমিন ব্যক্তি যদি এ নিয়ামতের কথা স্মরণ করে আমল করে, তাহলে সে কোন ক্লান্তি অনুভব করে না, বরং জান্নাতে বসবাস করার অতুলনীয় স্বাদ আস্বাদন করে, যা আল্লাহর ইবাদাতে রাত-জাগা ব্যতীত অর্জন হয় না। রাতের অন্ধকারে ইবাদাতকারী বান্দাদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন:
﴿ قُلۡ ءَامِنُواْ بِهِۦٓ أَوۡ لَا تُؤۡمِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهِۦٓ إِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ يَخِرُّونَۤ لِلۡأَذۡقَانِۤ سُجَّدٗاۤ ١٠٧ وَيَقُولُونَ سُبۡحَٰنَ رَبِّنَآ إِن كَانَ وَعۡدُ رَبِّنَا لَمَفۡعُولٗا ١٠٨ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [ الاسراء : ١٠٧، ١٠٩ ]
“বল, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে”। [সূরা ইসরা: (১০৭-১০৯)] তাদের আরো একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি:
﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [ الذاريات : ١٧، ١٨ ]
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত”। [সূরা যারিয়াত: (১৭-১৮)] তিনি আরো বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدٗا وَقِيَٰمٗا ٦٤ ﴾ [ الفرقان : ٦٤ ]
“আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে”। [সূরা ফুরকান: (৬৪)]
প্রিয় ভাই ও বোন, এসব গুণাবলি আল্লাহকে মহব্বতকারী মুমিন বান্দাদের। আমরা যেন তাদের ন্যায় আমল করে আল্লাহর নৈকট্য ও মহব্বত অর্জনে ব্রতী হই, তাই তিনি তাদের গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার উত্তম পন্থা কিয়ামুল লাইল। সর্বাগ্রে তা অর্জন করেছেন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞إِنَّ رَبَّكَ يَعۡلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدۡنَىٰ مِن ثُلُثَيِ ٱلَّيۡلِ وَنِصۡفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ وَطَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَۚ ٢٠ ﴾ [ المزمل : ٢٠ ]
“নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও”। [সূরা মুযযাম্মিল: (২০)] নিশ্চয় তাদের আমল আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আহযাব: (২১)]
প্রিয় পাঠক, আপনি কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নশীল হন, তাতে আত্মনিয়োগ করুন ও তার প্রতি মনোযোগী হন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক হাদিস লক্ষ্য করুন:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أفضلُ الصِّيام بعدَ رمضانَ شهرُ الله المحرمُ، وأفضلُ الصَّلاة بعد الفريضة صلاةُ اللَّيل» . رواه مسلم .
“রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম মহররম মাসের সিয়াম। আর ফরযের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত”। [মুসলিম।]
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داود؛ كان ينامُ نصفَ الليل ويقومُ ثلثه وينامُ سدسه، ويصومُ يومًا ويفطر يومًا» . متَّفق عليه .
“আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সালাত দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত, তিনি রাতের অর্ধেক ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও এক দিন ইফতার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
সালেম ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন:
«يا محمدُ عش ما شئتَ؛ فإنك ميتٌ، واعمل ما شئت فإنَّك مجزيٌّ به، وأحبب من شئتَ فإنَّك مفارقه، واعلم أنَّ شرفَ المؤمن قيامُ الليل، وعزَّه استغناؤه عن الناس» . رواه الحاكم والطبرانيُّ، وحسَّنه الألبانيُّ .
“হে মুহাম্মদ, যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকুন, অবশেষে আপনি মারা যাবেন। যা ইচ্ছা আমল করুন, তার প্রতিদান অবশ্যই আপনাকে দেয়া হবে। যাকে ইচ্ছা মুহাব্বত করুন, আপনি তাকে অবশ্যই ছেড়ে যাবেন। জেনে রাখুন, মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইলে। কিয়ামুল লাইলে রয়েছে তার সম্মান ও মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা”। [হাকেম ও তাবরানি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
سُئل رسولُ الله صلى الله عليه وسلم : أيُّ الصلاة أفضلُ؟ قال : «طول القنوت» . رواه مسلم . والقنوتُ : القيامُ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কোন সালাত সর্বোত্তম? তিনি বলেন: “লম্বা কুনুত”। [মুসলিম।] অর্থাৎ দীর্ঘ কিয়াম। আল্লাহর যে বান্দা রাতে কিয়াম করে, সে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। হাদিসে এসেছে:
«أقربُ ما يكون الرَّبُّ من العبد في جوف اللَّيْل الآخر؛ فإن استطعتَ أن تكونَ ممَّن يذكرُ الله في تلك السَّاعة فكُن» . رواه الترمذي وصححه الألباني .
“বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় রাতের শেষ ভাগে। যদি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার যারা আল্লাহকে রাতের শেষ ভাগে স্মরণ করে তাহলে হয়ে যাও”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কুরআনধারী ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا حسد إلا في اثنتين رجل آتاه الله القرآن فهو يتلوه آناء الليل وآناء النهار ..» متفق عليه .
“কোন ঈর্ষা নেই শুধু দু’জন ব্যক্তি ব্যতীত, এক ব্যক্তি আল্লাহ যাকে কুরআন দান করেছেন, সে দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে তা তিলাওয়াত করে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
নিশ্চয় কিয়ামুল লাইলের ফজিলত জ্ঞাত ব্যক্তি কখনো মূর্খ ব্যক্তির ন্যায় নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা যুমার: (৯)]
অতএব আসুন এসব আয়াত ও হাদিস থেকে উপদেশ গ্রহণ করে আমরা জ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্ত হই।
১. কিয়ামুল লাইল ব্যক্তিকে পাপ, গুনা ও অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ٤٥ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর”। [সূরা আনকাবুত: (৪৫)]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হল:
«إنَّ فلانًا يصلِّي بالليل فإذا أصبح سرق . قال : «سَيَنْهاه ما يقول» . رواه أحمدُ وابن حبان وصحَّحه الألبانيُّ .
অমুক ব্যক্তি রাতে সালাত আদায় করে, কিন্তু সকালে উঠে চুরি করি। তিনি বললেন: “সে যা বলছে তা তাকে অতিশীঘ্র বারণ করবে”। [আহমদ, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখা সালাতের সাধারণ প্রকৃতি, তবে এ ব্যাপারে কিয়ামুল লাইলের ভূমিকা বিশেষ। কিয়ামুল লাইলে ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে ও তার সামনে সকল আমল উপস্থিত হয়, তখন সে খারাপ কর্মের জন্য লজ্জিত হয় ও নেক আমল কবুল না হওয়ার আশঙ্কা করে, ফলে সে দ্রুত অশ্লীলতা ত্যাগ করে।
২. কিয়ামুল লাইলের ফলে শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূর হয়। সর্বপ্রথম দূর হয় অক্ষমতা ও অলসতার রোগ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عليكم بقيام الليل؛ فإنَّه دأبُ الصالحين قبلكم؛ فإنَّ قيامَ الليل قُرْبَةٌ إلى الله - عز وجل - وتكفيرٌ للذُّنوب ومَطْرَدَةٌ للدَّاء عن الجسد ومنهاة عن الإثم» . أخرجه التِّرمذيُّ والبيهقيُّ، وقال العراقيُّ : إسنادُه حسنٌ، وحسَّنه الألبانيُّ .
“তোমরা কিয়ামুল লাইলকে আঁকড়ে ধর, নিশ্চয় তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস। কারণ কিয়ামুল লাইল আল্লাহর নৈকট্য, পাপের কাফ্ফারা, শরীর থেকে রোগ দূরকারী ও পাপ থেকে সুরক্ষা”। [তিরমিযি ও বায়হাকি। ইরাকি বলেছেন: এ হাদিসের সনদ হাসান, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান।]
৩. কিয়ামুল লাইল দ্বারা বান্দা যাবতীয় কল্যাণ অর্জনে সক্ষম হয়। কারণ রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, বান্দা সে সময় দুনিয়া ও আখেরাতের যে কল্যাণ প্রার্থনা করুক আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ من اللَّيل ساعة لا يوافقها عبد مسلم يسأل الله خيرًا إلا أعطاه إياه، وذلك كل ليلة» . أخرجه مسلم،
“নিশ্চয় রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় মুসলিম বান্দা যাই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই প্রদান করেন। এরূপ প্রত্যেক রাতেই হয়”। [মুসলিম।]
হে আল্লাহর বান্দাগণ, দেখুন কিয়ামুল লাইলে কি পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে, বরং দুনিয়ার সকল কল্যাণ তাতেই নিহিত। আপনি জানেন না কি আপনার জন্য ক্ষতিকর ও উপকারী। কত ব্যবসায়ী লোকসান গুণে আফসোস করছেন! কত মালিক নিজের নির্মিত ঘরসহ ধ্বংস হয়েছেন! তাদের সংখ্যাও কম নয়, যারা আরামের জন্য জীবন সঙ্গিনী ঘরে এনে অশান্তির দাবানলে দগ্ধ হচ্ছেন! এটাই দুনিয়ার রীতি। যদি আপনি রাতের দোয়া কবুলের মুহূর্তে প্রত্যেক কাজে আল্লাহর নিকট তাওফিক তলব করেন, কাজের শুরুতে তার সামনে দণ্ডায়মান হন, যেন আপনার শ্রম বৃথা না যায়, তাহলে আপনি লজ্জিত হবেন না। আপনার অন্তর সন্তুষ্ট হবে, যে পরিমাণ দুনিয়া লাভ করেছেন তাতেই আপনি সুখ পাবেন। আপনি কেন চিন্তা করবেন, কেন অশান্তি ভোগ করবেন, আপনি তো আল্লাহকে বলেছেন, তার উপরই ভরসা করেছেন!?
তিনি বৃষ্টি বর্ষণকারী, মেঘ পরিচালনাকারী, পরিকল্পনাকারী ও রিযক বণ্টনকারী। হে অবিবাহিত যুবক, তুমি বিবাহ করতে চাও, দাঁড়াও তোমার রবের নিকট দীনদার স্ত্রী প্রার্থনা কর, যে তোমার জীবনে সুখ দেবে। হে অসুস্থ ব্যক্তি, রোগ থেকে মুক্তি চাও, দাঁড়াও তোমার রবের নিকট সুস্থতা প্রার্থনা কর। হে ব্যবসায়ী লাভবান হতে চাও, উঠে দাঁড়াও তোমার রবের নিকট সফলতা প্রার্থনা কর। আল্লাহর থেকে যে বিমুখ হয়, আল্লাহর তার থেকে চেহারা ফিরিয়ে নেন। আল্লাহ ধনী, বান্দা গরবী। তিনি অমুখাপেক্ষী, বান্দা মুখাপেক্ষী। এসব জেনে বান্দা কিভাবে তার থেকে বিমুখ হয়?! না, এরূপ কখনো সমীচীন নয়।
৪. কিয়ামুল লাইলের ফলে ব্যক্তির অন্তর প্রফুল্ল হয়। ইব্ন মুনকাদির রহ. বলেছেন: তিনটি আনন্দ ব্যতীত দুনিয়ার কোন আনন্দ অবশিষ্ট নেই: কিয়ামুল লাইল, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সাক্ষাত ও জামাতের সাথে সালাত আদায় করা।
আবু সুলাইমান রহ. বলেছেন: প্রবৃত্তির অনুসারীরা তাদের খেল-তামাশায় যে আনন্দ ভোগ করে, দীনদারগণ রাতের কিয়ামে তার চেয়ে অধিক আনন্দ ভোগ করেন। যদি রাত না থাকত, দুনিয়ায় বেঁচে থাকা আমার জন্য অর্থহীন হত।
কেউ বলেছেন: যদি বাদশাহগণ জানত আমরা কি আনন্দে রয়েছি, তাহলে আমাদের সাথে তারা তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করত।
কেউ বলেছেন: রাতে আমার কিছু অযিফা রয়েছে, আমি যদি তা ত্যাগ করি, আমার শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
কিয়ামুল লাইলের উপকারিতা বর্ণনায় গাজালি রহ. বলেছেন: বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, কিয়ামুল লাইলকারীগণ রাতের কিয়ামে বিশেষ স্বাদ আস্বাদন করেন এবং এ জন্য রাতকে তারা বেছে নেন। তাদের কাউকে বলা হয়েছিল: কেমন যাচ্ছে তোমার ও তোমার রাতের অবস্থা? তিনি উত্তরে বলেন: আমি তার মূল্যায়ন করতে পারিনি, সে আমাকে তার চেহারা দেখিয়ে প্রস্থান করেছে। তাদের কাউকে বলা হয়েছিল: তোমার রাত কেমন যাচ্ছে? তিনি বলেন: রাতে আমার দু’টি অবস্থা হয়, অন্ধকার আগমনে আনন্দিত হই, ফজর উদিত হওয়ার ফলে চিন্তিত হই। রাতে আমি কখনো পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ করতে পারিনি।
আলি ইব্ন বাক্কার রহ. বলেছেন: চল্লিশ বছর যাবত ফজর উদিত হওয়া ব্যতীত কোন বস্তু আমাকে দুঃখিত করেনি। অর্থাৎ এ দীর্ঘ সময়ে আমি একমাত্র ফজর উদিত হওয়ার কারণে দুঃখিত হয়েছি।
ফুদায়েল ইব্ন আয়াদ রহ. বলেছেন: যখন সূর্য ডুবে আমি রাতের অন্ধকার পেয়ে আনন্দিত হই, কারণ আমি আমার রবের সাথে একাকী হতে পারি। যখন সূর্য উদিত হয় আমি দুঃখিত হই, কারণ মানুষ তখন আমার নিকট আগমন করে। [এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন।]
৫. কিয়ামুল লাইলকারী ব্যক্তি উদ্যমতাসহ ভোর করে, পূর্ণ দিন সে শরীরের সঞ্চলতা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يعقد الشيطانُ على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب مكان كل عقدة : عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلَّى انحلت عقدة، فأصبح نشيطًا طيبَ النَّفْس، وإلَّا أصبح خبيثَ النفس كسلان» . متفق عليه .
“শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের ঘাড়ের পশ্চাৎ ভাগে তিনটি ঘিরা দেয়, যখন সে ঘুমায়। প্রত্যেক ঘিরায় সে মন্ত্র পাঠ করে: তোমার রাত অনেক বাকি, অতএব ঘুমাও। যখন সে জাগ্রত হয় ও আল্লাহর যিকির করে একটি ঘিরা খুলে যায়। যখন সে অযু করে অপর ঘিরা খুলে যায়। যখন সে সালাত আদায় করে তৃতীয় ঘিরা খুলে যায়। ফলে সে মনের উদ্যমতা ও সঞ্চলতাসহ ভোর করে, অন্যথায় সে খারাপ নফস ও অলসতা নিয়ে ভোর করে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন, আপনি দেখবেন কিয়ামুল লাইলকারীদের শরীরে অলসতার কোন ছাপ নেই, তারা ফুরফুরে মেজাজ ও উদ্যমতাসহ দিনের কাজ আরম্ভ করে। প্রকৃত পক্ষে সকাল পর্যন্ত ঘুমন্ত ব্যক্তিদের দেখবেন, তাদের চোখ ফুলে গেছে, হাত-পা নাড়া-চাড়ায় ক্লান্তি ও অলসতা অনুভব করছে। মূলত কিয়ামুল লাইলকারীদের এ উদ্যমতা আল্লাহর সাথে মোনাজাত ও তার নৈকট্যের ফলে অর্জিত হয়।
৬. কিয়ামুল লাইলের ফলে সন্তান নেক হয়, কারণ বান্দা যখন আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মান হয়, অবশ্যই সে তার সন্তানের জন্য শুভ কামনা করে ও তাদের জন্য নিরাপত্তা চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَمَّا ٱلۡجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَٰمَيۡنِ يَتِيمَيۡنِ فِي ٱلۡمَدِينَةِ وَكَانَ تَحۡتَهُۥ كَنزٞ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَٰلِحٗا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا وَيَسۡتَخۡرِجَا كَنزَهُمَا رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ وَمَا فَعَلۡتُهُۥ عَنۡ أَمۡرِيۚ ذَٰلِكَ تَأۡوِيلُ مَا لَمۡ تَسۡطِع عَّلَيۡهِ صَبۡرٗا ٨٢ ﴾ [ الكهف : ٨٢ ]
“আর প্রাচীরটির বিষয় হল, তা ছিল শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের এবং তার নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন। আর তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে। এ সবই আপনার রবের রহমত স্বরূপ। আমি নিজ থেকে তা করিনি। এ হলো সে বিষয়ের ব্যাখ্যা, যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি”। [সূরা কাহাফ: (৮২)]
আল্লাহ সন্তানদের উপর রহম করেছেন তাদের পিতা-মাতার দোয়ার কারণে, যারা সারা জীবন তাদের জন্য নিরাপত্তা ও শুভ কামনা করেছেন।
৭. কিয়ামুল লাইলকারীদের চেহারায় নুর থাকে, মৃত্যুর সময় তারা নুরের অধিকারী হয়। হাসান রহ.-কে বলা হয়েছিল: তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের চেহারা কেন অন্যদের তুলনায় অধিক নূরান্বিত? তিনি বলেন: তারা রহমানের সাথে একাকী হয়, ফলে রহমান তাদেরকে নিজের নূর দান করেন। [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল।]
৮. কিয়ামুল লাইলকারীদের রিযিকে আল্লাহ প্রশস্ততা দান করেন, তারা এমন জায়গা থেকে রিযিক লাভ করেন, যার কল্পনা তাদের হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন”। [সূরা তালাক: (২-৩)]
৯. কিয়ামুল লাইলে কুরআন তিলাওয়াতের ফলে কুরআনের হিফয দৃঢ় হয়। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وإذا قام صاحبُ القرآن فقرأه باللَّيل والنهار ذكَره، وإذا لم يقُم به نسيه» . رواه مسلم،
“কুরআনের হাফেজ যদি কুরআন নিয়ে সালাতে দাঁড়ায় এবং দিন-রাতে তার তিলাওয়াত করে তাহলে সে কুরআন স্মরণ রাখতে সক্ষম হবে, যদি সে কুরআন নিয়ে না দাঁড়ায় ভুলে যাবে”। [মুসলিম।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّا سَنُلۡقِي عَلَيۡكَ قَوۡلٗا ثَقِيلًا ٥ ﴾ [ المزمل : ٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি এক অতিভারী বাণী নাযিল করছি”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৫)] এরপরেই বলেন:
﴿ إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا ٦ ﴾ [ المزمل : ٦ ]
“নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৬)]
১০. কিয়ামুল লাইলকারীদের দোয়া কবুল হয়, আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইলে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন, যখন তারা আশ্রয় চায় আল্লাহ তাদের আশ্রয় দান করেন। কারণ তারা ফরয ও নফল উভয় সালাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। যে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করা ও আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উবাদাহ ইব্ন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যে বলে:
« لا إله إلا الله وحده لا شريك له وهو على كل شيء قدير، الحمد لله وسبحان الله ولا إله إلا الله والله ُ أكبرُ ولا حولَ ولا قوة إلا بالله» .
অতঃপর বলে: হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, কিংবা দোয়া করে, তার দোয়া কবুল করা হয়। যদি সে অযু করে ও সালাত আদায় করে, তার সালাত কবুল করা হয়”। [বুখারি।]
এ হল রাতে কিয়ামকারীর প্রতিদানের অংশ বিশেষ, আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা আরো উত্তম, আরো স্থায়ী। এখানে এ পর্যন্ত উল্লেখ করলাম যেন শয়তানের প্ররোচনা ও অলসতার কারণে মুমিন বান্দা রাতের কিয়াম ত্যাগ না করে।
﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ٤٥ ﴾ [ العنكبوت : ٤٥ ]
“তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর”। [সূরা আনকাবুত: (৪৫)]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হল:
«إنَّ فلانًا يصلِّي بالليل فإذا أصبح سرق . قال : «سَيَنْهاه ما يقول» . رواه أحمدُ وابن حبان وصحَّحه الألبانيُّ .
অমুক ব্যক্তি রাতে সালাত আদায় করে, কিন্তু সকালে উঠে চুরি করি। তিনি বললেন: “সে যা বলছে তা তাকে অতিশীঘ্র বারণ করবে”। [আহমদ, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখা সালাতের সাধারণ প্রকৃতি, তবে এ ব্যাপারে কিয়ামুল লাইলের ভূমিকা বিশেষ। কিয়ামুল লাইলে ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে ও তার সামনে সকল আমল উপস্থিত হয়, তখন সে খারাপ কর্মের জন্য লজ্জিত হয় ও নেক আমল কবুল না হওয়ার আশঙ্কা করে, ফলে সে দ্রুত অশ্লীলতা ত্যাগ করে।
২. কিয়ামুল লাইলের ফলে শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূর হয়। সর্বপ্রথম দূর হয় অক্ষমতা ও অলসতার রোগ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عليكم بقيام الليل؛ فإنَّه دأبُ الصالحين قبلكم؛ فإنَّ قيامَ الليل قُرْبَةٌ إلى الله - عز وجل - وتكفيرٌ للذُّنوب ومَطْرَدَةٌ للدَّاء عن الجسد ومنهاة عن الإثم» . أخرجه التِّرمذيُّ والبيهقيُّ، وقال العراقيُّ : إسنادُه حسنٌ، وحسَّنه الألبانيُّ .
“তোমরা কিয়ামুল লাইলকে আঁকড়ে ধর, নিশ্চয় তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস। কারণ কিয়ামুল লাইল আল্লাহর নৈকট্য, পাপের কাফ্ফারা, শরীর থেকে রোগ দূরকারী ও পাপ থেকে সুরক্ষা”। [তিরমিযি ও বায়হাকি। ইরাকি বলেছেন: এ হাদিসের সনদ হাসান, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান।]
৩. কিয়ামুল লাইল দ্বারা বান্দা যাবতীয় কল্যাণ অর্জনে সক্ষম হয়। কারণ রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, বান্দা সে সময় দুনিয়া ও আখেরাতের যে কল্যাণ প্রার্থনা করুক আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ من اللَّيل ساعة لا يوافقها عبد مسلم يسأل الله خيرًا إلا أعطاه إياه، وذلك كل ليلة» . أخرجه مسلم،
“নিশ্চয় রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় মুসলিম বান্দা যাই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই প্রদান করেন। এরূপ প্রত্যেক রাতেই হয়”। [মুসলিম।]
হে আল্লাহর বান্দাগণ, দেখুন কিয়ামুল লাইলে কি পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে, বরং দুনিয়ার সকল কল্যাণ তাতেই নিহিত। আপনি জানেন না কি আপনার জন্য ক্ষতিকর ও উপকারী। কত ব্যবসায়ী লোকসান গুণে আফসোস করছেন! কত মালিক নিজের নির্মিত ঘরসহ ধ্বংস হয়েছেন! তাদের সংখ্যাও কম নয়, যারা আরামের জন্য জীবন সঙ্গিনী ঘরে এনে অশান্তির দাবানলে দগ্ধ হচ্ছেন! এটাই দুনিয়ার রীতি। যদি আপনি রাতের দোয়া কবুলের মুহূর্তে প্রত্যেক কাজে আল্লাহর নিকট তাওফিক তলব করেন, কাজের শুরুতে তার সামনে দণ্ডায়মান হন, যেন আপনার শ্রম বৃথা না যায়, তাহলে আপনি লজ্জিত হবেন না। আপনার অন্তর সন্তুষ্ট হবে, যে পরিমাণ দুনিয়া লাভ করেছেন তাতেই আপনি সুখ পাবেন। আপনি কেন চিন্তা করবেন, কেন অশান্তি ভোগ করবেন, আপনি তো আল্লাহকে বলেছেন, তার উপরই ভরসা করেছেন!?
তিনি বৃষ্টি বর্ষণকারী, মেঘ পরিচালনাকারী, পরিকল্পনাকারী ও রিযক বণ্টনকারী। হে অবিবাহিত যুবক, তুমি বিবাহ করতে চাও, দাঁড়াও তোমার রবের নিকট দীনদার স্ত্রী প্রার্থনা কর, যে তোমার জীবনে সুখ দেবে। হে অসুস্থ ব্যক্তি, রোগ থেকে মুক্তি চাও, দাঁড়াও তোমার রবের নিকট সুস্থতা প্রার্থনা কর। হে ব্যবসায়ী লাভবান হতে চাও, উঠে দাঁড়াও তোমার রবের নিকট সফলতা প্রার্থনা কর। আল্লাহর থেকে যে বিমুখ হয়, আল্লাহর তার থেকে চেহারা ফিরিয়ে নেন। আল্লাহ ধনী, বান্দা গরবী। তিনি অমুখাপেক্ষী, বান্দা মুখাপেক্ষী। এসব জেনে বান্দা কিভাবে তার থেকে বিমুখ হয়?! না, এরূপ কখনো সমীচীন নয়।
৪. কিয়ামুল লাইলের ফলে ব্যক্তির অন্তর প্রফুল্ল হয়। ইব্ন মুনকাদির রহ. বলেছেন: তিনটি আনন্দ ব্যতীত দুনিয়ার কোন আনন্দ অবশিষ্ট নেই: কিয়ামুল লাইল, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সাক্ষাত ও জামাতের সাথে সালাত আদায় করা।
আবু সুলাইমান রহ. বলেছেন: প্রবৃত্তির অনুসারীরা তাদের খেল-তামাশায় যে আনন্দ ভোগ করে, দীনদারগণ রাতের কিয়ামে তার চেয়ে অধিক আনন্দ ভোগ করেন। যদি রাত না থাকত, দুনিয়ায় বেঁচে থাকা আমার জন্য অর্থহীন হত।
কেউ বলেছেন: যদি বাদশাহগণ জানত আমরা কি আনন্দে রয়েছি, তাহলে আমাদের সাথে তারা তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করত।
কেউ বলেছেন: রাতে আমার কিছু অযিফা রয়েছে, আমি যদি তা ত্যাগ করি, আমার শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
কিয়ামুল লাইলের উপকারিতা বর্ণনায় গাজালি রহ. বলেছেন: বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, কিয়ামুল লাইলকারীগণ রাতের কিয়ামে বিশেষ স্বাদ আস্বাদন করেন এবং এ জন্য রাতকে তারা বেছে নেন। তাদের কাউকে বলা হয়েছিল: কেমন যাচ্ছে তোমার ও তোমার রাতের অবস্থা? তিনি উত্তরে বলেন: আমি তার মূল্যায়ন করতে পারিনি, সে আমাকে তার চেহারা দেখিয়ে প্রস্থান করেছে। তাদের কাউকে বলা হয়েছিল: তোমার রাত কেমন যাচ্ছে? তিনি বলেন: রাতে আমার দু’টি অবস্থা হয়, অন্ধকার আগমনে আনন্দিত হই, ফজর উদিত হওয়ার ফলে চিন্তিত হই। রাতে আমি কখনো পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ করতে পারিনি।
আলি ইব্ন বাক্কার রহ. বলেছেন: চল্লিশ বছর যাবত ফজর উদিত হওয়া ব্যতীত কোন বস্তু আমাকে দুঃখিত করেনি। অর্থাৎ এ দীর্ঘ সময়ে আমি একমাত্র ফজর উদিত হওয়ার কারণে দুঃখিত হয়েছি।
ফুদায়েল ইব্ন আয়াদ রহ. বলেছেন: যখন সূর্য ডুবে আমি রাতের অন্ধকার পেয়ে আনন্দিত হই, কারণ আমি আমার রবের সাথে একাকী হতে পারি। যখন সূর্য উদিত হয় আমি দুঃখিত হই, কারণ মানুষ তখন আমার নিকট আগমন করে। [এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন।]
৫. কিয়ামুল লাইলকারী ব্যক্তি উদ্যমতাসহ ভোর করে, পূর্ণ দিন সে শরীরের সঞ্চলতা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يعقد الشيطانُ على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب مكان كل عقدة : عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلَّى انحلت عقدة، فأصبح نشيطًا طيبَ النَّفْس، وإلَّا أصبح خبيثَ النفس كسلان» . متفق عليه .
“শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের ঘাড়ের পশ্চাৎ ভাগে তিনটি ঘিরা দেয়, যখন সে ঘুমায়। প্রত্যেক ঘিরায় সে মন্ত্র পাঠ করে: তোমার রাত অনেক বাকি, অতএব ঘুমাও। যখন সে জাগ্রত হয় ও আল্লাহর যিকির করে একটি ঘিরা খুলে যায়। যখন সে অযু করে অপর ঘিরা খুলে যায়। যখন সে সালাত আদায় করে তৃতীয় ঘিরা খুলে যায়। ফলে সে মনের উদ্যমতা ও সঞ্চলতাসহ ভোর করে, অন্যথায় সে খারাপ নফস ও অলসতা নিয়ে ভোর করে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন, আপনি দেখবেন কিয়ামুল লাইলকারীদের শরীরে অলসতার কোন ছাপ নেই, তারা ফুরফুরে মেজাজ ও উদ্যমতাসহ দিনের কাজ আরম্ভ করে। প্রকৃত পক্ষে সকাল পর্যন্ত ঘুমন্ত ব্যক্তিদের দেখবেন, তাদের চোখ ফুলে গেছে, হাত-পা নাড়া-চাড়ায় ক্লান্তি ও অলসতা অনুভব করছে। মূলত কিয়ামুল লাইলকারীদের এ উদ্যমতা আল্লাহর সাথে মোনাজাত ও তার নৈকট্যের ফলে অর্জিত হয়।
৬. কিয়ামুল লাইলের ফলে সন্তান নেক হয়, কারণ বান্দা যখন আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মান হয়, অবশ্যই সে তার সন্তানের জন্য শুভ কামনা করে ও তাদের জন্য নিরাপত্তা চায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَأَمَّا ٱلۡجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَٰمَيۡنِ يَتِيمَيۡنِ فِي ٱلۡمَدِينَةِ وَكَانَ تَحۡتَهُۥ كَنزٞ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَٰلِحٗا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا وَيَسۡتَخۡرِجَا كَنزَهُمَا رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ وَمَا فَعَلۡتُهُۥ عَنۡ أَمۡرِيۚ ذَٰلِكَ تَأۡوِيلُ مَا لَمۡ تَسۡطِع عَّلَيۡهِ صَبۡرٗا ٨٢ ﴾ [ الكهف : ٨٢ ]
“আর প্রাচীরটির বিষয় হল, তা ছিল শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের এবং তার নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন। আর তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে। এ সবই আপনার রবের রহমত স্বরূপ। আমি নিজ থেকে তা করিনি। এ হলো সে বিষয়ের ব্যাখ্যা, যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি”। [সূরা কাহাফ: (৮২)]
আল্লাহ সন্তানদের উপর রহম করেছেন তাদের পিতা-মাতার দোয়ার কারণে, যারা সারা জীবন তাদের জন্য নিরাপত্তা ও শুভ কামনা করেছেন।
৭. কিয়ামুল লাইলকারীদের চেহারায় নুর থাকে, মৃত্যুর সময় তারা নুরের অধিকারী হয়। হাসান রহ.-কে বলা হয়েছিল: তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের চেহারা কেন অন্যদের তুলনায় অধিক নূরান্বিত? তিনি বলেন: তারা রহমানের সাথে একাকী হয়, ফলে রহমান তাদেরকে নিজের নূর দান করেন। [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল।]
৮. কিয়ামুল লাইলকারীদের রিযিকে আল্লাহ প্রশস্ততা দান করেন, তারা এমন জায়গা থেকে রিযিক লাভ করেন, যার কল্পনা তাদের হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ]
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন”। [সূরা তালাক: (২-৩)]
৯. কিয়ামুল লাইলে কুরআন তিলাওয়াতের ফলে কুরআনের হিফয দৃঢ় হয়। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وإذا قام صاحبُ القرآن فقرأه باللَّيل والنهار ذكَره، وإذا لم يقُم به نسيه» . رواه مسلم،
“কুরআনের হাফেজ যদি কুরআন নিয়ে সালাতে দাঁড়ায় এবং দিন-রাতে তার তিলাওয়াত করে তাহলে সে কুরআন স্মরণ রাখতে সক্ষম হবে, যদি সে কুরআন নিয়ে না দাঁড়ায় ভুলে যাবে”। [মুসলিম।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّا سَنُلۡقِي عَلَيۡكَ قَوۡلٗا ثَقِيلًا ٥ ﴾ [ المزمل : ٥ ]
“নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি এক অতিভারী বাণী নাযিল করছি”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৫)] এরপরেই বলেন:
﴿ إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا ٦ ﴾ [ المزمل : ٦ ]
“নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৬)]
১০. কিয়ামুল লাইলকারীদের দোয়া কবুল হয়, আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইলে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন, যখন তারা আশ্রয় চায় আল্লাহ তাদের আশ্রয় দান করেন। কারণ তারা ফরয ও নফল উভয় সালাত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। যে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করা ও আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উবাদাহ ইব্ন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যে বলে:
« لا إله إلا الله وحده لا شريك له وهو على كل شيء قدير، الحمد لله وسبحان الله ولا إله إلا الله والله ُ أكبرُ ولا حولَ ولا قوة إلا بالله» .
অতঃপর বলে: হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, কিংবা দোয়া করে, তার দোয়া কবুল করা হয়। যদি সে অযু করে ও সালাত আদায় করে, তার সালাত কবুল করা হয়”। [বুখারি।]
এ হল রাতে কিয়ামকারীর প্রতিদানের অংশ বিশেষ, আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা আরো উত্তম, আরো স্থায়ী। এখানে এ পর্যন্ত উল্লেখ করলাম যেন শয়তানের প্ররোচনা ও অলসতার কারণে মুমিন বান্দা রাতের কিয়াম ত্যাগ না করে।
১. কিয়ামুল লাইলের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল হয়। আল্লাহ তার বান্দাকে দেখে হাসেন, যখন সে আরামদায়ক বিছানা ও সুন্দরী স্ত্রী রেখে সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হয়। আবুদ-দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ثلاثة يحبُّهم الله ويضحك إليهم ويستبشر بهم ...». وذكر منهم : «والذي له امرأة حسناء وفراش لين حسن فيقوم من الليل؛ فيقول : يَذَرُ شهوتَه ويذكرني ولو شاء رقد» . رواه الطبرانيُّ، وقال المنذريُّ : إسناده حسن .
“তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন, তাদের দেখে হাসেন ও তাদেরকে সুসংবাদ দেন...”, তাদের একজন: “যার সুন্দর স্ত্রী ও আরামদায়ক বিছানা রয়েছে, তবুও সে রাতে দণ্ডায়মান হয়। [আল্লাহ বলেন:] সে তার প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করে আমাকে স্মরণ করছে, যদি সে চাইত শুয়ে থাকতে পারত”। [তাবরানি, শায়খ মুনযিরি বলেছেন, হাদিসটির সনদ হাসান।]
আল্লাহর হাসা তার সন্তুষ্টির দলিল, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহ তা‘আলা রাতে কিয়ামকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عجب ربُّنا من رجلين : رجل ثار عن وطائه ولحافه من بين حِبِّه وأهله إلى صلاته فيقول اللهُ لملائكته : انظروا إلى عبدي ثار عن فراشه ووطائه من بين حِبِّه وأهله إلى صلاته رغبةً فيما عندي وشفقةً مما عندي» . رواه الطَّبرانيُّ والبيهقيُّ وابن حبَّان وصحَّحه الألبانيُّ والأرناؤوط .
“আমাদের রব দু’জন ব্যক্তির কারণে আশ্চর্য হন: এক ব্যক্তি যে তার নরম বিছানা ও লেপ ছেড়ে, প্রিয় স্ত্রী ও পরিবার ত্যাগ করে সালাতে দণ্ডায়মান হয়, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলেন: দেখ আমার বান্দাকে, সে তার বিছানা ও খাট ছেড়ে, স্ত্রী ও পরিবার ত্যাগ করে আমার আশা ও ভয়ে সালাতে দণ্ডায়মান হয়েছে”। [তাবরাবি, বায়হাকি, ইবনে হিব্বান, শায়খ আলবানি ও শায়খ আরনাউত হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
২. কিয়ামুল লাইলকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া, যার নিয়ামত কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তরে তার কল্পনা জাগ্রত হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٦، ١٧ ]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কি জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজাদ: (১৬-১৭)]
আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا أيُّها النَّاس أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلُّوا باللَّيل والناسُ نيامٌ تدخلوا الجنة بسلام» . رواه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“হে মানুষেরা, সালামের প্রসার কর, খাদ্য প্রদান কর ও রাতে সালাত আদায় কর, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে জান্নাতে নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ করবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ في الجنة غرفًا يُرى ظاهرُها من بطونها وبطونُها من ظهورها» . فقام أعرابيٌّ فقال : لمن هي يا رسولَ الله؟ قال : «مَنْ أطاب الكلامَ وأطعمَ الطَّعامَ وأدامَ الصِّيامَ وصلَّى باللَّيل والنَّاسُ نيامٌ» . رواه التِّرمذيُّ وحسَّنه الألبانيُّ .
“নিশ্চয় জান্নাতে কতক প্রাসাদ রয়েছে, যার ভেতর বাহির থেকে ও বাহির ভেতর থেকে দেখা যায়”। জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বলেন: “তার জন্য যে সুন্দর কথা বলে, খাদ্য প্রদান করে, রীতিমত সালাত আদায় করে ও কিয়ামুল লাইল করে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।] আল্লাহ যখন দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, তার সামনে হাজির না হয়ে আমরা কি স্বাদ আস্বাদন করি?! কিসের বিনিময়ে চিরস্থায়ী জান্নাত বিনষ্ট করছি?! যেখানে হাতাশা ও দুঃখ কিছুই নেই। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ أَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٧٠ ﴾ [ ال عمران : ١٧٠ ]
“ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। [সূরা আলে-ইমরান: (১৭০)]
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١ لَا يَسۡمَعُونَ حَسِيسَهَاۖ وَهُمۡ فِي مَا ٱشۡتَهَتۡ أَنفُسُهُمۡ خَٰلِدُونَ ١٠٢ لَا يَحۡزُنُهُمُ ٱلۡفَزَعُ ٱلۡأَكۡبَرُ وَتَتَلَقَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ هَٰذَا يَوۡمُكُمُ ٱلَّذِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ١٠٣ ﴾ [ الانبياء : ١٠١، ١٠٣ ]
“আমার পক্ষ থেকে যাদের জন্য পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে। (১০১) তারা জাহান্নামের ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না। সেখানে তারা তাদের মনঃপুত বস্তুর মধ্যে চিরকাল থাকবে। মহাভীতি তাদেরকে পেরেশান করবে না। আর ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে, ‘এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল”। [সূরা আম্বিয়া: (১০১-১০৩)]
প্রিয় পাঠক, আপনি অবশ্যই জান্নাতে যেতে চান, তবে তার জন্য চেষ্টা করেন না কেন?! আপনার বাধা কিসে?! নিশ্চয় শয়তান আপনাকে বাধা দিচ্ছে, তার কামনা আপনিও তার সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করেন। অতএব তাকে ছুঁড়ে ফেলুন, তার ডাকে সাড়া দিবেন না, তার প্ররোচনায় প্রতারিত হবেন না, কিয়ামুল লাইলের জন্য উঠে দাঁড়ান।
৩. রাতে কিয়ামকারী বান্দার উপর আল্লাহ রহমত নাযিল করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رَحم اللهُ رجلاً قام من الليل فصلَّى وأيقظَ امرأتَه، فإن أَبَتْ نضح في وجهها الماءَ، ورحم اللهُ امرأةً قامت من اللَّيل فصلَّت وأيقظت زوجَها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» . رواه أبو داود، وقال الألبانيُّ : ( حسن صحيح ).
“আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে দাঁড়াল ও স্ত্রীকে জাগ্রত করল, যদি সে অস্বীকার করে তার চোখে পানির ছিটা দিল। আল্লাহ সে নারীকে রহম করুন, যে রাতে দাঁড়াল ও স্বামীকে জাগ্রত করল, যদি সে অস্বীকার করে তার চোখে পানির ছিটা দিল”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষ উভয়ে আল্লাহর হক আদায় ও তার রহমত প্রাপ্তিতে সমান।
৪. যে দু’রাকাত সালাত আদায় করল, সে অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রিয় পাঠক, আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন, দেখুন রাতের আঁধারে দু’রাকাত সালাতের কি পরিমাণ ফযিলত, আপনি অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর যে দু’রাকাতের অধিক আদায় করে, তার ব্যাপারে আপনার ধারণা কি!? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا أيقظ الرجلُ أهله من الليل فصلَّيا أو صلى ركعتين جميعًا كُتبا في الذاكرين والذاكرات» . رواه أبو داود وصححه الألباني .
“যখন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগ্রত করে, অতঃপর উভয়ে সালাত আদায় করে অথবা উভয়ে মিলে দু’রাকাত আদায় করে, তাদেরকে অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অধিক যিকিরকারী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
৫. কিয়ামুল লাইলের বদৌলতে ব্যক্তি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয় না। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قام بعشر آيات لم يُكتب من الغافلين، ومن قام بمائة آية كُتب من القانتين، ومن قام بألف آية كُتب من المقنطرين» . رواه أبو داود وصحَّحه الألباني .
“যে ব্যক্তি রাতে দশ আয়াতসহ কিয়াম করল, তাকে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, আর যে একশো আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে কানেতিনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, আর যে এক হাজার আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।] মুকানতিরিন অর্থ অধিক সম্পদের মালিক। এখানে উদ্দেশ্য অধিক সাওয়াবের মালিক। ইব্ন হাজার রহ. বলেন: সূরা মুলক থেকে সূরা নাস পর্যন্ত এক হাজার আয়াত।
৬. যদি কেউ রাতে সালাত আদায়ের নিয়ত করে, দৃঢ় ইচ্ছা রাখে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সে সাওয়াবের অধিকারী হয়, যদিও সে জাগ্রত হতে না পারে। ঘুম তার জন্য সদকা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما من امرئ تكون له صلاة بالليل فغلبه عليها النومُ إلا كُتب له أجرُ صلاته وكان نومُه صدقة عليه» . رواه أبو داود وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তিরই রাতে সালাতের ইচ্ছা রয়েছে, অতঃপর তার উপর ঘুম প্রবল হল, তার জন্য অবশ্যই সালাতের সাওয়াব লিখা হবে, আর ঘুম হবে তার উপর সদকা স্বরূপ”। [আবু দাউদ, হাদিসটি শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।]
৭. কিয়ামুল লাইলের বদৌলতে পরকালের মাগফেরাত, রহমত ও চিরস্থায়ী নিয়ামত হাসিল হয়। কারণ এতে একটি মুহূর্ত রয়েছে যেখানে বান্দা যা চায় তাই প্রদান করা হয়। হাদিসে এসেছে:
«إن في الليل لساعة لا يوافقها رجلٌ مسلم يسأل الله خيرًا من أمر الدنيا والآخرة إلا أعطاه إياه وذلك كل ليلة» . رواه مسلم .
“নিশ্চয় রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের যাই প্রার্থনা করুক, আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। আর এটা প্রতি রাতেই হয়। [মুসলিম।]
৮. রাতে কিয়ামকারী ব্যক্তি দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, যখন আল্লাহ বলেন: আছে কেউ প্রার্থনাকারী আমি যাকে প্রদান করব? আছে কেউ ইস্তেগফারকারী আমি যাকে ক্ষমা করব? বান্দার এর চেয়ে বড় পাওনা আর কি?
৯. কিয়ামুল লাইলের কারণে পাপ মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«ألا أَدُلُّك على أبواب الخير؛ الصوم جُنَّةٌ، والصَّدقةُ تطفئ الخطيئة كما يُطفئ الماء النار، وصلاة الرجل من جوف الليل» . ثم تلا : ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ حتى بلغ : يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ . رواه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ» .
“আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজা দেখাব! সিয়াম ঢাল স্বরূপ, সদকা পাপ মিটিয়ে দেয় যেমন আগুন পানি নিভিয়ে দেয় ও রাতের আধারে ব্যক্তির সালাত। অতঃপর তিনি পাঠ করেন: “তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়...” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
১০. কিয়ামুল লাইল কিয়ামতের দিন নূর হবে। আবুদ-দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من مشى في ظلمة اللَّيل إلى المساجد لقي الله - عز وجل - بنور يوم القيامة» . رواه الطبرانيُّ وابن حبَّان في صحيحه، وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে চলে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে নূরসহ সাক্ষাত করবে”। [তাবরনী, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
১১. রাতে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিরা যখন কবরে কষ্ট ও সংকীর্ণতার সম্মুখীন হবে, তখন কিয়ামকারী ব্যক্তিরা প্রশস্ততা ও নূর হাসিল করবে। তার নেক আমল তার নিকট সুন্দর আকৃতিতে এসে উপস্থিত হবে, তার একাকীত্ব দূর করবে ও তাকে সান্ত্বনা দিবে। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ العبدَ المؤمن إذا كان في انقطاع من الدُّنيا وإقبال من الآخرة نزل إليه الملائكةُ من السَّماء بيضُ الوجوه كأنَّ وُجوهَهُم الشَّمسُ، مَعَهُم كَفَنٌ من أكفَان الجنة وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوط الجنة حتى يجلسوا منه مَدَّ البصر ...» إلى أن قال في وصف حال المؤمن في القبر :
«فَيُنادي مُنَادٍ في السَّماء أَنْ صَدَقَ عَبْدي فَأَفْرشوه مِن الجنَّة وَألبِسُوهُ منْ الجنةِ وَاْفتحُوا لَه بَابًا إلى الجنة» . قال : «فَيأتيه من رُوحها وطيبها ويُفْسَحُ لهُ في قَبْره مدَّ بَصَره» .
قَالَ : «ويأتيه رجلٌ حَسَنُ الوَجْه حَسَنُ الثياب، طَيَّبُ الريح، فيقولُ : أبشر بالذي يَسُرُّكَ، هذا يومك الذي كنتَ توعَد . فيقول له : من أنت؟ فوجهك الوجه يجيء بالخير . فيقول : أنا عملك الصالح . فيقول : رَبِّ أَقم الساعة حتى أرجع إلى أهلي ومالي» . رواه أحمد (4/362) ، وصحَّحه الألبانيُّ في أحكام الجنائز (156).
“নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান করার ও আখেরাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার মুহূর্তে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ নাযিল হয়, যেন তাদের চেহারা সূর্যের অবিকল। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি, তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়...” এরপর কবরে মুমিনের অবস্থার বর্ণনা দেন:
“অতঃপর আসমান থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান করে: আমার বান্দা সত্য বলেছে অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও”। তিনি বলেন: “অতঃপর জান্নাতের স্নিগ্ধ বাতাস ও সুঘ্রাণ তার নিকট আসতে থাকে এবং তার দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করা হয়”।
তিনি বলেন: “তার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে সুন্দর চেহারা ও সুন্দর ঘ্রাণসহ, এবং বলে: তুমি খুশির সংবাদ গ্রহণ কর, এ হচ্ছে তোমার প্রতিশ্রুত দিন। সে বলবে: তুমি কে? তোমার চেহারা শুধু কল্যাণ নিয়ে আসছে। সে বলবে: আমি তোমার নেক আমল। সে বলবে: হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের নিকট ফিরে যেতে পারি”। [আহমদ, শায়খ আলবানি “আহকামুল জানায়েয”: (পৃ.১৫৬) গ্রন্থে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
এ হচ্ছে কিয়ামুল লাইলের কতক উপকারিতা, বান্দা যদি ঘুমের পূর্বে এসব স্মরণ করে নিশ্চয় রাতে উঠার দৃঢ় ইচ্ছা হবে, আর যদি ঘুম ভাঙার সময় স্মরণ করে অবশ্যই উঠে দাঁড়াবে।
«ثلاثة يحبُّهم الله ويضحك إليهم ويستبشر بهم ...». وذكر منهم : «والذي له امرأة حسناء وفراش لين حسن فيقوم من الليل؛ فيقول : يَذَرُ شهوتَه ويذكرني ولو شاء رقد» . رواه الطبرانيُّ، وقال المنذريُّ : إسناده حسن .
“তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন, তাদের দেখে হাসেন ও তাদেরকে সুসংবাদ দেন...”, তাদের একজন: “যার সুন্দর স্ত্রী ও আরামদায়ক বিছানা রয়েছে, তবুও সে রাতে দণ্ডায়মান হয়। [আল্লাহ বলেন:] সে তার প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করে আমাকে স্মরণ করছে, যদি সে চাইত শুয়ে থাকতে পারত”। [তাবরানি, শায়খ মুনযিরি বলেছেন, হাদিসটির সনদ হাসান।]
আল্লাহর হাসা তার সন্তুষ্টির দলিল, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহ তা‘আলা রাতে কিয়ামকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عجب ربُّنا من رجلين : رجل ثار عن وطائه ولحافه من بين حِبِّه وأهله إلى صلاته فيقول اللهُ لملائكته : انظروا إلى عبدي ثار عن فراشه ووطائه من بين حِبِّه وأهله إلى صلاته رغبةً فيما عندي وشفقةً مما عندي» . رواه الطَّبرانيُّ والبيهقيُّ وابن حبَّان وصحَّحه الألبانيُّ والأرناؤوط .
“আমাদের রব দু’জন ব্যক্তির কারণে আশ্চর্য হন: এক ব্যক্তি যে তার নরম বিছানা ও লেপ ছেড়ে, প্রিয় স্ত্রী ও পরিবার ত্যাগ করে সালাতে দণ্ডায়মান হয়, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলেন: দেখ আমার বান্দাকে, সে তার বিছানা ও খাট ছেড়ে, স্ত্রী ও পরিবার ত্যাগ করে আমার আশা ও ভয়ে সালাতে দণ্ডায়মান হয়েছে”। [তাবরাবি, বায়হাকি, ইবনে হিব্বান, শায়খ আলবানি ও শায়খ আরনাউত হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
২. কিয়ামুল লাইলকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া, যার নিয়ামত কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তরে তার কল্পনা জাগ্রত হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [ السجدة : ١٦، ١٧ ]
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কি জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজাদ: (১৬-১৭)]
আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا أيُّها النَّاس أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلُّوا باللَّيل والناسُ نيامٌ تدخلوا الجنة بسلام» . رواه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“হে মানুষেরা, সালামের প্রসার কর, খাদ্য প্রদান কর ও রাতে সালাত আদায় কর, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে জান্নাতে নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ করবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ في الجنة غرفًا يُرى ظاهرُها من بطونها وبطونُها من ظهورها» . فقام أعرابيٌّ فقال : لمن هي يا رسولَ الله؟ قال : «مَنْ أطاب الكلامَ وأطعمَ الطَّعامَ وأدامَ الصِّيامَ وصلَّى باللَّيل والنَّاسُ نيامٌ» . رواه التِّرمذيُّ وحسَّنه الألبانيُّ .
“নিশ্চয় জান্নাতে কতক প্রাসাদ রয়েছে, যার ভেতর বাহির থেকে ও বাহির ভেতর থেকে দেখা যায়”। জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বলেন: “তার জন্য যে সুন্দর কথা বলে, খাদ্য প্রদান করে, রীতিমত সালাত আদায় করে ও কিয়ামুল লাইল করে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।] আল্লাহ যখন দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, তার সামনে হাজির না হয়ে আমরা কি স্বাদ আস্বাদন করি?! কিসের বিনিময়ে চিরস্থায়ী জান্নাত বিনষ্ট করছি?! যেখানে হাতাশা ও দুঃখ কিছুই নেই। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ أَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٧٠ ﴾ [ ال عمران : ١٧٠ ]
“ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। [সূরা আলে-ইমরান: (১৭০)]
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١ لَا يَسۡمَعُونَ حَسِيسَهَاۖ وَهُمۡ فِي مَا ٱشۡتَهَتۡ أَنفُسُهُمۡ خَٰلِدُونَ ١٠٢ لَا يَحۡزُنُهُمُ ٱلۡفَزَعُ ٱلۡأَكۡبَرُ وَتَتَلَقَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ هَٰذَا يَوۡمُكُمُ ٱلَّذِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ١٠٣ ﴾ [ الانبياء : ١٠١، ١٠٣ ]
“আমার পক্ষ থেকে যাদের জন্য পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে। (১০১) তারা জাহান্নামের ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না। সেখানে তারা তাদের মনঃপুত বস্তুর মধ্যে চিরকাল থাকবে। মহাভীতি তাদেরকে পেরেশান করবে না। আর ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে, ‘এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল”। [সূরা আম্বিয়া: (১০১-১০৩)]
প্রিয় পাঠক, আপনি অবশ্যই জান্নাতে যেতে চান, তবে তার জন্য চেষ্টা করেন না কেন?! আপনার বাধা কিসে?! নিশ্চয় শয়তান আপনাকে বাধা দিচ্ছে, তার কামনা আপনিও তার সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করেন। অতএব তাকে ছুঁড়ে ফেলুন, তার ডাকে সাড়া দিবেন না, তার প্ররোচনায় প্রতারিত হবেন না, কিয়ামুল লাইলের জন্য উঠে দাঁড়ান।
৩. রাতে কিয়ামকারী বান্দার উপর আল্লাহ রহমত নাযিল করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رَحم اللهُ رجلاً قام من الليل فصلَّى وأيقظَ امرأتَه، فإن أَبَتْ نضح في وجهها الماءَ، ورحم اللهُ امرأةً قامت من اللَّيل فصلَّت وأيقظت زوجَها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» . رواه أبو داود، وقال الألبانيُّ : ( حسن صحيح ).
“আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে দাঁড়াল ও স্ত্রীকে জাগ্রত করল, যদি সে অস্বীকার করে তার চোখে পানির ছিটা দিল। আল্লাহ সে নারীকে রহম করুন, যে রাতে দাঁড়াল ও স্বামীকে জাগ্রত করল, যদি সে অস্বীকার করে তার চোখে পানির ছিটা দিল”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষ উভয়ে আল্লাহর হক আদায় ও তার রহমত প্রাপ্তিতে সমান।
৪. যে দু’রাকাত সালাত আদায় করল, সে অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রিয় পাঠক, আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন, দেখুন রাতের আঁধারে দু’রাকাত সালাতের কি পরিমাণ ফযিলত, আপনি অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর যে দু’রাকাতের অধিক আদায় করে, তার ব্যাপারে আপনার ধারণা কি!? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا أيقظ الرجلُ أهله من الليل فصلَّيا أو صلى ركعتين جميعًا كُتبا في الذاكرين والذاكرات» . رواه أبو داود وصححه الألباني .
“যখন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগ্রত করে, অতঃপর উভয়ে সালাত আদায় করে অথবা উভয়ে মিলে দু’রাকাত আদায় করে, তাদেরকে অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অধিক যিকিরকারী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
৫. কিয়ামুল লাইলের বদৌলতে ব্যক্তি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয় না। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قام بعشر آيات لم يُكتب من الغافلين، ومن قام بمائة آية كُتب من القانتين، ومن قام بألف آية كُتب من المقنطرين» . رواه أبو داود وصحَّحه الألباني .
“যে ব্যক্তি রাতে দশ আয়াতসহ কিয়াম করল, তাকে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, আর যে একশো আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে কানেতিনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, আর যে এক হাজার আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।] মুকানতিরিন অর্থ অধিক সম্পদের মালিক। এখানে উদ্দেশ্য অধিক সাওয়াবের মালিক। ইব্ন হাজার রহ. বলেন: সূরা মুলক থেকে সূরা নাস পর্যন্ত এক হাজার আয়াত।
৬. যদি কেউ রাতে সালাত আদায়ের নিয়ত করে, দৃঢ় ইচ্ছা রাখে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সে সাওয়াবের অধিকারী হয়, যদিও সে জাগ্রত হতে না পারে। ঘুম তার জন্য সদকা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما من امرئ تكون له صلاة بالليل فغلبه عليها النومُ إلا كُتب له أجرُ صلاته وكان نومُه صدقة عليه» . رواه أبو داود وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তিরই রাতে সালাতের ইচ্ছা রয়েছে, অতঃপর তার উপর ঘুম প্রবল হল, তার জন্য অবশ্যই সালাতের সাওয়াব লিখা হবে, আর ঘুম হবে তার উপর সদকা স্বরূপ”। [আবু দাউদ, হাদিসটি শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।]
৭. কিয়ামুল লাইলের বদৌলতে পরকালের মাগফেরাত, রহমত ও চিরস্থায়ী নিয়ামত হাসিল হয়। কারণ এতে একটি মুহূর্ত রয়েছে যেখানে বান্দা যা চায় তাই প্রদান করা হয়। হাদিসে এসেছে:
«إن في الليل لساعة لا يوافقها رجلٌ مسلم يسأل الله خيرًا من أمر الدنيا والآخرة إلا أعطاه إياه وذلك كل ليلة» . رواه مسلم .
“নিশ্চয় রাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের যাই প্রার্থনা করুক, আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। আর এটা প্রতি রাতেই হয়। [মুসলিম।]
৮. রাতে কিয়ামকারী ব্যক্তি দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, যখন আল্লাহ বলেন: আছে কেউ প্রার্থনাকারী আমি যাকে প্রদান করব? আছে কেউ ইস্তেগফারকারী আমি যাকে ক্ষমা করব? বান্দার এর চেয়ে বড় পাওনা আর কি?
৯. কিয়ামুল লাইলের কারণে পাপ মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«ألا أَدُلُّك على أبواب الخير؛ الصوم جُنَّةٌ، والصَّدقةُ تطفئ الخطيئة كما يُطفئ الماء النار، وصلاة الرجل من جوف الليل» . ثم تلا : ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ حتى بلغ : يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ . رواه التِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ» .
“আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজা দেখাব! সিয়াম ঢাল স্বরূপ, সদকা পাপ মিটিয়ে দেয় যেমন আগুন পানি নিভিয়ে দেয় ও রাতের আধারে ব্যক্তির সালাত। অতঃপর তিনি পাঠ করেন: “তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়...” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
১০. কিয়ামুল লাইল কিয়ামতের দিন নূর হবে। আবুদ-দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من مشى في ظلمة اللَّيل إلى المساجد لقي الله - عز وجل - بنور يوم القيامة» . رواه الطبرانيُّ وابن حبَّان في صحيحه، وصحَّحه الألبانيُّ .
“যে ব্যক্তি রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে চলে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে নূরসহ সাক্ষাত করবে”। [তাবরনী, ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
১১. রাতে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিরা যখন কবরে কষ্ট ও সংকীর্ণতার সম্মুখীন হবে, তখন কিয়ামকারী ব্যক্তিরা প্রশস্ততা ও নূর হাসিল করবে। তার নেক আমল তার নিকট সুন্দর আকৃতিতে এসে উপস্থিত হবে, তার একাকীত্ব দূর করবে ও তাকে সান্ত্বনা দিবে। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ العبدَ المؤمن إذا كان في انقطاع من الدُّنيا وإقبال من الآخرة نزل إليه الملائكةُ من السَّماء بيضُ الوجوه كأنَّ وُجوهَهُم الشَّمسُ، مَعَهُم كَفَنٌ من أكفَان الجنة وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوط الجنة حتى يجلسوا منه مَدَّ البصر ...» إلى أن قال في وصف حال المؤمن في القبر :
«فَيُنادي مُنَادٍ في السَّماء أَنْ صَدَقَ عَبْدي فَأَفْرشوه مِن الجنَّة وَألبِسُوهُ منْ الجنةِ وَاْفتحُوا لَه بَابًا إلى الجنة» . قال : «فَيأتيه من رُوحها وطيبها ويُفْسَحُ لهُ في قَبْره مدَّ بَصَره» .
قَالَ : «ويأتيه رجلٌ حَسَنُ الوَجْه حَسَنُ الثياب، طَيَّبُ الريح، فيقولُ : أبشر بالذي يَسُرُّكَ، هذا يومك الذي كنتَ توعَد . فيقول له : من أنت؟ فوجهك الوجه يجيء بالخير . فيقول : أنا عملك الصالح . فيقول : رَبِّ أَقم الساعة حتى أرجع إلى أهلي ومالي» . رواه أحمد (4/362) ، وصحَّحه الألبانيُّ في أحكام الجنائز (156).
“নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান করার ও আখেরাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার মুহূর্তে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ নাযিল হয়, যেন তাদের চেহারা সূর্যের অবিকল। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি, তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়...” এরপর কবরে মুমিনের অবস্থার বর্ণনা দেন:
“অতঃপর আসমান থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান করে: আমার বান্দা সত্য বলেছে অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও”। তিনি বলেন: “অতঃপর জান্নাতের স্নিগ্ধ বাতাস ও সুঘ্রাণ তার নিকট আসতে থাকে এবং তার দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করা হয়”।
তিনি বলেন: “তার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে সুন্দর চেহারা ও সুন্দর ঘ্রাণসহ, এবং বলে: তুমি খুশির সংবাদ গ্রহণ কর, এ হচ্ছে তোমার প্রতিশ্রুত দিন। সে বলবে: তুমি কে? তোমার চেহারা শুধু কল্যাণ নিয়ে আসছে। সে বলবে: আমি তোমার নেক আমল। সে বলবে: হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের নিকট ফিরে যেতে পারি”। [আহমদ, শায়খ আলবানি “আহকামুল জানায়েয”: (পৃ.১৫৬) গ্রন্থে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
এ হচ্ছে কিয়ামুল লাইলের কতক উপকারিতা, বান্দা যদি ঘুমের পূর্বে এসব স্মরণ করে নিশ্চয় রাতে উঠার দৃঢ় ইচ্ছা হবে, আর যদি ঘুম ভাঙার সময় স্মরণ করে অবশ্যই উঠে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর জন্য উপকরণ নির্ধারণ করেছেন, কিয়ামুল লাইলের জন্যও রয়েছে কিছু উপকরণ। যে রাতে উঠতে চায়, তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে, তাহলে সে আল্লাহর ইচ্ছায় উঠতে সক্ষম হবে। আমি এখানে কতক উপকরণ উল্লেখ করছি, আল্লাহর নিকট দোয়া করছি, যে তা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে উপকৃত করুন।
আল্লাহর নিকট সাহায্য তলব করুন: কোন ইবাদাত আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত সম্ভব নয়, কিয়ামুল লাইলও তথৈবচ। কারণ বান্দা যখন ঘুমায় শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি ঘিরা দেয়, যদি সে আল্লাহর সাহায্য চায়, আল্লাহ তাকে শয়তানের বিপক্ষে সাহায্য করেন। আল্লাহর উপর যতক্ষণ তার ভরসা রয়েছে, শয়তান তাকে কাবু করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ لَيۡسَ لَهُۥ سُلۡطَٰنٌ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٩٩ ﴾ [ النحل : ٩٩ ]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াককুল করেছে, তাদের উপর শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই”। [সূরা নাহাল: (৯৯)] আমরা প্রতিনিয়ত সূরা ফাতিহা দ্বারা এ সাহায্যই প্রার্থনা করি:
﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [ الفاتحة : ٥ ]
“আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই”। [সূরা ফাতেহা: (৫)]
যখন আপনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কথা স্মরণ করুন, বিশেষ করে কিয়ামের শুরুতে। কারণ আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত তা খুব কষ্টকর। আরও স্মরণ করুন:
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ]
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব”। [সূরা আনকাবুত: (৬৯)]
আকিদা বিশুদ্ধ করুন: কিয়ামুল লাইলকারী নিজের আকিদা বিশুদ্ধ করুন, সঠিকভাবে ঈমানের প্রতিটি দিক যাচাই করুন, শুধু মুখের কথা ও বাক্যের উচ্চারণ যথেষ্ট নয়। জান্নাতকে স্মরণ করুন ও জাহান্নামকে ভয় করুন। এটাই কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম উপায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)”। [সূরা যুমার: (৯)]
তাকদীরের উপর বিশ্বাস করুন: ভাল-মন্দ তকদীরের উপর বিশ্বাস করুন, যা হাত ছাড়া হয় বা যা স্পর্শ করে, তার জন্য দুঃখিত না হওয়া, তাকদীরকে গাল-মন্দ না করা। কোন আপত্তি কিংবা অভিযোগ উত্থাপন না করা, কারণ এভাবে মূলত আল্লাহকে গাল-মন্দ করা হয় ও তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়, যেহেতু তাকদীর একমাত্র তার হাতে।
কুরআনের তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন: ঈমানের উৎস কুরআন, তথা আল্লাহর বাণী, তাই তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন ও তার আদেশ-নিষেধের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। দৃঢ় বিশ্বাস করুন আপনি আল্লাহর কালাম পাঠ করছেন, তার সাথে কথা বলছেন, ইনশাআল্লাহ আপনার অন্তর বিনয়ী হবে, আপনার শরীরে শিহরণ সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحۡسَنَ ٱلۡحَدِيثِ كِتَٰبٗا مُّتَشَٰبِهٗا مَّثَانِيَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمۡ وَقُلُوبُهُمۡ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ ٢٣ ﴾ [ الزمر : ٢٣ ]
“আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়েত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়েত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই”। [সূরা যুমার: (২৩)]
আল্লাহকে মহব্বত করুন ও তার সাথে সম্পৃক্ত হন: আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ততা ও তার মহব্বত ব্যতীত কিয়ামুল লাইল সম্ভব নয়। যার অন্তরে আল্লাহর মহব্বত রয়েছে, সে তার সাক্ষাত, তার সাথে বাক্যালাপ ও তার কালামের প্রতি মনোযোগী হবে নিশ্চয়।
প্রিয় পাঠক, আপনার প্রিয় বন্ধু যাকে আপনি মহব্বত করেন, যার সঙ্গ আপনার প্রিয়, যার বাক্যালাপ আপনার পছন্দ, যাকে আপনি অন্তরে অনুভব করেন; নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন তার ওয়াদার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা কিরূপ?! মনে করুন সে আপনার থেকে দূরে, আপনাকে সাক্ষাতের ওয়াদা দিয়েছে, আপনি কি তার সাক্ষাতের অপেক্ষা করবেন না, তার আগমনের প্রস্তুতি নিবেন না?! অবশ্যই নিবেন। যদি কেউ তার সময়ে আপনাকে আহ্বান করে আপনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। আপনার পরিবারকে বলবেন যেন আপনাকে তারা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিংবা আপনাকে জাগিয়ে দেয় যদি ঘুমে থাকেন, কারণ আপনি চান তার সাক্ষাত ছুটে না যাক। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কে এই ব্যক্তি?! কার জন্য আপনি এত ব্যস্ত?! সে কি আপনাকে রিযক দেয়?! আপনাকে রোগ থেকে মুক্ত করে?! আপনার পেরেশানি দূর করে?! সে কি আপনাকে এত সুন্দর চেহারা ও অবয়ব দিয়েছে?! আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা চাইবেন তাই দিবে?! না, কখনো না, তার এ সাধ্য নেই, সে আপনার মত মানুষ। আপনার প্রয়োজন তারও প্রয়োজন।
তবুও সে যদি আপনাকে রাতের কথা বলে, আপনি দিনে তার চিন্তা করেন, যদি দিনের কথা বলে রাতে তার চিন্তা করেন, যদি সে আপনার প্রিয় ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়।
অতএব যে আল্লাহকে মহব্বত করে, তার সাক্ষাত প্রত্যাশা করে, সে অবশ্যই রাত জেগে কিয়ামুল লাইল করবে, যখন আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন।
প্রত্যেকের আগ্রহ আলাদা, কেউ রাতের এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করে, কেউ রাতের এক চতুর্থাংশ কিয়াম করে, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ অর্ধরাত, কেউ এক দশমাংশ। প্রত্যেকে আল্লাহর প্রতি তাদের মহব্বত অনুযায়ী কিয়াম করে।
একটি উদাহরণ পেশ করছি, মনে করুন আপনি কোন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন, যেখানে আপনার অনেক আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছে, আপনি তাদেরকে পৌঁছার সময় বলে দিয়েছেন, আপনি চান তারা আপনাকে সম্মান দিয়ে নিয়ে যাক। যখন আপনি পৌঁছলেন দেখছেন কেউ অপেক্ষা করছে ফ্লাইটের নিকট। কেউ অপেক্ষা করছে অভ্যর্থনা কক্ষে। কেউ অপেক্ষা করছে ঘরে। কেউ আপনাকে দেখার জন্য এসেছে দু’দিন পর। কেউ এসেছে একদিন পর। কারো সাথে আপনার সাক্ষাত হল বাজারে, সে আপনাকে সালাম দিল ও বলল: আপনার আসার অপেক্ষায় ছিল সে।
আপনি কি তাদের সবার মহব্বত এক পাল্লায় পরিমাপ করবেন?! যদি বাজারে সাক্ষাতকারী ব্যক্তি দাবি করে সে আপনাকে সবচেয়ে বেশী মহব্বত করে, যারা আপনাকে বিমান-বন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তাদের চেয়ে, আপনি কি তাকে সত্য বলবেন?!
আমি মনে করি না আপনি তাকে সত্য বলবেন...
অতএব যে চোখ ভরে ঘুমায়, অতঃপর রাতে কিয়ামকারীদের চেয়ে অধিক মহব্বতের দাবি করে, তার দাবি কিভাবে সত্য হয়! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।
আল্লাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ছিল সত্যিকার মহব্বত, অতএব আল্লাহকে মহব্বত করার ক্ষেত্রে তার পন্থাই আমাদের আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আহযাব: (২১)] তিনি আরও বলেন:
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ ال عمران : ٣١ ]
“বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আলে-ইমরান: (৩১)]
স্মরণ করুন ফজর সালাতে যে অলসতা করে, আল্লাহর সাক্ষাতের প্রতি যার ভ্রুক্ষেপ নেই, তার উপর আল্লাহর গোস্বা পতিত হয়। তাই কিয়ামুল লাইলের সুফল ও ত্যাগ করার কুফল সংক্রান্ত হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা জরুরী।
স্মরণ করুন, আল্লাহ তার বান্দার সালাত দেখেন, তার তিলাওয়াত শ্রবণ করেন, তার দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার কবুল করেন। রাতের এক তৃতীয়াংশে তিনি দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন। যে চায় তাকে দান করেন, যে দোয়া করে তার ডাকে সাড়া দেন এবং যে ইস্তেগফার করে তাকে তিনি ক্ষমা করেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزلُ اللهُ - تباركَ وتعالى - إلى السَّماء الدُّنيا كلَّ ليلة حين يمضي ثلثُ الليل الأول فيقول : أنا الملك، أنا الملك، من ذا الذي يَدْعوني فأستجيبَ له، من ذا الذي يسألني فأعطيه، من ذا الذي يستغفرني فأغفر له» . أخرجه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করে, তিনি বলেন: আমিই বাদশাহ, আমিই বাদশাহ, কে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তাকে প্রদান করব, কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে আমি তাকে ক্ষমা করব”। [মুসলিম।]
মুসলিম ভাইদের প্রতি অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখুন: কারো প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ ত্যাগ করুন। যদি কারো ব্যাপারে অন্তরে কিছু থাকে, ঘুমের পূর্বে তাকে ক্ষমা করে দিন, এটা সদকা রূপে গণ্য হবে। এভাবে যে মুসলিমের উপর সদকা করে, আল্লাহর তার উপর রহমত প্রেরণ করেন ও তাকে অধিক ইবাদতের তাওফিক দেন।
পাপ থেকে দূরে থাকুন ও ইবাদাতে মনোযোগ দিন: দিনভর আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকুন। কারণ জাগ্রত অবস্থায় যে আল্লাহকে স্মরণ করে, ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহ তাকে হিফাযত করেন। কেউ বলেছেন: আমি যে দিন সিয়াম পালন করি, সে দিন কিয়াম আমার জন্য অতি সহজ হয়। কারণ তখন আমি অন্তরে বিনয় অনুভব করি। কেউ বলেছেন: নেকি নেকের বাহন।
অতিরিক্ত দুনিয়াদারী থেকে দূরে থাকুন: দুনিয়ার মগ্নতা ও চিন্তাসহ ঘুমালে আখেরাতের চিন্তা অন্তরে স্থান পায় না। এক অন্তরে সমানভাবে দুনিয়া-আখেরাত একত্র হয় না।
অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডা ত্যাগ করুন: অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডার কারণে অন্তরে গাফিলতি ও শরীরে অলসতার সৃষ্টি হয়, ফলে কিয়ামুল লাইল ছুটে যায়। প্রয়োজন ব্যতীত গতর খাটুনি ও কঠিন পরিশ্রম ত্যাগ করুন।
সর্বদা কিয়ামুল লাইলের চিন্তায় মগ্ন থাকুন: সত্যিকার ইচ্ছা ও আগ্রহ ব্যতীত এ ধারণার সৃষ্টি হয় না। জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, চিন্তা কিভাবে মানুষকে জাগ্রত করে, তার জবাবে তিনি বলেন: “মানুষ রাত ভর ঘুমিয়ে ফজরের সময় কিংবা তার পরে জাগ্রত হয়, কিন্তু যখন তার প্রয়োজন হয়, জাগ্রত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, রাতে অবশ্যই জাগতে হবে চিন্তা নিয়ে ঘুমায়, তখন সে সময় হওয়ার পূর্বে বারবার জাগ্রত হয়। তাকে চিন্তা বারবার জাগিয়ে দেয়, যার সাথে সে ঘুমিয়ে ছিল। যদি দুনিয়ার চিন্তা অচেতন ঘুম থেকে এভাবে জাগিয়ে দিতে পারে, তাহলে আল্লাহর সাক্ষাতের চিন্তা কেন জাগাবে না?!
কিয়ামুল লাইলের দৃঢ় বিশ্বাস, নিজের সক্ষমতার উপর আস্থা ও ঘুম থেকে জেগে বেতের পড়ার অবিচল মনোভাব রাখুন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا ٦ ﴾ [ المزمل : ٦ ]
“নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৬)]
কতক মুফাসসির বলেছেন: রাতের মুহূর্তগুলো থাকে নীরব, কর্মহীন ও ঝামেলা মুক্ত, সে সময় ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা অবশ্যই দিনের সালাতের চেয়ে কঠিন, কারণ রাতের সৃষ্টি ঘুম ও আরামের জন্য, তখন কিয়াম করা নফসের উপর কঠিন-ই বটে। কিন্তু যার নিজের সামর্থের উপর আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, তার মনোবল দৃঢ় হয়, প্রতিজ্ঞা সতেজ ও শরীর উদ্যমী হয়, সে উঠতে পারে। [সাফওয়াতুত তাফাসীর: (৩/৪৬৬)]
রাতের সালাত দিনে কাযা করুন: যদি কখনো রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে তার কাযা করুন। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خافَ أن لا يقومَ من آخر اللَّيل فليوتر أولَه، ومن طَمع أن يقومَ آخَره فليوتر آخرَ الليل؛ فإنَّ صلاةَ آخر اللَّيل مشهودةٌ، وذلك أفضلُ» . رواه مسلم .
“যে ব্যক্তি শেষ রাতে না উঠার ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন প্রথম রাতে বেতের পড়ে নেয়। আর যে শেষ রাতে বেতের পড়তে আশাবাদী সে যেন শেষ রাতে সালাত আদায় করে। কারণ শেষ রাতের সালাতই উপস্থিতির সালাত, সে সালাতই উত্তম”। [মুসলিম।]
শেষ রাতে উঠে সালাত আদায়ে যে আশাবাদী নয়, তার যদি প্রথম রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে বারবার ছুটার ফলে, এক সময় রাতের কিয়াম তার নিকট গুরুত্বহীন হয়ে যায়। কারণ একবার ত্যাগ করার ফলে মনে আফসোসের রেখা কাটে, দ্বিতীয়বার সে আফসোস হালকা হয়। বারবার হতে থাকলে আফসোস আর থাকে না।
রাতে উঠার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন: সাথে এলার্ম ঘড়ি রাখুন, অথবা পরিবারের কাউকে বলুন, অথবা প্রতিবেশীকে বলুন, অথবা কোন বন্ধুকে বলুন, যে আপনাকে জাগিয়ে দিবে।
কিয়ামুল লাইলের জন্য পরিবারের কাউকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করুন: শয়তান দু’জনের তুলনায় একজনের উপর অধিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। দু’জন মিলে একে অপরের সহযোগী হলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয় ও নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় থাকে, বিশেষ করে তারা যদি হয় স্বামী-স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رحمَ اللهُ رجلاً قامَ من الليل فصلى وأيقظَ امرأته، فإن أبت نضَحَ في وجهها الماءَ، ورحمَ اللهُ امرأة قامت من الليل فصلَّت وأيقظت زوجها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» . رواه أبو داود وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .
“আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্ত্রীকে জাগিয়ে দিল। স্ত্রী উঠতে না চাইলে তার চেহারায় পানির ছিটা দিল। আল্লাহ ঐ নারীকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্বামীকে জাগিয়ে দিল, যদি স্বামী উঠমত না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
উম্মুল মুমেনিন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শঙ্কিত হয়ে জেগে উঠে বলেন:
«سبحانَ الله، ماذا أنزل اللهُ من الخزائن؟ وماذا أُنزل من الفتن؟ من يوقظ صواحبَ الحجرات - يريد أزواجه لكي يصلين - رُبَّ كاسية في الدنيا عارية في الآخرة» . رواه البخاري .
“সুবহানাল্লাহ! কি পরিমাণ খাজানা নাযিল করা হয়েছে? কি পরিমাণ ফেতনা অবতীর্ণ করা হয়েছে? কে ঘরের লোকদের জাগাবে, -তার উদ্দেশ্য নিজ স্ত্রীগণ, যেন তারা সালাত আদায় করে- দুনিয়ায় অনেক পোশাকধারী আখেরাতে নগ্ন থাকবে”। [বুখারি।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার খাদেম রাতকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়ে ছিলেন, একজন সালাত আদায় করে অপর জনকে জাগিয়ে দিতেন।
ঘুমের সময় সুন্নতের অনুসরণ করুন: ঘুমের সময় ও ঘুমের হালতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করুন, যেমন:
ক. রাতের শুরুতে ঘুমানো। শেষ রাতে উঠার জন্য প্রথম রাতে ঘুমানো জরুরী। যে অর্ধরাত বা তার পরে ঘুমায় তার জন্য শেষ রাতে উঠা কষ্টকর। তার শরীর ও ঘুমের হক আদায় হয় না। দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তির জন্য রাত-দিনে আট ঘণ্টা ঘুমানো যথেষ্ট। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داودَ، وأحبُّ الصيام إلى الله صيامُ داودَ؛ كان ينام نصفَ الليل ويقوم ثُلُثَه وينام سدسَه، ويصوم يومًا ويفطر يومًا» . متَّفق عليه .
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সালাত দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত। আল্লাহর নিকট উত্তম সিয়াম দাউদ আলাইহিস সালামের সিয়াম। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও এক দিন ইফতার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
হিসাব করুন: যদি অর্ধেক রাতের সাথে এক ষষ্ঠাংশ যোগ করা হয়, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ হয়। আর দুই তৃতীয়াংশ-ই আট ঘণ্টা, যদি রাত বারো ঘণ্টার হয়। মুমিন যদি এশার সালাতের জন্য দেরি করে, তাহলে দিনের দ্বিপ্রহরের বিশ্রামই রাতের নিদ্রার পরিবর্তে যথেষ্ট হয়, ফলে সে শেষ রাতে উঠতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:
أنَّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم كان ينام أولَ الليل ويقوم آخره فيصلي . متَّفقٌ عليه،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন ও শেষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
وكان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يكرهُ الحديثَ بعدَ العشاء كما في البخاريِّ .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। [যেমন বুখারিতে এসেছে।]
খ. খুব আরামদায়ক বিছানায় না ঘুমানো। বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানায় একদা চারটি কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়, সাধারণত দু’টি কাপড় বিছানো হত, ফলে তিনি বিনা-কিয়ামে ভোর করেন। জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরা কি করেছ?” তারা উত্তর দিল। তিনি বললেন: “যেরূপ ছিল সেরূপ বানিয়ে দাও”। [শামেয়েলে তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।]
গ. অযু ও যিকরসহ ঘুমানো। যে ব্যক্তি অযু করে ঘুমায়, ফেরেশতাগণ তাকে পাহারা দেয়, তার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করে। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ باتَ طاهرًا بات في شعاره ملكٌ؛ فلم يستيقظ إلا قال الملكُ : اللهم اغفر لعبدك فلان؛ فإنَّه بات طاهرًا» . أخرجه ابنُ حبَّان في صحيحه، وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায়, তার মাথার নিকট ফেরেশতা রাত যাপন করে, তার জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেশতা বলে: হে আল্লাহ তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা কর, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছে”। [ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
ঘ. ডান কাত হয়ে শোয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«إذا أخذتَ مضجعك فتوضَّأ وضوءَك للصلاة ثم اضطَّجع على شقِّك الأيمن ..» رواه مسلم .
“যখন বিছানায় যাবে সালাতের ন্যায় অযু কর, অতঃপর ডান কাতে ঘুমাও”। [মুসলিম।]
ঙ. ঘুমের পূর্বে হাদিসে বর্ণিত সূরা, সূরার আয়াত ও দোয়াসমূহ আগ্রহের সাথে পাঠ করুন, আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপত্তা হাসিল হবে ও কিয়াম করতে সক্ষম হবেন। কুরআন পাঠকারীর ঘুম হালকা হয়, সে কুরআনের উপর ঘুমায় ও জাগ্রত হয়। অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে, কুরআন পাঠ করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কুরআন নিয়ে জাগ্রত হয়, কবিতা আবৃত করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কবিতা নিয়ে জাগ্রত হয়, গান গেয়ে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে গান নিয়ে জাগ্রত হয়।
আল্লাহর নিকট সাহায্য তলব করুন: কোন ইবাদাত আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত সম্ভব নয়, কিয়ামুল লাইলও তথৈবচ। কারণ বান্দা যখন ঘুমায় শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি ঘিরা দেয়, যদি সে আল্লাহর সাহায্য চায়, আল্লাহ তাকে শয়তানের বিপক্ষে সাহায্য করেন। আল্লাহর উপর যতক্ষণ তার ভরসা রয়েছে, শয়তান তাকে কাবু করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ لَيۡسَ لَهُۥ سُلۡطَٰنٌ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٩٩ ﴾ [ النحل : ٩٩ ]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াককুল করেছে, তাদের উপর শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই”। [সূরা নাহাল: (৯৯)] আমরা প্রতিনিয়ত সূরা ফাতিহা দ্বারা এ সাহায্যই প্রার্থনা করি:
﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [ الفاتحة : ٥ ]
“আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই”। [সূরা ফাতেহা: (৫)]
যখন আপনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কথা স্মরণ করুন, বিশেষ করে কিয়ামের শুরুতে। কারণ আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত তা খুব কষ্টকর। আরও স্মরণ করুন:
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ]
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব”। [সূরা আনকাবুত: (৬৯)]
আকিদা বিশুদ্ধ করুন: কিয়ামুল লাইলকারী নিজের আকিদা বিশুদ্ধ করুন, সঠিকভাবে ঈমানের প্রতিটি দিক যাচাই করুন, শুধু মুখের কথা ও বাক্যের উচ্চারণ যথেষ্ট নয়। জান্নাতকে স্মরণ করুন ও জাহান্নামকে ভয় করুন। এটাই কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম উপায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ]
“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)”। [সূরা যুমার: (৯)]
তাকদীরের উপর বিশ্বাস করুন: ভাল-মন্দ তকদীরের উপর বিশ্বাস করুন, যা হাত ছাড়া হয় বা যা স্পর্শ করে, তার জন্য দুঃখিত না হওয়া, তাকদীরকে গাল-মন্দ না করা। কোন আপত্তি কিংবা অভিযোগ উত্থাপন না করা, কারণ এভাবে মূলত আল্লাহকে গাল-মন্দ করা হয় ও তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়, যেহেতু তাকদীর একমাত্র তার হাতে।
কুরআনের তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন: ঈমানের উৎস কুরআন, তথা আল্লাহর বাণী, তাই তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন ও তার আদেশ-নিষেধের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। দৃঢ় বিশ্বাস করুন আপনি আল্লাহর কালাম পাঠ করছেন, তার সাথে কথা বলছেন, ইনশাআল্লাহ আপনার অন্তর বিনয়ী হবে, আপনার শরীরে শিহরণ সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحۡسَنَ ٱلۡحَدِيثِ كِتَٰبٗا مُّتَشَٰبِهٗا مَّثَانِيَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمۡ وَقُلُوبُهُمۡ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ ٢٣ ﴾ [ الزمر : ٢٣ ]
“আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়েত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়েত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই”। [সূরা যুমার: (২৩)]
আল্লাহকে মহব্বত করুন ও তার সাথে সম্পৃক্ত হন: আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ততা ও তার মহব্বত ব্যতীত কিয়ামুল লাইল সম্ভব নয়। যার অন্তরে আল্লাহর মহব্বত রয়েছে, সে তার সাক্ষাত, তার সাথে বাক্যালাপ ও তার কালামের প্রতি মনোযোগী হবে নিশ্চয়।
প্রিয় পাঠক, আপনার প্রিয় বন্ধু যাকে আপনি মহব্বত করেন, যার সঙ্গ আপনার প্রিয়, যার বাক্যালাপ আপনার পছন্দ, যাকে আপনি অন্তরে অনুভব করেন; নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন তার ওয়াদার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা কিরূপ?! মনে করুন সে আপনার থেকে দূরে, আপনাকে সাক্ষাতের ওয়াদা দিয়েছে, আপনি কি তার সাক্ষাতের অপেক্ষা করবেন না, তার আগমনের প্রস্তুতি নিবেন না?! অবশ্যই নিবেন। যদি কেউ তার সময়ে আপনাকে আহ্বান করে আপনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। আপনার পরিবারকে বলবেন যেন আপনাকে তারা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিংবা আপনাকে জাগিয়ে দেয় যদি ঘুমে থাকেন, কারণ আপনি চান তার সাক্ষাত ছুটে না যাক। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কে এই ব্যক্তি?! কার জন্য আপনি এত ব্যস্ত?! সে কি আপনাকে রিযক দেয়?! আপনাকে রোগ থেকে মুক্ত করে?! আপনার পেরেশানি দূর করে?! সে কি আপনাকে এত সুন্দর চেহারা ও অবয়ব দিয়েছে?! আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা চাইবেন তাই দিবে?! না, কখনো না, তার এ সাধ্য নেই, সে আপনার মত মানুষ। আপনার প্রয়োজন তারও প্রয়োজন।
তবুও সে যদি আপনাকে রাতের কথা বলে, আপনি দিনে তার চিন্তা করেন, যদি দিনের কথা বলে রাতে তার চিন্তা করেন, যদি সে আপনার প্রিয় ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়।
অতএব যে আল্লাহকে মহব্বত করে, তার সাক্ষাত প্রত্যাশা করে, সে অবশ্যই রাত জেগে কিয়ামুল লাইল করবে, যখন আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন।
প্রত্যেকের আগ্রহ আলাদা, কেউ রাতের এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করে, কেউ রাতের এক চতুর্থাংশ কিয়াম করে, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ অর্ধরাত, কেউ এক দশমাংশ। প্রত্যেকে আল্লাহর প্রতি তাদের মহব্বত অনুযায়ী কিয়াম করে।
একটি উদাহরণ পেশ করছি, মনে করুন আপনি কোন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন, যেখানে আপনার অনেক আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছে, আপনি তাদেরকে পৌঁছার সময় বলে দিয়েছেন, আপনি চান তারা আপনাকে সম্মান দিয়ে নিয়ে যাক। যখন আপনি পৌঁছলেন দেখছেন কেউ অপেক্ষা করছে ফ্লাইটের নিকট। কেউ অপেক্ষা করছে অভ্যর্থনা কক্ষে। কেউ অপেক্ষা করছে ঘরে। কেউ আপনাকে দেখার জন্য এসেছে দু’দিন পর। কেউ এসেছে একদিন পর। কারো সাথে আপনার সাক্ষাত হল বাজারে, সে আপনাকে সালাম দিল ও বলল: আপনার আসার অপেক্ষায় ছিল সে।
আপনি কি তাদের সবার মহব্বত এক পাল্লায় পরিমাপ করবেন?! যদি বাজারে সাক্ষাতকারী ব্যক্তি দাবি করে সে আপনাকে সবচেয়ে বেশী মহব্বত করে, যারা আপনাকে বিমান-বন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তাদের চেয়ে, আপনি কি তাকে সত্য বলবেন?!
আমি মনে করি না আপনি তাকে সত্য বলবেন...
অতএব যে চোখ ভরে ঘুমায়, অতঃপর রাতে কিয়ামকারীদের চেয়ে অধিক মহব্বতের দাবি করে, তার দাবি কিভাবে সত্য হয়! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।
আল্লাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ছিল সত্যিকার মহব্বত, অতএব আল্লাহকে মহব্বত করার ক্ষেত্রে তার পন্থাই আমাদের আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আহযাব: (২১)] তিনি আরও বলেন:
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ ال عمران : ٣١ ]
“বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আলে-ইমরান: (৩১)]
স্মরণ করুন ফজর সালাতে যে অলসতা করে, আল্লাহর সাক্ষাতের প্রতি যার ভ্রুক্ষেপ নেই, তার উপর আল্লাহর গোস্বা পতিত হয়। তাই কিয়ামুল লাইলের সুফল ও ত্যাগ করার কুফল সংক্রান্ত হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা জরুরী।
স্মরণ করুন, আল্লাহ তার বান্দার সালাত দেখেন, তার তিলাওয়াত শ্রবণ করেন, তার দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার কবুল করেন। রাতের এক তৃতীয়াংশে তিনি দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন। যে চায় তাকে দান করেন, যে দোয়া করে তার ডাকে সাড়া দেন এবং যে ইস্তেগফার করে তাকে তিনি ক্ষমা করেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزلُ اللهُ - تباركَ وتعالى - إلى السَّماء الدُّنيا كلَّ ليلة حين يمضي ثلثُ الليل الأول فيقول : أنا الملك، أنا الملك، من ذا الذي يَدْعوني فأستجيبَ له، من ذا الذي يسألني فأعطيه، من ذا الذي يستغفرني فأغفر له» . أخرجه مسلم .
“আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করে, তিনি বলেন: আমিই বাদশাহ, আমিই বাদশাহ, কে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তাকে প্রদান করব, কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে আমি তাকে ক্ষমা করব”। [মুসলিম।]
মুসলিম ভাইদের প্রতি অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখুন: কারো প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ ত্যাগ করুন। যদি কারো ব্যাপারে অন্তরে কিছু থাকে, ঘুমের পূর্বে তাকে ক্ষমা করে দিন, এটা সদকা রূপে গণ্য হবে। এভাবে যে মুসলিমের উপর সদকা করে, আল্লাহর তার উপর রহমত প্রেরণ করেন ও তাকে অধিক ইবাদতের তাওফিক দেন।
পাপ থেকে দূরে থাকুন ও ইবাদাতে মনোযোগ দিন: দিনভর আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকুন। কারণ জাগ্রত অবস্থায় যে আল্লাহকে স্মরণ করে, ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহ তাকে হিফাযত করেন। কেউ বলেছেন: আমি যে দিন সিয়াম পালন করি, সে দিন কিয়াম আমার জন্য অতি সহজ হয়। কারণ তখন আমি অন্তরে বিনয় অনুভব করি। কেউ বলেছেন: নেকি নেকের বাহন।
অতিরিক্ত দুনিয়াদারী থেকে দূরে থাকুন: দুনিয়ার মগ্নতা ও চিন্তাসহ ঘুমালে আখেরাতের চিন্তা অন্তরে স্থান পায় না। এক অন্তরে সমানভাবে দুনিয়া-আখেরাত একত্র হয় না।
অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডা ত্যাগ করুন: অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডার কারণে অন্তরে গাফিলতি ও শরীরে অলসতার সৃষ্টি হয়, ফলে কিয়ামুল লাইল ছুটে যায়। প্রয়োজন ব্যতীত গতর খাটুনি ও কঠিন পরিশ্রম ত্যাগ করুন।
সর্বদা কিয়ামুল লাইলের চিন্তায় মগ্ন থাকুন: সত্যিকার ইচ্ছা ও আগ্রহ ব্যতীত এ ধারণার সৃষ্টি হয় না। জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, চিন্তা কিভাবে মানুষকে জাগ্রত করে, তার জবাবে তিনি বলেন: “মানুষ রাত ভর ঘুমিয়ে ফজরের সময় কিংবা তার পরে জাগ্রত হয়, কিন্তু যখন তার প্রয়োজন হয়, জাগ্রত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, রাতে অবশ্যই জাগতে হবে চিন্তা নিয়ে ঘুমায়, তখন সে সময় হওয়ার পূর্বে বারবার জাগ্রত হয়। তাকে চিন্তা বারবার জাগিয়ে দেয়, যার সাথে সে ঘুমিয়ে ছিল। যদি দুনিয়ার চিন্তা অচেতন ঘুম থেকে এভাবে জাগিয়ে দিতে পারে, তাহলে আল্লাহর সাক্ষাতের চিন্তা কেন জাগাবে না?!
কিয়ামুল লাইলের দৃঢ় বিশ্বাস, নিজের সক্ষমতার উপর আস্থা ও ঘুম থেকে জেগে বেতের পড়ার অবিচল মনোভাব রাখুন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا ٦ ﴾ [ المزمل : ٦ ]
“নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৬)]
কতক মুফাসসির বলেছেন: রাতের মুহূর্তগুলো থাকে নীরব, কর্মহীন ও ঝামেলা মুক্ত, সে সময় ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা অবশ্যই দিনের সালাতের চেয়ে কঠিন, কারণ রাতের সৃষ্টি ঘুম ও আরামের জন্য, তখন কিয়াম করা নফসের উপর কঠিন-ই বটে। কিন্তু যার নিজের সামর্থের উপর আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, তার মনোবল দৃঢ় হয়, প্রতিজ্ঞা সতেজ ও শরীর উদ্যমী হয়, সে উঠতে পারে। [সাফওয়াতুত তাফাসীর: (৩/৪৬৬)]
রাতের সালাত দিনে কাযা করুন: যদি কখনো রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে তার কাযা করুন। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ خافَ أن لا يقومَ من آخر اللَّيل فليوتر أولَه، ومن طَمع أن يقومَ آخَره فليوتر آخرَ الليل؛ فإنَّ صلاةَ آخر اللَّيل مشهودةٌ، وذلك أفضلُ» . رواه مسلم .
“যে ব্যক্তি শেষ রাতে না উঠার ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন প্রথম রাতে বেতের পড়ে নেয়। আর যে শেষ রাতে বেতের পড়তে আশাবাদী সে যেন শেষ রাতে সালাত আদায় করে। কারণ শেষ রাতের সালাতই উপস্থিতির সালাত, সে সালাতই উত্তম”। [মুসলিম।]
শেষ রাতে উঠে সালাত আদায়ে যে আশাবাদী নয়, তার যদি প্রথম রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে বারবার ছুটার ফলে, এক সময় রাতের কিয়াম তার নিকট গুরুত্বহীন হয়ে যায়। কারণ একবার ত্যাগ করার ফলে মনে আফসোসের রেখা কাটে, দ্বিতীয়বার সে আফসোস হালকা হয়। বারবার হতে থাকলে আফসোস আর থাকে না।
রাতে উঠার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন: সাথে এলার্ম ঘড়ি রাখুন, অথবা পরিবারের কাউকে বলুন, অথবা প্রতিবেশীকে বলুন, অথবা কোন বন্ধুকে বলুন, যে আপনাকে জাগিয়ে দিবে।
কিয়ামুল লাইলের জন্য পরিবারের কাউকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করুন: শয়তান দু’জনের তুলনায় একজনের উপর অধিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। দু’জন মিলে একে অপরের সহযোগী হলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয় ও নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় থাকে, বিশেষ করে তারা যদি হয় স্বামী-স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رحمَ اللهُ رجلاً قامَ من الليل فصلى وأيقظَ امرأته، فإن أبت نضَحَ في وجهها الماءَ، ورحمَ اللهُ امرأة قامت من الليل فصلَّت وأيقظت زوجها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» . رواه أبو داود وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .
“আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্ত্রীকে জাগিয়ে দিল। স্ত্রী উঠতে না চাইলে তার চেহারায় পানির ছিটা দিল। আল্লাহ ঐ নারীকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্বামীকে জাগিয়ে দিল, যদি স্বামী উঠমত না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
উম্মুল মুমেনিন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শঙ্কিত হয়ে জেগে উঠে বলেন:
«سبحانَ الله، ماذا أنزل اللهُ من الخزائن؟ وماذا أُنزل من الفتن؟ من يوقظ صواحبَ الحجرات - يريد أزواجه لكي يصلين - رُبَّ كاسية في الدنيا عارية في الآخرة» . رواه البخاري .
“সুবহানাল্লাহ! কি পরিমাণ খাজানা নাযিল করা হয়েছে? কি পরিমাণ ফেতনা অবতীর্ণ করা হয়েছে? কে ঘরের লোকদের জাগাবে, -তার উদ্দেশ্য নিজ স্ত্রীগণ, যেন তারা সালাত আদায় করে- দুনিয়ায় অনেক পোশাকধারী আখেরাতে নগ্ন থাকবে”। [বুখারি।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার খাদেম রাতকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়ে ছিলেন, একজন সালাত আদায় করে অপর জনকে জাগিয়ে দিতেন।
ঘুমের সময় সুন্নতের অনুসরণ করুন: ঘুমের সময় ও ঘুমের হালতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করুন, যেমন:
ক. রাতের শুরুতে ঘুমানো। শেষ রাতে উঠার জন্য প্রথম রাতে ঘুমানো জরুরী। যে অর্ধরাত বা তার পরে ঘুমায় তার জন্য শেষ রাতে উঠা কষ্টকর। তার শরীর ও ঘুমের হক আদায় হয় না। দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তির জন্য রাত-দিনে আট ঘণ্টা ঘুমানো যথেষ্ট। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داودَ، وأحبُّ الصيام إلى الله صيامُ داودَ؛ كان ينام نصفَ الليل ويقوم ثُلُثَه وينام سدسَه، ويصوم يومًا ويفطر يومًا» . متَّفق عليه .
“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সালাত দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত। আল্লাহর নিকট উত্তম সিয়াম দাউদ আলাইহিস সালামের সিয়াম। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও এক দিন ইফতার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
হিসাব করুন: যদি অর্ধেক রাতের সাথে এক ষষ্ঠাংশ যোগ করা হয়, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ হয়। আর দুই তৃতীয়াংশ-ই আট ঘণ্টা, যদি রাত বারো ঘণ্টার হয়। মুমিন যদি এশার সালাতের জন্য দেরি করে, তাহলে দিনের দ্বিপ্রহরের বিশ্রামই রাতের নিদ্রার পরিবর্তে যথেষ্ট হয়, ফলে সে শেষ রাতে উঠতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:
أنَّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم كان ينام أولَ الليل ويقوم آخره فيصلي . متَّفقٌ عليه،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন ও শেষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:
وكان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يكرهُ الحديثَ بعدَ العشاء كما في البخاريِّ .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। [যেমন বুখারিতে এসেছে।]
খ. খুব আরামদায়ক বিছানায় না ঘুমানো। বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানায় একদা চারটি কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়, সাধারণত দু’টি কাপড় বিছানো হত, ফলে তিনি বিনা-কিয়ামে ভোর করেন। জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরা কি করেছ?” তারা উত্তর দিল। তিনি বললেন: “যেরূপ ছিল সেরূপ বানিয়ে দাও”। [শামেয়েলে তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।]
গ. অযু ও যিকরসহ ঘুমানো। যে ব্যক্তি অযু করে ঘুমায়, ফেরেশতাগণ তাকে পাহারা দেয়, তার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করে। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ باتَ طاهرًا بات في شعاره ملكٌ؛ فلم يستيقظ إلا قال الملكُ : اللهم اغفر لعبدك فلان؛ فإنَّه بات طاهرًا» . أخرجه ابنُ حبَّان في صحيحه، وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .
“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায়, তার মাথার নিকট ফেরেশতা রাত যাপন করে, তার জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেশতা বলে: হে আল্লাহ তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা কর, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছে”। [ইব্ন হিব্বান, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]
ঘ. ডান কাত হয়ে শোয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«إذا أخذتَ مضجعك فتوضَّأ وضوءَك للصلاة ثم اضطَّجع على شقِّك الأيمن ..» رواه مسلم .
“যখন বিছানায় যাবে সালাতের ন্যায় অযু কর, অতঃপর ডান কাতে ঘুমাও”। [মুসলিম।]
ঙ. ঘুমের পূর্বে হাদিসে বর্ণিত সূরা, সূরার আয়াত ও দোয়াসমূহ আগ্রহের সাথে পাঠ করুন, আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপত্তা হাসিল হবে ও কিয়াম করতে সক্ষম হবেন। কুরআন পাঠকারীর ঘুম হালকা হয়, সে কুরআনের উপর ঘুমায় ও জাগ্রত হয়। অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে, কুরআন পাঠ করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কুরআন নিয়ে জাগ্রত হয়, কবিতা আবৃত করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কবিতা নিয়ে জাগ্রত হয়, গান গেয়ে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে গান নিয়ে জাগ্রত হয়।
ঘুমের পূর্বে সূরা যুমার ও ইসরা পাঠ করুন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
" كان رسولُ الله صلى الله عليه وسلم لا ينام حتى يقرأ الزُّمر وبني إسرائيل ". رواه التِّرْمذيُّ وصحَّحَه الألبانيُّ،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা যুমার ও সূরা ইসরা তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদসটি সহিহ বলেছেন।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:
أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - كان إذا أوى إلى فراشه كلَّ ليلة جمع كفَّيْه ثم نَفَثَ فيهما يقرأ قُل هُوَ اللهُ أحَدُ و قُل أَعُوذُ برَب الفَلق و قُل أَعُوذُ برب النَّاس، ثم يمسحُ بهما ما استطاعَ من جسده؛ يبدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبلَ من جسده؛ يفعلُ ذلك ثلاثَ مرات . متَّفَقٌ عليه، وكذلك قراءةُ آية الكرسي .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রতি রাতে বিছানায় আসতেন, দু’হাত একত্র করে তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন, অতঃপর উভয় হাত দ্বারা শরীরের সম্ভাব্য স্থান মাসেহ করতেন। তিনি শরীরের সম্মুখ থেকে মাসেহ আরম্ভ করতেন, যেমন মাথা, চেহারা ও শরীরের সমানের অংশ। এভাবে তিনি তিনবার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] অনুরূপ আয়াতুল কুরসি পাঠ করুন।
আরও রয়েছে যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا أوى أحدُكم إلى فراشه، فليأخذ داخلة إزاره فلينفض بها فراشه، وَلْيُسَمِّ اللهَ؛ فإنَّه لا يعلمُ ما خلفه بعده على فراشه، فإذا أراد أن يضطجع فليضطجع على شقِّه الأيمن وليقل : " سبحانك اللهمَّ ربِّي وَضَعْتُ جَنْبي وبك أرفعُه؛ إن أمسكتَ نفسي فاغفر لها، وإنْ أرسلتَها فاحفظْها بما تحفظُ به عبادَك الصالحين» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ বিছানায় আশ্রয় নেয়, সে যেন তার পরিধেয় বস্ত্রের নিম্নাংশ দ্বারা বিছানা ঝেড়ে নেয় ও বিসমিল্লাহ বলে। কারণ সে জানে না তার অনুপস্থিতিতে বিছানায় কি এসেছে। যখন সে শুয়ার ইচ্ছা করে তখন যেন ডান কাতে শুয় ও বলে:
" سبحانك اللهمَّ ربِّي وَضَعْتُ جَنْبي وبك أرفعُه؛ إن أمسكتَ نفسي فاغفر لها، وإنْ أرسلتَها فاحفظْها بما تحفظُ به عبادَك الصالحين» . رواه مسلم .
“হে আল্লাহ, তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি; হে আমার রব, আমি আমার পার্শ্ব রেখেছি, তোমার তাওফিকেই তা উঠাবো। যদি তুমি আমার নফসকে আটকে রাখ তাকে ক্ষমা কর; যদি তাকে অবকাশ দাও তাহলে তাকে হিফাযত কর, যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের হিফাযত কর”। [মুসলিম।]
ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যাঁতাকল চালানোর ফলে হাতে ঠোসা পড়ার অভিযোগ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খাদেম তলব করেন, তিনি তাকে ও আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«ألا أَدُلُّكما على خير ممَّا سألتُما؟ إذا أخذتما مضاجعكما أو أَوَيْتُما إلى فراشكما، فسَبِّحا ثلاثًا وثلاثين واحمدا ثلاثًا وثلاثين، وكَبِّرا أربعًا وثلاثين؛ فهو خيرٌ لكما من خادم» . أخرجه البخاريُّ .
“তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা কি তোমাদেরকে বলব না? যখন তোমরা তোমাদের পার্শ্ব গ্রহণ কর অথবা যখন তোমরা বিছানায় যাও, উভয়ে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ বল, ৩৩বার আল-হামদুলিল্লাহ বল ও ৩৪বার আল্লাহু আকবার বল। এটা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে উত্তম”। [বুখারি। এরপর লেখিকা তার পুস্তকে ঘুমের পূর্বে সুরমা ব্যবহারকে সুন্নত বলেছেন, কিন্তু এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো দুর্বল বিধায় অনুবাদে পরিহার করা হল।]
সূরা কাফেরুন পাঠ করুন। নওফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:
«اقرأ قل يا أيها الكافرون ثم نم عند خاتمتها؛ فإنَّها براءةٌ من الشِّرك» . أخرجه أبو داود والتِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“সূরা কাফেরুন পাঠ করে ঘুমায়, কারণ সূরা কাফেরুন শিরক থেকে মুক্তির সনদ”। [আবু দাউদ ও তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
" كان رسولُ الله صلى الله عليه وسلم لا ينام حتى يقرأ الزُّمر وبني إسرائيل ". رواه التِّرْمذيُّ وصحَّحَه الألبانيُّ،
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা যুমার ও সূরা ইসরা তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদসটি সহিহ বলেছেন।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:
أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - كان إذا أوى إلى فراشه كلَّ ليلة جمع كفَّيْه ثم نَفَثَ فيهما يقرأ قُل هُوَ اللهُ أحَدُ و قُل أَعُوذُ برَب الفَلق و قُل أَعُوذُ برب النَّاس، ثم يمسحُ بهما ما استطاعَ من جسده؛ يبدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبلَ من جسده؛ يفعلُ ذلك ثلاثَ مرات . متَّفَقٌ عليه، وكذلك قراءةُ آية الكرسي .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রতি রাতে বিছানায় আসতেন, দু’হাত একত্র করে তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন, অতঃপর উভয় হাত দ্বারা শরীরের সম্ভাব্য স্থান মাসেহ করতেন। তিনি শরীরের সম্মুখ থেকে মাসেহ আরম্ভ করতেন, যেমন মাথা, চেহারা ও শরীরের সমানের অংশ। এভাবে তিনি তিনবার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] অনুরূপ আয়াতুল কুরসি পাঠ করুন।
আরও রয়েছে যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا أوى أحدُكم إلى فراشه، فليأخذ داخلة إزاره فلينفض بها فراشه، وَلْيُسَمِّ اللهَ؛ فإنَّه لا يعلمُ ما خلفه بعده على فراشه، فإذا أراد أن يضطجع فليضطجع على شقِّه الأيمن وليقل : " سبحانك اللهمَّ ربِّي وَضَعْتُ جَنْبي وبك أرفعُه؛ إن أمسكتَ نفسي فاغفر لها، وإنْ أرسلتَها فاحفظْها بما تحفظُ به عبادَك الصالحين» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ বিছানায় আশ্রয় নেয়, সে যেন তার পরিধেয় বস্ত্রের নিম্নাংশ দ্বারা বিছানা ঝেড়ে নেয় ও বিসমিল্লাহ বলে। কারণ সে জানে না তার অনুপস্থিতিতে বিছানায় কি এসেছে। যখন সে শুয়ার ইচ্ছা করে তখন যেন ডান কাতে শুয় ও বলে:
" سبحانك اللهمَّ ربِّي وَضَعْتُ جَنْبي وبك أرفعُه؛ إن أمسكتَ نفسي فاغفر لها، وإنْ أرسلتَها فاحفظْها بما تحفظُ به عبادَك الصالحين» . رواه مسلم .
“হে আল্লাহ, তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি; হে আমার রব, আমি আমার পার্শ্ব রেখেছি, তোমার তাওফিকেই তা উঠাবো। যদি তুমি আমার নফসকে আটকে রাখ তাকে ক্ষমা কর; যদি তাকে অবকাশ দাও তাহলে তাকে হিফাযত কর, যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের হিফাযত কর”। [মুসলিম।]
ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যাঁতাকল চালানোর ফলে হাতে ঠোসা পড়ার অভিযোগ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খাদেম তলব করেন, তিনি তাকে ও আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«ألا أَدُلُّكما على خير ممَّا سألتُما؟ إذا أخذتما مضاجعكما أو أَوَيْتُما إلى فراشكما، فسَبِّحا ثلاثًا وثلاثين واحمدا ثلاثًا وثلاثين، وكَبِّرا أربعًا وثلاثين؛ فهو خيرٌ لكما من خادم» . أخرجه البخاريُّ .
“তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা কি তোমাদেরকে বলব না? যখন তোমরা তোমাদের পার্শ্ব গ্রহণ কর অথবা যখন তোমরা বিছানায় যাও, উভয়ে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ বল, ৩৩বার আল-হামদুলিল্লাহ বল ও ৩৪বার আল্লাহু আকবার বল। এটা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে উত্তম”। [বুখারি। এরপর লেখিকা তার পুস্তকে ঘুমের পূর্বে সুরমা ব্যবহারকে সুন্নত বলেছেন, কিন্তু এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো দুর্বল বিধায় অনুবাদে পরিহার করা হল।]
সূরা কাফেরুন পাঠ করুন। নওফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:
«اقرأ قل يا أيها الكافرون ثم نم عند خاتمتها؛ فإنَّها براءةٌ من الشِّرك» . أخرجه أبو داود والتِّرمذيُّ وصحَّحه الألبانيُّ .
“সূরা কাফেরুন পাঠ করে ঘুমায়, কারণ সূরা কাফেরুন শিরক থেকে মুক্তির সনদ”। [আবু দাউদ ও তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
ক. যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন ও চেতনা ফিরে আসে, তখন আল্লাহ যিকির করুন। ঘুমের পূর্বে তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। আরও স্মরণ করুন, যে এরূপ না করলে শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করে ও পুনরায় তার ঘাড়ে ঘিরা দেয়। প্রত্যেক ঘিরা খুলার পদ্ধতি আলাদা, যেমন:
প্রথম ঘিরা খুলে আল্লাহর যিকির দ্বারা।
দ্বিতীয় ঘিরা খুলে অযুর দ্বারা।
তৃতীয় ঘিরা খুলে সালাত দ্বারা।
একবার ঘিরা খুলার পর দ্বিতীয়বার ঘিরা দেয়ার অপেক্ষায় থাকে শয়তান, যেমন বলে রাত আরও বাকি ঘুমাও। আপনি হয়তো বলতে পারেন, শয়তান যদি এভাবে ওঁৎপেতে থাকে, তাহলে তার ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে কিভাবে মুক্ত করব!?
আপনি যদি তার ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে আপনার উচিত হবে তাকে কোন সুযোগ না দেয়া, আপনি আল্লাহর যিকিরে রত থাকুন ও সামান্য আওয়াজ বুলন্দ করুন, যেন আপনি শুনেন ও আপনার পাশে জাগ্রত ব্যক্তিরা শোনে। এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ছিল। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন বলতেন:
«اللهمَّ لك الحمدُ، أنت نورُ السماوات والأرض، ولك الحمدُ أنت قيَّامُ السماوات والأرض، ولك الحمدُ، أنتَ ربُّ السماوات والأرض ومَنْ فيهنَّ، أنت الحقُّ، ووعدُك الحقُّ، وقولُك الحقُّ، ولقاؤك الحقُّ، والجنةُ حق، والنارُ حق، والساعة حق، اللهمَّ لك أسلمتُ وبك آمنتُ وعليك توكلتُ وإليك أنبتُ وبك خاصمتُ وإليك حاكمتُ، فاغفر لي ما قَدَّمْتُ وأخَّرْتُ وما أسررتُ وما أعلنتُ؛ أنت إلهي لا إله إلا أنت» . رواه البخاريُّ ومسلم .
এ দোয়া যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরে না বলতেন, ইব্ন আব্বাস শ্রবণ করতেন না, আমরাও জানতাম না। হে আল্লাহর বান্দা, ঘুম থেকে উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উচ্চারিত এ বাক্যগুলো দেখুন, কিভাবে তিনি ঈমানকে নতুনত্ব দিচ্ছেন, যেন নতুন জীবন আরম্ভ করছেন, নতুনভাবে আল্লাহর নিকট সোপর্দ হচ্ছেন। ঘুম থেকে উঠে যে এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করবে, শয়তান কিভাবে তাকে কাবু করবে ও তার উপর প্রভাব বিস্তার করবে!?
অনুরূপ কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করুন, সুন্নত হচ্ছে সূরা আলে-ইমরানের শেষ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা, তবে অবশ্যই বসে পাঠ করুন, যেন শয়তান প্রভাব বিস্তারে সক্ষম না হয়। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ খালা রাসূলের স্ত্রী মায়মুনার নিকট রাত যাপন করেন, তিনি বলেন:
" فاضطجعت في عرض الوسادة، واضطجع رسول الله صلى الله عليه وسلم وأهله في طولها، فنام رسولُ الله صلى الله عليه وسلم حتى إذا انتصفَ الليلُ أو قبله بقليل أو بعدَه بقليل، استيقظ رسول الله صلى الله عليه وسلم، فجلس يمسح النوم عن وجهه بيديه ، ثم قَرَأَ العشرَ آيات الخواتمَ من سورة آل عمرانَ، ثم قام إلى شنٍّ معلَّقة، فتوضأ منها فأحسنَ الوضوءَ، ثم قام يصلي؛ قال عبدُ الله : فقمتُ فصنعتُ مثلَ ما صنع، ثم ذهبتُ فقمتُ إلى جنبه، فوضع رسولُ الله صلى الله عليه وسلم يدَه اليُمْنَى على رأسي، فأَخَذَ بأُذُني يفتلُها؛ فصلَّى ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم أوتر، ثم اضطجع حتى جاءه المؤذِّن فقامَ فصلى الصبح . متَّفقٌ عليه؛
“আমি বালিশের প্রস্থে মাথা রেখেছি, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রী বালিশের দৈর্ঘ্যে মাথা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালেন, যখন অর্ধরাত হল, অথবা তার কিছু পূর্বে কিংবা পরে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন, তিনি দু’হাত দ্বারা নিজ চেহারা থেকে ঘুম দূর করলেন [খুব সম্ভব ঘুমের পর চোখ মলা উঠার জন্য সহায়ক, এতে অলসতা দূর হয়, ঘুমের আছর দূর হয় ও উঠতে সুবিধা হয়।], অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের নিকট যান ও সেখান থেকে পানি নিয়ে সুন্দর করে অযু করেন। অতঃপর সালাতে দাঁড়ান। আব্দুল্লাহ বলেন: আমিও উঠে তার অনুরূপ কাজ করি, অতঃপর তার পাশে দাঁড়াই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার মাথার উপর রেখে আমার কান মলেন। [ইব্ন আব্বাসের তন্দ্রা চলে এসেছিল, তিনি তার তন্দ্রা দূর করেন।] অতঃপর দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত সালাত পড়েন, অতঃপর বেতের পড়েন। অতঃপর তিনি কাত হয়ে শয়ন করেন, অবশেষে মুয়াজ্জিন আসেন, তিনি উঠে ফজর আদায় করেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য জোরে তিলাওয়াত করেছেন, তাই ইব্ন আব্বাস শুনেছেন।
মুখস্থ পড়ার সময় অযুর প্রয়োজন নেই, অতঃপর আপনি দ্রুত অযুর জন্য উঠে দাঁড়ান, যেন দ্বিতীয় ঘিরা খুলে যায়। আর অযুর সময় স্মরণ করুন শয়তান আপনার নাক ও কানে পেশাব করেছিল, তাই খুব সুন্দর করে নাকে পানি দিন ও গড়গড়া করুন।
খ. রাতে উঠা ও ঘুম দূর করার জন্য মিসওয়াক কার্যকরী, অযুর পূর্বে মিসওয়াকের উপকারিতা রয়েছে। যখন আপনি ঘুম থেকে উঠেন, আপনার মিসওয়াক হাতে নিন, যা ঘুমের পূর্বে আপনার নিকটে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অতঃপর তার দ্বারা মিসওয়াক করুন, কারণ মিসওয়াকে রয়েছে নবীর সুন্নত, মুখের পবিত্রতা ও আপনার রবের সন্তুষ্টি। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
" كان رسولُ الله صلى الله عليه وسلم يشوصُ فاه بالسواك ". متَّفقٌ عليه .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক দ্বারা তার মুখ পরিষ্কার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
গ. সজাগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান, যদি ঘুমের প্রভাব থাকে সামান্য শারীরিক ব্যায়াম সেরে নিন, যেমন হাঁটা, নড়াচড়া করা, দাঁড়ানো ও কয়েকবার দ্রুত ওঠবস করা।
ঘ. প্রথমে হালকা দু’রাকাত সালাত আদায় করুন, আপনার ঘুম চলে যাবে। কারণ শুরুতে লম্বা কেরাত আরম্ভ করলে, ঘুম আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ছোট কিরাত দিয়ে দু’রাকাত সালাত আরম্ভ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। এতে শরীরে উদ্যমতা আসে ও ঘুম দূর হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا قام أحدُكم من الليل فليبدأ الصلاةَ بركعتين خفيفتين» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে জাগ্রত হয়, সে যেন হালকা দু’রাকাত দিয়ে সালাত আরম্ভ করে”। [মুসলিম।]
ঙ. সালাতের পরিমাণ ও সংখ্যা কম-বেশী করা, যেন কিয়ামে বিরক্তি না আসে, অথবা শয়তান তার উপর প্রবল না হয়, যেমন হাদিসে এসেছে: কখনো তিনি দু’রাকাত, দু’রাকাত করে এগারো রাকাত পড়তেন। অধিক সংখ্যা এটাই, রমযান কিংবা গায়রে রমযানে এর চেয়ে অধিক পড়তেন না, তবে তার সালাত একাগ্রতা ও বিনয়ীপূর্ণ ছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
" ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيدُ في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة؛ يصلِّي أربعًا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلِّي أربعًا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلِّي ثلاثًا» . متَّفَقٌ عليه . وعنها - رضي اللهُ عنها : " وكان يصلِّي من الليل تسعَ ركعات فيهنَّ الوترُ ". رواه مسلم .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও গায়রে রমযানে এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না, তিনি চার রাকাত সালাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করো না! অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করো না!(অর্থাৎ তা ছিল সুন্দর ও দীর্ঘ) অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] অপর হাদিসে তিনি বলেন: “তিনি নয় রাকাত পড়তেন, তাতে বেতরও থাকত”। [মুসলিম।]
তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত ও এক রাকাত যেভাবে ইচ্ছা বেতের পড়া যায়, কিয়ামুল লাইল আরম্ভকারীর পক্ষে সমীচীন ধীরে ধীরে সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যেন বিরুক্তি না আসে, কিংবা কিয়াম ত্যাগ করার মনোভাব সৃষ্টি না হয়। অতএব প্রথম মাসে অল্প সালাত আদায় করুন, অতঃপর অভ্যাসে পরিণত হলে বৃদ্ধি করুন, অনুরূপ ধীরে ধীরে কিয়াম বৃদ্ধি করুন। মনোযোগ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে জোরে কিংবা আস্তে তিলাওয়াত করুন।
যখন তন্দ্রা প্রবল হয়, সালাত ছেড়ে ঘুমাতে যান। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মরফু সনদে বর্ণনা করেন:
«إذا قام أحدُكم من الليل فاستعجم القرآنُ على لسانه فلم يدر ما يقول فليضطجع» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে কিয়াম করে, অতঃপর তার জবানে যদি কুরআন ভারি হয়, জানে না কি বলছে, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে”। [মুসলিম।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পূর্ণ রাত কিয়াম করেননি, ইব্ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
" أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ النَّهَارَ، قُلْتُ : إِنِّي أَفْعَلُ ذَلِكَ، قَالَ : فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتْ عَيْنُكَ وَنَفِهَتْ نَفْسُكَ، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ حَقٌّ وَلِأَهْلِكَ حَقٌّ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ "
“আমাকে বলা হল তুমি রাতে কিয়াম কর ও দিনে সিয়াম পালন কর? আমি বললাম: আমি তাই করি, তিনি বললেন: তুমি যদি তাই কর, তাহলে তোমার চোখ কষ্ট পাবে ও তোমার নফস ক্লান্ত হবে, অথচ তোমার উপর তোমার নফসের হক রয়েছে, তোমার পরিবারের হক রয়েছে। অতএব সিয়াম পালন কর ও ইফতার কর এবং কিয়াম কর ও ঘুমাও”। [বুখারি।]
রাতের কিয়াম ও যিকির যদি ছুটে যায়, তাহলে কাযা করে নিন, কারণ যদি আপনার মনে থাকে দিনে কাযা করতে হবে, অথচ দিনে রয়েছে রিযিক অন্বেষণ, পড়া-লেখা ও চাকরির ব্যস্ততা, যেখানে কাযা করার সুযোগ কম হয়, তাহলে রাতের অযিফা আপনার কাযা হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিয়াম ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«يا عبدَ الله لا تكن مثلَ فلان كان يقومُ الليلَ فتركَ قيامَ الليل» رواه البخاري .
“হে আব্দুল্লাহ, অমুকের মত হয়ো না, সে রাতে কিয়াম করত, অতঃপর কিয়াম ছেড়ে দিয়েছে”। [বুখারি।]
দিনের কাযা হবে জোড় জোড়, বেজোড় নয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كان رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إذا فاتَتْه الصَّلاةُ من وَجَع أو غيره صَلَّى من النَّهار ثنتي عشرة ركعة» . رواه مسلم .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ব্যথা অথবা অন্য কোন কারণে সালাত ত্যাগ করতেন, দিনে বারো রাকাত আদায় করতেন”। [মুসলিম।] সুবহানাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রাতের কিয়াম কাযা করেছেন, যার অগ্র-পশ্চাৎ পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল।
যে কাযা করল সে রাতে কিয়ামের সাওয়াব পেল। যে অযিফা আদায় না করে ঘুমিয়ে গেল অথবা ভুলে গেল, সে যদি সূর্যোদয় থেকে সূর্য ঢলার আগে আদায় করে, সে যেন রাতেই আদায় করল”। সহিহ মুসলিমে এরূপই এসেছে, তবে নিজের হিসাব কষা ও কিয়াম ছুটে যাওয়ার জন্য নফসকে তিরস্কার করা জরুরী।
প্রথম ঘিরা খুলে আল্লাহর যিকির দ্বারা।
দ্বিতীয় ঘিরা খুলে অযুর দ্বারা।
তৃতীয় ঘিরা খুলে সালাত দ্বারা।
একবার ঘিরা খুলার পর দ্বিতীয়বার ঘিরা দেয়ার অপেক্ষায় থাকে শয়তান, যেমন বলে রাত আরও বাকি ঘুমাও। আপনি হয়তো বলতে পারেন, শয়তান যদি এভাবে ওঁৎপেতে থাকে, তাহলে তার ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে কিভাবে মুক্ত করব!?
আপনি যদি তার ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে আপনার উচিত হবে তাকে কোন সুযোগ না দেয়া, আপনি আল্লাহর যিকিরে রত থাকুন ও সামান্য আওয়াজ বুলন্দ করুন, যেন আপনি শুনেন ও আপনার পাশে জাগ্রত ব্যক্তিরা শোনে। এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ছিল। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন বলতেন:
«اللهمَّ لك الحمدُ، أنت نورُ السماوات والأرض، ولك الحمدُ أنت قيَّامُ السماوات والأرض، ولك الحمدُ، أنتَ ربُّ السماوات والأرض ومَنْ فيهنَّ، أنت الحقُّ، ووعدُك الحقُّ، وقولُك الحقُّ، ولقاؤك الحقُّ، والجنةُ حق، والنارُ حق، والساعة حق، اللهمَّ لك أسلمتُ وبك آمنتُ وعليك توكلتُ وإليك أنبتُ وبك خاصمتُ وإليك حاكمتُ، فاغفر لي ما قَدَّمْتُ وأخَّرْتُ وما أسررتُ وما أعلنتُ؛ أنت إلهي لا إله إلا أنت» . رواه البخاريُّ ومسلم .
এ দোয়া যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরে না বলতেন, ইব্ন আব্বাস শ্রবণ করতেন না, আমরাও জানতাম না। হে আল্লাহর বান্দা, ঘুম থেকে উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উচ্চারিত এ বাক্যগুলো দেখুন, কিভাবে তিনি ঈমানকে নতুনত্ব দিচ্ছেন, যেন নতুন জীবন আরম্ভ করছেন, নতুনভাবে আল্লাহর নিকট সোপর্দ হচ্ছেন। ঘুম থেকে উঠে যে এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করবে, শয়তান কিভাবে তাকে কাবু করবে ও তার উপর প্রভাব বিস্তার করবে!?
অনুরূপ কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করুন, সুন্নত হচ্ছে সূরা আলে-ইমরানের শেষ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা, তবে অবশ্যই বসে পাঠ করুন, যেন শয়তান প্রভাব বিস্তারে সক্ষম না হয়। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ খালা রাসূলের স্ত্রী মায়মুনার নিকট রাত যাপন করেন, তিনি বলেন:
" فاضطجعت في عرض الوسادة، واضطجع رسول الله صلى الله عليه وسلم وأهله في طولها، فنام رسولُ الله صلى الله عليه وسلم حتى إذا انتصفَ الليلُ أو قبله بقليل أو بعدَه بقليل، استيقظ رسول الله صلى الله عليه وسلم، فجلس يمسح النوم عن وجهه بيديه ، ثم قَرَأَ العشرَ آيات الخواتمَ من سورة آل عمرانَ، ثم قام إلى شنٍّ معلَّقة، فتوضأ منها فأحسنَ الوضوءَ، ثم قام يصلي؛ قال عبدُ الله : فقمتُ فصنعتُ مثلَ ما صنع، ثم ذهبتُ فقمتُ إلى جنبه، فوضع رسولُ الله صلى الله عليه وسلم يدَه اليُمْنَى على رأسي، فأَخَذَ بأُذُني يفتلُها؛ فصلَّى ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم ركعتين، ثم أوتر، ثم اضطجع حتى جاءه المؤذِّن فقامَ فصلى الصبح . متَّفقٌ عليه؛
“আমি বালিশের প্রস্থে মাথা রেখেছি, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রী বালিশের দৈর্ঘ্যে মাথা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালেন, যখন অর্ধরাত হল, অথবা তার কিছু পূর্বে কিংবা পরে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন, তিনি দু’হাত দ্বারা নিজ চেহারা থেকে ঘুম দূর করলেন [খুব সম্ভব ঘুমের পর চোখ মলা উঠার জন্য সহায়ক, এতে অলসতা দূর হয়, ঘুমের আছর দূর হয় ও উঠতে সুবিধা হয়।], অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের নিকট যান ও সেখান থেকে পানি নিয়ে সুন্দর করে অযু করেন। অতঃপর সালাতে দাঁড়ান। আব্দুল্লাহ বলেন: আমিও উঠে তার অনুরূপ কাজ করি, অতঃপর তার পাশে দাঁড়াই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার মাথার উপর রেখে আমার কান মলেন। [ইব্ন আব্বাসের তন্দ্রা চলে এসেছিল, তিনি তার তন্দ্রা দূর করেন।] অতঃপর দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত, দু’রাকাত সালাত পড়েন, অতঃপর বেতের পড়েন। অতঃপর তিনি কাত হয়ে শয়ন করেন, অবশেষে মুয়াজ্জিন আসেন, তিনি উঠে ফজর আদায় করেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য জোরে তিলাওয়াত করেছেন, তাই ইব্ন আব্বাস শুনেছেন।
মুখস্থ পড়ার সময় অযুর প্রয়োজন নেই, অতঃপর আপনি দ্রুত অযুর জন্য উঠে দাঁড়ান, যেন দ্বিতীয় ঘিরা খুলে যায়। আর অযুর সময় স্মরণ করুন শয়তান আপনার নাক ও কানে পেশাব করেছিল, তাই খুব সুন্দর করে নাকে পানি দিন ও গড়গড়া করুন।
খ. রাতে উঠা ও ঘুম দূর করার জন্য মিসওয়াক কার্যকরী, অযুর পূর্বে মিসওয়াকের উপকারিতা রয়েছে। যখন আপনি ঘুম থেকে উঠেন, আপনার মিসওয়াক হাতে নিন, যা ঘুমের পূর্বে আপনার নিকটে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অতঃপর তার দ্বারা মিসওয়াক করুন, কারণ মিসওয়াকে রয়েছে নবীর সুন্নত, মুখের পবিত্রতা ও আপনার রবের সন্তুষ্টি। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
" كان رسولُ الله صلى الله عليه وسلم يشوصُ فاه بالسواك ". متَّفقٌ عليه .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক দ্বারা তার মুখ পরিষ্কার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]
গ. সজাগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান, যদি ঘুমের প্রভাব থাকে সামান্য শারীরিক ব্যায়াম সেরে নিন, যেমন হাঁটা, নড়াচড়া করা, দাঁড়ানো ও কয়েকবার দ্রুত ওঠবস করা।
ঘ. প্রথমে হালকা দু’রাকাত সালাত আদায় করুন, আপনার ঘুম চলে যাবে। কারণ শুরুতে লম্বা কেরাত আরম্ভ করলে, ঘুম আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ছোট কিরাত দিয়ে দু’রাকাত সালাত আরম্ভ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। এতে শরীরে উদ্যমতা আসে ও ঘুম দূর হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا قام أحدُكم من الليل فليبدأ الصلاةَ بركعتين خفيفتين» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে জাগ্রত হয়, সে যেন হালকা দু’রাকাত দিয়ে সালাত আরম্ভ করে”। [মুসলিম।]
ঙ. সালাতের পরিমাণ ও সংখ্যা কম-বেশী করা, যেন কিয়ামে বিরক্তি না আসে, অথবা শয়তান তার উপর প্রবল না হয়, যেমন হাদিসে এসেছে: কখনো তিনি দু’রাকাত, দু’রাকাত করে এগারো রাকাত পড়তেন। অধিক সংখ্যা এটাই, রমযান কিংবা গায়রে রমযানে এর চেয়ে অধিক পড়তেন না, তবে তার সালাত একাগ্রতা ও বিনয়ীপূর্ণ ছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
" ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيدُ في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة؛ يصلِّي أربعًا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلِّي أربعًا، فلا تسل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلِّي ثلاثًا» . متَّفَقٌ عليه . وعنها - رضي اللهُ عنها : " وكان يصلِّي من الليل تسعَ ركعات فيهنَّ الوترُ ". رواه مسلم .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও গায়রে রমযানে এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না, তিনি চার রাকাত সালাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করো না! অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করো না!(অর্থাৎ তা ছিল সুন্দর ও দীর্ঘ) অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] অপর হাদিসে তিনি বলেন: “তিনি নয় রাকাত পড়তেন, তাতে বেতরও থাকত”। [মুসলিম।]
তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত ও এক রাকাত যেভাবে ইচ্ছা বেতের পড়া যায়, কিয়ামুল লাইল আরম্ভকারীর পক্ষে সমীচীন ধীরে ধীরে সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যেন বিরুক্তি না আসে, কিংবা কিয়াম ত্যাগ করার মনোভাব সৃষ্টি না হয়। অতএব প্রথম মাসে অল্প সালাত আদায় করুন, অতঃপর অভ্যাসে পরিণত হলে বৃদ্ধি করুন, অনুরূপ ধীরে ধীরে কিয়াম বৃদ্ধি করুন। মনোযোগ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে জোরে কিংবা আস্তে তিলাওয়াত করুন।
যখন তন্দ্রা প্রবল হয়, সালাত ছেড়ে ঘুমাতে যান। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মরফু সনদে বর্ণনা করেন:
«إذا قام أحدُكم من الليل فاستعجم القرآنُ على لسانه فلم يدر ما يقول فليضطجع» . رواه مسلم .
“যখন তোমাদের কেউ রাতে কিয়াম করে, অতঃপর তার জবানে যদি কুরআন ভারি হয়, জানে না কি বলছে, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে”। [মুসলিম।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পূর্ণ রাত কিয়াম করেননি, ইব্ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
" أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ النَّهَارَ، قُلْتُ : إِنِّي أَفْعَلُ ذَلِكَ، قَالَ : فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتْ عَيْنُكَ وَنَفِهَتْ نَفْسُكَ، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ حَقٌّ وَلِأَهْلِكَ حَقٌّ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ "
“আমাকে বলা হল তুমি রাতে কিয়াম কর ও দিনে সিয়াম পালন কর? আমি বললাম: আমি তাই করি, তিনি বললেন: তুমি যদি তাই কর, তাহলে তোমার চোখ কষ্ট পাবে ও তোমার নফস ক্লান্ত হবে, অথচ তোমার উপর তোমার নফসের হক রয়েছে, তোমার পরিবারের হক রয়েছে। অতএব সিয়াম পালন কর ও ইফতার কর এবং কিয়াম কর ও ঘুমাও”। [বুখারি।]
রাতের কিয়াম ও যিকির যদি ছুটে যায়, তাহলে কাযা করে নিন, কারণ যদি আপনার মনে থাকে দিনে কাযা করতে হবে, অথচ দিনে রয়েছে রিযিক অন্বেষণ, পড়া-লেখা ও চাকরির ব্যস্ততা, যেখানে কাযা করার সুযোগ কম হয়, তাহলে রাতের অযিফা আপনার কাযা হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিয়াম ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:
«يا عبدَ الله لا تكن مثلَ فلان كان يقومُ الليلَ فتركَ قيامَ الليل» رواه البخاري .
“হে আব্দুল্লাহ, অমুকের মত হয়ো না, সে রাতে কিয়াম করত, অতঃপর কিয়াম ছেড়ে দিয়েছে”। [বুখারি।]
দিনের কাযা হবে জোড় জোড়, বেজোড় নয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كان رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إذا فاتَتْه الصَّلاةُ من وَجَع أو غيره صَلَّى من النَّهار ثنتي عشرة ركعة» . رواه مسلم .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ব্যথা অথবা অন্য কোন কারণে সালাত ত্যাগ করতেন, দিনে বারো রাকাত আদায় করতেন”। [মুসলিম।] সুবহানাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রাতের কিয়াম কাযা করেছেন, যার অগ্র-পশ্চাৎ পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল।
যে কাযা করল সে রাতে কিয়ামের সাওয়াব পেল। যে অযিফা আদায় না করে ঘুমিয়ে গেল অথবা ভুলে গেল, সে যদি সূর্যোদয় থেকে সূর্য ঢলার আগে আদায় করে, সে যেন রাতেই আদায় করল”। সহিহ মুসলিমে এরূপই এসেছে, তবে নিজের হিসাব কষা ও কিয়াম ছুটে যাওয়ার জন্য নফসকে তিরস্কার করা জরুরী।
রাতে কিয়ামের সহায়ক যেমন কতক উপকরণ রয়েছে, অনুরূপ কিছু উপকরণ রয়েছে রাতের কিয়াম থেকে বঞ্চিতকারী, যেমন আল্লাহ থেকে অন্তরের গাফেল হওয়া, তার নিয়ামত ভুলে যাওয়া, তার শাস্তির কথা স্মরণ না করা, তার সন্তুষ্টি ও গোস্বার পরোয়া না করা ইত্যাদি। ফলে বান্দা নিজের দীন, রব ও রবের আদেশ-নিষেধ নিয়ে কোন চিন্তা করে না। শুধু জানে লোক দেখাদেখি সালাত আদায় করা, ঘুমিয়ে থাকলে জাগ্রত হওয়ার তাওফিক পায় না, বরং জাগিয়ে দিলে বিরক্ত হয়। এরূপ যার অবস্থা সে কিভাবে নাজাত পাবে, এ তো মুনাফিকদের হালত। আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:
" ولقد رأيتُنا ولا يتخلَّف عنها إلا منافقٌ معلومُ النفاق ". رواه مسلم .
“আমাদেরকে দেখেছি জামাত থেকে মুনাফিক ব্যতীত কেউ বিরত থাকত না, যার নিফাক ছিল সবার নিকট স্পষ্ট”। [মুসলিম।] কারণ রাতের কিয়াম কষ্টকর, যা ধৈর্যধারণকারী ও আল্লাহর নিকট সাওয়াব প্রত্যাশাকারী ব্যতীত কোন কপটের পক্ষে সম্ভব নয়”।
অধিক পাপ ও পাপের মধ্যে মগ্নতার ফলে বান্দা কিয়ামুল লাইল থেকে বঞ্চিত হয়, যদিও পাপ হয় ছোট। পাপের কারণে বান্দা সবচেয়ে বড় রিযিক আল্লাহর সাক্ষাত ও তার মোনাজাত থেকে মাহরুম হয়। হাসান রহ.-কে জনৈক ব্যক্তি বলল:
«يا أبا سعيد؛ إنِّي أَبيتُ معافى، وأحبُّ قيامَ الليل، وأُعدُّ طهوري؛ فما لي لا أقوم؟ فقال : ذنوبُك قَيَّدَتْك» .
“হে আবু সাইদ, আমি সুস্থাবস্থায় রাত যাপন করি, রাতে উঠতে চাই, পবিত্র অবস্থায় ঘুমাই, তবুও কেন উঠতে পারি না? তিনি বললেন: তোমার পাপ তোমাকে আটকে রেখেছে”।
প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিদআত করার ফলে কিয়ামের তাওফিক হ্রাস হয়, অতএব গায়ে যখন শক্তি থাকে তখন সুন্নত মোতাবেক আমল করুন ও বিদআত পরিহার করুন। যেমন কারো থেকে বর্ণিত আছে, তিনি পূর্ণ রাত সালাত আদায় করতেন ঘুমাতেন না; অথবা বর্ণিত আছে, তিনি এক রাতে পূর্ণ কুরআন খতম করতেন। এটাই বিদআত ও সুন্নতের পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় আমল থেকে নিষেধ করে গোস্বা জাহির করে বলেছেন:
«من رغب عن سنتي فليس مني» .
“যে আমার সুন্নত থেকে বিরত থাকল, সে আমার দলভুক্ত নয়”।
একটি উদাহরণ: ওহাব ইব্ন মুনাব্বেহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি ত্রিশ বছর জমিনে পার্শ্ব রাখেননি, তিনি বলতেন: আমি যদি আমার ঘরে শয়তান দেখি, তাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় বালিশ দেখার চেয়ে, কারণ বালিশ ঘুমের দিকে আহ্বান করে”। এ কথা তার থেকে প্রমাণিত নয়, যদি প্রমাণিত হত আমরা গ্রহণ করতাম না, যদিও তিনি তাবীঈদের একজন। কারণ তার এ কর্ম সুন্নতের খিলাফ, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পার্শ্ব জমিনে রাখতেন, ঘুমাতেন ও বালিশের উপর ভর দিতেন এবং ঘরে শয়তানের অবস্থানকে অপছন্দ করতেন। আপনি কতক বইয়ে দেখবেন সালাফদের ইবাদত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি রয়েছে, যেখানে সুন্নতের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যেমন আবু নুআইমের “হুলইয়াতুল আউলিয়া” ও গাজালি রচিত “এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন”। এসব কিতাবের লেখকগণ বর্ণনার শুদ্ধতা যাচাই করেননি।
আপনার কর্তব্য আপনি নিজের দীনের ব্যাপারে সতর্ক হন, সলফদের যেসব ঘটনা সুন্নত মোতাবেক গ্রহণ করুন, যা সুন্নত পরিপন্থী তা ত্যাগ করুন। সুন্নত পরিপন্থী আমল নিয়ে তাদের সাথে ঈর্ষা কিংবা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবেন না, কারণ তা বিদআত ও বৈরাগ্য, ইসলামে যার কোন অংশ নেই। সূফীরা যোগী ও সন্ন্যাসীদের অনুসরণ করে তাদের থেকে অনৈসলামিক এসব কর্মকাণ্ড ইসলামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, এ জন্য জাল হাদিস রচনা করেছে, অতঃপর মানুষদের তার দিকে আহ্বান করেছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদাতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন, যা শরীরের জন্য কষ্টকর তার নির্দেশ আল্লাহ দেননি। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন দু’টি খুঁটির সাথে একটি রশি বাঁধা ছিল, তিনি বললেন: “এটা কার?” তারা বলল: জয়নাবের, যখন তার অলসতা অথবা দুর্বলতা আসে, রশি ধরে দাঁড়িয়ে যান। তিনি বললেন: “এটা খুলে ফেল, তোমরা প্রত্যেকে আগ্রহ পর্যন্ত সালাত আদায় কর, অতঃপর যখন অলসতা অথবা দুর্বলতা আসে বসে পড়”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا نعسَ أحدُكم في الصلاة فليرقد حتى يذهب عنه النومُ؛ فإنَّ أحدَكم إذا صَلَّى وهو ناعسٌ لعله يذهبُ يستغفر فيسبّ نفسه» . رواه البخاريُّ ومسلم .
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়, তার উচিত ঘুমানো, যেন ঘুম চলে যায়। কারণ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করবে, তখন ইস্তেগফার করতে গিয়ে হয়তো নিজেকে গালি দিবে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, একদা হাওলা বিনতে তুওয়াইব তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পাশেই ছিলেন, তিনি বলেন: এ যাচ্ছে হাওলা বিনতে তুওয়াইব, মানুষের ধারণা তিনি রাতে ঘুমান না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لا تنام الليل ! خذوا من العمل ما تطيقون؛ فو الله لا يسأم الله حتى تسأموا» . متَّفقٌ عليه، واللَّفظُ لمسلم .
“সে রাতে ঘুমায় না! তোমরা তোমাদের সাধ্যানুসারে আমল কর, নিশ্চয় আল্লাহ বিরক্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও”। [বুখারি ও মুসলিম।]
রাত জাগা ও দেরিতে ঘুমানোর ফলে কিয়ামুল লাইলে বিঘ্ন ঘটে, শরীরের ঘুম পূর্ণ না হলে উঠা কঠিন হয়। বর্তমান যুগে আমাদের রাত-জাগা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা রাতের অর্ধেক না হতে ঘুমাই না। এ রাত-জাগা যদি কোন কল্যাণে হত, কিংবা ইলম অন্বেষণে হত, কিংবা জিহাদের জন্য হত, কিংবা ন্যূনতম পক্ষে বৈধ কাজে হত কথা ছিল না, কিন্তু আমাদের রাত-জাগা হয় খেল-তামাশা ও অযথা কাজে। কেউ রাত জাগে অশ্লীল ম্যাগাজিন দেখে, কেউ রাত জাগে টেলিভিশনের পর্দায় বসে ইত্যাদি। এ রাত জাগায় ফরয বিনষ্ট না হলেও হারাম, কিন্তু যখন এ কারণে ফরয বিনষ্ট হয়?! এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন। আবু বারযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
( كان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يكرهُ النومَ قبلَ صلاة العشاء والحديثَ بعدها ). رواه البخاريُّ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পূর্বে ঘুম ও তার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। [বুখারি।] তবে ইলম অন্বেষণ, স্ত্রীর সাথে আলাপ ও সফরের জন্য রাত জাগলে সমস্যা নেই, শর্তে হচ্ছে ফরয সালাত যেন বিনষ্ট না হয়, ফরয সালাত বিনষ্ট হলে এসবও হারাম। আল্লাহ ভালো জানেন।
ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এশার সালাতের পর মানুষদেরকে বেত্রাঘাত করতেন, আর বলতেন: “প্রথম রাত জেগে শেষ রাতে ঘুমাবে?!” [ইব্ন আবি শায়বাহ।]
দিন ভর খেলা-ধুলা ও অযথা কাজে লিপ্ত থাকার ফলে রাতে কিয়াম করা সম্ভব হয় না, অন্তর কঠিন হয়ে যায়, শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
অধিক পানাহারের কারণে কিয়াম কঠিন হয়, কারণ অধিক পানাহার প্রবল ঘুমের কারণ। জনৈক শায়খ ছাত্রদের বলেন: বেশী খেয়ো না, তাহলে বেশী পান করবে ও বেশী ঘুমাবে, অবশেষে মৃত্যুর সময় বেশী আফসোস করবে”। গাজালি রহ. বলেন: এটাই মূল নীতি, সর্বদা পেটকে খাদ্যের বোঝা থেকে হালকা রাখুন।
হারাম খাদ্যের ফলে অন্তর কঠিন হয় ও তাতে আবরণের সৃষ্টি হয়, ফলে হারাম খাদ্য ভক্ষণকারী কিয়াম থেকে বঞ্চিত হয়, বরং সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সবচেয়ে বড় কল্যাণ হচ্ছে আল্লাহর সাথে মোনাজাত।
" ولقد رأيتُنا ولا يتخلَّف عنها إلا منافقٌ معلومُ النفاق ". رواه مسلم .
“আমাদেরকে দেখেছি জামাত থেকে মুনাফিক ব্যতীত কেউ বিরত থাকত না, যার নিফাক ছিল সবার নিকট স্পষ্ট”। [মুসলিম।] কারণ রাতের কিয়াম কষ্টকর, যা ধৈর্যধারণকারী ও আল্লাহর নিকট সাওয়াব প্রত্যাশাকারী ব্যতীত কোন কপটের পক্ষে সম্ভব নয়”।
অধিক পাপ ও পাপের মধ্যে মগ্নতার ফলে বান্দা কিয়ামুল লাইল থেকে বঞ্চিত হয়, যদিও পাপ হয় ছোট। পাপের কারণে বান্দা সবচেয়ে বড় রিযিক আল্লাহর সাক্ষাত ও তার মোনাজাত থেকে মাহরুম হয়। হাসান রহ.-কে জনৈক ব্যক্তি বলল:
«يا أبا سعيد؛ إنِّي أَبيتُ معافى، وأحبُّ قيامَ الليل، وأُعدُّ طهوري؛ فما لي لا أقوم؟ فقال : ذنوبُك قَيَّدَتْك» .
“হে আবু সাইদ, আমি সুস্থাবস্থায় রাত যাপন করি, রাতে উঠতে চাই, পবিত্র অবস্থায় ঘুমাই, তবুও কেন উঠতে পারি না? তিনি বললেন: তোমার পাপ তোমাকে আটকে রেখেছে”।
প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিদআত করার ফলে কিয়ামের তাওফিক হ্রাস হয়, অতএব গায়ে যখন শক্তি থাকে তখন সুন্নত মোতাবেক আমল করুন ও বিদআত পরিহার করুন। যেমন কারো থেকে বর্ণিত আছে, তিনি পূর্ণ রাত সালাত আদায় করতেন ঘুমাতেন না; অথবা বর্ণিত আছে, তিনি এক রাতে পূর্ণ কুরআন খতম করতেন। এটাই বিদআত ও সুন্নতের পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় আমল থেকে নিষেধ করে গোস্বা জাহির করে বলেছেন:
«من رغب عن سنتي فليس مني» .
“যে আমার সুন্নত থেকে বিরত থাকল, সে আমার দলভুক্ত নয়”।
একটি উদাহরণ: ওহাব ইব্ন মুনাব্বেহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি ত্রিশ বছর জমিনে পার্শ্ব রাখেননি, তিনি বলতেন: আমি যদি আমার ঘরে শয়তান দেখি, তাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় বালিশ দেখার চেয়ে, কারণ বালিশ ঘুমের দিকে আহ্বান করে”। এ কথা তার থেকে প্রমাণিত নয়, যদি প্রমাণিত হত আমরা গ্রহণ করতাম না, যদিও তিনি তাবীঈদের একজন। কারণ তার এ কর্ম সুন্নতের খিলাফ, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পার্শ্ব জমিনে রাখতেন, ঘুমাতেন ও বালিশের উপর ভর দিতেন এবং ঘরে শয়তানের অবস্থানকে অপছন্দ করতেন। আপনি কতক বইয়ে দেখবেন সালাফদের ইবাদত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি রয়েছে, যেখানে সুন্নতের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যেমন আবু নুআইমের “হুলইয়াতুল আউলিয়া” ও গাজালি রচিত “এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন”। এসব কিতাবের লেখকগণ বর্ণনার শুদ্ধতা যাচাই করেননি।
আপনার কর্তব্য আপনি নিজের দীনের ব্যাপারে সতর্ক হন, সলফদের যেসব ঘটনা সুন্নত মোতাবেক গ্রহণ করুন, যা সুন্নত পরিপন্থী তা ত্যাগ করুন। সুন্নত পরিপন্থী আমল নিয়ে তাদের সাথে ঈর্ষা কিংবা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবেন না, কারণ তা বিদআত ও বৈরাগ্য, ইসলামে যার কোন অংশ নেই। সূফীরা যোগী ও সন্ন্যাসীদের অনুসরণ করে তাদের থেকে অনৈসলামিক এসব কর্মকাণ্ড ইসলামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, এ জন্য জাল হাদিস রচনা করেছে, অতঃপর মানুষদের তার দিকে আহ্বান করেছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদাতের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন, যা শরীরের জন্য কষ্টকর তার নির্দেশ আল্লাহ দেননি। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন দু’টি খুঁটির সাথে একটি রশি বাঁধা ছিল, তিনি বললেন: “এটা কার?” তারা বলল: জয়নাবের, যখন তার অলসতা অথবা দুর্বলতা আসে, রশি ধরে দাঁড়িয়ে যান। তিনি বললেন: “এটা খুলে ফেল, তোমরা প্রত্যেকে আগ্রহ পর্যন্ত সালাত আদায় কর, অতঃপর যখন অলসতা অথবা দুর্বলতা আসে বসে পড়”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا نعسَ أحدُكم في الصلاة فليرقد حتى يذهب عنه النومُ؛ فإنَّ أحدَكم إذا صَلَّى وهو ناعسٌ لعله يذهبُ يستغفر فيسبّ نفسه» . رواه البخاريُّ ومسلم .
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়, তার উচিত ঘুমানো, যেন ঘুম চলে যায়। কারণ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করবে, তখন ইস্তেগফার করতে গিয়ে হয়তো নিজেকে গালি দিবে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, একদা হাওলা বিনতে তুওয়াইব তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পাশেই ছিলেন, তিনি বলেন: এ যাচ্ছে হাওলা বিনতে তুওয়াইব, মানুষের ধারণা তিনি রাতে ঘুমান না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لا تنام الليل ! خذوا من العمل ما تطيقون؛ فو الله لا يسأم الله حتى تسأموا» . متَّفقٌ عليه، واللَّفظُ لمسلم .
“সে রাতে ঘুমায় না! তোমরা তোমাদের সাধ্যানুসারে আমল কর, নিশ্চয় আল্লাহ বিরক্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও”। [বুখারি ও মুসলিম।]
রাত জাগা ও দেরিতে ঘুমানোর ফলে কিয়ামুল লাইলে বিঘ্ন ঘটে, শরীরের ঘুম পূর্ণ না হলে উঠা কঠিন হয়। বর্তমান যুগে আমাদের রাত-জাগা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা রাতের অর্ধেক না হতে ঘুমাই না। এ রাত-জাগা যদি কোন কল্যাণে হত, কিংবা ইলম অন্বেষণে হত, কিংবা জিহাদের জন্য হত, কিংবা ন্যূনতম পক্ষে বৈধ কাজে হত কথা ছিল না, কিন্তু আমাদের রাত-জাগা হয় খেল-তামাশা ও অযথা কাজে। কেউ রাত জাগে অশ্লীল ম্যাগাজিন দেখে, কেউ রাত জাগে টেলিভিশনের পর্দায় বসে ইত্যাদি। এ রাত জাগায় ফরয বিনষ্ট না হলেও হারাম, কিন্তু যখন এ কারণে ফরয বিনষ্ট হয়?! এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন। আবু বারযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
( كان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يكرهُ النومَ قبلَ صلاة العشاء والحديثَ بعدها ). رواه البخاريُّ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পূর্বে ঘুম ও তার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। [বুখারি।] তবে ইলম অন্বেষণ, স্ত্রীর সাথে আলাপ ও সফরের জন্য রাত জাগলে সমস্যা নেই, শর্তে হচ্ছে ফরয সালাত যেন বিনষ্ট না হয়, ফরয সালাত বিনষ্ট হলে এসবও হারাম। আল্লাহ ভালো জানেন।
ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এশার সালাতের পর মানুষদেরকে বেত্রাঘাত করতেন, আর বলতেন: “প্রথম রাত জেগে শেষ রাতে ঘুমাবে?!” [ইব্ন আবি শায়বাহ।]
দিন ভর খেলা-ধুলা ও অযথা কাজে লিপ্ত থাকার ফলে রাতে কিয়াম করা সম্ভব হয় না, অন্তর কঠিন হয়ে যায়, শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
অধিক পানাহারের কারণে কিয়াম কঠিন হয়, কারণ অধিক পানাহার প্রবল ঘুমের কারণ। জনৈক শায়খ ছাত্রদের বলেন: বেশী খেয়ো না, তাহলে বেশী পান করবে ও বেশী ঘুমাবে, অবশেষে মৃত্যুর সময় বেশী আফসোস করবে”। গাজালি রহ. বলেন: এটাই মূল নীতি, সর্বদা পেটকে খাদ্যের বোঝা থেকে হালকা রাখুন।
হারাম খাদ্যের ফলে অন্তর কঠিন হয় ও তাতে আবরণের সৃষ্টি হয়, ফলে হারাম খাদ্য ভক্ষণকারী কিয়াম থেকে বঞ্চিত হয়, বরং সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সবচেয়ে বড় কল্যাণ হচ্ছে আল্লাহর সাথে মোনাজাত।
বান্দা যখন কিয়ামুল লাইলের অভ্যাস ত্যাগ করে, বুঝতে হবে পাপ ও আল্লাহর থেকে দূরত্ব সৃষ্টির কারণে এমন হয়েছি। হে আল্লাহর বান্দা, আপনার এমন হলে পরখ করুন আপনি কি করেছেন?! জেনে রাখুন, কিয়ামুল লাইলের অভ্যাস ত্যাগ করার ফলে সম্মান ও মর্যাদা হ্রাস পায়। ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক ব্যক্তির আলোচনা হল, যে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল, তিনি বললেন: “ঐ ব্যক্তির উভয় কানে শয়তান পেশাব করেছে”। অথবা বলেছেন: “ঐ ব্যক্তির কানে”। [বুখারি ও মুসলিম।]
জেনে রাখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিয়াম ত্যাগকারীকে ভর্ৎসনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا عبدَ الله، لا تكن مثل فلان؛ كان يقومُ الليلَ فترك قيامَ الليل» . مُتَّفَقٌ عليه .
“হে আব্দুল্লাহ, অমুকের ন্যায় হয়ো না, যে কিয়াম করত, অতঃপর কিয়াম ত্যাগ করেছে”। [বুখারি ও মুসলিম।] এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভালো অভ্যাস ত্যাগ করা খারাপ।
রাতে যে কিয়াম করে, আল্লাহ যাকে রাতে কিয়াম করার তাওফিক দেন, আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহব্বত করেন। যে আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে ও তার কিতাব পাঠ করে, তার চেয়ে সম্মানিত কে? আল্লাহ যাকে বঞ্চিত করেন, সে ব্যতীত কেউ এ মহান ফযিলত থেকে বঞ্চিত হয় না। আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।
জেনে রাখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিয়াম ত্যাগকারীকে ভর্ৎসনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يا عبدَ الله، لا تكن مثل فلان؛ كان يقومُ الليلَ فترك قيامَ الليل» . مُتَّفَقٌ عليه .
“হে আব্দুল্লাহ, অমুকের ন্যায় হয়ো না, যে কিয়াম করত, অতঃপর কিয়াম ত্যাগ করেছে”। [বুখারি ও মুসলিম।] এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভালো অভ্যাস ত্যাগ করা খারাপ।
রাতে যে কিয়াম করে, আল্লাহ যাকে রাতে কিয়াম করার তাওফিক দেন, আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহব্বত করেন। যে আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে ও তার কিতাব পাঠ করে, তার চেয়ে সম্মানিত কে? আল্লাহ যাকে বঞ্চিত করেন, সে ব্যতীত কেউ এ মহান ফযিলত থেকে বঞ্চিত হয় না। আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।
১. আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের কিয়ামে এক আয়াত নিয়ে ভোর করেন:
﴿ إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨ ﴾ [ المائدة : ١١٨ ]
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা মায়েদা: (১১৮)]। [ইব্ন মাজাহ, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
২. মুগিরা ইব্ন শুবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াম করলেন যে, তার পা ফুলে গেল, তাকে বলা হল: আপনার তো পূর্বাপর সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? তিনি বলেন:
«أفلا أكون عبدًا شكورًا» . متَّفق عليه .
“আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?” [বুখারি ও মুসলিম।]
৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: কিয়ামুল লাইল ত্যাগ কর না, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ত্যাগ করতেন না, যদি তিনি অসুস্থ অথবা অলসতা বোধ করতেন, বসে সালাত পড়তেন”। [আবু দাউদ, ইব্ন খুজাইমাহ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
৪. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে ইফতার করতেন, আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোন মাসে সিয়াম পালন করতেন আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি ইফতার করবেন না। আপনি যদি তাকে সালাতে দেখতে চান দেখতে পাবেন, যদি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চান দেখতে পাবেন”। [বুখারি।]
৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত পড়তেন, তিনি একটি সেজদা করতেন তোমাদের কারো পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার সমপরিমাণ, এবং তিনি ফযরের পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, অতঃপর ডান কাতে শুতেন, যতক্ষণ না ফজর সালাতের আহ্বানকারী তার নিকট আসত”। [বুখারি।]
৬. ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাতে সালাত আদায় করি, তিনি দাঁড়িয়েই ছিলেন, ফলে আমি খারাপ ইচ্ছা করি, তাকে বলা হল: কি ইচ্ছা করেন? তিনি বলেন: তাকে রেখে বসার ইচ্ছা করেছি”। [বুখারি ও মুসলিম।]
৭. হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি কোন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করি, তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করেন, আমি মনে করলাম: তিনি এক শো আয়াত পড়ে রুকু করবেন, অতঃপর তিনি পড়তে থাকেন, আমি মনে করলাম তিনি এ সূরা দ্বারা রাকাত পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি পড়তে থাকেন, আমি মনে করলাম এ সূরা দ্বারা তিনি রুকু পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করে শেষ করেন, অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরান আরম্ভ করে শেষ করেন। তিনি ধীরে ধীরে পড়তেন, যখন তাসবীহের আয়াত অতিক্রম করতেন সুবহানাল্লাহ বলতেন, যখন প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন প্রার্থনা করতেন, যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত অতিক্রম করতেন আশ্রয় চাইতেন, অতঃপর তিনি রুকু করেন, রুকুতে তিনি বলেন:
«سبحان ربي العظيم»؛
তার রুকু ছিল কিয়ামের সমপরিমাণ, অতঃপর বলেন:
«سمع اللهُ لمن حمده، ربنا لك الحمدُ»،
অতঃপর তিনি রুকুর সমপরিমাণ কিয়াম করেন, অতঃপর সেজদা করেন, সেজদায় বলেন:
«سبحان ربي الأعلى»؛
তার সেজদাও ছিল রুকুর সমপরিমাণ”। [মুসলিম।]
৮. আবু সালামাহ ইব্ন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করেন: “রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বলেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে এগারো রাকাতের বেশী পড়তেন না, তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার দীর্ঘ হওয়া ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কি বলবেন! অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার দীর্ঘ হওয়া ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কি বলবেন! অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন। আয়েশা বলেন: আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, বেতেরের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেন:
«يا عائشة إن عينيَّ تنامان ولا ينام قلبي» .
“হে আয়েশা, আমার দু’চোখ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না”। [বুখারি ও মুসলিম।]
﴿ إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨ ﴾ [ المائدة : ١١٨ ]
“যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা মায়েদা: (১১৮)]। [ইব্ন মাজাহ, শায়খ আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।]
২. মুগিরা ইব্ন শুবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াম করলেন যে, তার পা ফুলে গেল, তাকে বলা হল: আপনার তো পূর্বাপর সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? তিনি বলেন:
«أفلا أكون عبدًا شكورًا» . متَّفق عليه .
“আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?” [বুখারি ও মুসলিম।]
৩. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: কিয়ামুল লাইল ত্যাগ কর না, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ত্যাগ করতেন না, যদি তিনি অসুস্থ অথবা অলসতা বোধ করতেন, বসে সালাত পড়তেন”। [আবু দাউদ, ইব্ন খুজাইমাহ, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
৪. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে ইফতার করতেন, আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোন মাসে সিয়াম পালন করতেন আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি ইফতার করবেন না। আপনি যদি তাকে সালাতে দেখতে চান দেখতে পাবেন, যদি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চান দেখতে পাবেন”। [বুখারি।]
৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত পড়তেন, তিনি একটি সেজদা করতেন তোমাদের কারো পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার সমপরিমাণ, এবং তিনি ফযরের পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, অতঃপর ডান কাতে শুতেন, যতক্ষণ না ফজর সালাতের আহ্বানকারী তার নিকট আসত”। [বুখারি।]
৬. ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাতে সালাত আদায় করি, তিনি দাঁড়িয়েই ছিলেন, ফলে আমি খারাপ ইচ্ছা করি, তাকে বলা হল: কি ইচ্ছা করেন? তিনি বলেন: তাকে রেখে বসার ইচ্ছা করেছি”। [বুখারি ও মুসলিম।]
৭. হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি কোন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করি, তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করেন, আমি মনে করলাম: তিনি এক শো আয়াত পড়ে রুকু করবেন, অতঃপর তিনি পড়তে থাকেন, আমি মনে করলাম তিনি এ সূরা দ্বারা রাকাত পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি পড়তে থাকেন, আমি মনে করলাম এ সূরা দ্বারা তিনি রুকু পূর্ণ করবেন। অতঃপর তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করে শেষ করেন, অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরান আরম্ভ করে শেষ করেন। তিনি ধীরে ধীরে পড়তেন, যখন তাসবীহের আয়াত অতিক্রম করতেন সুবহানাল্লাহ বলতেন, যখন প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন প্রার্থনা করতেন, যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত অতিক্রম করতেন আশ্রয় চাইতেন, অতঃপর তিনি রুকু করেন, রুকুতে তিনি বলেন:
«سبحان ربي العظيم»؛
তার রুকু ছিল কিয়ামের সমপরিমাণ, অতঃপর বলেন:
«سمع اللهُ لمن حمده، ربنا لك الحمدُ»،
অতঃপর তিনি রুকুর সমপরিমাণ কিয়াম করেন, অতঃপর সেজদা করেন, সেজদায় বলেন:
«سبحان ربي الأعلى»؛
তার সেজদাও ছিল রুকুর সমপরিমাণ”। [মুসলিম।]
৮. আবু সালামাহ ইব্ন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করেন: “রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বলেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে এগারো রাকাতের বেশী পড়তেন না, তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার দীর্ঘ হওয়া ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কি বলবেন! অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন, তার দীর্ঘ হওয়া ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কি বলবেন! অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন। আয়েশা বলেন: আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, বেতেরের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেন:
«يا عائشة إن عينيَّ تنامان ولا ينام قلبي» .
“হে আয়েশা, আমার দু’চোখ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না”। [বুখারি ও মুসলিম।]
আল্লাহর অনুগ্রহে পুস্তিকা রচনা শেষ হল। এতে যে ত্রুটি রয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত, এ পুস্তিকা আমার উপকারের জন্য আমি লিখেছি, কিন্তু পরবর্তীতে ইচ্ছা হল আমার ভাইয়েরাও এতে শামিল হোক, তাই ছাপানোর ইচ্ছা করি। এতে হয়তো সাধারণ মুসলিমদের প্রতি নসিহতের দায়িত্ব আদায় হবে। আল্লাহ আমাদেরকে ফরযগুলো আদায় করার তাওফিক দিন, এবং নফল আদায় করে তার নৈকট্য অর্জন করার সুযোগ দিন। আল্লাহ এ উম্মত থেকে বিচ্ছেদ, ফেতনা ও মুসিবত দূর করুন।
আমার ভাইদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এ জমানায় নেক আমল করা খুব কঠিন। একজন দীনদারকে রাত-দিন, সকাল-সন্ধ্যা ফেতনার মোকাবিলা করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই বলেছেন:
«يأتي على الناس زمانٌ القابضُ على دينه كالقابض على الجمر» . أخرجه التِّرْمذيُّ وصَحَّحَه الألبانيُّ .
“মানুষের উপর একটি সময় আসবে, যখন দীনকে আঁকড়ে থাকা ব্যক্তি আগুনের কয়লা আঁকড়ে থাকা ব্যক্তির ন্যায় হবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, তাদের সাথে আমাদের হাশর করুন, হে আল্লাহ।
সমাপ্ত
আমার ভাইদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এ জমানায় নেক আমল করা খুব কঠিন। একজন দীনদারকে রাত-দিন, সকাল-সন্ধ্যা ফেতনার মোকাবিলা করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই বলেছেন:
«يأتي على الناس زمانٌ القابضُ على دينه كالقابض على الجمر» . أخرجه التِّرْمذيُّ وصَحَّحَه الألبانيُّ .
“মানুষের উপর একটি সময় আসবে, যখন দীনকে আঁকড়ে থাকা ব্যক্তি আগুনের কয়লা আঁকড়ে থাকা ব্যক্তির ন্যায় হবে”। [তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, তাদের সাথে আমাদের হাশর করুন, হে আল্লাহ।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন