HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফজরের সালাত ও কিয়ামুল লাইলের জন্য সহায়ক উপকরণ

লেখকঃ ড. রুকাইয়্যাহ বিনতে মুহাম্মদ আল-মাহারিব

কিয়ামুল লাইলের সহায়ক কতিপয় উপকরণ
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর জন্য উপকরণ নির্ধারণ করেছেন, কিয়ামুল লাইলের জন্যও রয়েছে কিছু উপকরণ। যে রাতে উঠতে চায়, তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে, তাহলে সে আল্লাহর ইচ্ছায় উঠতে সক্ষম হবে। আমি এখানে কতক উপকরণ উল্লেখ করছি, আল্লাহর নিকট দোয়া করছি, যে তা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে উপকৃত করুন।

আল্লাহর নিকট সাহায্য তলব করুন: কোন ইবাদাত আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত সম্ভব নয়, কিয়ামুল লাইলও তথৈবচ। কারণ বান্দা যখন ঘুমায় শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি ঘিরা দেয়, যদি সে আল্লাহর সাহায্য চায়, আল্লাহ তাকে শয়তানের বিপক্ষে সাহায্য করেন। আল্লাহর উপর যতক্ষণ তার ভরসা রয়েছে, শয়তান তাকে কাবু করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّهُۥ لَيۡسَ لَهُۥ سُلۡطَٰنٌ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٩٩ ﴾ [ النحل : ٩٩ ]

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপরতাওয়াককুল করেছে, তাদের উপর শয়তানের কোন ‎‎ ক্ষমতা নেই”। [সূরা নাহাল: (৯৯)] আমরা প্রতিনিয়ত সূরা ফাতিহা দ্বারা এ সাহায্যই প্রার্থনা করি:

﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [ الفاتحة : ٥ ]

“আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারইনিকট আমরা সাহায্য চাই”। [সূরা ফাতেহা: (৫)]

যখন আপনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কথা স্মরণ করুন, বিশেষ করে কিয়ামের শুরুতে। কারণ আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত তা খুব কষ্টকর। আরও স্মরণ করুন:

﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ٦٩ ﴾ [ العنكبوت : ٦٩ ]

“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়,তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথেপরিচালিত করব”। [সূরা আনকাবুত: (৬৯)‎]

আকিদা বিশুদ্ধ করুন: কিয়ামুল লাইলকারী নিজের আকিদা বিশুদ্ধ করুন, সঠিকভাবে ঈমানের প্রতিটি দিক যাচাই করুন, শুধু মুখের কথা ও বাক্যের উচ্চারণ যথেষ্ট নয়। জান্নাতকে স্মরণ করুন ও জাহান্নামকে ভয় করুন। এটাই কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম উপায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ ٩ ﴾ [ الزمر : ٩ ]

“যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও ‎‎ দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকেভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশাকরে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)”। [সূরা যুমার: (৯)]

তাকদীরের উপর বিশ্বাস করুন: ভাল-মন্দ তকদীরের উপর বিশ্বাস করুন, যা হাত ছাড়া হয় বা যা স্পর্শ করে, তার জন্য দুঃখিত না হওয়া, তাকদীরকে গাল-মন্দ না করা। কোন আপত্তি কিংবা অভিযোগ উত্থাপন না করা, কারণ এভাবে মূলত আল্লাহকে গাল-মন্দ করা হয় ও তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়, যেহেতু তাকদীর একমাত্র তার হাতে।

কুরআনের তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন: ঈমানের উৎস কুরআন, তথা আল্লাহর বাণী, তাই তিলাওয়াতের সময় বিনয়ী হন ও তার আদেশ-নিষেধের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। দৃঢ় বিশ্বাস করুন আপনি আল্লাহর কালাম পাঠ করছেন, তার সাথে কথা বলছেন, ইনশাআল্লাহ আপনার অন্তর বিনয়ী হবে, আপনার শরীরে শিহরণ সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحۡسَنَ ٱلۡحَدِيثِ كِتَٰبٗا مُّتَشَٰبِهٗا مَّثَانِيَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمۡ وَقُلُوبُهُمۡ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ ٢٣ ﴾ [ الزمر : ٢٣ ]

“আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী,সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যাবারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকেভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়,তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণেবিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়েত,তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়েতকরেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন,তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই”। [সূরা যুমার: (২৩)‎]

আল্লাহকে মহব্বত করুন ও তার সাথে সম্পৃক্ত হন: আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ততা ও তার মহব্বত ব্যতীত কিয়ামুল লাইল সম্ভব নয়। যার অন্তরে আল্লাহর মহব্বত রয়েছে, সে তার সাক্ষাত, তার সাথে বাক্যালাপ ও তার কালামের প্রতি মনোযোগী হবে নিশ্চয়।

প্রিয় পাঠক, আপনার প্রিয় বন্ধু যাকে আপনি মহব্বত করেন, যার সঙ্গ আপনার প্রিয়, যার বাক্যালাপ আপনার পছন্দ, যাকে আপনি অন্তরে অনুভব করেন; নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন তার ওয়াদার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা কিরূপ?! মনে করুন সে আপনার থেকে দূরে, আপনাকে সাক্ষাতের ওয়াদা দিয়েছে, আপনি কি তার সাক্ষাতের অপেক্ষা করবেন না, তার আগমনের প্রস্তুতি নিবেন না?! অবশ্যই নিবেন। যদি কেউ তার সময়ে আপনাকে আহ্বান করে আপনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। আপনার পরিবারকে বলবেন যেন আপনাকে তারা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিংবা আপনাকে জাগিয়ে দেয় যদি ঘুমে থাকেন, কারণ আপনি চান তার সাক্ষাত ছুটে না যাক। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কে এই ব্যক্তি?! কার জন্য আপনি এত ব্যস্ত?! সে কি আপনাকে রিযক দেয়?! আপনাকে রোগ থেকে মুক্ত করে?! আপনার পেরেশানি দূর করে?! সে কি আপনাকে এত সুন্দর চেহারা ও অবয়ব দিয়েছে?! আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা চাইবেন তাই দিবে?! না, কখনো না, তার এ সাধ্য নেই, সে আপনার মত মানুষ। আপনার প্রয়োজন তারও প্রয়োজন।

তবুও সে যদি আপনাকে রাতের কথা বলে, আপনি দিনে তার চিন্তা করেন, যদি দিনের কথা বলে রাতে তার চিন্তা করেন, যদি সে আপনার প্রিয় ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়।

অতএব যে আল্লাহকে মহব্বত করে, তার সাক্ষাত প্রত্যাশা করে, সে অবশ্যই রাত জেগে কিয়ামুল লাইল করবে, যখন আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন।

প্রত্যেকের আগ্রহ আলাদা, কেউ রাতের এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করে, কেউ রাতের এক চতুর্থাংশ কিয়াম করে, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ অর্ধরাত, কেউ এক দশমাংশ। প্রত্যেকে আল্লাহর প্রতি তাদের মহব্বত অনুযায়ী কিয়াম করে।

একটি উদাহরণ পেশ করছি, মনে করুন আপনি কোন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন, যেখানে আপনার অনেক আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছে, আপনি তাদেরকে পৌঁছার সময় বলে দিয়েছেন, আপনি চান তারা আপনাকে সম্মান দিয়ে নিয়ে যাক। যখন আপনি পৌঁছলেন দেখছেন কেউ অপেক্ষা করছে ফ্লাইটের নিকট। কেউ অপেক্ষা করছে অভ্যর্থনা কক্ষে। কেউ অপেক্ষা করছে ঘরে। কেউ আপনাকে দেখার জন্য এসেছে দু’দিন পর। কেউ এসেছে একদিন পর। কারো সাথে আপনার সাক্ষাত হল বাজারে, সে আপনাকে সালাম দিল ও বলল: আপনার আসার অপেক্ষায় ছিল সে।

আপনি কি তাদের সবার মহব্বত এক পাল্লায় পরিমাপ করবেন?! যদি বাজারে সাক্ষাতকারী ব্যক্তি দাবি করে সে আপনাকে সবচেয়ে বেশী মহব্বত করে, যারা আপনাকে বিমান-বন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তাদের চেয়ে, আপনি কি তাকে সত্য বলবেন?!

আমি মনে করি না আপনি তাকে সত্য বলবেন...

অতএব যে চোখ ভরে ঘুমায়, অতঃপর রাতে কিয়ামকারীদের চেয়ে অধিক মহব্বতের দাবি করে, তার দাবি কিভাবে সত্য হয়! আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।

আল্লাহর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ছিল সত্যিকার মহব্বত, অতএব আল্লাহকে মহব্বত করার ক্ষেত্রে তার পন্থাই আমাদের আদর্শ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [ الاحزاب : ٢١ ]

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছেউত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকালপ্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”। [সূরা আহযাব: (২১)‎] তিনি আরও বলেন:

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ ال عمران : ٣١ ]

“বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলেআমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকেভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমাকরে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু”। [সূরা আলে-ইমরান: (৩১)]

স্মরণ করুন ফজর সালাতে যে অলসতা করে, আল্লাহর সাক্ষাতের প্রতি যার ভ্রুক্ষেপ নেই, তার উপর আল্লাহর গোস্বা পতিত হয়। তাই কিয়ামুল লাইলের সুফল ও ত্যাগ করার কুফল সংক্রান্ত হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা জরুরী।

স্মরণ করুন, আল্লাহ তার বান্দার সালাত দেখেন, তার তিলাওয়াত শ্রবণ করেন, তার দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার কবুল করেন। রাতের এক তৃতীয়াংশে তিনি দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন। যে চায় তাকে দান করেন, যে দোয়া করে তার ডাকে সাড়া দেন এবং যে ইস্তেগফার করে তাকে তিনি ক্ষমা করেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ينزلُ اللهُ - تباركَ وتعالى - إلى السَّماء الدُّنيا كلَّ ليلة حين يمضي ثلثُ الليل الأول فيقول : أنا الملك، أنا الملك، من ذا الذي يَدْعوني فأستجيبَ له، من ذا الذي يسألني فأعطيه، من ذا الذي يستغفرني فأغفر له» . أخرجه مسلم .

“আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করে, তিনি বলেন: আমিই বাদশাহ, আমিই বাদশাহ, কে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তাকে প্রদান করব, কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে আমি তাকে ক্ষমা করব”। [মুসলিম।]

মুসলিম ভাইদের প্রতি অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখুন: কারো প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ ত্যাগ করুন। যদি কারো ব্যাপারে অন্তরে কিছু থাকে, ঘুমের পূর্বে তাকে ক্ষমা করে দিন, এটা সদকা রূপে গণ্য হবে। এভাবে যে মুসলিমের উপর সদকা করে, আল্লাহর তার উপর রহমত প্রেরণ করেন ও তাকে অধিক ইবাদতের তাওফিক দেন।

পাপ থেকে দূরে থাকুন ও ইবাদাতে মনোযোগ দিন: দিনভর আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকুন। কারণ জাগ্রত অবস্থায় যে আল্লাহকে স্মরণ করে, ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহ তাকে হিফাযত করেন। কেউ বলেছেন: আমি যে দিন সিয়াম পালন করি, সে দিন কিয়াম আমার জন্য অতি সহজ হয়। কারণ তখন আমি অন্তরে বিনয় অনুভব করি। কেউ বলেছেন: নেকি নেকের বাহন।

অতিরিক্ত দুনিয়াদারী থেকে দূরে থাকুন: দুনিয়ার মগ্নতা ও চিন্তাসহ ঘুমালে আখেরাতের চিন্তা অন্তরে স্থান পায় না। এক অন্তরে সমানভাবে দুনিয়া-আখেরাত একত্র হয় না।

অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডা ত্যাগ করুন: অধিক পানাহার ও বাজে আড্ডার কারণে অন্তরে গাফিলতি ও শরীরে অলসতার সৃষ্টি হয়, ফলে কিয়ামুল লাইল ছুটে যায়। প্রয়োজন ব্যতীত গতর খাটুনি ও কঠিন পরিশ্রম ত্যাগ করুন।

সর্বদা কিয়ামুল লাইলের চিন্তায় মগ্ন থাকুন: সত্যিকার ইচ্ছা ও আগ্রহ ব্যতীত এ ধারণার সৃষ্টি হয় না। জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, চিন্তা কিভাবে মানুষকে জাগ্রত করে, তার জবাবে তিনি বলেন: “মানুষ রাত ভর ঘুমিয়ে ফজরের সময় কিংবা তার পরে জাগ্রত হয়, কিন্তু যখন তার প্রয়োজন হয়, জাগ্রত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, রাতে অবশ্যই জাগতে হবে চিন্তা নিয়ে ঘুমায়, তখন সে সময় হওয়ার পূর্বে বারবার জাগ্রত হয়। তাকে চিন্তা বারবার জাগিয়ে দেয়, যার সাথে সে ঘুমিয়ে ছিল। যদি দুনিয়ার চিন্তা অচেতন ঘুম থেকে এভাবে জাগিয়ে দিতে পারে, তাহলে আল্লাহর সাক্ষাতের চিন্তা কেন জাগাবে না?!

কিয়ামুল লাইলের দৃঢ় বিশ্বাস, নিজের সক্ষমতার উপর আস্থা ও ঘুম থেকে জেগে বেতের পড়ার অবিচল মনোভাব রাখুন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡ‍ٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا ٦ ﴾ [ المزمل : ٦ ]

“নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্যঅধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্যঅধিকতর উপযোগী”। [সূরা মুযযাম্মিল: (৬)‎]

কতক মুফাসসির বলেছেন: রাতের মুহূর্তগুলো থাকে নীরব, কর্মহীন ও ঝামেলা মুক্ত, সে সময় ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা অবশ্যই দিনের সালাতের চেয়ে কঠিন, কারণ রাতের সৃষ্টি ঘুম ও আরামের জন্য, তখন কিয়াম করা নফসের উপর কঠিন-ই বটে। কিন্তু যার নিজের সামর্থের উপর আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে, তার মনোবল দৃঢ় হয়, প্রতিজ্ঞা সতেজ ও শরীর উদ্যমী হয়, সে উঠতে পারে। [সাফওয়াতুত তাফাসীর: (৩/৪৬৬)]

রাতের সালাত দিনে কাযা করুন: যদি কখনো রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে তার কাযা করুন। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ خافَ أن لا يقومَ من آخر اللَّيل فليوتر أولَه، ومن طَمع أن يقومَ آخَره فليوتر آخرَ الليل؛ فإنَّ صلاةَ آخر اللَّيل مشهودةٌ، وذلك أفضلُ» . رواه مسلم .

“যে ব্যক্তি শেষ রাতে না উঠার ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন প্রথম রাতে বেতের পড়ে নেয়। আর যে শেষ রাতে বেতের পড়তে আশাবাদী সে যেন শেষ রাতে সালাত আদায় করে। কারণ শেষ রাতের সালাতই উপস্থিতির সালাত, সে সালাতই উত্তম”। [মুসলিম।]

শেষ রাতে উঠে সালাত আদায়ে যে আশাবাদী নয়, তার যদি প্রথম রাতের কিয়াম ছুটে যায়, সে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে বারবার ছুটার ফলে, এক সময় রাতের কিয়াম তার নিকট গুরুত্বহীন হয়ে যায়। কারণ একবার ত্যাগ করার ফলে মনে আফসোসের রেখা কাটে, দ্বিতীয়বার সে আফসোস হালকা হয়। বারবার হতে থাকলে আফসোস আর থাকে না।

রাতে উঠার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন: সাথে এলার্ম ঘড়ি রাখুন, অথবা পরিবারের কাউকে বলুন, অথবা প্রতিবেশীকে বলুন, অথবা কোন বন্ধুকে বলুন, যে আপনাকে জাগিয়ে দিবে।

কিয়ামুল লাইলের জন্য পরিবারের কাউকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করুন: শয়তান দু’জনের তুলনায় একজনের উপর অধিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। দু’জন মিলে একে অপরের সহযোগী হলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয় ও নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় থাকে, বিশেষ করে তারা যদি হয় স্বামী-স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«رحمَ اللهُ رجلاً قامَ من الليل فصلى وأيقظَ امرأته، فإن أبت نضَحَ في وجهها الماءَ، ورحمَ اللهُ امرأة قامت من الليل فصلَّت وأيقظت زوجها، فإن أبى نضحت في وجهه الماء» . رواه أبو داود وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .

“আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্ত্রীকে জাগিয়ে দিল। স্ত্রী উঠতে না চাইলে তার চেহারায় পানির ছিটা দিল। আল্লাহ ঐ নারীকে রহম করুন, যে রাতে উঠল অতঃপর সালাত আদায় করল ও স্বামীকে জাগিয়ে দিল, যদি স্বামী উঠমত না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল”। [আবু দাউদ, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]

উম্মুল মুমেনিন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শঙ্কিত হয়ে জেগে উঠে বলেন:

«سبحانَ الله، ماذا أنزل اللهُ من الخزائن؟ وماذا أُنزل من الفتن؟ من يوقظ صواحبَ الحجرات - يريد أزواجه لكي يصلين - رُبَّ كاسية في الدنيا عارية في الآخرة» . رواه البخاري .

“সুবহানাল্লাহ! কি পরিমাণ খাজানা নাযিল করা হয়েছে? কি পরিমাণ ফেতনা অবতীর্ণ করা হয়েছে? কে ঘরের লোকদের জাগাবে, -তার উদ্দেশ্য নিজ স্ত্রীগণ, যেন তারা সালাত আদায় করে- দুনিয়ায় অনেক পোশাকধারী আখেরাতে নগ্ন থাকবে”। [বুখারি।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার খাদেম রাতকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়ে ছিলেন, একজন সালাত আদায় করে অপর জনকে জাগিয়ে দিতেন।

ঘুমের সময় সুন্নতের অনুসরণ করুন: ঘুমের সময় ও ঘুমের হালতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করুন, যেমন:

ক. রাতের শুরুতে ঘুমানো। শেষ রাতে উঠার জন্য প্রথম রাতে ঘুমানো জরুরী। যে অর্ধরাত বা তার পরে ঘুমায় তার জন্য শেষ রাতে উঠা কষ্টকর। তার শরীর ও ঘুমের হক আদায় হয় না। দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তির জন্য রাত-দিনে আট ঘণ্টা ঘুমানো যথেষ্ট। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أحبُّ الصلاة إلى الله صلاةُ داودَ، وأحبُّ الصيام إلى الله صيامُ داودَ؛ كان ينام نصفَ الليل ويقوم ثُلُثَه وينام سدسَه، ويصوم يومًا ويفطر يومًا» . متَّفق عليه .

“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সালাত দাউদ আলাইহিস সালামের সালাত। আল্লাহর নিকট উত্তম সিয়াম দাউদ আলাইহিস সালামের সিয়াম। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ কিয়াম করতেন ও এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। এক দিন সিয়াম পালন করতেন ও এক দিন ইফতার করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।]

হিসাব করুন: যদি অর্ধেক রাতের সাথে এক ষষ্ঠাংশ যোগ করা হয়, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ হয়। আর দুই তৃতীয়াংশ-ই আট ঘণ্টা, যদি রাত বারো ঘণ্টার হয়। মুমিন যদি এশার সালাতের জন্য দেরি করে, তাহলে দিনের দ্বিপ্রহরের বিশ্রামই রাতের নিদ্রার পরিবর্তে যথেষ্ট হয়, ফলে সে শেষ রাতে উঠতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত:

أنَّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم كان ينام أولَ الليل ويقوم آخره فيصلي . متَّفقٌ عليه،

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শুরুতে ঘুমাতেন ও শেষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন”। [বুখারি ও মুসলিম।] তিনি আরও বলেন:

وكان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يكرهُ الحديثَ بعدَ العشاء كما في البخاريِّ .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পর কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। [যেমন বুখারিতে এসেছে।]

খ. খুব আরামদায়ক বিছানায় না ঘুমানো। বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানায় একদা চারটি কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়, সাধারণত দু’টি কাপড় বিছানো হত, ফলে তিনি বিনা-কিয়ামে ভোর করেন। জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরা কি করেছ?” তারা উত্তর দিল। তিনি বললেন: “যেরূপ ছিল সেরূপ বানিয়ে দাও”। [শামেয়েলে তিরমিযি, শায়খ আলবানি হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।]

গ. অযু ও যিকরসহ ঘুমানো। যে ব্যক্তি অযু করে ঘুমায়, ফেরেশতাগণ তাকে পাহারা দেয়, তার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করে। ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ باتَ طاهرًا بات في شعاره ملكٌ؛ فلم يستيقظ إلا قال الملكُ : اللهم اغفر لعبدك فلان؛ فإنَّه بات طاهرًا» . أخرجه ابنُ حبَّان في صحيحه، وقال الألبانيُّ : حسن صحيح .

“যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ঘুমায়, তার মাথার নিকট ফেরেশতা রাত যাপন করে, তার জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেশতা বলে: হে আল্লাহ তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা কর, কারণ সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছে”। [ইব্‌ন হিব্বান, শায়খ আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও সহিহ।]

ঘ. ডান কাত হয়ে শোয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইব্‌ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন:

«إذا أخذتَ مضجعك فتوضَّأ وضوءَك للصلاة ثم اضطَّجع على شقِّك الأيمن ..» رواه مسلم .

“যখন বিছানায় যাবে সালাতের ন্যায় অযু কর, অতঃপর ডান কাতে ঘুমাও”। [মুসলিম।]

ঙ. ঘুমের পূর্বে হাদিসে বর্ণিত সূরা, সূরার আয়াত ও দোয়াসমূহ আগ্রহের সাথে পাঠ করুন, আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপত্তা হাসিল হবে ও কিয়াম করতে সক্ষম হবেন। কুরআন পাঠকারীর ঘুম হালকা হয়, সে কুরআনের উপর ঘুমায় ও জাগ্রত হয়। অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে, কুরআন পাঠ করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কুরআন নিয়ে জাগ্রত হয়, কবিতা আবৃত করে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে কবিতা নিয়ে জাগ্রত হয়, গান গেয়ে ঘুমানো ব্যক্তি মুখে গান নিয়ে জাগ্রত হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন