hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল্লাহর পথে দাওয়াত

লেখকঃ ড. আ.ন.ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

৫৪
ওহীর নামে মিথ্যা বলা
মানবীয় কথাকে ওহীর নামে চালানোর প্রধান পদ্ধতি হলো আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি তা তাদের নামে বলা বা তাঁদের নামে কথিত মিথ্যা বা সন্দেহজনক কথা প্রচার করা।

দা‘ওয়াত যেহেতু ওহী নির্ভর সেহেতু দা‘ওয়াতরত ব্যক্তি চান যে, তার দা‘ওয়াতের পক্ষে ওহীর বাণী শুনাবেন। ওহীর কোনো বাণী না পেলে কেউ কেউ শয়তানের প্ররোচনায় মনগড়া বানোয়াট কথাকে আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বলে প্রচার করেন। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, মানুষদেরকে ভালো পথে ডাকা ও খারাপ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই অধিকাংশ জাল হাদীস তৈরী ও প্রচার করা হয়েছে। বিভিন্ন নেক কাজের ফযীলত ও বিভিন্ন পাপের শাস্তির বর্ণনায় অগণিত বানোয়াট কথা জালিয়াতি করে হাদীস বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে, মুহাদ্দিসগণ তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে যে সকল জালিয়াতি উদঘাটন ও চিহ্নিত করেছেন।

শয়তান এ সকল জালিয়াতকে বুঝিয়েছে যে, ভালো পথে ডাকার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীস যথেষ্ট নয়। কাজেই ভালো উদ্দেশ্যে তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা বলতে পার। বর্তমান যুগেও দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে মিথ্যা, অনির্ভরযোগ্য ও দুর্বল হাদীসের ছড়াছড়ি অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষণীয়। কোন হাদীসে কত বেশি ফযীলত, সাওয়াব বা শাস্তির কথা বলা আছে, অথবা কোন হাদীসে কত আকর্ষণীয় গল্প আছে সেটাই শুধু লক্ষ্য করেন অনেক দা‘ঈ। কোন হাদীসের সনদ কতটুকু শক্তিশালী তা বিবেচনা করতে তারা আগ্রহী নন। এরা হয়ত ভাবেন, শুধু কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীস দিয়ে বোধহয় মানুষকে আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়! আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। যুগে যুগে এ প্রবণতা পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে ধ্বংস করেছে। কুরআন ও হাদীসে অত্যন্ত কঠিনভাবে এ প্রবণতাকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا﴾ [ الانعام : ٢١ ]

“আল্লাহর নামে বা আল্লাহর সম্পর্কে যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ২১, ৯৩, ১৪৪; সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৭; সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৭; সূরা হূদ, আয়াত: ১৮; সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ১৫; সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৬৮; সূরা আস-সফ, আয়াত: ৭।]

কুরআন কারীমে একাধিক স্থানে না জেনে, আন্দাজে বা অনুমান নির্ভর করে আল্লাহ, আল্লাহর দীন, বিধান ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। সূরা আল-আ‘রাফের ৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে:

﴿قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣﴾ [ الاعراف : ٣٣ ]

“বল, আমার রব নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসঙ্গত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরীক করা যার কোনো সনদ তিনি প্রেরণ করেন নি এবং আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৩]

সূরা আল-বাকারার ১৬৮-১৬৯ আয়াতেও অনুরূপ এরশাদ করা হয়েছে।

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا تَكْذِبُوا عَلَيَّ فَانَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ»

“তোমরা আমার নামে মিথ্যা বলবে না। কারণ, যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।” [সহীহ বুখারী ও মুসলিম।]

সালামাহ ইবনল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ ما لَمْ أقُلْ فَلْيَتَبَوَّأُ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

“আমি যা বলি নি তা যে আমার নামে বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।” [সহীহ বুখারী।]

আশারায়ে মুবাশ্‌শারাসহ প্রায় ১০০জন সাহাবী এ অর্থে বিভিন্ন হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, সকল হাদীসের অর্থ একই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তার নামে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় বা আন্দাজ অনুমান করে বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এর শাস্তি জাহান্নাম।

কোনো হাদীসের নির্ভুলতার বিষয়ে সন্দেহ হলে তা হাদীস হিসেবে গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। যদি কেউ যাচাই না করে যা শুনে তাই হাদীস বলে গ্রহণ করে ও বর্ণনা করে তাহলে হাদীস যাচাইয়ে তার অবহেলার জন্য সে হাদীসের নামে মিথ্যা বলার পাপে পাপী হবে। উপরন্ত, যদি কোনো হাদীসের নির্ভুলতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি সে হাদীস বর্ণনা করে তাহলে সেও মিথ্যা হাদীস বলার পাপে পাপী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كَفَى بِالْمَرءِ اثْمًا أنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ ما سَمِعَ»

“একজন মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বর্ণনা করবে।” [সহীহ মুসলিম।]

অন্য হাদীসে তিনি বলেন,

«مَنْ حَدَّثَ عَنِّي حَدِيثًا وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أحَدُ الْكاذِبَيْنِ»

“যে ব্যক্তি আমার নামে কোনো হাদীস বলবে এবং তার মনে সন্দেহ হবে যে, হাদীসটি মিথ্যা হতে পারে, সেও একজন মিথ্যাবাদী।” [সহীহ মুসলিম।]

দা‘ওয়াতে রত মুমিনগণকে এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আমি যদি আজীবন একটি হাদীসও না বলি বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কিছুই না বলি তাহলে হয়ত আমার কোনো গোনাহ হবে না। কিন্তু আমি দা‘ওয়াতের কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো মিথ্যা বা সন্দেহজনক হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে বলে ফেলি তাহলে হয়ত আমাকে মিথ্যাবাদীরূপে কিয়ামতের দিন উঠতে হতে পারে। এর চেয়ে লাঞ্ছনা আর কি হতে পারে!

অনেক দা‘ঈ যা শুনেন বা পড়েন তাই হাদীসরূপে বলেন। আমরা দেখলাম যে, হাদীসের নামে মিথ্যাচারের জন্য এটাই যথেষ্ট। কোনো হাদীস গ্রন্থে হাদীস পড়লেও তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চত না হয়ে তা বলা উচিৎ নয়। বড়জোর বলা যায় যে, অমুক গ্রন্থে হাদীসটি আছে, এর সনদের বিষয় আমি ভালো জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বা হাদীসে আছে এ কথাটি উচ্চারণের পূর্বে মুমিনের উচিৎ শতবার চিন্তা করা।

অধিকাংশ হাদীস গ্রন্থের সংকলকগণের উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কথিত বা প্রচারিত শুদ্ধ ও অশুদ্ধ সকল হাদীস সনদ সহকারে সংকলন করা, যেন মানুষেরা সনদের আলোকে তা বিচার করে গ্রহণ করতে পারে। কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস ঢালাও সংকলন না করে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ হাদীস সংকলন করার চেষ্টা করেন। বুখারি ও মুসলিমের সকল হাদীস সহীহ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ সংকলিত অধিকাংশ হাদীস সহীহ বা হাসান। তবে এগুলোতে অনেক দুর্বল হাদীসও রয়েছে, যেগুলোর দুর্বলতার কথা সংকলকগণ নিজেরাই উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য হাদীসগ্রন্থগুলোতে সহীহ, জয়ীফ, মাউযু সকল প্রকারের হাদীস সংকলিত করা হয়েছে।

আমরা অনেক সময় ভাবি যে, অমুক বুজুর্গ হাদীসটি লিখেছেন, তিনি কি বিচার না করেই লিখেছেন?! এ চিন্তা ঠিক নয়। কোনো বুযুর্গ যদি তাঁর গ্রন্থে কোনো হাদীস লিখে হাদীসটি সহীহ বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন তাহলে তার রিফারেন্সে হাদীসটি বলা যেতে পারে। নইলে শুধুমাত্র কোনো গ্রন্থে আছে বলেই কোনো হাদীস বলবেন না। হাদীসটি কোন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত এবং হাদীসটির সনদ সহীহ বা গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চত না হওয়া পর্যন্ত কোনো হাদীস বর্ণনা না করাই মুমিনের জন্য নিরাপদ। কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ কর্মের হিসাব নিজেই দিতে হবে।

ফযীলতের ক্ষেত্রে দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করা যায় বলে প্রচলিত একটি কথা আমাদেরকে অনেক সময় বিভ্রান্ত করে। দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করা আর দ‘ঈফ হাদীসকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বলে প্রচার করা এক নয়। অনেক আলিম কতকগুলো শর্ত সাপেক্ষ ফযীলতের ক্ষেত্রে দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করা জায়েয বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:

(১) দ‘ঈফ হাদীসটি খুব বেশি দ‘ঈফ বা দুর্বল হবে না।

(২) দ‘ঈফ হাদীসটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা বলে মনে নিশ্চিত করা যাবে না। সাবধানতামূলকভাবে আমল করতে হবে। অর্থাৎ মনে করতে হবে, হাদীসটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা হতেও পারে, কাজেই পারলে আমল করি।

অন্য অনেক আলিম দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করতে নিষেধ করেছেন। যেখানে অসংখ্য সহীহ হাদীসে নির্দেশিত কর্ম করার সময়ই অধিকাংশ মুসলিম পান না, সেখানে এ সকল দ‘ঈফ হাদীস বিবেচনা করা ঠিক নয়। এছাড়া তারা বলেন যে, যারা দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করা জায়েয বলেছেন তারা শর্ত করেছেন যে, বিশ্বাস বা আকিদাগত বিষয়ে কখনই দ‘ঈফ হাদীসের ওপর নির্ভর করা যাবে না, শুধুমাত্র কর্মের ক্ষেত্রে সাবধানতামূলক কর্ম করা যাবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো বিশ্বাস ও কর্ম বিচ্ছিন্ন করা মুশকিল। কারণ, দ‘ঈফ হাদীসের ওপর আমল করছেন তিনি অন্তত বিশ্বাস করছেন যে, এই আমলের জন্য এই ধরনের সাওয়াব পাওয়া যেতে পারে। এজন্য এঁদের মতে দ‘ঈফ হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা নয় বলেই বিবেচিত, তার পিছনে শ্রম ব্যয় অর্থহীন। সর্বাবস্থায় সকল আলিম ও মুসলিম উম্মাহ একমত যে, মওযু বা বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করা বা তার ওপর আমল করা একেবারেই নিষিদ্ধ ও হারাম।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন