HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামী দাওয়াহ প্রসারে গণমাধ্যমের অবদান
লেখকঃ ড. মো: আব্দুল কাদের
গণমাধ্যম আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। ইসলামের প্রচার-প্রসারে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অত্যাধিক। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্যজনের নিকট তথ্য ও ধারণা রূপান্তর করা যায়। ফলে ইসলামী দা‘ওয়াহ কার্যক্রম আধুনিককালে গণমাধ্যম ব্যতীত সফলভাবে সম্পন্ন করা অসম্ভব। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ ধরনের মাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুরআনুল কারীম মিডিয়া ও ইনফরমেশনের গ্রন্থ। আল কুরআনে দা‘ওয়াহ এর সর্বপ্রথম যে নির্দেশনা এসেছে তাতেও মিডিয়ার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। মিডিয়া বিভিন্নভাবে কাজ করে। যেমন: নির্দেশনা দান, বক্তব্য, অংকন, ঘোষণা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রভৃতি। আর আল কুরআন হল একটি Textual Media (মূলপাঠ সংক্রান্ত মিডিয়া)। কুরআন অবতীর্ণের সূচনাকালে যে প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয়েছিল তার বিশ্লেষণ করলে মিডিয়ার সকল উপাদান পাওয়া যায়।
মিডিয়ার উপাদান পাঁচটি। যথা:
প্রেরক (Sender)
গ্রাহক (Receiver)
সংবাদ (Massage)
চ্যানেল (Channel)
উদ্দেশ্যাবলী (Objectives)
মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর প্রথম নাযিলকৃত ওহীর আয়াত হলো:
﴿ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ٱلَّذِي عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ ٤ عَلَّمَ ٱلۡإِنسَٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ ٥﴾ [ العلق : ١، ٥ ]
‘‘পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পড়ুন, আর আপনার রব মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ [.সূরা আল্-আলাক্ব : ১-৫।]
এখানে প্রেরক হলেন আল্লাহ তা‘আলা, গ্রাহক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সংবাদ হলো ইসলাম, চ্যানেল হলেন জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম, আর উদ্দেশ্য হলো মানবজাতির হিদায়াত। [.আবু সুলাইমান, আব্দুল হামীদ, আল ‘ই‘লামুল ইসলামী ওয়া আলাকাতুল ইনসানীয়্যাহ, রিয়াদ : ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ, ১৯৭৬, পৃ. ১৮১, ১৮২।]
এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে সৃষ্টি করে যুগে যুগে তাদের হেদায়াতের জন্য যেমন নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদেরকে সমকালীন শ্রেষ্ঠ মাধ্যম আয়ত্ব করে দিয়েছেন এবং তা দিয়ে জাতিকে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে সাহিত্যের উৎকর্ষ থাকায় তাঁকে যে মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়েছে তা ছিল আল্-কুরআন, যা যুগ শ্রেষ্ঠ সাহিত্য (Textual Media)।
এরূপে মূসা ‘আলাইহিস সালাম এর যুগে জাদুবিদ্যার প্রভাব থাকায় তাকে সেটার মত বস্তু দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তাঁর মুযিজা ছিল সমকালীন শ্রেষ্ঠ জাদুস্বরূপ- হাত বগল থেকে বের করলে সর্প হয়ে যাওয়া। তিনি শ্রেষ্ঠ বক্তা ছিলেন না। তাই তাকে সহযোগিতা করার জন্য গণমাধ্যমরূপে শুদ্ধভাষী ও স্পষ্টভাবে বক্তব্য প্রদানকারী হারুন ‘আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণ করেছেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ وَيَسِّرۡ لِيٓ أَمۡرِي ٢٦ وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَةٗ مِّن لِّسَانِي ٢٧ يَفۡقَهُواْ قَوۡلِي ٢٨ وَٱجۡعَل لِّي وَزِيرٗا مِّنۡ أَهۡلِي ٢٩ هَٰرُونَ أَخِي ٣٠ ٱشۡدُدۡ بِهِۦٓ أَزۡرِي ٣١ وَأَشۡرِكۡهُ فِيٓ أَمۡرِي ٣٢ ﴾ [ طه : ٢٥، ٣٢ ]
‘‘মূসা বললেন, ‘হে আমার রব! আমার বক্ষ সম্প্রসারিত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনদের মধ্য থেকে। আমার ভাই হারূনকে। তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।’’ [.সূরা ত্বা-হা : ২৫-৩২।]
পরিশেষে ফেরআউনের জাদু পরাস্ত হল এবং সকল জাদুকর ঈমান আনলেন। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ فَأَوۡجَسَ فِي نَفۡسِهِۦ خِيفَةٗ مُّوسَىٰ ٦٧ قُلۡنَا لَا تَخَفۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٦٨ وَأَلۡقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلۡقَفۡ مَا صَنَعُوٓاْۖ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيۡدُ سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ فَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سُجَّدٗا قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ هَٰرُونَ وَمُوسَىٰ ٧٠ ﴾ [ طه : ٦٦، ٧٠ ]
‘‘তারা বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর নতুবা আমরাই প্রথম নিক্ষেপকারী হই। মূসা বললেন, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ মূসার মনে হল তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। তখন মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললাম, ‘ভয় করবেন না, আপনিই উপরে থাকবেন। ‘আর আপনার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করুন, এটা তারা যা করেছে তা খেয়ে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো শুধু জাদুকরের কৌশল। আর জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হবে না।’ অতঃপর জাদুকরেরা সিজদাবনত হল, তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম’।’’ [.সূরা ত্বাহা : ৬৫-৭০।]
অনুরূপভাবে ইব্রাহিম ‘আলাইহিস সালাম প্রতিবছর একবার একটি স্থানে একত্রিত হওয়ার জন্য মানুষকে আহবান করেছেন। তিনি কাবাঘর তৈরি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এ ঘরকে মানব জাতির জন্য ইবাদতগৃহ বানিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَإِذۡ جَعَلۡنَا ٱلۡبَيۡتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمۡنٗا وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِۧمَ مُصَلّٗىۖ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]
‘‘আর স্মরণ করুন, যখন আমরা কা‘বাঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর ইব্রাহীম ও ইসমা‘ঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূ‘ ও সিজ্দাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র রাখতে।’’ [.সূরা আল্-বাকারাহ : ১২৫।]
সুলাইমান ‘আলাইহিস সালাম-কে মহান আল্লাহ অসংখ্য যোগাযোগ শক্তি দান করেছিলেন। এমনকি তিনি পাখিদের ভাষাও বুঝতে পারতেন। সাবার রাণীর অবস্থান তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيۡرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَآ أَرَى ٱلۡهُدۡهُدَ أَمۡ كَانَ مِنَ ٱلۡغَآئِبِينَ ٢٠ ﴾ [ النمل : ٢٠ ]
‘‘ আর সুলাইমান পাখিদের সন্ধান নিলেন এবং বললেন, ‘আমার কি হলো যে, আমি হুদহুদকে দেখছি না! না কি সে অনুপস্থিত?’’ [.সূরা আন্-নামল : ২০।]
দাউদ ‘আলাইহিস সালাম অত্যন্ত বাগপটু ছিলেন, তিনি সুললিত কন্ঠে আল্লাহর বাণী আবৃত্তি করতেন। পাখিরা তার আবৃত্তি উপভোগ করতে একত্রিত হতো। এ মর্মে কুরআনে এসেছে,
﴿ إِنَّا سَخَّرۡنَا ٱلۡجِبَالَ مَعَهُۥ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ وَٱلطَّيۡرَ مَحۡشُورَةٗۖ كُلّٞ لَّهُۥٓ أَوَّابٞ ١٩ وَشَدَدۡنَا مُلۡكَهُۥ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡحِكۡمَةَ وَفَصۡلَ ٱلۡخِطَابِ ٢٠ ﴾ [ص: ١٨، ٢٠ ]
‘‘নিশ্চয় আমরা অনুগত করেছিলাম পর্বতমালাকে, যেন এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং সমবেত পাখীদেরকেও; সবাই ছিল তার অভিমুখী। আর আমরা তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম হিকমত ও ফয়সালাকারী বাগ্মিতা [.সূরা ছোয়াদ : ১৮-২০।]।’’
এছাড়াও তিনি লোহার ব্যবহার সহজ করে দিয়েছিলেন যাতে তিনি তা দ্বারা সভ্যতার উন্নতি সাধন করতে পারেন।
অতএব, বলা যায় যে, সকল নবী-রাসূল সমকালীন শ্রেষ্ঠ সম্পদ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তার যথোপযুক্ত ব্যবহার করে ইসলাম প্রচারে ব্রতী হয়েছেন। সাধারণভাবে সকলে মৌখিক যোগাযোগ ও সভ্যতার উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন।
কুরআনুল কারীম মিডিয়া ও ইনফরমেশনের গ্রন্থ। আল কুরআনে দা‘ওয়াহ এর সর্বপ্রথম যে নির্দেশনা এসেছে তাতেও মিডিয়ার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। মিডিয়া বিভিন্নভাবে কাজ করে। যেমন: নির্দেশনা দান, বক্তব্য, অংকন, ঘোষণা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রভৃতি। আর আল কুরআন হল একটি Textual Media (মূলপাঠ সংক্রান্ত মিডিয়া)। কুরআন অবতীর্ণের সূচনাকালে যে প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয়েছিল তার বিশ্লেষণ করলে মিডিয়ার সকল উপাদান পাওয়া যায়।
মিডিয়ার উপাদান পাঁচটি। যথা:
প্রেরক (Sender)
গ্রাহক (Receiver)
সংবাদ (Massage)
চ্যানেল (Channel)
উদ্দেশ্যাবলী (Objectives)
মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর প্রথম নাযিলকৃত ওহীর আয়াত হলো:
﴿ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ٱلَّذِي عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ ٤ عَلَّمَ ٱلۡإِنسَٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ ٥﴾ [ العلق : ١، ٥ ]
‘‘পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পড়ুন, আর আপনার রব মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’’ [.সূরা আল্-আলাক্ব : ১-৫।]
এখানে প্রেরক হলেন আল্লাহ তা‘আলা, গ্রাহক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সংবাদ হলো ইসলাম, চ্যানেল হলেন জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম, আর উদ্দেশ্য হলো মানবজাতির হিদায়াত। [.আবু সুলাইমান, আব্দুল হামীদ, আল ‘ই‘লামুল ইসলামী ওয়া আলাকাতুল ইনসানীয়্যাহ, রিয়াদ : ওয়ার্ল্ড এসেম্বলী অব মুসলিম ইয়ুথ, ১৯৭৬, পৃ. ১৮১, ১৮২।]
এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে সৃষ্টি করে যুগে যুগে তাদের হেদায়াতের জন্য যেমন নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদেরকে সমকালীন শ্রেষ্ঠ মাধ্যম আয়ত্ব করে দিয়েছেন এবং তা দিয়ে জাতিকে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে সাহিত্যের উৎকর্ষ থাকায় তাঁকে যে মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়েছে তা ছিল আল্-কুরআন, যা যুগ শ্রেষ্ঠ সাহিত্য (Textual Media)।
এরূপে মূসা ‘আলাইহিস সালাম এর যুগে জাদুবিদ্যার প্রভাব থাকায় তাকে সেটার মত বস্তু দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তাঁর মুযিজা ছিল সমকালীন শ্রেষ্ঠ জাদুস্বরূপ- হাত বগল থেকে বের করলে সর্প হয়ে যাওয়া। তিনি শ্রেষ্ঠ বক্তা ছিলেন না। তাই তাকে সহযোগিতা করার জন্য গণমাধ্যমরূপে শুদ্ধভাষী ও স্পষ্টভাবে বক্তব্য প্রদানকারী হারুন ‘আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণ করেছেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ وَيَسِّرۡ لِيٓ أَمۡرِي ٢٦ وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَةٗ مِّن لِّسَانِي ٢٧ يَفۡقَهُواْ قَوۡلِي ٢٨ وَٱجۡعَل لِّي وَزِيرٗا مِّنۡ أَهۡلِي ٢٩ هَٰرُونَ أَخِي ٣٠ ٱشۡدُدۡ بِهِۦٓ أَزۡرِي ٣١ وَأَشۡرِكۡهُ فِيٓ أَمۡرِي ٣٢ ﴾ [ طه : ٢٥، ٣٢ ]
‘‘মূসা বললেন, ‘হে আমার রব! আমার বক্ষ সম্প্রসারিত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনদের মধ্য থেকে। আমার ভাই হারূনকে। তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।’’ [.সূরা ত্বা-হা : ২৫-৩২।]
পরিশেষে ফেরআউনের জাদু পরাস্ত হল এবং সকল জাদুকর ঈমান আনলেন। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ فَأَوۡجَسَ فِي نَفۡسِهِۦ خِيفَةٗ مُّوسَىٰ ٦٧ قُلۡنَا لَا تَخَفۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٦٨ وَأَلۡقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلۡقَفۡ مَا صَنَعُوٓاْۖ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيۡدُ سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ فَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سُجَّدٗا قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ هَٰرُونَ وَمُوسَىٰ ٧٠ ﴾ [ طه : ٦٦، ٧٠ ]
‘‘তারা বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর নতুবা আমরাই প্রথম নিক্ষেপকারী হই। মূসা বললেন, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ মূসার মনে হল তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। তখন মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললাম, ‘ভয় করবেন না, আপনিই উপরে থাকবেন। ‘আর আপনার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করুন, এটা তারা যা করেছে তা খেয়ে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো শুধু জাদুকরের কৌশল। আর জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হবে না।’ অতঃপর জাদুকরেরা সিজদাবনত হল, তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম’।’’ [.সূরা ত্বাহা : ৬৫-৭০।]
অনুরূপভাবে ইব্রাহিম ‘আলাইহিস সালাম প্রতিবছর একবার একটি স্থানে একত্রিত হওয়ার জন্য মানুষকে আহবান করেছেন। তিনি কাবাঘর তৈরি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এ ঘরকে মানব জাতির জন্য ইবাদতগৃহ বানিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَإِذۡ جَعَلۡنَا ٱلۡبَيۡتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمۡنٗا وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِۧمَ مُصَلّٗىۖ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [ البقرة : ١٢٥ ]
‘‘আর স্মরণ করুন, যখন আমরা কা‘বাঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর ইব্রাহীম ও ইসমা‘ঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুকূ‘ ও সিজ্দাকারীদের জন্য আমার ঘরকে পবিত্র রাখতে।’’ [.সূরা আল্-বাকারাহ : ১২৫।]
সুলাইমান ‘আলাইহিস সালাম-কে মহান আল্লাহ অসংখ্য যোগাযোগ শক্তি দান করেছিলেন। এমনকি তিনি পাখিদের ভাষাও বুঝতে পারতেন। সাবার রাণীর অবস্থান তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيۡرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَآ أَرَى ٱلۡهُدۡهُدَ أَمۡ كَانَ مِنَ ٱلۡغَآئِبِينَ ٢٠ ﴾ [ النمل : ٢٠ ]
‘‘ আর সুলাইমান পাখিদের সন্ধান নিলেন এবং বললেন, ‘আমার কি হলো যে, আমি হুদহুদকে দেখছি না! না কি সে অনুপস্থিত?’’ [.সূরা আন্-নামল : ২০।]
দাউদ ‘আলাইহিস সালাম অত্যন্ত বাগপটু ছিলেন, তিনি সুললিত কন্ঠে আল্লাহর বাণী আবৃত্তি করতেন। পাখিরা তার আবৃত্তি উপভোগ করতে একত্রিত হতো। এ মর্মে কুরআনে এসেছে,
﴿ إِنَّا سَخَّرۡنَا ٱلۡجِبَالَ مَعَهُۥ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ وَٱلطَّيۡرَ مَحۡشُورَةٗۖ كُلّٞ لَّهُۥٓ أَوَّابٞ ١٩ وَشَدَدۡنَا مُلۡكَهُۥ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡحِكۡمَةَ وَفَصۡلَ ٱلۡخِطَابِ ٢٠ ﴾ [ص: ١٨، ٢٠ ]
‘‘নিশ্চয় আমরা অনুগত করেছিলাম পর্বতমালাকে, যেন এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং সমবেত পাখীদেরকেও; সবাই ছিল তার অভিমুখী। আর আমরা তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম হিকমত ও ফয়সালাকারী বাগ্মিতা [.সূরা ছোয়াদ : ১৮-২০।]।’’
এছাড়াও তিনি লোহার ব্যবহার সহজ করে দিয়েছিলেন যাতে তিনি তা দ্বারা সভ্যতার উন্নতি সাধন করতে পারেন।
অতএব, বলা যায় যে, সকল নবী-রাসূল সমকালীন শ্রেষ্ঠ সম্পদ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তার যথোপযুক্ত ব্যবহার করে ইসলাম প্রচারে ব্রতী হয়েছেন। সাধারণভাবে সকলে মৌখিক যোগাযোগ ও সভ্যতার উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পথে শ্রেষ্ঠ দা‘ঈ হিসেবে এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। মানুষকে জান্নাতের সুসংবাদদান ও জাহান্নাম সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করাসহ কল্যাণের পথে আহবান করা ছিল তাঁর একমাত্র কাজ। তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ شَٰهِدٗا وَمُبَشِّرٗا وَنَذِيرٗا ٤٥ وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذۡنِهِۦ وَسِرَاجٗا مُّنِيرٗا ٤٦ ﴾ [ الاحزاب : ٤٥، ٤٦ ] [.সূরা আল্-আহযাব : ৪৫, ৪৬।]
‘‘হে নবী! অবশ্যই আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’
মূলতঃ দা‘ওয়াতের মাধ্যমেই রোম, পারস্যসহ পৃথিবীর দিগদিগন্তে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের ময়দানেও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুবাহিনীকে দীন গ্রহণের দা‘ওয়াত দিতেন। এভাবে ৮ম হিজরীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করে চিরশত্রুকেও ক্ষমা করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ইসলাম বিদ্বেষী পাশ্চাত্য পন্ডিতবৃন্দ ‘তলোয়ারের সাহায্যে দীন প্রচার হয়েছিল’ মর্মে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা কখনও বিশুদ্ধ নয়। বরং সমকালীন শ্রেষ্ঠ মিডিয়ার অনুসরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দা‘ওয়াতী কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিম্নে তাঁর দা‘ওয়াহ কর্মে গণমাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ شَٰهِدٗا وَمُبَشِّرٗا وَنَذِيرٗا ٤٥ وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذۡنِهِۦ وَسِرَاجٗا مُّنِيرٗا ٤٦ ﴾ [ الاحزاب : ٤٥، ٤٦ ] [.সূরা আল্-আহযাব : ৪৫, ৪৬।]
‘‘হে নবী! অবশ্যই আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’
মূলতঃ দা‘ওয়াতের মাধ্যমেই রোম, পারস্যসহ পৃথিবীর দিগদিগন্তে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের ময়দানেও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুবাহিনীকে দীন গ্রহণের দা‘ওয়াত দিতেন। এভাবে ৮ম হিজরীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করে চিরশত্রুকেও ক্ষমা করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ইসলাম বিদ্বেষী পাশ্চাত্য পন্ডিতবৃন্দ ‘তলোয়ারের সাহায্যে দীন প্রচার হয়েছিল’ মর্মে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা কখনও বিশুদ্ধ নয়। বরং সমকালীন শ্রেষ্ঠ মিডিয়ার অনুসরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দা‘ওয়াতী কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিম্নে তাঁর দা‘ওয়াহ কর্মে গণমাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় বক্তব্য দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। বাচনিক দিক দিয়ে তিনি এমন একজন বিতার্কিক ও বাগ্মী ছিলেন যে, তার সমকক্ষ কেউ নেই। এটা তার অন্যতম মু‘জিযা, পবিত্র কুরআন অস্বীকারকারীরা কুরআন নাযিলকৃত হওয়া বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় করলে তিনি তাদের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআন তাঁর সে চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ ﴾ [ البقرة : ٢٣ ]
‘‘আর আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা এর অনুরূপ কোন সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সকল সাক্ষী-সাহায্যকারীকে আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [.সূরা বাকারাহ : ২৩।]
অতঃপর বলেন,
﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ ﴾ [ يونس : ٣٨ ]
‘‘নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [.সূরা ইউনুস : ৩৮।]
আরো বলা হয়েছে,
﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ الاسراء : ٨٨ ]
‘‘বলুন, ‘যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না।’’ [.সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৮।]
এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, যুদ্ধের উৎসাহব্যাঞ্জক কবিতা অন্যতম ছিল। সে সময় কিছু সংখ্যক প্রসিদ্ধ কবি ও কাব্যকারেরা তার সংস্পর্শে এসে এ আবৃত্তিতে আরো অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাউসী, হাস্সান ইবন সাবিত, আব্দুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা, কা‘ব ইবন যুহাইর অন্যতম ছিলেন।
﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ ﴾ [ البقرة : ٢٣ ]
‘‘আর আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা এর অনুরূপ কোন সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সকল সাক্ষী-সাহায্যকারীকে আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [.সূরা বাকারাহ : ২৩।]
অতঃপর বলেন,
﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ ﴾ [ يونس : ٣٨ ]
‘‘নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [.সূরা ইউনুস : ৩৮।]
আরো বলা হয়েছে,
﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ الاسراء : ٨٨ ]
‘‘বলুন, ‘যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না।’’ [.সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৮।]
এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, যুদ্ধের উৎসাহব্যাঞ্জক কবিতা অন্যতম ছিল। সে সময় কিছু সংখ্যক প্রসিদ্ধ কবি ও কাব্যকারেরা তার সংস্পর্শে এসে এ আবৃত্তিতে আরো অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাউসী, হাস্সান ইবন সাবিত, আব্দুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা, কা‘ব ইবন যুহাইর অন্যতম ছিলেন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কাবাসীরা বিপদজনক কোন সংবাদ বা ঘটনা দেখলে তা সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করার জন্য সাফা পাহাড়ে আরোহন করত, তার কাপড় ছুড়ে ফেলত এবং লোকজনকে ঘটনা শুনাত বা সংবাদ সম্পর্কে অবগত করত যেন তারা সতর্ক হয়ে যায়। [.Puthige, Abdus Salam Shafi, Towards Performing Da`wah, UK: International Council for Islamic Information, 1997, P. 108.]
ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত উপস্থাপনের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পদ্ধতিটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সহীহ বুখারীতে এসেছে,
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের চূঁড়ায় আরোহনের উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং আরোহন করে উচ্চস্বরে يا صباحاه (হে প্রভাতকালের বিপদ) একথা বলে তিনি চিৎকার দিতে লাগলেন। লোকজন বলাবলি করতে লাগলো- কে চিৎকার করছে? তারা বললো- মুহাম্মাদ। অবশেষে তারা তাঁর কাছে সমবেত হলো। সকলে উপস্থিত হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে অমুক সম্প্রদায়, হে অমুক সম্প্রদায়, হে আব্দুল মানাফের বংশধর; হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর। এবার তারাও একত্রিত হলো। তখন তিনি (রাসূল সা.) বললেন, আমি যদি বলি যে, এ পাহাড়ের অপর পাশে এক বিরাট শত্রুবাহিনী রয়েছে, তারা তোমাদের উপর এখনই আক্রমন করবে। তাহলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? সমবেত সকলে জবাব দিল, আমাদের জানামতে তুমি কখনও মিথ্যা কথা বলোনি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহর আযাব আসার পূর্বে আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি, তোমরা সে আযাব থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা কর।’’ [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৪৭৭০।]
ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত উপস্থাপনের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পদ্ধতিটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সহীহ বুখারীতে এসেছে,
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের চূঁড়ায় আরোহনের উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং আরোহন করে উচ্চস্বরে يا صباحاه (হে প্রভাতকালের বিপদ) একথা বলে তিনি চিৎকার দিতে লাগলেন। লোকজন বলাবলি করতে লাগলো- কে চিৎকার করছে? তারা বললো- মুহাম্মাদ। অবশেষে তারা তাঁর কাছে সমবেত হলো। সকলে উপস্থিত হলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে অমুক সম্প্রদায়, হে অমুক সম্প্রদায়, হে আব্দুল মানাফের বংশধর; হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর। এবার তারাও একত্রিত হলো। তখন তিনি (রাসূল সা.) বললেন, আমি যদি বলি যে, এ পাহাড়ের অপর পাশে এক বিরাট শত্রুবাহিনী রয়েছে, তারা তোমাদের উপর এখনই আক্রমন করবে। তাহলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? সমবেত সকলে জবাব দিল, আমাদের জানামতে তুমি কখনও মিথ্যা কথা বলোনি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহর আযাব আসার পূর্বে আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি, তোমরা সে আযাব থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা কর।’’ [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৪৭৭০।]
দা‘ওয়াত দানকারী সর্বদা মাদ‘উ তথা দা‘ওয়াতের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য যে সব স্থানে জনগণ একত্রিত হয় এবং অধিক সংখ্যক সমাগম থাকে সেখানে গমন করেন। তৎকালীন আরবে মানুষ সাধারণত কোন মেলা অথবা বাজার কেন্দ্রিক জড়ো হতো। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে কুরাইশগণ সেসব স্থানে জনমত তৈরী করতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও মক্কার প্রসিদ্ধ মেলার স্থান ও বাজারে দীন প্রচারের জন্য গমণ করতেন। সে সময়ে ছয়টি স্থান প্রসিদ্ধ ছিল যেখানে মেলা সংগঠিত হতো এবং বাজার বসতো। [.আল-আওয়ানী, ফুয়াদ তাওফীক, আস্-সাহাফাতুল ইসলামীয়্যাহ ওয়া দাওরুহা ফীদ্-দাওয়াহ, বৈরুত: মুআস্-সাসাতুর রিসালাহ, ১৯৯৩, পৃ. ২২।] এসব বাজারে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতেন। এটা ছিল কোনো সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অথবা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে। কোথাওবা গ্রুপ ভিত্তিক আবার কোথাও জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান প্রভৃতির সাহায্যে তিনি দা‘ওয়াতী কাজ করতেন। এভাবে তাঁর দাওয়াতে অসংখ্য মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল। [.Puthige, op-cit, P. 110]
এছাড়া রাস্তা গমনাগমনের সময় তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সালাম-বিনিময় করতেন, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করতেন, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। শুধু তাই নয়, এসব কাজকে তিনি রাস্তার হক বলে চিহ্নিত করেছেন। সহীহ বুখারীতে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا، فَقَالَ إِذْ أَتَيْتُمْ إِلَّا المَجْلِسَ، فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ قَالُوا : وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيُ عَنِ المُنْكَرِ
‘‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত নিশ্চয় নবী-করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক। অতঃপর তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল আমাদের পরস্পরের মাঝে আলাপচারিতার (রাস্তা বাদে) আর কোনো স্থান নেই। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাহলে তোমরা বসবে তবে রাস্তার হক আদায় করবে। রাস্তার হক কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেন, চক্ষু সংযত রাখবে, কষ্টদায়ক জিনিস হতে দূরে থাকবে, আর সালামের জবাব দিবে, সৎকাজে আদেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৬২২৯।]।
এছাড়া রাস্তা গমনাগমনের সময় তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সালাম-বিনিময় করতেন, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করতেন, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। শুধু তাই নয়, এসব কাজকে তিনি রাস্তার হক বলে চিহ্নিত করেছেন। সহীহ বুখারীতে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا، فَقَالَ إِذْ أَتَيْتُمْ إِلَّا المَجْلِسَ، فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ قَالُوا : وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيُ عَنِ المُنْكَرِ
‘‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত নিশ্চয় নবী-করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক। অতঃপর তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল আমাদের পরস্পরের মাঝে আলাপচারিতার (রাস্তা বাদে) আর কোনো স্থান নেই। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাহলে তোমরা বসবে তবে রাস্তার হক আদায় করবে। রাস্তার হক কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেন, চক্ষু সংযত রাখবে, কষ্টদায়ক জিনিস হতে দূরে থাকবে, আর সালামের জবাব দিবে, সৎকাজে আদেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৬২২৯।]।
মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী দা‘ওয়াহ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে হাবশায় হিজরত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি নিজেও ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা হতে প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর মদীনাতে গমন করেন। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁর এ হিজরত ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নতুন এক সমাজ ও মুসলিম ভাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া মদিনার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন আরব অধিবাসীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরিশেষে দেখা গেল যে, মক্কার চেয়ে অধিক হারে মদীনাবাসী তাঁর এ আহবানে সাড়া দিয়েছিল। এমনকি, তিনি সেখানে একটি মডেল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে দা‘ওয়াহ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। মূলতঃ মদীনাতেই সর্বপ্রথম ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইসলামী দা‘ওয়াহ কার্যক্রমের অন্যতম কেন্দ্র হলো মসজিদ। মুসলিমগণের পরস্পরের মাঝে দৈনিক পাঁচবার মসজিদে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ফলে ইসলামী দা‘ওয়াহ কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হিজরতের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এটিকে শুধু নামাযের স্থান হিসেবে বেঁছে নেন নি। বরং ইসলামী রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রম তিনি এখান থেকে পরিচালনা করতেন। সাহাবীগণের দীনী যোগ্যতা বৃদ্ধি, কুরআন শিক্ষাদান, বিভিন্ন নির্দেশনামূলক বক্তব্য, সবই মসজিদে প্রদান করা হতো। সংবাদপত্র, রেডিও, ফিল্ম, লাইব্রেরী প্রভৃতি ইসলাম প্রসারে যা অগ্রগতি করে তার চেয়ে আরো অধিক অগ্রগতি দেখাতে পারে মসজিদ ভিত্তিক দা‘ওয়াহ কার্যক্রম। এটি মানুষের জন্য ইবাদত, শিক্ষা, প্রশাসন এবং রিসোর্স কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছিল, আর আজও তা করতে পারে। [.আবূ সুলাইমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৬০, ৪৬১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে দীনী শিক্ষা দেওয়ার জন্য মসজিদে নববীতে বসতেন। সাহাবীগণ নিজেদের মধ্যে এ মজলিসে বসার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। সাধারণত তিনি উসতুয়ানায়ে আবু লুবাবা তথা তাঁর হুজরা ও মসজিদের মিম্বর মধ্যবর্তী চতুর্থ খুঁটির কাছে বসতেন। [.মো. আব্দুল কাদের, আদ্-দাওয়াতুল ইসলামীয়্যা ওয়া দিরাসাতুল ইলম ফীল আহদে উমাবী: দিরাসাতুন তাহলীলিয়্যা, অপ্রকাশিত পি.এইচডি অভিসন্দর্ভ, কুষ্টিয়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ. ২০৫।]
ফজরের নামাজান্তে তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরে বসতেন। তারপর রাত্রে যেসব আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তা তেলাওয়াত করতেন, এভাবে সূর্যোদয় পর্যন্ত সাহাবীগণ বিভিন্ন বিষয় তাঁর কাছে উপস্থাপন করত।
অনেক আগন্তুক সে সময়ে তাঁর কাছে এসে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন। এ মর্মে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا القِتَالُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ فَإِنَّ أَحَدَنَا يُقَاتِلُ غَضَبًا، وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً، فَرَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ، قَالَ : وَمَا رَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ قَائِمًا، فَقَالَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ العُلْيَا، فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘‘আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট আসল এবং তাকে প্রশ্ন করল, কোনটি আল্লাহ্র রাস্তায় সংগ্রাম? অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মাথা তুলে দৃষ্টি দিলেন। তিনি বললেন, যে আল্লাহর বাণী বুলন্দ করার জন্য সংগ্রাম করে সেটি আল্লাহর রাস্তায়।’’ [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, বাবু মান সা’আলা ওয়া হুয়া ক্বয়িমা জালিসান, হাদীস নং ১২৩।]
এছাড়াও আরও একটি হাদীসে এসেছে,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَمَا هُوَ جَالِسٌ فِي المَسْجِدِ وَالنَّاسُ مَعَهُ إِذْ أَقْبَلَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ، فَأَقْبَلَ اثْنَانِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَهَبَ وَاحِدٌ، قَالَ : فَوَقَفَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا : فَرَأَى فُرْجَةً فِي الحَلْقَةِ فَجَلَسَ فِيهَا، وَأَمَّا الآخَرُ : فَجَلَسَ خَلْفَهُمْ، وَأَمَّا الثَّالِثُ : فَأَدْبَرَ ذَاهِبًا، فَلَمَّا فَرَغَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ عَنِ النَّفَرِ الثَّلاَثَةِ؟ أَمَّا أَحَدُهُمْ فَأَوَى إِلَى اللَّهِ فَآوَاهُ اللَّهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَاسْتَحْيَا فَاسْتَحْيَا اللَّهُ مِنْهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَأَعْرَضَ فَأَعْرَضَ اللَّهُ عَنْهُ
‘‘নিশ্চয় একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে সাহাবীদের সাথে নিয়ে বসে আছেন। এসময় হঠাৎ তিনজন লোক গমন করল। এদের দু’জন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে গমন করল অতঃপর সেখানে অবস্থান করল। এ দু’জনের একজন লোকজনের মধ্যে একটু ফাঁকা স্থান দেখে বসে পড়লো। অপরজন পেছনে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি পিছনে হটে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলা থেকে বিরত হলেন, তখন তিনি বলেন: আমি কি তোমাদেরকে তিনজন লোক সম্পর্কে জানিয়ে দিব। তাদের একজন আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইল, আর আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় জন অনুপ্রেরণা চাইল। আর আল্লাহ তাকে অনুপ্রেরণা দিলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল, আর আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, বাবু মান ক্ব‘আদা হাইসু ইয়ানতাহি বিহিল মাজলিস ওয়া মিন রা’য়িন, হাদীস নং ৬৬।]।
এভাবে মসজিদ দীন ও দুনিয়ার অন্যতম এক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত ছিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে দীনী শিক্ষা দেওয়ার জন্য মসজিদে নববীতে বসতেন। সাহাবীগণ নিজেদের মধ্যে এ মজলিসে বসার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। সাধারণত তিনি উসতুয়ানায়ে আবু লুবাবা তথা তাঁর হুজরা ও মসজিদের মিম্বর মধ্যবর্তী চতুর্থ খুঁটির কাছে বসতেন। [.মো. আব্দুল কাদের, আদ্-দাওয়াতুল ইসলামীয়্যা ওয়া দিরাসাতুল ইলম ফীল আহদে উমাবী: দিরাসাতুন তাহলীলিয়্যা, অপ্রকাশিত পি.এইচডি অভিসন্দর্ভ, কুষ্টিয়া, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ. ২০৫।]
ফজরের নামাজান্তে তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরে বসতেন। তারপর রাত্রে যেসব আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তা তেলাওয়াত করতেন, এভাবে সূর্যোদয় পর্যন্ত সাহাবীগণ বিভিন্ন বিষয় তাঁর কাছে উপস্থাপন করত।
অনেক আগন্তুক সে সময়ে তাঁর কাছে এসে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন। এ মর্মে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا القِتَالُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ فَإِنَّ أَحَدَنَا يُقَاتِلُ غَضَبًا، وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً، فَرَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ، قَالَ : وَمَا رَفَعَ إِلَيْهِ رَأْسَهُ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ قَائِمًا، فَقَالَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ العُلْيَا، فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘‘আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট আসল এবং তাকে প্রশ্ন করল, কোনটি আল্লাহ্র রাস্তায় সংগ্রাম? অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মাথা তুলে দৃষ্টি দিলেন। তিনি বললেন, যে আল্লাহর বাণী বুলন্দ করার জন্য সংগ্রাম করে সেটি আল্লাহর রাস্তায়।’’ [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, বাবু মান সা’আলা ওয়া হুয়া ক্বয়িমা জালিসান, হাদীস নং ১২৩।]
এছাড়াও আরও একটি হাদীসে এসেছে,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَمَا هُوَ جَالِسٌ فِي المَسْجِدِ وَالنَّاسُ مَعَهُ إِذْ أَقْبَلَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ، فَأَقْبَلَ اثْنَانِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَهَبَ وَاحِدٌ، قَالَ : فَوَقَفَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا : فَرَأَى فُرْجَةً فِي الحَلْقَةِ فَجَلَسَ فِيهَا، وَأَمَّا الآخَرُ : فَجَلَسَ خَلْفَهُمْ، وَأَمَّا الثَّالِثُ : فَأَدْبَرَ ذَاهِبًا، فَلَمَّا فَرَغَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ عَنِ النَّفَرِ الثَّلاَثَةِ؟ أَمَّا أَحَدُهُمْ فَأَوَى إِلَى اللَّهِ فَآوَاهُ اللَّهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَاسْتَحْيَا فَاسْتَحْيَا اللَّهُ مِنْهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَأَعْرَضَ فَأَعْرَضَ اللَّهُ عَنْهُ
‘‘নিশ্চয় একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে সাহাবীদের সাথে নিয়ে বসে আছেন। এসময় হঠাৎ তিনজন লোক গমন করল। এদের দু’জন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে গমন করল অতঃপর সেখানে অবস্থান করল। এ দু’জনের একজন লোকজনের মধ্যে একটু ফাঁকা স্থান দেখে বসে পড়লো। অপরজন পেছনে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি পিছনে হটে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলা থেকে বিরত হলেন, তখন তিনি বলেন: আমি কি তোমাদেরকে তিনজন লোক সম্পর্কে জানিয়ে দিব। তাদের একজন আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইল, আর আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় জন অনুপ্রেরণা চাইল। আর আল্লাহ তাকে অনুপ্রেরণা দিলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল, আর আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন [.ইমাম বুখারী, সহীহ, প্রাগুক্ত, বাবু মান ক্ব‘আদা হাইসু ইয়ানতাহি বিহিল মাজলিস ওয়া মিন রা’য়িন, হাদীস নং ৬৬।]।
এভাবে মসজিদ দীন ও দুনিয়ার অন্যতম এক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত ছিল।
ইসলামী দা‘ওয়াহ সম্প্রসারণে খুতবা একটি কার্যকরী মাধ্যম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সামনে ভাষণ দেয়ার জন্য দণ্ডায়মান হতেন। সর্ব সাধারণের নিকট ইসলামের বাণী প্রচারের এটি অন্যতম মাধ্যম। যেহেতু এ কাজটি সম্পন্ন করা অত্যাবশ্যক। সেহেতু নবী-রাসূলগণের অন্যতম দায়িত্ব ছিল দীনের প্রচার ও প্রসার। এ মর্মে কুরআনে এসেছে,
﴿ وَمَا عَلَيۡنَآ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ١٧ ﴾ [ يس : ١٧ ]
‘‘আর স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।’’ [.সূরা ইয়াসিন : ১৭।]
ইসলামের প্রাথমিক যুগে খুতবার ভূমিকা অপরিসীম। প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত শুরু হওয়ার পর থেকে নবী-করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন প্রতিনিধিদল, সৈন্যবাহিনী আগন্তুক, সকলের কাছে কল্যাণের দা‘ওয়াত, দীন গ্রহণের আহবান ও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য খুতবা দিতেন। এছাড়াও প্রত্যেক সপ্তাহে জুম‘আর দিন, দুই ঈদের দিন ও হজ্জের সময়কার তাঁর ভাষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসব খুতবায় দীনী বিষয়ের পাশাপাশি দুনিয়ায় মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ, সমস্যা সমাধান ও দীনের মূলনীতির আলোচনা স্থান পেত। [.মুহাম্মদ আল্-গাযালী, মা‘আল্লাহ (কায়রো: মাতবা‘আ হাসান, চতুর্থ সংস্করণ, ১৩৯৬ হি.) পৃ. ৩০৬।]
পরবর্তীতে আলিমগণ এসব খুতবাকে ওয়ায অর্থে বুঝিয়ে থাকেন। ইসলাম মানব জীবনের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সে লক্ষ্যে ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগসহ মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল বিষয়ের নির্দেশনা এসব খুতবার বিদ্যমান থাকে।
ড. আহমদ গালূশ বলেন, দাঈগণ আজকের দিনে ওয়ায করেন, দীনের বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দ্বারা মানুষকে সুসংবাদ দেন, চরিত্র সম্পর্কে বর্ণনা করেন অথবা ইবাদত ও শরী‘আতের মূলনীতি শিক্ষা দেন। বিচার-ফয়সালামূলক, রাজনৈতিক ও যুদ্ধ বিষয়ক বক্তব্য না দিয়ে তা আইনজীবি, নেতৃবৃন্দ ও সামরিক ব্যক্তিদের জন্য রেখে দেন। [.ড. আহমদ আহমদ গালূশ, কাওয়ায়েদুল খুতবাহ ওয়া ফিকহিল জুম‘আ ওয়াল ঈদাঈন (কায়রো: দারুল বায়ান, ১ম সংস্করণ ১৩৯৯) পৃ. ১৩।] এমনিভাবে হজ্জের সময় তিনি আবু কুবাইস পাহাড়ের উপর দাঁড়াতেন এবং ভাষণ দিতেন। এক্ষেত্রে বিদায় হজ্বের ভাষণটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
﴿ وَمَا عَلَيۡنَآ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ١٧ ﴾ [ يس : ١٧ ]
‘‘আর স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।’’ [.সূরা ইয়াসিন : ১৭।]
ইসলামের প্রাথমিক যুগে খুতবার ভূমিকা অপরিসীম। প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত শুরু হওয়ার পর থেকে নবী-করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন প্রতিনিধিদল, সৈন্যবাহিনী আগন্তুক, সকলের কাছে কল্যাণের দা‘ওয়াত, দীন গ্রহণের আহবান ও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য খুতবা দিতেন। এছাড়াও প্রত্যেক সপ্তাহে জুম‘আর দিন, দুই ঈদের দিন ও হজ্জের সময়কার তাঁর ভাষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসব খুতবায় দীনী বিষয়ের পাশাপাশি দুনিয়ায় মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ, সমস্যা সমাধান ও দীনের মূলনীতির আলোচনা স্থান পেত। [.মুহাম্মদ আল্-গাযালী, মা‘আল্লাহ (কায়রো: মাতবা‘আ হাসান, চতুর্থ সংস্করণ, ১৩৯৬ হি.) পৃ. ৩০৬।]
পরবর্তীতে আলিমগণ এসব খুতবাকে ওয়ায অর্থে বুঝিয়ে থাকেন। ইসলাম মানব জীবনের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সে লক্ষ্যে ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগসহ মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল বিষয়ের নির্দেশনা এসব খুতবার বিদ্যমান থাকে।
ড. আহমদ গালূশ বলেন, দাঈগণ আজকের দিনে ওয়ায করেন, দীনের বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দ্বারা মানুষকে সুসংবাদ দেন, চরিত্র সম্পর্কে বর্ণনা করেন অথবা ইবাদত ও শরী‘আতের মূলনীতি শিক্ষা দেন। বিচার-ফয়সালামূলক, রাজনৈতিক ও যুদ্ধ বিষয়ক বক্তব্য না দিয়ে তা আইনজীবি, নেতৃবৃন্দ ও সামরিক ব্যক্তিদের জন্য রেখে দেন। [.ড. আহমদ আহমদ গালূশ, কাওয়ায়েদুল খুতবাহ ওয়া ফিকহিল জুম‘আ ওয়াল ঈদাঈন (কায়রো: দারুল বায়ান, ১ম সংস্করণ ১৩৯৯) পৃ. ১৩।] এমনিভাবে হজ্জের সময় তিনি আবু কুবাইস পাহাড়ের উপর দাঁড়াতেন এবং ভাষণ দিতেন। এক্ষেত্রে বিদায় হজ্বের ভাষণটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের এক মহা সম্মিলন। এতে অসংখ্য লোক একটি নির্দিষ্ট সময়ে কা‘বা সম্মুখে, হারাম এলাকা ও মক্কার বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ মক্কার কা‘বা ঘরকে সম্মান করতো। ইব্রাহিম ‘আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল ‘আলাইহিস সালামের ধর্মের অনুসারী হিসেবে এ ঘরের তাওয়াফ করার জন্য জমায়েত হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী দা‘ওয়াহ প্রচারের জন্য এ সময়কে সর্বোচ্চ সুযোগ হিসেবে বেছে নিতেন। প্রত্যেক বছর তিনি আলাদাভাবে হজ্জের সময় আগত লোকদের তাঁবু পরিদর্শন করতেন। তিনি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতেন। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনা, আকাবা ও মক্কার সকল স্থানে সমাগত লোকদের মাঝে গমন করতেন। তখন অধিকাংশ সময় দেখা যেত যে, তার কোনো সাহায্যকারী নেই, না আছে তার কোনো দা‘ওয়াত গ্রহণকারী। হজ্বের মওসুমে কখনও কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকর (রা.), আলী (রা.) ও তাঁর চাচা আব্বাস (রা.) উপস্থিত থাকতেন। তারা সমাগত লোকদের নিকট পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দা‘ওয়াতের সময় তারা বিভিন্ন বংশের লোকদের সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দা‘ওয়াতের পাশাপাশি মক্কার যুবকগণ সমাগত গোত্রসমূহের নিকট গিয়ে রাসূলের কথা শুনতে বারণ করত। তারা বলতো: মুহাম্মদ আমাদের পিতৃপুরুষদের ইলাহের বিরোধিতা করছে। সে আসলে একজন গণক। তার কাজ আমাদের মধ্যে পিতা-পুত্রে বিরোধ ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা। [.ইবন্ কাছির, আল্-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪০৫ হি.) ১ম খন্ড, পৃ. ১৪৬।]
হজ্বের মৌসুমে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ আরবের বিভিন্ন গোত্রের নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছেন। যেসব গোত্রগুলো আরবের সর্বত্র বিদ্যমান ছিল। যেমন: নাজদ, হিযায, ওয়াদিউল কুরা, তায়েফ, আল-ইয়ামামাহ্, হাদরামাউত। তেমনি সিরিয়া, ইরাক ও মিসর থেকে আগত লোকদের নিকটও দা‘ওয়াত পৌঁছে যায়। যেসব গোত্রের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দা‘ওয়াত দেন সেসব গোত্র হলো:
বনু আমের, বনু খছফা, কুদ্বা‘আ, গাচ্ছান, মারাহ, হানীফা, সালিম, আব্বাস, বনু নসর প্রমুখ। এভাবে তিনি মোট ১৭ গোত্রের নিকট দা‘ওয়াত পৌঁছিয়েছেন। [.ইবন্ হিশাম, সীরাত, (কায়রো: মাকতাবাতু কুল্লিয়াতুল আযহারীয়্যাহ), তা. বি. পৃ. ৩৭।]
হজ্বের মৌসুমে দা‘ওয়াতের কারণে মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় ‘আকাবা নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাই‘আত গ্রহণ করে। প্রথম বাইয়াতের বিষয়বস্তু ছিল: ইসলামের প্রাথমিক ইবাদতসমূহ নিয়মিত আদায় করা, দ্বিতীয় বাই‘আত ছিল, যারা দীন প্রচারের পথে বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এবং সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল। [.ড. মো. আবুল কালাম পাটওয়ারী, রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি ও মাধ্যম, কুষ্টিয়া: আব্দুল্লাহ সায়েম, প্রথম প্রকাশ ২০০২, পৃ. ৩৮।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দা‘ওয়াতের পাশাপাশি মক্কার যুবকগণ সমাগত গোত্রসমূহের নিকট গিয়ে রাসূলের কথা শুনতে বারণ করত। তারা বলতো: মুহাম্মদ আমাদের পিতৃপুরুষদের ইলাহের বিরোধিতা করছে। সে আসলে একজন গণক। তার কাজ আমাদের মধ্যে পিতা-পুত্রে বিরোধ ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা। [.ইবন্ কাছির, আল্-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪০৫ হি.) ১ম খন্ড, পৃ. ১৪৬।]
হজ্বের মৌসুমে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ আরবের বিভিন্ন গোত্রের নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছেন। যেসব গোত্রগুলো আরবের সর্বত্র বিদ্যমান ছিল। যেমন: নাজদ, হিযায, ওয়াদিউল কুরা, তায়েফ, আল-ইয়ামামাহ্, হাদরামাউত। তেমনি সিরিয়া, ইরাক ও মিসর থেকে আগত লোকদের নিকটও দা‘ওয়াত পৌঁছে যায়। যেসব গোত্রের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দা‘ওয়াত দেন সেসব গোত্র হলো:
বনু আমের, বনু খছফা, কুদ্বা‘আ, গাচ্ছান, মারাহ, হানীফা, সালিম, আব্বাস, বনু নসর প্রমুখ। এভাবে তিনি মোট ১৭ গোত্রের নিকট দা‘ওয়াত পৌঁছিয়েছেন। [.ইবন্ হিশাম, সীরাত, (কায়রো: মাকতাবাতু কুল্লিয়াতুল আযহারীয়্যাহ), তা. বি. পৃ. ৩৭।]
হজ্বের মৌসুমে দা‘ওয়াতের কারণে মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় ‘আকাবা নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাই‘আত গ্রহণ করে। প্রথম বাইয়াতের বিষয়বস্তু ছিল: ইসলামের প্রাথমিক ইবাদতসমূহ নিয়মিত আদায় করা, দ্বিতীয় বাই‘আত ছিল, যারা দীন প্রচারের পথে বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এবং সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল। [.ড. মো. আবুল কালাম পাটওয়ারী, রাসূল (সা.)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি ও মাধ্যম, কুষ্টিয়া: আব্দুল্লাহ সায়েম, প্রথম প্রকাশ ২০০২, পৃ. ৩৮।]
হুদায়বিয়ার সন্ধির অব্যাহতির পরেই ইসলামের দা‘ওয়াতকে বহিঃর্বিশ্বে পৌঁছানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট দূত মারফত চিঠি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেলক্ষ্যে তিনি সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করে আটজন সাহাবীকে দূত হিসেবে প্রেরণের জন্য মনোনীত করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে সেখানকার জনসাধারণের নিকট দা‘ওয়াত না দিয়ে শুধু রাষ্ট্র প্রধানদের নিকট দা‘ওয়াত পাঠিয়েছিলেন।
এখানে তাঁর দূরদর্শীতার প্রমাণ মিলে। কেননা কোন জাতির রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে সে জাতির লোকজন তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করবে। সেজন্য তিনি প্রথমে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের প্রধানদের কাছে ইসলামের দা‘ওয়াত প্রদান করেন। নিম্নে দূতগণ ও রাষ্ট্রপ্রধানের নাম প্রদত্ত হলো:
আমর ইবন উমাইয়্যা আদ্দামেরীকে আবিসিনিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান নেগাম এর কাছে।
‘আলা ইবন আল হাদরামীকে হিজরের রাজার নিকট।
হাতিব ইবন আবি বালতা‘আকে মিশরের রাজা মুকাওকিস-এর নিকট।
দিহইয়া ইবন খলীফা আল কালবীকে বাইজান্টাইনের শাসনকর্তা হিরাক্লিয়াসের কাছে।
আব্দুলাহ ইবন হুযায়ফা আল সামীকে ইরানের রাজা খসরু পারভেজ এর নিকট।
সূজা ইবন ওহাব কে গাসসানের রাজা হারিস-এর কাছে।
‘আমর ইবন আল ‘আসকে আম্মানের শাসক জেইফার নিকট।
সালিত ইবন আমরকে ইয়ামামার প্রধান হাওজা ইবন আলী এবং ছুমামা ইবন আছাল এর নিকট পাঠান। [.ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, অনু: ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৩ সংস্করণ, ২০০৭, পৃ. ৩৩৮।]
এসব পত্রে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছিল। যেমন হিরাক্লিয়াসকে লক্ষ্য করে তিনি লিখেছেন,
بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم - من مُحَمَّد رَسُول الله إِلَى هِرقل عَظِيم الرّوم سَلام على من اتبع الْهدى - أما بعد فَإِنِّي أَدْعُوك بِدِعَايَةِ الْإِسْلَام - أسلم تسلم - أسلم يؤتك الله أجرك مرَّتَيْنِ فَإِن توليت فَإِن عَلَيْك إِثْم الأريسين { يَا أهل الْكتاب تَعَالَوْا إِلَى كلمة سواءٍ بَيْننَا وَبَيْنكُم أَلا نعْبد إِلَّا الله وَلَا نشْرك بِهِ شَيْئا } إِلَى قَوْله { اشْهَدُوا بِأَنا مُسلمُونَ }
‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’’ আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান হিরাক্লিয়াস সমীপে, হেদায়াত অনুসরণকারীদের প্রতি সালাম। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান করছি। ইসলাম গ্রহণ করুন। সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকুন। আল্লাহ্ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন। (অর্থাৎ ঈসা ‘আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমানের কারণে)। যদি আপনি এতে অসম্মত হন, তবে আপনার প্রজাদের পাপের জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। হে আহলে কিতাব! এমন সত্যের দিকে আস যার সত্যতা আমাদের ও তোমাদের নিকট সমভাবে স্বীকৃত। তা হলো: আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করবো না। তাঁর সাথে কাকেও শরীক করবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত আমাদের মধ্যে কোনো মানুষ অন্য মানুষকে প্রভূ বানিয়ে নিবে না। যদি তোমরা অমান্য কর, তবে সাক্ষী থাক আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আমরা মুসলিম।’’ [.জালালউদ্দীন আস-সূয়ূতী, আবু আলী, আদ্-দুররুল মানসূর ফিত্ তাফসীর বিল মা’সূর, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৪।]
আলোচ্য চিঠিতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে উঠে:
এক. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র বিশ্বের নবী। তাঁর রিসালাত সার্বজনীন।
দুই. ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম পত্র প্রেরণ ও দূত পাঠানো।
তিন. চিঠিতে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্রাটদের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেন এবং এর দ্বারা তারা ইসলাম গ্রহণ করলেও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব হারাবে না তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদেরকে তা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
চার. যেসব সম্রাট আহলে কিতাব তাদের সাথে ইসলামের তাওহীদের এক সুসম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আর তাওহীদে অবিশ্বাসী হলে তাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুর ইবাদত পরিত্যাগ করার আহবান জানান।
পাঁচ. পত্রের মাধ্যমে প্রজাদের দীন গ্রহণে অনগ্রসরতার অপরাধে রাজাদের অপরাধী হওয়ার বিষয়ে তাদের সচেতন করেন।
সবশেষে চিঠি প্রেরণ ইসলামী দা‘ওয়াতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। চিঠি ছাড়াও আজকাল অনেক যোগাযোগের মাধ্যম আবিস্কৃত হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী দা‘ওয়াত সম্প্রসারণ করা অতীব সহজ।
এখানে তাঁর দূরদর্শীতার প্রমাণ মিলে। কেননা কোন জাতির রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে সে জাতির লোকজন তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করবে। সেজন্য তিনি প্রথমে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের প্রধানদের কাছে ইসলামের দা‘ওয়াত প্রদান করেন। নিম্নে দূতগণ ও রাষ্ট্রপ্রধানের নাম প্রদত্ত হলো:
আমর ইবন উমাইয়্যা আদ্দামেরীকে আবিসিনিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান নেগাম এর কাছে।
‘আলা ইবন আল হাদরামীকে হিজরের রাজার নিকট।
হাতিব ইবন আবি বালতা‘আকে মিশরের রাজা মুকাওকিস-এর নিকট।
দিহইয়া ইবন খলীফা আল কালবীকে বাইজান্টাইনের শাসনকর্তা হিরাক্লিয়াসের কাছে।
আব্দুলাহ ইবন হুযায়ফা আল সামীকে ইরানের রাজা খসরু পারভেজ এর নিকট।
সূজা ইবন ওহাব কে গাসসানের রাজা হারিস-এর কাছে।
‘আমর ইবন আল ‘আসকে আম্মানের শাসক জেইফার নিকট।
সালিত ইবন আমরকে ইয়ামামার প্রধান হাওজা ইবন আলী এবং ছুমামা ইবন আছাল এর নিকট পাঠান। [.ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, অনু: ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৩ সংস্করণ, ২০০৭, পৃ. ৩৩৮।]
এসব পত্রে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছিল। যেমন হিরাক্লিয়াসকে লক্ষ্য করে তিনি লিখেছেন,
بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم - من مُحَمَّد رَسُول الله إِلَى هِرقل عَظِيم الرّوم سَلام على من اتبع الْهدى - أما بعد فَإِنِّي أَدْعُوك بِدِعَايَةِ الْإِسْلَام - أسلم تسلم - أسلم يؤتك الله أجرك مرَّتَيْنِ فَإِن توليت فَإِن عَلَيْك إِثْم الأريسين { يَا أهل الْكتاب تَعَالَوْا إِلَى كلمة سواءٍ بَيْننَا وَبَيْنكُم أَلا نعْبد إِلَّا الله وَلَا نشْرك بِهِ شَيْئا } إِلَى قَوْله { اشْهَدُوا بِأَنا مُسلمُونَ }
‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’’ আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান হিরাক্লিয়াস সমীপে, হেদায়াত অনুসরণকারীদের প্রতি সালাম। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান করছি। ইসলাম গ্রহণ করুন। সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকুন। আল্লাহ্ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন। (অর্থাৎ ঈসা ‘আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমানের কারণে)। যদি আপনি এতে অসম্মত হন, তবে আপনার প্রজাদের পাপের জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। হে আহলে কিতাব! এমন সত্যের দিকে আস যার সত্যতা আমাদের ও তোমাদের নিকট সমভাবে স্বীকৃত। তা হলো: আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করবো না। তাঁর সাথে কাকেও শরীক করবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত আমাদের মধ্যে কোনো মানুষ অন্য মানুষকে প্রভূ বানিয়ে নিবে না। যদি তোমরা অমান্য কর, তবে সাক্ষী থাক আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আমরা মুসলিম।’’ [.জালালউদ্দীন আস-সূয়ূতী, আবু আলী, আদ্-দুররুল মানসূর ফিত্ তাফসীর বিল মা’সূর, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩৪।]
আলোচ্য চিঠিতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে উঠে:
এক. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র বিশ্বের নবী। তাঁর রিসালাত সার্বজনীন।
দুই. ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম পত্র প্রেরণ ও দূত পাঠানো।
তিন. চিঠিতে তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্রাটদের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেন এবং এর দ্বারা তারা ইসলাম গ্রহণ করলেও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব হারাবে না তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদেরকে তা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
চার. যেসব সম্রাট আহলে কিতাব তাদের সাথে ইসলামের তাওহীদের এক সুসম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আর তাওহীদে অবিশ্বাসী হলে তাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুর ইবাদত পরিত্যাগ করার আহবান জানান।
পাঁচ. পত্রের মাধ্যমে প্রজাদের দীন গ্রহণে অনগ্রসরতার অপরাধে রাজাদের অপরাধী হওয়ার বিষয়ে তাদের সচেতন করেন।
সবশেষে চিঠি প্রেরণ ইসলামী দা‘ওয়াতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। চিঠি ছাড়াও আজকাল অনেক যোগাযোগের মাধ্যম আবিস্কৃত হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী দা‘ওয়াত সম্প্রসারণ করা অতীব সহজ।
ইসলামী দা‘ওয়াহ প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হলো সংলাপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদী, নাসারা ও মুশরিকদের সাথে মদিনায় বিভিন্ন সময় সংলাপে লিপ্ত হতেন। তারা তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করত। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে দা‘ওয়াত দিতেন। নিম্নে এ ধরনের সংলাপের কতিপয় দৃষ্টান্ত প্রদত্ত হলো:
মদীনায় বিভিন্ন সময়ে রাসূলুল্লাহ্ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের সাথে ধর্মীয় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। কারণ তারা তাঁর আশে-পাশেই থাকত। তারাও তাঁর সাথে ধর্মীয় বিষয় অনেক মতবিনিময় করত এবং বিভিন্ন ভ্রান্ত প্রশ্ন ও সন্দেহের অবতারণা করত। আর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ জওয়াব দিতেন। যার কিছু নমূনা নিম্নে উপস্থাপিত হলোঃ
আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম এর সাথে রাসূলুললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথোপকথনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ - رضى الله عنه - قَالَ بَلَغَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلاَمٍ مَقْدَمُ رَسُولِ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - الْمَدِينَةَ ، فَأَتَاهُ ، فَقَالَ إِنِّى سَائِلُكَ عَنْ ثَلاَثٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ نَبِىٌّ ، قَالَ مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَمِنْ أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيهِ وَمِنْ أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم خَبَّرَنِى بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيلُ . قَالَ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُودِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ . وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوتٍ . وَأَمَّا الشَّبَهُ فِى الْوَلَدِ فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَشِىَ الْمَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ ، وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا . قَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ . ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْيَهُودَ قَوْمٌ بُهُتٌ ، إِنْ عَلِمُوا بِإِسْلاَمِى قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُونِى عِنْدَكَ ، فَجَاءَتِ الْيَهُودُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ الْبَيْتَ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَىُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ . قَالُوا أَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا وَأَخْبَرُنَا وَابْنُ أَخْيَرِنَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللَّهِ . قَالُوا أَعَاذَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ . فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ . فَقَالُوا شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا . وَوَقَعُوا فِيهِ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম শুনলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করেছেন। তখন তিনি তাঁর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব যা নবী ব্যতীত কেউ উত্তর দিতে পারে না। তারপর তিনি বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? জান্নাতীরা প্রথম কোন খাবার খাবে? সন্তান কিভাবে পিতার মত এবং কিভাবে তার মাতুলদের মত হয়? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে এই মাত্র জিবরাঈল তা জানিয়েছে। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, ইয়াহূদীদের নিকট এ ফেরেশতা তাদের শত্রু। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত হচ্ছে, একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর সন্তান কারো সাদৃশ্য হওয়ার পিছনে যুক্তি হলো, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য অগ্রণী হয় সন্তান পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য অগ্রণী হয় তখন সন্তান স্ত্রীর মত হয়। তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা মিথ্যুক জাতি, যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার আগে আমার ইসলামের কথা তারা জেনে যায় তবে আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়বে। তারপর আব্দুল্লাহ ইয়াহূদীদের কাছে আসলেন এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল: আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান। আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং উত্তম ব্যক্তির সন্তান। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে? তারা বলল, আল্লাহ্ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম বের হয়ে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত হক কোন মা‘বুদ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলল, সে আমাদের সবচেয়ে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। এভাবে তারা তার উপর আক্রমনাত্মক কথা বলতে লাগল [.ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮, ৪৪৮০।]।
আব্দুল্লাহ ইবন্ সালাম এর সাথে রাসূলুললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথোপকথনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ - رضى الله عنه - قَالَ بَلَغَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلاَمٍ مَقْدَمُ رَسُولِ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - الْمَدِينَةَ ، فَأَتَاهُ ، فَقَالَ إِنِّى سَائِلُكَ عَنْ ثَلاَثٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ نَبِىٌّ ، قَالَ مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَمِنْ أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيهِ وَمِنْ أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم خَبَّرَنِى بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيلُ . قَالَ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُودِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ . وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوتٍ . وَأَمَّا الشَّبَهُ فِى الْوَلَدِ فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَشِىَ الْمَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ ، وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا . قَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ . ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْيَهُودَ قَوْمٌ بُهُتٌ ، إِنْ عَلِمُوا بِإِسْلاَمِى قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُونِى عِنْدَكَ ، فَجَاءَتِ الْيَهُودُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ الْبَيْتَ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَىُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ . قَالُوا أَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا وَأَخْبَرُنَا وَابْنُ أَخْيَرِنَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللَّهِ . قَالُوا أَعَاذَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ . فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ . فَقَالُوا شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا . وَوَقَعُوا فِيهِ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম শুনলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করেছেন। তখন তিনি তাঁর কাছে এসে বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করব যা নবী ব্যতীত কেউ উত্তর দিতে পারে না। তারপর তিনি বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত কি? জান্নাতীরা প্রথম কোন খাবার খাবে? সন্তান কিভাবে পিতার মত এবং কিভাবে তার মাতুলদের মত হয়? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে এই মাত্র জিবরাঈল তা জানিয়েছে। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, ইয়াহূদীদের নিকট এ ফেরেশতা তাদের শত্রু। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম আলামত হচ্ছে, একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর সন্তান কারো সাদৃশ্য হওয়ার পিছনে যুক্তি হলো, যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য অগ্রণী হয় সন্তান পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য অগ্রণী হয় তখন সন্তান স্ত্রীর মত হয়। তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা মিথ্যুক জাতি, যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার আগে আমার ইসলামের কথা তারা জেনে যায় তবে আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ছাড়বে। তারপর আব্দুল্লাহ ইয়াহূদীদের কাছে আসলেন এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল: আমাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান। আমাদের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি এবং উত্তম ব্যক্তির সন্তান। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে? তারা বলল, আল্লাহ্ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম বের হয়ে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত হক কোন মা‘বুদ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলল, সে আমাদের সবচেয়ে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। এভাবে তারা তার উপর আক্রমনাত্মক কথা বলতে লাগল [.ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮, ৪৪৮০।]।
নাসারাদের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের তুলনায় স্বল্প পরিামাণ ধর্মীয় বিতর্ক করেছেন। কারণ তারা মূলতঃ মদীনা থেকে দূরে অবস্থান করত। ফলে মুসলিমদের সাথে তাদের খুব কম সাক্ষাত হতো। তারপরও যখনি কোন প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করত তখনি তারা ধর্মীয় বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হত। এক্ষেত্রে হাবশা ও নাজরানের নাসারাদের দৃষ্টান্ত উল্লখ করা যেতে পারে।
সীরাতে ইবন্ হিশামে এ জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সংলাপ এসেছে। যার বিষয়বস্তু হলোঃ নাসারাগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে ঈসা ইবন্ মারইয়াম সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করল। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈসা আলাইহিসসালামের পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অপবাদ ও মিথ্যা বলে বেড়াতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ ‘তোমরা জান যে, যত সন্তানই আছে তারা তাদের পিতার সদৃশ হয়? তারা বললঃ অবশ্যই । তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, আমাদের প্রভুর চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই? অথচ ঈসার অস্তিত্ব বিলীন হবে? তখন তারা বললঃ অবশ্যই। তিনি আরো বললেনঃ আমাদের রব সবকিছুর ধারক-বাহক, তিনি সবকিছুর সংরক্ষণ করেন ও রিযক দিয়ে থাকেন? তারা বললঃ নিশ্চয়ই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে ঈসা ইবন্ মারঈয়াম কি এগুলোর কোন কিছু করতে সক্ষম? তখন তারা বললঃ না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, আসমান ও যমীনের কোন সৃষ্টিই তাঁর কাছে গোপন নেই? তারা বললঃ নিশ্চয়ই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার প্রভু ঈসাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রেহেমের মধ্যে আকৃতি দান করেছেন। তিনি আরো বললেনঃ আর আমার প্রতিপালক খানা-পিনা করেন না এবং কোন অপবিত্র কাজও ঘটান না? তখন তারা বললঃ নিশ্চয়ই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, অন্যান্য মহিলাদের মত ঈসাও মায়ের গর্ভে লালিত-পালিত হয়েছেন? তারপর অন্যান্য মহিলারা যেভাবে বাচ্ছা প্রসব করে তার মাও তাকে সেভাবে প্রসব করেছেন এবং অন্যান্য বাচ্ছাদের মত তাকেও খাওয়ানো হয়েছে। তারপর তিনি খাবারও খেয়েছেন, পানও করেছেন এবং অপবিত্রও হয়েছেন? তারা বললঃ অবশ্যই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তোমরা যা ধারনা করছ তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এরপর তাদের সবাই চুপ হয়ে গেল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম থেকে আশির অধিক আয়াত নাযিল হয়। [.ওয়াহেদী, আবুল হাসান আলী, আসবাবু নুযুলিল কুরআন, (সৌদী আরব, দারুল কিবলাহ, ১৪০৪ হি.) পৃ.৯০-৯১।]
সীরাতে ইবন্ হিশামে এ জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সংলাপ এসেছে। যার বিষয়বস্তু হলোঃ নাসারাগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে ঈসা ইবন্ মারইয়াম সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করল। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈসা আলাইহিসসালামের পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করল এবং তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অপবাদ ও মিথ্যা বলে বেড়াতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ ‘তোমরা জান যে, যত সন্তানই আছে তারা তাদের পিতার সদৃশ হয়? তারা বললঃ অবশ্যই । তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, আমাদের প্রভুর চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই? অথচ ঈসার অস্তিত্ব বিলীন হবে? তখন তারা বললঃ অবশ্যই। তিনি আরো বললেনঃ আমাদের রব সবকিছুর ধারক-বাহক, তিনি সবকিছুর সংরক্ষণ করেন ও রিযক দিয়ে থাকেন? তারা বললঃ নিশ্চয়ই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে ঈসা ইবন্ মারঈয়াম কি এগুলোর কোন কিছু করতে সক্ষম? তখন তারা বললঃ না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, আসমান ও যমীনের কোন সৃষ্টিই তাঁর কাছে গোপন নেই? তারা বললঃ নিশ্চয়ই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার প্রভু ঈসাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রেহেমের মধ্যে আকৃতি দান করেছেন। তিনি আরো বললেনঃ আর আমার প্রতিপালক খানা-পিনা করেন না এবং কোন অপবিত্র কাজও ঘটান না? তখন তারা বললঃ নিশ্চয়ই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জান না যে, অন্যান্য মহিলাদের মত ঈসাও মায়ের গর্ভে লালিত-পালিত হয়েছেন? তারপর অন্যান্য মহিলারা যেভাবে বাচ্ছা প্রসব করে তার মাও তাকে সেভাবে প্রসব করেছেন এবং অন্যান্য বাচ্ছাদের মত তাকেও খাওয়ানো হয়েছে। তারপর তিনি খাবারও খেয়েছেন, পানও করেছেন এবং অপবিত্রও হয়েছেন? তারা বললঃ অবশ্যই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তোমরা যা ধারনা করছ তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এরপর তাদের সবাই চুপ হয়ে গেল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই প্রথম থেকে আশির অধিক আয়াত নাযিল হয়। [.ওয়াহেদী, আবুল হাসান আলী, আসবাবু নুযুলিল কুরআন, (সৌদী আরব, দারুল কিবলাহ, ১৪০৪ হি.) পৃ.৯০-৯১।]
বিভিন্ন বর্ণনায় প্রায়শই দেখা যায় যে, কতিপয় মুশরিক দলবদ্ধভাবে ধর্ম সম্পর্কে বিতর্ক-জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর পাশে সমবেত হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। [.ড. আহমদ শালাবী, আল-মানাহিজুল ইসলামিয়্যা, ১ম খন্ড, (কায়রো : মাকতাবাতুন নাহদাতুল মিসরিয়্যা, ১৯৯৩), পৃ. ১৩৯।] তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাওসী ছিলেন ঘোর পৌত্তলিক। কেবল ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে তিনি মক্কায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে কৃতার্থ হন। [.ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪৭।] এভাবে অনেক পৌত্তলিক দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে রাসূলের সাথে ধর্মালোচনায় মিলিত হন।
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ إِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللَّهِ فِيهِ خَيْرٌ وَقَدْ عَلِمَتْ قُرَيْشٌ أَنَّ النَّصَارَي تَعْبُدُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا تَقُولُ فِي مُحَمَّدٍ فَقَالُوا يَا مُحَمَّدُ أَلَسْتَ تَزْعُمُ أَنَّ عِيسَى كَانَ نَبِيًّا وَعَبْدًا مِنْ عِبَادِ اللَّهِ صَالِحًا فَلَئِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَإِنَّ آلِهَتَهُمْ لَكَمَا تَقُولُونَ قَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلاً إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ * وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلاً بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ * إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلاً لِبَنِي إِسْرائيلَ﴾
‘‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিশ্চয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদতে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু কুরাইশগণ জানত যে, নাসারাগণ ঈসা আলাইহিসসালামের ইবাদত করত। সুতরাং মুহাম্মাদ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? তখন তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তুমি কি বিশ্বাস করনা যে, ঈসা নবী ছিলেন এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে একজন ছিলেন? যদি তুমি তোমার কথায় সত্য হও তাহলে তাদের ইলাহও তো তোমাদের বক্তব্যমত হওয়া উচিত। তখন কুরআনে ইরশাদ হলো, যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।’’ [.ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ১/৩১৩, ৬/৩০২। আয়াতটি সূরা আয-যুখরুফঃ ৫৭-৫৯।]
তুফাইল ইবন আমর আদ্-দাওসী ছিলেন ঘোর পৌত্তলিক। কেবল ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে তিনি মক্কায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে কৃতার্থ হন। [.ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪৭।] এভাবে অনেক পৌত্তলিক দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে রাসূলের সাথে ধর্মালোচনায় মিলিত হন।
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ إِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللَّهِ فِيهِ خَيْرٌ وَقَدْ عَلِمَتْ قُرَيْشٌ أَنَّ النَّصَارَي تَعْبُدُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا تَقُولُ فِي مُحَمَّدٍ فَقَالُوا يَا مُحَمَّدُ أَلَسْتَ تَزْعُمُ أَنَّ عِيسَى كَانَ نَبِيًّا وَعَبْدًا مِنْ عِبَادِ اللَّهِ صَالِحًا فَلَئِنْ كُنْتَ صَادِقًا فَإِنَّ آلِهَتَهُمْ لَكَمَا تَقُولُونَ قَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلاً إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ * وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلاً بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ * إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلاً لِبَنِي إِسْرائيلَ﴾
‘‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিশ্চয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদতে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু কুরাইশগণ জানত যে, নাসারাগণ ঈসা আলাইহিসসালামের ইবাদত করত। সুতরাং মুহাম্মাদ সম্পর্কে তুমি কি বলবে? তখন তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তুমি কি বিশ্বাস করনা যে, ঈসা নবী ছিলেন এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে একজন ছিলেন? যদি তুমি তোমার কথায় সত্য হও তাহলে তাদের ইলাহও তো তোমাদের বক্তব্যমত হওয়া উচিত। তখন কুরআনে ইরশাদ হলো, যখন মারইয়াম-তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন আপনার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল আরম্ভ করে দেয়, এবং বলে, ‘আমাদের উপাস্যগুলো শ্রেষ্ঠ না ‘ঈসা?’ এরা শুধু বাক-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। তিনি তো ছিলেন আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।’’ [.ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত, ১/৩১৩, ৬/৩০২। আয়াতটি সূরা আয-যুখরুফঃ ৫৭-৫৯।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন