HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

উপদেশতত্ত্ব

লেখকঃ আকীল ইবন মুহাম্মাদ আল-মাকতিরী

নসীহত-এর পরিচয়
‘লিসানুল আরব’ (২/৬১৫)-এর গ্রন্থকার বলেন, نصح শব্দের অর্থ - نصح الشيءُ : خلص (বস্তুটি বিশুদ্ধ বা নির্ভেজাল হয়েছে), والناصح : الخالص من العسل (নির্ভেজাল মধু) ইত্যাদি। কোনো বস্তু যখন বিশুদ্ধ বা নির্ভেজাল হয়, তখন বলা হয়: قد نصح (বিশুদ্ধ বা খাঁটি হয়েছে)।

النصح শব্দটি الغشّ (ভেজাল বা প্রতারণা) শব্দের বিপরীত। যা نصحه (তার উপদেশ) থেকে নির্গত। এ শব্দের আরও কয়েকটি রূপ হচ্ছে:

" نصحاً و نصيحة و نَصَاحة و نِصاحة و نِصاحية و نصوحاً "

এ শব্দটি ل (লাম) صلة -এর সাথে ব্যবহার সবচেয়ে বিশুদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا يَنفَعُكُمۡ نُصۡحِيٓ إِنۡ أَرَدتُّ أَنۡ أَنصَحَ لَكُمۡ﴾ [ هود : ٣٤ ]

“আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৩৪]

আরও বলা হয়:

نصحتُ له نصيحتي نصوحاً أي أخلصت و صدقت .

“আমি তাকে খাঁটি উপদেশ দিয়েছি।”

ইমাম মুহাম্মাদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী তার “তা‘যীমু কাদরিস্ সালাত” নামক কিতাবে (১/৬৯১) বলেন, কোনো কোনো আলিম বলেন, ‘নসীহত’ শব্দের ব্যাখ্যায় সারকথা হলো, যাকে উপদেশ দেওয়া হয়, তাকে আন্তরিকভাবে দেখাশুনা ও তত্ত্বাবধান করা। আর আল্লাহর জন্য এ নসীহত দু’ভাবে হয়ে থাকে: একটি ফরয হিসেবে, আর অপরটি নফল হিসেবে।

ফরয নসীহত হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। আর তা হলো, বিশেষ যত্নসহকারে উপদেশদাতার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি যা ফরয করেছেন, তা আদায় করা এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা।

আর নফল নসীহত মানে হলো, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাকে নিজের নফসের প্রতি ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য দেওয়া। যেমন, কোনো ব্যক্তি দু’টি বস্তুর প্রস্তাব করল: একটি তার নিজের জন্য, আর অপরটি তার রবের জন্য। এ ক্ষেত্রে সে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার রবের জন্য নির্ধারিত অংশ দিয়ে শুরু করবে এবং পরে নিজের জন্য বরাদ্ধকৃত অংশ গ্রহণ করবে।

এই হলো আল্লাহর জন্য ফরয ও নফল নসীহতের মোটামুটি ব্যাখ্যা। অনুরূপভাবে নসীহতের আরও ব্যাখ্যা রয়েছে, যার কিছু দিক আমরা আলোচনা করব ঐ ব্যক্তির বুঝার সুবিধার্থে, যে ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দ্বারা বিষয়টি বুঝতে পারে না।

আল্লাহর জন্য নসীহতের উদ্দেশ্য হলো, তিনি যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা, আর তিনি যা ফরয করেছেন এবং যা করলে তাঁর আনুগত্য করা হয়, সর্বশক্তি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা। তবে রোগ-ব্যাধি, বন্দীদশা ইত্যাদি নানাবিধ আপদ-বিপদের কারণে তাঁর ফরয দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে, উল্লিখিত প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে গেলে সে তার ওপর অর্পিত ফরয দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَّيۡسَ عَلَى ٱلضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرۡضَىٰ وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُواْ لِلَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡسِنِينَ مِن سَبِيلٖ﴾ [ التوبة : ٩١ ]

“যারা দুর্বল, যারা অসুস্থ এবং যারা অর্থ সাহায্যে অসমর্থ, তাদের কোনো অপরাধ নেই, যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি তাদের অবিমিশ্র অনুরাগ থাকে। যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো হেতু নেই।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৯১]

সুতরাং আয়াতে প্রতিবন্ধী মুমিনগণ নিজেদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার পরেও আল্লাহ তা‘আলার প্রতি তাদের আন্তরিক অনুরাগের কারণে তিনি তাদেরকে মুহসিনীন তথা সৎকর্মশীল বলে নামকরণ করেছেন।

কোনো কোনো অবস্থায় বান্দার সকল শর‘ঈ কর্ম-কাণ্ডের দায়বদ্ধতা রহিত হয়ে যায়, কিন্তু আল্লাহর প্রতি তার অনুরাগ বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ অসুস্থতার কারণে বান্দা এমন পরিস্থিতির শিকার হয় যে, তার পক্ষে জিহ্বা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কোনো কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠে না, কিন্তু তার বিবেক ও আল্লাহর প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা ও অনুরাগ বিদ্যমান থাকে, সে তার অপরাধের জন্য লজ্জিত হয় এবং নিয়ত করে যে, সে সুস্থ হলে আল্লাহ তার ওপর যা ফরয করেছেন তা বাস্তবায়ন করবে, আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবে। অনুরূপভাবে তার রবের নির্দেশক্রমে তিনি জনগণের জন্য যা বাধ্যতামূলক করেছেন, সে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নসীহত করবে।

আল্লাহর ওয়াজিব নসীহতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অপরাধীর অপরাধকে অপছন্দ করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারীর আনুগত্যকে পছন্দ করা।

আর নফল নসীহত হচ্ছে, মনে-প্রাণে প্রত্যেক প্রিয় ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর আল্লাহকে প্রাধান্য দেওয়ার মত প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে নসীহতকারী অন্যের ওপর প্রাধান্য না পায়। কারণ, যাকে উপদেশ দেওয়া হয় উপদেশদাতা যখন তার কল্যাণ কামনায় ব্যস্ত থাকে, তখন সে নিজেকে তার ওপর প্রাধান্য দেয় না। আর হাসি-আনন্দ ও ভালোবাসা যা দরকার তার জন্য সে তাই করে। সুতরাং অনুরূপ নিয়ম স্বীয় রবের প্রতি অনুরাগী ব্যক্তির বেলায়ও প্রযোজ্য। চিন্তা-গবেষণা না করেই যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নফল কাজ করল, সে তার আমল পরিমাণই আল্লাহর হিতাকাঙ্ক্ষী বলে বিবেচিত হবে, পরিপূর্ণ হিতাকাঙ্ক্ষী বলে বিবেচিত হবে না।

আল্লাহর কিতাবের জন্য নসীহত:

আল্লাহর কিতাবের জন্য নসীহত মানে হলো, স্রষ্টার বাণী হওয়ার কারণে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা এবং তার মর্ম অনুধাবনে যথার্থ আগ্রহ প্রকাশ করা। অতঃপর তার গবেষণায় বিশেষ যত্নবান হওয়া, তিলাওয়াতের সময় ওয়াকফসহ তিলাওয়াত করা, যাতে তার মাওলার পছন্দসই অর্থ অনুসন্ধান ও অনুধাবন করা যায় এবং সে অনুযায়ী আমল করা যায়। অনুরূপভাবে উপদেশদাতা আন্তরিকভাবে ঐ ব্যক্তির অসিয়তকে অনুধাবন করবে, যার কল্যাণ কামনা সে করে থাকে এবং তার পক্ষ থেকে কোনো লিখিত বক্তব্য থাকলে মনোযোগসহ তা অনুধাবন করবে, যাতে সে লিখিত বক্তব্যের মর্মানুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে। অনুরূপভাবে আল্লাহর কিতাবের হিতাকাঙ্ক্ষী মানে হলো, সে কিতাবের মর্ম উপলব্দি করবে, যাতে আল্লাহর নির্দেশসমূহ তাঁর পছন্দমত ও সন্তোষজনকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, অতঃপর সে যা অনুধাবন করেছে, তা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে প্রচার করবে, আন্তরিকতাসহকারে আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন অব্যহত রাখবে, তার চরিত্রকে নিজের চরিত্র হিসেবে এবং তার শিষ্টাচারকে নিজের শিষ্টাচাররূপে গ্রহণ করবে। [দ্র. লিসানুল আরব, ২/৬১৬।]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নসীহত:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নসীহত মানে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর আনুগত্য ও সাহায্য-সহযোগিতায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা, তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সম্পদ ব্যয় করা এবং তাঁর ভালোবাসায় প্রতিযোগিতা করা। আর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর আদর্শের অনুসন্ধানে যত্নবান হওয়া, তাঁর চরিত্র ও শিষ্টাচার নিয়ে গবেষণা করা, তাঁর আদেশ-নির্দেশের সম্মান করা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নকে কর্তব্য বলে মনে করা, তাঁর সুন্নাতের বিপরীত মতাদর্শের অনুসারীকে ঘৃণা করা ও এড়িয়ে চলা, যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে সুন্নাতকে ধ্বংস করে, তাকে অভিশাপ দেওয়া, যদিও সে নিজেকে ধার্মিক মনে করে, আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তা, বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তা, হিজরত, সাহায্য-সহযোগিতা, ইসলাম গ্রহণসহ দিবা-রাত্রির কিয়দংশের সহবত ও পোষাক-পরিচ্ছদে তাঁর অনুকরণের দ্বারা তাঁর নৈকট্য অর্জন করেছে, তাকে মহব্বত করা।

মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য নসীহত:

মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য নসীহত মানে হচ্ছে: তাদের আনুগত্য, পথনির্দেশ, ন্যায়পরায়নতা ও তাদের ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যবদ্ধতাকে মহব্বত করা। আর অপছন্দ করা তাদের ব্যাপারে উম্মতের অনৈক্যকে। আর আল্লাহর আনুগত্যের শর্তসাপেক্ষে তাদের আনুগত্যকে দীন হিসেবে গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়ার জন্য উসকানি দেয়, তাকে ঘৃণা করা এবং আল্লাহর আনুগত্য করার কারণে তাদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা।

মুসলিম ব্যক্তিবর্গের জন্য নসীহত:

মুসলিম ব্যক্তিবর্গের জন্য নসীহত বা কল্যাণ কামনা মানে, নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয়, তাদের জন্যও তাই পছন্দ করা, নিজের জন্য যা অপছন্দ করা হয়, তাদের জন্যও তা অপছন্দ করা, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের ছোটদেরকে স্নেহ করা ও বড়দেরকে সম্মান করা, তাদের দুঃখে দুঃখিত হওয়া এবং তাদের আনন্দে আনন্দিত হওয়া, যদিও এসব কারণে নসীহতকারী ব্যক্তি দুনিয়াবী ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যেমন, ব্যবসায়ীক বেচা-কেনায় মুনাফা লাভের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের দ্রব্যমূল্য হ্রাস করে দেওয়া। আর অনুরূপভাবে যে সকল বস্তু তাদেরকে কষ্ট দেয়, সামগ্রিকভাবে সেসব অসুবিধা দূর করে দেওয়া। আর মনে-প্রাণে তাদের সততা, আন্তরিকতা, অনন্ত নি‘আমত ও শত্রুর ওপর বিজয় লাভের তাওফীক কামনা করা এবং তাদের থেকে যাবতীয় কষ্টদায়ক ও অপছন্দনীয় বস্তু দূর করে দেয়। [দ্র তা‘যীমু কাদরিস্ সালাত।]

ইবন ‘আল্লান ‘দলীলুল ফালিহিন’ (২/২৫৭) গ্রন্থে বলেন, ইমাম নববী রহ.-এর সংকলিত হাদীস গ্রন্থের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল আরবা‘য়ীনা আন্ নববীয়া”-এর মধ্যে আল-ফাকিহাতি বলেন, নসীহত: এ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যা উপদেশ দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য সকল কল্যাণকে অন্তর্ভুক্ত করে। বলা হয়, এই শব্দটি সংক্ষিপ্ত ইসম ও সংক্ষিপ্ত বাক্যের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, আরবি ভাষায় এমন কোনো একক শব্দ নেই, যা নসীহত শব্দের অর্থের চেয়ে পরিপূর্ণ অর্থবোধক, যেমনিভাবে আরবগণ الفلاح (কল্যাণ) শব্দের ব্যাপারে বলেন, আরবদের ভাষায় الفلاح (কল্যাণ) শব্দের বিকল্প এমন কোনো শব্দ নেই, যা উভয় জগতের সমুদয় কল্যাণকে শামিল করে।

আর এই নসীহত শব্দটি আরবি نصح الرجل ثوبه إذا خاطه (লোকটি তার কাপড় সেলাই করল) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। উপদেশদাতা উপদিষ্ট ব্যক্তির জন্য যে কল্যাণকর চিন্তা-ভাবনা করেন, সে কাজটিকে সেলাই কর্মের মাধ্যমে ছেঁড়া কাপড় মেরামতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

কেউ কেউ বলেন, নসীহত শব্দটি আরবি نصحت العسل إذا صفيته من الشمع (আমি মোম থেকে মধু শোধন করেছি) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে প্রতারণামূলক কথা থেকে নির্ভেজাল তথা সত্য কথা বের করার কাজটিকে মধুকে শোধন করে ভেজালমুক্ত করণের সাথে তুলনা করা হয়েছে। [দ্র. জামি‘উল উসুল, ১১/৫৫৮।]

الدين النصيحة - (দীন হচ্ছে কল্যাণকামনা করা) এর মর্মার্থ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী الدين النصيحة (দীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা)-এর মানে হলো, “নসীহত হচ্ছে দীনের অন্যতম ভিত্তি ও অবকাঠামো।” যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: الحج عرفة (হজ হচ্ছে আরাফার ময়দানে অবস্থান)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা لله (আল্লাহর জন্য)-এর ব্যাখ্যায় আল-খাত্তাবী রহ. বলেন, النصيحة لله (আল্লাহর জন্য নসীহত) মানে- আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা, তার সাথে কাউকে শরিক না করা, তাঁর গুণাবলী ও নামের ক্ষেত্রে নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারা পরিহার করা, তাঁকে পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা, যাবতীয় অপূর্ণতা থেকে তাঁকে পবিত্র রাখা, তাঁর আনুগত্য কায়েম করা, তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা, তাঁর জন্যই কাউকে ভালোবাসা, তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা, যে তাঁর আনুগত্য করে, তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা, যে তাঁর অবাধ্য হয়, তার সাথে শত্রুতা করা, যে তাঁকে অবিশ্বাস তথা অস্বীকর করে, তার সাথে জিহাদ করা, তাঁর নি‘আমতের স্বীকৃতি দেওয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সকল কাজে ইখলাস তথা নিষ্ঠার পরিচয় দেওয়া, উল্লিখিত গুণাবলীর দিকে জনগণকে দাওয়াত দেওয়া এবং এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করা, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের মধ্যে যাকে সম্ভব এসব বিষয় শিক্ষা দেওয়া।

আল-খাত্তাবী রহ. বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব গুণাবলী বান্দার নিজের কল্যাণের দিকেই প্রত্যাবর্তিত। কারণ, আল্লাহর জন্য উপদেষ্টা বা হিতাকাঙ্ক্ষীর হিতোপদেশের দরকার হয় না, তিনি মুখাপেক্ষীহীন সত্তা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ولكتابه (তাঁর কিতাবের জন্য)-এর ব্যাখ্যায় আলিমগণ বলেন, ‘কিতাবের জন্য নসীহত মানে- এই প্রত্যয় থাকা যে, এটা আল্লাহর কিতাব, অবতীর্ণ এই কিতাবের বাণী কোনো সৃষ্টির কথার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় এবং কারো পক্ষে এরূপ কথা তৈরি করাও সম্ভব নয়। অতঃপর আল্লাহর কিতাবকে সম্মান করা, হক আদায় করে তাকে সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে প্রতিটি হরফ মাখরাজসহ আদায় করা, বিকৃতিকারীদের অপব্যাখ্যা থেকে তাকে হেফাযত করা, এর মধ্যে যা কিছু আছে, তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা, তার বিধানসমূহ বাস্তবায়ন করা, তার বিজ্ঞান ও উপমা সংক্রান্ত আয়াতসমূহ অনুধাবন করা, তার উপদেশসমূহের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া, তার বিস্ময়কর বিষয়সমূহ নিয়ে চিন্ত-গবেষণা করা, তার মুহকাম (সুস্পষ্ট) আয়াতসমূহের ওপর আমল করা ও মুতাশাবেহ (দ্ব্যর্থবোধক) আয়াতসমূহ মেনে নেয়া, তার ‘আম (ব্যাপক অর্থবোধক), খাস (নির্দিষ্ট অর্থবোধক), নাসিখ (রহিতকারী) ও মানসুখ (রহিত) আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করা, তার জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রচার করা এবং তার দিকে ও তার উপদেশমালার দিকে দাওয়াত দেওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ولرسوله (তাঁর রাসূলের জন্য)-এর ব্যাখ্যা: ‘রাসূলের জন্য নসীহত’ মানে- রিসালাতের ব্যাপারে তাঁকে সত্যায়িত করা ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর আদেশ ও নিষেধসমূহ মেনে চলা, তাঁকে জীবিত ও মৃত অবস্থায় সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাঁর সাথে যে ব্যক্তি শত্রুতা করে, তার সাথে শত্রুতা করা, তাঁকে যে ব্যক্তি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা, তাঁর হকসমূহকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা, তাঁর সুন্নাত ও জীবনাদর্শকে প্রাণবন্ত করা, তাঁর দাওয়াত ও সুন্নাতকে প্রচার ও প্রসার করা, তাঁর সুন্নাতের জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা উপকার হাসিল করা, তাঁর অর্থসমূহ উপলব্দি করা ও তার দিকে মানুষকে আহ্বান করা, তার (সুন্নাতের) শিক্ষা প্রদান ও সম্মান দানে বিনম্র হওয়া, আদবের সাথে তা পাঠ করা, না জেনে তার ব্যাপারে কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকা এবং এর সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তার অনুসারীদেরকে সম্মান করা। তাছাড়া তাঁর (রাসূলের) চরিত্রের অনুকরণে নিজের চরিত্র গঠন করা, তাঁর আদব তথা শিষ্টাচারকে নিজের জন্য আদব হিসেবে গ্রহণ করা, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদেরকে মহব্বত করা এবং বিদ‘আতপন্থী ও যে কোনো সাহাবীর সমালোচকদেরকে ঘৃণা করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ولأئمة المسلمين (মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য)-এর ব্যাখ্যা: ‘মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য নসীহত’ মানে (হকের ব্যাপারে তাদেরকে সাহায্য) সহযোগিতা করা, তাদের ও তাদের নির্দেশের আনুগত্য করা, বিনয় ও নম্রতার ব্যাপারে সাবধান ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া, তারা কোনো বিষয় ভুলে গেলে এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের নিকট না পৌঁছলে, তা তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া। আর তাদের সাথে বিদ্রোহ করার চিন্তা পরিহার করা, তাদের অনুসরণের জন্য সকল মুসলিমের হৃদয়কে ঐক্যবদ্ধ করা, তাদের মিথ্যা প্রশংসা না করা এবং তাদের জন্য কল্যাণের দো‘আ করা। মুসলিম নেতৃবৃন্দ বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়, তারা হলেন মুসলিম জনগোষ্ঠীর খলিফা ও অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্বে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ। আর এটাই প্রসিদ্ধ কথা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা وعامتهم (সর্বসাধারণের জন্য)-এর ব্যাখ্যা: ‘সর্বসাধারণের জন্য নসীহত’ মানে- তাদের কল্যাণ কামনা করা, তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর পথ দেখানো এবং এ জন্য তাদেরকে কথা ও কাজ দ্বারা সহযোগিতা করা, তাদের গোপনীয় বিষয় গোপন রাখা, তাদেরকে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা, তাদের জন্য ক্ষতিকারক বস্তু দূর করা ও উপকারী বস্তু আমদানি করা, তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজ থেকে আন্তরিকতার সাথে নিষেধ করা, নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয়, তাদের জন্য তাই পছন্দ করা, কথা ও কাজ দ্বারা তার জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা এবং আমরা যত প্রকারের নসীহত বা উপদেশের উল্লেখ করেছি, সেগুলোর দ্বারা তাদেরকে চরিত্র গঠনে উৎসাহিত করা। (‘দলীলুল ফালিহিন’-থেকে)

ফায়দা: ইবন বাত্তাল বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, নসীহত হলো দীন ও ইসলামের আরেক নাম। দীন শব্দটি যেমন কথার বেলায় প্রজোয্য, তেমনি কাজের বেলায়ও প্রজোয্য। নসীহত ফরয, কোনো ব্যক্তি এ কর্তব্য কাজ পালন করলে বাকিরা দায়মুক্ত হয়ে যাবে। প্রয়োজনের আলোকে যখন উপদেষ্টা জানতে পারবে যে, তার উপদেশ গ্রহণ করা হবে, তার আদেশের আনুগত্য করা হবে এবং সে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত মনে করবে, তখন তার জন্য অসিয়ত করা আবশ্যক হবে। আর যখন সে দুঃখ-কষ্টের আশঙ্কা করবে, সে নসীহত করার দায়িত্ব থেকে অবকাশ পাবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন