hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামি অর্থনীতি শান্তি ও সমৃদ্ধির অব্যর্থ ব্যবস্থা

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব

১৪
তৃতীয়ত : ব্যক্তির প্রয়োজন পুরণ নিশ্চিৎ করা :
মানুষের কিছু মৌলিক বা অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন রয়েছে যা ব্যতীত তার জীবন ধারণ সম্ভব নয় যেমন- খাদ্য-পানীয়, পোশাক ও বাসস্থান এবং এসবের আনুষঙ্গিক জিনিসগুলোর প্রয়োজন। প্রতিটা মানুষের সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য এসবের ন্যূনতম সরবরাহ জরুরি। ইসলামি অর্থনীতি এ দিকটির প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। নিশ্চিত করেছে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নির্ধারণ করেছে ধারাবাহিক বিভিন্ন উপায় ও পর্যায়। যদি কোনো পর্যায় তার জন্য ফলপ্রসূ না হয়; তাহলে তার জন্য একেরপর এক পরবর্তী পর্যায় অবলম্বন করা হবে- যতক্ষণ না তার মৌলিক প্রয়োজন পূরণ নিশ্চিত হয়। সমাজের প্রতিটি সদস্য লাভ করতে সক্ষম হয় তার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বিষয়। পর্যায়গুলো হলো-

এক. প্রতিটি মানুষ নিজে নিজের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় চেষ্টা ও শ্রম নিয়োগে আদিষ্ট। এ জন্যই ইসলাম কর্ম ও উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছে। প্রশংসা করেছে শ্রম ও চেষ্টা নিয়োগকারী ব্যক্তির। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- অতপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর। [. জুমুআ’ : ১০] হাদিস শরিফে এসেছে- মানুষ তার হাতের উপার্জন থেকে উত্তম কিছু কামাই করে না। [. ইবনে মাজা : ২১২৯]

দুই. রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি সক্ষম ব্যক্তির উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এমনকি তাদের কর্ম সৃষ্টির জন্য যদি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয়, তাই করতে হবে। প্রখ্যাত ফিকাহ বিশারদ ইমাম আবু ইউসুফ র. অভাবী লোককে বাইতুল মাল থেকে কর্জ দেয়ার বৈধতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। ফকিহ ইবনে আবিদিন র. বলেন, ‘আবু ইউসুফ থেকে বর্ণিত যে, অক্ষম ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হবে। অর্থাৎ দারিদ্র হেতু নিজ খারাজি ভূমিতে চাষাবাদ করতে অক্ষম ব্যক্তিকে বাইতুল মাল থেকে কর্জ দেয়া হবে যা দিয়ে সে ভূমিতে চাষাবাদ করে উপকৃত হতে পারে। [. রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৬৪]

আবু ইউসুফ র. এর এ কথার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, খারাজি জমির মালিক নয় এমন লোককেও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ দেয়া যাবে। যাতে সে হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে এ থেকে সাহায্য নিতে পারে।

তিন. কেউ যদি নিজের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম না হয় তার অক্ষমতা, বার্ধক্য, অসুস্থতা বা কাজের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মপদ খালি না থাকার কারণে, তাহলে পরিবারের সদস্যদের ওপর ওয়াজিব তার প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করা।

চার. দরিদ্র অক্ষম ব্যক্তি যদি তার পরিবারে এমন লোক না পায় যে তাকে সাহায্য করবে- বাস্তবে এমন কেউ নাই সেহেতু কিংবা আছে তবে সেও দরিদ্র, তাহলে জাকাতের টাকা থেকে তাকে এতটুকু দেয়া ওয়াজিব যা দিয়ে সে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে। কারণ জাকাত তো দরিদ্রদের অধিকার যা ধনীদের কাছে রয়েছে। আর জাকাত বাবদ প্রাপ্ত সম্পদ অভাবী ও দরিদ্রদের সামাজিক গ্যারান্টির অন্যতম।

পাঁচ. যদি জাকাতের অর্থ এ কাজের জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে বাইতুল মালের অন্যান্য আয় থেকে দরিদ্র-অভাবীদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো হবে।

ছয়. বাইতুল মালে যদি এতটুকু অর্থ না থাকে যা দিয়ে অভাবীদের প্রয়োজন মেটানো যায়, তাহলে বিত্তশালীদের ওপর তাদের মৌলিক প্রয়োজন পুরা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ফকিহ ইবনে হাযম র. বলেন, ‘এবং প্রতিটি শহরের সম্পদশালীদের ওপর নিজ নিজ শহরের অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনে এগিয়ে আসা ফরজ। যদি তারা এ গুরুদায়িত্ব পালনে গাফিলতি করে তাহলে শাসক তাদেরকে চাপ দিবে। সেহেতু জাকাতের অর্থ পর্যাপ্ত না হলে তাদের অন্তত এতটুকু সম্পদ দিতে হবে যা দিয়ে খেয়ে জীবন বাঁচাতে পারে, এতটুকু পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে যা দিয়ে শীত এবং লজ্জা নিবারণ করতে পারে। এবং মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যা তাকে রক্ষা করবে শীত- গরম ও বৃষ্টি এবং পথচারীদের দৃষ্টি থেকে। [.মুহালা : ২/১৫৬]

‘ধনীদের সম্পদে যে জাকাতই একমাত্র গরিবদের হক নয়’ ইবনে হাযমের এ উক্তিকে সপ্রমাণ করে এমন বর্ণনা যে, উম্মুল মুমেনিন আয়েশা সিদ্দিকা রা. ও ইবনে উমর রা. ছাড়াও বেশ ক’জন সম্মানীত সাহাবি বলেছেন, ‘ধনীদের সম্পদে জাকাত ছাড়াও হক রয়েছে গরিবদের।’ [. মুহালা : ২৫৮]

কুরআনের আয়াত ‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে । [. বাকারা : ১৭৭]- এর আলোচনায় গিয়ে ইমাম কুরতুবি এবং ইমাম রাযি বলেন, এ আয়াতে সম্পদ ব্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য, জাকাত ভিন্ন অন্য মাল। আর তা কিন্তু ওয়াজিব দানের অন্তর্ভূক্ত; নফল দানের মধ্য থেকে নয়। ইমাম রাযি এ ধরনের ওয়াজিব দানের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। যেমন- অসহায় লোককে অন্ন দান। এরপর তিনি বলেছেন, ‘আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, জাকাত আদায়ের পরও যখন মুসলমানদের অতিরিক্ত প্রয়োজন থাকবে, তো সেখানে সম্পদ ব্যয় করা ধনীদের জন্য ওয়াজিব। ইমাম মালেক র. বলেন, মুসলমানদের ওপর যুদ্ধবন্দিদের মুক্তিপণ দেয়া ওয়াজিব যদিও এর জন্য সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হোক না কেন। এটি একটি সর্বসম্মত মাসআলা। [. কুরতুবি : ২৪১, তাফসিরে : ৫/২৪]

এরই ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, যদি বাইতুল মালে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকে তাহলে মুসলিম শাসক বিত্তশালীদের সম্পদে ইনসাফপূর্ণভাবে করারোপ করে দরিদ্রদের অবশ্য প্রয়োজনীয় মাল সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে পারেন। যাতে অভাবীদের প্রয়োজন মেটানো যায়। এ দিয়ে রাষ্ট্র সেসব দায়িত্ব পালন করতে পারে যা তার জনগণের করণীয় এবং সে দায়িত্ব যা তাকে পালন করতে হয় জনগণের পক্ষ থেকে। যেমন- সীমান্ত সুরক্ষা এবং ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র তৈরি ইত্যাদি। আমাদের এ দাবিকে দৃঢ়তা দান করে নবীজির সা. বিখ্যাত সেই হাদিস- ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সে দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।’ [. মুসলিম : ৩৪০৮] ইমাম নববি র. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আলেমগণ বলেছেন, রাখালের দায়িত্ব হচ্ছে, বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার পরিচালনাধীন প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণ করা। সেসবের মঙ্গল ও কল্যাণ সাধনে বদ্ধপরিকর থাকা। এ থেকেই প্রতীয়মান যে, কারো অধীনে বা তত্ত্বাবধানে কেউ থাকলে তার সঙ্গে ইনসাফ রক্ষা করা এবং তার দীন-দুনিয়ার কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট থাকার ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। [. লু’লু’ ওয়াল মারজান : ২/২৮৪]

বস্ত্তত প্রতিটি মুসলমানের কাছে প্রত্যাশা হলো, বাইতুল মালে পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকলে তারা দরিদ্র-অভাবী এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতায় অর্থ ব্যয়ে প্রতিযোগিতা করবে। যা তাদের অস্তিত্বের জন্য অত্যাবশ্যক। কেননা পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় আল্লাহর পথে ব্যয়কারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। নিন্দা করা হয়েছে কৃপণ ও কৃপণতার। সতর্ক করা হয়েছে কৃপণতার মতো ঘৃণ্য স্বভাবের। আর এ সবই মুসলমানকে উদ্বুদ্ধ করে দান ও দানশীলতার প্রতি।

অনুরূপ সুন্নাতে নাববিয়াতেও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে ব্যাপকভাবে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এর নির্দেশ-উপদেশ দেয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে। সেসবের মধ্য থেকে এখানে শুধু আবু সাইদ খুদরি রা. বর্ণিত হাদিসটি উলেখই যথেষ্ট মনে করি। তিনি বলেন, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন- ‘যার কাছে অতিরিক্ত একটি বাহন আছে সে যেন তা দিয়ে দেয় তাকে যার বাহন নাই। যার কাছে সফরের পাথেয় রয়েছে সে যেন তা দিয়ে দেয় যার পাথেয় নাই তাকে।’ আবু সাইদ খুদরি বলেন, এভাবে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম একটার পর একটা সম্পদের নাম উলেখ করতে থাকলেন। এমনকি আমরা দৃঢ়ভাবে বুঝে নিলাম যে অতিরিক্ত কিছুতেই আমাদের হক নাই। [. মুহালা ৬/১৫৫-১৫৭, মুসলিম : ৩২৫৮] সুতরাং ধনীরা যদি নিজ উদ্যোগেই তাদের কাছে প্রত্যাশিত দান না করে তাহলে শাসকের জন্য জায়িজ আছে এ পরিমাণ সম্পদ আহরণে ন্যায়ানুগ ট্যাক্স আরোপ করা যা দিয়ে অভাবীদের অভাবও মোচন হয় আবার রাষ্ট্রের প্রয়োজনসমূহও পুরণ করা যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন