hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নুসাইরিয়া সম্প্রদায়

লেখকঃ ড. গালেব ইব্‌ন আলি আওয়াজি

১৫
অনুবাদকের পরিশিষ্ট
হামার গণহত্যা

২-ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই. হামা শহরে নুসাইরি [আলাবি] বংশের প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক।

বিভিন্ন দেশের সংবাদ পত্রে প্রকাশ, সিরিয়ার আসাদ সরকার বিদ্রোহ ও আন্দোলন দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করে। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।

গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বর্ণনা:

পরিকল্পনাকারী: প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদ নুসাইরি, আলাবি।

বাস্তবায়নকারী: কমান্ডার রিফাত আসাদ, সিরিয়ান সেনাবাহিনী, সিরিয়ান এরাবিক এয়ার ফোর্স, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, সাধারণ গোয়েন্দা বিভাগ, বুদ্ধিজীবী, সরকার দলীয় সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ বাহিনী এবং সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সবক’টি ইউনিটসহ পুরো সরকার যন্ত্র হামাবাসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র: সাজোয়াযান, ট্যাংক, কামান, রাইফেল, বিমান ও বুলডোজার।

ভিকটিম: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী, তথা ইখওয়ানুল মুসলিমিন।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে মৃত ও ধ্বংসের পরিমাণ:

ব্রিটিশ সাংবাদিক ‘রবার্ট ফিসক’ বলেন, যিনি হামার গণহত্যার কয়েকদিন পরে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ১০-হাজার।

দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ২০-হাজার।

কমান্ডার রিফাত আসাদ গর্ব করে বলেছে: আমরা সেখানে ৩৮-হাজার লোক হত্যা করেছি।

‘সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা’ বলেছে: মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০-থেকে ৪০-হাজার। তাদের সবাই শহরবাসী। তাদের অধিকাংশকে যৌথভাবে ব্রাশ ফায়ার করে গণকবর দেয়া হয়।

কতক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেখানের মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা খুব কঠিন, কারণ ঘটনা শুরু থেকে ১০-১৫ হাজার শহরবাসী গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়, এখনো পর্যন্ত যাদের সম্পর্কে জানা যায়নি, তারা সেনাবাহিনীর কারাগারে জীবিত, না মৃত।

মৃত ও ক্ষতির ব্যাপ্তি:

মৃতের সংখ্যা ১০-৪০ হাজার, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছে।

অধিকন্তু ১৫-হাজার গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছে, যাদের সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

শহরের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রায় ১-লাখ লোক শহর ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়।

হামার কয়েকটি এলাকা ধ্বংসের বেশী সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী এ শহরের মধ্যাঞ্চল।

সেনাবাহিনীর দমন পীড়নে ৮৮-টি মসজিদ, ৩-টি গির্জা এবং স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক অনেক এলাকা ধ্বংস হয়।

হামার স্মৃতিচারণ:

“হামা”র গণহত্যা তার অধিবাসীদের এখনো কম্পিত করে, দীর্ঘ ৩০-বছর পর ২০১২ই. সনেও তারা সে বিভীষিকা ভুলতে পারে নি। সেই থেকে তারা সর্বদা সরকারের ভয়ে ভীত ও শঙ্কিত জীবন পার করছে। সেখানে এমন কোনো পরিবার নেই, যার কোনো সদস্য হত্যা অথবা গুম অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় নি।

এ গণহত্যার পরও সিরিয়ার সরকার সে এলাকাকে পরিত্যক্ত ও অবহেলিত রেখে দিয়েছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এ ঘটনার বিভীষিকা এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, হামার অধিবাসীরা যখন কোনো ঘটনা বর্ণনা করে, তখন বলে এটা গণহত্যার পরের ঘটনা বা তার কিছু পূর্বের ঘটনা, জন্ম অথবা মৃত্যু; বিয়ে অথবা কোনো ঘটনায় তারা গণহত্যার কথা স্মরণ করে। সেই থেকে ২০১১ই. পর্যন্ত সিরিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে কোন প্রতিবাদ সভা হতে দেখা যায় নি।

ঘটনার সূত্রপাত ও সমাপ্তি:

সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার হাফেয আল-আসাদের বংশ সিরিয়ায় সংখ্যালঘু, প্রায় ১২% পার্সেন্ট। ফ্রান্সের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অস্ত্রের মুখে তারা সিরিয়ার ক্ষমতায় আসীন হয়। সেই থেকে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন করে আসছে তারা। ১৯৭১ই. হাফেয আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর তার মাত্রা বেড়ে যায়। সিরিয়ায় শক্তিশালী মুসলিম সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তার সাথে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, কাউকে আজীবন কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে হামাতে এক বিদ্রোহ ও আন্দোলন দেখা দেয়, যার সিংহভাগ নেতৃত্বে ছিল ইখওয়ানুল মুসলিমিন। ২-ফ্রেব্রুয়ারি ঘটনার আগে তারা ‘হামা’ শহর তিনদিন নিজেদের দখলে রেখেছিল। তৃতীয় দিন পর ২-ফেব্রুয়ারি নুসাইরি সরকারের খড়গ নেমে পড়ে তাদের উপর, যার বর্ণনা উপরে দেয়া হল। সবাই প্রতিক্ষায় ছিল কিভাবে ও কখন শেষ হবে এ হত্যাযজ্ঞ! অবশেষে সরকারী বাহিনী ঘোষণা করল, জীবিতরা সবাই প্রেসিডেন্ট আসাদের ছবিসহ ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হউক ও সরকারের পক্ষে শ্লোগান দিক। সেখানে সরকারী গণমাধ্যম ও টিভি ক্যামেরাগুলো তাদের ছবি তুলে ও প্রকাশ করে যে, হামায় সরকার বিরোধী কেউ নেই। এভাবেই হামার গণহত্যার সমাপ্তি হয়। [সূত্র উন্মুক্ত বিশ্বকোষ ইউকিপিডিয়া ও ‘বিবিসি’র সংবাদ।]

ছয়দিন ব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধ

১৯৬৭ই. সনে ইসরাইল মিসরে হামলা করে সিনা উপত্যকা দখল করে নেয়, ফলে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ আরম্ভ হয়, যা ছয়দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। সিরিয়া ও জর্ডানের চুক্তি ছিল, ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে জর্ডান ও সিরিয়া ইসরাইলের উপর একযোগে আক্রমণ করবে। নির্দিষ্ট সময়ে জর্ডান হামলা করেছে ঠিক, কিন্তু সিরিয়ার সেনাপ্রধান ফিলিস্তিনিদের সাহায্য থেকে বিরত থাকে। ফলশ্রুতি মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার পরাজয় ঘটে। এ যুদ্ধে ইসরাইল মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিশরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, বায়তুল মোকাদ্দাসের পূর্বাংশ এবং গাজা উপত্যকা দখল করে নেয়। তখন সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশশার এর পিতা হাফেয আল-আসাদ। হাফেয আল-আসাদ তার বাহিনীকে হামলায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখে এবং সিরিয়ার উঁচু ভূখণ্ড গোলান মালভূমি, যা যুদ্ধের কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ, ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে সিরিয়ার সৈন্য বাহিনী সরিয়ে আনে, অতঃপর সংবাদপত্রে মিথ্যা প্রচার করে যে, ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে, অথচ তখনো ইসরাইল বাহিনী সেখানে পৌঁছায় নি। তখন সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদিদ তার ভূমিকার সমালোচনা করেন। এভাবে হাফেয আল-আসাদ জর্ডানের সাথে গাদ্দারি করে ইসরাইলের হাতে নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমি তুলে দেয়। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদিদ ও সেনা বাহিনী প্রধান হাফেয আল-আসাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। সালাহ জাদিদ জরুরি বৈঠক ডেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু হাফেজ আল-আসাদ সেনাবাহিনীতে থাকা তার ঘনিষ্ঠ সাথীদের নিয়ে নুরুদ্দিন আতাসি ও সালাহ জাদিদকে [প্রেসিডেন্ট “নুরুদ্দিন আতাসি” ও প্রধান মন্ত্রী “সালাহ জাদিদ” উভয়ের মেয়াদকাল ২৫ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬ই.-- ১৮নবেম্বর, ১৯৭০ই.।] ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে জেলে বন্দি করে। উল্লেখ্য সালাহ জাদিদ-ই তাকে বন্ধুত্বের খাতিরে সচিবালয় থেকে সেনাবাহিনীতে নিয়ে আসেন। এখানে নুসাইরি বংশদ্ভুদ হাফেজ আল-আসাদ বংশের মুসলিম বিদ্বেষ ও গাদ্দারি স্পষ্ট হয়। [সূত্র উন্মুক্ত বিশ্বকোষ ইউকিপিডিয়া।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন