hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নুসাইরিয়া সম্প্রদায়

লেখকঃ ড. গালেব ইব্‌ন আলি আওয়াজি

সপ্তম অধ্যায়: নুসাইরিদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা:
নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের জাহেরি ও বাতেনি উভয় প্রকার আকিদা রয়েছে, তবে বাতেনি আকিদার সংখ্যাই বেশী। তাদের কতিপয় মৌলিক আকিদা এখানে উল্লেখ করা হল:

প্রথম আকিদা: আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর প্রভুত্বে বিশ্বাস করা। নুসাইরিরা সম্প্রদায় আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর প্রভুত্বে বিশ্বাস করে। তাদের মাযহাবে এটা আশ্চর্য কিংবা নতুন কোনো বিষয় নয়, কারণ তারা আসলে ছিল মূর্তিপূজক, গাভীর ইবাদতকারী ও লিঙের উপাসনাকারী। তারা যখন পার্থিব স্বার্থে ইসলামে প্রবেশ করে, বরং সত্যিকার অর্থে বাহ্যিকভাবে ইসলাম জাহির করে, তখনো তাদের আকিদা ছিল: ইমাম আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইলাহ বিশ্বাস করা। তাদের ধারণা আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাহ্যত ইমাম ছিলেন, কিন্তু আভ্যন্তরীণভাবে ছিলেন ইলাহ। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তাকে কেউ জন্ম দেয় নি। তিনি মারা যান নি, তাকে মারা হয় নি, তিনি পানাহার করেন না।

তাদের আকিদা মতে আলির মধ্যে আল্লাহ প্রবেশ করেছেন, আর আলি মুহাম্মদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা কুফরির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বলেছে: আলি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছে, মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছে সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছে পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণ। তারা হলেন:

১. মিকদাদ: তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।

২. আবুদ দার: (আবুযর গিফারী), তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।

৩. আব্দুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা আল-আনসারী: তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।

৪. উসমান ইব্‌ন মায‘উন: তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।

৫. কুন্বর ইব্‌ন কাদান: তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী। [“তায়েফাতুন নুসাইরিয়্যাহ”: (পৃ.৪৭), আরো দেখুন: ( الجيل التالي ) (পৃ.১১৩)]

এসব আকিদা লালন করে তারা নিজেদের অগ্নিপূজারী প্রমাণ দেয়, তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করে নি। এসব আকিদা কুফরির চূড়ান্ত পর্যায়ের আকিদা, এর যে কোনো একটিই আল্লাহর দীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

তারা এ আকিদার যুক্তি হিসেবে বলে: আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র মা‘বুদ, যখন ইচ্ছা তিনি শরীরে প্রবেশ করেন। সকল কর্তৃত্ব তার, তার নিকট সবকিছু প্রত্যাবর্তনকারী।

আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের এসব কুফরি থেকে মুক্ত। তারা বিশ্বাস করে তিনি বাহ্যিকভাবে ইমাম, অভ্যন্তরীণভাবে ইলাহ। তারা তার সত্তাকে দু’ভাগে ভাগ করেছে:

এক. বাহ্যিকরূপ, অর্থাৎ তার মানবিক রূপ, যাকে নাসুত বলা হয়। তার এ সত্তা খায়, পান করে, জন্ম দেয়, জন্ম নেয় ও বান্দাদের নিকটবর্তী হয়, যেন তারা কাছ থেকে তাকে চিনতে পারে।

দুই. বাতেনিরূপ, অর্থাৎ “লাহুত”: যা পানাহার করে না।

নুসাইরিদের বোকামি:

তারা আলির খায়বার জয় করা ও যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনকে উলুহিয়্যাতের প্রমাণস্বরূপ পেশ করে। তাদের বিশ্বাস তিনি জিনদের সাথে কথা বলতেন। মুহাম্মদের দায়িত্ব বাহ্যিক কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করা, আর আলির দায়িত্ব আভ্যন্তরীণ মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করা। কারণ তিনি তাদের বাতেনি অবস্থা জানতেন।

আলি মৃত্যুবরণ করে অর্থাৎ তাদের ভাষায় মানবীয় পোশাক ত্যাগ করে কোথায় প্রবেশ করেছেন, এ নিয়ে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে:

কেউ বলে: তিনি চাঁদে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং চাঁদ নিজেই আলি। তাদেরকে শিমালিয়্যাহ বলা হয়।

কেউ বলে: তিনি সূর্যে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং সূর্য নিজেই আলি। তাদেরকে কালাযিয়াহ বলা হয়। [“আল-আলাবি”: (পৃ.৫৭)]

এ কারণে নুসাইরি মাদ্রাসার জনৈক পরিচালক আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের মহাকাশচারীগণ চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে শুনে বলেন: “তারা যা বলেছে, যেমন চাঁদ জড় পদার্থ দ্বারা গঠিত, যদি তাই সত্য হয়, তাহলে দীনকে সালাম (গুড বাই)। চাঁদ সম্পর্কে এসব তথ্য উদ্ঘাটনের ফলে সে তার রবের উপর চটে তিরস্কার করে বলেছে: “এখন দীনের কর্ম নিঃশেষ হয়ে যাবে, যেহেতু এসব আবিষ্কার প্রমাণ করেছে দীন হচ্ছে মিথ্যার ফুলঝুরি”। [এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য( معركة في القمر ) প্রবন্ধটি পড়ুন, উস্তাদ আবুল হায়সামের লিখিত। الإسلام في مواجهة الباطنية ص 39-43. থেকে সংগৃহীত।]

এসব ঘটনা প্রকৃত মুসলিমের অন্তরে কোনো প্রভাব ফেলে না, যদিও মানুষ নক্ষত্রের পর নক্ষত্র জয় করতে থাকে। তার কথা: এসব আল্লাহর কুদরত, তাদের ক্ষমতা বলে নয়। সে রাগান্বিত হয় না। কারণ সে জানে তার রব জগত ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টা। তিনি প্রত্যেক বস্তুতে বান্দাদেরকে যে পরিমাণ ইচ্ছা কর্তৃত্ব করার সুযোগ দেন।

“আল-হাফতুশ শরিফ”এর লেখক বলেন: “এমন কোনো মুমিন নেই মারা যাওয়ার পর যার রূহ ইমাম আলির নিকট পেশ করা হয় না এবং তিনি তাকে যাচাই করেন না। যদি সে পরিক্ষিত ও খালেস মুমিন প্রমাণিত হয়, ফেরেশতারা তার রূহ নিয়ে আসমানে উড্ডয়ন করেন ও জান্নাতের নিকটে বিদ্যমান নহরে গোসল দেন, যার নাম “আইনুল হায়াত”। [আল-হাফতুশ শরিফ: (পৃ.৮২)]

তিনি ইমামদের থেকে বর্ণনা করেন: “আমরা ইমাম, আল্লাহর অলি। আল্লাহর আসমান ও জমিনে কোন ইলম আমাদের থেকে গোপন নয়। আমরা আল্লাহর হাত ও বাহু, আমরা তার চেহারা ও চোখ। মুমিনগণ যে দিকে দৃষ্টি দিবে আমাদেরকে দেখতে পাবে। আমরা চাইলে আল্লাহ চান। আল্লাহর পরিবার ব্যতীত তুমি কোথাও তার সাক্ষাত পাবে না। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি স্বীয় কুদরতের পবিত্র মাটি থেকে আমাদেরকে বাছাই করেছেন এবং আমাদেরকে তার ইচ্ছার রহস্য দান করেছেন...” [আল-হাফতুশ শরিফ: (পৃ.১৯৭)]

তাদের দোয়া ও অযিফাসমূহে আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে “ইলাহ” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে, যা বিবেক বর্জিত। তাদের নিকট এসব অযিফা “সূরা” নামে পরিচিত। নমুনাস্বরূপ কয়েকটি সূরা দেখুন:

তৃতীয় সূরায় এসেছে: “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, হে আমার মাওলা, হে আমিরে নাহাল! হে আলি, হে মহান, হে অনাদি, হে একক সত্তা, হে চিরন্তন। হে আলি, হে বড়, হে বড়দের বড়। হে সূর্য ও উজ্জ্বল চাঁদ সৃষ্টিকারী, হে আলি, দীনের অগ্রপথিক, হে জ্ঞানী ও সবজান্তা। হে বৃদ্ধদের উপর করুণাকারী, হে বাচ্চাদের লালনকারী। হে পঙ্গুহাড় সংযোজনকারী, হে বিনা কষ্টে প্রত্যেক বস্তুতে বিচরণকারী, কল্যাণের জ্ঞানের অধিকারী ও তার থেকে বঞ্চিতকারী। আবু দিহইয়ার [তার নাম: আবু দিহইয়াহ ইসমাইল ইব্‌ন খাল্লাদি। তিনি বেশ কিছু বিষয়ে নুসাইরিদের সাথে মত বিরোধ করেছেন। দেখুন: “আল-ইসলাম ফি মুওয়াজাহাতিল বাতিনিয়্যাহ” (পৃ.২৫০)] উপর পতিত হোক আল্লাহর উপযুক্ত শাস্তি। আবু সাইদের উপর সালাম ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক”। [“আল-জাইলুত-তালি”: (পৃ.৭৯)]

“সূরাতুস সুজূদে” এসেছে: “হে আলি, আমার মলিন ও মরণশীল চেহারা আপনার সম্মানিত, চিরঞ্জীব ও চিরঅক্ষয় চেহারার নূরের প্রতি সেজদাবনত... হে আলি আপনার জন্য উলুহিয়্যাত, হে আলি আপনার জন্য উর্ধ্বজগত, হে আমার মাওলা আলি, আমরা আপনার ইবাদত করি”। [“আল-জাইলুত-তালি”: (পৃ.৮৭-৮৮)]

“সূরাতুল ইশারাতে” এসেছে: “আল্লাহর ইচ্ছা, ইজ্জত ও ইশারা তোমার জন্য হে আমার মাওলা, হে আমিরুল মুমিনীন, হে আলি, হে আনজা, হে মোটা পেটের অধিকারী, হে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হাড্ডিকে জীবিতকারী। হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, হে আমার মাওলা, হে আমিরুল মুমেনীন, আমাদেরকে আপনার উপার্জনকারী, গণিমত হাসিলকারী, সাহায্যপ্রাপ্ত ও বিজয়ী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার ক্ষতিগ্রস্ত ও অনুতাপী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না”। [“আল-জাইলুত-তালি”: (পৃ.৯৩)]

সন্দেহ নেই তারাই ক্ষতিগ্রস্ত ও অনুতাপের উপযুক্ত। তারা যদি সামান্য বিবেকের অধিকারী হত, তাহলে আলিকে ইমাম ও ইলাহ উভয় জ্ঞান করত না।

“আস-সূওয়ার আল-কাবিরাতে” এসেছে: “আল্লাহর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে যে, আমি পরিষ্কার, নির্মল, নুরানি, শুভ্র, আলাবি, হিজাবি ও মুহাম্মদি সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি সত্যিকার পন্থায় সঠিক সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমার ও তোমার কোনো ইলাহ নেই একমাত্র আমিরুন নাহাল আলি ব্যতীত। কোন হিজাব নেই সায়্যেদ মুহাম্মদ ব্যতীত, কোন বাব নেই সায়্যেদ সালমান ব্যতীত... আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহই আলি, আমার রব, আমাকে জীবিতকারী ও মৃত্যুদানকারী। তিনি চিরঞ্জীব [তারা আলীর মৃত্যুতে বিশ্বাসী নয়। তার মৃত্যকে তারা মানবিক বস্ত্র ত্যাগ করা বলে। যে মানবিক বস্ত্র থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে আব্দুর রহমান ইব্‌ন মুলজিম। এ জন্য তারা আব্দুর রহমান ইব্‌ন মুলজিমকে সম্মান করে ও তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।], কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না, তার হাতে রয়েছে কল্যাণ। তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান, তার নিকটই আমাদের প্রত্যর্পণ”। [“আল-জাইলুত তালি”: (পৃ.৯৯)]

তাদের ষোলতম সূরা “সূরাতুন নুকাবায়” ইয়াহূদিদের বিশ্বাস ও আদর্শ স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। তাতে এসেছে: “বারো নকিবের রহস্য, আটাইশ নজিবের রহস্য, চল্লিশ কুতুবের রহস্য, যাদের প্রথম ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাবা এবং সর্বশেষ ব্যক্তি মুহাম্মদ ইব্‌ন সিনান আয-যাহেরি। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাবার রহস্য, যিনি নকিবদের নকিব; মুহাম্মদ ইব্‌ন সিনান আয-যাহেরির রহস্য, যিনি নজিবদের নজিব; তাদের সবার রহস্যের শপথ। আল্লাহ তাদের সবাইকে আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিনের বরকতে দুনিয়া ও দীনের চার ভূ-খণ্ডে সৌভাগ্যশীল করুন”। [“আল-জাইলুত-তালি”: (পৃ.১০৯)]

এ ছাড়া আরো অনেক রূপকথা, কল্পকাহিনী ও সূরা রয়েছে, যাতে এরূপ কুফরি, অপরাধ ও বিকৃতিতে পরিপূর্ণ, যার সাথে বিবেক ও জ্ঞানের সামান্য সম্পর্ক নেই। তাদের বোকামি গাধার বোকামিকে ছাড়িয়ে, বরং সকল প্রাণীর বোকামির চেয়ে নিকৃষ্ট। তারা চতুষ্পদ জন্তু থেকেও অধিক পথভ্রষ্ট।

এ জাতীয় অনেক বর্ণনা রয়েছে, দীর্ঘ হবে তাই ত্যাগ করলাম, যা থেকে স্পষ্ট হয় তাদের অগ্নিপূজারী ও নাস্তিকতা, যা নিশ্চিতভাবে সংবাদ দেয় যে, যারা নুসাইরি ধর্মের প্রবর্তক, তারা ছিল পূর্ণরূপে অগ্নিপূজক। তারা ইহুদি, নাসারা, হিন্দু সবধর্মের পণ্ডিত ছিল।

তারা আলির উলুহিয়্যাত এবং তার মধ্যে ও সকল ইমামের মধ্যে আল্লাহর প্রবেশ করার আকিদা পোষণকারী। তার একটি উদাহরণ হুসাইনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, যা আমরা ইতঃপূর্বে “আল-হাফতুশ শরিফ” থেকে বর্ণনা করেছি। সেখানে তাদের বিশ্বাস ছিল যে, হুসাইন আল্লাহ, রাব্বুল আলামিন। তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে ইমামগণ নবীদের থেকে উত্তম। কারণ তাদের ধারণায় ইমামগণ আল্লাহর সাথে বিনা পর্দায় কথা বলেন, আর নবীগণ কথা বলেন পর্দার আড়াল থেকে।

তারা এসব ভ্রান্ত মতবাদ আমদানি করেছে শিয়া দ্বাদশ ইমামিয়াদের থেকে। তারা গ্রহণ করেছে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাবা ইয়াহূদি থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা ইমাম আলিকে একবার বলে ইলাহ, আবার বলে নবী। আবার আলির মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন থেকে আল্লাহর কালাম পেশ করে, তার ব্যাখ্যা দেয় জাল হাদিস দ্বারা। এসব বৈপরীত্য ও অসামঞ্জস্যহীনতার কারণে তাদের অধিকাংশ অনুসারী কমিউনিস্ট হয়ে গেছে। [“তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ: (পৃ.৪৬-৫০), আমরা সামান্য পরিবর্তন করে এখানে উদ্ধৃত করেছি। আরো দেখুন: নওবখতি রচিত “ফিরাকুশ শিয়াহ”: (পৃ১১৬), “আল-আলাবিউন”: (পৃ.১৫, ৪৪, ৫২), ড. মুহাম্মদ আহমদ আল-খতীব “আল-হারাকাতুল বাতেনিয়্যাহ ফিল আলামিল ইসলামি” গ্রন্থের দ্বিতীয় ফসলে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন: (পৃ. ৩৪১-৩৫৪)]

নুসাইরি সম্প্রদায়ের পণ্ডিতগণ যখন দেখল তারা শির্ক ও কুফর যাই পেশ করে, সীমালঙ্ঘনকারী একটি গোষ্ঠী বিনা প্রশ্নে তা লুফে নেয়, তখন তারা একাধিক উলুহিয়্যাতের বিষয়টি স্বাভাবিক করে ইলাহ দাবি করল। যেহেতু তাদের ধর্মে রয়েছে আল্লাহ ইচ্ছানুযায়ী যে কোন বান্দার মধ্যে প্রবেশ করেন, তাই তাদের জন্য ইলাহ দাবি করা সহজ ছিল।

নিকট অতীতে “ফ্রান্স” যখন শামের উপনিবেশ ছিল, তাদের এক ব্যক্তি উলুহিয়্যাত দাবি করে। ফ্রান্সের উদ্দেশ্য ছিল তাদের মধ্যে মূর্খতা ছড়িয়ে যে কোনো মূল্যে ইসলামকে ধ্বংস করা, যেন দীর্ঘ সময় তারা মুসলিম দেশে শাসন করতে সক্ষম হয়। এ লক্ষ্যে তারা সিরিয়ার নুসাইরি সম্প্রদায় থেকে সালমান আল-মুরশিদকে বেছে নেয়। তারা তাকে উলুহিয়্যাতের মর্যাদা দেয় ও আল্লাহ তাকে পরিচ্ছদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন প্রচার করে। নুসাইরি সম্প্রদায়ের অনেকে তার প্রতি ঈমান আনে ও তার অনুসারী হয়।

একটি হাস্যকর ঘটনা: সালমান আল-মুরশিদের জীবনী লেখকগণ উল্লেখ করেছেন, সে তার পরিধেয় বস্ত্রে বৈদ্যুতিক বোতাম ব্যবহার করত, পকেটে রাখত ছোট একটি ব্যাটারি, যার সাথে বোতামের সংযোগ দেয়া ছিল। যখন সুইচ টিপ দিত, বোতামগুলো জ্বলে উঠত আর ভক্তরা কারামাত মনে করে তার পায়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত।

আরেকটি মজার ঘটনা: তার উলুহিয়্যাত দাবি করার পশ্চাতে ফ্রান্সের জনৈক ব্যক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিল। অন্যান্য সেজদাকারীদের সাথে সেও সালমান আল-মুরশিদকে সেজদা করত এবং তাকে সম্বোধন করত: “হে আমার ইলাহ” বলে।

ইলাহ দাবি করার পর প্রভুর দায়িত্ব হচ্ছে রাসূল প্রেরণ করা। তাই সে এক ব্যক্তিকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করল, যার নাম সালমান আল-মিদাহ। সালমান আল-মিদাহ হিমসের এক বাগানে উটের রাখাল ছিল। ইলাহ দাবি করার পূর্বে সালমান আল-মুরশিদ ছিল গরুর রাখাল। ইলাহ গরুর রাখাল আর রাসূল উটের রাখাল, এ হচ্ছে তাদের ধর্ম। ড. হালবি অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।

আবুল হায়সাম বলেছেন: “মুরশিদিয়া গ্রুপ একটি সময় পার করেছে, যখন “লাটাকিয়া” [“লাটাকিয়া” জনসংখ্যার দিক থেকে সিরিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম শহর, আলেপ্পো, দামেস্কাস, হোমস ও হামা শহরের পর লাটাকিয়াহ-ই সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর। বন্দর নগরী হিসেবে সিরিয়ার প্রধান শহর। ভূ-মধ্য সাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। আরবি নাম: اللاذقية অনুবাদক।] অঞ্চলের প্রত্যেক মানুষের গর্দানের উপর ছিল ফ্রান্সের ক্ষমতার হাতিয়ার। অর্থাৎ ১৯৩৮ই. সনের ঘটনা। তখন উলুহিয়াতের দাবিদার সালমান সেখানে এক রাষ্ট্রের মধ্যে অপর রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। তিনি সেখানে ফসলাদির উপর বাৎসরিক খাজনা, ট্যাক্স ও বিচারক নিয়োগ দেন। ফাঁসির নির্দেশ জারিসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার কাজ তিনি নিজ উদ্যোগে করেন...। [দেখুন: “আল-ইসলাম ফি মুওয়াজাহাতিল বাতেনিয়্যাহ”: (পৃ.১০৩)]

আবুল হায়সামের ভাষায় ১৯৩৮ই. সনে ফ্রান্স যখন লাঞ্ছনার নৌকায় চড়ে সিরিয়া প্রস্থান করে, তখন তারা “সালমান”-দেরকে অনেক অস্ত্র দিয়ে যায়, যা তাদেরকে স্বৈরাচারী আচরণ ও সীমালঙ্ঘনে প্রলুব্ধ করে। তখন সিরিয়ার সরকার মুহাম্মদ আলি আজমা এক অভিযান পরিচালনা করে তার কতিপয় অনুসারীদের হত্যা করেন, এবং অনেকের সাথে তাকে বন্দি করেন। অতঃপর ১৯৪৬ই. সনে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন।

তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: তুমি ইলাহ, আবার আগাখানও ইলাহ, তাহলে এক পৃথিবীতে দুই ইলাহের রাজত্ব সম্ভব কিভাবে? সে উত্তর দিল: “সৃষ্টিকর্তা তার রূহ যার মধ্যে ইচ্ছা অনুপ্রবেশ ঘটান। তিনি অতিসত্বর তার সৃষ্টিজীব থেকে একশ’ মখলুকের মধ্যে এ রূহ অনুপ্রবেশ ঘটাবেন, ফলে তারাও আমার মত রব হবে”। [“আল-আলাম” লিযযারকালি: (৩/১০৩)]

আবুল হায়সাম তার সম্পর্কে বলেন: “সালমানের বিষয়টা খুব হাস্যকর ছিল, সে কখনো তার কর্তৃত্বের বাইরে উলুহিয়্যাতের দাবি করে নি। সিরিয়ার সংসদে তাকে তার এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল, কিন্তু তার অনুসারীরা যা বলে, তার থেকে সে বিষয়ে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোনো ঘোষণা তখন শোনা যায় নি। একদা আমি তার সাথে দেখা করে তার দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, যা তার নামে প্রচার করা হয়। তিনি কঠিনভাবে তা অস্বীকার করেন এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

সেদিন সে আমাকে বলে: তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হচ্ছে তার অনুসারী সবাইকে ইসলামের মূলনীতির উপর পরিচালিত করা। এরপর সে কয়েকটি সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করল, যার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করা চলে না... তবে এ ব্যক্তি এতটুকু বুদ্ধি রাখত যে, সে কখনো তার দলের বাইরে কোন বুদ্ধিমানের নিকট উলুহিয়্যাতের দাবি করত না”। [“ইসলাম ফি মুওয়াজাহাতিল বাতেনিয়াহ”: (পৃ.১০৩-১০৪)]

তার মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা তার ছেলে মুজিবুল আকবরকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে। তাকেও হত্যা করা হয়, কিন্তু তার অনুসারীরা তাকে ইলাহ জ্ঞান করা থেকে পিছপা হয় নি। তাদের বোকামি ও মুসলিম মনীষীদের প্রতি তাদের ক্ষোভ যে, তারা স্ব স্ব পশু কুরবানির সময় বলে: আমার পক্ষ থেকে আবু বকর ও ওমরের গর্দানের পরিবর্তে মুজিবে আকবর এর নামে কুরবানি করছি। এ জন্য কোনো মুসলিম যখন তাদের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে, তাদের যবেহকৃত পশু তার খাওয়া হালাল নয়।

অনেক আলেম বলেন: এখনো তারা মুজিবের কোনো এক ভাইকে ইলাহ হিসেবে জ্ঞান করে। সালমান মুরশিদের পরিবার এখনো মূর্খ নুসাইরিদের মধ্যে প্রভুত্বের নেতৃত্ব দেয়। [“ইসলাম বেলা মাজাহেব”: (পৃ.৩০৯), “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ” থেকে সংকলিত।] তারা নিজেদের মুরশিদিয়াহ ধর্মের অনুসারী দাবি করে। আবুল হায়সাম বলেন: মুরশিদিরা এখনো সালমান ও তার সন্তানদের প্রভুত্বের আকিদা ত্যাগ করে নি, যাদেরকে তাদের পিতা [সালমান] প্রভুত্বের জন্য তৈরি করে গেছেন। তাদের জন্য তিনি আল্লাহর কতক নাম ঘোষণা দিয়েছেন, যেমন: (ফাতেহ, সামী ও মুজিব)। [আল-ইসলাম ফি মুওয়াজাহাতিল বাতেনিয়্যাহ: (পৃ.১০২)]

প্রত্যেক মুরশিদি মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে নিজেদের আকিদা সংরক্ষণ করে। তাদের সালাতের নাম সালাতুল মুরশিদিয়াহ, যা তারা মুজিবুল আকবরের দিকে সম্পৃক্ত করে। তারা সালাতে বলে: ‘আমাদের অযিফা আমাদের মাওলার জন্য, যিনি মহান প্রভু সালমান আল-মুরশিদর সন্তান মুজিব’।

“হে আমাদের মাওলা, তোমার জন্য সম্মান, ইজ্জত, তাসবীহ ও তাকবীর। হে আমাদের রব, তুমি পবিত্র, তুমি দয়াময় ও অনুগ্রহশীল। হে আমাদের মাওলা, হে মুজিবুল মুরশিদ। তোমার জন্য পবিত্রতা, তুমি মহান রব...” তাদের এসব দোয়ায় স্পষ্ট যে, তারা নিজেদের গড়া রবকে স্মরণ করে। আল্লাহ তাদের সালাত ও অযিফা থেকে পবিত্র, মহান ও উর্ধ্বে।

নুসাইরিরা দোয়ায় বলে ও বারবার উচ্চারণ করে: হে আল্লাহ আমাদেরকে এমন সৈন্য দ্বারা রিজিক দান করুন, যারা অপরিচিত ও পরদেশ থেকে আগত, যারা মুসলিম শাসকদের থেকে আমাদেরকে মুক্ত করার জন্য পশ্চিম থেকে আগমন করে।

ড. মুস্তফা সাক‘আ তাদের দোয়ার এসব ইঙ্গিত প্রসঙ্গে বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য উপনিবেশ ফ্রান্স, কারণ তারা তাদের সাহায্যকারী। [দেখুন: ইসলাম বেলা মাজাহেব: (পৃ.৩০৯), মুহাম্মদ আল-মাজযুব লিখিত: " إخواننا في جبال اللاذقية " গ্রন্থ থেকে নেয়া।] আবুল হায়সাম বলেন: “মুরশিদিয়া সম্প্রদায় লাটাকিয়া এলাকার আমেরিকান প্রোটেস্টেন্ড সম্প্রদায়ের গভীর বন্ধু। এর পশ্চাতে রয়েছে, রাজনৈতিক হাত, বরং বিশ্ব জায়নবাদের হাত”। [দেখুন: الإسلام في مواجهة الباطنية (পৃ.১০৩)]

দ্বিতীয় আকিদা: পুনর্জন্মে বিশ্বাস:

নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের আকিদার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা। তারা এ বিশ্বাসের অন্তরালে কিয়ামত, পরকাল, প্রতিদান ও হিসান-নিকাশ অস্বীকার করে। আল্লামা নওবখতি পুনর্জন্মে বিশ্বাসীদের নিকট তার অর্থের বর্ণনা দিয়ে বলেন: “পুনর্জন্মে বিশ্বাসীরা এ দুনিয়ায় বারবার জন্ম নেয়ার আকিদা পোষণ করে, তাদের নিকট কিয়ামত, পুনরুত্থান ও হিসাব বলতে কিছু নেই। দুনিয়া ব্যতীত অন্য কোনো জগত নেই। কিয়ামত হচ্ছে রূহের শরীর থেকে শরীরে স্থানান্তর হওয়া। ব্যতিক্রম শুধু ভালো হলে ভালো, আর খারাপ হলে খারাপ শরীরে প্রস্থান করা। তারা পার্থিব শরীরেই নিয়ামত ভোগ করে বা শাস্তি পায়। তাদের নিকট শরীরই জান্নাত বা জাহান্নাম। তারা সুন্দর, সুখী ও ভালো শরীরে প্রস্থান করে শান্তি পায়; আর কুৎসিত, দুঃখী ও খারাপ শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে, যেমন কুকুর, শূকর, সাপ, বিচ্ছু ও গুবরেপোকা। তারা এক শরীর থেকে অপর শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে। এভাবে চিরজীবন শরীরই তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম, এ ছাড়া কিয়ামত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম বলতে কিছু নেই। নেক আমল, বদ আমল, ইমামদের অস্বীকার করা ও গুনাহের পরিমাণ বিচারে রূহসমূহের পরবর্তী শরীর নির্ধারিত হয়”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (৫৭, ৫৮)]

নুসাইরিদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুনর্জন্মের চারস্তর। তাদের তথাকথিত ঈমান থেকে কাছে বা দূরে অবস্থানজনিত ত্রুটি, ইমামদের আনুগত্য ও নাফরমানির উপর ভিত্তি করে প্রতিটি স্তর নির্ধারিত হয়। চারটি স্তর: নাসখ, মাসখ, ফাসখ ও রাসখ।

১. নাসখ: অর্থাৎ এক ব্যক্তির শরীর থেকে অপর ব্যক্তির শরীরে রূহের প্রস্থান করা।

২. মাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জানোয়ারের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।

৩. ফাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জমিনে বিচরণকারী কীটপতঙ্গ ও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।

৪. রাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে গাছ-পালা, উদ্ভিদ ও জড়বস্তুর দেহে রূহের প্রস্থান করা। [দেখুন: “তায়েফাতুন নুসাইরিয়া”: (পৃ.৮৮)]

উল্লেখ্য যে, নুসাইরিদের কতক বর্ণনায় রয়েছে, মাসখ, ফাসখ ও রাসখ কোনো নুসাইরিকে স্পর্শ করে না, বরং তাদের বিপরীতে যারা রয়েছে, তাদের দৃষ্টিতে যারা কাফের, তারা এ দুনিয়ায় বারবার জন্ম নিয়ে এসব শাস্তি ভোগ করে।

“আল-হাফতুশ শরিফে” পুনর্জন্মের বিভিন্ন পদ্ধতি ও শাস্তি ভোগের নানা অবস্থার বর্ণনা রয়েছে, তাদের নিকট কাফেররা যা একরূহ থেকে অপর রূহে প্রস্থান করার সময় ভোগ করে। দীর্ঘ হবে তাই এখানে তার উল্লেখ ত্যাগ করলাম।

“আল-হাফতুশ শরিফে” এসেছে: “আপনার সাথে কোনো ব্যক্তি সশরীরে সাক্ষাত করে, আপনি তাকে ভাবেন মানুষ, অথচ সে [ভবিষ্যতে পুনর্জন্মের বিচারে] বানর, অথবা শূকর, অথবা কুকুর অথবা জমিনে বিচরণকারী কোন কীট”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (৮০)]

মুফাদ্দাল বলেন: “আমি আমাদের মাওলা সাদিককে জিজ্ঞাসা করেছি, অলি ও তাদের শত্রুদের মধ্যে ভালো-মন্দ যে সম্পর্ক থাকে, পরবর্তীতে তার বিনিময় হবে কিভাবে, শত্রুদেরকে অলিদের ছাড়া কেউ শাস্তি দিবে, কিংবা অলিদেরকে শত্রুদের ছাড়া কেউ শাস্তি দিবে? তিনি বললেন: তুমি জান না মুমিনগণ থাকে নাসুতে, আর কাফেররা থাকে মাসুখিয়ায়। বারবার পুনর্জন্মে একটি পর্যায় আসে, যেখানে একে অপরের প্রতি ভালো কিংবা খারাপ আচরণ করতে সক্ষম হয়, যেমন তারা একে অপরের প্রতি করেছে, ভালো হলে ভালো, আর খারাপ হলে খারাপ”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (৩৬)]

মানুষকে কুকুরের দংশন করা ও কষ্ট দেয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন: “ব্যক্তি যখন কোন কুকুরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, কুকুরটিকে সে চিনে না, হয়তো ইতঃপূর্বে কখনো দেখেনি, বা সে কুকুরের স্ত্রীকে বিয়ে করেছে। কারণ এক সময় সে মানব আকৃতিতে ছিল, মানুষের ন্যায় তার সব ছিল, অতঃপর আল্লাহ তাকে যবেহ বা হত্যার মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন, যা তার দুনিয়ার কর্মের ফল। ব্যক্তিটি তার অবর্তমানে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেছে, তার বাড়িতে বসবাস করছে, তার কাপড় পরিধান করছে, যা কুকুর মাসুখিয়া অবস্থায় থেকে চিনতে পারে। অতএব যখন সে তাকে দেখে, তার উপর হামলা করে বা তাকে কামড় দেয়”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (পৃ.১২০, ১২১)]

প্রত্যেক আদম ও তাদের সন্তানদের মৃত্যু সম্পর্কে বলেন: “যখন আদম ও তার সন্তানদের বয়স শেষ হয়, তারা দলে দলে বিভক্ত হয়, একদল হয় আহলে মাসখ, তারা শাস্তি প্রাপ্তদল। অপর দল হয় আহলে নাসখ, তারা সাওয়াব প্রাপ্তদল”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (পৃ.১৫১)]

অধিকাংশ মানুষ নাসখ ও ফাসখের শিকার হয়, বিশেষ করে তাদের সর্বশেষ চক্রে। “অর্থাৎ প্রত্যেক আদম ও তার সন্তানগণ সর্বশেষ চক্রে নাসখ ও মাসখের শিকার হন। আর এ সর্বশেষ চক্র থেকেই আমাদের পিতা অষ্টম আদম ও তার সন্তানগণের সৃষ্টি।” তারা এরূপ অসার কল্পকাহিনীতেই বিশ্বাস করে। মুহাম্মদ ইব্‌ন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “এমন কোনো পাখি নেই, যার মাতা, পিতা, চাচা ও মামা নেই। অতঃপর আবুল হাসান জনৈক কাঠমিস্ত্রির দিকে তাকিয়ে বলেন, যে নিজ ঘরের কাজে মগ্ন ছিল: এ কাঠমিস্ত্রি প্রথম চক্রে মোরগ ছিল, বর্তমান সে কাঠ মিস্ত্রি”। [দেখুন: “ফেরাকুশ শিয়াহ”: (পৃ.১৮১)]

বিকৃত মস্তিষ্কের ভাবনা, কল্পকাহিনী ও নিরেট বোকামি তুল্য এ জাতীয় আরো সংলাপ রয়েছে তাদের ধর্মে, যা তারা সংগ্রহ করেছে অগ্নিপূজক মূর্তিপূজকদের থেকে।

তৃতীয় আকিদা: তাদের আকিদায় মদ পবিত্র বস্তু। তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তাতে বিকশিত হন। এ জন্য তারা আল্লাহর সম্মানার্থে মদকে “আব্দুন নূর” বলে। তাই মদের উৎস আঙুরের গাছকাটা তাদের নিকট বড় অপরাধ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন