hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নুসাইরিয়া সম্প্রদায়

লেখকঃ ড. গালেব ইব্‌ন আলি আওয়াজি

তৃতীয় অধ্যায়: নুসাইরিদের বিভিন্ন নাম ও নাকরণের কারণ:
নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন নাম রয়েছে, যার কতিপয় তারা পছন্দ করে, কতিপয় অপছন্দ করে, যেমন:

১- “আন-নুসাইরিয়া”:

এ নাম তাদের অন্যান্য নামকে ছাপিয়ে গেছে। এ নামে তারা অধিক প্রসিদ্ধ, কিন্তু এটা তারা মোটেই পছন্দ করে না, বরং এ নামের কারণে তারা নিজেদের হেয় মনে করে। এ নাম অপছন্দ করার কারণসমূহ:

প্রথম কারণ: তাদের ধারণা বিরোধিরা ধর্মীয় গোড়ামী, শত্রুতা ও সংকীর্ণতা থেকে তাদেরকে কোণঠাসা করার জন্য এ নাম তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ: তাদের ধারণা তুর্কীরা যখন সিরিয়া শাসন করছিল, তখন নুসাইর নামক যে পাহাড়ে তারা বসবাস করত, তার সাথে সম্পৃক্ত করে তারা তাদেরকে নুসাইরি বলে। উদ্দেশ্য তাদের থেকে বদলা নেয়া ও তাদেরকে হেয় করা। অতঃপর ফরাসিরা সিরিয়া দখল করে তাদের উপর ‘আলাবি’ নামের প্রয়োগ করে, যা তাদের খুব পছন্দ হয়। [সামনে এ সম্পর্কে আলোচনা আসছে।] এ জন্য নুসাইরিরা ফরাসিদের সম্মান করে ও বন্ধুভাবে। ফরাসিরা এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নুসাইরি পাহাড়ের নাম পরিবর্তন করে আলাবি অঞ্চল নাম রাখে।

প্রাচ্যবিদ “রেসু” থেকে তাদের নুসাইরি বলার আরেকটি কারণ জানা যায়। তিনি বলেন: নাসারা বা নাসরানির সাথে সামঞ্জস্যতার কারণে তাদেরকে নুসাইরি বলা হয়। তার এ মন্তব্যের কারণ খুব সম্ভব নুসাইরি ও নাসারা উভয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন প্রথা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মিল, নাসারাদের ধর্মীয় উৎসবসমূহে তাদের যোগদান করা, উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক মদকে সম্মান করা ও মুসিবতের সময় একে অপরের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি। লেবাননের বর্তমান ঘটনাগুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

তবে নাসারা ও নুসাইরির মধ্যে মিল রয়েছে সন্দেহ নেই, তবে অধিকতর যৌক্তিক হল এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা আবু শু‘আইব, মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর আল-বসরি, আন-নুমাইরির নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। [“তায়েফাতুন নুসাইরিয়্যাহ”: (পৃ.২৪)]

আব্দুল হুসাইন এসব কারণের সাথে অপর একটি কারণ উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবে নুসাইরিদের উপর ঘৃণা, দুর্নাম ও নাস্তিকতার ছাপ রয়েছে। তাই তারা একে ঢেকে দিতে চায়। [“আল-আলাবিউন”: (পৃ.৮)]

প্রাচ্যবিদ “রেসু” তাদের নুসাইরি নামকরণের পশ্চাতে যা বলেছেন, ড. হাসান ইবরাহিম হাসান এর মন্তব্য তার যথার্থতা প্রমাণ করে। তিনি বলেন:

“তাদেরকে নুসাইরি বলার ভিন্ন একটি কারণ রয়েছে, যা তাদের পাশে বসবাসকারী সুন্নিদের নিকট প্রসিদ্ধ। অর্থাৎ তাদের নামের সাথে নাসরানি বা নাসারা শব্দের মিল। বিভিন্ন সময়ে তাদের দ্বারা নাসারাদের অনুষ্ঠানসমূহ পালন, যেমন নাসারাদের মত তাদের রয়েছে জন্ম উৎসব ও ইস্টার উৎসব ইত্যাদি, এমনকি তারা এটাকে তাদের সর্ববৃহৎ উৎসবের অন্যতম হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তাদের কেউ কেউ নাসারাদের নামে নিজেদের নাম রাখে, যেমন মাত্তা (মথি), ইউহোন্না (যোহন) ও হীলানা, ইত্যাদি।

অধিকন্তু নাসারাদের থেকে নেয়া নুসাইরিদের মৌলিক নীতির সংখ্যাও কম নয়। তাদের ধর্মীয় বিষয়গুলো রহস্যাবৃত। কতিপয় নিদর্শন রয়েছে রহস্যে ঘেরা শিরোনাম সর্বস্ব, যার একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নেই। তবে সবগুলোর সাথে নক্ষত্র ও গ্রহ পূজার পুরোপুরি মিল রয়েছে।

খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে এসব শিক্ষা রূহানী শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হত। খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহধারণ করার মতবাদ নুসাইরিদের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী।

নুসাইরিদের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে, যথা: (ع.م.س) তারা বলে: এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন। [ع দ্বারা আলি, م দ্বারা মুহাম্মদ ও س দ্বারা সালমান ফারসি উদ্দেশ্য। অনুবাদক।]

এক. আলি, তার জন্য তারা ( المعنى ) শব্দ ব্যবহার করে।

দুই. মুহাম্মদ, তার জন্য তারা ( الاسم ) শব্দ ব্যবহার করে।

তিন. সালমান, তার জন্য তারা ( الباب ) শব্দ ব্যবহার করে। [হাসান ইবরাহীম হাসান, “তারিখুল ইসলাম, আস-সিয়াসি, ওয়াদ দীনি, ওয়াস সাকাফি, ওয়াল ইজতেমায়ি”: (পৃ.৪/২৬৫, ২৬৭), দেখুন: আল-আলাবিউন: (পৃ.৫৪,৫৫)]

এখানে উল্লেখ্য যে, নুসাইরিরা নুসাইরি নামের কারণে বিরক্তি বোধ করে, কিন্তু তাদের পরবর্তী কতিপয় পণ্ডিত যখন দেখলেন মানুষেরা তাদের উপর এ নামই প্রয়োগ করছে, তাই এর নতুন ব্যাখ্যা তারা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন, যা তাদের পছন্দনীয়।

নুসাইরি আমিন গালেব আত-তাবিল নুসাইরি শব্দের এমনি এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন সাহাবি আবু উবাইদাহ ইব্‌নুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন শামে জিহাদ করছিলেন, তখন তিনি সাহায্য তলব করেন, ফলে ইরাক থেকে খালেদ ইব্‌ন ওয়ালিদ, মিসর থেকে আমর ইব্‌নুল আস ও মদিনা থেকে আলাবিদের বিরাট এক অংশ এসে তার সাথে যোগ দেয়, যারা “গাদিরে খুম”-এ বাইয়াত করেছিল। তারা সবাই আনসারি ছিল, তাদের সংখ্যা ৪৫০-জন মুজাহিদ।

মদিনার এ বাহিনী সৈন্যদের সাথে মিলিত হলে আংশিক সাফল্য লাভ হয়, যার নাম দেয়া হয় নুসাইরাহ্‌। অতঃপর বিজিত জমি যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী তাদের মাঝে বণ্টন করা হয়, যার নাম বর্তমান নুসাইরিয়া পাহাড়। অতঃপর লেবানন থেকে তুরস্কের এন্টাকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড়ে বসবাসকারী প্রত্যেকের নাম হয় নুসাইরি। [তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ: (পৃ.৩৫)]

কয়েকটি কারণে এ ব্যাখ্যা ঐতিহাসিক মূলহীন। সবচেয়ে বড় কথা ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে এ নামের অস্তিত্বই ছিল না। দ্বিতীয়ত মদিনা থেকে আগত ছোট্ট এক জামাতের দিকে বিজয়কে সম্পৃক্ত করে অন্যদের অবজ্ঞা করার নীতি মুসলিমদের মধ্যে ছিল না। তৃতীয়ত সাহাবিদের পক্ষে ভাবা অসম্ভব যে, তারা জিহাদের জন্য এসে জিহাদ ত্যাগ করে নুসাইরি পাহাড়ে আবাসস্থল গড়ে তৃপ্ত হবেন।

অধিকন্তু খুলাফায়ে রাশেদার যুগে ‘আলাবি’ নামে কোন দল ছিল না। খারেজি ও শিয়াদের জন্ম হয় আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর যুগে, অন্যান্য বাতিল ফেরকার সূচনা হয় আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতের শেষ দিকে, আর নুসাইরিদের জন্ম তৃতীয় হিজরিতে।

আমিন গালিব মত হচ্ছে যে, ‘মদিনা থেকে আগত সবাই গাদিরে খুমে উপস্থিত ছিল।’ এর উত্তরে বলা যায় যে, গাদিরে খুমে উপস্থিত সাহাবিদের খিলাফতে রাশেদা তথা আবু বকর থেকে আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-এর যুগ পর্যন্ত স্বতন্ত্র কোনো মর্যাদা ছিল না। বরং তাদের দিকে সাধারণ অন্যান্য মুসলিমদের মতই দৃষ্টি দেওয়া হতো।

তথাপি এ ব্যাখ্যা দ্বারা তারা তাদের পূর্বপুরুষ অন্যান্য শিয়াদের উপর মিথ্যারোপ করলে, যাদের নিকট গাদিরে খুমে উপস্থিত সাহাবির অল্প ক’জন ব্যতীত সবাই মুরতাদ হয়ে গেছে। কারণ তারা (তাদের মত অনুযায়ী) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্বাচিত আলির হাতে খিলাফতের বাই‘আত গ্রহণ করে নি।

২. “আলাবি”:

আলাবি নুসাইরিদের পছন্দনীয় নাম। তারা এ নাম খুব পছন্দ করে, তারা চায় সবাই তাদের এ নামে ডাকুক, অন্য নাম ভুলে যাক।

কতক আলেম এ নাম সম্পর্কে বলেন: তারা আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইবাদত করে ও তাকে ইলাহ হিসেবে জানে, তাই তাদেরকে ‘আলাবি’ বলা হয়। বস্তুত তাদের নাস্তিকতা থেকে আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুক্ত ও পবিত্র, যেমন পবিত্র জাফর ইব্‌ন মুহাম্মদ জাফরিয়া মাযহাব থেকে।

এ নাম পছন্দ করার কারণ হিসেবে আব্দুল হুসাইন বলেন: “নুসাইরিয়া নামের কারণে তাদের উপর যে ঘৃণা, দুর্নাম ও নাস্তিকতার প্রলেপ পড়েছে, এ নাম তা থেকে তাদেরকে নাজাত দেয়, তাই তারা এ নাম খুব পছন্দ করে। দ্বিতীয়ত এ নামের আড়ালে তারা শিয়াদের কাছে আসার সুযোগ পায়”। অতঃপর বলেন: “এতে সন্দেহ নেই, যেভাবেই হোক ইমাম আলির সাথে তাদের সম্পর্ক ইবনে নুসাইরির সাথে সম্পর্কের চেয়ে অনেক ভালো”। [“আল-আলাবি”: (পৃ.৩২)]

৩. “সূরাহ্‌ কা”:

তুর্কীরা তাদের উপর এ নাম প্রয়োগ করে। সময়ের বিবর্তনে মানুষ তা “সুরাক” বলে। তুর্কীদের ভাষায় যার অর্থ নির্বাসিত বা বিতাড়িত। ড. সুলাইমান আল-হালবির তথ্য মতে বর্তমান যুগে আলেপ্পো, সাহয়ূন, উমরানিয়া ও সাফিয়াতা [বর্তমান যুগে আলেপ্পো সিরিয়ায়, সাহয়ূন ইসরাইলে, উমরানিয়া মিসরের জিযা জেলায় ও সাফিয়াতা সিরিয়ার তরতুস জেলায় অবস্থিত। অনুবাদক।] ইত্যাদি অঞ্চলে তাদেরকে এ ‘সুরাক’ নামে ডাকা হয়। [“তারিখুল আলাবি”: (পৃ.৩৪২), “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ”: (পৃ.৩৫)]

ড. গালেব বলেন, আমি অনেক তুর্কীকে “সুরাক” শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করেছি, কিন্তু কেউ বলতে পারে নি। হয়তো এটা তুর্কীদের পুরনো ভাষা ছিল, পরবর্তীতে ত্যাগ করা হয়েছে।

৪. নুমাইরিয়া:

নুসাইরিদের অপর নাম নুমাইরিয়া। মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর আন-নুমাইরির নামে তাদেরকে নুমাইরি বলা হয়। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে তারা অন্যান্য নামেও পরিচিত, যেমন পশ্চিম আনাটোলিয়ায় [বর্তমান তুরস্কের অধীন। উত্তরে কালো সমুদ্র, উত্তর পশ্চিমে জর্জিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে সিরিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে ইরাক ও পূর্বে ইরান। অনুবাদক।] “তাখতাজিয়্যাহ” বা “আল-হাত্তাবুন” এবং ইরান, তুর্কীস্তান ও কুর্দিস্তানে “আলি ইলাহিয়্যাহ” নামে পরিচিত”। [“আল-আলাবি”: (পৃ.৩১)]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন