HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিয়া আলেম ও অধিকাংশ মুসলিম আলেমের মধ্যে বিরোধের বাস্তব চিত্র

লেখকঃ সা‘ঈদ ইসমাঈল

১৪
গাদীর খুম
বিংশ শতাব্দীর শিয়া জা‘ফরীয় আলেমদের অন্যতম বিজ্ঞ আলেম আত-তাবতাবায়ী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলী ইবন আবি তালিব হলেন খেলাফতের অধিক হকদার, সে ব্যাপারে উজ্জ্বল দলিল হল গাদীর খুমের ঘটনা। আর যখন আমরা শিয়া আলেমদের কোন একজনের একটি পুস্তিকা অধ্যয়ন করব, তখন আমরা এই একক ঘটনাটির মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো [নাজাফী, গাদীর খুম, পৃ. ৯ - ১৯ ; তাবতাবায়ী, পৃ. ১৭৮ – ২১৮।] পাব:

১. যারা গাদীর খুমের ভাষণে উপস্থিত ছিল, তারা হলেন এক লক্ষের অধিক সাহাবী।

২. জিলহজ্ব মাসের ১২ তারিখ বিদায় হাজ্জ থেকে মদীনায় ফেরার পথে গাদীর খুমের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ প্রদান করেন এবং তাঁর এই ভাষণের কারণ হল এই জায়গায় নিম্নোক্ত আয়াতটির অবতরণ:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ وَٱللَّهُ يَعۡصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٦٧ ﴾ [ سورة المائدة : 67]

“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” [সূরা আল-মায়িদা: ৬৭।]

৩. এই জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত ঘোষণা প্রদান করেন:

ক. অচিরেই তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দুটি ভারী জিনিস রেখে যাবেন: তার একটি হল আল্লাহর কিতাব, যার এক পাশ থাকবে আল্লাহ হাতে; আর অপর পাশ থাকবে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে। আর অপরটি হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার; তাঁর প্রতিপালক সংবাদ দিচ্ছেন যে, এই উভয়টি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ না তার নিকট হাউজে কাউসার পেশ করা হয়।

খ. আলীর হাত উত্তোলন করার পর তিনি বলেন: “আমি যার বন্ধু ছিলাম, আলী তার বন্ধু।”

গ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “হে আল্লাহ! তুমি তার বন্ধু হয়ে যাও, যে তার (আলীর) সাথে বন্ধুত্ব করে এবং তুমি তার শত্রু হয়ে যাও, যে তার সাথে শত্রুতা করে।”

ঘ. তিনি আরও বলেন: “হে আল্লাহ! তুমি তার সাথে সত্যকে পরিচালিত কর, যেদিকে সে পরিচালিত হয়।”

এই হল গাদীর খুমের ঘটনা সম্পর্কে শিয়া সম্প্রদায়ের জা‘ফরীয় আলেমদের বক্তব্য; এখন এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুসলিম আলেম যা বলেন, সে সম্পর্কে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত [বিস্তারিত বর্ণনার জন্য দেখুন, মিনহাজুস্ সুন্নাহ আন-নববীয়া ফী নকযে কালামেশ্ শিয়া ওয়াল কাদরিয়া ( منهاج السنة النبوية في نقض كلام الشيعة و القدرية ), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৮৪ – ৮৭।]।

[আহলে সু্ন্নাত ওয়াল জামাআতের পক্ষ থেকে শিয়াদের পূর্বোক্ত দাবীর উত্তর]

১. শিয়া আলেমদের দাবি অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর হাতেগণা কয়েকজন সাহাবী সহীহ ইসলামের উপর অটল ছিলেন; যাদের সংখ্যা দশের বেশি হবে না। [আলী শরীয়তী, পৃ. ২৮ - ৩০ ; আসকালানী, ফতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ( فتح الباري شرح صحيح البخاري ), পৃ. ৩৪ - ৪৩] অথচ গাদীরের ভাষণে অংশগ্রহণ করেছে এক লাখের বেশি সাহাবী। অর্থাৎ- এক লক্ষ সাহাবীর সকলেই তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আলী ইবন আবি তালিবকে খেলাফত থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করেছে। এটা কি করে সম্ভব হল? এবং কোন স্বার্থে? আমরা যদি শিয়া আলেমদের কিতাবসমূহও পর্যালোচনা করি, তাতেও এর পিছনে কী স্বার্থ কাজ করেছে তার কোন উল্লেখ পাই না!

২. যে বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জ সম্পন্ন করেছেন, গাদীর খুমের খুৎবা তথা ভাষণ হয়েছিল সে একই বছরের জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখ; আর সে একই মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিনে নাযিল হয়েছে এই আয়াত:

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [ سورة المائدة : 3]

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।” [সূরা আল-মায়িদা: ৩] সুতরাং কিভাবে (নাযিলের ধারাবহিকতায় আল-কুরআনের) এই সর্বশেষ আয়াতটি ঐ আয়াতের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব, যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে রিসালাত পৌঁছানোর [আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغتَ رِسَالَتَهُۥۚ وَٱللَّهُ يَعۡصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٦٧ ﴾ [ سورة المائدة : 67] “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। — (সূরা আল-মায়িদা: ৬৭)] নির্দেশ দিয়েছেন?

আর মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ আলেম জোর দিয়ে বলেন যে, ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ ... ٦٧﴾ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় বিদায় হাজ্জের পূর্বে; বরং মক্কা বিজয় ও খায়বরের যুদ্ধেরও পূর্বে।

৩. আর ইবন তাইমিয়্যা জোরালোভাবে বলেন: ভাষণটি শিয়াদের গ্রন্থসমূহে যে শব্দ দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও অপবাদমূলক বাক্য।

বিস্তারিত বিবরণ হল:

ক. প্রকৃত পক্ষে ‘ভারী বস্তুদ্বয়ের হাদিস’ ( حديث الثقلين ) যা যায়েদ ইবন আরকাম রা. বর্ণনা করেছেন, তা হল:

«قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ وَذَكَّرَ ثُمَّ قَالَ « أَمَّا بَعْدُ أَلاَ أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِىَ رَسُولُ رَبِّى فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ » . فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ وَرَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ « وَأَهْلُ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِى أَهْلِ بَيْتِى » . [ أخرجه مسلم ]

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘খুম’ নামক পানি সমৃদ্ধ এলাকায় কোন একদিন আমাদের মধ্যে খতিব তথা বক্তা হিসেবে দাঁড়ালেন, অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর গুণকীর্তন করলেন এবং উপদেশ দিলেন; অতঃপর বললেন: “অতঃপর, জেনে রাখ, হে মানব সম্প্রদায়! আমি তো শুধু একজন মানুষ, অচিরেই আমার প্রতিপালকের (মৃত্যুর) দূত এসে যাবেন, অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দেব; আর আমি বিদায় বেলায় তোমাদের মধ্যে দু’টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি: তার প্রথমটি হল আল্লাহর কিতাব, যাতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে; সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর।” সুতরাং তিনি আল্লাহর কিতাবের প্রতি উৎসাহিত করলেন; অতঃপর বললেন: “অপরটি হল আমার পরিবার-পরিজন; আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” [সহীহ মুসলিম, ফাদায়েলুস সাহাবা ( فضائل الصحابة ), বাব নং- ৪, হাদিস নং- ৬৩৭৮।]

আর পূর্বে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজন শুধু আলী রা. ও তাঁর বংশধরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, তারা অন্তর্ভুক্ত করে আকিল ও তাঁর বংশধরকে, জাফর ও তাঁর বংশধরকে, ‘আব্বাস ও তাঁর বংশধরকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তথা মুমিন জননীদেরকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি যে, তোমরা আমার পরিবার-পরিজনকে আঁকড়ে ধর, অথবা তারা হেদায়েত ও আলো।

আর হাদিসে যদি এমন কোন অর্থের সম্ভাবনা রাখত, যা বিশেষভাবে তাঁর পরিবার-পরিজনের নিকট ক্ষমতা অর্পণ করত; তবে তা তাঁর পরিবার-পরিজনের সকলের মধ্যেই হত এবং এর দ্বারা উত্তরাধিকার সূত্রে আব্বাসীয় খেলাফতের বৈধতা মেনে নেয়া শিয়াদের উপর আবশ্যক হয়ে পড়ত; আর শিয়াদের গ্রন্থসমূহের পাতায় পাতায় আব্বাসীয়দের যুলুম-নির্যাতন ও অপবাদের যে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে, তার পরিবর্তে শিয়াগণ কর্তৃক আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থাকে সম্মান প্রদর্শন করাটা আবশ্যক হয়ে পড়ত।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হিসেবে যা বর্ণিত হয়েছে: “আমি যার বন্ধু ছিলাম, আলী তার বন্ধু।” — অনেক হাদিস বিশেষজ্ঞ এই হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তা সহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়নি। এমনকি যদি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই হাদিসের বিশুদ্ধতাও প্রমাণিত হয়, তবে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা‘আলা যে কথা বলেছেন, তার চেয়ে অধিক অর্থবোধক নয়। আল্লাহর বাণী:

﴿ ... فَإِنَّ ٱللَّهَ هُوَ مَوۡلَىٰهُ وَجِبۡرِيلُ وَصَٰلِحُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ ظَهِيرٌ ٤﴾ [ سورة التحريم : 4]

“... তবে জেনে রাখ, আল্লাহই তার বন্ধু এবং জিবরাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণও, তাছাড়া অন্যান্য ফেরেশতাগণও তার সাহায্যকারী।” [সূরা আত-তাহরীম: ৪।] সুতরাং এটা এমন বুঝায় না যে, সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসী [বা পরবর্তী খলীফা] বরং তারা তাঁর সঙ্গী-সাথী ও সাহায্যকারী। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেননি যে: ‘আমি যার অভিভাবক ছিলাম, আলী তার অভিভাবক’ এবং তিনি এ কথাও বলেননি যে, ‘আমি যার বন্ধু বা অভিভাবক ছিলাম, আমার মৃত্যুর পর আলী তার বন্ধু বা অভিভাবক’। যদি তিনি এ রকম কথা বলতেন, তবে এই অর্থের সম্ভাবনা থাকত যে, তাঁর পরে খেলাফতের অধিকারী হতেন আলী ইবন আবি তালিব রা.। আর বাস্তবে এই মাসআলা প্রসঙ্গে শিয়া আলেমদের বিতর্কটি নিষ্ফল হিসেবে প্রকাশ পাবে, যখন আমরা সহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিমে যা বর্ণিত আছে, তা পাঠ করব; অর্থাৎ- আবূ বকর, ওমর ও ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের খেলাফতের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতামত ছিল, কখনও সুস্পষ্ট ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে, আবার কখনও সূক্ষ্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে।

খ. শিয়া আলেমদের কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে আল্লাহ! তুমি তার বন্ধু হয়ে যাও, যে তার সাথে বন্ধুত্ব করেছে এবং তুমি তার শত্রু হও, যে তার সাথে শত্রুতা করেছে।”— হাদিস বিশারদগণ এই হাদিসটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তা সত্ত্বেও এটা একটি দোয়া, যা আলী রা.-কে স্বতন্ত্র বা আলাদাভাবে বুঝায় না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকের জন্যই বিভিন্ন প্রকার দোয়া করেন, যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই।

গ. তাছাড়া, শিয়া আলেমদের কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে আল্লাহ! তুমি আলীর সাথে সত্যকে পরিচালিত কর, যেদিকে সে পরিচালিত হয়।” — ইবনু তাইমিয়্যা দৃঢ়তার সাথে বলেন, এই দাবিটি মিথ্যা। আর ইবনু তাইমিয়্যার সাথে আমাদেরও প্রশ্ন- এটি কোন সত্য, যা সৃষ্টির সাথে পরিচালিত হয়, যখন সে (হক পথে) পরিচালিত হয়; সৃষ্টিজগতের সকলে তাদের সিদ্ধান্ত, অভিমত ও মনের আবেগ-অনুভূতি আলোকে কথা বলে? বস্তুত: মিথ্যাবাদীগণ [উপরোক্ত কথা না বলে] যদি দাবি করত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট চেয়েছেন, যাতে তিনি আলীকে সত্যপন্থী বানিয়ে দেন, তবে তা হয়ত: যুক্তিসঙ্গত বলে প্রকাশ হত।

এসব সত্ত্বেও আমরা তাবতাবায়ীকে খিলাফতের উত্তরাধিকার ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার আবশ্যকতা নিয়ে বিতর্ক করতে দেখতে পাই; সে বলে:

“নিশ্চয় ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা ধারণা করছে যে, ইসলামের রক্ষক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর কারণে অচিরেই ইসলাম নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় অবশিষ্ট থাকবে; আর এই কারণেই তা ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু গাদীর খুমে তাদের আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীকে খলিফা ও নেতা হিসেবে পেশ করেছেন। আর আলীর পরে নেতৃত্বের মত এই ভারী দায়িত্ব অর্পিত হবে তাঁর পরিবার-পরিজনের ঘাড়ের উপর।” [তাবতাবায়ী, পৃ. ১৭৯।]

এখানে তাবতাবায়ী নিজেই নিজের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন; কারণ, তিনি তার নিজ কিতাবের প্রথম দিকের পৃষ্ঠাগুলোতে ইঙ্গিত করেছেন যে, ইমামগণ মাযলুম (নির্যাতিত) অবস্থায় জীবনযাপন করেছেন, নিজেদের জীবন থেকে ক্ষতি বা অনিষ্টতা প্রতিরোধের ক্ষমতা ছিল না; সেখানে তিনি এই পৃষ্ঠাসমূহের মধ্যে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ইসলামের সংরক্ষক ও মুসলিম জাতির নেতা মনোনীত করেছেন। আর আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে আল্লাহর রাসূলের খলিফা মনোনীত করার কারণে ইসলামের শত্রুদের আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। তাবতাবায়ী’র কথা অনুযায়ী ইমামগণ যখন তাদের নিজেদের জীবন থেকেই অনিষ্টতা প্রতিরোধ করতে অক্ষম, তখন তারা কিভাবে মুসলিম জাতির ক্ষয়ক্ষতি ও অনিষ্টতা প্রতিরোধে সক্ষম হবেন? আর কিভাবেই বা ইসলামকে রক্ষা করবেন? বিশেষ করে শিয়া আকিদা বলে, ইমামগণ হলেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী? নাকি এটা পরোক্ষভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি মন্দ মনোনয়নের অপবাদ? أستغفر الله العظيم (আমি মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি)।

আর প্রকৃতপক্ষে শিয়া আলেমগণ তাদের বাড়াবাড়ি ও পক্ষাবলম্বনের ব্যাপারটিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মূর্খতাবশত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর খিয়ানতের অপবাদ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। কারণ তারা বলতে চান, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মানুষের নিকট রিসালাত তথা আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর পরিবর্তে তাঁর চাচার ছেলেকে (আলীকে) তার থেকে অংশবিশেষ পৌঁছে দিয়েছেন; তাদের রাষ্ট্রীয় ম্যাগাজিন ‘আল-জিহাদ’ বলে:

“তিনি ইমাম আলীকে বিশেষ অনেক কিছুর মাধ্যমে রাসূল হিসেবে প্রেরণের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত ও তার যথার্থতার ... দর্শন থেকে অনেক কিছুর মাধ্যমে তাকে বিশেষিত করতেন এবং তাকে নিয়ে রাতে ও দিনে দীর্ঘ সময় নির্জনে একাকিত্বে থাকতেন ...।” [আল-জিহাদ ম্যাগাজিন ( جريدة الجهاد ), সংখ্যা- ৫৬, ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৮২, পৃ. ১২।]

এমনকি জা‘ফরীয় শিয়াদের ইমামগণও নির্লজ্জ মিথ্যাচার থেকে নিরাপদ হতে পারেনি, যখন তাদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে তারা বলেছেন, ... নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ হল ‘তাকীয়া’ ( التقية ); যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার দীন নেই।

আর এর চেয়ে আরও নিকৃষ্ট হল, শিয়া আলেমদের কোন একজন বলে বেড়ায় যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন:

“আমার পূর্বের খলিফাগণ ইচ্ছাকৃতভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিরোধিতা করেছেন, তাঁর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তাঁর সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছেন। আর আমি যদি এখন মানুষকে বাধ্য করি তাকে পরিত্যাগ করার জন্য, যার নিকট তোমরা ফিরে এসেছ এবং আরও বাধ্য করি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যে অবস্থা বিরাজ করছিল, সে দিকে ফিরে আসতে, তবে অচিরেই আমার চার পাশ থেকে আমার বাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং তারা আমাকে একাকী অবস্থায় ফেলে দিয়ে কেটে পড়বে ...। আরও সংক্ষেপে বললে বলতে হয়, আমি যদি মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহর বিধান ও তাঁর নবীর সুন্নাতের অনুসরণ করতে নির্দেশ দেই, তবে অচিরেই তারা আমাকে পরিত্যাগ করবে এবং আমাকে ছেড়ে কেটে পড়বে।” [মর্তুজা আল-‘আসকারী, পৃ. ৩৭ – ৪১।]

লক্ষ্য করুন, শিয়া আলেমগণ কিভাবে সম্মানিত সাহাবী মহাবীর আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর অবস্থা বর্ণনা করছে, যিনি আল্লাহর ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে পরোয়া করেন না; আর মনে হচ্ছে যেন তিনি ভীরু কাপুরুষ, দুনিয়াবী ক্ষমতার পূজা করেন এবং তা অর্জনের জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ আল্লাহর বিধান ও তাঁর নবীর সুন্নাতকে বিসর্জন দেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হল, অন্ধ বাড়াবাড়ি ও পক্ষপাতমূলক আচরণ এর চেয়ে আরও জঘন্য অবস্থা ও পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সুতরাং আমরা শিয়া আলেমগণকে দেখতে পাচ্ছি তারা তাদের অজান্তেই তাদের ইমামগণের প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পরিবর্তে তাদেরকে জঘন্য খারাপ গুণাবলী দ্বারা কলঙ্কিত করছে। ফলে তাদের ভালবাসা হিতে বিপরীত রূপ লাভ করছে। সম্ভবত কোন কোন আলেম সঠিক কথাটিই বলেন এইভাবে: “আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক হচ্ছে, তাদের জন্য এ ধরণের অনুসারী হওয়া। কারণ, তারা তাদের কোন কোন ব্যক্তি বা ইমামকে এমন মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে, যেমনিভাবে বর্তমান যুগের খ্রিষ্টানরা মসীহর মর্যাদা নির্ধারণ করে। [অর্থাৎ যেভাব খ্রিষ্টানরা বলে থাকে যে ইয়াহূদীরা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। যদি সত্যিই তাকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি ইয়াহূদীদের হাতে মরতে হয়, তবে তিনি ইলাহ হলেন কী করে? সুতরাং যেভাবে ক্রুশবিদ্ধের কথা বলে খ্রিষ্টানরা মাসীহ ঈসাকে অসম্মানিত করেছে, তেমনিভাবে আলী রা. কে হকের পথে প্রত্যাবর্তন করতে অক্ষম বলে বর্ণনা করা ও তার পরবর্তী তাদের ইমামগণকে কোন কিছু করতে অসমর্থ বলে প্রকাশ করা একই পর্যায়ের অসম্মান করা]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন