মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জামা‘আতের সাথে নামায আদায় কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তার তাৎপর্য, ফযীলত, আহকাম, উপকারিতা ও আদাবসমূহ
লেখকঃ ড. সায়ীদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল্ ক্বাহতানি
৫
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের হুকুম:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/76/5
মুকাল্লাফ বা শরীয়তের বিধান যার উপর প্রযোজ্য এমন পুরুষদের উপর জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করা ফরযে আইন সে মুক্বীম (উপস্থিত) হোক বা সফর অবস্থায় থাকুক, এক্ষেত্রে কুরআনে ও অনেক সহীহ হাদীসে ও আছারে (সাহবাদের বক্তব্য) অনেক স্পষ্ট দলীল রয়েছে যার কিছু দলীল নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১/ আল্লাহ তা‘আলা ভয়ের সময়েও জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন:
অর্থ: ‘‘যখন আপনি তাদের মাঝে থাকবেন ও নামাযের জন্য দাঁড়াবেন, তখন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়াবে এবং তাদের অস্ত্রগুলো সাথে নিবে, অতঃপর যখন সিজদাহ করবে তখন যেন আপনাদের পিছনে অপর দল থাকে আর অপর দল যারা নামায পড়েনি তারা এসে আপনার সাথে নামায পড়বে এবং সতর্ক হবে ও তাদের অস্ত্র সাথে নিবে)। (নিসা-১০২)
মহান আল্লাহ তা‘আলা প্রচন্ড ভয়ের সময় জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের আদেশ করেছেন, অতঃপর তিনি উক্ত নির্দেশ পুনরায় দ্বিতীয় দলের ক্ষেত্রেও করেছেন। জামা‘আতে নামায যদি সুন্নাত হত তাহলে ভয়ের ওজর জামা‘আত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম ওজর হিসাবে পরিগণিত হত অনুরূপ জামা‘আত যদি ফরযে কেফায়া হত তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রথম দলের জামা‘আত দ্বারা দ্বিতীয় দল থেকে জামা‘আত রহিত করে দিতেন। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, জামা‘আতে নামায পড়া ফরযে আইন।
২/ আল্লাহ তা‘আলা নামাযীদের সাথে মিলে নামায আদায় করার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন:
অর্থ: ‘‘তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর এবং রুকু কারীদের সাথে মিলে রুকু কর)। (আল্ বাক্বারাহ-৪৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মুসল্লীদের সাথে মিলে নামায পড়ার আদেশ করেছেন, আর আদেশ সূচক শব্দ ওয়াজিব সাব্যস্ত করে।
৩/ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিন এর ডাকে সাড়া দেয়নি এবং জামা‘আতের সাথে নামায পড়েনি, অর্থাৎ ক্বেয়ামাতের দিন তাদের মাঝে ও সিজদার মাঝে প্রতিবন্ধক তৈরী করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
অর্থ: ‘‘স্মরণ কর, সেই দিনের কথা, যে দিন পায়ের পিন্ডলী (হাঁটুর নিম্নাংশ) উন্মোচন করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্যে; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহবান করা হয়ে ছিল সিজদা করতে’’। (আল-ক্বালাম-৪২-৪৩)
আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন যে জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের জন্য আহবান কারীর ডাকে সাড়া দেয়নি এভাবে যে, ক্বেয়ামাতের দিন তার মাঝে ও সিজদাহর মাঝে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হবে।
আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী কে বলতে শুনেছি: (আমাদের প্রতিপালক তাঁর পায়ের পিন্ডলী উন্মুক্ত করে দিবেন, অতঃপর প্রত্যেক ঈমানদার নারী পুরুষ তাঁকে সিজদাহ করবে, বাকি থাকবে তারা যারা দুনিয়াতে সুনাম ও লোক দেখাবার জন্য সিজদাহ করত, তারা তাঁকে সিজদাহ করতে যাবে কিন্তু তাদের পিঠ এক বরাবর হয়ে থাকবে) অর্থাৎ অবণত হতে সক্ষম হবে না।
অন্য শব্দে রয়েছে: (অতঃপর পায়ের পিন্ডলী উম্মোচন করা হবে তখন যে ব্যক্তিই নিজ থেকে আল্লাহ তা‘আলাকে সিজদাহ করত তাকে আল্লাহ তাআ’লা সিজদাহ করার অনুমতি দিবেন, আর যে ব্যক্তিই আত্নরক্ষা ও লোক দেখানোর জন্য সিজদাহ করত আল্লাহ তা‘আলা তার পিঠ বরাবর করে দিবেন, যখনই সিজদাহ করার ইচ্ছা করবে তখনই ঘাড় ভেঙ্গে পিছনে পড়ে যাবে)। বুখারী ও মুসলিম)
আর এর মধ্যে রয়েছে মুনাফিকদের জন্য শাস্তি কেননা তাদের পিঠ কেয়ামাতের দিন বরাবর হয়ে যাবে: অর্থাৎ পিঠের মেরুদন্ডের হাড় পুরোটাই এক বরাবর হয়ে যাবে, ফলে তারা সিজদাহ করতে সক্ষম হবেনা। (আন্নেহায়াতু ফি গরীবিল হাদীস-৩/১১৪)
৪/ নবী জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মালেক ইবনে হুয়াইরিস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আমার সম্প্রদায়ের কিছু লোকের সাথে নবী এর কাছে এসে বিশ রাত ছিলাম। -তিনি ছিলেন দয়াপরবশ, কোমল- যখনই আমাদের পরিবারের প্রতি আমাদের আকর্ষণ দেখতেন তখনই বলতেন: {তোমরা ফিরে যাও, তাদের মাঝে থাক, তাদেরকে শিক্ষা দাও এবং নামায পড় আর যখনই নামাযের সময় হয় তখনই তোমাদের একজন যেন আজান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় সে যেন ইমাম হয়}। (বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত হাদীসে নবী জামা‘আতের সাথে নামায পড়ার আদেশ করেছেন, আর আদেশ সূচক শব্দ ওয়াজির সাব্যস্ত করে।
৫/ জামা‘আতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের বাড়ীঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিতে নবী এর ইচ্ছা প্রকাশ; আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত (তিনি বলেন) রাসূল কোন নামাযে কিছু লোককে না দেখতে পেয়ে বললেন: (আমি অবশ্যই এই ইচ্ছা করেছি যে, এক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ার নির্দেশ দেই, অতঃপর ঐ সকল ব্যক্তিদের কাছে যাই যারা জামা‘আতে অনুপস্থিত, অতঃপর কাঠ দিয়ে তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেই, যদি তাদের কেহ জানত যে, সে মোটা হাড় পাবে তাহলে অবশ্যই সে জামা‘আতে উপস্থিত হত)। ইহা মুসলিমের শব্দ, আর বুখারীর শব্দ হল: (যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ আমি অবশ্য ইচ্ছা করেছি যে, এক ব্যক্তিকে কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই, অতঃপর নামায পড়ার আদেশ করি এবং নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় এবং এক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায়ের আদেশ করি, অতঃপর (জামা‘আতে অনুপস্থিত) লোকদের কাছে যাই এবং তাদের উপর তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেই, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ যদি তাদের কেহ জানত যে, নিশ্চয় সে গোশ্ত সমেত মোটা হাড় পাবে অথবা চমৎকার দুটি তীঁর পাবে তবে অবশ্যই এশার নামাযে সে উপস্থিত হত)।
মুসলিম এর আরেক শব্দে রয়েছে: (নিশ্চয় মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন নামায হল এশা ও ফজরের নামায, যদি তারা জানত যে, ঐ দুই নামাযে কি পুরস্কার রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উভয় নামাযে আসত, অবশ্যই আমি চিন্তা করেছি যে, নামায পড়ার নির্দেশ দেই, অতঃপর নামাযে দাঁড়িয়ে যাক, এরপর এক ব্যক্তিকে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ার আদেশ করি আর আমি এমন কিছু লোকদেরকে নিয়ে চলে যাই যাদের সাথে কাঠের অাঁটি রয়েছে, ঐ সকল লোকদের নিকট যারা নামাযে হাজির হয়নি, অতঃপর আগুন দিয়ে তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেই)। (বুখারী ও মুসলিম) এই হাদীসও প্রমাণ করে যে, নিশ্চয় জামা‘আতে নামায আদায় ফরযে আইন বা অবশ্য কর্তব্য। (শারহুন্ নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬১)
৬/ নবী দুরে বাড়ী অন্ধ ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দেননি। আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: এক অন্ধ বক্তি নবী এর নিকট এলেন অতঃপর বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার কোন পথ প্রদর্শক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে তাই তিনি রাসূল এর কাছে বাড়ীতে নামায পড়ার অনুমতি চাইলেন, তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন এরপর যখন তিনি চলে যাচ্ছিলেন, তাঁকে ডেকে বললেন: (তুমি কি আযানের ডাক শুনতে পাও? তিনি বলেন : হ্যাঁ, তিনি বললেন: (তাহলে সাড়া দাও)। (মুসলিম)
ইবনে উম্মে মাকতুম (রা:) হতে বর্ণিত তিনি নবী এর কাছে আবেদন করে বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি, দূরবর্তী স্থানে বাড়ী, চলাচলের উপযোগী আমার কোন পথপ্রদর্শক নাই, সুতরাং বাড়ীতে নামায পড়ার আমার কি অনুমতি আছে? তিনি বললেন: (তুমি কি আযান শুনতে পাও?) তিনি বলেন: হ্যাঁ, তিনি বললেন: (আমি তোমার জন্য কোন অনুমতি দেখছি না)। (আবুদাউদ) অন্য শব্দে রয়েছে যে, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, শহরে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত পোকা-মাকড়, হিংস্র জমত্ত রয়েছে, অতঃপর নবী বলেন: (যদি তুমি হাইয়্যা আ’লাচ্ছালাহ, হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ শুনতে পাও তাহলে দ্রূত অগ্রসর হও)। (আবুদাউদ)
এখানে নবী স্পষ্ট করে বলেন যে, আযান শুনতে পায় এমন মুসলিম ব্যক্তির জন্য নামাযে জাম’আত ত্যাগ করার কোন অনুমতি নাই। যদি একাকি নামায আদায় এবং জামা‘আতে নামায আদায়ের ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকত তাহলে এই অন্ধ ব্যক্তি সবার চেয়ে বেশী হকদার হত, কারণ তার মধ্যে ছয়টি ওজর বিদ্যমান ছিল: দৃষ্টিহীন, দূরে বাড়ী, শহরে প্রচুর হিংস্র যন্তু- জানোয়ার, তার কোন উপযোগী চালক ছিলনা, বয়স বেশী, তাঁর ও মসজিদের মাঝে অনেক খেজুর গাছ ও অন্য গাছ ছিল। (ইবনে ক্বাইয়্যেম এর কিতাবুচ্ছালাত -৭৬)
৭/ নবী বর্ণনা করেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনার পর মসজিদে আসলনা তার কোন নামায নাই। ইবনে আববাস (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (যে ব্যক্তি আযান শুনল, অতঃপর জামা‘আতে আসেনি ওজর ছাড়া তার কোন নামায নাই। (ইবনে মাজাহ)
এগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, জামা‘আতে নামায ফরজে আইন, আমি আমাদের শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন বাজ (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (তার কোন নামায নাই এর অর্থ হল: তার নামায পূর্ণ হবেনা বরং তার নামায অসম্পূর্ণ থাকবে, তবে জামহুর ওলামাদের মতে নামায আদায় হয়ে যাবে)।
৮/ জামা‘আত পরিত্যাগ করা মুনাফিকদের আলামত এবং পথ ভ্রষ্টতার কারণ, কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন: (আমরা মনে করতাম যে, মুনাফিক ব্যতীত কেহ জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকেনা যার নেফাক ছিল বিদিত, অথবা অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত কেহ জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকেনা, যদি অসুস্থ ব্যক্তি দুই জন মানুষের উপর ভর দিয়ে মসজিদে আসতে পারত তাহলে আসত। তিনি আরও বলেন: নবী আমাদেরকে হেদায়াত পূর্ণ সুন্নাতের শিক্ষা দিয়েছেন, আর হেদায়াতপূর্ণ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল যে মসজিদে আযান দেয়া হয় সেই মসজিদে নামায আদায় করা।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন: (যে ব্যক্তি আনন্দিত হয় যে, আগামী কাল সে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুসলিম হিসাবে সাক্ষাৎ করবে সে যেন সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হয় এমন স্থানে যেখানে আযান দেওয়া হয়; কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ সমূহ দেখিয়েছেন, আর জামা‘আতে নামায আদায় হেদায়াতের পথ সমূহের অন্যতম, তোমরা যদি তোমাদের বাড়ীতে নামায পড় যেমন ভাবে এই অনুপস্থিত ব্যক্তি তার বাড়ীতে নামায পড়ে তবে অবশ্যই তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বর্জনকারী হবে, আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আবু দাউদের এক বর্ণনায় রয়েছে যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা কুফরী করবে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে যে ব্যক্তি এসকল মসজিদ সমূহের একটিতে যাওয়ার ইচ্ছা করে তার প্রতি কদমের জন্য আল্লাহ তা‘আলা পূণ্য লিখে রাখেন এবং উহার দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার থেকে একটি পাপ মোচন করেন। আমরা মনে করতাম মুনাফিক ব্যতীত কেহ জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকে না যার নেফাক ছিল বিদিত, এমনকি কোন কোন ব্যক্তিকে দুইপার্শ্বে দুই ব্যক্তির মাধ্যমে ধরে নিয়ে আসা হত এবং কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত)। (মুসলিম)
ইহা প্রমাণ করে যে, জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকা মুনাফিকের আলামাত যার নেফাক স্পষ্ট। মুস্তাহাব পরিত্যাগ করার কারণে বা মাকরুহ কাজ করার কারণ মোনাফেকের আলামাত বলে আখ্যা দেয়া যায়না। সুবিদিত যে, যে ব্যক্তি হাদীসে মুনাফেকের আলামাত অনুসন্ধান করবে, সে পাবে যে, ফরয তরক করার কারণে কিংবা হারাম সম্পাদন করার কারণেই মুনাফেকের আলামাত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। (ইবনে ক্বাইয়্যূমের কিতাবুচ্ছালাত-৭৭)।
উপরোক্ত আলোচনায় রয়েছে জামা‘আতে নামায পড়ার জোরদান এবং তাতে উপস্থিত হওয়আর ব্যাপারে কষ্ট সাধন। যদি অসুস্যহ বা অনুরূপ ব্যক্তির পক্ষে জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তাতে উপস্থিত হওয়া তাদের জন্য মুস্তাহাব । (শারহুন নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬২)
আবু হুরায়রাহ (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (নিশ্চয় মুনাফিকদের কিছু আলামাত রয়েছে যার দ্বারা তাদেরকে চেনা যায়: তাদের অভিবাদন হচ্ছে অভিশাপ, তাদের খাবার হচ্ছে লুটের সম্পদ, তাদের গনীমতের সম্পদ হচ্ছে খেয়ানাত, তারা মসজিদে আসেনা বরং উহাকে পরিত্যাগ করে, নামাযে সবার শেষে আসে, তারা অহংকারী, তারা কাউকে পছন্দ করেনা, তাদেরকেও কেহ পছন্দ করেনা, কাঠের মত রাতে নিদ্রামগ্ন থাকে নামায পড়েনা, দিনের বেলা হৈচৈ-এ লিপ্ত থাকে) অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ছুখুব: অর্থাৎ কোলাহল করা। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: (আমরা যখন এশা ও ফজরের নামাযে কোন ব্যক্তিকে পেতাম না তখন তার ব্যাপারে খারাপ ধারনা করতাম)। (ইবনে আবী শাইবা-১/৩৩২) অপর এক বর্ণনায় ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত: (আমরা সকালের নামাযে কোন ব্যক্তিকে না পেলে তার সম্পর্কে খারাপ ধারনা করতাম)। (আল বায্যার -১/২২৮)
৯/ জামা‘আত পরিত্যাগকারীর অন্তর সীলমোহর করার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, কেননা ইবনে আববাস ও ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তারা উভয়ে নবী কে বলতে শুনেছেন তিনি কাঠের মিম্মারে দাঁড়িয়ে বলেছেন: (অবশ্যই অনেক সম্প্রদায় জামা‘আত ত্যাগ করবে এবং অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তর সমূহে সীলমোহর করে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে)। (ইবনে মাজাহ), এই ভীতি প্রদর্শন কেবলমাত্র বড় ধরনের ওয়াজিব পরিত্যাগ কারীর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
১০/ ঐ সম্প্রদায়ের উপর শয়তানের বিজয় লাভ যাদের মাঝে জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত নাই, কেননা আবু দারদাহ (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (যে কোন গ্রাম অথবা মরুভূমিতে যদি জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে শয়তান তাদের উপর বিজয় লাভ করে, সুতরাং জামা‘আতে নামায পড়া আকড়ে ধর, কেননা বাঘ দলছুট ছাগলকে খেয়ে ফেলে)। (আবুদাউদ, নাসায়ী, আহমদ, হাকেম) নবী এই সংবাদ দিয়েছেন যে, জামা‘আত পরিত্যাগের কারণে শয়তান তাদের উপর বিজয় অর্জন করবে, যে জামা‘আতের প্রতীক হল: আযান এবং নামাযের একামাত, তাই জামা‘আত যদি মুস্তাহাব হত তাহলে ব্যক্তি তা পালন করা বা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন হত এবং জামা‘আত পরিত্যাগ কারী ও তার প্রতীক পরিত্যাগ কারীর উপর শয়তান বিজয় লাভ করতে পারত না। (ইবনে ক্বাইয়্যূমের কিতাবুচ্ছালাত-৮০)
১১/ আযানের পর মসজিদ হতে বের হওয়া হারাম যতক্ষণ না জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করা হয়; কেননা আবুশ্ শাছা (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: আমরা আবু হুরায়রাহ (রা:) এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম, অতঃপর মুয়ায্যিন আযান দিল এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলতে লাগল, আবু হুরায়রাহ (রা:) এর দৃষ্টি তাকে অনুসরণ করছিল এমনকি সে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল, তখন আবু হুরায়রাহ (রা:) বললেন: (এই ব্যক্তিটি আবুল কাসেম এর নাফরমানি করেছে)। (মুসলিম)
আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে আবু হুরায়রাহ (রা:) তাকে রাসূল এর অমান্যকারী সাব্যস্ত করেলেন; কেননা সে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করা পরিত্যাগ করেছে। (ইবনুল ক্বাইয়্যেমের কিতাবুচ্ছালাত -৮১) ইমাম নববী (র:) বলেন: (এতে প্রমাণিত হয় যে, আযানের পরে ওজর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া মাকরুহ যতক্ষণ না ফরজ নামায আদায় করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বেশী জ্ঞাত)। (শারহুন্ নববী আলা ছহীহ মুসলিম-৫/১৬৩)
(আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে) স্পষ্টভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন: (যখন তোমরা মসজিদে থাক, অতঃপর নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন তোমাদের কেহ যেন নামায না পড়ে বের না হয়)। (আহমাদ-২/৫৩৮) এবং তাঁর থেকে আরও বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (এই মসজিদে যে ব্যক্তিই আযান শোনার পর প্রয়োজন ছাড়া বের হল অতঃপর ফিরে আসলনা সে মোনাফেক)। (ত্বাবরানী)
আমি আমাদের শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি যে, যে মসজিদে আযান দেওয়া হয় সেখান থেকে ওজর ব্যতীত বের হওয়া জায়েয নাই, ওজর বলতে যেমন: সে ওজু করার ইচ্ছায় অথবা অন্য মসজিদে নামায পড়ার ইচ্ছায় বের হল।
আমার বক্তব্য হল: তিরমিযী (রাহ:) বলেন: (এই আমলের উপর নবী এর সাহাবাগণ এবং তাঁদের পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠিত ছিলেন যে, আযানের পর ওজর ব্যতীত কেহ মসজিদ থেকে বের হবেনা, অথবা কেহ বিনা ওজুতে যদি থাকে অথবা জরুরী কোন প্রয়োজন পরে তাহলেই কেবল বের হবে অন্যথা নয়। (সুনানুত তিরমিযি)
মোবারকপুরী (রহ:) উল্লেখ করেছেন: হাদীসটি এই প্রমাণ করে যে, মসজিদে আযান হওয়ার পর জরুরী কারণ ব্যতীত সেখান থেকে বের হওয়া জায়েয নাই, যেমন যে ব্যক্তি অপবিত্র ছিল, অথবা তার হাদাসে আসগর ঘটেছে অর্থাৎ ওজু নষ্ট হয়ে গেছে, অথবা যার নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে বা যে মুত্রবদ্ধতায় আক্রান্ত ইত্যাদি, অনুরূপ যে ব্যক্তি অন্য মসজিদের ইমাম এবং যে ব্যক্তি উপরোক্ত ওজরের আওতাভুক্ত হবে সেও তার মতোই । (তুহফাতুল আহ্ওয়াজি-২/৬০৭)
১২/ নবী -এর মসজিদে জামা‘আতের খোজ-খবর নেওয়া এই প্রমাণ করে যে, জামা‘আতে নামায পড়া ওয়াজিব; কেননা উবাই বিন কা’ব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজর নামায পড়ালেন, অতঃপর বললেন: (অমুককে দেখেছ?) তারা বললেন: না, তিনি বললেন: :(অমুক কে দেখেছ?) তারা বললেন: না, তিনি বললেন: (নিশ্চয় এই দুই নামায অর্থাৎ ফজর ও এশার নামায মোনাফিকদের উপর সবচেয়ে ভারী নামায, যদি তোমরা জানতে যে উভয় নামাযে কি রয়েছে তাহলে তোমরা অবশ্যই হাটুতে হামাগুড়ী দিয়ে হলেও আসতে, নিশ্চয় প্রথম লাইন ফেরেশতাদের সমতুল্য লাইন, যদি তোমরা উহার ফযীলত জানতে তাহলে অবশ্যই উহার দিকে ছুটে আসতে, আর নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায একাকী ব্যক্তির নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র এবং কোন ব্যক্তির অপর দুই ব্যক্তির সাথে নামায অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র, আর যতই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে অধিক প্রিয়)। (আবুদাউদ, নাসায়ী)
১৩/ জামা‘আত ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সাহাবাদের (রা:) ইজমা; ইমাম ইবনে ক্বাইয়্যেম (রাহ:) জামা‘আতে নামায আদায় ওয়াজিব মর্মে সাহাবাদের ইজমা উল্লেখ করেছেন এবং সে ক্ষেত্রে তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তিনি বলেন: (এই হচ্ছে সাহাবাদের স্পষ্ট সহীহ-শুদ্ধ, প্রসিদ্ধ তথা ব্যাপক বক্তব্য যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন এবং একজন সাহাবী থেকেও তার (জামা‘আত ওয়াজিব) বিরোধিতা আসেনি, এই মাস্আলার ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত আসারের প্রতিটিই এককভাবে স্বতন্ত্র দলীল, সুতরাং পারস্পারিক সহায়তা এবং এতগুলো দলীল সমবেত হওয়ার পর কতটা শক্তিশালী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহর কাছেই তাওফীক কামনা করছি )। (কিতাবুচ্ছালাত-৮১-৮২)
তিরমিযি (রাহ:) বলেন: (নবী এর একাধিক সাহাবী হতে বর্ণিত তাঁরা বলতেন: যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ তাতে সাড়া দিলনা তার জন্য কোন নামায নাই)। (সুনানুত্ তিরমিযি)
কিছু সংখ্যক আহলে ইল্ম (উলামা) বলেন: এ ব্যাপারে কঠিন ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে এবং কারো জন্যই ওজর ব্যতীত জামা‘আত ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়নি। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাত-২১৭)
মুজাহিদ বলেন: (ইবনে আববাস -রা:-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, দিনের বেলা রোযা রাখে এবং রাতের বেলা রাত জেগে নামায পড়ে, কিন্তু জুম’আহ ও জামা‘আতের নামাযে হাজির হয় না? তিনি বলেন: সে জাহান্নামী)। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাহ-২১৮)
তিরমিযি (রহ:) বলেন: (হাদীসের অর্থ হল: যে জুম’য়াহ ও জামা‘আতের নামাযে হাজির হয় না অপছন্দ করে, যথাযথ গুরুত্ব দেয়না এবং অবহেলা করে)। (সুনানুত্ তিরমিযি-কিতাবুচ্ছালাত-১/৪২৪)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/76/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।