মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জামা‘আতের সাথে নামায আদায় কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তার তাৎপর্য, ফযীলত, আহকাম, উপকারিতা ও আদাবসমূহ
লেখকঃ ড. সায়ীদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল্ ক্বাহতানি
৭
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: জামা‘আতে নামাযের ফযীলত:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/76/7
জামা‘আতে নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছে, নিম্নে তার থেকে কিছু উল্লেখ করা হল:
১-জামা‘আতে নামায সাতাশ বার একাকী নামাযের সমান, সুতরাং জামা‘আতের সাথে নামায আদায়কারীর একাকী নামায আদায়কারীর তুলনায় ২৭ গুন বেশি সাওয়াব লাভ করে। (নাইলুল আওতার-২/৩৪৭, ছুবুলুচ্ছালাম-৩/৬৭) কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূল বলেন: (জামা‘আতে নামায একাকী নামায অপেক্ষা ২৭ গুন বেশী মর্যাদাপূর্ণ)। মুসলিমের শব্দ হল: (জামা‘আতে নামায একাকী নামায অপেক্ষা মর্যাদার দিক থেকে ২৭গুন উত্তম)। মুসলিমের অপর শব্দে রয়েছে: (ব্যক্তির জামা‘আতে নামায তার একাকী নামায অপেক্ষা ২৭ গুন বেশি)। (বুখারী ও মুসলিম) আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি নবী কে বলতে শুনেছেন: (জামা‘আতে নামাযের সাওয়াব একাকী নামায থেকে মর্যাদার দিক থেকে ২৫ গুন বৃদ্ধি করা হয়)। (বুখারী)
আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত নবী হতে বর্ণনা করেন: (সবার সাথে নামায অর্থাৎ জামা‘আতের সাথে নামায কোন ব্যক্তির একাকী নামাযের তুলনায় ২৫ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়)।
তিনি আরও বলেন: (রাতের ও দিনের ফেরেশ্তাগণ ফজর নামাযে একত্রিত হন)। আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন: (তোমরা ইচ্ছা করলে পড়) وَقُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِۖ إِنَّ قُرۡءَانَ ٱلۡفَجۡرِ كَانَ مَشۡهُودٗا ٧٨ ﴾ [ الاسراء : ٧٨ ] অর্থ: ‘‘ফজরের তেলাওয়াত এবং নিশ্চয় ফজরের তেলাওয়াতে পরিলক্ষিত হয়’’ অর্থাৎ ফেরেশতাগণ উপস্থিত থাকেন।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: (২৫ অংশ বৃদ্ধি করা হয়)। (বুখারী ও মুসলিম)। (অংশ এবং মর্যাদার অর্থ একই: (শারহুনণববী আ’লা ছহীহ মুসলিম ৫/১৫৮)
উক্ত উভয় ধরনের (২৫ গুন এবং ২৭ গুন মর্যাদা বিশিষ্ট) হাদীস সমূহের মাঝে এভাবে সামঞ্জস্য বা মিল করা হয়েছে যে, ২৫ গুনের হাদীসে যে মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল ব্যক্তির একাকী নামায ও জামা‘আতে নামাযের মাঝে ব্যবধান ২৫ গুন বেশি, আর ২৭ গুনের হাদীসে যে মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল ব্যক্তির একাকী নামায ও তার জামা‘আতে নামায এবং উভয়ের মাঝের ফযীলত, অতএব উভয়ের সমষ্টি হয় ২৭। (ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া-২৩/২২২) ইমাম নববী (রাহ:) বলেন: উক্ত হাদীস সমূহের মাঝে তিন ভাবে সামঞ্জস্য বা মিল করা যায়ঃ
প্রথমটি হল: উল্লিখিত বর্ণনা সমূহের মাঝে কোন বৈপরিত্য নাই, কেননা অল্পের উল্লেখ দ্বারা বেশীকে অস্বীকার করা হয়না (অল্প বেশীর অন্তর্ভুক্ত) এবং উসূলবিদদের নিকট সংখ্যার অর্থ নেয়া অকার্যকর/অর্থহীন।
দ্বিতীয়ত: হয়তবা প্রথমে কম সংখ্যার সংবাদ (নবী কে) দেয়া হয়েছিল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অতিরিক্ত ফযীলতের কথা জানালে তিনি তার সংবাদ দেন।
তৃতীয়ত: নামায ও নামাযীদের অবস্থা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ নামাযের পূর্ণতা সঠিক ভাবে যত্ন নেয়া তাতে বিনম্রতা বজায় রাখা, তা বড় জামা‘আতে আদায় করা এবং স্থানের মহত্ব ও মর্যাদা প্রভৃতি অনুসারে কারো জন্যে ২৫ গুন এবং কারো জন্যে ২৭ গুন হয়ে থাকে। এবং এগুলো হল নির্ভরযোগ্য উত্তর। (শারহুন্নববী আ’লা ছহীহ মুসলিম ৫/১৫৬-১৫৭)।
আমি আমাদের সম্মানিত শায়েখ ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (আর এই তারতম্য আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন অতিরিক্ত ফযীলতের বর্ণনা, কম ফযীলতের বর্ণনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়নি, সুতরাং প্রথমে ২৫ এর সংবাদ দিয়েছেন অতঃপর ২৭ এর সংবাদ দিয়েছেন)।
যারা বলেন যে, জামা‘আতে নামায ওয়াজিব নয় তারা এই সকল হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যে, আফযাল (বেশী উত্তম) শব্দটি মূল ফযীলতে উভয়ের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে (এতে প্রমাণিত হয় জামা‘আত ওয়াজিব নয়) আমি আমাদের ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি: (এই হাদীস গুলো জামা‘আতের ফযীলত প্রমাণ করে, কিন্তু এই ফযীলত ওয়াজিব না হওয়া সাব্যস্ত করেনা, অতএব জামা‘আতে নামায ওয়াজিব এবং উত্তম। আর শ্রেষ্ঠত্ব এবং ওয়াজিব এর মাঝে কোন বৈপরিত্য নাই। এবং যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে নামায পড়েনি অগ্রাধীকার যোগ্য মত অনুযায়ী তার নামায সহীহ তবে সে গুনাহগার)।
আর একাকী নামায আদায়কারী যে জামা‘আতের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত তার ওজর গ্রহণ যোগ্য নয়, সকল বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জ্ঞাত। তবে যদি তার অভ্যাস এমন হয় যে, সে জামা‘আতে নামায পড়ে কিন্তু ওজরের কারণে জামা‘আতে নামায পড়তে পারেনি: যেমন অসুস্থ ব্যক্তি অথবা সফর রত বা আটকা পড়া ব্যক্তি এবং জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব না হয়, আর আল্লাহ তা‘আলাই জানেন যে, ব্যক্তির নিয়্যাত আছে যদি সে সক্ষম হত জামা‘আতে নামায পরিত্যাগ করত না, এই ব্যক্তির সাওয়াব পরিপূর্ণ হবে; কেননা যে ব্যক্তি কোন কাজের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল এবং যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে ততটুকুই পালন করেছে, সে পরিপূর্ণ কর্মসম্পাদনকারীর স্থানেই অবস্থানকারী। (ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া-২৩/২৩৬); কেননা আবু বুরদাহ (রা:) থেকে হাদীসে রয়েছে যা আবু মূসা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যখন কোন বান্দাহ অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে ঐ পরিমাণ সাওয়াব তার জন্য লেখা হয়, মুকিম অবস্থায় সুস্থ থেকে সে যে পরিমাণ আমল করত)। (বুখারী)
২-আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের বিনিময়ে শয়তান থেকে রক্ষা করেন; কেননা মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে, রাসূল বলেন: (নিশ্চয় শয়তান মানুষের জন্য বাঘ স্বরূপ, যেমন ছাগলের জন্য বাঘ রয়েছে, সে দলছুট ছাগলকে এবং একাকী ছাগলকে খেয়ে ফেলে, সাবধান! পরস্পর বিভক্ত হওয়া থেকে, তোমরা জামা‘আতকে (আহলুচ্ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত) আকড়ে ধর এবং জনসাধারনের সাথে থাক)। (আহমদ-৫/২৪৩) এবং আবু দারদা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (কোন গ্রামে অথবা মরুভূুমিতে যদি তিন ব্যক্তি থাকে কিন্তু তাদের মাঝে নামায প্রতিষ্ঠিত না থাকে তাহলে শয়তান তাদের উপর বিজয় লাভ করে, সুতরাং তোমরা জামা‘আত আকড়ে ধর, কেননা বাঘ কেবল দূরে অবস্থান কারী ছাগলই খেয়ে থাকে)। (আবুদাউদ, নাসায়ী, আহমাদ)
৩- জামা‘আতের সাথে নামাযের ফযীলত বৃদ্ধি পায় মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি অনুযায়ী; কেননা উবাই বিন কা’ব (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে: (..আর নিশ্চয় কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির সাথে নামায তার একাকী নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র এবং কোন ব্যক্তির অপর দুই ব্যক্তির সাথে নামায তার অপর এক ব্যক্তির সাথে নামায অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র, আর যতই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে অধিক প্রিয়)। (সুনানে আবুদাউদ, নাসায়ী, আহমদ) আর এ হাদীসটি অধিক সংখ্যক মানুষের সাথে নামায আদায়ের প্রতি উৎসাহ দেয়, যদি অকল্যাণ থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং কোন ধরনের কল্যাণ ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে ।
৪- জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও মোনাফিকি থেকে মুক্তি ঐ ব্যক্তির জন্য যে ৪০দিন তাকবীরে তাহরীমা সহ জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করতে পারে; কেননা আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন:
অর্থ: (যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ৪০ দিন জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করল যাতে সে তাকবীরে উলা বা প্রথম তাকবীর পেয়েছে তার জন্য দুটি মুক্তি লেখা হয়: জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং নেফাক থেকে মুক্তি)। (তিরমিযি)
এতে নামাযে এখলাছ বা একনিষ্ঠতার ফযীলত রয়েছে; কেননা নবী বলেছেন: ( مَنْ صَلَّى لِلَّهِ ) অর্থাৎ: (যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নামায পড়ল) অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য, ( بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، ) অর্থাৎ: জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পাওয়া এবং তার জন্য লেখা হয়( وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ ) অর্থাৎ: দুনিয়াতে মুনাফিকের কাজ করা হতে নিরাপদ থাকে এবং একনিষ্ঠ লোকদের কাজ করার তাওফীক দেওয়া হয় অর্থাৎ তাকে নেক্ কাজ করার তাওফীক দান করা হয়, আর আখেরাতে মুনাফিককে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা হতে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তার জন্য এই সাক্ষী দেওয়া হয় যে, সে মুনাফিক নয়, অর্থাৎ মুনাফিকরা যখন নামায পড়ে তখন তারা অলসদের মত নামায পড়ে, আর এই ব্যক্তির অবস্থা তাদের বিপরীত। (তুহফাতুল আহওয়াজী ২/৪৫)।
৫-যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের নামায আদায় করল সে সন্ধা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে ও নিরাপত্তায় থাকে; কেননা জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে, সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর যিম্মার কোন অংশ কামনা করনা; কেননা যে ব্যক্তি তাঁর কাছে তাঁর যিম্মার কিছু অংশ কামনা করে তাঁকে কিছু অংশ দেওয়া হয়, অতঃপর জাহান্নামের আগুনে মাথা নীচু করে তাকে নিক্ষেপ করা হয়)। (মুসলিম-৬৫৮)
এতে নিশ্চিত (প্রমাণিত) হয় যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে সে আল্লাহ তা‘আলার নিরাপত্তায় থাকে এবং তার সান্নিধ্যে থাকে, যেহেতু সে আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় চেয়েছে, আর তাই আল্লাহ তা‘আলা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, সুতরাং কারও উচিৎ নয় নিজেকে দু:খ বা কষ্টের সম্মুখীন করা, আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে স্বীয় হক/অধিকার তলব করবেন, আর যার কাছে স্বীয় হক তলব করে বসবেন সে কোন পালানোর স্থান পাবেনা এবং কোন আশ্রয় স্থলও পাবেনা। এতে রয়েছে কঠোর ভীতি প্রদর্শন ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি নামাযীদের বাধা দান করে এবং সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে ফজরের নামাযে উপস্থিত হয়। কিছু কিছু হাদীস এমন এসেছে যাতে ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে পড়ার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ হয়েছে। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব)
৬-যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের নামায আদায় করল, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির (শরীয়ত সম্মত পন্থায়) করল তার জন্য রয়েছে হজ্ব এবং ওমরার সাওয়াব; কেননা আনাস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করল এবং দুই রাকাআত নামায আদায় করল তার জন্য রয়েছে হজ্ব ও ওমরার সাওয়াব: পরিপুর্ণ, পরিপুর্ণ, পরিপুর্ণ)। (তিরমিযি-৫৮৬)
৭-এশা এবং ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায়ের জন্য রয়েছে মহা প্রতিদান; কেননা উসমান বিন আফফান (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি: (যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে এশার নামায আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জাগরন করল, আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল সে যেন গোটা রাত নামায পড়ল)। (মুসলিম-৬৫৬)
কারও কারও মতে: হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল এবং এশার নামাযও জামা‘আতের সাথে আদায় করল সে যেন পুরো রাত নামায পড়ল। আবু দাউদের শব্দ উক্ত অর্থের সমর্থন করে: (যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে এশার নামায আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জাগরণ করল এবং যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন গোটা রাত জাগরণ করল)। (আবুদাউদ, তিরমিযি)। আর মুনযিরি এই বক্তব্য এখতিয়ার করেছেন অর্থাৎ এশা ও ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করার মধ্যেই রয়েছে পুরা রাত জাগরণের সাওয়াব। (তুহফাতুল আহওয়াজী-১/১৩, আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব-১/৩৪৩ )
কারো কারো মতে: যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে এশার নামায আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জাগরণ করল এবং যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করল তার জন্য রয়েছে গোটা রাত জাগরণ করার/এবাদত করার ফযীলত, আর এটা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। ইমাম ইবনে খুযাইমাহ (রাহ:) উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থন করেছেন, অতঃপর বলেছেন: (এশা ও ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করার ফযীলত, উহার বিবরণ হল, ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে পড়া এশার নামায জামা‘আতের সাথে পড়া অপেক্ষা উত্তম, ফজরের নামায জামা‘আতের সাথে পড়ার ফযীলত এশার নামায জামা‘আতের সাথে পড়ার ফযীলত অপেক্ষা দ্বিগুণ বেশী), অতঃপর তিনি মুসলিম এর হাদীসের ন্যায় শব্দে হাদীস উল্লেখ করেছেন, (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ-২/৩৬৫) আল্লাহ তা‘আলার অনুকম্পা প্রশস্ত/বিশাল। নবী ফজরের নামায ও এশার নামাযের ব্যাপারে বলেছেন: (...যদি তারা জানত যে উভয় নামাযে কি রয়েছে তবে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও হাজির হত)। (বুখারী-৬৪৪, মুসলিম-৬৫১)
৮- রাত ও দিনের ফেরেশ্তাদের ফজর ও আছরের নামাযে অংশগ্রহণ করা; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূল বলেছেন: (তোমাদের মাঝে রাতের এবং দিনের ফেরেশ্তাগণ একদলের পর অপর দল আগমন করেণ এবং ফজরের ও আছরের নামাযে সমবেত হন, অতঃপর রাতে যারা তোমাদের মাঝে ছিল তাঁরা উর্ধোলোকে চলে যায়, তারপর তাঁদের রব তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন অথচ তিনি তাদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত, আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এসেছ? তাঁরা বলেন: তাদেরকে এ অবস্থায় রেখে এসেছি যে, তারা নামায পড়তেছে এবং তাদের কাছে আমরা যখন এসেছি তখনও তারা নামায পড়তেছিল)। (বুখারী ও মুসলিম) ইমাম নববী (রহ:) বলেন: يتعاقبون এর অর্থ হল: একদলের পর আরেক দল আগমন করেন এবং সেখান থেকেই সৈনিকদের আগমন করা এসেছে, আর উহা হল একদল তাদের কওমের সুরক্ষিত সীমান্তে চলে যাবে অপর দল চলে আসবে। আর ফজর ও আছরের নামাযে তাঁদের সমবেত হওয়া হল, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সহানুভূতির বহি:প্রকাশ, তাঁর পক্ষ হতে তাদের জন্য সম্মান প্রদান যে, তিনি ফেরেশ্তাদেরকে বান্দাদের নিকট সমবেত হওয়া এবং তাদের থেকে পৃথক হওয়া তাদের আল্লাহর এবাদাত এবং তাঁর আনুগত্যের সময়ই নির্ধারন করেছেন। যাতে করে তাদের জন্য স্বাক্ষ্যদাতা হতে পারেন, যে সকল উত্তম কাজে তাদেরকে যা করতে দেখেছেন সে ব্যাপারে)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম- ৫/১৩৮)। তবে অধিক স্পষ্ট কথা এবং যা অধিকাংশের বক্তব্য তা এই যে, এ সকল ফেরেশ্তাগণ হচ্ছেন কিতাব সংরক্ষণকারী।
কারো কারো মতে: এমনও হতে পারে যে, তাঁরা সংরক্ষণকারীগণ ব্যতীত মানুষের মাঝে অবস্থান কারী ফেরেশ্তাদের মধ্য থেকে একদল। আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জ্ঞাত। (শারহুন্নববী আ’লা সহীহ মুসলিম- ৫/১৩৮)
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল এর নিকট বসা ছিলাম, অতঃপর তিনি পূর্ণীমার রাতে চাঁদের দিকে তাঁকালেন এবং বললেন: (নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে যেমনভাবে এই চাঁদটা দেখতেছ, তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন রকমের কষ্টক্লেশ বা ভীড়াভীড়ি করতে হবেনা, আর যদি তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয় সূর্যোদয়ের পুর্বে ও সূর্যাস্তের পুর্বে নামায আদায় করা তাহলে তাই কর) অর্থাৎ ফজর ও আছর নামায, অতঃপর জারির (র:) তেলাওয়াত করলেন:
অর্থ:‘‘এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালন কর্তার স্বপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন’’। (ক্বাফ:৩৯) (বুখারী ও মুসলিম)। মহা ফযীলত প্রমাণিত হয় ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজর ও আছরের নামাযে যত্ন নেয়/নিয়মিত আদায় করে, আবু বকর বিন আম্মারাহ বিন রুআইবাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (যে ব্যক্তিই সূর্যোদয়ের পুর্বে ও সূর্যাস্তের পুর্বে নামায আদায় করবে সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা) অর্থাৎ ফজর ও আছরের নামায। (মুসলিম)
উক্ত সাহাবী (রা:) হতে আরও বর্ণিত: রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি দুই শীতল সময়ের নামায পড়ল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে)। (বুখারী ও মুসলিম) আর ঐ দুই নামায হল: ফজর ও আছরের নামায। আর প্রচন্ড ভীতি প্রদর্শণ এসেছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আছরের নামায ছেড়ে দেয় অথবা কাযা করে, বুরায়দাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি তার সাথীদেরকে কোন এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে বলেন: তোমরা তাড়াতাড়ি আছরের নামাযে হাজির হবে; কেননা নবী বলেছেন: (যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়)। (বুখারী)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তির আছরের নামায ছুটে যায় তার যেন পরিবার পরিজন ও সম্পদ তুলে নেয়া হয়/তার থেকে অপসারন করা হয়)। (বুখারী)
ইমাম কুরতুবী (রা:) উল্লেখ করেন: ( وتر أهله وماله ) শব্দটি পেশ দিয়ে বর্ণিত হয়েছে যার অর্থ হল: তার থেকে অপসারন করা হয়েছে এবং কব্জা করা হয়েছে এবং ( أهله وماله ) যবর দিয়েও বর্ণিত হয়েছে যার অর্থ হল: ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। হাদীসের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেছেন: উপরোক্ত শাস্তি তার জন্য রয়েছে যে আছরের নামায নির্ধারিত সময়ে পড়ে না। এবং আরও বলা হয়েছে: উহা তার জন্য যে আছরের নামায সূর্য হলুদ রং ধারন করা পর্যন্ত দেরী করে। আরও বলা হয়েছে: আছরের নামায নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে; কেননা উহাতে ফেরেশ্তাগণ উপস্থিত থাকেন, আর এই বক্তব্য অনুযায়ী ফজরের নামাযও একই হুকুমে পড়ে।
আরও বলা হয়েছে: আছরের নামায নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে; কেননা উহা এমন নামায যা মানুষের ব্যস্ততার সময়ে আসে, আর এই বক্তব্যানুযায়ী ফজরের নামায উপরোক্ত হুকুমের জন্য অধিকতর উপযোগী; কেননা উহা ঘুমের সময়ে আসে। আর রাসূল এর বক্তব্য: (যে ব্যক্তি আছরের নামায ছেড়ে দেয় তার আমল ধ্বংস হয়ে যায়) উহা শুধু আছরের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট নয়, বরং উহা আছর ব্যতীত অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রেও একই।
৯- আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে নামায আদায়ের দ্বারা বিস্মিত হন; কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জামা‘আতে নামায আদায় করাকে ভালবাসেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আশ্চর্যান্বিত হন সমবেতভাবে নামায আদায় করলে)। (আহমাদ)
আর এই বিস্মিত হওয়া আল্লাহ তা‘আলার জন্য যেমনটি শোভাপায় তেমনটিই, তাতে তাঁর সৃষ্টিজগতের কারো সাথে কোন রকমের সাদৃশ্য নাই; কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার বিস্মিত হওয়া তাঁর সৃষ্টিজগতের বিস্মিত হওয়ার মত নয়:
অর্থ: ‘‘কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়, তিনি সব শুনেন, সব দেখেন’’। (আশ্শুরা-১১)
১০- জামা‘আতের সাথে নামাযের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তি নামাযের মধ্যেই থাকেন, নামাযের পূর্বে ও পরে যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে থাকে ততক্ষণই উপরোক্ত হুকুমের আওতায় থাকে; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল বলেছেন: (বান্দাহ ততক্ষণ নামাযরত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় নামাযের জন্য অপেক্ষমান থাকে এবং ফেরেশ্তাগণ বলেন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, এ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যে পর্যন্ত না সে চলে যায় বা কিছু ঘটায়)। আমি বললাম: সে কি ধরনের কাজ ঘটায়? তিনি বললেন: (বায়ু নির্গত করে অথবা বাত কর্ম করে)। মুসলিম এর শব্দে রয়েছে : (ফেরেশ্তাগণ তোমাদের কারো উপর ততক্ষণ পর্যন্ত রহমতের দু‘আ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে ঐ বৈঠকে থাকে যেখানে সে নামায পড়েছিল এবং তাঁরা বলতে থাকেন: হে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন হে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করুন, যে পর্যন্তনা সে কষ্টদেয় যে পর্যন্তনা সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)। (বুখারী ও মুসলিম) এবং (কাউকে কষ্ট না দেয়) অর্থাৎ তার থেকে এমন কিছু সংঘটিত হওয়া যার দ্বারা আদম সন্তানেরা কিংবা ফেরেশ্তাগণ কষ্টপায়। আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জ্ঞাত।
১১-ফেরেশ্তাগণ নামাযের পুর্বে ও পরে দু‘আ করতে থাকেন ঐ ব্যক্তির জন্য যে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে যে পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় থাকে এবং নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, যে পর্যন্ত না সে কিছু ঘটায় অথবা যে পর্যন্ত না সে কষ্ট দেয়; কেননা আবু হুরায়রাহ (র:) থেকে হাদীস যাতে রয়েছে: (বান্দাহ ততক্ষণ নামাযরত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় নামাযের জন্য অপেক্ষমান থাকে এবং ফেরেশ্তাগণ বলেন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, এ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যে পর্যন্ত না সে চলে যায় অথবা খারাপ কিছু না ঘটায়..), মুসলিম শরীফে রয়েছে: (ফেরেশ্তাগণ তোমাদের কারো উপর ততক্ষণ পর্যন্ত রহমতের দু‘আ করতে থাকেন যে পর্যন্ত সে ঐ বৈঠকে থাকে যেখানে সে নামায পড়েছিল এবং তারা বলতে থাকেন: হে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেদিন, হে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করুন, যে পর্যন্ত না সে কষ্টদেয় যে পর্যন্তনা সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)। (বুখারী ও মুসলিম) আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (ফেরেশ্তাগণ নামাযের মুসল্লায় তার জন্য দু‘আ করতে থাকেন, মসজিদে নামাযের পূর্বে ও পরে যে পর্যন্ত সে নামাযের মুসল্লায় থাকে যে পর্যন্ত না সে কষ্টদেয় গীবতের দ্বারা অথবা পরনিন্দার দ্বারা, অথবা বাতিল বা অন্যায় কথার দ্বারা এবং যে পর্যন্ত না সে কিছু ঘটায় অর্থাৎ বায়ু নির্গত করে)
১২- প্রথম কাতারের ফযীলত এবং জামা‘আতে নামাযরত কাতারের ডান দিকের ফযীলত, কাতারে মিলিত হয়ে দাড়ানোর ফযীলত। এ ক্ষেত্রে অনেক ফযীলত সাব্যস্ত হয়েছে তার থেকে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল:
প্রথম ফযীলত: প্রথম সারির উপর লটারী এবং উহা ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপ; কেননা আবু হুরায়রাহ (র:) থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন: (যদি মানুষ জানত যে আযানের মধ্যে এবং প্রথম সারিতে কি রয়েছে, অতঃপর উহা লটারী ব্যতীত পাওয়া না যেত তাহলে অবশ্যই তারা লটারী করত..)। (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে: (যদি তোমরা জানতে অথবা তারা জানত প্রথম সারিতে কি রয়েছে, তাহলে লটারী হত)। (মুসলিম)
হাদীসে রয়েছে যে, প্রথম সারি ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপ; কেননা উবাই বিন কা’ব (রা:) এর হাদীসে রয়েছে, তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন, (...নিশ্চয় প্রথম সারি ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপ, যদি তোমরা জানতে উহাতে কি রয়েছে তবে অবশ্যই সেদিকে ধাবীত হতে-আল-হাদীস)। (সুনানে আবু দাউদ)
শায়েখ আহমাদ আল্ বান্না নবী এর বাণী: (ফেরেশ্তাদের সারির অনুরূপ...) এর ব্যাখ্যায় বলেন: (অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যলাভ, তার রহমত অবতীর্ণ হওয়া। আর এর থেকে যা অবহিত হওয়া যায় তা হল নিশ্চয় ফেরেশ্তাগণ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাতে সারিবদ্ধ হন, এ ব্যাপারে জাবের (রা:) হতে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে, তিনি বলেন: রাসূল আমাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসলেন, অতঃপর বললেন: (তোমরা কি এমনভাবে সারিবদ্ধ হবে না যেভাবে ফেরেশ্তাগণ তাঁদের রবের নিকট সারিবদ্ধ হন?) আমরা বল্লাম হে আল্লাহর রাসূল, ফেরেশ্তাগণ কিভাবে তাঁদের রবের নিকট সারিবদ্ধ হন? তিনি বললেন: (তাঁরা প্রথম সারি পরিপূর্ণ করেন এবং লাইনে চাপাচাপি করে দাঁড়াণ)। (মুসলিম)
দ্বিতীয় ফযীলত: প্রথম সারি সর্বোত্তম সারি; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (পুরুষদের উত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারি, আর নারীদের সর্বোৎকৃষ্ট সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে প্রথম সারি)। (মুসলিম)
ইমাম নববী (রহ:) বলেন: (পুরুষদের সারির ব্যাপারে যে কথা তা সার্বজনীন অর্থাৎ সবসময়ের জন্য, সুতরাং সর্বদাই পুরুষদের উত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারি, পক্ষান্তরে হাদীসে নারীদের সারি দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ সকল নারীদের সারি যারা পুরুষদের সাথে একত্রে নামায পড়ে, কিন্তু নারীরা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে নামায পড়লে তাদের হুকুম পুরুষদের মতই, তাদের সর্বোত্তম সারি হল প্রথম সারি এবং তাদের সবচেয়ে মন্দ সারি হচ্ছে সর্বশেষ সারি, আর পুরুষ ও নারীর সবচেয়ে মন্দ সারি দ্বারা উদ্দেশ্য হল সবচেয়ে কম সাওয়াব ও সবচেয়ে কম ফযীলত পূর্ণ এবং শরীয়তের আদেশের সবচেয়ে দূরবর্তী এবং উত্তমের ব্যাপারে তার বিপরীত। আর নারীদের যারা পুরুষদের সাথে নামায পড়ে তাদের সর্বশেষ সারির ফযীলত প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের সংমিশ্রণ হতে তাদের দূরে অবস্থানের কারণে এবং তাদের দেখা এবং তাদের চলাফেরা দেখে ও তাদের কথা শুনে তাদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক ইত্যাদি থেকে দূরে অবস্থানের কারণে আর তাদের প্রথম সারির তিরষ্কার উপরোক্ত অবস্থার বিপরীত হওয়ার জন্য, আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত)। (শারহুন্নববী আ’লা সহীহ মুসলিম-৪/৪০৩)
তৃতীয় ফযীলত: আল্লাহ তা‘আলা এবং ফেরেশ্তাগণ প্রথম কাতার সমূহের জন্য সালাত পড়েন, প্রথম লাইনের জন্য সবচেয়ে বেশী সালাত পড়া হয়; কেননা আবু উমামাহ (রা:) থেকে হাদীস তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম সারির উপর সালাত পড়েন) তাঁরা বল্লেন: হে আল্লাহর রাসূল, দ্বিতীয় সারির উপর? তিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগন প্রথম সারির উপর দরূদ পড়েন) তাঁরা বল্লেন: হে আল্লাহর রাসূল, দ্বিতীয় সারির উপর? তিনি বলেন: (এবং দ্বিতীয় সারির উপরও)। (আহমাদ)
আর আল্লাহ তা‘আলার সালাত হল: ফেরেশ্তাদের নিকট তাদের প্রশংসা করা আর ফেরেশ্তাদের ও নবী এবং সকল মানুষের সালাত হল: দু‘আ করা ও ক্ষমা চাওয়া।
নোমান বিন বাশির (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম লাইনের উপর সালাত পড়েন অথবা প্রথম সারি সমূহের উপর সালাত পাঠ করেন)। (আহমাদ)
বারা বিন আযেব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলতেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তার ফেরেশ্তাগণ প্রথম দিকের সারি সমূহের উপর সালাত পড়েন)। (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
চতুর্থ ফযীলত: নবী প্রথম সারির উপর তিনবার সালাত পাঠ করেছেন এবং দ্বিতীয় সারির উপর একবার সালাত পাঠ করেছেন; কেননা ইরবায বিন ছারিয়াহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল থেকে বর্ণনা করেন: (তিনি প্রথম সারির উপর তিনবার সালাত পাঠ করেছেন এবং দ্বিতীয় সারির উপর একবার সালাত পাঠ করেছেন)। ইবনে মাজাহ এর শব্দ হল: (তিনি প্রথম সারির জন্য তিনবার ইস্তেগফার করতেন এবং দ্বিতীয় সারির জন্য একবার ইস্তেগফার করতেন)। (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
৫ম ফযীলত: আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফেরেশ্তাগণের সালাত, কাতারের ডান দিকের লোকদের উপর; কেননা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ কাতারের ডান দিকের লোকদের উপর সালাত পড়েন)। (আবুদাউদ, ইবনেমাযাহ) বারা বিন আযেব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা যখন রাসূল এর পিছনে নামায পড়তাম তখন আমরা তাঁর ডান দিকে থাকতে পছন্দ করতাম যাতে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসেন, তিনি বলেন: অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি: (হে রব আমাকে ঐ দিনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন যেদিন আপনি আপনার বান্দাহদেরকে পূনরায় উঠাবেন অথবা সমবেত করবেন)। (মুসলিম)
৬ষ্ঠ ফযীলত: যে ব্যক্তি কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ায় অর্থাৎ কাতার পর্যন্ত পৌঁছে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে থাকেন এবং তার উপর আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ সালাত পড়েন; কেননা আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর ফেরেশ্গণ কাতারের সাথে যারা মিলিত হন তাদের উপর সালাত পড়েন এবং যে ব্যক্তি খালী স্থান পূরণ করেণ আল্লাহ তা‘আলা উহার বিনিময় তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন)। (ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে খুযাইমাহ)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ায় আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে তাকে মিলান এবং যে ব্যক্তি কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিচ্ছিন্ন করেন)। (নাসায়ী, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ)
১৩-আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা করা ও ভালবাসা ঐ ব্যক্তিকে যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকে; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেছেন: (ইমাম যখন আমীন বলেন তখন তোমরা আমীন বল; কেননা যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকে তার পিছনের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়)। (বুখারী ও মুসলিম) আবু মূসা আল্আশআ’রী (রা:) থেকে হাদীস যার একাংশে রয়েছে, রাসূল আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিলেন এবং আমাদের জন্য আমাদের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করলেন, আমাদের নামায শিক্ষা দিলেন, অতঃপর বললেন: (যখন তোমরা নামায পড় তখন তোমাদের লাইন সোজা কর, এরপর তোমাদের কেহ ইমামতি করবে, সে যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ বলবে তখন তোমরা বলবে: আমীন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ভালবাসবেন-আলহাদীস)। (মুসলিম)
আল্লাহু আকবার কত বিড়াটইনা এই পুরস্কার: পিছনের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া, আল্লাহ তা‘আলার ভালবাসা ঐ ব্যক্তির জন্য যার আমীন বলা ফেরেশ্তাদের আমীন বলার সাথে সম্মত হয়ে থাকে!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/76/7
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।