hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জামা‌‘আতের সাথে নামায আদায় কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তার তাৎপর্য, ফযীলত, আহকাম, উপকারিতা ও আদাবসমূহ

লেখকঃ ড. সায়ীদ ইবন আলী ইবন ওয়াহফ আল্ ক্বাহতানি

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়ার ফযীলত:
জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়া সবচেয়ে বড় আনুগত্যের অন্যতম, এ ব্যাপারে অনেক মহৎ ফযীলতের প্রমাণ রয়েছে, তারমধ্য থেকে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হল:

১- মসজিদে জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের জন্য যে ব্যক্তির প্রচন্ড ভালবাসা রয়েছে সে ব্যক্তি ক্বেয়ামাতের দিন আল্লাহ তা‘আলার ছায়াতলে থাকবেন; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: (সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন এমন দিনে যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না: ন্যায়পরায়ণ ইমাম, ঐ যুবক যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে বেড়ে উঠেছে, এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে/ঝুলন্ত থাকে, এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য পরস্পরকে ভালবাসে এবং তাঁর জন্য একত্রিত হয়, আর তাঁর জন্যই পৃথক হয়, এমন ব্যক্তি যাকে এমন এক মহিলা আহবান করে যে উচুবংশীয় ও সুন্দরী, অতঃপর সে বলে: আমি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করি, এমন ব্যক্তি যে এমন গোপনীয় ভাবে সদ্কাহ করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না, এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে অতঃপর তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে)। মুসলিমের শব্দে রয়েছে: (এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় মসজিদে ফিরে আসা পর্যন্ত মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে/ লেগে থাকে অর্থাৎ সবসময় মসজিদের সাথেই থাকে)

ইমাম নববী (রহ:) (এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে/ঝুলন্ত থাকে) এর ব্যাখ্যায় বলেন: (এর অর্থ হল মসজিদকে তার প্রচন্ড ভালবাসা, মসজিদে জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের জন্য সার্বক্ষণিক সম্পর্ক রাখা, এর অর্থ এই নয় যে,,সে সব সময় মসজিদে বসে থাকবে)। (শারহুন্নববী আলা সহীহ মুসলিম-৭/১২৬) আর হাফেজ ইবনে হাজার (রহ:) বলেন: معلق في المساجد (মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত) বুখারী ও মুসলিমে এভাবে এসেছে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে বুঝা যায় যে, উহা তা’লীক্ব (সম্পর্ক) শব্দ হতে এসেছে, তিনি যেন মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে ঝুলন্ত কোন কিছুর সাথে তুলনা করেছেন, যেমন মোমবাতি কেননা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, দীর্ঘ সময় তার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যদিও তার দেহ মসজিদের বাহিরে থাকে। জাওযাকির বর্ণনা এর প্রমাণ করে: (যেন তার অন্তর মসজিদে ঝুলন্ত) (মু‘আল্লাক শব্দটি) আ’লাক্বাহ থেকেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে: আর উহা হল প্রচন্ড ভালবাসা। আহমাদের বর্ণনা এর প্রমাণ করে: (মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত)। (ফাতহুল বারী-২/১৪৫)

২- জামা‘আতের উদ্দেশ্যে মসজিদে হেটে যাওয়ার দ্বারা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তার ত্রুটি বিচ্যুতি মিটিয়ে দেওয়া হয়, অনেক পূণ্য লেখা হয়; কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: (যেকোন ব্যক্তিই পবিত্র হয় এবং উত্তমভাবে পবিত্র হয়, এরপর এই মসজিদসমূহের যেকোন মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক কদমে পূণ্য লিখে রাখেন, ঐ কদমের বিনিময় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, উক্ত পথ চলার বিনিময়ে তার থেকে গুনাহ মিটিয়ে দেন...)। (মুসলিম-৬৫৪) আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে হাদীস, যে হাদীস তিনি নবী হতে বর্ণনা করেন এবং তাতে রয়েছে: (...উহা এজন্য যে, তোমাদের কেহ যখন ওজু করে অতঃপর উত্তমভাবে ওজু করে, এরপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় এবং শুধু নামাযের জন্যই বের হয়, সে এমনকোন পা সামনে রাখেনা যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় না এবং তার দ্বারা তার ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়া হয়...)। (বুখারী ও মুসলিম) এবং আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে ওজু করল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার ঘর সমূহের যে কোন ঘরে চলে যায়; আল্লাহ তা‘আলার ফরজ সমূহের মধ্যে একটি ফরজ আদায়ের জন্য, তার একটি পদক্ষেপের মাধ্যমে তার ত্রুটি মিটিয়ে দেওয়া হয়, আর অপরটি দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়)। (মুসলিম-৬৬৬)

ইমাম কুরতুবী (রহ:) বলেন: (আদ্দাওয়াদী বলেন: যদি তার গুনাহ থাকে তাহলে তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়, অন্যথায় উহার দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আমার বক্তব্য হল: ইহার দাবী হল যে, এক পদক্ষেপ দ্বারা একটি মর্যাদা অর্জিত হয়, হয় তার গুনাহ মাফ করা হয়, না হয় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আর কেউ কেউ বলেন: বরং এক কদমের দ্বারা তিনটি বিষয় অর্জিত হয়; কেননা অন্য হাদীসে রয়েছে: (আল্লাহ তা‘আলা তার প্রত্যেক কদমের জন্য একটি পূণ্য লিখেন, উহার দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন) আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।

আমি আমাদের শায়েখ সম্মানিত ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহ:) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: (প্রত্যেক কদমে: উহার দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়, উহার দ্বারা একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য একটি পূণ্য লিপিবদ্ধ করা হয় আর এই সর্বশেষ অতিরিক্ত হাছানাহ বা পূণ্য শব্দটি মুসলিম শরীফে ইবনে মাসউদ (র:) থেকে বর্ণিত, আর যদি বর্ণনা সঠিক হয় যার একটি দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং অপরটি দ্বারা গুনাহ মাফ করা হয়, তবে এই বর্ণনা ছিল প্রথম বর্ণনা, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অতিরিক্ত মর্যাদা দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন এবং প্রত্যেক কদমের জন্য তিনটি মর্যাদা সাব্যস্ত করেছেন: মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, গুনাহ মাফ করে দেন এবং পূণ্য লিখে রাখেন)।

৩-তার জন্য মসজিদ হতে বাড়ীতে হেটে যাওয়া লিখা হয়, যেমনটি লিখা হয়েছে বাড়ী থেকে মসজিদে হেটে যাওয়া, যদি সে সাওয়াবের আশা করে; কেননা উবাই বিন কা’ব (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক ব্যক্তি ছিল, আমার জানামতে মসজিদ হতে সবচেয়ে বেশী দুরের ব্যক্তি তার থেকে আর কেহ ছিলনা, তার কোন নামাযে আসতে ভূল হতনা, তিনি বলেন: তাকে বলা হল অথবা আমি তাকে বললাম: আপনি যদি একটি গাধা ক্রয় করতেন যাতে অন্ধকারের সময়ে এবং উত্তাপের সময়ে আরোহণ করতে পারতেন? তিনি বললেন: আমি এতে আনন্দিত নই যে আমার বাড়ী মসজিদের নিকটে হবে, আমি চাই যে মসজিদে হেটে যাওয়া এবং মসজিদ থেকে পরিবারে ফিরে আসা আমার জন্য লিখা হোক অর্থাৎ হেটে চলার সাওয়াব আমার আমল নামায় লিখা হোক, অতঃপর রাসূল বলেন: (আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য উহা সবই জমা করেছেন)। অন্য এক শব্দে রয়েছে: (নিশ্চয় তোমার জন্য তাই রয়েছে যে সাওয়াবের আশা তুমি করেছ)। (মুসলিম)

ইমাম নববী (রহ:) বলেন: (উপরোক্ত হাদীসে সাওয়াব সাব্যস্ত হয় ফেরার সময়ে হাটার মধ্যেও, যেমনটি সাব্যস্ত হয় যাওয়ার পথে হাটার মধ্যে)। (শারহুন্নববী আ’লা সহীহ মুসলিম-৫/১৭৪)

আবু মূসা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (নিশ্চয় মানুষের মাঝে নামাযে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব ঐ ব্যক্তির জন্য যে সবচেয়ে দূর থেকে পায়ে হেটে আসে, অতঃপর তার থেকে যে একটু কাছে, আর যে ব্যক্তি নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, অবশেষে ইমামের পিছনে নামায পড়ে, তার ঐ ব্যক্তির থেকে অধিক বেশী সাওয়াব হয় যে ব্যক্তি নামায পড়ে অতঃপর ঘুমায়)। (বুখারী ও মুসলিম)

জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: মসজিদের চতুর্দিকে জায়গা খালী ছিল, অতঃপর বানু সালামাহ মসজিদের নিকটে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল, আর এ সংবাদ রাসূল এর কাছে পৌঁছল, এরপর তিনি তাদেরকে বললেন: (আমার নিকট এই সংবাদ পৌঁছেছে যে তোমরা মসজিদের নিকটে স্থানান্তরিত হতে চাও) তারা বল্ল: হ্যা, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা ইচ্ছা করেছি, তখন তিনি বলেন: (হে বানী সালামাহ, তোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর, তোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর; তোমাদের পদচিহ্ণ ‎‎ সমূহ লিখা হবে, তোমাদের বাড়ির বর্তমান এলাকাতেই অবস্থান কর; তোমাদের পদচিহ্ণ ‎‎ সমূহ লিখা হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)

৪-জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পথচলার কারণে গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দেওয়া হয়; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন: (আমি কি তোমাদেরকে এমন পথ দেখাবো না যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা সমূহ বৃদ্ধি করে দেন?) তারা বল্ল: অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বলেন: (কষ্টকরে হলেও যথাযথভাবে ওজু করা, বেশী বেশী মসজিদে পদচারণা, এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা, আর উহাই তোমাদের সম্পর্ক, আর উহাই তোমাদের সম্পর্ক অর্থাৎ মসজিদের সাথে গভীর সম্পর্ক)। (মুসলিম)

গুনাহ মিটিয়ে ফেলার দ্বারা গুনাহ মাফ করার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

এবং এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে গুনাহ মিটিয়ে ফেলার দ্বারা ফেরেশ্তাদের কিতাব থেকে মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে। তখন এটা গুনাহ মাফের দলীল হিসাবে পরিগণিত হবে, আর মর্যাদা সমূহ বৃদ্ধি করা হল: জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান, ইছবাগুল ওজু হল: তার পরিপূর্ণতা, আল্মাকারেহ হল: প্রচন্ড শীতের মধ্যে ওজু করা এবং শরীরের ব্যথা বা কষ্ট ইত্যাদি, বেশী বেশী পদচারনা হল: বাড়ী অনেক দুরে এবং বারবার গমন। (শারহুন্নববী আ’লা সহীহ মুসলিম-৩/১৪৩ )

৫- যথাযথভাবে ওজু করার পর জামা‘আতে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলার বিনিময় গুনাহ সমূহ মাফ করা হয়; কেননা উসমান বিন আফ্ফান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: (যে ব্যক্তি নামাযের জন্য ওজু করে অতঃপর পরিপূর্ণভাবে ওজু করে ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং মানুষের সাথে নামায আদায় করে, অথবা জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করে; অথবা মসজিদে নামায আদায় করে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন)। (মুসলিম)

৬- জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আতিথ্যের ব্যবস্থা ঐ ব্যক্তির জন্য যে সকালে অথবা বিকালে মসজিদে যায়। কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন: (যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে মসজিদে গমন করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে আতিথ্যের ব্যবস্থা করেন। (বুখারী ও মুসলিম)

আর ( غدا ) শব্দটি غدو থেকে এসেছে, অর্থাৎ সকালে সকালে এসেছে এবং راح : অর্থ হল সন্ধায় ফিরে আসা, অতঃপর উভয় শব্দ বের হওয়া ও ফিরে আসার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ও ব্যাপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং أعد )) হল প্রস্তুত করা, ( النزل ) হল মেহমানের আগমনের সময় তার সম্মানের জন্য যা প্রস্ত্তত করা হয় এবং উহা প্রত্যেক সকাল সন্ধায়ই হয়ে থাকে, ইহা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ তিনি এই মর্যাদা তাকেই দিয়ে থাকেন যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধার আমল করে থাকে, তার জন্য যাওয়ার বিনিময়ে জান্নাতে প্রস্ত্তত করা হয় আপ্যায়ন এবং ফিরে আসার জন্য প্রস্ত্তত করা হয় আপ্যায়ন ।

৭- যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের জন্য যায়, অতঃপর তার জামা‘আত ছুটে যায় অথচ সে তার হকদার ছিল অর্থাৎ জামা‘আতের সাথে নামায পড়া ছিল তার অভ্যাস, তার জন্য অনুরূপ সাওয়াব রয়েছে যে পরিমাণ জামা‘আতে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য রয়েছে; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী বলেছেন: (যে ব্যক্তি ওজু করল অতঃপর উত্তমভাবে ওজু করল, অতঃপর চলে গেল অর্থাৎ মসজিদে চলে গেল কিন্তু মানুষদেরকে এ অবস্থায় পেল যে, তারা ইতিপূর্বে নামায পড়ে নিয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ পরিমাণ সাওয়াব দিবেন যে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি নামায পড়েছে এবং তাতে উপস্থিত ছিল অর্থাৎ জামা‘আতে উপস্থিত ছিল এবং এতে তাদের সাওয়াবের থেকে কোন অংশ কমানো হবেনা)। (আবু দাউদ)

৮- যে ব্যক্তি পবিত্র হল এবং জামা‘আতে নামায আদায়ের জন্য বের হল, সে ব্যক্তি বাড়ী ফেরার আগ পর্যন্ত নামাযের মধ্যেই থাকে; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (তোমাদের কেহ যখন বাড়ীতে ওজু করে, অতঃপর মসজিদে আসে, সে নামাযের মধ্যেই থাকে যে পর্যন্ত না সে বাড়ী ফিরে আসে এবং কোন ধরনের ঘাটতি হবেনা: এমনিভাবে) এবং তিনি তার আঙ্গুল গুলো পরস্পর মিলিয়ে দেখালেন। (ইবনে খুযাইমাহ, আলহাকেম)

৯- যে ব্যক্তি পবিত্রতা সহকারে জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হল তার পূণ্য ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি হজ্বের জন্য মুহরিম অবস্থায় বের হয়েছে; কেননা আবু উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূল বলেছেন: (যে ব্যক্তি পবিত্রতা সহকারে ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়েছে তার পূণ্য ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি হজ্বের জন্য মুহরিম অবস্থায় বের হয়েছে)। (আবু দাউদ)

১০- জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার হেফাজতে থাকেন; কেননা আবু উমামাহ আলবাহেলী (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেছেন: (তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেই আল্লাহ তা‘আলার হেফাজতে থাকেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়েছে, সে আল্লাহ তা‘আলার হেফাজতে থাকে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা তাকে মৃত্যুদান করেন, অতঃপর তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে ফিরিয়ে দেন সে যে পূণ্য অর্জন করেছে এবং যে গনীমত অর্জন করেছে তা সমেত। আর ঐ ব্যক্তি যে মসজিদে চলে যায় সে আল্লাহ তা‘আলার হেফাজতে থাকেন যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা তাকে মৃত্যুদান করেন অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে ফিরিয়ে দেন সে যে পূণ্য অর্জন করেছে এবং যে গনীমত অর্জন করেছে তা সমেত এবং ঐ ব্যক্তি যে তার বাড়ীতে নিরাপদে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহ তা‘আলার হেফাজতে থাকেন)। এটা আল্লাহ তা‘আলার করুণা যে, তিনি এই তিন ব্যক্তির প্রত্যেককেই তাঁর হেফাজতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাতে করে তিনি পরিপূর্ণ প্রতিদান দান করেন। আর ( ضامن ) এর অর্থ হল: যাকে জামিন দেওয়া হয়, তবে রাসূল এর বাণী (এমন ব্যক্তি যে তার বাড়ীতে নিরাপদে প্রবেশ করল) ইহার দুটি দিক রয়েছে:

প্রথম দিক হল: সে যখন বাড়ীতে প্রবেশ করে তখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করা।

দ্বিতীয় দিক হল: সে বাড়ীতে প্রবেশের দ্বারা নিরাপত্তা কামনা করেছিল: অর্থাৎ ফিতনার থেকে বাচার উদ্দেশ্যে শুধু বাড়ীতেই বসে থাকা, এর মাধ্যমে তার একাকী জীবন যাপনকে পছন্দ করে নেয়া এবং মানুষের দলাদলি থেকে নীরবে দূরে থাকা। এবং এটা তখন হয় যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলিম ব্যক্তি তার দ্বীনের ব্যাপারে শংকিত থাকে, পক্ষান্তরে ফিতনা থেকে নিরাপত্তা পাওয়া গেলে তখন ঐ ঈমানদার ব্যক্তি যে মানুষের সাথে মিশে থাকে এবং তাদের পক্ষ হতে কষ্ট পায় ও ধৈর্য্যধারণ করে, তাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকে, সে ঐ ঈমানদার ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে মানুষের সাথে মিশে না, তাদের পক্ষ হতে কষ্ট পেলে তাতে ধৈর্য্য ধারণ করে না। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।

১১- জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী ফেরেশ্তাগণের কথোপকথন; কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা:) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন, যার একাংশে রয়েছে (আল্লাহ তা‘আলা সপ্নে নবী কে বলেন: (...হে মুহাম্মদ আপনি কি জানেন কোন ব্যাপারে নিকটবর্তী ফেরেশ্তাগণ পরস্পর কথোপকথন করে? আমি বললাম: হ্যাঁ, গুনাহসমূহ মোচনের ব্যাপারে: নামাযের পরে মসজিদে সময় কাটানো, পায়ে হেটে নামাযের জামা‘আতে যাওয়া, কষ্ট করে যথাযথ ওজু সম্পন্ন করা, যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে কল্যাণের সাথে জীবন যাপন করবে এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং সে গুনাহের ব্যাপারে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল সেদিন যেমন নিষ্পাপ ছিল...)। (তিরমিযি)

১২- জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা দুনিয়া এবং আখিরাতের সুখ শান্তির অন্যতম কারণ; কেননা নবী হাদীসে বলেন: (সে কল্যাণের সাথে জীবন যাপন করবে এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [ النحل : ٩٧ ]

অর্থ: ‘‘মু’মিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করবো এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো’’। (নাহল-৯৭)

১৩- জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে চলা গুনাহ মাফের অন্যতম কারণ; কেননা পুর্বোক্ত হাদীসে নবী বলেছেন: (সে গুনাহের ব্যাপারে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তার মা তাকে ভুমিষ্ট করেছিল সেদিন যেমন নিষ্পাপ ছিল...)।

১৪- মসজিদ যিয়ারাতকারীকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে সম্মানিত করা; কেননা সালমান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন: (যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে ওজু করল অতঃপর মসজিদে আসল সে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎকারী এবং সাক্ষাৎকৃতের উপর হক্ব হচ্ছে সাক্ষাৎকারীকে সম্মান করা)। (ত্বাবরানী, ইবনে আবি শায়বাহ)

আমর বিন মায়মুন (রহ:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল এর সাহাবাদেরকে পেয়েছি এ অবস্থায় যে, তাঁরা বলতেন: (মসজিদ সমূহ আল্লাহ তা‘আলার ঘর এবং আল্লাহ তা‘আলার উপর কর্তব্য হচ্ছে তাকে সম্মান করা যে তার সাক্ষাৎ করে), (ইবনে জারির) অন্য এক শব্দে আমর বিন মায়মুন উমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: (মসজিদ সমূহ যমীনে আল্লাহ তা‘আলার ঘর এবং সাক্ষাৎকৃতের উপর হক্ব হচ্ছে সাক্ষাৎকারীকে সম্মান করা)। (ইবনু আবি শায়বাহ)

১৫- আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার ওজু অবস্থায় মসজিদে গমনে আনন্দিত হন; কেননা আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল বলেছেন: (যে কোন ব্যক্তিই উত্তম ও পরিপূর্ণভাবে ওজু করে অতঃপর শুধুমাত্র নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারেই হাস্যোজ্জল হন, অদৃশ্য জগতের অধিবাসীগণ যেভাবে তাকে দেখে আনন্দিত হয়)। (ইবনে খুযাইমাহ) ইমাম ইবনে খুযাইমাহ এই হাদীসের উপর একটি পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন এই নামে: (মহান রবের তাঁর বান্দাহর ওজু অবস্থায় মসজিদে গমন-এ খুশী হওয়ার অধ্যায়)।

আল্লাহ তা‘আলার সকল ছিফাত বা গুণবাচক নাম সমূহ আল্লাহ তা‘আলার শানের সাথে যেভাবে প্রযোজ্য সেভাবেই সাব্যস্ত করতে হবে।

১৬- পরিপূর্ণ নূর বা আলো ক্বিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তির জন্য যে অন্ধকারে মসজিদে হেটে যায়; কেননা বুরায়দাহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি নবী থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন: (অন্ধকারে মসজিদ সমূহে হেটে চলা ব্যক্তিদের ক্বেয়ামাতের দিনে পরিপূর্ণ নূর বা আলোর সুসংবাদ প্রদান কর)। (আবুদাউদ, তিরমিযি)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন