HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায়

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

১২
মনীষী ও সালাফদের সালাত
১৫. সালাফদের সালাত কেমন ছিল চিন্তা করা। এতেও খুশু ও একাগ্রতা সৃষ্টি হয় এবং তাদের অনুসরণ করার প্রেরণা তৈরি হয়। ইবন রজব হাম্বলি রহ. বলেন, “আপনি যদি সালাফদের কাউকে সালাতে দাঁড়াচ্ছে দেখেন, লক্ষ্য করবেন যখন সে মুসল্লায় দাঁড়ায় এবং তার রবের কালাম শুরু করে, তখন তার অন্তরে অনুভূত হয় ঠিক যেন এটাই সেই ময়দান, যেখানে কিয়ামতের দিন মানুষেরা সারা জাহানের রবের সামনে দাঁড়াবে, ফলে ভয়ে তার অন্তর উড়ে যায় আর বিবেক হয় স্তম্ভিত-গম্ভীর।” [ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’: পৃ.২২।]

মুজাহিদ রহ. বলেন, “যখন সালাফদের কেউ সালাতে দাঁড়াতেন তখন তারা কোনো বস্তু দেখতে, এদিক সেদিক চেহারা ঘুরাতে, পাথর নাড়তে, কোনো বস্তু নিয়ে খেলতে, কিংবা দুনিয়াবি জিনিস নিয়ে চিন্তা করতে আল্লাহকে খুব ভয় করতেন, তবে ভুলে ঘটলে ভিন্ন কথা।” [মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাযিমু কাদরিস সালাত’: ১/১৮৮।]

আব্দুল আযিয সালমান উদ্ধৃত করেন, “ইবন যুবায়ের যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন একাগ্রতা হেতু লাকড়ি বনে যেতেন। একদা তিনি সাজদায় ছিলেন আর কামানের গোলা লেগে তার কাপড়ের অংশ বিশেষ ছিঁড়ে গেল, তবু তিনি মাথা তুলেন নি।

মাসলামা ইবন বাশশার মসজিদে সালাত পড়ছিলেন, ইত্যবসরে মসজিদের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে নিচে পড়লে মানুষেরা ছুটোছুটি করে উঠে গেল, কিন্তু তিনি সালাতে ছিলেন তাই টেরও পান নি।

আমাদের কাছে আরো সংবাদ পৌঁছেছে যে, কতক সালাফ হেঙ্গারে ঝুলানো কাপড়ের ন্যায় সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কারণে ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে সালাত শেষ করতেন। কেউ সালাতে দাঁড়ালে ডান-বামের কাউকে চিনতেন না। কারো ওযুর শুরু থেকেই চেহারা হলুদ বর্ণ হয়ে যেত, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি যখন ওযু করেন তখন থেকে আপনার চেহারা পাল্টে যায় কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জানি, একটু পরে কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি!

আলি ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে আছে, সালাতের সময় হলে তিনি কেঁপে উঠতেন, আর তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। কেউ জিজ্ঞেস করল, আপনার কী হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, আমানতের সময় হয়েছে, যে আমানত আল্লাহ আসমান ও জমিনকে পেশ করেছিলেন, তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে ও ভয় পেয়েছে, আর আমি সেটা গ্রহণ করেছি!

সাইদ তানুখি রহ. সম্পর্কে আছে, তিনি সালাতে দাঁড়ালে চোখের পানি গণ্ডদেশ গড়িয়ে দাড়িতে পড়া শুরু হত।

আমাদের কাছে জনৈক তাবেঈ সম্পর্কে পৌঁছেছে যে, তিনি সালাতে দাঁড়ালে তার রং পাল্টে যেত এবং তিনি বলতেন, তোমরা জান, আমি কার সামনে দাঁড়াব, কার সাথে কথা বলব? প্রিয়-পাঠক, আমাদের ভেতর কে আছে, যার অন্তরে এমন ভীতির সৃষ্টি হয়?” [আব্দুল আযিয মুহাম্মাদ প্রণীত ‘সিলাহুল ইয়াকযান লি তারদিশ শায়তান’: পৃ.২০৯।] আব্দুল আযিয সালমান থেকে সংগৃহীত অংশ শেষ হলো।

ইবন তাইমিয়াহ উদ্ধৃত করেন, “কিছু লোক আমের ইবন আব্দুল কায়েসকে জিজ্ঞেস করল, আপনার নফস কি সালাতে কল্পনা করে? তিনি উত্তর দিলেন, সালাতের চেয়ে প্রিয় আমার কাছে কী আছে—যা নিয়ে আমি কল্পনা করব! তারা বলল, আমরা তো কল্পনা করি। তিনি বললেন কীসের কল্পনা কর: জান্নাতের কল্পনা, জান্নাতের হুরের কল্পনা বা এ জাতীয় কোনো কল্পনা কর? তারা বলল, না, আমরা আমাদের সম্পদ ও পরিবার নিয়ে কল্পনা করি। তিনি বললেন, আমার শরীর বর্শার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার চেয়ে বেশি কষ্টকর বিষয় হলো সালাতে দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে কল্পনা করা।

সা‘দ ইবন মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমার ভেতর তিনটি স্বভাব আছে, যদি আমি তাতে সব সময় থাকতাম তবে আমিই আমি হতাম। যখন আমি সালাতে দাঁড়াই তখন আমার অন্তর সালাত ছাড়া কোনো কল্পনা করে না। আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যখন কোনো হাদীস শুনি তখন তার ব্যাপারে আমার অন্তর কোনো সন্দেহ করে না। আর যখন আমি জানাযার সালাতে থাকি তখন আমার অন্তর মৃত ব্যক্তি কি বলছে ও তাকে কি বলা হচ্ছে ছাড়া কিছুই কল্পনা করে না।” [ইবন তাইমিয়ার ফাতওয়া সংকলন ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’: ২২/৬০৫।]

ইবন রজব উদ্ধৃত করেন, “হাতিম রহ. বলেন, মুয়াজ্জিনের আহ্বান শুনে সালাতের জন্যে রওয়ানা করি, ভয়ে ভয়ে পথ চলি, নিয়ত করে সালাতে প্রবেশ করি, আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে তাকবির বলি, তারতিল ও মনোযোগসহ তিলাওয়াত করি, একাগ্রতাসহ রুকু করি, বিনয়সহ সাজদাহ করি, তাশাহহুদের জন্যে পূর্ণরূপে বসি, পুনরায় নিয়ত করে সালাম ফিরাই, ইখলাসের সাথে সমাপ্ত করি, ভয় নিয়ে নিজেকে যাচাই করি এবং শঙ্কায় থাকি যদি আল্লাহ কবুল না করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরণ মনের ভাবটি সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করব।” [ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’: ২৭-২৮।]

আবু বকর সাবগি রহ. বলেন, “আমি দু’জন বড় ইমাম পেয়েছি, তবে তাদের কারো থেকেই হাদীস শ্রবণ করতে পারি নি। আবু হাতিম রাযী ও মুহাম্মাদ ইবন নসর মারওয়াযি। আমার অভিজ্ঞতায় আমি ইবন নাসর থেকে উত্তম সালাত আদায়কারী কাউকে দেখি নি। আমি শুনেছি, তার কপালে ভীমরুল বসেছিল, ভিমরুলের দংশনে তার চেহারায় রক্ত গড়িয়ে পড়েছে তবু তিনি নড়াচড়া করেন নি। মুহাম্মাদ ইবন ইয়াকুব আখরাম বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবন নাসিরের সালাতের চেয়ে সুন্দর সালাত কারো দেখি নি। তিনি সালাতে থাকলে কানের মশাও তাড়াতেন না। আমরা তার সালাতের সৌন্দর্য, একাগ্রতা ও ভয় দেখে আশ্চর্য হতাম। তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে শুকনো লাকড়ির মত নিজের চিবুক বুকের উপর রেখে দিতেন।” [মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাযিমু কাদরিস সালাত’: ১/৫৮।]

মার‘ঈ আল-কারমি বলেন, “ইবন তাইমিয়া রহ. সালাতে দাঁড়ালে তার অঙ্গগুলো কেঁপে উঠত, তিনি ডানে-বামে ঝুঁকে যেতেন।” [মার‘ঈ আল-কারমি প্রণীত ‘আল-কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ ফি মানাকিবিল মুজতাহিদ ইবন তাইমিয়াহ’: পৃ.৮৩। দারুল গারব আল-ইসলামি।]

প্রিয় পাঠক, এবার আপনি সালাফদের সালাতের সাথে বর্তমান যুগে আমাদের কিছু লোকের সালাতকে তুলনা করুন। দেখবেন, সালাতে দাঁড়িয়ে কেউ ঘড়ি দেখছে, কেউ কাপড় ঠিক করছে, কেউ নাক দিয়ে অহেতুক শব্দ করছে, কেউ বেচাকেনা শুরু করছে, কেউ টাকা-পয়সার হিসেব কষছে, কেউ মুসল্লা বা মসজিদের শৈল্পিক কারুকার্য নিয়ে গবেষণা করছে, আবার কেউ পাশের লোকের পরিচয় জানতে চেষ্টা করছে। এভাবেই সালাতে দাঁড়িয়ে একেকজন একেক ব্যস্ততায় থাকে। আপনি কি মনে করেন, তারা কেউ দুনিয়ার কোনো বাদশাহর সামনে দাঁড়ালে এর একটি কাজ করতে সাহস পেত?

১৬. সালাতে খুশু ও একাগ্রতা হাসিল করার মর্ম, তাৎপর্য, ফযীলত ও উপকারিতা জানা, যেমন (ক). একাগ্রতার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ما من امرىء مسلم تحضره صلاة مكتوبة فيحسن وضوءها وخشوعها وركوعها، إلا كانت كفارة لما قبلها من   الذنوب   ما لم تؤت كبيرة، وذلك الدهر كله» .

“এমন কোনো মুসলিম নেই যার ফরয সালাত উপস্থিত হয়, তারপর সে সুন্দরভাবে ওযু করে, সুন্দরভাবে সালাতের খুশু ও রুকু সম্পাদন করে, তবে অবশ্যই তার সালাত পূর্বের গুনাহের কাফফারা হবে, যদি কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। আর এটা জীবনভর।” [সহীহ মুসলিম: ১/২০৬, হাদীস নং ২/৪/৭।]

(খ). আরো জানা যে, সালাতে একাগ্রতায় ঘাটতি হলে সাওয়াবেও ঘাটতি হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إن العبد ليصلي الصلاة ما يُكتب له منها إلا عشرها، تسعها، ثمنها، سبعها، سدسها، خمسها، ربعها، ثلثها، نصفها» .

“বান্দা সালাত আদায় করে বটে, কিন্তু তার জন্যে সালাতের দশমাংশ, নবমাংশ, অষ্টমাংশ, সপ্তমাংশ, ষষ্ঠাংশ, পঞ্চমাংশ, চতুর্থাংশ, তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক সাওয়াব ছাড়া বেশি লেখা হয় না।” [ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৪/৩২১; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ১৬২৬।]

(গ). আরো জানা যে, বুঝে ও সজ্ঞানে পড়লেই সালাতের ফযীলত হাসিল হয়, যেমন ইবন আব্বাস—রাদিয়াল্লাহু আনহুমা—থেকে বর্ণিত,

«ليس لك من صلاتك إلا ما عقلت منها» .

“যতটুকু সালাত তুমি বুঝে পড়বে তার বেশীর তুমি হকদার নও।” [আলবানি সংকলিত ‘সিলসিলাহ দাঈফাহ’, হাদীস নং ৬৯৪১। অনুবাদক।]

(ঘ). আরো জানা যে, পরিপূর্ণ খুশু ও একাগ্রচিত্তে আদায়কৃত সালাত দ্বারাই পাপ মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن العبد إذا قام يصلي أُتي بذنوبه كلها فوضعت على رأسه وعاتقيه فكلما ركع أو سجد تساقطت عنه» .

“বান্দা যখন সালাত পড়তে দাঁড়ায় তখন তার সকল পাপ এনে তার মাথা ও কাঁধের উপর রাখা হয়। তারপর যখন রুকু বা সাজদাহ করে তার পাপগুলো একেক করে ঝরে পড়ে।” [ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’: ৩/১০, দেখুন সহীহ আল-জামি।]

মুনাওয়ি রহ. বলেন, “হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, যখন মুসল্লি একটি রুকন ভালোভাবে সম্পন্ন করে তখন তার গুনাহের একটি অংশ ঝরে পড়ে। যখন সালাত শেষ হয় তখন তার গুনাহও শেষ হয়। এ ফযীলত কেবল সে সালাতের জন্যেই, যা সকল শর্ত ও রুকনসহ একাগ্রচিত্তে সম্পন্ন করা হয়। কারণ, হাদিসে উল্লিখিত দু’টি শব্দ ‘আবদ’ ও ‘কিয়াম’ আল্লাহর সামনে বিনয় ও একাগ্রচিত্তে দাঁড়ানোকে দাবি করে।” [ইমাম বায়হাকি সংকলিত ‘আস-সুনানুল কুবরা’: ৩/১০; ইমাম মুনাভি প্রণীত ‘জামি সাগিরে’র ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফয়যুল কাদির’: ২/৩৬৮।]

(ঙ). ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর কথাগুলো স্মরণ করা যে, “সালাত আদায়কারী যখন একাগ্রচিত্তে সালাত শেষ করে তখন সে নিজেকে ভারমুক্ত অনুভব করে, যেন তার ওপর থেকে বোঝা নামানো হয়েছে, ফলে সে কাজে-কর্মে তৃপ্তি, প্রশান্তি ও ফুরফুরে মেজাজ উপলব্ধি করে। আর আক্ষেপ করে, যদি সালাতেই থাকতাম! কারণ, সালাত তার চোখের শীতলতা, রূহের সজীবতা, অন্তরের জান্নাত ও পার্থিব জগতে শান্তির নিরাপদ স্থান। যতক্ষণ না পুনরায় সালাতে প্রবেশ করে নিজেকে জেলখানা ও সংকীর্ণ স্থানে বন্দী ভাবে। বস্তুত, এরূপ মুসল্লিই সালাতের দ্বারা প্রশান্তি অর্জন করে, ফলে সে সালাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। আল্লাহকে মহব্বতকারীরা বলেন: আমরা সালাতে স্বস্তি পাই, তাই সালাত আদায় করি, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «يا بلال أرحنا بالصلاة» ‘হে বেলাল, সালাতের দ্বারা আমাদের স্বস্তি দাও।’ তিনি বলেন নি, সালাত থেকে স্বস্তি দাও। তিনি আরো বলেছেন, «جعلت قرة عيني بالصلاة» ‘আমার চোখের শীতলতা করা হয়েছে সালাতে।’ অতএব, যার চোখের শীতলতা সালাতে, সে কীভাবে সালাত ছাড়া শান্তি পায় এবং কীভাবে সালাত ছাড়া থাকতে পারে?” [ইবনুল কাইয়্যেম প্রণীত ‘আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব’: ৩৭।]

১৭. সালাতে দো‘আর জায়গাগুলোতে খুব দো‘আ করা, বিশেষভাবে সাজদায়। কারণ, আল্লাহর সমীপে বিনীত হয়ে দাঁড়ানো, তার কালাম তিলাওয়াত করা, তার নিকট দো‘আ ও আকুতি পেশ করা আল্লাহর সাথে বান্দার ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে তার খুশু ও একাগ্রতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। অধিকন্তু দো‘আ তো ইবাদত, আল্লাহ বান্দাকে দো‘আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন:

﴿ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ ٥٥ ﴾ [ الاعراف : ٥٥ ]

“তোমরা তোমাদের রবকে অনুনয় বিনয় ও চুপিসারে ডাক।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৫৫]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «من لم يسأل الله يغضب عليه» “যে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হন।” [তিরমিযী, ১/৪২৬; আলবানি সহীহ তিরমিযীতে হাদীসটি হাসান বলেছেন। হাদিন নং ২৬৮৬।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সালাতের বিভিন্ন জায়গায় পঠনীয় অনেক দো‘আ প্রমাণিত আছে, যেমন সাজদায়, দুই সাজদার মাঝখানে ও তাশাহহুদ শেষে, তবে দো‘আর গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাজদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاء» .

“বান্দা তার রবের অতি নিকটবর্তী হয় যখন সে সাজদায় থাকে, অতএব তোমরা অনেক দো‘আ কর।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৫।] তিনি আরো বলেছেন,

«أما السجود فاجتهدوا في الدعاء فَقَمَن -أي حريّ وجدير- أن يُستجاب لكم» .

“সাজদায় তোমরা খুব দো‘আ কর, কারণ তোমাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার উপযুক্ত স্থান সাজদা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৭।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় অনেক দো‘আ করতেন, কয়েকটি দো‘আ নিম্নরূপ:

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ سِرَّهُ وَعَلانِيَتَهُ» .

“হে আল্লাহ, আমার ছোট ও বড়, প্রথম ও শেষের, গোপন ও প্রকাশ্যের সকল পাপ মাফ কর।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৬।] কখনো বলতেন:

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ» .

“হে আল্লাহ, আমি যা আড়াল করেছি এবং যা প্রকাশ করেছি সব তুমি ক্ষমা কর।” [ইমাম নাসাঈ সংকলিত ‘আল-মুজতাবা’, হাদীস নং ২/৫৬৯; সহীহ নাসাঈ, হাদীস নং ১০৬৭।]

দুই সাজদার মাঝে দো‘আ করা। ইতোপূর্বে খুশু অর্জনের ১১নং উপায়ে দুই সাজদার মাঝে পঠনীয় কয়েকটি দো‘আ উল্লেখ করেছি। আর তাশাহহুদ শেষে তিনি যেসব দো‘আ পড়তেন, তার ভেতর কয়েকটি নিম্নরূপ:

«إذا فرغ أحدكم من التشهد فليستعذ بالله من أربع؛ من عذاب جهنم، ومن عذاب   القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر المسيح   الدجال» .

“যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ থেকে অবসর হবে, তখন আল্লাহর নিকট চারটি বস্তু থেকে পানাহ চাইবে: জাহান্নামের শাস্তি, কবরের আযাব, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা ও মাসিহ দাজ্জালের অনিষ্ট।” কখনো তিনি বলতেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ» .

“হে আল্লাহ, আমি যা করেছি এবং যা করি নি তার অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট পানাহ চাই।” কখনো তিনি বলতেন,

«اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابَاً يَسِيرَاً» .

“হে আল্লাহ, আমার হিসেব সহজ কর।” তাশাহহুদ শেষে তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শিখিয়েছেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ . فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ» .

“হে আল্লাহ, আমি আমার নফসের উপর অনেক জুলম করেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে অনেক ক্ষমা করুন এবং আমাকে রহম করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু।”

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে তাশাহহুদ শেষে বলতে শুনলেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَللَّهُ بِأَنَّكَ الْوَاحِدُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ»

“হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ, আপনি নিশ্চয় এক, একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি জন্ম দেননি এবং যাকে জন্ম দেওয়া হয় নি এবং কেউ তার সমকক্ষ নয়। আপনি আমার পাপসমূহ ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

তারপর তাকে লক্ষ্য করে বললেন, সে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছে, সে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছে।

অপর ব্যক্তিকে তিনি তাশাহহুদ শেষে বলতে শুনলেন,

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لك الْمَنَّانُ يا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ» .

“হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আপনার জন্যেই সকল প্রশংসা। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আপনি এক, আপনার কোনো শরীক নেই। আপনি অনুগ্রহকারী, হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা। হে মর্যাদার অধিকারী ও সম্মানিত। হে চিরঞ্জীব ও চির প্রতিষ্ঠিত, আমি আপনার নিকট জান্নাত চাই ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”

তারপর তিনি সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা জান সে কীসের মাধ্যমে দো‘আ করেছে? তারা বলল, আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন:

«والذي نفسي بيده لقد سأل الله باسمه الأعظم الذي إذا دُعي به أجاب وإذا سُئل به أعطى» .

“সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, সে ইসমে-আযম অর্থাৎ আল্লাহর মহান নামের উসিলায় দো‘আ করেছে, যে নামের উসিলায় দো‘আ করলে তিনি সারা দেন, আর প্রার্থনা করলে প্রার্থিত বস্তু প্রদান করেন।”

নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ. ‘সিফাতুস সালাত’ গ্রন্থে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সর্বশেষ বলতেন:

«اللهم اغفرلي ما قدمت وما أخرت، وما أسررت وما أعلنت، وما أسرفت، وما أنت أعلم به مني، أنت المقدم وأنت المؤخر، لا إله إلا أنت» .

“হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, যা আগে প্রেরণ করেছি ও যা পরে প্রেরণ করেছি এবং যা গোপন করেছি ও যা প্রকাশ করেছি। আর যা আপনি আমার চেয়েও বেশি জানেন। আপনি প্রথম এবং আপনি সর্বশেষ। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।”

বিশেষ জ্ঞাতব্য: এ দো‘আ ও বইটিতে উল্লিখিত অন্যান্য দো‘আর সূত্র ও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্যে নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ. রচিত ‘সিফাতুস সালাত’ গ্রন্থটি দেখুন।

যেসব মুসল্লি ইমামের পেছনে তাশাহহুদ শেষে চুপচাপ বসে থাকেন, তারা এসব দো‘আ মুখস্থ করে তখন পড়তে পারেন। বস্তুত, সালাতের বিভিন্ন জায়গায় পঠনীয় একাধিক দো‘আ যারা জানেন না ইমামে পেছনে তাদের চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না। এ সময় শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে বেশি সমর্থ হয়, তাই তাশাহহুদ শেষে পড়ার জন্যে বেশ বিশুদ্ধ কিছু দো‘আ মুখস্থ রাখা বাঞ্ছনীয়।

১৮. সালামের পর মাসনুন দো‘আসমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়া। কারণ, মাসনুন দো‘আর ফলে অন্তরের একাগ্রতা, সালাতের বরকত ও তার ফায়দা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়। জ্ঞাতব্য যে, পূর্বের ইবাদতের সুরক্ষা ও তার হিফাজতের স্বার্থে পরবর্তী ইবাদত আঞ্জাম দেওয়া জরুরি। এ সূত্রে সালাতের পরবর্তী ইবাদত মাসনুন দো‘আ ও যিকর। লক্ষ্য করুন, যিকিরসমূহের প্রথমে আছে তিনবার ইস্তেগফার। তার অর্থ হচ্ছে, মুসল্লি তার রবের নিকট সালাতের ত্রুটি ও তাতে খুশুর ঘাটতি পুষিয়ে নিতে রবের নিকট ক্ষমা চাইছে। অনুরূপভাবে বেশিবার নফল সালাত আদায় করার বিষয়টিও তেমন। কারণ, নফল সালাত দ্বারা ফরয সালাতের রুকনের ত্রুটি ও তার খুশুর ঘাটতির প্রতিকার করা হবে।

এ পর্যন্ত আমরা খুশু ও একাগ্রতার সহায়ক করণীয় উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমরা তার প্রতিবন্ধক বর্জনীয় উপকরণ নিয়ে আলোচনা করব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন