HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায়

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

প্রথমত, একাগ্রতা অর্জনের করণীয় উপায়সমূহ
১. সালাতের জন্যে পূর্ব থেকে প্রস্তুত হওয়া, উদাহরণত মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের শব্দগুলো বলা এবং আযান শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত দো‘আ পাঠ করা, যেমন:

«اللَّهُمَّ رَبَّ هذه الدَّعْوةِ التَّامَّةِ، والصَّلاَةِ القَائِمَةِ، آتِ محمداً الوَسِيْلَةَ والفَضِيْلَةَ، وابْعَثْهُ مَقَاماً مَحْمُوداً الذي وَعَدْتُه» .

“হে আল্লাহ, এই পরিপূর্ণ দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব। আপনি মুহাম্মাদকে ওসিলা ও ফযীলত দান করুন এবং তাকে ‘মাহমুদ মাকাম’-এ (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার ওয়াদা আপনি তাকে দিয়েছেন।”

আযান ও ইকামতের মাঝে দো‘আ করা, বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা, সুন্দরভাবে ওযু করা এবং ওযুর শেষে বলা,

«أشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله» . «اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين» .

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল।” অপর দো‘আর অর্থ, “হে আল্লাহ, আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

সালাতের আগে মিসওয়াক করা, অর্থাৎ মুখ সাফ করা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করা, কারণ একটু পরে এ মুখ দ্বারা কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«طهروا أفواهكم للقرآن» .

“কুরআনের জন্যে তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল পবিত্র কর।” [আবু বকর আহমদ আল-বাযযার স্বীয় সংকলন ‘আল-মুসনাদ আল-কাবির’ গ্রন্থে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন, এবং বলেছেন, “আলি ইবন আবু তালিব থেকে হাদীসটির এর চেয়ে ভালো সনদ আমরা জানি না।” ‘কাশফুল আসতার’: ১/২৪২। মুহাদ্দিস হায়সামি স্বীয় সংকলন ‘আল-মাজমা’: ২/৯৯ গ্রন্থে বলেছেন, “হাদীসটির সকল রাবি গ্রহণযোগ্য (সেকাহ)।” মুহাদ্দিস আলবানি বলেছেন, “হাদীসটির সনদ জাইয়্যেদ।” ‘সিলসিলাহ আস-সাহিহাহ’, হাদীস নং ১২১৩।]

তারপর সুন্দর কাপড় পড়ে সালাতের জন্যে সৌন্দর্য গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ٣١﴾ [ الاعراف : ٣١ ]

“হে আদম সন্তানেরা, প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ কর।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]

সত্যিকার অর্থে বান্দার সুন্দর পোশাক ও সৌন্দর্যের বেশি হকদার আল্লাহ তা‘আলা। অধিকন্তু সুন্দর কাপড় ও সুন্দর গন্ধ ব্যক্তিকে অভ্যন্তরীণ প্রসন্নতা দান করে—যা ঘুমানোর বস্ত্র ও ময়লা কাপড় দ্বারা সম্ভবপর নয়। অনুরূপভাবে সালাতের প্রস্তুতি হিসেবে শরীরের জরুরি অংশ ঢাকা, জায়গা পবিত্র করা, দ্রুত মসজিদে যাওয়া, মসজিদে গিয়ে সালাতের অপেক্ষা করা, কাতার সোজা করা, গায়ে-গায়ে মিলে দাঁড়ানো প্রভৃতি খুশু অর্জনের সহায়ক। বিশেষভাবে কাতারের মাঝে ফাঁকা থাকলে শয়তান তাতে ঢুকে মুসল্লির খুশু নষ্ট করে।

২. স্থিরতাসহ সালাত আদায় করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের রুকনে রুকনে এমনভাবে স্থির হতেন যে, তার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ স্বস্ব স্থানে ফিরে আসত। [শাইখ আলবানি সংকলিত ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.১৩৪; তিনি হাদীসটির সনদ সহীহ বলেছেন। হাফিয ইবন হাজার বলেন, “সহি ইবন খুযাইমাতেও হাদীসটি সহীহ গুণে বিদ্যমান আছে।” ‘ফাতহুল বারি’: ২/৩০৮।] তিনি সালাতে ভুলকারীকে স্থির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

«لا تتم صلاة أحدكم حتى يفعل ذلك» .

“তোমাদের কারো সালাত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না সে তা স্থিরতাসহ আদায় করবে।” [আবু দাউদ: ১/৫৩৬, হাদীস নং ৮৫৮।]

আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أسوأ الناس سرقة الذي يسرق من صلاته، قال يا رسول الله : كيف يسرق صلاته؟، قال : لا يتم ركوعها ولا سجودها» .

“চুরির বিবেচনায় সবচেয়ে খারাপ চোর সে, যে তার সালাত থেকে চুরি করে। আবু কাতাদা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সালাতে কীভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, তার রুকু ও সাজদাহ পূর্ণ করে না।” [ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’। আরো দেখুন, ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসদাতদারক’: ১/২২৯, এবং আলবানি সংকলিত ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৯৯৭।]

আবু আব্দুল্লাহ আশ‘আরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مثل الذي لا يتمّ ركوعه، وينقر في سجوده، مثل الجائع يأكل التمرة والتمرتين، لا يغنيان عنه شيئا» .

“যে তার সালাতের রুকু পূর্ণ করে না, আর সাজদায় গিয়ে ঠোকর মারে, তার উদাহরণ ঐ ক্ষুধার্তের ন্যায় যে একটি ও দু’টি খেজুর খায়, যা তার কোনো কাজে আসে না।” [আবুল কাসিম সুলাইমান তাবরানি সংকলিত ‘আল-মুজাম আল-কাবির’: ৪/১১৫। আলবানি ‘সহীহ আল-জামি’ গ্রন্থে হাদীসটি হাসান বলেছেন।]

স্বভাবত, যে সালাতের রুকনে রুকনে স্থির হয় না তার সালাতে খুশু অর্জন হয় না, কারণ দ্রুততা সালাতের খুশু নষ্ট করে, আর তার সাওয়াব নষ্ট করে কাকের ঠোকরের মতো সাজদাহ।

৩. সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اذكر الموت في صلاتك، فإن الرجل إذا ذكر الموت في صلاته لحريّ أن يحسن صلاته، وصلّ صلاة رجل لا يظن أنه يصلي غيرها» .

“তুমি তোমার সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ, ব্যক্তি যখন তার সালাতে মৃত্যুকে স্মরণ করে তখন তার সালাত অবশ্যই সুন্দর হয় এবং ঐ ব্যক্তির মতো সালাত পড় যে ধারণা করে সে আর কোনো সালাত পড়ার সুযোগ পাবে না।” [নাসিরুদ্দিন আলবানি সংকলিত ‘আস-সহিহাহ’, হাদীস নং ১৪২১। আলবানি সুয়ুতির বরাতে বলেন, “হাফিয ইবন হাজার হাদীসটি হাসান বলেছেন।”]

অনুরূপ অর্থ প্রদানকারী আরো হাদীস রয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন,

«إذا قمت في صلاتك فصلِّ صلاة مودِّع» .

“যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তখন বিদায়ী ব্যক্তির ন্যায় সালাত পড়।” [ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদু’: ১/৪১২; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৭৪২।]

অর্থাৎ এমন ব্যক্তির ন্যায় সালাত আদায় কর, যে ধারণা করে এটাই তার শেষ সালাত। কারণ, মুসল্লি এক দিন মারা যাবে, মৃত্যু তার জন্যে অবধারিত, তাই অবশ্যই তার শেষ সালাত আছে। অতএব এ সালাতেই শেষ সালাতের ন্যায় খুশু অর্জন করা জ্ঞানীর কাজ। কেননা, হতে পারে এটাই তার শেষ সালাত।

৪. সালাতে পঠনীয় সূরা-কিরাত এবং অন্যান্য দো‘আ ও যিকির গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবা ও বুঝার চেষ্টা করা এবং তার সাথে আন্দোলিত হওয়া। কারণ, মানুষের চিন্তা ও গবেষণার জন্যেই কুরআন নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩﴾ [ص: ٢٩ ]

“আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যেন তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যেন বুদ্ধিমানেরা উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা সাদ, আয়াত: ২৯]

বাস্তবতা হচ্ছে, মুসল্লি সালাতের ভেতর যেসব আয়াত, তাসবিহ, সালাত (দরূদ), সালাম ও দো‘আ পাঠ করে, সে যদি তার অর্থ না জানে তার পক্ষে তাতে গবেষণা করা সম্ভবপর নয়। অর্থ জানার পরেই তাতে চিন্তা করতে সমর্থ হবে, যার ফলে তার অশ্রু ঝরবে ও দেহ-মন আন্দোলিত হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় বান্দাদের প্রশংসা করে বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ لَمۡ يَخِرُّواْ عَلَيۡهَا صُمّٗا وَعُمۡيَانٗا ٧٣﴾ [ الفرقان : ٧٢ ]

“যখন তাদেরকে তাদের রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখন তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো তারা আচরণ করে না।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৩] এ আয়াত থেকে কুরআনুল কারিমের অর্থ ও তাফসির জানার গুরুত্ব প্রতীয়মান হয়।

ইবন জারির রহ. বলেন, “যে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করে কিন্তু তার তাফসির জানে না সে কীভাবে তার স্বাদ আস্বাদন করে, আমি খুব বিস্ময় বোধ করি।” [মাহমুদ শাকের কর্তৃক ইমাম তাবারির ‘তাফসির’ এর ভূমিকা: ১/১০।]

অতএব কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার সঙ্গে তাফসিরের সংক্ষেপিত কিতাব হলেও পাঠ করা জরুরি, যেমন (আরবি ভাষীদের জন্যে) ১. মুহাম্মদ আশকার কর্তৃক শাওকানির তাফসিরের সংক্ষেপিত কিতাব ‘যুবদাতুত তাফসির’। ২. ইবন সা‘দির তাফসির ‘তাইসিরুল কারিমির রাহমান ফি তাফসিরিল কালামিল মান্নান’। পূর্ণ তাফসির পাঠ করা যদি সম্ভবপর না হয়, অন্ততপক্ষে কুরআনুল কারিমের শব্দার্থের অভিধান পাঠ করা, যেমন ৩. আব্দুল আযিয সিরওয়ান রচিত ‘আল-মুজামুল জামি লি গারিবি মুফরাদাতিল কুরআন’। এই অভিধানে কুরআনুল কারিমের শব্দার্থের চারটি অভিধানগ্রন্থ সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে [বাংলা ভাষীদের জন্যে সংক্ষিপ্ত তাফসির, যেমন ১. তাফসির ‘তাইসীরুল কুরআন’ অর্থানুবাদ অধ্যাপক মোহাম্মাদ মুজ্জাম্মেল হক। ২. ‘আল-কুরআনুল কারীম’ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ৩. ‘তফসীর আহসানুল বায়ান, সংকলন: সালাহউদ্দীন ইউসূফ, অনুবাদ: আব্দুল হামীদ ফাইযী। ৪. ‘শব্দার্থে আল কুরআনুল মাজীদ’ (১০ খণ্ড) অনুবাদক: মতিউর রহমান খান। ৫. ‘শব্দে শব্দে আল কুরআন’। লেখক: মাওলানা মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান। ৬. ‘কুরআনুল কারীমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর’ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। শেষোক্ত গ্রন্থটি বিনা মূল্যে বিতরণের জন্যে সৌদি আরবের সরকার কর্তৃক প্রকাশিত। অনুবাদক।]।

সালাতে চিন্তা, খুশু, একাগ্রতা ও গবেষণার আরো একটি সহায়ক একেকটি আয়াত বারবার পড়া। বস্তুত, চিন্তার জন্যে গভীরভাবে অধ্যয়ন ও বারবার পড়ার বিকল্প নেই। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতক আয়াত বারবার পড়তেন। বর্ণিত আছে, তিনি:

﴿إِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨﴾ [ المائ‍دة : ١١٨ ]

আয়াতটি পড়তে পড়তে ভোর করেছেন। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ: ১/২৭১; ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৫/১৪৯; আলবানি সংকলিত ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.১০২।] অর্থ, “যদি আপনি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১১৮]

সালাতে খুশু ও একাগ্রতা অর্জনের নিমিত্তে চিন্তা ও গবেষণার আরো একটি সহায়ক তিলাওয়াতের সঙ্গে ভাবভঙ্গিতে আন্দোলিত হওয়া, যেমন হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«صليت مع رسول الله ذات ليلة . يقرأ مسترسلاً، إذا مر بآية فيها تسبيح سبح وإذا مر بسؤال سأل وإذا مر بتعوذ تعوذ» .

“আমি কোনো এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সালাত পড়েছি। তিনি একেকটি আয়াত পৃথক পৃথক পড়ছিলেন। যখন (আল্লাহর) প্রশংসাসূচক আয়াত পড়তেন তখন তার প্রশংসা করতেন, যখন প্রার্থনাসূচক আয়াত পড়তেন তখন তার কাছে প্রার্থনা করতেন, আর যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত পড়তেন তখন তার কাছে আশ্রয় চাইতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২।] অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন,

«صليت مع رسول الله ليلة، فكان إذا مرّ بآية رحمة سأل، وإذا مرّ بآية عذاب تعوذ، وإذا مرّ بآية فيها تنزيه لله سبح» .

“আমি কোনো রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত পড়েছি। তার নিয়ম ছিল, যখন রহমতের আয়াত অতিক্রম করতেন প্রার্থনা করতেন, যখন শাস্তির আয়াত অতিক্রম করতেন পানাহ চাইতেন, যখন পবিত্রতা দ্যোতক আয়াত পড়তেন তখন পবিত্রতা বর্ণনা করতেন।” [মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযি সংকলিত ‘তাজিমু কাদরিস সালাত’: ১/৩২৭।] উল্লেখ্য ঘটনাটি শেষ রাতের সালাত সংক্রান্ত।

ইবন হাজার বলেন, “কাতাদা ইবন নুমান রাদিয়াল্লাহু আনহু র ঘটনা, তিনি একদা রাতে দাঁড়িয়ে সূরা ইখলাস ছাড়া কিছুই পড়েন নি, বারবার সূরা ইখলাসই পড়েছেন, তার একটুও বেশি পড়েন নি।” [সহীহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’: ৯/৫৯; ইমাম আহমদের ‘মুসনাদ’: ৩/৪৩।]

ইমাম কুরতুবি ‘আত-তাযকিরাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, “সা‘ঈদ ইবন উবাইদ তায়ি বলেন, আমি রমাদান মাসে একদা সা‘ঈদ ইবন জুবায়েরের ইমামতিতে সালাত পড়েছি, তখন নিম্নের আয়াতটি তিনি বারবার পড়েছেন,

﴿فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٧٠ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ ﴾ [ غافر : ٧٠، ٧٢ ]

‘অতএব তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলদেশে বেড়ী ও শিকল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে।’ [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ৭০]

কাসিম রহ. বলেন, আমি সা‘ঈদ ইবন জুবায়েরকে রাতে দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে দেখেছি, তখন তিনি বারবার পড়ছিলেন,

﴿ وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا تُرۡجَعُونَ فِيهِ إِلَى ٱللَّهِۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٖ مَّا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ٢٨١ ﴾ [ البقرة : ٢٨١ ]

আয়াতটি তিনি বিশেরও বেশিবার পড়েন। অর্থ ‘আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমাদের আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে তা পুরোপুরি দেয়া হবে যা সে উপার্জন করেছে। আর তাদের যুলম করা হবে না।’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮১]

কায়েস বংশীয় আবু আব্দুল্লাহ উপনামী জনৈক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা হাসান বসরির নিকট কোনো এক রাত যাপন করলাম, দেখলাম রাতে তিনি ঘুম থেকে জেগে সালাত পড়তে দাঁড়ালেন, তারপর নিম্নের আয়াতটি ভোর পর্যন্ত বারবার পড়লেন,

﴿ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ ١٨ ﴾ [ النحل : ١٨ ]

“যদি তোমরা আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে সেগুলো নির্ণয় করতে পারবে না।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ১৮]

তিনি যখন ভোর করলেন আমরা বললাম, হে আবু সা‘ঈদ, পুরো রাতেও আয়াতটি অতিক্রম করা সম্ভব হলো না? তিনি বললেন, ‘আমি তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করছিলাম। যতবার শুরু ও শেষ করেছি ততবার আমার উপর নি‘আমত বর্ষণ হয়েছে। আর আল্লাহর যেসব নি‘আমত আমরা জানি না তা তো অনেক।’

হারুন ইবন রাবাব উসাইদি তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়িয়ে নিম্নের আয়াতটি পড়তে পড়তে কখনো কখনো ভোর করে ফেলতেন,

﴿فَقَالُواْ يَٰلَيۡتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٧ ﴾ [ الانعام : ٢٧ ]

“আর ভোর পর্যন্তই কাঁদতেন। অর্থ, ‘তখন তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদের ফেরত পাঠানো হত। আর আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহ অস্বীকার না করতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ২৭] [ইমাম কুরতুবি সংকলিত ‘আত-তাযকিরাহ’: পৃ.১২৫।] কুরতুবি থেকে উদ্ধৃত অংশ শেষ হলো।

সালাতে খুশু অর্জনের আরো একটি সহায়ক অধিকহারে কুরআনুল কারিম ও বিভিন্ন দো‘আ মুখস্থ করা। কেননা, একেক সময় একেক সূরা, যিকির ও দো‘আ পাঠ করা চিন্তা ও গভীর মনোযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বলাই বাহুল্য যে, সালাতে পঠনীয় আয়াত ও যিকিরে চিন্তা ও গবেষণা করা, একটি আয়াত বারবার পড়া এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তার সাথে আন্দোলিত করা খুশু বৃদ্ধির সেরা উপায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩﴾ [ الاسراء : ١٠٩ ]

“তারা কাঁদতে-কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৯]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন