HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায়

লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

একাগ্রতার প্রেরণাদায়ক একটি ঘটনা
ইমাম ইবন হিব্বান বর্ণনা করেন, “তবেয়ি আতা রহ. বলেন, আমি ও ‘উবাইদ ইবন ওমায়ের আয়েশা—রাদিয়াল্লাহু আনহা—র নিকট গেলাম। ‘উবাইদ তাকে বলল, আপনার চোখে দেখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আশ্চর্য ঘটনা আমাদের শুনান। তিনি কেঁদে ফেললেন ও বললেন, তিনি কোনো এক রাতে উঠে বলেন: «يا عائشة ذريني أتعبّد لربي» . ‘হে আয়েশা, আমাকে ছাড়, আমি আমার রবের ইবাদত করব।’ আয়েশা বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আপনার নৈকট্য পছন্দ করি এবং যা আপনার পছন্দের কারণ তাও আমি পছন্দ করি। আয়েশা বলেন, তিনি উঠলেন, ওযু করলেন ও সালাতে দাঁড়ালেন। তারপর কাঁদতে লাগলেন, ফলে তার বুক ভিজে গেল। আরো কাঁদলেন, এতো কাঁদলেন মাটিও ভিজে গেল। ইতোমধ্যে তাঁকে সালাতের সংবাদ দিতে বেলাল এলো। বেলাল যখন দেখল তিনি কাঁদছেন, তখন বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কাঁদছেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন,

«أفلا أكون عبدا شكورا؟ لقد نزلت عليّ الليلة آيات ويل لمن قرأها ولم يتفكّر ما فيها» : ﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ... الآية ١٩٠﴾ [ ال عمران : ١٩٠ ]».

‘আমি কি শোকর গোজার বান্দা হব না? আজ রাতে আমার ওপর কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, ধ্বংস তার জন্যে যে তা পড়ল, কিন্তু তাতে চিন্তা করল না। আয়াতগুলো হচ্ছে:

﴿إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ... الآية ١٩٠﴾ [ ال عمران : ١٩٠ ]

“নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে...।’ [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৯০]” [সহীহ ইবন হিব্বান। আলবানি সংকলিত ‘আস-সহীহাহ’, হাদীস নং ৬৮, তিনি বলেছেন, “এই সনদটি জাইয়্যেদ।”]

ঘটনাটি থেকে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতে চিন্তা ও খুশুর বিষয়টি স্পষ্ট হয়, তেমন স্পষ্ট হয় তার আবশ্যকতা।

সুরা ফাতিহা শেষে ‘আমীন’ বলাও আয়াতের সঙ্গে সঙ্গ দেওয়ার একটি অংশ। আর ‘আমীন’ বলার সাওয়াব তো আছেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا أمَّنَ الإمام فأمِّنُوا فإنه مَن وافق تأمِينُهُ تأمين الملائكة   غُفر له ما تقدم من ذنبه» .

“যখন ইমাম ‘আমীন’ বলে, তোমরাও তখন আমীন বল। কারণ, যার ‘আমীন’ মালায়েকার ‘আমীনে’র সাথে মিলবে তার পূর্বের সব পাপ মাফ করা হবে।” [সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৭৪৭।]

অনুরূপভাবে যখন ইমাম বলে: سمع الله لمن حمده (আল্লাহ ঐ ব্যক্তির কথা শুনেন যে তার প্রশংসা করে) তখন মুক্তাদির ربنا ولك الحمد (হে আমাদের রব, তোমার জন্যেই সকল প্রশংসা) বলে ইমামকে সঙ্গ দেওয়া খুশুর আলামত। আর সাওয়াব তো আছেই।

রিফাআ ইবন রাফি আয-যারকি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত পড়ছিলাম, যখন তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলে রুকু থেকে মাথা তুললেন, তখন পেছন থেকে কেউ বলল, «رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ» (হে আমাদের রব, তোমার জন্যেই প্রশংসা, অনেক প্রশংসা, পবিত্র ও বরকতময় প্রশংসা) তিনি সালাত শেষ করে বললেন, «من المتكلم» ‘কথক কে?’ লোকটি বলল, ‘আমি’। তিনি বললেন, «رأيت بضعة وثلاثين ملكًا يبتدرونها أيهم يكتبها أولُ» . ‘আমি ত্রিশেরও অধিক ফেরেশতা দেখেছি, সবার আগে কে তার সাওয়াব লিখবে প্রতিযোগিতায় তার দিকে ছুটে আসছে।” [সহীহ বুখারি বর্ণিত, দেখুন ‘ফাতহুল বারি’: ২/২৮৪।]

৫. একেকটি আয়াত পৃথক পৃথক তিলাওয়াত করা। এভাবে তিলাওয়াত করলে বুঝতে ও চিন্তা করতে সহজ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই তিলাওয়াত করতেন, যেমন তাঁর তিলাওয়াত সম্পর্কে উম্মে সালামাহ—রাদিয়াল্লাহু আনহা—বলেন, “তিনি بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ বলতেন, (অপর বর্ণনায় এসেছে, তারপর ওয়াকফ করতেন,) তারপর বলতেন, ﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢﴾ ﴿ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣﴾ (অপর বর্ণনায় এসেছে, তারপর ওয়াকফ করতেন,) তারপর বলতেন, ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤﴾ এভাবে তিনি একেকটি আয়াত পৃথক পৃথক তিলাওয়াত করতেন।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০০১; আলবানি প্রণীত ‘আল-ইরওয়া’: ২/৬০, তিনি এর বিভিন্ন সনদ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি সহি।]

অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে প্রত্যেক আয়াত শেষে ওয়াকফ করা সুন্নাত, যদিও পঠনীয় আয়াতের অর্থ পূর্বাপর আয়াতের অর্থের সাথে সম্পৃক্ত হয়।

৬. কুরআনুল কারীম তারতিলসহ সুন্দর আওয়াজে তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَرَتِّلِ ٱلۡقُرۡءَانَ تَرۡتِيلًا﴾ [ المزمل : ٤ ]

“তুমি স্পষ্টভাবে ধীরেধীরে কুরআন আবৃত্তি কর।” [সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত: ৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতেন, «مفسرة حرفاً حرفًا» “একটি একটি হরফ সুস্পষ্টভাবে।” [ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদু’: ৬/২৯৪; আলবানি হাদীসটির সনদ সহীহ বলেছেন। ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.১০৫।] ইমাম মুসলিম তার তিলাওয়াত সম্পর্কে বর্ণনা করেন,

«وكان صلى الله عليه وسلم يقرأ بالسورة فيرتلها حتى تكون أطول من أطول منها» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সূরা পড়তেন তারতিলসহ পড়তেন, এমন কি সেটি (বিনা তারতিলে পঠিত) তার চেয়ে দীর্ঘ সূরা থেকেও দীর্ঘ হয়ে যেত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৩।]

দ্রুত গতিতে তিলাওয়াত করা অপেক্ষা তারতিলসহ আয়াতে আয়াতে ওয়াকফ করে তিলাওয়াত করা চিন্তা ও খুশুর জন্যে বেশি সহায়ক। খুশুর আরেকটি সহায়ক হচ্ছে সুন্দর স্বরে তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«زينوا القرآن بأصواتكم فإن الصوت الحسن يزيد القرآن حسنًا» .

“তোমরা তোমাদের আওয়াজ দ্বারা কুরআনুল কারিমকে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। কেননা, সুন্দর আওয়াজ কুরআনুল কারীমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।” [ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/৫৭৫; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৩৫৮১।]

উল্লেখ্য যে, সুন্দর আওয়াজের অর্থ (কারীদের ন্যায়) টেনে-টেনে ও পাপীদের সঙ্গীতের ন্যায় সুর করে পড়া নয়; বরং চিন্তার আওয়াজে সুন্দর করে পড়াই উদ্দেশ্য, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن من أحسن الناس صوتًا بالقرآن الذي إذا سمعتموه يقرأ حسبتموه يخشى الله» .

“কুরআনুল কারিমে তার আওয়াজই সবচেয়ে সুন্দর, যাকে তিলাওয়াত করতে শুনলে তোমরা মনে কর আল্লাহকে ভয় করছে।” [ইবন মাজাহ: ১/১৩৩৯; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ২২০২।]

৭. সালাতের সময় মনে করা যে, আল্লাহ তা‘আলা আমার কথার উত্তর দিচ্ছেন, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قال الله عز وجل قسمت الصلاة بيني وبين عبدي نصفين ولعبدي ما سأل، فإذا قال : الحمد لله رب العالمين، قال الله : حمدني عبدي، فإذا قال : الرحمن الرحيم، قال الله : أثنى عليّ عبدي، فإذا قال : مالك يوم الدين، قال الله : مجّدني عبدي، فإذا قال : إياك نعبد وإياك نستعين، قال : هذا بيني وبين عبدي ولعبدي ما سأل، فإذا قال : إهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين أنعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين، قال الله : هذا لعبدي ولعبدي ما سأل» .

“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে দু’ভাগে ভাগ করেছি। আর আমার বান্দার জন্যে তাই রয়েছে—যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢﴾ (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্যে, যিনি গোটা জগতের রব) তখন আল্লাহ বলেন, عبدي حمدني (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।) যখন বান্দা বলে, ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣﴾ (পরম দয়ালু অতীব মেহেরবান।) তখন আল্লাহ বলেন, أثنى علي عبدي (আমার বান্দা আমার গুণাবলি বর্ণনা করেছে।) যখন বান্দা বলে, ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤﴾ (প্রতিদান দিবসের মালিক।) তখন আল্লাহ বলেন, مجدني عبدي (আমার বান্দা আমাকে মর্যাদা দিয়েছে।) যখন বান্দা বলে, ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং কেবল আপনার কাছেই সাহায্য চাই।) তখন আল্লাহ বলেন, هذا بيني وبين عبدي ولعبدي ما سأل، (এটি আমার ও আমার বান্দার জন্যে, আর আমার বান্দার জন্যে তাই রয়েছে—যা সে চাইবে।) যখন বান্দা বলে, ﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ (আমাদের সরল পথের হিদায়েত দিন, তাদের পথ—যাদের ওপর আপনি নিয়ামত দিয়েছেন এবং যাদের ওপর আপনার ক্রোধ পতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।) তখন আল্লাহ বলেন, هذا لعبدي ولعبدي ما سأل . (এটা আমার বান্দার জন্যে, আর আমার বান্দার জন্যে তাই রয়েছে—যা সে চাইবে।)” [সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত।]

প্রকৃত মুসল্লির নিকট হাদীসটির মূল্য অনেক, যদি প্রত্যেক মুসল্লি হাদীসটি মনে-প্রাণে গ্রহণ করে, প্রত্যেকের সালাতেই পূর্ণ খুশু হাসিল হবে এবং প্রত্যেকে তাদের সালাতে ফাতিহা পড়ার স্বাদ অনুভব করবে। কেন করবে না, অথচ মুসল্লি নিজেই রবকে সম্বোধন করছে এবং তার চিন্তায় আছে তিনি তার উত্তর দিচ্ছেন।

অতএব মুসল্লি মাত্রের সূরা ফাতিহার মাধ্যমে মহান রবের সাথে সম্বোধন ও কথোপকথন করার মূল্য দেওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن أحدكم إذا قام يصلي فإنما يناجي ربه فلينظر كيف يناجيه» .

“তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে কথোপকথন করে, অতএব সে তার রবের সাথে কীভাবে কথা বলবে চিন্তা করুক।” [ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/২৩৬; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ১৫৩৮।]

৮. সালাতের শুরুতে সুতরা গ্রহণ করা ও সুতরার নৈকট্যে দাঁড়ানো। কেননা, সুতরা দৃষ্টিকে সংকোচিত করে, শয়তান থেকে সুরক্ষা দেয় ও সামনে দিয়ে মানুষের আসা-যাওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ করে, আর এগুলো মুসল্লির সালাতে ব্যাঘাত ঘটায় ও তার সাওয়াব নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إذا صلى أحدكم فليصل إلى سترة وليدن منها» .

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন সে সুতরার দিকে ফিরে সালাত আদায় করবে এবং তার নিকটে দাঁড়াবে।” [আবু দাউদ: ৫৯৮; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৬৫১।] তিনি অপর হাদিসে বলেছেন,

«إذا صلى أحدكم إلى سترة فليدن منها لا يقطع الشيطان عليه صلاته» .

“তোমাদের কেউ যখন সুতরার দিকে ফিরে সালাত আদায় করবে, সে তার নিকটে দাঁড়াবে, তাহলে শয়তান তার সালাত নষ্ট করবে না।” [আবু দাউদ: ১/৪৪৬, হাদীস নং ৬৯৫; ‘সহীহ আল-জামি’, হাদীস নং ৬৫০।]

ইবন হাজার বলেন, “সুতরার ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে মুসল্লির পা ও সুতরার মাঝে তিন হাত ব্যবধান রাখা, আর সাজদার জায়গা ও সুতরার মাঝে একটি বকরি চলাচলের মতো ফাঁকা রাখা, যেমন একাধিক সহীহ হাদিসে এসেছে।” [সহীহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’: ১/৫৭৪, ৫৭৯।]

মুসল্লিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরার ভেতর দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না, যেমন তিনি বলেছেন,

«إذا كان أحدكم يصلي فلا يدع أحدًا يمر بين يديه، و ليدرأه ما استطاع فإن أبى فليقاتله فإن معه القرين» .

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে তখন কাউকে তার সামনে দিয়ে যেতে দিবে না, তাকে যথাসম্ভব বাঁধা দিবে। যদি সে বিরত না হয় তার সঙ্গে লড়াই করবে, কারণ তার সাথে শয়তান রয়েছে।” [সহীহ মুসলিম: ১/২৬০; সহীহ আল-জামি, হাদীস নং ৭৫৫।]

ইমাম নববী রহ. বলেন, “সুতরার হিকমত হচ্ছে তার বাহির থেকে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা, তার ভেতর দিয়ে কাউকে যেতে না দেওয়া, শয়তানের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা এবং মুসল্লির সালাত নষ্ট করতে তার উপস্থিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা।” [ইমাম নববি কর্তৃক সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ: ৪/২১৬।]

৯. বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত সম্পর্কে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন,

«كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا قام في الصلاة، وضع يده اليمنى على اليسرى» .

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন।” [সহীহ মুসলিম: ৪০১।] ইমাম আবু দাউদ তার হাত রাখা সম্পর্কে বলেন, «وكان يضعهما على الصدر» . “আর তিনি দু’হাত বুকের উপর রাখতেন।” [আবু দাউদ: ৭৫৯; আলবানি প্রণীত ‘ইরওয়াউল গালিল’: ২/৭১।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إنا معشر الأنبياء أمرنا أن نضع أيماننا على شمائلنا في الصلاة» .

“আমরা নবীদের জামাআত, সালাতে আমাদের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে নির্দেশ করা হয়েছে।” [ইমাম তাবরানি সংকলিত ‘আল-মুজাম আল-কাবির’, হাদীস নং ১১৪৮৫; হায়সামি বলেছেন, “তাবরানি আওসাত গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তার সকল রাবি সেকাহ।” ‘আল-মাজমা’: ৩/১৫৫।]

ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “দাঁড়ানো অবস্থায় এক হাতের উপর আরেক হাত রাখার মানে কী? তিনি বললেন, এটা পরাক্রমশালী আল্লাহর সমীপে দাঁড়ানোর ভদ্র ও বিনয়ের অবস্থা।” [ইবন রজব প্রণীত ‘আল-খুশু ফিস সালাত’: পৃ.২১।]

ইবন হাজার বলেন, “আলিমগণ বলেছেন, বিনয়ী প্রার্থনাকারীরা বুকে হাতের উপর হাত রেখে দাঁড়ায়। এ জন্যেই সালাতে এভাবে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু এভাবে দাঁড়ালে অহেতুক নড়াচড়া করার সুযোগ থাকে না, ফলে খুশু ও একাগ্রতা অর্জন করতে সহজ হয়।” [ইবন হাজার প্রণীত ‘ফাতহল বারি’: ২/২২৪।]

১০. সাজদার জায়গায় চোখ রাখা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى طأطأ رأسه ورمى ببصره نحو الأرض» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন মাথা নিচু রাখতেন ও মাটির দিকে দৃষ্টি দিতেন।” [ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/৪৭৯; তিনি বলেন, “হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহি।” আলবানি তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.৮৯।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে, «ولما دخل الكعبة ما خلف بصره موضع سجوده حتى خرج عنها» . “যখন তিনি কা‘বাতে প্রবেশ করেছেন তখন সাজদার জায়গা থেকে দৃষ্টি হটান নি, যতক্ষণ না সেখান থেকে বের হয়েছেন।” [ইমাম হাকিম সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’: ১/৪৭৯; তিনি বলেছেন, হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহি। আর ইমাম যাহাবি তাকে সমর্থন করেছেন। আলবানি বলেছেন, “হাকেম ও যাহাবি হাদীসটি সম্পর্কে ঠিক বলেছেন।” আলবানির গবেষণা ‘ইরওয়াউল গালিল’: ২/৭৩।]

তাশাহহুদের বৈঠকে ইশারার আঙ্গুলে নজর রাখা ও তা নাড়তে থাকা, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত,

«يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها» .

“তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের আঙ্গুল দিয়ে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।” [সহীহ ইবন খুযাইমাহ: ১/৩৫৫, হাদীস নং ৭১৯। ইবন খুযাইমার গবেষক বলেন, খুযাইমার সনদটি সহি, দেখুন: ‘সিফাতুস সালাত’: পৃ.১৩৯।] অপর বর্ণনায় এসেছে,

«وأشار بالسبابة ولم يجاوز بصره إشارته» .

“তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেছেন, তবে তার চোখ তার ইশারাকে অতিক্রম করে নি।” [ইমাম আহমদ সংকলিত ‘মুসনাদ’: ৪/৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৯০।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন