HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাতের শেষ বৈঠকে বসার পদ্ধতি

লেখকঃ কামাল আহমাদ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সালাতের শেষ বৈঠকে বসার পদ্ধতি

সংকলক

কামাল আহমাদ

ভূমিকা
আল্-হামদু লিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রববুল আলামীনের জন্য। সালাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মাদ (স), তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের (রা) উপর।

এই পুস্তিকাটির মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে একটি মাসআলা নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে। মাসআলাটি হল, সালাতের শেষ বৈঠকে বসার পদ্ধতি। এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ চার ইমামের থেকে চারটি মত রয়েছে বলে উপস্থাপন করা হয়। একই মাসআলাতে চার জন ইমামের চারটি মত হওয়াটা খুবই বিরল।

আমরা সাধ্যমত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। সহযোগিতা নিয়েছে বিভিন্ন আরবি ও উর্দু লেখকের ফাতওয়া ও গবেষণা থেকে। চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠিত বিরোধকে সহীহ হাদীসের আলোকে সমাধানের। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ   ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

“আর তাদের মতো হয়ো না, যারা ফিরক্বা সৃষ্টি করেছে এবং ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও। তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।” [সূরা আলে-ইমরান : ১০৫ আয়াত]

অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে ইখতিলাফ হওয়া, ফিরক্বা সৃষ্টি হওয়া এবং আল্লাহর নাযিলকৃত স্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও সমাধানের দিকে না আসাটা নিশ্চিতভাবে দুনিয়াতে আযাব ও আখিরাতে জাহান্নামী হওয়া কারণ। তেমনি নবী (স) বলেছেন:

لاَ تَخْتَلِفُوْا فَاِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ اخْتَلَفُوْا فَهَلَكُوْا

‘‘ইখতিলাফ করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা ইখতিলাফ করত। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।’’ [সহীহ বুখারী হা/ ২৪১০]

অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :

اِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِاِخْتِلاَفِهِمْ فِي الْكِتَابِ

‘‘তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা (আল্লাহর) কিতাবে ইখতিলাফ করেছিল। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়েছিল।’’ [সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ইলম; মিশকাত (তাহক্বীক্ব হা/৯৮ (এমদাদিয়া ২/১৪৩ নং)]

এমনকি নবী (আ)-গণ আসার অন্যতম কারণ ছিল এটাই যে, তারা মানুষের মধ্যকার ইখতিলাফগুলো আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর আলোকে সমাধান করবেন। [সূরা বাক্বারা : ২১৩ আয়াত দ্র:]

নবীগণের পরে যোগ্য আলেমরা উম্মাতের মধ্যকার ইখতিলাফগুলো নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেননা নবী (স) বলেছেন: إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ “আলেমরাই হলেন নবীদের ওয়ারিস।” [আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ, দারেমি, মিশকাত (তাহক্বীক্ব) হা/২১২। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (তাহ. আরবি মিশকাত ১/৪৬ পৃ.); কিন্তু শায়েখ যুবায়ের আলী যাই হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর তিনি হাদীসটির দাবি বিভিন্ন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন। দ্র: : আযওয়াউল মাসাবিহ ফি তাহক্বীক্বে মিশকাতুল মাসাবিহ (পাকিস্তান : মাকতাবাহ ইসলামিয়্যাহ) ১/৩৭৬-২৭৯ পৃ. হা/২১২-এর ব্যাখ্যা]

فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ .

“আলেমের ফযিলত আবিদের (সাধারণ বান্দার) উপর এমন, যেমন আমার ফযিলত তোমাদের সবচেয়ে নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির উপর।” [তিরমিযী, মিশকাত (তাহক্বীক্ব) হা/২১৩)। শায়েখ আলবানী ও শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ তাঁদের স্ব স্ব তাহক্বীক্ব মিশকাতে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]

পক্ষান্তরে আলেম হওয়া সত্ত্বেও যারা ইখতিলাফকে জিইয়ে রাখেন, মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ফিরক্বা, মাযহাব ও তরিক্বা প্রতিষ্ঠিত রাখেন, তারা উপরে উল্লেখিত হাদীসের ফযিলত থেকে বঞ্চিত। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ইখতিলাফহীন রহমত থেকেও বঞ্চিত। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً   ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ   ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ  ۗ …

“তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন, তবে মানুষজাতিকে একটি উম্মাতে পরিণত করতেন, আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। তবে তোমার রব যাদের প্রতি রহম করেন তারা ব্যতীত (অন্যরা ইখতিলাফ করতেই থাকবে) এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। …” [সূরা হুদ : ১১৮-১৯ আয়াত]

এই পুস্তিকার মাধ্যমে উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো বাস্তবায়নে আলেমদের পক্ষ থেকেই বিভিন্ন বিষয়ের সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা সেই উদ্দেশ্য মুসলিম জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।

সম্মানিত পাঠকের কাছে অনুরোধ এই বইটি পাঠের সময় উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর দাবি স্মরণে রাখবেন। তা ছাড়া ইখতিলাফ ও ফিরক্বাহীন ইসলামি জীবন-যাপনের জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণের সাথে এর সমর্থনে প্রকাশিত পুস্তক-পুস্তিকা থেকে জ্ঞান অর্জন ও আক্বীদা নবায়ন একান্ত জরুরি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইখতিলাফ ও ফিরক্বামুক্ত হয়ে দ্বীন ইসলামকে আঁকড়ে থাকার তাওফিক্ব দান করুন। আমীন!!

কামাল আহমাদ,

পুরাতন কসবা, কাজীপাড়া, যশোর-৭৪০০।

ই-মেইল : kahmed_islam05@yahoo.com

সালাতের শেষ বৈঠকে বসার পদ্ধতি
সহীহ হাদীস অনুযায়ী সালাতে জালসা বা বৈঠকের দুটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। পদ্ধতি দুটি হল: ক) ইফতিরাশ, খ) তাওয়ার্রুক। এদের সংজ্ঞা নিম্নরূপ:

ক) ইফতিরাশ (افتراش):
এর অর্থ- বিছানো, ছড়ানো…। [. ড. ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফি (ঢাকা : রিয়াদ প্রকাশনী)।] কোনো কিছু বিছানোকে আরবি অভিধানে ইফতিরাশ বলে। افترش ذراعيه -তখন বলা হয়, যখন কেউ তার যেরা‘ (বাহু/গজহাত) জমিনে এমনভাবে বিছিয়ে দেয় যেভাবে তা শয্যার উপযোগী হয়। [. আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ (কুয়েত) ৫/৩৫০ (উর্দু অনুবাদ : ৫/৪০৩ পৃ.): افتراش الشّيء لغةً : بسطه . يقال : افترش ذراعيه إذا بسطهما على الأرض ، كالفراش له ] যেমন আয়েশা (রা) থেকে হাদীসে বর্ণিত বর্ণিত হয়েছে: … وَيَنْهَى أَنْ يَفْتَرِشَ الرَّجُلُ ذِرَاعَيْهِ افْتِرَاشَ السَّبُعِ

“…নবী (স) সাজদাহর সময় পশুর মতো করে যেরা‘ (বাহু/গজহাত) বিছিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন…।” [সহীহ মুসলিম, মিশকাত (তাহক্বীক্ব) হা/৭৯১]

সালাতে জালসা বা বৈঠকে ইফতিরাশের সংজ্ঞা নিম্নরূপ:

والافتراش : أن ينصب قدمه اليمنى قائمةً على أطراف الأصابع بحيث تكون متوجّهةً نحو القبلة ، ويفرش رجله اليسرى بحيث يلي ظهرها الأرض ، جالساً على بطنها .

“ইফতিরাশ হল, ডান পায়ের আঙুলগুলো এমনভাবে সোজা করে খাড়া রাখা, যেন তা ক্বিবলার দিকে থাকে এবং বাম পা-কে বিছিয়ে দেবে, যেন বাম পায়ের পিঠ জমিনের সাথে লেগে থাকে আর এর ভিতরের অংশের (পায়ের তালুর) উপর বসবে।” [. আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ (কুয়েত) ২৭/৯৯পৃ. (উর্দু অনুবাদ:২৭/১৩০ পৃ.)।]

খ) তাওয়ার্রুক (التّورّك):
তাওয়ার্রুক হল, الاعتماد على الورك ورك বা নিতম্বের উপর ভর দেয়া বা সাহায্য নেয়া।” দুই রানের উপরের অংশকে ورك বলে। পারিভাষিকভাবে এর অর্থ হল,

تنحية الرّجلين في التّشهّد الأخير ، وإلصاق المقعدة بالأرض في قعود الصّلاة

“উভয় পা-কে শেষ তাশাহহুদে বিছিয়ে দেয়া এবং সালাতের বৈঠকে নিতম্বকে জমিনে রেখে বসা।” [. আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ (কুয়েত) ১৪/১৪০ পৃ. (উর্দু অনুবাদ : ১৪/১৭৮ পৃ.)।]

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে:

والتّورّك : كالافتراش . لكن يخرج يسراه من جهة يمينه ، ويلصق وركه بالأرض .

“তাওয়ার্রুক ইফতিরাশেরই মতো। কিন্তু বাম পাকে ডান দিকে বের করে দেয়া এবং নিতম্বকে জমিনের সাথে লাগিয়ে দেয়া।” [. আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ (কুয়েত) ২৭/৯৯ পৃ. (উর্দু অনুবাদ : ২৭/১৩০ পৃ.)।]

‘তাওয়ার্রুক’ ও ‘ইফতিরাশ’ সম্পর্কে ইমামদের মতামত
ডক্টর ওয়াহবাহ আল-যুহায়লি তাঁর বিখ্যাত ‘আল-ফিক্বহুল ইসলামি ও আদিল্লাতুহ’ বইটিতে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে চমৎকার তথ্য দিয়েছেন, যা নিম্নরূপ :

صفة الجلوس : صفة الجلوس للتشهد الأخير عند الحنفية، كصفة الجلوس بين السجدتين، يكون مفترشاً كما وصفنا، سواء أكان آخر صلاته أم لم يكن، بدليل حديث أبي حميد الساعدي في صفة صلاة رسول الله «أن النبي جلس ـ يعني للتشهد ـ فافترش رجله اليسرى، وأقبل بصدر اليمنى على قبلته» وقال وائل بن حجر : «قدمت المدينة، لأنظرن إلى صلاة رسول الله ، فلما جلس ـ يعني للتشهد ـ افترش رجله اليسرى، ووضع يده اليسرى على فخذه اليسرى، ونصب رجله اليمنى» .

“(সালাতে) জলসা বা বৈঠকের পরিচয় : হানাফিদের নিকট শেষ বৈঠকে বসার পদ্ধতি দুই সাজদার মাঝে বসার পদ্ধতির মতো। সেটা ইফতিরাশের মতো, যেভাবে বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া রেখে বসা হয়। এমনকি সেটা সালাতের শেষাংশ হোক বা না হোক। (তাদের) দলিল হল, সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) থেকে রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাতের বিবরণ যে, ‘নবী (স) তাশাহহুদে বসতেন, তখন তিনি (স) তাঁর বাম পাকে ইফতিরাশ করে (বিছিয়ে) দিতেন এবং ডান পায়ের আঙুল ক্বিবলার দিক করে রাখতেন।’ (সহীহ বুখারী, নায়লুল আওতার ২/২৭৫) আর সাহাবী ওয়াইল বিন হুজর (রা) বলেন: ‘আমি রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাতের পদ্ধতি দেখার জন্য মদীনাতে আসলাম। যখন তিনি জলসা তথা তাশাহহুদে বসলেন, তখন বাম পাকে ইফতিরাশ করে (বিছিয়ে) দিলেন। আর তার বাম হাত বাম রানেরউপর রাখলেন এবং ডান পাকে খাড়া রাখলেন।” (তিরমিযী, নায়লুল আওতার ২/২৭৩)

وقال المالكية : يجلس متوركاً في التشهد الأول والأخير ، لما روى ابن مسعود «أن النبي كان يجلس في وسط الصلاة وآخرها متوركاً» .

মালেকিগণ বলেন: প্রথম ও শেষ উভয় তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করবে। (শরহে সগির ১/৩২৯) যেভাবে ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (স) যখন সালাতে মধ্যে ও শেষে বসতেন তখন তাওয়ার্রুক করতেন। (মুগনি ১/৫৩৩)

وقال الحنابلة والشافعية : يسن التورك في التشهد الأخير، وهو كالافتراش، ولكن يخرج يسراه من جهة يمينه ويلصق وركه بالأرض، بدليل ما جاء في حديث أبي حميد الساعدي : «حتى إذا كانت الركعة التي تنقضي فيها صلاته، أخرَّ رجله اليسرى، وقعد على شقه متوركاً، ثم سلَّم» .

“হাম্বলি ও শাফেঈগণ বলেন: শেষ তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করা সুন্নাত। তাওয়ার্রুক ইফতিরাশের মতো, তবে তাতে বাম পাকে ডান দিকে বের করে দিতে হয় এবং নিতম্বের উপর বসতে হয়। এ সম্পর্কে দলিল হল, সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদির (রা) হাদীস: ‘যখন নবী (স) সেই দুই রাকআতে থাকতেন যা দ্বারা সালাত শেষ করবেন, (তাতে) তাঁর বাম পা বের করে দিতেন এবং নিতম্বের উপর তাওয়ার্রুক করে বসতেন, অতঃপর সালাম দিতেন।’ (নায়লুল আওতার ২/১৮৪)

والتورك في الصلاة : القعود على الورك اليسرى، والوركان : فوق الفخذين كالكعبين فوق العضدين . لكن قال الحنابلة : لا يتورك في تشهد الصبح؛ لأنه ليس بتشهدٍ ثانٍ، والذي تورك فيه النبي بحديث أبي حميد هو التشهد الثاني للفرق بين التشهدين، وما ليس فيه إلا تشهد واحد لا اشتباه فيه، فلاحاجة إلى الفرق .

والخلاصة : إن التورك في التشهد الثاني سنة عند الجمهور، وليس بسنة عند الحنفية .

“সালাতে তাওয়ার্রুক: সালাতে বাম নিতম্বের ( الورك ) উপর বসাকে তাওয়ার্রুক বলে। আর الوركان হল: যেভাবে কনুই বাহুর উপরের অংশ সেভাবে নিতম্ব হাঁটুর উপরের অংশ। কিন্তু হাম্বলিরা বলেন: ফজরের সালাতের তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক নেই। কেননা সেখানে দ্বিতীয় তাশাহহুদ নেই। (যদিও) সাহাবী আবূ হুমায়দ (রা) বর্ণিত নবী (স)-এর তাওয়ার্রুকের হাদীসটি দ্বিতীয় তাশাহহুদে ছিল- দুই তাশাহহুদের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য। আর (মৌলিকভাবে) তাতে একটি তাশাহহুদ (এর বর্ণনা ছাড়া) আর কিছু ছিল না- এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। ফলে এই পার্থক্য করার প্রয়োজন নেই।

সারসংক্ষেপ: জুমহুরের (সংখ্যাধিক্যের) নিকট দ্বিতীয় তাশাহহুদের তাওয়ার্রুক করা সুন্নাত। হানাফিদের নিকট এটা সুন্নাত নয়।” [আল-ফিক্বহুল ইসলামি ও আদিল্লাতুহু (শামেলা) ২/৪৪ পৃ.]

শেষোক্ত মন্তব্যটির ন্যায় ইমাম বায়হাক্বি (রহ) অনুচ্ছেদ লিখেছেন:

وَالْقعُود فِي التَّشَهُّد الْأَخير يكون بالتورك وَقَالَ أَبُو حنيفَة : يقْعد فِي التَّشَهُّد الْأَخير قعوده فِي التَّشَهُّد

“শেষ তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসতে হবে। আর আবূ হানিফা বলেন: প্রথম তাশাহহুদের ন্যায় শেষ তাশাহহুদে বসতে হবে।”[আল-খিলাফিয়াত লিলবায়হাক্বি (শামেলা) ২/৯৮ পৃ., মাসআলা: ৮৩]

মূল হাদীস
১) দ্বিতীয় রাকআতে বাম পায়ের উপর (ইফতিরাশ পদ্ধতিতে) বসা এবং শেষ রাকআতে বাম নিতম্বের উপর (তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে) বসা:

সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণনা করেন:

فَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ جَلَسَ عَلَى رِجْلِهِ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ

“যখন দ্বিতীয় রাকআতে বসতেন তখন বাম পা-এর উপর বসতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। আর যখন শেষ রাকআতে বসতেন তখন বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

অপর হাদীসে ‘শেষ রাকআত’ বাক্যের পরিবর্তে ‘চতুর্থ রাকআত’ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। বর্ণনাটি নিম্নরূপ:

فَإِذَا كَانَ فِى الرَّابِعَةِ أَفْضَى بِوَرِكِهِ الْيُسْرَى إِلَى الأَرْضِ وَأَخْرَجَ قَدَمَيْهِ مِنْ نَاحِيَةٍ وَاحِدَةٍ

“তারপর চতুর্থ রাকআতে বসার সময় নিজের দুই পা ডান দিকে বের করে বাম নিতম্বের উপর ভর করে বসতেন।” [আবূ দাউদ হা/৭৩১]

এখানে ‘একটি হাদীস অপরটির ব্যাখ্যা’ নীতিমালার আলোকে ‘চতুর্থ রাকআত’ বলতে ‘শেষ রাকআতকে’ বুঝানো হয়েছে।

প্রথম হাদীস থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়, ডান পা খাড়া রাখতে হবে। আর দ্বিতীয় হাদীস থেকে বুঝা যায়, ডান পাকেও বাম পায়ের মতো বের করে দিয়ে বিছাতে হবে। অর্থাৎ বাম নিতম্বের উপর বসাটাই ‘তাওয়ার্রুকের’ মৌলিক দাবি।

হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:

وَاسْتَدَلَّ بِهِ الشَّافِعِيّ أَيْضًا عَلَى أَنَّ تَشَهُّد الصُّبْح كَالتَّشَهُّدِ الْأَخِير مِنْ غَيْره ؛ لِعُمُومِ قَوْلُهُ : ( فِي الرَّكْعَة الْأَخِيرَة  (

“(পূর্বের) হাদীস থেকে ইমাম শাফেঈ (রহ) দলিল নিয়েছেন যে, ফজরের সালাতের তাশাহহুদ অন্যান্য সালাতের শেষ তাশাহহুদের মতো হবে। কেননা সাহাবী (রা)-এর ‘আম (ব্যাপক) অর্থে ব্যবহৃত উক্তি হল: ‘শেষ রাকআতে।’ [ফতহুল বারী ২/৩০৯ (অন্য সংস্করণ ২/৪৪০পৃ., হা/৮২৮-এর ব্যাখ্যা]

ইমাম নাওয়াবি (বাংলাতে প্রসিদ্ধ: ইমাম নববী) (রহ) লিখেছেন:

مَذْهَبُنَا أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ أَنْ يَجْلِسَ فِي التَّشَهُّدِ الْأَوَّلِ مُفْتَرِشًا وَفِي الثَّانِي مُتَوَرِّكًا , فَإِنْ كَانَتْ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ جَلَسَ مُتَوَرِّكًا

“আমাদের মাযহাব হল, প্রথম তাশাহহুদের ইফতিরাশ করা মুস্তাহাব এর দ্বিতীয়টিতে তাওয়ার্রুক করতে হবে। তবে যদি দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত হয়, তা হলে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসতে হবে।” [আল-মাজমু‘ ৩/৪৩১ পৃ.]

২) দুই রাকআত (তথা দ্বিবচন ব্যবহৃত) সালাতের হাদীসে তাওয়ার্রুক:

সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণনা করেন:

كَانَ النَّبِيُّ إِذَا كَانَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ تَنْقَضِي فِيهِمَا الصَّلَاةُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ عَلَى شِقِّهِ مُتَوَرِّكًا ثُمَّ سَلَّمَ

“নবী (স) যখন দুই রাকআতে ছিলেন, যে দুইটিতে তিনি তাঁর দুটি (রাকআত) সালাত শেষ করতেন- (তাতে) তাঁর বাম পা বের করে দিতেন এবং নিতম্বের উপর তাওয়ার্রুক করে বসতেন, অতঃপর সালাম দিতেন।” [নাসাঈ- কিতাবুস সালাত (অনুচ্ছেদ: যে রাকআতে সালাত শেষ হবে তাতে কীভাবে বসতে হবে) হা/১২৬৫ (ইফা)। শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহক্বীক্ব নাসাঈ হা/১২৬২)]

শাব্দিক তরজমা : (আরবি ডান থেকে বামে পড়তে হবে)

كَانَ = হওয়া/ থাকা/ ছিল ، النَّبِيُّ =নবী ، إِذَا =যখন ، كَانَ = হওয়া/ থাকা/ ছিল ، الرَّكْعَتَيْنِ =দুই রাকআত ، اللَّتَيْنِ = যে দুটিতে ، تَنْقَضِي = তিনি শেষ করতেন ، فِيهِمَا তাঁর দুটি ، الصَّلَاةُ = সালাত ، أَخَّرَ = পিছিয়ে দিতেন ، رِجْلَهُ = তাঁর পা ، الْيُسْرَى = বাম ، وَقَعَدَ = আর বসতেন ، عَلَى = উপর ، شِقِّهِ = তাঁর নিতম্ব ، مُتَوَرِّكًا =ভাবে তাওয়ার্রুক ، ثُمَّ = অতঃপর ، سَلَّمَ = তিনি সালাম দিতেন،

উপরের হাদীসটিতে সুনির্দিষ্টভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত শেষ করার সময় তাওয়ার্রুক করার কথা খাস বা সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। উক্ত সাহাবীর চার রাকআত-বিশিষ্ট অন্য বর্ণনাতে শেষ রাকআত বা শেষ সাজদাহ’র পরবর্তী তাশাহহুদের বৈঠকের পদ্ধতিতেও তাওয়ার্রুক করার কথাই বর্ণিত হয়েছে, যা শেষ তাশাহহুদের বৈঠকের সাথে খাস করে। দুই বা চার রাক‘আতের জন্য নির্দিষ্ট করে না। অর্থাৎ এক ও তিন রাকআত বিশিষ্ট সালাতের ক্ষেত্রেও তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসার অনুমতি পাওয়া যায়। এ মর্মে কয়েকটি বর্ণনা নিম্নরূপ:

৩) যে রাকআতটি দ্বারা সালাত শেষ হবে, তাতে তাওয়ার্রুক করা:

সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণনা করেন:

حَتَّى كَانَتِ الرَّكْعَةُ الَّتِي تَنْقَضِي فِيهَا صَلاَتُهُ أَخَّرَ رِجْلَهُ اليُسْرَى وَقَعَدَ عَلَى شِقِّهِ مُتَوَرِّكًا، ثُمَّ سَلَّمَ

“এমনকি যে রাকআতটি দ্বারা তাঁর সালাত শেষ হতো তাতে বাম পা-টি বের করে নিতম্বের উপর তাওয়ার্রুক করতেন, অতঃপর সালাম ফিরাতেন।” [তিরমিযী হা/৩০৪, মিশকাত হা/৮০১- সহীহ (যুবায়ের আলী যাঈ)]

৪) যে শেষ সাজদার পর সালাম ফিরাতে হবে তাতে তাওয়ার্রুক করা :

حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ

“এমনকি যখন (শেষ) সাজদা করতেন যাতে (যে তাশাহহুদে) তিনি সালাম দিতেন তাতে বাম পা-টি বের করে তাওয়ার্রুক করে বাম নিতম্বের উপর বসতেন।” [আবূ দাউদ হা/৭৩০, মিশকাত হা/৮০১ – সহীহ (যুবায়ের আলী যাঈ)]

৫) শেষ সাজদার পর তাওয়ার্রুক করা :

حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي تَكُونُ خَاتِمَةَ الصَّلَاةِ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْهُمَا وَأَخَّرَ رِجْلَهُ وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا

“এমনকি যখন (শেষ) সাজদা করতেন যা দ্বারা সালাত শেষ হতো- সাজদা থেকে তাঁর (স) মাথা উঠাতেন, তখন তার পা বের করে দিতেন এবং তাওয়ার্রুক করে বসতেন।” [সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৭০]

উপরের হাদীসগুলো শেষ রাকআত, শেষ তাশাহহুদে এবং শেষ সাজদার পরে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসার অনুমতি দেয়। বাক্যগুলো চার বা দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাতের জন্য এ পদ্ধতিটিকে সুনির্দিষ্ট করে না। বরং যে বৈঠকে সালাত শেষ হবে বা সালাম রয়েছে তাতেই তাওয়ার্রুকের পদ্ধতিটি উন্মুক্তভাবে প্রয়োগযোগ্য হয়। এমনকি সাহু সাজদা থাকলেও তাওয়ার্রুক পদ্ধতিটি প্রযোজ্য।

শায়েখ রফিক তাহেরের ফাতওয়া
সংগ্রহ: http://www.rafeeqtahir.com/ur/play-swal-578.html

کیا دو رکعت والی نماز میں بھی تورک کیا جائے گا؟ یا تورک صرف اس نماز کے ساتھ خاص ہے جس میں آخری تشہد سے پہلے بھی تشہد ہو؟

প্রশ্ন: দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাতে কি তাওয়ার্রুক করা যাবে? নাকি তাওয়ার্রুক কেবল ঐ সালাতের জন্য খাস (নির্দিষ্ট) যেখানে শেষ তাশাহহুদের আগেও তাশাহহুদ রয়েছে?

উত্তর:

الجواب بعون الوهاب ومنہ الصدق والصواب والیہ المرجع والمآب

“(ওয়াহহাব বা) মহানদাতার (আল্লাহর) অনুগ্রহে জবাবটি দেয়া হল, এতে সততা ও বিশুদ্ধতা রয়েছে এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন ও আশ্রয়স্থল।”

تورک ہر اس تشہد میں ہے جس کے بعد سلام ہے۔ خواہ وہ تشہد پہلی رکعت میں ہو، یا دوسری ، یا تیسری , یا چوتھی، یا پانچویں، یا ساتویں، یا نویں رکعت میں۔ کیونکہ رسول اللہ ہر اس تشہد میں تورک فرماتےتھے جسکے بعد سلام پھیرتے۔ سیدنا ابو حُمید ساعدی رضی اللہ عنہ نے دس صحابہ کرام رضوان اللہ علیہم اجمعین کی موجود گی میں رسول اللہ کا طریقہ نماز بیان کرتے ہوئے فرمایا :

“তাওয়ার্রুক এমন প্রত্যেক তাশাহহুদে হবে- যার পরে সালাম রয়েছে। হোক সেটা প্রথম তাশাহহুদ বা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম কিংবা নবম রাকআতের তাশাহহুদের (যেমন-বিতর সালাত)। কেননা রসূলুল্লাহ (স) প্রত্যেক ঐ তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করেছেন, যার পরে সালাম ফেরাতেন। সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) দশ জন সাহাবীর (রা) উপস্থিতিতে রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাতের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন:

حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ

حتى کہ جب وہ رکعت ہوتی جس میں سلام پھیرنا ہے , تو آپ اپنے بائیں پاؤں کو ہٹا لیتے اور بائیں جانب ران پر بیٹھتے ( تورک کرتے ) سنن ابی داود : ٧٣٠

“এমনকি যখন ঐ রাকআতে ছিলেন, যাতে সালাম ফিরালেন, তখন নবী (স) নিজের বাম পাকে বের করে দিতেন এবং তাওয়ার্রুক করে বাম নিতম্বের উপর বসতেন।” [আবূ দাউদ : ৭৩০]

اسی طرح سیدنا عمر بن الخطاب رضی اللہ عنہ نے لوگوں سے کہا کہ میں تمہیں رسول اللہ والی نماز پڑھ کر دکھاتا ہوں تو انہوں نے دو رکعت نماز ادا فرمائی پہلی رکعت مکمل کی

“অনুরূপ সাহাবী উমার ইবনু খাত্তাব (রা) লোকদেরকে বললেন: তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাত দেখাব, তখন তিনি (রা) দুই রাকআত সালাত পড়লেন। প্রথম রাকআত পূর্ণ করলেন-

ثم صلَّى ركعةً أخرى مثلَها، ثم استوى جالسًا، فنَحَّى رجليه عن مَقعدتِهِ وألزم مَقعدتَهُ الأرضَ

پھر دوسری رکعت بھی اسی طرح ادا کی پھر بیٹھ گئے اور اپنے دونوں پاؤں کو اپنے مقعد سے دور رکھا اور اپنے مقعد کو زمین پر لگایا ( یعنی تورک فرمایا ) اور پھر نماز مکمل کرنے کے بعد لوگوں سے کہا :

“অতঃপর দ্বিতীয় রাকআতও সেভাবে পড়লেন ও বসলেন। তখন তিনি নিজের দুই পা নিজের নিতম্ব থেকে দূরে রাখলেন ও নিতম্ব জমিনে রাখলেন (অর্থাৎ তাওয়ার্রুক করলেন)। এরপর সালাত শেষে বললেন:

هكذا كان رسولُ الله يُصلِّي بنا

اسی طرح ہمیں نماز پڑھایا کرتے تھے۔ مسند الفاروق لابن کثیر : ٩٤، جـ ۱ ، صـ٢٠٩ ، ط : دار الفلاح مصر؛ اس روایت کو امام بیہقی نے اپنی مایہ ناز تصنیف الخلافیات میں حسن سند سے نقل فرمایا ہے۔

“এভাবে রসূলুল্লাহ (স) আমাদেরকে সালাত পড়িয়েছেন।”

[মুসনাদে ফারুক লিইবনি কাসির : ৯৪, ১/২০৯ পৃ. (মিসর: দারুল ফালাহ); বর্ণনাটি ইমাম বায়হাক্বী (রহ) তাঁর অতুলনীয় লেখনী ‘আল-খিলাফিয়াতে’ হাসান সনদে উল্লেখ করেছেন। (সনদের তাহক্বীক্ব পুস্তিকাটির শেষে যুক্ত হল।–অনুবাদক)]

কিছু সংশয়ের জবাব
[এই অংশটি ইন্টারনেট থেকে শায়েখ কিফায়াতুল্লাহ সানাবিলি’র লেখনীর ছায়া অবলম্বনে লিখিত।]

ভুল ধারণা-১: প্রাধান্যপ্রাপ্ত সিদ্ধান্ত হল, তাওয়ার্রুক এমন প্রত্যেক সালাতের দ্বিতীয় তাশাহহুদে হবে, যেখানে দুই তাশাহহুদ থাকবে। সুতরাং একটি তাশাহহুদ-বিশিষ্ট সালাতে ইফতিরাশ হবে।

সংশোধন-১: এটা কেবলই দাবি। কেননা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদীসে যেসব শব্দ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-

ক) যে রাকআতটি দ্বারা সালাত শেষ হবে তাতে তাওয়ার্রুক করা,

খ) যে শেষ সাজদার পর সালাম ফিরাতে হবে তাতে তাওয়ার্রুক করা,

গ) যে রাকআতটি শেষ হবে তাতে নিতম্বের উপর বসা… প্রভৃতি।

এই শব্দগুলো ‘আম বা ব্যাপক অর্থে এমন সব বৈঠক, যার পরে সালাম রয়েছে বা রাকআতটি দ্বারা সালাত শেষ হবে, সেক্ষেত্রে তাওয়ার্রুক করাটাই বিধান। সেটা এক রাকআত হোক বা দুই, তিন, পাঁচ, সাত কিংবা নয় রাকআত-বিশিষ্ট সালাত- সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

যদি আবূ হুমায়দ সাঈদির চার রাকআত সালাতের বর্ণনা দ্বারা খাস করা হয়, তা হলে তো মাগরিবের তিন রাকআত সালাতের ক্ষেত্রে তাওয়ার্রুক প্রযোজ্য হয় না। অথচ বিরোধী পক্ষ এ ক্ষেত্রে ক্বিয়াস করে মাগরিবকে দুই তাশাহহুদ-বিশিষ্ট বানিয়ে তাওয়ার্রুককে জায়েয করেন। অথচ তাদের দলিল হল, চার রাকআতের হাদীস। পক্ষান্তরে তারা যদি শেষ রাকআতের ‘আম বর্ণনা দ্বারা দলিল নিতেন, তা হলে মাগরিবের তৃতীয় রাকআতের তাওয়ার্রুক করা সংগত হয়। অন্যথায় চার রাকআতে দলিল দিয়ে মাগরিবের তৃতীয় রাকআতে তাওয়ার্রুক করাটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

আবার সাত ও নয় রাকআতে বিতরের ক্ষেত্রেও দুই তাশাহহুদ রয়েছে। এ পর্যায়ে ‘যে রাকআত দ্বারা সালাত শেষ হবে’ বা ‘যে সাজদার পরে সালাম ফিরাতেন’ বাক্যগুলো দ্বারা দলিল গ্রহণ অহেতুক বিতর্ক থেকে দূরে রাখে।

ভুল ধারণা-২: ইমাম মালিক (রহ) ও মালেকিগণ হানাফিদের বিপরীতে প্রত্যেক তাশাহহুদের তাওয়ার্রুকের কথা বলেছেন। [আল-ইসতিযকার লিইবনি আব্দুল বার ৪/৪৬২, আল-মাদওয়ানাতুল কুবরা ১/২৭]

সংশোধন-২: ইমাম মালিক (রহ)-এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) বলেন:

وبهذا نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه الله - وكان مالك بن أنس يأخذ بذلك في الركعتين الأوليين وأما في الركعة الرابعة فإنه كان يقول : يفضي الرجل بأليتيه إلى الأرض ويجعل رجليه إلى الجانب الأيمن

“আমাদের এবং ইমাম আবূ হানিফারও মতামত এটাই (ইফতিরাশ পদ্ধতিতে সালাতে বসা)। ইমাম মালেক (রহ) প্রথম বৈঠকে এভাবে (ইফতিরাশ পদ্ধতিতে) বসতে বলেন, কিন্তু চার রাকআত (শেষ বৈঠকে) সম্পর্কে বলেন, নিতম্ব মাটিতে ঠেকিয়ে বসবে এবং উভয় পা ডান কাতে বের করে দেবে (অর্থাৎ তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসতে হবে)।” [মুয়াত্তা মুহাম্মাদ (আহসান পাব:, ২০০৩ ঈসায়ী) হা/১৫৪-এর শেষাংশ, পৃ. ৮৫]

সুস্পষ্ট হল, ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) তাঁর উস্তায ইমাম মালিক (রহ) সম্পর্কে এই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ইমাম মালিক (রহ) প্রথম তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক পদ্ধতির বদলে বাম পায়ের উপর বসার ফাতওয়া দিয়েছেন। অর্থাৎ ইমাম শাফেঈ (রহ)-এর মতো ইমাম মালিক (রহ) থেকেও প্রথম তাশাহহুদে ইফতিরাশ পদ্ধতি এবং শেষ তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক পদ্ধতি প্রমাণিত।

ভুল ধারণা-৩: ইমাম আহমাদ (রহ)-এর সিদ্ধান্ত হল, এমন প্রত্যেক সালাতে শেষ তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করতে হবে, যেখানে দুটি তাশাহহুদ রয়েছে।

সংশোধন-৩: অথচ ইমাম আহমাদ (রহ)-এর থেকে অপর একটি মত রয়েছে যে, সালাতের কোনো বৈঠকেই তাওয়ার্রুক করা যাবে না। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানিফা (রহ)-এর মতের অনুরূপ। যেমন, হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন: وَاخْتَلَفَ فِيهِ قَوْلُ أَحْمَدَ “অর্থাৎ তাওয়ার্রুকের ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদের বিভিন্ন মত রয়েছে।” [ফতহুল বারী ২/৩০৯ (অন্য সংস্করণ: ২/৪৪০ পৃ.) - والمشهور عنه اختصاص التورك بالصلاة التي فيها تشهدان “তাঁর থেকে প্রসিদ্ধ হল, দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতে তাওয়ার্রুক খাস (সুনির্দিষ্ট)।”]

অপর মত সম্পর্কে সুনানে আবূ দাউদের ব্যাখ্যাকারী শামসুল হক্ব আযিমাবাদি (রহ) লিখেছেন:

لكن احمد يقول يفترش في التشهد الثاني كالأول

“কিন্তু ইমাম আহমাদ (রহ) বলেছেন, দ্বিতীয় তাশাহহুদেও প্রথম তাশাহহুদের ন্যায় ইফতিরাশ করতে হবে।” [আওনুল মা‘বুদ শরহে আবি দাউদ ৮/৯৯]

সুতরাং আরব আলেমগণ কর্তৃক ইমাম আহমাদ (রহ)-এর বক্তব্যের সমর্থনে কেবল তাঁরই একটি সিদ্ধান্তের প্রতি ঝোঁকা ও তা প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় থাকাটা সংগত নয়।

ভুল ধারণা-৪: ইমাম শাফেঈ (রহ) কর্তৃক ‘সুনানে আবূ দাউদের’ সালাম-সম্পর্কিত দলিল থেকে প্রত্যেক সালামবিশিষ্ট তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করার দলিল নেয়া হয়েছে, যা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। কেননা, এক্ষেত্রে সালাম-সম্পর্কিত তাশাহহুদের দাবিও চতুর্থ রাকআত। যেভাবে অন্য হাদীসে স্পষ্ট হয়েছে।

সংশোধন-৪: যদি সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীস থেকে দ্বিতীয় তাশাহহুদে ‘তাওয়ার্রুক’ করার বর্ণনা থেকে এটা বাধ্যতামূলক হয় যে, কেবল দ্বিতীয় তাশাহহুদের ক্ষেত্রে সেটা খাস (সুনির্দিষ্ট)। সেক্ষেত্রে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত তাশাহহুদের বৈঠকের শেষাংশে বর্ণিত দুআর হাদীসটিও কেবল দুইটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের জন্য হবে। পক্ষান্তরে ফজরের ন্যায় একটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের জন্য প্রযোজ্য হয় না। দুআর হাদীসটি নিম্নরূপ:

۔۔۔۔ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : " إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ   التَّشَهُّدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

“সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ শেষ তাশাহহুদটি সম্পন্ন করে, তখন সে যেন আল্লাহ নিকট চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় চায়- জাহান্নামের আযাব থেকে, ক্ববরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ক্ষতি থেকে।” [সহীহ মুসলিম, মিশকাত (তাহক্বীক্ব) হা/৯৪০ (এমদাদিয়া, ২/৮৭৯)]

বুঝা যাচ্ছে, দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের শেষ তাশাহহুদে দুআটি পড়তে হবে। আপনারা কি সেটা করেন? কখনো না। বরং ফজরের সালাত- যেখানে একটি তাশাহহুদ, আর এক্ষেত্রে এটাই শেষ তাশাহহুদ। তাইতো আপনারাও ফজরের সালাতে দুআটি পড়ে থাকেন।

দ্বিতীয়ত, যদি দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় তাশাহহুদে ‘তাওয়ার্রুক’ খাস বা সুনির্দিষ্ট হওয়ার কারণ এটা হয় যে, সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীসে ‘তাওয়ার্রুকের’ বর্ণনাটি দ্বিতীয় তাশাহহুদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে, তা হলে এটাও মানতে হবে যে-

‘ইফতিরাশ’ পদ্ধতিটিও দুই তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের মাঝামাঝিতে হওয়াটা খাস বা সুনির্দিষ্ট। অর্থাৎ ‘ইফতিরাশ’ এমন তাশাহহুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা সালাতের মাঝামাঝিতে হয়ে থাকে। কেননা আবূ হুমায়দ (রা)-এর হাদীসের আলোকে ইফতিরাশের বর্ণনাটি সালাতের শেষাংশ বা শেষ তাশাহহুদের বসার পদ্ধতি হিসেবে প্রযোজ্য নয়।

কেউ কেউ বলেছেন: ‘তাওয়ার্রুকের’ বর্ণনাটি কেবল দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতে বর্ণিত হয়েছে, আর ‘তাওয়ার্রুক’ এর দ্বিতীয় তাশাহহুদে। সুতরাং ‘তাওয়ার্রুক’ কেবল দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় তাশাহহুদের জন্য খাস।

এ পর্যায়ে আমরাও বলতে পারি, যে হাদীসে কেবল ‘ইফতিরাশ’-এর বিবরণ আছে, সেখানেও দুটি তাশাহহুদের বর্ণনা আছে। আর ‘ইফতিরাশ’ ঐ সালাতের মাঝামাঝি অংশে। সুতরাং ‘ইফতিরাশ’ দুই সালাতবিশিষ্ট সালাতের মধ্যবর্তী অংশে বসার পদ্ধতি, কোনো সালাতের শেষাংশে এই পদ্ধতিটি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ এক তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের ক্ষেত্রে ‘ইফতিরাশ’ প্রযোজ্য নয়। কেননা এই তাশাহহুদটি দুটি তাশাহহুদের মাঝে নেই।

তৃতীয়ত, সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীসে ‘তাওয়র্রুকের’ বর্ণনাটি দ্বিতীয় তাশাহহুদের ক্ষেত্রে এসেছে। কিন্তু তাঁরই অপরাপর বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হয়, দ্বিতীয় তাশাহহুদকে খাস করাটা এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং ‘তাওয়ার্রুকের’ দাবি শেষ বৈঠকের সাথে খাস। যেমন-

১) সহীহ বুখারীর বাক্য : … إِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ “আর যখন তিনি শেষ রাক‘আতে বসতেন।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

২) তিরমিযীর বাক্য : … حَتَّى كَانَتِ الرَّكْعَةُ الَّتِي تَنْقَضِي فِيهَا صَلَاتُهُ “এমনকি, যে রাকআতটি দ্বারা তিনি (স) তাঁর সালাত শেষ করতেন…।” [তিরমিযী হা/৩০৪]

৩) আবূ দাউদের বাক্য : … حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ “এমনকি, যখন (শেষ) সাজদা করতেন, যাতে (যে তাশাহহুদে) তিনি সালাম ফেরাতেন…।” [আবূ দাউদ হা/৭৩০]

৪) সহীহ ইবনু হিব্বানের বাক্য: … حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي تَكُونُ خَاتِمَةَ الصَّلَاةِ “এমনকি, যখন (শেষ) সাজদা করতেন যা দ্বারা সালাত শেষ হতো…।” [সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৭০]

সুস্পষ্ট হয়, উপরিউক্ত বাক্যগুলো সালাতের সমাপ্তি বা শেষ বৈঠকের ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে খাস। হাদীসগুলোর দাবি দ্বিতীয় তাশাহহুদে বসার পদ্ধতি বর্ণনা করা উদ্দেশ্য নয়, বরং সালাতের সমাপ্তি বা শেষ বৈঠক বর্ণনা করা উদ্দেশ্য।

চতুর্থত, সালাত সমাপ্ত করার বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে- একটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাত সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণিত দুটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় বা শেষ তাশাহহুদের পদ্ধতির অনুরূপ। পক্ষান্তরে বর্ণনাটির প্রথম তাশাহহুদের সাথে একটি তাশাহহুদ দ্বারা সালাত সমাপ্ত করার বৈঠকটির সাদৃশ্য নেই।

ভুল ধারণা-৫: সুনানের আবূ দাউদের (হা/৭৩১) বর্ণনাতে সাহাবী আবূ হুমায়দ (রা)-এর শব্দগুলো হলো: فإذا كان في الرابعة أفضى بوركه “আর যখন তিনি চতুর্থ রাকআতে থাকতেন তখন তাওয়ার্রুক করতেন।”

অনুরূপ কিতাবুল উম্ম (১/১০১), মুসনাদে শাফেঈ (পৃ. ৫৯, হা/২৭৭)-এর শব্দগুলো হলো: فإذا جلس في الأربع “যখন চতুর্থ বৈঠকে বসতেন।” [উর্দু সংস্করণ: হা/২৫৫]

এই বর্ণনাগুলো থেকে ‘একটি হাদীস অপর হাদীসের ব্যাখ্যা’ নীতিমালার আলোকে এটাই সুস্পষ্ট হয় যে, ‘তাওয়ার্রুক’ চতুর্থ রাকআতে হবে। ইমাম আহমাদ (রহ) ও অন্যরা এভাবেই দলিল গ্রহণ করেছেন।

সংশোধন-৫: সহীহ বুখারীতে الركعة الآخرة ‘শেষ রাকআত’ বাক্যটি এসেছে। ফলে আবূ দাউদ ও অন্য বর্ণনাতে ‘চার রাকআতের’ বর্ণনার দাবিও মূলত ‘শেষ রাকআতের’ দাবির সাথে যুক্ত। মূলত এখানে ‘শেষ রাকআত’-ই মৌলিক, ‘চার রাকআত’ কেবলই বর্ণনামূলক। কেননা, মাগরিবের সালাত তিনি রাকআত-বিশিষ্ট। ‘চার রাকআত’ বাক্যকে এখানে মৌলিক গণ্য করলে মাগরিবের সালাতে দুটি তাশাহহুদ থাকা সত্ত্বেও সেখানে ‘তাওয়ার্রুক’ করা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে সহীহ বুখারীর ‘শেষ রাকআত’ শব্দকে মৌলিক গণ্য করলে মাগরিব ও ফজর উভয় সালাতে ‘তাওয়ার্রুক’ করা যাচ্ছে।

ভুল ধারণা-৬: ইমাম শাফেঈ (রহ)-এর সিদ্ধান্তটি দুর্বল হওয়ার কারণ হল, সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণিত সংক্ষিপ্ত হাদীসে প্রথম তাশাহহুদের বর্ণানাটি উহ্য রেখে দ্বিতীয় তাশাহহুদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা ইমাম শাফেঈ (রহ) ও অন্যরা সালামবিশিষ্ট তাশাহহুদে ‘তাওয়ার্রুকের’ দাবিকে ‘আমভাবে প্রযোজ্য করেছেন। অথচ ঘটনা সেটা নয়।

সংশোধন-৬: ইমাম শাফেঈ (রহ) সম্পর্কে মন্তব্যটি অসংগত। কেননা ইমাম শাফেঈ (রহ) বিস্তারিত দলিল ছেড়ে সংক্ষিপ্ত দলিল দ্বারা বিষয়টি ভুল বুঝেছেন- এটা অসম্ভব। আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণিত ‘চার রাকআতে’র বর্ণনার সাথে সাথে তাঁরই বর্ণিত অন্যান্য বাক্য:

ক) যে রাকআত দ্বারা সালাত শেষ করতেন,

খ) যে সাজদার পর সালাম ফিরাতেন,

গ) যখন শেষ রাকআতে বসতেন-

প্রভৃতি বাক্যগুলো ‘চার রাকআত’-কে সালাতের সর্বশেষ অবস্থা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- সালাত শুরু করার ক্ষেত্রে ঐ আবূ হুমায়দ (রা) থেকে একই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: إِذَا كَبَّرَ جَعَلَ يَدَيْهِ حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ “যখন তাকবির দিতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

এখন প্রশ্ন হল, তাকবীরে তাহরিমার এই পদ্ধতিটি কি কেবল চার রাকআতবিশিষ্ট সালাতের জন্য খাস হবে? কেননা বর্ণিত হাদীসে চার রাকআতে বর্ণনা আছে। ঐ একই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ

“আর যখন তিনি শেষ রাকআতে বসতেন তখন বাম পা এগিয়ে দিয়ে অপর (ডান) পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

এই হাদীসটিতে উল্লিখিত ‘শেষ রাকআত’ বাক্যটি প্রমাণ করে, যেকোনো রাকআত সংখ্যার সালাতের ‘শেষ রাকআতের’ ক্ষেত্রে বাক্যটি প্রযোজ্য। যেভাবে ‘তাকবিরে তাহরিমার’ বর্ণনাটিও সালাত শুরুর পদ্ধতিমাত্রই গ্রহণযোগ্য, তার রাকআত সংখ্যা যা-ই হোক না কেন।

ভুল ধারণা-৭: এ কারণে হাফেয ইবনু ক্বাইয়েম (রহ) ইমাম শাফেঈ (রহ)-এর মতটি খণ্ডনে লিখেছেন:

فھذا السیاق ظاھر في اختصاص ھذا الجلوس بالتشھد الثاني

“হাদীসের ধারাবাহিকতা থেকে সুস্পষ্ট হয়, এই (তাওয়ার্রুক) পদ্ধতিটি দ্বিতীয় তাশাহহুদের ক্ষেত্রে খাস (সুনির্দিষ্ট)।” [যাদুল মা‘আদ ১/৪৫৪ পৃ.]

অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতের ক্ষেত্রেই কেবল ‘তাওয়ার্রুক’ পদ্ধতিটি প্রযোজ্য।

সংশোধন-৭: হাদীসের ধারাবাহিকতা থেকে আমরাও এটা বুঝি যে,

১) ‘ইফতিরাশ’ (বাম পায়ের উপর বসার) পদ্ধতিটি ঐ তাশাহহুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেখানে সালাত শেষ হয় না বরং পুনরায় দাঁড়িয়ে তৃতীয়/ চতুর্থ প্রভৃতি রাকআত পূর্ণ করতে হয়।

২) হাদীসটির ধারাবাহিকতায় তৃতীয় রাকআতে বসার পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি। যদি চার রাকআতের বর্ণনা দ্বারা ঐ রাকআতের সাথে ‘তাওয়ার্রুক’ খাস হয়, তা হলে সেটা কীভাবে তৃতীয় রাকআতের জন্য প্রযোজ্য হবে? পক্ষান্তরে যে হাদীসে শেষ রাকআতে ‘তাওয়ার্রুক’ করার বর্ণনা এসেছে, সেটাকে মৌলিক দলিল গণ্য করলে চতুর্থ রাকআতসহ দুই/তিন প্রভৃতি রাকআতের সালাতের ক্ষেত্রেও ‘তাওয়ার্রুক’ পদ্ধতিটি প্রযোজ্য হয়। কেননা আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর বর্ণিত হাদীসে এটাও আছে: ক) যে সাজদার পর সালাম ফেরাতেন, খ) যে রাকআত শেষ করতেন- এই শব্দগুলোরও শরিয়াতি গুরুত্ব রয়েছে।

৩) যদি বলা হয়, এখানে ‘চার রাকআত’ নয় বরং ‘দুটি তাশাহহুদ’ হওয়াকে মূল্যায়ন করতে হবে। তখন মাগরিবের ন্যায় তিন রাকআতবিশিষ্ট সালাতের ক্ষেত্রেও ‘ইফতিরাশ’ পদ্ধতিটি প্রয়োগযোগ্য হয়। অথচ সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীসে তিন রাকআতে বৈঠকের বর্ণনা নেই। তা ছাড়া তাঁর (রা) হাদীসে দুই রাকআত, চার রাকআত, শেষ রাকআত, শেষ সালাম বাক্যগুলো ব্যবহৃত হলেও ‘একটি/দুটি তাশাহহুদ’ বাক্যগুলো ব্যবহৃত হয়নি। এ থেকে বুঝা যায়, ‘একটি/দুটি তাশাহহুদ’ দ্বারা রসূলুল্লাহ (স)-এর বৈঠকের পদ্ধতি বর্ণনা করা তাঁর (রা) উদ্দেশ্য না। বরং দুই রাকআত, চার রাকআত, শেষ রাকআত, শেষ সালাম বাক্যগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বৈঠকের পদ্ধতি বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য।

৪) যে নীতির ভিত্তিতে হাফেয ইবনু ক্বাইয়েম (রহ) ‘তাওয়ার্রুক’-কে দ্বিতীয় তাশাহহুদের জন্য খাস করেছেন, ঐ একই নীতির আলোকে তিনি প্রথম তাশাহহুদে দরুদ ও দুআ পাঠকে অস্বীকার করেছেন। তিনি (রহ) লিখেছেন:

ولم يُنقل عنه في حديث قطُّ أنه صلى عليه وعلى آله في هذا التشهد، ولا كان أيضاً يستعيذُ فيه مِن عذاب القبر وعذابِ النَّار، وفِتنة المحيا والممات، وفِتنةِ المسيح الدَّجال، ومن استحبَّ ذلك، فإنما فهمه من عمومات وإطلاقات قد صح تبيينُ موضعها، وتقييدُها بالتشهد الأخير .

“নবী (স) থেকে এমন কোনো হাদীস নেই, যেখানে তিনি (স) এই তাশাহহুদে নিজের প্রতি বা তাঁর পরিবারের প্রতি দরুদ পড়ার কথা বলেছেন। তা ছাড়া এ তাশাহহুদে তিনি জান্নাত কামনা এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার দুআও করতেন না। জীবনে ও মরণে ফিতনা থেকে মুক্ত থাকা এবং দাজ্জালের বিপদ থেকে মুক্তি লাভের কামনাও এতে করতেন না। যারা এসব মুস্তাহাব মনে করেন, তারা ‘আম ও পরিপূরক দাবি থেকে এটা মনে করেন এবং শেষ তাশাহহুদে তা বলাটা সীমাবদ্ধ করেন।” [যাদুল মাআদ ১/২৩২ পৃ.]

অথচ দুই তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের উভয় তাশাহহুদে দরুদ ও দুআ পড়ার নিয়ম রয়েছে। [. বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: সালাহুদ্দিন ইউসুফ, তাফসিরে আহসানুল বায়ান, সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের তাফসির দ্র:।] এ মর্মে আয়েশা (রা) নয় রাকআত বিতর সালাতের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ إِذَا أَوْتَرَ بِتِسْعِ رَكَعَاتٍ لَمْ يَقْعُدْ إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ، فَيَحْمَدُ اللَّهَ وَيَذْكُرُهُ وَيَدْعُو، ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ، ثُمَّ يُصَلِّي التَّاسِعَةَ، فَيَجْلِسُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيَدْعُو، ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمَةً يُسْمِعُنَا،

“রসূলুল্লাহ (স) যখন নয় রাকআত বিতর দ্বারা বিজোড় করতেন কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও যিকির করতেন এবং দুআ করতেন। তারপর উঠে দাঁড়াতেন এবং সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর নবম রাকআত আদায় করে বসে যেতেন এবং আল্লাহর যিকর ও দুআ করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন, যা আমরা শুনতে পেতাম।” [নাসাঈ হা/১৭১৯- শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

নাসাঈর পরবর্তী বর্ণনাতে (হা/১৭২০) আছে:

لَا يَجْلِسُ فِيهِنَّ إِلَّا عِنْدَ الثَّامِنَةِ، وَيَحْمَدُ اللَّهَ، وَيُصَلِّي عَلَى نَبِيِّهِ وَيَدْعُو بَيْنَهُنَّ، وَلَا يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا، ثُمَّ يُصَلِّي التَّاسِعَةَ وَيَقْعُدُ ـ وَذَكَرَ كَلِمَةً نَحْوَهَا ـ وَيَحْمَدُ اللَّهَ وَيُصَلِّي عَلَى نَبِيِّهِ ، وَيَدْعُو ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا

“তিনি (নয় রাকআতের) অষ্টম রাকআত ছাড়া কোথাও বসতেন না। (বসে) তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন, তাঁর নবী (স)-এর প্রতি দরুদ পড়তেন এবং দুআ করতেন। তারপর উঠে যেতেন, সালাম ফিরাতেন না। এরপর নবম রাকআত আদায় করতেন এবং বসে যেতেন, (বসে) তিনি প্রশংসা করতেন, তাঁর নবী (স)-এর প্রতি দরুদ পড়তে এবং দুআ করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যা আমরা শুনতে পেতাম।” [নাসাঈ হা/১৭২০- শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

বিতর ছাড়াও এক্ষেত্রে নবী (স)-এর নির্দেশমূলক হাদীস রয়েছে, যা সব সালাতের ক্ষেত্রেই ‘আমভাবে প্রযোজ্য। যেমন, তিনি (স) বলেছেন:

إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ، فَلْيَبْدَأْ بِتَمْجِيدِ رَبِّهِ جَلَّ وَعَزَّ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ ، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ

“তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তার রবের হামদ ও সানা বর্ণনা করে। এরপর তাঁর নবী (স)-এর প্রতি দরুদ পড়বে। অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করবে।” [আবূ দাউদ হা/১৪৮১; শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ ও শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ তাঁদের স্ব স্ব তাহক্বীক্ব আবূ দাউদে হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

বুঝা যাচ্ছে, হাফেয ইবনু ক্বাইয়েম (রহ) যেহেতু প্রথম তাশাহহুদকে দ্বিতীয় তাশাহহুদ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক গণ্য করেছেন, এ কারণে তাঁর উসূলের আলোকে ফজরের সালাতের ন্যায় এক তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতের ক্ষেত্রে সালাম পূর্ব বৈঠকে কেবল তাশাহহুদ পড়তে হবে এবং দুরুদ ও দুআ পড়া যাবে না। কেননা তিনি একটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতে ‘ইফতিরাশ’ পদ্ধতিটি এখানে প্রযোজ্য করেছেন, যা তাঁর উক্ত নীতি মোতাবেক দরুদ ও দুআহীন হতে হবে।

আমরা লক্ষ করলাম, দুই তাশাহহুদ-বিশিষ্ট বিতরের সালাতের উভয় বৈঠকে নবী (স) তাশাহহুদের সাথে সাথে দুরুদ ও দুআ পাঠ করেছেন। এ কারণে ইমাম শওকানি (রহ) হাফেয ইবনু ক্বাইয়েমের (রহ) মতকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন:

والتفصيل الذي ذهب إليه أحمد يرده قول أبي حميد في حديثه الآتي فإذا جلس في الركعة الأخيرة . وفي رواية لأبي داود حتى إذا كانت السجدة التي فيها التسليم . وقد اعتذر ابن القيم عن ذلك بما لا طائل تحته۔

“ইমাম আহমাদ (রহ) এক্ষেত্রে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আবূ হুমায়দের বক্তব্য দ্বারা খণ্ডন হয়। তাঁর হাদীসে এসেছে, ‘যখন রসূলুল্লাহ (স) শেষ রাকআতে বসতেন’। আর আবূ দাউদের বর্ণনাতে আছে, ‘যখন তিনি (স) ঐ সাজদাতে থাকতেন যেখানে (পরে) সালাম রয়েছে’। আর এক্ষেত্রে ইবনু ক্বাইয়েম (রহ) যে অজুহাত পেশ করেছেন তাতে কোনো ফায়দা নেই।” [নায়লুল আওতার ২/৩০৬]

ভুল ধারণা-৮: প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর ‘সিফাতুস সালাতিন নাবিয়্যি’-এ এবং শায়েখ মুহাম্মাদ উমার বাযমুল তাঁর ‘জুযউ হাদীস আবি হুমায়দ সাঈদি ফি সিফাতে সালাতুন নাবিয়্যি (স)’-তে আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীস সম্পর্কে বলেছেন: তাঁর হাদীস থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, তাওয়ার্রুক তিন বা চার রাকআতবিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় তাশাহহুদে করতে হবে। এ কারণে ইমাম ইবনু ক্বাইয়েম (রহ) ও অন্য মুহাদ্দিসগণের ব্যাখ্যার পর এটা সুস্পষ্ট হয় যে, এই মাসআলাটিতে ইমাম শাফেঈ (রহ)-এর মতটি অগ্রহণযোগ্য। আর হাদীসটির সহীহ অর্থ সেটাই, যা হাফেয ইবনু ক্বাইয়েম, রহমানি ও শায়েখ আলবানী (রহ) প্রমুখ উল্লেখ করেছেন।

সংশোধন-৮: উক্ত শায়েখদের বিশ্লেষণ মৌলিক দলিল থেকে ভিন্ন দিকে যাওয়ায়- তা অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে সহীহ সিদ্ধান্ত সেটাই, যা নিম্নলিখিত আলেমদের উপস্থাপনাতে রয়েছে, তথা শেষ বৈঠক হলেই তাতে তাওয়ার্রুক করতে হবে:

১) উসূলে ফিক্বাহর উদ্ভাবক ইমাম শাফেঈ (রহ),

২) ইমাম দারুল হিজরাত (মদীনা) ইমাম মালেক (রহ)- তাঁর সম্পর্কে প্রসিদ্ধ রয়েছে তিনি উভয় তাশাহহুদ বা বৈঠকেই ‘তাওয়ার্রুক’ করার মত দিয়েছেন। অথচ কিছু পূর্বে তাঁর ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) থেকে আমরা জেনেছি, তাঁর মতটি ইমাম শাফেঈ (রহ)-এর মতের অনুরূপ।

৩) সুনানে নাসাঈর সংকলক ইমাম নাসাঈ (রহ),

৪) সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকারী ইমাম নাওয়াবি (রহ), (প্রসিদ্ধ বাংলা: ইমাম নববী)

৫) নায়লুল আওতারের লেখক ইমাম শওকানি (রহ),

৬) সুনানে তিরমিযীর ব্যাখ্যাকারী আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহ),

৭) ‘আল-লামহাতে’র লেখক মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ রইস নদভী (রহ),

৮) সহীহ বুখারী উর্দু অনুবাদক- দাউদ রায (রহ),

৯) আনওয়ার মাসাবিহের লেখক নাযির আহমাদ আমলাভী (রহ),

১০) মুহাম্মাদিয়াতের লেখক মুহাম্মাদ জুনাগঢ়ী (রহ), প্রমুখ।

উপরিউক্ত শায়েখদের উদ্ধৃতিগুলোর জন্য দেখুন শায়েখ কিফায়াতুল্লাহ সানাবালির دفع الشبهات عن مشروعية التورك في جميع الصلوات (দাফউশ শুবহাত আন মাশরুয়িয়্যাতুত তাওয়ার্রুক ফি জামিয়িস সালাত)।

ভুল ধারণা-৯: ইমাম ইবনু কাসির (রহ)-এর ‘মুসনাদে ফারুকে’ (১/৬৬১)-এ নবী (স)-এর সাথে সম্পর্কিত সালামবিশিষ্ট তাশাহহুদে তাওয়ার্রুক করার বর্ণনাটিও অভিযুক্ত। কেননা, আবূ বকর (রা)-এর গোলাম আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম মাজহুল রাবী। যদিও হাফেয ইবনু হিব্বান (রহ) ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ (৫/৬৪) উল্লেখ করেছেন। এই নিয়মটি প্রসিদ্ধ যে, হাফেয সাহেব এ ধরনের মাজহুল রাবীদেরকে নিজের কিতাবের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ কারণেটি হাদীস আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেমের জাহালাতের কারণে যঈফ।

সংশোধন-৯: আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেমকে মাজহুল বলাটা খুবই আজব ও দুর্বল উপস্থাপনা। আমরা নিচে তাঁর সমর্থনে মুহাদ্দিসগণের তাওসিক্ব পেশ করছি:

১০
আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম (আত-তায়মি)-এর পরিচিতি
তিনি উমার ফারুক (রা)-এর শিষ্য ছিলেন। [ইকমাল তাহযিবুল কামাল ৮/১২৪ পৃ. ৩১২৯ নং, তাহযিবুল কামাল লিলমিযযি ১৫/৪৩৮ পৃ.]

তিনি আবূ ঈসা সুলায়মান বিন কায়সানের উস্তায ছিলেন। [জারাহ ওয়াত তা‘দিল লিলআবি হাতিম : ৬০২]

তিনি সিক্বাহ ছিলেন। কুব্বারে তাবেঈদের কারও থেকে তাঁর প্রতি কোনো জারাহ (অভিযোগ) পাওয়া যায় না। বরং মুহাদ্দিসগণ থেকে তাঁর প্রতি তাওসিক্ব পাওয়া যায়। এর কিছু নিচে উল্লেখ করা হল:

১) ইমাম ইবনু হিব্বান (রহ. মৃত: ৬৩৭ হি.): তিনি তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [আস-সিক্বাত লিইবনি হিব্বান ৫/৪৬ পৃ.]

২) ইমাম ইবনু খলফুন (রহ. মৃত ৬৩৬ হি.): তিনিও তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [ইকমাল তাহযিবুল কামাল ৮/১২৪পৃ. ৩১২৯ নং]

৩) ইমাম হায়সামি (রহ. মৃত: ৮০৭ হি.): তিনিও তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৫৪ পৃ.]

৪) হাফেয ইবনু হাজার (রহ) তাঁকে মাক্ববুল বলেছেন। [তাক্বরিবুত তাহযিব ২/২১ পৃ.] এক্ষেত্রে সহীহ বর্ণনার সাক্ষ্য হিসেবে হাসান স্তরে গণ্য।

৫) শুআয়েব আরনাউত তাঁর ‘তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদে আহমাদে’ (হা/২২৩২৮) আব্দুল্লাহ বিন কাসেমের হাদীসকে হাসান বলেছেন। [শুআয়েব আরনাউত (রহ) লিখেছেন: إسناده حسن، أبو عيسى الخراساني التميمي روى عنه جمع، وذكره ابن حبان في " الثقات " ، وعبد الله بن القاسم - وهو مولى أبي بكر الصديق روى عنه ثلاثة، وذكره ابن حبان في " الثقات ". وأورده الهيثمي في " المجمع " ۱٠/۱۱۵ وقال : رواه أحمد ورجاله ثقات ]

এ পর্যায়ে ইবনু খাল্লিক্বানের এককভাবে ‘মাজহুল’ বলার আপত্তি প্রত্যাখ্যাত।

তাওসিক্বের অপর একটি দিক

৬) ইমাম ইবনু কাসির (রহ) ‘মাওলা আবূ বাকার’ শব্দসংবলিত হাদীসকে হাসান গণ্য করেছেন। তিনি (রহ) লিখেছেন:

يکفيه نسبته إلي أبي بکر الصديق، فهو حديث حسن

“আবূ বাকার সিদ্দিক (রা)-এর সাথে সম্পর্ক থাকাই যথেষ্ট। সুতরাং হাদীসটি হাসান।”[তাফসিরে ইবনু কাসির ২/১৫]

৭) ইমাম তাহাবি (রহ)-ও এ ধরনের একজন রাবী সম্পর্কে লিখেছেন:

لکن جهالته لاتضراذ تکفيه نسبته الي الصديق

“তার জাহালাত কোনো ক্ষতি করে না, আবূ বাকার সিদ্দিক (রা)-এর সাথে তার সম্পর্কটাই যথেষ্ট।” [ইত্তিহাফুল মুত্তাক্বিন ৫/৫৯ পৃ.]

লক্ষনীয় যে, আমাদের আলোচ্য রাবী আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম মাওলা আবূ বাকার প্রসিদ্ধ রাবী। এই সনদে তাঁর নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে, কেবলই ‘মাওলা আবূ বাকার’ বলা হয়নি। সুতরাং সুস্পষ্ট হল, এই রাবী ইমাম ইবনু কাসির (রহ) ও ইমাম তাহাবি (রহ)-এর নিকট নিশ্চিতভাবে হাসানুল হাদীস।

সর্বোপরি ব্যাপক সংখ্যক মুহাদ্দিসের নিকট বর্ণিত হাদীসটি নীতিগতভাবে হাসান স্তরের।

যে সমস্ত মুহাদ্দিস তাঁর প্রতি কোনো জারাহ করেননি

৮) ইমাম বুখারী (রহ) আব্দুল্লাহ বিন কাসিমের পরিচিতি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোনো জারাহ বা অভিযোগ উল্লেখ করেননি। তিনি (রহ) লিখেছেন:

عبد الله بن القاسم مولى أبي بكر الصديق رضى الله تعالى عنه وابن عمر وابن عباس وابن الزبير وسمع جاره النبي روى عنه أبو عيسى الخراساني وفضيل بن غزوان

“আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম (রহ)- তিনি আবূ বাকার সিদ্দিক্ব (রা)-এর মাওলা। তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন: ইবনু উমার (রা), ইবনু আব্বাস (রা) ও ইবনু যুবায়ের (রা) থেকে। তিনি নবী (স)-এর প্রতিবেশীর কাজ থেকে শুনেছিলেন। তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন: আবূ ঈসা খুরাসানি ও ফুযায়ল বিন গাযওয়ান।” [তারিখে কাবির লিলবুখারী ৫/৬৫ (শামেলা) ৫৫০ নং]

বুঝা যাচ্ছে, ইমাম বুখারী (রহ) তাঁর সম্পর্কে কোনো অভিযোগ উল্লেখ করেননি। এমনকি ইমাম বুখারী (রহ) তাঁর যঈফ রাবীদের সংকলনগুলোর মধ্যেও তার নাম উল্লেখ করেননি।

৯) ইমাম মিযযি (রহ) লিখেছেন:

عَبد الله بن القاسم القرشي التَّيْمِيّ البَصْرِيّ، مولى أبي بكر الصديق . رأى عُمَر بن الخطاب .

ورَوَى عَن : جابر بن عَبد الله ، وسَعِيد بن المُسَيَّب - وهو من أقرانه - وعبد الله بن الزبير ، وعبد الله بن عباس ، وجارة للنبي ﷺ.

رَوَى عَنه : فضيل بن غزوان ، وقرة بن خالد ، وأبو عيسى الخراساني ذكره ابنُ حِبَّان في كتاب " الثقات "

“আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম আল-কুরশি আত-তায়মি আল-বসরি: আবূ বাকার সিদ্দিক্ব (রা)-এর মাওলা ছিলেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে দেখেছেন।

তিনি বর্ণনা করেছেন: জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা) থেকে, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহ) থেকে- তিনি তাঁর সহচরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রা) থেকে, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) থেকে এবং নবী (স)-এর প্রতিবেশী থেকে।

তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন: ফুযায়ল বিন গাযওয়ান, কুর্রাতুন বিন খালিদ ও আবূ ঈসা খুরাসানি।

ইমাম ইবনু হিব্বান তাঁর কিতাব ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন।” [তাহযিবুল কামাল লিলমিযযি ১৫/৪৩৮ (শামেলা) ৩৪৮৬ নং]

বুঝা যাচ্ছে, ইমাম মিযযি (রহ)-ও আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেমের প্রতি মুহাদ্দিসগণের পক্ষ থেকে কোনো জারাহ বা আপত্তি উল্লেখ করেননি। সর্বোপরি তিনি মাজহুল ও জারাহযুক্ত রাবী নন, বরং তিনি প্রসিদ্ধ রাবী। অনেক মুহাদ্দিসই তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন এবং তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন।

১১
ওয়ায়েল বিন হুজর (রা)-এর হাদীস থেকে দলিল গ্রহণের পর্যালোচনা
ভুল ধারণা-১০: মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) যে দুই রাকআত সালাতে সালাম ফিরানো হয়- তাতে ইফতিরাশ করার শব্দসহ দলিল থাকার দাবি করেছেন। তিনি (রহ) বলেন:

’’ فھذا نص في أن الافتراش إنما کان في الرکعتین والظاھر أن الصلاۃ کانت ثنائیۃ ولعلھا صلاۃ الصبح .‘‘

“এই (সাহাবী ওয়াইল বিন হুজর রা.-এর) হাদীস দ্বারা ইফতিরাশ করাকে দলিল গণ্য করা হয়েছে, যখন সেটা দুই রাকআতবিশিষ্ট সালাত হবে। কেননা এই দলিলটি থেকে সুস্পষ্ট হয়. তিনি (রা) দুই রাকআতবিশিষ্ট সালাতে কিংবা সম্ভবত ফজরের সলাতে ছিলেন।” [আসলি সিফাতে সালাতুন নাবিয়্যি ৩/৪৮৯ পৃ. (এক খণ্ডে সম্পূর্ণ সংস্করণ: ৯৮৪ পৃ.), তামামুল মিন্নাহ ৩২২ পৃ.]

সংশোধন-১০: প্রথমে আমরা সম্পূর্ণ হাদীসটি জেনে নেব। সাহাবী ওয়াইল বিন হুজর (রা) বর্ণনা করেন:

أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ فَرَأَيْتُهُ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ حَتَّى يُحَاذِيَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ، وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ أَضْجَعَ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى، وَنَصَبَ أُصْبُعَهُ لِلدُّعَاءِ، وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى» ، قَالَ : ثُمَّ أَتَيْتُهُمْ مِنْ قَابِلٍ فَرَأَيْتُهُمْ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ فِي الْبَرَانِسِ

“আমি রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট আসলাম। দেখলাম, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করলেন তাঁর দুটি হাত উঠালেন, তা তাঁর কাঁধ বরাবর হল। আর যখন তিনি রুকু করতে ইচ্ছা করলেন তখনও এরূপ করলেন। তিনি যখন দুই রাকআতের পর বসলেন, তখন বাম পা বিছিয়ে দিলেন। আর ডান পা খাড়া রাখলেন। আর তাঁর ডান হাত তাঁর ডান উরুর উপর রাখলেন। আর দোয়ার জন্য তাঁর আঙুল ওঠালেন। আর তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর রাখলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি তাদের নিকট আসলাম তাদেরকে দেখলাম, তারা কাপড়ের মধ্যে হাত উঠাচ্ছিলেন।” [নাসাঈ হা/১১৫৯]

হাদীসটির যে বাক্য থেকে দলিল নেয়া হয়েছে, তা হল:

وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ أَضْجَعَ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى

“তিনি যখন দুই রাকআতের পর বসলেন, তখন বাম পা বিছিয়ে দিলেন। আর ডান পা খাড়া রাখলেন।”

প্রথমত, এখানে বাম পায়ের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু বাম পায়ের উপর বসার কথা বর্ণিত হয়নি। কেননা, اضجع শব্দটি কেবল বিছানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আর ‘তাওয়ার্রুকের’ ক্ষেত্রেও পা-কে বিছানো হয়। সুতরাং হাদীসটি ‘তাওয়ার্রুক’ পদ্ধতির বিরোধী হয় না।

ওয়াইল (রা)-এর বর্ণনাটি ‘তিরমিযী’-তে (হা/২৯২) নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছে:

فَلَمَّا جَلَسَ - يَعْنِي لِلتَّشَهُّدِ - افْتَرَشَ رِجْلَهُ اليُسْرَى، وَوَضَعَ يَدَهُ اليُسْرَى

“…যখন বসলেন- অর্থাৎ তাশাহহুদে- তার বাম পাকে ইফতিরাশ করলেন (বিছিয়ে দিলেন), আর বাম উরুতে বাম হাত রাখলেন।…”

এখানে বাম পায়ের উপর বসার কথা বর্ণিত হয়নি। আর তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতেও বাম পা-কে বিছিয়ে দিতে হয়। সুতরাং বর্ণনাটি সংক্ষিপ্ত এবং উক্ত বাক্যে তাওয়ার্রুক করার কোনো বিরোধিতা হয়নি।

হানাফিগণ এই ধরনের হাদীস দ্বারা তাওয়ার্রুক পদ্ধতিকে শেষ তাশাহহুদ থেকে বাতিল করে থাকেন, যা মূলত হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে খেয়ানত। এ পর্যায়ে মুহাদ্দিসগণের পক্ষ থেকে জবাব সেটাই, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:

لَمْ يُبَيِّنْ فِي هَذِهِ الرِّوَايَةِ مَا يَصْنَعُ بَعْدَ ثَنْيِهَا هَلْ يَجْلِسُ فَوْقَهَا أَوْ يَتَوَرَّكُ  

“এই বর্ণনাতে সুস্পষ্টভাবে এটা বলা নেই যে, পা বিছানোর পর তার উপর বসা হবে বা তাওয়ার্রুক করা হবে।” [ফতহুল বারী ২/৩০৬]

শায়েখ আব্দুল হক্ব লাক্ষ্ণৌভি (রহ) লিখেছেন:

فيه نظر فإن أثر ابن عمر هذا الذي رواه ههنا مجمل لا يكشف المقصود لأن ثني الرجل اليسرى عام من أن يجلس عليها أو يجلس على الورك

“সাহাবী ইবনু উমার (রা)-এর أثر (আসার) থেকে (তাওয়ার্রুকের বিরোধিতায়) উপস্থাপনা আপত্তিকর। এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। এটা দ্বারা (হানাফিদের) উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয় না। কেননা এখানে কেবল বাম পা বিছানোর কথা এসেছে। তার উপর বসার বর্ণনা বুঝা যায় না।” [আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ ১/২৩৯ পৃ.]

অর্থাৎ হাদীসগুলো দ্বারা যেভাবে বসার কথা বর্ণিত হয়েছে, তাতে তাওয়ার্রুক বা ইফতিরাশ করার বিরোধিতা হয় না। বরং বর্ণনাগুলো অসম্পূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, নাসাঈর বর্ণনাতে সালাম ফিরানোর বর্ণনা নেই। ফলে এটা দাবি করা ভুল যে, এটা দুই রাকআতবিশিষ্ট সালাত ছিল। এটারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটা চার রাকআতবিশিষ্ট সালাতের প্রথম দুই রাকআতের বর্ণনা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা , ইমাম তাবারানি (রহ) ও ইমাম বাযযার (রহ) স্ব স্ব সনদে সাহাবী ওয়াইল বিন হুজর (রা)-এর চার রাকআতের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। [দ্র: মু’জামুল কাবির লিত-তাবারানি ২২/৪৯/১১৮ (শামেলা)২২/৫০, মুসনাদে বাযযার (মিসর) ২/১৪৭, তাবারানির বর্ণনাটি যঈফ, তবে অন্য সহীহ বর্ণনা দ্বারা সমর্থিত।]

উল্লেখ্য যে, ইমাম নাসাঈ (রহ) সরাসরি দ্বিতীয় রাকআতের ‘তাওয়ার্রুক’ করার হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা আমরা শুরুতে উল্লেখ করেছি। হাদীসটি পুনরায় পড়ুন:

كَانَ النَّبِيُّ إِذَا كَانَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ تَنْقَضِي فِيهِمَا الصَّلَاةُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ عَلَى شِقِّهِ مُتَوَرِّكًا ثُمَّ سَلَّمَ

“নবী (স) যখন দুই রাকআতে ছিলেন, যে দুইটিতে তিনি তাঁর দুই (রাকআত) সালাত শেষ করতেন- (তাতে) তাঁর বাম পা বের করে দিতেন এবং নিতম্বের উপর তাওয়ার্রুক করে বসতেন, অতঃপর সালাম দিতেন।” [নাসাঈ- কিতাবুস সালাত (অনুচ্ছেদ: যে রাকআতে সালাত শেষ হবে তাতে কীভাবে বসতে হবে) হা/১২৬৫ (ইফা)। শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহক্বীক্ব নাসাঈ হা/১২৬২)]

১২
আয়েশা (স)-এর হাদীস থেকে দলিল গ্রহণের পর্যালোচনা
ভুল ধারণা-১১: অনুরূপ মুহাদ্দিস আলবানী (রহ) আয়েশা (রা)-এর ‘সহীহ মুসলিমে’ (হা/৮৯৪) বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে লিখেছেন:

“সর্বোপরি দলিলটি থেকে বুঝা যায়, দুই রাকআতবিশিষ্ট সালাতের তাশাহহুদে ইফতিরাশ পদ্ধতিতে হবে।”

সংশোধন-১১: প্রথমে আমরা সম্পূর্ণ হাদীসটি জেনে নেব। আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ يَسْتَفْتِحُ الصَّلَاةَ بِالتَّكْبِيرِ وَالْقِرَاءَةِ بِ ( الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) وَكَانَ إِذَا رَكَعَ لَمْ يُشْخِصْ رَأْسَهُ وَلَمْ يُصَوِّبْهُ وَلَكِنْ بَيْنَ ذَلِكَ وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ قَائِمًا وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السَّجْدَةِ لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ جَالِسًا وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عُقْبَةِ الشَّيْطَانِ وَيَنْهَى أَنْ يَفْتَرِشَ الرَّجُلُ ذِرَاعَيْهِ افْتِرَاشَ السَّبُعِ وَكَانَ يخْتم الصَّلَاة بِالتَّسْلِيمِ .

“রসূলুল্লাহ (স) সালাত শুরু করতেন তাকবির দ্বারা, আর ক্বিরাআত করতেন ‘আল-হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ দ্বারা। তিনি যখন রুকু করতেন মাথা খুব উপরেও করতেন না, আবার বেশি নিচেও করতেন না, মাঝামাঝি রাখতেন। রুকু হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় যেতেন না। আবার সাজদা হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সাজদাতে যেতেন না। আর তিনি বলেছেন: প্রত্যেক দুই রাকআতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন। শয়তানের মতো এবং কুকুর বসা বসতে নিষেধ করতেন। সাজদায় পশুর মত মাটিতে দুই যেরা‘ (বাহু/গজহাত) দিতেও নিষেধ করেছেন। নবী (স) সালাম শেষ করতেন সালামের মাধ্যমে।” [সহীহ মুসলিম, মিশকাত (তাহক্বীক্ব) হা/৭৯১]

আলোচ্য হাদীসের যে বাক্যগুলো থেকে দলিল নেয়া হয়েছে তা হল,

فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى

“প্রত্যেক দুই রাকআতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন।”

হাদীসটি থেকে ‘তাওয়ার্রুক’ না করার দলিল উল্লেখ করাটা ভুল ও প্রত্যাখ্যাত।

প্রথমত, এই হাদীসটিতেও কেবল বাম পা বিছানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এর উপর বসার কথা বলা হয়নি। ফলে এটা ‘তাওয়ার্রুক’-এর বিরোধী হয় না। কেননা তাওয়ার্রুকেও বাম পা বিছানো হয় এবং ডান পাকে খাড়া রাখা যায়। এ মর্মে সাক্ষ্য নিম্নরূপ:

১) বিখ্যাত হানাফি আলেম আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি (রহ) লিখেছেন:

وعارض الأحناف الشافعية بما في مسلم صـ ۱ ٩٤ عن عائشة ذكر الافتراش في القعدتين ، ويمكن لهم أن في التورك أيضاً فرش اليسرى ونصب اليمنى  

“হানাফিগণ শাফেঈদের বিরোধিতায় সহীহ মুসলিমে (পৃ. ১৯৪) বর্ণিত আয়েশা (রা)-এর হাদীস উল্লেখ করে থাকেন, যেখানে দুটি বৈঠকে (তাশাহহুদে) ইফতিরাশ করার বর্ণনা আছে। কিন্তু শাফেঈগণ এটা বলতে পারেন যে, এমনটি তাওয়ার্রুকের ক্ষেত্রেও অনুরূপ হয়, (অর্থাৎ) বাম পা ফরাশ বা বিছানো এবং ডান পাটি খাড়া করার বর্ণনা আছে।” [উরুফুশ শাযি লিলকাশ্মিরি ১/৩৩৩ পৃ.]

২) ‘আল-লামহাতের’ লেখক আল্লামা রইস নদভি সাহেব লিখেছেন:

حدیث عائشہ پر ہم نظر کرتے ہیں اس میں صرف یہ مذکور ہے کہ ہر قعدہ میں آپ داہنا پاؤں کھڑا اور بایاں‌ بچھا ہوا رکھتے تھے ، اس میں مذکور نہیں کہ بچھے ہوئے بائیں‌ پاؤں پر سرین رکھ کر بیٹھتے بھی تھے ، ظاہر ہے یہ روایت قعدہ اخیرہ میں تورک کے یعنی زمین پر سرین رکھ کر بیٹھنے اوربائیں‌پاؤں کو باہر نکال کر بچھادینے کے ہرگز منافی نہیں

“আমরা আয়েশা (রা)-এর হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করলে তাতে কেবল এটাই পাই যে, প্রত্যেক বৈঠকে নবী (স) নিজের ডান পা খাড়া রাখতেন এবং বাম পা বিছিয়ে দিতেন। এতে এটা বলা হয় যে, বিছানো বাম পায়ের উপর নিতম্ব রেখে বসেছিলেন। (বরং) এ থেকে এটাই প্রকাশ পায় যে, এই বর্ণনাটি শেষ বৈঠকে ‘তাওয়ার্রুক’ তথা জমিনে নিতম্ব রেখে বসা এবং বাম পাকে বের করে দিয়ে বিছানোর বিরোধী হয় না।” [রসূলে আকরাম কা সহীহ তরিকায়ে নামায পৃ. ৫৩২]

বুঝা যাচ্ছে, فرش শব্দটি কেবল বিছানোর অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিছিয়ে তার উপর বসার অর্থবোধক নয়। কেননা, সহীহ মুসলিমের বর্ণনাতে ‘তওয়ার্রুক’ পদ্ধতিতে ডান পায়ের ক্ষেত্রেও فرش শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ إِذَا قَعَدَ فِى الصَّلاَةِ جَعَلَ قَدَمَهُ الْيُسْرَى بَيْنَ فَخِذِهِ وَسَاقِهِ وَفَرَشَ قَدَمَهُ الْيُمْنَى  

“নবী (স) যখন সালাতের জন্য বসতেন তখন বাম পাকে (ডান পায়ের) উরু ও নলার উপর স্থাপন করতেন, আর ডান পাটি বিছিয়ে দিতেন।” [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমি) হা/১১৯৪]

এখানে ডান পা-কে বিছানোর ক্ষেত্রে فرش শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এখন বিরোধী পক্ষের নিকট প্রশ্ন: এখানে ডান পা বিছানো বলতে কি ডান পায়ের উপর বসা অর্থ হবে?

যদিও আভিধানিকভাবে ‘তাওয়ার্রুকের’ প্রসিদ্ধ অর্থ হলো, ডান পা খাড়া রেখে বাম পা-কে ডান পায়ের দিকে বের করে নিতম্বের উপর বসা। কিন্তু সহীহ মুসলিমের উপরের বর্ণনাটিতে ডান পা-কে বিছানোর বর্ণনা রয়েছে। আবার আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর নিচের বর্ণনাটিতে উভয় পা-কে বের করে তথা বিছিয়ে দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাটি হল,

فَإِذَا كَانَ فِى الرَّابِعَةِ أَفْضَى بِوَرِكِهِ الْيُسْرَى إِلَى الأَرْضِ وَأَخْرَجَ قَدَمَيْهِ مِنْ نَاحِيَةٍ وَاحِدَةٍ

“তারপর চতুর্থ রাকআতে বসার সময় নিজের দুই পা ডান দিকে বের করে বাম নিতম্বের উপর ভর করে বসতেন।” [আবূ দাউদ হা/৭৩১]

দ্বিতীয়ত, আয়েশা (রা)-এর হাদীসটিতে উল্লিখিত হয়েছে:

فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى

“প্রত্যেক দুই রাকআতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন।”

এ হাদীস থেকেই হানাফিরা চতুর্থ রাকআতে বাম পায়ের উপর বসার পদ্ধতির দলিল নিয়ে থাকে। অথচ হাদীসটিতে দুই রাকআতের বর্ণনার পর সালাম ফেরানোর কথা এসেছে। আর বলা হয়েছে “প্রত্যেক দুই রাকআতে.. বসার সময় তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিতেন।” অর্থাৎ হাদীসটি প্রকারান্তরে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাতেও বাম পা বিছানোর দলিল।

আর যদি বাম পা বিছানো বলতে বাম পায়ের উপর বসা বুঝায় তা হলে, সেটা যে কোনো তাশাহহুদের বৈঠকে হানাফিদের আমলটিই প্রমাণিত হয়। এ পর্যায়ে শায়েখ আলবানী (রহ) লিখেছেন:

وإن كان في " صحيح مسلم " ؛ فهو - معلّ بالانقطاع كما بَيَّنَّاه هناك . ولو صح؛ لقلنا بجواز الافتراش في التشهد الأخير، وأنه سنة أحياناً، لكنه لم يصح

“যদিও হাদীসটি সহীহ মুসলিমে আছে, কিন্তু ইনক্বাতা বা সনদ বিচ্ছিন্নতার ত্রুটিযুক্ত (তথা যঈফ), যেভাবে পূর্বে বর্ণনা করেছি। যদি এটা সহীহ হতো, তা হলে আমি দ্বিতীয় তাশাহহুদে ইফতিরাশ করাও জায়েয বলতাম। নিশ্চয় সেটা (আমল করা) কখনো কখনো সুন্নাত। কিন্তু তা সহীহ নয়।” [আসলি সিফাতে সালাতুন নাবিয়্যি ৩/৯৮৩]

অথচ হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ এবং সনদ বিচ্ছিন্নতার দাবি সম্পূর্ণ ভুল। বরং এভাবে বলতে হবে যে, হাদীসটিতে কেবল বাম পা বিছানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তার উপর বসার কথা বলা হয়নি। যেহেতু শেষ রাকআতে কীভাবে বসতে হবে তা আবূ হুমায়দ সাঈদির (রা) হাদীসে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, বসতে হবে নিতম্বের উপর। সুতরাং কারও দলিলহীন অনুমানের উপর নয়। বরং ‘এক হাদীস আরেক হাদীসের ব্যাখ্যা’- নীতির ভিত্তিতে শেষ রাকআতে বা সালামবিশিষ্ট তাশাহহুদে ‘তাওয়ার্রুক’ করতে হবে। পক্ষান্তরে শেষ রাকআতের সালামবিশিষ্ট তাশাহহুদ না হলে ‘ইফতিরাশ’ পদ্ধতিতে বাম পায়ের উপর বসতে হবে।

১৩
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর হাদীস থেকে দলিল গ্রহণের পর্যালোচনা
ভুল ধারণা-১২: অনুরূপ ইবনু উমারের হাদীসটিও ওয়াইল বিন হুজর ও আয়েশা (রা)-এর হাদীসগুলোকে সমর্থন করে। [শায়েখ আলবানীর ‘তামামুল মিন্নাহ’ পৃ. ৩২২]

সংশোধন-১২: অথচ আব্দুল্লাহ, যিনি ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উমার- তিনি তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা.) থেকে বর্ণনা করেন:

مِنْ سُنَّةِ الصَّلَاةِ أَنْ تَنْصِبَ الْقَدَمَ الْيُمْنَى، وَاسْتِقْبَالُهُ بِأَصَابِعِهَا الْقِبْلَةَ وَالْجُلُوسُ عَلَى الْيُسْرَى

“সালাতের নিয়মের মধ্যে এটাও যে, তুমি তোমার বাম পা বিছিয়ে রাখবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে এবং তার আঙুলগুলো ক্বিবলামুখী রাখবে। আর বাম পাকে বিছিয়ে দেবে।” [নাসাঈ হা/১১৫৮ (ইফা হা/১১৬০, উর্দু তাহক্বীক্ব নাসাঈ হা/১১৫৯)]

লক্ষণীয়:

ক) হাদীসটিতে বলা নেই কোন্ বৈঠকে বসতে হবে। হাদীসটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তাতে দুই সাজদার মাঝের বৈঠকও এর অন্তর্ভুক্ত।

খ) বাম পা বিছানোর কথা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তার উপর বসার কথা বর্ণিত হয়নি। ফলে এই হাদীসটিও ‘তাওয়ার্রুক’ পদ্ধতির বিরোধী হয় না। কেননা এ পদ্ধতিটিতেও বাম পা-টি এগিয়ে দিয়ে বিছাতে হয় এবং বাম নিতম্ব দ্বারা জমিনের উপর বসতে হয়।

গ) ‘মুয়াত্তা মালিকে’র বর্ণনানুযায়ী, উক্ত বসাটা ছিল তাশাহহুদে এবং তাতে ইবনু উমার নিতম্বের উপর বসা শিক্ষা দিয়েছেন। বর্ণনাটি নিম্নরূপ:

أَنَّ الْقَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ أَرَاهُمُ الْجُلُوسَ فِي التَّشَهُّدِ . فَنَصَبَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى، وَثَنَّى رِجْلَهُ الْيُسْرَى، وَجَلَسَ عَلَى وَرِكِهِ الْأَيْسَرِ، وَلَمْ يَجْلِسْ عَلَى قَدَمِهِ . ثُمَّ قَالَ : أَرَانِي هذَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، وَحَدَّثَنِي أَنَّ أَبَاهُ كَانَ يَفْعَلُ ذلِكَ .

“ক্বাসিম বিন মুহাম্মাদ (রহ) আমাদেরকে তাশাহহুদ পড়ার সময় বসার নিয়ম শেখালেন। তিনি ডান পা খাড়া রাখলেন এবং বাম পা বিছিয়ে দিলেন। পায়ের উপর না বসে বাম নিতম্বের উপর বসলেন। অতঃপর বললেন: আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উমার আমাকে এইভাবে বসার পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন তাঁর পিতা (আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা.) এরূপ করতেন।” [মুয়াত্তা মালিক (শামেলা) হা/২৯৮ (ইফা- ফেব্রুয়ারী ২০০২, ১ম খণ্ড পৃ. ১৪৩, রেওয়ায়াত-৫২); সুনানে আবূ দাউদে বর্ণনাটির কেবল সনদ উল্লিখিত হয়েছে। শায়েখ আলবানী ও শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ সনদটিকে সহীহ বলেছেন। (স্ব স্ব তাহক্বীক্ব আবূ দাউদ হা/৯৬১]

অর্থাৎ ইবনু উমার (রা)-এর সাথে সম্পর্কিত নাসাঈ বর্ণিত হাদীসটির দাবিও তাশাহহুদসম্পর্কিত এবং সেটা ছিল তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসা।

১৪
দুই রাকআত বা একটি তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসার সহীহ হাদীস -মূল (উর্দু): আবুল ফাওযান কিফায়াতুল্লাহ সানাবিলি
-মূল (উর্দু): আবুল ফাওযান কিফায়াতুল্লাহ সানাবিলি

[সূত্র: মাহনামাহ আহলে সুন্নাহ- সেপ্টে/অক্টো, ২০১৩ ঈসায়ী, (মুম্বায়: ইসলামিক ইনফরমেশান সেন্টার, ভারত)। এখানে লেখকের গবেষণাটির আলোকে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনসহ উপস্থাপন করা হল ।–কামাল আহমাদ]

قال البيهقي في الخلافيات :

أخبرنا أبو عبد الله الحافظ، قال : حدثني أبو أحمد الحسين بن علي، قال : حدثنا محمد بن إسحاق، قال : حدثنا أحمد بن الحسن الترمذي، حدثنا الحجاج بن ابراهيم الازرق، أخبرنا عبد الله بن وهب، أخبرني حيوة، عن ابي عيسي سليمان بن کيسان، عن عبد الله بن القاسم، قال :

بينما الناس يصلون يطلولون في القيام والقعود والرکوع والسجود اذ خرج عمر بن الخطاب فلما راي ذلک غضب وهيت بهم حتي تجوزوا في الصلاة فانصرفوا فقال عمر اقبلوا علي بوجوهکم وانظروا الي کيف اصلي بکم صلاة رسول الله التي کان يصلي فيأمر بها فقام مستقبل القبلة فرفع يديه حتي حاذا بهما منکبيه فکبر ثم غض بصره وخفض جناحه ثم قام قدر ما يقرأ بأم القرأن وسورة من المفصل ثم رفع يديه حتي حاذي بهما منکبيه فکبر ثم رکع فوضع راحتيه علي رکبتيه وبسط يديه عليهما ومد عنقه وخفض عجزه غير منصوب ولا متقنع حتي ان لو قطرة ماء وقعت في فقرة قفاه لم تنته ان تقع فمکث قدر ثلاث تسبيحات غير عجل ثم کبر وذکر الحديث الي ان قال ثم کبر فرفع رأسه فاستوي علي عقبيه حتي وقع کل عظم منه موقعه ثم کبر فسجد قدر ذلک ورفع رأسه فاستوي قائما   ثم صلى رکعة اخرى   مثلها ثم استوى جالسا   فنحى رجليه عن مقعدته والزم مقعدته الارض ثم   جلس قدر ان يتشهد بتسع کلمات   ثم سلم وانصرف   فقال للقوم هـکذا کان رسول اله يصلي بنا .

] خلافيات البيهقي ـ نقلا عن ـ مسند الفاروق لابن کثير :۱/ ۱ ٦٦ - ۱ ٦٤، وهو موجود في المكتبة الشاملة، وشرح الترمذي لإبن سيد الناس : ٢ / ٧ ۱ ٢، مخطوط، وفيه ذكر إسناده كاملا وذكره أيضا مختصرا الحافظ ابن حجر في الدراية في تخريج أحاديث الهداية ۱/۱۵ ٤ والزيلعي في نصب الراية ۱/٤۱۵ وإسناده صحيح [.

অনুবাদ: …আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসেম বলেন: লোকেরা সালাত আদায় করছিল। তারা অনেক লম্বা লম্বা ক্বিয়াম, রুকু, সাজদা ও বৈঠক করছিল। তখন উমার (রা) আসলেন। তিনি (রা) তাদের এ অবস্থা দেখে রাগান্বিত হলেন এবং তাদের সতর্ক করলেন। ফলে তারা ভারসাম্যমূলক সালাতে মনোযোগী হল। যখন সবাই সালাত শেষ করল, তখন উমার (রা) বললেন: তোমার সবাই তোমাদের চেহারাসহ আমার প্রতি মনোযোগী হও (অর্থাৎ আমার প্রতি লক্ষ কর), আর দেখ- আমি কীভাবে নবী (স)-এর সালাত পড়ি, যেভাবে তিনি (স) পড়তেন এবং এর হুকুমও দিতেন। তারপর উমার (রা) ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন এবং দুই হাত উঠালেন, যা তার কাঁধ বরাবর হল। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। তিনি তাঁর দৃষ্টি নীচু করলেন এবং হাত নামালেন। তিনি এতটা সময় দাঁড়ালেন যার মধ্যে সূরা ফাতিহা ও মুফাসসালের অন্তর্ভুক্ত সূরা ক্বিরাআত করা যায়। অতঃপর দুই হাতকে নিজের কাঁধ পর্যন্ত উঠালেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। তিনি রুকু করলেন, নিজের দুই হাতকে দুই হাঁটুর উপর রাখলেন এবং হাতকে ছড়িয়ে দিলেন। তিনি তার ঘাড়কে কিছুটা উপরে এবং পিঠকে কিছুটা নিচু করে এমন অবস্থাতে থাকতেন- যাতে না উঠার দিকে আর না ঝুঁকার দিকে থাকতেন (মাঝামাঝি অবস্থাতে)। এমনকি যদি তার মাথার কাছে পানি ফোঁটা রাখা হতো, তা হলে তা স্থির থাকত। এ অবস্থাতে স্থিরভাবে তিনি এতটা সময় থাকতেন যেন তখন তিনবার তাসবিহ পড়া যায়। এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এরপর বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন, এতে আছে: তারপর উমার (রা) মাথা উঠালেন এবং পায়ের পিছনের দিকে ভর করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। এমনকি প্রত্যেক হাড় তার স্থানে ফিরে গেল। এরপর আল্লাহু আকবার বললেন এবং সাজদা করলেন রুকু‘র সময়ের অনুরূপ। তারপর মাথা উঠালেন এবং নিজের পায়ের উপর সোজা খাড়া হয়ে বসলেন, এমনকি তার প্রত্যেক হাড় নিজস্থানে পৌঁছে গেল। অতঃপর তিনি রুকুর সময়ের পরিমাণ সাজদা করলেন। এরপর সাজদা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দ্বিতীয় রাকআত একইভাবে পড়লেন। অতঃপর বসে গেলেন, তখন তিনি নিজের দুই পা নিজের নিতম্ব থেকে দূরে (ডানপাশে) রাখলেন ও নিতম্ব জমিনে রাখলেন (অর্থাৎ তাওয়ার্রুক করলেন)। অতঃপর এতটা সময় বসলেন যাতে নয়টি বাক্যের তাশাহহুদ পড়া যায়। এরপর সালাম ফেরালেন ও সালাত শেষ করলেন। অতঃপর লোকদেরকে বললেন: রসূলুল্লাহ (স) এভাবে সালাত পড়তেন।”

[বায়হাক্বির ‘আল-খিলাফিয়াত’ সূত্রে: ইমাম ইবনু কাসির (রহ)-এর ‘মুসনাদে ফারুক্ব’ ১/১৬৪-৬৬ পৃ., শরহে তিরমিযী লিইবনি সাইয়েদুন্নাস ২/৭১২- সম্পূর্ণ সনদসহ। আর সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন: হাফেয ইবনু হাজার (রহ) তাঁর ‘আদ-দিরায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়াহ’ ১/১৫৪, যায়লাঈ হানাফি (রহ) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহতে’ ১/৪১৫, তিনি লিখেছেন: قَالَ الشَّيْخُ : وَرِجَالُ إسْنَادِهِ مَعْرُوفُونَ “শায়েখ (ইমাম বায়হাক্বী) বলেন: এই সনদের বর্ণনাকারীগণ প্রসিদ্ধ।” শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। তিনি (রহ) খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর রফউল ইয়াদঈন করার প্রমাণ উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন:

الامام البیہقی صاحب الخلافیات :

الراوی عن الحاکم : مشہور ثقہ بالاتفاق الامام اور السنن الکبری وغیرہ کے مصنف هيں۔

اس تحقیق سے معلوم ہوا کے یہ سند حسن ہے۔

امير المؤمنين عمر رضي الله عنه سے رفع اليدين كے اثبات كے ساتھ اس كے متعدد شواهد بھي موجود هےمثلا :…

“ইমাম বায়হাক্বী (রহ) যিনি ‘আল-খিলাফিয়াতে’র লেখক (সেখানে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)। তিনি হাকিম থেকে বর্ণনাকারী: প্রসিদ্ধ সিক্বাহ ও ঐকমত্যে ইমাম। তিনি ‘সুনানে কুবরা’ ও অন্যান্য কিতাবের লেখক। হাদীসটির তাহক্বীক্ব থেকে প্রমাণিত হয়, সনদটি হাসান। আমিরুল মু’মিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে রফউফল ইয়াদাঈন হওয়ার সাথে সাথে এর কয়েকটি শাওয়াহেদ (সাক্ষ্য)-ও আছে, যেমন: …। (বিস্তারিত: নুরুল আইনাঈন ফি ইসবাতে রফউল ইয়াদাঈন পৃ. ২০১)]

লক্ষনীয় দিক:

১) হাদীসটিতে খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) নবী (স)-এর সালাতের পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি ঐ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করাকে নবী (স)-এর হুকুমের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। যেমন, তিনি (রা) বলেছেন:

وانظروا الي کيف اصلي بکم صلاة رسول الله التي کان يصلي فيأمر بها

“আর দেখ- আমি কীভাবে নবী (স)-এর সালাত পড়ি, যেভাবে তিনি (স) পড়তেন এবং এর হুকুমও দিতেন।”

অনুরূপ সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) লোকদেরকে সালাত শেখানোর সময় বলেছিলেন:

أَنَا كُنْتُ أَحْفَظَكُمْ لِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ

“নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাত মুখস্থকারী।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

২) উমার (রা)-এর হাদীসটিতে নিচের বাক্যটি রয়েছে:

ثم استوي جالسا   فنحي رجليه عن مقعدته والزم مقعدته الارض .

“অতঃপর বসে গেলেন, তখন তিনি নিজের দুই পা নিজের নিতম্ব থেকে দূরে (ডানপাশে) রাখলেন ও নিতম্ব জমিনে রাখলেন।”

এটা তাওয়ার্রুকের পদ্ধতি। কেননা সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) চতুর্থ তথা শেষ রাকআতে তাওয়ার্রুকের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে উক্ত বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। যেমন, মুসনাদে শাফেঈ-এ তাঁর (রা) বাক্যটি নিম্নরূপ:

فَإِذَا جَلَسَ فِي الأَرْبَعِ أَمَاطَ رِجْلَيْهِ عَنْ وَرِكِهِ وَأَفْضَى بِمَقْعَدَتِهِ الأَرْضَ .

“আর যখন তিনি চতুর্থ রাকআতে বসলেন, তখন পা-দুটিকে নিতম্বের একদিকে (ডানে) নিলেন, আর নিজের নিতম্বকে জমিনের উপর রাখলেন।” [মুসানদে শাফেঈ হা/২৭২ (উর্দু সংস্করণ: ২৫২); অন্যান্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হাসান হাদীস]

৩) হাদীসটির দ্বিতীয় রাকআতে সালাম ফিরানোর কথা বর্ণিত হয়েছে। বুঝা যাচ্ছে,উমার (রা) দ্বিতীয় রাকআতে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসেছিলেন এবং একে রসূলুল্লাহ (স)-এর সালাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

৪) এই হাদীসটি থেকে সুস্পষ্ট হয়, এক তাশাহহুদবিশিষ্ট সালাতেও তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসাটা সুন্নাত। কেননা ঐ তাশাহহুদে সালাম দ্বারা সালাত শেষ হয়। তথা রাকআতটি শেষ রাকআত হয়। অর্থাৎ এক রাকআত বিতর সালাতেও তাওয়ার্রুক করাটা সুন্নাত।

শায়েখ আলবানী (রহ) তাঁর ‘সিফাতু সালাতে’ নাসাঈর সূত্রে বাম পায়ের উপর বসার যে দাবি করেছেন, তা ঐ হাদীসে নেই। হাদীসটি থেকে এটাও প্রমাণিত হয় না- সেটা ঐ দুই রাকআত যার শেষে তিনি (স) সালাম ফিরিয়েছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে হাদীসের শব্দের অনুসরণের থেকে অনুমানের অনুসরণটা প্রবল।

হাদীসটির বর্ণনাকারীদের পরিচয়:

১) আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসিম (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন উমার (রা) থেকে): তিনিউমার (রা) শিষ্য ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে।

২) আবূ ঈসা সুলায়মান বিন কায়সান (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসিম থেকে):

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী আব্দুল্লাহ বিন ক্বাসিমের ছাত্র এবং (পরবর্তী রাবী) হাইয়াহ বিন শুরায়হ’র উস্তায। [আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল লিইবনি আবি হাতিম ৪/১৩৭, ৬০২ নং]

তিনি সিক্বাহ ছিলেন। কোনো মুহাদ্দিস তাঁর প্রতি জারাহ করেননি। যাঁরা তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন:

ক) ইবনু হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন।[আস-সিক্বাত ৬/৩৯২ পৃ.]

খ) ইমাম যাহাবি (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [আল-কাশিফ ২/৪৪৯ পৃ.]

গ) আল্লামা আলবানী (রহ) তাঁর প্রসঙ্গে লিখেছেন:

وقول الحافظ في أبي عيسى الخراساني : " مقبول " تقصير غير مقبول ؛ فالرجل ثقة - كما قال ابن حبان والذهبي -، وروى عنه جمع من الثقات - كما بينت في " تيسير انتفاع الخلان بثقات ابن حبان ".

“আবূ ঈসা আল-খুরাসানী (রহ)-কে হাফেয ইবনু হাজার (রহ)-এর ‘মাক্ববুল’ বলাটা অবহেলার নামান্তর, যা অগ্রহণযোগ্য। অথচ এই রাবী সিক্বাহ, যেভাবে ইবনু হিব্বান ও যাহাবি (রহ) বলেছেন। তাঁর থেকে একটি সিক্বাহ জামাআত বর্ণনা করেছেন, যেভাবে تيسير انتفاع الخلان بثقات ابن حبان –এ বলা হয়েছে।” [আয-যঈফাহ ১৪/৫৭৭ পৃ. হা/৬৭৫৮]

আবার ‘তাহরিরুত তাক্বরিবের’ (পৃ. ২৪৭) লেখক লিখেছেন: ‘সুদুক্ব হাসানুল হাদীস।”

৩) হাইয়াহ বিন শুরায়হ বিন সাফওয়ান (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ ঈসা সুলায়মান বিন কায়সান থেকে):

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) সূলায়মান বিন কায়সানের ছাত্র ছিলেন। [আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল লিইবনি আবি হাতিম ৪/১৪৭ পৃ., ৬০২ নং]

আবার (পরবর্তী রাবী) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহবের উস্তায ছিলেন। [তাহযিবুত তাহযিব ৩/৬৯ পৃ., ১৩৫ নং]

তিনি সিক্বাহ ছিলেন। [তাক্বরিব: ১৬০ নং]

কোনো মুহাদ্দিস তাঁর প্রতি জারাহ করেননি। তা ছাড়া তিনি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের রাবী। যেমন, সহীহ বুখারী: ৩৬৯৪ নং, সহীহ মুসলিম: ২৫৫০ নং। [আরও দ্র: তাহযিবুত তাহযিব ৩/৬৯ পৃ., ১৩৫ নং]

৪) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহব (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হাইয়াহ বিন শুরায়হ থেকে):

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) হাইয়াহ বিন শুরায়হ’র ছাত্র ছিলেন। [তাহযিবুত তাহযিব ৩/ ৬৯ পৃ., ১৩৫ নং]

আবার (পরবর্তী রাবী) হাজ্জাজ বিন ইবরাহিম আযরাক্বের উস্তায ছিলেন। [তাহযিব ২/১৯৫ পৃ., হা/৩৬৪]

তিনি সিক্বাহ রাবী ছিলেন। [তাক্বরিব : ৩৬৯৪ নং]

ইমাম আবূ ইয়া‘লা খলিলি (রহ. মৃত: ৪৪৬ হি.) বলেন: ثقة، متفق عليه – তিনি সিক্বাহ, এ ব্যাপারে সবাই একমত।” [ইরশাদুল খলিলি ১/২৫৫]

তা ছাড়া তিনি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের রাবী। [সহীহ বুখারী হা/৩৬৯৪, সহীহ মুসলিম হা/২৫৫০]

৫) আল-হাজ্জাজ বিন ইবরাহিম আযরাক্ব (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছে আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহব থেকে):

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহবের শিষ্য ছিলেন। [তাহযিব ২/১৯৫ পৃ. ৩৬৪ নং]

আবার (পরবর্তী রাবী) আহমাদ বিন আল-হাসান আত-তিরমিযীর উস্তায ছিলেন। [তাহযিবুল কামাল : ১/২৯০-৯১ পৃ. ২৫ নং]

তিনি সিক্বাহ ফাযেল ছিলেন। [তাক্বরিব : ১১১৮]

ইমাম আজলি (রহ. মৃত: ২৬১হি.) বলেন: ثقة صاحب سنة ‘সিক্বাহ, সাহেবে সুন্নাহ ছিলেন।’ [তারিখে সিক্বাহ লিআজলি ১/২৮৩]

ইমাম আবূ হাতিম রাযি (রহ. মৃত ২৭৭) বলেন: ‘তিনি সিক্বাহ।’ [আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল লিইবনি আবি হাতিম ৩/১৫৪ পৃ.]

তাঁকে আরও অনেক মুহাদ্দিস সিক্বাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে কোনো মুহাদ্দিস থেকে তাঁর প্রতি জারাহ পাওয়া যায় না।

৬) আহমাদ বিন আল-হাসান আত-তিরমিযী (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হাজ্জাজ বিন ইবরাহিম বিন আযরাক্ব থেকে) :

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) হাজ্জাজ বিন ইবরাহিমের শিষ্য এবং ইমাম ইবনু খুযায়মা (রহ)-এর উস্তায ছিলেন। [তাহযিবুল কামাল ১/২৯০-৯১ পৃ., ২৫ নং]

তিনি সিক্বাহ হাফেয ছিলেন। [তাক্বরিব : ২৫]

কোনো মুহাদ্দিস তাঁর প্রতি জারাহ করেননি। তা ছাড়া তিনি সহীহ বুখারীর রাবী। [সহীহ বুখারী হা/৪৪৭৩]

৭) মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ বিন হাসান তিরমিযী থেকে ‘হাদ্দাসানা’ শব্দে। সুতরাং এক্ষেত্রে তাদলীসের ত্রুটি রইল না।) :

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) হাজ্জাজ বিন ইবরাহিমের শিষ্য ছিলেন। [তাহযিবুল কামাল : ১/২৯০-৯১ পৃ.]

আবার (পরবর্তী রাবী) আবূ আহমাদ আল-হুসাইন তিরমিযীর উস্তায ছিলেন। [তারিখে বাগদাদ পৃ. ৭৪, ৪১৫৪ নং]

তিনি ‘সহীহ ইবনু খুযায়মাহ’ ছাড়াও আরও কিছু প্রসিদ্ধ কিতাবের লেখক এবং উঁচুমর্যাদার সিক্বাহ ইমাম।

৮) আবূ আহমাদ আল-হুসাইন বিন আলী (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব থেকে) :

তিনি (পূর্ববর্তী রাবী) ইমাম ইবনু খুযায়মাহ (রহ)-এর শিষ্য ছিলেন। [তারিখে বাগদাদ : ৮/৭৪ পৃ., ৪১৫৪ নং]

আবার ইমাম হাকিমের উস্তায ছিলেন। [মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিলবায়হাক্বী ৬/৪০৪ পৃ., ৯১১৮ নং]

তিনি সিক্বাহ ও হুজ্জাত। [তারিখে বাগদাদ ৮/৭৪ পৃ. ৪১৫৪ নং]

কোনো মুহাদ্দিস তাঁর প্রতি জারাহ করেননি।

৯) আবূ আব্দুল্লাহ হাফেয (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ আহমাদ হুসাইন বিন আলী থেকে) :

তিনি আবূ আহমাদ হুসাইন বিন আলীর শিষ্য ও ইমাম বায়হাক্বী (রহ)-এর উস্তায। [মা‘আরেফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিলবায়হাক্বী ৬/৪ পৃ., ৯১১৮ নং]

তিনি ‘মুস্তাদরাক হাকিম’সহ অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থের লেখক এবং সিক্বাহ ইমাম।

১০) অতঃপর ইমাম বায়হাক্বী (রহ) তাঁর উস্তায আবূ আব্দুল্লাহ হাফেয (ইমাম হাকিম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

প্রমাণিত হল, হাদীসটির সনদ সহীহ।

১৫
নবী (স) ভুল সালাত আদায়কারীকে নিতম্বের উপর বসার হুকুম দেন, তাতে তিনি (স) এক রাকআতের বর্ণনা দেন -কামাল আহমাদ
নবী (স) যে ভুল সালাত আদায়কারীকে সালাতের পদ্ধতি বলেছিলেন তাতে একটি রাকআতের পদ্ধতি ছিল। সেখানে নবী (স) নিতম্বের উপর বসতে বলেছিলেন। ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘খিলাফিয়্যাতে’ (২/২৮-২৯ পৃ.) ও ইমাম নাসাঈ (রহ) তাঁর ‘সুনানে’ (হা/১১৩৬, ইফা- ২য় খণ্ড হা/১১৩৯) সেটা উল্লেখ করেছেন। আমরা নাসাঈ’র বর্ণনাটি উল্লেখ করছি।

সাহাবী রিফা‘আ বিন রাফি‘ বর্ণনা করেন:

بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ جَالِسٌ وَنَحْنُ حَوْلَهُ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَأَتَى الْقِبْلَةَ فَصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ وَعَلَى الْقَوْمِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «وَعَلَيْكَ، اذْهَبْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» ، فَذَهَبَ فَصَلَّى فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ يَرْمُقُ صَلَاتَهُ، وَلَا يَدْرِي مَا يَعِيبُ مِنْهَا، فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى الْقَوْمِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «وَعَلَيْكَ، اذْهَبْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» ، فَأَعَادَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا، فَقَالَ الرَّجُلُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا عِبْتَ مِنْ صَلَاتِي؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «إِنَّهَا لَمْ تَتِمَّ صَلَاةُ أَحَدِكُمْ حَتَّى يُسْبِغَ الْوُضُوءَ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَيَغْسِلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، وَيَمْسَحَ بِرَأْسِهِ وَرِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ، ثُمَّ يُكَبِّرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيَحْمَدَهُ وَيُمَجِّدَهُ» ـ قَالَ هَمَّامٌ : وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ : «وَيَحْمَدَ اللَّهَ، وَيُمَجِّدَهُ، وَيُكَبِّرَهُ» قَالَ : فَكِلَاهُمَا قَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ ـ قَالَ : " وَيَقْرَأَ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ وَأَذِنَ لَهُ فِيهِ، ثُمَّ يُكَبِّرَ وَيَرْكَعَ حَتَّى تَطْمَئِنَّ مَفَاصِلُهُ وَتَسْتَرْخِيَ، ثُمَّ يَقُولَ : سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، ثُمَّ يَسْتَوِيَ قَائِمًا حَتَّى يُقِيمَ صُلْبَهُ، ثُمَّ يُكَبِّرَ وَيَسْجُدَ حَتَّى يُمَكِّنَ وَجْهَهُ " ، وَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ : «جَبْهَتَهُ حَتَّى تَطْمَئِنَّ مَفَاصِلُهُ، وَتَسْتَرْخِيَ، وَيُكَبِّرَ فَيَرْفَعَ حَتَّى يَسْتَوِيَ قَاعِدًا عَلَى مَقْعَدَتِهِ وَيُقِيمَ صُلْبَهُ، ثُمَّ يُكَبِّرَ فَيَسْجُدَ حَتَّى يُمَكِّنَ وَجْهَهُ وَيَسْتَرْخِيَ، فَإِذَا لَمْ يَفْعَلْ هَكَذَا لَمْ تَتِمَّ صَلَاتُهُ <<

“একবার রসূলুল্লাহ (স) বসছিলেন আর আমি তার আশেপাশে ছিলাম। এমন সময় একব্যক্তি প্রবেশ করে ক্বিবলার দিকে এসে সালাত আদায় করল। সে সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ (স)-কে সালাম করল এবং দলের অন্যদেরকেও। রসূলুল্লাহ (স) তাঁর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন: যাও, সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। সে ব্যক্তি গিয়ে আবার সালাত আদায় করল। রসূলুল্লাহ (স) তার সালাতের প্রতি লক্ষ রাখছিলেন। সে বুঝতে পারল না, রসূলুল্লাহ (স) এতে কী ভুল ধরছেন। সে এবারও সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট এসে তাঁকে এবং ক্বওমের অন্যদেরকে সালাম করল। এবারও রসূলুল্লাহ (স) তার সালামে উত্তর দিয়ে তাকে বললেন: যাও, সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। সে ব্যক্তি এভাবে দু বার কি তিন বার সালাত পুনঃ আদায় করল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি আমার সালাতে কী ভুল পেলেন? তখন রসূলুল্লাহ (স) বললেন: তোমাদের কারো সালাত পূর্ণ হয় না যতক্ষণ না সে আল্লাহ তাআলা যেরূপ অযু করতে আদেশ করেছেন সেরূপ অযু না করবে। অর্থাৎ সে তার চেহারা এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত না করে, তার মাথা মাসেহ না করে এবং তার উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত না করে। তারপর আল্লাহর তাকবীর (আল্লাহু আকবার) না বলে, তাহমিদ ও তামজিদ (সানা) না পড়ে, কুরআন থেকে তার সাধ্যমত পড়বে, যতটুকু আল্লাহ তাকে শিখিয়েছেন এবং যার অনুমতি দিয়েছেন। তারপর তাকবীর বলে রুকু করবে যেন তার সকল অঙ্গ স্থির হয়ে যায়। তারপর বলবে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে যেন তার পিঠ সোজা হয়। পরে তাকবির বলে সাজদা করবে যেন তার চেহারা ঠিকভাবে স্থাপিত হয়। (রাবী বলেন) আমি তাঁকে এটাও বলতে শুনেছি: তার কপালকে রাখবে যতক্ষণ না অঙ্গগুলো স্থির ও শান্ত হয়। এরপর তাকবির বলবে এবং মাথা তুলে নিতম্বের উপর বসবে। আর পিঠকে সোজা রাখবে। তারপর তাকবির বলে সাজদা করবে যেন তার চেহারা ঠিকভাবে স্থাপিত হয় এবং স্থির হয়ে যায়। যখন এরূপ করবে না, তার সালাত পূর্ণ হবে না।”

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাসাঈতে (হা/১১৩৯) দাগানো অংশটির অনুবাদ করা হয়েছে :

“এরপর তাকবির বলবে এবং মাথা তুলে সোজা হয়ে বসবে বসার অঙ্গের উপর।”

এখানে مقعدة শব্দটির অর্থ: পশ্চাদ্ভাগ, পাছা, নিতম্ব, বসার জায়গা। [. ড. ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফি (ঢাকা : রিয়াদ প্রকাশনী)।]

মূলত আমরা নিতম্বের উপরই বসে থাকি। এ কারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনূদিত ‘আত-তারগিব ওয়াত তারহিবে’ ২/৩৫৩ পৃ. (হা/১৮) দাগানো অংশটির অনুবাদ করা হয়েছে নিম্নরূপ:

“তারপর সে তাকবির বলবে এবং মাথা উঠাবে এবং সে তার নিতম্বের উপর সোজা হয়ে বসবে।”

নাসাঈর উর্দু তরজমাতে দাগানো অংশটি তরজমা করা হয়েছে নিম্নরূপ:

پھر الله الكبر کہہ کر سر اٹھائے اور مقعد ( سرین ) پر اچھی طرح بیٹھ جائے اور اپنی کمر کو بلکل سیدھا کرلے۔

“অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাবে এবং مقعد (নিতম্বের) উপর ঠিকভাবে বসে যাবে। আর নিজের কোমর একদম সোজা রাখবে।” [সুনানে নাসাঈ (উর্দু তরজমা: শায়েখ হাফিয মুহাম্মাদ আমিন, তাহক্বীক্ব: শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ, দারুল ইলম মুম্বায়, এ্রপ্রিল ২০১২ ঈসায়ী) ২/৬১২ পৃ. হা/১১৩৭। হাদীসটি শায়েখ আলবানী (রহ) ও শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) উভয়ের নিকটই সহীহ]

সুনানে নাসাঈর ব্যাখ্যাকারী আলী বিন আদাম বিন মূসা আল-ইস্ইয়ুবি (ইথিওপিয়ান) তাঁর ‘আল-মুসাম্মা যাখিরাতুল উক্ববাহ ফি শারহিল মুজতাবাতে’ এই বাক্যটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিম্নরূপ:

وفيه وجوب الرفع من السجود، والقعود ممكنا مقعدته .

“এ বর্ণনানুযায়ী সাজদা থেকে উঠা ও সাধ্যমত নিতম্বের উপর বসা ওয়াজিব।” [আল-মুসাম্মা (শামেলা) ১৩/১৬৯ পৃ.]

এমনকি সাহাবী আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা) বর্ণিত শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসার ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যা নিম্নরূপ:

وَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ

“আর যখন শেষ রাকআতে বসতেন তখন বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।” [সহীহ বুখারী হা/৮২৮]

শিক্ষনীয় দিক:

১) উপরে বর্ণিত সাহাবী রিফা‘আ বিন রাফি‘ (রা)-এর হাদীসটি নবী (স)-এর ক্বওলি বা নির্দেশমূলক হাদীস। আর আবূ হুমায়দ সাঈদি (রা)-এর হাদীসটি ফে‘লি। তেমনি উমার (রা) বর্ণিত দুই রাকআতবিশিষ্ট শেষ বৈঠকের বর্ণনাটিও ফে‘লি হাদীস, তবে মারফু‘ হুকুমান। এ বর্ণনা দুটিতে শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসার কথা বলা হয়েছে। সেটা চার বা দুই রাকআত সালাত হলেও। এ পর্যায়ে ক্বওলি হাদীসটিকে ফে‘লি হাদীসগুলো দ্বারা ব্যাখ্যা নিলে এটা বলতে হয় যে, দুই সাজদার মাঝের বৈঠকে নিতম্বের উপর বসাটাও অনুমোদিত। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবীর (রা) বর্ণনানুযায়ী নিতম্বের উপর বসাটা শেষ তাশাহহুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত।

২) ‘ভুল সালাত আদায়কারী’ সাহাবীর সালাতের সংশোধনটি ছিল এক রাকআত সালাতের বিবরণ। অতঃপর নবী (স) তাকে বলেছিলেন:

وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا

“আর তোমার সম্পূর্ণ সালাতে এভাবেই করবে।” [সহীহ বুখারী হা/৭৫৭- সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা)-এর বর্ণনা]

এই হাদীসটির আলোকে সালাতের সব বৈঠকেই নিতম্বের উপর বসা যায়। তবে ফে‘লি হাদীসগুলোকে ব্যাখ্যা নিলে আরও পরিপূর্ণ হয়। সেক্ষেত্রে নিতম্বের উপর বসাটা শেষ রাকআতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য হয়- যদিওবা সেটা এক রাকআত হয়।

৩) যারা দুটি তাশাহহুদের শেষটিতে নিতম্বের উপর বসাকে খাস গণ্য করে গাণিতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছেন, সাহাবী রিফা‘আ বিন রাফি‘ (রা) বর্ণিত এক রাকআতের প্রথম সাজদাতে নিতম্বের উপর বসার হাদীসটি তাদের উপযুক্ত জবাব। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

৪) হানাফি মহিলাগণ সালাতের প্রতিটি বৈঠকে তাওয়ার্রুক পদ্ধতিতে বসেন- সাহাবী রিফা‘আ বিন রাফি‘ (রা)-এর হাদীসটি তার অন্যতম দলিল। তবে নবী (স) হাদীসটিতে পুরুষ সাহাবীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফলে পুরুষ বা মহিলা সবাই উক্ত পদ্ধতিতে সালাতের প্রতিটি বৈঠকেই বসতে পারেন। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন