HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মিলাদ মাহফিল
লেখকঃ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম এর উপর।
মিলাদ মাহফিলের সাথে আমাদের দেশের প্রায় সবাই পরিচিত। বিভিন্ন উপক্ষকে কেন্দ্র করে মানুষ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। যেমন- নতুন দোকান চালু করার সময় মিলাদ, নতুন বাড়িতে উঠার সময় মিলাদ, কেউ মারা গেলে তিন দিনের মিলাদ, চল্লিশার মিলাদ, বাৎসরিক মিলাদ ইত্যাদি। আবার রবিউল আউয়াল মাস শুরু হলে যে মিলাদের আয়োজন হয়, তার কোন হিসাব নাই।
অনেক সওয়াবের কাজ মনে করে মানুষ অতি গুরুত্বের সাথে এসব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু আসলে কি এসব মিলাদ শরীয়ত সম্মত? যদি এর কোন ভিত্তি না থাকে, তাহলে এ পাপের দায়িত্ব কে নেবে?
সুনামধন্য আলেম শাইখ হারুন হোসাইন এ বিষয়টির উপর দলিলভিত্তিক পর্যালোচনা পেশ করেছেন। বইটি ইতিপূর্বে সৌদি আরব থেকে ছাপা হয়েছিল। বইটি পড়ে ভাবলাম, এটি ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। কারণ এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছেন। আবার অনেকে সওয়াবের কাজ মনে করে পাপের কাজ করে যাচ্ছেন। তাই বইটি ছেপে জনগণের হাতে তুলে দিলাম। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে মানুষকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ এর পক্ষে
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
মোহাম্মাদ ইমাম হোসাইন কামরুল
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম এর উপর।
মিলাদ মাহফিলের সাথে আমাদের দেশের প্রায় সবাই পরিচিত। বিভিন্ন উপক্ষকে কেন্দ্র করে মানুষ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। যেমন- নতুন দোকান চালু করার সময় মিলাদ, নতুন বাড়িতে উঠার সময় মিলাদ, কেউ মারা গেলে তিন দিনের মিলাদ, চল্লিশার মিলাদ, বাৎসরিক মিলাদ ইত্যাদি। আবার রবিউল আউয়াল মাস শুরু হলে যে মিলাদের আয়োজন হয়, তার কোন হিসাব নাই।
অনেক সওয়াবের কাজ মনে করে মানুষ অতি গুরুত্বের সাথে এসব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু আসলে কি এসব মিলাদ শরীয়ত সম্মত? যদি এর কোন ভিত্তি না থাকে, তাহলে এ পাপের দায়িত্ব কে নেবে?
সুনামধন্য আলেম শাইখ হারুন হোসাইন এ বিষয়টির উপর দলিলভিত্তিক পর্যালোচনা পেশ করেছেন। বইটি ইতিপূর্বে সৌদি আরব থেকে ছাপা হয়েছিল। বইটি পড়ে ভাবলাম, এটি ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। কারণ এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছেন। আবার অনেকে সওয়াবের কাজ মনে করে পাপের কাজ করে যাচ্ছেন। তাই বইটি ছেপে জনগণের হাতে তুলে দিলাম। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে মানুষকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ এর পক্ষে
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
মোহাম্মাদ ইমাম হোসাইন কামরুল
بسم الله ، والحمد لله، و الصلاة و السلام على رسول الله و على اٰله وصحبه و من والاه أما بعد .....
মিলাদ অর্থ জন্মের সময় বা স্থান। প্রচলিত অর্থে মিলাদ বলতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বুঝি। শব্দটি আম বা সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। এর দ্বারা সকল ব্যক্তি বা প্রাণীর জন্মকাল বুঝায়। কিন্তু মুসলিম জনসাধারণের বিশেষ শ্রেণীতে মিলাদ বলতে আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম দিবস পালন করা বুঝি। মিলাদ নিয়ে ওলামাদের মাঝে বিতর্ক আছে। কারো মতে, এটি নতুন আবিষ্কার হলেও পুণ্যের কাজ। আবার কারো মতে, এটি নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর ধর্মীয় কোন ফায়দা ও ভিত্তি নেই; বরং বিদ‘আত। যারা এটিকে পুণ্যের কাজ মনে করেন, তারা আবার দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। একশ্রেণী মিলাদে ক্বিয়াম করে, আরেক শ্রেণী ক্বিয়াম ছাড়া মিলাদ করে। মোটকথা, মিলাদ নিয়ে বহুকাল থেকে মুসলিম সমাজে বিতর্ক চলে আসছে।
এখন কথা হচ্ছে, বিতর্ক কি বিতর্কই থেকে যাবে? এর কি কোন সঠিক সামাধান নেই? নিশ্চয় আছে। কেননা, ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন বিধান। আর আল্লাহর কাছে বিতর্কের সমাধান নেই- তা হতে পারে না। বরং মহান আল্লাহর সমাধানই চুড়ান্ত। বিতর্কের সমাধান কিভাবে এবং কিসের দ্বারা করতে হবে, সে সম্পর্কে সঠিক পথনির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ এরশাদ করেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِي الْاَمْرِ مِنْكُمْۚ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের (আনুগত্য করো) যারা তোমাদের মধ্যে নির্দেশ দানের অধিকারী (দায়িত্বশীল); অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (তাহলে) এটাই হবে (তোমাদের বিরোধ মিমাংসার ক্ষেত্রে) সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা এবং পরিণামের দিকে থেকেও উৎকৃষ্টতর।’’ [। সূরা নিসা ৫৯]
অতএব, দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ হলো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ এর নিকট বিষয়টি নিয়ে যাওয়া। আর আল্লাহর নিকট নিয়ে যাওয়া অর্থ হলো, তার কিতাব আল কুরআনের দিকে এবং রাসূল ﷺ এর দিকে নিয়ে যাওয়া অর্থ হলো, তার সুন্নাত তথা হাদীছের নিকট নিয়ে যাওয়া। [। আল-মিসবাহুল মুনীর ফী তাহযীবি তাফসীর ইবন কাসীর,দারুস সালাম রিয়াদ / ২৪১] অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দ্বন্দ্বের সমাধান করা।
সম্মানিত পাঠক !
মিলাদ সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার জন্য আমরা বিষয়টি কুরআন ও সহীহ সুন্নাতের মানদন্ডে যাচাই করব ইনশা আল্লাহ। এর সাথে আমরা মিলাদের গাইড বই ‘বারযাঞ্জি শরীফ ও তার হাক্বীকত’ নিয়ে প্রমাণভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। যাতে সরলমতি মুসলিম সমাজে এ সম্পর্কিত যত দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা নিরসন হয়ে যায়। আর সকল মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে মিলেমিশে জীবন যাপন করতে পারেন।
মিলাদ অর্থ জন্মের সময় বা স্থান। প্রচলিত অর্থে মিলাদ বলতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বুঝি। শব্দটি আম বা সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। এর দ্বারা সকল ব্যক্তি বা প্রাণীর জন্মকাল বুঝায়। কিন্তু মুসলিম জনসাধারণের বিশেষ শ্রেণীতে মিলাদ বলতে আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম দিবস পালন করা বুঝি। মিলাদ নিয়ে ওলামাদের মাঝে বিতর্ক আছে। কারো মতে, এটি নতুন আবিষ্কার হলেও পুণ্যের কাজ। আবার কারো মতে, এটি নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এর ধর্মীয় কোন ফায়দা ও ভিত্তি নেই; বরং বিদ‘আত। যারা এটিকে পুণ্যের কাজ মনে করেন, তারা আবার দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। একশ্রেণী মিলাদে ক্বিয়াম করে, আরেক শ্রেণী ক্বিয়াম ছাড়া মিলাদ করে। মোটকথা, মিলাদ নিয়ে বহুকাল থেকে মুসলিম সমাজে বিতর্ক চলে আসছে।
এখন কথা হচ্ছে, বিতর্ক কি বিতর্কই থেকে যাবে? এর কি কোন সঠিক সামাধান নেই? নিশ্চয় আছে। কেননা, ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন বিধান। আর আল্লাহর কাছে বিতর্কের সমাধান নেই- তা হতে পারে না। বরং মহান আল্লাহর সমাধানই চুড়ান্ত। বিতর্কের সমাধান কিভাবে এবং কিসের দ্বারা করতে হবে, সে সম্পর্কে সঠিক পথনির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ এরশাদ করেন :
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِي الْاَمْرِ مِنْكُمْۚ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের (আনুগত্য করো) যারা তোমাদের মধ্যে নির্দেশ দানের অধিকারী (দায়িত্বশীল); অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (তাহলে) এটাই হবে (তোমাদের বিরোধ মিমাংসার ক্ষেত্রে) সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা এবং পরিণামের দিকে থেকেও উৎকৃষ্টতর।’’ [। সূরা নিসা ৫৯]
অতএব, দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ হলো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ এর নিকট বিষয়টি নিয়ে যাওয়া। আর আল্লাহর নিকট নিয়ে যাওয়া অর্থ হলো, তার কিতাব আল কুরআনের দিকে এবং রাসূল ﷺ এর দিকে নিয়ে যাওয়া অর্থ হলো, তার সুন্নাত তথা হাদীছের নিকট নিয়ে যাওয়া। [। আল-মিসবাহুল মুনীর ফী তাহযীবি তাফসীর ইবন কাসীর,দারুস সালাম রিয়াদ / ২৪১] অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দ্বন্দ্বের সমাধান করা।
সম্মানিত পাঠক !
মিলাদ সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার জন্য আমরা বিষয়টি কুরআন ও সহীহ সুন্নাতের মানদন্ডে যাচাই করব ইনশা আল্লাহ। এর সাথে আমরা মিলাদের গাইড বই ‘বারযাঞ্জি শরীফ ও তার হাক্বীকত’ নিয়ে প্রমাণভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। যাতে সরলমতি মুসলিম সমাজে এ সম্পর্কিত যত দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা নিরসন হয়ে যায়। আর সকল মুসলিম ভাই ভাই হিসেবে মিলেমিশে জীবন যাপন করতে পারেন।
হিজরী সনের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। এ মাসটি সারা মুসলিম জাহানে বিশেষভাবে আলোচিত। কেননা, এ মাসেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ। তার জন্ম সারা বিশ্বের জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ রহমত। দুনিয়া ও আখেরাতে সকল প্রকার কল্যাণের বার্তা নিয়ে তিনি এ ধরাধামে আবির্ভুত হন। তার আগমন অতি আনন্দের বিষয়। সুস্থ বিবেকবান মাত্রই তার আগমন দিয়ে উল্লাসিত হবেন- তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কেবলমাত্র বিবেকান্ধ ও অসুস্থ আত্মার অধিকারীরাই তাঁর নাম শুনলে ভ্রকুঞ্চিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে বিতর্ক আছে। মুসলিম জনপদের অধিকাংশের নিকট একথা প্রসিদ্ধ যে, ৫৭০ খ্রিঃ সোমবার সুবহে সাদিকের শুভক্ষণে রাসুল ﷺ Gi জন্ম। জন্মের দিন সোমবার- এ ব্যাপারে অধিকাংশের ঐক্যমত রয়েছে। তবে তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। সীরাতে ইবনে হিশামের বর্ণনা মতে লোক সমাজে প্রচলিত যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসুল ﷺ এর জন্মদিন। কিন্তু সন, মাস ও বার ঠিক রেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদগণ স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সেদিন ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল। আর ইহাই বিশুদ্ধতম মত। [। আর-রাহীকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মু‘আয়্যেদ -রিয়াদ /৫৪]
১২ রবিউল আউওয়ালে তাঁর ওফাত হয় এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। কেননা, তা স্পষ্ঠ দলিল দ্বারা প্রমাণিত। জন্মের তারিখটি বিতর্কিত। তার কারণ হলো, সে সময়ে নাবী ﷺ -কে না চিনার কারণে তারিখটি সযত্নে সংরক্ষিত হয়নি। এমনকি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে এবং তাঁর কোন সাহাবী হতে স্পষ্ট কোন বর্ণনাও পাওয়া যায়নি। সে কারণে ইতিহাসবেত্তাদের বর্ণনার উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে বিতর্ক আছে। মুসলিম জনপদের অধিকাংশের নিকট একথা প্রসিদ্ধ যে, ৫৭০ খ্রিঃ সোমবার সুবহে সাদিকের শুভক্ষণে রাসুল ﷺ Gi জন্ম। জন্মের দিন সোমবার- এ ব্যাপারে অধিকাংশের ঐক্যমত রয়েছে। তবে তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। সীরাতে ইবনে হিশামের বর্ণনা মতে লোক সমাজে প্রচলিত যে, ১২ই রবিউল আউয়াল রাসুল ﷺ এর জন্মদিন। কিন্তু সন, মাস ও বার ঠিক রেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদগণ স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সেদিন ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল। আর ইহাই বিশুদ্ধতম মত। [। আর-রাহীকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মু‘আয়্যেদ -রিয়াদ /৫৪]
১২ রবিউল আউওয়ালে তাঁর ওফাত হয় এ বিষয়ে দ্বিমত নেই। কেননা, তা স্পষ্ঠ দলিল দ্বারা প্রমাণিত। জন্মের তারিখটি বিতর্কিত। তার কারণ হলো, সে সময়ে নাবী ﷺ -কে না চিনার কারণে তারিখটি সযত্নে সংরক্ষিত হয়নি। এমনকি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে এবং তাঁর কোন সাহাবী হতে স্পষ্ট কোন বর্ণনাও পাওয়া যায়নি। সে কারণে ইতিহাসবেত্তাদের বর্ণনার উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
মিলাদ আরবী শব্দ, কাল বাচক বিশেষ্য। অর্থ জন্মের সময় বা কাল। [। ইবনুল মঞ্জুর, লিসানুল আরব দারুল ফিকর - বাইরুত ৩ /৪৬৮] আর প্রচলিত অর্থে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে যে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হয়, তাকে মিলাদ মাহফিল বলা হয়। পরবর্তীতে একশ্রেণীর লোক ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এর ন্যায় তৃতীয় আরেকটি ঈদ হিসেবে গণ্য করে এ দিবসটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করতে শুরু করেন।
আজ আর সেটি বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং নিত্য উৎসব ও ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সাধারণত দু‘আ করতে বা করাতে চাইলেই মানুষ অনুষ্ঠান করে এবং একে মিলাদ বলেই ডাকে। নতুন ঘর, দোকান-পাট, বিয়ে-শাদী, বৎসবরণ, সমাবর্তন, স্কুলের বিদায়ী অনুষ্ঠান এবং সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় মানুষ যে আয়োজন করে, প্রথাগতভাবে তাকে মিলাদ বলেই আখ্যা দেয়। সুতরাং বলা যায় যে, বর্তমানে মিলাদ এক কথিত সস্তা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নামেই জনসমাজে পরিচিত।
আজ আর সেটি বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং নিত্য উৎসব ও ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সাধারণত দু‘আ করতে বা করাতে চাইলেই মানুষ অনুষ্ঠান করে এবং একে মিলাদ বলেই ডাকে। নতুন ঘর, দোকান-পাট, বিয়ে-শাদী, বৎসবরণ, সমাবর্তন, স্কুলের বিদায়ী অনুষ্ঠান এবং সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় মানুষ যে আয়োজন করে, প্রথাগতভাবে তাকে মিলাদ বলেই আখ্যা দেয়। সুতরাং বলা যায় যে, বর্তমানে মিলাদ এক কথিত সস্তা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নামেই জনসমাজে পরিচিত।
মিলাদ ধর্মের নামে প্রচলিত নিছক একটি অনুষ্ঠান মাত্র। ইহা সারা বছর যত্রতত্র পালিত হয়। সরলমনা মুসলিম সমাজ সস্তা সাওয়াব লাভের আশায় নির্দ্বিধায় তা পালন করে থাকেন। অথচ ধর্মের নামে এটি একটি নতুন সংযোজন। যার সাথে ইসলামী শরীয়তের কোনরূপ সম্পর্ক নেই। নাবী ﷺ, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এযাম ও মুজতাহিদ ইমামদের সোনালী যুগে এ অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল না। এমনকি হিজরী ৪র্থ শতাব্দী কাল পর্যন্ত মুসলিম সমাজ এ অনুষ্ঠানের নাম-গন্ধও জানতেন না।
পরবর্তীতে খ্রিস্টান কর্তৃক উদযাপিত ঈসা (আ.) এর জন্মানুষ্ঠান দেখে মুসলিম সমাজের অনুকরণ প্রিয় কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ধর্মের নামে এ নতুন অনুষ্ঠানের জন্ম দেয়। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে ৪র্থ হিজরিতে ফাতেমী শিয়া সম্প্রদায় মিশরের রাজধানী কায়রোতে প্রথম এ মিলাদের প্রচলন ঘটায়। [। হুকুকুন্নবী ﷺ বাইনাল ইজলালি ওয়াল ইখলাল, আলুমুনতাদা প্রকাশনী রিয়াদ / ১৪০, আব্দুস সাত্তার রাহমানী ‘‘ আল মুনকারাত ফিল ‘আক্বাঈদি ওয়াল আ‘মালি ওয়াল ‘আ-দা-ত’’ উর্দু আল কবাসীম / ৫০] শিয়ারা ধর্মের নামে অনেক নতুন প্রথার আবিষ্কার করে। মিলাদও তাদের আবিষ্কৃত একটি প্রথা। যা হিজরী ৭ম শতাব্দীর শুরুতে প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার বাদশা আল মুজাফ্ফর আবু সাঈদ কাওকাবারী শান শাওকাতের সাথে মিলাদ মাহফিল উদযাপন করতেন। [। ইবনে কাসীর ‘‘আল বেদায়াহ ওয়ান নিহায়া ’’ দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা বাইরূত ১৩/১৪৭] সে কারণে কেউ কেউ তাকেই মিলাদের প্রথম উদ্যোগতা বলে উল্লেখ করেন। আসলে তা নয়, বরং ফাতেমী শিয়ারাই এর প্রথম উদ্যোগতা। সে সময়ে মিসরী আলেম আবুল খত্তাব ওমর বিন দেহইয়া আল কালবী ৬০৪ হিজরীতে এরবলে পৌঁছে দেখতে পেলেন সেখানকার বাদশা আল মুজাফ্ফর গুরুত্বসহকারে মিলাদুন্নবী পালন করছেন। তখন তিনি মিলাদের পক্ষে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা দ্বারা ‘‘আত্তাভীর ফী মাওলিদীস্ সিরা জিম্মুনীর’’ নামে একখানা কিতাব লিখে বাদশাহকে শুনান। বাদশাহ খুশী হয়ে তাকে এক হাজার দিনার উপহার দেন।
মিলাদের পক্ষের এ লিখক বানিয়ে কথা বলার কারণে মিসরে অপাংক্তেয় হিসাবে পরিগণিত হন। জনগণ তাকে বর্ণন করা ছেড়ে দেন এবং তাকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যা দেন। তিনিই সেই লোক, যিনি মাগরিবের সালাত কসর করার পক্ষে একটি মিথ্যা হাদীস গড়ে দেন। অথচ বিশ্বের সকল বিদ্বান একমত যে, মাগরিবের কোন কসর নেই। [। ইবনে কাসীর ‘‘আল বেদায়াহ ওয়ান নিহায়া ’’ দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা বাইরূত ১৩/১৫৫-১৫৬]
পরবর্তীতে খ্রিস্টান কর্তৃক উদযাপিত ঈসা (আ.) এর জন্মানুষ্ঠান দেখে মুসলিম সমাজের অনুকরণ প্রিয় কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ধর্মের নামে এ নতুন অনুষ্ঠানের জন্ম দেয়। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে ৪র্থ হিজরিতে ফাতেমী শিয়া সম্প্রদায় মিশরের রাজধানী কায়রোতে প্রথম এ মিলাদের প্রচলন ঘটায়। [। হুকুকুন্নবী ﷺ বাইনাল ইজলালি ওয়াল ইখলাল, আলুমুনতাদা প্রকাশনী রিয়াদ / ১৪০, আব্দুস সাত্তার রাহমানী ‘‘ আল মুনকারাত ফিল ‘আক্বাঈদি ওয়াল আ‘মালি ওয়াল ‘আ-দা-ত’’ উর্দু আল কবাসীম / ৫০] শিয়ারা ধর্মের নামে অনেক নতুন প্রথার আবিষ্কার করে। মিলাদও তাদের আবিষ্কৃত একটি প্রথা। যা হিজরী ৭ম শতাব্দীর শুরুতে প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার বাদশা আল মুজাফ্ফর আবু সাঈদ কাওকাবারী শান শাওকাতের সাথে মিলাদ মাহফিল উদযাপন করতেন। [। ইবনে কাসীর ‘‘আল বেদায়াহ ওয়ান নিহায়া ’’ দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা বাইরূত ১৩/১৪৭] সে কারণে কেউ কেউ তাকেই মিলাদের প্রথম উদ্যোগতা বলে উল্লেখ করেন। আসলে তা নয়, বরং ফাতেমী শিয়ারাই এর প্রথম উদ্যোগতা। সে সময়ে মিসরী আলেম আবুল খত্তাব ওমর বিন দেহইয়া আল কালবী ৬০৪ হিজরীতে এরবলে পৌঁছে দেখতে পেলেন সেখানকার বাদশা আল মুজাফ্ফর গুরুত্বসহকারে মিলাদুন্নবী পালন করছেন। তখন তিনি মিলাদের পক্ষে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা দ্বারা ‘‘আত্তাভীর ফী মাওলিদীস্ সিরা জিম্মুনীর’’ নামে একখানা কিতাব লিখে বাদশাহকে শুনান। বাদশাহ খুশী হয়ে তাকে এক হাজার দিনার উপহার দেন।
মিলাদের পক্ষের এ লিখক বানিয়ে কথা বলার কারণে মিসরে অপাংক্তেয় হিসাবে পরিগণিত হন। জনগণ তাকে বর্ণন করা ছেড়ে দেন এবং তাকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যা দেন। তিনিই সেই লোক, যিনি মাগরিবের সালাত কসর করার পক্ষে একটি মিথ্যা হাদীস গড়ে দেন। অথচ বিশ্বের সকল বিদ্বান একমত যে, মাগরিবের কোন কসর নেই। [। ইবনে কাসীর ‘‘আল বেদায়াহ ওয়ান নিহায়া ’’ দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা বাইরূত ১৩/১৫৫-১৫৬]
প্রচলিত মিলাদ বলতে মিলাদ অনুষ্ঠানে আমরা যা দেখি, তাই বুঝি। স্থান, কাল ও পাত্রভেদে মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানমালায় নানা রকম কর্মসূচি পালিত হয়। মিলাদ পড়ুয়াদের মাঝে এ সংক্রান্ত আক্বীদাহ ও কর্মসূচি নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। তাই মিলাদ মাহফিলের রূপ ভিন্ন ভিন্ন হয়। আমরা এখানে এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য গত দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরলামঃ
১। ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ ১২ ই রবিউল আউয়াল পালিত হয়। আর ঈদ অর্থ আনন্দ উৎসব। অথচ বিশুদ্ধ মতে ১২ রবিউল আউয়াল নাবীর ওফাত দিবস। [। আল মুবারক পুরী, আর রাহীকুল মাখতুম (আরবি) দারুল মু‘আয়্যেদ-রিয়াদ/৪৬৯] তাহলে কি মিলাদী ভাইয়েরা নাবীর ওফাত দিবসে আনন্দ উল্লাস করে থাকেন?
২। মিলাদ মাহফিল বিভিন্ন উপলক্ষ্যে সারা বছর পালিত হয়ে থাকে। অথচ জন্মদিন বছরে একবারই ঘুরে আসে। তাহলে কি নাবী ﷺ মিলাদ পালনকারীদের ধরণা মতে বারংবার জন্ম নিতেই থাকেন?
৩। মিলাদ মাহফিলে উর্দু, ফারসী, আরবি, ও বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন কবিতা সুর মিলিয়ে আবৃত্তি করা হয়, যার অধিকাংশই শিরকী আক্বীদায় ভরা। আর সাধারণ মুসলিম সমাজ না বুঝে শুধু সুরের তালে তালে মাথা হেলাতে থাকেন এবং ভাবেন বহু পুণ্যের কাজ করে ফেলা হল। অথচ এর দ্বারা যে তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা কজন খবর রাখেন।
৪। দরূদ ও সালামের নামে বানোয়াট দরূদসমূহ পড়া হয়। এমনকি (বালাগাল উলা....) ইত্যাদি কবিতাকে সম্মিলিতভাবে স্ব-শব্দে পাঠ করা হয়। আর সরলমতি মুসলিম সমাজ এগুলোকে দরূদ মনে করে মুহাববাতের সাথে আবৃত্তি করতে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন কবির কবিতা বা কোন আলেমের বানানো দরূদকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে; অথচ সহীহ হাদীসে বর্ণিত দরূদের কোন খবর নেই। কেউ কেউ সহীহ দরূদ পড়ে থাকলেও সেগুলোকে যথেষ্ট মনে করছেন না। এদের কাছে নাবীর শিক্ষা যথেষ্ট নয়। সেজন্য তারা তথাকথিত কবিতা ও বানানো দরূদ পড়ছেন। হায়! নাবীর উম্মাতের একি দশা?
৫। নামাযী, বে-নামাযী ও ইসলামবিদ্বেষী সকলে তাতে অংশ নেন। তাদের ধারণা, মাঝে মাঝে মিলাদ পড়লেই চলবে, সালাত সিয়ামের কোন দরকার নেই। তাই কেউ কোনমতে একটি টুপি পরে কিংবা নাক ঝাড়ার রুমালটা মাথায় বেঁধে মাহফিলে ঢুকে পড়েন। আর অনুষ্ঠান শেষে জিলাপী ও হাদীয়া দিয়ে বিদায় করা হয়।
৬। এ উপলক্ষ্যে আলোকসজ্জা, আগরবাতি, ধুঁপ-ধুনা জ্বালানো ও আতর গোলাপজল ছিটানো হয়। অথচ এ সবই অপচয়। আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আবার কোথাও কোথাও এলাকার যুবসমাজ দলবেধে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা উঠান এবং উল্লাস করেন।
৭। কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের মাঝখানে একটি খালি চেয়ার সাজিয়ে রাখেন এ উদ্দেশ্যে যে, এখানে নাকি রাসূলুল্লাহ ﷺ এসে বসবেন। তাদের বিশ্বাস মিলাদের অনুষ্ঠানে তিনি হাজির হন। জনগণকে ধোঁকা দেয়ার আরও কোন উপায় আছে কি?
৮। এই মিলাদের মাঝখানে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান এবং আবেগময় কণ্ঠে বানোয়াট সালাম পাঠ করেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হে রাসূল! বলে ডাকতে থাকে। এ জন্য তারা ( يَا رَسُوْلَ اللهِ ) ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইত্যাদি বলতে থাকেন। অথচ উপস্থিত ব্যক্তি ছাড়া অনুপস্থিত কাউকে এভাবে ডাকা ব্যাকরণ বিরুদ্ধ। বিশেষত, আল্লাহকে ডাকার বেলায় এ অব্যয়টি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবদ্দশায় সাহাবারা এভাবে তাঁকে আহবান করেছেন। কিন্তু তাঁর ওয়াফাতের পর এভাবে ডেকেছেন- এর কোন প্রমাণ নেই। কাজেই সেটি বর্তমানে দূর থেকে কেউ রাসূল ﷺ কে এভাবে ডাকলে তা হবে শিরক। উপরোল্লিখিতভাবে দাঁড়ানোকে বলা হয় ক্বিয়াম, যা রাসূল ﷺ হাজির হয়েছেন, তা দেখলেন কে? নাকি মিলাদী মৌলভীদের আলাদা কোন চোখ আছে ? হায়! আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় হবে কি?
১। ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ ১২ ই রবিউল আউয়াল পালিত হয়। আর ঈদ অর্থ আনন্দ উৎসব। অথচ বিশুদ্ধ মতে ১২ রবিউল আউয়াল নাবীর ওফাত দিবস। [। আল মুবারক পুরী, আর রাহীকুল মাখতুম (আরবি) দারুল মু‘আয়্যেদ-রিয়াদ/৪৬৯] তাহলে কি মিলাদী ভাইয়েরা নাবীর ওফাত দিবসে আনন্দ উল্লাস করে থাকেন?
২। মিলাদ মাহফিল বিভিন্ন উপলক্ষ্যে সারা বছর পালিত হয়ে থাকে। অথচ জন্মদিন বছরে একবারই ঘুরে আসে। তাহলে কি নাবী ﷺ মিলাদ পালনকারীদের ধরণা মতে বারংবার জন্ম নিতেই থাকেন?
৩। মিলাদ মাহফিলে উর্দু, ফারসী, আরবি, ও বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন কবিতা সুর মিলিয়ে আবৃত্তি করা হয়, যার অধিকাংশই শিরকী আক্বীদায় ভরা। আর সাধারণ মুসলিম সমাজ না বুঝে শুধু সুরের তালে তালে মাথা হেলাতে থাকেন এবং ভাবেন বহু পুণ্যের কাজ করে ফেলা হল। অথচ এর দ্বারা যে তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা কজন খবর রাখেন।
৪। দরূদ ও সালামের নামে বানোয়াট দরূদসমূহ পড়া হয়। এমনকি (বালাগাল উলা....) ইত্যাদি কবিতাকে সম্মিলিতভাবে স্ব-শব্দে পাঠ করা হয়। আর সরলমতি মুসলিম সমাজ এগুলোকে দরূদ মনে করে মুহাববাতের সাথে আবৃত্তি করতে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন কবির কবিতা বা কোন আলেমের বানানো দরূদকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে; অথচ সহীহ হাদীসে বর্ণিত দরূদের কোন খবর নেই। কেউ কেউ সহীহ দরূদ পড়ে থাকলেও সেগুলোকে যথেষ্ট মনে করছেন না। এদের কাছে নাবীর শিক্ষা যথেষ্ট নয়। সেজন্য তারা তথাকথিত কবিতা ও বানানো দরূদ পড়ছেন। হায়! নাবীর উম্মাতের একি দশা?
৫। নামাযী, বে-নামাযী ও ইসলামবিদ্বেষী সকলে তাতে অংশ নেন। তাদের ধারণা, মাঝে মাঝে মিলাদ পড়লেই চলবে, সালাত সিয়ামের কোন দরকার নেই। তাই কেউ কোনমতে একটি টুপি পরে কিংবা নাক ঝাড়ার রুমালটা মাথায় বেঁধে মাহফিলে ঢুকে পড়েন। আর অনুষ্ঠান শেষে জিলাপী ও হাদীয়া দিয়ে বিদায় করা হয়।
৬। এ উপলক্ষ্যে আলোকসজ্জা, আগরবাতি, ধুঁপ-ধুনা জ্বালানো ও আতর গোলাপজল ছিটানো হয়। অথচ এ সবই অপচয়। আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আবার কোথাও কোথাও এলাকার যুবসমাজ দলবেধে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা উঠান এবং উল্লাস করেন।
৭। কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের মাঝখানে একটি খালি চেয়ার সাজিয়ে রাখেন এ উদ্দেশ্যে যে, এখানে নাকি রাসূলুল্লাহ ﷺ এসে বসবেন। তাদের বিশ্বাস মিলাদের অনুষ্ঠানে তিনি হাজির হন। জনগণকে ধোঁকা দেয়ার আরও কোন উপায় আছে কি?
৮। এই মিলাদের মাঝখানে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান এবং আবেগময় কণ্ঠে বানোয়াট সালাম পাঠ করেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হে রাসূল! বলে ডাকতে থাকে। এ জন্য তারা ( يَا رَسُوْلَ اللهِ ) ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইত্যাদি বলতে থাকেন। অথচ উপস্থিত ব্যক্তি ছাড়া অনুপস্থিত কাউকে এভাবে ডাকা ব্যাকরণ বিরুদ্ধ। বিশেষত, আল্লাহকে ডাকার বেলায় এ অব্যয়টি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবদ্দশায় সাহাবারা এভাবে তাঁকে আহবান করেছেন। কিন্তু তাঁর ওয়াফাতের পর এভাবে ডেকেছেন- এর কোন প্রমাণ নেই। কাজেই সেটি বর্তমানে দূর থেকে কেউ রাসূল ﷺ কে এভাবে ডাকলে তা হবে শিরক। উপরোল্লিখিতভাবে দাঁড়ানোকে বলা হয় ক্বিয়াম, যা রাসূল ﷺ হাজির হয়েছেন, তা দেখলেন কে? নাকি মিলাদী মৌলভীদের আলাদা কোন চোখ আছে ? হায়! আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় হবে কি?
আমাদের দেশে কিছু লোক বসে বসে মিলাদ পড়েন। আবার কিছু লোক পড়তে পড়তে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়াকে ক্বিয়াম বলা হয়। ক্বিয়ামী ভাইদের ধারণা, মিলাদ মাহফিলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রূহ মুবারক হাযির হয়। তখনই তারা তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যান। কোন কোন মাহফিলে সাজিয়ে গুজিয়ে একটি চেয়ারও খালি রাখা হয়। এখানে নাকি রাসূলুল্লাহ ﷺ এসে উপবেশন করেন। তাদের এ ধারণা অনেক বিভ্রান্তিমূলক বিশ্বাসের জন্ম দেয়। এসব বিশ্বাসের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো :
১। নাবী ﷺ এর ওফাত হয়নি; বরং তিনি জীবিত আছেন; অথচ এ অলীক বিশ্বাস সরাসরি কুরআনের বিপরীত। আর মাখলুক মাত্রই ওফাত হবে। চিরঞ্জীবতা শুধু আল্লাহরই সিফাত। মহান আল্লাহ বলেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
‘‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী।’’ [। সূরা আলে ইমরান -১৮৫]
মহান আল্লাহই কেবল বাকী থাকবেন; অন্য কোন সৃষ্টি অবশিষ্ট থাকবে না। এ মর্মে মহান আল্লাহ এরশাদ ফরমান :
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুর ধ্বংসশীল। একমাত্র তোমার মহিমায় ও মহানুভব রবের মুখমন্ডল বাকী থাকবে।’’ [। সূরা আর রাহমান -২৬-২৭]
২। নাবী ﷺ সর্বত্র বিরাজমান; অথচ নাবীর মহাসমাধী মদীনাতেই রয়েছে এবং তিনি বলেছেন:
قوله عليه السلام : إِنَّ لِلّٰهِ مَلَائِكَةً سَيّٰحِين في الْأرْضِ يَبْلُغُنِي مِنْ أمَّتِي السَّلَامَ
‘‘নিশ্চয় যমীনে ভ্রমনকারী আল্লাহর ফেরেশতামন্ডলী রয়েছেন। তাঁরা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’’ [। আহমাদ,নাসায়ী, সিলসিলাতুস সহীহাহ লিল আল-বাণী হা /২৮৫৩]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ১১ হিজরী মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার জোহরের সময় মদীনা মুনাওয়ারায় মা আয়েশা (রা.) এর হুজরাতে তাঁর ওফাত হয়। অতঃপর ১৩ রবিউল আউয়াল মঙ্গলবার তাঁকে গোসল দেয়া হয়। এ গুরু দায়িত্ব পালন করেন সাহবী আস, আলী, উসামা বিন জায়েদ, রাসূল ﷺ এর গোলাম শাক্বরান, আববাস এর পুত্রদ্বয় এবং আউস রাদিআল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন। আউস (রা.) পানি ঢালেন এবং আলী (রা.) গোসল দেন। [। আল মুবারক পুরী, আর রাহীকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মুআইয়্যিদ রিয়াদ /৪৭১] তিন কাপড় দ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দাফন সম্পন্ন হয়। [। বুখারী,মুসলিম হা/৯৪১ (৪৫)] এসব দলিলের পর কী করে তাঁকে সর্বত্র বিরাজমান বলা যেতে পারে! এ তো প্রকাশ্য গোমরাহী।
৩। অদৃশ্য বিদ্যা বা গায়েবের ইলম জানা; কেননা তাঁকে আগাম জানতে হবে যে, কোথায় কখন মিলাদ হবে। আর যদি একই সময়ে পৃথিবীর একাধিক জায়গায় মিলাদ হয়, তাহলে তো মহা বিড়ম্বনা। অথচ ইহা জানা কথা যে, গায়েবের ইলম শুধু আল্লাহরই। এতে কোন মাখলুকের হাত নেই। আল্লাহ বলেন:
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَؕ
‘‘আর গায়েব বা অদৃশ্য বিদ্যার চাবিসমূহ তাঁরই (আল্লাহর) হাতে। তিনি ছাড়া তা কেউ জানে না।’’ [। আল-কুরআন, সূরা আল আন‘আম/ ৫৯]
১। নাবী ﷺ এর ওফাত হয়নি; বরং তিনি জীবিত আছেন; অথচ এ অলীক বিশ্বাস সরাসরি কুরআনের বিপরীত। আর মাখলুক মাত্রই ওফাত হবে। চিরঞ্জীবতা শুধু আল্লাহরই সিফাত। মহান আল্লাহ বলেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
‘‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী।’’ [। সূরা আলে ইমরান -১৮৫]
মহান আল্লাহই কেবল বাকী থাকবেন; অন্য কোন সৃষ্টি অবশিষ্ট থাকবে না। এ মর্মে মহান আল্লাহ এরশাদ ফরমান :
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুর ধ্বংসশীল। একমাত্র তোমার মহিমায় ও মহানুভব রবের মুখমন্ডল বাকী থাকবে।’’ [। সূরা আর রাহমান -২৬-২৭]
২। নাবী ﷺ সর্বত্র বিরাজমান; অথচ নাবীর মহাসমাধী মদীনাতেই রয়েছে এবং তিনি বলেছেন:
قوله عليه السلام : إِنَّ لِلّٰهِ مَلَائِكَةً سَيّٰحِين في الْأرْضِ يَبْلُغُنِي مِنْ أمَّتِي السَّلَامَ
‘‘নিশ্চয় যমীনে ভ্রমনকারী আল্লাহর ফেরেশতামন্ডলী রয়েছেন। তাঁরা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’’ [। আহমাদ,নাসায়ী, সিলসিলাতুস সহীহাহ লিল আল-বাণী হা /২৮৫৩]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ১১ হিজরী মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার জোহরের সময় মদীনা মুনাওয়ারায় মা আয়েশা (রা.) এর হুজরাতে তাঁর ওফাত হয়। অতঃপর ১৩ রবিউল আউয়াল মঙ্গলবার তাঁকে গোসল দেয়া হয়। এ গুরু দায়িত্ব পালন করেন সাহবী আস, আলী, উসামা বিন জায়েদ, রাসূল ﷺ এর গোলাম শাক্বরান, আববাস এর পুত্রদ্বয় এবং আউস রাদিআল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন। আউস (রা.) পানি ঢালেন এবং আলী (রা.) গোসল দেন। [। আল মুবারক পুরী, আর রাহীকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মুআইয়্যিদ রিয়াদ /৪৭১] তিন কাপড় দ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দাফন সম্পন্ন হয়। [। বুখারী,মুসলিম হা/৯৪১ (৪৫)] এসব দলিলের পর কী করে তাঁকে সর্বত্র বিরাজমান বলা যেতে পারে! এ তো প্রকাশ্য গোমরাহী।
৩। অদৃশ্য বিদ্যা বা গায়েবের ইলম জানা; কেননা তাঁকে আগাম জানতে হবে যে, কোথায় কখন মিলাদ হবে। আর যদি একই সময়ে পৃথিবীর একাধিক জায়গায় মিলাদ হয়, তাহলে তো মহা বিড়ম্বনা। অথচ ইহা জানা কথা যে, গায়েবের ইলম শুধু আল্লাহরই। এতে কোন মাখলুকের হাত নেই। আল্লাহ বলেন:
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَؕ
‘‘আর গায়েব বা অদৃশ্য বিদ্যার চাবিসমূহ তাঁরই (আল্লাহর) হাতে। তিনি ছাড়া তা কেউ জানে না।’’ [। আল-কুরআন, সূরা আল আন‘আম/ ৫৯]
উপরের আলোচনা দ্বারা ইহা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হলো যে, মিলাদ নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ইহা পরবর্তীতে আবিষ্কৃত একটি বিদআত। যার সাথে ইসলামী শরীয়তের কোন সম্পর্ক নেই। আর ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন, তরীকা, ইজম, মতবাদ বা মানবরচিত ওজীফা সবই গোমরাহী। মহান আল্লাহ তা কখনও কবুল করবেন না। এরশাদ হচ্ছে :
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ
‘‘আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে (গ্রহণ করবে), তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [। সূরা আলে ইমরান /৮৫]
ভালো মনে করলেই কি ইসলামে নিজ ইচ্ছায় কোন কিছু বাড়ানো যাবে? যদি বলি যাবে, তাহলে কি ইসলাম অসম্পূর্ণ? তাই যদি হয়, তাহলে কে সেই অসম্পূর্ণ ইসলাম পরিপূর্ণ করবে? নাকি কোন শাইখুল হাদীস নবুওয়াত দাবী করে বসবেন? এসকল প্রশ্নের জবাবে বলবেন- না, ইসলাম পরিপূর্ণ। মুহাম্মাদ ﷺ সর্বশেষ নাবী। তাঁর পরে আর কোন নাবী আসবেন না এটাই আমাদের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ তার দ্বীন আমাদের নাবীর gva¨‡g পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে :
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/৩]
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান। এ বিধানে কোন কিছু বাড়ানো বা কমানোর কারো কোন অধিকার নেই। আল্লাহ কারো সাহায্য হতে অমুখাপেক্ষী। কেউ শরিয়াত সৃষ্টিতে শরীক হতে পারে না। যদি কেউ এমন বিশ্বাস করে বা কোন আলেম/বুযুর্গের বেলায় বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার এ বিশ্বাস যে কুফুরী ও শিরকী আক্বীদাহ- তাতে কোন সন্দেহ নেই। মহান আল্লাহ বলেন :
اَمْ لَهُمْ شُرَكَآءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ ۢبِهِ اللهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
‘‘তাদের কি কোন শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীন বানিয়ে দিয়েছ- যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চুড়ান্ত ফায়সালা না থাকতো, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ [। সূরা আশ-শুরা/২১]
কিয়ামত দিবসেই আল্লাহ ফায়সালা করবেন। যদি শেষ বিচারের দিন ধার্য না থাকতো, তাহলে মিলাদ আবিষ্কারকরা কবেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়ে যেতেন। আর মানুষ তা স্বচক্ষে দেখত। কিন্তু আল্লাহর ফায়সালাই চুড়ান্ত, তিনি সেদিন শরীয়াতে নতুন আবিষ্কারকদের এ ধৃষ্টতার জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন। কেননা, আল্লাহর হকে অনধিকার চর্চার জন্য এরাই বড় জালিম। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
যারা নাবীর তরীকার উপর অতিরঞ্জন করবে, তারা নাবীর উম্মাত হওয়ার মিছে দাবীদার। মহানাবী ﷺ তাদেরকে তাঁর উম্মাত বলে গণ্য করবেন না। নাবী ﷺ এরশাদ করেন:
مَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ মুড়িয়ে নিল, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হ/১৪০১]
কেউ যদি রাসূলের তরীকার উপর মাতববরি করে, তাহলে তার আমল প্রত্যাখ্যাত।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই- সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম হা/৪৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ হা/৪৬০৭।]
হিদায়াত গ্রহণের জন্য এ কয়টি দলিলই যথেষ্ট। যার ভাগ্যে হিদায়াত আছে, সে এখান থেকেই শিক্ষা নেবে। আর যার ভাগ্যে বিড়ম্বনা আছে, সেতো বিভ্রান্ত হবেই। মহান আল্লাহ বলেন :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
‘‘আর আল্লাহ যার জন্য হিদায়াতের আলো দেন না, তার জন্য কোন আলো নেই।’’ [। সূরা আন নুর/৪০]
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ
‘‘আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে (গ্রহণ করবে), তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [। সূরা আলে ইমরান /৮৫]
ভালো মনে করলেই কি ইসলামে নিজ ইচ্ছায় কোন কিছু বাড়ানো যাবে? যদি বলি যাবে, তাহলে কি ইসলাম অসম্পূর্ণ? তাই যদি হয়, তাহলে কে সেই অসম্পূর্ণ ইসলাম পরিপূর্ণ করবে? নাকি কোন শাইখুল হাদীস নবুওয়াত দাবী করে বসবেন? এসকল প্রশ্নের জবাবে বলবেন- না, ইসলাম পরিপূর্ণ। মুহাম্মাদ ﷺ সর্বশেষ নাবী। তাঁর পরে আর কোন নাবী আসবেন না এটাই আমাদের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ তার দ্বীন আমাদের নাবীর gva¨‡g পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
এরশাদ হচ্ছে :
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/৩]
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান। এ বিধানে কোন কিছু বাড়ানো বা কমানোর কারো কোন অধিকার নেই। আল্লাহ কারো সাহায্য হতে অমুখাপেক্ষী। কেউ শরিয়াত সৃষ্টিতে শরীক হতে পারে না। যদি কেউ এমন বিশ্বাস করে বা কোন আলেম/বুযুর্গের বেলায় বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার এ বিশ্বাস যে কুফুরী ও শিরকী আক্বীদাহ- তাতে কোন সন্দেহ নেই। মহান আল্লাহ বলেন :
اَمْ لَهُمْ شُرَكَآءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ ۢبِهِ اللهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَاِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
‘‘তাদের কি কোন শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীন বানিয়ে দিয়েছ- যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চুড়ান্ত ফায়সালা না থাকতো, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ [। সূরা আশ-শুরা/২১]
কিয়ামত দিবসেই আল্লাহ ফায়সালা করবেন। যদি শেষ বিচারের দিন ধার্য না থাকতো, তাহলে মিলাদ আবিষ্কারকরা কবেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়ে যেতেন। আর মানুষ তা স্বচক্ষে দেখত। কিন্তু আল্লাহর ফায়সালাই চুড়ান্ত, তিনি সেদিন শরীয়াতে নতুন আবিষ্কারকদের এ ধৃষ্টতার জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন। কেননা, আল্লাহর হকে অনধিকার চর্চার জন্য এরাই বড় জালিম। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
যারা নাবীর তরীকার উপর অতিরঞ্জন করবে, তারা নাবীর উম্মাত হওয়ার মিছে দাবীদার। মহানাবী ﷺ তাদেরকে তাঁর উম্মাত বলে গণ্য করবেন না। নাবী ﷺ এরশাদ করেন:
مَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ মুড়িয়ে নিল, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হ/১৪০১]
কেউ যদি রাসূলের তরীকার উপর মাতববরি করে, তাহলে তার আমল প্রত্যাখ্যাত।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই- সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম হা/৪৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ হা/৪৬০৭।]
হিদায়াত গ্রহণের জন্য এ কয়টি দলিলই যথেষ্ট। যার ভাগ্যে হিদায়াত আছে, সে এখান থেকেই শিক্ষা নেবে। আর যার ভাগ্যে বিড়ম্বনা আছে, সেতো বিভ্রান্ত হবেই। মহান আল্লাহ বলেন :
وَمَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهٗ نُوْرًا فَمَا لَهٗ مِنْ نُّوْرٍ
‘‘আর আল্লাহ যার জন্য হিদায়াতের আলো দেন না, তার জন্য কোন আলো নেই।’’ [। সূরা আন নুর/৪০]
মিলাদ মাহফিলে তো যিক্র-আযকার, দু‘আ-দরূদ ও কুরআন তেলাওয়াত করা হয়- তাতে কি কোন নিষেধ আছে?
চমৎকার কথা! আমি ও আপনি বা কোন জ্ঞানী ভালো মনে করলেই কোন কিছুকে ইবাদত হিসেবে চালু করা যাবে না। এ কাজ কেবল মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এতে কোন সৃষ্টির নূন্যতম কোন অংশীদারিত্ব নেই। ধরে নিন! কেউ মাগরিবের সালাত ৩ রাকা‘আতের জায়গায় ৪ রাকা‘আত পড়ে নিল এবং বলল, ক্ষতি কি? এতে তো কুরআন তেলাওয়াত, দু‘আ ও যিকর আছে। খারাপ তো কিছু করিনি।
এমন ব্যক্তিকে আপনি কী বলবেন? তার এ সালাত শুদ্ধ হবে কি এবং এর বিনিময়ে সে সওয়াব না আযাব পাবে? নিশ্চয়ই বলবেন, তার সালাত সঠিক হবে না। নেকী তো দূরের কথা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানে স্বেচ্ছায় মাতাববরি করার কারণে সে উল্টো গোনাহগার হবে। কিন্তু কেন? সে তো গান গায়নি, বা কোন খারাপ কাজ করেনি; বরং সালাত আদায় করেছে।
মনে রাখতে হবে যে, ইবাদত কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত হলো : ইখলাসের সাথে ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী সকল প্রকার আমল আদায় করা। আপনি ও আমি ইচ্ছা করলেই কোন কিছু দ্বীন ও ইবাদত হবে না। যে বা যারা এ ধরনের উক্তি করেন, তাদের নিমেণাক্ত হাদীসখানাই দলিল হিসেবে যথেষ্ট ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلٰى بُيُوْتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ يَسْأَلُوْنَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ فَلَمَّا أُخْبَرُوْا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوْا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ قَدْ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ الْاٰخَرُ أَنَا أَصُوْمُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ الْاٰخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِيْنَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّيْ لَأَخْشَاكُمْ لِلّٰهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهٗ لٰكِنِّيْ أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّيْ وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ
‘‘আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি নাবী ﷺ এর স্ত্রীদের ঘরে নাবী ﷺ এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আগমন করলেন। অতঃপর নাবীর ইবাদত সম্পর্কে খবর দেয়া হলে তাঁরা সেটিকে (তাদের জন্য) কম মনে করলেন এবং বললেন, আরে নাবীর তুলনায় আমাদের অবস্থান কোথায়? আল্লাহ তো তাঁর পূর্বাপর সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (এ বলে তাঁরা তিনজনে বেশী বেশী ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে কঠিন সংকল্প করলেন।) তাঁদের একজন বললেন, আমি সবসময় রাতভর সালাত আদায় করব। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি যুগভর সিয়াম/রোজা রাখব, কোন দিন রোজা ভাঙ্গব না। আর অন্যজন বললেন, আমি নারীদেরকে বর্জন করব, কখনও বিয়ে করব না। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ আগমন করলেন এবং বললেন, তোমরা কি এরূপ এরূপ কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করি এবং তাঁর জন্য তাকওয়া অবলম্বন করি। এতদসত্ত্বেও আমি সিয়াম/রোজা রাখি এবং ভঙ্গ করি। আমি সালাত আদায় করি এবং রাতে ঘুমাই এবং নারীদের কে বিয়েও করি। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’’ [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হ/১৪০১]
সাহাবারা ভালো সংকল্পই তো করেছিলেন। কেউ রাতভর সালাত পড়বেন, কেউ দিনভর সিয়াম/রোজা রাখবেন এবং কেউ বিয়ে শাদীর ঝামেলামুক্ত থেকে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করবেন। কিন্তু নাবী ﷺ তাদেরকে কেন এতবড় কঠিন ধমক দিলেন? কারণ একটাই, আর তা হলো নাবীর তরীকার খেলাফ হওয়া। কাজেই আমাদের দৃষ্টিতে কোন আমল যতই ভালো হউক না কেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের সমর্থন না থাকলে সেটি ভালো হতে পারে না; বরং বিদআত, নাজায়েজ ও হারাম। আর এর পরিণাম আল্লাহর লা‘নত ও জাহান্নাম।
চমৎকার কথা! আমি ও আপনি বা কোন জ্ঞানী ভালো মনে করলেই কোন কিছুকে ইবাদত হিসেবে চালু করা যাবে না। এ কাজ কেবল মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এতে কোন সৃষ্টির নূন্যতম কোন অংশীদারিত্ব নেই। ধরে নিন! কেউ মাগরিবের সালাত ৩ রাকা‘আতের জায়গায় ৪ রাকা‘আত পড়ে নিল এবং বলল, ক্ষতি কি? এতে তো কুরআন তেলাওয়াত, দু‘আ ও যিকর আছে। খারাপ তো কিছু করিনি।
এমন ব্যক্তিকে আপনি কী বলবেন? তার এ সালাত শুদ্ধ হবে কি এবং এর বিনিময়ে সে সওয়াব না আযাব পাবে? নিশ্চয়ই বলবেন, তার সালাত সঠিক হবে না। নেকী তো দূরের কথা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানে স্বেচ্ছায় মাতাববরি করার কারণে সে উল্টো গোনাহগার হবে। কিন্তু কেন? সে তো গান গায়নি, বা কোন খারাপ কাজ করেনি; বরং সালাত আদায় করেছে।
মনে রাখতে হবে যে, ইবাদত কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত হলো : ইখলাসের সাথে ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী সকল প্রকার আমল আদায় করা। আপনি ও আমি ইচ্ছা করলেই কোন কিছু দ্বীন ও ইবাদত হবে না। যে বা যারা এ ধরনের উক্তি করেন, তাদের নিমেণাক্ত হাদীসখানাই দলিল হিসেবে যথেষ্ট ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلٰى بُيُوْتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ يَسْأَلُوْنَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ فَلَمَّا أُخْبَرُوْا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوْا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ قَدْ غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ الْاٰخَرُ أَنَا أَصُوْمُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ الْاٰخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِيْنَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّيْ لَأَخْشَاكُمْ لِلّٰهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهٗ لٰكِنِّيْ أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّيْ وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ
‘‘আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি নাবী ﷺ এর স্ত্রীদের ঘরে নাবী ﷺ এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আগমন করলেন। অতঃপর নাবীর ইবাদত সম্পর্কে খবর দেয়া হলে তাঁরা সেটিকে (তাদের জন্য) কম মনে করলেন এবং বললেন, আরে নাবীর তুলনায় আমাদের অবস্থান কোথায়? আল্লাহ তো তাঁর পূর্বাপর সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (এ বলে তাঁরা তিনজনে বেশী বেশী ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে কঠিন সংকল্প করলেন।) তাঁদের একজন বললেন, আমি সবসময় রাতভর সালাত আদায় করব। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি যুগভর সিয়াম/রোজা রাখব, কোন দিন রোজা ভাঙ্গব না। আর অন্যজন বললেন, আমি নারীদেরকে বর্জন করব, কখনও বিয়ে করব না। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ আগমন করলেন এবং বললেন, তোমরা কি এরূপ এরূপ কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করি এবং তাঁর জন্য তাকওয়া অবলম্বন করি। এতদসত্ত্বেও আমি সিয়াম/রোজা রাখি এবং ভঙ্গ করি। আমি সালাত আদায় করি এবং রাতে ঘুমাই এবং নারীদের কে বিয়েও করি। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’’ [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হ/১৪০১]
সাহাবারা ভালো সংকল্পই তো করেছিলেন। কেউ রাতভর সালাত পড়বেন, কেউ দিনভর সিয়াম/রোজা রাখবেন এবং কেউ বিয়ে শাদীর ঝামেলামুক্ত থেকে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করবেন। কিন্তু নাবী ﷺ তাদেরকে কেন এতবড় কঠিন ধমক দিলেন? কারণ একটাই, আর তা হলো নাবীর তরীকার খেলাফ হওয়া। কাজেই আমাদের দৃষ্টিতে কোন আমল যতই ভালো হউক না কেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের সমর্থন না থাকলে সেটি ভালো হতে পারে না; বরং বিদআত, নাজায়েজ ও হারাম। আর এর পরিণাম আল্লাহর লা‘নত ও জাহান্নাম।
বিদআত ঐ সমস্ত আমলকে বলা হয়, যা মানুষ দ্বীন মনে করে সাওয়াবের আশায় পালন করে; অথচ ইহার সমর্থন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোন হাদীসে নেই। এমনকি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম ও স্বর্ণ যুগের কেউ তা পালন করেননি। ইমাম শত্বেবী (রহ.) বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় দ্বীনের নামে এমন কোন প্রথা/আমল চালু করার নাম বিদআত, যা কোন মৌলিক বা গৌণ শরঈ দলিলের উপর ভিত্তিশীল নয়। [। ইমাম শাত্বেবী ‘আল-ইতেসাম’ ১/৩৭]
হাফেজ ইবনে রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
فَكُلُّ مَنْ أحْدَثَ شَيْئًا وَ نَسَبَهٗ إِلٰى الدِّيْنِ، وَ لَمْ يَكُنْ لَهٗ أصْلٌ مِنَ الدِّيْنِ يَرْجِعُ إلَيْهِ، فَهُوَ ضَلَالَةً
‘‘(বিদআত হলো) এমনসব নতুন বিষয় যা কেউ তৈরী করে দ্বীনের প্রতি সম্বন্ধ করে, অথচ তার শরীয়াতে কোন ভিত্তি নেই- যার দিকে প্রত্যাবর্তন করা হবে। সেটি গুমরাহী।’’ [। ইবনে রজব (জামেউল উলূমি ওয়াল হিকাম) তাহক্বীক্ব-শু‘আয়েব আল আরনাউত্ব ও ইব্রাহীম বাজিস, মু‘আস্সাতুর রিসালাহ বাইরুত (৬ষ্ট সংষ্করণ) ২/১২৮] অর্থাৎ এমন ‘আক্বিদাহ ও আমলের আবিষ্কার করা, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই।
হাফেজ ইবনে রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
فَكُلُّ مَنْ أحْدَثَ شَيْئًا وَ نَسَبَهٗ إِلٰى الدِّيْنِ، وَ لَمْ يَكُنْ لَهٗ أصْلٌ مِنَ الدِّيْنِ يَرْجِعُ إلَيْهِ، فَهُوَ ضَلَالَةً
‘‘(বিদআত হলো) এমনসব নতুন বিষয় যা কেউ তৈরী করে দ্বীনের প্রতি সম্বন্ধ করে, অথচ তার শরীয়াতে কোন ভিত্তি নেই- যার দিকে প্রত্যাবর্তন করা হবে। সেটি গুমরাহী।’’ [। ইবনে রজব (জামেউল উলূমি ওয়াল হিকাম) তাহক্বীক্ব-শু‘আয়েব আল আরনাউত্ব ও ইব্রাহীম বাজিস, মু‘আস্সাতুর রিসালাহ বাইরুত (৬ষ্ট সংষ্করণ) ২/১২৮] অর্থাৎ এমন ‘আক্বিদাহ ও আমলের আবিষ্কার করা, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই।
বিদআত দু‘প্রকার। এক. আক্বীদাগত বিদআত। দুই. আমলের বিদআত। আক্বীদাগত বিদআত ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- রাফেজী শিয়া, মু‘তাযিলা, আশ‘আরী ও মাতুরিদী ইত্যাদি মতবাদসমূহ। পরবর্তীতে এর সাথে যোগ দেয় ইলমে তাসাউফ এর নামে সূফী- সন্যাসীদের সৃষ্টি করা নানা ভ্রান্তিমূলক আক্বিদাহ।
পক্ষান্তরে আমলের মাঝে সৃষ্ট বিদআতসমূহও অতি মারাত্মক। এসব বিদআতের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো মিলাদ মাহফিল, কুলখানি, ইমাম মুসল্লি মিলে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত শেষে সম্মিলিত দু‘আ-মুনাজাত করা, শবেবরাত পালন করা, সে রাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া, দলে দলে কবর যিয়ারত করা, কুলখানি ও মৃত্যু দিবস পালন করা এবং বিভিন্ন প্রকার খতম পড়া ইত্যাদি। তবে মিলাদ মাহফিলে রাসূল ﷺ হাজির হন- এ বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে ক্বিয়াম করা আক্বীদাহগত বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। বিদআতের পরিণাম অতি ভয়াবহ। নিমেণ বিশেষ কয়েকটি পরিণাম উল্লেখ করা হলো :
১. আমল প্রত্যাখ্যাত হবে :
মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا (১০৩) اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا (১০৪) اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘বল, আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকদের সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সেই লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয়; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে। তারা তো সেই লোক, যারা তাদের রবের নিদর্শণাবলি এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের আমলসমূহ বাত্বিল হয়ে যায়। সুতরাং ক্বিয়ামত দিবসে আমি তাদের আমলের কোন ওজনই করব না (গুরুত্ব দেব না)।’’ [। সূরা আল-কাহাফ/১০৩-১০৫]
এ প্রসঙ্গে রাসূল ﷺ বলেন :
قوله عليه السلام مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা তাতে নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’’ [। বুখারী, ফাতহ ৫/২৬৯৭ মুসলিম হা/১৭১৮]
অপর বর্ণনায় এসেছে। রাসূল ﷺ এরশাদ ফরমান :
قوله عليه السلام : مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যাতে আমাদের কোন হুকুম নেই- তা প্রত্যাখ্যাত।’’ [। বুখারী ও মুসলিম, মুসলিম হা/১৭১৮]
২. রাসূল ﷺ এর উম্মাতের তালিকাভুক্ত না হওয়া :
রাসূল ﷺ বিদআতীকে তাঁর উম্মাত বহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে :
مَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
‘‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমার উম্মাতভূক্ত নয়।’’ [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হা/১৪০১]
উপরোক্ত দৃঢ়তাব্যঞ্জক বাণীটি রাসূল ﷺ কখন করেছিলেন? কখন এতবড় ধমক দিলেন যে, তাঁর সুন্নাত থেকে মুখ ফিরালে আর তাঁর উম্মাত বলে দাবী করা যাবে না? উল্লেখিত হাদীসখানা, যা আমরা দলীল হিসেবে পেশ করেছি তা সাহাবী আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসের শেষাংশ। মা আয়েশা (রা.) কে রাসূলের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতঃ যে তিন সাহাবী যথাক্রমে সারারাত জেগে জেগে সালাত আদায়, যুগভর সিয়াম পালন ও বিবাহ না করার সংকল্প করেছিলেন, তাদের এ সংকল্প রাসূল ﷺ এর সুন্নাতের বাইরে হওয়ার কারণে তাদের প্রতি তিনি এ কঠিন ধমক দিয়েছিলেন। ভেবে দেখুন! মিলাদ যার ভিত্তিই শরীয়াতে নেই, তা করলে কী পরিণাম হবে ?
৩. তাওবা ক্ববুল না হওয়া :
বিদআত না ছাড়া পর্যন্ত বিদআতীর তাওবা ক্ববুল হবে না। এ মর্মে সাহাবী আনাস (রা.) রাসূল ﷺ হতে বর্ণনা করেন । রাসূল ﷺ বলেন:
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ إنّ اللّٰهَ احْتَجَرَ التَّوْبَةَ عَلٰى كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদআতী হতে তওবা সরিয়ে নিয়েছেন। [সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬২০; জামেউল আহাদীস হা/৬৬১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৪৫৬; ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ হা/৩৯৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪২০২।]
৪. হাউজে কাউসার থেকে বঞ্চিত হওয়া :
রাসূল ﷺ কে মহান আল্লাহ যে বিশেষ নিয়ামত দ্বারা বিশেষত্ব দান করেছেন, তম্মধ্যে হাউজে কাউসার অন্যতম। রোজ কিয়ামতে তাঁর উম্মতরা সে হাউজ থেকে পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করবেন। কিন্তু বিদআতীরা এ নিয়ামত হতে বঞ্চিত হবে। এদের জন্য এর চেয়ে বড় আফসোস আর কী হতে পারে? হাদীসে রয়েছে :
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে; আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি (উম্মত হিসেবে) চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নাবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছ। [সহীহ বুখারী হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৫৮৮।]
৫. গোমরাহী ও জাহান্নাম অবধারিত :
রাসূল ﷺ এর সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে যারা বিদআতের প্রচলন ঘটায়, তারা যে ভ্রান্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহ এদের পরিণাম সম্পর্কে বলেনঃ
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
‘‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার নিকট সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সে মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে থাকে। আমি তাকে সে পথেই ফিরিয়ে দেব- যে দিকে সে ফিরেছে এবং আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব, আর তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল।’’ [। সূরা নিসা /১১৫]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন :
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ ،عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ ، تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
‘‘অনেক মুখমন্ডল সেদিন লাঞ্চিত হবে। অধিক আমলে পরিশ্রান্ত, ক্লিষ্ট ও ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।’’ [। সূরা গাশিয়া ১১৫]
কেন সেই পরিণতি? তা এজন্য যে তারা দুনিয়ায় ভ্রান্ত পথের আমল করত। আমল করে ক্লান্ত হয়ে পড়তো, কিমুত এ আমলই তাদেরকে জাহান্নামে ফেলে দেবে। এ সম্পর্কে প্রিয় নাবী ﷺ বলেন,
إِ يَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা। কেননা প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহই হচ্ছে বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে গোমরাহী। [মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৪; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২।]
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার বিদআত হতে বিরত থাকার তাওফীক দিন! আমীন!!
পক্ষান্তরে আমলের মাঝে সৃষ্ট বিদআতসমূহও অতি মারাত্মক। এসব বিদআতের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো মিলাদ মাহফিল, কুলখানি, ইমাম মুসল্লি মিলে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত শেষে সম্মিলিত দু‘আ-মুনাজাত করা, শবেবরাত পালন করা, সে রাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া, দলে দলে কবর যিয়ারত করা, কুলখানি ও মৃত্যু দিবস পালন করা এবং বিভিন্ন প্রকার খতম পড়া ইত্যাদি। তবে মিলাদ মাহফিলে রাসূল ﷺ হাজির হন- এ বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে ক্বিয়াম করা আক্বীদাহগত বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। বিদআতের পরিণাম অতি ভয়াবহ। নিমেণ বিশেষ কয়েকটি পরিণাম উল্লেখ করা হলো :
১. আমল প্রত্যাখ্যাত হবে :
মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا (১০৩) اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا (১০৪) اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَآئِه فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘বল, আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকদের সংবাদ দেব, যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সেই লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয়; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে। তারা তো সেই লোক, যারা তাদের রবের নিদর্শণাবলি এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের আমলসমূহ বাত্বিল হয়ে যায়। সুতরাং ক্বিয়ামত দিবসে আমি তাদের আমলের কোন ওজনই করব না (গুরুত্ব দেব না)।’’ [। সূরা আল-কাহাফ/১০৩-১০৫]
এ প্রসঙ্গে রাসূল ﷺ বলেন :
قوله عليه السلام مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা তাতে নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’’ [। বুখারী, ফাতহ ৫/২৬৯৭ মুসলিম হা/১৭১৮]
অপর বর্ণনায় এসেছে। রাসূল ﷺ এরশাদ ফরমান :
قوله عليه السلام : مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যাতে আমাদের কোন হুকুম নেই- তা প্রত্যাখ্যাত।’’ [। বুখারী ও মুসলিম, মুসলিম হা/১৭১৮]
২. রাসূল ﷺ এর উম্মাতের তালিকাভুক্ত না হওয়া :
রাসূল ﷺ বিদআতীকে তাঁর উম্মাত বহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে :
مَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
‘‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমার উম্মাতভূক্ত নয়।’’ [। বুখারী হা/৫০৬৩ মুসলিম হা/১৪০১]
উপরোক্ত দৃঢ়তাব্যঞ্জক বাণীটি রাসূল ﷺ কখন করেছিলেন? কখন এতবড় ধমক দিলেন যে, তাঁর সুন্নাত থেকে মুখ ফিরালে আর তাঁর উম্মাত বলে দাবী করা যাবে না? উল্লেখিত হাদীসখানা, যা আমরা দলীল হিসেবে পেশ করেছি তা সাহাবী আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসের শেষাংশ। মা আয়েশা (রা.) কে রাসূলের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতঃ যে তিন সাহাবী যথাক্রমে সারারাত জেগে জেগে সালাত আদায়, যুগভর সিয়াম পালন ও বিবাহ না করার সংকল্প করেছিলেন, তাদের এ সংকল্প রাসূল ﷺ এর সুন্নাতের বাইরে হওয়ার কারণে তাদের প্রতি তিনি এ কঠিন ধমক দিয়েছিলেন। ভেবে দেখুন! মিলাদ যার ভিত্তিই শরীয়াতে নেই, তা করলে কী পরিণাম হবে ?
৩. তাওবা ক্ববুল না হওয়া :
বিদআত না ছাড়া পর্যন্ত বিদআতীর তাওবা ক্ববুল হবে না। এ মর্মে সাহাবী আনাস (রা.) রাসূল ﷺ হতে বর্ণনা করেন । রাসূল ﷺ বলেন:
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ إنّ اللّٰهَ احْتَجَرَ التَّوْبَةَ عَلٰى كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদআতী হতে তওবা সরিয়ে নিয়েছেন। [সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬২০; জামেউল আহাদীস হা/৬৬১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৪৫৬; ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ হা/৩৯৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪২০২।]
৪. হাউজে কাউসার থেকে বঞ্চিত হওয়া :
রাসূল ﷺ কে মহান আল্লাহ যে বিশেষ নিয়ামত দ্বারা বিশেষত্ব দান করেছেন, তম্মধ্যে হাউজে কাউসার অন্যতম। রোজ কিয়ামতে তাঁর উম্মতরা সে হাউজ থেকে পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করবেন। কিন্তু বিদআতীরা এ নিয়ামত হতে বঞ্চিত হবে। এদের জন্য এর চেয়ে বড় আফসোস আর কী হতে পারে? হাদীসে রয়েছে :
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে; আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি (উম্মত হিসেবে) চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নাবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছ। [সহীহ বুখারী হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৫৮৮।]
৫. গোমরাহী ও জাহান্নাম অবধারিত :
রাসূল ﷺ এর সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে যারা বিদআতের প্রচলন ঘটায়, তারা যে ভ্রান্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহ এদের পরিণাম সম্পর্কে বলেনঃ
وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا
‘‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার নিকট সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সে মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে থাকে। আমি তাকে সে পথেই ফিরিয়ে দেব- যে দিকে সে ফিরেছে এবং আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব, আর তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল।’’ [। সূরা নিসা /১১৫]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন :
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ ،عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ ، تَصْلٰى نَارًا حَامِيَةً
‘‘অনেক মুখমন্ডল সেদিন লাঞ্চিত হবে। অধিক আমলে পরিশ্রান্ত, ক্লিষ্ট ও ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।’’ [। সূরা গাশিয়া ১১৫]
কেন সেই পরিণতি? তা এজন্য যে তারা দুনিয়ায় ভ্রান্ত পথের আমল করত। আমল করে ক্লান্ত হয়ে পড়তো, কিমুত এ আমলই তাদেরকে জাহান্নামে ফেলে দেবে। এ সম্পর্কে প্রিয় নাবী ﷺ বলেন,
إِ يَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা। কেননা প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহই হচ্ছে বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে গোমরাহী। [মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৪; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২।]
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার বিদআত হতে বিরত থাকার তাওফীক দিন! আমীন!!
‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইটি হাতে পড়লে অতি আগ্রহভরে পাঠ করলাম। লেখকের টাইটেল হলো শায়খুল হাদীস। আবার একটি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ। সংগত কারণেই মনোযোগ সহকারে তাঁর বইখানা পাঠ করতে হলো। লেখক বইটি মূল উর্দু ভাষায় রচনা করেন এবং নাম দেন ( القول المقبول في ميلاد الرسول ) পরবর্তীতে বইটি বাংলায় অনুবাদ করা হয় এবং এর সাথে ‘‘বারযাঞ্জি শরীফ’’ সংযুক্ত করে ছাপানো হয়।
বইটির মাননীয় লেখক মিলাদকে জায়েজ ও সাওয়াবের কাজ বলে প্রমাণ করতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি। তাঁর বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, যাতে সচেতন মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে শুভংকরের ফাঁকি ধরা পড়ে যায় এবং তাঁরা নিজ ঈমান ও আমল বাঁচাতে সক্ষম হন।
সম্মানিত পাঠক !
বইটির প্রথম প্রকাশক মোঃ কমর উদ্দিন নজিপুরী প্রকাশকের নিবেদন শিরোনামে বলেন:
‘‘অনেক বছর আগে সিলেট জেলার বিয়ানী বাজারে মিলাদ মাহফিল জায়েয না জায়েয নয় এ নিয়ে বাহাস অনুষ্ঠিত হয়। হুজরে ক্বিবলাহ সেদিন মিলাদ মাহফিলের বৈধতার উপর জনসমক্ষে তথ্য নির্ভর দীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন।’’ ঐ দ্বিতীয় সংস্কলন/৭
সম্মানিত পাঠক!
প্রকাশক তাঁর গুরু শায়খুল হাদীসকে হুজুরে ক্বিবলা বলে সম্বোধন করেছেন। এখন জিজ্ঞাসা, প্রকাশকের ক্বিবলা কয়টি? তাঁর হুজুর কত নম্বর ক্বিবলাহ? কোন প্রকার সালাতে তিনি তাঁর হুজুরকে ক্বিবলা করে সালাত আদায় করেন ? নাকি হুজুরের পায়েই সিজদা করে বসেন? নাউযুবিল্লাহ।
সকল মুসলিম জানেন আমাদের ক্বিবলাহ একটি, যা মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তাহলো কা‘বা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
‘‘অতঃপর তোমরা মুখমন্ডলকে মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও! তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের মুখমন্ডলকে সেদিকেই ফিরাও।’’ [। সূরা বাক্বারাহ/১৪৪]
মহান আল্লাহ ক্বাবাহকে মুসলিমদের ক্বিবলা স্থির করে দিয়েছেন। যেদিকে মুতাওয়াজ্জাহ না হলে সালাত শুদ্ধ হয় না (শরঈ ওজর ছাড়া)। কিন্তু প্রকাশকের কাছে জিজ্ঞাসা- তাঁর ক্বিবলাহ কে স্থির করে দিলেন? হুজুর কি নিজে নিজে ক্বিবলাহ সেজে বসলেন? নাকি প্রকাশকের মতো পাগল ভক্তরা কা‘বাহর বদলে হুজুরকে ক্বিবলাহ বানিয়ে নিলেন ? এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর প্রকাশকের কাছে আছে কি?
এবারে আসি মূল বই প্রসঙ্গে। বইটির শুরুতে মাননীয় লেখক মিলাদের সংজ্ঞা দিতে যেয়ে বলেন :
‘‘আমাদের পরিভাষায় মিলাদ ( ميلاد ) মাওলুদ ( مولود ) শরীফের অর্থ হচ্ছে হুজুরে পাক ﷺ এর জন্ম বৃত্তান্ত, তাঁর জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলী এবং শান ও মান বর্ণনা করা।’’ ঐ পৃষ্ঠা/৮
সম্মানিত পাঠক !
আমরা জানি যে, ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের শরয়ী সংজ্ঞা আছে। কেননা, ইবাদতের মূলনীতি হলো : তাওক্বিফী বা কুরআন ও হাদীসের দলিল নির্ভর। আমাদের জিজ্ঞাসা হলো, মিলাদ যদি ইবাদত হয়ে থাকে, তাহলে শায়খুল হাদীস কি এর কোন শরয়ী সংজ্ঞা পাননি? নাকি তাঁর কাছে আলাদা নিজস্ব কোন শরীয়াত আছে? যে জন্য তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের পরিভাষায়।’’
এভাবে প্রত্যেকে যদি নিজস্ব পরিভাষা ইসলামে অনুপ্রবেশ করাতে থাকেন, তাহলে কি ইসলামের মৌলিকত্ব বাকী থাকবে? যদি লেখকের এ কথাকে এভাবে বুঝা যায় যে, মিলাদ বলতে আমরা বুঝি। তাহলে সম্ভাবনা থেকে যায়- অন্যদের নিকট মিলাদের সংজ্ঞা ভিন্ন। সুতরাং বিষয়টি যে নতুন সৃষ্ট ও বিতর্কিত তা বুঝতে আর বাকী রইল না।
একই পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যরায় বলা হয় : ‘‘ উলামা মাশায়েখ যেভাবে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে উপকারী এবং কল্যাণকর মনে করে যিকির আযকার এবং ত্বরীকতের বিভিন্ন শুগুল বা কাজের জন্য বিশেষ বিশেষ রূপ এবং নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, ঠিক তেমনি হুজুরে পাক ﷺ এর জনমকালীন হাল অবস্থা, অলৌকিক ঘটনাবলি এবং তাঁর শান ও মান বর্ণনা করার জন্য ও পরবর্তী উলামা মাশায়েখ একটি বিশেষ স্বরূপ ও নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন’’
সম্মানিত পাঠক!
ইসলাম কুরআন ও হাদীসের নাম। এর বাইরে যা তা কখনো ইসলাম হতে পারে না। লক্ষ্য করুন শায়খুল হাদীস অর্থাৎ হাদীছের পন্ডিত আল্লামার ত্বরীকা। তিনি নিজে এতবড় খেতাবদারী হওয়ার পর উলামা মাশায়েখদের উদ্ভাবিত ত্বরীকার ধ্বজা ধরে চলেছেন। তাহলে তিনি আলিম হলেন কেন? না কি তাঁর নামের পূর্বে শায়খুল হাদীস লক্বব একটি সাইনবোর্ড মাত্র? তা না হলে তিনি কেমন করে মুহাম্মদ ﷺ এর শরীয়াত বাদ দিয়ে তথাকথিত ত্বরীক্বতের ধারণা দেবেন? আমাদের নাবী ﷺ আমাদের জন্য যে পথ ও পদ্ধতি রেখে গেছেন, তা কি পরকালে মুক্তি লাভের জন্য যথেষ্ট নয়? নাকি শায়খুল হাদীস বলতে চান, নাবী ﷺ দ্বীন অপরিপূর্ণ রেখে বিদায় গ্রহণ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। আর এর পূর্ণতা দানের ঠিকাদারী পেয়েছেন তথাকথিক ঐ উলামা মাশায়েখরা? আর নিজের স্বীকারোক্তি মতে সেসব উলামারা পরবর্তীতে মিলাদ উদ্ভাবন করেছেন। তাই পরবর্তীতে আবিষ্কৃত বিষয় কী করে দ্বীন হতে পারে? তবুও কি আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় হবে না ?
বইয়ের (৯-১০) পৃষ্ঠায় এক-চার নং শিরোনামে রাসূল ﷺ এর বংশের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের জিজ্ঞাসা, রাসূল ﷺ এর বংশ মর্যাদা ও শান শাওকত বর্ণনা করা আর মিলাদ কিবয়াম কি এক? উৎসবের নির্দিষ্ট দিনে কেবল রাসূলের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে হবে, বাকী দিনগুলোতে কী করা হবে ? রাসূলের প্রতি উম্মাতের হক্ব কি শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে?
সম্মানিত পাঠক !
অত্র বইয়ের পাঁচ নং শিরোনামে মিলাদের পক্ষে আবুল খাত্তাব বিন দেহইয়ার বর্ণনা উদ্ধৃত করেন। অথচ বর্ণনাকারী মনগড়া বর্ণনা করার কারণে মিসর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাই কি করে এ ধরনের ব্যক্তির উদ্ধৃতিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে? একজন শায়খুল হাদীস খেতাবধারী আলেম যদি রাবী (হাদীসের বর্ণনাকারী) সম্পর্কে জ্ঞান না রাখেন, তাহলে তাকে কিভাবে শায়খুল হাদীস বলা যেতে পারে?
সম্মানিত পাঠক !
‘‘কুরূনে সালাসার পর মিলাদ শরীফ’’ শিরোনামে লিখেন :
‘‘ইতিহাস এবং সীরাতের কিতাবাদীতে উল্লেখ রয়েছে যে. হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্ব প্রথম মাওসিল শহরের এক বুজুগ হযরত শায়েখ ওমর বিন মুহাম্মাদ মিলাদ শরীফের ব্যবস্থাপনার সূচনা করেন এবং তাঁরই অনুকরনে ইরবলের বাদশা ‘‘মালিক মুজাফ্ফার আবু সাঈদ’’ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন।’’ঐ পৃঃ ১২
সম্মানিত পাঠক!
লক্ষ্য করুন! শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না, তেমন মিথ্যাকে সত্যের লেবাস পরিয়ে সাজাতে চাইলে মিথ্যা যে মিথ্যাই থেকে যায়, তার প্রমাণ মাননীয় লেখকের উপরোক্ত উক্তি। তিনি নিজেই স্বীকার করলেন যে, মিলাদ মাহফিল ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্বপ্রথম সূচনা করা হয়। আর এটি করেন একজন বুযুর্গ হুজুর।
সম্মানিত পাঠক!
ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। এবার বলুন, যা রাসূল ﷺ এর যামানায় ছিল না, সাহাবায়ে কেরাম কেউ করেননি, এমনকি মহামতি চার ইমামের যুগেও ছিল না এবং তাদের কোন ইশারা ইঙ্গিতও নেই- সেটি কী করে দ্বীন হতে পারে? উপরন্তু একজন বুযুর্গ করলেই কি তা ইবাদাত হয়ে যাবে? এখানে প্রশ্ন জাগে মাননীয় লেখক শায়খুল হাদীস কি রাসূলের উম্মাত, না ঐ তথাকথিত বুযুর্গের উম্মাত? তিনি কি রাসূল ﷺ এর তরীকার অনুসারী, না সেই বুযুর্গের অনুসারী ? আর একজন মুসলিম কি রাসূল ﷺ কে বাদ দিয়ে যার তার অনুসারী হতে পারে? এ সকল প্রশ্নের জবাব কি জনাব শায়খুল হাদীসের কাছে আছে। নাকি মানুষের ভক্তি ভজনা পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ খেতাব লাগিয়ে ধাঁধাঁ সৃষ্টি করে দুনিয়া কামানোই এসব মিথ্যাচারিতার মূল লক্ষ?
দুনিয়াপূজারী ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহর হুঁশিয়ার বাণী কি শায়খুল হাসীস কুরআন ও হাদীসে পড়েননি? নাকি কুরআন হাদীসের ইলম ছাড়া স্বতন্ত্র কোন বিদ্যার সুবাদে তিনি শায়খুল হাদীস খেতাব নিজ নামে জুড়িয়েছেন? মাহান আল্লাহ তো পরিষ্কারভাবে এহেন ব্যক্তিদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখ করে এরশাদ ফরমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ (৭) اُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করছে এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বে-খবর। এমন লোকদের ঠিকানা আগুন (জাহান্নাম) সে সবের পরিবর্তে যা তারা অর্জন করেছে।’’ [। সূরা ইউনুস/৭-৮]
আল্লাহর ভয় থাকলে একজন আলেম এমন বানোয়াট কথার অনুসারী হতে পারেন না। লৌকিকতা ও মানুষের ভয়ে যদি মিথ্যার আশ্রয় নেন, তাহলে এমন ব্যক্তিকে কী বলা যেতে পারে? এহেন ব্যক্তিদের বেলায় তো নিমেণাক্ত কুরআনী নসিহতই যথেষ্ট। এরশাদ হচ্ছে :
وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ
‘‘আর তুমি মানুষকে ভয় করছ; অথচ আল্লাহই সর্বাধিক হক্বদার যে, তুমি তাঁকে ভয় করবে ?’’ [। সূরা আহযাব/৩৭] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘‘তোমরা তাদেরকে ভয় কর? আল্লাহ তো সর্বাধিক হকদার যে তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হও।’’ [। সূরা তাওবাহ/১৩]
অতঃপর মাননীয় লেখক বিভিন্ন কিতাবের নাম ও উলামাদের নাম এবং মিলাদ প্রসঙ্গে লিখিত তাঁদের বইয়ের নামের তালিকা পেশ করে সরলমনা মুসলিমদেরকে ধোঁকায় ফেলার চেষ্টার ত্রুটি করেননি। এসকল প্রলাপ নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়াটা সঙ্গত মনে করছি না। কেননা, কলম-কালি ও কাগজ আল্লাহর নিয়ামত, যা অযথা নষ্ট করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই মাননীয় লেখকের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসঙ্গের ইতি টানছি। তাঁর বইয়ের ১৯-২০ পৃষ্ঠায় বুখারী শরীফের একটি দলিল পেশ করেছেন আরাফার ময়দানে কুরআনের শেষ আয়াত
وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
নাযিল প্রসঙ্গে । শেষে এসে নিজ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন :
‘‘আরাফার ময়দানে উকুফে আরাফার তারিখে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল এবং তখন থেকে আজ অবদি এমনকি ক্বিয়ামত পর্যন্ত উকুফে আরাফার মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে এবং হতে থাকবে।’’-ঐ/২০
সম্মানিত পাঠক!
আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় লেখকের কাছে বিনীত জিজ্ঞাসা আরাফার ময়দানে উকুফ বা অবস্থান হজ্জের বিধানের অন্তর্ভুক্ত, নাকি দিবস পালনের অন্তর্ভুক্ত? রাসূল ﷺ আরাফায় আগে অবস্থান করেছিলেন, না আয়াতটি আগে নাযিল হয়েছিল? তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ‘উকুফে আরাফার’ তারিখে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল’’ কাজেই তা স্পষ্ট যে, আগে রাসূল ﷺ আরাফায় উকুফ করেন এবং পরে আয়াতটি নাযিল হয়। তাহলে আয়াতটির কারণে উকুফ হচ্ছে এটি মাননীয় লেখক কী করে বুঝলেন?
বইটির মাননীয় লেখক মিলাদকে জায়েজ ও সাওয়াবের কাজ বলে প্রমাণ করতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি। তাঁর বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, যাতে সচেতন মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে শুভংকরের ফাঁকি ধরা পড়ে যায় এবং তাঁরা নিজ ঈমান ও আমল বাঁচাতে সক্ষম হন।
সম্মানিত পাঠক !
বইটির প্রথম প্রকাশক মোঃ কমর উদ্দিন নজিপুরী প্রকাশকের নিবেদন শিরোনামে বলেন:
‘‘অনেক বছর আগে সিলেট জেলার বিয়ানী বাজারে মিলাদ মাহফিল জায়েয না জায়েয নয় এ নিয়ে বাহাস অনুষ্ঠিত হয়। হুজরে ক্বিবলাহ সেদিন মিলাদ মাহফিলের বৈধতার উপর জনসমক্ষে তথ্য নির্ভর দীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন।’’ ঐ দ্বিতীয় সংস্কলন/৭
সম্মানিত পাঠক!
প্রকাশক তাঁর গুরু শায়খুল হাদীসকে হুজুরে ক্বিবলা বলে সম্বোধন করেছেন। এখন জিজ্ঞাসা, প্রকাশকের ক্বিবলা কয়টি? তাঁর হুজুর কত নম্বর ক্বিবলাহ? কোন প্রকার সালাতে তিনি তাঁর হুজুরকে ক্বিবলা করে সালাত আদায় করেন ? নাকি হুজুরের পায়েই সিজদা করে বসেন? নাউযুবিল্লাহ।
সকল মুসলিম জানেন আমাদের ক্বিবলাহ একটি, যা মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তাহলো কা‘বা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
‘‘অতঃপর তোমরা মুখমন্ডলকে মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও! তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের মুখমন্ডলকে সেদিকেই ফিরাও।’’ [। সূরা বাক্বারাহ/১৪৪]
মহান আল্লাহ ক্বাবাহকে মুসলিমদের ক্বিবলা স্থির করে দিয়েছেন। যেদিকে মুতাওয়াজ্জাহ না হলে সালাত শুদ্ধ হয় না (শরঈ ওজর ছাড়া)। কিন্তু প্রকাশকের কাছে জিজ্ঞাসা- তাঁর ক্বিবলাহ কে স্থির করে দিলেন? হুজুর কি নিজে নিজে ক্বিবলাহ সেজে বসলেন? নাকি প্রকাশকের মতো পাগল ভক্তরা কা‘বাহর বদলে হুজুরকে ক্বিবলাহ বানিয়ে নিলেন ? এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর প্রকাশকের কাছে আছে কি?
এবারে আসি মূল বই প্রসঙ্গে। বইটির শুরুতে মাননীয় লেখক মিলাদের সংজ্ঞা দিতে যেয়ে বলেন :
‘‘আমাদের পরিভাষায় মিলাদ ( ميلاد ) মাওলুদ ( مولود ) শরীফের অর্থ হচ্ছে হুজুরে পাক ﷺ এর জন্ম বৃত্তান্ত, তাঁর জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলী এবং শান ও মান বর্ণনা করা।’’ ঐ পৃষ্ঠা/৮
সম্মানিত পাঠক !
আমরা জানি যে, ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের শরয়ী সংজ্ঞা আছে। কেননা, ইবাদতের মূলনীতি হলো : তাওক্বিফী বা কুরআন ও হাদীসের দলিল নির্ভর। আমাদের জিজ্ঞাসা হলো, মিলাদ যদি ইবাদত হয়ে থাকে, তাহলে শায়খুল হাদীস কি এর কোন শরয়ী সংজ্ঞা পাননি? নাকি তাঁর কাছে আলাদা নিজস্ব কোন শরীয়াত আছে? যে জন্য তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের পরিভাষায়।’’
এভাবে প্রত্যেকে যদি নিজস্ব পরিভাষা ইসলামে অনুপ্রবেশ করাতে থাকেন, তাহলে কি ইসলামের মৌলিকত্ব বাকী থাকবে? যদি লেখকের এ কথাকে এভাবে বুঝা যায় যে, মিলাদ বলতে আমরা বুঝি। তাহলে সম্ভাবনা থেকে যায়- অন্যদের নিকট মিলাদের সংজ্ঞা ভিন্ন। সুতরাং বিষয়টি যে নতুন সৃষ্ট ও বিতর্কিত তা বুঝতে আর বাকী রইল না।
একই পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যরায় বলা হয় : ‘‘ উলামা মাশায়েখ যেভাবে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে উপকারী এবং কল্যাণকর মনে করে যিকির আযকার এবং ত্বরীকতের বিভিন্ন শুগুল বা কাজের জন্য বিশেষ বিশেষ রূপ এবং নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, ঠিক তেমনি হুজুরে পাক ﷺ এর জনমকালীন হাল অবস্থা, অলৌকিক ঘটনাবলি এবং তাঁর শান ও মান বর্ণনা করার জন্য ও পরবর্তী উলামা মাশায়েখ একটি বিশেষ স্বরূপ ও নিয়ম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন’’
সম্মানিত পাঠক!
ইসলাম কুরআন ও হাদীসের নাম। এর বাইরে যা তা কখনো ইসলাম হতে পারে না। লক্ষ্য করুন শায়খুল হাদীস অর্থাৎ হাদীছের পন্ডিত আল্লামার ত্বরীকা। তিনি নিজে এতবড় খেতাবদারী হওয়ার পর উলামা মাশায়েখদের উদ্ভাবিত ত্বরীকার ধ্বজা ধরে চলেছেন। তাহলে তিনি আলিম হলেন কেন? না কি তাঁর নামের পূর্বে শায়খুল হাদীস লক্বব একটি সাইনবোর্ড মাত্র? তা না হলে তিনি কেমন করে মুহাম্মদ ﷺ এর শরীয়াত বাদ দিয়ে তথাকথিত ত্বরীক্বতের ধারণা দেবেন? আমাদের নাবী ﷺ আমাদের জন্য যে পথ ও পদ্ধতি রেখে গেছেন, তা কি পরকালে মুক্তি লাভের জন্য যথেষ্ট নয়? নাকি শায়খুল হাদীস বলতে চান, নাবী ﷺ দ্বীন অপরিপূর্ণ রেখে বিদায় গ্রহণ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। আর এর পূর্ণতা দানের ঠিকাদারী পেয়েছেন তথাকথিক ঐ উলামা মাশায়েখরা? আর নিজের স্বীকারোক্তি মতে সেসব উলামারা পরবর্তীতে মিলাদ উদ্ভাবন করেছেন। তাই পরবর্তীতে আবিষ্কৃত বিষয় কী করে দ্বীন হতে পারে? তবুও কি আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় হবে না ?
বইয়ের (৯-১০) পৃষ্ঠায় এক-চার নং শিরোনামে রাসূল ﷺ এর বংশের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের জিজ্ঞাসা, রাসূল ﷺ এর বংশ মর্যাদা ও শান শাওকত বর্ণনা করা আর মিলাদ কিবয়াম কি এক? উৎসবের নির্দিষ্ট দিনে কেবল রাসূলের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে হবে, বাকী দিনগুলোতে কী করা হবে ? রাসূলের প্রতি উম্মাতের হক্ব কি শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে?
সম্মানিত পাঠক !
অত্র বইয়ের পাঁচ নং শিরোনামে মিলাদের পক্ষে আবুল খাত্তাব বিন দেহইয়ার বর্ণনা উদ্ধৃত করেন। অথচ বর্ণনাকারী মনগড়া বর্ণনা করার কারণে মিসর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাই কি করে এ ধরনের ব্যক্তির উদ্ধৃতিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে? একজন শায়খুল হাদীস খেতাবধারী আলেম যদি রাবী (হাদীসের বর্ণনাকারী) সম্পর্কে জ্ঞান না রাখেন, তাহলে তাকে কিভাবে শায়খুল হাদীস বলা যেতে পারে?
সম্মানিত পাঠক !
‘‘কুরূনে সালাসার পর মিলাদ শরীফ’’ শিরোনামে লিখেন :
‘‘ইতিহাস এবং সীরাতের কিতাবাদীতে উল্লেখ রয়েছে যে. হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্ব প্রথম মাওসিল শহরের এক বুজুগ হযরত শায়েখ ওমর বিন মুহাম্মাদ মিলাদ শরীফের ব্যবস্থাপনার সূচনা করেন এবং তাঁরই অনুকরনে ইরবলের বাদশা ‘‘মালিক মুজাফ্ফার আবু সাঈদ’’ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন।’’ঐ পৃঃ ১২
সম্মানিত পাঠক!
লক্ষ্য করুন! শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না, তেমন মিথ্যাকে সত্যের লেবাস পরিয়ে সাজাতে চাইলে মিথ্যা যে মিথ্যাই থেকে যায়, তার প্রমাণ মাননীয় লেখকের উপরোক্ত উক্তি। তিনি নিজেই স্বীকার করলেন যে, মিলাদ মাহফিল ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্বপ্রথম সূচনা করা হয়। আর এটি করেন একজন বুযুর্গ হুজুর।
সম্মানিত পাঠক!
ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। এবার বলুন, যা রাসূল ﷺ এর যামানায় ছিল না, সাহাবায়ে কেরাম কেউ করেননি, এমনকি মহামতি চার ইমামের যুগেও ছিল না এবং তাদের কোন ইশারা ইঙ্গিতও নেই- সেটি কী করে দ্বীন হতে পারে? উপরন্তু একজন বুযুর্গ করলেই কি তা ইবাদাত হয়ে যাবে? এখানে প্রশ্ন জাগে মাননীয় লেখক শায়খুল হাদীস কি রাসূলের উম্মাত, না ঐ তথাকথিত বুযুর্গের উম্মাত? তিনি কি রাসূল ﷺ এর তরীকার অনুসারী, না সেই বুযুর্গের অনুসারী ? আর একজন মুসলিম কি রাসূল ﷺ কে বাদ দিয়ে যার তার অনুসারী হতে পারে? এ সকল প্রশ্নের জবাব কি জনাব শায়খুল হাদীসের কাছে আছে। নাকি মানুষের ভক্তি ভজনা পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ খেতাব লাগিয়ে ধাঁধাঁ সৃষ্টি করে দুনিয়া কামানোই এসব মিথ্যাচারিতার মূল লক্ষ?
দুনিয়াপূজারী ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহর হুঁশিয়ার বাণী কি শায়খুল হাসীস কুরআন ও হাদীসে পড়েননি? নাকি কুরআন হাদীসের ইলম ছাড়া স্বতন্ত্র কোন বিদ্যার সুবাদে তিনি শায়খুল হাদীস খেতাব নিজ নামে জুড়িয়েছেন? মাহান আল্লাহ তো পরিষ্কারভাবে এহেন ব্যক্তিদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখ করে এরশাদ ফরমান :
اِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَاَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ اٰيَاتِنَا غَافِلُوْنَ (৭) اُولٰٓئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করছে এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বে-খবর। এমন লোকদের ঠিকানা আগুন (জাহান্নাম) সে সবের পরিবর্তে যা তারা অর্জন করেছে।’’ [। সূরা ইউনুস/৭-৮]
আল্লাহর ভয় থাকলে একজন আলেম এমন বানোয়াট কথার অনুসারী হতে পারেন না। লৌকিকতা ও মানুষের ভয়ে যদি মিথ্যার আশ্রয় নেন, তাহলে এমন ব্যক্তিকে কী বলা যেতে পারে? এহেন ব্যক্তিদের বেলায় তো নিমেণাক্ত কুরআনী নসিহতই যথেষ্ট। এরশাদ হচ্ছে :
وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ
‘‘আর তুমি মানুষকে ভয় করছ; অথচ আল্লাহই সর্বাধিক হক্বদার যে, তুমি তাঁকে ভয় করবে ?’’ [। সূরা আহযাব/৩৭] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘‘তোমরা তাদেরকে ভয় কর? আল্লাহ তো সর্বাধিক হকদার যে তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হও।’’ [। সূরা তাওবাহ/১৩]
অতঃপর মাননীয় লেখক বিভিন্ন কিতাবের নাম ও উলামাদের নাম এবং মিলাদ প্রসঙ্গে লিখিত তাঁদের বইয়ের নামের তালিকা পেশ করে সরলমনা মুসলিমদেরকে ধোঁকায় ফেলার চেষ্টার ত্রুটি করেননি। এসকল প্রলাপ নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়াটা সঙ্গত মনে করছি না। কেননা, কলম-কালি ও কাগজ আল্লাহর নিয়ামত, যা অযথা নষ্ট করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই মাননীয় লেখকের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসঙ্গের ইতি টানছি। তাঁর বইয়ের ১৯-২০ পৃষ্ঠায় বুখারী শরীফের একটি দলিল পেশ করেছেন আরাফার ময়দানে কুরআনের শেষ আয়াত
وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
নাযিল প্রসঙ্গে । শেষে এসে নিজ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন :
‘‘আরাফার ময়দানে উকুফে আরাফার তারিখে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল এবং তখন থেকে আজ অবদি এমনকি ক্বিয়ামত পর্যন্ত উকুফে আরাফার মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে এবং হতে থাকবে।’’-ঐ/২০
সম্মানিত পাঠক!
আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় লেখকের কাছে বিনীত জিজ্ঞাসা আরাফার ময়দানে উকুফ বা অবস্থান হজ্জের বিধানের অন্তর্ভুক্ত, নাকি দিবস পালনের অন্তর্ভুক্ত? রাসূল ﷺ আরাফায় আগে অবস্থান করেছিলেন, না আয়াতটি আগে নাযিল হয়েছিল? তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ‘উকুফে আরাফার’ তারিখে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল’’ কাজেই তা স্পষ্ট যে, আগে রাসূল ﷺ আরাফায় উকুফ করেন এবং পরে আয়াতটি নাযিল হয়। তাহলে আয়াতটির কারণে উকুফ হচ্ছে এটি মাননীয় লেখক কী করে বুঝলেন?
‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ সংযুক্ত করে ছাপা হয়। যার ভাবার্থ সম্পর্কে লিখা হয় ‘‘মিলাদ শরীফে পাঠ উপযোগী কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কছিদা। সংকলনে মাওলানা কমরউদ্দীন নজিপুরী।’’
সম্মানিত পাঠক!!
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। যদিও প্রায় সব ভাষাতেই আঞ্চলিকতার সংমিশ্রণ আছে তবুও আমাদের জাতীয় ভাষা বাংলা হওয়ার কারণে আমাদের দেশের সকলেই এ ভাষা বুঝেন এবং এ ভাষায় কথা বলেন। আমাদের জনগণের কাছে অন্যসব ভাষা অর্জিত। যদি কেউ সে ভাষা শিক্ষা ও চর্চা করে থাকেন তাহলে বুঝেন। নতুবা ভিন্ন ভাষা বুঝা দুষ্কর। তথাকথিত ‘বারযাঞ্জি শরীফের যাবতীয় কছিদা আরবী, উর্দু ও ফারর্সী ভাষায় লিখা। বলুন! সাধারণ জনগণের শতকরা কত জন লোক উপরোক্ত তিনটি ভাষা বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারেন?
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বালাগাল উলাবি কামালিহি একটি কবিতার পংক্তি। সূরের লহরি মিলিয়ে ওয়াজ মাহফিলে পড়ার কারণে সাধারণ জনগণ এটিকে দরূদ বুঝতে বসেছেন এবং ভক্তি মিশ্রিত কন্ঠে তা বারংবার একাকি বা সমস্বরে আবৃত্তি করছেন। মিলাদ মাহফিলগুলোতে একইভাবে আরবী, উর্দূ ও ফারসী ভাষায় রচিত কবিতাসমূহ সূর মিলিয়ে পাঠ করা হয়। আর সরলমতি মুসলিম সমাজ সাওয়াবের আশায় তা আবৃত্তি করতে থাকেন। এসব কবিতার বহুলাংশে যে শিরকী বিষ মিশানো আছে, তা ক‘জন খবর রাখেন।!
আমরা আমাদের এ বইয়ের কলেবর বড় করতে চাই না। সে কারণে তথাকথিত বারযাঞ্জি শরীফের কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করব এবং সেগুলোকে কুরআন ও হাদীস হতে গৃহীত নির্ভূল আক্বীদার মানদন্ডে যাচাই করে দেখব ইনশাআল্লাহ। অতঃপর সম্মানিত পাঠক মহল এসব আরবী, উর্দু ও ফারসী কবিতার দ্বারা কী বুঝানো ও শিখানো হচ্ছে, তা সহজেই ধরতে পারবেন। দেশের সরলমতি মুসলিম সমাজকে সতর্ক করা এবং তাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা দেয়াই আমাদের এ ক্ষুদ্র্ প্রচেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য। মহান আল্লাহ সে লক্ষেই আমাদের শ্রম কবুল করুন! আমীন!!
সম্মানিত পাঠক!!
আমরা নিম্নে কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করছি এবং সেগুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব দিচ্ছি :
১- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৪ এর তৃতীয় লাইন নিমণরূপ :
عبدك المسكين يرجو فضلك الجم الغفير
অর্থ : ‘‘(হে নাবী) আপনার এ মিসকীন বান্দাহ আপনার অসংখ্য অগণিত অনুগ্রহ চায়।’’
এ কবিতাংশে রাসূল ﷺ এর শানে দুটি আক্বীদা সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে:
এক. নিজেকে নাবীর বান্দাহ বলে দাবী করা।
দুই. নাবীর কাছে অনুগ্রহ কামনা করা।
বাড়াবাড়ির পরিণতি তাই হয়ে থাকে। খ্রিস্টানরা মরিয়ামের পুত্র ঈসা নাবী সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছিল, যা অনেকেরই জানা আছে। তারা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর ইয়াহুদিরা আল্লাহর বান্দাহ উযায়ের এর শানে বাড়াবাড়ি করেছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهٗۤۚ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌ ؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلَهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ لَّهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
‘‘হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া (অন্য কিছু) বলো না। মারইয়ামের ছেলে ঈসা মাসীহ তো আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর কালিমা (বাণী), যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রেরণ করেছিলেন ও তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ (আদেশ)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনো এবং বলো না যে, (ইলাহ) ‘তিনজন!’, তোমরা (এটা বলা থেকে) নিবৃত্ত হও, তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। তাঁর কোন সন্তান হবে- তিনি এটা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই; আর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’’ [। সূরা নিসা/১৭১]
অপর আয়াতে এ রকম বাড়াবাড়ির অশুভ পরিণাম উল্লেখ করে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوْاۤ اَهْوَآءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوْا مِنْ قَبْلُ وَاَضَلُّوْا كَثِيْرًا وَّضَلُّوْا عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ
‘‘(হে নাবী!) বলো, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করো না; আর তোমরা এমন সম্প্রদায়ের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না, যারা ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/৭৭]
বর্তমানে মিলাদ পড়ুয়ারা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের পথ অনুসরণ করে চলেছেন। ইয়াহুদীরা উযায়ের (আঃ) এর শানে এবং খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ) এর শানে বাড়াবাড়ি করে তাঁদেরকে উলুহিয়্যাতের আসন দান করেছিল। আর বর্তমান যুগের সীমালঙ্ঘনকারীরা আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর শানে অনুরূপ বাড়াবাড়ি করছেন, যার বাস্তব দলিল উপরোক্ত কবিতা। কবি নিজেকে রাসূল ﷺ এর বান্দাহ দাবী করেছেন। অথচ মহানাবী ﷺ এরূপ বাড়াবাড়ি হতে উম্মাতকে সর্তক করে বলেন :
قوله عليه السلام : لَا تُطْرُوْنِيْ، كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهٗ، فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ، وَرَسُوْلُهٗ
‘‘মরিয়ামের পুত্র ঈসাকে নিয়ে খ্রিস্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না। আমি আল্লাহর বান্দাহ। অতএব, তোমরা বল আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।’’ [। বুখারী হা/৩৪৪৫]
সম্মানিত পাঠক!!
আমরা কি আল্লাহর বান্দাহ নাকি মুহাম্মাদ ﷺ এর বান্দাহ? আমরা কি আলল্লাহর ইবাদত করি নাকি তাঁর রাসূলের ইবাদত করি? আমরা কি আল্লাহকে সিজদাহ করি এবং সাথে সাথে তার রাসূলকেও সিজদাহ করি? (নাউযুবিল্লাহ), অথচ মহান আল্লাহ তো আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কেউ সিজদা/ইবাদত পাওয়ার হকদার নেই। এরশাদ হচ্ছে :
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
‘‘সিজদাহসমূহ আল্লাহর। অতএব, আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।’’ [। সূরা জ্বিন /১৮]
মুহাম্মাদ ﷺ স্বয়ং আল্লাহর একজন বান্দাহ। রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতে তাঁর কোন অংশ নেই। বিশেষত্ব এই যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। মহান আল্লাহ বলেন :
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
‘‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও রাসূলগণ বিগত হয়েছে।’’ [। সূরা আলে ইমরান/১৪৪]
মুসলিম মাত্রই আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসূলের উম্মাত। সে আল্লাহর ইবাদত করে। আর আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর প্রেরিত রাসূলের অনুসরণ করে। সুতরাং যে বা যারা নিজেকে রাসূলের বান্দাহ হিসেবে দাবি করবে, সে নির্দ্বিধায় সীমালঙ্ঘনকারী মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে- তাতে সন্দেহ নেই। এরূপ ব্যক্তিদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আবু বকর (রা.) কতৃর্ক প্রদত্ত ভাষনের নিন্মোক্ত বাণীটি অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেছিলেন :
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের ইবাদত করে, (সে যেন জেনে নেয় যে,) নিশ্চয় মুহাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তোমদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, (সে যেন জেনে নেয় যে,) নিশ্চয় আল্লাহ জীবিত; তিনি মৃত্যুবরণ করেন না।’’ [। বুখারী ২/৬৪০-৬৪১ গৃহীত ‘আল-মুবারকপুরী (আর-রাহীকুল মাখতুম) দারুল মুআয়্যিদ-রিয়াদ/৪৭০]
সম্মানিত পাঠক!!
উপরোক্ত কবিতার মধ্যে আক্বীদাগত দ্বিতীয় ভুলটি হলো- নাবী ﷺ এর কাছে অনুগ্রহ কামনা করা। অথচ অনুগ্রহ দান করা একমাত্র মহান আল্লাহর সিফাত। এতে তাঁর শরীক কেউ নেই। তাছাড়া অনুগ্রহ চাওয়া হচ্ছে দু‘আ। আর দু‘আ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে করা যায় না। কেননা, আল্লাহ তাঁর কাছে দু‘আ করতে আদেশ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ
‘‘তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো; আমি তোমাদের আহবানে সাড়া দিব।’’ [। সূরা আল-গাফের/৬০]
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তি নেই, যে মানুষের দু‘আ কবুল করতে পারে! মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকে- যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?’’ [। সূরা আল আহক্বাফ/৫]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নাবী ﷺ কি মানুষের দু‘আ কবূল করতে পারেন? মানুষের কল্যাণ অকল্যাণের ক্ষমতা রাখেন? মানুষের ফরিয়াদ শুনেন? উত্তর হলো, মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কেউ ফরিয়াদ শ্রবণকারী নেই।
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তার নাবীকে বলতে বলেন:
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ
‘‘বলো! আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা ব্যতীত আমি আমার নিজের আত্মার মঙ্গল-অমঙ্গলের কোন অধিকারী নই।’’ [। সূরা আল-আ‘রাফ/১৮৮]
মিলাদী শায়খুল হাদীসরা নাবীর কাছে অনুগ্রহ কামনা করছেন। তাঁদের এ দু‘আ যে শিরকী দু‘আ তাতে কি কোন সন্দেহ আছে? মহান আল্লাহ তো স্বয়ং তাঁর রাসূলকে বলতে বলেন :
قُلْ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا
‘‘(হে নাবী) বলো! আমি তোমাদের অপকার ও উপকার কোন কিছুরই মালিক নই।’’ [। সূরা আল জ্বিন/২০-২১]
২- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৪ এর পঞ্চম লাইন নিমণরূপ:
فأغثني و أجرني يا مجير من السعير
হে (নাবী ) সা‘য়ির বা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দানকারী! তুমি আমার ফরিয়াদ শ্রবণ কর এবং আমাকে (জাহান্নাম থেকে) পরিত্রাণ দাও:’’!
সম্মানিত পাঠক!
মিলাদী আল্লামাদের এ কোন ‘আক্বীদাহ? তারা নাবীকে ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও পরিত্রাণ দানকারী বলে সম্বোধন করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। বলুন, নাবী ﷺ কি জান্নাত-জাহান্নামের মালিক? অথচ নাবী ﷺ নিজেই তো আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করেছেন। তাহলে তিনি কী করে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দেবেন? কবরের আযাবের বিবরণ আসার পর হতে শেষকাল অবধী রাসূল ﷺ কবরের আযাব ও জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। দু‘আটি নিমণরূপ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের আযাব হতে এবং জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’’ [। মুসলিম হা/৫৮৮ (১৩১)]
নিজ কলিজার টুকরা কন্যা ফাতিমাকে আমল করতে আদেশ করেন এবং ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে তিনি তার কোন কাজে আসবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাহলে মিলাদীদের কোন গ্রান্টি আছে যে, নাবী ﷺ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন? মা ফাতিমার (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে রাসূল ﷺ এর বাণী :
يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ اشْتَرِيَا أَنْفُسَكُمَا مِنْ اللهِ لَا أَمْلِكُ لَكُمَا مِنْ اللهِ شَيْئًا سَلَانِي مِنْ مَالِي مَا شِئْتُمَ
‘‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা! আমার নিকট (মাল-সম্পদের) যা খুশী তুমি চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে আমি তোমার কোন কাজে আসব না।’’ [। মুসলিম হা/২০৬ (৩৫১)]
এবারে বিনীত হয়ে জিজ্ঞেস, কোন দলীলের ভিত্তিতে মিলাদ পড়ুয়ারা নাবীর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চান? এ তো প্রকাশ্য শিরক এবং এর পরিণাম জাহান্নাম। প্রিয় নাবী ﷺ বলেন:
مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ
‘‘যে ব্যক্তি মারা গেল এ অবস্থায় যে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমক্ষক করে ডাকে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ [। বুখারী, মুসলিম হা/৯২]
৩- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৫ এর উর্দু কছিদার পর্বের ২ নং লাইনে রাসূল ﷺকে খেতাব করে বলা হয়:
آّپ ھی مشکل کشا ھيں خلق کی حجات رواويں شافع روز جزاء ھيں جو کھو اس سے وراھيں
‘‘আপনিই মুশকিল দূরকারী, সৃষ্টির হাজত পুরাকারী। প্রতিদান দিবসে আপনি শাফা‘আতকারী, যা কিছু বল সবই তাঁর পশ্চাতে। অর্থাৎ সবার প্রথমে নাবী।’’
সম্মানিত পাঠক !
আল্লাহর যাবতীয় কাজ ও সিফাত যদি নাবীকে দিয়ে দেয়া হয় এবং আল্লাহর সিফাত সৃষ্টির আদি বা প্রথম যদি রাসূল ﷺ কে বলা হয়। তাহলে আল্লাহ কোথায় যাবেন? (নাউযুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ স্বয়ং বলেন:
اَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
‘‘আচ্ছা বল দেখি, কে অসহায়ের ডাকে সাড়া দেন, দুঃখ কষ্ট দূর করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থালাভিষিক্ত করেন? সেই আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ থাকতে পারে কি? তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো।’’ [। সূরা আল আন‘আম/৬২] অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
‘‘যদি আল্লাহ তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেন, তবে তিনি ব্যতীত তা দূর করার আর কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাকে কল্যাণ দ্বারা দান করতে চান, তাহলে এ ব্যাপারেও তিনি সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।’’ [। সূরা আল আন‘আম/১৭]
এ তো গেল মুশকিল কুশা’ সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার কুরআনী জবাব। হেদায়াতের জন্য ইহাই যথেষ্ট। আর হেদায়াতের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ। তাদের দ্বিতীয় প্রার্থনা ﷺ শাফা‘আত। এটি উত্তম দাবী, তবে কার কাছে? কে শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক? মহান আল্লাহ বলেন :
قُلْ لِلّٰهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
‘‘বলো! সকল প্রকার শাফ‘আত কেবল আল্লাহরই।’’ [। সূরা যুমার/৪৪]
নাবী ﷺ ক্বিয়ামতের দিন শাফাআত করবেন। [। মুসলিম হা/৩৩৮ (১১৯)] তবে তা আল্লাহর অনুমতি লাভের পর; আগে নয়। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সেদিন কেউ কথা বলতে পারবে না।
আল্লাহর ঘোষণা :
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهٗ إِلَّا بِإِذْنِهِ
‘‘কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া শাফা‘আত করতে পারে? ’’ [। সূরা বাক্বারা/২৫৫]
এখন আমরা জানলাম শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ। মহানাবী ﷺ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে শাফা‘আত করবেন। নাবীর শাফা‘আত পাওয়া বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। [। বুখারী হা/৬৫৭০ ফতহুলবারী,কায়রো ১১/৪২৬] তবে তা আল্লাহর কাছেই কামনা করতে হবে। আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে সেদিন নাবীর শাফা‘আত পেয়ে ধন্য হবেন। আল্লাহর কাছে না চেয়ে নাবীর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করা শিরক। কেননা, সেটি দু‘আ। আর আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দু‘আ করা প্রকাশ্য শিরক। আল্লাহ বলেন:
فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا
‘‘অতএব, তোমরা আল্লাহর সাথে আর কাউকে আহবান করো না।’’ [। সূরা জ্বিন/১৮]
মিলাদের উক্ত পংক্তির তৃতীয় ভ্রান্তি হলো : নাবী ﷺ-কে সকল হাজত/ প্রয়োজন পূরাকারী বলে দাবী করা। এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের খন্ডনে আমাদের পূর্বোক্ত বক্তব্যকেই আমরা যথেষ্ট মনে করছি। তাই এখানে আর সে কথার পুনরাবৃত্তি না করে এটুকু বলে শেষ করছি। যদি কেউ নাবীর শানে এ ধরনের ভুল বিশ্বাসসহ মারা যায় এবং মৃত্যুর আগে তাওবা না করে, তাহলে তার ঠিকানা জাহান্নাম। প্রিয় নাবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [। বুখারী, মুসলিম হা/৯২ (১৫০) ৯৩ (১৫১)] মহান আল্লাহ বলেন:
اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
‘‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেবেন; আর তার ঠিকানা জাহান্নাম।’’ [। সূরা আল মায়েদা/৭২]
৪- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৬ এর উর্দু কাছিদার ৫ম নং লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
جان کنی کی وقت انا چھرہ آنور دکھانا
کلمت طيب برهانا ا پنے دامن ميں چهبانا
‘‘(হে নাবী! জান ক্ববজের সময় এসে আপনার চেহেরা মুবারক আমাকে দেখাবেন। আমাকে কালিমা তায়্যিবা পড়াবেন এবং আপনার পার্শ্বদেশে আশ্রয় দেবেন।’’
সম্মানিত পাঠক!
উক্ত পংক্তির অর্থ যা বুঝাচ্ছে, তা অতি মারাত্মক। মিলাদী কবি মিলাদ মাহফিলে পাঠের জন্য যে কবিতা উর্দু ও ফারসী ভাষায় রচনা করেছেন, তার মাঝে আক্বীদাগত ত্রুটিসমূহ নিমণরূপ:
(এক) নাবীকে হাজির-নাযির জানা,
(দুই) নাবীকে গায়েব জানেন বলে দাবী করা,
(তিন) নাবীর আশ্রয় কামনা করা।
প্রথমতঃ রাসূল ﷺ কে হাজির জানা :
এটি একটি অলীক ও ভ্রান্ত বিশ্বাস, যা কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য বিরোধী। আর কুরআন ও হাদীসের বিরোধী কোন ভ্রান্ত বিশ্বাসকে কি কোন মুমিন গ্রহণ করতে পারে? মহান আল্লাহ তাঁর নাবীকে এরূপ ক্ষমতা দেননি। বরং নাবী ﷺ যে হাজির ও নাজির নন, একথার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা আল কুরআনে এসেছে। মূসা (আঃ) এ ঘটনার বিবরণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে যেয়ে মহান আল্লাহ তাঁর নাবী মুহাম্মাদ ﷺ কে বলেন:
وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ اِذْ قَضَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسَى الْاَمْرَ وَمَا كُنْتَ مِنَ الشَّاهِدِيْنَ
‘‘মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।’’ [। সূরা আল-কবাসাস/৪৪]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে বিশ্বাস শিখিয়েছেন, তাতে অতিরঞ্জন করার কোন সুযোগ নেই। নাবী ﷺ যে হাজির ও নাজির নন, এর প্রমাণে উপরোল্লিখত আয়াতের ন্যায় অনেক আয়াত আছে। হিদায়াতের জন্য কুরআনের একটি আয়াতই যথেষ্ট। এ সকল ভ্রান্ত বিশ্বাসীরা নাবীর কাছে ফরিয়াদ করেন। তাঁর কাছে নিজ মনের বাসনা পূরণের আবেদন করেন এবং নাবীকে ডাকতে থাকেন। এ সবই শিরকী কর্মকান্ড, যা মানুষকে চিরজাহান্নামী করে দেয়।
দ্বিতীয়তঃ নাবী ﷺ গায়েব জানেন-এ বিশ্বাস করা :
ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য বিদ্যার একচ্ছত্র মালিকানা মহান আল্লাহর। এতে কোন সৃষ্টির সামান্যতম কোন অংশ নেই। যা মহান আল্লাহ কেবল ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, নাবী ﷺ কেবল তাই জানতেন। এর বেশী তিনি কোন কিছু জানতেন না। এমনকি তিনি ﷺ কখনও এরূপ অবান্তর দাবীও করেননি। কিন্তু মিলাদী শায়খুল হাদীসরা আল্লাহর খাস সিফাতকে তাঁর মাখলুক মুহাম্মাদ ﷺ কে দিয়ে বসেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) কেননা, তারা নাবী ﷺ কে তাদের মৃত্যুর সময় হাজির হতে প্রার্থনা জানিয়েছেন। আর সঙ্গত কারণে একথা বিশ্বাস করা আবশ্যক হয়ে পড়ছে যে, কে কোন দিন কোথায় মরবে, তা নাবীর জানা আছে। (নাউযুবিল্লাহ)
উপরন্ত একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক মিলাদী মারা গেলে নাবীকে অবশ্যই একাধিক রূপ ধারন করে একই সময়ে সব জায়গায় হাজির হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়বে। আর তা কি একজন মাখলুকের পক্ষে সম্ভব? অথচ মহান আল্লাহ যে পাঁচ (৫) বিষয়ের ইলম কেবল তাঁরই হাতে রেখে দিয়েছেন, যার একটি হলো কার মৃত্যু কোথায় কোথায় হবে। এটা কী করে নাবী ﷺ জানবেন? এতো আল্লাহর সিফাত, যাতে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। মিলাদীরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে এক-ই স্বত্তা বলে বিশ্বাস করছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য যে, সে পাঁচটি গায়েব নিমণরূপ :
১) ক্বিয়ামত কবে হবে,
২) বৃষ্টি কখন কোথায় হবে,
৩) মায়ের জরায়ূতে কী আছে,
৪) আগামীকাল মানুষ কী কামাবে,
৫) এবং কোথায় কার মৃত্যু হবে। [। সূরা লুকমান এর সর্বশেষ আয়াত ও তার তাফসীর।]
লক্ষ্য করুন! ইলমে গায়েব সম্পর্কে আসমানী বাণী। মহান আল্লাহ বলেন :
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ
‘‘আসমান ও জমীনের অদৃশ্য সংবাদ আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর তার দিকে সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে।’’ [। সূরা হুদ/১৩২]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
‘‘গায়েবের চাবিকাঠি আল্লাহর নিকটে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা অবগত নয়।’’ [। সূরা আন‘আম/৫৯]
কুরআন বলছে ইলমে গায়েব এর খাযানা কেবল আল্লাহর হাতে; অন্য কারো তাতে কোন ভাগ নেই। তাহলে মিলাদী শায়খুল হাদীসেরা কোন দলিলের ভিত্তিতে এরূপ বিশ্বাস করেন? নাবী ﷺ গায়েব জানতেন বলে কোন দাবী করেছেন কি? না কি মিলাদ পড়ুয়ারা কোন তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে আজগুবী বিশ্বাস বানিয়ে নিয়েছেন। মূলত নাবী ﷺ আল্লাহর দূত। ওহীর বাণী জনগণের কাছে পৌঁছানোই তাঁর একমাত্র কাজ। তিনি কখনও গায়েব জানেন- এ দাবী করেননি। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল ﷺ কে বলতে বলেন :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ
‘‘বলো! আমি তোমাদেরকে একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার আছে। আমি গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানি না। আর আমি তোমাদেরকে এও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমিতো কেবল তাই অনুসরণ করি, যা আমার কাছে ওহী করা হয়।’’ [। সূরা আনআম/৫০]
তৃতীয়তঃ নাবীর আশ্রয় প্রার্থনা :
আশ্রয় প্রার্থনা কি দুআ নয়? আর দু‘আ কি ইবাদত নয়? নিশ্চয়ই; বরং ইবাদতের সার। প্রতি সালাতে আমরা সুরা ফাতিহা পাঠকালে আল্লাহর কাছে নিজ স্বীকারোক্তিতে বলি। (হে আল্লাহ) আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই কাছে সাহয্য চাই। এ দাবীর পর কী করে আবার নাবীর কাছে সাহায্য কামনা করতে পারি? অনুগ্রহ ও আশ্রয় প্রার্থনা সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা এ বইয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করেছি। তাই এখানে আর পূণরাবৃত্তি না করে শুধু এটুকু বলেই শেষ করছি, এভাবে শিরক করে কিভাবে মিলাদীরা কিয়ামতে নাবী ﷺ এর শাফাআত পাবেন? নাবীতো মুশরিকদের জন্য শাফাআত করবেন না। হে মিলাদী ভাইয়েরা! সময় থাকতে সতর্ক হোন।!!
৫- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ পৃষ্ঠা নং ৬৭ এর উর্দু কাসিদার (শিরোনামে কাছিদায়ে ইসলাম) প্রথম লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
نور حق سے نور أحمد سب سے بهتر سب سے أمجد
هو درود حق ان په بے حد صلوات الله عليك
হক্ব তা‘আলার (আল্লাহর) নূর হতে আহমদের (রাসূল ﷺ এর) নূর সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ। তার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর অসংখ্য দরূদ, হে নাবী তোমার উপর আল্লাহর শান্তি ধারা বর্ষিত হোক!
সম্মানিত পাঠক !
অনুধাবন করুণ, মিলাদীদের কী অবান্তর বিশ্বাস? তাদের একশ্রেণী বলেন নাবী ﷺ আল্লাহর নূর হতে তৈরি, অর্থাৎ তিনি আল্লাহর নূরে একটি অংশ। কিন্তু একি তায়াজ্জুব, কবি মিলাদ মহফিলে পড়ার জন্য উপরোক্ত যে কবিতা রচনা করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, নাবীর নূর আল্লাহর নূরের চেয়ে বেশী উত্তম। তাদের কথামতে নাবী ﷺ আল্লাহর নূরের অংশ হলে কি করে অংশ বা শাখামূল নূরের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারে? না কি তারা বলতে চান, নাবীই আসল নূর আর আল্লাহ তার অংশ বা শাখা? (নাউযুবিল্লাহ) দেখা যায়, কবিতার এ পংক্তিতে নাবীর নূরকে আল্লাহর চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। আবার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে নাবীর জন্য শান্তিধারা কামনা করা হয়েছে। তাদের কথা কি স্ববিরোধী নয়? আর সর্বোত্তমের জন্য কি উত্তমের কাছে প্রার্থনা করা যায়? তাদের এ ধরনের অবান্তর আক্বীদাহ ও বিশ্বাসের জন্য বড়ই পরিতাপ।!
আসুন আমরা সংক্ষেপে হলেও বিষয়টি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে পরীক্ষা করে দেখি। আমাদের সমাজের কিছু লোকের ধারণা যে, মুহাম্মাদ ﷺ নূরের তৈরি, তিনি মানুষ নন। তাদের কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে : তিনি আল্লাহর জাতি নূরের অংশ বিশেষ। তারা আরও সহজ করে বলে থাকেন, আল্লাহর নূরে মুহাম্মাদ তৈরি, আর মুহাম্মাদের নূরে সারা জাহান তৈরি। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য কি?
মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ
‘‘বলুন আমি রাসূলের মাঝে নতুন নই।’’ [। সূরা আহকাফ/৯] বরং তার পূর্বে আরও অনেক নাবী ও রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
‘‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া অন্য কিছু নন। তার পূর্বে আরও অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।’’ [। সূরা আল এমরান/১৪৪]
এক্ষণে প্রশ্ন হলো সমস্ত নাবী ও রাসূল কিসের তৈরি ছিলেন? তারা সকলেই মানুষ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনের সাক্ষ্য হলো ঃ
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه
‘‘তাদেরকে তাদের নাবী ও রাসূলগন বললেন, আমরা তোমাদের মতই মানুষ; কিন্তু আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য হতে যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করে থাকেন।’’ [। সূরা ইব্রাহীম/১১]
আর মুহাম্মাদ ﷺ কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণকারী একজন মানুষই ছিলেন। আল্লাহ বলেন :
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِِّنْ أَنْفُسِكُمْ
‘‘নিশ্চয়ই তোমদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসূল আগমন করেছেন।&’’ [। সূরা তাওবা /১২৮]
কুরাইশের কাফেররা মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে অলৌকিক কিছু দাবী করলে তাদের অবান্তর দাবীর জবাব শিখিয়ে দিয়ে আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلَّا بَشَرًا رَسُولًا
‘‘বল! আমার রব অতীব পবিত্র ও মহান আমি কেবলমাত্র একজন মানুষ ও রাসূল।’’ [। সূরা বানী ইসরাঈল/৯৩]
নাবী ও রাসূল যে মানুষ ছিলেন, তার দৃঢ় প্রমানস্বরূপ মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ لَّوْ كَانَ فِي الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
‘‘বলো যদি ফেরাশতাগণ পৃথিবীতে নিরাপদে বিচরণ করতেন তাহলে আমি তাদের নিকট আকাশ হতে কোন ফেরেশতাকেই রাসূলরূপে প্রেরণ করতাম।’’ [। সূরা বাণী ইসরাইল/৯৪-৯৫]
মানুষের সর্ব প্রকারের বৈশিষ্ট ও চাহিদা সকল নাবী ও রাসূলদেরই ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যে সকল নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সকলেই তো আহার করতেন এবং হাট-বাজারে যাতায়াত করতেন।’’ [। সূরা ফুরক্বান/২০]
উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, প্রিয় নাবী ﷺ অন্যান্য নাবী ও রাসূলের ন্যায় একজন মানুষ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে তার যবান নিঃসৃত বানী সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। সালাতে ভুল হওয়া বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি এরশাদ ফরমান :
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ، فَإِذَا نَسِيَت فَذَكَرُوْنِيْ
‘‘নিশ্চয় আমি কেবল তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। অতএব, যখন আমি ভুলে যাই তখন তোমরা আমাকে স্বরণ করে দিও।’’ [। মুসলিম হা/৫৭২ (৩৯)]
রাসূল ﷺ মানুষ ছিলেন এ প্রসঙ্গে আয়িশা (রা) বলেন :
مَا كَانَ إِلَّا بَشَرًا مِّنَ الْبَشَرِ يَغْسِلُ ثَوْبَهٗ وَ يَحْلِبُ شَاتَهٗ وَ يَخْدِمُ نَفْسَهٗ
‘‘মুহাম্মাদ ﷺ মানুষের সিলসিলার একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নন। তিনি নিজের কাপড় নিজেই ধৌত করতেন, ছাগলের দুধ দোহন করতেন এবং নিজের খিদমত নিজেই করতেন।’’ [। শামায়েলে তিরমিযি, আহমাদ হা/২৫৬, বুখারী আদবুল মুফরাদ হা/ ৫৪৫১, সহীহ ইবনে হিববান হা/২১৩৬ সিলসিলাতুল আহাদীসুস সহীহা লিল আলবানী/৬৭১]
তবে তিনি বিশেষ করে মুমিনদের জন্য আল্লাহর খাছ অনুগ্রহ হিসেবে দুনিয়ার নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করলেন। যিনি তাদের নিকট আল্লাহর কিতাব পাঠ করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও জ্ঞানের কথা শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত ছিল।’’ [। সূরা আলে ইমরান/১৬৪]
উপরন্তু তিনি জগতবাসীর জন্য আল্লাহর রহমত ছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَاۤ أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِِّلْعَالَمِينَ
‘‘আর আমি আপনাদের সমগ্র জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’ [। সূরা আল আম্বিয়া/১০৭]
অতএব, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশের নূন্যতম অধিকার আর কারো থাকলো না। এর পরও কেউ মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর জাতি নূরের তৈরি ইত্যাদি অবান্তর কথা বলে বা বিশ্বাস করে, তাহলে সে যেন কুরআনকে মিথ্যায়ন করল এবং আল্লহর শরীক বা অংশীদার আছে এই শিরকী আকীদাহ পোষণ করল। (নাউযুবিল্লাহ)। হ্যাঁ! তর্কের খাতিরে কেউ বলতে পারেন যে, মহান আল্লাহ তো এরশাদ করেছেন :
قَدْ جَآءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وََّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ
‘‘আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট নূর/আলো সুস্পষ্ট কিতাব সমাগত হয়েছে।’’ [। সূরা আল মায়েদা/১৫]
আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা কী উদ্দেশ্য করা হয়েছে, তা বুঝা দরকার। এখানে নূর দ্বারা ইসলাম উদ্দেশ্য। [। তাফসীর আল-মুনীর ‘দারুল ফিকর’ বাইরুত৬/১৩৩]
কেউ কেউ নূর দ্বারা মুহাম্মাদ ﷺ কেও উদ্দেশ্যে করেছেন। তবে পরবর্তী আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানী হিদায়াত উদ্দেশ্য। এরশাদ হচ্ছে :
يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِه وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
‘‘আল্লাহ তদ্বারা ঐ লোকদেরকে হিদায়াত দান করেন, যারা শান্তির পথে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর তাদেরকে তিনি স্বীয় অনুমতিক্রমে কুফুরের অন্ধকার হতে ইসলামের আলোর দিকে বের করে আনেন এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/১৬]
তাছাড়া এ কথা সহজেই বুঝা যায় যে, এখানে নূর দ্বারা কুরআনই উদ্দেশ্য। [। ইবনে কাসীর ‘‘তাফসীরুল কুরআনিল আজীম’’ দারু-মাকতাবতিল হিলাল বাইরুত ২/২৬৮]
কেননা, তৎপরবর্তী আয়াতে নূর ও কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করার জন্য মহান আল্লাহ একবচনের সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। যদি এটা ভিন্ন দুটি বিষয় বুঝাত তাহলে দ্বিবচনের সর্বনাম ব্যবহার সঙ্গত হত। এছাড়া কুরআনে কারীমে নূর দ্বারা কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে, যার দলিল আমাদের কাছে স্পষ্ট বিদ্যামান। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَا وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
‘‘অতএব তোমরা আল্লাহ, তার রাসূল এবং ঐ নূরের প্রতি ঈমান আন, যা আমি নাযিল করেছি। আর তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।’’ [। সূরা আত তাগাবুন/৮]
তাছাড়া যদি নূর দ্বারা মুহাম্মাদ ﷺ কে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তদ্বারা তিনি যে আল্লাহর জাতি নূরের তৈরি এ রকম শিরকী বিশ্বাস প্রমাণিত হয় না। যেমন আল্লাহর বাণী, আপনাকে আমি সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি’’ আয়াত দ্বারা নাবীর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণ বুঝায়। তেমনি নূর দ্বারা কুফুরী ও যুলমাত দূরকারী আলোকবর্তিকা হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তা সহজেই বুঝা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
‘‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, সেটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য।’’ [। সূরা সফ/৯]
নাবী ﷺ-কে মহান আল্লাহ কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা মন্ডিত করে প্রেরণ করেছেন সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا ‐ وَدَاعِيًا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا
‘‘হে নাবী! আমি অবশ্যই তোমাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর পথে তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপরূপে প্রেরণ করেছি।’’ [। সূরা আল আহযাব/৪৫-৪৬]
অতএব এটা স্পষ্ট যে. তিনি হিদায়েতের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। ‘আল্লাহর নুরে মুহাম্মাদ পয়দা ও মুহাম্মাদের নূরে সারা জাহান পয়দা’ এটা হিন্দুদের বহু ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসের অনুরূপ। মহান আল্লাহ এসব হতে পবিত্র। তিনি সকল প্রকারের অংশিদারিত্বের দূরতম সম্ভাবনাকেও স্পষ্ট ভাষায় নাকচ করে দিয়ে এরশাদ ফরমান :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
‘‘(হে মুহাম্মদ) তুমি বলো, তিনিই আল্লাহ, তিনি এক ও একক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি, তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ-ই নেই।’’ [। সূরা ইসলাস]
উল্লেখ্য যে, নাবী ﷺ নূরের তৈরি- এ অলীক বিশ্বাসের দাবীদারগণ তাদের ভিত্তিহীন মতের সমর্থনে আরেকটি দলীল পেশ করে থাকেন। আর তা হচ্ছে :
أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرٌ نَبِيِّكَ يَا جَابِرٍ
‘‘হে জাবের! সর্ব প্রথম আল্লাহ তোমার নাবীর নূর তৈরি করেছেন।’’ [। কাশফুল খাফা লিন ‘আজলুনী (বানোয়াট ও লোক মুখে প্রচারিত ভিত্তহীন হাদীস সংকলন)]
এটি বানোয়াট ও বাত্বিল হাদীস। বরং এটা নাবীর নামে প্রচলিত মিথ্যা কথা। আর এরূপ মনগড়া হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া বড়ই গর্হিত কাজ। যার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
প্রিয় নাবী ﷺ বলেন:
مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
‘‘যে ব্যাক্তি আমার নামে জেনে শুনে মিথ্যা বলবে, সে যেন তার ঠিকানা স্থির করে নেয় জাহান্নাম।’’ [। বুখারী (আরবী) ফতহুলবারী-১/৫৭২ হা/৩৪৬১]
আর এটা কত স্পষ্ট কথা যে, মহানাবী ﷺ পিতা আব্দুল্লাহর ঔরসে ও মাতা আমিনার কোলে জন্মলাভ করেন। [। আর রাহিকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মুআইয়্যিদ জিদ্দা/৫৪] অতঃপর ২৫ বছর বয়সে খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন খাদীজার বয়স ছিল চল্লিশ বছর।
তার গর্ভে পর্যায়ক্রমে ছেলে আল কাবসেম, কন্যা, যয়নাব, রুকাইয়্যা, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা জন্ম লাভ করেন। অতঃপর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্ম নেন। তাঁকে তাইয়্যাব ও তাহের নামে ডাকা হতো। [। প্রাগুক্ত /৫৪] আর তৃতীয় পুত্র ইব্রাহীম মারিয়া ক্বিবতিয়ার কোলে জন্ম নেন। তিন পুত্রই বাল্যকালে মারা যান। [। মুখতাসার আল-ফিকহুল ইসলামী’’ বায়তুল আফকার আদ দাউলিয়া-রিয়াদ/৮২] এ সকল প্রকাশ্য দলীলের পর কী করে মুহাম্মাদ ﷺ কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়। আল্লাহ আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় ঘটিয়ে দিন। আমীন!
৬- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৮ এর উর্দু কাছিদার ৭ম লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
خدا عاشق تمهارا اور محبوب تم اسكى
هى ايسا مرتبه كس كا سناؤ يا رسول الله
‘‘আল্লাহ তোমার আশিক, আর তুমি তার প্রিয়। এমন মর্যদার অধিকারী আছে কি কেউ শোনও হে আল্লাহর রাসূল!’’
সম্মানিত পাঠক!!
উপরোক্ত পংক্তিতে যে বিশ্বাসের কথা উল্লেখিত হয়েছে, তা নিমণরূপ:
(১) মহান আল্লাহকে খোদা বলা হয়েছে ,
(২) মহান আল্লাহকে রাসূল ﷺ এর ‘আশিকব বলা হয়েছে,
(৩) রাসূল ﷺ হাজির এ বিশ্বাস পোষণ করা হয়েছে।
প্রথমত : খোদ ফারসী শব্দ। এটি আল্লাহর কোন সিফাতী নাম নয়। যদিও অর্থগত দিক থেকে আল্লাহর একটি সিফাতকে বুঝায়। আল্লাহর নাম ও সিফাতসমূহ প্রসঙ্গে একজন মুমিনের আক্বীদাহ হলো : আল্লাহর নাম ও সিফাত তাওক্বীফি, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। যে নাম আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য এবং তাঁর রাসূল ﷺ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেছেন, তা হুবাহুব বিশ্বাস করা। এতে কোনরূপ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন না করা। কুরআন ও হাদীসে যে নাম নেই, সে নামে আল্লাহকে না ডাকা। কেননা, আল্লাহর নামের বেলায় নিজ থেকে বাড়াবাড়ি করা জায়েজ নয়।
দ্বিতীয়ত : ‘আশিক্ব অর্থ প্রেমে পাগল। আর মহান আল্লাহ এহেন পাগলামীর দোষ হতে পবিত্র ও সু-মহান। আল ইশক শব্দের কর্তৃবাচ্য বিশেষ্য হচ্ছে ‘আশিক। এটি আরবী শব্দ হলেও কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা নয়। মূলত এটি তথাকথিত সূফীবাদীদের ব্যবহৃত পরিভাষা। ইশকের সর্বোচ্চ মঞ্জিল হলো ফানা। অর্থাৎ মা‘শুকের জন্য নিজে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। আর এটি মহান আল্লাহর শানে কখনও শোভনীয় নয়।
পক্ষান্তরে কুরআন ও হাদীসে ভালোবাসা বা পছন্দ বুঝাতে ( الحب ) হুব শব্দটি এসেছে, যা মুহাববাত বা ভালোবাসা অর্থে আসে। আর মুহাববাত কোন মাতলামীর বস্তু নয়; বরং এটি সর্বজন স্বীকৃত শিষ্টাচারপূর্ণ আদর্শিক শব্দ। মুহাববাতের সর্বোচ্চ মঞ্জিল হলো ইহসান। কাজেই মহান আল্লাহর শানে দোষযুক্ত অপূর্ণ কোন গুণজাতীয় পরিভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
তৃতীয়ত : রাসূল ﷺ কে হাজির জানা। এটিও একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস। এ প্রসঙ্গে আমরা পূর্বোক্ত নিবন্ধে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। সঙ্গত করণে আর সে বিষয়ের পুনরাবৃত্তি সমীচীন মনে করছি না।
৭- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৮ এর উর্দু কাসিদার ৯ম লাইনে রাসূলকে ﷺ খেতাব করে বলা হয়:
يا مصطفى و امجتبى إرحم على عصياننا
‘‘হে মুস্তফা ও মুজতাবা! পাপের উপর আমাদের প্রতি রহম করো।’’
মুস্তফা ও মুজতাবা, দুটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিফাত। যার অর্থ প্রায় কাছাকাছি। অর্থাৎ নির্বাচিত বান্দাহ। মিলাদী কবি রাসূল ﷺ কে আহবান করেছেন এবং তাঁর কাছে গোনাহের ক্ষমা চেয়েছেন। এক্ষণে গোনাহের ক্ষমাকারী কি আল্লাহ না তাঁর রাসূল ﷺ? এতো গায়রুল্লাহর কাছে হাত পাতা। আর তা শিরক। এ ব্যাপারে আমরা ১নং জবাবে যথেষ্ট দলিল পেশ করেছি।
বারযাঞ্জি শরীফের বেশীরভাগ কাছিদা/কবিতা আক্বীদাগত ত্রুটিতে ভরা। এসব কাসিদায় নাবীকে উলুহিয়্যাতের স্থান দেয়া হয়েছে। কোথাও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা হয়েছে। কোথাও জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করা হয়েছে। কোথাও আবার মৃত্যুর সময় এসে দেখা দিতে এবং কালিমা পাঠ করাতে আরজ পেশ করা হয়েছে। মোটকথা এভাবে আল্লাহর এসব হতে পূতঃপবিত্র। তিনি শিরক ও মুশরিককে কোন অবস্থাতেই আশ্রয় দেবেন না। হাদীস কুদসীতে আছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىَ غَيْرِىْ تَرَكْتُهٗ وَشِرْكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সকল অংশীদার থেকে নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ, আমার কোনও অংশীদারের প্রয়োজন নেই। যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে, যার মধ্যে সে আমার সাথে অন্যকে অংশীদার করে, আমি তাকে এবং তার শিরককে প্রত্যাখ্যান করি। [। মুসলিম হা/২৯৮৫]
আমরা অতি সংক্ষেপে তথাকথিত ‘বারযাঞ্জি শরীফ এর মূল বক্তব্য পাঠকদের খেদমতে পেশ করলাম এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা বিশ্বাসের প্রামাণ্য জবাব দিলাম। মানতে চাইলে এসব স্পষ্ট দলিলসমূহ যথেষ্ট। যে বা যারা নিজেদেরকে আলিম উলামা বলে দাবী করেন, হক প্রকাশের পর বাতিলতার আশ্রয় নেয়া তাদের পক্ষে বড়ই গর্হিত কাজ বলে আমরা মনে করি। হক গ্রহণ না করলে তো গোমরাহী আবশ্যক হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন :
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
‘‘অতঃপর হক্বের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী রইল।’’ [। সূরা ইউনুস /৩২]
সম্মানিত পাঠক!!
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। যদিও প্রায় সব ভাষাতেই আঞ্চলিকতার সংমিশ্রণ আছে তবুও আমাদের জাতীয় ভাষা বাংলা হওয়ার কারণে আমাদের দেশের সকলেই এ ভাষা বুঝেন এবং এ ভাষায় কথা বলেন। আমাদের জনগণের কাছে অন্যসব ভাষা অর্জিত। যদি কেউ সে ভাষা শিক্ষা ও চর্চা করে থাকেন তাহলে বুঝেন। নতুবা ভিন্ন ভাষা বুঝা দুষ্কর। তথাকথিত ‘বারযাঞ্জি শরীফের যাবতীয় কছিদা আরবী, উর্দু ও ফারর্সী ভাষায় লিখা। বলুন! সাধারণ জনগণের শতকরা কত জন লোক উপরোক্ত তিনটি ভাষা বুঝতে, লিখতে ও পড়তে পারেন?
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বালাগাল উলাবি কামালিহি একটি কবিতার পংক্তি। সূরের লহরি মিলিয়ে ওয়াজ মাহফিলে পড়ার কারণে সাধারণ জনগণ এটিকে দরূদ বুঝতে বসেছেন এবং ভক্তি মিশ্রিত কন্ঠে তা বারংবার একাকি বা সমস্বরে আবৃত্তি করছেন। মিলাদ মাহফিলগুলোতে একইভাবে আরবী, উর্দূ ও ফারসী ভাষায় রচিত কবিতাসমূহ সূর মিলিয়ে পাঠ করা হয়। আর সরলমতি মুসলিম সমাজ সাওয়াবের আশায় তা আবৃত্তি করতে থাকেন। এসব কবিতার বহুলাংশে যে শিরকী বিষ মিশানো আছে, তা ক‘জন খবর রাখেন।!
আমরা আমাদের এ বইয়ের কলেবর বড় করতে চাই না। সে কারণে তথাকথিত বারযাঞ্জি শরীফের কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করব এবং সেগুলোকে কুরআন ও হাদীস হতে গৃহীত নির্ভূল আক্বীদার মানদন্ডে যাচাই করে দেখব ইনশাআল্লাহ। অতঃপর সম্মানিত পাঠক মহল এসব আরবী, উর্দু ও ফারসী কবিতার দ্বারা কী বুঝানো ও শিখানো হচ্ছে, তা সহজেই ধরতে পারবেন। দেশের সরলমতি মুসলিম সমাজকে সতর্ক করা এবং তাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা দেয়াই আমাদের এ ক্ষুদ্র্ প্রচেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য। মহান আল্লাহ সে লক্ষেই আমাদের শ্রম কবুল করুন! আমীন!!
সম্মানিত পাঠক!!
আমরা নিম্নে কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করছি এবং সেগুলোর সংক্ষিপ্ত জবাব দিচ্ছি :
১- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৪ এর তৃতীয় লাইন নিমণরূপ :
عبدك المسكين يرجو فضلك الجم الغفير
অর্থ : ‘‘(হে নাবী) আপনার এ মিসকীন বান্দাহ আপনার অসংখ্য অগণিত অনুগ্রহ চায়।’’
এ কবিতাংশে রাসূল ﷺ এর শানে দুটি আক্বীদা সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে:
এক. নিজেকে নাবীর বান্দাহ বলে দাবী করা।
দুই. নাবীর কাছে অনুগ্রহ কামনা করা।
বাড়াবাড়ির পরিণতি তাই হয়ে থাকে। খ্রিস্টানরা মরিয়ামের পুত্র ঈসা নাবী সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছিল, যা অনেকেরই জানা আছে। তারা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর ইয়াহুদিরা আল্লাহর বান্দাহ উযায়ের এর শানে বাড়াবাড়ি করেছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّؕ اِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَلِمَتُهٗۤۚ اَلْقَاهَاۤ اِلٰى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِّنْهُؗ فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِه وَلَا تَقُوْلُوْا ثَلَاثَةٌ ؕ اِنْتَهُوْا خَيْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللهُ اِلَهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحَانَهٗۤ اَنْ يَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ لَّهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ وَكَفٰى بِاللهِ وَكِيْلًا
‘‘হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া (অন্য কিছু) বলো না। মারইয়ামের ছেলে ঈসা মাসীহ তো আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর কালিমা (বাণী), যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রেরণ করেছিলেন ও তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ (আদেশ)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনো এবং বলো না যে, (ইলাহ) ‘তিনজন!’, তোমরা (এটা বলা থেকে) নিবৃত্ত হও, তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর হবে। (জেনে রেখো) আল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। তাঁর কোন সন্তান হবে- তিনি এটা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই; আর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’’ [। সূরা নিসা/১৭১]
অপর আয়াতে এ রকম বাড়াবাড়ির অশুভ পরিণাম উল্লেখ করে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন :
قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوْاۤ اَهْوَآءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوْا مِنْ قَبْلُ وَاَضَلُّوْا كَثِيْرًا وَّضَلُّوْا عَنْ سَوَآءِ السَّبِيْلِ
‘‘(হে নাবী!) বলো, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করো না; আর তোমরা এমন সম্প্রদায়ের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না, যারা ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/৭৭]
বর্তমানে মিলাদ পড়ুয়ারা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের পথ অনুসরণ করে চলেছেন। ইয়াহুদীরা উযায়ের (আঃ) এর শানে এবং খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ) এর শানে বাড়াবাড়ি করে তাঁদেরকে উলুহিয়্যাতের আসন দান করেছিল। আর বর্তমান যুগের সীমালঙ্ঘনকারীরা আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর শানে অনুরূপ বাড়াবাড়ি করছেন, যার বাস্তব দলিল উপরোক্ত কবিতা। কবি নিজেকে রাসূল ﷺ এর বান্দাহ দাবী করেছেন। অথচ মহানাবী ﷺ এরূপ বাড়াবাড়ি হতে উম্মাতকে সর্তক করে বলেন :
قوله عليه السلام : لَا تُطْرُوْنِيْ، كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهٗ، فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ، وَرَسُوْلُهٗ
‘‘মরিয়ামের পুত্র ঈসাকে নিয়ে খ্রিস্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না। আমি আল্লাহর বান্দাহ। অতএব, তোমরা বল আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।’’ [। বুখারী হা/৩৪৪৫]
সম্মানিত পাঠক!!
আমরা কি আল্লাহর বান্দাহ নাকি মুহাম্মাদ ﷺ এর বান্দাহ? আমরা কি আলল্লাহর ইবাদত করি নাকি তাঁর রাসূলের ইবাদত করি? আমরা কি আল্লাহকে সিজদাহ করি এবং সাথে সাথে তার রাসূলকেও সিজদাহ করি? (নাউযুবিল্লাহ), অথচ মহান আল্লাহ তো আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কেউ সিজদা/ইবাদত পাওয়ার হকদার নেই। এরশাদ হচ্ছে :
وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللهِ اَحَدًا
‘‘সিজদাহসমূহ আল্লাহর। অতএব, আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।’’ [। সূরা জ্বিন /১৮]
মুহাম্মাদ ﷺ স্বয়ং আল্লাহর একজন বান্দাহ। রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতে তাঁর কোন অংশ নেই। বিশেষত্ব এই যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। মহান আল্লাহ বলেন :
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
‘‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়, নিশ্চয় তার পূর্বেও রাসূলগণ বিগত হয়েছে।’’ [। সূরা আলে ইমরান/১৪৪]
মুসলিম মাত্রই আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসূলের উম্মাত। সে আল্লাহর ইবাদত করে। আর আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর প্রেরিত রাসূলের অনুসরণ করে। সুতরাং যে বা যারা নিজেকে রাসূলের বান্দাহ হিসেবে দাবি করবে, সে নির্দ্বিধায় সীমালঙ্ঘনকারী মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে- তাতে সন্দেহ নেই। এরূপ ব্যক্তিদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আবু বকর (রা.) কতৃর্ক প্রদত্ত ভাষনের নিন্মোক্ত বাণীটি অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেছিলেন :
فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَإِنَّ اللهَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের ইবাদত করে, (সে যেন জেনে নেয় যে,) নিশ্চয় মুহাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তোমদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে, (সে যেন জেনে নেয় যে,) নিশ্চয় আল্লাহ জীবিত; তিনি মৃত্যুবরণ করেন না।’’ [। বুখারী ২/৬৪০-৬৪১ গৃহীত ‘আল-মুবারকপুরী (আর-রাহীকুল মাখতুম) দারুল মুআয়্যিদ-রিয়াদ/৪৭০]
সম্মানিত পাঠক!!
উপরোক্ত কবিতার মধ্যে আক্বীদাগত দ্বিতীয় ভুলটি হলো- নাবী ﷺ এর কাছে অনুগ্রহ কামনা করা। অথচ অনুগ্রহ দান করা একমাত্র মহান আল্লাহর সিফাত। এতে তাঁর শরীক কেউ নেই। তাছাড়া অনুগ্রহ চাওয়া হচ্ছে দু‘আ। আর দু‘আ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে করা যায় না। কেননা, আল্লাহ তাঁর কাছে দু‘আ করতে আদেশ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ
‘‘তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো; আমি তোমাদের আহবানে সাড়া দিব।’’ [। সূরা আল-গাফের/৬০]
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তি নেই, যে মানুষের দু‘আ কবুল করতে পারে! মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকে- যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?’’ [। সূরা আল আহক্বাফ/৫]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নাবী ﷺ কি মানুষের দু‘আ কবূল করতে পারেন? মানুষের কল্যাণ অকল্যাণের ক্ষমতা রাখেন? মানুষের ফরিয়াদ শুনেন? উত্তর হলো, মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কেউ ফরিয়াদ শ্রবণকারী নেই।
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তার নাবীকে বলতে বলেন:
قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ
‘‘বলো! আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা ব্যতীত আমি আমার নিজের আত্মার মঙ্গল-অমঙ্গলের কোন অধিকারী নই।’’ [। সূরা আল-আ‘রাফ/১৮৮]
মিলাদী শায়খুল হাদীসরা নাবীর কাছে অনুগ্রহ কামনা করছেন। তাঁদের এ দু‘আ যে শিরকী দু‘আ তাতে কি কোন সন্দেহ আছে? মহান আল্লাহ তো স্বয়ং তাঁর রাসূলকে বলতে বলেন :
قُلْ اِنِّيْ لَاۤ اَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَّلَا رَشَدًا
‘‘(হে নাবী) বলো! আমি তোমাদের অপকার ও উপকার কোন কিছুরই মালিক নই।’’ [। সূরা আল জ্বিন/২০-২১]
২- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৪ এর পঞ্চম লাইন নিমণরূপ:
فأغثني و أجرني يا مجير من السعير
হে (নাবী ) সা‘য়ির বা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দানকারী! তুমি আমার ফরিয়াদ শ্রবণ কর এবং আমাকে (জাহান্নাম থেকে) পরিত্রাণ দাও:’’!
সম্মানিত পাঠক!
মিলাদী আল্লামাদের এ কোন ‘আক্বীদাহ? তারা নাবীকে ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও পরিত্রাণ দানকারী বলে সম্বোধন করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। বলুন, নাবী ﷺ কি জান্নাত-জাহান্নামের মালিক? অথচ নাবী ﷺ নিজেই তো আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করেছেন। তাহলে তিনি কী করে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দেবেন? কবরের আযাবের বিবরণ আসার পর হতে শেষকাল অবধী রাসূল ﷺ কবরের আযাব ও জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। দু‘আটি নিমণরূপ :
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের আযাব হতে এবং জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’’ [। মুসলিম হা/৫৮৮ (১৩১)]
নিজ কলিজার টুকরা কন্যা ফাতিমাকে আমল করতে আদেশ করেন এবং ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে তিনি তার কোন কাজে আসবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাহলে মিলাদীদের কোন গ্রান্টি আছে যে, নাবী ﷺ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন? মা ফাতিমার (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে রাসূল ﷺ এর বাণী :
يَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ اشْتَرِيَا أَنْفُسَكُمَا مِنْ اللهِ لَا أَمْلِكُ لَكُمَا مِنْ اللهِ شَيْئًا سَلَانِي مِنْ مَالِي مَا شِئْتُمَ
‘‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা! আমার নিকট (মাল-সম্পদের) যা খুশী তুমি চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে আমি তোমার কোন কাজে আসব না।’’ [। মুসলিম হা/২০৬ (৩৫১)]
এবারে বিনীত হয়ে জিজ্ঞেস, কোন দলীলের ভিত্তিতে মিলাদ পড়ুয়ারা নাবীর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চান? এ তো প্রকাশ্য শিরক এবং এর পরিণাম জাহান্নাম। প্রিয় নাবী ﷺ বলেন:
مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ
‘‘যে ব্যক্তি মারা গেল এ অবস্থায় যে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমক্ষক করে ডাকে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ [। বুখারী, মুসলিম হা/৯২]
৩- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৫ এর উর্দু কছিদার পর্বের ২ নং লাইনে রাসূল ﷺকে খেতাব করে বলা হয়:
آّپ ھی مشکل کشا ھيں خلق کی حجات رواويں شافع روز جزاء ھيں جو کھو اس سے وراھيں
‘‘আপনিই মুশকিল দূরকারী, সৃষ্টির হাজত পুরাকারী। প্রতিদান দিবসে আপনি শাফা‘আতকারী, যা কিছু বল সবই তাঁর পশ্চাতে। অর্থাৎ সবার প্রথমে নাবী।’’
সম্মানিত পাঠক !
আল্লাহর যাবতীয় কাজ ও সিফাত যদি নাবীকে দিয়ে দেয়া হয় এবং আল্লাহর সিফাত সৃষ্টির আদি বা প্রথম যদি রাসূল ﷺ কে বলা হয়। তাহলে আল্লাহ কোথায় যাবেন? (নাউযুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ স্বয়ং বলেন:
اَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْٓءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِ اَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
‘‘আচ্ছা বল দেখি, কে অসহায়ের ডাকে সাড়া দেন, দুঃখ কষ্ট দূর করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থালাভিষিক্ত করেন? সেই আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ থাকতে পারে কি? তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো।’’ [। সূরা আল আন‘আম/৬২] অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন :
وَاِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَؕ وَاِنْ يَّمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
‘‘যদি আল্লাহ তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেন, তবে তিনি ব্যতীত তা দূর করার আর কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাকে কল্যাণ দ্বারা দান করতে চান, তাহলে এ ব্যাপারেও তিনি সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।’’ [। সূরা আল আন‘আম/১৭]
এ তো গেল মুশকিল কুশা’ সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার কুরআনী জবাব। হেদায়াতের জন্য ইহাই যথেষ্ট। আর হেদায়াতের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ। তাদের দ্বিতীয় প্রার্থনা ﷺ শাফা‘আত। এটি উত্তম দাবী, তবে কার কাছে? কে শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক? মহান আল্লাহ বলেন :
قُلْ لِلّٰهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
‘‘বলো! সকল প্রকার শাফ‘আত কেবল আল্লাহরই।’’ [। সূরা যুমার/৪৪]
নাবী ﷺ ক্বিয়ামতের দিন শাফাআত করবেন। [। মুসলিম হা/৩৩৮ (১১৯)] তবে তা আল্লাহর অনুমতি লাভের পর; আগে নয়। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সেদিন কেউ কথা বলতে পারবে না।
আল্লাহর ঘোষণা :
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهٗ إِلَّا بِإِذْنِهِ
‘‘কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া শাফা‘আত করতে পারে? ’’ [। সূরা বাক্বারা/২৫৫]
এখন আমরা জানলাম শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ। মহানাবী ﷺ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে শাফা‘আত করবেন। নাবীর শাফা‘আত পাওয়া বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। [। বুখারী হা/৬৫৭০ ফতহুলবারী,কায়রো ১১/৪২৬] তবে তা আল্লাহর কাছেই কামনা করতে হবে। আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে সেদিন নাবীর শাফা‘আত পেয়ে ধন্য হবেন। আল্লাহর কাছে না চেয়ে নাবীর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করা শিরক। কেননা, সেটি দু‘আ। আর আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দু‘আ করা প্রকাশ্য শিরক। আল্লাহ বলেন:
فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا
‘‘অতএব, তোমরা আল্লাহর সাথে আর কাউকে আহবান করো না।’’ [। সূরা জ্বিন/১৮]
মিলাদের উক্ত পংক্তির তৃতীয় ভ্রান্তি হলো : নাবী ﷺ-কে সকল হাজত/ প্রয়োজন পূরাকারী বলে দাবী করা। এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের খন্ডনে আমাদের পূর্বোক্ত বক্তব্যকেই আমরা যথেষ্ট মনে করছি। তাই এখানে আর সে কথার পুনরাবৃত্তি না করে এটুকু বলে শেষ করছি। যদি কেউ নাবীর শানে এ ধরনের ভুল বিশ্বাসসহ মারা যায় এবং মৃত্যুর আগে তাওবা না করে, তাহলে তার ঠিকানা জাহান্নাম। প্রিয় নাবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [। বুখারী, মুসলিম হা/৯২ (১৫০) ৯৩ (১৫১)] মহান আল্লাহ বলেন:
اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
‘‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেবেন; আর তার ঠিকানা জাহান্নাম।’’ [। সূরা আল মায়েদা/৭২]
৪- ‘মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৬ এর উর্দু কাছিদার ৫ম নং লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
جان کنی کی وقت انا چھرہ آنور دکھانا
کلمت طيب برهانا ا پنے دامن ميں چهبانا
‘‘(হে নাবী! জান ক্ববজের সময় এসে আপনার চেহেরা মুবারক আমাকে দেখাবেন। আমাকে কালিমা তায়্যিবা পড়াবেন এবং আপনার পার্শ্বদেশে আশ্রয় দেবেন।’’
সম্মানিত পাঠক!
উক্ত পংক্তির অর্থ যা বুঝাচ্ছে, তা অতি মারাত্মক। মিলাদী কবি মিলাদ মাহফিলে পাঠের জন্য যে কবিতা উর্দু ও ফারসী ভাষায় রচনা করেছেন, তার মাঝে আক্বীদাগত ত্রুটিসমূহ নিমণরূপ:
(এক) নাবীকে হাজির-নাযির জানা,
(দুই) নাবীকে গায়েব জানেন বলে দাবী করা,
(তিন) নাবীর আশ্রয় কামনা করা।
প্রথমতঃ রাসূল ﷺ কে হাজির জানা :
এটি একটি অলীক ও ভ্রান্ত বিশ্বাস, যা কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য বিরোধী। আর কুরআন ও হাদীসের বিরোধী কোন ভ্রান্ত বিশ্বাসকে কি কোন মুমিন গ্রহণ করতে পারে? মহান আল্লাহ তাঁর নাবীকে এরূপ ক্ষমতা দেননি। বরং নাবী ﷺ যে হাজির ও নাজির নন, একথার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা আল কুরআনে এসেছে। মূসা (আঃ) এ ঘটনার বিবরণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে যেয়ে মহান আল্লাহ তাঁর নাবী মুহাম্মাদ ﷺ কে বলেন:
وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ اِذْ قَضَيْنَاۤ اِلٰى مُوْسَى الْاَمْرَ وَمَا كُنْتَ مِنَ الشَّاهِدِيْنَ
‘‘মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।’’ [। সূরা আল-কবাসাস/৪৪]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে বিশ্বাস শিখিয়েছেন, তাতে অতিরঞ্জন করার কোন সুযোগ নেই। নাবী ﷺ যে হাজির ও নাজির নন, এর প্রমাণে উপরোল্লিখত আয়াতের ন্যায় অনেক আয়াত আছে। হিদায়াতের জন্য কুরআনের একটি আয়াতই যথেষ্ট। এ সকল ভ্রান্ত বিশ্বাসীরা নাবীর কাছে ফরিয়াদ করেন। তাঁর কাছে নিজ মনের বাসনা পূরণের আবেদন করেন এবং নাবীকে ডাকতে থাকেন। এ সবই শিরকী কর্মকান্ড, যা মানুষকে চিরজাহান্নামী করে দেয়।
দ্বিতীয়তঃ নাবী ﷺ গায়েব জানেন-এ বিশ্বাস করা :
ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য বিদ্যার একচ্ছত্র মালিকানা মহান আল্লাহর। এতে কোন সৃষ্টির সামান্যতম কোন অংশ নেই। যা মহান আল্লাহ কেবল ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, নাবী ﷺ কেবল তাই জানতেন। এর বেশী তিনি কোন কিছু জানতেন না। এমনকি তিনি ﷺ কখনও এরূপ অবান্তর দাবীও করেননি। কিন্তু মিলাদী শায়খুল হাদীসরা আল্লাহর খাস সিফাতকে তাঁর মাখলুক মুহাম্মাদ ﷺ কে দিয়ে বসেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) কেননা, তারা নাবী ﷺ কে তাদের মৃত্যুর সময় হাজির হতে প্রার্থনা জানিয়েছেন। আর সঙ্গত কারণে একথা বিশ্বাস করা আবশ্যক হয়ে পড়ছে যে, কে কোন দিন কোথায় মরবে, তা নাবীর জানা আছে। (নাউযুবিল্লাহ)
উপরন্ত একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক মিলাদী মারা গেলে নাবীকে অবশ্যই একাধিক রূপ ধারন করে একই সময়ে সব জায়গায় হাজির হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়বে। আর তা কি একজন মাখলুকের পক্ষে সম্ভব? অথচ মহান আল্লাহ যে পাঁচ (৫) বিষয়ের ইলম কেবল তাঁরই হাতে রেখে দিয়েছেন, যার একটি হলো কার মৃত্যু কোথায় কোথায় হবে। এটা কী করে নাবী ﷺ জানবেন? এতো আল্লাহর সিফাত, যাতে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। মিলাদীরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে এক-ই স্বত্তা বলে বিশ্বাস করছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য যে, সে পাঁচটি গায়েব নিমণরূপ :
১) ক্বিয়ামত কবে হবে,
২) বৃষ্টি কখন কোথায় হবে,
৩) মায়ের জরায়ূতে কী আছে,
৪) আগামীকাল মানুষ কী কামাবে,
৫) এবং কোথায় কার মৃত্যু হবে। [। সূরা লুকমান এর সর্বশেষ আয়াত ও তার তাফসীর।]
লক্ষ্য করুন! ইলমে গায়েব সম্পর্কে আসমানী বাণী। মহান আল্লাহ বলেন :
وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ
‘‘আসমান ও জমীনের অদৃশ্য সংবাদ আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর তার দিকে সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে।’’ [। সূরা হুদ/১৩২]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
وَعِنْدَهٗ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
‘‘গায়েবের চাবিকাঠি আল্লাহর নিকটে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা অবগত নয়।’’ [। সূরা আন‘আম/৫৯]
কুরআন বলছে ইলমে গায়েব এর খাযানা কেবল আল্লাহর হাতে; অন্য কারো তাতে কোন ভাগ নেই। তাহলে মিলাদী শায়খুল হাদীসেরা কোন দলিলের ভিত্তিতে এরূপ বিশ্বাস করেন? নাবী ﷺ গায়েব জানতেন বলে কোন দাবী করেছেন কি? না কি মিলাদ পড়ুয়ারা কোন তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে আজগুবী বিশ্বাস বানিয়ে নিয়েছেন। মূলত নাবী ﷺ আল্লাহর দূত। ওহীর বাণী জনগণের কাছে পৌঁছানোই তাঁর একমাত্র কাজ। তিনি কখনও গায়েব জানেন- এ দাবী করেননি। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল ﷺ কে বলতে বলেন :
قُلْ لَّاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ عِنْدِيْ خَزَآئِنُ اللهِ وَلَاۤ اَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَاۤ اَقُوْلُ لَكُمْ اِنِّيْ مَلَكٌۚ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوْحٰۤى اِلَيَّ
‘‘বলো! আমি তোমাদেরকে একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার আছে। আমি গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানি না। আর আমি তোমাদেরকে এও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমিতো কেবল তাই অনুসরণ করি, যা আমার কাছে ওহী করা হয়।’’ [। সূরা আনআম/৫০]
তৃতীয়তঃ নাবীর আশ্রয় প্রার্থনা :
আশ্রয় প্রার্থনা কি দুআ নয়? আর দু‘আ কি ইবাদত নয়? নিশ্চয়ই; বরং ইবাদতের সার। প্রতি সালাতে আমরা সুরা ফাতিহা পাঠকালে আল্লাহর কাছে নিজ স্বীকারোক্তিতে বলি। (হে আল্লাহ) আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই কাছে সাহয্য চাই। এ দাবীর পর কী করে আবার নাবীর কাছে সাহায্য কামনা করতে পারি? অনুগ্রহ ও আশ্রয় প্রার্থনা সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা এ বইয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করেছি। তাই এখানে আর পূণরাবৃত্তি না করে শুধু এটুকু বলেই শেষ করছি, এভাবে শিরক করে কিভাবে মিলাদীরা কিয়ামতে নাবী ﷺ এর শাফাআত পাবেন? নাবীতো মুশরিকদের জন্য শাফাআত করবেন না। হে মিলাদী ভাইয়েরা! সময় থাকতে সতর্ক হোন।!!
৫- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ পৃষ্ঠা নং ৬৭ এর উর্দু কাসিদার (শিরোনামে কাছিদায়ে ইসলাম) প্রথম লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
نور حق سے نور أحمد سب سے بهتر سب سے أمجد
هو درود حق ان په بے حد صلوات الله عليك
হক্ব তা‘আলার (আল্লাহর) নূর হতে আহমদের (রাসূল ﷺ এর) নূর সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ। তার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর অসংখ্য দরূদ, হে নাবী তোমার উপর আল্লাহর শান্তি ধারা বর্ষিত হোক!
সম্মানিত পাঠক !
অনুধাবন করুণ, মিলাদীদের কী অবান্তর বিশ্বাস? তাদের একশ্রেণী বলেন নাবী ﷺ আল্লাহর নূর হতে তৈরি, অর্থাৎ তিনি আল্লাহর নূরে একটি অংশ। কিন্তু একি তায়াজ্জুব, কবি মিলাদ মহফিলে পড়ার জন্য উপরোক্ত যে কবিতা রচনা করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, নাবীর নূর আল্লাহর নূরের চেয়ে বেশী উত্তম। তাদের কথামতে নাবী ﷺ আল্লাহর নূরের অংশ হলে কি করে অংশ বা শাখামূল নূরের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারে? না কি তারা বলতে চান, নাবীই আসল নূর আর আল্লাহ তার অংশ বা শাখা? (নাউযুবিল্লাহ) দেখা যায়, কবিতার এ পংক্তিতে নাবীর নূরকে আল্লাহর চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। আবার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে নাবীর জন্য শান্তিধারা কামনা করা হয়েছে। তাদের কথা কি স্ববিরোধী নয়? আর সর্বোত্তমের জন্য কি উত্তমের কাছে প্রার্থনা করা যায়? তাদের এ ধরনের অবান্তর আক্বীদাহ ও বিশ্বাসের জন্য বড়ই পরিতাপ।!
আসুন আমরা সংক্ষেপে হলেও বিষয়টি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে পরীক্ষা করে দেখি। আমাদের সমাজের কিছু লোকের ধারণা যে, মুহাম্মাদ ﷺ নূরের তৈরি, তিনি মানুষ নন। তাদের কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে : তিনি আল্লাহর জাতি নূরের অংশ বিশেষ। তারা আরও সহজ করে বলে থাকেন, আল্লাহর নূরে মুহাম্মাদ তৈরি, আর মুহাম্মাদের নূরে সারা জাহান তৈরি। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য কি?
মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ
‘‘বলুন আমি রাসূলের মাঝে নতুন নই।’’ [। সূরা আহকাফ/৯] বরং তার পূর্বে আরও অনেক নাবী ও রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ
‘‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া অন্য কিছু নন। তার পূর্বে আরও অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন।’’ [। সূরা আল এমরান/১৪৪]
এক্ষণে প্রশ্ন হলো সমস্ত নাবী ও রাসূল কিসের তৈরি ছিলেন? তারা সকলেই মানুষ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনের সাক্ষ্য হলো ঃ
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ اِنْ نَّحْنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلٰكِنَّ اللهَ يَمُنُّ عَلٰى مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه
‘‘তাদেরকে তাদের নাবী ও রাসূলগন বললেন, আমরা তোমাদের মতই মানুষ; কিন্তু আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য হতে যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করে থাকেন।’’ [। সূরা ইব্রাহীম/১১]
আর মুহাম্মাদ ﷺ কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণকারী একজন মানুষই ছিলেন। আল্লাহ বলেন :
لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِِّنْ أَنْفُسِكُمْ
‘‘নিশ্চয়ই তোমদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসূল আগমন করেছেন।&’’ [। সূরা তাওবা /১২৮]
কুরাইশের কাফেররা মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে অলৌকিক কিছু দাবী করলে তাদের অবান্তর দাবীর জবাব শিখিয়ে দিয়ে আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلَّا بَشَرًا رَسُولًا
‘‘বল! আমার রব অতীব পবিত্র ও মহান আমি কেবলমাত্র একজন মানুষ ও রাসূল।’’ [। সূরা বানী ইসরাঈল/৯৩]
নাবী ও রাসূল যে মানুষ ছিলেন, তার দৃঢ় প্রমানস্বরূপ মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ لَّوْ كَانَ فِي الْاَرْضِ مَلَآئِكَةٌ يَّمْشُوْنَ مُطْمَئِنِّيْنَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَآءِ مَلَكًا رَّسُوْلًا
‘‘বলো যদি ফেরাশতাগণ পৃথিবীতে নিরাপদে বিচরণ করতেন তাহলে আমি তাদের নিকট আকাশ হতে কোন ফেরেশতাকেই রাসূলরূপে প্রেরণ করতাম।’’ [। সূরা বাণী ইসরাইল/৯৪-৯৫]
মানুষের সর্ব প্রকারের বৈশিষ্ট ও চাহিদা সকল নাবী ও রাসূলদেরই ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যে সকল নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সকলেই তো আহার করতেন এবং হাট-বাজারে যাতায়াত করতেন।’’ [। সূরা ফুরক্বান/২০]
উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, প্রিয় নাবী ﷺ অন্যান্য নাবী ও রাসূলের ন্যায় একজন মানুষ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে তার যবান নিঃসৃত বানী সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। সালাতে ভুল হওয়া বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি এরশাদ ফরমান :
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ، فَإِذَا نَسِيَت فَذَكَرُوْنِيْ
‘‘নিশ্চয় আমি কেবল তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। অতএব, যখন আমি ভুলে যাই তখন তোমরা আমাকে স্বরণ করে দিও।’’ [। মুসলিম হা/৫৭২ (৩৯)]
রাসূল ﷺ মানুষ ছিলেন এ প্রসঙ্গে আয়িশা (রা) বলেন :
مَا كَانَ إِلَّا بَشَرًا مِّنَ الْبَشَرِ يَغْسِلُ ثَوْبَهٗ وَ يَحْلِبُ شَاتَهٗ وَ يَخْدِمُ نَفْسَهٗ
‘‘মুহাম্মাদ ﷺ মানুষের সিলসিলার একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নন। তিনি নিজের কাপড় নিজেই ধৌত করতেন, ছাগলের দুধ দোহন করতেন এবং নিজের খিদমত নিজেই করতেন।’’ [। শামায়েলে তিরমিযি, আহমাদ হা/২৫৬, বুখারী আদবুল মুফরাদ হা/ ৫৪৫১, সহীহ ইবনে হিববান হা/২১৩৬ সিলসিলাতুল আহাদীসুস সহীহা লিল আলবানী/৬৭১]
তবে তিনি বিশেষ করে মুমিনদের জন্য আল্লাহর খাছ অনুগ্রহ হিসেবে দুনিয়ার নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করলেন। যিনি তাদের নিকট আল্লাহর কিতাব পাঠ করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও জ্ঞানের কথা শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত ছিল।’’ [। সূরা আলে ইমরান/১৬৪]
উপরন্তু তিনি জগতবাসীর জন্য আল্লাহর রহমত ছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَاۤ أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِِّلْعَالَمِينَ
‘‘আর আমি আপনাদের সমগ্র জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’ [। সূরা আল আম্বিয়া/১০৭]
অতএব, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশের নূন্যতম অধিকার আর কারো থাকলো না। এর পরও কেউ মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর জাতি নূরের তৈরি ইত্যাদি অবান্তর কথা বলে বা বিশ্বাস করে, তাহলে সে যেন কুরআনকে মিথ্যায়ন করল এবং আল্লহর শরীক বা অংশীদার আছে এই শিরকী আকীদাহ পোষণ করল। (নাউযুবিল্লাহ)। হ্যাঁ! তর্কের খাতিরে কেউ বলতে পারেন যে, মহান আল্লাহ তো এরশাদ করেছেন :
قَدْ جَآءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وََّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ
‘‘আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট নূর/আলো সুস্পষ্ট কিতাব সমাগত হয়েছে।’’ [। সূরা আল মায়েদা/১৫]
আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা কী উদ্দেশ্য করা হয়েছে, তা বুঝা দরকার। এখানে নূর দ্বারা ইসলাম উদ্দেশ্য। [। তাফসীর আল-মুনীর ‘দারুল ফিকর’ বাইরুত৬/১৩৩]
কেউ কেউ নূর দ্বারা মুহাম্মাদ ﷺ কেও উদ্দেশ্যে করেছেন। তবে পরবর্তী আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানী হিদায়াত উদ্দেশ্য। এরশাদ হচ্ছে :
يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهٗ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِه وَيَهْدِيْهِمْ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
‘‘আল্লাহ তদ্বারা ঐ লোকদেরকে হিদায়াত দান করেন, যারা শান্তির পথে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর তাদেরকে তিনি স্বীয় অনুমতিক্রমে কুফুরের অন্ধকার হতে ইসলামের আলোর দিকে বের করে আনেন এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’’ [। সূরা আল-মায়েদা/১৬]
তাছাড়া এ কথা সহজেই বুঝা যায় যে, এখানে নূর দ্বারা কুরআনই উদ্দেশ্য। [। ইবনে কাসীর ‘‘তাফসীরুল কুরআনিল আজীম’’ দারু-মাকতাবতিল হিলাল বাইরুত ২/২৬৮]
কেননা, তৎপরবর্তী আয়াতে নূর ও কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করার জন্য মহান আল্লাহ একবচনের সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। যদি এটা ভিন্ন দুটি বিষয় বুঝাত তাহলে দ্বিবচনের সর্বনাম ব্যবহার সঙ্গত হত। এছাড়া কুরআনে কারীমে নূর দ্বারা কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে, যার দলিল আমাদের কাছে স্পষ্ট বিদ্যামান। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
فَاٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَالنُّوْرِ الَّذِيْۤ اَنْزَلْنَا وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
‘‘অতএব তোমরা আল্লাহ, তার রাসূল এবং ঐ নূরের প্রতি ঈমান আন, যা আমি নাযিল করেছি। আর তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।’’ [। সূরা আত তাগাবুন/৮]
তাছাড়া যদি নূর দ্বারা মুহাম্মাদ ﷺ কে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তদ্বারা তিনি যে আল্লাহর জাতি নূরের তৈরি এ রকম শিরকী বিশ্বাস প্রমাণিত হয় না। যেমন আল্লাহর বাণী, আপনাকে আমি সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি’’ আয়াত দ্বারা নাবীর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণ বুঝায়। তেমনি নূর দ্বারা কুফুরী ও যুলমাত দূরকারী আলোকবর্তিকা হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তা সহজেই বুঝা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِيْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ
‘‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, সেটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য।’’ [। সূরা সফ/৯]
নাবী ﷺ-কে মহান আল্লাহ কী কী গুণ ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা মন্ডিত করে প্রেরণ করেছেন সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا النَّبِيُّ اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا ‐ وَدَاعِيًا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا
‘‘হে নাবী! আমি অবশ্যই তোমাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর পথে তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপরূপে প্রেরণ করেছি।’’ [। সূরা আল আহযাব/৪৫-৪৬]
অতএব এটা স্পষ্ট যে. তিনি হিদায়েতের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। ‘আল্লাহর নুরে মুহাম্মাদ পয়দা ও মুহাম্মাদের নূরে সারা জাহান পয়দা’ এটা হিন্দুদের বহু ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসের অনুরূপ। মহান আল্লাহ এসব হতে পবিত্র। তিনি সকল প্রকারের অংশিদারিত্বের দূরতম সম্ভাবনাকেও স্পষ্ট ভাষায় নাকচ করে দিয়ে এরশাদ ফরমান :
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ
‘‘(হে মুহাম্মদ) তুমি বলো, তিনিই আল্লাহ, তিনি এক ও একক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি, তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ-ই নেই।’’ [। সূরা ইসলাস]
উল্লেখ্য যে, নাবী ﷺ নূরের তৈরি- এ অলীক বিশ্বাসের দাবীদারগণ তাদের ভিত্তিহীন মতের সমর্থনে আরেকটি দলীল পেশ করে থাকেন। আর তা হচ্ছে :
أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرٌ نَبِيِّكَ يَا جَابِرٍ
‘‘হে জাবের! সর্ব প্রথম আল্লাহ তোমার নাবীর নূর তৈরি করেছেন।’’ [। কাশফুল খাফা লিন ‘আজলুনী (বানোয়াট ও লোক মুখে প্রচারিত ভিত্তহীন হাদীস সংকলন)]
এটি বানোয়াট ও বাত্বিল হাদীস। বরং এটা নাবীর নামে প্রচলিত মিথ্যা কথা। আর এরূপ মনগড়া হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া বড়ই গর্হিত কাজ। যার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
প্রিয় নাবী ﷺ বলেন:
مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
‘‘যে ব্যাক্তি আমার নামে জেনে শুনে মিথ্যা বলবে, সে যেন তার ঠিকানা স্থির করে নেয় জাহান্নাম।’’ [। বুখারী (আরবী) ফতহুলবারী-১/৫৭২ হা/৩৪৬১]
আর এটা কত স্পষ্ট কথা যে, মহানাবী ﷺ পিতা আব্দুল্লাহর ঔরসে ও মাতা আমিনার কোলে জন্মলাভ করেন। [। আর রাহিকুল মাখতুম (আরবী) দারুল মুআইয়্যিদ জিদ্দা/৫৪] অতঃপর ২৫ বছর বয়সে খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন খাদীজার বয়স ছিল চল্লিশ বছর।
তার গর্ভে পর্যায়ক্রমে ছেলে আল কাবসেম, কন্যা, যয়নাব, রুকাইয়্যা, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা জন্ম লাভ করেন। অতঃপর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্ম নেন। তাঁকে তাইয়্যাব ও তাহের নামে ডাকা হতো। [। প্রাগুক্ত /৫৪] আর তৃতীয় পুত্র ইব্রাহীম মারিয়া ক্বিবতিয়ার কোলে জন্ম নেন। তিন পুত্রই বাল্যকালে মারা যান। [। মুখতাসার আল-ফিকহুল ইসলামী’’ বায়তুল আফকার আদ দাউলিয়া-রিয়াদ/৮২] এ সকল প্রকাশ্য দলীলের পর কী করে মুহাম্মাদ ﷺ কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়। আল্লাহ আমাদের সু-বুদ্ধির উদয় ঘটিয়ে দিন। আমীন!
৬- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৮ এর উর্দু কাছিদার ৭ম লাইনে রাসূল ﷺ কে খেতাব করে বলা হয়:
خدا عاشق تمهارا اور محبوب تم اسكى
هى ايسا مرتبه كس كا سناؤ يا رسول الله
‘‘আল্লাহ তোমার আশিক, আর তুমি তার প্রিয়। এমন মর্যদার অধিকারী আছে কি কেউ শোনও হে আল্লাহর রাসূল!’’
সম্মানিত পাঠক!!
উপরোক্ত পংক্তিতে যে বিশ্বাসের কথা উল্লেখিত হয়েছে, তা নিমণরূপ:
(১) মহান আল্লাহকে খোদা বলা হয়েছে ,
(২) মহান আল্লাহকে রাসূল ﷺ এর ‘আশিকব বলা হয়েছে,
(৩) রাসূল ﷺ হাজির এ বিশ্বাস পোষণ করা হয়েছে।
প্রথমত : খোদ ফারসী শব্দ। এটি আল্লাহর কোন সিফাতী নাম নয়। যদিও অর্থগত দিক থেকে আল্লাহর একটি সিফাতকে বুঝায়। আল্লাহর নাম ও সিফাতসমূহ প্রসঙ্গে একজন মুমিনের আক্বীদাহ হলো : আল্লাহর নাম ও সিফাত তাওক্বীফি, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। যে নাম আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য এবং তাঁর রাসূল ﷺ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেছেন, তা হুবাহুব বিশ্বাস করা। এতে কোনরূপ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন না করা। কুরআন ও হাদীসে যে নাম নেই, সে নামে আল্লাহকে না ডাকা। কেননা, আল্লাহর নামের বেলায় নিজ থেকে বাড়াবাড়ি করা জায়েজ নয়।
দ্বিতীয়ত : ‘আশিক্ব অর্থ প্রেমে পাগল। আর মহান আল্লাহ এহেন পাগলামীর দোষ হতে পবিত্র ও সু-মহান। আল ইশক শব্দের কর্তৃবাচ্য বিশেষ্য হচ্ছে ‘আশিক। এটি আরবী শব্দ হলেও কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা নয়। মূলত এটি তথাকথিত সূফীবাদীদের ব্যবহৃত পরিভাষা। ইশকের সর্বোচ্চ মঞ্জিল হলো ফানা। অর্থাৎ মা‘শুকের জন্য নিজে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। আর এটি মহান আল্লাহর শানে কখনও শোভনীয় নয়।
পক্ষান্তরে কুরআন ও হাদীসে ভালোবাসা বা পছন্দ বুঝাতে ( الحب ) হুব শব্দটি এসেছে, যা মুহাববাত বা ভালোবাসা অর্থে আসে। আর মুহাববাত কোন মাতলামীর বস্তু নয়; বরং এটি সর্বজন স্বীকৃত শিষ্টাচারপূর্ণ আদর্শিক শব্দ। মুহাববাতের সর্বোচ্চ মঞ্জিল হলো ইহসান। কাজেই মহান আল্লাহর শানে দোষযুক্ত অপূর্ণ কোন গুণজাতীয় পরিভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
তৃতীয়ত : রাসূল ﷺ কে হাজির জানা। এটিও একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস। এ প্রসঙ্গে আমরা পূর্বোক্ত নিবন্ধে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। সঙ্গত করণে আর সে বিষয়ের পুনরাবৃত্তি সমীচীন মনে করছি না।
৭- মিলাদ শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামক বইয়ের শেষে সংযুক্ত ‘বারযাঞ্জি শরীফ’ পৃষ্ঠা নং ৬৮ এর উর্দু কাসিদার ৯ম লাইনে রাসূলকে ﷺ খেতাব করে বলা হয়:
يا مصطفى و امجتبى إرحم على عصياننا
‘‘হে মুস্তফা ও মুজতাবা! পাপের উপর আমাদের প্রতি রহম করো।’’
মুস্তফা ও মুজতাবা, দুটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিফাত। যার অর্থ প্রায় কাছাকাছি। অর্থাৎ নির্বাচিত বান্দাহ। মিলাদী কবি রাসূল ﷺ কে আহবান করেছেন এবং তাঁর কাছে গোনাহের ক্ষমা চেয়েছেন। এক্ষণে গোনাহের ক্ষমাকারী কি আল্লাহ না তাঁর রাসূল ﷺ? এতো গায়রুল্লাহর কাছে হাত পাতা। আর তা শিরক। এ ব্যাপারে আমরা ১নং জবাবে যথেষ্ট দলিল পেশ করেছি।
বারযাঞ্জি শরীফের বেশীরভাগ কাছিদা/কবিতা আক্বীদাগত ত্রুটিতে ভরা। এসব কাসিদায় নাবীকে উলুহিয়্যাতের স্থান দেয়া হয়েছে। কোথাও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা হয়েছে। কোথাও জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করা হয়েছে। কোথাও আবার মৃত্যুর সময় এসে দেখা দিতে এবং কালিমা পাঠ করাতে আরজ পেশ করা হয়েছে। মোটকথা এভাবে আল্লাহর এসব হতে পূতঃপবিত্র। তিনি শিরক ও মুশরিককে কোন অবস্থাতেই আশ্রয় দেবেন না। হাদীস কুদসীতে আছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىَ غَيْرِىْ تَرَكْتُهٗ وَشِرْكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সকল অংশীদার থেকে নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ, আমার কোনও অংশীদারের প্রয়োজন নেই। যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে, যার মধ্যে সে আমার সাথে অন্যকে অংশীদার করে, আমি তাকে এবং তার শিরককে প্রত্যাখ্যান করি। [। মুসলিম হা/২৯৮৫]
আমরা অতি সংক্ষেপে তথাকথিত ‘বারযাঞ্জি শরীফ এর মূল বক্তব্য পাঠকদের খেদমতে পেশ করলাম এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা বিশ্বাসের প্রামাণ্য জবাব দিলাম। মানতে চাইলে এসব স্পষ্ট দলিলসমূহ যথেষ্ট। যে বা যারা নিজেদেরকে আলিম উলামা বলে দাবী করেন, হক প্রকাশের পর বাতিলতার আশ্রয় নেয়া তাদের পক্ষে বড়ই গর্হিত কাজ বলে আমরা মনে করি। হক গ্রহণ না করলে তো গোমরাহী আবশ্যক হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন :
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
‘‘অতঃপর হক্বের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী রইল।’’ [। সূরা ইউনুস /৩২]
মিলাদ মাহফিল একটি নতুন আবিষ্কৃতি আমল, যা ৪র্থ শতাব্দীতে ফাতেমী শাসনামলে মিশরের কায়রো শহরে শীয়াদের কর্তৃক প্রথম আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে ৭ম শতাব্দী হিজরীর প্রথম দিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। ইরাকের এরবলের গভর্নর আল মুজাফ্ফার আবু সাঈদ কাওকাবারী খুব শান শওকাতে এ ধরনের মাহফিলের আয়োজন করতেন। সে সময়ের মিসরীয় অপাংক্তেয় আলেম আবুল খাত্তাব ওমার বিন দেহইয়া আল কালবী মিলাদের পক্ষে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা দ্বারা একখানা বই লিখে বাদশাহকে উপহার দেন। বইটির নামকরণ করেন, ‘আততানভীর ফী মাওলিদীস সিরা জিম্মুনীর’। ফলে বাদশাহ খুশী হয়ে তাকে একহাজার দিনার উপহার দেন।
মিলাদ মাহফিলে যেসব কছিদা পাঠ করা হয়, তার অধিকাংশই শিরকী আকবীদায় পরিপূর্ণ। সাধারণ মুসলিম সমাজ মিলাদী মৌলভীদের ফাঁকি ধরতে পারেন না; বরং তাদের মিষ্টি কথায় ও বাহ্যিক সাজগোজ দেখে প্রতারণার স্বীকার হয়ে পড়েন। ফলে দুনিয়ায় অর্থ হারান এবং আখেরাতকেও বিনষ্ট করেন। কাজেই এসব বিদআতী কর্মকান্ড হতে সতর্ক হওয়া অতি জরুরি ।
বিশেষত ঐ সমস্ত আলেমদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, যারা এখনও লৌকিকতা ও পার্থিব স্বার্থদ্বন্দ্বে পড়ে আছেন এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়া ফাতওয়া দিয়ে চলেছেন তারা যেন আল্লাহকে ভয় করেন এবং পরকালের জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত হোন! কেননা, জেনে শুনে ভুল ফাতওয়া দেয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হন এবং সাধারণ মানুষকেও বিভ্রান্ত করেন।
হে আলেম সমাজ আপনারা জাতির কর্ণধার। শ্রেষ্ঠ নাবীর শ্রেষ্ঠ উত্তরসূরী। আল্লাহ আপনাদেরকে হক্ব বুঝার তাওফীক দিয়েছেন। হেদায়াতের সে শক্তিকে শানিত করে তুলুন! জেনে রাখবেন, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়; বরং হক তুলে ধরে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সকলের ইসলাহ উদ্দেশ্য। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ গুরু দায়িত্ত আঞ্জাম দেয়াকে মুসলিমদের দ্বীনি মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে জানিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এবং হক বুঝার ও সে অনুযায়ী চলার তাওফীক দিন ! আমীন!
মিলাদ মাহফিলে যেসব কছিদা পাঠ করা হয়, তার অধিকাংশই শিরকী আকবীদায় পরিপূর্ণ। সাধারণ মুসলিম সমাজ মিলাদী মৌলভীদের ফাঁকি ধরতে পারেন না; বরং তাদের মিষ্টি কথায় ও বাহ্যিক সাজগোজ দেখে প্রতারণার স্বীকার হয়ে পড়েন। ফলে দুনিয়ায় অর্থ হারান এবং আখেরাতকেও বিনষ্ট করেন। কাজেই এসব বিদআতী কর্মকান্ড হতে সতর্ক হওয়া অতি জরুরি ।
বিশেষত ঐ সমস্ত আলেমদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, যারা এখনও লৌকিকতা ও পার্থিব স্বার্থদ্বন্দ্বে পড়ে আছেন এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়া ফাতওয়া দিয়ে চলেছেন তারা যেন আল্লাহকে ভয় করেন এবং পরকালের জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত হোন! কেননা, জেনে শুনে ভুল ফাতওয়া দেয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হন এবং সাধারণ মানুষকেও বিভ্রান্ত করেন।
হে আলেম সমাজ আপনারা জাতির কর্ণধার। শ্রেষ্ঠ নাবীর শ্রেষ্ঠ উত্তরসূরী। আল্লাহ আপনাদেরকে হক্ব বুঝার তাওফীক দিয়েছেন। হেদায়াতের সে শক্তিকে শানিত করে তুলুন! জেনে রাখবেন, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়; বরং হক তুলে ধরে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সকলের ইসলাহ উদ্দেশ্য। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ গুরু দায়িত্ত আঞ্জাম দেয়াকে মুসলিমদের দ্বীনি মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে জানিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এবং হক বুঝার ও সে অনুযায়ী চলার তাওফীক দিন ! আমীন!
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন