hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামী শরীআতে শাস্তির বিধান

লেখকঃ ড. আব্দুল কারীম যাইদান

১১
প্রতিটি শাস্তির ওপর বিশেষ বিশেষ আপত্তি
৪৫. ইসলামের সামগ্রিক শাস্তি বিধানের ওপর সাধারণ আপত্তির পর অভিযোগকারীগণ প্রতিটি শাস্তি সম্পর্কে পৃথক পৃথক আপত্তি তুলেছেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রথম আপত্তি

৪৬. ব্যভিচারীর বেত্রাঘাত, নির্বাসন ও রজম এবং অপবাদকারীর বেত্রাঘাত -এ জাতীয় শারীরিক শাস্তির মধ্যে অপরাধীর মানবিক সত্তাকে হরণ করা হয়, যা আধুনিক যুগে গ্রহণযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কোনো নারীর সম্মতিতে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়, তবে এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতার আওতাভুক্ত, যা সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। এ স্বাধীনতা যে ভোগ করে তাকে বেত্রাঘাত করা যায় না।

৪৭. এ অভিযোগ খণ্ডণ করা অতি সহজ। কেননা ব্যভিচারী তার কুকর্ম দ্বারা নিজেকে কলঙ্কিত করেছে, গৌরবান্বিত করে নি। নিজেকে কলুষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে, রক্ষা করার পদক্ষেপ নেয় নি। যে ব্যভিচারী অন্যের পাত্রের পানি পান করতে আসক্ত হয়, কোনো উপদেশ ধমক তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে না, তাকে বিরত রাখতে পারবে চাবুকের আঘাত ও শারীরিক নির্যাতন। অন্তরের অনুভবে কাজ হবে না, লাগবে ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি। আর নির্বাসনে দেওয়ার তাৎপর্য হচ্ছে অপরাধের স্থান ও এলাকা থেকে দূরে অবস্থান করলে ধীরে ধীরে লোকের অন্তর থেকে সে বিস্মৃত হবে। নিজেকে নিয়ে একান্তে ভাববার সুযোগ পাবে। নিজের কৃত অপরাধের জন্য নিভৃতে থেকে চিন্তা ও অনুশোচনা করতে পারবে, যা তাকে আত্মসংশোধনের দিকে এগিয়ে নেবে। এরপর থাকে বিবাহিত ব্যভিচারীর রজম বা প্রস্তর আঘাতে হত্যা করা প্রসঙ্গ। এর কারণ হচ্ছে, অবৈধ উপভোগের নেশায় এই ব্যভিচারী পাপ ও অনাচারের সকল সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। অন্যের পানির ঘাটে অবগাহন করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। অথচ এই কামনা পূরণ করার মতো এমন ব্যবস্থা তার নিকট বর্তমান আছে যা তাকে এহেন অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। এ অবস্থায় সমাজ দেহ থেকে এ ক্ষত অঙ্গটি কেটে ফেলা ও মাটিতে পুঁতে দেওয়া জরুরী, যাতে সমাজের বুকে পাপ ও অনাচারের উৎস অবশিষ্ট না থাকে এবং সমাজের সবাই তার এ ফাসাদ থেকে মুক্তি পায়। এছাড়া তার অন্যায়-অপরাধের কারণে সবাই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সমাজ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনুশোচনা করার কোনো কারণ নেই। যেমন মানব দেহে সৃষ্ট ক্ষত কেটে ফেললে কোনো দুঃখ-অনুশোচনা হয় না যদি আশংকা থাকে যে, ঐ ক্ষত অবশিষ্ট দেহে ক্রম-বিস্তার ঘটাবে।

তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়ে বলেন, ব্যভিচারীর কাজ ব্যক্তি স্বাধীনতারই বহিঃপ্রকাশ। কেননা এটা স্বেচ্ছায় ও উভয়ের সম্মতিক্রমে সম্পন্ন হয়, বাধ্য করে ও বল প্রয়োগ করে হয় না। বস্তুতঃ এ একটি দুর্বল ও ভঙ্গুর যুক্তি ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, ব্যক্তি স্বাধীনতা কোনো বন্ধনহীন অবারিত সুযোগের নাম নয়; বরং অন্যের কোনো প্রকার ক্ষতি না হওয়ার শর্তে আবদ্ধ। কিন্তু ব্যভিচারের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আকারের ক্ষতি। যেমন, বংশের ওপর কলঙ্ক লেপন, বংশধারা খতম করা, যা সমাজের ভিত্তি হিসেবে গণ্য, বংশ পরিচয়ে সন্দেহ সৃষ্টি, শিশু ধ্বংস, নারী ও স্ত্রীদের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি, বিবাহে অনীহা, নানা প্রকার জটিল রোগ সৃষ্টি ইত্যাদি। তাই সমাজের অধিকার আছে ব্যভিচারীর এসব ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা। ব্যভিচারী তার সাময়িক আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে সমাজের এতসব ক্ষতি সাধন করে। অথচ বিবাহের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় সে তার কামনা চরিতার্থ করতে পারে। বিবাহে অসামর্থ থাকা কিংবা বিবাহ করতে বিলম্ব হওয়ায় তার জন্য ব্যভিচার করা বৈধ হয়ে যায় না। সে যেহেতু সমাজের একজন সদস্য, তাই তাকে এমন স্বচ্ছ পথে চলতে হবে যাতে সমাজের কারো কোনো ক্ষতি না হয়। তাকে বেছে নিতে হবে জীবন যাপনের পবিত্র পথ এবং এ পথে চলার কিছু কষ্ট-ক্লেশ বরণ করতে হবে নিজের ও সমাজের স্বার্থে। শেষ কথা হলো, দুজনের সম্মতিক্রমে ব্যভিচার অনুষ্ঠিত হলেই তা বৈধ হয়ে যায় না এবং তার ফলে সৃষ্ট সমাজের অনিবার্য ক্ষতিও দূর হয় না। এছাড়া ইজ্জত-মর্যাদার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ চলে না, ক্ষতিপূরণ হয় সম্পদের ক্ষেত্রে। এ পর্যন্ত যা বলা হলো, এরপরে কোনো সুবিবেচক কি বলতে পারবেন যে, মানুষকে বন্ধনমুক্তভাবে ছেড়ে দেওয়া হোক আর তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উড়িয়ে পরস্পর ব্যভিচার চর্চা করুক? তাদেরকে শাস্তি দেওয়া দূরে থাক এ কাজ থেকে বারণও করা যাবে না?

৪৮. এরপর অপবাদকারীর বেত্রাঘাত প্রসঙ্গ। অভিযোগ করা হয় যে, বেত্রাঘাতের দ্বারা অপরাধীর মানবাধিকার লংঘন করা হয়। তাদের এ অভিযোগও অগ্রহণযোগ্য-প্রত্যাখ্যাত। কেননা অপবাদকারী অন্যের ওপর অশ্লীলতার মিথ্যা দোষারোপ করে কুৎসা রটিয়েছে। এখন তাকে দোষমুক্ত করার জন্য অপবাদকারীর মিথ্যাকে জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও প্রকাশ্য বেত্রাঘাতের মাধ্যমে মিথ্যার ওপর প্রমাণ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সুতরাং ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে একজনের সম্মানহানি করে সে নিজেকে বেত্রাঘাতের সম্মুখীন করেছে এবং নিজেকে লাঞ্ছিত করেছে।

৪৯. ব্যভিচারী ও অপবাদকারীর শাস্তির মূলতত্ত্ব: ইসলাম মানব সমাজের পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, ইজ্জত-সম্মান ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং সদগুণাবলী বিকাশের প্রতি যত্নবান। এ বিষয়গুলো যখন কাঙ্খিত ও সমাদৃত এবং এর লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করা জরুরী, তখন স্বাভাবিকভাবেই একে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপায় ও মাধ্যমও হবে কাঙ্খিত ও অপরিহার্য। শরী‘আত এ কথাই বলে। পক্ষান্তরে এগুলো যখন কাঙ্খিত ও আকর্ষণীয় থাকে না তখন একে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপায় ও মাধ্যমও গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। যারা এসব শাস্তির ওপর আপত্তি তোলেন তাদের আপত্তির মূল কারণ এ তত্ত্বের মধ্যে নিহিত। ইসলামী শরী‘আত চায় সমাজের পবিত্রতা ও কলুষমুক্ত পরিবেশ। সেই লক্ষে শরী‘আতে ব্যভিচার ও অপবাদের শাস্তি বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। কেননা এ শাস্তির মাধ্যমে সমাজের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকে। অভিযোগকারীগণ সামাজিক পবিত্রতার পরোয়া করে না বা যথাযথ গুরুত্ব দেয় না অথবা তাদের আপত্তির মধ্যেই যে সামাজিক পবিত্রতা না চাওয়ার প্রমাণ নিহিত তা তারা উপলব্ধি করে না। আর সে কারণে তারা এসব আপত্তি উত্থাপন করেন।

দ্বিতীয় আপত্তি

৫০. এ আপত্তি চুরি ও ডাকাতির শাস্তি প্রসঙ্গে। এ শাস্তির মধ্যে আছে হাত ও পা কর্তন, হত্যা ও শূলে চড়ানো। আপত্তিকারীগণ বলেন, অঙ্গচ্ছেদের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া একটি প্রাচীন পদ্ধতি। সে যুগ এখন শেষ এবং সে জীবন প্রণালীও অতীতের গর্ভে বিলীন। যে আধুনিক যুগে আমরা বাস করছি তার চাহিদার সাথে এ শাস্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ জাতীয় শাস্তি সমাজের জন্যও ক্ষতিকর। কেননা এর দ্বারা অপরাধী ব্যক্তি উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এর পরিবর্তে তাকে কারাগারে বন্দী করে রাখাই উত্তম। যেখানে তার প্রশিক্ষণ ও সংশোধনের ব্যবস্থা থাকবে।

৫১. এ আপত্তি অগ্রাহ্য। কারণ, এ পদ্ধতি প্রাচীন -শুধু এ কারণে তাকে মন্দ ও পরিত্যক্ত বলা যায় না। কেননা সকল প্রাচীন যেমন পরিত্যাজ্য নয়, তেমন সকল আধুনিকও গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া আধুনিক আইনে শিরচ্ছেদ করার বৈধতা আছে। আর শির হাতের তুলনায় অধিক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। বড় অঙ্গ যখন কর্তন করা যায় তখন ছোট অঙ্গ কর্তন করা যাবে না কেন? পার্থিব জীবন থেকে দেহ সত্ত্বাকে কর্তন করে ফেলা যখন বৈধ তখন এই দেহের একটা অংশ কর্তন করা বৈধ হবে না কেন?

অভিযোগে বলা হয়েছে, যার হাত কাটা হয় সে সমাজের বোঝা হয়ে যায়। এ কথাটা যেমন সত্য তেমন এ কথাও সত্য যে, হাত কাটা ব্যক্তি সমাজের বোঝা হলেও সমাজে তার অপরাধ করাও বন্ধ হয়ে যায়। হাত বহাল রেখে নিকৃষ্ট হারাম উপার্জনের মতো জঘন্য অপরাধ করার চেয়ে হাত কাটা অবস্থা তার জন্য ও সমাজের জন্য কল্যাণকর।

এরপর থাকে হাত কর্তনের পরিবর্তে তাকে সংশোধন ও প্রশিক্ষণের জন্য জেলখানায় বন্দী করে রাখা প্রসংঙ্গ। এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, জেলখানায় চোরের অবস্থান, বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে অবাধ মেলামেশা ও সরকারী অপ্যায়নের সুযোগে সে আরো বড় চোর হয়ে বেরিয়ে আসে। তাই দেখা যায় জেলখানায় গেলে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া চুরির বদ অভ্যাস কারো বদলায় না; বরং চোরদের জন্য জেলখানা হয়ে যায় এক নিরাপদ বাসস্থান। সেখানে তারা পরস্পর মিলিত হয়ে চুরিসহ অপরাধ জগতের বিভিন্ন সংবাদ আদান প্রদান করে। অন্য দিকে হাত কর্তনের বদৌলতে সমাজ থেকে চুরির প্রবণতা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায় অথবা অন্ততঃ ব্যাপকতা হ্রাস পায়। পৃথিবীর অতীত ইতিহাস আমাদের এ দাবীর স্বপক্ষে জ্বলন্ত সাক্ষী। তখন সমাজের মানুষের নিকট এ শাস্তি বিরাট সুফল বয়ে এনেছিল। যতদিন এ শাস্তি কার্যকর ছিল ততদিন তারা চুরি ও চোরের উপদ্রব থেকে নিরাপদ জীবন লাভ করেছে। এ শাস্তি যখন বিদায় নিল ও কার্যকারিতার পথ রূদ্ধ হলো, তখন পুনরায় চোরের সংখ্যা অধিক হারে বেড়ে গেল এবং চৌর্যবৃত্তির দ্রুত বিস্তার ঘটল। আর এর থেকে জন্ম নিল যুলুম, হত্যার মতো বড় অপরাধ। সুতরাং এ শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করাই মানব গোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর। অতীতে যেমন চুরি দমন করতে এ বিধান সক্ষম হয়েছিল বর্তমানেও দমন করতে তদ্রুপ সক্ষম।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন