মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
৯. ভিত্তি বলতে এখানে সেই ভিত্তির কথা বলা হয়েছে যার ওপর শরী‘আতের শাস্তির বিধান বা শাস্তির দর্শন প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ঐ মূল ভিত্তি যার ওপর দণ্ড নির্ভর করে। অন্য কথায়, যার ওপর গোটা ইসলামী শরী‘আত দাঁড়িয়ে আছে। কেননা দণ্ড ও শাস্তি পূর্ণাঙ্গ শরী‘আতের একটি অংশ ও দিক মাত্র। আর ইসলামী শরী‘আত যেমন সকল দিককে পরিবেষ্টন করে তেমনি এর সকল অংশকে সুবিন্যস্ত করে। তাই এর এক অংশের সাথে অন্য অংশের কোনো অমিল বা বিরোধ নেই। যেহেতু এর সকল অংশ এক মহান উদ্দেশ্য সাধনে সদা তৎপর তাই এর জন্য মহান ও একক ভিত্তি থাকাও জরুরী। কী সেই ভিত্তি? নিম্নের আয়াতে আমরা তার সন্ধান পাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।”[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭]
এ আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, শরী‘আত বা ইসলামী বিধান, যার মধ্যে দণ্ড বা শাস্তি অন্যতম এর ভিত্তি হলো রহমত বা দয়া। অর্থাৎ বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া। তিনি মহা-মহীম, রহমানুর রাহীম-দয়ার সাগর। সব কিছুকেই তাঁর দয়া পরিবেষ্টন করে আছে। আলেমগণ বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে রহমান নামে অভিহিত করা যায় না। বলা বাহুল্য, অপরাধীর শাস্তি বিধান যেহেতু শরী‘আতেরই একটি অংশ। তাই এ শাস্তিও বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত ও দয়া হিসেবে গণ্য।
১০. রহমত বা দয়ার অপরিহার্য দাবি-মানুষের জন্য যা মঙ্গল ও কল্যাণ তা তাকে প্রদান করা এবং যা ক্ষতি ও অকল্যাণ তা তাদের থেকে দূর করা। রহমতের এ দাবি এবং তার অন্তর্নিহিত অর্থ শরী‘আতে পূর্ণভাবে বিদ্যমান। কুরআন ও হাদীছের বর্ণনা সে দাবিকেই প্রতিষ্ঠিত করে। বহু সংখ্যক আলেম তাদের অভিজ্ঞান দ্বারা এ নিগুঢ় তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। প্রসিদ্ধ ফকীহ ইয ইবন আব্দুস সালাম রহ. বলেন,
إن الشريعة كلها مصالح أما درء مفاسد أو جلب مصالح .
“ইসলামী বিধান পুরোটাই কল্যাণময়। এর দ্বারা এক দিকে অশান্তি দূর হয়, অন্যদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।” [ইয ইবন আবদুস সালাম, কাওয়াইদুল আহকাম, পৃ-৫।]
ইমামকূল শিরোমনি শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
إن الشريعة الإسلامية جاءت بتحصيل المصالح وتكميلها وتعطيل المفاسد وتقليلها .
“ইসলামী শরী‘আতের আগমন হয়েছে শান্তি দান ও তার পূর্ণতা সাধনে এবং অশান্তি বিলোপ ও তার মূলোৎপাটন ঘটাতে।” [ইবন তাইমিয়া, মিনহাজুস সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, পৃ-১৩১।]
মহান ফকীহ ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
الشريعة مبناها وأساسها على الحكم ومصالح العباد في المعاش والمعاد وهي عدل كلها ورحمة ومصالح كلها وحكم كلها .
“শরী‘আতের ভিত্তি রচিত হয়েছে বান্দার ইহ ও পরলৌকিক কল্যাণ বিবেচনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে। এর পুরোটাই ইনসাফ ও রহমতে পূর্ণ, পুরোটাই কল্যাণ ও প্রজ্ঞা সমৃদ্ধ।” [ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন, ৩য় খণ্ড, পৃ-২।]
১১. যখন সাব্যস্ত হলো যে, রহমতের দাবী মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা প্রদান করা এবং যা ক্ষতিকর তা দূর করা, তখন অনায়াসে এ কথাও বলা যায় যে, শরী‘আতের ভিত্তি বা দর্শনও (যার মধ্যে শাস্তির বিধানও অন্তর্ভুক্ত) মানুষের জন্য যা হিতকর তার ব্যবস্থা করা এবং যা ক্ষাতিকর তা দূরিভূত করা।
১২. মানব জাতির কল্যাণ কিসে নিহিত তা কেবল শরী‘আতে ইসলামীয়া থেকেই জানা সম্ভব। অর্থাৎ ইসলামী শরী‘আতই হচ্ছে কল্যাণের তুলাদণ্ড। সুতরাং শরী‘আত যাকে কল্যাণ ও উপকারী বলে সাক্ষ্য দেয় সেটা অকাট্যরূপে মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং যাকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করে সেটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ মানদণ্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ প্রবৃত্তির অনুসরণ করা ও আপন খেয়াল-খুশী মতো চলা। এটা একান্তই ভুল ও বাতিল পথ, যা কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের মাপকাঠি হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে দাউদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব, তুমি তোমার লোকদের মধ্যে ন্যায়-নীতি দ্বারা শাসন কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে।” [সূরা সদ, আয়াত: ২৬]
হক বা ন্যায়নীতি হলো সে পথ যা আল্লাহ নাযিল করেছেন। পথ মাত্র দুটো -সত্য পথ ও প্রবৃত্তির কামনার পথ। সত্য পথ, যেটা আল্লাহ তার বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এর বাইরে যা কিছু আছে সবই প্রবৃত্তির কামনা। প্রবৃত্তির পথ হচ্ছে ভুল ও বাতিল। এ পথে রয়েছে মানুষের জন্য শুধুই ক্ষতি ও দুর্ভোগ। সুতরাং আল্লাহর নাযিলকৃত ও আপন বান্দাগণের জন্য নির্ধারিত পথের অনুসরণ এবং এর বাইরের সকল পথ পরিহার করার মধ্যেই রয়েছে মানবতার আসল কল্যাণ।
১৩. মানব জাতির প্রকৃত কল্যাণ পাঁচটি জিনিস হিফাজত করার মধ্যে নিহিত,। সেগুলি হলো -দীন, জীবন, বিবেক, বংশধারা ও সম্পদ। বিজ্ঞ আলেমগণ এগুলোকে কল্যাণের মৌলিক স্তর হিসেবে গণ্য করেন। এগুলো সংরক্ষণ ও লালন করার ব্যাপারে সকল জাতি একমত। কেননা এগুলো বিলুপ্ত হলে মানব সভ্যতার চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। এগুলো শেষ হয়ে গেলে মানব জীবন আর টিকে থাকতে পারে না। তাই ইসলামী শরী‘আতে এগুলোর বিলোপ সাধন বা সীমালঙ্ঘন করাকে হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ইমাম গাযালী রহ. তাই এ পাঁচটি বিষয়ের হিফাজত সম্পর্কে বলেন,
فكل ما يتضمن حفظ هذه الأصول الخمسة فهو مصلحة، وكل ما يفوت هذه الأصول فهو مفسدة ودفعها مصلحة ... ثم قال : وتحريم تفويت هذه الأمور الخمسة والزجر عنه يستحيل ألا تشتمل عليه ملة من الملل وشريعة من الشرائع التي أريد بها إصلاح الخلق : ولذا لم تختلف الشرائع في تحريم الكفر والقتل والزنا والسرقة وشرب المسكر .
“এ পাঁচটি মৌলিক বিষয় সংরক্ষণ করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তাই হলো –কল্যাণ। আর যেসব কর্মকাণ্ডের দ্বারা এগুলোর বিলুপ্তি ঘটে তাই হলো অকল্যাণ। এরপর তিনি বলেন, মানব কল্যাণে রচিত সকল জাতির সকল বিধানে এ পাঁচটি বিষয় ক্ষুন্ন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই কোনো শরী‘আতেই কুফর, হত্যা, ব্যাভিচার, চুরি ও মাদক হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতোবিরোধ নেই।”
১৪. ব্যক্তির বুনিয়াদি সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলামী শরী‘আত মানুষের এ মৌলিক কল্যাণসমূহ সংরক্ষণ করে তার মনজিলে মাকসূদ পর্যন্ত পৌঁছে। ইসলাম ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষকে তার ভিতর থেকে সংশোধন শুরু করে। ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও মূলনীতির ভিত্তিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, ধ্যান-খেয়ালে তাঁকে স্মরণ রাখা ও ভয় করা শেখায়। তিনি সর্বক্ষণ (জ্ঞানে, পর্যবেক্ষণে ও শক্তিতে) তার সঙ্গে আছেন এ অনুভূতি তার অন্তরে সৃষ্টি করে দেয়। ফলে সে সর্বদা উপলব্ধি করতে থাকে যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন, তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনা সম্পর্কে অবহিত আছেন এবং তার অঙ্গ-প্রতঙ্গ যে সব কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে -কোনো মানুষ না জানলেও তিনি তা জানেন। আল্লাহ তার কার্যাবলী সংরক্ষণ করছেন এবং কিয়ামতের দিন এর ভিত্তিতে বিচার করবেন। আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করা থেকে যখন সে রেহাই পাচ্ছে না, তখন দুনিয়ার শাস্তি ও মানুষের বিচার থেকে ছাড়া পেলেও বা তার লাভ কী? ব্যক্তি পর্যায়ে ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে এ সংশোধনী দ্বারা বান্দার আত্মিক অবস্থার ক্রমাগত উন্নতি লাভ হয়। সে আর কেবল আল্লাহকে ভয় করার স্তরে আটকে থাকে না; বরং সহসা এ স্তর অতিক্রম করে যায় অথবা ভালোবাসার স্তরের সাথে যুক্ত হয়। ফলে সে দ্রুত আল্লাহর আনুগত্যের দিকে অগ্রসর হয় এবং তাঁর কোনো হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ প্রেমিকের অবস্থা তো এ রকমই হয় যে, সে তার প্রেমাষ্পদের আনুগত্য করবে, কোনো ব্যাপারেই তার অবাধ্য হবে না এবং যা সে পছন্দ করে দ্রুত সে দিকে এগিয়ে যাবে। সন্দেহ নেই, ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে গৃহীত ব্যক্তি পর্যায়ের এ প্রশিক্ষণ অচিরেই তার মধ্যে ভালো কাজের প্রতি অনুরাগ ও মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করবে এবং শরী‘আতের বিরোধিতা করা ও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। ব্যক্তি ও সমষ্টির মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য এটিই হচ্ছে নিশ্চিত ও মোক্ষম ব্যবস্থা। উপরন্তু ব্যক্তির সংশোধন ছাড়া ইসলামী শরী‘আত সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, সমাজ পবিত্র করা এবং সমাজ থেকে অশান্তি ও বিপর্যয় দূর করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এ পর্যায়ে এসে ‘আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার’ তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কার্যকর হয়। এটা অনস্বীকার্য যে, একটা পবিত্র সমাজ ব্যক্তি পর্যায়ে সংশোধনী কার্যাবলীর পূর্ণতা বিধানে বিশাল অবদান রাখে। সেই সাথে সমাজে কোনো অপরাধ যাতে সংঘটিত না হয় এবং তার ফলে ব্যক্তি ও সমষ্টির শান্তি বিঘ্নিত না হয় সে দিকে কড়া নজর রাখে। অতএব, দেখা যাচ্ছে, ইসলামী বিধান অনুযায়ী ব্যক্তির অভ্যন্তরীন সংশোধন ও সমাজ সংস্কারকরণ এমন দু’টি মজবুত স্তম্ভ, যার মাধ্যমে মানব জাতির কল্যাণ সাধন ও অকল্যাণ দমন নিশ্চিত হয়।
১৫. কিন্তু এতদসত্ত্বেও কিছু লোকের মধ্যে দুর্বলতা থেকে যায়। ইসলামের এ সংশোধন পদ্ধতি তাদের ক্ষেত্রে ফলদায়ক হয় না। ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অন্যের ওপর যুলুম করে ও তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে ও ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা করতে ব্যক্তি সংশোধনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বন জরুরী হয়ে পড়ে। সে উপায় হিসাবে ইসলামে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এ শাস্তির ভিত্তিও সেই মূল উৎস যার ওপর গোটা ইসলামী শরী‘আত প্রতিষ্ঠিত অর্থাৎ মানুষের প্রতি রহমত ও দয়া প্রদর্শন। শাস্তির মধ্যে দুঃখ-যন্ত্রণা থাকলেও এটা রোগীর তিক্ত ও কটু ঔষধের সাথে তুলনীয়। ঔষধের তিক্ত গুণের পিছনে উদ্দেশ্য থাকে রোগীর সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
شرعت رحمة من الله تعالى بعباده فهي صادرة عن رحمة الخالق وإرادة الإحسان إليهم ولهذا ينبغي لمن يعاقب الناس على ذنوبهم أن يقصد بذلك الإحسان إليهم كما يقصد الوالد تأديب ولده وكما يقصد الطبيب معالجة المريض .
“শাস্তির বিধান মূলত বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত। বান্দাহর প্রতি সদয় করুণা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তার দয়া থেকে এর প্রকাশ। এ জন্য যে ব্যক্তি মানুষকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেয় সে যেন এর দ্বারা তাদের প্রতি ইহসান ও কল্যাণের মনোভাব পোষণ করে। যেমন সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার মধ্যে পিতার উদ্দেশ্য থাকে আদব শিক্ষা দেওয়া এবং ঔষধ সেবনে ডাক্তারের উদ্দেশ্য থাকে রোগীকে আরোগ্য দান করা।”
শাফে‘ঈ মাযহাবের বিশিষ্ট ফকীহ আল্লামা মাওয়ারদী তা‘যীর (তিরষ্কার, শিক্ষামূলক শাস্তি) সম্পর্কে এক আলোচনায় বলেন, এটাও এক প্রকার দণ্ড। এটা মানুষকে সংশোধন হওয়ার ও সতর্ক থাকার শিক্ষা দেয়। [আল আহকাম আস-সুলত্বানিয়া লিল-মাওয়ারদি, পৃ-২১৩।]
মোটকথা: শাস্তির ভিত্তি হলো মানবতার কল্যাণ সাধন এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন। এর দ্বারা অপরাধীকে যদিও কিছুটা দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়; কিন্তু তা শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার অন্তরায় নয়। আরো স্পষ্ট কথা এই যে, শাস্তির যন্ত্রণা মানুষকে অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত রাখে। আর অপরাধ থেকে বিরত থাকলেই ব্যক্তি ও সমাজে শান্তি বিরাজ করে। কেউ যদি অন্যায় কাজে জড়িত হয় এবং এ জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে এই শাস্তি দেওয়ার মধ্যে সমাজের কল্যাণ নিহিত থাকে। কেননা এর দ্বারা সমাজে সৃষ্ট অপরাধ অপসারিত হয় এবং এর যে অংশটি নষ্ট হয়েছিল তার মূলোচ্ছেদ হয়ে যায়। আর এটা সবার জন্য কল্যাণকর। এমনকি অপরাধী ব্যক্তির জন্যও। অপরাধীর জন্য কল্যাণ এই যে, শাস্তি ভোগের পরে তার অনুভূতিতে স্বীয় অন্যায়, পাপ ও আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার অনুতাপ উদয় হয় এবং উপদেশ-অনুরোধ কাজে না লাগাবার ত্রুটি বুঝতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পাপের উপলব্ধি ও অনুভূতি অপরাধীর অন্তরে ঈমান জাগ্রত করে দেয়। ফলে সে তওবায়ে নাসূহা করতে সমর্থ হয় এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটায় না। অনেক পাপী ব্যক্তিকে দেখা গেছে শাস্তি ভোগের পরে পাপ করার পূর্বে সে যেমন ছিল তার চেয়েও অধিক ভালো হয়ে গেছে। সুতরাং শাস্তি তার জন্য কল্যাণ ও সংশোধনের সফল মাধ্যম হিসেবে গণ্য। শাস্তি ভোগের পরে যদি সে তাওবায়ে নাসূহা করতে সক্ষম না-ও হয়, তবুও অন্তত এতটুকু সাবধান ও সতর্ক হয়ে যায় যে, পুনরায় এ অপরাধ করলে প্রথমবারের মতো আবার শাস্তি ভোগ করতে হবে। দেখা যাচ্ছে অন্তরে শাস্তির ভয় থাকা এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি না করাও তার জন্য এক প্রকার কল্যাণ এবং এটা তার প্রথম বারের শাস্তিরই সুফল। আর যদি সে এর পুনরাবৃত্তি ঘটায় তাহলে তা অন্যদেরকে সে কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং সবার জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। ফলে এ ক্ষেত্রেও সামাজিক কল্যাণ সুরক্ষিত হবে।
এখানে কল্যাণের বিভিন্ন দিক রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো উক্ত অপরাধী অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করলে এবং দ্বিতীয়বার শাস্তি দেওয়া হলে তার যতটুকু ক্ষতি হয় তার চেয়ে অন্যরা যে শিক্ষা পায় তার গুরুত্ব অনেক বেশী। নিয়ম হচ্ছে, কোনো ক্ষেত্রে কল্যাণ ও ক্ষতি একত্রিত হয়ে গেলে বৃহত্তর কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিতে হয়, যদিও তাতে ক্ষতির কিছু দিকও বিদ্যমান থাকে। এ কারণে ইসলামী শরী‘আত শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে আসল অপরাধী যাতে শাস্তি পায় সে ব্যাপারে বিচারককে দূরদর্শিতা অবলম্বন করতে, অনুকম্পা না দেখাতে কিংবা রহমত ও দয়ার দোহাই দিয়ে শাস্তি মওকূফ না করতে কঠিনভাবে তাকিদ দিয়েছে। রহমতের উদ্দেশ্য কেবল করুণা প্রদর্শন করা নয়; বরং এর উদ্দেশ্য মানব সম্প্রদায়ের উপকার ও কল্যাণ সাধন করা, যদিও সে পথটি হয় অতি তিক্ত ও বিস্বাদ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী -এদের প্রত্যেককে একশত করে কশাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও। আর মুমিনদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” [সূরা আন-নূর: ২]
ডাক্তার যদি রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করে এবং চিকিৎসার জন্য জন্য গরম লোহা দ্বারা শরীরে দাগ দেওয়া আবশ্যক হলেও দয়া দেখিয়ে তা থেকে বিরত থাকে, তাহলে এ দয়া রোগীকে মৃত্যুর ঘাটে পৌঁছে দিবে। তখন ডাক্তারকে রোগী ও তার পরিবারের জন্য দয়ার্দ্র না বলে বলা হবে নির্দয়-নিষ্ঠুর, চিকিৎসার কাজে চরম অবহেলাকারী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/370/3
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।