hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দরসের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান

লেখকঃ শাইখ আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায

২১
অষ্টাদশ দরস: মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন
মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থাপনা ও জানাযার সালাত পড়া।

নিম্নে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

মৃতের জন্য করণীয়:

প্রথমত: কোনো ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন হলে তাকে কালেমা তালকীন দিবে। অর্থাৎ তাকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দিবে। রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ»

“তোমরা তোমাদের মূমুর্ষ ব্যক্তিদেরকে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ শিক্ষা দাও।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১৬।]

এ হাদীসে মৃতদের বলতে ঐ সব মরণাপন্ন লোকদের কথা বলা হয়েছে যাদের ওপর মৃত্যুর লক্ষণাদি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয়ত: কোনো মুসলিমের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার চক্ষুদ্বয় মুদিত এবং মুখ বন্ধ করে দিতে হয়।

তৃতীয়ত: মৃত মুসলিমনের গোসল করানো ওয়াজিব। তবে যুদ্ধের ময়দানে মৃত শহীদের গোসল করানো হয় না, না তার ওপর জানাযার সালাত পড়া হয়; বরং তার পরিহিত বস্ত্রেই তাকে দাফন করা হয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধে মৃতদের গোসল করান নি এবং তাদের ওপর সালাতও পড়েন নি।

চতুর্থত: মৃতের গোসল করানোর পদ্ধতি। গোসল করানোর সময় প্রথমে মৃত ব্যক্তির লজ্জাস্থান ডেকে নিবে। তারপর তাকে একটু উঠিয়ে আস্তে আস্তে তার পেটের ওপর চাপ দিবে। পরে গোসলদানকারী ব্যক্তি নিজের হাতে একটা নেকড়া বা অনুরূপ কিছু পেঁচিয়ে নিবে, যাতে মৃতের মলমুত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করে নিতে পারে। তারপর মৃত ব্যক্তিকে সে সালাতের অযু করাবে এবং তার মাথা ও দাঁড়ি বরই পাতা বা অনুরূপ কিছুর পানি দিয়ে ধৌত করবে। অতঃপর তার দেহের ডান পার্শ্ব, তারপর বাম পার্শ্ব ধৌত করবে। এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ধৌত করবে। প্রতিবার হাত দিয়ে পেটের ওপর চাপ দিবে। কিছু বের হলে তা ধৌত করে নিবে এবং তুলা বা অনুরূপ কিছু দিয়ে স্থানটি বন্ধ করে রাখবে। এতে যদি বন্ধ না হয় তাহলে পোড়ামাটি অথবা আধুনিক কোনো ডাক্তারি পদ্ধতি অনুসারে যেমন প্লাস্টার বা অন্য কিছু দিয়ে বন্ধ করতে হবে এবং পুনরায় অযু করাবে। যদি তিনবারে পরিষ্কার না হয় তাহলে পাঁচ থেকে সাতবার ধৌত করাবে। এরপর কাপড় দ্বারা শুকিয়ে নিবে এবং সাজদার অঙ্গ ও অপ্রকাশ্য স্থানসমূহে সুগন্ধি লাগাবে। আর যদি সকল শরীরে সুগন্ধি লাগানো যায় তাহলে আরও ভালো। এই সাথে তার কাফনগুলো ধুপ-ধুনা দিয়ে সুগন্ধি করে নিবে। যদি তার গোফ বা নখ লম্বা থাকে তা কেটে নিবে, তবে চুল বিন্যাস করবে না। স্ত্রীলোক হলে তার চুল তিন গুচ্ছে বিভক্ত করে পিছনের দিকে ছেড়ে রাখবে।

পঞ্চমত: মৃতের কাফন

সাদা বর্ণের তিনখানা কাপড়ে পুরুষের কাফন দেওয়া উত্তম। জামা বা পাগড়ী এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাফন দেওয়া হয়েছিল। মৃতকে এর ভিতরে পর্যায়ক্রমে রাখা হবে। একটি জামা, একটি ইযার ও একটা লিফাফার দ্বারা কাফন দিলেও চলে। স্ত্রীলোকের কাফন পাঁচ টুকরা কাপড়ে দেওয়া হবে, সেগুলো হলো চাদর, মুখাবরণ, ইযার ও দুই লিফাফা। ছোট বালকের কাফন এক থেকে তিন কাপড়ের মধ্যে দেওয়া যায় এবং ছোট বালিকার কাফন এক জামা ও দুই লিফাফায় দেওয়া হয়। সকলের পক্ষে একখানা কাপড়ই ওয়াজিব যা মৃতের সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় হলে তাকে বরই পাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসল দিতে হয় এবং তাকে তার ইযার ও চাদর অথবা অন্য কাপড়ে কাফন দিলেও চলবে। তবে তার মস্তক ও চেহারা আবৃত করা যাবে না বা তার কোনো অঙ্গ সুগন্ধিও লাগানো যাবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত আছে। আর যদি মুহরিম স্ত্রীলোক হয় তাহলে অন্যান্য স্ত্রীলোকের ন্যায় তার কাফন হবে। তবে তার গায়ে সুগন্ধি লাগানো যাবে না এবং নেকাব দিয়ে চেহারা বা মোজা দিয়ে তার হস্তদ্বয় কাফনের কাপড় দিয়েই আবৃত করা হবে। ইতোপূর্বে মেয়ে লোকের কাফন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

যষ্ঠত: মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় যাকে অসিয়্যত করে যাবে সেই হবে তার গোসল, দাফন করা ও তার ওপর জানাযার সালাত পড়ার অধিকতর হকদার। তারপর তার পিতা, তারপর তার পিতামহ, তারপর তার বংশে অধিকতর ঘনিষ্ঠ লোকের হক হবে। এভাবে স্ত্রীলোক যাকে অসিয়্যত করবে সেই হবে উপরোক্ত কাজগুলো সম্পাদনের অধিকতর হকদার। তারপর তার মাতা, তারপর দাদী, তারপর পর্যায়ক্রমে বংশের অধিকতর ঘনিষ্ঠ মেয়েরা হবে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে একে অপরের গোসল দিতে পারে। আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াআল্লাহু ‘আনহুকে তার স্ত্রী গোসল দিয়েছিলেন এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার স্ত্রী ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে গোসল দিয়েছিলেন।

সপ্তমত: মৃতের ওপর সালাত পড়ার পদ্ধতি: (জানাযার সালাত) জানাযার সালাতে চার তাকবীর দেওয়া হয়। প্রথম তাকবীরের পর সূরা আল-ফাতিহা পড়া হয়। এর সাথে যদি ছোট কোনো সূরা বা দু এক আয়াত কুরআন মাজীদ পড়া হয় তাহলে ভালো। কারণ, এ সম্পর্কে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। এরপর দ্বিতীয় তাকবীর দেওয়া হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সে দুরূদ পড়তে হয় যা সালাতে তাশাহুহদের (আত্তাহিয়্যাতুর) সাথে পড়া হয়। তারপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে নিম্ন লিখিত দো‘আ করা হয়:

«اَللهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا ، وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا، وَغَائِبِنَا، وَصَغِيْرِنَا وَ كَبِيْرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا . اللهُمَّ مَنْ أَحيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإيْمَان- اَللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْنَ، وَعَافِه وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنْقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسٍِ ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ الْجَنًةَ - وَأعِذْهُ مِنَ عَذَابِ الْقَبْرِ [ وَعَذَابِ النَّارِ ] وَأَفْصِحْ لَهُ فِيْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ- اللهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أجْرَهُ وَلا تُضِلْنَا بَعْدَه»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদীনা ওয়া গাইবিনাওয়া সাগিরীনা ওয়াকাবিরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফা আহয়্যিহী-আলাল ইসলাম, ওয়ামান তাওয়াফ্‌ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্‌ফাহু আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি, ওয়া আ‘ফু আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহুওয়াছ্‌ছি’ মুদকালাহু, ওয়া আগছিলহু বিলমা-ঈ ওয়াস্‌ সালজি ওয়াল বারদি। ওয়া নাক্কিহি মিনাল খাতয়া কামা য়ূনাক্কাস্‌ সাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্‌দানাছি, ওয়া আবদিলহু দারান কাইরাম্‌ মিন্‌ দারিহী ওয়া আহলান কাইরাম্‌ মিন আহলিহী, ওয়া যাওজান কায়রাম মিন্‌ যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইযহু মিন আযাবিল ক্বাবরি (ওয়া আযাবিন্নারি), ওয়া আফসিহ লাহু ফি ক্বাবরিহি ওয়া নাওয়ীর লাহু ফিহি, আল্লাহুম্মা লা তুহরিম না ওয়া জরাহু তুজিল্লানা বা’দাহু।”

“হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত, ও অনুপস্থিত, ছোট, ও বড়, নর ও নারীদিগকে ক্ষমা করো, হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদের তুমি জীবিত রেখেছ তাদেরকে ইসলামের ওপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান করো তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করো। হে আল্লাহ! তুমি এই মৃত্যুকে ক্ষমা করো, তার ওপর রহম করো, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখো, তাকে মার্জনা করো, মর্যাদার সাথে তার আতিথেয়তা করো। তার বাসস্থানটি প্রশস্ত করে দাও, তুমি তাকে ধৌত করে দাও, পানি বরফ ও শিশির দিয়ে, তুমি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করো যেমন সাদা কাপড় ধৌত করে ময়লা বিমুক্ত করা হয়। তার এ (দুনিয়ার) বাসস্থানের বদলে উত্তম বাসস্থান প্রদান করো, তার এ পরিবার থেকে উত্তম পরিবার দান করো, তার এই স্ত্রী থেকে উত্তম স্ত্রী দান কর, তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। তার কবর প্রশস্ত করে দাও এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও। তার কবর প্রশস্ত করে দাও এবং তার জন্য তা আলোকিত করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত করো না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না।

অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে ডান দিকে এক সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয়।

জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে হাত উঠানো মুস্তাহাব। যদি মৃত ব্যক্তি পুরুষ হয় তাহলে الخ ... اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُ বলবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি মহিলা হয় তাহলে এর পরিবর্তে اَللهُمَّ اغْفِرْلَهَا .... الخ অর্থাৎ স্ত্রীলিঙ্গের সর্বনাম যোগ করে পড়তে হয়। আর যদি মৃতের সংখ্যা দুই হয় তাহলে اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُمَا .. الخ এবং এর বেশি হলে الخ .... اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُمْ অর্থাৎ সংখ্যা হিসেবে সর্বনাম ব্যবহার করতে হয়।

মৃত যদি শিশু হয় তাহলে উপরোক্ত মাগফিরাতের দো‘আর পরিবর্তে এই দো‘আ পড়া হবে:

«اللهُمَّ اجْعَلْهُ فَرْطًا وَّذُخْرًا لِوَالِدَيْهِ . وَشَفِيْعًا مُجَابًا . اللهُمَّ ثَقَّلْ بِهِ مَوَازِيْنَهُمَا وَأعْظِمْ بِهِ أجُوْرَهُمَا . وَألْحِقْهُُ بِصَالِحِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَاجْعَلْهُ فِيْ كِفَالَةِ إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ . وَقِهِ بِرَحْمَتكَ عَذَابَ الْجَحِيْمِ»

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাজ্‌ আলহু ফারাতান ওয়া জুখরান লিওয়ালিদাইহি, ওয়া শাফীআন মুাবা। আল্লাহুম্মা ছাক্কিলবিহী মাওয়াযীনাহুমা- ওয়া আ’জিম বিহী উজু-রাহুমা-, ওয়া আলহিকুহু বিসা-লিহিল মু’মিনীন ওয়া আজআলহু ফী কিফা- লাতি ইব্রাহিমা আলাইহিস সলাম, ওয়াক্বিহী বিরাহমাতিকা আযাবাল জাহীম।”

অর্থ: “হে আল্লাহ ! এই বাচ্ছাকে তার পিতা-মাতার জন্য “ফারাত” (অগ্রবর্তী নেকী) ও “যুখর” (সযত্নে রক্ষিত সম্পদ) হিসাবে কবুল করো এবং তাকে এমন সুপারিশকারী বানাও যার সুপারিশ কবুল করা হয়। হে আল্লাহ ! এই (বাচ্চার) দ্বারা তার পিতা-মাতার সওয়াবের ওজন আরও ভারী করে দাও এবং এর দ্বারা তাদের নেকী আরও বড় করে দাও। আর একে নেক্‌কার মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও এবং ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জিম্মায় রাখো, একে তোমার রহমতের দ্বারা জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও।”

সুন্নাত হলো, ইমাম মৃত পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে এবং স্ত্রীলোক হলে তার দেহের মধ্যাংশ বরাবর দাঁড়াবে।

মৃতের সংখ্যা একাধিক হলে পুরুষের মৃতদেহ ইমামের নিকটবর্তী থাকবে এবং স্ত্রীলোকের মৃতদেহ কিবলার নিকটবর্তী থাকবে। তাদের সাথে বালক-বালিকা হলে পুরুষের পর স্ত্রীলোকের আগে বালক স্থান পাবে, তারপর স্ত্রীলোক এবং সর্বশেষে বালিকার স্থান হবে। বালকের মাথা পুরুষের মাথা বরাবর এবং স্ত্রীলোকের মধ্যাংশ পুরুষের মাথা বরাবর রাখা হবে। এভাবে বালিকার মাথা স্ত্রীলোকের মাথা বরাবর এবং বালিকার মধ্যাংশ পুরুষের মাথা বরাবর রাখা হবে। সব মুছাল্লীগণ ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। তবে যদি কোনো লোক ইমামের পিছনে দাঁড়াবার স্থান না পায় তাহলে সে ইমামের ডান পার্শ্বে দাঁড়াতে পারে।

অষ্টমত: মৃতের দাফন প্রক্রিয়া:

শরীয়ত মতে কবর একজন পরুষের মধ্যভাগ পরিমাণ গভীর এবং কেবলার দিক দিয়ে লহদ (বগলী কবর) আকারে করতে হবে। মৃতকে তার ডান পার্শ্বের ওপর সামান্য কাত করে লাহাদে শায়িত করবে। তারপর কাফনের গাঁইট খুলে দিবে, তবে কাপড় খুলবে না, বরং এভাবেই ছেড়ে দিবে। মৃত ব্যক্তি পুরুষ হোক আর নারী হোক কবরে রাখার পর তার চেহারা উন্মুক্ত করা যাবে না। এরপর ইট খাড়া করে সেগুলো কাদা দিয়ে জমাট করে রাখবে, যাতে ইটগুলো স্থির থাকে এবং মৃতকে পতিত মাটি থেকে রক্ষা করে।

যদি ইট না পাওয়া যায় তাহলে অন্য কিছু যেমন, তক্তা, পাথর খণ্ড অথবা কাঠ মৃতের ওপর খাড়া করে রাখবে যাতে মাটি থেকে তাকে রক্ষা করে। তারপর এর ওপর মাটি ফেলা হবে এবং এই মাটি ফেলার সময়:

«بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ»

“আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীনের ওপর রাখলাম” বলা মুস্তাহাব। কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করবে এবং এর উপরে সম্ভব হলে কঙ্কর, পানি ছিটিয়ে দিবে।

মৃতের দাফন করতে যারা শরীক হবে তাদের পক্ষে কবরের পার্শ্বে দাড়িয়ে মৃতের জন্য দো‘আ করার বৈধতা রয়েছে। এর প্রমাণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাফন কাজ শেষ করতেন তখন তিনি কবরের পার্শে দাঁড়াতেন এবং লোকদের বলতেন “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতে কামনা কর এবং ঈমানের ওপর ছাবেত থাকার জন্য দো‘আ কর; কেননা, এখনই তার সওয়াল-জওয়াব শুরু হচ্ছে।”

নবমত: দাফনের পূর্বে যে মৃতের ওপর সালাত পড়ে নেই সে দাফনের পর সালাত পড়তে পারে। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেছেন। তবে এ সালাত একমাস সময়ের মধ্যে হতে হবে, এর বেশি হলে কবরের ওপর সালাত পড়া বৈধ হবে না। কেননা, দাফনের একমাস পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মৃতের ওপর সালাত পড়েছেন এমন কোনো হাদীস পাওয়া যায় না ।

দশমত: উপস্থিত লোকদের জন্য মৃতের পরিবার-পরিজনের পক্ষে খাদ্য প্রস্তুত করা জায়েয নয়। প্রসিদ্ধ সাহাবী জারীর ইবন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “মৃতের পরিবার-পরিজনের নিকট সমবেত হওয়া এবং দাফনের পর খাদ্য প্রস্তুত করাকে আমরা মৃতের ওপর ‘নিয়াহা’ (বিলাপ) বলে গণ্য করতাম।”(এ হাদীস ইমাম আহমদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।) তবে মৃতের পরিবার-পরিজনের জন্য বা তাদের মেহমানদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করতে আপত্তি নেই। এভাবে তাদের জন্য মৃতের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে খাদ্য সরবরাহ করা জায়েয আছে। এর প্রমাণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যখন জা‘ফর ইবন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে তখন তিনি স্বীয় পরিবারবর্গকে বললেন: “জাফর পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠাও।” আরও বললেন যে, “তাদের ওপর এমন মুসিবত নেমে আসছে যা তাদেরকে খাদ্য প্রস্তুত থেকে বিরত করে ফেলেছে।”

মৃতের পরিবার-পরিজনের জন্য যে খাদ্য পাঠানো হয় তা খাওয়ার জন্য প্রতিবেশীদের বা অন্যদের আহবান করা বৈধ। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে বলে আমাদের জানা নেই।

একাদশতম: কোনো স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বামী ব্যতীত অপর কোনো মৃতের ওপর তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ জায়েয নয়। স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বামীর ওপর চারমাস দশ দিন পর্যন্ত শোক প্রকাশ ওয়াজিব। তবে গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত শোক পালন করতে হয়। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস আছে।

পুরুষের পক্ষে কোনো মৃতের ওপর সে আত্মীয় হোক আর অনাত্মীয় হোক শোক পালন জায়েয নয়।

দ্বাদশতম: সময়ে সময়ে পুরুষদের পক্ষে কবর যিয়ারত করা সুন্নাত এবং এর উদ্দেশ্য হবে মৃতদের জন্য দো‘আ, রহমত কামনা, মরণ এবং মরণোত্তর অবস্থা স্মরণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা, তা তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে” (সহীহ মুসলিম)

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে শিক্ষা দিয়ে বলতেন যে, তারা যখন কবর যিয়ারতে যাবে তখন যেন বলে:

«اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهْلَ الدَّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهَ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ، نَسَأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيْةَ، يَرْحَمُ الله الْمُسْتَقْدِمِيْنَ وَالْمُسْتَأَخِرِيْنَ»

উচ্চারণ: “আস্‌সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ্‌ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীন ওয়াল মুসলিমীন, ওয়া ইন্না ইন্‌শা আল্লাহু বিকুম লাহিকুন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আফিয়াহ, ইয়ার হামুল্লাহুল্‌ মুস্‌তাকদিমীনা ওয়াল মুস্‌তাখিরীন।”

অর্থ: “তোমাদের প্রতি সালাম হোক হে কবরবাসী মু’মিন-মুসলিমগণ, ইনশা আল্লাহ আমরাও অবশ্যই তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি, আমরা আমাদের এবং তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। আল্লাহ অগ্রগামী পশ্চাৎগামী আমাদের সবার প্রতি দয়া করুন।”

মেয়ে লোকের পক্ষে কবর যিয়ারত বৈধ নয়। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারীনী নারীদের অভিশাপ করেছেন। এতদ্ব্যতীত মেয়েদের কবর যিয়ারতে ফেতনা ও অধৈর্য সৃষ্টির ভয় রয়েছে। এভাবে মেয়েদের পক্ষে কবর পর্যন্ত জানাযার অনুগমন করাও বৈধ নয়। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এথেকে বারণ করেছেন। তবে মসজিদে বা অন্য কোনো স্থানে মৃতের ওপর জানাযার সালাত পড়া নারী পুরুষ সকলের জন্য বৈধ।

সাধ্যমত দরসসমূহ সংকলনের কাজ এখানেই সমাপ্ত হলো। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয় নবী, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীগণের ওপর দুরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

والحمد لله وحده والصلاة والسلام على نبيه محمد وآله وصحبه .

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন