hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দরসের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান

লেখকঃ শাইখ আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায

তৃতীয় দরস: ঈমানের মৌলিক ছয়টি রুকন
সেগুলো হলো:

১- ঈমান আনয়ন করা আল্লাহর তা‘আলার ওপর,

২- তাঁর ফিরিশতাগণ,

৩- তাঁর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ,

৪- তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলগণ

৫- আখেরাতের দিনের ওপর

৬- ঈমান আনয়ন করা তাকদীরের ওপর, যার ভালো-মন্দ সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে।

প্রমাণ: হাদীসে জিবরীল নামে প্রসিদ্ধ হাদীস। তিনি যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বলেন,

«الإيمان بأن تؤمن بالله وملائكته وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، وبالقدر خيره وشره»

“ঈমান হলো, আল্লাহর তা‘আলার ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবী-রসূলগণ, আখিরাতের দিনের ওপর ঈমান আনয়ন এবং ঈমান আনয়ন করা তাকদীরের ওপর, যার ভালো-মন্দ আল্লাহ তা‘আলার হতেই নির্ধারিত হয়ে আছে তার ওপর”। [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদীস নং ৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১০; নাসায়ী হাদীস নং ৪৯৯০; আবু দাউদ হাদীস নং ৬৪৯৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৩; মুসনাদে আহমদ ১/২৭।]

এক: আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা: আল্লাহর প্রতি ঈমান চারটি জিনিসকে অন্তর্ভুক্ত করে।

১- আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর মানুষের স্বভাব, জ্ঞান, শরী‘আত ও অনুভূতি সবই প্রমাণ।

মানব স্বভাব আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর প্রমাণ। কারণ, প্রতিটি মাখলুককে কোনো প্রকার পূর্ব তালীম ও চিন্তা ছাড়াই তার স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ما من مولود إلا ويولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجسانه»

“প্রতিটি নবজাত শিশুই ইসলামী ফিতরাতের ওপর জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার মাতা-পিতা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও অগ্নি উপাসক বানায়”। [বুখারী, হাদীস নং ১২৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৫৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২১৩৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭১৪; মুসনাদে আহমদ২/২৭৫।]

যুক্তি দ্বারা প্রমাণ আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর: পূর্বের ও পরের প্রতিটি মাখলুকের জন্য একজন স্রষ্টা প্রয়োজন যিনি তাদের আবিষ্কার করবেন। কারণ, কোনো মাখলুক নিজে নিজে অস্তিত্বে আসা অসম্ভব। আকস্মিকভাবে আসাও সম্ভব নয়।

আল্লাহ তা‘আলা অস্তিত্বের ওপর শরী‘আতের প্রমাণ: সকল আসমানি কিতাব আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। এর মধ্যে কুরআন করীম সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব ও সবচেয়ে মহান। অনুরূপভাবে সকল নবী-রাসূলগণ এ বিষয়ে উম্মতদের সংবাদ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সবার চেয়ে উত্তম -আখেরী নবী ও সকল নবীগণের ইমাম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা সবাই তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং তাওহীদের বিবরণ দেন।

আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর অনুভূতির প্রমাণ: এটি দু’দিক থেকে হতে পারে:

এক. যারা আল্লাহকে ডাকে তার কাছে সাহায্য চায় তাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার বিষয় আমরা শুনি এবং প্রত্যক্ষ করি। আর এটি আল্লাহর অস্তিত্বের ওপর সুস্পষ্ট প্রমাণ।

দুই. নবীদের অলৌকিক কর্ম-কাণ্ড যেগুলোকে মু‘জিযা বলা হয় যা মানুষ সরাসরি দেখতে বা শুনতে পায়, এ সব অলৌকিক কর্ম-কাণ্ড জগতের একজন স্রষ্টা, পরিচালক, তত্বাবধায়কর অস্তিত্বের ওপর অকাট্য প্রমাণ। আর তিনিই হলেন আল্লাহ।

ঈমান বির-রুবুবিয়্যাহ: আল্লাহই একমাত্র রব তার কোনো শরীক নেই, তিনি ছাড়া আর কোনো সাহায্যকারী নেই। রব তিনি যার জন্য সৃষ্টির মালিকানা ও পরিচালনা। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা নেই, তিনি ছাড়া কোনো মালিক নেই, কোনো তত্ত্বাবধায়ক নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُ ٥٤﴾ [ الاعراف : ٥٣ ]

“জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣﴾ [ فاطر : ١٣ ]

“তিনি আল্লাহ, তোমাদের রব। সকল কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়”। [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩]

উলুহিয়্যাতের ওপর ঈমান: আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র মা‘বুদ তার কোনো শরীক নেই। ইলাহ অর্থ মা‘বুদ-উপাস্য। সম্মান ও মহব্বতের সাথে আল্লাহই একমাত্র উপাস্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [ البقرة : ١٦٣ ]

“আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ ٥٩﴾ [ الاعراف : ٥٨ ]

“আমি তো নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮৫]

আল্লাহর নাম ও সিফাত-গুণাবলীর প্রতি ঈমান: আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় কিতাবে অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতে তাঁর নিজের জন্য যে সব নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করেছে তা কোনো প্রকার বিকৃতি, তুলনা, সাদৃশ্য, ব্যাখ্যা ও দৃষ্টান্ত ছাড়া আল্লাহর জন্য যথাযথভাবে তার শান অনুযায়ী সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ]

“আর তিনি সর্বশোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান আনার ফলাফল:

১- আল্লাহর একত্ববাদের বাস্তবায়ন। মানবাত্মা আল্লাহ ছাড়া আর কারও সাথে সম্পৃক্ত হবে না। কারও থেকে আশা করবে না, কাউকে ভয় করবে না এবং তিনি ছাড়া আর কারও ইবাদাত করবে না।

২- আল্লাহর সুন্দর নাম ও মহৎ গুণাবলীর দাবী অনুযায়ী তাকে মহান বলে জানা এবং পুরোপুরি মহব্বত করা।

৩- আল্লাহ দেওয়া নির্দেশ পালন ও নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তার ইবাদতের বাস্তবায়ন করা।

দ্বিতীয়ত: ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা

১- ফিরিশতার পরিচয়: ফিরিশতা হলো, নুর দ্বারা সৃষ্ট অদৃশ্য প্রাণী, আল্লাহর ইবাদাত কারী। রব বা ইলাহ হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে নেই। আল্লাহ তাদের নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের তার নির্দেশের হুবহু আনুগত্য করার যোগ্যতা ও বাস্তবায়নের শক্তি দিয়েছেন। তাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

২- ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

এক- তাদের অস্তিত্বের প্রতি ঈমান।

দুই- তাদের থেকে যাদের নাম আমরা জানি (যেমন জিবরীল) তার প্রতি বিস্তারিত ঈমান আনা। আর যাদের নাম জানি না তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ঈমান আনা।

তিন- তাদের গুণাবলীর প্রতি ঈমান আনা।

চার- আল্লাহর নির্দেশে যে ফিরিশতা যে কাজে নিয়োজিত আছে বলে আমরা জানি তার প্রতি ঈমান আনা। যেমন, আমরা জানি ‘মালাকুল মাওত’ ফিরিশতা, মৃত্যুর সময় জান কবজ করার কাজে নিয়োজিত ইত্যাদি।

তৃতীয়ত: কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা

অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তার মাখলুকের হিদায়াতের জন্য রহমতস্বরূপ তার রাসূলদের ওপর যে সব কিতাব নাযিল করেছেন সে সব কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস করা।

কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনার দাবীসমূহ:

এক- আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে বলে বিশ্বাস করা।

দুই- যে সব আসমানি কিতাবের নাম সম্পর্কে আমরা জানি সে সব নামের প্রতি ঈমান আনা। যেমন, কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাওরাত মুসা আলাইহিস সালাম-এর ওপর অবতীর্ণ।

তিন- কিতাবসমূহের সংবাদগুলি বিশ্বাস করা। যেমন, কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং পূর্বের কিতাবসমূহের অবিকৃত সংবাদসমূহ।

চার- কিতাবসমূহের যেসব বিধান রহিত হয় নি তার হিকমত বা কারণ বুঝি বা না বুঝি তার ওপর আমল করা, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা ও তা মেনে নেওয়া। পূর্বে সকল কিতাব কুরআন দ্বারা রহিত হয়েছে এ কথা বিশ্বাস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَمُهَيۡمِنًا عَلَيۡهِۖ ٤٨﴾ [ المائ‍دة : ٤٨ ]

“আর আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর ওপর তদারককারীরূপে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৮]

কিতাবসমূহের প্রতি ঈমানের ফলাফল:

এক- আল্লাহর বান্দাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ যে কত মহান সে সম্পর্কে জানা। ফলে তিনি প্রত্যেক জাতির নিকট কিতাব পাঠিয়েছেন যা তাদের সঠিক পথ দেখায়।

দুই- শরী‘আতের বিধানের মধ্যে আল্লাহর হিকমত সম্পর্কে জানা। তিনি প্রত্যেক জাতির নিকট তাদের অবস্থা অনুযায়ী তাদের উপযোগী বিধান দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ ٤٨﴾ [ المائ‍دة : ٤٨ ]

“তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমরা নির্ধারণ করেছি শরী‘আত ও স্পষ্ট পন্থা”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৮]

চতুর্থত: রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা

রাসূল হলো এমন মানব যার নিকট শরিয়তের অহী প্রেরণ করা হয়েছে এবং তাকে তা মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বপ্রথম রাসূল হচ্ছেন, নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

পূর্বের কোনো উম্মত রাসূল শূন্য ছিল না। আল্লাহ প্রত্যেক জাতির নিকট পরিপূর্ণ শরী‘আত দিয়ে অথবা পূর্বের নবীদের শরী‘আতকে সংস্কার দায়িত্ব দিয়ে কোনো না কোনো নবীকে অহীসহকারে তাদের নিকট প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ٣٦﴾ [ النحل : ٣٦ ]

“আর আমরা অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَإِن مِّنۡ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٞ ٢٤﴾ [ فاطر : ٢٤ ]

“আর এমন কোনো জাতি নেই যার কাছে সতর্ককারী আসে নি।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৪]

রসূলগণ বনী আদম থেকে সৃষ্ট। তাদের মধ্যে রব বা ইলাহ হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। তাদের মধ্যে রয়েছে মানব প্রকৃতি-দয়া-মায়া, জীবন-মৃত্যু, মানবিক প্রয়োজন -খাওয়া-দাওয়া পান করা ইত্যাদি।

রাসূলদের প্রতি ঈমান যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে:

এক- এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের রিসালাত সত্য। তাদের যে কোনো একজনের রিসালাতকে অস্বীকার করা মানে সবার রিসালাতকে অস্বীকার করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوحٍ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٠٥﴾ [ الشعراء : ١٠٥ ]

“নূহ সম্প্রদায়ের লোকেরা রাসূলদের অস্বীকার করল”। [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১০৫]

দ্বিতীয়ত: তাদের থেকে যাদের আমরা নামসহকারে জানি তাদের নাম সহকারে তাদের প্রতি ঈমান আনা। যেমন- মুহাম্মদ, ইবরাহীম, মুসা, ঈসা ও নূহ আলাইহিমুস সালাম। এরাই হলো, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ববান রাসূল। আর যাদের নাম আমাদের জানা নেই তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ঈমান আনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلٗا مِّن قَبۡلِكَ مِنۡهُم مَّن قَصَصۡنَا عَلَيۡكَ وَمِنۡهُم مَّن لَّمۡ نَقۡصُصۡ عَلَيۡكَۗ ٧٨﴾ [ غافر : ٧٨ ]

“আর অবশ্যই আমরা আপনার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে কারো কারো কাহিনী আমরা আপনার কাছে বর্ণনা করেছি আর কারো কারো কাহিনী আপনার কাছে বর্ণনা করি নি”। [সূরা গাফির, আয়াত: ৭৮]

তৃতীয়ত: তাদের থেকে যেসব সংবাদ শুদ্ধরূপে প্রমাণিত তার প্রতি ঈমান আনা।

চতুর্থত: আমাদের নিকট যে রাসুলকে প্রেরণ করেছেন অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শরী‘আত অনুযায়ী আমল করা। ।

রাসূলদের প্রতি ঈমানের ফলাফল:

প্রথমত: আল্লাহর বান্দাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া সম্পর্কে জানা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট তাদের সঠিক পথের হিদায়াতের জন্য রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। যাতে তারা কীভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে তা স্পষ্ট করেন।

দ্বিতীয়ত: এ মহান নি‘আমত লাভের ওপর আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করা।

তৃতীয়ত: রাসূলদের মহব্বত করা, তাদের সম্মান করা, তাদের যথা উপযুক্ত প্রশংসা করা। কারণ, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। তারা আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর দায়িত্বশীল এবং কল্যাণকামী।

পঞ্চমত: আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান

আখিরাত দিবস হলো কিয়ামতের দিন। যেদিন আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে হিসাব কিতাব আবার প্রেরণ করবেন। এ শেষ বলা হয়, কারণ, এটি শেষ দিন-তারপর আর কোনো দিন নেই।

শেষ দিবসের প্রতি ঈমান যা অন্তর্ভুক্ত করে:

এক- পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান। পুনরুত্থান সত্য। কুরআন হাদীস ও মুসলিমদের ঐকমত্য এর অকাট্য প্রমাণ।

দুই- হিসাব-নিকাশের প্রতি ঈমান। একজন বান্দা হতে তার আমলের হিসাব নেওয়া হবে এবং হিসাব অনুযায়ী তাকে বিনিময় দেওয়া হবে। কুরআন, হাদীস ও মুসলিমদের ঐক্য এর অকাট্য প্রমাণ।

তৃতীয়ত: জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনা। মাখলুকের স্থায়ী গন্তব্য হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম।

এ ছাড়াও আখিরাত দিবসের ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত হবে মৃত্যুর পর যা সংঘটিত হবে সবই। যেমন, ১. কবরের ফিতনা। ২. কবরের শাস্তি ও নি‘আমত।

শেষ দিবসের প্রতি ঈমানের ফলাফল:

এক- শেষ দিবসের শাস্তি হতে বাচার জন্য গুনাহের কর্ম করা হতে দূরে থাকা।

দুই- ঐ দিনের সাওয়াবের আশায় নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হওয়া ও লোভ করা।

তিন- দুনিয়া যা কিছু ছুটে যায় তার জন্য দুঃখ না করে, আখিরাতের নি‘আমত ও সাওয়াব লাভের আশায় মুমিনের প্রশান্তি ও তৃপ্তি লাভ।

ষষ্ঠত: তাকদীরের প্রতি ঈমান

কদর: আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব ইলম ও তার হিকমত অনুযায়ী সমগ্র সৃষ্টিকুলের তাকদীর নির্ধারণ করা।

কদরের প্রতি ঈমান যা যা অন্তর্ভুক্ত করে:

এক- এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি বস্তুর নিখুঁত জ্ঞান রাখেন। চাই তার সম্পর্ক আল্লাহর স্বীয় কর্মের সাথে হোক বা বান্দার কর্মের সাথে হোক।

দুই- এ কথার বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আল্লাহ সব কিছু লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

তিন- এ কথা বিশ্বাস করা যে, সমগ্র জগতের কোনো কিছুই আল্লাহর চাওয়া বা ইচ্ছা ছাড়া সংঘটিত হয় না। চাই তা আল্লাহর স্বীয় কর্মের সাথে সম্পৃক্ত হোক বা মাখলুকের কর্মের সাথে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَرَبُّكَ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخۡتَارُۗ ٦٨﴾ [ القصص : ٦٨ ]

“আর তোমার রব যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং মনোনীত করেন”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৬৮]

চার- এ কথার প্রতি ঈমান আনা যে, সমগ্র জগত সত্ত্বাগতভাবে, গুণাবলীতে এবং কর্মে কেবলই আল্লাহর সৃষ্টি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ﴾ [ الزمر : ٦١ ]

“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬১]

কদরের প্রতি ঈমান আনার সুস্পষ্ট ফলাফল:

এক- বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করার সময় ভরসা একমাত্র আল্লাহর ওপর করা। কর্মের আসবাবের ওপর ভরসা না করা। কারণ, সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার নিয়ন্ত্রণে।

দুই- উদ্দেশ্য হাসিল হওয়াতে মানুষ আত্মতুষ্টিতে ভুগবে না। কারণ, নি‘আমত লাভ আল্লাহর পক্ষ হতে। তিনিই কল্যাণ ও কামিয়াবির কারণকে সহজ করে দেন। আর যখন কোনো মানুষ আত্মতুষ্টিতে ভুগে তা তাকে নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করতে ভুলিয়ে দেয়।

তিন- আত্মার তৃপ্তি ও প্রশান্তি। কারণ, যে আল্লাহর জন্য আসমানসমূহ ও জমিনের মালিকানা তার ফায়সালা তার বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর তা তো অবশ্যই সংঘটিত হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ أَن نَّبۡرَأَهَآۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٢٢ لِّكَيۡلَا تَأۡسَوۡاْ عَلَىٰ مَا فَاتَكُمۡ وَلَا تَفۡرَحُواْ بِمَآ ءَاتَىٰكُمۡۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٍ ٢٣﴾ [ الحديد : ٢٢، ٢٣ ]

“জমিনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি নি। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার ওপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোনো উদ্ধত ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২-২৩]

কদর বিষয়ে গোমরাহ হয়েছে দু’টি দল:

প্রথম দল: জাবারিয়্যাহ যারা বলে, বান্দা তার আমলের ওপর বাধ্য। তার আমলে তার কোনো ইরাদা-ইচ্ছা বা ক্ষমতা নেই।

দ্বিতীয় দল: কাদারিয়্যাহ যারা বলে, বান্দা তার আমলে স্বাধীন। তার ইচ্ছা ও ক্ষমতায় সে একক। বান্দার আমল বিষয়ে আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার কোনো প্রভাব নেই। আল্লাহ তা‘আলা যে প্রতি বস্তু তার অস্তিত্বে আসার পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন তা তারা অস্বীকার করে। উভয় দলের কথাই সম্পূর্ণ বাতিল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন