মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সৌন্দর্য এবং সুন্দর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষ সুন্দরের পূজারী। খুব কম লোকই পাওয়া যাবে, যিনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে, সৌন্দর্য ও সুন্দর তাকে আকৃষ্ট করে না। আর সৌন্দর্য যদি হয় নারী বিষয়ের তবে অবশ্যই সেটি আরও কাঙ্ক্ষিত বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। মহান আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সকল মানুষকে সমান বা সবাইকে একই সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেন নি। সাদা-কালো, লম্বা-বেঁটে নানান ধরনের মানুষের সমারোহে মুখরিত আমাদের এই পৃথবী।
পুরুষ কি মহিলা সকল মানুষই বিভিন্ন অবয়বে সৃষ্ট। মানুষের চেহারা বা আকৃতি তার নিজের তৈরি করা নয় বরং এটি সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত নির্দিষ্ট একটি বিষয়। সেজন্য কাউকে খারাপ চেহারার বলে ভর্ৎসনা করা, হিংসা করা বা গালি দেওয়া মস্ত বড় অন্যায়। তেমনিভাবে আরও বড় অন্যায় মানুষের মাঝে সুন্দরকে খুঁজে বের করা এবং তাদের নির্দিষ্ট করে পুরস্কৃত করা, কারণ এতে অসুন্দর মানুষেরা মনে গভীর কষ্ট পেতে পারে। সেই সঙ্গে এটি মানবতার চরম লঙ্ঘনও বটে। কারণ, মানবতার দায়িত্ব ও কর্তব্যের একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। সৌন্দর্য খোঁজা, সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া মানবতার কোনো মাপকাঠিতেই পড়ে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মানবতার চরম লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরের পূজা থেমে নেই। তাইতো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচলন পেয়েছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা যে হঠাৎ-ই শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়, বরং এরও রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ও কলঙ্কজনক দীর্ঘ ইতিহাস ও আখ্যান।
সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই ব্যক্তিগত ও রাজপরিবারের প্রয়োজনে সুন্দরী প্রতিযোগিতার কাজটি চলে আসছে। মে’ ডে এর রাজা রাণী বাছাইয়ের বহু আগে থেকেই ইউরোপে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় একজন নারী নির্বাচন করা হতো, যে মূলত তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। কিন্তু তখনকার রক্ষণশীল সমাজ ও সভ্য নেতৃবর্গের কারণে একসময় তা বন্ধ হয় যায়। পরবর্তী সময়ে আবার সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় তবে সেটি শুরু হয়েছিল ‘ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ নামে। আর আধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার সূচনা হয় ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথমে এটি মানুষের মাঝে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় সেনাবাহিনীতে সুন্দরী নারীর প্রতিযোগিতা। তারপর এটি থেকেই শুরু হয় ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার ছোট্ট একটি রূপ। ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যিনি ‘মিস আমেরিকা’ খেতাব জয় করেছিলেন তিনি রক্ষণশীলদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন। এরপর আয়োজন করা হয় ‘মিস ইউএসএ’ এবং ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতা। ১৯৫২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রথম ‘মিস ইউনিভার্স’ নির্বাচিত হন ফিনল্যান্ডের আরসি কুন্সিলা।
প্রথম দিকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা টিভিতে প্রচার করা হতো না। টেলিভিশনে মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠানটির প্রথম প্রচার শুরু করা হয় ১৯৫৫ সালে। প্রথমে ‘মিস ইউনিভার্স’ এবং ‘মিস ইউএসএ’ অনুষ্ঠান দুটি টিভিতে যৌথভাবে প্রচার করা হতো। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সাল থেকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান দুটির প্রচার শুরু হয়। এভাবেই এক সময় সুন্দরী বাছাইয়ের ব্যাপারটি বিশ্বজুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। সৌন্দর্যের যোগ্য মূল্যায়ন ও তাদের সম্মান দেওয়ার জন্য প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়টি প্রবল বিতর্কিত ও ঘৃণিত আচার বলে নিন্দিত হলেও গোটা বিশ্বজুড়ে বর্তমানে এটি আগ্রহ এবং উন্মাদনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শুধু নারীদের নিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তা কিন্তু নয়। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুবকদেরও অংশগ্রহণে সুন্দর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
সুন্দরী বাছাইয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতার নাম ‘মিস ইউনিভার্স’। এটি একটি বার্ষিক সুন্দরী নির্বাচন প্রতিযোগিতা। শুরুর দিকে ১৯৫২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লথিং কোম্পানি ‘প্যাসিফিক মিলস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করত। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল প্রতিযোগিতাটি। এরপর ১৯৯৬ সালে ‘ডোনাল্ড ট্র্যাম্প’ এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমানে ‘মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন প্রতিযোগিতাটি পরিচালনা করে থাকে। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন ‘মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন’ ২০০২ সালের ২০ জুন তারিখ থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটির আয়োজন কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ধীরে ধীরে এর ব্যাপকতা বাড়তে থাকলে প্রতিযোগিতাটির ব্যপ্তিও বৃদ্ধি পায়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্যে মিস ইউনিভার্স সবার থেকে আলাদা। কারণ এই প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র নারীর সৌন্দর্যকে বিচার করা হয় না। সেজন্য মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় নারীদের গায়ের রং কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখানে শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। নেপাল ও আর্মেনিয়ার মতো বিশ্বের অনেক দেশ অর্থ সঙ্কটের কারণে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে না। আর প্রতিবার অংশগ্রহণ করার মধ্যে রয়েছে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলি। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে মুসলিম দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় তাদের প্রতিযোগী পাঠায় না।
প্রতি বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা শুরুর আগে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণেচ্ছু দেশের জাতীয়ভাবে নির্বাচিত সুন্দরীদের তালিকা আহ্বান করে। কোনো দেশে জাতীয়ভাবে সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত না হয়ে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত মডেল এজেন্সির মাধ্যমে সেই দেশ থেকে প্রার্থী নির্বাচন করে থাকে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীর সর্বনিম্ন বয়স হতে হয় ১৮ বছর। অনেক প্রতিযোগীকে ছাঁটাই করার পর সেমিফাইনালে পাঁচজন সুন্দরীর মধ্যে তিনজন সুন্দরী নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন যিনি তাকেই বলা হয় ‘মিস ইউনিভার্স’। বাকি দুজন প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হন। যিনি ‘মিস ইউনিভার্স’ খেতাব জয় করেন তিনি একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজ করেন। এছাড়া তার জন্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি তো থাকেই। বিশ্বজুড়ে খেতাব অর্জনের খ্যাতি ছাড়াও নানান রকম আলিশান জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হয় মিস ইউনিভার্সের জন্য।
মিস ইউনিভার্স হওয়া সত্ত্বেও পরে আবার মুকুট কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও আছে। ২০০২ সালে রাশিয়ার আক্সানা সানজুয়ান মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হলেও চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় তার মুকুটটি পরবর্তীতে পরানো হয় প্রথম রানার আপ পানামার জাস্টিন পাসেককে। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত এই আয়োজনটি বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দেড়শ কোটিরও বেশি দর্শক টিভি পর্দায় উপভোগ (!) করে থাকে।
বিশ্বব্যাপী নারীদের সমমর্যাদার বিষয়ে সোচ্চার আলোচনা চললেও তারাই আবার এই সকল ব্যবসার মাধ্যমে নারীদেরকে ব্যবসায়িক পণ্য বানিয়ে ফেলেছেন। বড্ড অবাক লাগে একথা ভেবে যে, এরা বিশ্বব্যাপী নারীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে খুবই সোচ্চার। কিন্তু সুন্দরীদের খুঁজে খুঁজে তাদেরকে বিলাসী জীবনের আয়োজন করে দেওয়া কোন ধরনের অধিকার রক্ষা? যদি তারা নারী অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চারই হতো তবে তো কুশ্রী নারীদের খোঁজ নিয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থার জন্য অর্থ খরচ করতো? কারণ, সুন্দরী নারীদের পাত্রস্থ করা সহজ। পক্ষান্তরে কুশ্রী নারীদের পাত্রস্থ হওয়াটা অন্তত এই বিশ্বপরিমণ্ডলে বেশ কঠিন এবং একারণেই বিশ্বের প্রায় সবজায়গাতেই কুশ্রী ও কম সুন্দরী নারীরা নিগৃহিত ও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কঠিন ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সুতরাং সুন্দরীদের গলায় মিস ওয়ার্ল্ডের তকমার নামে তেলের মাথায় তেল দেওয়ার কৌতুক না করে বিপদগ্রস্ত, অসুন্দর, কুশ্রী নারীদেরকে বিপদমুক্তির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন না কেন?
মিস ইউনিভার্সকে মূলত একটি ব্যবসা বলা যেতে পারে। আর এই ব্যবসার পণ্য হয়ে থাকেন সুন্দরী নারীরা। এ কথা স্বয়ং ওই ঘর থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আগে কখনও সুন্দরী প্রতিযোগিতা কিংবা সুন্দরী খোঁজার নির্লজ্জ বেহায়াপনার আয়োজন ছিল না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বিস্তারকারী মাল্টিলেভেল ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর ব্যবসার সংজ্ঞায় যোগ হয়েছে নতুন আরেকটি উপাদান। অর্থনীতির সংজ্ঞায় ব্যবসা ও কোম্পানির জন্য চারটি উপাদান জরুরি। শ্রম, পুঁজি, মালিক ও ভূমি। সংজ্ঞাবিদদের অলক্ষ্যে ঢুকে পড়েছে আরেকটি বস্তু- নারী। নতুন সংযোজিত এই বস্তুটাই হয়েছে ব্যবসার প্রধান উপাদান। একারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো কোনো দেশে ব্যবসা বিস্তৃত করার পর পরই হাত দিচ্ছে ওই দেশের নারী সম্পদের ওপর। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
ইউনিলিভার কোম্পানিটির ব্যবসা সারাবিশ্ব জুড়ে। বাংলাদেশে তারা বেশকিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকে। কিন্তু সময় মতো ঠিকই ফণা তোলে তারা এবং অত্যন্ত কূটকৌশলে আয়ত্ব করে নারী সম্পদ। এদেশে সর্বপ্রথম তারাই সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদেরকে ব্যবহারিক পণ্যে পরিণত করে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা যে নিছক ব্যবসা এবং উদ্যোক্তরা তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থ হাসিলের জন্যই এই কাজটি করে থাকে তা স্বয়ং এই জগত থেকে উঠে আসা একজন মডেল ও অভিনেত্রীর মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি জাকিয়া বারী মম। মিডিয়ায় আগমন ঘটে তার এরকমই একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। হুমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে প্রবেশ। এরপর নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগতেই তার দীর্ঘ বিচরণ। কিছুদিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
মম’র কাছে প্রথমে তার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। মম অনেকটা ক্ষেদ ও ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি, অথচ আমাদের কাজের কোনো মূল্য নেই। কলকাতা থেকে আমাদের নাটক অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তা দেখছে না। দেখছে কলকাতার জিটিভি। এটা হচ্ছে মানুষের ভেতরে দেশপ্রেম না থাকার কারণে। এক শ্রেণীর সার্টিফিকেটধারী গৃহিণী আছে যারা কল্পনার রাজত্বে বসবাস করে। আমি বলতে চাই যে, কল্পনায় বসবাস করে লাভ নেই। দেশকে ভালবাসুন।’
বর্তমানে বিনোদন জগত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিনোদন সেক্টরে আমরা যারা আছি তাদের কোনো পেট্রোনাইজ করা হয় না। আমাকেও কেউ পেট্রোনাইজ করে নাই। আমি যদুমধুদের সঙ্গে কাজ করে মম নামটাকে এস্টাবলিশ করেছি। তারপর বড় ডিরেক্টররা আমার নামটাকে সেল করার জন্য এখন আমাকে অনেক টাকা দিয়ে কাস্ট করে। এটা কিন্তু আমার একটা দুঃখবোধ।’
মম এ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার ভাষায় এ পুরস্কারের সংখ্যা প্রায় ২৭টি। বর্তমান পুরস্কারদাতাদের হালচাল সম্পর্কে তিনি তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘দলীয়করণ আর নোংরামির ভেতরে সবাই ডুবে গেছে। প্রথম আলো পুরস্কার মানেই জয়া আহসান, প্রথম আলো পুরস্কার মানেই ফারুকী, মোশারফ করিম। তারাই কিন্তু শুধু অ্যাক্টর নয়, তারা এতই অবাঞ্ছিত অভিনয় করেন যে সেটা নেওয়ার মতো না। তাহলে তারা কীভাবে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পান? মুখে কালি মেখে অভিনয় করে যদি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া যায়, তাহলে তো রাস্তার একটা ছেলেও অভিনয় করবে, হচ্ছেও তাই।’
এটা কি প্রথম আলো পুরস্কার পাননি বলে বলছেন; ‘প্রথম আলো আমাকে পুঁছল কি-না তাতে আমার কোনো খেদ নেই, বরং আমিই প্রথম আলোকে পুঁছি না। প্রথম আলোর চেয়েও বড় পুরস্কার আমার ঘরে আছে। ফিল্মে অভিনয় করার জন্য বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট আমাকে বেস্ট অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার দিয়েছে। এটা প্রথম আলোর দশটা অ্যাওয়ার্ডের চেয়েও অনেক বেশি সম্মানের।’
অভিনেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে মম বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ আর্টিস্টের প্রপার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। যেমন ধরেন তিশা কিন্তু লেখাপড়া কমপ্লিট করে নাই। কোথাকার কোন টেলিকমিউনিকেশনে পড়তো, আজীবন পড়েই যাচ্ছে। বিন্দু জাহাঙ্গীরনগর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। মীম জাহাঙ্গীরনগরে আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়তো। পরপর দুইবার ফেল করায় বহিষ্কৃত হয়েছে। শুধু তারা নয় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ম্যাক্সিমাম আর্টিস্টেরই এই অবস্থা।’
প্রচুর সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তিনিও একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এই জগতে এসেছেন। এ ব্যাপারে মমর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটা ব্যবসা। মেয়েরা হচ্ছে ব্যবসার উপকরণ। ছোট কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার ভালো উপকরণ, আর বড় কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার অপেক্ষাকৃত কম উপকরণ। আমি নিশ্চয় বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি। তাই সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুধু ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর চেয়ে বেশি কিছু না। সুন্দরী হতে হলে যে শুধুমাত্র গড গিফটেড চেহারা, সুন্দর চোখ নিয়েই আসতে হবে তা নয়। সুন্দরী হলো মেধা, বুদ্ধি ও শিক্ষার সমন্বয়।’
আমাদের দেশের একজন সুন্দরী প্রতিযোগিতার কর্ণধারকে বলতে শুনেছিলাম, ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা নাকি ষোড়শী ছাড়া হয় না। তরুণীদের প্রতিটি বয়সে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে বটে, কিন্তু ষোড়শী সুন্দরীর মেধা কোন লেভেলের থাকে যে সে সৌন্দর্যটা ক্যারি করতে পারবে? পারে না। কারণ অল্প বয়সী মেয়েদের পিক করা হয় বিপথগামী করার জন্য। যারা বুদ্ধিমান, যারা বিচক্ষণ তারা হয় তো ঐ ট্র্যাপে পা না দিয়ে নিজের একটা আইডেন্টি তৈরি করতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থাকে অল্প বয়সী ষোড়শী সুন্দরীদের নিয়ে ব্যবসা করা। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি।’
মম এ পর্যন্ত অসংখ্য ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করেছেন। নাটকের মানের প্রসঙ্গ টানতেই তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চ্যানেল বেশি, কম্পিটিশন বেশি, কিন্তু এই কম্পিটিশন সুস্থ কম্পিটিশন না, অসুস্থ কম্পিটিশন। [সূত্র : ঢাকা রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর.কম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩]
এই সাক্ষাতকারে শোবিজ জগতের অনেক অনুল্লেখিত বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। দর্শকরা যারা নিত্যদিন টিভির সামনে বসে জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করছেন এবং যাদের অভিনয় দেখে বাহবা বাহবা করে ইহকাল-পরকাল নষ্ট করছেন তারা প্রকৃতপক্ষেই সমাজের কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ লোক তাও এই সাক্ষাতকারে ফুটে উঠেছে। তবে সবচেয়ে যে তিক্ত কথাটা বের হয়ে এসেছে তাহলো, সুন্দরী প্রতিযোগিতা নারীর নিজের স্বার্থে করা হচ্ছে না। বণিকরা নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে করছে এবং নারীদেরকে ব্যবসার পণ্য ছাড়া অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে না।
মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাসহ বিশ্বব্যাপী সুন্দরী প্রতিযোগিতা যেভাবে নগ্নতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তাতে এটিকে একটি প্রতিযোগিতার বদলে নারীর শরীর প্রদর্শনের উৎসব বললেও ভুল হবে না। নারীদের মর্যাদা ক্রমেই নিঃশেষ করে ফেলছে এই প্রতিযোগিতাগুলো। বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই, কেবল বাংলাদেশের সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফলাফলগুলোর দিকে তাকালেই আঁতকে উঠতে হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার হঠাৎ উত্থিত সিডরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা এই তরুণীগুলো যেন জীবনের সংজ্ঞাগুলো হঠাৎ ভুলে গেছে। তাই বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়গুলো যতগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জড়িত এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার রমণীরা। তাহলে বুঝুন ঠ্যালা!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/655/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।