hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফেরারী নারী

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

নমরুদ-নরকে পুড়ছে হিজাব: ফুঁৎকার দিচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়!
নমরুদ মরলেও তার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি-নরক আজও নেভেনি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে নমরুদের প্রেতাত্মারা কখনও ইসলামের বিরুদ্ধে, কখনও ইসলামের আদর্শের বিরুদ্ধে এবং কখনও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে নমরুদীয় অগ্নিনরক প্রজ্জ্বলন করেছে এবং এখনও করে চলেছে। নমরুদের আবির্ভাব কেবলই দেহকেন্দ্রিক নয়; কখনও কখনও আদর্শকেন্দ্রিকও।বিশ্বের আনাচে কানাচে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ। কেউ আর এখন রাখঢাক করছে না হিজাবের বিরোধিতায়। এ কাজে এগিয়ে আছে তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার ইউরোপবিশ্ব। ইউরোপে ফ্রান্সের পর হল্যান্ডেও বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। হল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলছে- বোরকা, নেকাব বা হিজাব এবং চেহারা আবৃত রাখে এমন সব পোশাক পরিধানে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। হল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিক্সিন আমস্টার্ডমে মিডিয়াকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা কেবল বোরকা বা অন্যান্য ইসলামী পোশাকের ওপরই নয়; বরং চেহারা আবৃত করার সব পোশাকের ওপর বলবৎ করা হবে। উল্লেখ্য, হল্যান্ডের সতের মিলিয়ন নাগরিকের মধ্যে এক মিলিয়ন নাগরিক মুসলিম।

ফ্রান্সের সংসদের নিম্নকক্ষ জুলাই ২০১০ ঈসায়ীতে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিল অনুমোদন করেছিল। অতপর ২০১১ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে পাশ হওয়া আইনের অধীনে মুসলিম নারীদের পুরোপুরি হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্মর্তব্য যে, ফ্রান্স নেকাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সদস্য রাষ্ট্র। সুতরাং এখন ফ্রান্সে সাধারণ স্থানসমূহে নেকাব আবৃত যে কোনো মুসলিম নারীকে জরিমানা এবং কারাবাসের সাজার মুখে পড়তে হয়। ফ্রান্সের সংসদীয় কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রস্তুত এই আইনের আওতায় রাষ্ট্রের সকল স্কুল, হসপিটাল, সরকারি পরিবহন এবং সরকারি দপ্তরসমূহে মুসলিম নারীদের সম্পূর্ণ হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। এ জায়গাগুলোয় হিজাব পরলে ১৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়। উপরন্তু যেসব পুরুষ নিজেদের স্ত্রী, কন্যা বা বোনদের হিজাব পরতে বাধ্য করবেন এবং যে আলেমগণ এর প্রচার করবেন তাদেরকে ত্রিশ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা বা এক বছর কারাবাসের শাস্তি প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ফ্রান্সে বাস করে ইউরোপের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি। এখানে স্থানীয় ও অভিবাসী মিলিয়ে মুসলিমের সংখ্যা ষাট লাখের অধিক। ফ্রান্সের মুসলিমদের ভাষ্য মতে, এই আইন কার্যকর হওয়ায় ফ্রান্সের অন্য বড় ধর্মাবলম্বীগণ তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। দেশে ইসলামোফোবিয়ার ঝুঁকি আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম ও তাদের মসজিদগুলো ধারাবাহিক ঘৃণার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। প্রকাশ থাকে, ফ্রান্সের পথ ধরে বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়াও মুসলিম নারীদের নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইউরোপে বোরকা ও হিজাবের বিরুদ্ধে যদিও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে; কিন্তু ওখানকার জ্ঞানী-গুণী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের মানবাধিকার কাউন্সিলের কমিশনার থমাস হামবুর্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে নারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে সামাজিক জীবন থেকেই বের করে দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের মানবাধিকারের মানদণ্ড এবং বিশেষত কারো ঘরোয়া জীবন ও ব্যক্তি পরিচয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের চেতনা পরিপন্থী। মুসলিম নারীদের পোশাকের ব্যাপারটিকে যেভাবে সমালোচনার লক্ষ্য বানানো হচ্ছে, তা থেকে হাত গুটাতে হলে আলাপ-আলোচনা ও আইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যে সমাজে পর্দাকে সামাজিক সম্পর্কের জন্য অন্তরায় আখ্যায়িত করে সমালোচনার লক্ষ্য বানানো হচ্ছে, সেখানকার নারীদের মধ্যে হিজাবের জনপ্রিয়তা কেবল বেড়েই চলেছে। কয়েকজন অমুসলিম নারী ইসলামের পোশাক ধারণ করে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তারা নিজেদেরকে এ বাস্তবতা স্বীকারে নৈতিকভাবে বাধ্য মনে করেছেন যে, আদতেই নারীরা হিজাব ও পর্দার ভেতরে সম্মানবোধ করেন। ‘নাউমি ওয়াল্ফ’ আমেরিকার এক খ্রিস্টান নারী। নারী স্বাধীনতা এবং সমাজে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে তিনি দুটো বইও রচনা করেছেন। নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির নারীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়নে তার বিশেষ আগ্রহ। হিজাবকেন্দ্রিক সমালোচনা সূত্রে একটি মুসলিম দেশে মুসলিম পোশাক পরার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। উদ্দেশ্য, এ পোশাকে খোদ নারীরা কেমন বোধ করেন তা জানা।

তার ভাষ্য ছিল, ‘আমি মারাকেশে নিজের থাকার জায়গা থেকে যখন বাজারে যাবার জন্য বের হলাম, তখন আমি সেলোয়ার-কামিজ পরেছিলাম। আমার মাথা ছিল স্কার্ফে ঢাকা। মারাকেশের মুসলিম মেয়েদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। সবখানে একে সম্মান দেখানো হয়। আর আমি যেহেতু তাদের স্বদেশী কেউ নই, তাই তাদের দৃষ্টিতে কিছুটা দ্বিধা ও সংশয় থাকবে বৈ কি। কিন্তু সন্দেহের কিছু দৃষ্টির কথা বাদ দিলে আমাকে উদ্বিগ্ন করার মতো কোনো কিছু নজরে আসে নি। আমি নেহাত আরামে ছিলাম। কোনো চিন্তার বিষয় ছিল না। আমি সবদিক থেকে নিজেকে নিরাপদ এবং স্বাধীন বোধ করেছি।’

‘মুসলিম নারী : পর্দা এবং জেন্ডার ইস্যু’ শীর্ষক নিজের এর্টিকেলে ‘নাউমি ওয়াল্ফ’ পশ্চিমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মুসলিম মূল্যবোধকে নিষ্ঠার সঙ্গে বুঝতে চেষ্টা করুন। পর্দার উদ্দেশ্য কখনোই নারীকে দমিয়ে রাখা নয়। এটি বরং ‘প্রাইভেটের মোকাবেলায় পাবলিকের’ বিষয়। পাশ্চাত্য বিশ্ব নারীকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়ে এক অর্থে বাজারের পণ্য বানিয়ে ছেড়েছে। পক্ষান্তরে ইসলাম নারীর সৌন্দর্য ও তার সত্তাকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়ে তাকে এক পুরুষের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে পুরুষের সঙ্গে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে তিনি পুরো জীবন কাটিয়ে দেবেন বলে স্থির করেছেন।

কিছুদিন আগে আমেরিকার হিস্প্যানিক বংশোদ্ভুত এক নওমুসলিম নারী লিখেন, ‘আমি যখন পাশ্চাত্যের পোশাকে ছিলাম তখন আমাকে নিজের চেয়ে অন্যের রুচির প্রতিই বেশি লক্ষ্য রাখতে হতো। ঘর থেকে বেরুবার আগে নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে তা নিশ্চিত হওয়া এক অপ্রিয় ও বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল। তারপর আমি যখন কোনো স্টোর, রেস্টুরেন্ট বা জনসমাগম স্থানে যেতাম তখন নিজেকে অন্যদের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় অনুভব করতাম। দৃশ্যতঃ আমি যদিও নিজে স্বাধীন ও নিজ সিদ্ধান্তের মালিক ছিলাম কিন্তু বাস্তবে আমি ছিলাম অন্যের পছন্দ-অপছন্দের জালে বন্দি। তাছাড়া এ চিন্তাও মাথায় থাকত যে, যতদিন আমার রূপ-লাবণ্য ও বয়স অটুট থাকবে মানুষ আমার পেছনে ঘুরবে; কিন্তু বয়স গড়ানোর পর নিজেকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে আমাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে। পক্ষান্তরে ইসলাম আমাকে এখন ওসব উটকো ঝামেলা থেকে একেবারে নিশ্চিন্ত ও স্বাধীন বানিয়ে দিয়েছে।’

অতিসম্প্রতি হলিউডের প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা লিয়াম নিসন ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। ঊনষাট বছর বয়েসী এই পরিচালক ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিলেন। বিদেশি পত্রিকা মারফত জানা যায়, লিয়াম নিসন জানান, তুরস্কে সিনেমার চিত্র ধারণ করতে গিয়ে সেখানকার মুসলিমের ইবাদতের ধরনে তিনি প্রভাবিত হন। এর মধ্যে তিনি আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেন। তিনি আরও বলেন, মসজিদগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক। এসবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ ইসলামের আরও কাছে চলে আসে।

ভাববার বিষয় হলো, পাশ্চাত্য কি এখন নিজের দিগম্বর সভ্যতা ও মাতা-পিতাহীন সংস্কৃতির বদৌলতে ধ্বংস ও পতনের অতি কাছে চলে গিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটি খবরের উদ্ধৃতিই যথেষ্ট হতে পারে। এতে বলা হয়েছে, পাঁচ কোটি মার্কিনি নানাধরনের মানসিক রোগে ভুগছে। প্রতি পাঁচজনের একজন আমেরিকান পরিপূর্ণ মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি জটিল মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত। শতকরা ২৩ ভাগ নারীর মোকাবেলায় শতকরা ১৬.৮ ভাগ পুরুষ এই উপসর্গের শিকার। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের তুলনায় ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়েসী যুবকদের মধ্যে এই রোগের বিস্তার দ্বিগুণ। রিপোর্টে এ কথাও বলা হয় যে, এক কোটি ১৪ লাখ মার্কিনির মধ্যে জটিল কিসিমের মস্তিষ্কের রোগ পাওয়া যায়। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৯ লাখ তরুণ আমেরিকান ডিপ্রেশনের শিকার।

প্রকৃতপক্ষে তাগুতী শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে গ্রহণ করা ইসলামবিরোধী পদক্ষেপগুলো পাশ্চাত্যে দ্রুত বর্ধিষ্ণু ইসলামের জনপ্রিয়তার পথ রুদ্ধ করবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ, গত এক দশকে যেভাবে পাশ্চাত্যে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে তাতে জায়নবাদী কর্মকর্তাদের চোখের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। শুধু আমেরিকাতেই প্রতি বছর ২০ হাজার ব্যক্তি ইসলামে দাখিল হচ্ছেন। এ পর্যন্ত যেই সভ্যতা-সংস্কৃতি বস্তুপূজা ও আল্লাহকে রুষ্ট করার পোশাকে উপস্থাপন করা হয়েছে আজ তা ঘুণে ধরা কাঠের মতো দৃশ্য তুলে ধরছে। গতকালও যে কালচার ও সভ্যতাকে উপমা বা আদর্শ বলা হচ্ছিল আজ তা থেকেই ছুটে পালানোর ঘোষণা আসছে। পাশ্চাত্যে দিনদিন ইসলামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ইসলামের সত্যতা এবং ইসলামের নবীর বস্তুনিষ্ঠতার সবচে বড় প্রমাণ।

বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতে আমাদের মুসলিম যুবতীরা হিজাবের মাহাত্ম্যকে হিমালয় সদৃশ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নিরন্তন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০১৩ ইং বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ বেরুলো- ‘বোরকা খোলার আদেশ প্রত্যাখ্যান’। সংবাদে প্রকাশ : বোরকা খুলে আদালতে প্রবেশ করতে বিচারকের দেওয়া আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন লন্ডনের এক মুসলিম তরুণী। লন্ডনের একটি আদালতের বিচারক পিটার মারফি উন্মুক্ত বিচারের শর্তের কথা উল্লেখ করে তাকে বোরকা খোলার নির্দেশ দেন। কিন্তু ২১ বছর বয়সী বিবাদী ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে পুরুষদের সামনে বোরকা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, এটা আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী।’ [সূত্র : মেইল অনলাইন]

এই সাহসী মুসলিম তরুণী বাতিলের সামনে ইসলামের একটি গৌরবময় বিধানের মর্যাদা ও তাতে মুসলিম নারীদের অবিচলতার কথা তুলে ধরার বদৌলতে তিনি আবু জেহেলের সামনে সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হকের ওপর অবিচল থাকার মর্যাদার কাছাকাছি মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। কারণ, এমন এক সংকট মুহূর্তে একজন সাহসী নারীর এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে সারাবিশ্বের অমুসলিম তাগুতি শক্তি হিজাবের প্রতি সমীহ করতে বাধ্য হবে। [আলী হাসান তৈয়ব লিখিত পর্দাবিষয়ক ইসলাম হাউজের একটি লেখা অবলম্বনে]

সুইডেনে হিজাব পরে মুসলিম নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশ

ফ্রান্সে এক মুসলিম মহিলার ওপর বর্ণবাদী হামলার প্রতিবাদে অভিনব হিজাব কর্মসূচি শুরু করেছেন সুইডেনের নারীরা। ফেসবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের হিজাব পরিহিত ছবি আপলোড করতে শুরু করেছেন সুইডেনের নারীরা।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে হিজাবধারী এক নারীর ওপর হামলা চালায় কিছু উগ্রবাদী। হামলাকারীরা ওই নারীর হিজাব ছিঁড়ে ফেলে এবং তার মাথা গাড়িতে ঠুকে দেয়। একপর্যায়ে রডকাটার ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায় এবং মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর ঘটনাস্থলে একটি গাড়ি এসে পৌঁছলে পালিয়ে যায় উগ্রবাদীরা। [সূত্র : আল জাজিরা : ২১ আগস্ট ২০১৩ ইং]

মুসলিম নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অভিনব এই সামাজিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন নানা ধর্মের নারীসহ রাজনীতিবিদ এবং টিভি উপস্থাপিকারা। রাজনীতিবিদ আসা রোমসোন, ভেরোনিকা পাম এবং টিভি উপস্থাপিকা গিনা দিরাউই এরইমধ্যে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে হিজাব পরিহিত ছবি আপলোড করেছেন।

হিজাবের অনুমতি পেল কানাডার মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তারা :

কানাডার অ্যাডামুন্তুন সিটির মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ইসলামী শালীন পোশাক বা হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তারা হিজাব পরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

Onislam.net ওয়েব সাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে কুরআন বিষয়ক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ‘ইকনা’ জানিয়েছে, এর আগে কানাডার এই শহরের পুলিশ কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগে কাজ করতে মুসলিম মহিলাদের উৎসাহিত করার জন্য মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিল।

হিজাব ব্যবহারের বিষয়টা অনুমোদন লাভের পর এখন থেকে যে কোনো মুসলিম নারী কোনো রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াই ইসলামী শালীন পোশাক পরে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে পারবেন। অ্যাডামুন্তুন সিটির মুসলিম নারী পরিষদের প্রধান সারিয়া যাকি হাফেজ বলেছেন, পুলিশ বিভাগে মুসলিম নারী সদস্যদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর মুসলিম নারীরা কানাডার সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

মুসলিম নারীদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কানাডার অ্যাডামুন্তুন সিটির পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক যাচাই বাছাই করে দেখার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে, হিজাব ব্যবহারের কারণে মুসলিম নারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা হবে না এবং কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে না।

কানাডার মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখ এবং এর মধ্যে প্রায় তিন শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পর মুসলিমরাই সেখানে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়।

পর্দা আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বাসের আঙিনায়

পর্দার বিরুদ্ধে অব্যাহত বিদ্বেষ-লড়াই সত্ত্বেও পর্দা ও হিজাব তার স্বচ্ছ-পবিত্র কারিশমার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। পর্দার শুদ্ধতা আলোকিত করছে ভ্রান্তপথিকের বিশ্বাসের আঙিনা। এক মার্কিন অধ্যাপকের ইসলাম গ্রহণের গল্প তুলে ধরতে চাই। জানেন তার ইসলাম গ্রহণের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? হ্যাঁ, তার ইসলাম গ্রণের প্রথম ও একমাত্র কারণ ছিল এক মার্কিন তরুণীর হিজাব। যিনি তার হিজাব নিয়ে সম্মানবোধ করেন। নিজ ধর্ম নিয়ে গর্ব করেন। শুধু একজন অধ্যাপকই ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের মধ্যে তিন ডক্টর ও চার ছাত্রীও ইসলামধর্মে অন্তর্ভুক্ত হন। এ সাতজন ব্যক্তিই অভিন্ন সেই হিজাবকে কেন্দ্র করেই ইসলামে দীক্ষিত হন। গল্পটি তবে সেই মার্কিন ডক্টরের ভাষ্যেই পড়ুন।

নিজের ইসলামে প্রবেশের গল্প শোনাতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ আকুয়া বলেন, বছর চারেক আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহসা এক বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এখানে পড়তে আসে এক মুসলিম তরুণী। নিয়মিত সে হিজাব পরিধান করে। ওর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন একজন কট্টর ইসলামবিদ্বেষী। যে কেউ তার সঙ্গে বিতর্ক এড়াতে চাইলেও তিনি গায়ে পড়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করতেন। আর এমন অনুশীলনরত মুসলিম পেলে তো কথাই নেই। স্বভাবতই তিনি মেয়েটিকে যে কোনো সুযোগ পেলেই উত্যক্ত করতে লাগলেন।

একপর্যায়ে মেয়েটির ওপর একের পর এক কল্পনাশ্রয়ী আক্রমণ করতে লাগলেন। মেয়েটি যখন শান্তভাবে এসবের মোকাবেলা করে যেতে লাগল, তার রাগ আরও বৃদ্ধি পেল। এবার তিনি অন্যভাবে মেয়েটিকে আক্রমণ করতে লাগলেন। তার এডুকেশন গ্রেড বৃদ্ধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলেন। তাকে কঠিন ও জটিল সব বিষয়ে গবেষণার দায়িত্ব দিলেন। কড়াকড়ি শুরু করে দিলেন তাকে নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে। এরপরও যখন অহিংস পদ্ধতিতে মেয়েটিকে কোনো সমস্যায় ফেলতে পারলেন না, চ্যান্সেলরের কাছে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল, ছাত্রী ও অধ্যাপক উভয়কে একটি বৈঠকে ডাকা হবে। উভয়ের বক্তব্য শোনা হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে মেয়েটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের।

নির্দিষ্ট দিন এলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিটির সব সদস্য উপস্থিত হলেন। আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে এ পর্বটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের মোকাদ্দমা এই প্রথম। বৈঠক শুরু হল। প্রথমে ছাত্রীটি অভিযোগ করল, অধ্যাপক সাহেব তার ধর্মকে সহ্য করতে পারেন না। এ জন্য তিনি তার শিক্ষার অধিকার হরণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সে তার অভিযোগের সপক্ষে কয়েকটি দৃষ্টান্তও তুলে ধরল এবং এ ব্যাপারে তার সহপাঠীদের বক্তব্যও শোনার দাবি জানাল। সহপাঠীদের অনেকেই ছিল তার প্রতি অনুরক্ত। তারা তার পক্ষে সাক্ষী দিল। বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য দিতে ধর্মের ভিন্নতা তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারল না।

মেয়েটির জোরালো বক্তব্যের পর ডক্টর সাহেব আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। অব্যাহতভাবে কথাও বলে গেলেন; কিন্তু মেয়েটির ধর্মকে গালি দেওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারলেন না। অথচ মেয়েটি দিব্যি ইসলামের পক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করল। ইসলাম সম্পর্কে অনেক তথ্য ও সত্য তুলে ধরল। তার কথার মধ্যে ছিল আমাদের সম্মোহিত করার মত অলৌকিক শক্তি। আমরা তার সঙ্গে বাক্যবিনিময়ে প্রলুব্ধ না হয়ে পারলাম না। আমরা ইসলাম সম্পর্কে আপন জিজ্ঞাসাগুলো তুলে ধরতে লাগলাম আর সে তার সাবলীল জবাব দিয়ে যেতে লাগল। ডক্টর যখন দেখলেন আমরা অভিনিবেশসহ মেয়েটির যুক্তিতর্ক শুনছি, তার সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন হয়েছি, তখন তিনি হল থেকে নিরবে বেরিয়ে গেলেন। মেয়েটিকে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া এবং সাগ্রহে তার বক্তব্য শোনা দেখে তিনি কিছুটা মর্মাহত হলেন বৈকি। একপর্যায়ে তিনি এবং তার মতো যাদের কাছে মেয়েটির আলোচনা গুরুত্বহীন মনে হচ্ছিল তারা সবাই বিদায় নিলেন। রয়ে গেলাম আমরা, যারা তার কথার গুরুত্ব অনুধাবন করছিলাম। তার বাক্যমাধুর্যে অভিভূত হচ্ছিলাম। কথা শেষ করে মেয়েটি আমাদের মধ্যে এক টুকরো কাগজ বিতরণ করতে লাগল। ‘ইসলাম আমাকে কী বলে’ শিরোনামে সে তার চিরকুটে ইসলাম গ্রহণের কারণগুলো তুলে ধরেছে। আলোকপাত করেছে হিজাবের মাহাত্ম্য ও উপকারিতার ওপর। যে হিজাব নিয়ে এই সাতকাহন এর ব্যাপারে তার পবিত্র অনুভূতিও ব্যক্ত করেছে সেখানে।

বৈঠকটি অমিমাংসিতভাবেই সমাপ্ত হল। মেয়েটির অবস্থান ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। যে কোনো মূল্যে নিজের অধিকার রক্ষা করবে বলে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করল। প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাবে সে। এমনকি তার পড়ালেখা পিছিয়ে গেলেও সে এ থেকে পিছপা হবে না। আমরা শিক্ষা কমিটির সদস্যরা কল্পনাও করি নি মেয়েটি তার ধর্মীয় অধিকার রক্ষার ব্যাপারে এমন অনমনীয় মনোভাবের পরিচয় দেবে। কতজনকেই তো এতগুলো শিক্ষকের সামনে এসে চুপসে যেতে দেখলাম। যা হোক, ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিতর্ক চলতে থাকল।

কিন্তু আমি কেন জানি নিজের ভেতর হিজাবের এই ধর্ম নিয়ে প্রবল আলোড়ন অনুভব করলাম। এ ব্যাপারে অনেকের সঙ্গেই কথা বললাম। তারা আমাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করল। কেউ কেউ উৎসাহ যোগাল ইসলামে দীক্ষিত হতে। এর ক’মাস বাদেই আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলাম। ক’দিন পর দু’জন অধ্যাপক আমাকে অনুসরণ করলেন। এবং সে বছরই আরও একজন ডক্টর ইসলাম গ্রহণ করলেন। আমাদের পথ ধরে চারজন ছাত্রও ইসলামে দাখিল হলো। এভাবে অল্পকালের মধ্যেই আমরা একটি দল হয়ে গেলাম- আজ যাদের জীবনের মিশনই হলো, ইসলাম সম্পর্কে জানা এবং মানুষকে এর প্রতি আহ্বান জানানো। আলহামদুলিল্লাহ, অনেকেই ইসলাম কবুলের ব্যাপারে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছেন। ইনশাআল্লাহ অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ শুনতে পারবে। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। [ইসলাম হাউজে প্রকাশিত আলী হাসান তৈয়ব লিখিত ‘মুসলিম তরুণীকে দেখে তিন মার্কিন অধ্যাপকের ইসলাম গ্রহণ’ শীর্ষক লেখা থেকে]

কিন্তু ওরা এত স্পর্ধা পায় কোথায়?

বিশ্বের বিধর্মী রাষ্ট্রগুলোর হিজাবের বিরুদ্ধে যখন খোদ সেদেশেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছে এবং বিধর্মী রমণীগণ হিজাবের মাহাত্ম্য অনুধাবন করে দলে দলে মুসলিম হচ্ছেন ঠিক তখনই বাংলাদেশের মতো একটা হাজার বছরের ইসলামী ঐতিহ্য ও পর্দার বিধান ধারণকারী রমণীদের ঘাড়ে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক কর্তৃক পরিচালিত ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পর্দা করার অপরাধে (?) ছাত্রীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে!

হিজাব পরার কারণে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হতে হয়েছে এক ছাত্রীকে। ১২ সেপ্টেম্বর ’১৩ইং ইউনিভার্সিটির হাফসা ইসলাম নামে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ৭ম সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে হিজাব পরায় ড্রেসকোড ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত ২২শে জানুয়ারি ড্রেস কোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও যেসকল ছাত্রী হিজাব পরিধান করত তাদেরকে শোকজ করা হয়। শোকজ করার পরও হিজাব পরা অব্যাহত রাখায় গত ১২ সেপ্টেম্বর হাফসাকে বহিষ্কার করা হয়। সনাক্তকরণ সমস্যা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিকে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অথচ এটা কোনো অজুহাতই নয়। কেননা, ইউনিভার্সিটির প্রবেশপথে স্ক্যানার লাগিয়ে নাশকতামূলক তৎপরতা রোধ করা সম্ভব, তাহলে কেউ এগুলো বহন করে ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করতে পারবে না, এতে করে নিরাপত্তা বজায় থাকবে। সেই সঙ্গে আংগুলের ছাপে খুলে এমন অটোমেটিক লক প্রতিটি ক্লাশ রুমের দরজায় লাগানো হলে সনাক্তকরণ সহজসাধ্য হবে। শরীয়তের বিধান মোতাবেক হিজাব পরিধান করা মুসলিম মহিলাদের জন্য ফরজ। সেই ফরজ বিধান পালনের অপরাধে (?) একটা এনজিও সংস্থার অধীনে পরিচালিত ভার্সিটি মুসলিম নারীদের বহিষ্কারের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পায় কোথা থেকে?

এই দুঃসাহসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে তৌহিদী জনতা। কিন্তু তৌহিদী জনতার এই আন্দোলনে প্রথম প্রথম অবজ্ঞা করে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়। অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ বলে, আমরা ড্রেসকোড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। ওই শিক্ষার্থী ড্রেসকোড মানলেই কেবল তাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইসফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, হাফসার পরিবারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। হাফসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে শিথিলও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বৈঠকে উপস্থিত হননি। তারা এখন বলছে ড্রেসকোড পরিবর্তন করতে হবে। এটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। বিষয়টা এখন আইনীভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

হাফসার বড় ভাই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইসা বলেন, হাফসাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেখানে বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এখন তারা মৌখিকভাবে কিছু শর্ত শিথিলের কথা বলছে। আমাদের কথা হচ্ছে ওই ড্রেসকোডই পরিবর্তন করতে হবে। আর যেহেতু লিখিতভাবে হাফসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাই লিখিতভাবেই প্রত্যাহার করতে হবে। আর সেটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হতে হবে। কেননা মৌখিকভাবে করা হলে কয়েকদিন পর আবার যে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?

তিনি বলেন, বিষয়টা সমাধান না হলে আমরা তা আইনীভাবে মোকাবেলা করবো। ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ৭ম সেমিস্টারের ছাত্রী হাফসা ইসলাম বলেন, বোরকার সঙ্গে নেকাব পরিধান করায় গত দুই সেমিস্টার ধরে আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এভাবে আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে বোরকা ও নেকাব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। জানুয়ারিতে নোটিশ জারির পরই এধরনের কড়াকড়ি শুরু হয় বলে জানান হাফসা ইসলাম। ওই ছাত্রীর আইডি নম্বর ১১৩০৩০০১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড্রেসকোডের দোহাই দিলেও গত ২২শে জানুয়ারি একটি নোটিশ জারি করে ড্রেসকোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের বোরকা, নেকাব ও হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও যেসব ছাত্রী বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরিধান করতেন তাদের ২৮শে মে শোকজ করা হয়। হাফসাকেও একই দিনে শোকজ করা হয়। ৩রা জুনের মধ্যে হাফসার কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। হাফসা জবাব দিলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দ মতো হয় নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই যে বিশ্বব্যাপী হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে এবং এই লড়াইয়ে প্রতিবাদী নারীদের ব্যাপক প্রতিরোধ ও নতুন করে বিভিন্নধর্মের নারীদের হিজাবে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করায় তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরাজিতও হচ্ছে। হিজাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজদের যখন এই ত্রিশঙ্কু অবস্থা, তখন বাংলাদেশের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিমরাষ্ট্র ও পর্দাপ্রিয় মুসলিম নারীদেরকে পর্দার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার ধৃষ্টতা বড় গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের প্রতি দিকনির্দেশ করে নাকি?

বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সচেতন তৌহিদী জনতা সেই এনজিও সংস্থাগুলোর পদযাত্রার প্রথমদিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং তাদের দূরভিসন্ধির কথা বলে আসছেন। কেউ এটাকে বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক আশঙ্কা বলেও উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে সুবিধাবাদী চক্র এটাকে উলামায়ে কেরামের প্রতিক্রিয়াশীলতা বলে সমালোচনা করেছে। কিন্তু সময়ের আবর্তনে উলামায়ে কেরামের সেই সন্দেহ-সংশয় বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। নইলে কীভাবে সম্ভব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিমদেশের মসজিদের নগরী ঢাকায় বসে একজন মুসলিম নারীকে পর্দা পালনের অপরাধে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়া? দেশটাকে আমরা এনজিওদের হাতে ইজারা দিয়েছি? কিংবা ইসলামবিদ্বেষী চক্রকে দেশটাকে পুতুলের মতো নাচানোর অনুমতি প্রদান করেছি? এদের সর্বনাশা চক্রান্ত থেকে মুসলিমদেরকে আজই সোচ্চার হতে হবে, বিশেষ করে নারীসমাজকে। অন্যথায় এই চক্র ভবিষ্যতে নারীসমাজের জন্য আরো ভয়ানক চক্রান্ত নিয়ে হাজির হবে। আজ সতর্ক না হলে সে সময় হয়ত ইচ্ছা থাকলেও হয়ত প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন