hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফেরারী নারী

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

১৯
জীবন ও গল্প
গল্প এক. কলিমুদ্দিন সাহেব তার জীবনের বড় একটা আশা পূরণ করতে গিয়ে অক্লান্ত সাধনা করেছেন। ছেলের ঘরের নাতনীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রায় এক বছর আগ থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ওই সময়ে একটা খাসির বাচ্চা কিনে রেখেছেন। একমাত্র ছেলেটা মারা যাওয়ার পর নাতী-নাতনীর দেখাশোনা ও লালনপালনের দায় দরিদ্র কলিমুদ্দিন সাহেবের ওপরই বর্তেছে। পিতৃাধিক মমতা দিয়ে তিনি নাতী-নাতনীদ্বয়কে মানুষ করে তুলছেন। নাতীটা ছোটো, পড়াশোনার মাঝপথে আছে। আর নাতনীটাকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠাচ্ছেন। বার্ধক্যের অক্ষমতা আর দারিদ্রক্লিষ্টতা সত্ত্বেও কলিমুদ্দিন সাহেব নাতনীর বিয়েটা বিশেষ আয়োজন করেই সম্পন্ন করতে চান। এই চিন্তা থেকেই তিনি অনেকদিনের জমানো সামান্য কিছু টাকা দিয়ে খাসির বাচ্চাটা কিনেছেন। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে তিনি নাতী কাফিলুদ্দিনকে কয়েকদিনের জন্য স্কুলের লজিং বাড়ি থেকে ছুটিতে ডেকে আনিয়েছেন।

পরের দিন বিয়ে। কাফিলুদ্দিন তার কয়েকজন বন্ধুকে দাওয়াত করেছে বিয়ের আয়োজনে সহযোগিতার জন্য। ফজরের আযানের আগেই খাসিটা যবেহ করে গোস্ত কাটাকাটি করার সুবিধার্থে রাতেই বন্ধুরা জমায়েত হয়েছে তাদের বাড়িতে। রাত তখন তিনটার মতো হবে। কাফিলুদ্দিন ঘরের পেছনে কয়েকজন লোকের ফিসফিস শব্দ শুনতে পেলো। ঘুমের আড়ষ্টতা কাটিয়ে দেখলো সত্যিই কয়েকজন লোক যে ঘরে খাসিটা বেঁধে রাখা হয়েছে সেই ঘরের পেছনে জড়ো হয়েছে। সে দৌড়ে গেল লোকগুলোকে ধরতে। কাছে গিয়ে দেখল ওরা খাসিটা ঘর থেকে বের করে ওদের বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছে। নিজের বড় বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানটা তবে মাটি হয়ে যাবে? অসমর্থ দাদার মাথাটা লজ্জায় কাটা যাবে? সে আর ভাবতে পারে না। তাই একাই এতগুলো লোককে রুখে দাঁড়ায় এবং খাসিটার দড়ি টেনে ধরে সে। লোকগুলোর মধ্য থেকে গোঁয়ার কিসিমের একজন এগিয়ে এসে বলে, তুই জানিস না, আমাদের ময়েন ভাই মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছে, তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে? সেই সংবর্ধনা অুনষ্ঠানের জন্য তোদের খাসিটা নিয়ে যাচ্ছি, মহৎ কাজে বাধা দিসনে, ভালো হবে না বলে দিলাম!

কাফিলুদ্দিন বলে, একজন মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনার জন্য আমার গরীব দাদার খাসিটা নিতে হবে! তোমরা জানো না আগামীকাল আমার বোনের বিয়ে এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য খাসিটা একবছর ধরে পালা হচ্ছে? লোকটা জবাবে বলে, একজন মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনার মতো মহৎ কাজের চেয়ে তোর বোনের বিয়ের আনন্দ বড় হলো! তোরাই দেশের কলঙ্ক, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে জানিস নে!

কিন্তু দরিদ্র কাফিলদের মুক্তিযোদ্ধাদের এই তরিকায় সম্মান জানানোর মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই সে আরো শক্ত করে খাসির রশিটা টেনে ধরল এবং একাই লোকগুলোকে বাধা দিতে লাগল। দলের মধ্য থেকে এগিয়ে এলো ষণ্ডামার্কা এক যুবক। সে বলল, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে পারে না তাদের বাঁচার অধিকার নেই। একথা বলে ধারালো একটা ছোরা কাফিলুদ্দিনের পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে খাসিটা টেনে নিয়ে যেতে লাগল সে।

ধারালো ছোরার আঘাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল। একটা গগনবিদারী শব্দ করে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ল কাফিলুদ্দিন। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভয়ানক শব্দে জেগে উঠল পুরো পাড়া। বৃদ্ধ কলিমুদ্দিন দৌড়ে এলেন ঘটনাস্থলে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা নাতীকে দেখে তিনি দিশেহারা হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তপ্রবাহ ও শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো কাফিলুদ্দিনের। নাতীর নিথর দেহের ওপর লুটিয়ে পড়লেন বৃদ্ধ কলিমুদ্দিনও।

পরের দিন ওই বাড়িতে বিয়ের পালকি এলো না। বাড়ি থেকে বের হলো একে একে দুটি জানাযার খাট। কলিমুদ্দিন এলাকার খুবই ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমন একটি মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ শুনে গোটা এলাকার লোকজন জড়ো হলো জানাযা সালাতে। সালাত শুরুর প্রাক্কালে কলিমুদ্দিন সাহেবের একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাফর সাহেব কান্নাজড়িতকণ্ঠে কিছু কথা বলতে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, শোকার্ত ভাইয়েরা! আপনারা সবাই আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু কলিমুদ্দিন সাহেবকে ভালো মানুষ হিসেবে জানেন। আজ আমি আপনাদের সামনে তার আরেকটি পরিচয় উন্মোচন করতে চাই। এ কথা বলে তিনি একটা পুরাতন কাগজে মোড়ানো জীর্ণশীর্ণ কিছু দলিল-দস্তাবেজ বের করলেন। সবার সামনে রেখে বললেন, আমাদের প্রিয় কলিমুদ্দিন মরহুম শুধু ভালো মানুষই ছিলেন না; ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাও।

প্রবীণরা জানেন, একাত্তরের যুদ্ধের ৯ মাস বাড়িতে ছিলেন না। আপনাদের মনে কখনও প্রশ্ন জাগেনি যে, তিনি ওই সময় কোথায় ছিলেন, কী করেছেন? এই দেখুন, ইতিহাসের একটা মূল্যবান দলিল। এই কাগজেই লেখা আছে তিনি ওই সময়টাতে কী করেছেন? কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন? এবং যুদ্ধে অসীম বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য তাকে দেওয়া বিশেষ প্রশংসাপত্র এখানে বিদ্যমান। এরপর তিনি হলদে খামের একটি চিঠি বের করে উপস্থিত শোকার্ত মানুষকে পাঠ করে শোনালেন। চিঠিটি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কলিমুদ্দিনের নামে পাঠানো। এতে একাত্তরের বিশেষ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে এবং অতিসত্বর তাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জাফর সাহেব শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, আপনারা জানেন, চিঠিটি পেয়ে তিনি কী করলেন? আমাকে ডেকে বললেন, জাফর! যে ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে সেই ঠিকানা বরাবর তুমি একটা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দাও যে, কলিমুদ্দিন নামের লোকটা বেশ কিছুদিন আগেই মারা গেছেন! আমি তার কথায় খুবই অপ্রস্তুত এবং অবাক হয়ে গেলাম। কেননা তিনি কখনও মিথ্যা কথা বলেন না। আজ এত বড় একটা সত্য কথা চেপে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন কেন? তিনি আমার মনের অবস্থা বুঝলেন এবং প্রশ্ন করার আগেই জবাব দিতে গিয়ে বললেন, জাফর! আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশের জন্য, দেশকে স্বাধীন করার জন্য। এটাকে আমি দেশ ও মানুষের সেবার নিয়তেই করেছি। তুমিই বলো, দেশ ও মানুষের সেবা করে বিনিময় নেয়া যায়? আমি সেদিন আর কথা বাড়াইনি, তার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের সামনে কথা বাড়ানোর মতো সাহসও আমার ছিল না। তাই আদেশ মোতাবেক আমি একটি চিঠি লিখে জানিয়ে দিই যে, কলিমুদ্দিন নামের সেই মুক্তিযোদ্ধা....

বন্ধুগণ! মরহুম কলিমুদ্দিনের জীবনের বিরাট একটা অংশ আপনাদের দৃষ্টির আড়ালে ছিল বলে আজ প্রকাশ করে দিলাম। এই শোকের মুহূর্তে বড্ড অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে, আজ ময়েন নামের যে ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার সনদ লাভ উপলক্ষ্যে সংবর্ধনার আয়োজন করতে গিয়ে কলিমুদ্দিন ও তার নাতী প্রাণ হারালেন, এলাকার প্রবীণ লোকেরা বলে থাকেন, সেই লোকটার জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধেরও কয়েক মাস পরে!

গল্প দুই. ভিক্ষাবৃত্তিই আমার মুক্তিযুদ্ধের পুরস্কার!

বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী একাত্তরের টগবগে তরুণ, দেশমাতৃকার মুক্তির আশায় সেদিন জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ সংগ্রামে। মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে তাকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আজ হাত পাততে হয় অপরের করুণার প্রত্যাশায়। নিজেকে প্রশ্ন করেন এই কি বিজয়, এই কি স্বাধীনতা? ভিক্ষাবৃত্তিই আমার মুক্তিযুদ্ধের পুরস্কার!

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মনরাজ গ্রামের টগবগে যুবক সফর আলী ৬৯’র আন্দোলনমুখর দিনে তৎকালীন মুজাহিদ বাহিনীর চাকরি ছেড়ে নেমে আসেন রাজপথে। ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে যুদ্ধের প্রস্তুতিগ্রহণ করেন। কুলাউড়ার প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বার, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিত আসুকের সঙ্গে ৪নং সেক্টর কমান্ডার মেজর সি.আর দত্তের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন।

যুদ্ধে যাবার সময় মা, স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময়টুকু পাননি। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক সাথীকে হারিয়ে মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করেছেন। দেশ ও জাতির বিজয় অর্জিত হয়েছে।

বিজয়ের ৪৩ বছর পর তার অনুভূতি জানতে চাইলে কান্না বিজড়িতকণ্ঠে মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পরপরই সব নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তার ভাগ্যে কোনো কাজ জোটেনি। শরীরের শক্তি থাকায় দেশ স্বাধীনের পর তিনি রিকশা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের অন্নের সংস্থান করতেন। অসুস্থ মা চিকিৎসার অভাব সঙ্গে নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন আর শরীরে শক্তি নেই, স্ত্রী, কন্যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায়ই অর্ধাহারে থাকতে হয়।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এই ভাতার টাকায় সংসার চলে না, জীবনের শেষ বয়সে অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ডান হাতটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাকে দেখা হয় অবহেলিত চোখে।

তাছাড়া তার নিজের কোনো বাড়ি-ভিটে নেই। শ্বশুর বাড়ির একখণ্ড জমিতে যাযাবরের মতো তাকে দিনাতিপাত করতে হয়। প্রতিনিয়ত মানুষের করুণার পাত্র হয়ে তাকে হাত পাততে হয়। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাহিত করার চেয়ে তার কাছে এ মুহূর্তে নিয়মিত দু’মুঠো অন্ন বড় জরুরি।

সফর আলী বলেন, বিজয়ের ৪৩তম বছর চলছে অথচ আমার মাথা গোঁজার একটু স্থান নেই! এখন চাওয়া শুধু নিয়মিত দুই মুঠো ভাত খেয়ে জীবনের শেষ সময়ে মানুষের কাছে হাত না পেতে একটু শান্তিতে মৃত্যু। [সূত্র : শীর্ষ নিউজ]

হ্যাঁ, গল্পের কাহিনীর মতোই কৃত্রিম মুক্তিযোদ্ধারা দলীয় বিবেচনায়, আত্মীয়তার জোরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মায়ের কোলে বাস করে, কেউ বা উদরে বাস করে কেবল মায়ের বমির উদ্রেকের কারণ সৃষ্টি করে এবং কেউবা তারও পরে স্বাধীন দেশে নাড়ি কেটে আজ মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়ে নিয়মিত ভাতা, বোনাস ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে চলেছে। পক্ষান্তরে বহু মুক্তিযোদ্ধা, প্রকৃতই যারা জীবনবাজি রেখেছিলেন তারা উপেক্ষিত। অনেকদিন আগে এক মুক্তিযোদ্ধার কষ্টের জীবন দেখে চোখ বেয়ে পানি নেমে আসার অবস্থা হয়েছিল। একটি দুই চাকার গাড়ির সঙ্গে দুটি কুকুর জুড়ে দিয়ে তিনি মানুষের মালামাল টেনে কোনোমতে জীবনযুদ্ধে টিকে আছেন বলে খবর বের হয়েছিল।

বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের মতো সার্বজনীন স্বীকৃত বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। এত বড় একটি গৌরবদীপ্ত ইতিহাসকেও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে হরদম ব্যবহার করা হয়। বড় দুঃখের বিষয় যে, আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সর্বজন স্বীকৃত কোনো ইতিহাস রচিত হয়নি। কাউকে তো সংবিধান রচনা করে তার অবদান খাটো করা হচ্ছে। এভাবে অবিকৃত ইতিহাসের কারণে কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত। কাউকে পাততে হচ্ছে ভিক্ষার হাত।

আর সবচেয়ে করুণ আর কষ্টের কথা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক নারী ইজ্জত হারিয়েছিলেন। অনেক নারী ইজ্জতের প্রশ্নে আপোস না করে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হন নারীদের ইজ্জত হরণ করা হলে এবং একটা জাতির পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় নারীদের ইজ্জত প্রদানে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে। পাকিস্তানীদের সেদিনের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল নারীদের ইজ্জতহরণ এবং এদেশের মুসলিম নারীদের ইজ্জত হারানো। বড় পরিতাপের বিষয় হচ্ছে; যে নারীদের ইজ্জতহরণের বদৌলতে বিজয় ত্বরাণ্বিত হয়েছিল আজ নারীদের সেই ইজ্জতই পানির দরে বিক্রি হচ্ছে! মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যদি শহীদ আর গাজীই মনে করো তবে তাদের রেখে যাওয়া নারীদের ইজ্জতের আমানত রক্ষা করছো না কেন?

আসলে আজ মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম স্বার্থবাজদের স্বার্থপূরণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এই হাতিয়ার কখনও কলমে পরিণত করে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ইতিহাস রচনা করা হচ্ছে, কখনও নষ্ট-ভ্রষ্ট আল্লাহদ্রোহী যৌনমেলাকে প্রশংসা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ভয়ানকভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা নস্যাৎ করা হচ্ছে। একটা জাতির জন্য এরচেয়ে বড় অবমাননা আর কী হতে পারে যে, দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সন্তান এবং নাতনি পর্যন্ত তথা স্ত্রী থেকে শুরু করে বংশের গোটা ধারা নিজেদের লজ্জাস্থান বিক্রি করে রুটিরোজগারের ব্যবস্থা করছে? নারী অবমাননা ও অবমূল্যায়নের এরচেয়ে বড় কোনো দৃষ্টান্ত থাকলে আমাকে জানাবেন, প্লিজ!

সত্যিকারার্থে ইসলামের চর্চা যদি এ দেশে করা হত, তাহলে এমন অকৃতজ্ঞতা ও নারীর এমন অবমাননার ঘটনা কখনো ঘটত না। মহান আল্লাহ নারীর সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার্থেই পর্দা বিধান ফরয করেছেন নারী ও পুরুষের ওপর এবং নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন একান্তই পুরুষের ওপর। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন,

﴿ قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [ النور : ٣٠، ٣١ ]

‘মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪}

আরেক সূরায় আল্লাহ বলেন,

﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]

‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩৩}

নারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ঘোষণা করেন,

﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ ﴾ [ النساء : ٣٤ ]

‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪}

নারীর আর্থিক দায়িত্ব সর্বদাই পুরুষের ওপর। বিয়ের আগে পিতা, তার অবর্তমানে বড় ভাই, বিয়ের পর স্বামী, স্বামীর অবর্তমানে ছেলের ওপর। এর কোনোটাই না থাকলে রাষ্ট্রকে তার আর্থিক চাহিদা মেটাতে হবে।

তেমনি নারীর সম্ভ্রম ও সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যিনা-ব্যভিচারকে ইসলাম মারাত্মক অপরাধ বিবেচনা করা হয় এবং এর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [ الاسراء : ٣٢ ]

‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ {সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৩২}

এর শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي ۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢ ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٣ وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤ ﴾ [ النور : ٢، ٤ ]

‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের আযাব প্রত্যক্ষ করে। ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে। আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।’ [সূরা আন-নূর, আয়াত : ২-৪}

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন