hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফেরারী নারী

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

ফেসুবক : মৃত্যুদুয়ারে নতুন অতিথি!
মানুষের মৃত্যু দূতের আগমন সুনিশ্চিত হলেও আগমনের পথ ও অলিগলি অনেক। দিনদিন বাড়ছে মৃত্যুদূতের আগমন গলির সংখ্যা। নিত্যনতুন অবয়বে মানুষের হায়াত-দরজায় হানা দিচ্ছে জান ছিনতাইতারী এই অতিথি। কখনও আসছে জানা ও পরিচিত বেশে, কখনও বা একেবারেই নতুন ও অপরিচিত বেশে। চিন্তা করা যায়, যে নারীকে মানুষ পরম মমতা দিয়ে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অন্তরঙ্গতার বেশে কাটানোর মহৎ উদ্দেশ্যে মমতা-নীড়ে নিয়ে আসে, সেই নারীই কিনা স্বামীর মৃত্যু ও যমদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়! হ্যাঁ, বিশ্বাসের সব আঙিনা ছাড়িয়ে বাস্তবতার আঙিনায় এই সত্যই আছড়ে পড়ছে যে, স্ত্রী কেবল প্রাণসঙ্গীই নয়; কখনও কখনও স্বামীর যমদূত ও মৃত্যুদুয়ারের নতুন অতিথিও বটে।

আমাদের এই ভাষ্য বরাবরের মতোই চিরন্তন সত্য হয়ে ধরা পড়ল টঙ্গীর একটি ঘটনায়। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সংঘটিত হয় সেই ভয়াবহ ঘটনাটি। টঙ্গী রেলস্টেশনে অবস্থিত তৃপ্তি হোটেলের মালিক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে স্ত্রী টুম্পা ও তার প্রেমিক রকি ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

সাইফুল হত্যা মামলায় নিহত সাইফুলের স্ত্রী নূরজাহান আক্তার টুম্পা ও তার প্রেমিক রকিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। ফেসবুকে রকির সঙ্গে সাইফুলের স্ত্রী টুম্পার পরিচয় ও পরকিয়া প্রেমের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে টুম্পা ও তার প্রেমিক রকি স্বীকার করে। পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই সাইফুলকে স্ত্রী টুম্পা ও কথিত প্রেমিক রকিসহ (২২) তার সহযোগীদের নিয়ে নিজ বাসায় হত্যা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার লিখিত বক্তব্যে আরো জানান, হত্যার দুই মাস পূর্বে হোটেল ব্যবসায়ী সাইফুল ৫দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী গেলে ওই দিন রাত ১১ টার সময় টুম্পা রকিকে ফোনে তার বাসায় আসতে বলে। পরে রকি সারা রাত বাসায় থেকে সকাল ৭টায় বের হয়ে যায়। ওই রাতেই সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সে অনুযায়ী গত ৩ সেপ্টম্বর সন্ধায় তার নিজ ফ্ল্যাটের শয়নকক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী টুম্পা ও কথিত প্রেমিক রকির ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যা করে সাইফুলকে।

এভাবেই আমরা বরণ করে নিয়েছি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও আধুনিকতার সাজসরঞ্জাম। প্রেমের সম্পর্ক এখন গড়ে উঠছে অনলাইনে, ফেসবুকে। কিছুদিন আগেও প্রেমের প্রথম ধাপ মানেই ছিল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে, চত্বরে, আড্ডার ফাঁকে কিংবা নির্জন কোনো এক পরিসরে দুরু দুরু বুকে পছন্দের প্রিয় মানুষটিকে জানিয়ে দেওয়া মনের কথাটি৷ কখনো লজ্জায় মুখোমুখি আবার কখনো বা ছোট্ট চিরকুট। তারপর হয়তো ক্যাম্পাস ছেড়ে পার্ক বা কফি শপ। প্রেম বলতে তখন ছিল ঈদ এলে প্রিয় মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে অকারণ হাঁটাহাঁটি বা বারান্দায় তাকে দেখে আড়চোখে তাকানো। তারপর অভিভাবকদের চোখ এড়িয়ে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখনকার প্রজন্ম প্রেম করছে ফেসবুকে।

এখন সম্পর্ক ভাঙা-গড়া সবই নির্ভর করছে একটি মাউসের ক্লিকের ওপরে। নিমেষে বদলে যাচ্ছে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস। কখনো সিঙ্গেল থেকে ইন অ্যা রিলেশনশিপ আবার কখনো এনগেইজড থেকে সিঙ্গেল। মার্কিন মনোবিদেরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, রোমান্সের দুনিয়ায় এখন ফেসবুক প্রেম বাড়ছে আর বাড়ছে অনলাইন ডেটিং৷ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ডেক্সটপ, ল্যাপটপ পেরিয়ে মুঠোফোনের অ্যাপ্লিকেশনের সুযোগ অনলাইন সাইটগুলোতে সক্রিয় রাখছে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের। কখনও কখনও বিবাহিতরাও জড়িয়ে পড়ছে কম্পিউটার-ল্যাপটপ আশ্রিত ডিজিটাল প্রেমে। ব্যস্ত সময়ের চাপ কাটিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের সময়-সুযোগ কমে গেছে বলেও হয়তো ফেসবুক প্রেমে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। লাখ লাখ প্রোফাইল থেকে খোঁজ চলছে একটা সুন্দর মুখের।অনেকে আবার প্রতারণা বা নিছক মজার উদ্দেশ্যেও খুলছেন ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল। অনেকেই আবার সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে বাঁচতে বন্ধুত্বের উষ্ণতা খুঁজছেন ফেসবুকে। এভাবেই অসত্য লুকোচুরির আশ্রয়ে ফেসবুকের পাতায় ঢুকে পড়ে প্রেম ভাইরাস। যার বিকল্প শক্তিশালী এন্টিভাইরাস না থাকায় মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিতে হয় স্বামী সাইফুলকে। যোগাযোগের মাধ্যম যতই অবারিত হয়েছে মৃত্যুফাঁদ ততই গভীর ও প্রাণঘাতী হয়েছে। এক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

ফেসবুককে কেন্দ্র করে কল্পনার পেলব পাখায় যোগ হয়েছে একেকটি পালক আর তাতে বেড়েছে স্বপ্নের ফানুস। হৃদয়াকাশে জমেছে বাহারি রংধনু তাই মানুষ ওড়ে দিবাস্বপ্নের ডানা মেলে। চিন্তা করেনি গন্তব্যে ফেরার, তাই আছড়ে পড়েছে বাস্তবতার রুক্ষ্মভূমিতে। কম্পিউটার মানুষের মনে আধুনিকতার রংধনু ছড়িয়ে দিয়েছে। এই রংধনুর মায়াবী রং তাদেরকে উদার আহ্বান জানায় হৃদয়ে কল্পনার রং আঁকতে। সেই কল্পিত রঙের ওপর তাই তারা আঁকে স্বপ্ন ও জীবন বাঁধার নতুন নতুন ঘর। সেই ঘরের স্থায়ীত্ব, দৃঢ়তার কথা কল্পনাও করে না কখনও। তাই ফলাফলশূন্য। কখনও বা অপ্রত্যাশিত। বিষণ্ন আর হতাশার মধ্যে ফেসবুক যেন আরও বেশি করে কাছে টানে অনেককেই। আজকের এই অতিব্যস্ত জীবনে অনেকেই ফেসবুকে খোঁজেন দম ফেলার ঠাঁই। অনেকে আবেগে বসিয়ে দেন তাদের স্ট্যাটাস, ব্যক্তিগত ছবি; আবার অনেকেই খুঁজে ফেরেন প্রিয় কোনো মুখ। সামনাসামনি যে কথা বলে উঠতে পারা যায় না, চ্যাটে সেই কথাগুলো কত সহজে বলে ফেলা যায়৷ কারও সঙ্গে সম্পর্ক না রাখতে চাইলে, তাকে বন্ধু তালিকার বাইরে পাঠিয়ে বা ব্লক করে সম্পর্কে অনাগ্রহের কথাও জানানো সহজ। এখন যেন ফেসবুক হয়ে উঠেছে পরিচিত আর অপরিচিত ১০০ কোটি মানুষের মিলনস্থল।

বন্ধুত্বের বিশালতা, সম্পর্কের উন্মুক্ততায় অনেকেই অভিভূত হয়। ফেসবুক পাতার হাজারও সুন্দর রমণীতে পুরুষ কিংবা সুন্দর সুপুরুষে বিমোহিত হয় নারী। কিন্তু তারা খবর রাখে না যে, এ বিশাল জনসংখ্যার নেটওয়ার্কে সবগুলো প্রোফাইল আসল নয়। অনেকেই ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে পেতে রেখেছে প্রতারণার ফাঁস। গলায় ঝুলে পড়লেই বিপদ। সাইফুল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও ফেসবুকে প্রতারণার খবর আমরা এখন হরহামেশাই শুনতে পাই। তাই সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগে সব সময়ই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে জীবনসঙ্গী খুঁজে দেয়ার সাইটগুলোতে ৮০ শতাংশ মানুষই তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বাড়িয়ে বলছে অথবা সত্য গোপন করছে।

তাই অনলাইনের অচেনা লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব জমানোর ব্যাপারে সাবধান হোন৷ অসাবধনতা ও অসচেতনতার কারণে ফেসবুকে প্রেমে পড়ে প্রতারণার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

বহুজাতিক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ইউরো আরএসসিজির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছে। জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নর্ম ইউস্তিন বলেন, ‘আমাদের বাস্তবজীবন এবং অনলাইন জীবন পরস্পর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে যে লোকজনের সঙ্গে আমরা মিশি আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে (ফেসবুক-টুইটার) আমরা যে আচরণ করি, তা বাস্তবে আমাদের আচরণকেও প্রভাবিত করছে। তা ভালো-মন্দ যা-ই হোক না কেন।’

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাদের সামাজিক প্রবাহে ভূমিকা রাখছে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো, কিন্তু নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কে অবিশ্বাস, ঈর্ষা আর সন্দেহের গভীর ফাটলও ধরাচ্ছে। ধ্বংস করছে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন। ভাঙছে বিয়ে এবং কখনও কখনও এই সূত্রে খুন হচ্ছে স্বামী কিংবা স্ত্রী।

শারীরিক ও মানসিক প্রতারণা থেকে শুরু করে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার পেছনে ফেসবুকের মারাত্মক ভূমিকা আমরা নিয়মিতই প্রত্যক্ষ করছি। ফেসবুক থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ঈর্ষা আর এ ঈর্ষা থেকে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘটছে সম্পর্কচ্ছেদ থেকে শুরু করে খুন-খারাবীর ঘটনা। অপরিণত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরামর্শ হিসেবে গবেষক ক্লেটন জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সময় ধরে ফেসবুক নয়। এভাবেই সামাজিক অন্তর্জালের মায়াজালে আটকে প্রতারণার শিকার হওয়ার প্রতিষেধক হিসেবে সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ ও গবেষকেরা।

ফেসবুকে প্রেম? সেতো ফ্লোরিডা শহরের মতো খুবই সুন্দর কিন্তু যখন আগুন লাগে নিমিষেই পুড়ে যায় সব কিছু। আগুন তো পোড়ায় ঘরবাড়ি কিংবা দাবানলে পোড়ে বনজঙ্গল, গাছপালা। কিন্তু ফেসবুক হচ্ছে সংসার ভাঙার কুহক। দ্য সানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। যোগাযোগ, সঙ্গ কিংবা সঙ্গীর সন্ধানও মিলছে ফেসবুকে। কারও কারও কাছে ফেসবুক তাদের দ্বিতীয় জীবনও বটে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফেসবুকই হয়ে উঠেছে বেদনার কারণ। ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। আর এ জন্য সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুককেই দায়ী করা হচ্ছে।

বিচ্ছেদ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাজ্যের আইনজীবীরা বলছেন, ইদানীং ফেসবুকের কারণেই সে দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়ে চলছে। বিবাহিতরা অনলাইনে নতুন কারও সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন কিংবা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সন্দেহপ্রবণ দম্পতিরা তাদের সঙ্গীকে পরীক্ষা করার জন্যও ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ব্রিটেনের একজন আইনজীবী বলেছেন, নয় মাসে তিনি যতগুলো বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তার সবগুলোই ফেসবুকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ কারণে দেশটির আইনজীবীরা বিবাহিত দম্পতিদের ফেসবুক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছেন।

আধুনিক সভ্যতার এ যুগে আমাদের সামাজিক প্রবাহে ভূমিকা রাখছে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইটগুলো, কিন্তু নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কে অবিশ্বাস, ঈর্ষা আর সন্দেহের গভীর ফাটলও ধরাচ্ছে তীব্রবেগে। যা বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষকে বিচলিত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরাও এক গবেষণাতে ফেসবুক-টুইটারকে সংসার ভাঙার কুহক আর ডাহুক বলেই তথ্য পেয়েছেন।

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, শারীরিক ও মানসিক প্রতারণা থেকে শুরু করে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার পেছনে ফেসবুকের বড় ভূমিকা খুবই মারাত্মক। সব বয়সের বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে ‘ফেসবুক সৃষ্ট ঈর্ষা’ বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সময় ধরে ফেসবুক ব্যবহারে ‘ফেসবুক-সৃষ্ট ঈর্ষা’ তৈরি হতে পারে। সঙ্গীর কার্যক্রম নজরদারি করতে চাওয়া থেকে অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার এ ঈর্ষার কারণ হয়ে ওঠে।

সাইবার সাইকোলজি, বিহেভিয়ার অ্যান্ড সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে প্রধান গবেষক রাসেল ক্লেটন জানিয়েছেন, রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করেন তখন জীবনসঙ্গীর কঠোর নজরদারির মধ্যে পড়েন তিনি। এর ফলে জন্ম নেয় ঈর্ষা। এ ঈর্ষা থেকে সঙ্গীর অতীতের বিভিন্ন কথা তুলে শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা।

একারণে গবেষকরা নতুন দম্পতি ও নতুন সম্পর্কে বাঁধা পড়া সঙ্গীদের ফেসবুক ও টুইটার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অপরিণত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ পরামর্শ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে গবেষক ক্লেটন জানান, অতিরিক্ত সময় ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের ব্যবহার সম্পর্ক ভাঙার ফাঁদ হতে পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার না করলে নতুন দম্পতিদের মধ্যে যেমন মনোমালিন্য কমতে পারে তেমনি পরস্পরকে বাড়তি সময় দেয়াও সম্ভব হয়। যারা পরস্পরকে নতুন করে জানছেন, তারা যেন সামাজিক যোগাযোগের ফাঁদে পড়ে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি না করেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেই গবেষকেরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কেবল সাইফুল নন, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ হচ্ছেন ফেসবুকের এই পাতানো সম্পর্কের বলি। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে...

এক. ভারতের আনু শর্মাকে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছিলেন তার স্বামী। একদিন আনু তার স্বামীর কিছু টুইট ঘেঁটে প্রতারণার এ বিষয়টি টের পেলেন। ঘটনা গড়িয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে আনু শর্মার স্বামী বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন, তবে আনু শর্মার কাছে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ছিল তার স্বামীর করা ‘টুইট’, যা তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।

দুই. কোনো এক ঈদের দিন ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটির সময় ‘প্রিয়া’ নামের একটি সুন্দর মেয়ের প্রোফাইল চোখে পড়েছিল বেসরকারি অফিসের তরুণ কর্মকর্তা রাজীবের। চোখের দেখা থেকে ভালো লাগা। তারপর ‘প্রিয়া’ নামের অচেনা সেই ফেসবুকে প্রোফাইলে তিনি পাঠিয়েছিলেন বন্ধুত্বের অনুরোধ। প্রিয়ার প্রোফাইলে দেওয়া তথ্যে কোনো গড়বড় পাননি রাজীব। সেদিনই ফেসবুকে বন্ধুত্বের আহ্বানে সাড়া আসে প্রিয়ার কাছ থেকে। এরপর থেকে সময় পেলেই দুজন চ্যাটিং আর নানা আলোচনা। একসময় প্রেমের নানা কথাও আলোচনা করেন তারা। এক মাসের মধ্যেই যেন দুজনের মধ্যে দানা বাঁধে গাঢ় প্রেম। এরপর আসে সামনা-সামনি দেখা করার অনুরোধ। কিন্তু সেই দেখা আর হয়নি। তিন মাস পর একদিন রাজীব জানতে পারেন, তার খুব কাছের এক ছেলে বন্ধু ‘প্রিয়া’ নাম দিয়ে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে তার সঙ্গে প্রেমের এ অভিনয় করেছে। খুব বিষণ্ন হয়ে মুষড়ে পড়েন রাজীব।

তিন. এদিকে প্রায় একই সময় ফেসবুকে তার এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিথি নামের এক তরুণী। সম্পর্কের একপর্যায়ে তিথি যখন জানতে পারলেন, তার ছেলেবন্ধু শুধু তার সঙ্গেই নয়, পরিচিত অনেক মেয়ের সঙ্গেই ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের পর্যায়ে রয়েছে, তখন তাদের সম্পর্ক আর বেশি দূর গড়ায়নি।

চার. ফেসবুক প্রেমের সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ানক উদাহরণ চীনের একটা ঘটনা। সংসারে তিনজন মাত্র সদস্য। ছেলে চাকরিরত। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয় তাকে। স্ত্রী ছোট সংসারের কাজকর্ম একাই সারেন। শ্বশুর বিপত্নীক। কর্মহীন এই পৌঢ় লোকটির বেশির ভাগ সময় কাটে ঘরে, শুয়ে বসে। ছোট সংসার হওয়ায় ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে একেবারেই অবসর হয়ে যান স্ত্রী। অবসর সময় কাটান কম্পিউটার আর ল্যাপটপের বাটন টিপে। এদিকে শ্বশুরেরও সময় কাটানোর একমাত্র অবলম্বন ওই কম্পিউটার এবং যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। অবসর আর নিঃসঙ্গতা কাটাতে দুইজনই বেছে নেন একজন করে ফেসবুক সঙ্গী। অদৃশ্য সঙ্গীর রসালাপে ভালোই কাটে অর্ধবৃদ্ধ আর অর্ধ-অবসর গৃহিণীর অবশিষ্ট সময়। রসালাপ ও উত্তেজক বচন-বাচনে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। বন্ধুত্ব গভীর হলে সৃষ্টি হয় পরস্পরে দেখা-সাক্ষাতের তৃষ্ণা। উভয়ের মধ্যেই এই তৃষ্ণা প্রবল হতে থাকে। অবশেষ দুইজনেই সময় করে বের হন নিজ নিজ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। প্রথমে পুত্রবধূ শ্বশুরের কাছে এসে জানান, তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তিনি। ফিরতে হয়ত দেরিও হতে পারে।

শ্বশুর বুঝতে পারেন, এটা তার কাছ থেকে পুত্রবধূর অনুমতি গ্রহণ নয়; তার অনুপস্থিতিতে ঘর পাহারা দেয়ার বিনয়ী ও কৌশলী আদেশ। তাই তিনি বলেন, বউ মা! ঘরের চাবিটা সঙ্গে করে নিয়ে যাও। আমাকেও একটু বাইরে যেতে হবে। অনেকদিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। তার সঙ্গে সাক্ষাতে যেতে হবে যে!

এভাবে দুইজন দুইজনের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বের হন নিজ নিজ বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করতে। ফেসবুকে পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী যার যার বন্ধুর কাছে হাজির হন তারা। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে বিস্ময়, লজ্জায়, অপমানে মাথা নুয়ে আসে শ্বশুর-পুত্রবধূর। তাদের পরস্পরের বন্ধু যে আর কেউ নন, নিজেরা নিজেরাই! একই ঘরে বসে তারা দীর্ঘদিন যাবত দূরের, অদৃশ্য বন্ধুর হাতছানির খেলা করেছেন! ফেসবুকের গেরিলা প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন একই ছাদের বাসিন্দা শ্বশুর-পুত্রবধূ!

এভাবে অবাঞ্ছিত পন্থায়, দৃষ্টিকটু পঙ্কিলতায় চলছে ফেসবুকের সূত্রে প্রেম প্রেম খেলা। দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেসবুকের এই প্রেম শেষ পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফেসবুকে সম্পর্ক যেমন ঝড়ের গতিতে তৈরি হয় তেমনি ঝড়ের গতিতেই ভেঙে যায়। এ ধরনের গেরিলা সম্পর্ক মানুষের জীবনে সুখ ও অনাবিল আনন্দ আনে না, বরং বয়ে আনে লাঞ্ছনা, চরম বিব্রত ও লজ্জাজনক অপূর্ণ পরিণতি। বিজ্ঞানীয় উপহার প্রতিনিয়ত বিব্রতবোধেই যাপিত করতে বাধ্য করছে আমাদের যাপিত জীবন। বিজ্ঞান! আজ তোমাকে হ্যাঁ বা না কোনোটাই বলার ভাষা আমার নেই। তবে ভালো থেকো...

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন