hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফেরারী নারী

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

১৬
ধর্ষণচিতায় দগ্ধ নারী : আগুন নেভাতে গেলে পুড়ছে হাত
ভোটে, নিজস্বার্থে, দলীয় হীনকামনায় এবং আদর্শের ধ্বজা উঁচু করতে নারীর ব্যবহারের জুড়ি নেই। নারীকে আজ বহুতলবিশিষ্ট ভবনের নিচতলার গেটের চাবির মতো সর্বজন ব্যবহার্য বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই যে যেভাবে পারছে, যখন পারছে নারীকে হীনস্বার্থে ব্যবহার করছে। এর ভয়ানক একটা নজির দেখলাম আমরা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময়। এর আগে চারটি সিটি কর্পোরশন নির্বাচনে ইসলামবিদ্বেষীতার কারণে আওয়ামী সরকার চরম মার খায় এবং সবকটিতে গোহারা হেরে যায়। এই পরাজয়ের একমাত্র ও প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় হেফাজত দমন ও শাপলা চত্বরের মধ্যরাতের গণহত্যাকে। ইসলামের পক্ষের লোকেরা নয়; স্বয়ং ইসরামবিদ্বেষী ও বামপাড়ার মিডিয়ার লোকেরাই তা স্বীকার ও লেখা-সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করতে থাকে।

এই অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের রেশ না কাটতেই হাজির হয় গাজীপুর সিটি নির্বাচন। সরকারের দুর্ভাগ্য, তারা আগের চার সিটি নির্বাচনের আগেই গাজীপুরের তফসিল ঘোষণা করে ফেলে এবং গাজীপুর থেকে বের হয়ে আসাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সব রাগ গিয়ে পতিত হয় হেফাজত ও হেফাজত নেতা আল্লামা শফীর ওপর। দায় সব তাঁরই! তিনিই জনগণকে সত্যের দিকে আহ্বান করে বাতিলের মসনদকে টলিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তাকেই ঘায়েল করতে হবে, হেনস্থা করতে হবে! কিন্তু উপায়? উপায়ও পেয়ে যায় ষড়যন্ত্রকারীরা। সেই উপায় বের করতেই টেনে আনা হয় নারী ইস্যু। তাই তো বলছিলাম, আজকের নারী যেন সর্বজন ব্যবহার্য কলাপসিবল গেটের চাবির মতো। যে কোনো নন্দিত ও নিন্দিত পথে তাদেরকে টেনে আনতেই হবে। এই টানাটানি করতে গিয়ে বিজাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভর্তুকিখোর মিডিয়া টেনে আনল আল্লামা আহমাদ শফীর একটি ভিডিও-বক্তৃতা। এই ভিডিও-বক্তৃতাটি আসলে তারই কিনা তাতেই ঘোরতর সন্দেহ থেকে গেছে।

আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্য বা ওয়াজগুলো সাধারণত আল-আরব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ার আহমদ রেকর্ড করে থাকেন এবং আলোচিত ভিডিও-ওয়াজটিও আল-আরব এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক রেকর্ডকৃত ও বাজারজাতকৃত। আল আরব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ার আহমদ ওই ওয়াজ ও বক্তৃতা সম্পর্কে বলেন, ‘শফী সাহেব হুজুরের এই ওয়াজটি আমি দুই-তিন বছর আগে চট্টগ্রামের কোথাও রেকর্ড করেছিলাম। কোথায় করেছিলাম, সেটি এখন আর মনে নেই। কারণ প্রতিবছর হুজুর শত শত স্থানে ওয়াজ করেন। আমি চেষ্টা করি হুজুরের সব বক্তব্য রেকর্ড করতে। আমি হুজুরের প্রায় প্রতিটি ওয়াজেই উপস্থিত থাকি। কিন্তু বিগত দুই-এক বছরে যে এ বক্তব্য রেকর্ড করিনি, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। করলে আমার মনে থাকতো।’

‘হুজুরের বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, এটা সুপরিকল্পিত একটি অপপ্রচার। হুজুর আমাদের চট্টগ্রামের সব মানুষের মুরব্বি, সবার অভিভাবকের মতো। তিনি সাধারণ মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে বুঝাতে গিয়ে নানা সময় নানা আঙ্গিকে কথা বলেন। আমরাই দেখেছি, তিনি ৬০-৭০ বছরের বৃদ্ধমানুষকে সবার সামনে বকাঝকা করেন। সমাজের অনেক বড় বড় ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মানুষকেও তিনি এভাবে বকাঝকা করেন, আপনার বাড়িতে গানবাজনা চলে কেনো? আপনার ছেলে নাকি নেশা করে? আপনার ঘরে নাকি পর্দা নাই? এমন বিষয়ে তিনি সবসময়ই সবাইকে সতর্ক করেন, উপদেশ দেন। তারা হুজুরের সামনে তার কথার প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা বরং মাথা নিচু করে বসে থাকেন, নিচুস্বরে হাসেন। এলাকার মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এমনটা করেন। এলাকার মানুষও বিনা বাক্যব্যয়ে হুজুরের কথা মেনে নেন।’

‘এই ওয়াজটি তিনি কোনো একটি গ্রাম্য মাহফিলে দিয়েছিলেন সম্ভবত। গ্রামের মানুষের জন্য হুজুর সাধারণত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজ করেন এবং এমন সব উপমা দিয়ে তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেন যেগুলো দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারেন। আমার মনে হয়, তিনি যা বলেছেন তাতে নারীদের মোটেও অসম্মান করা হয়নি, বরং নারীদের সম্মানকে আরো বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন আগের একটি ওয়াজকে এখন মানুষের সামনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করে ফায়দা ওঠানো নাস্তিকদের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়।’

ইয়ার আহমদের বক্তব্যের রেশ ধরে আমরা কয়েকটি বিষয়কে আলোচনার টেবিলে টেনে আনতে পারি। প্রথম কথা হচ্ছে; আল আরব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ার আহমদের বক্তব্য অনুযায়ী বক্তব্যটি কম হলেও দুইবছর আগের কোনো এক ওয়াজ মাহফিলের। দুই বছর আগের একটি বক্তব্যকে কেনো আমাদের চতুর মিডিয়া হঠাৎ করেই সামনে নিয়ে এলো?

দ্বিতীয় কথা হলো, বিশেষ অপপ্রচারের জন্য আমাদের মিডিয়া যখন এই ইস্যুটি সামনে নিয়েই এলো, কেনো তারা এটিকে আল্লামা আহমদ শফীর সাম্প্রতিক বক্তব্য বলে চালিয়ে দিলো? দুই বছর সময়কে কি কেউ সাম্প্রতিক বলে? কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে এই বক্তব্যকে ‘কয়েকদিন’ আগের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম বক্তব্যটিকে ৮ জুলাই হাটহাজারীতে দেওয়া আল্লামা শফীর বক্তব্য বলে প্রচার করেছে। অথচ আল্লামা শফী জুলাইয়ের প্রথম থেকেই উমরার উদ্দেশে সৌদি আরব অবস্থান করেন। তবে কেনো মিডিয়ার এই নির্জলা মিথ্যাচার?

তৃতীয় কথা হলো, আল্লামা শফী বক্তব্য দিলেন অথচ তার সামনে উপস্থিত শ্রোতারা কেউ প্রতিবাদ করলো না। এক বছর গেলো, দুই বছর গেলো কিন্তু কোথাও কোনো প্রতিবাদ হলো না; একজন নারীও সরব হলেন না তার ‘অপমানের’ প্রতিশোধ নিতে। অথচ দুই বছর পর তার সেই বক্তব্য নিয়ে হঠাৎ করেই আমাদের মিডিয়া সরব হয়ে উঠলো। কতিপয় নারীনেত্রী আর ধাপ্পাবাজ রাজনৈতিক নেতার শরীরে আগুন ধরে গেলো, জাত গেলো জাত গেলো বলে। অথচ সরাসরি যাদের সামনে বললেন তাদের গায়ে আগুন লাগলো না, তাদের মা-বোনের ইজ্জত গেলো না; ইজ্জত গেলো এসব নারীদরদীর! তাও তিন বছর পর! বাঙালি নারীর ইজ্জত কি এতোই সস্তা? তিনবছর পর তার ইজ্জত ঢাকার জন্য আমাদের নারীনেত্রীদের টনক নড়লো! তবে কি বাঙালি নারীরা এতোদিন আব্রুহীন হয়ে পথেঘাটে পড়ে ছিলেন?

আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার বক্তব্যের ফলে কোনো নারী কি ধর্ষণের শিকার হবেন? কোনো নারী কি স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হবেন? কোনো নারী কি যৌতুকের মতো অভিশাপের শিকার হবেন? কোনো নারী কি কর্মস্থলে তার সহকর্মীর হাতে যৌনাক্রান্ত হবেন? স্কুল-কলেজে কি এর দ্বারা ইভটিজিং বেড়ে যাবে? এর প্রত্যেকটার উত্তরই হবে ‘না’। তাহলে তার বক্তব্যে যদি এতোসব উপকারিতা থেকে থাকে তবে কোন অমৃত সুধার তালাশে আমাদের তথাকথিত নারীনেত্রীরা ১৮ জনের মানববন্ধন নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ায়? আর আমাদের বেহায়া মিডিয়াগুলো কীভাবে সেই ১৮জনের মানববন্ধনের ছবি প্রথম পাতায় ছাপতে পারে? ১৮জনের জনসমর্থনই কি দেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে?

কী কারণে দোষ ধরা হয় আল্লামা আহমদ শফীর? তিনি নারীকে ঘরে সুরক্ষিত থাকতে বলেছেন। তাকে অনর্থক বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন। তাকে ভিন্নপুরুষের সঙ্গে চলতে নিষেধ করেছেন। চাকরিতে, স্কুল-কলেজে, ছেলেদের সঙ্গে উন্মুক্তভাবে মিশতে নিষেধ করেছেন। একজন মেয়ের জন্য এটা কি অপমানসূচক উপদেশ? তিনি মেয়ের বাবাকে বলেছেন মেয়ের খোঁজ নিতে, মেয়ে চাকরির নামে অন্য ছেলের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে কী-না, স্কুলের নামে পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছে কী-না, সে যা উপার্জন করছে সেগুলো হালাল কী-না এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এগুলো একজন অভিভাবককে পরামর্শ দেয়াটা কি মানবতাবিরোধী কাজ? এ বরং কুরআনের সরাসরি নির্দেশ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]

‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩৩}

এর আগের আয়াতে বলা হয়েছে-

﴿إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ ﴾ [ الاحزاب : ٣٢ ]

‘যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়ার অধিকারী হও, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে। তোমরা সংযত কথাবার্তা বলবে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২}

বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ-মাহফিল একটি অতি সাধারণ বিষয়। সেসব ওয়াজে নারী-পুরুষের পরস্পরের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার, ছেলে-মেয়ের প্রতি আচরণ, পিতা-মাতার মর্যাদা বিষয়ে খুব সাধারণ ভাষায় বক্তব্য রাখেন ধর্মীয় বক্তারা। সেখানে শুধু তেঁতুল নয়, আগ্রহী শ্রোতাদের বুঝাতে মুরগি-ডিম, চোর-ডাকাত, স্বামী-স্ত্রী, ঢাকা-বাগদাদ এমন নানা ধরনের উপমার অবতারণা করেন বক্তারা। এটা গ্রামীণ ওয়াজে খুবই প্রচলিত একটি বিষয়। এমনকি গ্রামের মাহফিলে সেই বক্তাকেই বেশি তোয়াজ করা হয়, যে যতো বেশি বিভিন্ন ধরনের উপমা ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে তেঁতুল উপমা অতি সাধারণ একটি উপমা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সুতরাং শহরের ওয়াজ না শোনা সুশীলব্যক্তিদের কানে যখন এইসব গ্রাম্য উপমা আর গ্রামীণ দরদমাখা কথাবার্তা পতিত হয় তখন তারা মনে করেন, এটা বুঝি গালি, অতি করুচিপূর্ণ বক্তব্য! আল্লামা শফীও সমাজে নারীর অবমূল্যায়ন এবং অবমাননা রুখতে সাধারণ গ্রাম্য ভাষায় বিষয়টি প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মাত্র। এখন শহরের আধুনিক মানুষরা যদি গ্রাম্য ভাষাকে গালি মনে করে আল্লামা শফীকে অপরাধী ঠাওরান, তাহলে দোষটা আসলে কার, সেটা বিবেচনার দাবি রাখে।

আবার আল্লামা শফীর বক্তব্য আমাদের মিডিয়ায় আংশিকভাবে বিবৃত হয়েছে। তিনি নারীদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে বলার আগে বলেছেন, নারীরা ঘরের রাণী। আপানারা কেনো বাইরে যাবেন? আপনার বাবা, স্বামী, ছেলেকে বলুন আপনার কী দরকার। তারা আপনাকে এনে দেবে। আপনি শুধু ঘরে বসে আরাম-আয়েশ করবেন।

সুতরাং আল্লামা আহমদ শফী দোষটা করলেন কোথায়? আমাদের সমাজব্যবস্থাটা তো তার বক্তব্যের চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন নয়। কিছুদিন আগে আইসিডিডিআরবি একটি জরিপ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, দেশে ১৮ বছরের আগেই অন্তত ৫০ ভাগ শহুরে তরুণ-তরুণী যৌন অভিজ্ঞতা নিচ্ছে। এরা পরোক্ষভাবে প্ররোচিত হয়ে এমনটা করছে। এদের এক-তৃতীয়াংশ আবার গ্রুপ সেক্সে (দলগত যৌনকর্ম) জড়িয়ে পড়ছে। (নাউযুবিল্লাহ)

আইসিডিডিআরবি তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছে, ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী তরুণেরা যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছে পর্নোগ্রাফি দেখে।

গত বছর ‘সময় টিভি’ থেকে করা এক জরিপে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। এই টিভির পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে জানতে পারেন, স্কুলের ৮২% ছাত্র-ছাত্রী সুযোগ পেলেই মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখে। ঢাকা শহরের ৬২% স্কুলপড়ুয়া ক্লাসে বসেই পর্নোছবি দেখে। ৪৪% প্রেম করার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা মনে করে, তার একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতেই হবে, না হলে সে স্মার্ট না। একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকাটাও একটা ক্রেডিটের ব্যাপার মনে করে তারা।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এটা কলেজ-ভার্সিটি বা সাধারণ নারীদের ওপর জরিপ নয়, এটা স্কুলের মেয়েদের ওপর করা জরিপ। যারা এখন এসএসসির নিচে অধ্যয়নরত এবং তাদের কারোরই বয়স ১৬-১৭-এর ওপরে নয়।

তো আমাদের সুশীল নারীনেত্রী আর দরদী সাজা পুরুষরা এই বাস্তবতায় নিজেদের অবস্থান কোথায় তুলবেন? সমাজ যেখানে চাক্ষুস পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে, মেয়েরা যখন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সর্বক্ষেত্রে যৌনতার মতো ভয়াবহ ব্যধিতে আক্রান্ত, সেখানে আল্লামা শফীর এই সহজকথন কেনো তাদের গায়ে কাঁটা দেয়? তিনি বিষয়গুলো সহজ আর সরল ভাষায় বলেছেন বলেই কি তিনি এতোটা প্রশ্নবাণের শিকার হয়েছেন? নাকি এসব কথা বলে মানুষকে সচেতন করলে অনেকেরই ভোগবাদী চরিত্র খসে পড়ার ভয় আছে?

একটা বাস্তব কথা প্রকাশ করা অপরাধ? নারীকে দেখলে পুরুষের কামভাব জাগবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে? এটার মধ্যে রুচি-কুরুচিরই কী আছে? এটা আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের প্রতিটি পুরুষের বেলায়ই প্রযোজ্য। বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ সাবলীল ভাষায় বলেছেন, ‘কামভাব নারী-পুরুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি (ন্যাচারাল টেনডেন্সি) এবং এর অনুপস্থিতি ঘটলে কোনো নারী কিংবা পুরুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে না।’ (Three contributions to the theory of sex)

নারীদের ব্যাপারেও ফ্রয়েড অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেছেন,

The great question that has never been answered, and which I have not yet been able to answer, despite my thirty years of research into the feminine soul, is 'What does a woman want? (From Sigmund Freud: Life and Work by Ernest Jones, 1953)

‘যে জটিল ও বড় প্রশ্নটির জবাব মেলেনি এবং ৩০ বছর ধরে এখন পর্যন্ত আমি যে প্রশ্নটির জবাব দিতে সক্ষম হইনি, তা হচ্ছে, একজন নারীর বাসনা কী? নারীর মন কী কামনা করে?’ (আর্নেস্ট জোনস, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের জীবন ও কর্ম, ১৯৫৩)

সিগমুন্ড ফ্রয়েডকে বলা হয় আধুনিক মনোবীক্ষণের জনক। তিনিই নারী-পুরুষের যৌনতার ব্যাপারে এভাবে খোলাখুলি মন্তব্য করেছেন এবং মোটাদাগে বলে দিয়েছেন, নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ থাকবেই- এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। সেটা স্কুল হোক, কলেজ হোক, চাকরি কিংবা পথেঘাটে হোক; নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ অনস্বীকার্য। সে হিসেবে আল্লামা আহমদ শফী কুরআন-হাদীসের আদেশ-নিষেধকে উপমার ভঙ্গিমায় বলেছেন। তার উপমা এবং সোজা-সাপ্টা কথায় যদি কারো আঁতে ঘা লাগে তাহলে সেটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

রাজনীতিবিদরা বড় চতুর ও বুদ্ধিমান! অপব্যাখ্যা করে নিজেদের পক্ষে কুরআন-হাদীসের উদ্ধৃতি দিতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। পর্দা রক্ষার্থে নারীর অনাবশ্যক বাইরে না যাওয়ার গুরুত্বের জবাবে তাদের বক্তব্য, ‘নবীজির স্ত্রী ব্যবসা করতেন। তিনি তার স্ত্রীকে ব্যবসা করতে বারণ করেননি। তাছাড়া নবীজি জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশেও যেতে বলেছেন। সেখানে তিনি নারী বা পুরুষ আলাদা করে বলেননি।’

এদের কে বুঝাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মা খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন ব্যবসা করতেন তখন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো নবীই হননি। তিনি নবী হওয়ার পর যখন মা খাদিজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ইসলাম গ্রহণ করেন, তৎপরবর্তী সময়ে তিনি ইসলামের কোন আদেশ-নিষেধটা অমান্য করেছেন, তাছাড়া তারা চীন দেশে জ্ঞানার্জনে যাওয়ার যে বাণীটা প্রায়ই আওড়ান সেটা আদতে কোনো হাদীসই নয়, এটা জাল হাদীস বা সাধারণ আরবী প্রবাদ। বাক্যটির আরবীরূপ হচ্ছে,

«اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ»

হাদীসবিশারদগণ এটাকে বানোয়াট হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, বিখ্যাত হাদীসবিশারদ ইবনে হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, حديث باطل لا أصل له

‘এটি একটি ভিত্তিহীন জাল হাদীস।’

ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

اطلبوا العلم ولو بالصين . موضوع

‘ইলম শেখার জন্য চীন পর্যন্ত হলেও যাও, হাদীসটি জাল।’

আল্লামা মারঈ হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

ليس هذا من كلام النبي

‘এটা রাসূসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়।’

এভাবে অসংখ্য হাদীসবিশারদ এটাকে বানোয়াট ও জাল হাদীস বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু রাজনীতিবিদদের যে দরকার যেনতেন আকারের একটা হাদীস, যদ্বারা ইসলামের শালীনতা ও পবিত্রতার পর্দা বিধানের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করতে পারেন। কিন্তু কার ঘাড়ে একাধিক ধড় যে, তাদের যা হাদীস নয় তা হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে সতর্ক করবে!

যাহোক, আরও অবাক করার মতো বিষয় হলো, আলেম-উলামার ব্যাপারে মুখচেনা কতিপয় নট-নটী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা নাকি ধর্মের অপব্যাখ্যা করছেন। কী আজব কথা! তাঁরা সারাদিন সারা বছর বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ইসলাম শিক্ষাদান করে কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করেন, আর সুবিধাভোগী নারীনেত্রীরা দেশবাসীকে ইসলামের বিধি-বিধান শিক্ষা দেন! এর চেয়ে বড় কৌতুক আর কী হতে পারে!

দেশবাসী সবচেয়ে অবাক হয়েছে জনৈক নাট্যাভিনেত্রীর আস্ফালিত বক্তব্য শুনে। যাকে নাটক-সিনেমায় সাধারণত পতিতার চরিত্রে নির্বাচন করা হয়, কারণ তিনি এই রোলে সবচেয়ে বেশি মানানসই। তিনি ৭০ বছর হাদীস শিক্ষাদানকারী আলেমকে বললেন, আপনি তওবা করুন। লও ঠ্যালা! একজন পতিতা চরিত্রের অভিনেত্রী, যার দুই স্বামী বিগত হয়েছেন, তিনি নব্বইঊর্ধ্ব দেশবরেণ্য এক আলেমকে বলছেন, আপনি তওবা করুন!

নারীদেরকে বিভিন্ন উপমায় ভূষিত করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দার্শনিক, লেখক, সাহিত্যিক ও ইতিহাসখ্যাত ব্যক্তি। কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক :

‘পুরুষ প্রভু, নারী দাসী।’ -এ্যারিস্টটল

‘পুরুষ হচ্ছে অনিবার্য, অপরিহার্য, অবধারিত; আর নারী হচ্ছে আকস্মিক, অপ্রয়োজনীয়, অতিরিক্ত।’ -মিশেল

‘নারী ভূমি, নারী উর্বর তবে ওই উর্বরতা সৃষ্টিশীল নয়, তাকে সৃষ্টশীল করে পুরুষ। -হিপক্রিটাস

‘রয়েছে এক শুভ নীতি যা সৃষ্টি করেছে শৃঙ্খলা, আলোক ও পুরুষ, রয়েছে এক অশুভ নীতি যা সৃষ্টি করেছে বিশৃঙ্খলা, অন্ধকার ও নারী।’ -পিথাগোরাস

‘নারী এমন এক রাজ্য যাকে শুধু জয় করলেই হবে না, সম্পূর্ণরূপে পরাভূত, পর্যদুস্ত আর পদদলিত করতে হবে, যেনো সে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।’ -নেপোলিয়ন

‘নারীর জন্মই হয়েছে পুরুষাধীন থাকার জন্য, তাকে চিরকাল তাই থাকতে দাও।’ -রুশো

‘পুরুষ প্রভু, নারী তার সেবিকা; গৃহে থাকা, সংসার করা, পুরুষের সেবা করাই নারীর প্রকৃত স্থান ও শক্তি।’ -রাসকিন

নারী ভালোবাসার জন্য, জানার জন্য নয়। -অস্কার ওয়াইল্ড

নারী একই সঙ্গে একটি আপেল ও সাপ। -হেনরিক হাইনে

কোলে থাকিলেও নারী, রেখো সাবধানে

শাস্ত্র, নৃপ, নারী কভু বশ নাহি মানে। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নারী কভু নাহি চায় একা হতে কারো

এরা দেবী এরা লোভী

যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো

ইহাদের অতিলোভী মন

একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়

যাচে বহুজন। -কাজী নজরুল ইসলাম

আমরা জানি, এ্যারিস্টটল, পিথাগোরাস, রুশো, রবি ঠাকুর নারী সম্বন্ধে যা বলে গেছেন তা মিথ্যে। বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা দেখি, জার্মান বিজ্ঞজন হেনরিক হাইনে নারীকে সাপ বললে সেটি হয়ে যায় ‘বাণী চিরন্তন’, আর একজন আলেম যখন নারীর আকর্ষণকে তেঁতুলের সঙ্গে উপমা দেন তা হয়ে যায় অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য। ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী রাসকিন নারীকে পুরুষের সেবিকা বললে, তাকে গৃহকোণের আলোকবর্তিকা বললেও তিনি পূজনীয়, পক্ষান্তরে উলামায়ে কেরাম তাকে গৃহের রাণী বললে তিনি হয়ে যান নারীবিদ্বেষী। কাজী নজরুল নারীকে অতিলোভী বলতে পারলেন, আর আলেম হয়ে গেলেন নারী অবমাননাকারী।

কথাসাহিত্যিক হাসানাত আবদুল হাই শাহবাগের কোনো এক নারীর দেহদানের ফিরিস্তি লিখলেই সেটি হয়ে যায় নারীর অবমাননা, কিন্তু সৈয়দ শামছুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ, হেলাল হাফিজরা যখন নারীর বিভিন্ন অঙ্গসৌষ্ঠবের আকার, ধরন, বর্ণ, উপকারিতা নিয়ে সাহিত্যের তুবড়ি ছোটান তখন সেটি এই সমালোচকদের কাছে হয়ে যায় উপাসনার বিষয়।

যদি নিদেনপক্ষে বাংলা সাহিত্যের দিকেও দেখা হয় তবে সেখানে নারীকে নিয়ে নামী আর বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের এমনসব পঙক্তি আর লেখা পাওয়া যাবে যেগুলো সাধারণ ভদ্রসমাজে পাঠের উপযোগী নয়। তবুও যতোটুকু ভদ্র জিনিস উপস্থিত করা যায় ঠিক ততোখানিই আমাদের কুলীন সুশীল সমাজের সুরচিকর সাহিত্যপ্রতিভা তুলে ধরা হলো।

ব্যথাতুর প্রেমের কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘স্ত্রী’ কবিতায় স্ত্রীকে ভালোবাসা শিখিয়েছেন এই ভাষায়-

‘রান্নাঘর থেকে টেনে এনে স্তনগুচ্ছে চুমু খাও/বাথরুমে ভেজানো দরোজা ঠেলে অনায়াসে ঢুকে যাও-/সে যেখানে নগ্ন দেহে স্নানার্থেই তৈরি হয়ে আছে।’

আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিনে’ তিনি উদারহস্তে ঢেলেছেন নারীর প্রতি তার ‘সুরুচি’র বাহাদুরি-

‘তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী/খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ/শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি/তারো বেশী ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ। (সনেট ১০ : সোনালি কাবিন)

কবি ও লেখক সৈয়দ শামছুল হক আল্লামা শফীর সমালোচনায় বিবৃতি দেওয়া সতেরজন বিশিষ্টজনের একজন। তার লেখাজোখা নিয়ে কথা বলতেও বিবাহিত হতে হয়। অবিবাহিতদের জন্য সাধারণত তার রচনা পড়া নিষিদ্ধ। তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের লেখক। দেখুন তার অ্যাডাল্ট কবিতা-

শত বাধা সত্ত্বেও থামতে পারে না কামুক পুরুষ/দুজনের দেহ ছিঁড়ে বের হয় দুধ-পূর্ণিমা/আর তা নেমে আসে স্তনের চূঁড়ায়/বাড়তে থাকে কামনার জ্বর/আর জ্বরতপ্ত হাত কুড়ায় কামনার ফুল। (‘ভালোবাসার রাতে-২৯’)

হুমায়ুন আজাদের কবিতা এখানে উল্লেখ করা গেলো না অতিরিক্ত ‘রুচিবোধের (?) কারণে। তবে তার একটি বচন অমৃত পড়তে পারেন পাঠককুল- ‘চোখের সামনে আমার মেয়ে বড় হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আমার হাত-পা বাঁধা।’

পাঠকগণ যদি বাংলা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে নিকৃষ্ট অশ্লীল চটি বই পড়তে চান তবে ‘হুমায়ন আজাদ ও ১০০০ ধর্ষণ’ নামের বইটা পড়তে পারেন। তবে সাবধান, বইটা পড়ার পর অন্তত কয়েক লাখবার তাওবা-ইস্তেগফার পাঠ করতে ভুলবেন না যেন!

এই হলো আমাদের সুশীল আর সভ্য সমাজের রুচিভেদ। উলামায়ে কেরাম গ্রামের সহজ সরল ভাষায় বললেই সেটা হয়ে যায় কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আর সমাজের ভোগবাদী পুরুষরা বললে সেটা হয়ে যায় রমণীবান্ধব শ্লোকমালা!

এ কারণেই সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ লিখেছিলেন, বার্বি ডল আর সেক্সি গ্রেনেডের যুগে পারবে না হেফাজত...

কারণ ইসলামপন্থীরা জানে না, কী করে নকল স্ক্যান্ডাল (কেলেঙ্কারী) তৈরি করতে হয়। তাদের কাছে কোনো ব্যক্তির দোষ ধরা কুরআনের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ। হাদীস বলে, অন্যের দোষ তুমি গোপন রাখো, আল্লাহ তোমার দোষ গোপন রাখবেন। এই নির্দেশের পর কীভাবে তারা প্রতিপক্ষের দোষ খুঁজতে যাবে? এই জন্যই হয়তো ফারুক ওয়াসিফরা আক্ষেপ করে বলতে পারেন, সেক্সি গ্রেনেড আর বার্বি ডলের যুগে আপনাদের (হেফাজতের) বেইল নাই...

[লেখার কিছু অংশ সাপ্তাহিক লিখনী ১৬ জুলাই ২০১৩ এর সৌজন্যে]

আল্লামা আহমদ শফীর ভিডিও বক্তৃতার তেঁতুল তত্ত্ব ছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে ইসলামবিদ্বেষীরা অভিযোগ উত্থাপন করে। যেমন, গার্মেন্টে চাকরির বিষয়ে তিনি বিশেষ উপদেশ প্রদান করেছেন। মেয়েদেরকে ক্লাস ফোরের বেশি না পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বস্তুত একথার ব্যাখ্যা হচ্ছে; আল্লামা শফীর দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি, ১০-১২ বছরেই মেয়েরা বালেগ হয়ে যায়, ক্লাস সিক্স-সেভেনেই। আর বালেগ হলে ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী মেয়েদের জন্য পর্দাহীন অবস্থায় পরপুরুষের সামনে যাওয়া নিষেধ। এটা কুরআন-হাদীসের দ্ব্যর্থহীন নির্দেশ। যেহেতু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্দা মানা হয় না এবং কখনো কখনো পর্দা মানার কারণে অপদস্থ হতে হয়, তাই তিনি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মেয়েদের বেপর্দা পরিবেশে উচ্চশিক্ষাকে অনুৎসাহিত করেছেন। গার্মেন্টসে চাকরির বিষয়টিও এমন।

বস্তুত তিনি সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ওপর নানাবিধ নির্যাতন এবং অনাচার দেখে গভীর ভাবনা ও নারী সমাজের প্রতি অতুলনীয় সহানুভূতি থেকে এই পরিবেশে শিক্ষা এবং চাকরি ব্যবস্থাকে নারীর জন্য ভয়াল মনে করেছেন। ইসলামে নারীশিক্ষা এবং শরঈ বিধান ও পর্দা মেনে চাকরি করে অর্থোপার্জনকে নাজায়েয বলেননি।

ওয়াজমাহফিল, ইসলামী বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ এবং সাহিত্যপাঠ এসবের প্রত্যেকটিই জীবনাদর্শের অনুসরণের পথ তৈরি করে। এটা মেনে চলতে হয়। একজন বক্তার যেমন হাজার ভক্তশ্রোতা থাকে তেমনিভাবে একজন লেখকেরও হাজার ভক্তপাঠক থাকে। সুতরাং একজন লেখকের কলমে নিন্দনীয় অশ্লীলতা থাকার পরও হয়ত তিনি পান বাংলা একাডেমি, একুশে পদকসহ হাজার রকমের পদক-পুরস্কার। পক্ষান্তরে একজন দরদী সমাজসেবক যখন নারীকে বোধগম্য সরলভাষায় বাস্তবনির্ভরতার ভিত্তিতে তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেন তখন তিনি হন নিন্দার পাত্র! একেই বলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হওয়া। মানুষের মধ্যে যখন বিবেচনা ও বিচারশক্তি লোপ পায় তখন সে ক্ষমতা, শাসন কিংবা অর্থবিত্তের চূড়ায় বাস করতে পারে বটে, কিন্তু মানুষের সংজ্ঞা তখন তার জন্য প্রযোজ্য হয় কিনা সেটা নতুন করে ভাবা উচিত। আমার মনে হয়, যারা ইসলামের পর্দা বিধানকে একারণে গালমন্দ করেন তারা নিজেদের পরিচয়ের মর্যাদা ভুলে গেছেন কিংবা ভুলে আছেন। অন্তত বিবেকবান মানুষ থেকে এধরনের আচরণ আশা করা যায় না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, উলামায়ে কেরাম সমালোচিত হয়েছেন মনুষ্যত্বের সংজ্ঞাহারা এধরনের কিছু ভ্রান্ত লোকের হাতে।

সমালোচকরা সজ্ঞানেই তেঁতুল তত্ত্ব নিয়ে সমালোচনা করেছে। তারা আল্লামা শফীর বক্তব্যকে ইসলামের বাণীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মানুষদেরকে খেপানোর কসরত করেছে। অথচ তিনি তেঁতুলতত্ত্ব নিয়ে যা বলেছেন সেটা ছিল নিজের তরফ থেকে উত্থাপিত একটা উপমা। এই উপমা তো আর ইসলাম দেয়নি। এটা তিনি শ্রোতাদেরকে বুঝানোর জন্য সহজ উপমায় বলেছেন। সেই উপমা দিতে গিয়ে যদি তিনি কিছুটা গ্রাম্য ভাষা ব্যবহার করেন তবে সেটাকে ইসলামের বাণী বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টি যেহেতু রুচিবোধ নিয়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উপমাপ্রিয় বিজ্ঞজনের নাম এসেছে। তারা রমণীর বিভিন্ন অঙ্গকে বিশেষ ফলের সঙ্গে তুলনা করলে সেটা দোষ হয় না, আল্লামা শফী স্পেসিফিক কোনো অঙ্গের কথা না বলে রমণীয় নারীকে তেঁতুলের সঙ্গে উপমা দিলে দোষটা খুব বেশি হওয়ার কথা না। তাদের উপমা নান্দনিক ভাষায় আর তারটা খানিকটা গেঁয়ো ভাষায়, এই যা তফাত। তাও গেঁয়ো লোকদের বুঝানোর জন্য।

তাই যে কোনো বিবেকবান মানুষ একথা বলতে বাধ্য হবেন যে, তিনি যা বলেছেন তাতে নারীদের মোটেও অসম্মান করা হয়নি, বরং নারীদের সম্মানকে আরো বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন আগের একটি ওয়াজকে এখন মানুষের সামনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করে ফায়দা ওঠানো অবিশ্বাসীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এইসব অপপ্রচারে কোনো লাভ নেই। এই জাদু জাদুকরের বিরুদ্ধেই যাবে এবং গিয়েছেও তাই। দাজ্জালদের এই সামান্য অপপ্রচারে ঈমানদারদের ঈমানে চির ধরবে না।

নারীকে নানা উপমা দিয়ে কবি, লেখক, নেতা, দার্শনিকরা বিকৃত আনন্দ লাভ করতে পারেন। কিন্তু একজন ইসলামী ভাষ্যকারের ভাবনায় থাকে কেবলই মানবিক চিন্তা। সুতরাং কবিদের নির্জলা অশ্লীলতায় দেশজুড়ে সমালোচনা না হলে একজন ইসলামী ভাষ্যকারের সাধারণ উপমায় তা হবে কেন?

কেউ প্রশ্ন করেছেন, উনি কি মায়ের পেটে জন্ম নেননি? তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসলামবিদ্বেষীরা বলে, মা বোনের কথা চিন্তা করেও তো আল্লামা শফীর একথা থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল? তখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয়, নারী বলতেই আমরা কেনো যে শুধু মা আর বোনকে টেনে আনি? আহা! এই বোধটা যদি সবার মাঝে থাকতো, তাহলে আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশে এক পিস পর্নো ভিডিও দেখা হতো না কোনো ডিভাইসে। অথচ বাংলাদেশে শুধু পর্নো ব্যবসার বাজার ৮ শো কোটি টাকার!

যখন পর্নো ভিডিওতে বিমুগ্ধ হয় এসব অশ্লীল চরিত্রের লোকেরা, তখন কি এরা একবারও ভাবে নিজেদের মা-বোনের কথা? উপদেশ দিলে মা-বোনের জাত যায় কিন্তু নোংরামির সময় মা- বোনের কথা মনে থাকে না? এরা রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় যখন প্রতিটি মেয়ের দিকে তাকায়, যারা টাইট জিন্স আর টিশার্ট পরে যাচ্ছে, তাদের কি এরা মা-বোন বলে ডাক দেয়?

এই ঘটনায় সবচেয়ে অবাক করা যে কাণ্ড ঘটেছে তা হলো, ইসলামবিদ্বেষীরাই ইসলামের বড় স্কলার সেজে নানা রকমের উপদেশ-আদেশ প্রদান করেছে! কত ফতোয়া আর তাফছীর, হাদীস এদের মুখে চালু হয়ে গেছে!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন