hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফেরারী নারী

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

১৮
ফাঁসির মঞ্চ সাজাতেও নারী!
ইতিহাসের সব ঘটন-অঘটনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারীর নাম। অনাবিল সৃষ্টি ও অনাসৃষ্টি সর্বত্র নারীর নাম! ইতিহাসে ফাঁসি দণ্ডের বিধান ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ না থাকলেও বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের ফাঁসির মঞ্চগুলোতে ঘটেছে নানা ভয়ঙ্কর ও বিচিত্র ঘটনা। কারণে, অকারণে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার মতো বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। কোনো ফাঁসির মঞ্চ ছিল গৌরবদীপ্ত, ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়। যেমন, রাসূল অবমাননায় ঈমানী বলে বলিয়ান হয়ে গাজী ইলমুদ্দিন শহীদ রহিমাহুল্লাহর শাহাদতবরণ। আবার কোনোটা খুবই কলঙ্কময়, সমালোচনার ঝড়ে বিধ্বস্ত।

স্বাধীনতার পর গত ৬৬ বছরে ভারতে বিভিন্ন অপরাধে দন্ডিত ৪৭৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু তথ্য পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফাঁসি কার্যকর হওয়া ৪৭৬ জনের মধ্যে একজনও নারী নেই। অবশ্য হরিয়ানার প্রাক্তন বিধায়ক রেলু রাম পুনিয়ার মেয়ে সোনিয়ার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে যদি তার ফাঁসি কার্যকর হয় তবে সোনিয়াই হবে ভারতের প্রথম নারী যার মৃত্যুদণ্ড হবে ফাঁসিতে।

এর আগে অবশ্য দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারী তামিল নারী নলিনীর ফাঁসি কার্যকরের কথা ছিল। সুপ্রিমকোর্ট এই নারীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছিল কিন্তু রাজীব গান্ধীর সহধর্মিনী সোনিয়া গান্ধীর বিশেষ আবেদনের ফলে মৃত্যুদণ্ড থেকে নলিনীর সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

ভারতে কোনো নারীর ফাঁসি হবে কি না তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক চলছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে অনেকেই তার প্রতি সহমর্মিতা থেকে তার ফাঁসির বিরোধিতা করছেন। ইতিহাসের গোড়া থেকেই নারীরা এভাবেই পেয়ে এসেছে সহমর্মিতা, অনুকম্পা ও অনুগ্রহ। ইসলাম নারীর প্রতি দেখিয়েছে সর্বোচ্চ সহমর্মিতা। রাসূসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে আলাদা করেছেন। নারীর প্রতি সেই শ্বাশ্বত সহমর্মিতার সূত্র ধরেই হয়ত ভারতের সোনিয়ার ফাঁসিদণ্ডের বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে; সোনিয়া এমন কী অপরাধ করেছিলেন যে তাকে শেষ পর্যন্ত ফাঁসির দড়িকে আলিঙ্গন করতে হচ্ছে? জানা যায়, ২০০১ সালে সম্পত্তির ভোগদখল নিয়ে সোনিয়া নিজ পরিবারেরই ৮ সদস্যকে নৃশংসভাবে নিজের হাতে খুন করেন। আইনজীবীরা বলছেন, সোনিয়াই হবে প্রথম ভারতীয় নারী যাকে স্বাধীন ভারতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য দেশগুলিতেও কোনো নারীকে ফাঁসি দেওয়ার কোনো ঘটনা নেই। পৃথিবীতে এ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে যা নিয়ে ভারতের জনগণের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে। [তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়া ক্রনিকল থেকে অনূদিত, সূত্র : রাইজিন বিডি ২৪.কম]

এত বড় একজন পাষাণী, ঘাতকও কেবল নারী হওয়ার কারণে কোটি জনতার সহমর্মীতা পেয়েছেন, অনেকে তার ফাঁসির বিরোধীতা করছেন। শুধু নারী হওয়ার কারণে নলিনী স্বয়ং সহধর্মিনীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বামী হত্যার দায় থেকে ফাঁসির রজ্জু হতে খালাস পান। কিন্তু যে নারীকে ফাঁসির রজ্জু থেকে বাঁচানোর এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, কখনও সেই নারীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কারণে পুরুষকে যেতে হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে! এসব ঘটনার কোনোটাতে নারী সরাসরি জড়িত আর কোনোটাতে বা নির্যাতিত। বাংলাদেশে এপর্যন্ত আমার জানা মতে কোনো অপরাধের কারণে কোনো নারীকে ফাঁসির রজ্জু আলিঙ্গন করতে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কয়টা ফাঁসির ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে যে দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক ও চাঞ্চল্যকর সে দুটি ঘটনার পশ্চাতে আছে নারীর পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ কারণ!

এক. রীমা হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির রজ্জুতে সেই মনির

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এরচেয়ে বেশি আলোচনা হয়নি কোনো মৃত্যুকাহিনী ও মৃত্যুদণ্ড নিয়ে। ১৯৮৯ সালের ৯ এপ্রিল স্ত্রী শারমিন রীমাকে হত্যা করেন মনির হোসেন। ঘটনার পরদিন তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৯০ সালের ২১ মে ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তিনি এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হোসনে আরা বেগম খুকু পরে হাইকোর্ট থেকে খালাস পেলেও মনিরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেন উচ্চ আদালত। এরপর দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে নিম্ন আদালতে অপরাধী মুনির হোসেন এবং হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনাদানকারী তার প্রেমিকা হোসনে আরা খুকু দুজনেরই ফাঁসির রায় হলেও উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ে খুকুকে খালাস দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালের ২০ জুন আপিল বিভাগ ওই দণ্ড বহাল রাখে।

নিহত রীমা ছিলেন মরহুম সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদের (১৯৭১-এ ইত্তেফাকে কর্মরত) মেয়ে। অন্যদিকে খ্যাতনামা ডাক্তার বাবা-মায়ের ব্যবসায়ী ছেলে ছিলেন মনির হোসেন।

১৯৮৯ সালে বিয়ের মাত্র তিন মাস পর ৯ এপ্রিল পুলিশ নরসিংদীর কাছাকাছি মিজমিজি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে রীমার লাশ। স্বামীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বেড়াতে গিয়ে খুন হন শারমিন রিমা। ৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যাওয়ার দুদিন পরে ফেরার পথে স্বামী মনির হোসেন তাকে হত্যা করে মিজমিজি গ্রামের কাছে ফেলে রেখে আসে। বাড়ি থেকে এত দূরে কোনো মেয়ের লাশ পাওয়া গেলে যে কেউই সবার আগে ধরে নেয় স্বামী নিজেও খুন হয়েছে বা নিজেই খুন করেছে। পুলিশও শুরু করে মনিরের খোঁজ। তাকে এক হোটেলে পাওয়া যায়, সেখানে সে পাগল পাগল অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। খুব সহসাই পুলিশ বুঝতে পারে, আসলে সে পাগলামির অভিনয় করছে পুলিশকে ধোঁকা দিতে এবং আত্মহত্যারও তার আদৌ কোনো পরিকল্পনা ছিল না। একটু খোঁজখবর নিয়েই পুলিশ পুরো ঘটনা বের করে ফেলে। পুলিশ বুঝতে পারে, স্বামীর নির্মম হাতে নিহত হয়েছেন হতভাগ্য রিমা।

মনির ছিলেন শিক্ষিত ধনী বাবা-মায়ের বখে যাওয়া সন্তান। তার চেয়ে অনেক বেশি বয়সের মেয়েদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতো। বিয়ের আগেই এরকম বেশ ক’টি সম্পর্কে জড়ান। এর মধ্যেই মনিরের সঙ্গে সম্পর্ক হয় নিজের চেয়ে ১৫-১৬ বছরের বড়, কয়েক বাচ্চার মা চল্লিশোর্ধ হোসনে আরা খুকুর সঙ্গে। খুকুর স্বামী ছিল সম্পূর্ণ পঙ্গু। সংসার চালানোর জন্য স্বল্পশিক্ষিত খুকুর একটাই উপায় ছিল, সে ছিল পেশাদার কলগার্ল। সমাজের উচ্চপর্যায়ে ছিল তার ব্যবসাক্ষেত্র। বয়সে অন্তত ১৫ বছরের ছোট মনির গভীর প্রেমে পড়ে এই খুকুর।

বিয়ের পরও মনির পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ রীমাকে কোনো দিনই মন থেকে মেনে নেননি। বরং তিনি সম্পর্ক রেখেছেন কলগার্ল খুকুর সঙ্গে। ফলে খুকু-মুনীরের এ অবাধ সম্পর্কের মধ্যে রীমাকে উটকো ঝামেলা হিসেবে বিবেচনা করে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তবে ঘটনার অনুকারণ হলেও মূল ঘটনা তথা খুনের ধারে-কাছেও খুকু যায়নি। ফলে একজন কলগার্লের হিংস্রতা ও উদগ্র কামনার আগুনে পুড়ে যায় একটি পবিত্র সম্পর্কের বসতভিটা। নিজহাতে স্ত্রীকে খুন করতে প্রলুব্ধ হন মনির। খুন করেন নিজহাতে, নববধূকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে!

এ ঘটনাটা সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সব পত্রিকায় বড় বড় স্টোরি ছাপা হয়। একে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত খুনের মামলা।

দুই. সালেহা হত্যাকারী ডা. ইকবাল :

মনির কর্তৃক রীমা হত্যাকাণ্ডেরও আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি আলোচিত ফাঁসির ঘটনা ছিল ডা. ইকবালের ফাঁসি। যৌতুকলোভী ডা. ইকবাল তার নিজের বাড়ির গৃহপরিচারিকার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে সংসারে নেমে আসে অশান্তি। একসময় স্ত্রী জেনে যায় প্রিয়তম স্বামীর এসব বাজে কীর্তিকলাপ। এরপর স্ত্রী এসবের প্রতিবাদ করলে ফুঁসে ওঠেন ডা. ইকবাল। শুরু হয় স্ত্রীর ওপর নির্যাতন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালের ১৮ এপ্রিল স্বামীর হাতে নিহত হন সালেহা।

যৌতুকের নির্মমতার ইতিহাসে সালেহা ও তার স্বামী ডা. ইকবালের নাম মনে পড়লে আজও মানুষের অনুভূতি ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। সালেহার ধনাঢ্য বাবা ভেবেছিলেন বিত্তের জোরেই মেয়েকে ভালো একটা পাত্রের হাতে তুলে দেবেন। আর সেই লক্ষ্যেই মেয়েকে সুখী করার ‘সঠিক উপায়’ হিসেবে শিক্ষিত জামাই খুঁজতে শুরু করলেন। পেয়েও গেলেন। মেয়ের সুখের গ্যারান্টির জন্য সালেহার বাবা নিজের টাকায় ইকবালকে ডাক্তারি পাস করান। শ্বশুর কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ মেয়ের কল্যাণের জামিন হয়ে তার দুপায়ে সুখ ভরিয়ে দেবে বলে সালেহার বিত্তবান বাবা জামাইয়ের পেছনে অকাতরে অর্থ ঢালতে থাকেন। তাকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর দশটি বদনামের সঙ্গে সঙ্গে অকৃতজ্ঞতার বদগুণে বিশেষভাবে ধিকৃত। ফলে শ্বশুরের অর্থপ্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা প্রভাবিত করতে পারেনি মাটির গুণকে। তাই পরের ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করেছিলেন সালেহা। প্রতিবাদ করেছিলেন স্বামীর লাম্পট্যের বিরুদ্ধে। সে জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাকে। এ ঘটনায় দেশের মানুষ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশে সোচ্চার হয়েছিল। যার সুফল হিসেবে ১৯৮০ সালে যৌতুকবিরোধী আইন প্রণীত হয়। ১৯৮৭ সালে গৃহপরিচারিকার সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রী সালেহাকে হত্যার দায়ে ডা. ইকবালের ফাঁসির ঘটনা ছিল আলোচিত। ডা. ইকবালের ফাঁসি হয়েছিল। তারপর ওই রকম করে আর সামাজিক সোচ্চারের ঘটনা খুব একটা দেখা যায়নি। এখনো অনেক পরিবারেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অনেককেই হতে হচ্ছে প্রতিবাদের বলি। কিন্তু ইসলামী আদর্শ, নারীসত্তার প্রকৃত মর্যাদা অনুধাবন ও প্রদানে ব্যর্থ হওয়া, শরীয়ত নিষিদ্ধ যৌতুকের ভয়াবহ বিস্ফোরণ নারীকে প্রতিনিয়ত করছে নিপীড়িত, নিগৃহিত এবং নির্যাতিত। নারীকে এই গ্লানিকর জীবন থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ইসলামের দেখানো সুন্দর ও সরলপথে ফিরে আসতে হবে। পারবে নারীরা?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন