HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
বেনামাযীর পরিণতি
লেখকঃ মোঃ আবদুর রহমান
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
‘‘বেনামাযীর পরিণতি’’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আলল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
ইসলামের পাঁচটি মূল সত্মম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় সত্মম্ভ হচ্ছে নামায। কুরআন মাজীদ ও হাদীসে এ সম্পর্কে অনেক বেশি গুরম্নত্বারোপ করা হয়েছে। এতদ্বসত্ত্বেও দেখা যায় যে, সমাজে এমন লোকের অভাব নেই, যারা নিজেদেরকে ঈমানদার বলে মনে করে; অথচ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে নামায পরিত্যাগ করার পরিণতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা।
এ বইটিতে আমরা এসব বিষয়ে বিসত্মারিত বিবরণ যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বইটি পাঠ করে পাঠকসমাজ যথাযথভাবে উপকৃত হতে পারবেন। আলস্নাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করম্নন এবং নামাযের গুরম্নত্ব অনুধাবন করে নামাযী হওয়ার তাওফীক দান করম্নন। আমীন
‘‘বেনামাযীর পরিণতি’’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আলল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
ইসলামের পাঁচটি মূল সত্মম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় সত্মম্ভ হচ্ছে নামায। কুরআন মাজীদ ও হাদীসে এ সম্পর্কে অনেক বেশি গুরম্নত্বারোপ করা হয়েছে। এতদ্বসত্ত্বেও দেখা যায় যে, সমাজে এমন লোকের অভাব নেই, যারা নিজেদেরকে ঈমানদার বলে মনে করে; অথচ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে নামায পরিত্যাগ করার পরিণতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা।
এ বইটিতে আমরা এসব বিষয়ে বিসত্মারিত বিবরণ যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বইটি পাঠ করে পাঠকসমাজ যথাযথভাবে উপকৃত হতে পারবেন। আলস্নাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করম্নন এবং নামাযের গুরম্নত্ব অনুধাবন করে নামাযী হওয়ার তাওফীক দান করম্নন। আমীন
যে ব্যক্তি পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে আদায় করে সে হচ্ছে নামায আদায়কারী বা নামাযী। আর যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত অথবা পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে ছেড়ে দেয় সে হচ্ছে বেনামাযী। অনুরূপভাবে যারা নামায আদায় করে ঠিকই, কিন্তু তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী করে না, তারাও বেনামাযী হিসেবে গণ্য হবে।
সুতরাং নিম্ন বর্ণিত লোকেরাও বেনামাযীদের অন্তর্ভুক্ত :
১. যারা সারা বছর কোন নামায আদায় না করে কেবল দুই ঈদের নামায আদায় করে থাকে।
২. যারা প্রত্যেক সপ্তাহে কেবল জুমু‘আর নামায আদায় করে থাকে।
৩. যারা শুধুমাত্র রমাযান মাসে নামায আদায় করে থাকে।
৪. যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে কোন এক ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে ছেড়ে দেয়।
৫. যারা নামায আদায় করার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রুকন বাদ দেয়।
৬. যারা নামায আদায় করার পূর্বে ভালোভাবে অযু করে না ইত্যাদি।
ইসলামের দৃষ্টিতে উপরোক্ত ব্যক্তিরাও বেনামাযী। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর নির্দেশনা অনুযায়ী নামায আদায় করে না। তাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের নামাযের কোন মূল্য নেই।
সুতরাং নিম্ন বর্ণিত লোকেরাও বেনামাযীদের অন্তর্ভুক্ত :
১. যারা সারা বছর কোন নামায আদায় না করে কেবল দুই ঈদের নামায আদায় করে থাকে।
২. যারা প্রত্যেক সপ্তাহে কেবল জুমু‘আর নামায আদায় করে থাকে।
৩. যারা শুধুমাত্র রমাযান মাসে নামায আদায় করে থাকে।
৪. যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে কোন এক ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে ছেড়ে দেয়।
৫. যারা নামায আদায় করার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কোন রুকন বাদ দেয়।
৬. যারা নামায আদায় করার পূর্বে ভালোভাবে অযু করে না ইত্যাদি।
ইসলামের দৃষ্টিতে উপরোক্ত ব্যক্তিরাও বেনামাযী। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর নির্দেশনা অনুযায়ী নামায আদায় করে না। তাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের নামাযের কোন মূল্য নেই।
মুনাফিক বলা হয় ঐসব ব্যক্তিকে, যারা নিজেদের অন্তরের মধ্যে কুফর লুকিয়ে রাখে এবং বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে। এ কারণে তাদের আমল এবং প্রকৃত মুমিনদের আমলের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়- এমনকি নামাযের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলের ক্ষেত্রেও। নিম্নে মুনাফিকদের নামাযের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
মুনাফিকরা নামাযে গাফলতি করে :
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানোর জন্য নামায আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল নামায আদায়কারীর জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে; আর যারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে তাদের কষ্ট হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اِنَّ اَثْقَلَ الصَّلَاةِ عَلَى الْمُنَافِقِيْنَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী নামায হচ্ছে এশা ও ফজরের নামায। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কী পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত নামাযদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা দেরি করে নামায আদায় করে :
عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِىْ دَارِهٖ بِالْبَصْرَةِ حِيْنَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهٗ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ اَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهٗ اِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتّٰى اِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا اَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهَا اِلَّا قَلِيْلًا
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যুহরের নামায আদায় করেছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালেকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের নামায আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যুহরের নামায আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের নামায আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের নামায আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে- ঐ নামায হলো মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহে মুনাফিকদের নামাযের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা নামাযের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। নামাযের মধ্যে কী পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের নামাযে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা নামাযের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে নামাযের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের নামাযে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের নামাযে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে নামায আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের নামাযের উদ্দেশ্য।
৫। তারা এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে খুবই কষ্টবোধ করে এবং বিভিন্ন ধরনের তাল-বাহানা করে থাকে।
৬। তারা নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় না করে একেবারে ওয়াক্তের শেষ সময়ে নামায আদায় করে।
৭। তারা স্বাভাবিক থেকে সামান্য অথবা অনেক দ্রুত নামায আদায় করে।
মুনাফিকরা নামাযে গাফলতি করে :
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানোর জন্য নামায আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল নামায আদায়কারীর জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে; আর যারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে তাদের কষ্ট হয় :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اِنَّ اَثْقَلَ الصَّلَاةِ عَلَى الْمُنَافِقِيْنَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী নামায হচ্ছে এশা ও ফজরের নামায। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কী পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত নামাযদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা দেরি করে নামায আদায় করে :
عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِىْ دَارِهٖ بِالْبَصْرَةِ حِيْنَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهٗ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ اَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهٗ اِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتّٰى اِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا اَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهَا اِلَّا قَلِيْلًا
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যুহরের নামায আদায় করেছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালেকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের নামায আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যুহরের নামায আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের নামায আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের নামায আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে- ঐ নামায হলো মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যের দিকে তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহে মুনাফিকদের নামাযের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা নামাযের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। নামাযের মধ্যে কী পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের নামাযে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা নামাযের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে নামাযের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের নামাযে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের নামাযে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে নামায আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের নামাযের উদ্দেশ্য।
৫। তারা এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে খুবই কষ্টবোধ করে এবং বিভিন্ন ধরনের তাল-বাহানা করে থাকে।
৬। তারা নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় না করে একেবারে ওয়াক্তের শেষ সময়ে নামায আদায় করে।
৭। তারা স্বাভাবিক থেকে সামান্য অথবা অনেক দ্রুত নামায আদায় করে।
প্রকৃত নামাযীরা তাদের নামাযকে হেফাযত করে থাকে :
প্রকৃত নামাযীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা তাদের নামাযের ব্যাপারে খুবই যত্নবান হয়। নামাযের হুকুম-আহকাম- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করে। মোটকথা রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে নামায আদায় করতেন, তারা ঠিক সেভাবেই নামায আদায় করার চেষ্টা করে। নামাযের সময় তারা দুনিয়ার চিন্তা মাথায় রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ﴾
আর যারা তাদের নামাযসমূহের হেফাযত করে। (সূরা মু’মিনূন- ৯)
তারা নিয়মিত নামায আদায় করে থাকে :
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে, যা নিয়মিত করা হয়। এ কারণে প্রকৃত নামাযীদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা নিয়মিত জামাআতের সাথে নামায আদায় করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ﴾
আর যারা নিয়মিত নামায আদায় করে। (সূরা মাআরিজ- ২৩)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا اَنَّهَا قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ اَيُّ الْاَعْمَالِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ قَالَ اَدْوَمُهَا وَاِنْ قَلَّ وَقَالَ اكْلَفُوْا مِنَ الْاَعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হয়- যদিও তা (পরিমাণে) কম হয়। তিনি আরো বললেন, তোমার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ নিজের উপর টেনে নিয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৬।]
অতএব নামায শুধু পড়লেই হবে না, বরং প্রকৃত নামাযী হতে হলে নামাযের ব্যাপারে যথাযথভাবে মনোযোগী হতে হবে এবং তা নিয়মিতভাবে আদায় করতে হবে।
প্রকৃত নামাযীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা তাদের নামাযের ব্যাপারে খুবই যত্নবান হয়। নামাযের হুকুম-আহকাম- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করে। মোটকথা রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে নামায আদায় করতেন, তারা ঠিক সেভাবেই নামায আদায় করার চেষ্টা করে। নামাযের সময় তারা দুনিয়ার চিন্তা মাথায় রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ﴾
আর যারা তাদের নামাযসমূহের হেফাযত করে। (সূরা মু’মিনূন- ৯)
তারা নিয়মিত নামায আদায় করে থাকে :
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে, যা নিয়মিত করা হয়। এ কারণে প্রকৃত নামাযীদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা নিয়মিত জামাআতের সাথে নামায আদায় করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿اَلَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآئِمُوْنَ﴾
আর যারা নিয়মিত নামায আদায় করে। (সূরা মাআরিজ- ২৩)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا اَنَّهَا قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ اَيُّ الْاَعْمَالِ اَحَبُّ اِلَى اللهِ قَالَ اَدْوَمُهَا وَاِنْ قَلَّ وَقَالَ اكْلَفُوْا مِنَ الْاَعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, যে কাজ সার্বক্ষণিক ও নিয়মিত করা হয়- যদিও তা (পরিমাণে) কম হয়। তিনি আরো বললেন, তোমার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ নিজের উপর টেনে নিয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৬।]
অতএব নামায শুধু পড়লেই হবে না, বরং প্রকৃত নামাযী হতে হলে নামাযের ব্যাপারে যথাযথভাবে মনোযোগী হতে হবে এবং তা নিয়মিতভাবে আদায় করতে হবে।
বেনামাযীর সংখ্যা এত বেশি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন-
১. বেনামাযীর সংজ্ঞা-ই অনেকে জানে না।
২. অনেক মানুষ নামাযের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝে না।
৩. নামায আদায় করার লাভ ও উপকারিতা যেভাবে উল্লেখ করা হয় তার বিপরীতে বেনামাযীর মারাত্মক ক্ষতি ও ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা তেমনভাবে উল্লেখ করা হয় না। অথচ উপকার অর্জনের চেয়ে অপকার ও ক্ষতি দমনে মানুষ বেশি তৎপর হয়ে থাকে।
৪. নামায পরিত্যাগকারীর কিছু পরকালীন ক্ষতি ও পরিণতি উল্লেখ করা হলেও ইহকালীন তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কী কী ক্ষতি ও পরিণতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না।
৫. হাদীসের পরিপন্থী কিছু নিয়ম-কানুন ঢুকিয়ে নামাযকে কঠিন করা হয়েছে। যেমন- ওযুতে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় নির্দিষ্ট দু‘আ পড়া, বিভিন্ন নামাযের নিয়ত পড়া ইত্যাদি। এ ধরনের নিয়তগুলো অনেকেরই মুখস্থ নেই বিধায় তারা নামায পড়ে না।
৬. অনেকের নামায আদায়ের ইচ্ছা থাকলেও নিয়ম-কানুন ও সূরা কিরাআত না জানার কারণে তারা নামায আদায় করে না।
৭. নামায ত্যাগ করার যে শাসিত্ম ও পরিণতির কথা এসেছে তা কেবল ফরয নামাযের ব্যাপারেই। কিন্তু আমাদের সমাজের অনেকে ফরয ও সুন্নাতের শব্দগত পার্থক্য করে থাকলেও আমলের ক্ষেত্রে উভয় প্রকার নামাযকে সমানভাবে গুরুত্বারোপ করে উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে একজন ব্যক্তি মনে করে যে, সে যত ব্যসত্মই হোক না কেন এবং যত চাপের মধ্যেই থাকুক না কেন, যুহরের নামাযের জন্য মসজিদে ঢুকলে ফরযের পূর্বে ৪ রাকআত, ফরয ৪ রাকআত, ফরযের পর ২ রাকআত- এই মোট ১০ রাকআত নামায না পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তাই সময় না থাকায় বা এতগুলো রাকআতের ঝামেলায় সে নামাযই আদায় করে না। অথচ শুধু ফরয ৪ রাকআত পড়ে বের হয়ে গেলেই সে নামায পরিত্যাগের শাসিত্ম ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে পারত।
৮. সূরা আনকাবূত এর ৪৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘আর নামায কায়েম করো, নিশ্চয় নামায গর্হিত ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়ে থাকে, যে ব্যক্তি নামায পড়েও অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে না তার নামায হয় না। ফলে যারা বিভিন্ন গুনাহের কাজে জড়িত রয়েছে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে নামায আদায় করে না। অথচ নামায আদায়কারী ব্যক্তির দ্বারাও গুনাহ হতে পারে। যার কিছু গুনাহ নামাযের মাধ্যমেই মাফ হয়ে যায়।
৯. অনেকেই বালেগ হওয়ার পর বহু বছর নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যখন তাদের ভুল বুঝতে পেরে নিয়মিত নামায পড়ার নিয়ত করে, তখন এক শ্রেণির আলেম তাদেরকে উমরী ক্বাযা তথা বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা আদায় করার ফতওয়া দেন। ফলে ঐ ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হতে নিরাশ হয়ে যায়। অথচ কাযা হলো গ্রহণযোগ্য কারণবশত হঠাৎ ১/২ ওয়াক্ত ছুটে গেলে সেটা তৎক্ষণাৎ পড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি কোনদিন নামাযই আদায় করেনি অথবা কোন ওয়াক্ত পড়েছে ও কোন ওয়াক্ত বাদ দিয়েছে তার কোন হিসাব নেই, ঐ ব্যক্তি তাওবা করে নিয়মিতভাবে সেদিন থেকে পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করলেই যথেষ্ট হবে।
মূলত এসব কারণেই আমাদের সমাজে বেনামাযীর সংখ্যা এত বেশি।
১. বেনামাযীর সংজ্ঞা-ই অনেকে জানে না।
২. অনেক মানুষ নামাযের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝে না।
৩. নামায আদায় করার লাভ ও উপকারিতা যেভাবে উল্লেখ করা হয় তার বিপরীতে বেনামাযীর মারাত্মক ক্ষতি ও ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা তেমনভাবে উল্লেখ করা হয় না। অথচ উপকার অর্জনের চেয়ে অপকার ও ক্ষতি দমনে মানুষ বেশি তৎপর হয়ে থাকে।
৪. নামায পরিত্যাগকারীর কিছু পরকালীন ক্ষতি ও পরিণতি উল্লেখ করা হলেও ইহকালীন তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কী কী ক্ষতি ও পরিণতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না।
৫. হাদীসের পরিপন্থী কিছু নিয়ম-কানুন ঢুকিয়ে নামাযকে কঠিন করা হয়েছে। যেমন- ওযুতে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় নির্দিষ্ট দু‘আ পড়া, বিভিন্ন নামাযের নিয়ত পড়া ইত্যাদি। এ ধরনের নিয়তগুলো অনেকেরই মুখস্থ নেই বিধায় তারা নামায পড়ে না।
৬. অনেকের নামায আদায়ের ইচ্ছা থাকলেও নিয়ম-কানুন ও সূরা কিরাআত না জানার কারণে তারা নামায আদায় করে না।
৭. নামায ত্যাগ করার যে শাসিত্ম ও পরিণতির কথা এসেছে তা কেবল ফরয নামাযের ব্যাপারেই। কিন্তু আমাদের সমাজের অনেকে ফরয ও সুন্নাতের শব্দগত পার্থক্য করে থাকলেও আমলের ক্ষেত্রে উভয় প্রকার নামাযকে সমানভাবে গুরুত্বারোপ করে উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে একজন ব্যক্তি মনে করে যে, সে যত ব্যসত্মই হোক না কেন এবং যত চাপের মধ্যেই থাকুক না কেন, যুহরের নামাযের জন্য মসজিদে ঢুকলে ফরযের পূর্বে ৪ রাকআত, ফরয ৪ রাকআত, ফরযের পর ২ রাকআত- এই মোট ১০ রাকআত নামায না পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তাই সময় না থাকায় বা এতগুলো রাকআতের ঝামেলায় সে নামাযই আদায় করে না। অথচ শুধু ফরয ৪ রাকআত পড়ে বের হয়ে গেলেই সে নামায পরিত্যাগের শাসিত্ম ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে পারত।
৮. সূরা আনকাবূত এর ৪৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘আর নামায কায়েম করো, নিশ্চয় নামায গর্হিত ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়ে থাকে, যে ব্যক্তি নামায পড়েও অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে না তার নামায হয় না। ফলে যারা বিভিন্ন গুনাহের কাজে জড়িত রয়েছে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে নামায আদায় করে না। অথচ নামায আদায়কারী ব্যক্তির দ্বারাও গুনাহ হতে পারে। যার কিছু গুনাহ নামাযের মাধ্যমেই মাফ হয়ে যায়।
৯. অনেকেই বালেগ হওয়ার পর বহু বছর নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যখন তাদের ভুল বুঝতে পেরে নিয়মিত নামায পড়ার নিয়ত করে, তখন এক শ্রেণির আলেম তাদেরকে উমরী ক্বাযা তথা বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা আদায় করার ফতওয়া দেন। ফলে ঐ ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হতে নিরাশ হয়ে যায়। অথচ কাযা হলো গ্রহণযোগ্য কারণবশত হঠাৎ ১/২ ওয়াক্ত ছুটে গেলে সেটা তৎক্ষণাৎ পড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি কোনদিন নামাযই আদায় করেনি অথবা কোন ওয়াক্ত পড়েছে ও কোন ওয়াক্ত বাদ দিয়েছে তার কোন হিসাব নেই, ঐ ব্যক্তি তাওবা করে নিয়মিতভাবে সেদিন থেকে পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করলেই যথেষ্ট হবে।
মূলত এসব কারণেই আমাদের সমাজে বেনামাযীর সংখ্যা এত বেশি।
আলেমগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার করবে, নিঃসন্দেহে সে কাফির হয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়াকে স্বীকার করা সত্ত্বেও অলসতাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করবে সে কাফির হিসেবে গণ্য হবে নাকি ফাসিক হিসেবে গণ্য হবে- এ ব্যাপারে আলেমগণের দুটি অভিমত রয়েছে। যেমন-
প্রথম অভিমত- নামায পরিত্যাগকারী ফাসিক :
দ্বিতীয় অভিমত- নামায পরিত্যাগকারী কাফির :
আর যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়াকে স্বীকার করা সত্ত্বেও অলসতাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করবে সে কাফির হিসেবে গণ্য হবে নাকি ফাসিক হিসেবে গণ্য হবে- এ ব্যাপারে আলেমগণের দুটি অভিমত রয়েছে। যেমন-
প্রথম অভিমত- নামায পরিত্যাগকারী ফাসিক :
দ্বিতীয় অভিমত- নামায পরিত্যাগকারী কাফির :
যারা মনে করেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার কথা স্বীকার করা সত্ত্বেও নিজেদের অলসতা অথবা অবহেলার কারণে যারা নামায পরিত্যাগ করে থাকে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না, তাদের দলীল হচ্ছে-
দলীল নং- ১
﴿اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক স্থাপন করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন।
(সূরা নিসা- ৪৮)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর নামায পরিত্যাগ করা শিরক নয়। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন।
দলীল নং- ২
অনেক প্রসিদ্ধ হাদীসে এসেছে যে, যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর সাক্ষ্য দেবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। যেমন-
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ وَمُعاذٌ رَدِيْفُهٗ عَلَى الرَّحْلِ قَالَ يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ قَالَ يَا مُعَاذُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلَاثًا قَالَ مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِه إِلَّا حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوْا قَالَ إِذًا يَتَّكِلُوْا وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِه تَأَثُّمًا
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ উটের উপর সওয়ারীতে ছিলেন এবং মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) তাঁর পিছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, হে মুয়ায ইবনে জাবাল! মুয়ায (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত। তারপরও রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে মুয়ায! মুয়ায (রাঃ)-ও অনুরূপ উত্তর দিলেন। তিনি তিন বার এভাবে তাকে সম্বোধন করেন। মুয়ায (রাঃ)-ও প্রত্যেক বার একই উত্তর দেন। তারপর তিনি বললেন, কোন বান্দা যদি আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেয় যে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল’’, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। মুয়ায (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ কথা বলে দেব? যাতে তারা শুভ সংবাদ পেতে পারে। তিনি বললেন, যদি তুমি তাদেরকে এ কথা বলে দাও, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করবে (অর্থাৎ আমল ছেড়ে দেবে)। অতঃপর মুয়ায (রাঃ) ইন্তিকালের সময় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যাতে ইলম গোপন রাখার গুনাহ না হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩২; শু‘আবুল ঈমান, হা/১২৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫২২; মিশকাত, হা/২৫।]
عن عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ ....... قَالَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ فَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِىْ بِذٰلِكَ وَجْهَ اللهِ
ইতবান ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩; বায়হাকী, হা/২০৮৯৩।]
তারা বলে থাকেন যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য নামাযকে শর্তারোপ করা হয়নি। বরং কেবল ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-কে শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং যারা কেবল এর সাক্ষ্য দিবে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না।
তবে এরূপ হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে-
يَبْتَغِىْ بِذٰلِكَ وَجْهَ اللهِ
তথা ‘‘এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে’’
অথবা صِدْقًا مِنْ قَلْبِه
তথা ‘‘অন্তরে ঈমানের সত্যতা নিয়ে’’ ইত্যাদি।
সুতরাং সাক্ষ্যদ্বয়কে নিয়তের একনিষ্ঠতা ও অন্তরের সত্যতার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে, যা নামায ত্যাগের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হয়। কেননা নিয়তের একনিষ্ঠতা ও অন্তরের সততা আবশ্যকীয়ভাবে নামায আদায়ের উপর নির্ভর করে।
দলীল নং- ১
﴿اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَن يَّشَآءُ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক স্থাপন করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন।
(সূরা নিসা- ৪৮)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর নামায পরিত্যাগ করা শিরক নয়। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন।
দলীল নং- ২
অনেক প্রসিদ্ধ হাদীসে এসেছে যে, যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর সাক্ষ্য দেবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। যেমন-
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ وَمُعاذٌ رَدِيْفُهٗ عَلَى الرَّحْلِ قَالَ يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ قَالَ يَا مُعَاذُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلَاثًا قَالَ مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِه إِلَّا حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوْا قَالَ إِذًا يَتَّكِلُوْا وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِه تَأَثُّمًا
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ উটের উপর সওয়ারীতে ছিলেন এবং মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) তাঁর পিছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, হে মুয়ায ইবনে জাবাল! মুয়ায (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত। তারপরও রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে মুয়ায! মুয়ায (রাঃ)-ও অনুরূপ উত্তর দিলেন। তিনি তিন বার এভাবে তাকে সম্বোধন করেন। মুয়ায (রাঃ)-ও প্রত্যেক বার একই উত্তর দেন। তারপর তিনি বললেন, কোন বান্দা যদি আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেয় যে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল’’, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। মুয়ায (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ কথা বলে দেব? যাতে তারা শুভ সংবাদ পেতে পারে। তিনি বললেন, যদি তুমি তাদেরকে এ কথা বলে দাও, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করবে (অর্থাৎ আমল ছেড়ে দেবে)। অতঃপর মুয়ায (রাঃ) ইন্তিকালের সময় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যাতে ইলম গোপন রাখার গুনাহ না হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩২; শু‘আবুল ঈমান, হা/১২৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫২২; মিশকাত, হা/২৫।]
عن عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ ....... قَالَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ فَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِىْ بِذٰلِكَ وَجْهَ اللهِ
ইতবান ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩; বায়হাকী, হা/২০৮৯৩।]
তারা বলে থাকেন যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য নামাযকে শর্তারোপ করা হয়নি। বরং কেবল ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’-কে শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং যারা কেবল এর সাক্ষ্য দিবে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না।
তবে এরূপ হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে-
يَبْتَغِىْ بِذٰلِكَ وَجْهَ اللهِ
তথা ‘‘এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে’’
অথবা صِدْقًا مِنْ قَلْبِه
তথা ‘‘অন্তরে ঈমানের সত্যতা নিয়ে’’ ইত্যাদি।
সুতরাং সাক্ষ্যদ্বয়কে নিয়তের একনিষ্ঠতা ও অন্তরের সত্যতার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে, যা নামায ত্যাগের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হয়। কেননা নিয়তের একনিষ্ঠতা ও অন্তরের সততা আবশ্যকীয়ভাবে নামায আদায়ের উপর নির্ভর করে।
যারা মনে করেন যে, নামায পরিত্যাগকারী কাফির হয়ে যায় তাদের দলীল হচ্ছে-
দলীল নং- ১
অনেক হাদীসে ইসলাম ও কুফরের মাঝে নামাযকে পার্থক্যকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ - يَقُوْلُ اِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
এ হাদীসগুলোর স্পষ্ট ভাষ্য হচ্ছে, মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী জিনিস হচ্ছে নামায। আবু হাতীম (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায ত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কেননা নামায ত্যাগ করা কুফরীর প্রথম ধাপ। যখন ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে এবং নামায ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় তখন সে অন্যান্য ফরয ইবাদাতও ত্যাগ করে। আর যখন সে নামায ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্যত সে নামায অস্বীকারকারী হয়ে যায়। এজন্য নবী ﷺ নামায ত্যাগকারীর শেষ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেই তার উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩।]
দলীল নং- ২
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে নামাযে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
দলীল নং- ৩
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
অতঃপর তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (সূরা তাওবা- ১১)
অত্র আয়াতে মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য তিনটি শর্তারোপ করা হয়েছে। তা হলো-
১. তারা শিরক থেকে তওবা করবে।
২. নামায কায়েম করবে।
৩. যাকাত প্রদান করবে।
যদি উল্লেখিত শর্তসমূহের কোন একটি না থাকে, তাহলে ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকবে না। আর ফাসেকী কাজ ও ছোট-খাটো কুফরী কর্ম দ্বারা ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয় না। বরং তা এমন কুফরী দ্বারা বিনষ্ট হয়, যা দ্বীন থেকে বের করে দেয়।
দলীল নং- ৪
﴿فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‐ إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا﴾
তাদের পরে এমন লোকদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা নামাযকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। কিন্তু যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৫৯, ৬০)
অত্র আয়াতে বর্ণিত إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ তথা ‘‘কিন্তু যে তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে’’ অংশ দ্বারা প্রমাণ করে যে, যখন তারা নামায বরবাদ করেছে (ত্যাগ করেছে) ও নিজের মন প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে তখন তারা মুমিন ছিল না।
দলীল নং- ৫
﴿مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ﴾
কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে আমরা নামায আদায়কারী ছিলাম না এবং অভাবীদেরকে খাদ্য দিতাম না। বরং আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে মগ্ন থাকতাম। আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪২-৪৭)
অত্র আয়াত অনুযায়ী বুঝা যায় যে, কিয়ামতের দিন নামায পরিত্যাগকারীকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে এবং তাকে সাকার নামক জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। নামায পরিত্যাগকারীকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এটি সুস্পষ্ট দলীল।
দলীল নং- ৬
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلّٰى صَلَاتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا وَأَكَلَ ذَبِيْحَتَنَا فَذٰلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِيْ لَهٗ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُوْلِه فَلَا تُخْفِرُوا اللهَ فِيْ ذِمَّتِه
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের মতো নামায পড়বে, আমাদের কিবলার দিকে মুখ ফিরাবে এবং আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশ্ত খাবে সে এমন এক মুসলিম, যার জন্য আছে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল এর নিরাপত্তা। সুতরাং আল্লাহর তত্ত্বাবধানে কেউ খিয়ানত করো না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৯১; বায়হাকী, হা/২২৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৬৫; মিশকাত, হা/১৩।]
দলীল নং- ৭
عَنْ مُعَاذٍ قَالَ أَوْصَانِيْ رَسُوْلُ اللهِ ..... وَلَا تَتْرُكَنَّ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ
মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অসিয়ত করেছেন যে, তুমি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ফরয নামায পরিত্যাগ করে তার উপর আল্লাহর যিম্মাদারিত্ব উঠে যায়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৭৫; বায়হাকী, হা/১৫১৭৪; মিশকাত, হা/৬১; হাদীসটি যঈফ।]
কোন ব্যক্তি যদি নামায পরিত্যাগ করার পরও ইসলামের উপর অটল থাকত, তাহলে সে ইসলামের যিম্মায় থাকত।
দলীল নং- ৮
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ سَتَكُوْنُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلٰكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ قَالُوْا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অতিসত্তর তোমাদের উপর এমন শাসক নিযুক্ত করা হবে, যাদের কিছু কাজ তোমরা পছন্দ করবে এবং কিছু কাজ অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে সে দায়মুক্ত হবে এবং যে তাদের কাজকে ঘৃণা করবে সেও দায়মুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে ও তাদের অনুসরণ করবে (সে অন্যায়ের অংশীদার হবে)। তখন সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, না- যে পর্যন্ত তারা নামায আদায় করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৪; তিরমিযী, হা/২২৬৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৬০।]
দলীল নং- ৯
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُمْ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ فَقَالَ لَا مَا أَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلَاةَ
আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা তারাই যারা তোমাদেরকে ভালোবাসে, আর তোমরাও তাদেরকে ভালোবাস; তারা তোমাদের জন্য দু‘আ করে, আর তোমরাও তাদের জন্য দু‘আ কর। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট নেতা তারাই যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে, আর তোমরাও তাদেরকে ঘৃণা কর; তোমাদের প্রতি তারা অভিসম্পাত করে, আর তোমরাও তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের সাথে যুদ্ধ করব না? তিনি উত্তরে বললেন- না! যতদিন পর্যন্ত তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে ততদিন পর্যন্ত নয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯১০; তিরমিযী, হা/২২৬৪; বায়হাকী, হা/১৭০৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৭; মিশকাত, হা/২৬৭০।]
দলীল নং- ১০
কতিপয় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশ সাহাবীই নামায পরিত্যাগকারীকে কাফির মনে করতেন। যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ كَانَ أصْحَابُ مُحَمَّدٍ لَايَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক আল-উকাইলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীগণ নামায ছেড়ে দেয়া ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মুসনাদুল জামে‘, হা/১৫৫২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৫; মিশকাত, হা/৫৭৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَلَا دِيْنَ لَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, তার দ্বীন বলতে কিছুই নেই। [বায়হাকী, হা/৬৭৩৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩।]
প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রহ.) বলেন, নবী ﷺ হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে যে, নামায ত্যাগকারী কাফির। আর নবী ﷺ এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের এটাই মত যে, কোন ব্যক্তি যদি ওজর ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। ইমাম ইবনে হাযম উল্লেখ করেন, নিশ্চয় উমর ইবনে খাত্তাব, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, মুয়ায ইবনে জাবাল, আবু হুরায়রা (রাঃ) সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এটার উপরই মত দিয়েছেন। অতঃপর তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমি জানি না যে, সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন কি না। [মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪/১৭০ পৃঃ; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
দলীল নং- ১১
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
দলীল নং- ১২
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
অত্র আয়াতের ভাষ্যটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- নামায আদায় করা। আর নামাযের মাধ্যমেই যাচাই হয়ে যায় যে, ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে নামায আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি নামায আদায় না করে তাহলে প্রমাণিত হবে যে, সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। অতএব কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে এবং সে নামাযও পরিত্যাগ করে, তাহলে সে কাফির হিসেবেই গণ্য হবে।
দলীল নং- ১৩
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ﴾
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
অত্র আয়াতে নামায পরিত্যাগকারীকে মুশরিক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর মুশরিকরা কাফিরদেরই একটি প্রকার।
দলীল নং- ১৪
আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
এ আয়াতে নামায কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তার মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি নামায কায়েম করে না এবং যাকাত আদায় করে না, সে নিরাপত্তা পাবে না। আর যে ব্যক্তির উপর থেকে মুসলিমদের নিরাপত্তা উঠে যায়, সে কাফির হিসেবেই গণ্য হয়।
দলীল নং- ১৫
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল। সুতরাং বেনামাযীরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
দলীল নং- ১
অনেক হাদীসে ইসলাম ও কুফরের মাঝে নামাযকে পার্থক্যকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ - يَقُوْلُ اِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
এ হাদীসগুলোর স্পষ্ট ভাষ্য হচ্ছে, মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী জিনিস হচ্ছে নামায। আবু হাতীম (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায ত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কেননা নামায ত্যাগ করা কুফরীর প্রথম ধাপ। যখন ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে এবং নামায ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় তখন সে অন্যান্য ফরয ইবাদাতও ত্যাগ করে। আর যখন সে নামায ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্যত সে নামায অস্বীকারকারী হয়ে যায়। এজন্য নবী ﷺ নামায ত্যাগকারীর শেষ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেই তার উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩।]
দলীল নং- ২
عَنْ بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ بَكِّرُوْا بِالصَّلَاةِ فِيْ يَوْمِ الْغَيْمِ فَاِنَّهٗ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে নামাযে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
দলীল নং- ৩
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
অতঃপর তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (সূরা তাওবা- ১১)
অত্র আয়াতে মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য তিনটি শর্তারোপ করা হয়েছে। তা হলো-
১. তারা শিরক থেকে তওবা করবে।
২. নামায কায়েম করবে।
৩. যাকাত প্রদান করবে।
যদি উল্লেখিত শর্তসমূহের কোন একটি না থাকে, তাহলে ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকবে না। আর ফাসেকী কাজ ও ছোট-খাটো কুফরী কর্ম দ্বারা ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয় না। বরং তা এমন কুফরী দ্বারা বিনষ্ট হয়, যা দ্বীন থেকে বের করে দেয়।
দলীল নং- ৪
﴿فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‐ إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا﴾
তাদের পরে এমন লোকদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা নামাযকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। কিন্তু যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৫৯, ৬০)
অত্র আয়াতে বর্ণিত إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ তথা ‘‘কিন্তু যে তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে’’ অংশ দ্বারা প্রমাণ করে যে, যখন তারা নামায বরবাদ করেছে (ত্যাগ করেছে) ও নিজের মন প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে তখন তারা মুমিন ছিল না।
দলীল নং- ৫
﴿مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ‐ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ‐ وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآئِضِيْنَ ‐ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ‐ حَتّٰۤى اَتَانَا الْيَقِيْنُ﴾
কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে আমরা নামায আদায়কারী ছিলাম না এবং অভাবীদেরকে খাদ্য দিতাম না। বরং আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে মগ্ন থাকতাম। আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে। (সূরা মুদ্দাসসির, ৪২-৪৭)
অত্র আয়াত অনুযায়ী বুঝা যায় যে, কিয়ামতের দিন নামায পরিত্যাগকারীকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে এবং তাকে সাকার নামক জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। নামায পরিত্যাগকারীকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এটি সুস্পষ্ট দলীল।
দলীল নং- ৬
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلّٰى صَلَاتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا وَأَكَلَ ذَبِيْحَتَنَا فَذٰلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِيْ لَهٗ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُوْلِه فَلَا تُخْفِرُوا اللهَ فِيْ ذِمَّتِه
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের মতো নামায পড়বে, আমাদের কিবলার দিকে মুখ ফিরাবে এবং আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশ্ত খাবে সে এমন এক মুসলিম, যার জন্য আছে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল এর নিরাপত্তা। সুতরাং আল্লাহর তত্ত্বাবধানে কেউ খিয়ানত করো না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৯১; বায়হাকী, হা/২২৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৬৫; মিশকাত, হা/১৩।]
দলীল নং- ৭
عَنْ مُعَاذٍ قَالَ أَوْصَانِيْ رَسُوْلُ اللهِ ..... وَلَا تَتْرُكَنَّ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ
মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অসিয়ত করেছেন যে, তুমি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ফরয নামায পরিত্যাগ করে তার উপর আল্লাহর যিম্মাদারিত্ব উঠে যায়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৭৫; বায়হাকী, হা/১৫১৭৪; মিশকাত, হা/৬১; হাদীসটি যঈফ।]
কোন ব্যক্তি যদি নামায পরিত্যাগ করার পরও ইসলামের উপর অটল থাকত, তাহলে সে ইসলামের যিম্মায় থাকত।
দলীল নং- ৮
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ سَتَكُوْنُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلٰكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ قَالُوْا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অতিসত্তর তোমাদের উপর এমন শাসক নিযুক্ত করা হবে, যাদের কিছু কাজ তোমরা পছন্দ করবে এবং কিছু কাজ অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে সে দায়মুক্ত হবে এবং যে তাদের কাজকে ঘৃণা করবে সেও দায়মুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে ও তাদের অনুসরণ করবে (সে অন্যায়ের অংশীদার হবে)। তখন সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, না- যে পর্যন্ত তারা নামায আদায় করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৪; তিরমিযী, হা/২২৬৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৬০।]
দলীল নং- ৯
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُمْ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ فَقَالَ لَا مَا أَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلَاةَ
আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা তারাই যারা তোমাদেরকে ভালোবাসে, আর তোমরাও তাদেরকে ভালোবাস; তারা তোমাদের জন্য দু‘আ করে, আর তোমরাও তাদের জন্য দু‘আ কর। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট নেতা তারাই যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে, আর তোমরাও তাদেরকে ঘৃণা কর; তোমাদের প্রতি তারা অভিসম্পাত করে, আর তোমরাও তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের সাথে যুদ্ধ করব না? তিনি উত্তরে বললেন- না! যতদিন পর্যন্ত তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে ততদিন পর্যন্ত নয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯১০; তিরমিযী, হা/২২৬৪; বায়হাকী, হা/১৭০৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৭; মিশকাত, হা/২৬৭০।]
দলীল নং- ১০
কতিপয় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশ সাহাবীই নামায পরিত্যাগকারীকে কাফির মনে করতেন। যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ كَانَ أصْحَابُ مُحَمَّدٍ لَايَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ
আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক আল-উকাইলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীগণ নামায ছেড়ে দেয়া ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মুসনাদুল জামে‘, হা/১৫৫২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৫; মিশকাত, হা/৫৭৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ مَنْ لَمْ يُصَلِّ فَلَا دِيْنَ لَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, তার দ্বীন বলতে কিছুই নেই। [বায়হাকী, হা/৬৭৩৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩।]
প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রহ.) বলেন, নবী ﷺ হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে যে, নামায ত্যাগকারী কাফির। আর নবী ﷺ এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের এটাই মত যে, কোন ব্যক্তি যদি ওজর ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। ইমাম ইবনে হাযম উল্লেখ করেন, নিশ্চয় উমর ইবনে খাত্তাব, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, মুয়ায ইবনে জাবাল, আবু হুরায়রা (রাঃ) সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এটার উপরই মত দিয়েছেন। অতঃপর তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমি জানি না যে, সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন কি না। [মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪/১৭০ পৃঃ; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
দলীল নং- ১১
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
দলীল নং- ১২
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
অতঃপর সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা ক্বিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
অত্র আয়াতের ভাষ্যটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- নামায আদায় করা। আর নামাযের মাধ্যমেই যাচাই হয়ে যায় যে, ব্যক্তির ঈমান আনাটা সত্য কি না? যদি সে নামায আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সত্যিই সে ঈমান এনেছে। আর যদি নামায আদায় না করে তাহলে প্রমাণিত হবে যে, সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। অতএব কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে এবং সে নামাযও পরিত্যাগ করে, তাহলে সে কাফির হিসেবেই গণ্য হবে।
দলীল নং- ১৩
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مُنِيْبِيْنَ اِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ﴾
তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁর অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩১)
অত্র আয়াতে নামায পরিত্যাগকারীকে মুশরিক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর মুশরিকরা কাফিরদেরই একটি প্রকার।
দলীল নং- ১৪
আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা- ৫)
এ আয়াতে নামায কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তার মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি নামায কায়েম করে না এবং যাকাত আদায় করে না, সে নিরাপত্তা পাবে না। আর যে ব্যক্তির উপর থেকে মুসলিমদের নিরাপত্তা উঠে যায়, সে কাফির হিসেবেই গণ্য হয়।
দলীল নং- ১৫
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল। সুতরাং বেনামাযীরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
মৃত্যুর সময় বেনামাযীকে শাসিত্ম দেয়া হবে :
﴿وَلَوْ تَرٰۤى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ ‐ ذٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيْكُمْ وَأَنَّ اللهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ﴾
তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করছে এবং (বলছে) তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো; এটা তার ফলস্বরূপ, যা তোমাদের হাত পূর্বে প্রেরণ করেছিল। আর আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। (সূরা আনফাল- ৫০, ৫১)
কিয়ামতের দিন বেনামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও (অর্থাৎ নামায আদায় করো), তখন তারা মাথানত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ।
(সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহকে সিজদা করতে সক্ষম হবে না :
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ - ‐ خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হয়েছিল (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)।
(সূরা ক্বালাম- ৪২, ৪৩)
কিয়ামতের দিন বেনামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে (অর্থাৎ নামায আদায় করবে) এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর এটা কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না তার জন্য কোন দলীল ও নূর থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরের সাথে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
বেনামাযীদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবে, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবে। জান্নাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবে যে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা বলবে, আমরা দুনিয়াতে নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে নামায না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তারা একে অপরকে দেখতে পাবে এবং একে অপরের সাথে কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা সফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
﴿وَلَوْ تَرٰۤى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِيْنَ كَفَرُوا الْمَلَآئِكَةُ يَضْرِبُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِ ‐ ذٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيْكُمْ وَأَنَّ اللهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيْدِ﴾
তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করছে এবং (বলছে) তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো; এটা তার ফলস্বরূপ, যা তোমাদের হাত পূর্বে প্রেরণ করেছিল। আর আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নন। (সূরা আনফাল- ৫০, ৫১)
কিয়ামতের দিন বেনামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও (অর্থাৎ নামায আদায় করো), তখন তারা মাথানত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ।
(সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহকে সিজদা করতে সক্ষম হবে না :
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ - ‐ خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করা হবে এবং তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান করা হয়েছিল (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)।
(সূরা ক্বালাম- ৪২, ৪৩)
কিয়ামতের দিন বেনামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ بُرْهَانٌ وَّلَا نُوْرٌ وَّلَا نَجَاةٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে (অর্থাৎ নামায আদায় করবে) এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর এটা কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না তার জন্য কোন দলীল ও নূর থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরের সাথে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ اَنَّهٗ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهٗ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهٗ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَاُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ সালাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
বেনামাযীদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবে, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবে। জান্নাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবে যে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা বলবে, আমরা দুনিয়াতে নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সূরা মুদ্দাস্সির, ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে নামায না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তারা একে অপরকে দেখতে পাবে এবং একে অপরের সাথে কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা সফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
যারা নিয়মিত নামায পরিত্যাগ করে থাকে, ইমাম অথবা ইসলামী শাসক তার ব্যাপারে কিরূপ পদক্ষেপ নেবেন অথবা তাকে কিরূপ শাস্তি দেবেন- এ ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। যেমন-
১. একদল আলেমের মতে, যারা নামায আদায় করে না তাদেরকে নামাযের সময় শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আহবান করতে হবে। অতঃপর যখন সময় শেষ হয়ে যাবে এবং সে যদি নামায পড়তে রাজি না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। আর যদি ঐ সময়ের মধ্যে সে তওবা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে না। আর এ শাস্তিটি তাকে নামায আদায় না করার কারণেই দেয়া হবে; কাফির হওয়ার কারণে নয়। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফেঈ (রহ.) এরূপ মত পোষণ করেছেন।
আরেকদল আলেমের মতে, যারা নামায আদায় করে না তাদেরকে হত্যার পূর্বে তিনদিন পর্যন্ত সুযোগ দিতে হবে। এ সময় প্রতিদিন তাদেরকে বলতে হবে যে, তুমি নামায আদায় করো, না হলে আমরা তোমাকে হত্যা করব। অতঃপর সে যদি নামায আদায় করে, তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে না। আর যদি আদায় না করে, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর অনুসারীদের মধ্যে যারা বেনামাযীকে কাফির মনে করেন না তারা এরূপ মত পোষণ করেছেন।
২. আরেকদল আলেমের মতে, যারা নামায পরিত্যাগ করে থাকে, তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। বরং তাদেরকে তওবা করা অথবা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কারারূদ্ধ অথবা দেশান্তরিত করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে যদি তারা তওবা করে পুনরায় নামায আদায় করতে শুরু করে, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। তাদের দলীল হচ্ছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتّٰى يَشْهَدُوْا أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ فَإِذَا فَعَلُوْا ذٰلِكَ عَصَمُوْا مِنِّيْ دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে লড়াই করব। যদি তারা তা বলে, তাহলে তারা আমার থেকে তাদের রক্ত ও মাল নিরাপদ করে নিল। কিন্তু ইসলামের নির্ধারিত অপরাধের আওতায় পড়লে তাকে হত্যা করতে হবে। আর তার চূড়ান্ত হিসাব থাকবে আল্লাহর নিকট। [সহীহ বুখারী, হা/২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২; তিরমিযী, হা/২৬০৬; আবু দাউদ, হা/২৬৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯২৮; বায়হাকী, হা/২২৮৮।]
১. একদল আলেমের মতে, যারা নামায আদায় করে না তাদেরকে নামাযের সময় শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আহবান করতে হবে। অতঃপর যখন সময় শেষ হয়ে যাবে এবং সে যদি নামায পড়তে রাজি না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। আর যদি ঐ সময়ের মধ্যে সে তওবা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে না। আর এ শাস্তিটি তাকে নামায আদায় না করার কারণেই দেয়া হবে; কাফির হওয়ার কারণে নয়। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফেঈ (রহ.) এরূপ মত পোষণ করেছেন।
আরেকদল আলেমের মতে, যারা নামায আদায় করে না তাদেরকে হত্যার পূর্বে তিনদিন পর্যন্ত সুযোগ দিতে হবে। এ সময় প্রতিদিন তাদেরকে বলতে হবে যে, তুমি নামায আদায় করো, না হলে আমরা তোমাকে হত্যা করব। অতঃপর সে যদি নামায আদায় করে, তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে না। আর যদি আদায় না করে, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর অনুসারীদের মধ্যে যারা বেনামাযীকে কাফির মনে করেন না তারা এরূপ মত পোষণ করেছেন।
২. আরেকদল আলেমের মতে, যারা নামায পরিত্যাগ করে থাকে, তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। বরং তাদেরকে তওবা করা অথবা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কারারূদ্ধ অথবা দেশান্তরিত করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে যদি তারা তওবা করে পুনরায় নামায আদায় করতে শুরু করে, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। তাদের দলীল হচ্ছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتّٰى يَشْهَدُوْا أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ فَإِذَا فَعَلُوْا ذٰلِكَ عَصَمُوْا مِنِّيْ دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে লড়াই করব। যদি তারা তা বলে, তাহলে তারা আমার থেকে তাদের রক্ত ও মাল নিরাপদ করে নিল। কিন্তু ইসলামের নির্ধারিত অপরাধের আওতায় পড়লে তাকে হত্যা করতে হবে। আর তার চূড়ান্ত হিসাব থাকবে আল্লাহর নিকট। [সহীহ বুখারী, হা/২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২; তিরমিযী, হা/২৬০৬; আবু দাউদ, হা/২৬৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯২৮; বায়হাকী, হা/২২৮৮।]
১. বেনামাযী ব্যক্তি মুসলিমের অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না :
ইসলাম যেসব ক্ষেত্রে অভিভাবকত্বকে শর্তারোপ করেছে সেসব ক্ষেত্রে বেনামাযী অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। কারণ অলী বা অভিভাবক হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। বেনামাযী তার নিজের সন্তানদেরও অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। এমনিভাবে কোন মুসলিম মেয়েকে বিবাহ দিতে যে অলীর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও বেনামাযী অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। ফিকহশাস্ত্রবিদগণ তাদের সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত কিতাবে বলেন, অলী হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, মুসলিম হওয়া- যখন সে কোন মুসলিম মেয়ের বিবাহ দেবে। তারা আরো বলেন,
لَا وِلَايَةَ لِكَافِرٍ عَلٰى مُسْلِمَةٍ
মুসলিম মেয়ের উপর কোন কাফির ব্যক্তির অভিভাবকত্ব চলবে না। [আল-হাভী ফী ফিক্বহিশ শাফেঈ, ৯/১১৫।]
ইবনে আববাস (রাঃ) এ সম্পর্কে বলেন,
لَا نِكَاحَ إلَّا بِوَلِيِّ مُّرْشِدٍ
যোগ্য অলী বা অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ বৈধ হবে না। [বায়হাকী, হা/১৪০২১; মুসনাদে শাফেঈ, হা/১০৯৩।]
আর সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বন করা; আর নিকৃষ্টতম মূর্খতা ও অযোগ্যতা হলো কুফরী করা ও ইসলাম হতে বিমুখ হওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنْ يَّرْغَبُ عَنْ مِّلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ اِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهٗ﴾
যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়ে নিয়েছে সে ব্যতীত কে ইবরাহীমের ধর্ম হতে বিমুখ হবে। (সূরা বাকারা- ১৩০)
২. বেনামাযী ব্যক্তি মুসলিমের উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবে না :
বেনামাযী মুসলিমের উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবে না। কারণ উত্তরাধিকার লাভ করার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلَا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হবে না এবং কাফিরও মুসলিমের উত্তরাধিকারী হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০৮২; আবু দাউদ, হা/২৯১১; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২৯; মিশকাত, হা/৩০৪৩।]
৩. বেনামাযী মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে পারবে না :
বেনামাযী মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে হলে পবিত্র হতে হবে। আর কাফির-মুশরিকরা অপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا﴾
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
মক্কায় ইসলাম বিজয় লাভ করার পূর্বে অমুসলিমরা উলঙ্গ হয়ে মক্কার হেরেমে প্রবেশ করত এবং কা‘বা ঘর তাওয়াফ করত। কিন্তু যখন ইসলাম বিজয় লাভ করল তারপর থেকেই অমুসলিমদের মক্কার হেরেমে প্রবেশ করা এবং উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করাকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামত পর্যন্ত এই হুকুম চলমান থাকবে।
৪. বেনামাযীর যবাই করা পশু খাওয়া যাবে না :
বেনামাযীর যবাই করা হালাল পশুও খাওয়া যাবে না। যদিও সে যবাই করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে যবাই করে তারপরও একজন মুসলিমের জন্য তা খাওয়া বৈধ নয়। হালাল পশু খাওয়া বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো যবাই করা। আর এই যবাই করার জন্য আবার শর্ত হলো, ব্যক্তি মুসলিম বা আহলে কিতাব হতে হবে। এর স্বপক্ষে প্রখ্যাত তাফসীরবিদ খাযিন (রহ.) বলেন, আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মাজুসী অর্থাৎ অগ্নিপূজক এবং সমস্ত বহুত্ববাদীদের যবাইকৃত সমস্ত জমত্মুই হারাম। হোক সে আরবের মুশরিক কিংবা মূর্তিপূজক। এমনিভাবে যাদের উপর কোন কিতাব অবতীর্ণ করা হয়নি তাদেরও যবাইকৃত জমত্মু খাওয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয়।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন,
لَا أَعْلَمُ أَحَدًا قَالَ بِخِلَافِه إِلَّا أَنْ يَّكُوْنَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ
আমি জানি না যে, এর বিপক্ষে কেউ কোন মত পোষণ করেছেন। তবে হ্যাঁ, সে যদি বিদআতী হয় তবে বলতে পারে।
৫. বেনামাযী ব্যক্তি কোন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না :
বেনামাযী ব্যক্তি কোন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ বিয়ের অন্যতম একটি শর্ত হলো, ছেলে-মেয়ে উভয়কেই মুসলিম হতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে তারা মুমিন, তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
তবে আহলে কিতাবের বিষয়ে কিছু কথা আছে। তারা যদি শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত না হয় তবে তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ করা যাবে।
এমনিভাবে বিবাহ হওয়ার পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেউ বেনামাযী হয়ে যায় তাহলে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। যদি বিবাহের পর বাসর রাতের পূর্বেই মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। আর যদি বাসর রাতের পর মুরতাদ হয় তাহলে কেউ কেউ বলেন, সাথে সাথেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। আর কেউ কেউ বলেন, স্ত্রীর ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর বিবাহ বিচ্ছেদ হবে।
৬. বেনামাযীর জানাযা পড়া এবং তার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করা যাবে না :
বেনামাযীর জানাযা পড়া এবং তার জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা কোন মুসলিমের জন্য জায়েয হবে না। বরং তা প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) নামায আদায় করবে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (সূরা তাওবা- ৮৪)
বেনামাযী যদিও নিজের আত্মীয়স্বজন হয় তারপরও মুসলিমের জন্য তার জানাযা পড়া ও তার জন্য মাগফিরাতের প্রার্থনা করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ ‐ وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ﴾
নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। আর ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল এজন্য যে, সে তাকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু; তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশীল। (সূরা তাওবা- ১১৩, ১১৪)
ইসলাম যেসব ক্ষেত্রে অভিভাবকত্বকে শর্তারোপ করেছে সেসব ক্ষেত্রে বেনামাযী অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। কারণ অলী বা অভিভাবক হওয়ার প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। বেনামাযী তার নিজের সন্তানদেরও অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। এমনিভাবে কোন মুসলিম মেয়েকে বিবাহ দিতে যে অলীর প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও বেনামাযী অলী বা অভিভাবক হতে পারবে না। ফিকহশাস্ত্রবিদগণ তাদের সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত কিতাবে বলেন, অলী হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, মুসলিম হওয়া- যখন সে কোন মুসলিম মেয়ের বিবাহ দেবে। তারা আরো বলেন,
لَا وِلَايَةَ لِكَافِرٍ عَلٰى مُسْلِمَةٍ
মুসলিম মেয়ের উপর কোন কাফির ব্যক্তির অভিভাবকত্ব চলবে না। [আল-হাভী ফী ফিক্বহিশ শাফেঈ, ৯/১১৫।]
ইবনে আববাস (রাঃ) এ সম্পর্কে বলেন,
لَا نِكَاحَ إلَّا بِوَلِيِّ مُّرْشِدٍ
যোগ্য অলী বা অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ বৈধ হবে না। [বায়হাকী, হা/১৪০২১; মুসনাদে শাফেঈ, হা/১০৯৩।]
আর সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বন করা; আর নিকৃষ্টতম মূর্খতা ও অযোগ্যতা হলো কুফরী করা ও ইসলাম হতে বিমুখ হওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنْ يَّرْغَبُ عَنْ مِّلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ اِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهٗ﴾
যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়ে নিয়েছে সে ব্যতীত কে ইবরাহীমের ধর্ম হতে বিমুখ হবে। (সূরা বাকারা- ১৩০)
২. বেনামাযী ব্যক্তি মুসলিমের উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবে না :
বেনামাযী মুসলিমের উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবে না। কারণ উত্তরাধিকার লাভ করার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلَا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হবে না এবং কাফিরও মুসলিমের উত্তরাধিকারী হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৬৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০৮২; আবু দাউদ, হা/২৯১১; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২৯; মিশকাত, হা/৩০৪৩।]
৩. বেনামাযী মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে পারবে না :
বেনামাযী মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ মক্কার হেরেমে প্রবেশ করতে হলে পবিত্র হতে হবে। আর কাফির-মুশরিকরা অপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا﴾
হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা- ২৮)
মক্কায় ইসলাম বিজয় লাভ করার পূর্বে অমুসলিমরা উলঙ্গ হয়ে মক্কার হেরেমে প্রবেশ করত এবং কা‘বা ঘর তাওয়াফ করত। কিন্তু যখন ইসলাম বিজয় লাভ করল তারপর থেকেই অমুসলিমদের মক্কার হেরেমে প্রবেশ করা এবং উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করাকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামত পর্যন্ত এই হুকুম চলমান থাকবে।
৪. বেনামাযীর যবাই করা পশু খাওয়া যাবে না :
বেনামাযীর যবাই করা হালাল পশুও খাওয়া যাবে না। যদিও সে যবাই করার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে যবাই করে তারপরও একজন মুসলিমের জন্য তা খাওয়া বৈধ নয়। হালাল পশু খাওয়া বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো যবাই করা। আর এই যবাই করার জন্য আবার শর্ত হলো, ব্যক্তি মুসলিম বা আহলে কিতাব হতে হবে। এর স্বপক্ষে প্রখ্যাত তাফসীরবিদ খাযিন (রহ.) বলেন, আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মাজুসী অর্থাৎ অগ্নিপূজক এবং সমস্ত বহুত্ববাদীদের যবাইকৃত সমস্ত জমত্মুই হারাম। হোক সে আরবের মুশরিক কিংবা মূর্তিপূজক। এমনিভাবে যাদের উপর কোন কিতাব অবতীর্ণ করা হয়নি তাদেরও যবাইকৃত জমত্মু খাওয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয়।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন,
لَا أَعْلَمُ أَحَدًا قَالَ بِخِلَافِه إِلَّا أَنْ يَّكُوْنَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ
আমি জানি না যে, এর বিপক্ষে কেউ কোন মত পোষণ করেছেন। তবে হ্যাঁ, সে যদি বিদআতী হয় তবে বলতে পারে।
৫. বেনামাযী ব্যক্তি কোন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না :
বেনামাযী ব্যক্তি কোন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ বিয়ের অন্যতম একটি শর্ত হলো, ছেলে-মেয়ে উভয়কেই মুসলিম হতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّؕ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِيْمَانِهِنَّۚ فَاِنْ عَلِمْتُمُوْهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوْهُنَّ اِلَى الْكُفَّارِؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّوْنَ لَهُنَّ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে (প্রথমে) পরীক্ষা করে নাও। তবে আল্লাহ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে তারা মুমিন, তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীরা কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্যও বৈধ নয়। (সূরা মুমতাহিনা- ১০)
তবে আহলে কিতাবের বিষয়ে কিছু কথা আছে। তারা যদি শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত না হয় তবে তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ করা যাবে।
এমনিভাবে বিবাহ হওয়ার পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেউ বেনামাযী হয়ে যায় তাহলে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। যদি বিবাহের পর বাসর রাতের পূর্বেই মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। আর যদি বাসর রাতের পর মুরতাদ হয় তাহলে কেউ কেউ বলেন, সাথে সাথেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। আর কেউ কেউ বলেন, স্ত্রীর ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর বিবাহ বিচ্ছেদ হবে।
৬. বেনামাযীর জানাযা পড়া এবং তার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করা যাবে না :
বেনামাযীর জানাযা পড়া এবং তার জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করা কোন মুসলিমের জন্য জায়েয হবে না। বরং তা প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ﴾
তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য (জানাযার) নামায আদায় করবে না এবং তার কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং তারা পাপাচারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (সূরা তাওবা- ৮৪)
বেনামাযী যদিও নিজের আত্মীয়স্বজন হয় তারপরও মুসলিমের জন্য তার জানাযা পড়া ও তার জন্য মাগফিরাতের প্রার্থনা করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ ‐ وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ اِبْرَاهِيْمَ لِاَبِيْهِ اِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلّٰهِ تَبَرَّاَ مِنْهُؕ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيْمٌ﴾
নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী। আর ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল এজন্য যে, সে তাকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, সে আল্লাহর শত্রু; তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। নিশ্চয় ইবরাহীম কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও সহনশীল। (সূরা তাওবা- ১১৩, ১১৪)
বেনামাযীদের জন্য তওবা করা অপরিহার্য :
যারা নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করা সত্ত্বেও নামায পড়ে না, তাদের জন্য প্রধান করণীয় হচ্ছে, তওবা করা। তারা যদি একনিষ্ঠ নিয়তে তওবা করে নামাযের প্রতি মনোযোগী হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‐ إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا﴾
তাদের পরে এমন লোকদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা নামাযকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। কিন্তু যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৫৯, ৬০)
আর তওবা হচ্ছে এমন একটি আমল, যা বান্দাকে যেকোন অপরাধ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এ দরজা যেকোন বান্দার জন্য সবসময় খোলা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتّٰى تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, হিজরত বন্ধ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা বন্ধ না হবে। আর তওবার দরজা বন্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হবে। [আবু দাউদ, হা/২৪৮১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮২৩৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৯০৭।]
সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব তওবা করে নিতে হবে, অন্যথায় মৃত্যু সামনে উপস্থিত হয়ে গেলে তওবা করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং উক্ত তওবা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিও দিতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّيْ تُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا﴾
তাদের জন্য কোন তওবা নেই যারা পাপ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে আমি এখন তওবা করছি এবং তাদেরও তওবা নেই যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
তওবা করার সাথে সাথেই নামায শুরু করবে :
যখন কোন ব্যক্তি নামাযের গুরুত্ব অনুধাবন করে তওবা করে এর দিকে ফিরে আসবে, তখন তাকে সাথে সাথেই নামায আদায় করা আরম্ভ করে দিতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন তার তওবার বিষয়টি প্রমাণিত হবে, তেমনিভাবে ইতিপূর্বে সংঘটিত তার মন্দ আমলসমূহও মিটে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
তুমি নামায কায়েম করো দিনের দু’প্রামত্মভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
তাছাড়া তওবাটা করা উচিত নামাযের মাধ্যমে, যা তওবার নামায হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাদীসে এসেছে,
قَالَ أَبُوْبَكْرٍ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ مَا مِنْ رَجُلٍ يَذْنُبُ ذَنْبًا ثُمَّ يَقُوْمُ فَيَتَطَهَّرُ ثُمَّ يُصَلِّيْ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ إِلَّا غُفِرَ لَهٗ
আবু বকর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বান্দা যদি কোন গুনাহের কাজ করে সাথে সাথে ওযু করে দু’রাকাত নামায আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। [তিরমিযী, হা/৩০০৬; মুসনাদুল জামে‘, হা/৭১৩৩; সহীহ ইবনে মাজাহ, হা/১১৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৮০; মিশকাত, হা/১৩২৪।]
রাতের শেষ ভাগে উঠে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে :
দু‘আ কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে, রাতের শেষ ভাগ। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে এসে বান্দাদেরকে দু‘আ করার জন্য আহবান করতে থাকেন। ফলে এ সময় যেসব বান্দা দু‘আ করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِىْ فَاَسْتَجِيْبَ لَهٗ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَاُعْطِيَهٗ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক রাতের যখন একতৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের মহান প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে যে আমার নিকট দু’আ করবে? আমি তার দু’আ কবুল করব; কে আছে যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দান করব; কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
আর এ কারণেই এটি মুমিনদের তথা জান্নাতী ব্যক্তিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
রাতের শেষাংশে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (সূরা যারিয়াত- ১৮)
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানশীল এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
বেশি বেশি নিচের দু‘আটি পাঠ করবে :
যেসব ব্যক্তি নামায আদায় করে না এবং যেসব ব্যক্তি নামায আদায় করে- প্রত্যেকের জন্যই নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করা খুবই জরুরি। যারা নামায আদায় করে না তারা পড়বে নামায আদায় করার তাওফীক লাভের জন্য এবং যারা নামায আদায় করে, তারা পড়বে এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য। কেননা শয়তান তাদেরকে তা হতে বিচ্যুত করার জন্য সবর্দা ওঁৎ পেতে থাকে। আর এ কারণেই ইবরাহীম (আঃ) এ দু‘আটি পাঠ করতেন; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদেরকে এই দু‘আটি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ﴾
উচ্চারণ : রবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি দু‘আ কবুল করুন।
(সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
উমরী কাযা আদায় না করে বেশি বেশি নফল নামায আদায় করতে হবে :
যে ব্যক্তির নামায অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য কাযা আছে। তার মনে অবহেলা না থাকলে আল্লাহ তার কাযা গ্রহণ করবেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করলে সে নামাযের কাযা নেই। সুতরাং উমরী কাযা অর্থাৎ অতীত জীবনের কাযা নামাযসমূহ আদায় করার কোন বিধান ইসলামে নেই। এটি বর্তমান যুগের একটি বিদআতী প্রথা। [আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২।] এ ক্ষেত্রে তার উচিত হবে বিগত দিনের নামায ছুটে যাওয়ার কারণে খালেসভাবে তওবা করা এবং বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা। কেননা ফরয ইবাদাতের ঘাটতি হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর হুকুমে নফল ইবাদাতের নেকী দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُرَيْثِ بْنِ قَبِيْصَةَ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِيْنَةَ فَقُلْتُ اَللّٰهُمَّ يَسِّرْ لِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا قَالَ فَجَلَسْتُ اِلٰى اَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ اِنِّىْ سَاَلْتُ اللهَ اَنْ يَّرْزُقَنِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا فَحَدِّثْنِىْ بِحَدِيْثٍ سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ - - لَعَلَّ اللهَ اَنْ يَنْفَعَنِىْ بِهٖ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : اِنَّ اَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهٖ صَلَاتُهٗ فَاِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ اَفْلَحَ وَاَنْجَحَ وَاِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَاِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيْضَتِهٖ شَىْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا هَلْ لِعَبْدِىْ مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيْضَةِ ثُمَّ يَكُوْنُ سَائِرُ عَمَلِهٖ عَلٰى ذٰلِكَ
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার নামায সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার নামায সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয নামাযের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, ‘‘দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল নামায আছে কি না’’ যদি (তার আমলে নফল নামায) থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী, হা/৪১৩; নাসায়ী, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
যারা নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করা সত্ত্বেও নামায পড়ে না, তাদের জন্য প্রধান করণীয় হচ্ছে, তওবা করা। তারা যদি একনিষ্ঠ নিয়তে তওবা করে নামাযের প্রতি মনোযোগী হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَخَلَفَ مِنْ ۢبَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ‐ إِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُوْنَ شَيْئًا﴾
তাদের পরে এমন লোকদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা নামাযকে নষ্ট করেছে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। অচিরেই তারা জাহান্নামের ‘গাই’ নামক গর্তে প্রবেশ করবে। কিন্তু যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মারইয়াম- ৫৯, ৬০)
আর তওবা হচ্ছে এমন একটি আমল, যা বান্দাকে যেকোন অপরাধ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এ দরজা যেকোন বান্দার জন্য সবসময় খোলা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتّٰى تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
মুয়াবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, হিজরত বন্ধ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা বন্ধ না হবে। আর তওবার দরজা বন্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হবে। [আবু দাউদ, হা/২৪৮১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮২৩৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৯০৭।]
সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব তওবা করে নিতে হবে, অন্যথায় মৃত্যু সামনে উপস্থিত হয়ে গেলে তওবা করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং উক্ত তওবা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিও দিতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ حَتّٰۤى اِذَا حَضَرَ اَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ اِنِّيْ تُبْتُ الْاٰنَ وَلَا الَّذِيْنَ يَمُوْتُوْنَ وَهُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ اَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا﴾
তাদের জন্য কোন তওবা নেই যারা পাপ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে আমি এখন তওবা করছি এবং তাদেরও তওবা নেই যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৮)
তওবা করার সাথে সাথেই নামায শুরু করবে :
যখন কোন ব্যক্তি নামাযের গুরুত্ব অনুধাবন করে তওবা করে এর দিকে ফিরে আসবে, তখন তাকে সাথে সাথেই নামায আদায় করা আরম্ভ করে দিতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন তার তওবার বিষয়টি প্রমাণিত হবে, তেমনিভাবে ইতিপূর্বে সংঘটিত তার মন্দ আমলসমূহও মিটে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
তুমি নামায কায়েম করো দিনের দু’প্রামত্মভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
তাছাড়া তওবাটা করা উচিত নামাযের মাধ্যমে, যা তওবার নামায হিসেবে প্রসিদ্ধ। হাদীসে এসেছে,
قَالَ أَبُوْبَكْرٍ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ مَا مِنْ رَجُلٍ يَذْنُبُ ذَنْبًا ثُمَّ يَقُوْمُ فَيَتَطَهَّرُ ثُمَّ يُصَلِّيْ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ إِلَّا غُفِرَ لَهٗ
আবু বকর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বান্দা যদি কোন গুনাহের কাজ করে সাথে সাথে ওযু করে দু’রাকাত নামায আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। [তিরমিযী, হা/৩০০৬; মুসনাদুল জামে‘, হা/৭১৩৩; সহীহ ইবনে মাজাহ, হা/১১৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৮০; মিশকাত, হা/১৩২৪।]
রাতের শেষ ভাগে উঠে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে :
দু‘আ কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে, রাতের শেষ ভাগ। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে এসে বান্দাদেরকে দু‘আ করার জন্য আহবান করতে থাকেন। ফলে এ সময় যেসব বান্দা দু‘আ করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ কবুল করেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِىْ فَاَسْتَجِيْبَ لَهٗ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَاُعْطِيَهٗ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক রাতের যখন একতৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের মহান প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে যে আমার নিকট দু’আ করবে? আমি তার দু’আ কবুল করব; কে আছে যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দান করব; কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
আর এ কারণেই এটি মুমিনদের তথা জান্নাতী ব্যক্তিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
রাতের শেষাংশে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। (সূরা যারিয়াত- ১৮)
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানশীল এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
বেশি বেশি নিচের দু‘আটি পাঠ করবে :
যেসব ব্যক্তি নামায আদায় করে না এবং যেসব ব্যক্তি নামায আদায় করে- প্রত্যেকের জন্যই নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করা খুবই জরুরি। যারা নামায আদায় করে না তারা পড়বে নামায আদায় করার তাওফীক লাভের জন্য এবং যারা নামায আদায় করে, তারা পড়বে এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য। কেননা শয়তান তাদেরকে তা হতে বিচ্যুত করার জন্য সবর্দা ওঁৎ পেতে থাকে। আর এ কারণেই ইবরাহীম (আঃ) এ দু‘আটি পাঠ করতেন; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদেরকে এই দু‘আটি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ﴾
উচ্চারণ : রবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি দু‘আ কবুল করুন।
(সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
উমরী কাযা আদায় না করে বেশি বেশি নফল নামায আদায় করতে হবে :
যে ব্যক্তির নামায অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছুটে যায়, তার জন্য কাযা আছে। তার মনে অবহেলা না থাকলে আল্লাহ তার কাযা গ্রহণ করবেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করলে সে নামাযের কাযা নেই। সুতরাং উমরী কাযা অর্থাৎ অতীত জীবনের কাযা নামাযসমূহ আদায় করার কোন বিধান ইসলামে নেই। এটি বর্তমান যুগের একটি বিদআতী প্রথা। [আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত হা/৬০৩, টীকা-২।] এ ক্ষেত্রে তার উচিত হবে বিগত দিনের নামায ছুটে যাওয়ার কারণে খালেসভাবে তওবা করা এবং বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা। কেননা ফরয ইবাদাতের ঘাটতি হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর হুকুমে নফল ইবাদাতের নেকী দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُرَيْثِ بْنِ قَبِيْصَةَ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِيْنَةَ فَقُلْتُ اَللّٰهُمَّ يَسِّرْ لِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا قَالَ فَجَلَسْتُ اِلٰى اَبِىْ هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ اِنِّىْ سَاَلْتُ اللهَ اَنْ يَّرْزُقَنِىْ جَلِيْسًا صَالِحًا فَحَدِّثْنِىْ بِحَدِيْثٍ سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ - - لَعَلَّ اللهَ اَنْ يَنْفَعَنِىْ بِهٖ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : اِنَّ اَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهٖ صَلَاتُهٗ فَاِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ اَفْلَحَ وَاَنْجَحَ وَاِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ فَاِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيْضَتِهٖ شَىْءٌ قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا هَلْ لِعَبْدِىْ مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الْفَرِيْضَةِ ثُمَّ يَكُوْنُ سَائِرُ عَمَلِهٖ عَلٰى ذٰلِكَ
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার নামায সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার নামায সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয নামাযের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, ‘‘দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল নামায আছে কি না’’ যদি (তার আমলে নফল নামায) থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী, হা/৪১৩; নাসায়ী, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে যতটুকু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, সেটাকে একটু কাজে লাগান এবং নিচের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে কিছুটা ভাবুন।
১. নামায কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. নামায কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. নামায কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. নামায কি সাধারণ ব্যাপার যে, মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না?
৫. আল্লাহ কি বান্দার নামাযের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
১. নামায কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. নামায কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. নামায কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. নামায কি সাধারণ ব্যাপার যে, মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না?
৫. আল্লাহ কি বান্দার নামাযের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
১. না, হে ভাই-বোনেরা! নামায কোন বোঝা নয়, এটা আপনার কাছে রাখা আল্লাহ তা‘আলার একটি আমানত। আপনি এই আমানতকে হেফাযত করলে তিনি আপনাকে একটি বিরাট পুরস্কার দেবেন।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল, যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. নামায সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো নামাযটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, নামায পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. নামায দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবনবিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর নামায হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই নামাযই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে নামায না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে নামায না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. নামায কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং নামায হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। নামায নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে।
৫. আমাদের নামায দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া নামায আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন নামাযের প্রয়োজন। নামাযের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত নামায আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।
(সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর নামায ছাড়বেন না।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল, যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. নামায সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো নামাযটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, নামায পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. নামায দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবনবিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর নামায হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই নামাযই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে নামায না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে নামায না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. নামায কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং নামায হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। নামায নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে।
৫. আমাদের নামায দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া নামায আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন নামাযের প্রয়োজন। নামাযের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত নামায আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।
(সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর নামায ছাড়বেন না।
আপনি যদি মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সত্যবাদী হতে চান এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে চান তাহলে নামায পড়ুন।
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে নামায পড়ুন, নামায আপনাকে এসকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারাও নামায আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি নামায না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে নামায শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই নামায পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ নামায ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গযব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো নামায।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই নামায ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে নামায পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর নামাযের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে নামায আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে নামায ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে নামায না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে নামায পড়ুন, নামায আপনাকে এসকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারাও নামায আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি নামায না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে নামায শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই নামায পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ নামায ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গযব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো নামায।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই নামায ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে নামায পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর নামাযের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে নামায আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে নামায ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে নামায না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
শয়তান যেসকল ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তিতে ফেলে মানুষকে নামায থেকে বিরত রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অনেকে বলে, শুধু নামাযটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে নামায আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফর ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন নামায ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, নামাযের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর নামায না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু নামায না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। নামায পড়লেই আপনি নামায বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার নামায পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। নামায ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন নামায আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, নামায পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি নামায পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি নামায পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে নামাযের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার নামায নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি নামায না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন নামায পড়ে, এরপর আবার নামায ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন নামায পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা নামায পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
অনেকে বলে, শুধু নামাযটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে নামায আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফর ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন নামায ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, নামাযের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর নামায না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু নামায না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। নামায পড়লেই আপনি নামায বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার নামায পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। নামায ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন নামায আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, নামায পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি নামায পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি নামায পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে নামাযের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার নামায নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি নামায না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন নামায পড়ে, এরপর আবার নামায ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন নামায পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা নামায পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
নামায নষ্ট না করার জন্য আল্লাহ কতইনা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। এজন্য যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের হুশ-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নামায পড়তেই হবে। বিশেষ কোন অসুবিধার কারণে নামায ছুটে গেলে কাযা পড়ে নেবেন। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে নামাযের সময় চলে গেলে জাগ্রত হওয়ার পরেই তা পড়ে নিন, তাহলে আপনি এই গোনাহের শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন।
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে নামায পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তবে শুয়ে নামায পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই নামায আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই নামায পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা নামায পড়ব না। আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
সমাপ্ত
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে নামায পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তবে শুয়ে নামায পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই নামায আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই নামায পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা নামায পড়ব না। আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন