HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সাজদা থেকে (বসার পর) উঠার পদ্ধতি
লেখকঃ মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি
আল্-হামদু লিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। সলাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মাদ (স), তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের (রা) উপর।
ইসলামি বিধি-বিধান কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর নির্ভরশীল। এই দুই উৎসের বিরোধী বক্তব্য নিঃসন্দেহে বাতিল। তবে কখনো কখনো মনীষী-বিশেষের ভুল ইজতিহাদ মুসলিম সর্বসাধারণকে সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্ধের মধ্যে ফেলে দেয়। তখন ঐ শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি-বিশেষের ভুল-ত্রুটিগুলো তাঁর সমমনা বা আরো উচ্চতর মনীষীদের উপস্থাপনা দ্বারা বিশ্লেষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। এমনই একটি ভুল মাসআলার পর্যালোচনা এই বইয়ে উপস্থাপন করব, ইনশাআল্লাহ। মাসআলাটি হল, ‘‘সাজদা থেকে উঠার পর হাতের তালুর উপর ভর দিতে হবে, না মুষ্টির উপর?’’
এ বিষয়ে শায়েখ আলবানী (রহ) মুষ্টির উপর ভর দেয়ার হাদীসকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি এক্ষেত্রে জুমহুর মুহাদ্দিস- এমনকি খোদ তাঁরই অনুসৃত নিয়ম না মেনে স্ববিরোধী নিয়ম ও নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে বিষয়টি আলেমদের তাহক্বীক্বি সমালোচনার মধ্যে চলে এসেছে।
আমরা অনেক ভাইকে শায়খ আলবানী (রহ)-এর ‘সিফাতুস সালাতিন নাবিয়্যি (স)’ বইটির আলোকে মুষ্টির উপর ভর করার আমলটি করতে দেখছি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের অন্ধ অনুসরণের মানসিকতা দূর করার জন্যই এই তাহক্বীক্বি আলোচনাসমৃদ্ধ বইটির বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করছি।
এই বইটি ভাই মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি উর্দুতে লিখেছেন। শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) বইটির সম্পাদনা করেছেন। কিন্তু বইটির পিডিএফ ইন্টারনেট কপি এতটা বেশি অস্পষ্ট ছিল যে, তা থেকে পাঠ উদ্ধার করতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হই। ফলে পাঠ উদ্ধারে সংশয় থাকায় অনেক স্থানেই ত্রিবিন্দু (...) চিহ্ন রাখতে বাধ্য হয়েছি। রাবীদের নামের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো বিশেষভাবে প্রযোজ্য। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো স্পষ্ট কপি আমাদের কাছে পৌঁছে, তখন সম্পূর্ণ বইটির সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করব ইনঁশাআল্লাহ।
সবশেষে অনুবাদ ও ভাষাগত ব্যাপারে আমার ভুলত্রুটি হয়ে যাওয়াটা স্বীকার করছি। বিশেষ করে আরবি শব্দ ও পরিভাষাগত উচ্চারণ লেখার বিচ্যুতি থেকে যাওয়া স্বীকার করে নিচ্ছি। আশাকরি বিজ্ঞ পাঠক সেক্ষেত্রে মৌলিক আলোচনার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন এবং ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোনো বিজ্ঞবন্ধু সেগুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব এবং পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করব, ইনঁশাআল্লাহ।
কামাল আহমাদ,
২০ আব্দুল আজীজ রোড, পুরাতন কসবা,
কাজীপাড়া, যশোর-৭৪০০।
ই-মেইল: kahmed_islam05@yahoo.com
ইসলামি বিধি-বিধান কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর নির্ভরশীল। এই দুই উৎসের বিরোধী বক্তব্য নিঃসন্দেহে বাতিল। তবে কখনো কখনো মনীষী-বিশেষের ভুল ইজতিহাদ মুসলিম সর্বসাধারণকে সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্ধের মধ্যে ফেলে দেয়। তখন ঐ শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি-বিশেষের ভুল-ত্রুটিগুলো তাঁর সমমনা বা আরো উচ্চতর মনীষীদের উপস্থাপনা দ্বারা বিশ্লেষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। এমনই একটি ভুল মাসআলার পর্যালোচনা এই বইয়ে উপস্থাপন করব, ইনশাআল্লাহ। মাসআলাটি হল, ‘‘সাজদা থেকে উঠার পর হাতের তালুর উপর ভর দিতে হবে, না মুষ্টির উপর?’’
এ বিষয়ে শায়েখ আলবানী (রহ) মুষ্টির উপর ভর দেয়ার হাদীসকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি এক্ষেত্রে জুমহুর মুহাদ্দিস- এমনকি খোদ তাঁরই অনুসৃত নিয়ম না মেনে স্ববিরোধী নিয়ম ও নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে বিষয়টি আলেমদের তাহক্বীক্বি সমালোচনার মধ্যে চলে এসেছে।
আমরা অনেক ভাইকে শায়খ আলবানী (রহ)-এর ‘সিফাতুস সালাতিন নাবিয়্যি (স)’ বইটির আলোকে মুষ্টির উপর ভর করার আমলটি করতে দেখছি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের অন্ধ অনুসরণের মানসিকতা দূর করার জন্যই এই তাহক্বীক্বি আলোচনাসমৃদ্ধ বইটির বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করছি।
এই বইটি ভাই মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি উর্দুতে লিখেছেন। শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) বইটির সম্পাদনা করেছেন। কিন্তু বইটির পিডিএফ ইন্টারনেট কপি এতটা বেশি অস্পষ্ট ছিল যে, তা থেকে পাঠ উদ্ধার করতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হই। ফলে পাঠ উদ্ধারে সংশয় থাকায় অনেক স্থানেই ত্রিবিন্দু (...) চিহ্ন রাখতে বাধ্য হয়েছি। রাবীদের নামের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো বিশেষভাবে প্রযোজ্য। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো স্পষ্ট কপি আমাদের কাছে পৌঁছে, তখন সম্পূর্ণ বইটির সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করব ইনঁশাআল্লাহ।
সবশেষে অনুবাদ ও ভাষাগত ব্যাপারে আমার ভুলত্রুটি হয়ে যাওয়াটা স্বীকার করছি। বিশেষ করে আরবি শব্দ ও পরিভাষাগত উচ্চারণ লেখার বিচ্যুতি থেকে যাওয়া স্বীকার করে নিচ্ছি। আশাকরি বিজ্ঞ পাঠক সেক্ষেত্রে মৌলিক আলোচনার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন এবং ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোনো বিজ্ঞবন্ধু সেগুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব এবং পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করব, ইনঁশাআল্লাহ।
কামাল আহমাদ,
২০ আব্দুল আজীজ রোড, পুরাতন কসবা,
কাজীপাড়া, যশোর-৭৪০০।
ই-মেইল: kahmed_islam05@yahoo.com
الحمد لله رب العلمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين : أما بعد
আমার ভাই মুহাম্মাদ আলী সাহেব تعجين (তা‘জিন) বা ‘হাতের মুষ্টির উপর ভর করে উঠা’ সম্পর্কিত মাসআলাটির একটি তাহক্বীক্বসমৃদ্ধ রিসালা লিখেছেন। যা আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি।
সালাতে হাতের (তালুর) উপর ভর করে উঠতে হবে, না মুষ্টির উপর ভর করে উঠতে হবে? সহীহ হাদীস থেকে এটাই প্রমাণিত যে, সালাতে উভয় হাতের উপর ভর দিতে হবে। উসূলে হাদীসের আলোকে মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস যঈফ। কিছু আধুনিক আলেম উসূলে হাদীসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে হাদীসে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’–কে সহীহ বলার চেষ্টা করেছেন।
জনাব মুহাম্মাদ আলী ভাই এই রিসালাতে আলোচ্য হাদীস এবং বিরুদ্ধাবাদীদের আধুনিক ও স্ববিরোধী উসূল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি বিরোধীপক্ষের সন্দেহ-সংশয়ের বিস্তারিত দলিলভিত্তিক জবাব দিয়েছেন। আল্লাহ তা্আলা তাঁকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আর আমাদেরকে হাদীসের তাহক্বীক্ব ও উসূলে হাদীসের নিয়মনীতির প্রতি সুদৃঢ় থাকার তাওফিক্ব দান করুন। আমিন।।
যুবায়ের আলী যাঈ
০২/১০/১৯৯৯
আমার ভাই মুহাম্মাদ আলী সাহেব تعجين (তা‘জিন) বা ‘হাতের মুষ্টির উপর ভর করে উঠা’ সম্পর্কিত মাসআলাটির একটি তাহক্বীক্বসমৃদ্ধ রিসালা লিখেছেন। যা আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি।
সালাতে হাতের (তালুর) উপর ভর করে উঠতে হবে, না মুষ্টির উপর ভর করে উঠতে হবে? সহীহ হাদীস থেকে এটাই প্রমাণিত যে, সালাতে উভয় হাতের উপর ভর দিতে হবে। উসূলে হাদীসের আলোকে মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস যঈফ। কিছু আধুনিক আলেম উসূলে হাদীসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে হাদীসে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’–কে সহীহ বলার চেষ্টা করেছেন।
জনাব মুহাম্মাদ আলী ভাই এই রিসালাতে আলোচ্য হাদীস এবং বিরুদ্ধাবাদীদের আধুনিক ও স্ববিরোধী উসূল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি বিরোধীপক্ষের সন্দেহ-সংশয়ের বিস্তারিত দলিলভিত্তিক জবাব দিয়েছেন। আল্লাহ তা্আলা তাঁকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আর আমাদেরকে হাদীসের তাহক্বীক্ব ও উসূলে হাদীসের নিয়মনীতির প্রতি সুদৃঢ় থাকার তাওফিক্ব দান করুন। আমিন।।
যুবায়ের আলী যাঈ
০২/১০/১৯৯৯
[শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ তাঁর পত্রিকা ‘মাসিক আল-হাদীসে’র প্রশ্নোত্তরে মাসআলাটি সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। পাশাপাশি আমাদের আলোচ্য বইটি পড়ে নিতে বলেন। ঐ সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিচে তুলে ধরছি। (অনুবাদক)]
প্রশ্ন: জলসায়ে ইস্তিরাহাত (দ্বিতীয় সাজদার পর বিশ্রামের বৈঠক) ও তাশাহহুদের পর জমিনে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে উঠতে হবে, না হারাবী লিখিত ‘গারিবুল হাদীস’ গ্রন্থের বর্ণনা মোতাবেক মুষ্টিবদ্ধ করে ঠেস দিয়ে উঠতে হবে? [আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (আয-যঈফাহ ২/৩৯২)]
শায়েখ মহিব্বুল্লাহ শাহ আর-রাশেদি (রহ) লিখিত একটি প্রবন্ধ ‘মাসিক আল-ই‘তিসাম’-এ (২৫ নভেম্বর, ১৯৯৪) প্রকাশিত হয়। তিনি লিখেছেন: কামেল বিন তালহা’র বর্ণনাতে ‘ اعتمد على الأرض بيديه ’ বাক্যটির يدين (দুই হাত) শব্দটির দাবি كفين (দুই তালু) হওয়াই শ্রেয়। ব্যাপকসংখ্যক হাদীসে এটা পাওয়া যায়। মুষ্টিবদ্ধাবস্থায় মাটিতে ভর করে উঠার ক্ষেত্রে বাক্যটি হবে ‘ اعتمد على النبلة ’। সেক্ষেত্রে يدين (দুই হাত) শব্দটি ব্যবহৃত হতো না। সুতরাং হাতের তালু জমিনে ভর দিয়ে উঠতে হবে।
তিনি আরো লিখেছেন: হায়সামের বর্ণনাতে ‘ يعجن ’ শব্দটি অতিরিক্ত আছে। হায়সাম থেকে কামেল বিন তালহা অধিক সিক্বাহ। যেহেতু হায়সাম তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী থেকে ভিন্ন রকম বর্ণনা করেছেন, এ কারণে তার বর্ণনাটি শায। শায়েখ ইরশাদুল হক্ব আসারি ফায়সালাবাদী বলেছেন: হায়শামের বর্ণনাটি শায নয়। বরং ব্যাখ্যাসহ বৃদ্ধিসাধন। মুষ্টির উপর ভর করাতে উভয় হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আপনার তাহক্বীক্ব জানতে চাই?
জবাব: আবু ইসহাক্ব হারাবীর ‘গারিবুল হাদীস’-এর আলোচ্য বর্ণনাটিতে রাবী হায়সাম বিন ইমরান আদ-দামেশকি আছেন। তাকে ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া আর কেউ সিক্বাহ গণ্য করেননি। সুতরাং বর্ণনাকারী মাজহুলুল হাল। হাদীসের ছাত্র-মাত্রই একথা জানেন যে, মাজহুলুল হাল যদি মুনফারেদ (একাকী) হয়, সেক্ষেত্রে বর্ণনাটি যঈফ।
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি’র কিতাব التبيين في مسئلة التعجين (আত-তাবয়ীন ফি মাসআলাতিত তা‘জীন) ‘সালাতে উঠার সময় হাতের মুষ্টির উপর ভর করে উঠা প্রসঙ্গে ইলমি তাহক্বীক্ব’ (করাচি: মাকতাবাহ আহলে হাদীস ট্রাস্ট)।
উল্লেখ্য বর্ণনাটি যঈফ হওয়ার কারণ কেবল হায়সাম বিন ইমরানের মাজহুল হওয়া। পক্ষান্তরে কামেল বিন তালহা’র প্রতি একক বর্ণনা ও শায হওয়ার অভিযোগ বাতিল। হায়সাম বিন ইমরানের তাওসিক্বের সমর্থনে শায়েখ আলবানী (রহ) যেভাবে নিয়ম স্থির করেছেন তা কয়েকটি কারণে মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত)। যেমন:
সুনানে আবু দাউদের (হা/৩৪৮৯) একটি বর্ণনাতে এসেছে: مَنْ بَاعَ الْخَمْرَ فَلْيُشَقِّصِ الْخَنَازِيرَ “যে ব্যক্তি মদ বিক্রি করল সে যেন শূকরের গোশত প্রস্তুত করল।” –এর একজন রাবী উমার বিন বায়ান আত-তাগলিবি। তার থেকে একটি জামাআত হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। আবু হাতিম রাযি (রহ) বলেছেন: মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ)। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ) মাজহুলুল হাল বলে বর্ণনাটিকে যঈফ গণ্য করেছেন। [আয-যঈফাহ ১/৭০-৭১ পৃ. হা/৪৫৬৬]
তাহক্বীক্বের সারসংক্ষেপ: হাতের মুষ্টির উপর ভর দিয়ে উঠার হাদীসটি যঈফ। সুতরাং সাজদার সময় যেভাবে জমিনে হাত রাখা হয়, (দ্বিতীয় সাজদার বিশ্রামের বৈঠক বা তাশাহহুদ থেকে) উঠার সময়ও হাতে ভর দিয়ে উঠতে হবে।
[যুবায়ের আলী যাঈ, ‘মাসিক আল-হাদীস’ (পাকিস্তান), ৪২ সংখ্যা, শাওয়াল ১৪২৮ হিজরি/নভেম্বর ২০০৭, পৃ. ২৯-৩০]
প্রশ্ন: জলসায়ে ইস্তিরাহাত (দ্বিতীয় সাজদার পর বিশ্রামের বৈঠক) ও তাশাহহুদের পর জমিনে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে উঠতে হবে, না হারাবী লিখিত ‘গারিবুল হাদীস’ গ্রন্থের বর্ণনা মোতাবেক মুষ্টিবদ্ধ করে ঠেস দিয়ে উঠতে হবে? [আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (আয-যঈফাহ ২/৩৯২)]
শায়েখ মহিব্বুল্লাহ শাহ আর-রাশেদি (রহ) লিখিত একটি প্রবন্ধ ‘মাসিক আল-ই‘তিসাম’-এ (২৫ নভেম্বর, ১৯৯৪) প্রকাশিত হয়। তিনি লিখেছেন: কামেল বিন তালহা’র বর্ণনাতে ‘ اعتمد على الأرض بيديه ’ বাক্যটির يدين (দুই হাত) শব্দটির দাবি كفين (দুই তালু) হওয়াই শ্রেয়। ব্যাপকসংখ্যক হাদীসে এটা পাওয়া যায়। মুষ্টিবদ্ধাবস্থায় মাটিতে ভর করে উঠার ক্ষেত্রে বাক্যটি হবে ‘ اعتمد على النبلة ’। সেক্ষেত্রে يدين (দুই হাত) শব্দটি ব্যবহৃত হতো না। সুতরাং হাতের তালু জমিনে ভর দিয়ে উঠতে হবে।
তিনি আরো লিখেছেন: হায়সামের বর্ণনাতে ‘ يعجن ’ শব্দটি অতিরিক্ত আছে। হায়সাম থেকে কামেল বিন তালহা অধিক সিক্বাহ। যেহেতু হায়সাম তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী থেকে ভিন্ন রকম বর্ণনা করেছেন, এ কারণে তার বর্ণনাটি শায। শায়েখ ইরশাদুল হক্ব আসারি ফায়সালাবাদী বলেছেন: হায়শামের বর্ণনাটি শায নয়। বরং ব্যাখ্যাসহ বৃদ্ধিসাধন। মুষ্টির উপর ভর করাতে উভয় হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আপনার তাহক্বীক্ব জানতে চাই?
জবাব: আবু ইসহাক্ব হারাবীর ‘গারিবুল হাদীস’-এর আলোচ্য বর্ণনাটিতে রাবী হায়সাম বিন ইমরান আদ-দামেশকি আছেন। তাকে ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া আর কেউ সিক্বাহ গণ্য করেননি। সুতরাং বর্ণনাকারী মাজহুলুল হাল। হাদীসের ছাত্র-মাত্রই একথা জানেন যে, মাজহুলুল হাল যদি মুনফারেদ (একাকী) হয়, সেক্ষেত্রে বর্ণনাটি যঈফ।
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি’র কিতাব التبيين في مسئلة التعجين (আত-তাবয়ীন ফি মাসআলাতিত তা‘জীন) ‘সালাতে উঠার সময় হাতের মুষ্টির উপর ভর করে উঠা প্রসঙ্গে ইলমি তাহক্বীক্ব’ (করাচি: মাকতাবাহ আহলে হাদীস ট্রাস্ট)।
উল্লেখ্য বর্ণনাটি যঈফ হওয়ার কারণ কেবল হায়সাম বিন ইমরানের মাজহুল হওয়া। পক্ষান্তরে কামেল বিন তালহা’র প্রতি একক বর্ণনা ও শায হওয়ার অভিযোগ বাতিল। হায়সাম বিন ইমরানের তাওসিক্বের সমর্থনে শায়েখ আলবানী (রহ) যেভাবে নিয়ম স্থির করেছেন তা কয়েকটি কারণে মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত)। যেমন:
সুনানে আবু দাউদের (হা/৩৪৮৯) একটি বর্ণনাতে এসেছে: مَنْ بَاعَ الْخَمْرَ فَلْيُشَقِّصِ الْخَنَازِيرَ “যে ব্যক্তি মদ বিক্রি করল সে যেন শূকরের গোশত প্রস্তুত করল।” –এর একজন রাবী উমার বিন বায়ান আত-তাগলিবি। তার থেকে একটি জামাআত হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। আবু হাতিম রাযি (রহ) বলেছেন: মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ)। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ) মাজহুলুল হাল বলে বর্ণনাটিকে যঈফ গণ্য করেছেন। [আয-যঈফাহ ১/৭০-৭১ পৃ. হা/৪৫৬৬]
তাহক্বীক্বের সারসংক্ষেপ: হাতের মুষ্টির উপর ভর দিয়ে উঠার হাদীসটি যঈফ। সুতরাং সাজদার সময় যেভাবে জমিনে হাত রাখা হয়, (দ্বিতীয় সাজদার বিশ্রামের বৈঠক বা তাশাহহুদ থেকে) উঠার সময়ও হাতে ভর দিয়ে উঠতে হবে।
[যুবায়ের আলী যাঈ, ‘মাসিক আল-হাদীস’ (পাকিস্তান), ৪২ সংখ্যা, শাওয়াল ১৪২৮ হিজরি/নভেম্বর ২০০৭, পৃ. ২৯-৩০]
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى صحبه ومن اهتدي بهداه : أما بعد
ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর ব্যক্তিত্বকে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি ঐ সমস্ত আলেমদের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণ জীবনকে ইলমে হাদীসের জন্য ওয়াক্বফ করেছিলেন। তিনি কমবেশি একশ’ কিতাবের লেখক, যা থেকে বিশ্বব্যাপী আলেমগণ উপকৃত হচ্ছেন।
আল্লামা আলবানী (রহ) আসমাউর রিজালের উপর পূর্ণাঙ্গ দখল রাখতেন। এমনকি আহলে ইলম হাদীস সহীহ ও যঈফের ব্যাপারে তাঁর উপর নির্ভর করেন, বরং অনেকে সেটাকে দলিলও গণ্য করেন।
কিন্তু উক্ত দিকগুলো থাকা সত্ত্বেও এ বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মুহাক্কিক্বগণের দৃষ্টিতে শায়েখ আলবানী (রহ)-এরও ভুল হয়েছে। সেগুলো আলেমগণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো (সরল দৃষ্টিতে বললে) ভ্রান্তি নয় বরং (ভুল হিসেবে) মানবিক বৈশিষ্ট্যের একটি দিক। অনেক বড় বড় ইমাম যেমন– ইমাম মালেক (রহ), ইমাম শু’বাহ (রহ), ইমাম ওয়াক্বী ‘(রহ) প্রমুখও ত্রুটি ও মানবিক ভুল থেকে মুক্ত ছিলেন না। (মিযানুল ই‘তিদাল ৪/৩০১-৩০২) বরং ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ও ইমাম যাহাবী (রহ) তো এভাবে বলেছেন যে, কে আছে যে মানবিক ত্রুটি থেকে মুক্ত? (মুক্বাদ্দামায় লিসানুল মিযান ১/১৭, মিযানুল ই’তিদাল ৩/১৪০)
শায়েখ আলবানী (রহ)-এর ভুলগুলোর মধ্যে একটি ভুল হলো হাদীসে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’ সম্পর্কে। একটি শায নিয়মের উপর ভিত্তি করে তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। বরং এক্ষেত্রে আপত্তির কয়েকটি জবাব দেয়ারও চেষ্টা করেছেন।
এক্ষেত্রে ফিতনার সময় যেখানে তাহক্বীক্ব সম্পূর্ণ বিদায় নিয়েছে, আলেমদের তাহক্বীক্বের উপর পুনঃতাহক্বীক্ব ছাড়াই আস্থা রাখা হচ্ছে। মাসায়েলের তাহক্বিক্বের ভিত্তি দলিল হওয়ার বদলে ব্যক্তিবিশেষের অনুসরণ স্থান করে নিয়েছে। ফলে ব্যক্তিপূজার এ যামানাতে ঐ সমস্ত নব্য উসূলগুলোর তাহক্বীক্ব করে সর্বসাধারণ ও আলেমদের কাছে সুস্পষ্ট করাটা জরুরি ছিল। আমাদের আলোচ্য তাহক্বীক্বের উদ্দেশ্যও এটাই।
রিসালাহ التبيين في مسئلة التعجين (আত-তাবিইয়িন ফি মাসআলাতিত তা‘জিন) ‘সালাতে উঠার সময় মুষ্টির উপর ভর দিয়ে উঠা’-এর ইলমি তাহক্বীক্ব-এর প্রথম সংস্করণটি প্রকৃতপক্ষে একজন প্রশ্নকারীর সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, যা মাকতাবাহ আহলেহাদীস ট্রাস্ট, করাচি থেকে ১৯৯৭ ঈসাব্দে প্রকাশিত হয়। উক্ত রিসালাটি ইলমি হালাক্বাগুলোতে খুবই প্রশংসিত হয়। ফলে কয়েকজন আলেম ও অসংখ্য অনুরাগী গুরুত্বারোপ করেন যে, রিসালাটি আরো দলিল-প্রমাণসহ সুসজ্জিত করে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হোক। ফলে সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রতি সম্মানপূর্বক আলোচ্য দ্বিতীয় সংস্করণটি (বর্ধিত আকারে) প্রকাশ করছি।
এই রিসালাটি الدين النصيحة ‘দ্বীন নসিহত’ হাদীসটির আলোকে শায়েখ আলবানী (রহ) কর্তৃক হাদীসে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’-কে হাসান হিসেবে গণ্য করার নিয়ম-নীতিগুলো, উসূলে হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের নীতিমালার আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে শায়েখের বর্ণিত নিয়ম-নীতিগুলোর অসারতা ও আলোচ্য হাদীসটি যঈফ হওয়ার বিষয়টিকে প্রমাণ করা হয়েছে।
এই রিসালাতে যেখানে ব্যাপক ইলমি আলোচনা ও দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে অহেতুক আলোচনা বর্জন করেছি। এ ছাড়া প্রথম সংস্করণের ভুলগুলোর সংশোধন করেছি।
শেষাবধি لاَ يَشْكُرُ اللَّهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ ‘যে মানুষের শোকর আদায় করে না, সে আল্লাহ তাআলার শোকরকারী নয়’ (আবু দাউদ হা/৪৮১১) হাদীসটির আলোকে রিসালাটি প্রকাশের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি। বিশেষভাবে জনাব হাফেয যুবায়ের আলী যাঈয়ের প্রতি– যিনি রিসালাটির সম্পাদনা করে বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। এ ছাড়া জনাব প্রফেসর ইবরাহিম ভাট্টি সাহেব– যিনি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন। জনাব ড. আবু জাবির আব্দুল্লাহ দামানাভি সাহেব, মুহতারাম ভাই আবু আমির আসগর আলী সাহেব প্রমুখ তাখরিজের (টীকা ও সূত্র উল্লেখের) কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।
جزا هم الله جميعا أحسن الجزاء
সবশেষে পাঠকদের কাছে, বিশেষভাবে আলেমদের কাছে নিবেদন– যদি তাঁরা কোথাও এই রিসালাটির ভুল দেখতে পান, তবে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে প্রকাশ করব।
وهو سامع قريب مجيب
وصلى الله وسلم على نبيه محمد وعلى اله وصحبه اجمعين
খাদেমুল ইলম ওয়াল উলামা
আবু মুনিব মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি
৩০ শা‘বান ১৪২০ হিজরি/ ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯
ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর ব্যক্তিত্বকে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি ঐ সমস্ত আলেমদের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণ জীবনকে ইলমে হাদীসের জন্য ওয়াক্বফ করেছিলেন। তিনি কমবেশি একশ’ কিতাবের লেখক, যা থেকে বিশ্বব্যাপী আলেমগণ উপকৃত হচ্ছেন।
আল্লামা আলবানী (রহ) আসমাউর রিজালের উপর পূর্ণাঙ্গ দখল রাখতেন। এমনকি আহলে ইলম হাদীস সহীহ ও যঈফের ব্যাপারে তাঁর উপর নির্ভর করেন, বরং অনেকে সেটাকে দলিলও গণ্য করেন।
কিন্তু উক্ত দিকগুলো থাকা সত্ত্বেও এ বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মুহাক্কিক্বগণের দৃষ্টিতে শায়েখ আলবানী (রহ)-এরও ভুল হয়েছে। সেগুলো আলেমগণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো (সরল দৃষ্টিতে বললে) ভ্রান্তি নয় বরং (ভুল হিসেবে) মানবিক বৈশিষ্ট্যের একটি দিক। অনেক বড় বড় ইমাম যেমন– ইমাম মালেক (রহ), ইমাম শু’বাহ (রহ), ইমাম ওয়াক্বী ‘(রহ) প্রমুখও ত্রুটি ও মানবিক ভুল থেকে মুক্ত ছিলেন না। (মিযানুল ই‘তিদাল ৪/৩০১-৩০২) বরং ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ও ইমাম যাহাবী (রহ) তো এভাবে বলেছেন যে, কে আছে যে মানবিক ত্রুটি থেকে মুক্ত? (মুক্বাদ্দামায় লিসানুল মিযান ১/১৭, মিযানুল ই’তিদাল ৩/১৪০)
শায়েখ আলবানী (রহ)-এর ভুলগুলোর মধ্যে একটি ভুল হলো হাদীসে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’ সম্পর্কে। একটি শায নিয়মের উপর ভিত্তি করে তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। বরং এক্ষেত্রে আপত্তির কয়েকটি জবাব দেয়ারও চেষ্টা করেছেন।
এক্ষেত্রে ফিতনার সময় যেখানে তাহক্বীক্ব সম্পূর্ণ বিদায় নিয়েছে, আলেমদের তাহক্বীক্বের উপর পুনঃতাহক্বীক্ব ছাড়াই আস্থা রাখা হচ্ছে। মাসায়েলের তাহক্বিক্বের ভিত্তি দলিল হওয়ার বদলে ব্যক্তিবিশেষের অনুসরণ স্থান করে নিয়েছে। ফলে ব্যক্তিপূজার এ যামানাতে ঐ সমস্ত নব্য উসূলগুলোর তাহক্বীক্ব করে সর্বসাধারণ ও আলেমদের কাছে সুস্পষ্ট করাটা জরুরি ছিল। আমাদের আলোচ্য তাহক্বীক্বের উদ্দেশ্যও এটাই।
রিসালাহ التبيين في مسئلة التعجين (আত-তাবিইয়িন ফি মাসআলাতিত তা‘জিন) ‘সালাতে উঠার সময় মুষ্টির উপর ভর দিয়ে উঠা’-এর ইলমি তাহক্বীক্ব-এর প্রথম সংস্করণটি প্রকৃতপক্ষে একজন প্রশ্নকারীর সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, যা মাকতাবাহ আহলেহাদীস ট্রাস্ট, করাচি থেকে ১৯৯৭ ঈসাব্দে প্রকাশিত হয়। উক্ত রিসালাটি ইলমি হালাক্বাগুলোতে খুবই প্রশংসিত হয়। ফলে কয়েকজন আলেম ও অসংখ্য অনুরাগী গুরুত্বারোপ করেন যে, রিসালাটি আরো দলিল-প্রমাণসহ সুসজ্জিত করে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হোক। ফলে সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রতি সম্মানপূর্বক আলোচ্য দ্বিতীয় সংস্করণটি (বর্ধিত আকারে) প্রকাশ করছি।
এই রিসালাটি الدين النصيحة ‘দ্বীন নসিহত’ হাদীসটির আলোকে শায়েখ আলবানী (রহ) কর্তৃক হাদীসে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’-কে হাসান হিসেবে গণ্য করার নিয়ম-নীতিগুলো, উসূলে হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের নীতিমালার আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে শায়েখের বর্ণিত নিয়ম-নীতিগুলোর অসারতা ও আলোচ্য হাদীসটি যঈফ হওয়ার বিষয়টিকে প্রমাণ করা হয়েছে।
এই রিসালাতে যেখানে ব্যাপক ইলমি আলোচনা ও দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে অহেতুক আলোচনা বর্জন করেছি। এ ছাড়া প্রথম সংস্করণের ভুলগুলোর সংশোধন করেছি।
শেষাবধি لاَ يَشْكُرُ اللَّهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ ‘যে মানুষের শোকর আদায় করে না, সে আল্লাহ তাআলার শোকরকারী নয়’ (আবু দাউদ হা/৪৮১১) হাদীসটির আলোকে রিসালাটি প্রকাশের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি। বিশেষভাবে জনাব হাফেয যুবায়ের আলী যাঈয়ের প্রতি– যিনি রিসালাটির সম্পাদনা করে বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। এ ছাড়া জনাব প্রফেসর ইবরাহিম ভাট্টি সাহেব– যিনি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন। জনাব ড. আবু জাবির আব্দুল্লাহ দামানাভি সাহেব, মুহতারাম ভাই আবু আমির আসগর আলী সাহেব প্রমুখ তাখরিজের (টীকা ও সূত্র উল্লেখের) কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন।
جزا هم الله جميعا أحسن الجزاء
সবশেষে পাঠকদের কাছে, বিশেষভাবে আলেমদের কাছে নিবেদন– যদি তাঁরা কোথাও এই রিসালাটির ভুল দেখতে পান, তবে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে প্রকাশ করব।
وهو سامع قريب مجيب
وصلى الله وسلم على نبيه محمد وعلى اله وصحبه اجمعين
খাদেমুল ইলম ওয়াল উলামা
আবু মুনিব মুহাম্মাদ আলী খাসখিলি
৩০ শা‘বান ১৪২০ হিজরি/ ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯
ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর প্রদত্ত নীতিমালার ভিত্তিতে হাদীসে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’-কে হাসান হিসেবে গণ্য করা সম্পর্কিত এটি একটি তাত্ত্বিক ইলমি পর্যালোচনা। আলোচনার বিভিন্ন স্থানে উসূলে হাদীস ও জারাহ-তা’দিলের নিয়ম-নীতি বারবার উল্লিখিত হয়েছে। এ কারণে এ সম্পর্কিত পরিভাষাগুলোর সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা ও বিবরণ উল্লেখ করা সংগত মনে করি। ফলে সবধরনের পাঠক এ থেকে উপকৃত হবেন।
সহীহ হাদীস: যে হাদীসের (সনদের) সমস্ত রাবী আদল (ন্যায়নিষ্ঠ), কামেল যবত (পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিশক্তি) সম্পন্ন; যার সনদ মুত্তাসিল, যা শায নয় এবং যার মধ্যে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই।
আদল রাবী: যিনি মুসলিম, আক্বলসম্পন্ন, ন্যায়পরায়ণ মেজাজসম্পন্ন ও কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকেন।
রাবীর যবত: যিনি দৃঢ় স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তিনি যে হাদীস শুনেছেন তা নিজের সিনাতে সংরক্ষণ করেছেন কিংবা কিতাববদ্ধ করেছেন।
শায: একজন সিক্বাহ রাবী কর্তৃক তার থেকে অধিক সিক্বাহসম্পন্ন রাবীর বিরোধী হাদীস বর্ণনা করা। অর্থাৎ যদি সিক্বাহ রাবীর বর্ণনার ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির বিরোধী বর্ণনা করেন যার যবত (স্মৃতিশক্তি) বা (সমর্থিত বর্ণনার) সংখ্যাধিক্য বা অন্য কারণে প্রাধান্য পায়– সেক্ষেত্রে (কম প্রাধান্যপ্রাপ্ত) হাদীসটি শায গণ্য হয়। পক্ষান্তরে অপেক্ষাকৃত অধিক সিক্বাহ ও যবতের অধিকারী রাবীর হাদীস মাহফুয।
শায বৈশিষ্ট্যটি সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে।
সনদ শায হওয়ার উদাহরণ হলো, সিক্বাহ রাবী একটি বর্ণনা মওক্বুফ হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণ) বর্ণনাটি মারফু হিসেবে উল্লেখ করে। এক্ষেত্রে যিনি মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তার হাদীসটি শায এবং যিনি (বা যারা) মারফু‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তার (বা তাদের) হাদীসটি মাহফুয গণ্য হবে।
মতন শায হওয়ার উদাহরণ হলো, একজন সিক্বাহ রাবী মতনে এমনভাবে বৃদ্ধি করেছেন, অথচ তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণ) ঐ বৃদ্ধিসহ বর্ণনা করেননি। এক্ষেত্রে একক সিক্বাহ রাবীর মতনটির মধ্যে ১) এককভাবে বৃদ্ধি ঘটা, ২) নিজের থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণের) বিরোধী বর্ণনা হওয়ায়, তার বর্ণনাটি শায ও মারজুহ (প্রত্যাখ্যাত)।
বি: দ্র: শায বর্ণনা যঈফ হাদীস হিসেবে গণ্য হয়।
হাসান হাদীস: যে হাদীসের (সনদের) সমস্ত রাবী আদল, সনদটি মুত্তাসিল; কিন্তু তার স্মৃতিশক্তিতে কিছুটা দুর্বলতা আছে।
যঈফ হাদীস: যে হাদীসে সহীহ ও হাসান হাদীসের শর্তের কোনো একটি বা সবগুলো শর্তই অনুপস্থিত। কিংবা ঐ সমস্ত হাদীস যা হাসান হাদীসের স্তরে পৌঁছাতে অক্ষম, সেটাই যঈফ হাদীস। তা ছাড়া এর অনেক স্তর ও প্রকারভেদ আছে।
মুনকার: যে হাদীসের সনদে যঈফ রাবী আছে, যিনি সিক্বাহ রাবীর বিরোধী বর্ণনা করেন। কিংবা রাবীর ব্যাপক ভুল প্রকাশ পায়। কিংবা ব্যাপক গাফিলতি ও ফিসক্ব প্রকাশ পায়, সেক্ষেত্রেও হাদীসটিকে মুনকার বলে।
গরিব: যে হাদীস কেবল একজন রাবী বর্ণনা করে। কিংবা সনদের ক্ষেত্রে কেবল একজন বর্ণনাকারী থাকে।
বি: দ্র: মুনকার হাদীস যঈফ হাদীসের মধ্যে গণ্য। পক্ষান্তরে গরিব হাদীসের ভিত্তি এর রাবীদের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যদি সনদটির সমস্ত রাবী সিক্বাহ ও সদুক্ব হয় এবং তাতে অন্য কোনো ত্রুটি পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে বর্ণনাটি মু’তাবার (গ্রহণযোগ্য) হয়।
মাজহুলুল হাল বা মাসতুর: ঐ রাবী যার থেকে দুই বা ততোধিক রাবী বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার সম্পর্কে তাওসিক্ব (গ্রহণযোগ্যতা) বা তাজরিহ (অভিযোগ) জানা যায় না।
মাজহুলুল হাল বা মাসতুর রাবীর বর্ণনা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত মতামত রয়েছে:
ক) জুমহুর মুহাদ্দিস তার বর্ণনা রদ (অগ্রহণযোগ্য) গণ্য করেছেন।
খ) ইমাম বাযযার (রহ) ও ইমাম দারাকুতনি (রহ)-এর সাথে এ কথা সম্পর্কিত করা হয় যে, তাঁরা এ ধরনের রাবীর বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। [এ ছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর মতে মাজহুলুল হাল বা মাসতুর রাবী সিক্বাহ।]
গ) হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ও ইমামুল হারামাইন (রহ)-ও এমন রাবীর হাদীস গ্রহণ করেছেন, যদিও-বা হাদীসের রাবীকে জানা না যায়। [যাওয়াবিত জারাহ ওয়াত তা’দিল পৃ. ৬৫-৬৮, শরহে নুখবাহ পৃ. ১০০-১০১]
ইমাম দারাকুতনির যে মত উল্লেখ করা হয়েছে, তা ইমাম সাখাবি (রহ) ইমাম দারাকুতনির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। [ফাতহুল মুগিস ১/৩৫১-৫২] কিন্তু আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক উক্ত সম্পৃক্ততা সঠিক নয়।
ইমাম দারাকুতনির (রহ) যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় তা নিম্নরূপ:
وارتفاع اسم الجهالة عنه أن يروي عنه رجلان فصاعداً، فإذا كان هذه صفته ارتفع عنه اسم الجهالة، وصار حينئذ معروفاً، ...
“রাবীর জাহালাত তখন মোচন হবে যখন তার থেকে দুই জন বা ততোধিক রাবী বর্ণনাটি উল্লেখ করে। যখন তার এমন অবস্থা পাওয়া যায়, তখন তার জাহালাত মোচন হয় এবং সে মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ) হয়।” [সুনানে দারাকুতনি – কিতাবুল হুদুদ ওয়া দিয়াত ওয়া গয়রুহ ৩/১৭৪]
আর যে বর্ণনাটি ইমাম সাখাভি (রহ) ‘দারাকুতনি’র সূত্রে বর্ণনা করেছেন সেটি নিম্নরূপ:
من روى عنه ثقتان فقد ارتفعت جهالته وثبتت عدالته .
“যে রাবী দু’জন সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণনা করে, তার জাহালাত মোচন হয় এবং তার আদালত প্রমাণিত হয়।” [ফতহুল মুগিস ১/৩২২]
ইমাম সাখাভি (রহ) ইমাম দারাকুতনির সাথে উক্ত উদ্ধৃতি সম্পৃক্ত করে তাঁর মসলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না, ইমাম দারাকুতনির এই উদ্ধৃতিটি কোথায়? আমরা তাঁর প্রকৃত উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছি। এ থেকে প্রমাণ হয়, কোনো মাজহুল রাবী থেকে দু’জন বা ততোধিক সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করলে তার জাহালাত মোচন হয় এবং ঐ রাবী মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ) হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু তার আদালত (বিশ্বস্ততা) প্রমাণিত হয় না। কেননা, রাবী মা‘রুফ হওয়া ও আদল হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন– ইমাম খতিব বাগদাদী (রহ) বলেন:
أقل ما ترتفع به الجهالة ان يروي عن الرجل اثنان فصاعدا من المشهورين بالعلم الا انه لا يثبت له حكم العدالة بروا يتهما
“প্রাধান্যপ্রাপ্ত উক্তি হলো, দু’জনের বর্ণনার দ্বারা জাহালাত মোচন হয় না, মাশহুর আলেমদের কাছে এটা ত্রুটিযুক্ত। কেননা তাদের দু’জনের বর্ণনা দ্বারা আদালত প্রমাণিত হয় না।” [লিসানুল মিযান ১/১৪, আল-কিফায়াহ ফি ইলমির রিওয়ায়াত লিলখতিব বাগদাদী পৃ. ৮৮]
তা ছাড়া ইমাম দারাকুতনি এ ধরনের কয়েকটি বর্ণনাকে মাজহুল হিসেবে গণ্য করেছেন, যেখানে দুজন বা ততোধিক রাবীর বর্ণনা আছে। যেমন:
১) উবায়দ বিন সালমান আল-কালবি। [তাহযিব ৭/৬১]
২) হাশেম বিন ক্বারান । [তা’লিক্বাতে দারাকুতনি আলাল মাজরিহিন পৃ. ৯৮, কিতাবুয যুআফা ওয়াল মাতরুকিন পৃ. ৮৮]
৩) আব্দুর রহমান বিন রাযিন। [আবু দাউদ ১/১৯৮, মিযানুল ই’তিদাল ২/৫৬০]
৪) মূসা বিন ইয়াসার। [তা’লিক্বাতে দারাকুতনি পৃ. ১৩৪]
৫) আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া আল-বারলাসি। [মিযানুল ই’তিদাল ২/৫২৪]
৬) মুসা বিন হিলাল আল-আবদি। [লিসানুল মিযান ৬/১৩৬]
৭) আবু সুরাহ। [কিতাবুয যুআফা ওয়াল মাতরুকিন পৃ. ১৮৫, আত-তাহযিব ১২/১৩৬]
৮) আবু গতফান। [সুনানে দারাকুতনি ২/৮৩, মিযান ৪/৫৬১, আত-তাহযিব ১২/১৩৬]
৯) যহির বিন ইবাদ। [মিযানুল ই‘তিদাল ২/৮৩]
উক্ত উদাহরণগুলোতে কেবল ইমাম সাখাভির উপস্থাপনা খণ্ডনই হয় না, বরং ইমাম দারাকুতনির মসলকটিও সুস্পষ্ট হয়।
বাকি থাকল হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর মসলক যে, মাজহুলুল হাল রাবী সম্পর্কে তাওয়াক্কুফ (চুপ) থাকা। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, তাওয়াক্কুফ দ্বারা অর্থ হলো, বর্ণনাটি মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত)। কেননা স্বয়ং হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাওয়াক্কুফ সম্পর্কে লিখেছেন:
فإذا توقف عن العمل به صار كالمردود لا لثبوت صفة الرد بل لكونه لم توجد فيه صفة القبول
“বর্ণনাটির উপর আমল করা থেকে তাওয়াক্কুফ (চুপ) করার দাবি হলো সেটি মারদুদ। মারদুদের দাবি এটা নয় যে, তার সিফাত (বৈশিষ্ট্য) রদ, বরং সে এমন যে, তার মধ্যে ক্ববুল (গ্রহণ) করার সিফাত নেই।” [শরহে নুখবাতুল ফিকার পৃ. ২০ (বৈরুত)]
এটাই আব্দুল আযিয বিন মুহাম্মাদ (উস্তাদ, আল-মাসাঈদ বিকুল্লিয়াতিল হাদীসুশ শরীফ ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ, আল-জামিআতুল ইসলামিয়্যাহ বিল-মাদিনাহ মুনাওয়াওয়ারাহ) নিজের “কিতাব যওয়াবিতুল জারাহ ওয়াত তা’দিল” ৮৬ পৃষ্ঠার টীকাতে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং মাজহুল ও মাসতুর রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মসলকই গ্রহণযোগ্য দলিল। والله تعالى اعلم
তারজিহ বা প্রাধান্যদানের নীতিসমূহ: যদি দু’টি সহীহ কিন্তু পরস্পর বিরোধী বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে একটিকে রাজেহ (প্রাধান্যপ্রাপ্ত) ও অন্যটিকে মারজুহ (আপত্তিযুক্ত) হিসেবে গণ্য করতে হয়। মুহাদ্দিসগণ তারজিহ দেয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি:
১) উভয় বর্ণনার কোনো একজন রাবী সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী হওয়া।
২) উভয় বর্ণনার কোনো একটির বর্ণনাকারীর সংখ্যা অধিক হওয়া।
৩) যে বর্ণনাটির মুতাবে‘ (অনুসারী) বেশি সেটি রাজেহ (প্রাধান্যপ্রাপ্ত)।
৪) উভয় বর্ণনার কোনো একটি গায়ের মুখতালাফ ফিহি (বিতর্কমুক্ত), অর্থাৎ যেটির (সনদ ও মতন) বিতর্কিত সেটি মারজুহ (প্রত্যাখ্যাত)।
৫) শক্তিশালী সনদযুক্তটি রাজেহ (প্রাধান্য) পাবে।
৬) কোনো একটি বর্ণনার রাবীগণ অন্যটির (বিরোধী) বর্ণনার রাবীদের থেকে অধিক সিক্বাহ।
এ সম্পর্কে আরো জানার জন্য দেখুন: ইমাম শওকানির ‘ইরশাদুল ফুহুল’ ২/৩৮১, কওয়ায়িদুত তাহদিস লিল-কাসেমি পৃ. ৩১৩-৩১৫, তাওযিহুল ক্বারী ফি ফাতহুল বারি লিলহাফিয সানাউল্লাহ যাহেদি পৃ. ১৩৩-৩৮ প্রভৃতি।
بسم الله الرحمن الرحيم
ان الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور انفسنا وسيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له و أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله أما بعد :
জেনে রাখা জরুরি যে, রসূলুল্লাহ (স) যখন দ্বিতীয় সাজদা শেষ করতেন তখন বসতেন। অতঃপর হাত জমিনের উপর রাখতেন ও হাতের সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতেন।
সহীহ হাদীস: যে হাদীসের (সনদের) সমস্ত রাবী আদল (ন্যায়নিষ্ঠ), কামেল যবত (পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিশক্তি) সম্পন্ন; যার সনদ মুত্তাসিল, যা শায নয় এবং যার মধ্যে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই।
আদল রাবী: যিনি মুসলিম, আক্বলসম্পন্ন, ন্যায়পরায়ণ মেজাজসম্পন্ন ও কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকেন।
রাবীর যবত: যিনি দৃঢ় স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তিনি যে হাদীস শুনেছেন তা নিজের সিনাতে সংরক্ষণ করেছেন কিংবা কিতাববদ্ধ করেছেন।
শায: একজন সিক্বাহ রাবী কর্তৃক তার থেকে অধিক সিক্বাহসম্পন্ন রাবীর বিরোধী হাদীস বর্ণনা করা। অর্থাৎ যদি সিক্বাহ রাবীর বর্ণনার ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির বিরোধী বর্ণনা করেন যার যবত (স্মৃতিশক্তি) বা (সমর্থিত বর্ণনার) সংখ্যাধিক্য বা অন্য কারণে প্রাধান্য পায়– সেক্ষেত্রে (কম প্রাধান্যপ্রাপ্ত) হাদীসটি শায গণ্য হয়। পক্ষান্তরে অপেক্ষাকৃত অধিক সিক্বাহ ও যবতের অধিকারী রাবীর হাদীস মাহফুয।
শায বৈশিষ্ট্যটি সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে।
সনদ শায হওয়ার উদাহরণ হলো, সিক্বাহ রাবী একটি বর্ণনা মওক্বুফ হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণ) বর্ণনাটি মারফু হিসেবে উল্লেখ করে। এক্ষেত্রে যিনি মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তার হাদীসটি শায এবং যিনি (বা যারা) মারফু‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তার (বা তাদের) হাদীসটি মাহফুয গণ্য হবে।
মতন শায হওয়ার উদাহরণ হলো, একজন সিক্বাহ রাবী মতনে এমনভাবে বৃদ্ধি করেছেন, অথচ তার থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণ) ঐ বৃদ্ধিসহ বর্ণনা করেননি। এক্ষেত্রে একক সিক্বাহ রাবীর মতনটির মধ্যে ১) এককভাবে বৃদ্ধি ঘটা, ২) নিজের থেকে অধিক সিক্বাহ রাবী (বা রাবীগণের) বিরোধী বর্ণনা হওয়ায়, তার বর্ণনাটি শায ও মারজুহ (প্রত্যাখ্যাত)।
বি: দ্র: শায বর্ণনা যঈফ হাদীস হিসেবে গণ্য হয়।
হাসান হাদীস: যে হাদীসের (সনদের) সমস্ত রাবী আদল, সনদটি মুত্তাসিল; কিন্তু তার স্মৃতিশক্তিতে কিছুটা দুর্বলতা আছে।
যঈফ হাদীস: যে হাদীসে সহীহ ও হাসান হাদীসের শর্তের কোনো একটি বা সবগুলো শর্তই অনুপস্থিত। কিংবা ঐ সমস্ত হাদীস যা হাসান হাদীসের স্তরে পৌঁছাতে অক্ষম, সেটাই যঈফ হাদীস। তা ছাড়া এর অনেক স্তর ও প্রকারভেদ আছে।
মুনকার: যে হাদীসের সনদে যঈফ রাবী আছে, যিনি সিক্বাহ রাবীর বিরোধী বর্ণনা করেন। কিংবা রাবীর ব্যাপক ভুল প্রকাশ পায়। কিংবা ব্যাপক গাফিলতি ও ফিসক্ব প্রকাশ পায়, সেক্ষেত্রেও হাদীসটিকে মুনকার বলে।
গরিব: যে হাদীস কেবল একজন রাবী বর্ণনা করে। কিংবা সনদের ক্ষেত্রে কেবল একজন বর্ণনাকারী থাকে।
বি: দ্র: মুনকার হাদীস যঈফ হাদীসের মধ্যে গণ্য। পক্ষান্তরে গরিব হাদীসের ভিত্তি এর রাবীদের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যদি সনদটির সমস্ত রাবী সিক্বাহ ও সদুক্ব হয় এবং তাতে অন্য কোনো ত্রুটি পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে বর্ণনাটি মু’তাবার (গ্রহণযোগ্য) হয়।
মাজহুলুল হাল বা মাসতুর: ঐ রাবী যার থেকে দুই বা ততোধিক রাবী বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার সম্পর্কে তাওসিক্ব (গ্রহণযোগ্যতা) বা তাজরিহ (অভিযোগ) জানা যায় না।
মাজহুলুল হাল বা মাসতুর রাবীর বর্ণনা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত মতামত রয়েছে:
ক) জুমহুর মুহাদ্দিস তার বর্ণনা রদ (অগ্রহণযোগ্য) গণ্য করেছেন।
খ) ইমাম বাযযার (রহ) ও ইমাম দারাকুতনি (রহ)-এর সাথে এ কথা সম্পর্কিত করা হয় যে, তাঁরা এ ধরনের রাবীর বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। [এ ছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর মতে মাজহুলুল হাল বা মাসতুর রাবী সিক্বাহ।]
গ) হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ও ইমামুল হারামাইন (রহ)-ও এমন রাবীর হাদীস গ্রহণ করেছেন, যদিও-বা হাদীসের রাবীকে জানা না যায়। [যাওয়াবিত জারাহ ওয়াত তা’দিল পৃ. ৬৫-৬৮, শরহে নুখবাহ পৃ. ১০০-১০১]
ইমাম দারাকুতনির যে মত উল্লেখ করা হয়েছে, তা ইমাম সাখাবি (রহ) ইমাম দারাকুতনির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। [ফাতহুল মুগিস ১/৩৫১-৫২] কিন্তু আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক উক্ত সম্পৃক্ততা সঠিক নয়।
ইমাম দারাকুতনির (রহ) যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় তা নিম্নরূপ:
وارتفاع اسم الجهالة عنه أن يروي عنه رجلان فصاعداً، فإذا كان هذه صفته ارتفع عنه اسم الجهالة، وصار حينئذ معروفاً، ...
“রাবীর জাহালাত তখন মোচন হবে যখন তার থেকে দুই জন বা ততোধিক রাবী বর্ণনাটি উল্লেখ করে। যখন তার এমন অবস্থা পাওয়া যায়, তখন তার জাহালাত মোচন হয় এবং সে মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ) হয়।” [সুনানে দারাকুতনি – কিতাবুল হুদুদ ওয়া দিয়াত ওয়া গয়রুহ ৩/১৭৪]
আর যে বর্ণনাটি ইমাম সাখাভি (রহ) ‘দারাকুতনি’র সূত্রে বর্ণনা করেছেন সেটি নিম্নরূপ:
من روى عنه ثقتان فقد ارتفعت جهالته وثبتت عدالته .
“যে রাবী দু’জন সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণনা করে, তার জাহালাত মোচন হয় এবং তার আদালত প্রমাণিত হয়।” [ফতহুল মুগিস ১/৩২২]
ইমাম সাখাভি (রহ) ইমাম দারাকুতনির সাথে উক্ত উদ্ধৃতি সম্পৃক্ত করে তাঁর মসলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না, ইমাম দারাকুতনির এই উদ্ধৃতিটি কোথায়? আমরা তাঁর প্রকৃত উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছি। এ থেকে প্রমাণ হয়, কোনো মাজহুল রাবী থেকে দু’জন বা ততোধিক সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করলে তার জাহালাত মোচন হয় এবং ঐ রাবী মা‘রুফ (প্রসিদ্ধ) হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু তার আদালত (বিশ্বস্ততা) প্রমাণিত হয় না। কেননা, রাবী মা‘রুফ হওয়া ও আদল হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন– ইমাম খতিব বাগদাদী (রহ) বলেন:
أقل ما ترتفع به الجهالة ان يروي عن الرجل اثنان فصاعدا من المشهورين بالعلم الا انه لا يثبت له حكم العدالة بروا يتهما
“প্রাধান্যপ্রাপ্ত উক্তি হলো, দু’জনের বর্ণনার দ্বারা জাহালাত মোচন হয় না, মাশহুর আলেমদের কাছে এটা ত্রুটিযুক্ত। কেননা তাদের দু’জনের বর্ণনা দ্বারা আদালত প্রমাণিত হয় না।” [লিসানুল মিযান ১/১৪, আল-কিফায়াহ ফি ইলমির রিওয়ায়াত লিলখতিব বাগদাদী পৃ. ৮৮]
তা ছাড়া ইমাম দারাকুতনি এ ধরনের কয়েকটি বর্ণনাকে মাজহুল হিসেবে গণ্য করেছেন, যেখানে দুজন বা ততোধিক রাবীর বর্ণনা আছে। যেমন:
১) উবায়দ বিন সালমান আল-কালবি। [তাহযিব ৭/৬১]
২) হাশেম বিন ক্বারান । [তা’লিক্বাতে দারাকুতনি আলাল মাজরিহিন পৃ. ৯৮, কিতাবুয যুআফা ওয়াল মাতরুকিন পৃ. ৮৮]
৩) আব্দুর রহমান বিন রাযিন। [আবু দাউদ ১/১৯৮, মিযানুল ই’তিদাল ২/৫৬০]
৪) মূসা বিন ইয়াসার। [তা’লিক্বাতে দারাকুতনি পৃ. ১৩৪]
৫) আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া আল-বারলাসি। [মিযানুল ই’তিদাল ২/৫২৪]
৬) মুসা বিন হিলাল আল-আবদি। [লিসানুল মিযান ৬/১৩৬]
৭) আবু সুরাহ। [কিতাবুয যুআফা ওয়াল মাতরুকিন পৃ. ১৮৫, আত-তাহযিব ১২/১৩৬]
৮) আবু গতফান। [সুনানে দারাকুতনি ২/৮৩, মিযান ৪/৫৬১, আত-তাহযিব ১২/১৩৬]
৯) যহির বিন ইবাদ। [মিযানুল ই‘তিদাল ২/৮৩]
উক্ত উদাহরণগুলোতে কেবল ইমাম সাখাভির উপস্থাপনা খণ্ডনই হয় না, বরং ইমাম দারাকুতনির মসলকটিও সুস্পষ্ট হয়।
বাকি থাকল হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর মসলক যে, মাজহুলুল হাল রাবী সম্পর্কে তাওয়াক্কুফ (চুপ) থাকা। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, তাওয়াক্কুফ দ্বারা অর্থ হলো, বর্ণনাটি মারদুদ (প্রত্যাখ্যাত)। কেননা স্বয়ং হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাওয়াক্কুফ সম্পর্কে লিখেছেন:
فإذا توقف عن العمل به صار كالمردود لا لثبوت صفة الرد بل لكونه لم توجد فيه صفة القبول
“বর্ণনাটির উপর আমল করা থেকে তাওয়াক্কুফ (চুপ) করার দাবি হলো সেটি মারদুদ। মারদুদের দাবি এটা নয় যে, তার সিফাত (বৈশিষ্ট্য) রদ, বরং সে এমন যে, তার মধ্যে ক্ববুল (গ্রহণ) করার সিফাত নেই।” [শরহে নুখবাতুল ফিকার পৃ. ২০ (বৈরুত)]
এটাই আব্দুল আযিয বিন মুহাম্মাদ (উস্তাদ, আল-মাসাঈদ বিকুল্লিয়াতিল হাদীসুশ শরীফ ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ, আল-জামিআতুল ইসলামিয়্যাহ বিল-মাদিনাহ মুনাওয়াওয়ারাহ) নিজের “কিতাব যওয়াবিতুল জারাহ ওয়াত তা’দিল” ৮৬ পৃষ্ঠার টীকাতে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং মাজহুল ও মাসতুর রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মসলকই গ্রহণযোগ্য দলিল। والله تعالى اعلم
তারজিহ বা প্রাধান্যদানের নীতিসমূহ: যদি দু’টি সহীহ কিন্তু পরস্পর বিরোধী বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে একটিকে রাজেহ (প্রাধান্যপ্রাপ্ত) ও অন্যটিকে মারজুহ (আপত্তিযুক্ত) হিসেবে গণ্য করতে হয়। মুহাদ্দিসগণ তারজিহ দেয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি:
১) উভয় বর্ণনার কোনো একজন রাবী সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী হওয়া।
২) উভয় বর্ণনার কোনো একটির বর্ণনাকারীর সংখ্যা অধিক হওয়া।
৩) যে বর্ণনাটির মুতাবে‘ (অনুসারী) বেশি সেটি রাজেহ (প্রাধান্যপ্রাপ্ত)।
৪) উভয় বর্ণনার কোনো একটি গায়ের মুখতালাফ ফিহি (বিতর্কমুক্ত), অর্থাৎ যেটির (সনদ ও মতন) বিতর্কিত সেটি মারজুহ (প্রত্যাখ্যাত)।
৫) শক্তিশালী সনদযুক্তটি রাজেহ (প্রাধান্য) পাবে।
৬) কোনো একটি বর্ণনার রাবীগণ অন্যটির (বিরোধী) বর্ণনার রাবীদের থেকে অধিক সিক্বাহ।
এ সম্পর্কে আরো জানার জন্য দেখুন: ইমাম শওকানির ‘ইরশাদুল ফুহুল’ ২/৩৮১, কওয়ায়িদুত তাহদিস লিল-কাসেমি পৃ. ৩১৩-৩১৫, তাওযিহুল ক্বারী ফি ফাতহুল বারি লিলহাফিয সানাউল্লাহ যাহেদি পৃ. ১৩৩-৩৮ প্রভৃতি।
بسم الله الرحمن الرحيم
ان الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور انفسنا وسيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له و أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله أما بعد :
জেনে রাখা জরুরি যে, রসূলুল্লাহ (স) যখন দ্বিতীয় সাজদা শেষ করতেন তখন বসতেন। অতঃপর হাত জমিনের উপর রাখতেন ও হাতের সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতেন।
সাহাবি মালিক বিন হুয়াইরিস (রা) রসূলুল্লাহ (স) -এর সালাতের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন:
وإذا رفَعَ رأسَهُ عَنِ السَّجدَةِ الثانيَةِ جلَسَ ، واعْتَمَدَ على الأرْضِ ثم قامَ
“যখন তিনি (স) দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠতেন তখন বসতে, আর জমিনের উপর ভর করতেন এরপর দাঁড়াতেন।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুস সালাত, হা/৮২৪ باب كيف يعتمد على الارض اذا قام من الركعة ]
আরো দেখুন: বায়হাক্বির ‘সুনানুল কুবরা’ (২/১২৩, ১৩৮), ইমাম শাফেঈর ‘কিতাবুল উম্ম’ (১/১০১), সুনানে নাসাঈ (২/২৩৪/১১৫৩)।
রসূলুল্লাহ (স)-এর মোবারকময় অভ্যাস এমনটি ছিল যে, তিনি বিজোড় রাকআত শেষে বসতেন। কেননা মালিক বিন হুয়াইরিস (রা) বর্ণনা করেছেন:
أنَّه رأى النبيَّ ﷺ يُصلِّي، فإذا كان في وِتْرٍ مِن صلاتِهِ لم يَنهَض حتى يَستَوِيَ قاعِدًا
“তিনি নবী (স)-কে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যখন তিনি বিজোড় রাকআত পড়তেন তখন দাঁড়াতে না, যতক্ষণ না সোজা হয়ে বসতেন।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুস সালাত হা/৮২৩ باب من استوى قاعدا في وتر من صلاته ثم نهض ]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) শেষোক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন:
والغرض منه هنا ذكر الاعتماد على الأرض عند القيام من السجود أو الجلوس
“ইমাম বুখারী (রহ) এই হাদীসটি এখানে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, সাজদা বা জলসা থেকে দাঁড়ানোর সময় মাটিতে ভর দিয়ে উঠতে হবে।” [ফতহুল বারী – অনুচ্ছেদ: باب من استوى قاعدا في وتر من صلاته ثم نهض ]
বিষয়টি সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-এর বর্ণনাতে আরো সুস্পষ্ট হয়। আযরাক্ব বিন ক্বায়েস বলেন:
رأيتُ ابنَ عُمَرَ إذا قام من الركعتينِ اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ ، فقلتُ لِوَلَدِهِ ولجُلَسَائِهِ : لَعَلَّهُ يفعلُ هذا من الكِبَرِ ؟ قالوا : لا ، ولكن هكذا يكونُ .
“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-কে দেখেছি, যখন তিনি দ্বিতীয় রাকআতের পরে দাঁড়াতেন তখন জমিনের উপর নিজের হাত দ্বারা ভর দিতেন। আমি তাঁর পুত্র ও সাথীদের জিজ্ঞাসা করলাম: তিনি কি বয়স হওয়ার কারণে এমনটি করলেন? তারা বললেন: না, তাঁর আমলটিই এমন।” [বায়হাক্বীর ‘সুনানুল কুবরা’ ২/১৩৫; এর সনদটি জাইয়েদ, এর বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ (আয-যঈফাহ ২/৩৯২)]
অনুরূপ নাফে (রহ) সাহাবি ইবনে উমার (রা) সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন:
أنه كان يقوم إذا رفع رأسه من السجدة معتمدا على يديه قبل أن يرفعهما
“যখন তিনি সাজদা থেকে মাথা উঠানোর পর দাঁড়াতেন তখন তার হাত দুটিকে উঠানোর পূর্বে এর উপর ভর দিতেন।” [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব ২/১৭৮-৭৯, এর সনদ সহীহ]
উক্ত বর্ণনাগুলো থেকে সুস্পষ্ট হলো, পরবর্তী রাকআতে দাঁড়ানোর পূর্বে উভয় হাতকে জমিনে ভর করে উঠতে হবে। অনুরূপভাবে যখন সাজদাতে যাবে, তখন প্রথমে হাতকে জমিনে রাখতে হবে। অতঃপর জমিনে হাঁটু রাখতে হবে এবং সাজদা করতে হবে। আর এটাই সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত।
এ মর্মে তাবেঈ নাফে‘ (রহ) ইবনে উমার (রা) সম্পর্কে বলেন:
أنه كان يضع يديه قبل ركبتيه، وقال : كان النبي ﷺ يفعل ذلك،
“তিনি (রা) তাঁর হাতদুটি রাখতেন হাঁটুর পূর্বে। আর তিনি বলতেন: নবী (স) এভাবেই করতেন।” [সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ১/৩১৯, আল-মুস্তাদরাক ১/২২৬; ইমাম হাকেম (রহ) বলেন: হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তিনি তা আনেননি; আর যাহাবী এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন]
অপর একটি হাদীসে সাহাবি আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন:
إذا سجد أحدكم فلا يبرك كما يبرك البعير وليضع يديه قبل ركبتيه .
“যখন তোমরা কেউ সাজদা করো তখন উটের মতো (হাত) রেখো না, বরং হাতদুটিকে হাঁটুর পূর্বের রাখো।” [আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৩৯৮, নাসাঈ ২/২০৭, দারেমি ১/৩৪৭, মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ৩/২৭৬। আলবানী এর সনদকে সহীহ বলেছেন (তাহ. মিশকাত ১/২৮২)। তিনি অন্যত্র বলেছেন: এটি আবু দাউদ, নাসাঈ ও একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। এর সনদ জাইয়েদ যেভাবে নওয়াবি (প্রসিদ্ধ: নববী) ও যুরক্বানি বলেছেন। আর ইবনে হাজার (রহ) শক্তিশালী বলেছেন। (তামামুল মিন্নাহ ১৯৪ পৃ.)]
وإذا رفَعَ رأسَهُ عَنِ السَّجدَةِ الثانيَةِ جلَسَ ، واعْتَمَدَ على الأرْضِ ثم قامَ
“যখন তিনি (স) দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠতেন তখন বসতে, আর জমিনের উপর ভর করতেন এরপর দাঁড়াতেন।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুস সালাত, হা/৮২৪ باب كيف يعتمد على الارض اذا قام من الركعة ]
আরো দেখুন: বায়হাক্বির ‘সুনানুল কুবরা’ (২/১২৩, ১৩৮), ইমাম শাফেঈর ‘কিতাবুল উম্ম’ (১/১০১), সুনানে নাসাঈ (২/২৩৪/১১৫৩)।
রসূলুল্লাহ (স)-এর মোবারকময় অভ্যাস এমনটি ছিল যে, তিনি বিজোড় রাকআত শেষে বসতেন। কেননা মালিক বিন হুয়াইরিস (রা) বর্ণনা করেছেন:
أنَّه رأى النبيَّ ﷺ يُصلِّي، فإذا كان في وِتْرٍ مِن صلاتِهِ لم يَنهَض حتى يَستَوِيَ قاعِدًا
“তিনি নবী (স)-কে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যখন তিনি বিজোড় রাকআত পড়তেন তখন দাঁড়াতে না, যতক্ষণ না সোজা হয়ে বসতেন।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুস সালাত হা/৮২৩ باب من استوى قاعدا في وتر من صلاته ثم نهض ]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) শেষোক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন:
والغرض منه هنا ذكر الاعتماد على الأرض عند القيام من السجود أو الجلوس
“ইমাম বুখারী (রহ) এই হাদীসটি এখানে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, সাজদা বা জলসা থেকে দাঁড়ানোর সময় মাটিতে ভর দিয়ে উঠতে হবে।” [ফতহুল বারী – অনুচ্ছেদ: باب من استوى قاعدا في وتر من صلاته ثم نهض ]
বিষয়টি সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-এর বর্ণনাতে আরো সুস্পষ্ট হয়। আযরাক্ব বিন ক্বায়েস বলেন:
رأيتُ ابنَ عُمَرَ إذا قام من الركعتينِ اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ ، فقلتُ لِوَلَدِهِ ولجُلَسَائِهِ : لَعَلَّهُ يفعلُ هذا من الكِبَرِ ؟ قالوا : لا ، ولكن هكذا يكونُ .
“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-কে দেখেছি, যখন তিনি দ্বিতীয় রাকআতের পরে দাঁড়াতেন তখন জমিনের উপর নিজের হাত দ্বারা ভর দিতেন। আমি তাঁর পুত্র ও সাথীদের জিজ্ঞাসা করলাম: তিনি কি বয়স হওয়ার কারণে এমনটি করলেন? তারা বললেন: না, তাঁর আমলটিই এমন।” [বায়হাক্বীর ‘সুনানুল কুবরা’ ২/১৩৫; এর সনদটি জাইয়েদ, এর বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ (আয-যঈফাহ ২/৩৯২)]
অনুরূপ নাফে (রহ) সাহাবি ইবনে উমার (রা) সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন:
أنه كان يقوم إذا رفع رأسه من السجدة معتمدا على يديه قبل أن يرفعهما
“যখন তিনি সাজদা থেকে মাথা উঠানোর পর দাঁড়াতেন তখন তার হাত দুটিকে উঠানোর পূর্বে এর উপর ভর দিতেন।” [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব ২/১৭৮-৭৯, এর সনদ সহীহ]
উক্ত বর্ণনাগুলো থেকে সুস্পষ্ট হলো, পরবর্তী রাকআতে দাঁড়ানোর পূর্বে উভয় হাতকে জমিনে ভর করে উঠতে হবে। অনুরূপভাবে যখন সাজদাতে যাবে, তখন প্রথমে হাতকে জমিনে রাখতে হবে। অতঃপর জমিনে হাঁটু রাখতে হবে এবং সাজদা করতে হবে। আর এটাই সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত।
এ মর্মে তাবেঈ নাফে‘ (রহ) ইবনে উমার (রা) সম্পর্কে বলেন:
أنه كان يضع يديه قبل ركبتيه، وقال : كان النبي ﷺ يفعل ذلك،
“তিনি (রা) তাঁর হাতদুটি রাখতেন হাঁটুর পূর্বে। আর তিনি বলতেন: নবী (স) এভাবেই করতেন।” [সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ১/৩১৯, আল-মুস্তাদরাক ১/২২৬; ইমাম হাকেম (রহ) বলেন: হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তিনি তা আনেননি; আর যাহাবী এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন]
অপর একটি হাদীসে সাহাবি আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন:
إذا سجد أحدكم فلا يبرك كما يبرك البعير وليضع يديه قبل ركبتيه .
“যখন তোমরা কেউ সাজদা করো তখন উটের মতো (হাত) রেখো না, বরং হাতদুটিকে হাঁটুর পূর্বের রাখো।” [আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৩৯৮, নাসাঈ ২/২০৭, দারেমি ১/৩৪৭, মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ৩/২৭৬। আলবানী এর সনদকে সহীহ বলেছেন (তাহ. মিশকাত ১/২৮২)। তিনি অন্যত্র বলেছেন: এটি আবু দাউদ, নাসাঈ ও একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। এর সনদ জাইয়েদ যেভাবে নওয়াবি (প্রসিদ্ধ: নববী) ও যুরক্বানি বলেছেন। আর ইবনে হাজার (রহ) শক্তিশালী বলেছেন। (তামামুল মিন্নাহ ১৯৪ পৃ.)]
উক্ত হাদীসগুলোতে জমিনে হাত রাখার দ্বারা হাতের পাতার সাহায্য নেয়াকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এ বিষয়টি অনেকগুলো হাদীস থেকে সুস্পষ্ট হয়। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি পেশ করছি:
ক) সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
أُمِرتُ أن أسجدَ على سبعةٍ أعظُمٍ، على الجبهةِ ... واليدينِ، والركبتينِ، وأطرافِ القدمينِ ... ألخ الحديث
“আমাকে সাতটি অঙ্গে সাজদা করতে হুকুম দেয়া হয়েছে– কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটুর, দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগ।…” [সহীহ বুখারী হা/৮১২, সহীহ মুসলিম ৪/৪৫৩, নাসাঈ ২/২০৯ (১০৯৭), দারেমি ১/৩৪৬; মিশকাত হা/৮৮৭]
এখানে দুই হাত বলতে দুটি হাতের তালুকে জমিনে রাখার অর্থ হবে। কেননা সহীহ মুসলিমের (৪/৪৫২) একটি বর্ণনাতে الكفيْن والركبتيْن والقدميْن والجبهةِ ‘দুই হাতের তালু, দুই হাঁটুর, দুই পা ও কপাল’ শব্দগুলো এসেছে। অর্থাৎ হাদীসটি দ্বারা اليدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে الكفيْن (দুই হাতের তালু)।
খ) সাহাবি ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী (স)-এর সালাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে : فلما سَجَدَ ، سَجَدَ بين كَفَّيْه “যখন তিনি সাজদা করতেন, সাজদা করতে দুই হাতের তালুর মাঝে।” [সহীহ মুসলিম ৪/৩৫৭-৫৮]
এই হাদীসটিতেও اليدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে الكفيْن (দুই হাতের তালু)।
গ) সাহাবি আম্মার বিন ইয়াসার (রা) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী (স)-এর তায়াম্মুম শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এই হাদীসটির শেষে বর্ণিত হয়েছে:
ثم ضربَ بيديه الأرضَ ضربةً واحدةً ، ثم مَسَحَ الشمالَ على اليمينِ ، وظاهرَ كفَيْه ، ووجهَه
“অতঃপর তিনি হাতদুটিকে একবার মাটিতে মারলেন। এরপর মাসাহ করলেন বামকে ডানের উপর রেখে উভয় হাতের পাতার উপরিভাগ ও মুখমণ্ডলকে।” [সহীহ মুসলিম – তায়াম্মুম অধ্যায়]
উক্ত হাদীসে بيديه ‘তাঁর দুই হাত’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি অপর হাদীসে দুই হাতের তালু হিসেবে ব্যাখ্যা এসেছে। তা নিম্নরূপ:
فضرَب النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم بكفَّيه الأرضَ ، ونفَخ فيهما ، ثم مسَح بهما وجهَه وكفَّيه
“অতঃপর নবী (স) নিজের দুটি হাতের তালুকে মাটিতে মারলেন এবং সে দুটিতে ফুঁক দিলেন। তারপর দুই হাত দ্বারা তাঁর মুখমণ্ডল ও দুই তালু মাসাহ করলেন।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯]
অর্থাৎ তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে।
ঘ) যখন রসূলুল্লাহ (স) পুরুষদের থেকে বাইয়াত নিতেন, তখন তাঁর হাতের উপর নিতেন। কিন্তু নারীদের থেকে সব-সময় মুখে বাইয়াত নিতেন। কখনই তিনি তাদের হাত ছুঁতেন না। যেমন– আয়েশা (রা) বলেন:
ما مَسَّت يدُ رسولِ اللَّهِ ﷺ يدَ امرأةٍ إلَّا امرَأةً يملِكُها
“রসূলুল্লাহ (স)-এর হাত নিজের মহিলা (স্ত্রী) ছাড়া অন্য কোনো নারীর হাতে লাগেনি।” [সহীহ বুখারী মাআ ফতহুল বারি ১৩/২১৬, সহীহ মুসলিম ১৩/১৩-১৪, তিরিমিযী মাআ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির ৫/৩৮৩, ইবনে মাজাহ পৃ. ২১৬, মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ১৭/৩৫১]
এখানে হাত বলতে হাতের পাতাকে বুঝানো হয়েছে, যেভাবে সহীহ মুসলিম (১৩/১৩-১৪) ও ইবনে মাজাহতে (২১৬ পৃ.) ব্যাখ্যা এসেছে।
ঙ) মুসআব বিন সা‘দের হাদীসেও তাতবিক্ব তথা রুকু‘ অবস্থাতে দুই হাতকে মিলিয়ে রানের মধ্যভাগে রাখার বর্ণনা এসেছে। অবশ্য এই আমলটি পরবর্তী সময়ে মানসুখ হয়। তখন রসূলুল্লাহ (স) হাতকে হাঁটুতে রাখতে নির্দেশ দেন। যেমন– সা‘দ (রা) নিজের পুত্র মুসআবকে বলেছেন:
كنا نفعَلُه فنُهِينا عنه ، وأُمِرْنا أن نضعَ أيديَنا على الرُّكَبِ .
“আমাদেরকে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়, আর আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় আমরা যেন আমাদের হাতকে হাঁটুর উপর রাখি।” [সহীহ বুখারী মাআ ফতহুল বারি ২/৩১৯, সহীহ মুসলিম ৫/২০-২১, আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৪১৭-১৮]
এই হাদীসটিতে أيديَنا (আমাদের দুই হাত) আছে। আবার অপর হাদীসে كفيك (তোমার দুই হাতের তালু) শব্দ এসেছে। [দ্র. সুনানে নাসাঈ ২/১৮৫]
এ থেকে সুস্পষ্ট হয়, এখানেও হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে।
কিছু উদাহরণে يديَن ‘দুই হাত’-এর ব্যাখ্যা হিসেবে ‘দুই তালু’ হুবহু আসেনি, কিন্তু মৌলিক দাবির ভিত্তিতে كفين ‘দুই তালু’-কেই বুঝানো হয়েছে। যেমন একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যখন রসূলুল্লাহ (স) ইস্তিনজা প্রভৃতি থেকে অবসর নিতেন তখন ثم مسح يده على الارض ‘নিজের হাত জমিনে ঘষতেন।’ [আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৩৯, নাসাঈ ১/৪৫, ইবনে মাজাহ ৩০ পৃ., দারেমি ১/১৮৩ – আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/১১৬/৩৬০)]
এই হাদীসের ‘হাত’ শব্দের পরিপূরক হিসেবে কোনো হাদীসে ‘হাতের তালু’ শব্দ ব্যবহৃত হয়নি (আল্লাহই সর্বজ্ঞ)। কিন্তু প্রকাশ্য অর্থ থেকে বুঝা যায়, ইস্তিনজা প্রভৃতির শেষে মাটিতে সম্পূর্ণ বাহুসহ হাত ঘষা হয় না। বরং হাতের তালুকে মাটিতে ঘষা হয়। সুতরাং সুস্পষ্টভাবে কোনো হাদীসে ব্যাখ্যা না থাকলেও এখানে ‘হাত’ বলতে ‘হাতের তালুকে’ উদ্দেশ্য করাটা নিশ্চিত হয়।
অপর একটি উদাহরণ হলো, মুসাফাহা। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন তার ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে তখন সে কি তার প্রতি ঝুঁকবে? নবী (স) বললেন: না। সে জিজ্ঞাসা করল, তার গালে কি চুমা দেবে? তিনি (স) বললেন: না। তখন সে বলল: فأخذ بيده ويصافحه؟ قال نعم ‘তা হলে কি সে তার হাতটি ধরবে ও মুসাফাহ করবে।’ নবী (স) বললেন: হাঁ। [তিরমিযী মাআ আহমাদ শাকির ৫/৭০-৭১, তিরমিযী (রহ) বলেন: হাদীসটি হাসান। মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ১৭/৩৪৭, সুনানে কুবরা ৭/১০০। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (তাহক্বীক্ব মিশকাত ৩/১৩২৮/৪৬৮০)]
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) লিখেছেন:
المصافحة هي مفاعلة من الصفحة والمراد بها الإفضاء بصفحة اليد إلى صفحة اليد
“মুসাফাহ শব্দটি বাবে ‘মুফাআলাহ’ থেকে এবং صفحة -এর মুশতাক্ব ফে‘ল মাসদারের সিগাহ। এর অর্থ– কোনো ব্যক্তির একটি হাতের তালু অপর ব্যক্তির একটি হাতের তালুর সাথে মিলানো।” [ফতহুল বারি ১১/৫৭]
পূর্বের হাদীসেও হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে। এ রকম আরো অনেক উদাহরণ পেশ করা যায়, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাত বলতে সাধারণভাবে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে। তা ছাড়া অভিধানের গ্রন্থে যেমন – আল্লামাহ ওয়াহিদুয যামানের মুনজিদ, লুগাতুল হাদীস প্রভৃতিতে হাতের এই সাধারণ অর্থ নেয়া হয়েছে।
উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, সাজদা বা তাশাহহুদ থেকে উঠার সময় দুই হাতকে জমিনে ভর করে উঠতে হবে। এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে ঐকমত্য যে, সাজদাতে যাওয়ার সময় হাতের তালুকে জমিনে রাখতে হবে। আর যখন এই বিষয়টি প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট, তখন উঠার সময় সেটা কেন ভিন্ন নিয়মে হবে?
ক) সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
أُمِرتُ أن أسجدَ على سبعةٍ أعظُمٍ، على الجبهةِ ... واليدينِ، والركبتينِ، وأطرافِ القدمينِ ... ألخ الحديث
“আমাকে সাতটি অঙ্গে সাজদা করতে হুকুম দেয়া হয়েছে– কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটুর, দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগ।…” [সহীহ বুখারী হা/৮১২, সহীহ মুসলিম ৪/৪৫৩, নাসাঈ ২/২০৯ (১০৯৭), দারেমি ১/৩৪৬; মিশকাত হা/৮৮৭]
এখানে দুই হাত বলতে দুটি হাতের তালুকে জমিনে রাখার অর্থ হবে। কেননা সহীহ মুসলিমের (৪/৪৫২) একটি বর্ণনাতে الكفيْن والركبتيْن والقدميْن والجبهةِ ‘দুই হাতের তালু, দুই হাঁটুর, দুই পা ও কপাল’ শব্দগুলো এসেছে। অর্থাৎ হাদীসটি দ্বারা اليدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে الكفيْن (দুই হাতের তালু)।
খ) সাহাবি ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী (স)-এর সালাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে : فلما سَجَدَ ، سَجَدَ بين كَفَّيْه “যখন তিনি সাজদা করতেন, সাজদা করতে দুই হাতের তালুর মাঝে।” [সহীহ মুসলিম ৪/৩৫৭-৫৮]
এই হাদীসটিতেও اليدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে الكفيْن (দুই হাতের তালু)।
গ) সাহাবি আম্মার বিন ইয়াসার (রা) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী (স)-এর তায়াম্মুম শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এই হাদীসটির শেষে বর্ণিত হয়েছে:
ثم ضربَ بيديه الأرضَ ضربةً واحدةً ، ثم مَسَحَ الشمالَ على اليمينِ ، وظاهرَ كفَيْه ، ووجهَه
“অতঃপর তিনি হাতদুটিকে একবার মাটিতে মারলেন। এরপর মাসাহ করলেন বামকে ডানের উপর রেখে উভয় হাতের পাতার উপরিভাগ ও মুখমণ্ডলকে।” [সহীহ মুসলিম – তায়াম্মুম অধ্যায়]
উক্ত হাদীসে بيديه ‘তাঁর দুই হাত’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি অপর হাদীসে দুই হাতের তালু হিসেবে ব্যাখ্যা এসেছে। তা নিম্নরূপ:
فضرَب النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم بكفَّيه الأرضَ ، ونفَخ فيهما ، ثم مسَح بهما وجهَه وكفَّيه
“অতঃপর নবী (স) নিজের দুটি হাতের তালুকে মাটিতে মারলেন এবং সে দুটিতে ফুঁক দিলেন। তারপর দুই হাত দ্বারা তাঁর মুখমণ্ডল ও দুই তালু মাসাহ করলেন।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯]
অর্থাৎ তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে।
ঘ) যখন রসূলুল্লাহ (স) পুরুষদের থেকে বাইয়াত নিতেন, তখন তাঁর হাতের উপর নিতেন। কিন্তু নারীদের থেকে সব-সময় মুখে বাইয়াত নিতেন। কখনই তিনি তাদের হাত ছুঁতেন না। যেমন– আয়েশা (রা) বলেন:
ما مَسَّت يدُ رسولِ اللَّهِ ﷺ يدَ امرأةٍ إلَّا امرَأةً يملِكُها
“রসূলুল্লাহ (স)-এর হাত নিজের মহিলা (স্ত্রী) ছাড়া অন্য কোনো নারীর হাতে লাগেনি।” [সহীহ বুখারী মাআ ফতহুল বারি ১৩/২১৬, সহীহ মুসলিম ১৩/১৩-১৪, তিরিমিযী মাআ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির ৫/৩৮৩, ইবনে মাজাহ পৃ. ২১৬, মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ১৭/৩৫১]
এখানে হাত বলতে হাতের পাতাকে বুঝানো হয়েছে, যেভাবে সহীহ মুসলিম (১৩/১৩-১৪) ও ইবনে মাজাহতে (২১৬ পৃ.) ব্যাখ্যা এসেছে।
ঙ) মুসআব বিন সা‘দের হাদীসেও তাতবিক্ব তথা রুকু‘ অবস্থাতে দুই হাতকে মিলিয়ে রানের মধ্যভাগে রাখার বর্ণনা এসেছে। অবশ্য এই আমলটি পরবর্তী সময়ে মানসুখ হয়। তখন রসূলুল্লাহ (স) হাতকে হাঁটুতে রাখতে নির্দেশ দেন। যেমন– সা‘দ (রা) নিজের পুত্র মুসআবকে বলেছেন:
كنا نفعَلُه فنُهِينا عنه ، وأُمِرْنا أن نضعَ أيديَنا على الرُّكَبِ .
“আমাদেরকে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়, আর আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় আমরা যেন আমাদের হাতকে হাঁটুর উপর রাখি।” [সহীহ বুখারী মাআ ফতহুল বারি ২/৩১৯, সহীহ মুসলিম ৫/২০-২১, আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৪১৭-১৮]
এই হাদীসটিতে أيديَنا (আমাদের দুই হাত) আছে। আবার অপর হাদীসে كفيك (তোমার দুই হাতের তালু) শব্দ এসেছে। [দ্র. সুনানে নাসাঈ ২/১৮৫]
এ থেকে সুস্পষ্ট হয়, এখানেও হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে।
কিছু উদাহরণে يديَن ‘দুই হাত’-এর ব্যাখ্যা হিসেবে ‘দুই তালু’ হুবহু আসেনি, কিন্তু মৌলিক দাবির ভিত্তিতে كفين ‘দুই তালু’-কেই বুঝানো হয়েছে। যেমন একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যখন রসূলুল্লাহ (স) ইস্তিনজা প্রভৃতি থেকে অবসর নিতেন তখন ثم مسح يده على الارض ‘নিজের হাত জমিনে ঘষতেন।’ [আবু দাউদ মাআ মুখতাসার মুনযিরি ১/৩৯, নাসাঈ ১/৪৫, ইবনে মাজাহ ৩০ পৃ., দারেমি ১/১৮৩ – আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/১১৬/৩৬০)]
এই হাদীসের ‘হাত’ শব্দের পরিপূরক হিসেবে কোনো হাদীসে ‘হাতের তালু’ শব্দ ব্যবহৃত হয়নি (আল্লাহই সর্বজ্ঞ)। কিন্তু প্রকাশ্য অর্থ থেকে বুঝা যায়, ইস্তিনজা প্রভৃতির শেষে মাটিতে সম্পূর্ণ বাহুসহ হাত ঘষা হয় না। বরং হাতের তালুকে মাটিতে ঘষা হয়। সুতরাং সুস্পষ্টভাবে কোনো হাদীসে ব্যাখ্যা না থাকলেও এখানে ‘হাত’ বলতে ‘হাতের তালুকে’ উদ্দেশ্য করাটা নিশ্চিত হয়।
অপর একটি উদাহরণ হলো, মুসাফাহা। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন তার ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে তখন সে কি তার প্রতি ঝুঁকবে? নবী (স) বললেন: না। সে জিজ্ঞাসা করল, তার গালে কি চুমা দেবে? তিনি (স) বললেন: না। তখন সে বলল: فأخذ بيده ويصافحه؟ قال نعم ‘তা হলে কি সে তার হাতটি ধরবে ও মুসাফাহ করবে।’ নবী (স) বললেন: হাঁ। [তিরমিযী মাআ আহমাদ শাকির ৫/৭০-৭১, তিরমিযী (রহ) বলেন: হাদীসটি হাসান। মুসনাদে আহমাদ মাআ ফতহুর রব্বানি ১৭/৩৪৭, সুনানে কুবরা ৭/১০০। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (তাহক্বীক্ব মিশকাত ৩/১৩২৮/৪৬৮০)]
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) লিখেছেন:
المصافحة هي مفاعلة من الصفحة والمراد بها الإفضاء بصفحة اليد إلى صفحة اليد
“মুসাফাহ শব্দটি বাবে ‘মুফাআলাহ’ থেকে এবং صفحة -এর মুশতাক্ব ফে‘ল মাসদারের সিগাহ। এর অর্থ– কোনো ব্যক্তির একটি হাতের তালু অপর ব্যক্তির একটি হাতের তালুর সাথে মিলানো।” [ফতহুল বারি ১১/৫৭]
পূর্বের হাদীসেও হাত বলতে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে। এ রকম আরো অনেক উদাহরণ পেশ করা যায়, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাত বলতে সাধারণভাবে হাতের তালুকে বুঝানো হয়েছে। তা ছাড়া অভিধানের গ্রন্থে যেমন – আল্লামাহ ওয়াহিদুয যামানের মুনজিদ, লুগাতুল হাদীস প্রভৃতিতে হাতের এই সাধারণ অর্থ নেয়া হয়েছে।
উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, সাজদা বা তাশাহহুদ থেকে উঠার সময় দুই হাতকে জমিনে ভর করে উঠতে হবে। এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে عجن (‘আজন) তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে ঐকমত্য যে, সাজদাতে যাওয়ার সময় হাতের তালুকে জমিনে রাখতে হবে। আর যখন এই বিষয়টি প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট, তখন উঠার সময় সেটা কেন ভিন্ন নিয়মে হবে?
কিছু লোক বলেন, সাজদা বা তাশাহহুদ থেকে উঠার সময় আটা ছানার মতো আঙুল বন্ধ করে, আঙুলের পিঠকে জমিনের উপর ঠেস দিয়ে উঠতে হবে। এই মাসআলাটি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) দলিলসহ পেশ করেছেন। এক্ষেত্রে মূল দলিলটি হলো, আযরাক্ব বিন ক্বায়েস বলেন:
رأيتُ ابنَ عمرَ يعجنُ في الصَّلاةِ : يعتمدُ علي يدَيه إذا قام . فقلتُ لهُ ؟ فقال : رأيتُ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ علَيهِ وسلَّمَ يَفعلُهُ
“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-কে দেখেছি, তিনি সালাতে হাতকে (আটা) খামির করার মতো বন্ধ করে, নিজের হাতের উপর ভর করে দাঁড়াতেন। আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন: আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে এমনটি করতে দেখেছি” [গরিবুল হাদীস লিইমাম আবু ইসহাক্ব আল-হারাবী (৫/৯৮/১) সূত্রে: সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ ২/৩৯২, আল-মু‘জামুল আওসাত লিততাবারানি ১/২৩৯/১ সূত্রে: সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ ৬/৩৮০]
এ বর্ণনাটি সম্পর্কে শায়েখ আলবানী (রহ) বলেছেন: এর সনদ হাসান।
হাদীসের সনদটি নিম্নরূপ:
حدثنا عبيد الله ( الاصل عبد الله ) بن عمر حدثنا يونس بن بكير عن الهيثم عن عطية بن قيس عن الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ
প্রথমত, বর্ণনাটির সনদের রাবী হায়সাম বিন ইমরান দামেশকি [. লেখকের উল্লিখিত সনদটি আবু ইসহাক্ব হারাবীর ‘গারিবুল হাদীসের’ (সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৩৮০)। তাবারানি মু‘জামুল আওসাতের (হা/৪১৩৮, অন্য সংস্করণে : ৪০০৭) সনদটি নিম্নরূপ : عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ أَبَانَ ، قَالَ : نا يُونُسُ بْنُ بُكَيْرٍ ، قَالَ : نا الْهَيْثَمُ بْنُ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ ، عَنِ الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ ইমাম তাবারানি বলেন : হাদীসটি আযরাক্ব ছাড়া কেউ বর্ণনা করেননি। এখানে ইউনুস বিন বুকায়র একা। তাবারানি তা‘লিলুল হাদীস, মু’জামুল আওসাত ও কিতাবুল ঈলাল বলেছেন : হায়সাম মাজহুল, তাকে চেনা যায় না। ইউনুসের প্রতি আপত্তি আছে।...হায়সাম নামটি নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ আলক্বামাহ বিন ক্বায়েস বিন সা‘লাবাহ বলেছেন। আবার কেউ কেবল হায়সাম বলেছেন, কোনো নসব উল্লেখ করেননি। যেভাবে ইবনে রজব তাঁর ‘ফতহুল বারি’-তে বলেছেন। (সূত্র: http://majles.alukah.net/t126066/)শায়েখ আলবানী (রহ) বলেছেন : নিশ্চয় সে হায়সাম বিন ইমরান। (সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৯৬৮)-অনুবাদক।], যাকে ইবনে হিব্বান ‘সিক্বাতে’ (২/২৯৬) এবং ইমাম আবু হাতিম রাযি (রহ) ‘জারাহ ও তা‘দিলে’ (৪/২/৮২-৮৩) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেখানে তার সম্পর্কে কোনো জারাহ বা তা’দিল উল্লিখিত হয়নি। এই রাবী সম্পর্কে আসমাউর রিজাল গ্রন্থসমূহে কোনো আলোচনা নেই। এ কারণে আলোচ্য রাবী মাজহুলুল হাল এবং বর্ণনাটি যঈফ। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ) নিজস্ব একটি উসূলের আলোকে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। যেমন তিনি (রহ) লিখেছেন:
وهو أن من وثقه ابن حبان وقد روى عنه جمع من الثقات ولم يأت بما ينكر عليه فهو صدوق يحتج به . وبناء على ذلك قويت بعض الأحاديث التي هي من هذا القبيل كحديث العجن في الصلاة
“এই রাবীকে ইবনে হিব্বান (রহ) সিক্বাহ গণ্য করেছেন এবং তার থেকে সিক্বাহ রাবীগণ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া তার থেকে কোনো মুনকার বর্ণনা প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি সদুক্ব, তার থেকে দলিল গ্রহণ বৈধ। এই নিয়মের ভিত্তিতে আরো কিছু হাদীস আছে যা এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় একে শক্তিশালী করে। যেমন সালাতে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীস।” [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২৫]
কিন্তু আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক না উক্ত নিয়ম গ্রহণযোগ্য, আর না আলোচ্য ( عجن ) হাদীসটি সহীহ। নিচে আমরা শায়েখ আলবানী (রহ)-এর উল্লিখিত নিয়ম ও আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করবো, ইনঁশাআল্লাহ।
رأيتُ ابنَ عمرَ يعجنُ في الصَّلاةِ : يعتمدُ علي يدَيه إذا قام . فقلتُ لهُ ؟ فقال : رأيتُ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ علَيهِ وسلَّمَ يَفعلُهُ
“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-কে দেখেছি, তিনি সালাতে হাতকে (আটা) খামির করার মতো বন্ধ করে, নিজের হাতের উপর ভর করে দাঁড়াতেন। আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন: আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে এমনটি করতে দেখেছি” [গরিবুল হাদীস লিইমাম আবু ইসহাক্ব আল-হারাবী (৫/৯৮/১) সূত্রে: সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ ২/৩৯২, আল-মু‘জামুল আওসাত লিততাবারানি ১/২৩৯/১ সূত্রে: সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ ৬/৩৮০]
এ বর্ণনাটি সম্পর্কে শায়েখ আলবানী (রহ) বলেছেন: এর সনদ হাসান।
হাদীসের সনদটি নিম্নরূপ:
حدثنا عبيد الله ( الاصل عبد الله ) بن عمر حدثنا يونس بن بكير عن الهيثم عن عطية بن قيس عن الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ
প্রথমত, বর্ণনাটির সনদের রাবী হায়সাম বিন ইমরান দামেশকি [. লেখকের উল্লিখিত সনদটি আবু ইসহাক্ব হারাবীর ‘গারিবুল হাদীসের’ (সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৩৮০)। তাবারানি মু‘জামুল আওসাতের (হা/৪১৩৮, অন্য সংস্করণে : ৪০০৭) সনদটি নিম্নরূপ : عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ أَبَانَ ، قَالَ : نا يُونُسُ بْنُ بُكَيْرٍ ، قَالَ : نا الْهَيْثَمُ بْنُ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ ، عَنِ الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ ইমাম তাবারানি বলেন : হাদীসটি আযরাক্ব ছাড়া কেউ বর্ণনা করেননি। এখানে ইউনুস বিন বুকায়র একা। তাবারানি তা‘লিলুল হাদীস, মু’জামুল আওসাত ও কিতাবুল ঈলাল বলেছেন : হায়সাম মাজহুল, তাকে চেনা যায় না। ইউনুসের প্রতি আপত্তি আছে।...হায়সাম নামটি নিয়ে মতপার্থক্য আছে। কেউ আলক্বামাহ বিন ক্বায়েস বিন সা‘লাবাহ বলেছেন। আবার কেউ কেবল হায়সাম বলেছেন, কোনো নসব উল্লেখ করেননি। যেভাবে ইবনে রজব তাঁর ‘ফতহুল বারি’-তে বলেছেন। (সূত্র: http://majles.alukah.net/t126066/)শায়েখ আলবানী (রহ) বলেছেন : নিশ্চয় সে হায়সাম বিন ইমরান। (সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৯৬৮)-অনুবাদক।], যাকে ইবনে হিব্বান ‘সিক্বাতে’ (২/২৯৬) এবং ইমাম আবু হাতিম রাযি (রহ) ‘জারাহ ও তা‘দিলে’ (৪/২/৮২-৮৩) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেখানে তার সম্পর্কে কোনো জারাহ বা তা’দিল উল্লিখিত হয়নি। এই রাবী সম্পর্কে আসমাউর রিজাল গ্রন্থসমূহে কোনো আলোচনা নেই। এ কারণে আলোচ্য রাবী মাজহুলুল হাল এবং বর্ণনাটি যঈফ। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ) নিজস্ব একটি উসূলের আলোকে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। যেমন তিনি (রহ) লিখেছেন:
وهو أن من وثقه ابن حبان وقد روى عنه جمع من الثقات ولم يأت بما ينكر عليه فهو صدوق يحتج به . وبناء على ذلك قويت بعض الأحاديث التي هي من هذا القبيل كحديث العجن في الصلاة
“এই রাবীকে ইবনে হিব্বান (রহ) সিক্বাহ গণ্য করেছেন এবং তার থেকে সিক্বাহ রাবীগণ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া তার থেকে কোনো মুনকার বর্ণনা প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি সদুক্ব, তার থেকে দলিল গ্রহণ বৈধ। এই নিয়মের ভিত্তিতে আরো কিছু হাদীস আছে যা এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় একে শক্তিশালী করে। যেমন সালাতে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীস।” [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২৫]
কিন্তু আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক না উক্ত নিয়ম গ্রহণযোগ্য, আর না আলোচ্য ( عجن ) হাদীসটি সহীহ। নিচে আমরা শায়েখ আলবানী (রহ)-এর উল্লিখিত নিয়ম ও আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করবো, ইনঁশাআল্লাহ।
এমন রাবী– যার সম্পর্কে জারাহ বা তা’দিল বর্ণিত হয়নি, তাকে মাজহুল বলা হয়। (বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে)। তবে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) এমন রাবীকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। কেননা তাঁর নিকট এক্ষেত্রে জারাহ ও তা‘দিল পরস্পরের বিপরীত। এ কারণে কোনো রাবীর প্রতি জারাহ না থাকলেই তাকে সিক্বাহ বলা হয়। এ জন্যে তিনি তাঁর কিতাব ‘সিক্বাহ’-তে এ ধরনের বর্ণনা ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, জুমহুর মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে হিব্বানের (রহ) এই উসূলটি ক্ববুল করেননি।
ইমাম যাহাবী (রহ) এ ধরনের রাবী সম্পর্কে বলেছেন:
وعمارة مجهول كما قال الرازيان ، ولا يفرح بذكر ابن حبان له بين الثقات فإن قاعدته معروفة من الاحتجاج بمن لا يعرف
“আম্মারাহ মাজহুল, যেমনটি রাযিইয়ান বলেছেন। আর ইবনে হিব্বান (রহ) তাকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করাতে খুশির কিছু নেই। কেননা তাঁর এই নিয়ম প্রসিদ্ধ যে, তিনি অপরিচিত রাবীদেরকেও গ্রহণ করতেন।” [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/১৭৫ পৃ.]
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর আলোচ্য নিয়ম ও তাঁর শিথিলতা সম্পর্কে ইমাম ও মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা জানার জন্য দেখুন: আসসিক্বাত লিইবনে হিব্বান ১/১৩, যাওয়াবিতুল জারাহ ওয়াত তা‘দিল পৃ. ৮০-৮২, তাদরিবুর রাবী ১/১০৮, ফতহুল বারি ৯/৬০ (প্রকাশক: দারুর রাইয়ান), লিসানুল মিযানের মুক্বাদ্দামাহ ১/১৪-১৫, তাহযিব ১০/১১৩ তরজমা (বিবরণ): মুসলিম বিন হারিস, ফতহুল মুগিস পৃ. ২৪, আত-তা‘লিক্ব আলা ফাওয়াইদিল মাজমুআতি ফিল আহাদিসুল মাওযুআহ লিশ-শায়েখ আব্দুর রহমান বিন ইয়াহইয়া আর-ইয়ামানি পৃ. ৬১, ১৬১, ৩৪৭ ও ৪১৫, ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস বিতা‘লিক্ব আবু গুদ্দাহ পৃ. ২১, ১৮১-৮৩, আর-রাফউত তাকমিল পৃ. ৩৩২-৩৯, তামামুল মিন্নাহ লিশ-শায়েখ আলবানী পৃ. ২০-২৬, সিলসিলাতুল আহাদিসুয যঈফাহ ১/৩২, ১১৫, ১৩১, ২/৩০০, ৩২৮, ৪/১৪২, তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/১৫৩, ইরওয়াউল গালিল ২/১৫৭।
উক্ত রেফারেন্সগুলো অধ্যয়ন করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, এ ধরনের রাবীর ব্যাপারে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর তাওসিক্ব গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অন্য কোনো (জারাহ ও তা‘দিলের) মুহাদ্দিস ও ইমাম সেটাকে সমর্থন করলে, সেক্ষেত্রে ইবনে হিব্বানের তাওসিক্ব গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
ইমাম যাহাবী (রহ) এ ধরনের রাবী সম্পর্কে বলেছেন:
وعمارة مجهول كما قال الرازيان ، ولا يفرح بذكر ابن حبان له بين الثقات فإن قاعدته معروفة من الاحتجاج بمن لا يعرف
“আম্মারাহ মাজহুল, যেমনটি রাযিইয়ান বলেছেন। আর ইবনে হিব্বান (রহ) তাকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করাতে খুশির কিছু নেই। কেননা তাঁর এই নিয়ম প্রসিদ্ধ যে, তিনি অপরিচিত রাবীদেরকেও গ্রহণ করতেন।” [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/১৭৫ পৃ.]
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর আলোচ্য নিয়ম ও তাঁর শিথিলতা সম্পর্কে ইমাম ও মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা জানার জন্য দেখুন: আসসিক্বাত লিইবনে হিব্বান ১/১৩, যাওয়াবিতুল জারাহ ওয়াত তা‘দিল পৃ. ৮০-৮২, তাদরিবুর রাবী ১/১০৮, ফতহুল বারি ৯/৬০ (প্রকাশক: দারুর রাইয়ান), লিসানুল মিযানের মুক্বাদ্দামাহ ১/১৪-১৫, তাহযিব ১০/১১৩ তরজমা (বিবরণ): মুসলিম বিন হারিস, ফতহুল মুগিস পৃ. ২৪, আত-তা‘লিক্ব আলা ফাওয়াইদিল মাজমুআতি ফিল আহাদিসুল মাওযুআহ লিশ-শায়েখ আব্দুর রহমান বিন ইয়াহইয়া আর-ইয়ামানি পৃ. ৬১, ১৬১, ৩৪৭ ও ৪১৫, ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস বিতা‘লিক্ব আবু গুদ্দাহ পৃ. ২১, ১৮১-৮৩, আর-রাফউত তাকমিল পৃ. ৩৩২-৩৯, তামামুল মিন্নাহ লিশ-শায়েখ আলবানী পৃ. ২০-২৬, সিলসিলাতুল আহাদিসুয যঈফাহ ১/৩২, ১১৫, ১৩১, ২/৩০০, ৩২৮, ৪/১৪২, তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/১৫৩, ইরওয়াউল গালিল ২/১৫৭।
উক্ত রেফারেন্সগুলো অধ্যয়ন করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, এ ধরনের রাবীর ব্যাপারে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ)-এর তাওসিক্ব গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অন্য কোনো (জারাহ ও তা‘দিলের) মুহাদ্দিস ও ইমাম সেটাকে সমর্থন করলে, সেক্ষেত্রে ইবনে হিব্বানের তাওসিক্ব গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
ইলমুল মুসতালাহ’র ক্ষেত্রে এ ধরনের রাবী (যার থেকে একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কেউই তার ব্যাপারে জারাহ ও তা‘দিল উল্লেখ করেননি) তাকে মাজহুলুল হাল বলা হয়। যেমন হাফেয ইবনে হাজার (রহ) অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘মাসতুর’ বলেছেন। [শরহে নুখফাতুল ফিকার লিইবনে হাজার পৃ. ১০০-০১ (বৈরুত ছাপা), তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস লি ড. মাহমুদ তহহান পৃ. ১২০ প্রভৃতি]
আবার ‘মাসতুর’ রাবী সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) বলেছেন:
وقد قبل روايته جماعة من غير قيد، وردها الجمهور، قال ابن حجر : « والتحقيق أن رواية مستور الحال ونحوه مما فيه احتمال العدالة وضدها لا يطلق القول بردها ولا بقبولها، بل يقال هي موقوفة إلى استبانة حاله
“বর্ণিত বর্ণনার ভিত্তিতে একটি জামাআত কোনো শর্ত ছাড়াই এ ধরনের হাদীস গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু জুমহুর মুহাদ্দিস একে খণ্ডন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মাসতুর রাবীর হাদীস না গ্রহণ করা যাবে, আর না বাতিল করা যাবে। বরং এক্ষেত্রে চুপ (মওকুফ) [. উল্লেখ্য যে, মওকুফ দ্বারা – মারদুদ উদ্দেশ্য। [শরহে নুখবাতুল ফিকার পৃ. ২০]] থাকতে হবে, যতক্ষণ না তার অবস্থা জানা যায়। [শরহে নুখফাতুল ফিকার লিইবনে হাজার পৃ. ১০০-০১]
সর্বোপরি অধিকাংশ আহলে হাদীস ইমাম (যেমন- ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ প্রমুখ (রহ)) মাজহুলুল হাল ও মাসতুর রাবীর বর্ণনাকে রদ করেছেন। [ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস পৃ. ২০৩, তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১২, নুযহাতুন নাযার পৃ. ৮৭, তাদরিবুর রাবী পৃ. ৩১৬-১৭]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইসহাক্ব বিন সালিমকে মাজহুলুল হাল বলেছেন। ইমাম আলবানী (রহ) এই উদ্ধৃতি দেয়ার পর বলেছেন: والمجهول لا يحتج بحديثه بحال ‘মাজহুলের হাদীস হুজ্জাত নয়, তার ঐ অবস্থার ভিত্তিতে।’ [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ৩৪৭]
সারসংক্ষেপ হলো, উসূলে হাদীসের আলোকে যেসব রাবীকে মাজহুলুল হাল গণ্য করা হয়, সে সব রাবীর তাওসিক্ব মাক্ববুল না হওয়া পর্যন্ত- তার বর্ণনা মারদুদ (প্রত্যাখাত) বলে গণ্য হয়। কেবল সিক্বাহ রাবীদের থেকে বর্ণনা করার জন্য সে সিক্বাহ বা সদুক্ব রাবীতে পরিণত হয় না। কেননা বড় বড় ইমাম যেমন– ইমাম শু‘বাহ (রহ), সুফিয়ান সওরি (রহ) প্রমুখও মাজহুলদের থেকে বর্ণনা করেছেন (দ্র: মা‘রেফাতে উলুমুল হাদীস লিলহাকিম পৃ. ১১৬)। সেক্ষেত্রে কি ঐ সব মাজহুল রাবীদেরকে সিক্বাহ ও সদুক্ব হিসেবে গণ্য করা হবে? আরো দেখুন: ‘তাদরিবুর রাবী লিসসুয়ূতি’ (১/৩১৪)।
হাদীস সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে উসূলে হাদীসের একটা স্বতঃসিদ্ধ নীতি এই যে, রাবী আদালত ও যবত প্রসিদ্ধ হতে হবে। [শরহে নুখবাহ পৃ. ২৯-৩০, তাক্বরিব মাআ তাদরিব লিননওয়াবি ১/৬৩, আল-ফিয়াতুল হাদীস লিলইরাক্বি পৃ. ১৬, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস সালাহ পৃ. ৭-৮ প্রভৃতি]
এই বিষয়টি ইমাম আলবানী (রহ)-ও গ্রহণ করেছেন। [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২৮, আত-তাওয়াসসুল আনওয়ায়ুহু ওয়া আহকামাহু পৃ. ১২০]
এরপরেও এমন রাবী যার আদল ও যবত মাজহুল এবং তার তাদলিস, ইরসাল, ইখতিলাত প্রভৃতি জ্ঞাত। সেক্ষেত্রে তার বর্ণনা কীভাবে সহীহ বা হাসান হতে পারে? আর সেই রাবীকে কীভাবে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলা যাবে?
ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এমন রাবীকে সদুক্ব [. সদুক্ব : সদুক্ব রাবীর বর্ণনা সম্পর্কে হুকুম হলো : فهو ممن يكتب حديثه وينظر فيه ‘এ ধরনের রাবীর হাদীস লেখা যাবে এবং তার ব্যাপারে নযর থাকবে (গবেষণা করতে হবে)।’ [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৩৭]ড. মাহমুদ তাহহান এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : أي يختبر ضبطهم بعرض حديثهم على أحاديث الثقات الضابطين؛ فإن وافقهم احتج بحديثه وإلا فلا، فظهر من ذلك أن من قيل فيه : " صدوق " من الرواة لا يحتج بحديثه قبل الاختبار، وقد أخطأ من ظن أن من قيل فيه : " صدوق " فحديثه حسن؛ لأن الحسن يحتج به، هذا ما عليه اصطلاح أئمة الجرح والتعديل . أما الحافظ ابن حجر، فقد يكون له اصطلاح خاص في كتاب " تقريب التهذيب " بالنسبة لكلمة " صدوق " والله أعلم “সার-সংক্ষেপ হলো, সদুক্ব রাবীর বর্ণনা যদি সিক্বাহ-যবত রাবীর পরিপূরক হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে অন্যথায় না। অর্থাৎ সদুক্ব রাবীর বর্ণনা প্রকৃতপক্ষে গ্রহণযোগ্য না। যারা সদুক্ব রাবীর বর্ণনাকে হাসান বলেছেন, তারা ভুলের মধ্যে আছেন। তবে ‘তাক্বরিবুত তাহযিবে’ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) কর্তৃক রাবীদেরকে ‘সদুক্ব’ বলাটা তাঁর নিজস্ব পরিভাষা। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫২]এই ব্যাখ্যা থেকে হায়সাম বিন ইমরানের মর্তবা ও অবস্থান সুস্পষ্ট হয়।] বলাটা উসূলে হাদীসের বিরোধী। কেননা উসূলে হাদীসে ‘সদুক্বের’ যে সঙ্গা দেয়া হয়েছে তা নিম্নরূপ:
“এই শব্দটি (তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) যে রাবীর তা‘দিলের ব্যাপারে প্রমাণ দেয়, কিন্তু যবতের প্রমাণ দেয় না। যেমন বলা হয় – সদুক্ব, মাহাল্লুহুস সিদক্ব, লা বা’সুন বিহি প্রভৃতি– এমন রাবীকে সদুক্ব বলে।” [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫১, তাক্বরিব মাআ তাদরিব ১/৩৪৩, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস সিলাহ পৃ. ৫৮]
সুতরাং উসূলে হাদীসের আলোকে ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এমন রাবীকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে যখন জারাহ ও তা‘দিলের ইমামগণ এ ধরনের রাবী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ।
আবার ‘মাসতুর’ রাবী সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) বলেছেন:
وقد قبل روايته جماعة من غير قيد، وردها الجمهور، قال ابن حجر : « والتحقيق أن رواية مستور الحال ونحوه مما فيه احتمال العدالة وضدها لا يطلق القول بردها ولا بقبولها، بل يقال هي موقوفة إلى استبانة حاله
“বর্ণিত বর্ণনার ভিত্তিতে একটি জামাআত কোনো শর্ত ছাড়াই এ ধরনের হাদীস গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু জুমহুর মুহাদ্দিস একে খণ্ডন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মাসতুর রাবীর হাদীস না গ্রহণ করা যাবে, আর না বাতিল করা যাবে। বরং এক্ষেত্রে চুপ (মওকুফ) [. উল্লেখ্য যে, মওকুফ দ্বারা – মারদুদ উদ্দেশ্য। [শরহে নুখবাতুল ফিকার পৃ. ২০]] থাকতে হবে, যতক্ষণ না তার অবস্থা জানা যায়। [শরহে নুখফাতুল ফিকার লিইবনে হাজার পৃ. ১০০-০১]
সর্বোপরি অধিকাংশ আহলে হাদীস ইমাম (যেমন- ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ প্রমুখ (রহ)) মাজহুলুল হাল ও মাসতুর রাবীর বর্ণনাকে রদ করেছেন। [ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস পৃ. ২০৩, তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১২, নুযহাতুন নাযার পৃ. ৮৭, তাদরিবুর রাবী পৃ. ৩১৬-১৭]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইসহাক্ব বিন সালিমকে মাজহুলুল হাল বলেছেন। ইমাম আলবানী (রহ) এই উদ্ধৃতি দেয়ার পর বলেছেন: والمجهول لا يحتج بحديثه بحال ‘মাজহুলের হাদীস হুজ্জাত নয়, তার ঐ অবস্থার ভিত্তিতে।’ [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ৩৪৭]
সারসংক্ষেপ হলো, উসূলে হাদীসের আলোকে যেসব রাবীকে মাজহুলুল হাল গণ্য করা হয়, সে সব রাবীর তাওসিক্ব মাক্ববুল না হওয়া পর্যন্ত- তার বর্ণনা মারদুদ (প্রত্যাখাত) বলে গণ্য হয়। কেবল সিক্বাহ রাবীদের থেকে বর্ণনা করার জন্য সে সিক্বাহ বা সদুক্ব রাবীতে পরিণত হয় না। কেননা বড় বড় ইমাম যেমন– ইমাম শু‘বাহ (রহ), সুফিয়ান সওরি (রহ) প্রমুখও মাজহুলদের থেকে বর্ণনা করেছেন (দ্র: মা‘রেফাতে উলুমুল হাদীস লিলহাকিম পৃ. ১১৬)। সেক্ষেত্রে কি ঐ সব মাজহুল রাবীদেরকে সিক্বাহ ও সদুক্ব হিসেবে গণ্য করা হবে? আরো দেখুন: ‘তাদরিবুর রাবী লিসসুয়ূতি’ (১/৩১৪)।
হাদীস সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে উসূলে হাদীসের একটা স্বতঃসিদ্ধ নীতি এই যে, রাবী আদালত ও যবত প্রসিদ্ধ হতে হবে। [শরহে নুখবাহ পৃ. ২৯-৩০, তাক্বরিব মাআ তাদরিব লিননওয়াবি ১/৬৩, আল-ফিয়াতুল হাদীস লিলইরাক্বি পৃ. ১৬, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস সালাহ পৃ. ৭-৮ প্রভৃতি]
এই বিষয়টি ইমাম আলবানী (রহ)-ও গ্রহণ করেছেন। [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২৮, আত-তাওয়াসসুল আনওয়ায়ুহু ওয়া আহকামাহু পৃ. ১২০]
এরপরেও এমন রাবী যার আদল ও যবত মাজহুল এবং তার তাদলিস, ইরসাল, ইখতিলাত প্রভৃতি জ্ঞাত। সেক্ষেত্রে তার বর্ণনা কীভাবে সহীহ বা হাসান হতে পারে? আর সেই রাবীকে কীভাবে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলা যাবে?
ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এমন রাবীকে সদুক্ব [. সদুক্ব : সদুক্ব রাবীর বর্ণনা সম্পর্কে হুকুম হলো : فهو ممن يكتب حديثه وينظر فيه ‘এ ধরনের রাবীর হাদীস লেখা যাবে এবং তার ব্যাপারে নযর থাকবে (গবেষণা করতে হবে)।’ [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৩৭]ড. মাহমুদ তাহহান এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : أي يختبر ضبطهم بعرض حديثهم على أحاديث الثقات الضابطين؛ فإن وافقهم احتج بحديثه وإلا فلا، فظهر من ذلك أن من قيل فيه : " صدوق " من الرواة لا يحتج بحديثه قبل الاختبار، وقد أخطأ من ظن أن من قيل فيه : " صدوق " فحديثه حسن؛ لأن الحسن يحتج به، هذا ما عليه اصطلاح أئمة الجرح والتعديل . أما الحافظ ابن حجر، فقد يكون له اصطلاح خاص في كتاب " تقريب التهذيب " بالنسبة لكلمة " صدوق " والله أعلم “সার-সংক্ষেপ হলো, সদুক্ব রাবীর বর্ণনা যদি সিক্বাহ-যবত রাবীর পরিপূরক হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে অন্যথায় না। অর্থাৎ সদুক্ব রাবীর বর্ণনা প্রকৃতপক্ষে গ্রহণযোগ্য না। যারা সদুক্ব রাবীর বর্ণনাকে হাসান বলেছেন, তারা ভুলের মধ্যে আছেন। তবে ‘তাক্বরিবুত তাহযিবে’ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) কর্তৃক রাবীদেরকে ‘সদুক্ব’ বলাটা তাঁর নিজস্ব পরিভাষা। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫২]এই ব্যাখ্যা থেকে হায়সাম বিন ইমরানের মর্তবা ও অবস্থান সুস্পষ্ট হয়।] বলাটা উসূলে হাদীসের বিরোধী। কেননা উসূলে হাদীসে ‘সদুক্বের’ যে সঙ্গা দেয়া হয়েছে তা নিম্নরূপ:
“এই শব্দটি (তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) যে রাবীর তা‘দিলের ব্যাপারে প্রমাণ দেয়, কিন্তু যবতের প্রমাণ দেয় না। যেমন বলা হয় – সদুক্ব, মাহাল্লুহুস সিদক্ব, লা বা’সুন বিহি প্রভৃতি– এমন রাবীকে সদুক্ব বলে।” [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫১, তাক্বরিব মাআ তাদরিব ১/৩৪৩, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস সিলাহ পৃ. ৫৮]
সুতরাং উসূলে হাদীসের আলোকে ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এমন রাবীকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে যখন জারাহ ও তা‘দিলের ইমামগণ এ ধরনের রাবী সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ।
ইমাম আলবানী (রহ) নিজের নিয়মের পক্ষে দশটি এমন বর্ণনা উল্লেখ করেছেন যাদেরকে (রাবীদেরকে) ইবনে হাজার সদুক্ব, মাহাল্লুহুস সিদক্ব প্রভৃতি বলেছেন। আর স্বয়ং শায়েখ আলবানী (রহ)-এর উক্তি অনুযায়ী এদেরকে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া কেউই সিক্বাহ বলেননি। এমনকি তিনি (রহ) একজন রাবী মালিক বিন খায়ের যিয়াদি সম্পর্কে বিবরণ উল্লেখ করে নিজের পক্ষকে মজবুত করার চেষ্টা করেছেন।
যাদের বর্ণনা ইমাম আলবানী (রহ) উল্লেখ করেছেন তারা হলেন:
১) আহমাদ বিন সাবিত আল-জাহদারি, ২) আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-বসরি, ৩) আহমাদ বিন মুসাররাফ আল-ইয়ামা, ৪) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহ বিন হারিস আল-জামহি, ৫) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-আসাদি, ৬) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন মুআবিয়াহ বিন আব্দুল্লাহ, ৭) ইসহাক্ব বিন ইবরাহিম বিন দাউদ আস-সিওয়াক্ব, ৮) ইসমাঈল বিন ইবরাহিম আল-বালিসি, ৯) ইসমাঈল বিন মাসউদ বিন হাকাম আয-যুরক্বি, ১০) আসওয়াদ বিন সাঈদ আল-হামদানি। [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২০৪]
অতঃপর মালিক বিন খায়ের যিয়াদি সম্পর্কে ইমাম যাহাবী থেকে নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি দিয়েছেন:
" محله الصدق . . . روى عنه حيوة بن شريح ، وابن وهب ، وزيد بن الحباب ، ورشدين . قال ابن القطان : هو ممن لم تثبت عدالته . . . يريد أنه ما نص أحد على أنه ثقة . . . والجمهور على أن من كان من المشايخ قد روى عنه جماعة ، ولم يأت بما ينكر عليه ، أن حديثه صحيح "
“মালিক বিন খায়ের মাহাল্লুহুস সিদক্ব। … তার থেকে বর্ণনা করেছেন হায়ওয়াহ বিন শারিহ, ইবনে ওয়াহহাব, যায়েদ বিন হাব্বাব ও রুশদায়ন। ইবনুল ক্বত্তান বলেন: সে ঐ সমস্ত রাবীদের অন্তর্ভুক্ত যাদের আদালত (বিশ্বস্ততা) প্রমাণিত নয়। … এর দাবি হলো, সিক্বাহ হওয়ার ক্ষেত্রে তার পক্ষে একটিও দলিল নেই। … জুমহুরের নিকট যার কাছ থেকে মাশায়েখের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন, তার ক্ষেত্রে মুনকার বর্ণনা প্রযোজ্য নয়। তার হাদীস সহীহ হিসেবে গণ্য।” [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২০৪]
এখন আমরা ইমাম আলবানী (রহ)-এর উপস্থাপনাকে দু’টি স্তরে বিস্তারিত জবাব দেব। প্রথমত, ইমাম সাহেব যে দশ জন রাবীর বর্ণনা পেশ করেছেন, তার অধিকাংশের তাওসিক্ব বর্ণিত হয়েছে। যেমন –
ক) রাবী নং ৩, ৭, ৮-কে ইমাম ইবনে হিব্বান কেবল ‘কিতাবুস সিক্বাতে’-ই উল্লেখ করেননি। বরং ‘মুস্তাকিমুল হাদীস’-ও বলেছেন। [তাহযিবুত তাহযিব পৃ. ১/১১৬, ১৭৮ ও ২৪৫]
খ) রাবী নং ১ অর্থাৎ- আহমাদ বিন সাবিত আল-জাহদারি-কে ‘মুস্তাক্বিমুল আমর ফিল হাদীস’ বলা হয়েছে। [তাহযিব ১/১৮]
গ) রাবী নং ২ অর্থাৎ- আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-বসরি-কে ইমাম আবু হাতিম (রহ) ও তাঁর ছেলে উভয়েই ‘সদুক্ব’ বলেছেন। আর ইবনে হিব্বান বলেছেন: ‘তিনি মুতক্বিন ছিলেন।’ [তাহযিবুত তাহযিব ১/৬৯, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৭৪]
এক্ষণে যখন উসূলে হাদীস মোতাবেক তাদের প্রতি জারাহ বর্ণিত হয়নি, আর অন্যান্য ইমামের পক্ষ থেকে তাদের তাওসিক্ব বর্ণিত হয়েছে (ইবনে হিব্বান কর্তৃক ‘মুস্তাক্বিমুল হাদীস’ বলা। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তিনি তার হাদীস সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জ্ঞাত)। ফলে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘সদুক্ব’ গণ্য করেছেন। বাকি থাকল ঐ বর্ণনা, যা ইবনে হিব্বান কেবল তাঁর কিতাব ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোনো হুকুম লাগাননি। হাফেয ইবনে হাজার (রহ) কর্তৃক তাঁকে ‘সদুক্ব’ বলাটা আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা হাফেয সাহেব এক্ষেত্রে বর্ণনাকে সাধারণভাবে ‘মাক্ববুল’ [. মাক্ববুল : এটি হাফেয ইবনে হাজার (রহ) এর নিজস্ব পরিভাষা। কেননা ‘আত-তাক্বরিবে’ (পৃ. ১০) বলেছেন : من ليس له من الحديث إلا قليل، و لم يثبت فيه ما يترك حديثه من أجله، و إليه الإشارة بلفظ : مقبول، حيث يتابع , و إلا فلين الحديث “যার থেকে সামান্য হাদীস ছাড়া কিছু বর্ণিত হয়নি। আর এটাও প্রমাণ হয়নি যে, তার থেকে উন্নতদের হাদীস তিনি ছেড়ে দেননি। এক্ষেত্রে তার হাদীসের ব্যাপারে ইশারা করা হয় : মাক্ববুল, হায়সু ইয়ুতাবি‘ (অনুসারী); অন্যথায় তা লাইয়িনুল হাদীস হয়।”তেমনি মাসতুর বা মাজহুল রাবী সম্পর্কে বলেছেন : من روى عنه أكثر من واحد ولم يوثق وإليه الاشارة بلفظ " مستور " أو " مجهول الحال "“যার থেকে একের অধিক মুহাদ্দিস বর্ণনা করেছেন এবং তার প্রতি তাওসিক্বের শব্দ ব্যবহার করেননি, সেক্ষেত্রে সে ‘মাসতুর’ বা ‘মাজহুলুল হাল’।] বা ‘মাসুতর’ থেকে অধিক মর্যাদা দেননি। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য আমি নিচে এ সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি:
১) আহমাদ বিন আইয়ুব বিন রাশিদ আল-বসরি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন - ইমাম বুখারী (রহ) (আদাবুল মুফরাদে’), আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বাল (রহ), আবু যুরআহ (রহ), হাসান বিন আলী আল-মু‘আম্মারি (রহ), আবু ইয়া‘লা (রহ), আলী বিন হুসাইন বিন জুনাইদ (রহ)। আর ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ বর্ণনা করেছেন।
অথচ এ সমস্ত জলিলুল ক্বদর ইমাম তাঁর থেকে বর্ণনা করা এবং ইবনে হিব্বানের ‘সিক্বাহ’ বলার পরও হাফেয ইবনে হাজার তাঁকে মাক্ববুল বলেছেন। [তাক্বরিব: ১১ পৃ.]
২) ইবরাহিম বিন মারযুক্ব আস-সাক্বাফি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– আবু বাকার (বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ) বিন আবুল আসওয়াদ, মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আল-খাযায়ি, সাঈদ বিন আওন ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন (রহ)। ইমাম আবু হাতিম (রহ) বলেছেন: ‘শায়েখ, তার হাদীস লেখা হয়।’ আর ইবনে হিব্বান তাঁর ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [আত-তাহযিব ১/১৪২, আল-জারাহ ওয়াত তা’দিল ২/১৩৭, তারিখে কাবির লিল-বুখারী ১/৩৩০]
অথচ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব:২৩ পৃ.]
৩) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী বিন আবু তালিব: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – তাঁর ছেলে ঈসা বিন আব্দুল্লাহ, হুসাইন বিন যায়েদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন আবি ফাসিক ও আবু উসামাহ প্রমুখ। ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি তাঁকে ‘মধ্যপন্থী’ বলেছেন।’[তাহ. তাহযিব ৬/১৬]
অথচ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব: ১৮৮]
৪) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াক্বিদ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার বিন খাত্তাব আল-মাদানি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– উমার বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াযিদ, আব্দুল্লাহ বিন আবি বাকার বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হাযম, ফুযায়েল বিন গাযওয়ান, ইবরাহিম বিম মুজমা‘, সাঈদ বিন ইবরাহিম, মুহাম্মাদ বিন জা‘ফার, ওয়ালিদ বিন মুসলিম প্রমুখ। তিনি সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ’র রাবী। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৬/৬০, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/১৯০]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব: ১৯২-৯৩ পৃ.]
৫) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াযাহ বিন সাঈদ আল-লু‘লুয়ি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– ইমাম তিরমিযী, আবু হাতিম, উমার বিন মুহাম্মাদ বিন বাজিরিল বাজিরি, ইবনে খুযায়মাহ, ইয়াক্বুব বিন সুফিয়ান, মুসা বিন ইসহাক্ব, ইবনে আবিদ দুনইয়া, আবূ বাকার আহমাদ বিন আমর বিন আব্দুল খালিক্ব বাযযার, আহমাদ বিন হুসাইন আল-আওফি, ইয়াহইয়া বিন মুহাম্মাদ বিন সাঈদ প্রমুখ। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহ) তার হাদীসকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন। [তাহযিব ৬/৬৩, তিরমিযী ৪/৩১৪ হা/১৯৮৯]
এরপরেও হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ থেকে অধিক স্তরের বর্ণনা করেননি। [আত-তাক্বরিব: ১৯৩ পৃ.]
৬) আব্দুল আ‘লা বিন আব্দুল্লাহ বিন আমির আল-বসরি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– খালিদ আল-হিযা, হারিস বিন আব্দুর রহমান, হাসান বিন ক্বাসিম আল-আরযুক্বি, আমর বিন আসবাগ ও মুখাল্লিদ ওয়ালিদ আবু আসিম। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন ...। “ [তাহযিব: ৬/৮৭]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৫ পৃ.]
৭) আব্দুল হামিদ বিন বিকার আস-সালমা আদ-দামেশকি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– আবু দাউদ তাঁর ‘মারাসিলে’, নাসাঈ ‘মুসনাদে মালিকে’। তা ছাড়া ইমাম আবু যুরআহ রাযি, আবু আব্দুল মালিক আহমাদ বিন ইবরাহিম, আব্বাস বিন ওয়ালিদ, ইয়াযিদ বিন মুহাম্মাদ, আহমাদ বিন মা‘লা বিন ইয়াযিদ, সা‘দ বিন মুহাম্মাদ আল-বায়রুতাও বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহযিবুত তাহযিব ৬/৯৯, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/৯]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৬ পৃ.]
৮) আব্দ রব্বিহি বিন খালিদ বিন আব্দুল মালিক আবু মুগলাস বসরি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইবনে মাজাহ, ইবনে আবি আসিম, ইবনে আবিদ দুনইয়া, আল-মুআম্মারি, ইয়াক্বুব বিন সুফিয়ান, মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাবিব আল-রুক্বা প্রমুখ। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহ. তাহযিব ৬/১১৫]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৬ পৃ.]
৯) আব্দুর রহমান বিন বাশার বিন মাসউদ আল-আনসারি: ‘তাহযিব’ ও ‘আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিলে’ তার পিতার নাম বাশার লেখা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘তাক্বরিবে’ বাশির লেখা হয়েছে। এখানে বাশার-ই সহীহ।
সে মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ‘র রাবী। তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইবরাহিম নাখঈ, মুহাম্মাদ বিন সিরিন, মুসা বিন আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযিদ আল-খাতমি, জা‘ফার বিন আবু ওয়াহশিয়া, রিজাউল আনসারি ও আবু হুসাইন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। আর ইবনে সা‘দ তাঁকে ‘কম হাদীস বর্ণনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৬/১৩২, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/২১৪-১৫]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৯ পৃ.]
১০) মুসাওওয়ার বিন রিফাআহ বিন আবি মালিক আল-কুরযা: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইমাম মালেক, ইবনে ইসহাক্ব, আবু আলকামা আল-ফারাওয়া, আবু বাকার বিন আবি সাবরাহ, ইবরাহিম বিন সামামাহ, দাউদ বিন সিনান, আব্দুর রহমান বিন উরওয়াহ, ইবরাহিম বিন সা‘দ বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ বর্ণনা করেছেন। [তাহযিব ১০/১৩৬, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৮/২৯৭-৮, তারিখুল কাবির ৭/৪১১]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ৩৩৭ পৃ.]
উক্ত উদাহরণগুলো থেকে এটা সুর্যের মতো সুস্পষ্ট, এ ধরনের রাবী – যাদের থেকে একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোনো মুহাদ্দিসের পক্ষ থেকে তার তাওসিক্ব প্রমাণিত নয়। আবার হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর নিকট তিনি ‘মাক্ববুল’। এর দাবি হলো, যদি তার মুতাবাআত থাকে, তবে তিনি ‘মাক্ববুল’। অন্যথায় তিনি ‘লাইয়িনুল হাদীস’।
… উক্ত উদাহরণের আলোকে আমরা এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, হাফেয ইবনে হাজার (রহ) হায়সাম বিন ইমরান-কে সর্বোচ্চ মাক্ববুল বলেছেন।
এ কারণে ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এ ধরনের রাবীকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলাটা অনেক বড় …।
ইমাম আলবানী (রহ)-এর পক্ষ থেকে ইমাম যাহাবী (রহ)-এর বক্তব্যকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করাটাও সংগত হয়নি।
প্রথমত: ইমাম আলবানী (রহ) উদ্ধৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মানেননি। যে বক্তব্য ইমাম আলবানী (রহ) উল্লেখ করেননি, তা হলো:
وفي رواة " الصحيحين " عدد كثير ما علمنا أن أحدا نص على توثيقهم والجمهور على أن من كان من المشايخ قد روى عنه جماعة ولم يأت بما ينكر عليه أن حديثه صحيح
“সহীহাইনে (বুখারী-মুসলিমে) এমন অনেক সংখ্যক বর্ণনা আছে যাদের (রাবীদের) সম্পর্কে আমরা জানি না তাদের সিক্বাহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো নস (প্রমাণ) রয়েছে। জুমহুরের নিকট যে সমস্ত রাবী মাশায়েখের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন তাদের থেকে কোনো জামাআত বর্ণনা করলে সেটা মুনকার হয় না, কেননা তাদের হাদীস সহীহ।” [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/৪২৬]
ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উক্তিটি ইবনুল ক্বত্তানের উক্তি “ هو ممن لم يثبت عدالته ” -এর খণ্ডনে বর্ণিত হয়েছে। কেননা ইমাম ইবনুল ক্বত্তানের রেওয়ায়াত সম্পর্কিত নিয়ম সবার থেকে ভিন্ন। স্বয়ং ইমাম যাহাবী (রহ) ইবনুল ক্বত্তানের নিয়মটি এভাবে উল্লেখ করেছেন:
فإن ابن القطان يتكلم في كل من لم يقل فيه إمام عاصر ذاك الرجل أو أخذ عمن عاصره ما يدل على عدالته .
“অর্থাৎ ইবনুল ক্বত্তান এমন প্রত্যেক রাবীর প্রতি কালাম করেছেন, যাদের সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িক ইমামদের থেকে বর্ণিত হয়নি, কিংবা সমসাময়িক ইমামদের থেকে তার আদালতের দলিল বর্ণিত হয়নি।” [মিযানুল ই‘তিদাল ১/৫৫৬]
এ ছাড়াও উল্লিখিত স্থানে ইমাম যাহাবী (রহ) ইমাম ইবনুল ক্বত্তানের উপর আপত্তি করে বলেছেন:
ففي الصحيحين من هذا النمط خلق كثير مستورون ما ضعفهم أحد ولا هم بمجاهيل
“সহীহাইনে (বুখারী-মুসলিমে) এমন অনেকসংখ্যক মাসতুর রাবী আছেন, যাদেরকে না কোনো মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন, আর না মাজহুল বলেছেন।” [মিযানুল ই‘তিদাল ১/৫৫৬]
বুঝা গেল, ইমাম যাহাবী (রহ)-এর এই উক্তিটি ছিল সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সম্পর্কিত। কেননা তাদের বর্ণনাকারীদের তাওসিক্ব ক্বাতঈ, যদিও তাদের তাওসিক্ব আমাদের জানা নেই। এর কারণ হলো, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহ)-এর শর্তের মধ্যে একটি শর্ত, তারা সিক্বাহ রাবী ছাড়া কারো কাছ থেকে দলিল নেননি। [হাদয়ুস সারি পৃ. ১১ ও ৪০৩, তাদরিবুর রাবী ১/১২৪ ও ১৩০, কওয়ায়িদুত তাহদিস পৃ. ১৯০-৯৩ প্রভৃতি]
বরং ইমাম যাহাবী স্বয়ং ‘আল-মাওয়াক্বিযাহ’ (পৃ. ৭৮)-এ উক্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন:
الثقة من وثقه كثير ولم يضعف، ودونه من لم يوثق ولا ضعف، فإن خرّج حديث هذا في الصحيحين فهو موثق بذلك
“সিক্বাহ রাবী তিনি – যার প্রতি অধিকাংশ তাওসিক্ব করেছেন, তাঁকে যঈফ বলা যাবে না। এ ছাড়া ঐ সমস্ত রাবী যাদের সিক্বাহ বা যঈফ হওয়াটা বর্ণিত হয়নি, কিন্তু তাদের হাদীস সহীহাইনের অন্তর্ভুক্ত তাঁরা সবাই সিক্বাহ গণ্য হবে।” [যাওয়াবিতে আল-জারাহ ওয়াত তা’দিল লিদ-দুকতুর আব্দুল আযিয বিন মুহাম্মাদ পৃ. ৮৮]
বুঝা গেল, ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উদ্ধৃতি দ্বারা সমস্ত রাবীকে একই হুকুম গণ্য করাটা ভুল। এরই ভিত্তিতে তিনি হায়সাম বিন ইমরানকে ক্বিয়াস করে তাঁকে হুজ্জাত গণ্য করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত: স্বয়ং হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘লিসানুল মিযানে’ (৫/৩) ইমাম যাহাবী (রহ)-এর আলোচ্য উদ্ধৃতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন:
وهذا الذي نسبه إلى آخره لا ينازع فيه بل ليس كذلك بل هذا شيء نادر لأن غالبهم معرفون بالثقة إلا من خرجا له في الاستشهاد
“যা কিছু (ইমাম যাহাবী (রহ)) শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন, এতে না কোনো আপত্তি আছে। আবার না সবক্ষেত্রে বিষয়টি এমন হবে। বরং বিষয়টি নাদির (বিরল)। কেননা অধিকাংশ রাবী সিক্বাহ হওয়ার সাথে সাথে প্রসিদ্ধ হতে হবে। তবে যাদের বর্ণনা (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে) শাহেদ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে (তারা ছাড়া)।” [আরো দ্র: ফতহুল মুগিস ১/৩২৩]
বুঝা গেল, ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উদ্ধৃতি সব ধরনের (বা কিতাবের) বর্ণনা সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। অন্যথায় যে সমস্ত রাবী এ মর্যাদাতে উত্তীর্ণ, তাদের সবাইকে সিক্বাহ বা সদুক্ব গণ্য করতে হয়।
তৃতীয়ত: ইমাম যাহাবী (রহ) কর্তৃক ‘মালিক বিন খায়ের’-কে ‘মাহাল্লুহুস সিদক্ব’ বলাটা ইমাম হাকিমের তাওসিক্বের উপর নির্ভর করার কারণে হয়েছে, আল্লাহই সর্বজ্ঞ। কেননা ইমাম হাকিম (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন (মুস্তাদরাকে হাকিম ১/১২২)। আর ইমাম হাকিমের উপর নির্ভর করেই যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন (তালখিস মুস্তাদরাকে হাকিম ১/১২২)। আর যদিও-বা ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ (৭/৪৬) উল্লেখ করেছেন। আর তার উপর কোনো জারাহও নেই। এ কারণে নীতিমালার ভিত্তিতে তিনি তাঁকে সিক্বাহ হিসেবে গণ্য করেছেন।
জ্ঞাতব্য: ‘সিক্বাহ’ ও ‘মাহাল্লুহুস সিদক্ব’-এর মধ্যে স্তরগত পার্থক্য অনেক। [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫১-৫২]
যাদের বর্ণনা ইমাম আলবানী (রহ) উল্লেখ করেছেন তারা হলেন:
১) আহমাদ বিন সাবিত আল-জাহদারি, ২) আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-বসরি, ৩) আহমাদ বিন মুসাররাফ আল-ইয়ামা, ৪) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহ বিন হারিস আল-জামহি, ৫) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-আসাদি, ৬) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন মুআবিয়াহ বিন আব্দুল্লাহ, ৭) ইসহাক্ব বিন ইবরাহিম বিন দাউদ আস-সিওয়াক্ব, ৮) ইসমাঈল বিন ইবরাহিম আল-বালিসি, ৯) ইসমাঈল বিন মাসউদ বিন হাকাম আয-যুরক্বি, ১০) আসওয়াদ বিন সাঈদ আল-হামদানি। [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২০৪]
অতঃপর মালিক বিন খায়ের যিয়াদি সম্পর্কে ইমাম যাহাবী থেকে নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি দিয়েছেন:
" محله الصدق . . . روى عنه حيوة بن شريح ، وابن وهب ، وزيد بن الحباب ، ورشدين . قال ابن القطان : هو ممن لم تثبت عدالته . . . يريد أنه ما نص أحد على أنه ثقة . . . والجمهور على أن من كان من المشايخ قد روى عنه جماعة ، ولم يأت بما ينكر عليه ، أن حديثه صحيح "
“মালিক বিন খায়ের মাহাল্লুহুস সিদক্ব। … তার থেকে বর্ণনা করেছেন হায়ওয়াহ বিন শারিহ, ইবনে ওয়াহহাব, যায়েদ বিন হাব্বাব ও রুশদায়ন। ইবনুল ক্বত্তান বলেন: সে ঐ সমস্ত রাবীদের অন্তর্ভুক্ত যাদের আদালত (বিশ্বস্ততা) প্রমাণিত নয়। … এর দাবি হলো, সিক্বাহ হওয়ার ক্ষেত্রে তার পক্ষে একটিও দলিল নেই। … জুমহুরের নিকট যার কাছ থেকে মাশায়েখের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন, তার ক্ষেত্রে মুনকার বর্ণনা প্রযোজ্য নয়। তার হাদীস সহীহ হিসেবে গণ্য।” [তামামুল মিন্নাহ পৃ. ২০৪]
এখন আমরা ইমাম আলবানী (রহ)-এর উপস্থাপনাকে দু’টি স্তরে বিস্তারিত জবাব দেব। প্রথমত, ইমাম সাহেব যে দশ জন রাবীর বর্ণনা পেশ করেছেন, তার অধিকাংশের তাওসিক্ব বর্ণিত হয়েছে। যেমন –
ক) রাবী নং ৩, ৭, ৮-কে ইমাম ইবনে হিব্বান কেবল ‘কিতাবুস সিক্বাতে’-ই উল্লেখ করেননি। বরং ‘মুস্তাকিমুল হাদীস’-ও বলেছেন। [তাহযিবুত তাহযিব পৃ. ১/১১৬, ১৭৮ ও ২৪৫]
খ) রাবী নং ১ অর্থাৎ- আহমাদ বিন সাবিত আল-জাহদারি-কে ‘মুস্তাক্বিমুল আমর ফিল হাদীস’ বলা হয়েছে। [তাহযিব ১/১৮]
গ) রাবী নং ২ অর্থাৎ- আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-বসরি-কে ইমাম আবু হাতিম (রহ) ও তাঁর ছেলে উভয়েই ‘সদুক্ব’ বলেছেন। আর ইবনে হিব্বান বলেছেন: ‘তিনি মুতক্বিন ছিলেন।’ [তাহযিবুত তাহযিব ১/৬৯, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৭৪]
এক্ষণে যখন উসূলে হাদীস মোতাবেক তাদের প্রতি জারাহ বর্ণিত হয়নি, আর অন্যান্য ইমামের পক্ষ থেকে তাদের তাওসিক্ব বর্ণিত হয়েছে (ইবনে হিব্বান কর্তৃক ‘মুস্তাক্বিমুল হাদীস’ বলা। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তিনি তার হাদীস সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জ্ঞাত)। ফলে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘সদুক্ব’ গণ্য করেছেন। বাকি থাকল ঐ বর্ণনা, যা ইবনে হিব্বান কেবল তাঁর কিতাব ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোনো হুকুম লাগাননি। হাফেয ইবনে হাজার (রহ) কর্তৃক তাঁকে ‘সদুক্ব’ বলাটা আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা হাফেয সাহেব এক্ষেত্রে বর্ণনাকে সাধারণভাবে ‘মাক্ববুল’ [. মাক্ববুল : এটি হাফেয ইবনে হাজার (রহ) এর নিজস্ব পরিভাষা। কেননা ‘আত-তাক্বরিবে’ (পৃ. ১০) বলেছেন : من ليس له من الحديث إلا قليل، و لم يثبت فيه ما يترك حديثه من أجله، و إليه الإشارة بلفظ : مقبول، حيث يتابع , و إلا فلين الحديث “যার থেকে সামান্য হাদীস ছাড়া কিছু বর্ণিত হয়নি। আর এটাও প্রমাণ হয়নি যে, তার থেকে উন্নতদের হাদীস তিনি ছেড়ে দেননি। এক্ষেত্রে তার হাদীসের ব্যাপারে ইশারা করা হয় : মাক্ববুল, হায়সু ইয়ুতাবি‘ (অনুসারী); অন্যথায় তা লাইয়িনুল হাদীস হয়।”তেমনি মাসতুর বা মাজহুল রাবী সম্পর্কে বলেছেন : من روى عنه أكثر من واحد ولم يوثق وإليه الاشارة بلفظ " مستور " أو " مجهول الحال "“যার থেকে একের অধিক মুহাদ্দিস বর্ণনা করেছেন এবং তার প্রতি তাওসিক্বের শব্দ ব্যবহার করেননি, সেক্ষেত্রে সে ‘মাসতুর’ বা ‘মাজহুলুল হাল’।] বা ‘মাসুতর’ থেকে অধিক মর্যাদা দেননি। বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য আমি নিচে এ সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি:
১) আহমাদ বিন আইয়ুব বিন রাশিদ আল-বসরি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন - ইমাম বুখারী (রহ) (আদাবুল মুফরাদে’), আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বাল (রহ), আবু যুরআহ (রহ), হাসান বিন আলী আল-মু‘আম্মারি (রহ), আবু ইয়া‘লা (রহ), আলী বিন হুসাইন বিন জুনাইদ (রহ)। আর ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ বর্ণনা করেছেন।
অথচ এ সমস্ত জলিলুল ক্বদর ইমাম তাঁর থেকে বর্ণনা করা এবং ইবনে হিব্বানের ‘সিক্বাহ’ বলার পরও হাফেয ইবনে হাজার তাঁকে মাক্ববুল বলেছেন। [তাক্বরিব: ১১ পৃ.]
২) ইবরাহিম বিন মারযুক্ব আস-সাক্বাফি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– আবু বাকার (বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ) বিন আবুল আসওয়াদ, মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আল-খাযায়ি, সাঈদ বিন আওন ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন (রহ)। ইমাম আবু হাতিম (রহ) বলেছেন: ‘শায়েখ, তার হাদীস লেখা হয়।’ আর ইবনে হিব্বান তাঁর ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [আত-তাহযিব ১/১৪২, আল-জারাহ ওয়াত তা’দিল ২/১৩৭, তারিখে কাবির লিল-বুখারী ১/৩৩০]
অথচ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব:২৩ পৃ.]
৩) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী বিন আবু তালিব: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – তাঁর ছেলে ঈসা বিন আব্দুল্লাহ, হুসাইন বিন যায়েদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন আবি ফাসিক ও আবু উসামাহ প্রমুখ। ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি তাঁকে ‘মধ্যপন্থী’ বলেছেন।’[তাহ. তাহযিব ৬/১৬]
অথচ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব: ১৮৮]
৪) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াক্বিদ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার বিন খাত্তাব আল-মাদানি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– উমার বিন মুহাম্মাদ বিন ইয়াযিদ, আব্দুল্লাহ বিন আবি বাকার বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হাযম, ফুযায়েল বিন গাযওয়ান, ইবরাহিম বিম মুজমা‘, সাঈদ বিন ইবরাহিম, মুহাম্মাদ বিন জা‘ফার, ওয়ালিদ বিন মুসলিম প্রমুখ। তিনি সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ’র রাবী। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৬/৬০, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/১৯০]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন।[আত-তাক্বরিব: ১৯২-৯৩ পৃ.]
৫) আব্দুল্লাহ বিন ওয়াযাহ বিন সাঈদ আল-লু‘লুয়ি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– ইমাম তিরমিযী, আবু হাতিম, উমার বিন মুহাম্মাদ বিন বাজিরিল বাজিরি, ইবনে খুযায়মাহ, ইয়াক্বুব বিন সুফিয়ান, মুসা বিন ইসহাক্ব, ইবনে আবিদ দুনইয়া, আবূ বাকার আহমাদ বিন আমর বিন আব্দুল খালিক্ব বাযযার, আহমাদ বিন হুসাইন আল-আওফি, ইয়াহইয়া বিন মুহাম্মাদ বিন সাঈদ প্রমুখ। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহ) তার হাদীসকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন। [তাহযিব ৬/৬৩, তিরমিযী ৪/৩১৪ হা/১৯৮৯]
এরপরেও হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ থেকে অধিক স্তরের বর্ণনা করেননি। [আত-তাক্বরিব: ১৯৩ পৃ.]
৬) আব্দুল আ‘লা বিন আব্দুল্লাহ বিন আমির আল-বসরি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– খালিদ আল-হিযা, হারিস বিন আব্দুর রহমান, হাসান বিন ক্বাসিম আল-আরযুক্বি, আমর বিন আসবাগ ও মুখাল্লিদ ওয়ালিদ আবু আসিম। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন ...। “ [তাহযিব: ৬/৮৭]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৫ পৃ.]
৭) আব্দুল হামিদ বিন বিকার আস-সালমা আদ-দামেশকি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– আবু দাউদ তাঁর ‘মারাসিলে’, নাসাঈ ‘মুসনাদে মালিকে’। তা ছাড়া ইমাম আবু যুরআহ রাযি, আবু আব্দুল মালিক আহমাদ বিন ইবরাহিম, আব্বাস বিন ওয়ালিদ, ইয়াযিদ বিন মুহাম্মাদ, আহমাদ বিন মা‘লা বিন ইয়াযিদ, সা‘দ বিন মুহাম্মাদ আল-বায়রুতাও বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহযিবুত তাহযিব ৬/৯৯, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/৯]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৬ পৃ.]
৮) আব্দ রব্বিহি বিন খালিদ বিন আব্দুল মালিক আবু মুগলাস বসরি: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইবনে মাজাহ, ইবনে আবি আসিম, ইবনে আবিদ দুনইয়া, আল-মুআম্মারি, ইয়াক্বুব বিন সুফিয়ান, মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাবিব আল-রুক্বা প্রমুখ। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [তাহ. তাহযিব ৬/১১৫]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৬ পৃ.]
৯) আব্দুর রহমান বিন বাশার বিন মাসউদ আল-আনসারি: ‘তাহযিব’ ও ‘আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিলে’ তার পিতার নাম বাশার লেখা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘তাক্বরিবে’ বাশির লেখা হয়েছে। এখানে বাশার-ই সহীহ।
সে মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ‘র রাবী। তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইবরাহিম নাখঈ, মুহাম্মাদ বিন সিরিন, মুসা বিন আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযিদ আল-খাতমি, জা‘ফার বিন আবু ওয়াহশিয়া, রিজাউল আনসারি ও আবু হুসাইন। ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। আর ইবনে সা‘দ তাঁকে ‘কম হাদীস বর্ণনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৬/১৩২, জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/২১৪-১৫]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ১৯৯ পৃ.]
১০) মুসাওওয়ার বিন রিফাআহ বিন আবি মালিক আল-কুরযা: তার থেকে বর্ণনা করেছেন– ইমাম মালেক, ইবনে ইসহাক্ব, আবু আলকামা আল-ফারাওয়া, আবু বাকার বিন আবি সাবরাহ, ইবরাহিম বিন সামামাহ, দাউদ বিন সিনান, আব্দুর রহমান বিন উরওয়াহ, ইবরাহিম বিন সা‘দ বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ বর্ণনা করেছেন। [তাহযিব ১০/১৩৬, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৮/২৯৭-৮, তারিখুল কাবির ৭/৪১১]
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন। [আত-তাক্বরিব: ৩৩৭ পৃ.]
উক্ত উদাহরণগুলো থেকে এটা সুর্যের মতো সুস্পষ্ট, এ ধরনের রাবী – যাদের থেকে একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোনো মুহাদ্দিসের পক্ষ থেকে তার তাওসিক্ব প্রমাণিত নয়। আবার হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর নিকট তিনি ‘মাক্ববুল’। এর দাবি হলো, যদি তার মুতাবাআত থাকে, তবে তিনি ‘মাক্ববুল’। অন্যথায় তিনি ‘লাইয়িনুল হাদীস’।
… উক্ত উদাহরণের আলোকে আমরা এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, হাফেয ইবনে হাজার (রহ) হায়সাম বিন ইমরান-কে সর্বোচ্চ মাক্ববুল বলেছেন।
এ কারণে ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক এ ধরনের রাবীকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলাটা অনেক বড় …।
ইমাম আলবানী (রহ)-এর পক্ষ থেকে ইমাম যাহাবী (রহ)-এর বক্তব্যকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করাটাও সংগত হয়নি।
প্রথমত: ইমাম আলবানী (রহ) উদ্ধৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মানেননি। যে বক্তব্য ইমাম আলবানী (রহ) উল্লেখ করেননি, তা হলো:
وفي رواة " الصحيحين " عدد كثير ما علمنا أن أحدا نص على توثيقهم والجمهور على أن من كان من المشايخ قد روى عنه جماعة ولم يأت بما ينكر عليه أن حديثه صحيح
“সহীহাইনে (বুখারী-মুসলিমে) এমন অনেক সংখ্যক বর্ণনা আছে যাদের (রাবীদের) সম্পর্কে আমরা জানি না তাদের সিক্বাহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো নস (প্রমাণ) রয়েছে। জুমহুরের নিকট যে সমস্ত রাবী মাশায়েখের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন তাদের থেকে কোনো জামাআত বর্ণনা করলে সেটা মুনকার হয় না, কেননা তাদের হাদীস সহীহ।” [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/৪২৬]
ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উক্তিটি ইবনুল ক্বত্তানের উক্তি “ هو ممن لم يثبت عدالته ” -এর খণ্ডনে বর্ণিত হয়েছে। কেননা ইমাম ইবনুল ক্বত্তানের রেওয়ায়াত সম্পর্কিত নিয়ম সবার থেকে ভিন্ন। স্বয়ং ইমাম যাহাবী (রহ) ইবনুল ক্বত্তানের নিয়মটি এভাবে উল্লেখ করেছেন:
فإن ابن القطان يتكلم في كل من لم يقل فيه إمام عاصر ذاك الرجل أو أخذ عمن عاصره ما يدل على عدالته .
“অর্থাৎ ইবনুল ক্বত্তান এমন প্রত্যেক রাবীর প্রতি কালাম করেছেন, যাদের সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িক ইমামদের থেকে বর্ণিত হয়নি, কিংবা সমসাময়িক ইমামদের থেকে তার আদালতের দলিল বর্ণিত হয়নি।” [মিযানুল ই‘তিদাল ১/৫৫৬]
এ ছাড়াও উল্লিখিত স্থানে ইমাম যাহাবী (রহ) ইমাম ইবনুল ক্বত্তানের উপর আপত্তি করে বলেছেন:
ففي الصحيحين من هذا النمط خلق كثير مستورون ما ضعفهم أحد ولا هم بمجاهيل
“সহীহাইনে (বুখারী-মুসলিমে) এমন অনেকসংখ্যক মাসতুর রাবী আছেন, যাদেরকে না কোনো মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন, আর না মাজহুল বলেছেন।” [মিযানুল ই‘তিদাল ১/৫৫৬]
বুঝা গেল, ইমাম যাহাবী (রহ)-এর এই উক্তিটি ছিল সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সম্পর্কিত। কেননা তাদের বর্ণনাকারীদের তাওসিক্ব ক্বাতঈ, যদিও তাদের তাওসিক্ব আমাদের জানা নেই। এর কারণ হলো, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহ)-এর শর্তের মধ্যে একটি শর্ত, তারা সিক্বাহ রাবী ছাড়া কারো কাছ থেকে দলিল নেননি। [হাদয়ুস সারি পৃ. ১১ ও ৪০৩, তাদরিবুর রাবী ১/১২৪ ও ১৩০, কওয়ায়িদুত তাহদিস পৃ. ১৯০-৯৩ প্রভৃতি]
বরং ইমাম যাহাবী স্বয়ং ‘আল-মাওয়াক্বিযাহ’ (পৃ. ৭৮)-এ উক্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন:
الثقة من وثقه كثير ولم يضعف، ودونه من لم يوثق ولا ضعف، فإن خرّج حديث هذا في الصحيحين فهو موثق بذلك
“সিক্বাহ রাবী তিনি – যার প্রতি অধিকাংশ তাওসিক্ব করেছেন, তাঁকে যঈফ বলা যাবে না। এ ছাড়া ঐ সমস্ত রাবী যাদের সিক্বাহ বা যঈফ হওয়াটা বর্ণিত হয়নি, কিন্তু তাদের হাদীস সহীহাইনের অন্তর্ভুক্ত তাঁরা সবাই সিক্বাহ গণ্য হবে।” [যাওয়াবিতে আল-জারাহ ওয়াত তা’দিল লিদ-দুকতুর আব্দুল আযিয বিন মুহাম্মাদ পৃ. ৮৮]
বুঝা গেল, ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উদ্ধৃতি দ্বারা সমস্ত রাবীকে একই হুকুম গণ্য করাটা ভুল। এরই ভিত্তিতে তিনি হায়সাম বিন ইমরানকে ক্বিয়াস করে তাঁকে হুজ্জাত গণ্য করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত: স্বয়ং হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘লিসানুল মিযানে’ (৫/৩) ইমাম যাহাবী (রহ)-এর আলোচ্য উদ্ধৃতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন:
وهذا الذي نسبه إلى آخره لا ينازع فيه بل ليس كذلك بل هذا شيء نادر لأن غالبهم معرفون بالثقة إلا من خرجا له في الاستشهاد
“যা কিছু (ইমাম যাহাবী (রহ)) শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন, এতে না কোনো আপত্তি আছে। আবার না সবক্ষেত্রে বিষয়টি এমন হবে। বরং বিষয়টি নাদির (বিরল)। কেননা অধিকাংশ রাবী সিক্বাহ হওয়ার সাথে সাথে প্রসিদ্ধ হতে হবে। তবে যাদের বর্ণনা (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে) শাহেদ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে (তারা ছাড়া)।” [আরো দ্র: ফতহুল মুগিস ১/৩২৩]
বুঝা গেল, ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উদ্ধৃতি সব ধরনের (বা কিতাবের) বর্ণনা সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। অন্যথায় যে সমস্ত রাবী এ মর্যাদাতে উত্তীর্ণ, তাদের সবাইকে সিক্বাহ বা সদুক্ব গণ্য করতে হয়।
তৃতীয়ত: ইমাম যাহাবী (রহ) কর্তৃক ‘মালিক বিন খায়ের’-কে ‘মাহাল্লুহুস সিদক্ব’ বলাটা ইমাম হাকিমের তাওসিক্বের উপর নির্ভর করার কারণে হয়েছে, আল্লাহই সর্বজ্ঞ। কেননা ইমাম হাকিম (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন (মুস্তাদরাকে হাকিম ১/১২২)। আর ইমাম হাকিমের উপর নির্ভর করেই যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন (তালখিস মুস্তাদরাকে হাকিম ১/১২২)। আর যদিও-বা ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ (৭/৪৬) উল্লেখ করেছেন। আর তার উপর কোনো জারাহও নেই। এ কারণে নীতিমালার ভিত্তিতে তিনি তাঁকে সিক্বাহ হিসেবে গণ্য করেছেন।
জ্ঞাতব্য: ‘সিক্বাহ’ ও ‘মাহাল্লুহুস সিদক্ব’-এর মধ্যে স্তরগত পার্থক্য অনেক। [তাইসিরু মুসতালাহুল হাদীস পৃ. ১৫১-৫২]
যদি ইমাম আলবানী (তাঁর নিজস্ব চিন্তা) ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উক্তির আলোকে সমস্ত রাবীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। সেক্ষেত্রে (একই বৈশিষ্ট্যের) ঐ সমস্ত বর্ণনার কী হবে, যা ইমাম আলবানী (রহ) জারাহ করেছেন এবং তাওসিক্ব না থাকার কারণে যঈফ হিসেবে গণ্য করেছেন? এর কয়েকটি উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহ বিন হারিস আল-জামহা: তিনি ঐ সব রাবীর অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে ইমাম আলবানী (রহ) নিজের নিয়মকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উদাহরণে হিসেবে পেশ করেছেন। [পূর্বে ‘তামামুল মিন্নাহ’ সূত্রে উল্লিখিত ৪ নং রাবী]
এই রাবী সম্পর্কে ইমাম আলবানী (রহ) লিখেছেন:
قلت : وهو ابن عبد الله بن الحارث بن حاطب الجمحي، ترجمه ابن أبي حاتم (١ / ١١٠ / ١ ) ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا
“আমি (আলবানী) বলছি: তিনি ইবনে আব্দুল্লাহ বিন হারিস বিন হাতিব আল-জামহা। ইবনে হাতিম (১/১১০/১) তাঁর ‘তরজমাতে’ তিনি তার সম্পর্কে না জারাহ করেছেন, আর না তা‘দিল করেছেন।”
অতঃপর ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উক্তি: ما علمت فيه جرحا ‘তার জারাহ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ –এর জবাবে লিখেছেন:
قلت : فقد يقال فهل علمت فيه توثيقا؟ فإن عدم الجرح لا يستلزم التوثيق كما لا يخفى
“আমি (আলবানী) বলছি: সেক্ষেত্রে (জবাবে) বলা হবে, তোমরা কি তার ব্যাপারে তাওসিক্ব জানো? তার জারাহ না থাকাটা তাওসিক্ব হওয়াটা বাধ্যতামূলক হয় না। (এ নিয়মটি) অস্পষ্ট নয়।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২১ হা/৯২০]
সুবহানাল্লাহ! আমরাও এটিই বলছি। এ ধরনের রাবী কীভাবে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হতে পারে, যখন তার তাওসিক্বই নেই।
স্বয়ং আলবানী (রহ) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহর বর্ণনাকে যঈফ হিসেবে গণ্য করেছেন। [সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৯২০, তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/২৭২, যঈফ জামে‘ সগির পৃ. ৯০৪ হা/২৬২৫]
অথচ এক্ষেত্রে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) ও হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর ‘তাওসিক্ব’ গ্রহণ করেননি।
২) আবু তালহা আসদা: তার থেকে পাঁচ জন সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করেছেন: (তাহযিবুত তাহযিব: ১২/১৫৪)
ক) আব্দুল মালিক বিন উমাইর – সিক্বাহ, ফক্বিহ, পরবর্তী কালে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, সম্ভবত তাদলিসকারী। [তাক্বরিব: ২১৯]
খ) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন হাতিব – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ২২ পৃ.]
গ) আ‘মাশ (সুলায়মান বিন মিহরান) – সিক্বাহ, হাফিয… তাদলিসকারী। [তাক্বরিব: ১৩৬ পৃ.]
ঘ) রাকিন বিন রাবী‘ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ১০৪ পৃ.]
ঙ) আবুল উমাইশ উতবাহ বিন আব্দুল্লাহ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ২৩২ পৃ.]
ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিয়ম মোতাবেক এই রাবী ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হয়। কেননা তার থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ (৫/৫৪৩) উল্লেখ করেছেন।
অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ) নিজের নিয়মটি থেকে মুখ ফিরিয়ে ইমাম ইরাক্বি (রহ)-এর উক্তি ‘এর সনদ জাইয়েদ’-কে খণ্ডন করে বলেছেন:
قلت : كلا ، فإن أبا طلحة الأسدى لم يوثقه أحد . وفى (( التقريب )) للحافظ ابن حجر إنه : (( مقبول )) ، يعنى عند المتابعة ، وإلا فلين الحديث
“আমি (আলবানী) বলছি: এটা কখনোই (জাইয়েদ) নয়। কেননা আবু তালহাহ আসদা’র কোনো তাওসিক্ব নেই। আর ইবনে হাজার (রহ) ‘তাক্বরিবে’ তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন, তথা মুতাবাআতের শর্তে উল্লেখ করেছেন। অন্যথায় সে লাইয়িন (যঈফ)।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ১/২১২]
তা ছাড়া তিনি তার বর্ণনাকে ‘তাহক্বীক্ব মিশকাত’ (৩/১৪৩২ হা/৫১৮৪) ও ‘যঈফ জামে সগিরে’ (১২৩০) যঈফ গণ্য করেছেন।
৩) সালামাহ বিন বিশর বিন সায়ফি আশ-শামি দামেশকি: ইমাম আলবানী (রহ) তার সম্পর্কে লিখেছেন,
مجهول الحال ولم يوثقه غير بن حبان
“মাজহুলুল হাল, ইবনে হিব্বান ছাড়া কেউ তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেননি।” [গায়াতুল মারাম পৃ. ১৮৭]
অথচ সালামাহ বিন বিশর থেকে পাঁচ জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হলেন:
ক) ইয়া‘ক্বুব বিন ইসহাক্ব আল-হাযরামি – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ৩৮৬ পৃ.]
খ) সুলায়মান বিন আব্দুর রহমান – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ১৩৫ পৃ.]
গ) মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আল-ফিরইয়াবি –সিক্বাহ ফাযেল।[তাক্বরিব: ৩২৫]
ঘ) দাউদ বিন রশিদ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ৯৫ পৃ.]
উক্ত চারজনের বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন ‘তাহযিবুত তাহযিব’ (৪/১২৫)।
ঙ) আব্দুর রহমান বিন নাফে‘ …। [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৪/১৫৭]
ইমাম আবু যুরআহ (রহ) আব্দুর রহমান বিন নাফে‘-কে সদুক্ব বলেছেন। [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/২৯৪]
আলোচ্য রাবী সালামাহ বিন বাশারকে ইবনে হিব্বান সিক্বাহ গণ্য করেছেন। [তাহযিব ৪/১২৫]
অদ্ভুত মিল: হায়সাম বিন ইমরান থেকেও পাঁচ জন সিক্বাহ সদুক্ব রাবী বর্ণনা করেছেন। আবার সালামাহ বিন বিশর থেকেও পাঁচ জন রাবী বর্ণনা করেছেন। এছাড়া উভয়কেই ইবনে হিব্বান সিক্বাহ বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, শায়েখ আলবানী (রহ) সালামাহ বিন বিশরকে ‘মাজহুলুল হাল’ বলেছেন। পক্ষান্তরে হায়সামকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ গণ্য করেছেন। এ ধরনের অদ্ভুত নিয়ম সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই, আল্লাহই সর্বজ্ঞ। যখন কোনো নিয়ম হবে, তখন তো সেটা সবার জন্য একই নিয়ম হবে। বিভিন্ন হবে না (তা হলে তাঁকে নিয়ম বলা যায় না)।
৪) আহমাদ বিন আইয়ুব বিন রাশিদ আল-বসরি: তাঁর থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। আবার ইবনে হিব্বান (রহ)-ও তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। [বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে]
কিন্তু ইমাম আলবানী (রহ) তাঁকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলার পরিবর্তে বলেছেন:
لم أجد من صرح بتضعيفه من الأئمة المتقدمين ، و لا من وثقه منهم ، نعم أورده ابن حبان في " الثقات " و قال : " ربما أغرب " ، و هذا ليس بجرح كما أن إيراده إياه في " الثقات " ليس بتوثيق معتمد ، كما سبق التنبيه عليه مرارا ، فالحق أن الرجل في عداد مجهولي العدالة ، و لذلك لم يوثقه الحافظ في " التقريب " و لم يضعفه ، بل قال فيه " مقبول " إشارة إلى ما ذكرته . و الله أعلم
“আমি জানি না, পূর্ববর্তী ইমামদের মধ্যে কেউ তাঁকে স্পষ্টভাবে যঈফ বা সিক্বাহ গণ্য করেছেন। অবশ্য ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন: ‘সে কখনও কখনও যঈফ হাদীস বর্ণনা করতো।’ কিন্তু এটা কোনো জারাহ নয়। তেমনি ইবনে হিব্বানের ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করাটাই তাওসিক্বের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। যেভাবে অনেকবার এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। হক্ব সিদ্ধান্ত হলো, এই রাবী ‘মাজহুলুল আদালত’ সম্পন্ন। এ কারণে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘তাক্বরিবে’ না তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন, আর না যঈফ বলেছেন। বরং মাক্ববুল বলাটা সেদিকে (মাজহুলুল আদালত) ইশারা করে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি, আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [সিলসিলাহ সহীহাহ ২/২৭ হা/৫৪৯]
যখন হক্ব এটাই যে, এ ধরনের রাবী যার থেকে ইমাম বুখারী, আবু যুরআহ, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল (রহ) প্রমুখ হাফিযুল হাদীস ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, এরপরেও তারা ‘মাজহুলুল আদালত’ সম্পন্ন। সেক্ষেত্রে হায়সাম বিন ইমরানের অবস্থার আর কী অবশিষ্ট থাকে?!
৫) মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী বিন আবু তালিব: তার থেকে রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। যেমন–
ক) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ – মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ১৮৮ পৃ.]
কিন্তু যাহাবী তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [আল-কাশিফ: ৫৯৫]
খ) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার – মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ২২৭ পৃ.]
গ) উমার বিন মুহাম্মাদ – মাজহুলুল হাল। [তাক্বরিব: ২৫৬ পৃ.]
ঘ) ইবনে জুরায়জ – সিক্বাহ, ফক্বীহ, ফাযেল …। [তাক্বরিব: ২১৯ পৃ.]
ঙ) ইবনে ইসহাক্ব (মুহাম্মদ) – সদুক …। [তাক্বরিব: ২৯০ পৃ.]
চ) ইয়াহইয়া বিন আইয়ুব। যদি সে…হয়, তবে সদুক্ব। [তাক্বরিব: ৩৭৩ পৃ.]
আর যদি সে আল-বাজলি হয়, হাফেয ইবনে হাজার তাঁকে لا بأس به ‘সমস্যা নেই’ ও ইমাম যাহাবী সিক্বাহ বলেছেন। [তাক্বরিব: ৩৭৩ পৃ., কাশিফ ২/৩৬১ পৃ.]
ছ) হিশাম বিন সা‘দ: সদুক্ব, তার ভুল হতো। [তাক্বরিব: ৩৬৪ পৃ.]
সে মুসলিম ও চারটি সুনানের (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) রাবী। ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে ‘হাসানুল হাদীস’ বলেছেন। [কাশিফ ২/৩৩৬]
জ) সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ… - মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ১২৩ পৃ.]
ঝ) মুহাম্মাদ বিন মুসা আল-কালমাবি - হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে সদুক্ব [. কিন্তু আমাদের (মূল লেখকের) তাহক্বীক্ব মোতাবেক সে সিক্বাহ। তাঁকে অনেক সংখ্যক ইমাম সিক্বাহ গণ্য করেছেন। সম্ভবত হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইমাম আবু হাতিম (রহ)-এর উপর ভিত্তি করে তাঁকে সদুক্ব বলেছেন। [তাহযিব ৯/৪২৩-২৪] তা ছাড়া তার থেকে আব্দুর রহমান বিন মাহদিও বর্ণনা করেছেন। আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, তিনি সিক্বাহ রাবী ছাড়া বর্ণনা করতেন না। [তাহযিব ২/২৫২, তাদরিব ১/৩১৭, ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস লিত-তাহতাভি পৃ. ২০৬, ২১৬, ফতহুল মুগিস লিসসাখাভি ১৩৪ পৃ., লিসানুল মিযান ১/৫১ প্রভৃতি]অর্থাৎ এই রাবী আব্দুর রহমান বিন মাহদির কাছে সিক্বাহ। উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে মুহাদ্দিসগণের অনেকে যেমন : ইমাম আহমাদ, … মালেক, শু‘বাহ, সুলায়মান বিন হারাব প্রমুখ আমাদের জন্য এভাবে বলেছেন যে, لا يروي إلا عن ثقة ‘সে সিক্বাহ ছাড়া বর্ণনা করেনি।’ এর দ্বারা রাবীকে সামগ্রিকভাবে সিক্বাহ গণ্য করা হয় না। বরং সে ঐ মুহাদ্দিসদের নিকট সিক্বাহ। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।] বলেছেন। [তাক্বরিব: ৩২০ পৃ.]
ঞ) সুফিয়ান সাওরি – সিক্বাহ, হাফেয, আবিদ, ইমাম, হুজ্জাত। [তাক্বরিব: ১২৮ পৃ.]
অর্থাৎ মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী থেকে ছয়জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ ও হাফেয ইবনে হিব্বান (রহ) ‘সদুক্ব’ বলেছেন। [. ইমাম আলবানী (রহ) যদিও দশ জন রাবীর সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার ও ইমাম যাহাবী (রহ) এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমরাও তেমনি আলোচ্য রাবীর ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্ধৃতি উল্লেখ করলাম। কিন্তু উসূলে হাদীস ও জারাহ ও তা‘দিলের নিয়মের ক্ষেত্রে এর গ্রহণযোগ্যতার কী আসে যায়।] [কাশিফ ২/২০৫, তাক্বরিব ৩১২ পৃ.]
তা ছাড়া ইমাম হাকিম (রহ) তাঁর হাদীসকে সহীহ বলেছেন ও যাহাবী (রহ) তাঁর সমর্থন করেছেন। [আল-মুস্তাদরাক ১/৪৩৬]
অথচ ইমাম আলবানী (রহ) সমস্ত কথাতে বাধ্যতামূলকভাবে বলেছেন:
قلت : وفي هذا نظر، لأن محمد بن عمر بن علي ليس بالمشهور، وقد ترجمه ابن أبي حاتم ( ٨١ / ١٨ /١/٤) ولم يذكر فيه جرحاً ولا تعديلاً . وأما ابن حبان فذكره في " الثقات " على قاعدته ...
“আমি (আলবানী) বলছি: এতে নযর (আপত্তি) আছে। কেননা মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী প্রসিদ্ধ নন। ইবনে আবু হাতিম (৪/১/১৮/৮১) তার জীবনী আলোচনা করে না জারাহ করেছেন, আর না তা‘দিল করেছেন। আর ইবনে হিব্বান তাঁর নিয়মানুযায়ী ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন।…”
অতঃপর ইবনুল ক্বত্তানের স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করার পর লিখেছেন: وهذا الذي يميل القلب اليه لجهالة “তার দুর্বল হওয়ার দিকেই হৃদয় ধাবিত হচ্ছে, মাজহুল হওয়ার কারণে।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২১৯ হা/১০৯৯]
অর্থাৎ ইমাম আলবানী (রহ) এক্ষেত্রে তাঁর আলোচ্য উসূলটি গ্রহণ করেননি।
৬) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আবু তালিব: এই রাবী সম্পর্কে আলোচ্য পুস্তিকাটিতে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, ইবনে আবি ফাদিক, আবু উসামাহ প্রমুখ সিক্বাহ সদুক্ব রাবী। ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁকে সিক্বাহ এবং ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি (রহ) তাঁকে وسط ‘মধ্যপন্থী’ [. وسط (মধ্যপন্থী) – তাওসিক্বের বাক্য। যেমনটা ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি অধিকাংশ রাবীদের ক্ষেত্রে বলেছেন। বিস্তারিত দেখুন : সুওয়ালাতে মুহাম্মাদ বিন উসমান বিন আবি শায়বাহ লিআলী ইবনুল মাদিনি ফিল জারাহ ওয়াত তা‘দিল (নং : ৩, ১২, ২৬, ৬১, ৮৩, ১০২, ১০৮, ১৭৪, ১৯৮, ২৬০)।হাফেয যাহাবী (রহ) ও অন্যরা ‘ وسط ’-কে তাওসিক্বের ঐ স্তরের গণ্য করেছেন, যার মধ্যে ‘মুহাল্লুহুস সাদিক্ব’, ‘জাইয়েদুল হাদীস’, ‘সালেহুল হাদীস’, ‘হাসানুল হাদীস’ প্রভৃতি উল্লেখ করেছেন। [মুক্বাদ্দামাহ মিযানুল ই‘তিদাল লিযযাহাবী ১/৪, তাদরিবুর রাবী ১/৩৬৫, রাফিউত তাকমিল পৃ. ১৩৮-৩৯, ক্বওয়ায়েদ ফি উলুমুল হাদীস পৃ. ২৪৯ প্রভৃতি]] বলেছেন। [তাহযিব: ৬/১৬]
আর ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [কাশিফ ১/৫৯৫]
ইমাম হাকিম তাঁর সনদকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তাঁর সমর্থন করেছেন। [মুস্তাদরাক ১/৪৩৬ সূত্রে সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২১৯]
অথচ ইমাম আলবানী (রহ) উক্ত তাওসিক্বগুলো অগ্রাহ্য করে বলেছেন:
وفيه علة أخرى، وهي أن عبد الله بن محمد بن عمر حاله نحو حال أبيه، لم يوثقه غير ابن حبان …
“(হাদীসটির সনদের) অপর একটি ত্রুটি হলো, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমারের অবস্থা তার পিতার অবস্থার মতন (মাজহুল)। ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া কেউ তাঁকে সিক্বাহ বলেননি।…” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২২০ হা/১০৯৯]
এখনও কি নীতিটিকে গ্রহণযোগ্য বলা যাবে?
৭) মুসা বিন আবু উসমান আত-তিবান: তিনি আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ’র রাবী। ইমাম বুখারী (রহ) তাঁর থেকে তা‘লিক্ব হাদীস বর্ণনা করেছেন। [সহীহ বুখারী – কিতাবুন নিকাহ بَاب لَا تَأْذَنِ الْمَرْأَةُ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا لِأَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِهِ (হা/৫১৯৬-এর পূর্বের অনুচ্ছেদের তা‘লিক্ব বর্ণনা), বিস্তারিত: তাহযিব: ১০/৩২১]
মুসা বিন উসমান থেকে বর্ণনা করেছেন – আবু যিনাদ (আব্দুল্লাহ বিন যাকওয়ান), মালিক বিন মুগাওওয়াল, শু‘বাহ, সুফিয়ান সওরি (রহ)। [তাহযিব ১০/৩২১, তারিখুল কাবির ৭/২৯০] উক্ত চার জনই জবরদস্ত সিক্বাহ।[তাক্বরিবুত তাহযিব পৃ. ৭৩, ১৭২, ৩২৭, ১৪৫, ১২৮ (ক্রমানুসারে)]
তা ছাড়া ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন এবং ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [কাশিফ ২/৩০৬, তাহযিব ১০/৩২১]
এরপরেও ইমাম আলবানী (রহ) মুসা বিন উসমানকে মাজহুল বলে সনদকে যঈফ গণ্য করেছেন। [সিলসিলাহ সহীহাহ ৪/৬৩]
৮) মুহাজির বিন আবু মুসলিম শামি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – ইমাম বুখারী (আদাবুল মুফরাদে), আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। তা ছাড়া চার জন গ্রহণযোগ্য রাবী যেমন– আমর বিন মুহাজির (সিক্বাহ), মুহাম্মাদ বিন মুহাজির (সিক্বাহ), মুআবিয়াহ বিন সালিহ আল-খাযরামি (সদুক, ভুল করতেন) এবং ওয়ালিদ বিন সুলায়মান বিন আবু সাইব (সিক্বাহ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তাহযিব ১০/২২৮, তাক্বরিব পৃ. ২৬৩, ৩২০, ৩৪১ ক্রমানুসারে]
উক্ত সিক্বাহ রাবীগণের তাঁর থেকে বর্ণনা করা এবং ইবনে হিব্বান (রহ) কর্তৃক সিক্বাহ বলা সত্ত্বেও ইমাম আলবানী (রহ) এই রাবীকে না ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলেছেন। আর না তার হাদীসকে হাসান বা সহীহ বলেছেন। বরং এর বিপরীতে তিনি বলেছেন:
قلت : هذا إسناد ضعيف من اجل المهاجر هذا فانه مجهول حال ترجمة ابن ابي حاتم في كتابه ...
“আমি (আলবানী) বলছি: এই সনদটি মুহাজিরের জন্য যঈফ। কেননা সে মাজহুলুল হাল। ইবনে আবু হাতিম (রহ) নিজের কিতাবে (৪/১/২৫৯-৬০) তার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো জারাহ বা তা‘দিল করেননি। আর ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁর অভ্যাসবশত তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। একইভাবে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে মাক্ববুল বলেছেন তথা মুতাবাআতের শর্তে। অন্যথায় সে লাইয়িনুল হাদীস। আর আমি তার মুতাবি‘ পায়নি। সুতরাং হাদীসটি যঈফ।” [গায়াতুল মারাম ১৫২ পৃ.]
এ ছাড়া ইমাম আলবানী (রহ) তার হাদীস যঈফ আবু দাউদে পৃ. ৩৮৩-৮৪ হা/৮৩৫, ইবনে মাজাহ পৃ. ১৫৩ হা/৪৩৭-তেও যঈফ বলেছেন।
৯) আমর বিন মালিক নুকরি [. আমর বিন মালিক নুকরি সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইমাম ইবনে হিব্বান থেকে يخطي ويغرب ‘ভুলকারী ও গরীব বর্ণনাকারী’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। (তাহযিব : ৮/৮৫) আর সম্ভবত এ কারণে ‘তাক্বরিবে’ (২৬২ পৃ.) ‘তার ভুল হতো’ বলেছেন। কিন্তু আমি ‘কিতাবুস সিক্বাতে’র প্রকাশিত সংস্করণে উক্ত শব্দ পায়নি। বরং এই শব্দটি আমর বিন মালিক আর-রাসিবি সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে। [কিতাবুস সিক্বাত ৭/২২৮, তাহযিব ৮/৮৪] সুতরাং হাফেয ইবনে হাজারের (রহ) তাঁর সম্পর্কে ‘তার ভুল হতো’ বলাটা সঠিক নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।জ্ঞাতব্য : জনাব হাফেয আব্দুর রউফ ‘হাদীসে ইবনে আব্বাস ’-এর তাখরিজে আমর বিন মালিক আন-নুকরি সম্পর্কে বলেছেন : ইবনে আদি (রহ) তাকে মুনকারুল হাদীস ও হাদীস-চোর বলেছেন। [কামেল লিইবনে আদি ৫/৭৯, ফালাহ দারাইন লিহাকিম বিন মুহাম্মাদ আশরাফ সিন্ধি পৃ. ৪৪] উল্লেখ্য যে, ইবনে আদি (রহ)-এর উক্ত জারাহ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) আমর বিন মালিক আর-রাসিবি’র তরজমা (বিবরণ)-এ উল্লেখ করেছেন। আর আমর বিন মালিক নুকরি সম্পর্কে ভুল হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। ইমাম ইবনুল আজমিও উক্ত জারাহ আমর বিন মালিক আর-রাসিবি’র তরজমাতে উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৮/৮৪, হাশিয়াহ আল-কাশিফ লি… ইবনুল আজমি বিতাহক্বিক্ব মুহাম্মাদ আওয়ামাহ ও আহমাদ মুহাম্মাদ নামারুল খতিব ৬/৮৭, লিসানুল মিযান ৪/৩৭৪ পৃ. নং: ১১০৭]সুতরাং আমর বিন নুকরি উক্ত জারাহ থেকে মুক্ত। আল্লাহই সর্বজ্ঞ]: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– তাঁর ছেলে ইয়াহইয়া (যঈফ), নুহ বিন ক্বায়েস (সদুক্ব, … শিয়া), মাহদি বিন মায়মুন (সিক্বাহ), সাঈদ বিন যায়দ (সদুক্ব, ভুল করতেন), হাম্মাদ বিন যায়েদ (সিক্বাহ সাবিত), মুখাল্লাদ বিন হুসাইন [. ‘তাহযিবে’ লেখা হয়েছে মুখাল্লাদ বিন হাসান, তিনি মাক্ববুল। কিন্তু আমর থেকে বর্ণনাকারী মুখাল্লাদ বিন হুসাইন হবেন (তাহযিব ১০/৬৫)। সম্ভবত তারা পৃথক ব্যক্তি। কিংবা এটাও হতে পারে যে, সে মুখাল্লাদ বিন হুসাইন। কিন্তু ভুলক্রমে মুখাল্লাদ বিন হাসান ছাপানো হয়েছে। সর্বোপরি মুখাল্লাদ বিন হুসাইনও আমর থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি সিক্বাহ।] (সিক্বাহ, ফাযিল), ইয়াযিদ বিন কা‘ব (মাজহুল), ইবাদ বিন ইবাদ (সিক্বাহ, ভুল করতেন), জা‘ফার বিন সুলায়মান বসরি (সদুক্ব, যাহিদ, …শিয়া) প্রমুখ। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তাহযিব ৮/৮৪-৮৫, তারিখে কাবির লিলবুখারী ৬/৩৭১, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/২৫৯, তাক্বরিব পৃ. ৩৭৮, ৩৪৯, ১২২, ৮২, ৩৩১, ৩৮৪, ১৬৩, ৩৬০, ৩৪৯, ১২২, ৮২, ৩৩১, ৩৮৪, ১৬৩, ৫৫-৫৬]
অর্থাৎ আমর বিন মালিক থেকে সাত জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। তাঁকে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘সদুক্ব ও ভুলকারী’ বলেছেন। [তাক্বরিব: ২৬২]
আর হাফেয যাহাবী وثق [. ...(কোনো একটি বইয়ের নাম রয়েছে, যতটা বুঝা যায় নামটি হবে : التبيين ) –এর প্রথম সংস্করণে ‘সিক্বাহ’ লেখা হয়েছে। কিন্তু সহীহ হলো وثق হবে। ইমাম যাহাবী তাঁর ‘কাশিফে’ وثق শব্দটি সম্ভবত ঐ সমস্ত রাবীর ক্ষেত্রে বলেছেন, যাদেরকে ইমাম ইবনে হিব্বান সিক্বাহ বলেছেন। এ ধরনের রাবী সাধারণত ‘লাইয়িনুল হাদীস’ হয়ে থাকে। আর যদি মুতাবাআত থাকে, তা হলে ‘মাক্ববুল’ হবে।] বলেছেন। [কাশিফ ২/৮৭]
তা ছাড়া ইমাম মুনযিরি (রহ) ও ইমাম হায়সামি (রহ) তার হাদীসকে হাসান বলেছেন। [আত-তারগিব ওয়াত তারহিব ১/৩৮২, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৪৮]
ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিয়ম মোতাবেক এ ধরনের রাবীর মান কমপক্ষে ‘সদুক্ব’। অথচ এরপরেও তিনি (রহ) লিখেছেন:
قلت : و فيما قالاه نظر , فإن عمرا هذا لم يوثقه غير ابن حبان (٧/ ٢٢٨ ، ٨ / ٤٨٧ ) و هو متساهل في التوثيق حتى أنه ليوثق المجهولين عند الأئمة النقاد كما سبق التنبيه على ذلك مرارا , فالقلب لا يطمئن لما تفرد بتوثيقه …
“আমি (আলবানি) বলছি: তাঁরা দু’জন (ইমাম মুনযিরি ও ইমাম হায়সামি) যাকিছু (তথা ‘হাসান’) বলেছেন তাতে নযর (আপত্তি) আছে। কেননা এই আমরকে ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া আর কেউ সিক্বাহ বলেননি। আর তিনি তাওসিক্ব বলা সম্পর্কে মুতাশাহিল (শিথিল)। এমনকি তিনি এমন রাবীদেরকে তাওসিক্ব করেছেন যারা বিশেষজ্ঞ ইমামদের নিকট মাজহুল। যেভাবে আমি পূর্বে বারবার উল্লেখ করেছি। সুতরাং ইবনে হিব্বানের একক তাওসিক্বে অন্তর শান্ত হয় না।…” [সিলসিলাহ যঈফাহ ১/১৩১, আরো দ্র: ইরওয়াউল গালিল ৩/২৫০, তামামুল মিন্নাহ পৃ. ১৩৮]
সম্মানিত পাঠক! ইনসাফের সাথে ভাবুন, যে রাবী সাত জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন, যাকে ইমাম ইবনে হাজার (রহ) সদুক্ব বলেছেন। আবার ইমাম মুনযিরি (রহ) ও ইমাম হায়সামি (রহ) তার হাদীসকে হাসান বলেছেন। তাঁকে তাওসিক্বের ক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ)-এর অন্তর শান্ত হয় না। অথচ (সাজদা থেকে উঠার সময় মুষ্টির উপর ভর করার বর্ণনাকারী) হায়সাম বিন ইমরান – যাকে না হাফেয ইবনে হাজার সদুক্ব বলেছেন, আর না কোনো মুহাদ্দিস তার হাদীস হাসান বলেছেন, বরং তিনি একক বর্ণনাকারী হওয়াটা সুস্পষ্ট। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ)-এর অন্তর তার তাওসিক্বের ব্যাপারে স্থিরচিত্ত। এমনকি তার হাদীসকে তিনি হাসান হিসেবে গণ্য করেছেন। বলুন এটা কি ইনসাফের!?
১০) আমর বিন আলা-ই আল-ইয়াশকুরি আল-বসরি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – ইমাম ওয়াকি‘ (সিক্বাহ, হাফিয, আবিদ), আবুল ওয়ালিদ হিশাম বিন আব্দুল মালিক আত-তুয়ালিসি (সিক্বাহ সাবিত), আব্দুস সামাদ বিন আব্দুল ওয়ারিস (সদুক্ব সাবিত), মুসা বিন ইসমাঈল (সিক্বাহ সাবিত), আবু দাউদ তায়ালিস (সিক্বাহ, হাফিয, অনেক হাদীসে ভুল করেছেন) প্রমুখ। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তারিখুল কাবির ৬/৩৬০, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/২৫১, আল-ইকমাল ফি যাকারা মান লাহু রিওয়ায়াত ফি মুসনাদিল ইমাম আহমাদ লিলহুসায়নি পৃ. ৩১৮, আস-সিক্বাত লিইবনে হিব্বান ৮/৪৭৮ প্রভৃতি]
এ ছাড়া তার হাদীসকে ইমাম হায়সামি (রহ) হাসান বলেছেন (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/১৯২) এবং ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে নিজের ‘সহীহ’-তে বর্ণনা করেছেন। [সহীহ ইবনে হিব্বান ৮/৫০৩৩]
আবার ইমাম মুনযিরি (রহ) তার থেকে ‘ عن ’ শব্দে বর্ণিত রেওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন এবং কোনো আপত্তি করেননি। অর্থাৎ তাঁর শর্ত মোতাবেক আমর বিন আলা-ই’র বর্ণনা হাসান বা সহীহ। [আত-তারগিব ওয়াত তারহিব ৩.১৫৭]
সারসংক্ষেপ হলো, আমার বিন আলা-ই স্তরের দিক থেকে হায়সাম বিন ইমরানের স্তরের। বরং ক্ষেত্রেবিশেষে তার থেকে উত্তম। কেননা তার হাদীস উক্ত মুহাদ্দিসগণ হাসান বা সহীহ গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে হায়সাম বিন ইমরানকে কোনো মুহাদ্দিসই সহীহ বা হাসান বলেননি।
এ পর্যায়ে প্রকৃত হক্ব হলো, ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিজস্ব নিয়ম মোতাবেক আমর বিন আলা-ই ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হওয়া উচিত ছিল। অথচ তিনি (রহ) এক্ষেত্রে নিজের উসূল থেকে সরে গেছেন। কেননা যে পদ্ধতিতে হায়সামকে ‘হাসান’ গণ্য করেছেন, সেই একই পদ্ধতিতে আমর বিন আলা-ইকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছেন:
والأخرى : عمرو بن العلاء … وذكر في ترجمته أنه روى عنه جماعة من الثقات، ولم يذكر فيه توثيقا فهو مجهول الحال
“দ্বিতীয় সমস্যা হলো, আমর বিন আলা-ই … তার জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তার থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে কেউ সিক্বাহ হিসেবে উল্লেখ করেননি। সুতরাং তিনি মাজহুলুল হাল।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২৮ হা/১১৪২]
লক্ষ্য করুন, সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও যদি আমর বিন আলা-ই ‘মাজহুলুল হাল’ হয়ে থাকে, তা হলে হায়সাম বিন ইমরানকে কিভাবে সদুক্ব বলা যাবে!?
১) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহ বিন হারিস আল-জামহা: তিনি ঐ সব রাবীর অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে ইমাম আলবানী (রহ) নিজের নিয়মকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উদাহরণে হিসেবে পেশ করেছেন। [পূর্বে ‘তামামুল মিন্নাহ’ সূত্রে উল্লিখিত ৪ নং রাবী]
এই রাবী সম্পর্কে ইমাম আলবানী (রহ) লিখেছেন:
قلت : وهو ابن عبد الله بن الحارث بن حاطب الجمحي، ترجمه ابن أبي حاتم (١ / ١١٠ / ١ ) ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا
“আমি (আলবানী) বলছি: তিনি ইবনে আব্দুল্লাহ বিন হারিস বিন হাতিব আল-জামহা। ইবনে হাতিম (১/১১০/১) তাঁর ‘তরজমাতে’ তিনি তার সম্পর্কে না জারাহ করেছেন, আর না তা‘দিল করেছেন।”
অতঃপর ইমাম যাহাবী (রহ)-এর উক্তি: ما علمت فيه جرحا ‘তার জারাহ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ –এর জবাবে লিখেছেন:
قلت : فقد يقال فهل علمت فيه توثيقا؟ فإن عدم الجرح لا يستلزم التوثيق كما لا يخفى
“আমি (আলবানী) বলছি: সেক্ষেত্রে (জবাবে) বলা হবে, তোমরা কি তার ব্যাপারে তাওসিক্ব জানো? তার জারাহ না থাকাটা তাওসিক্ব হওয়াটা বাধ্যতামূলক হয় না। (এ নিয়মটি) অস্পষ্ট নয়।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২১ হা/৯২০]
সুবহানাল্লাহ! আমরাও এটিই বলছি। এ ধরনের রাবী কীভাবে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হতে পারে, যখন তার তাওসিক্বই নেই।
স্বয়ং আলবানী (রহ) ইবরাহিম বিন আব্দুল্লাহর বর্ণনাকে যঈফ হিসেবে গণ্য করেছেন। [সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৯২০, তাহক্বীক্ব তিরমিযী হা/২৭২, যঈফ জামে‘ সগির পৃ. ৯০৪ হা/২৬২৫]
অথচ এক্ষেত্রে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) ও হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর ‘তাওসিক্ব’ গ্রহণ করেননি।
২) আবু তালহা আসদা: তার থেকে পাঁচ জন সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করেছেন: (তাহযিবুত তাহযিব: ১২/১৫৪)
ক) আব্দুল মালিক বিন উমাইর – সিক্বাহ, ফক্বিহ, পরবর্তী কালে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, সম্ভবত তাদলিসকারী। [তাক্বরিব: ২১৯]
খ) ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন হাতিব – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ২২ পৃ.]
গ) আ‘মাশ (সুলায়মান বিন মিহরান) – সিক্বাহ, হাফিয… তাদলিসকারী। [তাক্বরিব: ১৩৬ পৃ.]
ঘ) রাকিন বিন রাবী‘ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ১০৪ পৃ.]
ঙ) আবুল উমাইশ উতবাহ বিন আব্দুল্লাহ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ২৩২ পৃ.]
ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিয়ম মোতাবেক এই রাবী ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হয়। কেননা তার থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁকে ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ (৫/৫৪৩) উল্লেখ করেছেন।
অথচ এক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ) নিজের নিয়মটি থেকে মুখ ফিরিয়ে ইমাম ইরাক্বি (রহ)-এর উক্তি ‘এর সনদ জাইয়েদ’-কে খণ্ডন করে বলেছেন:
قلت : كلا ، فإن أبا طلحة الأسدى لم يوثقه أحد . وفى (( التقريب )) للحافظ ابن حجر إنه : (( مقبول )) ، يعنى عند المتابعة ، وإلا فلين الحديث
“আমি (আলবানী) বলছি: এটা কখনোই (জাইয়েদ) নয়। কেননা আবু তালহাহ আসদা’র কোনো তাওসিক্ব নেই। আর ইবনে হাজার (রহ) ‘তাক্বরিবে’ তাঁকে ‘মাক্ববুল’ বলেছেন, তথা মুতাবাআতের শর্তে উল্লেখ করেছেন। অন্যথায় সে লাইয়িন (যঈফ)।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ১/২১২]
তা ছাড়া তিনি তার বর্ণনাকে ‘তাহক্বীক্ব মিশকাত’ (৩/১৪৩২ হা/৫১৮৪) ও ‘যঈফ জামে সগিরে’ (১২৩০) যঈফ গণ্য করেছেন।
৩) সালামাহ বিন বিশর বিন সায়ফি আশ-শামি দামেশকি: ইমাম আলবানী (রহ) তার সম্পর্কে লিখেছেন,
مجهول الحال ولم يوثقه غير بن حبان
“মাজহুলুল হাল, ইবনে হিব্বান ছাড়া কেউ তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেননি।” [গায়াতুল মারাম পৃ. ১৮৭]
অথচ সালামাহ বিন বিশর থেকে পাঁচ জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হলেন:
ক) ইয়া‘ক্বুব বিন ইসহাক্ব আল-হাযরামি – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ৩৮৬ পৃ.]
খ) সুলায়মান বিন আব্দুর রহমান – সদুক্ব। [তাক্বরিব: ১৩৫ পৃ.]
গ) মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আল-ফিরইয়াবি –সিক্বাহ ফাযেল।[তাক্বরিব: ৩২৫]
ঘ) দাউদ বিন রশিদ – সিক্বাহ। [তাক্বরিব: ৯৫ পৃ.]
উক্ত চারজনের বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন ‘তাহযিবুত তাহযিব’ (৪/১২৫)।
ঙ) আব্দুর রহমান বিন নাফে‘ …। [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৪/১৫৭]
ইমাম আবু যুরআহ (রহ) আব্দুর রহমান বিন নাফে‘-কে সদুক্ব বলেছেন। [জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৫/২৯৪]
আলোচ্য রাবী সালামাহ বিন বাশারকে ইবনে হিব্বান সিক্বাহ গণ্য করেছেন। [তাহযিব ৪/১২৫]
অদ্ভুত মিল: হায়সাম বিন ইমরান থেকেও পাঁচ জন সিক্বাহ সদুক্ব রাবী বর্ণনা করেছেন। আবার সালামাহ বিন বিশর থেকেও পাঁচ জন রাবী বর্ণনা করেছেন। এছাড়া উভয়কেই ইবনে হিব্বান সিক্বাহ বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, শায়েখ আলবানী (রহ) সালামাহ বিন বিশরকে ‘মাজহুলুল হাল’ বলেছেন। পক্ষান্তরে হায়সামকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ গণ্য করেছেন। এ ধরনের অদ্ভুত নিয়ম সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই, আল্লাহই সর্বজ্ঞ। যখন কোনো নিয়ম হবে, তখন তো সেটা সবার জন্য একই নিয়ম হবে। বিভিন্ন হবে না (তা হলে তাঁকে নিয়ম বলা যায় না)।
৪) আহমাদ বিন আইয়ুব বিন রাশিদ আল-বসরি: তাঁর থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। আবার ইবনে হিব্বান (রহ)-ও তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। [বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে]
কিন্তু ইমাম আলবানী (রহ) তাঁকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলার পরিবর্তে বলেছেন:
لم أجد من صرح بتضعيفه من الأئمة المتقدمين ، و لا من وثقه منهم ، نعم أورده ابن حبان في " الثقات " و قال : " ربما أغرب " ، و هذا ليس بجرح كما أن إيراده إياه في " الثقات " ليس بتوثيق معتمد ، كما سبق التنبيه عليه مرارا ، فالحق أن الرجل في عداد مجهولي العدالة ، و لذلك لم يوثقه الحافظ في " التقريب " و لم يضعفه ، بل قال فيه " مقبول " إشارة إلى ما ذكرته . و الله أعلم
“আমি জানি না, পূর্ববর্তী ইমামদের মধ্যে কেউ তাঁকে স্পষ্টভাবে যঈফ বা সিক্বাহ গণ্য করেছেন। অবশ্য ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন: ‘সে কখনও কখনও যঈফ হাদীস বর্ণনা করতো।’ কিন্তু এটা কোনো জারাহ নয়। তেমনি ইবনে হিব্বানের ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করাটাই তাওসিক্বের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। যেভাবে অনেকবার এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। হক্ব সিদ্ধান্ত হলো, এই রাবী ‘মাজহুলুল আদালত’ সম্পন্ন। এ কারণে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘তাক্বরিবে’ না তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন, আর না যঈফ বলেছেন। বরং মাক্ববুল বলাটা সেদিকে (মাজহুলুল আদালত) ইশারা করে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি, আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [সিলসিলাহ সহীহাহ ২/২৭ হা/৫৪৯]
যখন হক্ব এটাই যে, এ ধরনের রাবী যার থেকে ইমাম বুখারী, আবু যুরআহ, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল (রহ) প্রমুখ হাফিযুল হাদীস ইমামগণ বর্ণনা করেছেন, এরপরেও তারা ‘মাজহুলুল আদালত’ সম্পন্ন। সেক্ষেত্রে হায়সাম বিন ইমরানের অবস্থার আর কী অবশিষ্ট থাকে?!
৫) মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী বিন আবু তালিব: তার থেকে রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। যেমন–
ক) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ – মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ১৮৮ পৃ.]
কিন্তু যাহাবী তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [আল-কাশিফ: ৫৯৫]
খ) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার – মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ২২৭ পৃ.]
গ) উমার বিন মুহাম্মাদ – মাজহুলুল হাল। [তাক্বরিব: ২৫৬ পৃ.]
ঘ) ইবনে জুরায়জ – সিক্বাহ, ফক্বীহ, ফাযেল …। [তাক্বরিব: ২১৯ পৃ.]
ঙ) ইবনে ইসহাক্ব (মুহাম্মদ) – সদুক …। [তাক্বরিব: ২৯০ পৃ.]
চ) ইয়াহইয়া বিন আইয়ুব। যদি সে…হয়, তবে সদুক্ব। [তাক্বরিব: ৩৭৩ পৃ.]
আর যদি সে আল-বাজলি হয়, হাফেয ইবনে হাজার তাঁকে لا بأس به ‘সমস্যা নেই’ ও ইমাম যাহাবী সিক্বাহ বলেছেন। [তাক্বরিব: ৩৭৩ পৃ., কাশিফ ২/৩৬১ পৃ.]
ছ) হিশাম বিন সা‘দ: সদুক্ব, তার ভুল হতো। [তাক্বরিব: ৩৬৪ পৃ.]
সে মুসলিম ও চারটি সুনানের (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) রাবী। ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে ‘হাসানুল হাদীস’ বলেছেন। [কাশিফ ২/৩৩৬]
জ) সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ… - মাক্ববুল। [তাক্বরিব: ১২৩ পৃ.]
ঝ) মুহাম্মাদ বিন মুসা আল-কালমাবি - হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে সদুক্ব [. কিন্তু আমাদের (মূল লেখকের) তাহক্বীক্ব মোতাবেক সে সিক্বাহ। তাঁকে অনেক সংখ্যক ইমাম সিক্বাহ গণ্য করেছেন। সম্ভবত হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইমাম আবু হাতিম (রহ)-এর উপর ভিত্তি করে তাঁকে সদুক্ব বলেছেন। [তাহযিব ৯/৪২৩-২৪] তা ছাড়া তার থেকে আব্দুর রহমান বিন মাহদিও বর্ণনা করেছেন। আর এ কথা প্রসিদ্ধ যে, তিনি সিক্বাহ রাবী ছাড়া বর্ণনা করতেন না। [তাহযিব ২/২৫২, তাদরিব ১/৩১৭, ক্বওয়ায়িদ ফি উলুমুল হাদীস লিত-তাহতাভি পৃ. ২০৬, ২১৬, ফতহুল মুগিস লিসসাখাভি ১৩৪ পৃ., লিসানুল মিযান ১/৫১ প্রভৃতি]অর্থাৎ এই রাবী আব্দুর রহমান বিন মাহদির কাছে সিক্বাহ। উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে মুহাদ্দিসগণের অনেকে যেমন : ইমাম আহমাদ, … মালেক, শু‘বাহ, সুলায়মান বিন হারাব প্রমুখ আমাদের জন্য এভাবে বলেছেন যে, لا يروي إلا عن ثقة ‘সে সিক্বাহ ছাড়া বর্ণনা করেনি।’ এর দ্বারা রাবীকে সামগ্রিকভাবে সিক্বাহ গণ্য করা হয় না। বরং সে ঐ মুহাদ্দিসদের নিকট সিক্বাহ। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।] বলেছেন। [তাক্বরিব: ৩২০ পৃ.]
ঞ) সুফিয়ান সাওরি – সিক্বাহ, হাফেয, আবিদ, ইমাম, হুজ্জাত। [তাক্বরিব: ১২৮ পৃ.]
অর্থাৎ মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী থেকে ছয়জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ ও হাফেয ইবনে হিব্বান (রহ) ‘সদুক্ব’ বলেছেন। [. ইমাম আলবানী (রহ) যদিও দশ জন রাবীর সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার ও ইমাম যাহাবী (রহ) এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমরাও তেমনি আলোচ্য রাবীর ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্ধৃতি উল্লেখ করলাম। কিন্তু উসূলে হাদীস ও জারাহ ও তা‘দিলের নিয়মের ক্ষেত্রে এর গ্রহণযোগ্যতার কী আসে যায়।] [কাশিফ ২/২০৫, তাক্বরিব ৩১২ পৃ.]
তা ছাড়া ইমাম হাকিম (রহ) তাঁর হাদীসকে সহীহ বলেছেন ও যাহাবী (রহ) তাঁর সমর্থন করেছেন। [আল-মুস্তাদরাক ১/৪৩৬]
অথচ ইমাম আলবানী (রহ) সমস্ত কথাতে বাধ্যতামূলকভাবে বলেছেন:
قلت : وفي هذا نظر، لأن محمد بن عمر بن علي ليس بالمشهور، وقد ترجمه ابن أبي حاتم ( ٨١ / ١٨ /١/٤) ولم يذكر فيه جرحاً ولا تعديلاً . وأما ابن حبان فذكره في " الثقات " على قاعدته ...
“আমি (আলবানী) বলছি: এতে নযর (আপত্তি) আছে। কেননা মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলী প্রসিদ্ধ নন। ইবনে আবু হাতিম (৪/১/১৮/৮১) তার জীবনী আলোচনা করে না জারাহ করেছেন, আর না তা‘দিল করেছেন। আর ইবনে হিব্বান তাঁর নিয়মানুযায়ী ‘সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন।…”
অতঃপর ইবনুল ক্বত্তানের স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করার পর লিখেছেন: وهذا الذي يميل القلب اليه لجهالة “তার দুর্বল হওয়ার দিকেই হৃদয় ধাবিত হচ্ছে, মাজহুল হওয়ার কারণে।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২১৯ হা/১০৯৯]
অর্থাৎ ইমাম আলবানী (রহ) এক্ষেত্রে তাঁর আলোচ্য উসূলটি গ্রহণ করেননি।
৬) আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আবু তালিব: এই রাবী সম্পর্কে আলোচ্য পুস্তিকাটিতে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, ইবনে আবি ফাদিক, আবু উসামাহ প্রমুখ সিক্বাহ সদুক্ব রাবী। ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁকে সিক্বাহ এবং ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি (রহ) তাঁকে وسط ‘মধ্যপন্থী’ [. وسط (মধ্যপন্থী) – তাওসিক্বের বাক্য। যেমনটা ইমাম আলী ইবনুল মাদীনি অধিকাংশ রাবীদের ক্ষেত্রে বলেছেন। বিস্তারিত দেখুন : সুওয়ালাতে মুহাম্মাদ বিন উসমান বিন আবি শায়বাহ লিআলী ইবনুল মাদিনি ফিল জারাহ ওয়াত তা‘দিল (নং : ৩, ১২, ২৬, ৬১, ৮৩, ১০২, ১০৮, ১৭৪, ১৯৮, ২৬০)।হাফেয যাহাবী (রহ) ও অন্যরা ‘ وسط ’-কে তাওসিক্বের ঐ স্তরের গণ্য করেছেন, যার মধ্যে ‘মুহাল্লুহুস সাদিক্ব’, ‘জাইয়েদুল হাদীস’, ‘সালেহুল হাদীস’, ‘হাসানুল হাদীস’ প্রভৃতি উল্লেখ করেছেন। [মুক্বাদ্দামাহ মিযানুল ই‘তিদাল লিযযাহাবী ১/৪, তাদরিবুর রাবী ১/৩৬৫, রাফিউত তাকমিল পৃ. ১৩৮-৩৯, ক্বওয়ায়েদ ফি উলুমুল হাদীস পৃ. ২৪৯ প্রভৃতি]] বলেছেন। [তাহযিব: ৬/১৬]
আর ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [কাশিফ ১/৫৯৫]
ইমাম হাকিম তাঁর সনদকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তাঁর সমর্থন করেছেন। [মুস্তাদরাক ১/৪৩৬ সূত্রে সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২১৯]
অথচ ইমাম আলবানী (রহ) উক্ত তাওসিক্বগুলো অগ্রাহ্য করে বলেছেন:
وفيه علة أخرى، وهي أن عبد الله بن محمد بن عمر حاله نحو حال أبيه، لم يوثقه غير ابن حبان …
“(হাদীসটির সনদের) অপর একটি ত্রুটি হলো, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উমারের অবস্থা তার পিতার অবস্থার মতন (মাজহুল)। ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া কেউ তাঁকে সিক্বাহ বলেননি।…” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২২০ হা/১০৯৯]
এখনও কি নীতিটিকে গ্রহণযোগ্য বলা যাবে?
৭) মুসা বিন আবু উসমান আত-তিবান: তিনি আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ’র রাবী। ইমাম বুখারী (রহ) তাঁর থেকে তা‘লিক্ব হাদীস বর্ণনা করেছেন। [সহীহ বুখারী – কিতাবুন নিকাহ بَاب لَا تَأْذَنِ الْمَرْأَةُ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا لِأَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِهِ (হা/৫১৯৬-এর পূর্বের অনুচ্ছেদের তা‘লিক্ব বর্ণনা), বিস্তারিত: তাহযিব: ১০/৩২১]
মুসা বিন উসমান থেকে বর্ণনা করেছেন – আবু যিনাদ (আব্দুল্লাহ বিন যাকওয়ান), মালিক বিন মুগাওওয়াল, শু‘বাহ, সুফিয়ান সওরি (রহ)। [তাহযিব ১০/৩২১, তারিখুল কাবির ৭/২৯০] উক্ত চার জনই জবরদস্ত সিক্বাহ।[তাক্বরিবুত তাহযিব পৃ. ৭৩, ১৭২, ৩২৭, ১৪৫, ১২৮ (ক্রমানুসারে)]
তা ছাড়া ইমাম যাহাবী (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন এবং ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) ‘কিতাবুস সিক্বাতে’ উল্লেখ করেছেন। [কাশিফ ২/৩০৬, তাহযিব ১০/৩২১]
এরপরেও ইমাম আলবানী (রহ) মুসা বিন উসমানকে মাজহুল বলে সনদকে যঈফ গণ্য করেছেন। [সিলসিলাহ সহীহাহ ৪/৬৩]
৮) মুহাজির বিন আবু মুসলিম শামি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – ইমাম বুখারী (আদাবুল মুফরাদে), আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। তা ছাড়া চার জন গ্রহণযোগ্য রাবী যেমন– আমর বিন মুহাজির (সিক্বাহ), মুহাম্মাদ বিন মুহাজির (সিক্বাহ), মুআবিয়াহ বিন সালিহ আল-খাযরামি (সদুক, ভুল করতেন) এবং ওয়ালিদ বিন সুলায়মান বিন আবু সাইব (সিক্বাহ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তাহযিব ১০/২২৮, তাক্বরিব পৃ. ২৬৩, ৩২০, ৩৪১ ক্রমানুসারে]
উক্ত সিক্বাহ রাবীগণের তাঁর থেকে বর্ণনা করা এবং ইবনে হিব্বান (রহ) কর্তৃক সিক্বাহ বলা সত্ত্বেও ইমাম আলবানী (রহ) এই রাবীকে না ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলেছেন। আর না তার হাদীসকে হাসান বা সহীহ বলেছেন। বরং এর বিপরীতে তিনি বলেছেন:
قلت : هذا إسناد ضعيف من اجل المهاجر هذا فانه مجهول حال ترجمة ابن ابي حاتم في كتابه ...
“আমি (আলবানী) বলছি: এই সনদটি মুহাজিরের জন্য যঈফ। কেননা সে মাজহুলুল হাল। ইবনে আবু হাতিম (রহ) নিজের কিতাবে (৪/১/২৫৯-৬০) তার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো জারাহ বা তা‘দিল করেননি। আর ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁর অভ্যাসবশত তাঁকে সিক্বাহ গণ্য করেছেন। একইভাবে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে মাক্ববুল বলেছেন তথা মুতাবাআতের শর্তে। অন্যথায় সে লাইয়িনুল হাদীস। আর আমি তার মুতাবি‘ পায়নি। সুতরাং হাদীসটি যঈফ।” [গায়াতুল মারাম ১৫২ পৃ.]
এ ছাড়া ইমাম আলবানী (রহ) তার হাদীস যঈফ আবু দাউদে পৃ. ৩৮৩-৮৪ হা/৮৩৫, ইবনে মাজাহ পৃ. ১৫৩ হা/৪৩৭-তেও যঈফ বলেছেন।
৯) আমর বিন মালিক নুকরি [. আমর বিন মালিক নুকরি সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ইমাম ইবনে হিব্বান থেকে يخطي ويغرب ‘ভুলকারী ও গরীব বর্ণনাকারী’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। (তাহযিব : ৮/৮৫) আর সম্ভবত এ কারণে ‘তাক্বরিবে’ (২৬২ পৃ.) ‘তার ভুল হতো’ বলেছেন। কিন্তু আমি ‘কিতাবুস সিক্বাতে’র প্রকাশিত সংস্করণে উক্ত শব্দ পায়নি। বরং এই শব্দটি আমর বিন মালিক আর-রাসিবি সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে। [কিতাবুস সিক্বাত ৭/২২৮, তাহযিব ৮/৮৪] সুতরাং হাফেয ইবনে হাজারের (রহ) তাঁর সম্পর্কে ‘তার ভুল হতো’ বলাটা সঠিক নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।জ্ঞাতব্য : জনাব হাফেয আব্দুর রউফ ‘হাদীসে ইবনে আব্বাস ’-এর তাখরিজে আমর বিন মালিক আন-নুকরি সম্পর্কে বলেছেন : ইবনে আদি (রহ) তাকে মুনকারুল হাদীস ও হাদীস-চোর বলেছেন। [কামেল লিইবনে আদি ৫/৭৯, ফালাহ দারাইন লিহাকিম বিন মুহাম্মাদ আশরাফ সিন্ধি পৃ. ৪৪] উল্লেখ্য যে, ইবনে আদি (রহ)-এর উক্ত জারাহ হাফেয ইবনে হাজার (রহ) আমর বিন মালিক আর-রাসিবি’র তরজমা (বিবরণ)-এ উল্লেখ করেছেন। আর আমর বিন মালিক নুকরি সম্পর্কে ভুল হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। ইমাম ইবনুল আজমিও উক্ত জারাহ আমর বিন মালিক আর-রাসিবি’র তরজমাতে উল্লেখ করেছেন। [তাহযিব ৮/৮৪, হাশিয়াহ আল-কাশিফ লি… ইবনুল আজমি বিতাহক্বিক্ব মুহাম্মাদ আওয়ামাহ ও আহমাদ মুহাম্মাদ নামারুল খতিব ৬/৮৭, লিসানুল মিযান ৪/৩৭৪ পৃ. নং: ১১০৭]সুতরাং আমর বিন নুকরি উক্ত জারাহ থেকে মুক্ত। আল্লাহই সর্বজ্ঞ]: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন– তাঁর ছেলে ইয়াহইয়া (যঈফ), নুহ বিন ক্বায়েস (সদুক্ব, … শিয়া), মাহদি বিন মায়মুন (সিক্বাহ), সাঈদ বিন যায়দ (সদুক্ব, ভুল করতেন), হাম্মাদ বিন যায়েদ (সিক্বাহ সাবিত), মুখাল্লাদ বিন হুসাইন [. ‘তাহযিবে’ লেখা হয়েছে মুখাল্লাদ বিন হাসান, তিনি মাক্ববুল। কিন্তু আমর থেকে বর্ণনাকারী মুখাল্লাদ বিন হুসাইন হবেন (তাহযিব ১০/৬৫)। সম্ভবত তারা পৃথক ব্যক্তি। কিংবা এটাও হতে পারে যে, সে মুখাল্লাদ বিন হুসাইন। কিন্তু ভুলক্রমে মুখাল্লাদ বিন হাসান ছাপানো হয়েছে। সর্বোপরি মুখাল্লাদ বিন হুসাইনও আমর থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি সিক্বাহ।] (সিক্বাহ, ফাযিল), ইয়াযিদ বিন কা‘ব (মাজহুল), ইবাদ বিন ইবাদ (সিক্বাহ, ভুল করতেন), জা‘ফার বিন সুলায়মান বসরি (সদুক্ব, যাহিদ, …শিয়া) প্রমুখ। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তাহযিব ৮/৮৪-৮৫, তারিখে কাবির লিলবুখারী ৬/৩৭১, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/২৫৯, তাক্বরিব পৃ. ৩৭৮, ৩৪৯, ১২২, ৮২, ৩৩১, ৩৮৪, ১৬৩, ৩৬০, ৩৪৯, ১২২, ৮২, ৩৩১, ৩৮৪, ১৬৩, ৫৫-৫৬]
অর্থাৎ আমর বিন মালিক থেকে সাত জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন। তাঁকে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ‘সদুক্ব ও ভুলকারী’ বলেছেন। [তাক্বরিব: ২৬২]
আর হাফেয যাহাবী وثق [. ...(কোনো একটি বইয়ের নাম রয়েছে, যতটা বুঝা যায় নামটি হবে : التبيين ) –এর প্রথম সংস্করণে ‘সিক্বাহ’ লেখা হয়েছে। কিন্তু সহীহ হলো وثق হবে। ইমাম যাহাবী তাঁর ‘কাশিফে’ وثق শব্দটি সম্ভবত ঐ সমস্ত রাবীর ক্ষেত্রে বলেছেন, যাদেরকে ইমাম ইবনে হিব্বান সিক্বাহ বলেছেন। এ ধরনের রাবী সাধারণত ‘লাইয়িনুল হাদীস’ হয়ে থাকে। আর যদি মুতাবাআত থাকে, তা হলে ‘মাক্ববুল’ হবে।] বলেছেন। [কাশিফ ২/৮৭]
তা ছাড়া ইমাম মুনযিরি (রহ) ও ইমাম হায়সামি (রহ) তার হাদীসকে হাসান বলেছেন। [আত-তারগিব ওয়াত তারহিব ১/৩৮২, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৪৮]
ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিয়ম মোতাবেক এ ধরনের রাবীর মান কমপক্ষে ‘সদুক্ব’। অথচ এরপরেও তিনি (রহ) লিখেছেন:
قلت : و فيما قالاه نظر , فإن عمرا هذا لم يوثقه غير ابن حبان (٧/ ٢٢٨ ، ٨ / ٤٨٧ ) و هو متساهل في التوثيق حتى أنه ليوثق المجهولين عند الأئمة النقاد كما سبق التنبيه على ذلك مرارا , فالقلب لا يطمئن لما تفرد بتوثيقه …
“আমি (আলবানি) বলছি: তাঁরা দু’জন (ইমাম মুনযিরি ও ইমাম হায়সামি) যাকিছু (তথা ‘হাসান’) বলেছেন তাতে নযর (আপত্তি) আছে। কেননা এই আমরকে ইবনে হিব্বান (রহ) ছাড়া আর কেউ সিক্বাহ বলেননি। আর তিনি তাওসিক্ব বলা সম্পর্কে মুতাশাহিল (শিথিল)। এমনকি তিনি এমন রাবীদেরকে তাওসিক্ব করেছেন যারা বিশেষজ্ঞ ইমামদের নিকট মাজহুল। যেভাবে আমি পূর্বে বারবার উল্লেখ করেছি। সুতরাং ইবনে হিব্বানের একক তাওসিক্বে অন্তর শান্ত হয় না।…” [সিলসিলাহ যঈফাহ ১/১৩১, আরো দ্র: ইরওয়াউল গালিল ৩/২৫০, তামামুল মিন্নাহ পৃ. ১৩৮]
সম্মানিত পাঠক! ইনসাফের সাথে ভাবুন, যে রাবী সাত জন গ্রহণযোগ্য রাবী বর্ণনা করেছেন, যাকে ইমাম ইবনে হাজার (রহ) সদুক্ব বলেছেন। আবার ইমাম মুনযিরি (রহ) ও ইমাম হায়সামি (রহ) তার হাদীসকে হাসান বলেছেন। তাঁকে তাওসিক্বের ক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ)-এর অন্তর শান্ত হয় না। অথচ (সাজদা থেকে উঠার সময় মুষ্টির উপর ভর করার বর্ণনাকারী) হায়সাম বিন ইমরান – যাকে না হাফেয ইবনে হাজার সদুক্ব বলেছেন, আর না কোনো মুহাদ্দিস তার হাদীস হাসান বলেছেন, বরং তিনি একক বর্ণনাকারী হওয়াটা সুস্পষ্ট। কিন্তু শায়েখ আলবানী (রহ)-এর অন্তর তার তাওসিক্বের ব্যাপারে স্থিরচিত্ত। এমনকি তার হাদীসকে তিনি হাসান হিসেবে গণ্য করেছেন। বলুন এটা কি ইনসাফের!?
১০) আমর বিন আলা-ই আল-ইয়াশকুরি আল-বসরি: তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন – ইমাম ওয়াকি‘ (সিক্বাহ, হাফিয, আবিদ), আবুল ওয়ালিদ হিশাম বিন আব্দুল মালিক আত-তুয়ালিসি (সিক্বাহ সাবিত), আব্দুস সামাদ বিন আব্দুল ওয়ারিস (সদুক্ব সাবিত), মুসা বিন ইসমাঈল (সিক্বাহ সাবিত), আবু দাউদ তায়ালিস (সিক্বাহ, হাফিয, অনেক হাদীসে ভুল করেছেন) প্রমুখ। ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে সিক্বাহ বলেছেন। [তারিখুল কাবির ৬/৩৬০, আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৬/২৫১, আল-ইকমাল ফি যাকারা মান লাহু রিওয়ায়াত ফি মুসনাদিল ইমাম আহমাদ লিলহুসায়নি পৃ. ৩১৮, আস-সিক্বাত লিইবনে হিব্বান ৮/৪৭৮ প্রভৃতি]
এ ছাড়া তার হাদীসকে ইমাম হায়সামি (রহ) হাসান বলেছেন (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/১৯২) এবং ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে নিজের ‘সহীহ’-তে বর্ণনা করেছেন। [সহীহ ইবনে হিব্বান ৮/৫০৩৩]
আবার ইমাম মুনযিরি (রহ) তার থেকে ‘ عن ’ শব্দে বর্ণিত রেওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন এবং কোনো আপত্তি করেননি। অর্থাৎ তাঁর শর্ত মোতাবেক আমর বিন আলা-ই’র বর্ণনা হাসান বা সহীহ। [আত-তারগিব ওয়াত তারহিব ৩.১৫৭]
সারসংক্ষেপ হলো, আমার বিন আলা-ই স্তরের দিক থেকে হায়সাম বিন ইমরানের স্তরের। বরং ক্ষেত্রেবিশেষে তার থেকে উত্তম। কেননা তার হাদীস উক্ত মুহাদ্দিসগণ হাসান বা সহীহ গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে হায়সাম বিন ইমরানকে কোনো মুহাদ্দিসই সহীহ বা হাসান বলেননি।
এ পর্যায়ে প্রকৃত হক্ব হলো, ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিজস্ব নিয়ম মোতাবেক আমর বিন আলা-ই ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ হওয়া উচিত ছিল। অথচ তিনি (রহ) এক্ষেত্রে নিজের উসূল থেকে সরে গেছেন। কেননা যে পদ্ধতিতে হায়সামকে ‘হাসান’ গণ্য করেছেন, সেই একই পদ্ধতিতে আমর বিন আলা-ইকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছেন:
والأخرى : عمرو بن العلاء … وذكر في ترجمته أنه روى عنه جماعة من الثقات، ولم يذكر فيه توثيقا فهو مجهول الحال
“দ্বিতীয় সমস্যা হলো, আমর বিন আলা-ই … তার জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তার থেকে সিক্বাহ রাবীদের একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে কেউ সিক্বাহ হিসেবে উল্লেখ করেননি। সুতরাং তিনি মাজহুলুল হাল।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ৩/২৮ হা/১১৪২]
লক্ষ্য করুন, সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও যদি আমর বিন আলা-ই ‘মাজহুলুল হাল’ হয়ে থাকে, তা হলে হায়সাম বিন ইমরানকে কিভাবে সদুক্ব বলা যাবে!?
উক্ত দশটি উদাহরণ এবং পূর্বে বর্ণিত আরো কিছু উদাহরণ থেকে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, ইমাম আলবানী (রহ) নিজেই তাঁর নিয়মের উপর স্থিরচিত্ত নন। এ কারণে তিনি অদ্ভুত, বিরল ও স্ববিরোধী অবস্থার স্বীকার হয়েছেন। এমনকি কখনও কখনও এ ধরনের রাবীকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন, আবার কখনও মাজহুলুল হাল বলেছেন। এর কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপ:
ক) আল-মুহার্রার বিন আবু হুরায়রা: ইমাম আলবানী (রহ) তাঁকে ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৪/৩০১) সিক্বাহ হিসেবে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে (৪/১৫৬) হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর উক্তি ‘মাক্ববুল’-এর উপর নির্ভর করেছেন। [অর্থাৎ মুতাবাআত ছাড়া তার হাদীস যঈফ গণ্য করেছেন।]
খ) আবু মায়মুনাহ: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ ( ৩/২৩৮) সিক্বাহ গণ্য করেছেন। কিন্তু ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (৩/৪৯২) ইমাম দারাকুতনির উক্তি ‘মাজহুল, পরিত্যাজ্য’-এর উপর নির্ভর করেছেন।
গ) আমর বিন মালিক আন-নুকরি: ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (১/১৩১) মাজহুল বলেছেন। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে (৫/৬০৮) সিক্বাহ গণ্য করেছেন।
ঘ) সালিহ বিন আরিব: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৩/১৫০) হাসানুল হাদীস বলেছেন। কিন্তু ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (৪/১৪৩) ইবনুল ক্বত্তানের উক্তি ‘তার অবস্থা জানা যায় না’ ও ইবনে হাজার (রহ) ‘মাক্ববুল’ বলার উপর সন্তুষ্ট থেকেছেন। আরো দ্র: তাহক্বীক্ব মিশকাত (১/৫০৬ হা/১৬২১)
ঙ) মুসা বিন জুবায়ের: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৭/১৫৮) মাজহুলুল হাল গণ্য করেছেন (আরো দ্র: সিলসিলাহ যঈফাহ ১/২০৫)। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে তাঁকে ‘আদামু মুখালিফাত’ হিসেবে ‘হাসানুল হাদীস’ গণ্য করেছেন।
ইমাম আলবানী (রহ)-এর এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের বুঝের বাইরে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, যদি কোনো মুহাদ্দিস উসূলের বিরোধী কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকেন, ইমাম আলবানী (রহ) অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীভাবে সে ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। যেমন – একজন রাবী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ) বলেছেন: ما علمت فيه جرحا ‘তার জারাহ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ –এর জবাবে লিখেছেন:
قلت : فقد يقال فهل علمت فيه توثيقا؟ فإن عدم الجرح لا يستلزم التوثيق كما لا يخفى
“আমি (আলবানী) বলছি: সেক্ষেত্রে (জবাবে) বলা হবে, তোমরা কি তার ব্যাপারে তাওসিক্ব জানো? তার জারাহ না থাকাটা তাওসিক্ব হওয়া বাধ্যতামূলক করে না। (এ নিয়মটি) অস্পষ্ট নয়।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২১ হা/৯২০]
তেমনি ইমাম ইবনুল জাওযি (রহ) যখন সুফিয়ান নামের একজন রাবীর হাদীস সহীহ উল্লেখ করে বলেছেন: ما علمنا احدًا طعن في سفيان بن بشر “আমি জানি না, কেউ সুফিয়ান বিন বিশর সম্পর্কে অভিযোগ করেছে।” তখন ইমাম আলবানী (রহ) এর জবাবে নিম্নোক্ত বাক্য ব্যবহার করেছেন:
فهو تصحيح قائم على حجة لا تساوي سماعها ! فإن كل راومجهول عند المحدثين يصح أن يقال فيه : " ما علمنا أحدا طعن فيه "! فهل يلزم من ذلك تصحيح حديث المجهول ! ؟ اللهم لا، وإنها لزلة من عالم يجب اجتنابها
“এটা (হাদীসে) সহীহ’র এমন ভিত্তি, যা শোনার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। কেননা প্রত্যেক মাজহুল রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের এভাবে বলাটা সহীহ যে, ‘আমাদের তার সম্পর্কে অভিযোগ জানা নেই।’ এমতাবস্থায় মাজহুল রাবীর বর্ণনাকে কীভাবে সহীহ আখ্যা দেয়া যেতে পারে!? আল্লাহর শপথ! না, এটা আলেমদের জন্য অপমান। তাদের এ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/১৩৭ হা/৬৯৬]
অর্থাৎ যখন কোনো মুহাদ্দিসের রাবীর প্রতি জারাহ জানা থাকে না, তখন তিনি তাঁর বর্ণনাকে হাসান প্রভৃতি হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে রাবীর তাওসিক্ব জানতে হবে। কিন্তু এ বিষয়টি যখন তাঁর নিজের সাথে সম্পর্কিত তখন কেবল সিক্বাহ রাবীদের বর্ণনা দ্বারা (বা শর্তে) আদালত, যবত সবকিছু প্রমাণিত হয়ে যায়। انا لله وانا اليه راجعون
কেবল এটাই নয়, বরং যখন ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) একজন রাবীকে সিক্বাহ বলেছেন ও তাঁর ‘সহীহ ইবনে হিব্বানে’ তার বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তখন ইমাম আলবানী (রহ) তাঁর নিয়মকে রদ না করে এটা বলেন যে,
فلا تغتر بذلك، فإنه قد شذ في ذلك عن التعريف الذي اتفق عليه جماهير المحدثين في الحديث الصحيح وهو : " ما رواه عدل، ضابط، عن مثله ". فأين العدالة، وأين الضبط في مثل هؤلاء المجهولين .
“এর দ্বারা (ইবনে হিব্বান কর্তৃক তাদেরকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দেয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে) ধোঁকায় পড়া যাবে না। কারণ এ বিষয়ে তাঁর মতটি শায। কারণ তিনি সহীহ হাদীসের সংগায়নে জুমহুর মুহাদ্দিসের ঐকমত্যের বিরুদ্ধে গেছেন। আর সেটা হল, ‘আদল ও যবতসম্পন্ন রাবী তারই মতো (আদল ও যবতসম্পন্ন) রাবীদের থেকে বর্ণনা করবে।’ সুতরাং সেক্ষেত্রে মাজহুল রাবীর আদালত কোথায় গেল, আর যবতই বা কোথায় গেল?” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২৮ হা/৯২৯]
এই উক্তিগুলো কি হায়সাম বিন ইমরানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না? হায়সাম বিন ইমরানের মধ্যে আদল ও যবতের প্রমাণ আছে কি? আহলে ইলমের কাছে এ ব্যাপারে ইনসাফপূর্ণ চিন্তার দাবি থাকল।
তেমনি যখন কোনো হাদীসের রাবীকে মাজহুল হওয়ার কারণে যঈফ গণ্য করা হয় তখন বলা হয়েছে: “ইবনে আবু হাতিম (রহ) তাকে ‘আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিলে’ উল্লেখ করেছেন এবং কোনো জারাহ বা তা‘দিল করেননি। সুতরাং তিনি মাজহুলুল হাল প্রভৃতি।” [গায়াতুল মারাম পৃ. ৩৭, ১৫২; যিলালুল জান্নাহ ফি তাখরিজুল আহাদিসু কিতাবুস সুন্নাহ ১/২৩, ৩৪, ৬২ প্রভৃতি]
উদাহরণ হিসেবে মালিক দারির ঘটনা ‘ইয়া সারিয়াতুল জাবাল’-এর বিষয়টি উল্লেখ করছি। ইমাম আলবানী (রহ) এর জবাব প্রসঙ্গে লিখেছেন:
والجواب من وجوه : الأول : عدم التسليم بصحة هذه القصة، لأن مالك الدار غير معروف العدالة والضبط، وهذان شرطان أساسيان في كل سند صحيح كما تقرر في علم المصطلح، وقد أورده ابن أبي حاتم في " الجرح والتعديل " ٤ /١/ ٢١٣ " ولم يذكر راوياً عنه غير أبي صالح هذا، ففيه إشعار بأنه مجهول، ويؤيده أن ابن أبي حاتم نفسه – مع سعة حفظه واطلاعه – لم يحك فيه توثيقاً فبقي على الجهالة،
“এর জবাব হলো: প্রথমত, এই ঘটনাটির শুদ্ধতা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মালিক দারি আদালত ও যবতের দিক থেকে প্রসিদ্ধ নন। অথচ এ দুটি শর্ত প্রত্যেক সনদ সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক ভিত্তি। যেভাবে ‘হাদীসের পরিভাষা’র ক্ষেত্রে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য। তাকে ইবনে আবু হাতিম ‘আল-জারাহ ও তা‘দিলে’ (৪/১/২১৩) আবু সালেহ ছাড়া কারো থেকে উল্লেখ করেননি। এ থেকে তার মাজহুল হওয়ার ঘোষণা হয়। এ থেকে এ বিষয়টিও জোরালো হয় যে, আবু হাতেমের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি ও পর্যবেক্ষণের শক্তি থাকা সত্ত্বেও কারো থেকে তার তাওসিক্ব উল্লেখ করেননি। আর এ থেকেই জাহালাত অবশিষ্ট রয়েছে।।” [আত-তাওয়াসসুল আনওয়া‘আহু ওয়া আহকামাহু পৃ. ১২০]
আলোচ্য দাগানো বাক্যটির প্রতি গভীর দৃষ্টি রেখে ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি লক্ষ্য করুন, যা হায়সাম বিন ইমরানের আলোচনাতে উল্লেখ করেছেন:
اورده ابن ابي حاتم ... ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا، لكن رواية هؤلاء الثقات الثلاثة عنه ويضم إليهم رابع وهو الهيثم بن خارجة، وخامس وهو يونس بن بكير، مما يجعل النفس تطمئن لحديثه لأنه لوكان في شيء من الضعف لتبين في رواية أحد هؤلاء الثقات عنه، ولعرفه أهل الحديث كابني حبان وأبي حاتم
“ইবনে আবি হাতিম (এটি ‘জারাহ ও তা‘দিলে) উল্লেখ করেছেন … কিন্তু তার প্রতি কোনো জারাহ ও তা‘দিল উল্লেখ করেননি। কিন্তু তার থেকে তিন জন (মুহাম্মাদ বিন ওয়াহহাব, হিশাম বিন ‘আম্মার ও সুলায়মান বিন শারজিল) সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করেছেন। আর তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন চতুর্থ জন রাবী‘, তিনি হায়সাম বিন খারিজাহ। আর পঞ্চম জন হলেন ইউনুস বিন বুকায়র। এগুলো থেকে হাদীসটির নিজস্ব নির্ভরতার (সহীহ হওয়ার) প্রতি মন তৃপ্ত হয়। যদি এর মধ্যে কেউ (হায়সাম বিন ইমরান) যঈফ হয়, সেক্ষেত্রে তার থেকে পূর্বের সিক্বাহ রাবীগণ বর্ণনা করে সুস্পষ্ট করেছেন। আর এর যঈফ হওয়া আহলে হাদীস তথা ইবনে হিব্বান ও আবু হাতিমের নিকট গোপন থাকত না। [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩৯২ হা/৯৬৭]
উদ্ধৃতিদুটির দাগানো অংশগুলো লক্ষ করুন, কীভাবে একজন রাবীর বর্ণনাকে যঈফ বলা হয়েছে, তেমনি একই স্তরের অপর রাবীর বর্ণনাকে সহীহ বা হাসান বলা হয়েছে। অর্থাৎ একস্থানে এটা লিখেছেন যে, ইবনে আবু হাতিম (রহ) ব্যাপক ইলম থাকা সত্ত্বেও মালিক দারির তাওসিক্ব উল্লেখ করেননি। সুতরাং সে মাজহুল। পক্ষান্তরে অন্যস্থানে লিখেছেন, রাবী হায়সাম বিন মালিক ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’। সুতরাং তার হাদীস হাসান। কেননা যদি তার মধ্যে কোনো দুর্বলতা থাকত তা হলে ইবনে হিব্বান, আবু হাতিম (রহ) এবং অন্যান্যরা সেটা উল্লেখ করতেন। আল্লাহ তাআলা এ ধরনের ভুল ও অবহেলা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন। তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে এটা আহলে ইলমের সম্মানের পরিপূরক হয় না।
জ্ঞাতব্য: যে রাবীর ক্ষেত্রে ইমাম ইবনে আবু হাতিম (রহ) জারাহ বা তা‘দিল উল্লেখ করেননি, সেটার উদ্দেশ্য কখনই এটা নয় যে, সে সিক্বাহ বা সদুক্ব। বরং এর উদ্দেশ্য হলো, এই রাবীর সম্পর্কে ইমাম সাহেবের পক্ষ থেকে জারাহ বা তা‘দিল পাওয়া যায়নি। বরং তার পরিচিতি পর্যন্ত উপস্থাপনা যথেষ্ট মনে করেছেন।
ইমাম যাহাবী (রহ) এ ধরনের রাবী যাদেরকে ইমাম ইবনে আবু হাতিম জারাহ বা তা‘দিল উল্লেখ করেননি, সাধারণভাবে ‘মাজহুল’ বা لا يعرف ‘জানা যায় না’ গণ্য করেছেন। যেমন– আযহার বিন রাশিদ, ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল-মাআফিরি, ইসমাঈল বিন ইউসুফ, আনাস, আনাস বিন জানদাল, আউস বিন আবি আউস, আইয়াস বিন খালিফাহ, আইয়াস বিন ইয়াযিদ, …ইবনে সাঈদ প্রমুখ। [মিযানুল ই‘তিদাল ১/ ৬৯৩, ৯৬৭, ৯৭২, ১০৩৬, ১০৩৭, ১০৪৩, ১০৪৯, ১০৫৫, ১১২৬, ১১৪৩ নং]
সুতরাং ইবনে আবু হাতিম (রহ) বা কোনো মুহাদ্দিস কর্তৃক কোনো রাবীর সম্পর্কে জারাহ উল্লেখ না করার দাবি কখনই এটা নয় যে, তিনি অভিযুক্ত নন।
হায়সাম বিন ইমরানের হাদীস হাসান বলার ক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ)-এর একটি ভিত্তি হলো, সে ‘হাসান যন্নি’-ও বটে। এই ‘হাসান যন্নি’ সম্পর্কে ইমাম সাখাভি (রহ) সূত্রে তিনি দুটি উক্তি পেশ করেছেন। তা হলো:
ক) لان الاخبار تبنى على حسن الظن بالراوي “রাবীর ক্ষেত্রে ‘হাসান যন্নি’ হওয়াটাই হাদীসের নীতির একটি ভিত্তি।”
খ) وكثرة رواية الثقات عن الشخص تقوي حسن الظن به “সিক্বাহ রাবীদের কারো থেকে অনেক বর্ণনা করা, সেক্ষেত্রে তা ‘হাসান যন্নি’ হাদীসকে মজবুত করে।” [তামামুল মিন্নাহ ২০৬-০৭ পৃ.]
প্রথমত: জানা দরকার যে, এটি ঐকমত্যের নিয়ম নয় যে, মাজহুলুল আদালত বা মাসতুর রাবীর বর্ণনাকে কেবল ‘হাসান যন্নি’ ভিত্তির উপর ‘সহীহ’ বা ‘হাসান’ গণ্য করতে হবে। স্বয়ং ইমাম আলবানী (রহ) বিভিন্ন স্থানে মাজহুলুল আদালতসম্পন্ন রাবীর বর্ণনাকে রদ করেছেন এবং সেটাকে ‘হাসান যন্নি’ গণ্য করেননি।
দ্বিতীয়ত: ইমাম আব্দুর রহমান বিন মাহদি (রহ) লিখেছেন:
خصلتان لا يستقيم فيهما حسن الظن الحكم والحديث يعني لا يستعمل حسن الظن في قبول الرواية عمن ليس بمرضي
“দুটি বিষয় এমন যে, যেখানে ‘হাসান যন্নি’র ধারণা ভালো না। একটি হলো: বিচারিক কাজ, অপরটি হলো: হাদীসের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ অপছন্দনীয় রাবীদের বর্ণনা ক্ববুল করার ক্ষেত্রে ‘হাসান যন্নি’ ব্যবহার করা যায় না।” [আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৩৫, এর সনদ সহীহ]
আর এটা সুস্পষ্ট যে, ‘মাজহুলুল হাল’ বা ‘মাসতুর’ অপছন্দ রাবীদের মধ্যে গণ্য। এ কারণেই ইমাম আলবানী (রহ) হায়সাম বিন ইমরানকে ‘হাসান যন্নি’ বলাটা সুবিবেচনার বিরোধী ও নাজায়েয। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
বাকি থাকল, ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক হায়সাম বিন ইমরানকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলার নীতি বিষয়ক আলোচনা। এর মাধ্যমে তিনি হাদীসে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’–কে হাসান বলেছেন। কিন্তু আমরা এটা বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করেছি যে, না এই নীতিটি গ্রহণযোগ্য - আর না হায়সাম সদুক্ব রাবী। বরং তার মাজহুল হওয়াটা প্রতিষ্ঠিত।
আলোচ্য বর্ণনাটি মারদুদ হওয়ার জন্য এ পর্যন্ত আলোচনাই যথেষ্ট ছিল। এরপরেও আমরা বর্ণনাটি উসূলে হাদীসের দাবির ভিত্তিতে আলোচনা উপস্থাপন করব। এ পর্যায়ে যে বর্ণনাগুলোর সনদ উল্লিখিত হয়েছে, সে সম্পর্কে বিবরণ নিম্নরূপ:
ক) আল-মুহার্রার বিন আবু হুরায়রা: ইমাম আলবানী (রহ) তাঁকে ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৪/৩০১) সিক্বাহ হিসেবে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে (৪/১৫৬) হাফেয ইবনে হাজার (রহ)-এর উক্তি ‘মাক্ববুল’-এর উপর নির্ভর করেছেন। [অর্থাৎ মুতাবাআত ছাড়া তার হাদীস যঈফ গণ্য করেছেন।]
খ) আবু মায়মুনাহ: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ ( ৩/২৩৮) সিক্বাহ গণ্য করেছেন। কিন্তু ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (৩/৪৯২) ইমাম দারাকুতনির উক্তি ‘মাজহুল, পরিত্যাজ্য’-এর উপর নির্ভর করেছেন।
গ) আমর বিন মালিক আন-নুকরি: ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (১/১৩১) মাজহুল বলেছেন। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে (৫/৬০৮) সিক্বাহ গণ্য করেছেন।
ঘ) সালিহ বিন আরিব: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৩/১৫০) হাসানুল হাদীস বলেছেন। কিন্তু ‘সিলসিলাহ যঈফাহ’-তে (৪/১৪৩) ইবনুল ক্বত্তানের উক্তি ‘তার অবস্থা জানা যায় না’ ও ইবনে হাজার (রহ) ‘মাক্ববুল’ বলার উপর সন্তুষ্ট থেকেছেন। আরো দ্র: তাহক্বীক্ব মিশকাত (১/৫০৬ হা/১৬২১)
ঙ) মুসা বিন জুবায়ের: ‘ইরওয়াউল গালিলে’ (৭/১৫৮) মাজহুলুল হাল গণ্য করেছেন (আরো দ্র: সিলসিলাহ যঈফাহ ১/২০৫)। পক্ষান্তরে ‘সিলসিলাহ সহীহাহ’-তে তাঁকে ‘আদামু মুখালিফাত’ হিসেবে ‘হাসানুল হাদীস’ গণ্য করেছেন।
ইমাম আলবানী (রহ)-এর এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের বুঝের বাইরে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, যদি কোনো মুহাদ্দিস উসূলের বিরোধী কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকেন, ইমাম আলবানী (রহ) অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীভাবে সে ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। যেমন – একজন রাবী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহ) বলেছেন: ما علمت فيه جرحا ‘তার জারাহ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’ –এর জবাবে লিখেছেন:
قلت : فقد يقال فهل علمت فيه توثيقا؟ فإن عدم الجرح لا يستلزم التوثيق كما لا يخفى
“আমি (আলবানী) বলছি: সেক্ষেত্রে (জবাবে) বলা হবে, তোমরা কি তার ব্যাপারে তাওসিক্ব জানো? তার জারাহ না থাকাটা তাওসিক্ব হওয়া বাধ্যতামূলক করে না। (এ নিয়মটি) অস্পষ্ট নয়।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২১ হা/৯২০]
তেমনি ইমাম ইবনুল জাওযি (রহ) যখন সুফিয়ান নামের একজন রাবীর হাদীস সহীহ উল্লেখ করে বলেছেন: ما علمنا احدًا طعن في سفيان بن بشر “আমি জানি না, কেউ সুফিয়ান বিন বিশর সম্পর্কে অভিযোগ করেছে।” তখন ইমাম আলবানী (রহ) এর জবাবে নিম্নোক্ত বাক্য ব্যবহার করেছেন:
فهو تصحيح قائم على حجة لا تساوي سماعها ! فإن كل راومجهول عند المحدثين يصح أن يقال فيه : " ما علمنا أحدا طعن فيه "! فهل يلزم من ذلك تصحيح حديث المجهول ! ؟ اللهم لا، وإنها لزلة من عالم يجب اجتنابها
“এটা (হাদীসে) সহীহ’র এমন ভিত্তি, যা শোনার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য। কেননা প্রত্যেক মাজহুল রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের এভাবে বলাটা সহীহ যে, ‘আমাদের তার সম্পর্কে অভিযোগ জানা নেই।’ এমতাবস্থায় মাজহুল রাবীর বর্ণনাকে কীভাবে সহীহ আখ্যা দেয়া যেতে পারে!? আল্লাহর শপথ! না, এটা আলেমদের জন্য অপমান। তাদের এ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব।” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/১৩৭ হা/৬৯৬]
অর্থাৎ যখন কোনো মুহাদ্দিসের রাবীর প্রতি জারাহ জানা থাকে না, তখন তিনি তাঁর বর্ণনাকে হাসান প্রভৃতি হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে রাবীর তাওসিক্ব জানতে হবে। কিন্তু এ বিষয়টি যখন তাঁর নিজের সাথে সম্পর্কিত তখন কেবল সিক্বাহ রাবীদের বর্ণনা দ্বারা (বা শর্তে) আদালত, যবত সবকিছু প্রমাণিত হয়ে যায়। انا لله وانا اليه راجعون
কেবল এটাই নয়, বরং যখন ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) একজন রাবীকে সিক্বাহ বলেছেন ও তাঁর ‘সহীহ ইবনে হিব্বানে’ তার বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তখন ইমাম আলবানী (রহ) তাঁর নিয়মকে রদ না করে এটা বলেন যে,
فلا تغتر بذلك، فإنه قد شذ في ذلك عن التعريف الذي اتفق عليه جماهير المحدثين في الحديث الصحيح وهو : " ما رواه عدل، ضابط، عن مثله ". فأين العدالة، وأين الضبط في مثل هؤلاء المجهولين .
“এর দ্বারা (ইবনে হিব্বান কর্তৃক তাদেরকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দেয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে) ধোঁকায় পড়া যাবে না। কারণ এ বিষয়ে তাঁর মতটি শায। কারণ তিনি সহীহ হাদীসের সংগায়নে জুমহুর মুহাদ্দিসের ঐকমত্যের বিরুদ্ধে গেছেন। আর সেটা হল, ‘আদল ও যবতসম্পন্ন রাবী তারই মতো (আদল ও যবতসম্পন্ন) রাবীদের থেকে বর্ণনা করবে।’ সুতরাং সেক্ষেত্রে মাজহুল রাবীর আদালত কোথায় গেল, আর যবতই বা কোথায় গেল?” [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩২৮ হা/৯২৯]
এই উক্তিগুলো কি হায়সাম বিন ইমরানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না? হায়সাম বিন ইমরানের মধ্যে আদল ও যবতের প্রমাণ আছে কি? আহলে ইলমের কাছে এ ব্যাপারে ইনসাফপূর্ণ চিন্তার দাবি থাকল।
তেমনি যখন কোনো হাদীসের রাবীকে মাজহুল হওয়ার কারণে যঈফ গণ্য করা হয় তখন বলা হয়েছে: “ইবনে আবু হাতিম (রহ) তাকে ‘আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিলে’ উল্লেখ করেছেন এবং কোনো জারাহ বা তা‘দিল করেননি। সুতরাং তিনি মাজহুলুল হাল প্রভৃতি।” [গায়াতুল মারাম পৃ. ৩৭, ১৫২; যিলালুল জান্নাহ ফি তাখরিজুল আহাদিসু কিতাবুস সুন্নাহ ১/২৩, ৩৪, ৬২ প্রভৃতি]
উদাহরণ হিসেবে মালিক দারির ঘটনা ‘ইয়া সারিয়াতুল জাবাল’-এর বিষয়টি উল্লেখ করছি। ইমাম আলবানী (রহ) এর জবাব প্রসঙ্গে লিখেছেন:
والجواب من وجوه : الأول : عدم التسليم بصحة هذه القصة، لأن مالك الدار غير معروف العدالة والضبط، وهذان شرطان أساسيان في كل سند صحيح كما تقرر في علم المصطلح، وقد أورده ابن أبي حاتم في " الجرح والتعديل " ٤ /١/ ٢١٣ " ولم يذكر راوياً عنه غير أبي صالح هذا، ففيه إشعار بأنه مجهول، ويؤيده أن ابن أبي حاتم نفسه – مع سعة حفظه واطلاعه – لم يحك فيه توثيقاً فبقي على الجهالة،
“এর জবাব হলো: প্রথমত, এই ঘটনাটির শুদ্ধতা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মালিক দারি আদালত ও যবতের দিক থেকে প্রসিদ্ধ নন। অথচ এ দুটি শর্ত প্রত্যেক সনদ সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক ভিত্তি। যেভাবে ‘হাদীসের পরিভাষা’র ক্ষেত্রে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য। তাকে ইবনে আবু হাতিম ‘আল-জারাহ ও তা‘দিলে’ (৪/১/২১৩) আবু সালেহ ছাড়া কারো থেকে উল্লেখ করেননি। এ থেকে তার মাজহুল হওয়ার ঘোষণা হয়। এ থেকে এ বিষয়টিও জোরালো হয় যে, আবু হাতেমের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি ও পর্যবেক্ষণের শক্তি থাকা সত্ত্বেও কারো থেকে তার তাওসিক্ব উল্লেখ করেননি। আর এ থেকেই জাহালাত অবশিষ্ট রয়েছে।।” [আত-তাওয়াসসুল আনওয়া‘আহু ওয়া আহকামাহু পৃ. ১২০]
আলোচ্য দাগানো বাক্যটির প্রতি গভীর দৃষ্টি রেখে ইমাম আলবানী (রহ)-এর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি লক্ষ্য করুন, যা হায়সাম বিন ইমরানের আলোচনাতে উল্লেখ করেছেন:
اورده ابن ابي حاتم ... ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا، لكن رواية هؤلاء الثقات الثلاثة عنه ويضم إليهم رابع وهو الهيثم بن خارجة، وخامس وهو يونس بن بكير، مما يجعل النفس تطمئن لحديثه لأنه لوكان في شيء من الضعف لتبين في رواية أحد هؤلاء الثقات عنه، ولعرفه أهل الحديث كابني حبان وأبي حاتم
“ইবনে আবি হাতিম (এটি ‘জারাহ ও তা‘দিলে) উল্লেখ করেছেন … কিন্তু তার প্রতি কোনো জারাহ ও তা‘দিল উল্লেখ করেননি। কিন্তু তার থেকে তিন জন (মুহাম্মাদ বিন ওয়াহহাব, হিশাম বিন ‘আম্মার ও সুলায়মান বিন শারজিল) সিক্বাহ রাবী বর্ণনা করেছেন। আর তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন চতুর্থ জন রাবী‘, তিনি হায়সাম বিন খারিজাহ। আর পঞ্চম জন হলেন ইউনুস বিন বুকায়র। এগুলো থেকে হাদীসটির নিজস্ব নির্ভরতার (সহীহ হওয়ার) প্রতি মন তৃপ্ত হয়। যদি এর মধ্যে কেউ (হায়সাম বিন ইমরান) যঈফ হয়, সেক্ষেত্রে তার থেকে পূর্বের সিক্বাহ রাবীগণ বর্ণনা করে সুস্পষ্ট করেছেন। আর এর যঈফ হওয়া আহলে হাদীস তথা ইবনে হিব্বান ও আবু হাতিমের নিকট গোপন থাকত না। [সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩৯২ হা/৯৬৭]
উদ্ধৃতিদুটির দাগানো অংশগুলো লক্ষ করুন, কীভাবে একজন রাবীর বর্ণনাকে যঈফ বলা হয়েছে, তেমনি একই স্তরের অপর রাবীর বর্ণনাকে সহীহ বা হাসান বলা হয়েছে। অর্থাৎ একস্থানে এটা লিখেছেন যে, ইবনে আবু হাতিম (রহ) ব্যাপক ইলম থাকা সত্ত্বেও মালিক দারির তাওসিক্ব উল্লেখ করেননি। সুতরাং সে মাজহুল। পক্ষান্তরে অন্যস্থানে লিখেছেন, রাবী হায়সাম বিন মালিক ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’। সুতরাং তার হাদীস হাসান। কেননা যদি তার মধ্যে কোনো দুর্বলতা থাকত তা হলে ইবনে হিব্বান, আবু হাতিম (রহ) এবং অন্যান্যরা সেটা উল্লেখ করতেন। আল্লাহ তাআলা এ ধরনের ভুল ও অবহেলা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন। তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে এটা আহলে ইলমের সম্মানের পরিপূরক হয় না।
জ্ঞাতব্য: যে রাবীর ক্ষেত্রে ইমাম ইবনে আবু হাতিম (রহ) জারাহ বা তা‘দিল উল্লেখ করেননি, সেটার উদ্দেশ্য কখনই এটা নয় যে, সে সিক্বাহ বা সদুক্ব। বরং এর উদ্দেশ্য হলো, এই রাবীর সম্পর্কে ইমাম সাহেবের পক্ষ থেকে জারাহ বা তা‘দিল পাওয়া যায়নি। বরং তার পরিচিতি পর্যন্ত উপস্থাপনা যথেষ্ট মনে করেছেন।
ইমাম যাহাবী (রহ) এ ধরনের রাবী যাদেরকে ইমাম ইবনে আবু হাতিম জারাহ বা তা‘দিল উল্লেখ করেননি, সাধারণভাবে ‘মাজহুল’ বা لا يعرف ‘জানা যায় না’ গণ্য করেছেন। যেমন– আযহার বিন রাশিদ, ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল-মাআফিরি, ইসমাঈল বিন ইউসুফ, আনাস, আনাস বিন জানদাল, আউস বিন আবি আউস, আইয়াস বিন খালিফাহ, আইয়াস বিন ইয়াযিদ, …ইবনে সাঈদ প্রমুখ। [মিযানুল ই‘তিদাল ১/ ৬৯৩, ৯৬৭, ৯৭২, ১০৩৬, ১০৩৭, ১০৪৩, ১০৪৯, ১০৫৫, ১১২৬, ১১৪৩ নং]
সুতরাং ইবনে আবু হাতিম (রহ) বা কোনো মুহাদ্দিস কর্তৃক কোনো রাবীর সম্পর্কে জারাহ উল্লেখ না করার দাবি কখনই এটা নয় যে, তিনি অভিযুক্ত নন।
হায়সাম বিন ইমরানের হাদীস হাসান বলার ক্ষেত্রে ইমাম আলবানী (রহ)-এর একটি ভিত্তি হলো, সে ‘হাসান যন্নি’-ও বটে। এই ‘হাসান যন্নি’ সম্পর্কে ইমাম সাখাভি (রহ) সূত্রে তিনি দুটি উক্তি পেশ করেছেন। তা হলো:
ক) لان الاخبار تبنى على حسن الظن بالراوي “রাবীর ক্ষেত্রে ‘হাসান যন্নি’ হওয়াটাই হাদীসের নীতির একটি ভিত্তি।”
খ) وكثرة رواية الثقات عن الشخص تقوي حسن الظن به “সিক্বাহ রাবীদের কারো থেকে অনেক বর্ণনা করা, সেক্ষেত্রে তা ‘হাসান যন্নি’ হাদীসকে মজবুত করে।” [তামামুল মিন্নাহ ২০৬-০৭ পৃ.]
প্রথমত: জানা দরকার যে, এটি ঐকমত্যের নিয়ম নয় যে, মাজহুলুল আদালত বা মাসতুর রাবীর বর্ণনাকে কেবল ‘হাসান যন্নি’ ভিত্তির উপর ‘সহীহ’ বা ‘হাসান’ গণ্য করতে হবে। স্বয়ং ইমাম আলবানী (রহ) বিভিন্ন স্থানে মাজহুলুল আদালতসম্পন্ন রাবীর বর্ণনাকে রদ করেছেন এবং সেটাকে ‘হাসান যন্নি’ গণ্য করেননি।
দ্বিতীয়ত: ইমাম আব্দুর রহমান বিন মাহদি (রহ) লিখেছেন:
خصلتان لا يستقيم فيهما حسن الظن الحكم والحديث يعني لا يستعمل حسن الظن في قبول الرواية عمن ليس بمرضي
“দুটি বিষয় এমন যে, যেখানে ‘হাসান যন্নি’র ধারণা ভালো না। একটি হলো: বিচারিক কাজ, অপরটি হলো: হাদীসের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ অপছন্দনীয় রাবীদের বর্ণনা ক্ববুল করার ক্ষেত্রে ‘হাসান যন্নি’ ব্যবহার করা যায় না।” [আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ২/৩৫, এর সনদ সহীহ]
আর এটা সুস্পষ্ট যে, ‘মাজহুলুল হাল’ বা ‘মাসতুর’ অপছন্দ রাবীদের মধ্যে গণ্য। এ কারণেই ইমাম আলবানী (রহ) হায়সাম বিন ইমরানকে ‘হাসান যন্নি’ বলাটা সুবিবেচনার বিরোধী ও নাজায়েয। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
বাকি থাকল, ইমাম আলবানী (রহ) কর্তৃক হায়সাম বিন ইমরানকে ‘সদুক্ব ও দলিলযোগ্য’ বলার নীতি বিষয়ক আলোচনা। এর মাধ্যমে তিনি হাদীসে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’–কে হাসান বলেছেন। কিন্তু আমরা এটা বিস্তারিতভাবে প্রমাণ করেছি যে, না এই নীতিটি গ্রহণযোগ্য - আর না হায়সাম সদুক্ব রাবী। বরং তার মাজহুল হওয়াটা প্রতিষ্ঠিত।
আলোচ্য বর্ণনাটি মারদুদ হওয়ার জন্য এ পর্যন্ত আলোচনাই যথেষ্ট ছিল। এরপরেও আমরা বর্ণনাটি উসূলে হাদীসের দাবির ভিত্তিতে আলোচনা উপস্থাপন করব। এ পর্যায়ে যে বর্ণনাগুলোর সনদ উল্লিখিত হয়েছে, সে সম্পর্কে বিবরণ নিম্নরূপ:
সনদ-১:
حَدَّثنَا عُبَيْدُ اللّهِ بِنُ عُمَرَ حَدَّثنَا يُونُسُ بنُ بُكَيْر عَنِ الهَيْثِمِ عَنْ عَطِيَّةَ بنِ قَيْسٍ عَنِ الأَزْرَق بنِ قَيْسٍ : رَأَيْتُ ابَنُ عُمَرَ يَعْجِنُ فِى الصَّلاَةِ يَعْتَمِدُ عَلَى يَدَيْهِ إِذَا قَامَ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللّهِ صَلَّى اللّه عَلَيْهِ يَفْعَلُهُ
[গারিবুল হাদীস লিইমাম আবু ইসহাক্ব আল-হারাবী ২/৫২৫ باب عجن الحديث السابع والثلاثون , সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩৯২]
সনদ-২:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ أَبَانَ ، قَالَ : نا يُونُسُ بْنُ بُكَيْرٍ ، قَالَ : نا الْهَيْثَمُ بْنُ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ ، عَنِ الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ : رَأَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ وَهُوَ يَعْجِنُ فِي الصَّلاةِ يَعْتَمِدُ عَلَى يَدَيْهِ إِذَا قَامَ ، فَقُلْتُ : مَا هَذَا يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ؟ قَالَ : " رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْجِنُ فِي الصَّلاةِ " ، يَعْنِي : يَعْتَمِدُ "
[আল-মু’জামুল আওসাত্ব লিত-তাবারানি ৫/১৬-১৭]
ইমাম তাবারানি (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন:
لم يرو هذا الحديث عن الازرق الا الهيشم، تفرد به يونس بن بكير
“এই হাদীসটি আযরাক্ব থেকে কেবল হায়সাম ছাড়া কেউ বর্ণনা করেননি। আর ইউনুস বিন বুকায়র হাদীসটি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে একাকী।”
عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’ সম্পর্কে সাধারণভাবে এই দু’টি সনদকে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। আর উভয় সনদেই ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ সনদে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক হাদীসটিতে নিম্নোক্ত ত্রুটি রয়েছে:
ক) বর্ণনাটি হায়সাম বিন ইমরান ‘মাজহুলুল হাল’ হওয়ার কারণে মারদুদ। যেভাবে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
খ) বর্ণনাটি নিম্নোক্ত কারণে শায:
* এই বর্ণনাটি কামিল বিন তালহাহ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালামাহ (রহ) থেকে তিনি ইবনে উমার (রা) থেকে মওক্বুফ সূত্রে। [সুনানুল কুবরা ২/১৩৫]
পক্ষান্তরে বর্ণনাটি হায়সাম বিন ইমরান বর্ণনা করেছেন আযরাক্ব বিন ক্বায়েস থেকে, তিনি ইবনে উমার (রহ) থেকে মারফু‘ সূত্রে। [গারিবুল হাদীস লিলহারাবী ৫/৫২৫]
** কামিল বিন তালহা’র বর্ণনাতে আছে: اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে।” পক্ষান্তরে হায়সাম বিন ইমরান عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ কামিল বিন তালহা (রহ) হায়সাম বিন ইমরান থেকে অধিক সিক্বাহ। কামিল বিন তালহাকে ইমাম আহমাদ, আবু হাতিম, দারাকুতনি, ইবনে হিব্বান ‘সিক্বাহ’ বলেছেন। [তাহযিব ৮/৩৬৬, তাক্বরিব ২৮৪ পৃ.]
তা ছাড়া হায়সাম বিন ইমরান মাজহুলুল হাল। সুতরাং হায়সমের বর্ণনাটি কামিলের বর্ণনার বিরোধী হওয়ায় শায ও মারদুদ।
গ) বর্ণনাটিতে ইযতারাবের সমস্যা রয়েছে। কেননা বর্ণনাটি হায়সামের সনদে মারফু সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। ইমাম আলবানী (রহ) বলেছেন:
أخرجه الطبراني في " الأوسط " أيضا (١ / ١٩٠ / ٢ رقم ٣٣٧١ - ط ) من طريق عبد الحميد الحماني قال : أخبرنا الهيثم بن عطية البصري عن الأزرق بن قيس قال : " رأيت ابن عمر في الصلاة يعتمد إذا قام، فقلت : ما هذا؟ قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعله ". وقال : " لم يروه عن الأزرق إلا الهيثم، تفرد به الحماني ".
এই সনদটির হায়সাম বিন আতিয়াহ [. আমি (মূল লেখক) হায়সাম বিন আতিয়াহ’র জীবনী পাইনি। সম্ভবত তিনিই ‘হায়সাম বিন আতিয়াহ’। যেভাবে ইমাম আলবানী (রহ) বলেছেন। তা ছাড়া ইমাম তাবারানি (রহ)-এর ‘আওসাতে’র প্রকাশিত সংস্করণে ‘হায়সাম বিন আলক্বামাহ আল-বসরি’ রয়েছে। [আওসাত ৪/২১০]] যদি হায়সাম বিন ইমরান হন, তবুও বর্ণনাটি মুযতারাব হবে। কেননা কখনও বর্ণনাকারী عجن উল্লেখ করেছেন, আবার কখনও يَعْتَمِدُ বলেছেন। তা ছাড়া এক্ষেত্রে يَعْتَمِدُ শব্দটি গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা অন্যান্য সিক্বাহ রাবীদের থেকে এই শব্দটির সমর্থন হয়। [কিছু পূর্বে দুটি সনদ উল্লেখ করা হয়েছে।- অনুবাদক]
জ্ঞাতব্য: ইমাম আলবানী (রহ) এই হাদীসটি ইউনুস বিন বুকায়রের বর্ণনার সমর্থনে পেশ করেছেন। অথচ বর্ণনাটি সমর্থনের পরিবর্তে খণ্ডন করে। কেননা (১) এতে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। (২) বর্ণনাটি اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর সমর্থন করে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ঘ) বর্ণনাটি সনদ ও মতন উভয় দিক থেকে গরিব (বিরল)। সনদের দিক থেকে কারণটি হলো, এটি ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আর মতন দিক থেকে এর দুর্বলতা হলো عجن শব্দটি বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম আলবানী (রহ) এ ধরনের গরিব বর্ণনাকে যঈফ গণ্য করেছেন। [দ্র: তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/৭৪, ৩৫৩, ৬০৬, ৬৬৪, ৭২০, ৯৯৯, ১১৪২, ১২৬৭, ১৩২৯, ১৫৭২ নং প্রভৃতি; তাহক্বীক্ব রিয়াদুস সালিহিন পৃ. ১১-১২ নং: ১৫, ১৯ পৃভৃতি]
ঙ) বর্ণনাটিকে মুনকারও বলা যায়। কেননা عجن শব্দটি বর্ধিত বর্ণনা ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ মারফু‘ সনদে বর্ণিত হয়েছে। অথচ ইউনুস ‘সদুক্ব ও ভুল করতেন’। দ্বিতীয়ত, হায়সাম ‘মাজহুলুল হাল’ রাবী। সুতরাং বর্ণনাটি মারফু‘ ভাবে উল্লেখ করা এবং মতনে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একাকী হওয়ার কারণে হাদীসটি মুনকার।
চ) যদি তর্কের খাতিরে হাদীসটিকে ‘হাসান’ গণ্য করি। তা হলেও হাদীসটি নিম্নোক্ত কারণে মারজুহ। পক্ষান্তরে ‘জমিনে হাতের উপর ভর দেয়ার’ হাদীসটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত।
* আব্দুল হামিদ আল-হামানি বুখারীর রাবী। অনুরূপ হাম্মাদ বিন সালামাহ থেকে ইমাম বুখারী (মুয়াল্লাক্বভাবে) ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”- মর্মে অনেক সংখ্যক সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।
*** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর শাওয়াহেদ ও মুতাবি‘ রয়েছে। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের কোনো মুতাবি‘ নেই।
**** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর বর্ণনার মতনে কোনো বিরোধ নেই। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের সনদ ও মতনে (মারফু‘ভাবে বর্ণনা ও উদ্ধৃত বাক্যে) ইখতিলাফ আছে।
***** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর বর্ণনার সমস্ত রাবী যবতসম্পন্ন, নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের রাবী নিম্নমানের এবং হায়সাম বিন ইমরান ‘মাজহুলুল হাল’ রাবী।
উক্ত কারণে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-মর্মের হাদীস গ্রহণযোগ্য এবং عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীস মারজুহ ও মারদুদ। [শরহে নুখবাহ পৃ. ৪৬-৪৭ প্রভৃতি]
عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করা’ মর্মে অপর একটি বর্ণনা সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার শব্দগুলো নিম্নরূপ:
أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ كان إذا قام في صلاتهِ وضع يديهِ على الأرضِ كما يضعُ العاجنُ
“রসূলুল্লাহ (স) যখন নিজের সালাতে দাঁড়াতেন, তখন নিজের হাত জমিনের উপর রাখতেন যেভাবে عاجنُ (আটা খামিরের জন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ) করা হয়।” [তালখিসুল হাবির ১/২৬০]
এই হাদীসটি যেহেতু বাতিল, এজন্যে ইমাম আলবানী (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করেননি। হাফেয ইবনে হাজার (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন:
“ইবনে সিলাহ (রহ) ‘আল-ওয়াসিতে’ বলেছেন: হাদীসটি সহীহ নয়। আর না মাশহুর ও মা‘রুফ। এর দ্বারা দলিল নেয়া সংগত নয়। ইমাম নওয়াবি (রহ) ‘শরহে মুহাযযাবে’ বলেছেন: এই হাদীসটি যঈফ ও বাতিল। এর কোনো আসল নেই। তিনি ‘তানক্বিহে’ বলেছেন: যঈফ ও বাতিল। ‘শরহে মুহাযযাবে’ বলেছেন: ইমাম গাযযালি থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, তিনি নিজের দারসে বলেছেন: এই শব্দটি যা (ز) ও নূন (ن) সহ অধিক সহীহ। এটা তার জন্য- যে নিজের হাতকে বন্ধ করে এবং তাতে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন: যদি হাদীসটি সহীহ হয়, হাতকে হাতের পাতার সাহায্যে ভর দিয়ে দাঁড়ানো। যেভাবে দুর্বল ব্যক্তি সাহায্য নেয়। আর এর দ্বারা বৃদ্ধ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, আটা খামির বানানো ব্যক্তি নয়।… ইবনে সিলাহ (রহ) বলেছেন: এই হাদীসটি প্রমাণিত নয়। যদি প্রমাণিত ধরে নিই, তবে এর অর্থ হয় না। কেননা عاجنُ অভিধানে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বুঝায়। … গাযযালি (রহ) বলেছেন: যখন আমি যা (ز) দ্বারা বলি, তখন এর অর্থ হয় বৃদ্ধ ব্যক্তি, যে উঠার সময় বয়সের ভারে জমিনের সাহায্য নেয়। ইবনে সিলাহ বলেছেন: ‘আল-মুহকামে’ المغربي اضرير المتأخر থেকে বর্ণিত হয়েছে, বলা হয় العاجن এর উদ্দেশ্য জমিনের সাহায্য নেয়া ও হাতের তালু বন্ধ করা। তাঁর এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর ঐসব কথা গ্রহণযোগ্য না, যেসব ব্যাপারে তিনি একা। কেননা তিনি অনেক ভুল করতেন অনেক ভুল উদ্ভাবন করেছেন।” [তালখিসুল হাবির ১/২৬০]
উক্ত বিবরণ থেকে মাসআলাটি সুস্পষ্ট যে, যদি হাদীসটি সহীহ (ধরে নেয়া) হয় তা হলেও এর দাবি العاجن শব্দটি العجين এর মতো জমিনের উপর হাত রেখে সাহায্য নেয়া নয়, বরং হাতের তালুসহ জমিনের সাহায্য নেয়া উদ্দেশ্য হবে।
পূর্বোক্ত বিস্তারিত আলোচনার সারসংক্ষেপ হলো, সহীহ বুখারীতে اعْتَمَد على الأرضِ “জমিনে ভর দিতেন”-মর্মের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা)-এর বর্ণনাতে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন তার হাতের সাহায্যে”- উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ হাতের দ্বারা জমিনে সাহায্য নিতেন।
আর সাহাবি ইবনে উমার (রা)-এর মওকুফ বর্ণনা معتمد على الارض ‘তিনি জমিনের উপর (নিজের হাতের দ্বারা) ভর দিতেন’। তাঁর থেকে কোনো সহীহ বর্ণনাতে عجن শব্দটি নেই। পক্ষান্তরে তাঁর থেকে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে” বর্ণনাটির ওহাইব, আইয়ুব ও আবু ক্বিলাবার সমর্থক হলেন খালিদ আল-হিযা, কামিল বিন আবি তালহা, আযরুক্ব বিন ক্বায়েস, আব্দুল হামিদ প্রমুখ রয়েছেন। যারা ইউনুস বিন বুকায়র ও হায়সাম থেকে অধিক সিক্বাহ। আবার হাম্মাদ বিন সালামাহ ও খালিদ আল-হিযা প্রমুখ এবং ইউনুস বিন বুকায়র ও হায়সামের عجن শব্দটির পক্ষে অন্য কোনো রাবীর সমর্থন নেই। পক্ষান্তরে সহীহ বুখারী ও সুনানের নাসাঈর বর্ণনার সমর্থন ‘সুনানুল কুবরা’র আব্দুল্লাহ বিন উমারের বর্ণনাটি সমর্থন করে। তা ছাড়া মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাকের বর্ণনাটিও সমর্থন করে। আবার ইমাম আল-বানী (রহ) ইবনে উমার (রা) থেকে ‘মু’জামুল আওসাতে’র যে বর্ণনাটি ইউনুস বিন বুকায়র থেকে উল্লেখ করেছেন, সেটাও এটার শক্তিশালী সমর্থক। অনুরূপভাবে সাজদাতে যাওয়ার সময় সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) ও আবু হুরায়রা (রা)-এর বর্ণনা - যা আমরা পুস্তিকাটির শুরুতে উল্লেখ করেছি, এ দাবিকেই সমর্থন করছে। যা দ্বারা اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে” বর্ণনাটির দাবি তথা হাতের তালুকে বুঝাচ্ছে। তা ছাড়া বহু হাদীসে يدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে كفيْن (দুই হাতের তালু)। আর عجن শব্দটির অর্থ: আটা মাখানোর জন্য মুষ্টিবদ্ধ করার ধরনই কেবল আসেনি, বরং নিজের হাতের উপর ভর করাও এসেছে। [মুনজিদ পৃ. ৬৩৪, লুগাতুল হাদীস লিআল্লামাহ ওয়াহিদুযযামান ৩/৩৪ পৃ.]
তেমনি কোনো বৃদ্ধ ব্যক্তির সহযোগিতায় হাতসহ হাতের তালু অধিক শক্তিদায়ক হয়ে থাকে, কেবল মুষ্টিবদ্ধ করার দ্বারা সেটা হয় না। সুতরাং এই অর্থ গ্রহণ করাটাই অধিক শক্তিশালী।
এই আলোচনাতে আমরা এটা প্রমাণ করেছি যে, হাদীসে عجن সব দিকে থেকেই যঈফ, শায ও মুনকার। আর যদি এটাকে হাসান হাদীস গণ্য করাও হয়, তা হলেও সেটা মারজুহ। সুতরাং এটা দ্বারা দলিল গ্রহণ ও এর উপর আমল করা সঠিক না।
هذا ما عندي والله أعلم بالصواب
حَدَّثنَا عُبَيْدُ اللّهِ بِنُ عُمَرَ حَدَّثنَا يُونُسُ بنُ بُكَيْر عَنِ الهَيْثِمِ عَنْ عَطِيَّةَ بنِ قَيْسٍ عَنِ الأَزْرَق بنِ قَيْسٍ : رَأَيْتُ ابَنُ عُمَرَ يَعْجِنُ فِى الصَّلاَةِ يَعْتَمِدُ عَلَى يَدَيْهِ إِذَا قَامَ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللّهِ صَلَّى اللّه عَلَيْهِ يَفْعَلُهُ
[গারিবুল হাদীস লিইমাম আবু ইসহাক্ব আল-হারাবী ২/৫২৫ باب عجن الحديث السابع والثلاثون , সিলসিলাহ যঈফাহ ২/৩৯২]
সনদ-২:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ أَبَانَ ، قَالَ : نا يُونُسُ بْنُ بُكَيْرٍ ، قَالَ : نا الْهَيْثَمُ بْنُ عَلْقَمَةَ بْنِ قَيْسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ ، عَنِ الأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ : رَأَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ وَهُوَ يَعْجِنُ فِي الصَّلاةِ يَعْتَمِدُ عَلَى يَدَيْهِ إِذَا قَامَ ، فَقُلْتُ : مَا هَذَا يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ ؟ قَالَ : " رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْجِنُ فِي الصَّلاةِ " ، يَعْنِي : يَعْتَمِدُ "
[আল-মু’জামুল আওসাত্ব লিত-তাবারানি ৫/১৬-১৭]
ইমাম তাবারানি (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন:
لم يرو هذا الحديث عن الازرق الا الهيشم، تفرد به يونس بن بكير
“এই হাদীসটি আযরাক্ব থেকে কেবল হায়সাম ছাড়া কেউ বর্ণনা করেননি। আর ইউনুস বিন বুকায়র হাদীসটি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে একাকী।”
عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার হাদীস’ সম্পর্কে সাধারণভাবে এই দু’টি সনদকে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। আর উভয় সনদেই ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ সনদে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের তাহক্বীক্ব মোতাবেক হাদীসটিতে নিম্নোক্ত ত্রুটি রয়েছে:
ক) বর্ণনাটি হায়সাম বিন ইমরান ‘মাজহুলুল হাল’ হওয়ার কারণে মারদুদ। যেভাবে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
খ) বর্ণনাটি নিম্নোক্ত কারণে শায:
* এই বর্ণনাটি কামিল বিন তালহাহ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ বিন সালামাহ (রহ) থেকে তিনি ইবনে উমার (রা) থেকে মওক্বুফ সূত্রে। [সুনানুল কুবরা ২/১৩৫]
পক্ষান্তরে বর্ণনাটি হায়সাম বিন ইমরান বর্ণনা করেছেন আযরাক্ব বিন ক্বায়েস থেকে, তিনি ইবনে উমার (রহ) থেকে মারফু‘ সূত্রে। [গারিবুল হাদীস লিলহারাবী ৫/৫২৫]
** কামিল বিন তালহা’র বর্ণনাতে আছে: اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে।” পক্ষান্তরে হায়সাম বিন ইমরান عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ কামিল বিন তালহা (রহ) হায়সাম বিন ইমরান থেকে অধিক সিক্বাহ। কামিল বিন তালহাকে ইমাম আহমাদ, আবু হাতিম, দারাকুতনি, ইবনে হিব্বান ‘সিক্বাহ’ বলেছেন। [তাহযিব ৮/৩৬৬, তাক্বরিব ২৮৪ পৃ.]
তা ছাড়া হায়সাম বিন ইমরান মাজহুলুল হাল। সুতরাং হায়সমের বর্ণনাটি কামিলের বর্ণনার বিরোধী হওয়ায় শায ও মারদুদ।
গ) বর্ণনাটিতে ইযতারাবের সমস্যা রয়েছে। কেননা বর্ণনাটি হায়সামের সনদে মারফু সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। ইমাম আলবানী (রহ) বলেছেন:
أخرجه الطبراني في " الأوسط " أيضا (١ / ١٩٠ / ٢ رقم ٣٣٧١ - ط ) من طريق عبد الحميد الحماني قال : أخبرنا الهيثم بن عطية البصري عن الأزرق بن قيس قال : " رأيت ابن عمر في الصلاة يعتمد إذا قام، فقلت : ما هذا؟ قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعله ". وقال : " لم يروه عن الأزرق إلا الهيثم، تفرد به الحماني ".
এই সনদটির হায়সাম বিন আতিয়াহ [. আমি (মূল লেখক) হায়সাম বিন আতিয়াহ’র জীবনী পাইনি। সম্ভবত তিনিই ‘হায়সাম বিন আতিয়াহ’। যেভাবে ইমাম আলবানী (রহ) বলেছেন। তা ছাড়া ইমাম তাবারানি (রহ)-এর ‘আওসাতে’র প্রকাশিত সংস্করণে ‘হায়সাম বিন আলক্বামাহ আল-বসরি’ রয়েছে। [আওসাত ৪/২১০]] যদি হায়সাম বিন ইমরান হন, তবুও বর্ণনাটি মুযতারাব হবে। কেননা কখনও বর্ণনাকারী عجن উল্লেখ করেছেন, আবার কখনও يَعْتَمِدُ বলেছেন। তা ছাড়া এক্ষেত্রে يَعْتَمِدُ শব্দটি গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা অন্যান্য সিক্বাহ রাবীদের থেকে এই শব্দটির সমর্থন হয়। [কিছু পূর্বে দুটি সনদ উল্লেখ করা হয়েছে।- অনুবাদক]
জ্ঞাতব্য: ইমাম আলবানী (রহ) এই হাদীসটি ইউনুস বিন বুকায়রের বর্ণনার সমর্থনে পেশ করেছেন। অথচ বর্ণনাটি সমর্থনের পরিবর্তে খণ্ডন করে। কেননা (১) এতে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ কথা উল্লেখ নেই। (২) বর্ণনাটি اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর সমর্থন করে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ঘ) বর্ণনাটি সনদ ও মতন উভয় দিক থেকে গরিব (বিরল)। সনদের দিক থেকে কারণটি হলো, এটি ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আর মতন দিক থেকে এর দুর্বলতা হলো عجن শব্দটি বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম আলবানী (রহ) এ ধরনের গরিব বর্ণনাকে যঈফ গণ্য করেছেন। [দ্র: তাহক্বীক্ব মিশকাত ১/৭৪, ৩৫৩, ৬০৬, ৬৬৪, ৭২০, ৯৯৯, ১১৪২, ১২৬৭, ১৩২৯, ১৫৭২ নং প্রভৃতি; তাহক্বীক্ব রিয়াদুস সালিহিন পৃ. ১১-১২ নং: ১৫, ১৯ পৃভৃতি]
ঙ) বর্ণনাটিকে মুনকারও বলা যায়। কেননা عجن শব্দটি বর্ধিত বর্ণনা ‘ইউনুস বিন বুকায়র আন হায়সাম’ মারফু‘ সনদে বর্ণিত হয়েছে। অথচ ইউনুস ‘সদুক্ব ও ভুল করতেন’। দ্বিতীয়ত, হায়সাম ‘মাজহুলুল হাল’ রাবী। সুতরাং বর্ণনাটি মারফু‘ ভাবে উল্লেখ করা এবং মতনে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একাকী হওয়ার কারণে হাদীসটি মুনকার।
চ) যদি তর্কের খাতিরে হাদীসটিকে ‘হাসান’ গণ্য করি। তা হলেও হাদীসটি নিম্নোক্ত কারণে মারজুহ। পক্ষান্তরে ‘জমিনে হাতের উপর ভর দেয়ার’ হাদীসটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত।
* আব্দুল হামিদ আল-হামানি বুখারীর রাবী। অনুরূপ হাম্মাদ বিন সালামাহ থেকে ইমাম বুখারী (মুয়াল্লাক্বভাবে) ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”- মর্মে অনেক সংখ্যক সিক্বাহ রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।
*** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর শাওয়াহেদ ও মুতাবি‘ রয়েছে। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের কোনো মুতাবি‘ নেই।
**** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর বর্ণনার মতনে কোনো বিরোধ নেই। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের সনদ ও মতনে (মারফু‘ভাবে বর্ণনা ও উদ্ধৃত বাক্যে) ইখতিলাফ আছে।
***** اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-এর বর্ণনার সমস্ত রাবী যবতসম্পন্ন, নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। পক্ষান্তরে عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীসের রাবী নিম্নমানের এবং হায়সাম বিন ইমরান ‘মাজহুলুল হাল’ রাবী।
উক্ত কারণে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে”-মর্মের হাদীস গ্রহণযোগ্য এবং عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করার’ হাদীস মারজুহ ও মারদুদ। [শরহে নুখবাহ পৃ. ৪৬-৪৭ প্রভৃতি]
عجن তথা ‘মুষ্টির উপর ভর করা’ মর্মে অপর একটি বর্ণনা সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার শব্দগুলো নিম্নরূপ:
أنَّ رسولَ اللهِ ﷺ كان إذا قام في صلاتهِ وضع يديهِ على الأرضِ كما يضعُ العاجنُ
“রসূলুল্লাহ (স) যখন নিজের সালাতে দাঁড়াতেন, তখন নিজের হাত জমিনের উপর রাখতেন যেভাবে عاجنُ (আটা খামিরের জন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ) করা হয়।” [তালখিসুল হাবির ১/২৬০]
এই হাদীসটি যেহেতু বাতিল, এজন্যে ইমাম আলবানী (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করেননি। হাফেয ইবনে হাজার (রহ) হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন:
“ইবনে সিলাহ (রহ) ‘আল-ওয়াসিতে’ বলেছেন: হাদীসটি সহীহ নয়। আর না মাশহুর ও মা‘রুফ। এর দ্বারা দলিল নেয়া সংগত নয়। ইমাম নওয়াবি (রহ) ‘শরহে মুহাযযাবে’ বলেছেন: এই হাদীসটি যঈফ ও বাতিল। এর কোনো আসল নেই। তিনি ‘তানক্বিহে’ বলেছেন: যঈফ ও বাতিল। ‘শরহে মুহাযযাবে’ বলেছেন: ইমাম গাযযালি থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, তিনি নিজের দারসে বলেছেন: এই শব্দটি যা (ز) ও নূন (ن) সহ অধিক সহীহ। এটা তার জন্য- যে নিজের হাতকে বন্ধ করে এবং তাতে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন: যদি হাদীসটি সহীহ হয়, হাতকে হাতের পাতার সাহায্যে ভর দিয়ে দাঁড়ানো। যেভাবে দুর্বল ব্যক্তি সাহায্য নেয়। আর এর দ্বারা বৃদ্ধ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, আটা খামির বানানো ব্যক্তি নয়।… ইবনে সিলাহ (রহ) বলেছেন: এই হাদীসটি প্রমাণিত নয়। যদি প্রমাণিত ধরে নিই, তবে এর অর্থ হয় না। কেননা عاجنُ অভিধানে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বুঝায়। … গাযযালি (রহ) বলেছেন: যখন আমি যা (ز) দ্বারা বলি, তখন এর অর্থ হয় বৃদ্ধ ব্যক্তি, যে উঠার সময় বয়সের ভারে জমিনের সাহায্য নেয়। ইবনে সিলাহ বলেছেন: ‘আল-মুহকামে’ المغربي اضرير المتأخر থেকে বর্ণিত হয়েছে, বলা হয় العاجن এর উদ্দেশ্য জমিনের সাহায্য নেয়া ও হাতের তালু বন্ধ করা। তাঁর এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর ঐসব কথা গ্রহণযোগ্য না, যেসব ব্যাপারে তিনি একা। কেননা তিনি অনেক ভুল করতেন অনেক ভুল উদ্ভাবন করেছেন।” [তালখিসুল হাবির ১/২৬০]
উক্ত বিবরণ থেকে মাসআলাটি সুস্পষ্ট যে, যদি হাদীসটি সহীহ (ধরে নেয়া) হয় তা হলেও এর দাবি العاجن শব্দটি العجين এর মতো জমিনের উপর হাত রেখে সাহায্য নেয়া নয়, বরং হাতের তালুসহ জমিনের সাহায্য নেয়া উদ্দেশ্য হবে।
পূর্বোক্ত বিস্তারিত আলোচনার সারসংক্ষেপ হলো, সহীহ বুখারীতে اعْتَمَد على الأرضِ “জমিনে ভর দিতেন”-মর্মের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা)-এর বর্ণনাতে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন তার হাতের সাহায্যে”- উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ হাতের দ্বারা জমিনে সাহায্য নিতেন।
আর সাহাবি ইবনে উমার (রা)-এর মওকুফ বর্ণনা معتمد على الارض ‘তিনি জমিনের উপর (নিজের হাতের দ্বারা) ভর দিতেন’। তাঁর থেকে কোনো সহীহ বর্ণনাতে عجن শব্দটি নেই। পক্ষান্তরে তাঁর থেকে اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে” বর্ণনাটির ওহাইব, আইয়ুব ও আবু ক্বিলাবার সমর্থক হলেন খালিদ আল-হিযা, কামিল বিন আবি তালহা, আযরুক্ব বিন ক্বায়েস, আব্দুল হামিদ প্রমুখ রয়েছেন। যারা ইউনুস বিন বুকায়র ও হায়সাম থেকে অধিক সিক্বাহ। আবার হাম্মাদ বিন সালামাহ ও খালিদ আল-হিযা প্রমুখ এবং ইউনুস বিন বুকায়র ও হায়সামের عجن শব্দটির পক্ষে অন্য কোনো রাবীর সমর্থন নেই। পক্ষান্তরে সহীহ বুখারী ও সুনানের নাসাঈর বর্ণনার সমর্থন ‘সুনানুল কুবরা’র আব্দুল্লাহ বিন উমারের বর্ণনাটি সমর্থন করে। তা ছাড়া মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাকের বর্ণনাটিও সমর্থন করে। আবার ইমাম আল-বানী (রহ) ইবনে উমার (রা) থেকে ‘মু’জামুল আওসাতে’র যে বর্ণনাটি ইউনুস বিন বুকায়র থেকে উল্লেখ করেছেন, সেটাও এটার শক্তিশালী সমর্থক। অনুরূপভাবে সাজদাতে যাওয়ার সময় সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) ও আবু হুরায়রা (রা)-এর বর্ণনা - যা আমরা পুস্তিকাটির শুরুতে উল্লেখ করেছি, এ দাবিকেই সমর্থন করছে। যা দ্বারা اعْتَمَد على الأرضِ بيَدَيْهِ “জমিনে ভর দিতেন হাতের সাহায্যে” বর্ণনাটির দাবি তথা হাতের তালুকে বুঝাচ্ছে। তা ছাড়া বহু হাদীসে يدينِ (দুই হাত)-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে كفيْن (দুই হাতের তালু)। আর عجن শব্দটির অর্থ: আটা মাখানোর জন্য মুষ্টিবদ্ধ করার ধরনই কেবল আসেনি, বরং নিজের হাতের উপর ভর করাও এসেছে। [মুনজিদ পৃ. ৬৩৪, লুগাতুল হাদীস লিআল্লামাহ ওয়াহিদুযযামান ৩/৩৪ পৃ.]
তেমনি কোনো বৃদ্ধ ব্যক্তির সহযোগিতায় হাতসহ হাতের তালু অধিক শক্তিদায়ক হয়ে থাকে, কেবল মুষ্টিবদ্ধ করার দ্বারা সেটা হয় না। সুতরাং এই অর্থ গ্রহণ করাটাই অধিক শক্তিশালী।
এই আলোচনাতে আমরা এটা প্রমাণ করেছি যে, হাদীসে عجن সব দিকে থেকেই যঈফ, শায ও মুনকার। আর যদি এটাকে হাসান হাদীস গণ্য করাও হয়, তা হলেও সেটা মারজুহ। সুতরাং এটা দ্বারা দলিল গ্রহণ ও এর উপর আমল করা সঠিক না।
هذا ما عندي والله أعلم بالصواب
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন