hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শির্ক কী ও কেন

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

১৪০
৩. অলিগণের মধ্যে যারা গউছ ও কুতুব তারা পৃথিবী পরিচালনা করেন বলে বিশ্বাস করা :
আমাদের দেশে ভ্রান্ত তরীকত ও মা‘রিফাতপন্থীদের মাঝে এমন একটি অদ্ভূত বিশ্বাস রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অলিগণের মধ্য থেকে কতিপয় লোকদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন কর্ম পরিচালনা জন্য গউছ, কুতুব ও আব্দাল ইত্যাদি পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সরকারী ক্ষমতা লাভ, প্রশাসনের বিভিন্ন পদের নিয়োগ, বদলী ও অপসারণ তাঁদেরই ইশারায় নাকি হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের হাতে কাউকে কিছু দেয়া বা না দেয়া, কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা দান করে থাকেন। ‘দেওয়ানুস সালেহীন’ নামে তাঁদের নাকি একটি পরামর্শ পরিষদও রয়েছে। সেখানে বসেই তাঁরা যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী ফরমান জারী করেন। এমনকি তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নাকি আদালতের যাবতীয় রায়সমূহ জারী হয়ে থাকে। [. মাওলানা ফজলুল হক নামে ‘ফাজিলে দেওবন্দ’ ডিগ্রী অর্জনকারী মাদ্রাসা-ই- আলীয়া, ঢাকা’র একজন বিশিষ্ট শিক্ষক ছিলেন। দেওবন্দে অধ্যয়নকালে তিনি এ সম্পর্কিত কিছু ঘটনা শ্রবণ করেছিলেন। তন্মধ্যকার একটি ঘটনা নিম্নরূপ: একদা এক ব্যক্তি খুনের দায়ে অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে মকদ্দমা হয়। লোকটিকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে খালাস করে আনার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনরা মকদ্দমা চলাকালীন সময়ে একজন বিশিষ্ট আলেমের মাধ্যমে সে সময়ে যিনি দিল্লীর গাউছ ছিলেন, তাঁর শরণাপন্ন হয়। গাউছ বিষয়টি তাঁদের দেওয়ানে আলোচনা করেন এবং লোকটিকে নির্দোষভাবে খালাসের সিদ্ধান্ত পাশ করেন। পরবর্তীতে আদালতের বিচারকও সে অনুযায়ী তাকে নির্দোষ বলে রায় প্রদান করেন। [গাঁজাখুরী গল্প (সম্পাদক)]] এ-জাতীয় ধারণার পরিপ্রেক্ষিতেই বড় পীর আব্দুল কাদির জীলানীকে ‘গউছে আ‘যম’ (বড় উদ্ধারকারী) বলে নামকরণ করা হয়েছে। এ ধারণার ভিত্তিতেই পীরদের ভক্তগণ তাদের পীর সাহেবদেরকে ‘যামানার কুতুব’ নামে খেতাব দিয়ে থাকেন। গাউছ ও কুতুব সম্পর্কিত এ বিশ্বাস যে শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই রয়েছে, তা নয়; এ ধরনের বিশ্বাস অনেক আলেমদের মাঝেও রয়েছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হলেন জমঈয়াতুল মুদাররিছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব পত্রিকার মালিক মাওলানা আব্দুল মান্নান। তিনি তাঁর পত্রিকায় এ মর্মে একটি প্রবন্ধ বিগত ২৮/৯/১৯৯৭ সালে প্রকাশ করেছিলেন। যার উদ্ধৃতি প্রথম অধ্যায়ে প্রদান করা হয়েছে। গউছ ও কুতুব সম্পর্কিত এ জাতীয় চিন্তাধারা ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজ ব্যতীত অন্যান্য মুসলিম দেশের মুসলিমদের মাঝে নেই। এ-জাতীয় চিন্তাধারা তাদের মধ্যে প্রসারিত হওয়ার পিছনে কিছু হাদীস রয়েছে; যে-গুলো দুর্বল অথবা মাওযু‘ হওয়ার ব্যাপারে হাদীস বিশেষজ্ঞগণের মাঝে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [. কেউ কেউ মুগীরাহ ইবনে শু‘বাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর দাস হেলাল এর ব্যাপারে এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন, সে হাদীসে রয়েছে : তিনি কুতুবদের মধ্যকার একজন ছিলেন। এ হাদীসটি হাদীস বিশেষজ্ঞদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাতিল বলে গৃহীত হয়েছে। আবু নাঈম তাঁর ‘হিলয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে এবং শেখ আব্দুর রহমান আস-সুলামী তাঁর কোনো কোনো গ্রন্থে এ সম্পর্কিত কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন, তা দেখে কারো ধোঁকায় পড়ার কোন অবকাশ নেই; কারণ, তাদের কিতাবাদিতে সহীহ, হাসান, যয়ীফ ও মাওদু‘ তথা মিথ্যা হাদীসের সমাহার রয়েছে যেগুলো মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে হাদীস বিশারদদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। এ ছাড়া আবুস শেখ নামক মুহাদ্দিস এর বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে এমন সব বর্ণনাকারীদের হাদীস রয়েছে, যারা হাদীসের মধ্যে বিশুদ্ধ আর বাতিল বলে কোনো পার্থক্য না করে যা-ই শ্রবণ করেছেন তা-ই বর্ণনা করার নীতি অবলম্বনকারী ছিলেন, যদিও প্রকৃত হাদীস বেত্তাগণ এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করতেন না, এ কারণে যে, রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেছেন : «مَنْ حَدَّثَ بِحَدِيْثٍ وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الكَاذِبِيْن» ‘‘একটি হাদীস মিথ্যা জানা সত্ত্বেও যে আমার পক্ষ থেকে তা বর্ণনা করলো, সে মিথ্যুকদের মধ্যকারই একজন।’’ দেখুন: ইবনে তাইমিয়্যাহ, যিয়ারাতুল কুবূরি ওয়াল ইস্তেনজাদি বিল মাকবূর; (রিয়াদ : আর রিয়াসাতুল আ-ম্মাহ..., দারুল ইফতা, ১ম সংস্করণ, ১৪১০হি:), পৃ.৬৫।] ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাঃ এ-জাতীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন,

’’ وهذا كله باطل لا أصل له في كتاب الله ولا سنة رسوله، ولا قاله أحد من سلف الأمة، ولا أئمتها، ولا من المشايخ الكبار المتقدمين الذين يصلحون للاقتداء بهم ...‘‘

‘‘এ সব বাতিল বিশ্বাস। আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাতে এ সবের কোনই ভিত্তি নেই, মুসলিম উম্মাহের অগ্রবর্তীদের মধ্যকার কেউ তা বলেন নি। তাদের ইমামগণও তা বলেন নি এবং অনুসরণীয় অগ্রবর্তী বড় বড় পীর-মাশায়েখগণও এ সব বলেন নি...’’। [. ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.)-কে গাউছ ও কুতুব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : কোনো কোনো দলের লোকেরা এ সব কথা বলে থাকে, এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে বাতিল বিষয়ে এ সবের ব্যাখ্যা করে, যেমন কেউ কেউ বলে : গাউছ হলেন তিনি যার মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টির সাহায্য ও জীবিকা এসে থাকে, এমনকি তারা আরো বলে যে, ফেরেশতা ও সমুদ্রের মাছের সাহায্য ও গাউছের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ জাতীয় ধারণা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর ব্যাপারে খ্রিষ্টানরা এবং ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারীরা তাঁর ব্যাপারে যা বলে, সে সব কথারই অনুরূপ। এ জাতীয় ধারণা ও কথা প্রকাশ্য কুফরী। যারা এ সব বলবে তাদেরকে তাওবা করাতে হবে। তাওবা না করলে এদেরকে (মুরতাদ হওয়ার কারণে) হত্যা করা হবে; কেননা, সৃষ্টির মাঝে এমন কোনো ফেরেশতা বা মানুষ নেই যার মাধ্যমে সকল সৃষ্ট জীবের সাহায্য এসে থাকে ...। ‘গাউছ’ শব্দের দ্বারা আমি এটাই উদ্দেশ্য করেছি যা এদের কেউ কেউ বলে যে, পৃথিবীতে ৩১৩ জনেরও অধিক ব্যক্তি রয়েছেন যাদেরকে ‘নুজাবা’ বলা হয়, তাঁদের মধ্য থেকে পুনরায় ৭০ জনকে বাছাই করা হয়, যাদেরকে বলা হয় ‘নুক্বাবা’। এদের মধ্য থেকে ৪০ জনকে বাছাই করা হয়, তাঁদেরকে বলা হয় ‘আবদাল’’। এদের মধ্য থেকে আবার সাত জনকে বাছাই করা হয়, তাঁদেরকে বলা হয় ‘আকতাব’। এদের মধ্য থেকে আবার চার জনকে বাছাই করা হয়, তাঁদেরকে বলা হয় ‘আওতাদ’। এদের মধ্য থেকে আবার একজনকে বাছাই করা হয়, যাকে বলা হয় ‘গাউছ’।... এরপর তিনি বলেন: এ সম্পর্কে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা বলা হলো, এর সবই বাতিল। প্রাগুক্ত; পৃ. ৬৩-৬৪।]

এ সম্পর্কে আল্লামা সুন‘উল্লাহিল হালাবী হানাফী বলেন : [. তিনি ১৭০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সময়ে তিনি মক্কা শরীফে হানাফী মাযহাবের একজন প্রখ্যাত ‘আলিম ছিলেন। একজন বিশিষ্ট ওয়াইয, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন। দেখুন: ‘উমার রেজা কাহহা-লাহ, মু‘যামুল মুআল্লিফীন; (বৈরুত : মুআসসাসাতুর রিছালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৩ খ্রি.), ১/৮৪৩।]

إن مثل هذا الاعتقاد من موضوعات إفك المسلمين

‘‘গউছ, কুতুব ও আব্দাল ইত্যাদি সম্পর্কিত বিশ্বাস মুসলিমদের মিথ্যা রচিত বিশ্বাসের অন্তর্গত।’’ [. এ জাতীয় বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান উপলক্ষে তিনি বলেন : ‘‘মুসলিমদের মাঝে এমন কিছু দলের আবির্ভাব ঘটেছে যারা এ দাবী করে যে, ওলিগণ জীবিত হোন আর মৃত হোন সর্বাবস্থায় জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে, বিপদাপদে তাঁদের নিকট সাহায্য কামনা করা যায়,... তাঁদের মাঝে রয়েছেন আব্দাল, নুকাবা, আওতাদ ও নুজাবা..., কুতুবই হলেন সমগ্র মানুষের বিপদে সাহায্যকারী...। তিনি বলেন : এ জাতীয় কথার মধ্যে বাড়াবাড়ি রয়েছে, বরং এর মধ্যেই চিরস্থায়ী ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য হয়ে রয়েছে। কেননা; এতে নিশ্চিতভাবে শির্ক রয়েছে। কুরআনের সাথে রয়েছে এর বিরোধ, সকল ইমাম ও মুসলিম উম্মাহের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আক্বীদার সাথেও এর বিরোধ ও বৈপরিত্য রয়েছে...। মুত্যুর পরেও ওলিগণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন, এ জাতীয় বিশ্বাস সবচেয়ে জঘন্যতম বিশ্বাস...। আব্দাল ও গাউছ সম্পর্কে লোকেরা যা বলে তা তাদের মিথ্যা বানানো গল্প বৈ আর কিছুই নয়। দেখুন : শেখ সুলই্মান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মুনী‘, প্রাগুক্ত; পৃ. ২৩২-২৩৪।]

আমাদের দেশে এমন সব লোকও রয়েছেন যারা এ বিশ্বাস করেন যে, মহান আল্লাহ অলিগণের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করে থাকেন বিধায়, অলিগণের পরিচালনাগত শক্তি সীমাহীন হয়ে থাকে। তারা আরো বিশ্বাস করেন যে, ইতোপূর্বে আল্লাহ তা‘আলা বাগদাদ, আজমীর ও মাইজভাণ্ডারে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। সে জন্য মাইজভাণ্ডারের ভক্তদেরকে এ জাতীয় ধারণা প্রকাশ করে কবিতা লিখতেও দেখা যায়। যেমন মাইজভাণ্ডারের এক হিন্দু ভক্ত লিখেছে:

হায়রে দয়াল ভাণ্ডারী।

দোজাহানের মালিক আমার জগতের কাণ্ডারী।

(মাওলারে) তোমার নাম নিয়ে দিলাম ভব সাগরে পাড়ি।

পুলসেরাতে পার করিও দিয়ে চরণ তরী।

(মাওলারে) মানুষরূপে এলে চিনতে না পারি।

তুমি যদি দয়া কর এক পলকে তরি।

(মাওলারে) মদিনা, বাগদাদ, আজমিরের খেলা সাঙ্গ করি

চট্রগ্রামে রোশন করিলা হইয়া ভাণ্ডারী।

(মাওলারে) নাম শুনে তোমার দরজায় হয়েছি ভিখারী।

রমেশ বলে দোহাই তোমার এক নজরে চাও ফিরি।’’ [. স্বর্গীয় রমেশ চন্দ্র সরকার, মুক্তির দরবার; (চট্রগ্রাম: শ্রী পুলিন বিহারী শীল, সংস্করণ বিহীন, ১৯৯২ খ্রি.), পৃ. ৮।]

কী আশ্চর্য যে, এ লোকটি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও আহমদুল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর একজন প্রথম শ্রেণীর উপাসকে পরিণত হয়েছে। হিন্দুরা যেমন তাদের রাম, কৃষ্ণ ও শিব ইত্যাদি দেবতাদের ব্যাপারে এরা আল্লাহর অবতার বলে বিশ্বাস করে, ঠিক তেমনি এ ব্যক্তি মাইজভাণ্ডারীর বেলায়ও একই ধারণা পোষণ করছে। সে তার অপর এক কবিতায় বলেছে : ভাণ্ডারীর পা নিয়ে সর্বদা চিন্তা করলে কখনও বিপদ হয় না। মানুষের পাপ মোচনের জন্যই মাইজভাণ্ডারে তাঁর শুভাগমন হয়েছিল। ভাণ্ডারীর পায়ের কথা চিন্তা করলে কা‘বা, কাশী ও বৃন্দাবন সবই পাওয়া যায়। তাঁর প্রতি ভক্তি রেখে মুখে ভাণ্ডারী নাম জপ করলে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে; কেননা, আখেরাতে ভাণ্ডারী ব্যতীত পার পাবার কোনো উপায় নেই। নিম্নে বর্ণিত তার কবিতার দ্বারা তার এ সব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। যেমন সে বলেছে :

ভাব অবোধ মন হরদমে ভাণ্ডারী চরণ।

ঐ চরণে শরণ নিলে বিপদ হয় না কদাচন।

মাইজভাণ্ডারীর জোর কদমে কী ফল আছে জান না,

পাপীর ভাগ্যে দেখা দিল ভাণ্ডারেতে মাওলানা;

ঐ কদম বরকতে পাবি কা‘বা কাশী বৃন্দাবন।

মাওলার প্রতি ভক্তি রাখ মুখে ডাক ভাণ্ডারী,

মাওলা বিনে আর কেহ নেই নিতে যাবে পার করি,’’। [. তবেদ; পৃ. ২।]

শুধু এখানেই শেষ নয়, সে আরো দূর অগ্রসর হয়ে ভাণ্ডারীকে মানুষের ভাগ্যের উপর হস্তক্ষেপকারী ও তাদের যাবতীয় সুখ-দুঃখের মালিক বানিয়ে দিয়েছে। এ পর্যায়ে সে বলেছে:

কালি তোমার কলম তোমার, সুখ-দুঃখ লিখা সকল তোমার,

কে খন্ডাবে তুমি না খন্ডালে। [. তদেব; পৃ. ১১।]

মাইজভাণ্ডারের মুসলিম ভক্তরা হয়তো উপর্যুক্ত সকল বিষয়ে এ ব্যক্তির চিন্তাধারার সাথে একমত নাও হতে পারেন। তবে একজন মানুষের পথভ্রষ্টতার জন্য তো তার একটি ভ্রান্ত ধারণাই যথেষ্ট। মাইজভাণ্ডারের বার্ষিক ওরসে যে সকল মুসলিমরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন ও সমস্যাদির সমাধান পাবার জন্য মানতের জীব, জন্তু ও নগদ টাকা অকাতরে বিলিয়ে দেন, সে সবই তাদের শির্কী কর্মে লিপ্ত থাকার দলীল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেখানকার বার্ষিক ওরসে যে হারে হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সবাই ভিড় জমায়, তাতে মনে হয় মাইজভাণ্ডার যেন সকল ধর্মাবলম্বী লোকদের জন্য একটি মহামিলন কেন্দ্র। এ সম্পর্কে সে ব্যক্তির ভাষ্য নিম্নরূপ:

‘‘‘আয়রে আয় রহমান’ মনজেলে মাইজভাণ্ডার,

ঔরস মেলা প্রেমের খেলা দেখবি আশেকের গোলজার।

দুই দিকে দুই রওজা বাত্তি জ্বলে অনিবার,

হালকা তালে আশেক নাচে আল্লাহু জিকির সার,

উট, গরু, গয়াল, মৈষ সংখ্যা নাই ছাগল ভেড়ার,

মাঝে মাঝে নলকুপ আছে পিঁপাসী লোক পানি খায়।

কেহ ছিটে আতর গোলাপ বাবাজানের হুজুরায়,

বাবাজানের পশ্চিম পার্শ্বে রওজা শাজাদার,

কেহ রান্ধে কেহ খাওয়ায় খেদমতে আছে মশগুল,

নানা রকম বাদ্য বাজে হক ভাণ্ডারী শব্দমূল,

হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ মিলন কেন্দ্র প্রেম দরবার।’’ [. তদের; পৃ. ৮।]

ওলিগণ কি মানুষের কল্যাণ করতে পারেন?

বস্তুত আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিমদের কবরে যাওয়ার কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করে আমার কাছে যা প্রতীয়মান হয়েছে তা হলো-আউলিয়া, পীর ও দরবেশদের অধিকাংশ ভক্তরা এ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একমত যে, আউলিয়া ও দরবেশগণের জীবন আর মৃত্যু সবই সমান। কেননা, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা মরেন না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁরা ইহজগত থেকে ইন্তেকাল করেন বা স্থানান্তরিত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। এ সময়ে তাঁদের রূহানী শক্তি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি হয়, যার ফলে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে তাঁদেরকে আহ্বান করলে তাঁরা তা শুনতে পারেন এবং মানুষের যে কোনো কল্যাণার্জন বা অকল্যাণ দূরীকরণ করতে পারেন। এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা তাদের কাছে তাদের পার্থিব ও পরকালীন যাবতীয় প্রয়োজনাদি নিয়ে আগমন করেন। রোগীরা যায় রোগ মুক্তির জন্য, সন্তানহীনরা যায় সন্তান লাভের জন্য, বিপন্নরা যায় বিপদ মুক্তির জন্য, চাকুরীহীনরা যায় চাকরী লাভের জন্য, অপরাধীরা যায় ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য; নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য। তাদের কবরে যাওয়ার পার্থিব উদ্দেশ্য বিভিন্ন রকমের হলেও সকলের পরকালীন উদ্দেশ্য তাঁদের শাফা‘আতের মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি।

অনেকে মনে করে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির কবর থেকে ফয়েজ ও বরকত উপচে পড়ছে। সেখানে যে যে উদ্দেশ্যেই তাঁকে আহ্বান করে, তাদের সকলের জন্যেই তাঁর দু’হাত প্রশস্ত হয়ে রয়েছে। এভাবে ‘‘কেউ ফিরে না খালি হাতে খাজা তোমার দরবার হতে’’ এ বাক্যটি তাঁর ভক্তদের নিকট একটি শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। তারা ওরস উপলক্ষে তাদের দাওয়াতী চিঠি-পত্রে এ জাতীয় শ্লোগান লিখে থাকেন। যেমন জনৈক কাজী মাহবুবুল আলম তার এক দাওয়াতী পত্রে লিখেছেন : ‘‘তাহার এতই দয়া কেহ তাহার দরবার হইতে খালি হাতে ফেরে না। ওলি আল্লাহর নেক দৃষ্টি বিদ্যুতের ন্যায় মুহূর্তেই আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করিতে পারে এবং আপনাকে শত বৎসর এবাদতের উর্ধ্বে তুলে দিতে পারে। আপনি খাজা সাহেবের নেক দৃষ্টি লাভ করুন।’’ [. কাজী মাহবুবুল আলম এর ঠিকানা : লিংক ইন্টারন্যাশনাল, আল-চেম্বার নং ১২২/১২৪, মতিঝিল , ঢাকা।]

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির ব্যাপারে তাঁর ভক্তদের ধারণা হচ্ছে-এক সময় আল্লাহ তাঁর নবীকে সব কিছু পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতিকে। তাদের এ জাতীয় ধারণা প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রশংসায় নির্মিত বাজারজাতকৃত গানের কেসেটে। যেমন তারা বলে থাকে :

খোদার ধন নবীকে দিয়া খোদা গেলেন খালি হইয়া

নবীর ধন খাজাকে দিয়া নবী গেলেন খালি হইয়া

খাজারে তোর দরবার হতে কেউ ফিরে না খালি হাতে।

অলিগণের ব্যাপারে তাদের আরো ধারণা হচ্ছে-তাঁরা সকল অসাধ্যকে সাধন করতে পারেন। সে-জন্যে তাদেরকে আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা করার পরিবর্তে ওলিদের করুণার উপর ভরসা করতে দেখা যায়। যেমন এক ব্যক্তি তার মনের এ-জাতীয় অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছে : ‘‘খোদারই পেয়ারা ওলি যে জন সংসারে, অসাধ্য সাধন করিতে সে পারে, তোমার দয়া না হলে বাবা আমার হবে কী উপায়।’’

অপর এক ব্যক্তি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির বার্ষিক ওরসে শরীক হওয়ার জন্য সাধারণ জনগণকে আহ্বান করতে গিয়ে বলেছে : ‘‘গরীব নেওয়াজ যাহার দরবারে সর্বদা ফয়েজের সমুদ্র উছলিয়া পড়ে, সেই দয়ালু খাজা বাবার দরবারে আপনিও আসুন আল্লাহর রহমত পাইতে ও রোগ শোক দুঃখ দারিদ্রতা হইতে মুক্তি পাইতে। দীন ও দুনিয়ার পরম শান্তি লাভ করিতে ওরস মোবারকে শরীক হইয়া আপনিও ফয়েজ হাসিল করুন।’’ [. এ দাওয়াত দাতার নাম : সৈয়দ আলমগীর চিশতী, এম. রহমান এন্ড কোং, ৩৭/ কে. বি.আব্দুস সাত্তার রোড, রহমতগঞ্জ, চট্রগ্রাম, বাংলাদেশ।]

ওরস উপলক্ষে আজমীর হতে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত এক দাওয়াতী পত্রে ওরসের মাহাত্ম্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: ‘‘উরশ মোবারক এক সৌন্দর্য্য ও রহমতের দৃশ্য জানিবেন। এই রহমতের সময় আউলিয়া একরাম হইতে ফয়েজ বরকত হাসিল করার সময় ঐ পবিত্র সময় খাজা বাবার রূহানী ফয়েজ অগণিত ভাবে বিতরণ হইয়া থাকে, সকল আশেকীনরা ঐ নেক সময়ে সকল মনো কামনা পূরা করিয়া থাকেন এবং নেক সময়ে বাবার দরবার হইতে কেহ খালী হাতে ফেরেন না।’’ [. ১৯৭৮ সালে পীরজাদা মৌলভী সৈয়দ ফজলুর রহমান বোরাকী হতে সে বছরের ওরস উপলক্ষে প্রচারিত দাওয়াতী পত্র থেকে গৃহীত।]

নোয়াখালী জেলার মহীউদ্দিন এখলাসপুরীর ভক্তরা তার ব্যাপারে যে ধারণা পোষণ করে, তা যেন অতীতের সকল ওলিগণ কে অতিক্রম করে গেছে। তারা তার ব্যাপারে যে সব ধারণা পোষণ করে তা তাদের ওরস উপলক্ষে প্রকাশিত এক দাওয়াতী পোস্টারে এ ভাবে লিখিত রয়েছে: ‘‘...তিনি (মহীউদ্দিন) তাঁর জীবদ্দশায় জনগণের কল্যাণ সাধন করে গেছেন, এখনও (মৃত্যুর পরও) তিনি মানুষের কল্যাণ করে যাচ্ছেন। তিনি মানুষের দুঃখ দূরীকারী (গউছ) ছিলেন। তার হাতে দেশের বিচার ও শাসন ক্ষমতা ছিল। চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল ও খুলনা জেলার উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রকে তার তাণ্ডবলীলা থেকে তিনি বারণ করেছিলেন। যার ফলে সে সব জেলার উপকূলীয় এলাকা ধীরে ধীরে বর্ধিত হয়েছে। তার নিকট ৮৬ হাজার গউছ, কুতুব, আবদাল, নজীব ও আখইয়ার ইত্যাদির নেতৃত্বদানের রূহানী ও বাতেনী যোগ্যতা ছিল। কমপক্ষে আট হাজার ধনী, ব্যবসায়ী, সমাজের নেতৃত্বদানকারী ও শিল্পপতিরা তার মাধ্যমে তাদের জীবনে শান্তি লাভ করেছেন।’’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন