hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শির্ক কী ও কেন

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

৬৭
তাওহীদী বিশ্বাস কোন বিবর্তিত চিন্তার ফসল নয়:
সুদূর অতীতকাল থেকেই মানুষের মাঝে আল্লাহ ও ধর্মীয় বিশ্বাস বর্তমান থাকার সত্যতা ও বাস্তবতা প্রমাণের পর এবার নিম্নে কতিপয় দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের কথার উদ্ধৃতি প্রদানের মাধ্যমে আমরা একথার প্রমাণ পেশ করবো যে, অনন্তকাল থেকেই মানুষের মাঝে আল্লাহর ব্যাপারে তাওহীদী চিন্তা ভাবনা বিরাজমান ছিল এবং এ বিষয়টি মানুষের মাঝে চিন্তার ক্ষেত্রে বিবর্তনের কোনো ফসল নয়।

প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আল-গাযালী [. তিনি মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমীন ইসলামী দলের একজন প্রখ্যাত নেতা ও ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন।- লেখক] এ প্রসঙ্গে বলেন : ‘‘মানুষের মধ্যে যে সকল নির্বোধরা এ ধারণা পোষণ করে যে, মেধা শক্তির আবদ্ধতা থেকেই নাকি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, অথবা যারা বলে যে, মানবিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে অধিক পারদর্শিতা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মৌলনীতিকে নড়বড়ে করে দেয় এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে অতীব দুর্বল করে দেয়, তাদের এ জাতীয় ধারণা তাদের মূঢ়তা ও নির্বুদ্ধিতারই ফসল। এদের বুদ্ধিহীনতা প্রমাণের জন্য তিনি অষ্টাদশ শতকের দার্শনিক ও আকাশবিদ স্যার উইলিয়াম হরসেল (Sir William Hershel) [. হারসেল একজন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ ছিলেন। ১৭৮১ সালে তিনি ইউরেনাস গ্রহ আবিষ্কার করেন। টেলিসকোপও তাঁরই আবিষ্কার। ১৭৩৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত ছিল তাঁর যুগ।- লেখক]-এর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

হরসেল বলেছেন : ‘‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিধি যতই বিস্তৃত হবে ততই একজন অসীম শক্তিধর সৃজনশীল প্রজ্ঞাময়ের বর্তমান থাকার উপর প্রমাণাদি অধিক হতে থাকবে। ভূতত্ত্ববিদ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিত শাস্ত্রবিদগণ তাদের বিবিধ প্রচেষ্টা ও আবিষ্কারের দ্বারা সৃষ্টিকর্তার কথা সমুন্নত করার জন্য একটি বিজ্ঞানাগার প্রস্তুত করতে যা প্রয়োজন, তা সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন’’। [. মুহাম্মদ আল-গাযালী, ‘আক্বীদাতুল মুসলিম; (কায়রো : দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, সংস্করণ বিহীন, ১৯৮০ খ্রি.), পৃ. ২২; ইনসাক্লোপেডিয়া ‘‘আজাদী’’, ‘ইলাহ’ শব্দমূল, ১ম খন্ড, পৃ. ৫০৩।]

এর পর তিনি দার্শনিক সক্রেটিস [. তিনি একজন প্রখ্যাত গ্রীক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ছিলেন। খৃষ্টপূর্ব ৪৭১ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর একত্ববাদ সম্পর্কে তিনি যে সব তাত্ত্বিক কথা-বার্তা বলেছেন, তা নবী ও রাসূলগণের কথার সাথে মিলে যায়। দেখুন : গংগোহী, মাওলানা মুহাম্মদ হানীফ, জাফারুল মুহাসসিলীন বি আহওয়ালিল মুআললিফীন; (করাচী : দারুল এশা‘আত, ১ম সংস্করণ, সন বিহীন), পৃ. ১৪১।] এর এ সম্পর্কিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যা সক্রেটিস তাঁর ছাত্র প্লেটোকে লিখে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর সে পত্রের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব তাঁর একত্ববাদ এবং তিনিই যে এ জগত সৃষ্টি করেছেন, সে সবের স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

সক্রেটিস লিখেছিলেন : ‘‘এ জগত আমাদেরকে প্রকাশ করে দিচ্ছে যে, এখানে হঠাৎ করে অপরিকল্পিতভাবে কিছুই হয়ে যায় নি; বরং এর প্রতিটি অংশই একটি লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এই লক্ষ্য তার চেয়েও উচ্চতর লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলেছে। এ ভাবে পরিশেষে একটি চূড়ান্ত একক লক্ষ্যের দিকে পৌঁছোনো যায়। জগতের এই পূর্ণাঙ্গ বিধান তার খুঁটিনাটিসহ কোথা থেকে তৈরী হলো, যা প্রতিটি দিক থেকেই মহত্বের দ্বারা বেষ্টিত? হঠাৎ করে এমনিতেই হওয়াতো সম্ভবপর নয়। আমাদের পক্ষে যদি এ কথা বলা সম্ভব হয় যে, তা এমনিতেই তৈরী হয়েছে, তা হলে আমাদের পক্ষে এ কথাও বলা সঠিক হবে যে, নদীর বুকে ভাসমান নৌকার তক্তাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অস্তিত্ব লাভ করেছে।

আমরা যখন জগত পরিবেষ্টিত উপাদানগুলোর দিকে তাকাই, তখন তা পরিমাণে এতো বেশী দেখতে পাই যা বুদ্ধির দ্বারা সীমাবদ্ধ করা সম্ভবপর নয়। এ সব কিছু এমনিতেই হয়ে গেছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি না। এ জন্য একজন মহাজ্ঞানীর অস্তিত্ব মেনে নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়ায়...আর সে বুদ্ধিমান অস্তিত্বই হচ্ছে একক সৃষ্টিকর্তা। কারণ, প্রকৃতির সর্বত্রই এমন এক মহান সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদের নিদর্শন বিরাজ করছে যিনি চিন্তা করার সাথে সাথেই তাঁর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে যায়। তাতে ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার কোনই অবকাশ নেই।

তিনি উপস্থিত, সর্বজ্ঞাত ও সামর্থ্যবান, তা সত্ত্বেও তাঁকে ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা অসম্ভব...তাঁর দৃষ্টান্ত সূর্যের মত যা সমস্ত দৃষ্টিশক্তিকে স্পর্শ করে, অথচ সে কাউকে তার নিজেকে দেখার অধিকার দেয় না।’’ [. প্রাগুক্ত।]

আল্লামা ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ সক্রেটিস সম্পর্কে বলেন :

‘‘সৃষ্টিকর্তার গুণাবলী স্বীকৃতির ক্ষেত্রে তাঁর মতামত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী স্বীকৃতি দানকারীদের মতের কাছাকাছি ছিল। তিনি (সক্রেটিস) বলেছেন: ‘‘তিনি (সৃষ্টিকর্তা) সকল বস্তুর উপাস্য, সৃষ্টিকর্তা, নিরূপক ও পরাক্রমশালী। তাঁর উপর কেউ বিজয়ী হতে পারেনা। তিনি মহা বিজ্ঞানী। তাঁর জ্ঞান, শক্তি ও হিকমত এতই অসীম যে, তা বুদ্ধির দ্বারা ব্যক্ত করা যাবে না।

তিনি (সক্রেটিস) রাসূলগণকে স্বীকৃতি প্রদানের নিকটবর্তী ছিলেন। সৃষ্টির শুরু, পূনরুত্থান ও সৃষ্টিকর্তার গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য নবীগণের বক্তব্যের নিকটতম ছিল।’’ [. ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ, এগাছাতুল লহফান ফী মাকাইদিস শয়তান; ২/২০৯, ২১০।]

সক্রেটিসের শিষ্য দার্শনিক প্লেটোও (জন্ম খৃ.পূর্ব ৪৩০) একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি বলতেন :

‘‘এ জগতের একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। তিনি অনাদি ও অনন্তকাল থেকে নিজ থেকেই আছেন। তিনি সকল জ্ঞানের আধার।’’ [. প্রাগুক্ত।]

ইংরেজ বৈজ্ঞানিক স্পেন্সার (Spencer) [. স্পেন্সার (Spencert, Herber, ১৮২০-১৯০৩) একজন বৃটিশ দার্শনিক । তিনি মনস্তত্ত্বও সমাজতত্ত্বের উপর বই লেখেন।- লেখক]এ প্রসঙ্গে বলেন :

‘‘আমরা এ কথার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য যে, এ মহা বিশ্বের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা প্রবাহ আমাদেরকে এমন এক মহাশক্তিমান সত্তার সন্ধান দেয়, যাঁকে অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ধর্মই সর্বপ্রথম এ সর্বশক্তিমান সত্তাকে গ্রহণ এবং মানব জাতিকে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান দান করে।’’ [. মুহাম্মদ আল-গাযালী, প্রাগুক্ত; পৃ. ২৩।]

স্পেন্সার আরো বলেন : ‘‘বিজ্ঞান কুসংস্কারের বিরোধী, তবে ধর্মের বিরোধী নয়, পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম বিরোধী চেতনা পাওয়া যায়, তবে সঠিক বিজ্ঞান যা ভাসাভাসা জ্ঞানকে অতিক্রম করেছে এবং প্রকৃত জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করেছে, তা উপর্যুক্ত ধর্ম বিরোধী চেতনা থেকে মুক্ত। আর পদার্থ বিজ্ঞান ধর্ম বিরোধী নয়।’’ [. আস-সাইয়্যিদ আস-সাবেক, প্রাগুক্ত ; পৃ. ৫০।]

যারা আল্লাহ ও ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং জীব জগত এলোমেলোভাবে এমনিতেই সৃষ্টি ও উন্নতি লাভ করেছে বলে মনে করে, ইংরেজ বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন (Kelvin) [. Kelvin William Thomson Lord (১৮২৪-১৯০৭ খ্রি.), তিনি একজন প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। লেখক] তাদের সংগে বিদ্রূপ করেন এবং আল্লাহর বর্তমান থাকা এবং তাঁর একত্ববাদের উপর হিকমত ও প্রকৃতির বিধানের মাঝে যে সব অকাট্য দলীল প্রমাণাদি রয়েছে, কোন কোন বিজ্ঞানীদের এ সবের প্রতি কোনো দৃষ্টি না দেয়াতে তিনি আশ্চর্য বোধ করে বলেন : ‘‘মানুষের পক্ষে এ কথা কল্পনা করাই কঠিন যে, কোন পরিকল্পনাকারী, সৃজনশীল শক্তির বর্তমান থাকা ছাড়াই জীবনের আরম্ভ বা তা চলমান থাকতে পারে। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে, কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক জীব সম্পর্কিত তাদের তাথ্যিক গবেষণার ক্ষেত্রে এ জগতের বিধানসমূহে (সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের) যে সব অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে, তা তারা অস্বাভাবিকভাবে এড়িয়ে গেছেন। কারণ, আমাদের চারপার্শ্বে হাজারো রকমের অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত রয়েছে যা এক মহাশক্তিশালী ও কুশলী ব্যবস্থাপকের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রকৃতির মাঝে বর্তমান এ সব দলীল আমাদেরকে এক স্বাধীন সার্বভৌম সত্তার সন্ধান দেয়। এই প্রমাণগুলো আমাদের বলে দিচ্ছে- প্রতিটি জীবই এক, অদ্বিতীয় এবং চিরস্থায়ী মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এবং সবাই তাঁরই উপর নির্ভরশীর।’’ [. মুহাম্মদ আল-গাযালী, প্রাগুক্ত; পৃ.২৪।]

বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেনঃ ‘‘সৃষ্টিকর্তা বর্তমান থাকার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করো না; কারণ, আকস্মিক হওয়া একটি ঘটনা নিজ থেকেই এ সৃষ্টির মূল হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই বুঝে আসার মত বিষয় নয়।’’ [. হাসানুল বান্না, মাজমূ‘আতু রাসাইলিল ইমাম আশ-শহীদ; (বৈরুত : আল-মুআছ্ছাছাতুল ইসলামিয়্যাহ, সংস্করণ বিহীন, তারিখ বিহীন), পৃ, ৩১৯।]

আল্লাহকে অস্বীকারকারীদের সাথে বিদ্রূপ করে বিজ্ঞানী ফুলটির বলেন :

‘‘আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ করছো কেন, তিনি যদি না থাকতেন, তবে আমার স্ত্রী আমার সাথে বেইমানী করতো, আমার খাদেম আমার সম্পদ চুরি করতো।’’ [. ড. আমহদ শালাবী, মুক্বারানাতুল আদইয়ান; (কায়রো : মাকতাবাতুন নুহদাতিল মিসরীয়্যাহ, ৮ম সংস্করণ, ১৯৮৯ খ্রি.), পৃ. ৯৩।]

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুর রহীম (মৃত ১৯৮৭ খ্রি.) এ প্রসঙ্গে বলেন :

‘‘বস্তুত দূর অতীতকাল থেকে মানব প্রকৃতির অধ্যয়ন চালালে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ধর্মবিশ্বাস মানব প্রকৃতির গভীরে নিহিত রয়েছে। মূল আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাসেও বস্তুর্ধ্ব জগতের প্রতি লক্ষ্য আরোপে কোনো বিরোধ কোনো দিনই ছিল না। বিরোধ দেখা গেছে এ বিশ্বাসের বিশেষত্ব ও পদ্ধতি পর্যায়ে মাত্র। তার অর্থ, মূল বিশ্বাসে অতীত কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো পার্থক্য বা বিরোধ দেখা দেয় নি, তার খুঁটিনাটি বিস্তারিত ব্যাপারের মধ্যেই বিরোধ সীমাবদ্ধ রয়েছে। তার অর্থ আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাসের ব্যাপারে বিশ্ব মানবতার যে পরম ঐক্য অর্জিত হয়েছে, তা চিরকাল ইতিহাসের প্রত্যেকটি পর্যায়েই লক্ষ্য করা যায়।’’ [. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, শির্ক ও তাওহীদ; (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ২৫তম সংস্করণ, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ.) পৃ. ৩৩।]

তিনি এ পর্যায়ে আরো বলেন : ‘‘বহু বিশেষজ্ঞই দাবী করেছেন যে, এই বিশ্বলোকে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফুর্ত ব্যাপার। আর কুরআনের আয়াত থেকে এ সত্য উদঘাটন অতীব সুস্পষ্ট, সে জন্য কোনো যুক্তি-প্রমাণ অবতারণার আদৌ কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষভাবে কোনো চিন্তা-ভাবনা গবেষণারও কোনো আবশ্যকতা নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি ইংরেজ দার্শনিক থমাস কাবেল এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। থমাস বলেছেন :

‘‘যাঁরা আল্লাহর অস্তিত্ব যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে, তাদের অবস্থা এ থেকে ভিন্নতর নয় যে, তারা আকাশে দৃশ্যমান সূর্যকে প্রদীপ দিয়ে দেখতে চেষ্টা করে মাত্র।’’ [. তদেব।]

প্রকৃতকথা হচ্ছে, যারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তারা অপরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারী। তারা এ ক্ষেত্রে যে সব ধারণার অনুসরণ করছে, পরিপক্ক জ্ঞানীদের নিকট সে সব ধারণার কোনই মূল্য নেই। তারা তাদের চিন্তা ও কথার দ্বারা আমাদেরকে আল্লাহর একথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে :

﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِي ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَلَا هُدٗى وَلَا كِتَٰبٖ مُّنِيرٖ ٨ ﴾ [ الحج : ٨ ]

‘‘মানুষের মাঝে এমনও কতক লোক রয়েছে যারা কোন জ্ঞান, প্রমাণ, ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।’’ [. আল-কুরআন, সূরা হজ্জ : ৮।]

এ সব নাস্তিকদের ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- কোনো একটি বস্তুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় বা তার অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা যায় যদি তা প্রমাণের জন্য কোনো দলীল প্রমাণাদি না থাকে। আল্লাহর বর্তমান থাকার বিষয়টি তো সে পর্যায়ে পড়ে না; কারণ, তাঁর অস্তিত্বের যাবতীয় প্রমাণাদি চক্ষুষ্মানদের জন্য পরিষ্কার হয়ে রয়েছে। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবাই মিলে আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর একত্ববাদেরই সাক্ষ্য প্রদান করছে। সে জন্য একজন কবি বলেছেন :

ألا كل شيء ما خلا الله باطل * وكل نعيم لا محالة زائل

و في كل شيء لــــــه آية * تدل على أنه الـــــــــواحد

‘‘আল্লাহ ব্যতীত সকল বস্তুই বাতিল, সকল নেয়ামত অবশ্যই বিলীন হয়ে যাবে, প্রত্যেক বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নিদর্শন, যা তাঁর একত্ববাদের প্রতিই ইঙ্গিত বহন করছে।’’

আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর একত্ববাদের উপর অজস্র দলীল প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও যখন কিছু সংখ্যক চেতনাহীন মানুষ তাঁর অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে, সে-জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন :

﴿أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ﴾ [ ابراهيم : ١٠ ]

‘‘যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা সে আল্লাহর ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে।’’ [. আল-কুরআন, সূরা ইব্রাহীম : ১০।]

اللهم لا না, তাঁর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশের কোনই অবকাশ নেই। সন্দেহ পোষণকারীরা তাঁকে স্বীকার করুক আর না-ই করুক, তিনি অনন্তকাল থেকে আছেন, চিরকাল ধরেই থাকবেন।

পরিশেষে আল্লাহকে অস্বীকারকারীদের বলবো : তারা যদি নিজেদের অস্তিত্বকে কোনো দিন সম্পূর্ণ অস্বীকার বা তাতে কোনো সন্দেহ পোষণ করতে পারে, তা হলে তারা আল্লাহর ব্যাপারেও তা করতে পারে- আর তা যদি না পারে এবং অবশ্যই তারা তা কস্মিনকালেও পারবে না- তা হলে তাদের পক্ষে আল্লাহকে শুধু স্বীকার করাই উচিত নয়, তাঁকে স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি তাঁকে ভয় করাও উচিত। তারা যেন তাদের নিজেদের মধ্যে একটু লক্ষ্য করে; কারণ, তাদের নিজেদের অস্তিত্বের মধ্যেই তাঁর অস্তিত্বের প্রচুর প্রমাণপঞ্জী বিদ্যমান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন :

﴿ وَفِيٓ أَنفُسِكُمۡۚ أَفَلَا تُبۡصِرُونَ ٢١ ﴾ [ الذاريات : ٢١ ]

‘‘তোমাদের নিজেদের মধ্যেও আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে, তবুও কি তোমরা তা লক্ষ্য করবে না।’’ [. আল-কুরআন, সূরা যা-রিয়াত : ২১।]

তারা যেন তাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে নিহিত আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শনাদির প্রতি লক্ষ্য করে অন্যান্যদের মত আল্লাহকে স্বীকার করে নেয়। এইতো পরমাণু বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, প্রাণী বিজ্ঞানী ও গণিতশাস্ত্রবিদগণ অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁদের কাছে অনেক দলীল প্রমাণাদি রয়েছে যা এমন এক মহান অস্তিত্বের প্রমাণ করে, যিনি এই সৃষ্টি জগতকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং তিনি তাঁর অসীম জ্ঞান ও করুণার দ্বারা অত্যন্ত যত্নের সাথে তা পরিচালনা করছেন। [. মুহাম্মদ আল-গাযালী স্বীয় আক্বীদাতুল মুসলিম গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় এ-তথ্যটি বর্ণনা করেছেন। যা রয়টার সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে মিসরের কোনো এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।]

এ ছাড়া তাদের পূর্বে বিজ্ঞানের জনক সক্রেটিস ও প্লেটো যেখানে আল্লাহ ও তাঁর একত্ববাদের কথা অকপটে স্বীকার করে গেছেন, সেখানে তাদের অস্বীকৃতিতে অল্লাহর কিছুই যায় আসে না। বরং এতে তাঁকে অস্বীকারকারীদেরই মার্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

জগত শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকদের স্বীকৃতি দ্বারা আল্লাহ ও ধর্মের সত্যতা ও বাস্তবতা প্রমাণ করার পর এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে যাবো। আর তা হলো-

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন