hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শির্ক কী ও কেন

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

২১৮
ওসীলার মূলকথা (حقيقة الوسيلة) :
‘ওসীলা’ ( وَسِيْلَة ) শব্দটি আভিধানিক দিক থেকে মাধ্যম (Media) [এ অর্থটি প্রাচীন কোনো অভিধান দ্বারা সমর্থিত নয়। বরং অভিধানবিদদের মধ্যে যারাই এ অর্থ উল্লেখ করেছেন, তারাই শব্দটির সাথে নৈকট্য কথাটিও জুড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা বলেছেন, আমল বা কাজ করার মাধ্যমে নৈকট্য। সুতরাং ওসীলা শব্দের অর্থ শুধু ‘মাধ্যম’ বা ‘মিডিয়া’ করা পরবর্তী অনারব বা অনারবদের দ্বারা প্রভাবিত আরবদের সংযোজন। [সম্পাদক]] ও নৈকট্য এর অর্থ প্রকাশ করে থাকে। [. ইবনুল আছীর, আন-নেহায়াতু ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছার; (বৈরুত: আল-মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ, সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন), ৫/১৮৫; ইবনে মানযূর আল-আফরীক্বী, লেসানুল আরব; ১১/৭২৪।] উপরে বর্ণিত আয়াতে ‘ওসীলা’ শব্দেটিকে উভয় অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সাহাবা, তাবেঈন ও বিশিষ্ট মনীষীগণ অত্র আয়াতে এ শব্দটিকে ‘মাধ্যম’ অন্বেষণের অর্থে ব্যবহার না করে ‘নৈকট্য’ অন্বেষণের অর্থে ব্যবহার করেছেন। ফলে তাঁদের মতে এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে-‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং (ঈমান ও ‘আমলে সালেহ দ্বারা) তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ কর।’’ [. বিশিষ্ট তাবেঈ আবু ওয়াইল, হাসান, মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ, ’আত্বা ও সুদ্দি এ আয়াতে বর্ণিত ‘ওসীলা’ শব্দটিকে ‘ক্বুর্বাত’ তথা নৈকট্য অর্থে ব্যবহার করেছেন। দেখুন : কুরতবী, প্রাগুক্ত; ৬/১৫৯; ত্ববারী, প্রাগুক্ত; ৬/২২৫।] বিশিষ্ট তাবেঈ ক্বাতাদাঃ (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন :

«تقربوا إليه بطاعته و العمل بما يرضيه»

‘‘তাঁর আনুগত্য এবং যে-সব কাজ তাঁকে সন্তুষ্ট করে সে-সব কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য ও সান্নিধ্য অন্বেষণ কর’’। [. ইবনে কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আজীম; ২/৫৩।] যদি ‘ওসীলা’ শব্দটিকে ‘মাধ্যম’ অর্থে ব্যবহার করা হয় তা হলে উক্ত আয়াতের অর্থ হবে: ‘‘তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য মাধ্যম অন্বেষণ কর’’। যদি এই অর্থ করা হয় তা হলে প্রশ্ন দাঁড়াবে, মাধ্যম বলতে এখানে কী উদ্দেশ্য করা হয়েছে? এ প্রশ্নের স্বাভাবিক জবাব হচ্ছে- ঈমান ও ‘আমলে সালেহ করে এ দু’য়ের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হতে চাও। ‘আমলে সালেহ এর মধ্যে জীবিত সৎ মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, তাঁদের সান্নিধ্যে থাকা, নবী-রাসূল ও ওলিগণকে ভালবাসা, তাঁদের শিক্ষার অনুসরণ ও অনুকরণ করা ইত্যাদি বিষয়াদি থাকলেও মৃত বা জীবিত কোনো ওলিদের ব্যক্তিত্ব, তাঁদের মর্যাদা ও নামের মাধ্যম করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার অর্থটি এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় বা তাঁর ওফাতের পরেও তাঁর সাহাবীদের মাঝে তাঁর মর্যাদা ও নাম নিয়ে এমন ওসীলার কোনো প্রচলন ছিল না। যে সব সহীহ হাদীস দ্বারা বাহ্যত এমন কিছু বুঝা যায়, আসলে সে সবের দ্বারা তাঁর দো‘আর ওসীলাই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। ব্যক্তি রাসূল, তাঁর নাম ও মর্যাদার ওসীলা উদ্দেশ্য করা হয় নি। এ প্রসংগে কিছু মরফু‘ ও মাওকুফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ঠিকই, তবে হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে তা দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য। [. ইবনে তাইমিয়্যাহ, আত-তাওয়াসসুলু ওয়াল ওয়াসীলাতু; পৃ.৪৭।] কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু আলেম ও পীরদের মুখে এমনকি কোনো কোন তাফসীরকারকদের কলমেও এ আয়াতের ব্যাখ্যায় শয়তান এ অপ্রাসঙ্গিক অর্থটি জুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেমন মাওলানা মুফতী শফী‘ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এ অর্থটি জুড়ে দিয়ে লিখেছেন :

‘‘ওসীলা শব্দের আভিধানিক ব্যাখ্যা এবং ছাহাবী ও তাবেয়ীগণের তফসীর থেকে জানা গেল যে, যে বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়, তা-ই মানুষের জন্য আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওসীলা। ঈমান ও সৎ কর্ম যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনি পয়গম্বর ও সৎ কর্মীদের সংসর্গ এবং মহববতও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেরই উপায়। এ কারণেই তাঁদেরকে ওসীলা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা জায়েয।’’ [. মাওলানা মুফতী শফী‘, প্রাগুক্ত; পৃ. ৩২৭।]

এখানে তিনি ‘‘তাঁদেরকে ওসীলা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা জায়েয’’ এ মর্মে যে কথাটি বলেছেন এর দ্বারা তিনি যদি এ উদ্দেশ্য করে থাকেন যে, জীবিত ওলিদেরকে সাথে নিয়ে তাঁদের দো‘আর ওসীলায় দো‘আ করা জায়েয, তা হলে তাতে আপত্তির কিছু নেই। তবে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার ওসীলা হিসেবে পয়গাম্বর ও সৎ কর্মীদের সংসর্গ ও মহববতের কথা বলার পর এ কথাটি পৃথক করে বলাতে প্রমাণিত হয় যে, আসলে তিনি তাঁর এ কথার দ্বারা তা উদ্দেশ্য করেন নি। বরং মৃত নবী ও ওলিদের মর্যাদা এবং তাঁদের নামের ওসীলায় আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘আ করার যে প্রচলন সমাজে রয়েছে, সে ওসীলার কথাই তিনি তাঁর এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন। অথচ তা সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত কথা। যার সাথে এ আয়াতে বর্ণিত নির্দেশের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। এমন কি ওসীলা সম্পর্কে তিনি এ কথার পর যা বলেছেন তার সাথেও তাঁর এ কথার আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, নেক মৃত মানুষের মহববত করা এক জিনিষ আর তাঁদের নামের ওসীলায় দো‘আ করা একটি ভিন্ন জিনিষ। প্রথমটি মানুষের ঈমানের পরিচায়ক, আর অপরটি শরী‘আত বহির্ভুত একটি বেদ‘আতী কর্ম। কিন্তু তা সত্ত্বেও শয়তান তাঁর মত ব্যক্তি ও অন্যান্য পীরদের মুখ ও লেখনীতে এ কথাটিকে চালিয়ে দিয়ে অজ্ঞ ও মুর্খ মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট করার একটি উত্তম সুযোগ করে নিয়েছে।

কুরআনে বর্ণিত ‘ওসীলা’ শব্দের অর্থ বর্ণনার ক্ষেত্রে তারা যদি তাদের সলফগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করতেন, তা হলে সমাজে ‘ওসীলা’ ধরা নিয়ে শয়তান এতো বিভ্রান্তি ছড়াতে পারতো না।

‘ওসীলা’ শব্দটি কুরআনে করীমের মোট দু’স্থানে বর্ণিত হয়েছে। একটির কথা উপরে বর্ণিত হয়েছে। আর অপরটি বর্ণিত হয়েছে সূরা ইসরাতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ﴾ [ الاسراء : ٥٧ ]

‘‘মুশরিকরা যাদেরকে (হিত সাধন বা অনিষ্ট রোধের জন্য) আহ্বান করে তারা নিজেরাই (এখন) তাদের রবের অধিক নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে ওসীলা অন্বেষণে প্রতিযোগিতা করে, তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করে’’। [. আল-কুরআন, সূরা ইসরা বা বনী ইসরাঈল: ৫৭।]

এ আয়াতে বর্ণিত ‘ওসীলা’ শব্দটিকেও উপর্যুক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘ওসীলা’ শব্দের ন্যায় ওসীলার উভয় অর্থেই ব্যবহার করা যেতে পারে [. আমরা আগেই বলেছি যে, ওসীলা দ্বারা শুধু ‘মাধ্যম’ অর্থ নেওয়া কোনো গ্রহণযোগ্য অভিধানবিদের মত ছিল না। [সম্পাদক]]। এ ছাড়া সহীহ হাদীসে আজানের পর পঠিত দো‘আর মধ্যেও ‘ওসীলা’ শব্দটি বর্ণিত হয়েছে। তবে সেখানে তা আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

«سَلُوا اللَّه لِيَ الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا دَرَجَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِيْ إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ فَمَنْ سَأَلَ لِيْ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ»

‘‘তোমরা আজানের পর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ওসীলা কামনা কর। কেননা, তা এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে কেবল একজন বান্দার জন্যেই শোভা পাবে। যে আমার জন্য ওসীলা কামনা করবে তার জন্য আমার শাফা‘আত হালাল হয়ে যাবে।’’ [. ইবনে খুযায়মাহ, মুহাম্মদ, সহীহ; সম্পাদনা : ড. মুহাম্মদ মুস্তফা আল-আ‘জমী, (বৈরুত : আল-মাকতবুল ইসলামী, সংস্করণ বিহীন, ১৯৭০ খ্রি.), ১/২১৮।]

উক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘ওসীলা’ শব্দটি কুরআন ও হাদীসে মোট দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হচ্ছে- নৈকট্য বা নৈকট্যের মাধ্যম অর্থে। আর অপরটি হচ্ছে মর্যাদাপূর্ণ স্থান এর অর্থে। আর নৈকট্যের মাধ্যম এর অর্থে এটিকে গ্রহণ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়- ঈমান, সৎকর্ম, মৃত নবী ও নেক মানুষদের ভালবাসা, তাঁদের আদর্শ অনুসরণ, জীবিত নেক মানুষের সাহচর্য গ্রহণ, তাঁদের দো‘আ, ভালবাসা ও তাঁদের আদর্শ অনুসরণ ইত্যাদির ওসীলায় আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ করা। স্রেফ তাঁদের নাম ও মর্যাদার ওসীলায় বা তাঁদের কবরের পার্শ্বে বসে আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ ও এর ওসীলায় ইহ-পরকালীন কিছু চাওয়া নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন