hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শির্ক কী ও কেন

লেখকঃ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

২৬৪
মৃতদের বিশেষ মুহূর্তে শ্রবণ :
মৃতরা নিজ থেকে কিছুই শ্রবণ করতে পারে না, এটি হচ্ছে কুরআনের মূল কথা। তবে হাদীস দ্বারা বিশেষ একটি সময়ে তাদের শ্রবণের কথা প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ الْمَيِّتَ إِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِه إِنَّه لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا انْصَرَفُوْا»

‘‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন তাকে দাফনকারীরা ফিরে যাওয়ার সময় সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়’’। [.মুসলিম, প্রাগুক্ত; (কিতাবুল জান্নাতি..., বাব নং ১৭, হাদীস নং ২৮৭০), ৪/২২০১;মুহাম্মদ ইবনে হিববান আল-বুস্তী, সহীহ ইবনে হিববান; (বৈরুত: মুআছছাছাতুর রিছালাঃ, ২য় সংস্করণ, ১৯৯২ খ্রি.), ৭/৪৪২।]

আল্লামা ইবনে আবিদীন এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন:‘‘এ হাদীসে মৃতের শ্রবণের বিষয়টি মৃত ব্যক্তির কবরে রাখার সময়ে সওয়াল-জাওয়াবের প্রারম্ভে^র সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এ হাদীসের সাথে কুরআনের কোনো সংঘর্ষ নেই’’। [. ইবনে আবিদীন, প্রাগুক্ত; ৩/১৮০।]

শায়খ আলবানী বলেন:‘‘এ হাদীসটি মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা এবং তাকে প্রশ্ন করার জন্য ফেরেশ্তাদের আগমনের সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং মৃতের শ্রবণের ক্ষেত্রে এ হাদীসকে সাধারণ অর্থে গ্রহণের কোনো উপায় নেই’’। [. নু’মান ইবনে মাহমূদ আল-আলূসী, প্রাগুক্ত; পৃ. ৫১।]

আল্লামা নু‘মান ইবন মাহমূদ আলূসী এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট আলেমদের উক্তিসমূহ মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকহ গ্রন্থসমূহ থেকে উদ্ধৃত করার পর বলেন:

‘‘ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (রহ.) এবং মাযহাবের অন্যান্য মনীষীদের ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রূহ বের হয়ে যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তি শ্রবণ করে না, যেমনটি মত প্রকাশ করেছেন উম্মুল মু’মিনীন আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা। হানাফীগণ মাযহাবের কোনো আলেমদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রকার মতবিরোধের বর্ণনা করেন নি...’’। [. তদেব; পৃ. ১৯।]

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন:‘‘মৃত ব্যক্তির শ্রবণ না করার ব্যাপারে হানাফী ও তাদের মতের সমর্থনকারীদের বক্তব্যকে এ বিষয়টিও সমর্থন করে যে, মৃত ব্যক্তি যদি সাধারণভাবেই শ্রবণ করে থাকবে, ‘তা হলে তাকে প্রশ্ন করার সময় তার নিকট রূহ ফিরে আসা, অতঃপর তা চলে যাওয়া’ এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হতো না’’। [. তদেব;৩৫।]

অতঃপর মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা সম্পর্কে তিনি বলেন:

" والعجب من بعض من لا فهم له من ينتسب إلى مذهب الإمام إبي حنيفة يشيع عند العوام أن السماع مجمع عليه، و أنه أيضا مذهب ذلك الإمام الأعظم و أصحابه ممن أخر و تقدم، و لم يعلم أن الحنفية قد تمسكوا كعائشة و غيرها بالآيتين ، وأولوا ما ورد بعد معرفتهم الحديثين ".

‘‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মাযহাবের অনুসারী বলে দাবীদার কিছু অজ্ঞ লোকদের ব্যাপারে আশ্চর্য হতে হয় যে, তারা জনগণের মাঝে এ তথ্য প্রচার করে যে, মৃতদের শ্রবণের বিষয়টি নাকি বিজ্ঞজনদের ঐকমত্যের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং এটাই নাকি ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর অগ্র-পশ্চাতের অনুসারীগণের মাযহাব। অথচ তারা জানতেও পারেনি যে, হানাফীগণ এ বিষয়ে আয়েশা (রা.) ও অন্যান্যদের ন্যায়

﴿ وَمَآ أَنتَ بِمُسۡمِعٖ مَّن فِي ٱلۡقُبُورِ ﴾ [ فاطر : ٢٢ ] এবং

﴿ إِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ﴾ [ النمل : ٨٠ ] এ আয়াত দু’টি গ্রহণ করেছেন এবং মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কিত হাদীস দু’টি অবগতির পর (যার একটি উপরে বর্ণিত হয়েছে এবং অপরটি নিম্নে বর্ণিত হবে) এ-দু’টির তা’বীল করেছেন’’। [. তদেব।]

মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কিত দ্বিতীয় হাদীস:

মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কে সামান্য একটু সম্ভাবনা প্রমাণিত হয় নিম্নে বর্ণিত হাদীস থেকে। বদরের যুদ্ধের পরে মুশরিকদের লাশগুলো যখন নিকটস্থ একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়, তখন সেখান থেকে প্রস্থানের পূর্ব মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সে কূপের নিকটে যেয়ে মুশরিকদের লাশগুলোকে সম্বোধন করে কিছু কথা বলেন। তা দেখে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

«يَا رَسُوْلَ اللهِ ! مَا تُكَلِّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لاَ رُوْحَ فِيْهَا؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُوْلُ مِنْهُمْ»

‘‘হে আল্লাহর রাসূল! রূহ বিহীন লাশের সাথে আপনি কথা বলছেন ? রাসুলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেন: যাঁর হাতের মধ্যে মুহাম্মদের আত্মা তাঁর শপথ করে বলছি: আমি তাদের লক্ষ্য করে যা বলেছি তা তাদের চেয়ে তোমরা বেশী শ্রবণ করোনি’’। [. বুখারী, প্রগুক্ত; (কিতাবুল মাগাযী, বাব নং ৩, হাদীস নং ৩৭৫৬), ৩/৩/১৮৫-১৮৬।] এ হাদীস দ্বারা কোনো কোন মনীষী মৃতদের শ্রবণের কথা প্রমাণ করতে চান। তবে অধিকাংশ বিদ্বানদের মতে এ হাদীস দ্বারা তা আদৌ প্রমাণ করা যায়না। পাঠকদের সুবিধার্থে এ হাদীস সম্পর্কে প্রখ্যাত মনীষীগণ কী বলেছেন, তা নিম্নে বর্ণনা করা হল:

এ হাদীস সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের মতামত:

মৃতদের শ্রবণ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা নু‘মান ইবনে মাহমূদ আল-আলূসী বলেন:

" لم أر فيها من صرح بأن الميت يسمع سماعا مطلقا عاما، كما كان شأنه في حياته ، و لا أظن عالما يقول به ، و إنما رأيت بعضهم يستدل بأدلة يثبت بها سماعا في الجملة ."

‘‘আমি এ বিষয়ে কোনো আলেমকে এ-কথা সুস্পষ্টভাবে বলতে দেখিনি যে, মৃত মানুষেরা দুনিয়ায় জীবিত থাকার ন্যায় মৃত্যুর পরেও সাধারণভাবে শ্রবণ করতে পারেন। কোনো জ্ঞানী এ ধরনের কথা বলতে পারেন বলেও আমি মনে করি না। আমি তাদের কাউকে কোনো কোন দলীল দ্বারা মৃতদের মোটের উপর কিছু শ্রবণের কথা প্রমাণ করতে দেখেছি’’। [.আল-আলূসী, নু‘মান ইবন মাহমুদ, আল-আ-য়াত আল-বায়্যিনাত ফী আদামি সেমাইল আমওয়াত আলা মাজহাবিল হানাফিয়্যাতিত সা-দাত; সম্পাদনা: আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী, (হালব: মাত্ববা‘আতু অফিসত, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৯হি:), পৃ.৫১।]

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এ হাদীসটি কুরআনুল কারীমে বর্ণিত{ وَمَا أنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِيْ الْقُبُوْر } ‘‘কবরবাসীদেরকে তুমি শুনাতে পারবে না’’ [. আল-কুরআন, সূরা ফাত্বির: ২২।] এ আয়াতের মর্মের বিপরীত হওয়ায় তিনি এ হাদীসটি অগ্রাহ্য করেছেন। [. আল-আলূসী, নু‘মান ইবন মাহমূদ, প্রাগুক্ত; পৃ.৫১।]

এ হাদীসকে কুরআনের উক্ত আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও এ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণ করা যায়না। কেননা, রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ উক্তিটি আসলে কাফেরদেরকে উপদেশ প্রদানের জন্য বলেছিলেন, তাদের বুঝাবার জন্য বলেন নি। [. তদেব; প্র. ৯।]

আল্লামা ইবনে নুজাইম আল-মিশরী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:এটি ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি মু‘জিযা বিশেষ। [. তদেব;পৃ. ৮।] যা অন্য কোনো মৃতদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

বিশিষ্ট তাবেঈ ক্বাতাদাঃ (রহ.) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:

[ أَحْيَاهُمُ اللهُ حَتَّى أَسْمَعَهُمْ قَوْلَه تَوْبِيْخًا وَتَصْغِيْرًا وَنِقْمَةً وَحَسْرَةً ]

‘‘আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদেরকে ধমকি প্রদান ও হেয় প্রতিপন্ন করা এবং বদলা গ্রহণ ও হতাশাগ্রস্ত করানোর জন্যে জীবিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শ্রবণ করিয়েছিলেন।’’ [. তদেব;পৃ. ৬; আহমদ, প্রাগুক্ত; ৪/২৯।]

ইমাম কুরত্ববী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: ‘‘কাফেরদের শ্রবণ করানোর ব্যাপারটি সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অনুভূতি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যার কারণে তারা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শ্রবণ করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শ্রবণ করার কথা আমাদেরকে না বললে তাঁর এ-কথাগুলোকে আমরা অবশিষ্ট কাফেরদের জন্য ধমকি স্বরূপ এবং মু’মিনদের মনের প্রশান্তি স্বরূপ বলার অর্থে গ্রহণ করতাম’’। [. আল-ক্বুরত্ববী, প্রাগুক্ত;১৩/৩৩২।]

আল্লামা ইবনে আবিদীন বলেন: ‘‘এ শ্রবণ করার বিষয়টি কাফেরদের আফসোসকে বৃদ্ধি করার জন্য তাদের সাথেই বিশেষভাবে সম্পর্কিত ছিল এবং এটি ছিল রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য একটি বিশেষ মু‘জিজা’’। [. নু‘মান ইবন আলূসী, প্রাগুক্ত;পৃ.১০।]

এ প্রসঙ্গে শায়খ আলবানী বলেন:‘‘এ ঘটনার বর্ণনায় ইবনে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীস রয়েছে, তাতে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেন:

«هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ؟ ثُمَّ قَالَ : إِنَّهُمْ اَلآنَ يَسْمَعُوْنَ مَا أَقُوْلُ»

‘‘তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন তোমরা কি তা সঠিকভাবে পেয়েছ? অতঃপর রাসূলুল্লাহ বলেন:নিশ্চয় (কাফেররা) এখন আমি যা বলছি তারা তা শ্রবণ করছে’’। [. ইবনে হাজার, ফাতহুলবারী; ২/২৪২।] অর্থাৎ তাদেরকে সম্বোধন করার সময় তারা তা শুনছিল। মৃতরা সব সময় শুনতে পায়, সে-জন্যই তারা তা শুনতে পেয়েছে, বিষয়টি এমনটি নয়।

মাহমূদ আলূসী বলেন:‘‘ এ হাদীসে এ-কথার শক্তিশালী ইঙ্গিত রয়েছে যে, মৃতরা শ্রবণ করেন না’’। [. মাহমূদ আলূসী, প্রাগুক্ত; ৬/৪৫৫।]

ইমাম ইবনুত তীন বলেন:‘‘ ইবনে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস এবং { إِنَّكَ َلا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى } এ আয়াতের মধ্যে আসলে কোনো বৈপরিত্ব নেই। কেননা, মৃতরা শ্রবণ করেন না, এ-কথায় কোনই সন্দেহ নেই, তবে যাদের শ্রবণ করার কথা নয়, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শ্রবণ করাতে পারেন’’। [. ইবনে হাজার , ফাতহুলবারী;৩/১৪২।]

কুরআন, হাদীস ও মনীষীদের মতামতের আলোকে এ-কথাই প্রমাণিত হয় যে, মৃত মানুষ সে যে-ই হোক কেন, জীবিতদের কথা ও কর্ম সম্পর্কে তাদের কিছু শুনা ও জানার নিজস্ব কোনো যোগ্যতা নেই। আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ ব্যবস্থায় তাদেরকে কিছু শুনাতে চাইলে তারা কেবল তা-ই শুনতে পারেন। সে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমেই তাদেরকে কেউ সালাম করলে বা তাদের মাগফেরাতের জন্য কেউ দো‘আ করলে তাদেরকে তা অবগত করানো হয়। কিন্তু তাদের কবরকে কেন্দ্র করে এর বাইরে শরী‘আত বিরোধী যে-সব শির্কী কাজকর্ম হয়, সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জানানো বা শ্রবণ করানোর কোনো ব্যবস্থা করেননি, তারা নিজ থেকেও তা জানতে বা শ্রবণ করতে পারেন না। তারা যদি তা জানতে পারতেন এবং জীবিতদেরকে কোনো উপদেশ দেবার মত কোনো মাধ্যম তাদের কাছে থাকতো, তা হলে অলিগণের কবরকে কেন্দ্র করে যে-সব শির্কী কর্ম করা হয়, তা পরিত্যাগ করার জন্য তারা সাধারণ জনগণকে উপদেশ দিতেন। কিন্তু এ-সবই তাদের নাগালের বাইরে থাকার কারণে যুগ যুগ ধরে অলিগণের কবর ও কবরকে কেন্দ্র করে অহরহ শির্কী কর্মকাণ্ড হয়েই চলেছে। যেহেতু এ-সব কর্ম শয়তানের প্ররোচনায়ই সেখানে হয়ে চলেছে, তাই মানুষেরা যাতে সর্বদা তা করে যায়, সে-জন্য শয়তান নিজেই অলিগণের কবরে নিরাপদ আস্তানা গেড়ে বসে রয়েছে। নানা উপায়ে সেখানে সে তার বিভিন্ন তেলেশমাতি প্রকাশ করে চলেছে। আর ধর্মীয় জ্ঞানে মিসকীন সাধারণ মানুষ তা দেখে ভাবছে-এ-সব কবরস্থ অলিরই কারামত ও ফয়েয। সাধারণ মানুষ এবং আল্লাহর মাঝে তাঁরা ওসীলা হওয়ার কারণেই কবরে থেকেও তাঁরা এভাবে সাধারণ মানুষের উপকার করে চলেছেন! والعياذ بالله .

উপসংহার:

দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে মানুষ তাদের চিরশত্রু শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যে-সব অপরাধে লিপ্ত হয় তন্মধ্যে মারাত্মক অপরাধ হচ্ছে শির্ক। এর ফলে একজন মুসলিম তার অজান্তেই ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলার কাছে তার নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতসহ অন্যান্য কোনো সৎকর্মেরই কোনো মূল্য থাকে না। আখেরাতে সে তার সাহায্যকারী ও শাফা‘আতকারী বলতেও কাউকে পাবেনা। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাসীদেরকে শির্কের এ-ভয়াবহ পরিণতির কথা বুঝানোর জন্যে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে লক্ষ্য করে বলেছেন :

﴿ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ﴾ [ الزمر : ٦٥ ]

‘‘তুমি যদি শির্ক কর, তা হলে তোমার ‘আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যাবে’’। [. আল-কুরআন, সূরা যুমার: ৬৫।] রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে কোনো শির্ক সংঘটিত না হওয়া সত্ত্বেও এবং তিনি আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয়ভাজন বান্দা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এ-ভাবে অনেকটা ধমকের সুরে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ-কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে- তাঁর উম্মতদেরকে এ-কথা সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া যে, এ-অপরাধ যার দ্বারাই সংঘটিত হবে, সে ব্যক্তি বাহ্যত তার নিজের ও আমাদের ধারণায় যত উঁচু দরেরই মু’মিন বলে গণ্য হয়ে থাকুন না কেন-আখেরাতে আল্লাহ তা‘আলা তার যাবতীয় সৎকর্ম নিষ্ফল করে দেবেন এবং সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থদের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

এ-আয়াত দ্বারা এ-কথা সহজেই অনুমিত হয় যে, বিশুদ্ধ ঈমান তথা শির্কমুক্ত ‘আক্বীদা ও বিশ্বাসই হচ্ছে আখেরাতে সৎ কর্মের প্রতিদান প্রাপ্তির পূর্বশর্ত। সে-জন্য কুরআনুল কারীমে শির্কমুক্ত বিশুদ্ধ ঈমানকে এমন একটি গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে যার শিকড় প্রোথিত রয়েছে মাটির অনেক গভীরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কোনো ক্ষতি করতে পারে না বলে সর্বদা যেমনি তা পত্র-পল্লব আর ফুলে-ফলে সুশোভিত থাকে, শির্কমুক্ত বিশুদ্ধ ঈমানের অধিকারীর ঈমানও তেমনি আখেরাতে ‘আমলের পত্র-পল্লব ও ফুলে-ফলে সুশোভিত থাকবে। [. আয়াতটি নিম্নরূপ: ﴿ مَثَلٗا كَلِمَةٗ طَيِّبَةٗ كَشَجَرَةٖ طَيِّبَةٍ أَصۡلُهَا ثَابِتٞ وَفَرۡعُهَا فِي ٱلسَّمَآءِ ﴾ [ ابراهيم : ٢٤ ] আল-কুরআন, সূরা ইবরাহীম: ২৪।] কোনো মুশরিকের নয়।

তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, এ শির্কের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও মানব জাতির ইতিহাস এ অপরাধের দ্বারা পরিপূর্ণ।

শির্ক কি ও কেন? এ সম্পর্কে সুদীর্ঘ গবেষণা ও পর্যালোচনা করে কুরআন, হাদীস ও মুসলিম মনীষীদের মতামত যাচাই ও পর্যালোচনার করে আমি যে-সব তথ্যে উপনীত হয়েছি, সংক্ষেপে এর সারকথা নিম্নরূপ:

আল্লাহ তা‘আলার অনেক সুন্দর নামাবলী ও সুমহান গুণাবলী রয়েছে। যেমনিভাবে তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার কেউ তাঁর সত্তার সমকক্ষ হতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে তাঁর সে-সব নামাবলী ও গুণাবলীর যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাতেও তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না। তিনি তাঁর সে-সব নামাবলী ও গুণাবলীর কারণেই আমাদের ও সমগ্র জাহানের একক রব বা প্রতিপালক। তিনি সবকিছুর প্রতিপালক হওয়ার কারণে সবকিছুর উপাস্যও এককভাবে তিনিই। কেননা, যিনি প্রতিপালক হবেন তিনি ব্যতীত আর কেউ উপাস্য হতে পারে না। আর আল্লাহই যখন আমাদের প্রতিপালক, তাই তিনি ব্যতীত আমাদের অপর কোনো উপাস্য বা ইলাহ নেই। তাঁর রুবূবিয়্যাতে যেমন কেউ তাঁর শরীক হতে পারে না, তেমনি তাঁর উলূহিয়্যাতেও কেউ তাঁর শরীক হতে পারে না।

আল্লাহ তা‘আলার উপাসনা করতে হয় তাঁর সম্মান ও তা‘যীম করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। সে-জন্যে তিনি আমাদের দেহ, অমত্মর ও সম্পদের উপর নির্দিষ্ট প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কিছু উপাসনা ধার্য করে দিয়েছেন। এ-গুলো নিবেদিত হবে কেবল তাঁকে কেন্দ্র করেই। কোনো নবী-রাসূল, সৎ মানুষ ও অন্যান্য কোনো বস্তুর সম্মান, তা‘যীম ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে তা প্রযোজ্য হতে পারেনা।

আমাদের উপর আল্লাহ তা‘আলার পরে নবী-রাসূল ও সৎ মানুষদের সম্মান পাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে। তবে আল্লাহর সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য তাঁর উপাসনা হওয়ায় এবং তাঁদের সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য তাঁদের একরাম করা হওয়ায় উভয়ের সম্মান প্রদর্শিত হওয়ার ধরন ও পদ্ধতি সম্পূর্ণ পৃথক। যুগে যুগে মানুষেরা নবী-রাসূল ও সৎ মানুষদের সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করার কারণেই তাঁদের একরাম করতে গিয়ে তারা তাঁদের উপাসনায় লিপ্ত হয়ে আল্লাহর উলূহিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত হয়েছে।

আল্লাহকে আমার রব বলে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ হচ্ছে:তাঁকে নিজের জীবন, জীবিকা, ভাগ্যের ভাল-মন্দ, যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের একচ্ছত্র মালিক ও পরিচালক বলে বিশ্বাস করা। এ-সব ক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরীক বা সাহায্যকারী থাকার চিন্তা করাতো দূরের কথা, তা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো বস্তুর প্রভাব বা নবী বা অলিগণের সুপারিশকারী থাকার চিন্তা করাও উপর্যুক্ত বিশ্বাসের পরিপন্থী। যুগে যুগে মানুষের অমত্মরে এ-জাতীয় বিশ্বাস লালিত হওয়ার কারণেই তারা তাঁর রুবূবিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত হয়েছে।

আদম (আ.) কে সৃষ্টির পর এক হাজার বছর পর্যন্ত তাঁর সমত্মানেরা তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। অতঃপর তারা আদম (আ.)এর কবরকে সম্মান করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে যেতে সর্বপ্রথম আল্লাহর উলূহিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত হয়। এরপর আদম সমত্মানদের মধ্যকার পাঁচজন সৎ মানুষকে কেন্দ্র করে তাঁদের অনুসারীরা আল্লাহর উলূহিয়্যাত ও রুবূবিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত হয়।

আল্লাহর রুবূবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতে গায়রুল্লাহের সমকক্ষতা বা শির্ক মানুষের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। মানুষের বিশ্বাসের মধ্যে যে-সব শির্ক হয়, তা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের সাথে সম্পর্কিত। আর কর্মের মধ্যে যে-সব শির্ক হয়, তা আল্লাহর উলূহিয়্যাতের সাথে সম্পর্কিত। আর অভ্যাস যেহেতু সাধারণত বিশ্বাসগত কারণেই গড়ে উঠে, সেহেতু অভ্যাসগত কর্মের দ্বারা যে-সব শির্ক হয়, তাও আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের সাথে সম্পর্কিত।

শির্কের দু’টি প্রকার রয়েছে। একটি ‘আকবার’ আর অপরটি ‘আসগার’। শির্কে আকবার আবার চার প্রকার। জ্ঞানগত শির্ক, পরিচালনাগত শির্ক, অভ্যাসগত শির্ক ও উপাসনাগত শির্ক। যারা প্রথম তিন প্রকারের শির্ক করে, তারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতে শির্ক করে। আর যারা শেষ প্রকারের শির্ক করে তারা আল্লাহর উলূহিয়্যাতে শির্ক করে।

কেউ যদি অজ্ঞতাবশত একটি শির্কে আকবার করে এবং মুত্যুর পূর্বে তাত্থেকে তাওবা করে মরতে না পারে, তা হলে মুশরিক হিসেবেই তার হাশর হবে। আর কারো দ্বারা যদি ‘শির্ক আসগার’ সংঘটিত হয়, তা হলে সে মুশরিক বলে বিবেচিত হবে না;তবে তার প্রতিটি ‘শির্কে আসগার’ একেকটি কবীরা গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে। এত্থেকে তাওবা করে মরতে না পারলে আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে তাকে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর শাফা‘আতের মাধ্যমে ক্ষমা করতে পারেন, নতুবা সাময়িক শাসিত্মতে নিমজ্জিত করবেন।

আল্লাহর উলূহিয়্যাত ও রুবূবিয়্যাতে শির্ক সংঘটিত হওয়ার জন্য মানুষের অজ্ঞতা ও শয়তানের বহুমুখী ষড়যন্ত্রই মৌলিকভাবে দায়ী।

ধর্মপ্রাণ ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে তাদের অজ্ঞতার সুযোগে বিভিন্ন নবী ও সৎ মানুষদের মর্যাদা দানের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করানোর মাধ্যমে শয়তান তাদের কবরসমূহকে উপাসনালয়ে রূপামত্মরিত করেছিল। তাঁদের সম্মানার্থে তাঁদের মূর্তি বানিয়ে তাদেরকে সে-সব মূর্তির উপাসনা করতে লিপ্ত করেছিল। যা বর্তমানেও তাদের মাঝে যথারীতি প্রচলিত রয়েছে।

শয়তান নূহ আলাইহিস সালামের জাতির লোকদেরকে যে-সব শির্কী ধারণার ভিত্তিতে শির্কী কর্মে অভ্যস্থ করেছিল, ঠিক সে-রকমের শির্কী ধারণার ভিত্তিতেই আরবের দ্বীনে ইব্রাহীমের অনুসারী বলে দাবীদারদেরকেও সে পাঁচজন ওলির মূর্তিসহ আরো বিভিন্ন মূর্তির উপাসনা করতে অভ্যস্ত করেছিল। ফেরেশ্তাদেরকে আল্লাহর মেয়ে হওয়ার ভ্রামত্ম ধারণা দিয়ে তাদের নামে লাত, উয্যা ও মানাত নামের দেবী বানিয়ে সে-গুলোকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়ার মাধ্যম ও তাঁর নিকট সুপারিশকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিল। সে মূর্তিগুলোকে তাদের জীবনের বিবিধ কল্যাণ ও অকল্যাণ করার সামর্থ্যবান বলেও ধারণা দিয়েছিল। আল্লাহর নিকট থেকে পার্থিব কল্যাণ প্রাপ্তি ও অকল্যাণ দূরীকরণের জন্য দেব-দেবীদের মধ্যস্থতা ও সুপারিশ পাওয়ার আশায় তাদেরকে সে-গুলোর উদ্দেশ্যে মানত করা, এদের পার্শ্বে অবস্থান করা এবং বিপদে এদের আহ্বান করাসহ মৌখিক, শারীরিক ও আমত্মরিক বিভিন্ন উপাসনায় লিপ্ত করেছিল। এ-ছাড়া তাদের অভ্যাসের মাঝেও নানা রকমের শির্কী কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিল।

নূহ আলাইহিস সালামের জাতি থেকে আরম্ভ করে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করার ক্ষেত্রে শয়তান যে ধরনের কলা-কৌশল অবলম্বন করেছিল, সে রকমের কলা-কৌশল অবলম্বন করেই সে সাধারণ মুসলিমদেরকেও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে। এ-চেষ্টার ফলেই সে তাদেরকে জ্ঞানগত, পরিচালনাগত, অভ্যাসগত ও উপাসনাগত বিভিন্ন রকম শির্কী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ও ওলিগণ সর্বত্র হাজির ও নাজির হতে পারেন, তাঁরা গায়েব সম্পর্কে শুনতে ও জানতে পারেন এবং মৃত্যুর পরেও মানুষের উপকার করতে পারেন... ইত্যাদি মর্মে যে-সব ধ্যান-ধারণা সাধারণ মুসলিমদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে, তা শয়তানের দেয়া শির্কী ধারণা বৈ আর কিছুই নয়। এর মাধ্যমে সে রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ও ওলিগণ কে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের বৈশিষ্ট্যের অধিকারীর পর্যায়ে উন্নীত করেছে।

আরবের মুশরিকদের মাঝে নূহ (আ.)-এর সময়কার পাঁচজন ওলি ও তিনজন ফেরেশ্তার নামে নির্মিত মূর্তি ও দেবীসমূহকে সাধারণ মানুষ ও আল্লাহর মাঝে মধ্যস্থতা ও সুপারিশকারী হওয়ার যে ধারণা দিয়েছিল, মুসলিমদের মাঝেও তাদের ওলিদের ব্যাপারে হুবহু সেই ধারণার জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে।

ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরাসরি আল্লাহর কাছে আবেদন-নিবেদন না করে আরবের মুশরিকদের ন্যায় তা মৃত অলিগণের ওসীলা ও সুপারিশের মাধ্যমে চাইতে অভ্যস্ত করেছে।

অলিগণের মধ্যস্থতা ও সুপারিশ প্রাপ্তির মাধ্যমে পার্থিব কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূরীকরণের আশায় তাদেরকে মুশরিকদের ন্যায় অলিগণের কবর ও কবরসমূহে মানত দান, সেখানে অবস্থান করা, রোগমুক্তি কামনা এবং বিপদে সাহায্যের জন্য আহ্বান করাসহ বিভিন্ন রকমের মৌখিক, শারীরিক ও আমত্মরিক উপাসনায় লিপ্ত করেছে।

ভাগ্যের ভাল ও মন্দের প্রতি যথার্থ ঈমান না এনে সুস্থ জীবন ও উত্তম জীবিকা লাভের জন্য শরী‘আত নির্দেশিত বৈধ পন্থায় তদবীর ও কর্ম না করে নানা রকম শির্কী পন্থায় তদবীর ও কর্ম করতে তাদেরকে অভ্যস্ত করে তুলেছে।

নবী, ওলি ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকল কবরবাসীকে সালাম দিলে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তারা তা শুনতে পান ও সালামের জবাব দেন। তাদের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করলে এবং ছওয়াব রেছানী করলে এতে তাদের রুহ আনন্দিত হয়। তারা আমাদের জন্য নেক দো‘আও করেন। এ-ক্ষেত্রে ওলি আর সাধারণ মানুষ বলে কোনো পার্থক্য নেই। তবে তাদের সে দো‘আ আমাদের কোনো উপকারে আসেনা। কেননা, বিশুদ্ধ হাদীস মতে মানুষ মৃত্যুর পর মানুষের উপকারযোগ্য তাদের যাবতীয় ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া বরযখী জীবন কোনো উপকারযোগ্য কর্মের জীবন নয়। কিন্তু শয়তান সাধারণ মানুষদের নিকট অলিগণের বিষয়টি এ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম বলে ধারণা দিয়েছে। তাঁরা মরে যাওয়ার পরেও জীবিত থাকার ন্যায় আমাদের উপকার করতে পারেন বলে ধারণা দিয়েছে। তাঁদের আহ্বান করলে তাঁরা শুনতে পারেন বলেও ধারণা দিয়েছে। অথচ তাঁদের ব্যাপারে এমন ধারণা করা তাঁদেরকে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের বৈশিষ্ট্যে শরীক করার শামিল।

শয়তান মুশরিকদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের সাথে সাধারণ মুসলিমদের অনেক বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের বহুলাংশে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে বরং তাদেরকে মুশরিকদেরও অগ্রগামী করতে সামর্থ্য হয়েছে। আরবের মুশরিকরা যেখানে সমুদ্রে মারাত্মক ঝড় ও তুফানের কবলে পতিত হলে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের দেবতাদের কথা ভুলে যেয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকেই সাহায্যের জন্য আহ্বান করতো; সেখানে অনেক মুসলমাদেরকে অনুরূপ বিপদে আল্লাহর পরিবর্তে সাহায্যের জন্য বদর পীর, বড়পীর আব্দুল কাদির জীলানী ও মঈনুদ্দিন চিশ্তীকে আহ্বান করতে শিখিয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলার রুবূবিয়্যাতে শির্ক করা থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে যে, যে-সব নামাবলী ও বৈশিষ্ট্যের কারণে আল্লাহ আমাদের রব, সে-সব বৈশিষ্ট্যের সামান্যতম কোনো বৈশিষ্ট্যেও তিনি কাউকে তাঁর শরীক করেন না। কেউ নিজ প্রচেষ্টায়ও তাতে তাঁর শরীক হতে পারেনা।

মানুষের ভাগ্যের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়টি আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের আওতাধীন বিষয়। কোনো মানুষ বা কোনো বস্তুর পক্ষে কারো কোনো উপকার বা অপকার করার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহর ইচ্ছা হলেই কেবল কোনো মানুষ বা কোনো বস্তু কারো উপকার বা অপকারের ওসীলা বা মাধ্যম হতে পারে। তাই কোনো মানুষ বা কোনো বস্তুর দ্বারা উপকৃত হলে বলতে হবে: আল্লাহর রহমতে অমুক মানুষ বা অমুক বস্তুর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছি। কোনো ঔষধ পান করলে বলতে হবে: অমুক ঔষধ পান করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে উপকার পেয়েছি। এক কথায় যাবতীয় উপকার ও অপকারের বিষয়কে কোনো মানুষ বা বস্তুর সাথে সম্পর্কিত না করে কেবল আল্লাহ তা‘আলার সাথেই সম্পর্কযুক্ত করতে হবে।

একমাত্র যমযমের পানি ব্যতীত অন্য কোনো ওলি বা পীর ফকিরের সাথে সংশিলষ্ট কোনো কূপ বা পুকুরের পানি, কবরের পুড়ানো মোম, মাটি ও গাছ ইত্যাদি মানুষের কোনো কল্যাণ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা আল্লাহ রুবূবিয়্যাতে শির্কের শামিল।

ভাগ্য পরিবর্তন বা রোগ ব্যাধি নিবারণের জন্যে জ্যোতিষ, গণক, জিন সাধক, ফকির ও কবিরাজদের নিকট এরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক কিছু জানে এমন ধারণা নিয়ে যাওয়া এবং তাদের দেয়া পাথরের আংটি, বালা ও তা‘বীজ ব্যবহার করা ব্যবহারকারীর মনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শির্কে আকবার বা আসগার হতে পারে।

সৎ ও অসৎ মানুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যেই আল্লাহর রহমতের দরজা সর্বদা উন্মুক্ত রয়েছে। মানুষ গায়েব সম্পর্কে জানতে পারেনা বলে কাউকে কোনো সংবাদ দিতে হলে প্রয়োজনে অন্যের ওসীলা গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ যাবতীয় গায়েব সম্পর্কে জানেন বলে তাঁর কাছে আমাদের যে কোনো সমস্যার কথা জানাতে হলে এ-জন্যে কোনো নবী, ওলি ও বুজুর্গদের নামের ওসীলা গ্রহণের কোনো বৈধতা স্বীকৃত নয়। কেননা, আমাদের প্রয়োজনের কথা কোনো ওসীলা ছাড়াই সরাসরি তাঁকে জানানো যায়। তবে ওসীলা গ্রহণ করলে তাঁর সুন্দর নামাবলী, ঈমানের রুকুনসমূহের প্রতি ঈমান, যে কোনো সৎকর্ম, জীবিত মানুষের দো‘আ, নিজের অপরাধের স্বীকৃতি ও অসহায়তা বর্ণনার ওসীলা গ্রহণ করতে হবে। কোনো নবী বা ওলির নামের ওসীলায় নয়। কেননা, মানুষেরা পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে এমন ওসীলা মানুষের মধ্যে চলতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ কারো নাম শুনে প্রভাবিত হন না। তাই কারো নামের ওসীলায় তাঁর নিকট কিছু আবেদন করা যেতে পারেনা। কোনো কোন হাদীস দ্বারা বাহ্যত এমন ওসীলা গ্রহণের বৈধতা প্রমাণিত হয় বলে কারো মনে হলেও বাস্তবে সে-সব হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত হয়না। কেননা, সে-সব হাদীস দ্বারাও প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট সাহাবীদের দো‘আর ওসীলা গ্রহণই মূলত উদ্দেশ্য। তাঁদের নাম ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করা সে-সবের উদ্দেশ্য নয়।

যে-সব বিষয় আল্লাহ ব্যতীত অপর কেউ দিতে পারেনা, তা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নিকট চাওয়া যায়না। রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বা ওলিগণ মৃত্যুবরণ করেছেন বলে তাঁরা দুনিয়ার মানুষের ছোট বা বড় কোনো উপকারই করতে পারেন না। তাই তাঁদের নিকট কিছু চাওয়া যায়না। কেউ তাদের কাছে কিছু আবদার করলেও কুরআনের শিক্ষানুযায়ী তাঁরা সে আবদার শুনতে পারেন না। শুনতে পারলেও তাঁরা এর কোনো জবাব দেবেন না। তাঁদের কাছে কিছু আবদার করা শির্ক হওয়ার কারণে সূরায়ে মরয়ামের ৮২ নং আয়াতের বর্ণানুযায়ী কেয়ামতের দিন তাঁরা তাঁদের আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।

কোন জীবিত মানুষের দ্বারা কোনো অলৌকিক কর্ম সংঘটিত হলে তিনি যদি শরী‘আতের যথার্থ অনুসারী হন, তা হলে তা তার কারামত হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে এটি তাঁকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাঁর অজান্তে তাঁর মাধ্যমে প্রকাশিত শয়তানের কোনো তেলেশমাতিও হতে পারে। আর যদি তিনি শরী‘আতের অনুসারী না হন, তা হলে তা নিঃসন্দেহে শয়তানের তেলেশমাতি হয়ে থাকবে। বিষয়টি তাঁর কারামত হোক আর না-ই হোক, এ-কারণে তাঁর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত চিন্তা করে তাঁকে আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের কোনো কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারীর মর্যাদায় উন্নীত করা যাবেনা। কেননা, ওলিদের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত চিমত্মা করেই যুগে যুগে সাধারণ মানুষেরা শির্কে নিমজ্জিত হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলার উলূহিয়্যাতে শির্ক করা থেকে বাঁচতে হলে বুঝতে হবে যে, যে বস্তু দান করা শয়তানের সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে, তা কোনো মৃত ওলির কবর ও কবরে আবেদনের পর অলৌকিক উপায়ে কেউ পেয়ে থাকলে এটাকে সম্পূর্ণরূপে শয়তানের তেলেশমাতি বলেই বিশ্বাস করতে হবে। কেননা, কবরে আবেদনকারী ও অন্যান্য সাধারণ মানুষদেরকে বিভ্রামত্ম করার জন্য শয়তান অদৃশ্যে থেকে সে নিজেই বা তার অনুসারীদের মাধ্যমে এমন আহ্বানকারীদের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়। আবেদন পূর্ণ করা যদি শয়তানের সামর্থ্যের মধ্যে না থাকে, তা হলে বুঝতে হবে যে, আল্লাহই নিজ অনুগ্রহে আবেদনকারীর প্রয়োজনের দিক বিবেচনা করে তা পূর্ণ করে দিয়েছেন। তাতে কবরস্থ ওলির আদৌ কোনো কেরামতি নেই। কেননা, আমরা জানি যে, আরবের মুশরিকরা তাদের ওলি ও ফেরেশ্তাদের নামে নির্মিত দেবতাদের কাছে বৃষ্টি চাইলে বৃষ্টি হতো। তারা এটিকে তাদের দেবতাদের ওসীলায় পেয়েছে বলেও বিশ্বাস করতো। অথচ এ বৃষ্টি আল্লাহর রহমতেই বর্ষিত হতো। এর পিছনে যেমনি তাদের দেব- দেবীদের আদৌ কোনো হাত ছিল না, তেমনি কবরে আবেদনকারীদের প্রয়োজন পূরণের পিছনেও কবরস্থ ওলির আদৌ কোনো হাত নেই।

মানুষের ঈমান ও ধৈর্যের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য আল্লাহ তাদের ভাগ্যে কল্যাণ ও অকল্যাণ দিয়ে দীর্ঘ বা স্বল্প মেয়াদী পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। পরীক্ষা শেষে ইচ্ছা হলে তিনিই তা পরিবর্তন করেন। তাই কোনো কল্যাণার্জন বা অকল্যাণ দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত বৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ওসীলার নামে এদিক-সেদিক মুখ না ফিরিয়ে ভয় ও আকাঙ্ক্ষার সাথে কেবল আল্লাহকেই বিনয়ের সাথে স্মরণ ও আহ্বান করতে হবে। উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গৃহীত পন্থার উপর নির্ভরশীল না হয়ে তা প্রাপ্তির জন্য বিষয়টিকে আল্লাহর ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়ে ধৈর্যের সাথে কেবল তাঁর উপরেই ভরসা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, কোনো কবর বা কবরের পাশে অবস্থান করা, জীবনের যে কোনো কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূরীকরণের জন্যে কোনো মৃত ওলির শরণাপন্ন হওয়া, তাঁদের সাহায্যের আশাবাদী হয়ে তাঁদেরকে আহ্বান করা ও তাঁদের উপর ভরসা করা প্রকাশ্য শির্ক। আখেরাতে মানুষের মুক্তির সোপান হচ্ছে বিশুদ্ধ ঈমান ও সঠিক ‘আমল। যারা এ দু’টি বৈশিষ্ট্যে বলীয়ান হবে, কেবল তারাই এ দু’য়ের ওসীলায় আল্লাহর রহমতে মুক্তি লাভে ধন্য হবে।

যারা বিশুদ্ধ ঈমান ও সঠিক ‘আমল ব্যতীত মৃত ওলিদের শাফা‘আতের মাধ্যমে আখেরাতের মহাসমুদ্র নিরাপদে পাড়ি দেয়ার চিমত্মা করে, তাদের সে চিমত্মা মাকড়সার জালের ন্যায়ই দুর্বল, [. আয়াতটি নিম্নরূপ: ﴿ مَثَلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡلِيَآءَ كَمَثَلِ ٱلۡعَنكَبُوتِ ٱتَّخَذَتۡ بَيۡتٗاۖ وَإِنَّ أَوۡهَنَ ٱلۡبُيُوتِ لَبَيۡتُ ٱلۡعَنكَبُوتِۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٤١ ﴾ [ العنكبوت : ٤١ ] আল-কুরআন, সূরা আনকাবূত: ৪১।] মৃদু বাতাসে যে জাল ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়, সে জালকে মাকড়সার পক্ষে যেমন নিরাপদে বসবাসের জন্যে আশ্রয় স্থল হিসেবে ধারণা করা ঠিক নয়, তেমনি কারো পক্ষে আখেরাতের ভয়াবহ দিনে ওলিগণ কে মুক্তির নিরাপদ আশ্রয় স্থল হিসেবে ধারণা করাও ঠিক নয়।

অলিগণের সুপারিশ লাভে আখেরাতে ধন্য হওয়ার আশায় যারা তাঁদের কবর ও কবরে সময় অতিবাহিত করছে, তারা প্রকৃতপক্ষে মারাত্মক ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। কেননা, আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তাঁর প্রিয়ভাজন বলতে এমন কেউ নেই- যিনি তাঁর পূর্ব অনুমতি ব্যতীত স্বীয় মর্যাদার ওসীলায় আখেরাতে তাঁর কাছে কারো জন্যে শাফা‘আত করতে পারেন। বরং সাধারণ মানুষেরা আজ যাদেরকে আখেরাতে তাদের বিপদকালীন সময়ে সুপারিশ করতে পারবেন বলে সাব্যস্ত করে নিয়েছে, আল্লাহ সেদিন তাদের বলবেন: ‘‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক বলে মনে করতে, তাদেরকে ডাকো, তখন তারা তাদেরগকে ডাকবে। কিন্তু তাঁরা তাদের ডাকে সাড়া দেবেন না। উপরন্তু আল্লাহ তাদের মাঝে একটি অমত্মরায় সৃষ্টি করে দেবেন’’। [. আয়াতটি নিম্নরূপ: ﴿ وَيَوۡمَ يَقُولُ نَادُواْ شُرَكَآءِيَ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَهُمۡ وَجَعَلۡنَا بَيۡنَهُم مَّوۡبِقٗا ﴾ [ الكهف : ٥٢ ] আল-কুরআন, সূরা:কাহাফ: ৫২।] ফলে তাদের সকল আশা ও ভরসা চিরতরে ব্যর্থতায় পরিণত হবে।

আখেরাতে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ব্যতীত অন্যান্য নবী-রাসূলসহ সকল মু’মিন ও ওলিগণ নিজের চিমত্মায় উদ্বিগ্ন থাকবেন। হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ চলাকালীন সময়ে একমাত্র সর্ব শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত সাধারণভাবে কারো জন্যে কারো কোনো সুপারিশের অস্তিত্ব কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা স্বীকৃত নয়। হ্যাঁ, সাধারণভাবে তাঁদের সুপারিশ স্বীকৃত হয়েছে কেবল জাহান্নামী মু’মিনদের জাহান্নামে যাওয়ার পর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রে। আল-কুরআনে আখেরাতে শাফা‘আতের বিষয়টি শুধুমাত্র কাফির ও মুশরিকদের বেলায়ই অস্বীকার করা হয়নি, বরং মু’মিন মুশরিকদের বেলায়ও তা অস্বীকার করা হয়েছে।

অতএব, যে-সব মুসলিম ভাই ও বোনেরা আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়ে ধন্য হয়ে মুহূর্তের জন্যেও জাহান্নামে না যেয়ে প্রথমেই জান্নাতে যেতে আগ্রহী, তাদেরকে এখন থেকেই যাবতীয় জ্ঞানগত, পরিচালনাগত, উপাসনাগত ও অভ্যাসগত শির্ক হতে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে হবে। নিজ বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাস থেকে যাবতীয় শির্কী কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে নিতে হবে। নিজের অজান্তে যত ছোট বা বড় শির্ক হয়ে গেছে সে সবের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের সকলের পরিত্রাণ।

تمت بالخير و لله الحمد و المنة . وما علينا إلا البلاغ . و آخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين . و صلى الله وسلم على النبي الأمين وعلى آله وصحبه وسلم، ومن سار على نهجه و تبع هدايته إلى يوم الدين .

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন