hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ধূমপান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়া

লেখকঃ আমের সালেহ আলাওয়ী নাজী

১. ধূমপান, হুক্কা এবং এ জাতীয় জিনিসের হুকুম
প্রশ্ন/ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ধূমপান হারামের কোনো প্রমাণ আছে কি?

উত্তর: বিশেষভাবে এ নামে কোনো প্রমাণ আসে নাই, কিন্তু তা অপবিত্র জিনিস বিধায় আল্লাহর বাণী:

﴿ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

অর্থাৎ: “আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্র জিনিসকে হারাম করেছেন” এর অন্তর্ভুক্ত। [সুরা আরাফ: ১৫৭] এবং তা ক্ষতিকর বিধায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস

«لا ضرر ولا ضرار»

অর্থাৎ: “নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না” এর অন্তর্ভুক্ত। [মুসনাদে আহমদ, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন , সহীহ জামে ৭৫১৭।]



আর যে সকল জিনিস খারাপ ও ক্ষতিকর তাতে টাকা পয়সা ব্যয় করা হারাম। যা অপব্যয় হওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী:

﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا٢٧﴾ [ الاسراء : ٢٧ ]

অর্থাৎ: “নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর নাফরমান” এর অন্তর্ভুক্ত। [সুরা ইসরা: ২৭], তাছাড়া তা অযথা সম্পদ নষ্ট করার শামিল, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযথা মাল নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। [বুখারী হাদীস নং ২৪০৮, মুসলিম হাদীস নং ১৭১৫।]

আল্লাহ সকলকে তাওফীক দিন, আর আল্লাহ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাথীর উপর সালাত পেশ করুন। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া (২২/২০৮)।]

প্রশ্ন: এ প্রশ্নটি আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে করা হয়েছিল যে, যখন আমরা কোনো দোকানে গিয়ে বলি যে, সিগারেট বিক্রি নিষেধ বা তা বিক্রি করা হারাম, যেমন আপনি ফাতাওয়া দিয়েছেন, তখন তারা বলে: যদি তা হারাম হতো তবে অবশ্যই নিষেধ করা হতো! তাদেরকে আমরা কি বলবো?

উত্তর: এর উত্তর অত্যন্ত সহজ, তাদেরকে বলব: শরীয়তের মূল কি? মানুষের আমল? নাকি কুরআন ও হাদীস? অবশ্যই শরীয়তের উৎস হচ্ছে কুরআন ও হাদীস। যদি কুরআন ও হাদীস কোনো জিনিস হারামের উপর প্রমাণ করে তবে মানুষের কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হবে না এবং মানুষের কোনো আমল দলীল হতে পারে না। কিয়ামতের দিন কোনো মানুষ এ রকম কথা বলে আল্লাহর দলীলকে কোনোভাবেই প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না, কারণ তিনি বলেছেন:

﴿ وَيَوۡمَ يُنَادِيهِمۡ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبۡتُمُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٦٥ ﴾ [ القصص : ٦٥ ]

“যেদিন তাদেরকে ডেকে বলবেন: রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?” [সূরা কাসাস: ৬৫] এখানে বলা হয় নি যে, সমাজে কিসের ব্যাপারে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলে?

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فَعَمِيَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَنۢبَآءُ يَوۡمَئِذٖ فَهُمۡ لَا يَتَسَآءَلُونَ ٦٦ ﴾ [ القصص : ٦٦ ]

“সেদিন তাদের উপর সকল খবর বন্ধ হয়ে যাবে, অতঃপর তারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারবে না” [সূরা কাসাস: ৬৬], তাদের উপর তাদের যাবতীয় খবরাখবর বন্ধ হয়ে যাবে কেউ কোনো কথার উত্তর দিতে পারবে না এবং অন্যকেও জিজ্ঞাসা করতে পারবে না। আর যদি মানুষের আমল দলীল হতো তাহলে কাফেরদের কথা-

﴿إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ﴾ [ الزخرف : ٢٢ ]

‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে একটি অবস্থায় পেয়েছি’ দলীল হতো এবং তারা এ কথার দ্বারা ওযর পেশ করতে পারতো। কাজেই আপনি ধূমপায়ীকে এ প্রমাণ দিয়ে যান, যদি সে হেদায়েত পায় তাহলে সে নিজের জন্যই পাবে, আর যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে সে নিজেই পথভ্রষ্ট হবে।

আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে বলেছেন:

﴿ فَذَكِّرۡ إِنَّمَآ أَنتَ مُذَكِّرٞ ٢١ لَّسۡتَ عَلَيۡهِم بِمُصَيۡطِرٍ ٢٢ إِلَّا مَن تَوَلَّىٰ وَكَفَرَ ٢٣ فَيُعَذِّبُهُ ٱللَّهُ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَكۡبَرَ ٢٤ ﴾ [ الغاشية : ٢١، ٢٤ ]

“অতএব আপনি উপদেশ দিন; আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগকারী নন। তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফরী করলে, আল্লাহ্ তাদেরকে দেবেন মহাশাস্তি।” [সূরা গাশিয়াহ: ২১-২৪] [উন্মুক্ত সাক্ষাৎকার। (৬৯/২০৬-২০৭)]

প্রশ্ন: সৌদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ধূমপানের হুকুম কি?

উত্তর: ধূমপান হারাম, কেননা তা অপবিত্র এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি বহন করে, আর আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য ভাল পবিত্র খাবার ও পানীয় হালাল করেছেন, পক্ষান্তরে অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন। তিনি বলেন :

﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ﴾ [ المائ‍دة : ٤ ]

‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? বলুন: সকল প্রকার ভাল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।’’ [সূরা মায়েদা: ৪]

তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাগুণের ব্যাপারে বলেন:

﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

“তিনি তাদেরকে ভাল কাজের নির্দেশ দেন এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ : ১৫৭]

আর সকল প্রকার ধূমপান অপবিত্র, এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এমনিভাবে সকল প্রকার নেশা জাতীয় জিনিস অপবিত্র, কাজেই সিগারেট পান করা, তা বিক্রি করা এবং এর ব্যবসা করা কোনো ক্রমেই জায়েয নেই, যেমন মদ। ধূমপায়ী এবং এর ব্যবসাকারীর উপর ওয়াজিব হলো তাওবা করে বিনীত হয়ে আল্লাহর নিকট ফিরে আসা এবং অতীত কর্মের উপর লজ্জিত হওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে ফিরে না আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে থাকেন।

তিনি বলেন:

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [ النور : ٣١ ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে।” [সূরা নূর: ৩১]

অন্যত্র তিনি বলেন:

﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [ طه : ٨٢ ]

“আমি ক্ষমাশীল সেই ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, অতঃপর হেদায়েত প্রাপ্ত হয়।” [সূরা তাহা : ৮২] [ফাতাওয়া ইসলামীয়্যা (৩/৪৪২-৪৪৩)]

প্রশ্ন: তাকে এ প্রশ্নটিও করা হয়েছিল যে, হুক্কা পান করার হুকুম কি? এটি কি ধূমপানের হুকুমের মতই? ধূমপান এবং হুক্কা কি মাদকদ্রব্যের ন্যায় হারাম?

উত্তর: সকল প্রকার হুক্কা এবং ধূমপান হারামের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এতে বহু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ উভয়টির বহু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের উপর ক্ষতিকর জিনিস গ্রহণ করাকে হারাম করেছেন, কাজেই এগুলো গ্রহণকারীর উপর ওয়াজিব হলো: এ গুলো ত্যাগ করে তা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা।

আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন:

﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ﴾ [ المائ‍دة : ٤ ]

“তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে, আপনি বলুন: ভাল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।” [সূরা মায়েদা: ৪] তাছাড়া তাঁর গুণাগুণের ব্যাপারে আল্লাহ আরো বলেন:

﴿يُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

“তিনি তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ : ১৫৭]

সকল প্রকার ধূমপান এবং হুক্কা মানুষের ক্ষতিকর ও অপবিত্র, কাজেই এগুলোর যাবতীয় প্রকারাভেদ উপরোল্লেখিত আয়াতদ্বয় এবং এ অর্থে আরো যা রয়েছে তা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন সকল মুসলিমকে সঠিক পথের পথিক করেন যার মধ্যে তাদের কল্যাণ ও মুক্তি রয়েছে এবং যাবতীয় ক্ষতি থেকে যেন ইহকাল ও পরকালে তাদেরকে রক্ষা করেন, নিশ্চয়ই তিনি সর্বোত্তম দায়িত্বশীল। [ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৩/৪৪৩)]

প্রশ্ন: এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: প্রশ্নকারী বলেন: আমার বাবা একটি দোকানের মালিক, তিনি তাতে সিগারেট বিক্রি করেন। আমি তাকে বহু নসিহত করেছি এ ব্যাপারে, তিনি স্বীকার করেন যে ধূমপান হারাম কিন্তু সিগারেট বিক্রি করা হারাম তা স্বীকার করেন না, কাজেই অনুগ্রহ করে ধূমপানের উপকরণ বিক্রি করা সম্পর্কে আমার জন্য লিখিত একটি ফাতাওয়া পাঠানো যদি সম্ভব হয় তবে পাঠাবেন?

উত্তর: হুক্কা ও তা পান করতে যে সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয় তা বিক্রি করা একেবারেই হারাম; কেননা তাতে রয়েছে সমূহ ক্ষতি ও বড় ধরণের ফাসাদ। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া- (১৩/৬৫)]

প্রশ্ন/ আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি (সৌদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা কমিটির সাবেক সদস্য) কে এভাবে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, মহামান্য শাইখের নিকট নিবেদন এই, ধূমপান ও হুক্কা পান করার হুকুম কি? এর দলীলসহ বিস্তারিত বর্ণনা করে বাধিত করবেন।

উত্তর : ধূমপান এবং হুক্কা পান করা হারাম।

দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [ النساء : ٢٩ ]

অর্থাৎ: “তোমরা তোমাদের নাফসকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।” [সূরা নিসা: ২৯]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]

“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা : ১৯৫]

ডাক্তারি শাস্ত্রে রয়েছে যে, এগুলো গ্রহণ করা ক্ষতিকর, আর যদি তা ক্ষতিকর হয় তবে অবশ্যই হারাম।

দলীল: আল্লাহ বলেন:

﴿ وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا ﴾ [ النساء : ٥ ]

“আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না।” [সূরা নিসা: ৫] আমাদের সম্পদকে নির্বোধদের হাতে দিতে নিষেধ করেছেন, কেননা তারা তা অপব্যয় করে বিনাস করে ফেলবে। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ধূমপান এবং হুক্কা ক্রয়ে টাকা ব্যয় করা অপব্যয় ও ধ্বংসেরই শামীল। কাজেই এ আয়াতের দলীল দ্বারাও তা নিষেধ করা হয়েছে।

হাদীসের দলীল হলো:

«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ إِضَاعَةِ المَالِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।” [বুখারী: ১৪৭৭।] আর হুক্কা ও সিগারেট পানে তা ব্যয় করা মাল নষ্ট করার শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا ضرر ولا ضرار»

“নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না”। এগুলো গ্রহণ করায় ক্ষতি আবশ্যকীয় এবং তা গ্রহণ করা মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি যখন তা পানের জন্য খোঁজে না পায় তখন তার মন এবং গোটা দুনিয়া তার উপর সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন সে অপ্রয়োজনীয় জিনিস তার শরীরে প্রবেশ করায়। [ফাতাওয়া ইসলামিয়া - ৩/৪৪৩-৪৪৪ ।]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ডক্টর আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল জিবরীনকে যে, তামাক এবং হুক্কার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? এগুলো পান করা বা গ্রহণ করার বিধান কি? কারো প্রতিবেশী এতে আশক্ত হলে তার সাথে সে কি ভাবে লেনদেন করবে?

উত্তর: এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তামাক, হুক্কা এবং শাম্মাহ (তামাক জাতীয় জিনিস নাক দিয়ে যার ঘ্রাণ নেয়া হয়) ইত্যাদি সবই হারাম, কেননা এসব কিছুই অপবিত্র।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

“এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আরাফ: ১৫৭] তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ইহা এমন কিছু জটিল রোগ সৃষ্টি করে যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় বা এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে থাকে। অথচ আল্লাহ বলেছেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [ النساء : ٢٩ ]

“তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না” [সূরা নিসা: ২৯]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]

এবং এতে বিনা উপকারে মূল্যবান সম্পদ নষ্ট ও অপব্যয় করা হয়, আর অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই। [ইহা সূরা ইসরার ২৬ও ২৭ নং আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে]

এতে যারা আক্রান্ত তাদেরকে বলব: কালবিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি এগুলো থেকে ফিরে এসে আল্লাহর নিকট তাওবা করুন এবং ভবিষ্যতে কখনো তা গ্রহণ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁর নিকট প্রার্থনা করুন এবং তা থেকে মুক্ত ও এর ব্যথা থেকে নিরাময় হওয়া পর্যন্ত কিছু দিন ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আরোগ্য দানকারী। [ফাতাওয়া ইসলামিয়া: (৩/৪৪৬)]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: সিগারেট ও হুক্কার হুকুম কি? তা হারাম না মাকরুহ? যদি হারাম হয় তবে কুরআন ও হাদীস থেকে এর দলীল কি? অতঃপর হজ্জ এবং উমরায় মুহরিম অবস্থায় সিগারেট ও হুক্কা পান করার হুকুম কি?

উত্তর: সিগারেট ও হুক্কা পান করা হারাম, কারণ এতে ক্ষতি রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا ضرر ولا ضرار»

নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না) এবং তা অপবিত্র।

আল্লাহ বলেন:

﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ]

“এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আরাফ: ১৫৭।] এবং এতে টাকা ব্যয় করা অপব্যয়ের শামিল, অথচ আল্লাহ এ থেকে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ﴾ [ الانعام : ١٤١، الأعراف : 31]

“তোমরা অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা আন‘আম: ১৪১, আরাফ: ৩১]

শয়তান যখন মানুষকে নিয়ে খেলা করে তখন সে এগুলো পান করে থাকে ফলে সে অন্যায় করে, কাজেই তার উপর ওয়াজিব হলো তাওবা করা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, হয়তো আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে ক্ষমা করতে পারেন। হজ্জ বা উমরাহ অবস্থায় যদি কেউ তা পান করে তবে তার হজ্জ এবং উমরাহ বাতিল হবে না।

হে আল্লাহ! আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম পেশ করুন। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া - ২২/২০৪-২০৫।]

প্রশ্ন/ আমরা জীযান শহরের অদূরে একটি গ্রামের বাসিন্দা, আমাদের এলাকায় শাম্মাহ পাওয়া যায় এবং এতে বহু লোক আসক্ত, কেউ কেউ তা পান করে নামাযও পড়াচ্ছেন, দ্বীনদার লোক তাতে সন্তুষ্ট নন, কিন্তু এ শাম্মাহ কেউ ছাড়তে পারছে না অথচ চেষ্টা চলছে তা ছাড়ানোর জন্য, শত চেষ্টা সত্যেও সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ ছেড়ে দিলেও বাকী লোক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন: মুখ ও পেট ফুলে যাওয়া, দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরা, অত্যাধিক রাগান্বিত হওয়া, কাজে অপরগতা এবং মনে অশান্তি ভাব ইত্যাদি। কাউকে কাউকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন, আবার কেউ কেউ এতে আবার ফিরে এসেছে, তবে অধিকাংশ লোক তা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে বলবেন কি? যারা চেষ্টা করেও তা ত্যাগ করতে পারছে না তাদের দ্বীন পালনে কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি? তার নামায, রোজা এবং হজ্জ হবে কি? যারা তা ত্যাগ করতে পারছে না তাদের কাফফারার পরিমাণ কি? কারণ বহু লোক তা পরিত্যাগ করতে পারছে না এবং এর কাফফারা কি?

উত্তর: শাম্মাহ গ্রহণ করা হারাম, তা গ্রহণকারীকে অবশ্যই তা ত্যাগ করতে হবে এবং তা ত্যাগ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর যিকির করা এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তার নামায, রোজা এবং হজ্জ যদি সঠিক নিয়মে করে থাকে তবে সহীহ হবে, শাম্মাহ গ্রহণে এর কোনো ক্ষতি হবে না।

আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষন করুন। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া- ২২/১৪০-১৪১।]

প্রশ্ন/ শাম্মাহ গ্রহণ করার হুকুম কি? বিশেষ করে রমাযানে দিনের বেলায় তা পান করার হুকুম কি? তা রোজা ভঙ্গকারী বিষয় কি? উল্লেখ্য যে, কাহতান উপত্যকার লোকজন রমাযানে দিনের বেলায় তা পান করে থাকে এবং তারা বলে যে, তাতে রোজা নষ্ট হবে না।

উত্তর: শাম্মাহ একটি অপবিত্র জিনিস, কারণ তা অপবিত্র হারাম জিনিস দ্বারা তৈরী করা হয়। তাই রোজাদার দিনের বেলায় তা গ্রহণ করলে গুনাহগার হওয়ার সাথে সাথে তার রোজাও নষ্ট হয়ে যাবে, যেমন রোজা ভঙ্গকারী যে কোনো জিনিস ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে থাকে। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া - ২২/১৪১-১৪২।]

প্রশ্ন/ ধূমপান নাক দিয়ে টানা হারাম না হালাল?

উত্তর: ধূমপান নাক দিয়ে টানা, তা পান করা ও তা চিবানো জায়েয নেই, কারণ পান কিংবা চিবানো কিংবা নাক যেভাবেই গ্রহণ করা হোক তাতে ক্ষতি রয়েছে। আর যে জিনিসে ক্ষতির পরিমাণ বেশী হয় অথবা উপকার ও অপকার উভয়ই সমান হয় তাও হারাম।

আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। [স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া - ২২/ ১৯৯।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন