hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ফাতওয়া

লেখকঃ শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন, শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন এবং স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের ফতোয়া

শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
আল-হামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য আর সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর....

আমি ২৪/০৭/১৪০৪ হি. তারিখে প্রকাশিত রাজনৈতিক সংবাদপত্রের ৫৬৪৪ সংখ্যায় সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের সাথে সম্পর্কিত একটি লেখার ব্যাপারে অবগত হয়েছি, যাতে তিনি বর্ণনা করেছেন, ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে আলাদা করার দাবি উত্থাপন করাটা শরী‘আত বিরোধী, আর তিনি নারী-পুরুষ একসাথ হয়ে সহশিক্ষার বৈধতার ব্যাপারে দলীল পেশ করে বলেন যে, মুসলিমগণ পুরুষ ও নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একই মসজিদে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি বলেন: (আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক)। আর একটি ইসলামী দেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশকে আমার কাছে উদ্ভট মনে হয়েছে, যার কাছ থেকে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তার জাতি এমন দিকনির্দেশনা আশা করে, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সৌভাগ্য ও মুক্তির ব্যবস্থা থাকবে; সুতরাং «إنَّا للّهِ وإِنا إليه راجعون ولا حول ولا قوة إلا بالله» “আমরা তো আল্লাহরই, আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী, আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কেনো ক্ষমতা আমাদের নেই”।

আর কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কথার মধ্যে ইসলামী শরী‘আতের ওপর বড় ধরনের অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। কারণ, ইসলামী শরী‘আত আদৌ নারী ও পুরুষে সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে নি; বরং শরী‘আত এটাকে নিষেধ করে এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [ الاحزاب : ٣٣ ]

“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [ الاحزاب : ٥٩ ]

“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ﴾ [ النور : ٣١ ]

“আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা ও তাদের মালিকানাধীন দাসী ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [ الاحزاب : ٥٣ ]

“তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]

আর এসব আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে নারীদেরকে সার্বক্ষণিক তাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করার বিধানের ব্যাপারে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো তাদের নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন, আর জাহেলী যুগের প্রদর্শনী মানে পুরুষদের মাঝে তাদের সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ প্রকাশ করে বেড়ানো। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন:

« مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِى النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»

“আমি আমার পর জনগণের মাঝে পুরুষদের জন্য মেয়েদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কোনো ফিতনা ছেড়ে যাচ্ছি না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৪৮০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭১২২]

হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম রহ. তাঁর ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে হাদীসটি উসামা ইবন যায়েদ ও সা‘ঈদ ইবন যায়েদ ইবন ‘আমর ইবন নুফাইল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। আর সহীহ মুসলিমে আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:

«إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ، وإنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء؛ فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ»

“নিশ্চয় দুনিয়া মিষ্ট ও আকর্ষণীয়, আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নিতে পারেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই দুনিয়া থেকে বাঁচো এবং নারীদের (ফিতনা) থেকেও বাঁচো। কারণ, বনী ইসরাঈলদের প্রথম ফিতনা নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭১২৪]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই বলেছেন। কারণ, তাদের কারণেই বড় ধরনের ফিতনা হয়ে থাকে বিশেষ করে এ যুগে, যখন অধিকাংশ নারী পর্দা খুলে ফেলেছে এবং জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে, আর এর কারণে অশ্লীলতা ও খারাপি বহুগুণে বেড়ে গেছে, আর বহু দেশে অনেক যুবক ও যুবতী আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দেওয়া বিবাহ থেকে বিরত থাকছে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, ‘পর্দা ব্যবস্থাপনা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র।’ সুতরাং এটা নির্দেশনা প্রদান করে যে, পর্দার বিধান ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা তাদের সকলের হৃদয় কলুষিত হওয়ার এবং সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাব্যতর একটি উপায়, আর সর্বজনবিদিত যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের সাথে ছাত্রীর বসাটা ফিতনার অন্যতম বড় ধরনের একটি কারণ এবং সাথে সাথে পর্দাকে বর্জন করারও একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যে পর্দাকে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীগণের জন্য শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরের পূর্বে উল্লিখিত আয়াতে যাদের বর্ণনা দিয়েছেন তারা ভিন্ন অন্যান্য পরপুরুষের জন্য তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে তাদেরকে নিষেধ করেছেন, আর যে ব্যক্তি বলে যে, পর্দার নির্দেশটি ‘উম্মুহাতুল মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণের জন্য খাস বা নির্দিষ্ট, সে ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেল এবং এমন বহু দলীল-প্রমাণের বিপরীতে অবস্থান নিল, যেসব দলীল ব্যাপকভাবে সকল যুগের সকল নারীকে (পর্দার বাধ্যতামূলক বিধানের) অন্তর্ভুক্ত করে; এমনকি সে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর পরিপন্থী কথা বলল, যাতে তিনি বলেছেন:

﴿ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾ [ الاحزاب : ٥٣ ]

“এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮]

সুতরাং এ কথা বলা বৈধ হবে না যে, “পর্দা মুমিনজননীগণ ও পুরুষ সাহাবীগণের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র, তাদের পরবর্তীদের জন্য নয়।” বরং কোনো সন্দেহ নেই যে, ‘উম্মুহাতুল মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণ ও পুরুষ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের চেয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লোকজনের জন্য পর্দা মেনে চলার প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ, ঈমানের শক্তি ও সত্য উপলব্ধির ক্ষমতার ব্যাপারে তাদেরকে সেরা প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় উম্মুহাতুল মুমিনীনসহ সকল পুরুষ ও মহিলা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুম হলেন নবীগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রজন্ম, যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পর্দা যখন তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র, তখন তাদের পরবর্তীগণের জন্য এ পবিত্রতার প্রয়োজন আরও অনেক বেশি এবং তারা তাদের পূর্ববর্তীগণের চেয়ে পবিত্রতার অনেক বেশি অভাব বোধ করে। তাছাড়া কুরআন ও সুন্নাহ’র মধ্যে বর্ণিত বক্তব্যগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত কোনো বিধানকে, নির্দিষ্টকরণের বিষয়টিকে প্রমাণ করে এমন কোনে সহীহ দলীল ব্যতীত, উম্মাতের কোনো একজনের জন্য নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। সুতরাং এ বক্তব্যগুলো ব্যাপকভাবে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের উম্মতের জন্য প্রযোজ্য, ঠিক তেমনিভাবে তাঁর পরবর্তীতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল উম্মতের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর যুগের ও তাঁর পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের ও কালের মানুষ ও জিন্ন জাতির নিকট প্রেরণ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [ الاعراف : ١٥٨ ]

“বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا﴾ [ سبا : ٢٨ ]

“আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]

অনুরূপভাবে আল-কুরআনুল কারীমও শুধু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মানুষের জন্য নাযিল হয় নি, বরং তা তাদের জন্য ও তাদের পরবর্তী এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই নাযিল হয়েছে, যার নিকট (কিয়ামত পর্যন্ত) আল্লাহর কিতাব পৌঁছবে, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿هَٰذَا بَلَٰغٞ لِّلنَّاسِ وَلِيُنذَرُواْ بِهِۦ وَلِيَعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا هُوَ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ وَلِيَذَّكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٥٢﴾ [ ابراهيم : ٥٢ ]

“এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَۚ ﴾ [ الانعام : ١٩ ]

“আর এ কুরআন আমার নিকট অহী করা হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৯]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীগণ পুরুষদের সাথে সহাবাস্থান করতেন না, মসজিদেও না, আর বাজারেও না, যেমন সহাবস্থান করার প্রশ্নে সংশোধনকারীগণ নিষেধ করেন এবং আল-কুরআন, সুন্নাহ ও জাতির আলেম সমাজ যার ফিতনা থেকে সতর্ক ও সাবধান করেন; বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে নারীরা পুরুষদের পেছনে পুরুষদের শেষ কাতারের পরের কাতারে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি নারীদের প্রথম সারি বা কাতারের সাথে পুরুষদের শেষ কাতারের ফিতনার আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য বলতেন:

«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا . وَخَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا»

“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার, আর পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের শেষ কাতার।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ১০০০। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদেরকে (মসজিদ থেকে) প্রস্থানের সময় বিলম্ব করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হত, যাতে নারীগণ প্রস্থান করতে পারে এবং মসজিদ থেকে তারা এমনভাবে বের হতে পারে যাতে মসজিদের দরজায় তাদের সাথে পুরুষগণ মিশতে না পারে, অথচ তাঁরা পরুষ ও নারী নির্বিশেষে সকলে ঈমান ও তাকওয়ার যে মানে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, সে হিসেবে তাদের পরবর্তীগণের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত? আর পুরুষদের সাথে ঘষাঘষি এবং রাস্তায় পথ চলার সময় পাস্পরের মাঝে সংস্পর্শের দ্বারা ফিতনার আশঙ্কা থেকে সাবধান ও সতর্ক করার জন্য নারীদেরকে রাস্তাজুড়ে চলতে নিষেধ করা হতো এবং রাস্তার প্রান্তসীমায় চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতো, আর ফিতনার আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়; যাতে তার দ্বারা তারা তাদের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে পারে এবং তিনি তাদেরকে ঐসব ব্যক্তি ব্যতীত অন্যসব পরপুরুষের উদ্দেশ্য তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, যাদের নাম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান গ্রন্থ আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যাতে ফিতনার কারণগুলোকে নির্মূল করা যায়, আর উৎসাহিত করা যায় পবিত্রতা ও সততার উপায় অবলম্বন করার ব্যাপারে এবং আরও উৎসাহিত করা যায় ফ্যাসাদ ও নারী-পুরুষের সহাবস্থানের বাহ্যিক দৃশ্য থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে। সুতরাং কীভাবে সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের (আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন এবং এসব কিছুর পরেও তাকে তাঁর সঠিক পথের দিশা দিন) জন্য নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করা বৈধ হবে এবং কীভাবে বৈধ হবে এ দাবি করা যে, ইসলাম নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মসজিদের মতো, আর লেখাপড়ার সময়গুলো সালাতের সময়ের মত?! আর ঐ ব্যক্তির নিকট এটা জানা কথা যে, (পুরুষের পেছনে নারীদের সালাত আদায়ের বিষয়টির সাথে তাদের একই সাথে শিক্ষার বিষয়টির তুলনা করার মধ্যে) পার্থক্য অনেক বড় এবং ব্যবধান ও দূরত্ব অনেক বেশি, যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে সঠিকভাবে উপলব্ধি করে এবং আল্লাহ তা‘আলার হিকমত সম্পর্কে জানে। আর কীভাবে একজন মুমিনের জন্য এ কথা বলা বৈধ হবে যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের বরাবর ছাত্রীর বসাটা পুরষের পেছনে তার বোনদের সারিতে তাদের সাথে বসার মতই; এ কথা এমন কোনো ব্যক্তি বলতে পারে না, যার সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে এবং যা বলে তা বুঝার মতো যার ন্যূনতম বুদ্ধি বা উপলব্ধি আছে। আর আমরা যদি শরী‘আতসম্মত পর্দার অস্তিত্ব বা বাস্তবতাকে স্বীকার করি, তাহলে কেমন লাগে, যখন লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের সাথে একজন প্রদর্শনকারিনী ছাত্রী বসে পড়ে? ‘লা-হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ ( لا حول ولا قوة إلا بالله )। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦﴾ [ الحج : ٤٦ ]

“বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪৬]

আর তার (সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের) কথা: (আর বাস্তবতা হলো মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে একই মসজিদে পুরুষ ও নারী সালাত আদায় করে আসছে, আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক) এর জবাব হলো: এ কথা বলাটা সহীহ; কিন্তু নারীগণ মসজিদের পেছনের অংশে পর্দাসহকারে ফিতনার যাবতীয় কারণ থেকে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে অবস্থান করতেন এবং পুরুষগণ অবস্থান করতেন মসজিদের সামনের অংশে; অতঃপর তারা (নারীরা) উপদেশ ও খুতবা শুনতেন, সালাতে অংশগ্রহণ করতেন এবং তারা যা শুনতেন ও দেখতেন, তা থেকে তারা তাদের দীনের বিধিবিধানসমূহ শিখে নিতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পুরুষদেরকে ওয়াজ নসীহত করার পর নারীদের নিকট যেতেন, অতঃপর তাঁর খুতবা শোনা থেকে তাদের দূরে থাকার কারণে তিনি তাদেরকে (পৃথকভাবে) ওয়াজ নসীহত করতেন ও উপদেশ দিতেন। আর এসব কিছুর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই এবং কোনো অসুবিধাও নেই; বরং শুধু সমস্যা হলো সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের (আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন, তার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে দিন এবং তাকে তাঁর দীনের সঠিক বুঝ দান করুন) এ উক্তির মধ্যে, যাতে তিনি বলেছেন: “(আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক)।” তার জন্য কীভাবে বৈধ হবে আমাদের বর্তমান যুগে একই মসজিদে পুরুষদের পেছনে নারীগণের সালাত আদায় করার সাথে শিক্ষার বিষয়টিকে তুলনা করা, অথচ আজকের দিনে বিদ্যমান প্রচলিত শিক্ষার মধ্যে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদের পেছনে নারীগণের সালাত আদায় করার ঘটনার মধ্যে অনেক পার্থক্য ও ব্যবধান রয়েছে, আর এ জন্যেই সংস্কারপন্থীগণ শিক্ষাব্যবস্থায় পুরুষদের থেকে নারীদেরকে আলাদা করার দিকে আহ্বান করেন, যাতে তারা (নারীরা) আলাদা থাকবে এবং যুবকরাও আলাদা থাকবে, এমনকি নারীগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার পর্দা ও অসুবিধা ছাড়া একেবারে আরামে ও অনায়াসে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে। কারণ, সালাতের সময়কালের বিপরীতে শিক্ষার সময়কাল হলো অনেক লম্বা। কেননা একটি বিশেষ স্থানে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান অর্জন করা তাদের (নারীদের) সকলের জন্য নিরাপদ, যাবতীয় ফিতনা থেকে অনেক দূরে নিশ্চিন্ত অবস্থান এবং তাদের দ্বারা ফিতনার শিকার হওয়া থেকে যুবকদের জন্যেও সবচেয়ে নিরাপদ; তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থায় যুবকদেরকে যুবতীদের থেকে আলাদা করে দেওয়াটা তাদের জন্য নিরাপদ হওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ার প্রতি তাদের মনোযোগ, নিবিড় মনোনিবেশ করা এবং শিক্ষকগণের নিকট থেকে ভালোভাবে শ্রবণ করা ও তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করার সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে, আর সাথে সাথে তারা দূরে থাকবে যুবতীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ও তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা থেকে এবং দূরে থাকবে তাদের পরস্পরের প্রতি বিষাক্ত নজর বা কুদৃষ্টি দেওয়া থেকে ও পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এমন কথাবার্তা বলা থেকে।

আর তার (আল্লাহ তাকে সংশোধন করে দিন) চিন্তাধারা ও দাবি “ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে আলাদা করার দিকে আহ্বান করাটা গোঁড়ামি ও শরী‘আত বিরোধী” এটা একটা অযৌক্তিক দাবি; বরং এ ধরনের আহ্বান করাটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই উপদেশ, তাঁর বান্দাগণের কল্যাণ কামনা করা, তাঁর দীনের সংরক্ষণ করা এবং পূর্বে উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমষ্টি ও হাদীস শরীফদ্বয়ের প্রতি আমল করা। আর সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের প্রতি আমার উপদেশ হলো তিনি যেন আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করেন এবং তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করেন, আর ফিরে আসেন সঠিক ও সত্যের দিকে। কারণ, এ দিকে ফিরে আসাটাই হলো প্রকৃতপক্ষে মর্যাদার বিষয় এবং জ্ঞান অনুসন্ধানকারী যে সত্য ও ন্যায়ের চিন্তা করে তার একটা চমকপ্রদ দলীল। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবিনয় নিবেদন হলো তিনি যেন আমাদের সকলকে সঠিক সরল পথ প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে তাঁর ব্যাপারে না জেনে কথা বলা থেকে রক্ষা করেন, আরও রক্ষা করেন ফিতনার ভ্রষ্টতা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে, অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি, তিনি যেন মুসলিম সমাজের আলেমগণ ও প্রতিটি স্থানের নেতৃবৃন্দকে দেশ ও জাতির ইহকাল ও পরকালের মঙ্গল হয় এমন চিন্তা-চেতনা ও সিদ্ধান্ত দেওয়ার তাওফীক দান করেন এবং সকলকে তাঁর সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন, তিনি হলেন দানশীল, মহানুভব।

صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه و التابعين لهم بإحسان إلى يوم الدين

(আল্লাহ সালাত পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবী এবং কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের যথাযথ অনুসরণকারীগণের উপর)।

শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায

শিক্ষা-গবেষণা, ফতোয়া ও দা‘ওয়া ব্যবস্থাপনার মহাপরিচালক।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন