hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মহা নাবীর সর্ব শেষ ওসিয়ত আস-সালাত, আস-সালাত

লেখকঃ নূর মুহাম্মদ বদীউর রহমান

১৫
সালাত মুসলির মর্যাদা বৃদ্ধি করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا ﴿৭৯﴾ { الإسراء :৭৯}

এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে। এটি তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। [সূরা ইসরা: ৭৯]

দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে সালাতুল লাইলের পুরস্কার স্বরূপ মাকামে মাহমূদ দান করেছেন। এবং তিনি এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ মর্যাদাকর স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

সাহাবী মু‘আয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন :

حدثني بعمل يدخلني الجنة , قال : بخ بخ سألت عن أمر عظيم وهو يسير لمن يسره الله به تقيم الصلاة المكتوبة , وتؤتي الزكاة المفروضة ولا تشرك بالله شيئا .

আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আল্লাহর নবী বললেন: বাহ্! বাহ্ ! তুমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। এবং সেটি খুবই সহজ, যার জন্য আল্লাহ সহজ করেন। তুমি ফরজ সালাত গুলো কায়েম করবে। ফরজ জাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক করবে না তথা কোন বস্ত্তকে তাঁর সমপর্যায়ের জ্ঞান করবে না। [বোখারি]

সাহাবী রাবি‘আ বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

كنت أبيت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فأتيته بوضوئه و حاجته فقال لي : سلني , فقلت : أسئلك مرافقتك في الجنة قال : أ غير ذلك؟ قلت : هو ذاك . قال : فأعني على نفسك بكثرة السجود . رواه مسلم .

আমি এক রজনী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যাপন করেছি। আমি তাঁর ওজুর পানি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে বললেন: আমার কাছে কিছু চাও? আমি বললাম: আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য ও সান্নিধ্য প্রার্থনা করছি। নবীজি বললেন: এ ছাড়া অন্য কিছু? বললাম: এটিই। তখন তিনি বললেন : তাহলে তুমি তোমার (এ মনষ্কামনা পুরণের) ব্যাপারে অধিক সেজদার মাধ্যমে আমাকে সহযোগিতা কর। [সহীহ মুসলিম]

আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

في الجنة غرفة يرى ظاهرها من باطنها و باطنها من ظاهرها , فقال أبو مالك الأشعري : لمن هي يا رسول الله ؟ قال : لمن أطاب الكلام , وأطعم الطعام , وبات قائما و الناس نيام . صحيح

জান্নাতে একটি (বিশেষ) ঘর আছে। যার ভেতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভেতর দেখা যাবে। আবু মালেক আল-আশআরী বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! কাদের জন্য সে ঘরটি ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যারা ভাল ভাল কথা বলে, অপরকে খাবার দান করে এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় সালাতে রাত্রি অতিবাহিত করে। [সহীহ]

সাহাবী উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :

ما من أحد يتوضأ فيحسن الوضوء ويصلي ركعتين بقلبه ووجهه عليهما إلا وجبت له الجنة . مسلم

‘‘যে কেউ খুব ভালভাবে ওজু করে একান্ত একাগ্রতার সাথে দু-রাকআত সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে’’। [সহীহ মুসলিম]

সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন :

أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لبلال عند صلاة الفجر : يا بلال : حدثني بأرجى عمل عملته في الإسلام؟ فإني سمعت دف نعليك بين يدي في الجنة قال ما عملت عملا أرجى عندي , إلا أني لم أتطهر طهورا في ساعة من ليل أو نهار , إلا صليت بذلك الطهور ما كتب لي أن أصلي . رواه البخاري .

নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফজরের সালাতের সময় জিজ্ঞেস করলেন : বেলাল তুমি তোমার সব চেয়ে কাঙ্ক্ষিত আমলটি সম্পর্কে আমাকে বলতো যা তুমি সম্পাদন কর? কারণ, জান্নাতে আমি আমার সম্মুখে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। উত্তরে বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন : (বলার মত) তেমন আমল তো কিছু করিনি যা আমার নিকট কাঙ্ক্ষিত তবে, দিন বা রাতে যখনই আমি পবিত্রতা অর্জন করি তখনই সে ওজু দিয়ে সাধ্য মত সালাত আদায় করি। [সহীহ বোখারী]

সালাত রিযক আনয়নকারী :

একদিকে সালাতে নিয়োজিত হলে সাময়িক ভাবে হলেও পার্থিব কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকতে হয়, কিছু সময় এ কাজে ব্যয় হয়, এবং অল্প সময়ের জন্য হলেও পার্থিব কাজ ব্যহত হয়। অন্য দিকে কিছু লোক আছে যারা পৃথিবীর ভোগ সামগ্রী ও ধন-সম্পদ উপার্জন উপলক্ষে দুনিয়ার সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে যায় যে অন্য কোন কাজের ফুরসত পায় না, এমনকি সালাত কায়েম করার সময়টুকু পর্যন্ত সেসব কাজে ব্যস্ত থাকে । এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন : ফরজ সালাত আদায়ের নিমিত্তে জীবনোপকরণ উপার্জন এবং যাবতীয় কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করা ফরজ। ইরশাদ হচ্ছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿৯﴾ { الجمعة :৯}

হে ঈমানদার বান্দাগণ! জুমুআর দিন সালাতের জন্য আহবান করা হলে তোমরা দ্রুত আল্লাহর জিকির পানে অগ্রসর হও। এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্য অধিকার কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝে থাক। [সূরা জুমুআ:৯]

আল্লাহর হক-সালাত আদায় সম্পন্ন হয়ে গেলে বৈধতা সম্পন্ন নির্দেশ দিয়ে বলেন: তারা যেন ব্যবসা, বাণিজ্য ও নিজ প্রয়োজন মিটানোর কাজে পৃথিবীতে বের হয়ে পড়ে।

ইরশাদ হচ্ছে :

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿১০﴾ { الجمعة :১০}

সালাত সম্পন্ন হয়ে গেলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর। সাথে সাথে আল্লাহ কে স্মরণ কর অধিক পরিমাণে। এতে তোমরা সফল হবে। [সূরা জুমাআ:১০] অন্যত্র বলেছেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ ﴿المنافقون :৯﴾

হে মুমিনগণ! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে। যারা উদাসীন হবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। [সূরা মুনাফিকুন:৯]

মুফাসসিরীনদের বড় একটি দল এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেছেন: আয়াতে জিকরুল্লাহ বলে উদ্দেশ্য করা হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে।

সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে নিজস্ব কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা সন্তানাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ ﴿النور :৩৬﴾ رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ ...

সে সকল গৃহে যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। সে সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্বরণ, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখেনা। তারা ভয় করে সেদিনকে যে দিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। [সূরা নূর : ৩৬-৩৭]

তাফসীরবিদগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে সালাত দ্বারা ফরয সালাতসমূহকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে এর একটি উপমা উপস্থাপন করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে :

كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ ﴿النور :৩৫﴾

তার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের মধ্যে স্থাপিত। [সূরা নূর:৩৫]

তারা হচ্ছেন ‘‘যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর জিকির-স্মরণ হতে বিরত রাখেনা। তারা মানুষের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় করতেন কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন করতে পারত না। [তাফসীরে বগভী : ৬/৫]

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিরত কিছু লোক আজান শুনলেন। শুনেই তারা নিজ পণ্য-সামগ্রী রেখে সালাতের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লেন। তখন তিনি বললেন, এরাই সেসব লোক যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- ‘এরা এমন লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর জিকির ও সালাত আদায় থেকে বিরত রাখেনা। [তাফসীর তাবারী; ৯/৩২৪-৩৩১]

সুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, তারা বেচা-কেনা করতেন কিন্তু ফরজ সালাতের জামাআত ত্যাগ করতেন না।

প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তা‘আলা কত সুন্দর করেইনা মিলিয়েছেন সালাতের জন্য তাদের রুজি-রোজগারের কর্ম বন্ধ করে দেয়া সম্পর্কিত আপন বাণী তথা ‘এমন লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য বিরত রাখতে পারে না’ এবং পরবর্তী বাণী তথা-

لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿النور :৩৮﴾

‘যাতে আল্লাহ তাদের কর্মের পুরস্কার সুন্দরকরে দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন’। [সূরা নূর : ৩৮- এর মধ্যে।]

উভয় বাণীর প্রথমটিতে ব্যবসা ত্যাগ কওে সালাতে মশগুল হওয়া কর্মেও প্রতিদান হচ্ছে দ্বিতীয় বাণীতে বর্ণিত কর্মের অধিক পুরস্কার প্রদান।

অতএব প্রমাণিত হল, রিযক আল্লাহর হাতে। যাকে ইচ্ছা দান করেন। যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। তিনি যাকে না দিয়ে বঞ্চিত করেন তাকে প্রদানকারী কেউ নেই। আর যাকে দিতে চান তাকে বঞ্চিতকারী কেউ নাই। এ ছাড়া সকলেরই জানা যে, বান্দা পাপের কারণেই রিযক থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর হক সম্পর্কে শিথিলতা প্রদর্শন অপেক্ষা জঘন্য পাপ আর কি হতে পারে?

উরওয়া বিন যুবায়ের যখন দুনিয়াদার লোকদের নিকট গিয়ে তাদের পার্থিব ধন-দৌলত প্রত্যক্ষ করতেন, তখন নিজ পরিজনদের নিকট ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করে তেলাওয়াত করতেন-

وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَى ﴿طه :১৩১﴾

তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনও প্রসারিত করো না সেসব বস্ত্তর প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, এর দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তোমার প্রতিপালক-প্রদত্ত রিযক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। [সূরা তা-হা : ১৩১]

অতঃপর পরবর্তী আয়াতের নির্দেশিকা পালন করনার্থে সাথে সাথে বলতেন, সালাত...সালাত...

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى ﴿طه :১৩২﴾

এবং তোমার পরিজনবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তাতে অবিচল থাক। আমি তোমার নিকট কোন রিযক চাই না। জিরিক আমিই তোমাকে দেই এবং শুভ পরিনাম তো মুত্তাকিদের জন্য। [তা-হা ১৩২]

আমরা এ আয়াতে লক্ষ্য করলাম, আল্লাহ বলছেন-

আমি তোমার নিকট রিযক চাই না বরং রিযক তো আমিই তোমাকে দেই।

কারো কারো মতে এমন সন্দেহ উদিত হতে পারে যে, সব সময় যদি সালাতেই মশগুল থাকি তাহলে জীবিকা ও আয়-রোজগারে প্রভাব পড়তে পারে। উপার্জনে সংকীর্ণতা আসতে পারে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ এদের এরূপ সন্দেহ খন্ডন করেছেন। যেমন বলা হল : আয় রোজগার বা কামাই-উপার্জনের চিন্তা-পেরেশানী বাদ দিয়েই সালাতে মশগুল হও। কেননা তোমার রিজিকের দায়িত্ব আমি তোমার উপর অর্পণ করিনি। এ ব্যাপারে আমি তোমাকে দায়িত্বশীল করিনি। কারণ রিযক তো আমিই দিয়ে থাকি। এ দায়িত্ব তো আমার।

এখানে আরবী বাক্য বিন্যাসের সাধারণ ধারার পরিবর্তে ‘মুসনাদ ইলাইহ’কে আগে বর্ণনা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্দৃষ্ট করণ বা তাকওয়ার ফায়দা বুঝানো।

কারণ আল্লাহ বলেছেন:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ . مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ . إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ ﴿الذاريات :৫৬-৫৮﴾

আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার আনুগত্য-এবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন রিযক চাইনা এবং এও কামনা করিনা যে তারা আমাকে খাওয়াবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলাই রিযকদাতা মহাশক্তির অধিকারী। [সূরা জারিয়াত : ৫৬-৫৮]

আয়াত থেকে পরিষ্কার প্রতিভাত হয় যে, সালাত সাধারণভাবে রিযক আসা ও বৃদ্ধির উপকরণ এবং দুর্দশা মুসিবত দূর হওয়া কার্যকারণ।

আব্দুল্লাহ বিন সাল্লাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবারে অভাব-অনটন ও দুঃখ-দুর্দশা দেখতে পেলে পরিবারস্থ লোকদের সালাতের কথা বলতেন। এরপর তেলাওয়াত করতেন: তুমি নিজ পরিবারকে সালাতের নির্দেশ দাও...।

ইমাম আহমাদ রহ.সহ অন্যান্যরা জুহুদ সম্পর্কে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أصابت أهله خصاصة نادى أهله بالصلاة : صلوا، صلوا، قال ثابت : وكان الأنبياء عليهم السلام إذا نزل بهم أمر فزعوا إلى الصلاة .

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবারে খাদ্যাভাব ও অনটন দেখা দিলে পরিবারস্থ লোকদের সালাতের দিকে ডাকতেন। বলতেন, তোমরা সালাত আদায় কর। তোমরা সালাত আদায় কর। সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আম্বিয়া আলাইহিমুস সাল্লামদের অবস্থাও এমনই ছিল যে, তাঁরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাযে মশগুল হয়ে যেতেন। [বোখারি, মুসলিম]

আমরা যদি সম্পদ উপার্জনের বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখি। তাহলে বুঝতে পারব, এসব দেয়াই হয়েছে আল্লাহর হক বাস্তবায়নে সহযোগিতা নেয়ার জন্য। জীব-জন্তুদের মত শুধু উপভোগ ও মজা করার জন্য নয়। কারণ বনী আদম আমৃত্যু পৃথিবী ও তার ভোগ সামগ্রীর প্রতি লোভী ও আগ্রহী থাকবে। আর তার পেট কবরের মাটিই কেবল ভর্তি করতে পারবে।

সুতরাং সম্পদ যদি মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যায় তাহলে ফরজ ও হিকমতও বিলুপ্ত হয়ে যাবে; যে দিকে লক্ষ্য করে সম্পদ অবতীর্ণ করা হয়েছে।

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لو أن ابن آدم هرب من رزقه كما يهرب من الموت، لأدركه رزقه كما يدركه الموت . ( حسن )

আদম সন্তান যদি তার (জন্য বরাদ্দকৃত) রিযক হতে ছুটে পালাতে যায় যেভাবে সে মৃত্যু হতে ছুটে পালায়। তাহলে অবশ্যই সে রিযক তাকে খুঁজে পাবে যেভাবে খুঁজে পায় তার মৃত্যু তাকে। [হাদীসটি হাসান সূত্রে বর্ণিত। বর্ণনায় ইমাম তবরানী, আওসাত গ্রন্থ। তার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাজমাউজ যাওয়ায়েদ : ৭/৬৭]

নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إن روح القدس نفث في روعي، أن نفسا لن تموت حتى تستكمل أجهلها وتستوعب رزقها، فاتقوا الله، وأجملوا في الطلب، ولايحملن أحدكم استبطاء الرزق أن يطلبه بمعصية الله، فإن الله تعالى لاينال ما عنده إلا بطاعته . ( صحيح )

রুহুল কুদুস (জিবরীল) আমার অন্তরে ফুঁকে দিয়েছেন যে, কোন প্রাণী তার (জন্য বরাদ্দকৃত) হায়াত ও রিযক পূর্ণ না করে কখনও মারা যাবে না। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুন্দর ও বৈধভাবে (জীবিকা) অন্বেষণ কর। তোমাদের কারো রিযক পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া যেন তাকে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে অন্যায় উপায়ে রিযক অন্বেষণে প্ররোচিত না করে। কারণ আল্লাহর নিকটস্থ রিযক কেবলমাত্র তার আনুগত্যের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে। [হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন :

من كانت همه الآخرة، جمع الله له شمله، وجعل غناه في قلبه، وأتته الدنيا راغمة، ومن كانت همه الدنيا، فرق الله عليه أمره، وجعل فقره بين عينيه، ولم يأته من الدنيا إلا ما كتب الله له . ( صحيح )

যে ব্যক্তির ধ্যান-জ্ঞান (চিন্তা-চেতনা) হবে পরকাল। আল্লাহ তা‘আলা তার যাবতীয় বিষয়কে একত্র করে দিবেন। অন্তরকে করে দিবেন অভাবমুক্ত এবং দুনিয়া তার নিকট অনিচ্ছা সত্ত্বেও (বাধ্য হয়ে) আসবে। আর যার ধ্যান-জ্ঞান হবে দুনিয়া আল্লাহ তার যাবতীয় বিষয়াদিকে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন এবং দারিদ্র তার চোখের সামনে উপস্থিত করে দিবেন। তদুপরি দুনিয়া ঠিক ততটুকুই আসবে আল্লাহ যতটুকু তার জন্য বরাদ্দ করেছেন। [হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত আল্লাহ আল্লাহ]

সুতরাং সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হল যে, বান্দা না চাইলেও রিযকপ্রাপ্ত হয়। এতে তার নিজস্ব কোন ভূমিকা নেই। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন গুরুত্ব নেই। কারণ আল্লাহর রিযক তার অনুমোদন ছাড়া কোন লোভীর লোভ টেনে আনতে পারে না এবং কোন অপছন্দকারীর অপছন্দ ও অনাগ্রহ রদ করতে পারে না। কারণ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ভাগ্যলিপি শুকিয়ে গিয়েছে।

সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إن الله تعالى يقول : يا ابن آدم تفرغ لعبادتي، أملأ صدرك غنى ،وأسد فقرك، وإن لا تفعل ملأت يديك شغلا ولم أسد فقرك . ( صحيح )

আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাত-আনুগত্যে একান্ত মনোযোগী হও আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত করব। তোমার দারিদ্র মোচন করব। অন্যথায় তোমাকে বিভিন্ন ব্যস্ততায় ব্যস্ত করে দিব আর দারিদ্র দূর করব না। [হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত]

একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে কিছু মানুষ আছে যারা দ্বীনদারি ও সালাতের তুলনায় দুনিয়ার খেদমতে নিমজ্জিত হয়ে যায় আকুন্ঠ। অতঃপর যখন তারা উপদেশ গ্রহণ করে না এবং স্মরণ করে না যে, রিযক একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত বিষয় আর দুনিয়া অন্বেষণ করার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সুন্দর ও নৈতিক পন্থা অবলম্বন করা। তাদের কেউ কেউ যুক্তি উপস্থাপন করে বিতর্ক জুড়ে দেয় যে, রিযক নিরাপদ ও নিশ্চিত হওয়ার অর্থ তো এই নয় যে, আসবাব উপকরণ ত্যাগ করতে হবে।

অতঃপর যখন আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। বলে, নিশ্চয় আল্লাহ উদার-দয়াবান, দানশীল। আর পরকালের মহৎ-দানশীল-দয়াবান কি পৃথিবীতেও মহৎ ও দয়াবান নন?

জনৈক বুজুর্গ বলেন: ‘তোমার জন্য যে বিষয়ে দায়িত্ব নেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে সে বিষয়ে তোমার প্ররিশ্রম ও মেহনত এবং যা তোমার থেকে চাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তোমার অলসতা ও অবহেলা তোমার বু&&দ্ধ-বিবেচনা বিলুপ্ত হওয়ার প্রমাণ বহন করে।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ... ﴿النور :২-৩﴾

যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ (সংকটে) তার বের হওয়ার রাস্তা করে দেন এবং ধারণাতীত উৎস হতে তার রিযক দান করেন। [সূরা তালাক : ৫৫]

যে ব্যক্তি সালাত আদায়কে অন্য সকল কিছুর উপর প্রাধান্য দিয়ে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর বিনিময়ে দান করবেন সেসব পার্থিব জিনিস যা তার থেকে ছুটে গিয়েছিল এবং তাকে ধারণাতীত উৎস থেকে রিযক দান করবেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ﴿الأعراف :৯৬﴾

যদি সেসব জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। [সূরা আরাফ : ৯৩]

আর বান্দা অবশ্যই রিযক থেকে বঞ্চিত হয় পাপের কারণে যে পাপে সে জড়িত হয়। সুতরাং সালাত নষ্ট করার দুর্ভোগপূর্ণ মন্দ পরিণতি হচ্ছে, রিযক কমে যাওয়া এবং বরকত মিটে যাওয়া। বড় আশ্চর্যের ব্যাপার হল, কিছু লোক আছে আপনি যদি তাদেরকে সালাতের প্রতি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেন, দেখবেন তাদের চেহারায় বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠবে। কেমন করে তারা সালাতের জন্য কাজ বন্ধ করবে, অথচ কাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত! এহেন বক্তব্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সবখানেই শোনা যায় এমন যুক্তি অথচ এটি কোরআনের কোন আয়াত বা হাদীসে নববীর কোন অংশ নয়। বরং এটি এক প্রত্যাখ্যানযোগ্য ঘৃণ্য বক্তব্য। যে কাজ আপনাকে আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব পালন হতে বিরত রাখে সেটি কি ইবাদাত হতে পারে?! হ্যা সেটি ইবাদাত তবে আল্লাহর নয়; শয়তানের। ইবাদাত (আখিরাতের নয়) দুনিয়ার।

দুনিয়ার ব্যস্ততার কারণে কারো জন্য যদি সালাত ত্যাগ করা বৈধ হত তাহলে শত্রুর মোকাবেলায় ব্যস্ত মুজাহিদরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতেন।

এদতসত্ত্বেও সালাত ত্যাগে তাদের ওজর-অজুহাত কবুল করা হয়নি বরং তাদের জন্য বিশেষ পদ্ধতি সম্পন্ন ‘‘সালাতুল খাওফের’ নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে প্রচন্ড রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকেও সালাত হতে বিরত থাকার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাকেও তার মত করে সালাত আদায় করতে বলা হয়েছে। যাতে সালাতের আবিশ্যকতা আপন জায়গায় ঠিক থাকে। আর সালাতী নিজ সুবিধা মত আদায় করতে পারে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন