HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইলমে গায়েব
লেখকঃ অধ্যাপক আবদুন নূর সালাফী (রহ.)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। নবী (সাঃ)-এর প্রতি শত সহস্র দরূদ বর্ষিত হোক।
আল্লাহ রাব্বল আলামীনের বিশেষ মেহেরবানীতে ১৯৭৪ সালের লিখিত পাণ্ডুলিপি ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হলো ‘ইলমে গায়েব' বলতে ‘ঈমান বিল গায়েব'-কে বুঝানো হয়েছে। গায়েবের প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে তওহীদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং আকাশে পাতালে একমাত্র আল্লাহই গায়েব দা। আল্লাহ ছাড়া কোন প্রাণী, নবী, অলী, গাওছ, কুতুব, জীন-ভূত ও ফেরেশতাগণ গায়েব জানে না, জানতে পারেন না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাও তাই। উক্ত মতামতের উল্টো মত পোষণকারী সীমা অতিক্রমকারী পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বিংশ শতাব্দীর বহু অজ্ঞ মুসলমান নবী মুস্তফাকে আউলিয়া আল্লাহ, গাওছ, কুতুব, ফেরেশতা, জীন ও প্রেতকেও গায়েব দা বলে স্বীকার করে। বলা বাহুল্য অনেক ভ্রান্ত বিদআতী ও মৌলবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে হাযের, নাযের, গায়েব দা, নুর নবী ও আল্লাহর 'অবতার হিসাবে আখ্যায়িত করতেও ত্রুটি করেনি। কুরআন ও সুন্নাহ অবলম্বনে তাদের জবাব প্রদান করেছি তাদের স্ব-কপোল কল্পিত মতবাদের অসারতাকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।
এ পুস্তক প্রণয়নের সময় সকল মনীষীর পুস্তক থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি, আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন এবং এ দীন লেখককেও তাদের সারিতে স্থান দান করেন। বাংলার অধিকাংশ মানুষ শরীয়ত বিরোধী আকীদা পোষণ করায় আকীদা সংশোধনকারীর লক্ষ্যে এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছি। আল্লাহ রাব্দুল আলামীন যাতে করে ভ্রান্ত মুসলিম জনগণের মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত আকীদা বিস্তার করে দেন, তজ্জন্য তাঁরই দরবারে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। বইটিতে মুদ্রণগত কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। দ্বিতীয় সংস্করণে সেগুলোকে সংশোধন করব ইনশাআল্লাহ।
সহৃদয় পাঠকের কাছ থেকে এতদসংক্রান্ত কোন প্রমাণ ভিত্তিক আলোচনা পাওয়া গেলে তা সাদরে গ্রহণ করব। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ পূর্বক ভ্রান্ত মুসলিম জনগণের মধ্যে সঠিক আকীদা বিস্তার করে দাও এবং সকলকে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত আকীদা পোষণ করার তওফীক দাও। আমীন! সুম্মা আমীন!!
মুহাম্মদ আবদুন নূর সালাফী
সহকারী অধ্যাপক, আরবী বিভাগ
কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রংপুর
আল্লাহ রাব্বল আলামীনের বিশেষ মেহেরবানীতে ১৯৭৪ সালের লিখিত পাণ্ডুলিপি ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হলো ‘ইলমে গায়েব' বলতে ‘ঈমান বিল গায়েব'-কে বুঝানো হয়েছে। গায়েবের প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে তওহীদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং আকাশে পাতালে একমাত্র আল্লাহই গায়েব দা। আল্লাহ ছাড়া কোন প্রাণী, নবী, অলী, গাওছ, কুতুব, জীন-ভূত ও ফেরেশতাগণ গায়েব জানে না, জানতে পারেন না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাও তাই। উক্ত মতামতের উল্টো মত পোষণকারী সীমা অতিক্রমকারী পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বিংশ শতাব্দীর বহু অজ্ঞ মুসলমান নবী মুস্তফাকে আউলিয়া আল্লাহ, গাওছ, কুতুব, ফেরেশতা, জীন ও প্রেতকেও গায়েব দা বলে স্বীকার করে। বলা বাহুল্য অনেক ভ্রান্ত বিদআতী ও মৌলবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে হাযের, নাযের, গায়েব দা, নুর নবী ও আল্লাহর 'অবতার হিসাবে আখ্যায়িত করতেও ত্রুটি করেনি। কুরআন ও সুন্নাহ অবলম্বনে তাদের জবাব প্রদান করেছি তাদের স্ব-কপোল কল্পিত মতবাদের অসারতাকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।
এ পুস্তক প্রণয়নের সময় সকল মনীষীর পুস্তক থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি, আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন এবং এ দীন লেখককেও তাদের সারিতে স্থান দান করেন। বাংলার অধিকাংশ মানুষ শরীয়ত বিরোধী আকীদা পোষণ করায় আকীদা সংশোধনকারীর লক্ষ্যে এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছি। আল্লাহ রাব্দুল আলামীন যাতে করে ভ্রান্ত মুসলিম জনগণের মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত আকীদা বিস্তার করে দেন, তজ্জন্য তাঁরই দরবারে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। বইটিতে মুদ্রণগত কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। দ্বিতীয় সংস্করণে সেগুলোকে সংশোধন করব ইনশাআল্লাহ।
সহৃদয় পাঠকের কাছ থেকে এতদসংক্রান্ত কোন প্রমাণ ভিত্তিক আলোচনা পাওয়া গেলে তা সাদরে গ্রহণ করব। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ পূর্বক ভ্রান্ত মুসলিম জনগণের মধ্যে সঠিক আকীদা বিস্তার করে দাও এবং সকলকে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত আকীদা পোষণ করার তওফীক দাও। আমীন! সুম্মা আমীন!!
মুহাম্মদ আবদুন নূর সালাফী
সহকারী অধ্যাপক, আরবী বিভাগ
কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রংপুর
আলহামদুলিল্লাহির রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম। অত্র বইয়ের লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুন সালাফী সাহেবের ইন্তেকালের পর বহুদিন যাবৎ তার লিখিত মূল্যবান গ্রন্থগুলো আর প্রকাশিত না হওয়ায় লোক সমাজ যেমন একজন সুলেখকের রেখে যাওয়া কর্মের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। ঠিক তেমনি লেখকও তার রেখে যাওয়া সাদাকাতুল জারিয়ার সওয়াব হতে মাহরূম হচ্ছিলেন।
অতঃপর তার ছেলের অনুমতি নিয়ে তাঁর রেখে যাওয়া বইগুলো একে একে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করি। আলহামদুলিল্লাহ! অতঃপর মহান রাব্বল আলামীন সেই তাওফীক দিলেন এবং অত্র বইখানা দিয়ে লেখকের বইগুলো প্রকাশের দ্বার উন্মুক্ত হলো। আল্লাহ রাব্দুল আলামীন লেখকের রেখে যাওয়া এই সাদাকাতুল জারিয়া কবুল করুন এবং আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন। পরিশেষে প্রতিটি পাঠকের নিকট বিনীত আরজ রইল তার জন্য দু'আ করার।
তাংঃ ২০-০২-২০১২
বিনীত
তাওহীদ পাবলিকেশন্সের পক্ষে
মোঃ ওয়ালীউল্লাহ
অতঃপর তার ছেলের অনুমতি নিয়ে তাঁর রেখে যাওয়া বইগুলো একে একে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করি। আলহামদুলিল্লাহ! অতঃপর মহান রাব্বল আলামীন সেই তাওফীক দিলেন এবং অত্র বইখানা দিয়ে লেখকের বইগুলো প্রকাশের দ্বার উন্মুক্ত হলো। আল্লাহ রাব্দুল আলামীন লেখকের রেখে যাওয়া এই সাদাকাতুল জারিয়া কবুল করুন এবং আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন। পরিশেষে প্রতিটি পাঠকের নিকট বিনীত আরজ রইল তার জন্য দু'আ করার।
তাংঃ ২০-০২-২০১২
বিনীত
তাওহীদ পাবলিকেশন্সের পক্ষে
মোঃ ওয়ালীউল্লাহ
ইলমে গায়েবকে কেন্দ্র করে নানা প্রকার শির্কের এবং নানা প্রকার ভ্রান্ত ধারণার বুৎপত্তি হয়েছে। সমস্ত প্রাণী ও বস্তুর অবস্থা সম্যকভাবে জানেন যে সত্তা, তার নাম আল্লাহ। বস্তুত আল্লাহ ব্যতীত গায়েব জানার কেউই নেই৷ ‘ইলমে গায়েব তওহীদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর প্রতি ঈমান নিয়ে আসা ও বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেকটি মানুষের প্রতি অপরিহার্য।
এজন্যেই নির্ভেজাল ও খাঁটি তাওহীদবাদী মুসলমানদের বিশ্বাস যে, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ ছাড়া কেউই অদৃশ্য জানার নেই। আমি, আপনি ও পৃথিবীর সমুদয় প্রাণী ও বস্তুর অবস্থা তিনি সম্যকভাবে অবগত। তিনি অধঃলোক ও উর্ধ্বলোকে অবস্থিত সকল প্রাণী, জীব ও বস্তুর বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতকে একই সাথে জানেন। তিনি আকাশে, বাতাসে, খেচরে, ভুচরে, জলে ও স্থলে অবস্থিত প্রাণীকূলের মনের ভেদ ও অন্তরের পরিকল্পনা সদা জ্ঞাত। মোট কথা, ‘ইলমে গায়েব বলতে যা বুঝায় তাতে আল্লাহর কোনই শরীক নেই। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ বল, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের কেউই গায়েবের সম্পর্কে অবগত হতে পারে না।” (সূরা আন-নামল ৬৫) এ আয়াতের আলোকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহই গায়েব জানেন। তিনি ব্যতীত কোন নবী, অলী, পীর, বুযুর্গ, জীন-পরী ও ফেরেশতা গায়েবের তত্ত্বজ্ঞান রাখেন না এবং সৃষ্টজীবের কেউই গায়েব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল নন। মূলতঃ একমাত্র আল্লাহই গায়েব সম্পর্কে অবগত।
আল্লাহ বলেনঃ
“উপস্থিত অনুপস্থিত সকলের জান্তা তিনি।”
অর্থাৎ দ্যুলোকে, ভূলোকে যা কিছু প্রকাশ্যে বিরাজ করছে এবং যেসব বস্তু ও প্রাণী গোপনে বিরাজ করছে তাদের সকলের অবস্থা একই সাথে জানেন যে সত্ত্বা, সে সত্ত্বার নামই হচ্ছে আল্লাহ।
কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতে গায়েব সম্বন্ধে বলা হয়েছে। সে আয়াতগুলোর কিছু উদ্ধৃত করে পাঠকবৃন্দকে উপহার দেব যাতে করে এ বিষয়ে সৃষ্ট ভ্রান্তি দূর হয় ও সত্য উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
(আরবী)
“অদৃশ্য জগতের কুঞ্জিগুলো (ভাণ্ডারগুলো) তাঁরই অবগত। তিনি ব্যতীত আর কেউই সে সম্বন্ধে অবগত নয়; (তার জ্ঞান এত প্রশস্ত যে,) স্থল ও জলের সব কিছুই তিনি অবগত আছেন তার অগোচরে গাছের একটি পাতাও খসে পড়ে না। ভূগর্ভস্থ অন্ধকার পুঞ্জের প্রত্যেকটি শস্যবীজ এবং প্রত্যেকটি সরল ও নীরস সমস্তই তাঁর জ্ঞানের পরিধির মধ্যে সুস্পষ্ট কিতাবে (লৌহে মাহফুজে) সন্নিবেশিত।” সূরা আল-আনআম ৫৯ )
অদৃশ্য জগতের যত ভাণ্ডার আছে, বিশাল পৃথিবী ও জলরাশির মধ্যে লুক্কায়িত যা কিছু আছে তার তত্ত্বজ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে আছে। লক্ষ কোটি তরুলতার একটি পাতাও তার অগোচরে ঝরে পড়ে না এবং ভূগর্ভস্থ অন্ধকার পুঞ্জের নিভত কোণে অবস্থিত কোন একটি শস্য কণাও তার অগোচরে বিরাজ করে না। এমনকি লক্ষ কোটি তরুলতার মধ্যে কোনটির কত সরস ও কোটির কত নীরস পাতা আছে, তার সঠিক জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহরই আছে।
সরস ও নীরস বলতে সমস্ত প্রকারের পদার্থকে বুঝাচ্ছে। এটা আরবীর বাগধারা বিশেষ। এর দ্বারা সাকুল্য প্রতিপন্ন করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা ইলমে গায়েবের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমন কতকগুলো তত্ত্বজ্ঞানের সন্ধান দিয়েছেন যেখানে কোন মানব, দানব ও ফেরেশতার নাক গলে না; সে অদৃশ্য ও গোপন ভাণ্ডারের সঠিক জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহই রাখেন। উল্লিখিত বিষয় ও বস্তুসমূহের সম্বন্ধে নবী, অলী ও ফেরেশতাদের কোন জ্ঞানই নেই। আর থাকতেও পারে না। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন যতটুকু শিক্ষা দিয়েছেন ততটুকু জ্ঞান সঞ্চয় করা সম্ভব৷ স্মরণ রাখবেন!
আল্লাহ কোন বিষয়ের সঠিক জ্ঞানের সন্ধান দান করার পরে তা আর গায়েব (অজানা) থাকে না। সূরা আল-বাকারাতে সংক্ষিপ্ত কথায় অথচ ব্যাপকভাবে আল্লাহর গায়েব জানার কথা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“তাঁদের (সৃষ্টজীব ও বস্তুর) অগ্র ও পশ্চাৎ সমস্তই তিনি বিদিত থাকেন; বস্তুত তাঁর জ্ঞানের অতি সামান্য অংশও মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টজীব আয়ত্ব করতে পারে -তবে যেটুকু তিনি ইচ্ছে করেন।” (সূরা আল-বাকারা ২৫৫)
আল্লাহ এমন মহান সত্তা যিনি সমূদয় প্রাণী, জীব ও বস্তুর আগের ও পিছনের সমস্ত অবস্থা সম্যকভাবে বিদিত আছেন এবং আল্লাহ এ ভাব পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তোলার জন্য দু'একটা উদাহরণ দিয়ে প্রাণী জীব ও বস্তুর অগ্র-পশ্চাৎ এর অর্থ বুঝানোর প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। একটা মৌমাছিকে সামনে রেখে মনোনিবেশ সহকারে দেখুনঃ ওর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কতগুলো? ওর পা কতগুলো? চক্ষু কতগুলো? ওর আত্মা ও হৃৎপিণ্ড কতটুকু? ওর সন্তান জন্মাবার প্রণালীটি কি?
এক্ষণে মা বাইনা আইদীহিম' অর্থাৎ ওর ভাবী বংশের সম্বন্ধে গবেষণা করুন ও ঐ মৌমাছিটার সন্তানাদি কতগুলো হবে এবং ওদের নাতী পৌত্র কতগুলো হবে এবং কারা হবে? অতঃপর পৃথিবী লয় পর্যন্ত ওদের সন্তানাদি কতগুলো হবে এবং কারা কারা হবে?
এবারে ‘মা খালফাহুম’ অর্থাৎ ওর অতীত নিয়ে গবেষণা করুন। ঐ মৌমাছিটার নানী ও দাদী কে ছিল? এভাবে ওদের বংশ তালিকা গিয়ে সর্বপ্রথম সৃষ্ট মৌমাছির নামে কুষ্ঠিনামা মিলে গেল? অনুরূপভাবে প্রত্যেকটি প্রাণীজীবকে সামনে রেখে গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা করুন।
দ্বিতীয় উদাহরণঃ প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনাদের সামনের এক শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করে দেখুন ও বর্তমানে সেখানে কি ফসল আছে? তাতে কতটুকু ফসল উৎপাদন হতে পারে? আগামী বছরে তাতে কি কি ফসল উৎপাদন হবে? এর পরের বছর ও তার পরের বছর তাতে কি কি ফসল জন্মিবে? এভাবে ঐ ভূখণ্ডে প্রলয় দিবস পর্যন্ত কি কি শস্য উৎপাদন হবে?
এবারে ‘মা খালফাহুম' অর্থাৎ ঐ ভূখণ্ডে বিগত বছরগুলোতে কি কি এবং কতটুকু ফসল জন্মেছিল? ভূমি সৃষ্টির পর থেকে ঐ ভূখণ্ডে কি কি এবং কি পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়েছিল?
তৃতীয় উদাহরণঃ একটি জলাশয়ের কথা চিন্তা করুনঃবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, ওতে কোটি কোটি কীট বিচরণ করছে। ঐ পানিতে বর্তমানে কি আছে? ভবিষ্যতে কি কি জিনিস বাস করবে? আবার ঐ পানিতে সৃষ্টির পর থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত কি কি প্রাণী বাস করেছিল? এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আছে। আসলে সৃষ্টজীবের বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের জ্ঞান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত (এগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না)। জানতে পারে না। আমরা উদাহরণ দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের সঠিক জ্ঞানের কথা বলছি মাত্র।
তাছাড়া এর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে অক্ষম। আলোচ্য আয়াতের “ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা-শাআ” এর ব্যাখ্যায় মাওলানা আকরাম খাঁ বলেছেনঃ “তাহার জ্ঞানের সামান্য অংশও মানুষের আয়ত্তে আসিতে পারে না। যেটুকু তাহারা পায়, তাহাও আল্লাহরই দান। ফানুস উড়ানোর খেয়াল মানুষের চিরদিন ছিল, এখনও আছে। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি রাজ্যের অনন্ত রহস্যের এক কণা মাত্র তাহারা আজও আয়ত্ত করিতে পারে নাই, কখনও পারিবে না। সুতরাং বিশ্ব বৃহস্য চিরকালই মানুষের অজ্ঞাত থাকিয়া যাইবে।” তফসিরুল কুরআন ১ম খণ্ড ৩৪৩ পৃঃ) বিশ্ব রহস্য কেন আমাদের কাছে অনুদঘাটিত থাকবে না? এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“আর প্রকৃত অবস্থা এই যে, তোমার পরওয়ারদেগারের ফৌজগুলোর বৃত্তান্ত তিনি ব্যতীত আর কেউই অবগত নয়”- (সূরা মুদ্দাসসির ৩১ আয়াতের শেষাংশ)। অর্থাৎ সৃষ্টজীব ও বস্তুকে একমাত্র আল্লাহই জানেন।
স্মরণ রাখবেন! সমুদয় বিশ্বের যাবতীয় প্রাণী জীব ও বস্তুর বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের সর্বদা সঠিক জ্ঞানকে ‘ইলমে গায়েব এবং যে সত্তা এত অসীম জ্ঞান রাখেন, তাঁকে ‘গায়েব দা বা অদৃশ্য জান্তা বলে। এরূপ জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই অবধারিত ও নির্দিষ্ট। কুরআন সুন্নহর নির্দেশ মতো কোন নবী, অলী,
ফেরেশতা, জীন ও পরী গায়েব জানে না। এক্ষণে যদি কোন ব্যক্তি, কোন নবী, অলী ও অন্য কাউকে গায়েব দা ও অদৃশ্য জান্তা বলে মনে করে, তাহলে সে ব্যক্তি মূলত অন্যকে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করল এবং কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী আকীদা পোষণ করার জন্যে তাকে কাফের বলে আখ্যায়িত করা হবে। হানাফী ফিকাহ শাস্ত্রবিদ পণ্ডিতগণের ফাতাওয়া অনুযায়ী অনুরূপ মত পোষণকারীকে কাফের বলা যাবে। একথা অন্যত্র উদ্ধৃতিসহ উল্লেখ করেছি। দ্বিরুক্তির ভয়ে শুধু সংক্ষেপে তাদের বক্তব্য পেশ করলাম। আপনারা বরযখ সাধন ও তাসাউওরে শায়েখ অধ্যায়ে পাঠ করেছেন যে, তাসাওফপন্থী বিদআতীগণ বরযখ সাধনের মাধ্যমে এবং গুরুধ্যানকারীরা গুরুধ্যানের মাধ্যমে পীর বাবাকে অধিগম্য হিসাবে গায়েব দা বা অদৃশ্য জ্ঞান বা অদৃশ্য জান্তা বলে মনে করে থাকে।
আল্লাহ বলেন : তিনি ব্যতীত কেউই গায়েব জানে না কিন্তু তথাকথিত জাহেল পীরের ততোধিক জাহেল মুরীদ নিজেদের গুরুকে অধিগম্য হিসাবে গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। এবারে বলুন? আল্লাহ সত্যবাদী? না অজ্ঞ মুরীদ সত্যবাদী? আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন, আল্লাহ সত্যবাদী। তাহলে যারা পীর বাবাকে গায়েব জান্তা বলে মনে করল, তারা পীর বাবাকে আল্লাহর সমতুল্য জ্ঞান করল। এদিক দিয়ে অনুরূপ আকীদা পোষণকারীর দল পৌত্তলিক। যারা আল্লাহর সত্তাকে অবিশ্বাস করে, তারা কাফের।
কিন্তু যারা তাসাউওরে শায়েখ বা পীরের মূর্তি আপনাদের হৃদয়পটে অঙ্কন করে তারা কাফের ও পৌত্তলিক উভয়ই। অনুরূপভাবে, অদ্বৈতবাদীরা স্রষ্টা ও সৃষ্ট জীবের মধ্যে পার্থক্য অস্বীকার করে এবং কার্য ও কারণকে এক বলে বিশ্বাস করে। এদের বিশ্বাস মতে সমস্ত সৃষ্ট জীবের মধ্যে আল্লাহ বিরাজ করছে। একটু তপ-জপ করলে প্রকাশ্য ব্যবধান দূর হয়ে যায়। তাদের মতে মূলত সকলেই আল্লাহর অবতার। এ দলের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন মনছুর হাল্লাজ। অদ্বৈতবাদীরা কাফের ও পৌত্তলিক উভয়ই।
এজন্যেই নির্ভেজাল ও খাঁটি তাওহীদবাদী মুসলমানদের বিশ্বাস যে, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ ছাড়া কেউই অদৃশ্য জানার নেই। আমি, আপনি ও পৃথিবীর সমুদয় প্রাণী ও বস্তুর অবস্থা তিনি সম্যকভাবে অবগত। তিনি অধঃলোক ও উর্ধ্বলোকে অবস্থিত সকল প্রাণী, জীব ও বস্তুর বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতকে একই সাথে জানেন। তিনি আকাশে, বাতাসে, খেচরে, ভুচরে, জলে ও স্থলে অবস্থিত প্রাণীকূলের মনের ভেদ ও অন্তরের পরিকল্পনা সদা জ্ঞাত। মোট কথা, ‘ইলমে গায়েব বলতে যা বুঝায় তাতে আল্লাহর কোনই শরীক নেই। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ বল, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের কেউই গায়েবের সম্পর্কে অবগত হতে পারে না।” (সূরা আন-নামল ৬৫) এ আয়াতের আলোকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহই গায়েব জানেন। তিনি ব্যতীত কোন নবী, অলী, পীর, বুযুর্গ, জীন-পরী ও ফেরেশতা গায়েবের তত্ত্বজ্ঞান রাখেন না এবং সৃষ্টজীবের কেউই গায়েব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল নন। মূলতঃ একমাত্র আল্লাহই গায়েব সম্পর্কে অবগত।
আল্লাহ বলেনঃ
“উপস্থিত অনুপস্থিত সকলের জান্তা তিনি।”
অর্থাৎ দ্যুলোকে, ভূলোকে যা কিছু প্রকাশ্যে বিরাজ করছে এবং যেসব বস্তু ও প্রাণী গোপনে বিরাজ করছে তাদের সকলের অবস্থা একই সাথে জানেন যে সত্ত্বা, সে সত্ত্বার নামই হচ্ছে আল্লাহ।
কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতে গায়েব সম্বন্ধে বলা হয়েছে। সে আয়াতগুলোর কিছু উদ্ধৃত করে পাঠকবৃন্দকে উপহার দেব যাতে করে এ বিষয়ে সৃষ্ট ভ্রান্তি দূর হয় ও সত্য উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
(আরবী)
“অদৃশ্য জগতের কুঞ্জিগুলো (ভাণ্ডারগুলো) তাঁরই অবগত। তিনি ব্যতীত আর কেউই সে সম্বন্ধে অবগত নয়; (তার জ্ঞান এত প্রশস্ত যে,) স্থল ও জলের সব কিছুই তিনি অবগত আছেন তার অগোচরে গাছের একটি পাতাও খসে পড়ে না। ভূগর্ভস্থ অন্ধকার পুঞ্জের প্রত্যেকটি শস্যবীজ এবং প্রত্যেকটি সরল ও নীরস সমস্তই তাঁর জ্ঞানের পরিধির মধ্যে সুস্পষ্ট কিতাবে (লৌহে মাহফুজে) সন্নিবেশিত।” সূরা আল-আনআম ৫৯ )
অদৃশ্য জগতের যত ভাণ্ডার আছে, বিশাল পৃথিবী ও জলরাশির মধ্যে লুক্কায়িত যা কিছু আছে তার তত্ত্বজ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে আছে। লক্ষ কোটি তরুলতার একটি পাতাও তার অগোচরে ঝরে পড়ে না এবং ভূগর্ভস্থ অন্ধকার পুঞ্জের নিভত কোণে অবস্থিত কোন একটি শস্য কণাও তার অগোচরে বিরাজ করে না। এমনকি লক্ষ কোটি তরুলতার মধ্যে কোনটির কত সরস ও কোটির কত নীরস পাতা আছে, তার সঠিক জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহরই আছে।
সরস ও নীরস বলতে সমস্ত প্রকারের পদার্থকে বুঝাচ্ছে। এটা আরবীর বাগধারা বিশেষ। এর দ্বারা সাকুল্য প্রতিপন্ন করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা ইলমে গায়েবের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমন কতকগুলো তত্ত্বজ্ঞানের সন্ধান দিয়েছেন যেখানে কোন মানব, দানব ও ফেরেশতার নাক গলে না; সে অদৃশ্য ও গোপন ভাণ্ডারের সঠিক জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহই রাখেন। উল্লিখিত বিষয় ও বস্তুসমূহের সম্বন্ধে নবী, অলী ও ফেরেশতাদের কোন জ্ঞানই নেই। আর থাকতেও পারে না। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন যতটুকু শিক্ষা দিয়েছেন ততটুকু জ্ঞান সঞ্চয় করা সম্ভব৷ স্মরণ রাখবেন!
আল্লাহ কোন বিষয়ের সঠিক জ্ঞানের সন্ধান দান করার পরে তা আর গায়েব (অজানা) থাকে না। সূরা আল-বাকারাতে সংক্ষিপ্ত কথায় অথচ ব্যাপকভাবে আল্লাহর গায়েব জানার কথা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“তাঁদের (সৃষ্টজীব ও বস্তুর) অগ্র ও পশ্চাৎ সমস্তই তিনি বিদিত থাকেন; বস্তুত তাঁর জ্ঞানের অতি সামান্য অংশও মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টজীব আয়ত্ব করতে পারে -তবে যেটুকু তিনি ইচ্ছে করেন।” (সূরা আল-বাকারা ২৫৫)
আল্লাহ এমন মহান সত্তা যিনি সমূদয় প্রাণী, জীব ও বস্তুর আগের ও পিছনের সমস্ত অবস্থা সম্যকভাবে বিদিত আছেন এবং আল্লাহ এ ভাব পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তোলার জন্য দু'একটা উদাহরণ দিয়ে প্রাণী জীব ও বস্তুর অগ্র-পশ্চাৎ এর অর্থ বুঝানোর প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। একটা মৌমাছিকে সামনে রেখে মনোনিবেশ সহকারে দেখুনঃ ওর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কতগুলো? ওর পা কতগুলো? চক্ষু কতগুলো? ওর আত্মা ও হৃৎপিণ্ড কতটুকু? ওর সন্তান জন্মাবার প্রণালীটি কি?
এক্ষণে মা বাইনা আইদীহিম' অর্থাৎ ওর ভাবী বংশের সম্বন্ধে গবেষণা করুন ও ঐ মৌমাছিটার সন্তানাদি কতগুলো হবে এবং ওদের নাতী পৌত্র কতগুলো হবে এবং কারা হবে? অতঃপর পৃথিবী লয় পর্যন্ত ওদের সন্তানাদি কতগুলো হবে এবং কারা কারা হবে?
এবারে ‘মা খালফাহুম’ অর্থাৎ ওর অতীত নিয়ে গবেষণা করুন। ঐ মৌমাছিটার নানী ও দাদী কে ছিল? এভাবে ওদের বংশ তালিকা গিয়ে সর্বপ্রথম সৃষ্ট মৌমাছির নামে কুষ্ঠিনামা মিলে গেল? অনুরূপভাবে প্রত্যেকটি প্রাণীজীবকে সামনে রেখে গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা করুন।
দ্বিতীয় উদাহরণঃ প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনাদের সামনের এক শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করে দেখুন ও বর্তমানে সেখানে কি ফসল আছে? তাতে কতটুকু ফসল উৎপাদন হতে পারে? আগামী বছরে তাতে কি কি ফসল উৎপাদন হবে? এর পরের বছর ও তার পরের বছর তাতে কি কি ফসল জন্মিবে? এভাবে ঐ ভূখণ্ডে প্রলয় দিবস পর্যন্ত কি কি শস্য উৎপাদন হবে?
এবারে ‘মা খালফাহুম' অর্থাৎ ঐ ভূখণ্ডে বিগত বছরগুলোতে কি কি এবং কতটুকু ফসল জন্মেছিল? ভূমি সৃষ্টির পর থেকে ঐ ভূখণ্ডে কি কি এবং কি পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়েছিল?
তৃতীয় উদাহরণঃ একটি জলাশয়ের কথা চিন্তা করুনঃবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, ওতে কোটি কোটি কীট বিচরণ করছে। ঐ পানিতে বর্তমানে কি আছে? ভবিষ্যতে কি কি জিনিস বাস করবে? আবার ঐ পানিতে সৃষ্টির পর থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত কি কি প্রাণী বাস করেছিল? এর সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই আছে। আসলে সৃষ্টজীবের বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের জ্ঞান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত (এগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না)। জানতে পারে না। আমরা উদাহরণ দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের সঠিক জ্ঞানের কথা বলছি মাত্র।
তাছাড়া এর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে অক্ষম। আলোচ্য আয়াতের “ওয়ালা ইউহীতুনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা-শাআ” এর ব্যাখ্যায় মাওলানা আকরাম খাঁ বলেছেনঃ “তাহার জ্ঞানের সামান্য অংশও মানুষের আয়ত্তে আসিতে পারে না। যেটুকু তাহারা পায়, তাহাও আল্লাহরই দান। ফানুস উড়ানোর খেয়াল মানুষের চিরদিন ছিল, এখনও আছে। কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি রাজ্যের অনন্ত রহস্যের এক কণা মাত্র তাহারা আজও আয়ত্ত করিতে পারে নাই, কখনও পারিবে না। সুতরাং বিশ্ব বৃহস্য চিরকালই মানুষের অজ্ঞাত থাকিয়া যাইবে।” তফসিরুল কুরআন ১ম খণ্ড ৩৪৩ পৃঃ) বিশ্ব রহস্য কেন আমাদের কাছে অনুদঘাটিত থাকবে না? এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“আর প্রকৃত অবস্থা এই যে, তোমার পরওয়ারদেগারের ফৌজগুলোর বৃত্তান্ত তিনি ব্যতীত আর কেউই অবগত নয়”- (সূরা মুদ্দাসসির ৩১ আয়াতের শেষাংশ)। অর্থাৎ সৃষ্টজীব ও বস্তুকে একমাত্র আল্লাহই জানেন।
স্মরণ রাখবেন! সমুদয় বিশ্বের যাবতীয় প্রাণী জীব ও বস্তুর বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের সর্বদা সঠিক জ্ঞানকে ‘ইলমে গায়েব এবং যে সত্তা এত অসীম জ্ঞান রাখেন, তাঁকে ‘গায়েব দা বা অদৃশ্য জান্তা বলে। এরূপ জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই অবধারিত ও নির্দিষ্ট। কুরআন সুন্নহর নির্দেশ মতো কোন নবী, অলী,
ফেরেশতা, জীন ও পরী গায়েব জানে না। এক্ষণে যদি কোন ব্যক্তি, কোন নবী, অলী ও অন্য কাউকে গায়েব দা ও অদৃশ্য জান্তা বলে মনে করে, তাহলে সে ব্যক্তি মূলত অন্যকে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করল এবং কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী আকীদা পোষণ করার জন্যে তাকে কাফের বলে আখ্যায়িত করা হবে। হানাফী ফিকাহ শাস্ত্রবিদ পণ্ডিতগণের ফাতাওয়া অনুযায়ী অনুরূপ মত পোষণকারীকে কাফের বলা যাবে। একথা অন্যত্র উদ্ধৃতিসহ উল্লেখ করেছি। দ্বিরুক্তির ভয়ে শুধু সংক্ষেপে তাদের বক্তব্য পেশ করলাম। আপনারা বরযখ সাধন ও তাসাউওরে শায়েখ অধ্যায়ে পাঠ করেছেন যে, তাসাওফপন্থী বিদআতীগণ বরযখ সাধনের মাধ্যমে এবং গুরুধ্যানকারীরা গুরুধ্যানের মাধ্যমে পীর বাবাকে অধিগম্য হিসাবে গায়েব দা বা অদৃশ্য জ্ঞান বা অদৃশ্য জান্তা বলে মনে করে থাকে।
আল্লাহ বলেন : তিনি ব্যতীত কেউই গায়েব জানে না কিন্তু তথাকথিত জাহেল পীরের ততোধিক জাহেল মুরীদ নিজেদের গুরুকে অধিগম্য হিসাবে গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। এবারে বলুন? আল্লাহ সত্যবাদী? না অজ্ঞ মুরীদ সত্যবাদী? আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন, আল্লাহ সত্যবাদী। তাহলে যারা পীর বাবাকে গায়েব জান্তা বলে মনে করল, তারা পীর বাবাকে আল্লাহর সমতুল্য জ্ঞান করল। এদিক দিয়ে অনুরূপ আকীদা পোষণকারীর দল পৌত্তলিক। যারা আল্লাহর সত্তাকে অবিশ্বাস করে, তারা কাফের।
কিন্তু যারা তাসাউওরে শায়েখ বা পীরের মূর্তি আপনাদের হৃদয়পটে অঙ্কন করে তারা কাফের ও পৌত্তলিক উভয়ই। অনুরূপভাবে, অদ্বৈতবাদীরা স্রষ্টা ও সৃষ্ট জীবের মধ্যে পার্থক্য অস্বীকার করে এবং কার্য ও কারণকে এক বলে বিশ্বাস করে। এদের বিশ্বাস মতে সমস্ত সৃষ্ট জীবের মধ্যে আল্লাহ বিরাজ করছে। একটু তপ-জপ করলে প্রকাশ্য ব্যবধান দূর হয়ে যায়। তাদের মতে মূলত সকলেই আল্লাহর অবতার। এ দলের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন মনছুর হাল্লাজ। অদ্বৈতবাদীরা কাফের ও পৌত্তলিক উভয়ই।
পৃথিবীতে সাধু মহাজনগণকে কেন্দ্র করে নরপূজার সৃষ্টি হয়েছে। যখনই মানুষ আমাদের নবী ও রসূলকে অতি মানব বলে আখ্যায়িত করেছে, তখনই তারা প্রথমতঃ নবী ও রসূলগণকে অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকার করেছে তাদের প্রচারিত তওহীদকে।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা ঘোষণা করেন যে, তিনি (নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অতি মানব নন এবং গায়েব জানেন না। এরশাদ হচ্ছে
(আরবী)
বলে দাওঃ আমি তোমাদেরকে একথা বলি না যে, গায়েবের ভাণ্ডারগুলো আমার অধিকারে আছে। আর না আমি গায়েব জানি। আমার কথা এরও নয় যে, আমি (অতি মানব) ফেরেশতা। আমার মর্যাদা এতটুকু যে, আমি আল্লাহর প্রত্যাদেশ অনুযায়ী চলি। আর এ পথে চলার জন্য তোমাদেরকেও আহ্বান করি। সূরা আল-আনআম ৫০ )
উক্ত আয়াতে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন : “আমি গায়েব জানি না এবং আমি (অতি মানব) ফেরেশতাও নই”। তবুও যদি কেউ বলে যে, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন যে, তিনি গায়েব জানেন না, আসলে তিনি গায়েব জানতেন- তাহলে আমরা কুরআন মাজীদের পরিপন্থী আকীদা পোষণকারীকে সত্যবাদী বলব, না আল্লাহকে সত্যবাদী বলব? অন্ততঃ কোন মুসলমান আল্লাহর আদেশের পরিপন্থী মত বা আকীদা পোষণ করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর কালাম তাঁর শেষ সিদ্ধান্ত হিসাবে উক্ত মত ঘোষণা করেছে।
ইয়াহুদীরা বলেছিলঃ “আমরা আল্লাহর কালাম শ্রবণ করলাম বটে কিন্তু মানলাম না।” মুসলমান কিন্তু ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের মত নয়। যদি কেউ ইয়াহুদীদের মতো মত পোষণ করে, তবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বলা বাহুল্য, সব সমাজেই প্রায় নবী ও রসূলগণকে অতি মানব এবং গায়েব দা বলার জন্যে নরপূজার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম সমাজেও সে আঁচ লেগেছে। কারণ মুসলমানগণও আমাদের প্রিয় নবীকে অতি মানব এবং গায়েব জান্ত বলে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি অনেক সীমালঙ্ঘনকারী রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবতার পর্যন্ত বলেছে।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : (তর্জুমানুল কুরআন থেকে অনুবাদ করছি) আবহমান কাল থেকে মানুষের সাধারণ ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা সৃষ্টির অভ্যন্তরের ও বাইরের আশ্চর্য রহস্য উদঘাটন করতে উদগ্রীব এবং এ স্পৃহাই তাদেরকে সত্যের সোজা পথকে যথেষ্ট বিবেচনা করাতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আমাদের ধর্মকে খেয়ালী পূজার রাস্তা বানিয়েছে। এ কারণেই তারা নিজেদের ধর্ম যাজকদেরকে অতি মানব বলে ধারণা করে নিয়েছে এবং তাদেরকে পরম পূজনীয় বলে মনে করেছে, এমনকি তাদেরকে আল্লাহর মর্যাদায় পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কুরআন মাজীদ পাঠানো হয়েছে সমস্ত পথভ্রষ্টতার পথ রোধ করার উদ্দেশ্যে। সূরা আনআমের ৫০নং আয়াতে ইসলামের পয়গাম্বরের মর্যাদা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার দাবী কেবলমাত্র এই যে, আমি আল্লাহর প্রত্যাদেশ মতে সত্য পথ দেখিয়ে দিয়েছি। আমি নিজেও এ পথে চলি, অপরকেও এ পথে চলার আহ্বান করি মাত্র। একথা ব্যতীত অন্য কোন কিছুর কথা বলি না।” তর্জুমানুল কুরআন ৪৪৮ পৃঃ)
আল্লাহ রাব্বল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দ্বারা ঘোষণা করেন যে, তিনি (নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অতি মানব নন এবং গায়েব জানেন না। এরশাদ হচ্ছে
(আরবী)
বলে দাওঃ আমি তোমাদেরকে একথা বলি না যে, গায়েবের ভাণ্ডারগুলো আমার অধিকারে আছে। আর না আমি গায়েব জানি। আমার কথা এরও নয় যে, আমি (অতি মানব) ফেরেশতা। আমার মর্যাদা এতটুকু যে, আমি আল্লাহর প্রত্যাদেশ অনুযায়ী চলি। আর এ পথে চলার জন্য তোমাদেরকেও আহ্বান করি। সূরা আল-আনআম ৫০ )
উক্ত আয়াতে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন : “আমি গায়েব জানি না এবং আমি (অতি মানব) ফেরেশতাও নই”। তবুও যদি কেউ বলে যে, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন যে, তিনি গায়েব জানেন না, আসলে তিনি গায়েব জানতেন- তাহলে আমরা কুরআন মাজীদের পরিপন্থী আকীদা পোষণকারীকে সত্যবাদী বলব, না আল্লাহকে সত্যবাদী বলব? অন্ততঃ কোন মুসলমান আল্লাহর আদেশের পরিপন্থী মত বা আকীদা পোষণ করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর কালাম তাঁর শেষ সিদ্ধান্ত হিসাবে উক্ত মত ঘোষণা করেছে।
ইয়াহুদীরা বলেছিলঃ “আমরা আল্লাহর কালাম শ্রবণ করলাম বটে কিন্তু মানলাম না।” মুসলমান কিন্তু ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের মত নয়। যদি কেউ ইয়াহুদীদের মতো মত পোষণ করে, তবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বলা বাহুল্য, সব সমাজেই প্রায় নবী ও রসূলগণকে অতি মানব এবং গায়েব দা বলার জন্যে নরপূজার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম সমাজেও সে আঁচ লেগেছে। কারণ মুসলমানগণও আমাদের প্রিয় নবীকে অতি মানব এবং গায়েব জান্ত বলে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি অনেক সীমালঙ্ঘনকারী রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবতার পর্যন্ত বলেছে।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : (তর্জুমানুল কুরআন থেকে অনুবাদ করছি) আবহমান কাল থেকে মানুষের সাধারণ ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা সৃষ্টির অভ্যন্তরের ও বাইরের আশ্চর্য রহস্য উদঘাটন করতে উদগ্রীব এবং এ স্পৃহাই তাদেরকে সত্যের সোজা পথকে যথেষ্ট বিবেচনা করাতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আমাদের ধর্মকে খেয়ালী পূজার রাস্তা বানিয়েছে। এ কারণেই তারা নিজেদের ধর্ম যাজকদেরকে অতি মানব বলে ধারণা করে নিয়েছে এবং তাদেরকে পরম পূজনীয় বলে মনে করেছে, এমনকি তাদেরকে আল্লাহর মর্যাদায় পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কুরআন মাজীদ পাঠানো হয়েছে সমস্ত পথভ্রষ্টতার পথ রোধ করার উদ্দেশ্যে। সূরা আনআমের ৫০নং আয়াতে ইসলামের পয়গাম্বরের মর্যাদা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার দাবী কেবলমাত্র এই যে, আমি আল্লাহর প্রত্যাদেশ মতে সত্য পথ দেখিয়ে দিয়েছি। আমি নিজেও এ পথে চলি, অপরকেও এ পথে চলার আহ্বান করি মাত্র। একথা ব্যতীত অন্য কোন কিছুর কথা বলি না।” তর্জুমানুল কুরআন ৪৪৮ পৃঃ)
আল্লাহর কালাম থেকে প্রমাণিত হল, নবী গায়েব জান্তা নন। তিনি অতি মানব ফেরেশতাও নন। কে বলে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জান্তা? কুরআন মাজীদের নানা স্থানে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা ঘোষণা করানো হয়েছে?
(আরবী)
“আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে কল্যাণ সঞ্চয় করে নিতাম এবং অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করত না।”
এর অর্থ হচ্ছে- যেহেতু আমি গায়েব জানি না, সেহেতু অধিক কল্যাণ সঞ্চয় করতে পারিনি, ফলে অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করেছে।
মক্কা বিজয়ের পর বিদায় হজ্জে রসূল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন?
(আরবী)
যদি আমি মদিনা থেকে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বের হবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে পারতাম যা আমি মক্কায় উপনীত হয়ে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর পশু আমার সাথে আনতাম না। (বুখারী)
উল্লিখিত আয়াতসমূহ ও বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন না। যদি তিনি অদৃশ্য বিদিত হতেন, তাহলে তিনি আপনার জন্যে অনেক কল্যাণ সঞ্চয় করতেন এবং কোন অমঙ্গল তাঁকে স্পর্শ করতে পারত না। কিন্তু অমঙ্গল তাঁকে স্পর্শ করেছে, লৌহ শিরস্ত্রাণের লৌহ শলাকা তাঁর মস্তকে প্রবেশ করেছে, উহুদ সমরে তার দাঁত ভেঙ্গে গেছে। শত্রুর আঘাতে তিনি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন। তিনি বিষ মিশ্রিত গোশত ভক্ষণ করেছে। রসূল (সাঃ) গায়েব জানলে এসব বিপদ তাকে স্পর্শ করতে পারত না। বিপদ আসার প্রাক্কালেই তিনি সজাগ হতেন। ফলে তিনি কেবলমাত্র কল্যাণই সঞ্চয়। করতেন।
এতদভিন্ন রসূল (সাঃ)-এর দৈনন্দিন জীবনে এরূপ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, যদ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি ‘ইলমে গায়েব জানতেন না। উদাহরণ স্বরূপ রসূল (সাঃ)-এর বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। কোন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং মুসলিম বাহিনী রাত্রি যাপন করতেন। সেখানে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এবং ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, তাঁর গলায় হার নেই-যে হারটি তিনি তার বড় বোন আসমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। হারের অন্বেষণে তিনি পুনরায় ফিরে যান। কিন্তু উষ্ট্র চালক মনে করেন যে, আয়িশা হাওদার মধ্যে প্রবেশ করেছেন। যেহেতু তিনি অল্প বয়স্কা ও ওজনে হালকা রমনী ছিলেন, কাজে হাওদা উটের পৃষ্ঠে উত্তোলন করার সময় চালক টের পাননি।
পক্ষান্তরে রসুলুল্লাহ (সাঃ)-ও মনে করেছেন যে, তার বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা হাওদায় অবস্থান করছেন। নবী (সাঃ) সৈন্য বাহিনীকে যাত্রা করার নির্দেশ প্রদান করেন। এ কারণেই ভ্রমবশতঃ আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-কে পিছনে রেখে রসূল (সাঃ) মদীনার পথে যাত্রা করেন। সৈন্য বাহিনীর পিছনে আগত সাহাবীর উষ্ট্রে আরোহন করে হযরত আয়িশা মদিনায় পৌছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল্লাহ বিন উবাই মুনাফিক কয়েকজন সাদাসিধে সহচরের মাধ্যমে আয়িশার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা তহমত আরোপ করে। এ কারণে মুহাম্মাদ (সাঃ) দীর্ঘ ৩০ দিন যাবৎ চিন্তিত অবস্থায় কালাতিপাত করেন। এমনকি বিবি আয়িশার অসুখ হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রশান্তি মনে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। এ দিনগুলোতে তিনি বিবি সাহেবার সম্পর্কে অন্যের সাথে শলা-পরামর্শও করেছেন। তিনি যাদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন তন্মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁকে পরিত্যাগ করারও পরামর্শ
দিয়েছিলেন। এমনকি বিবি আয়িশা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পিতা আবু বকরের গৃহে গমন করেন। দীর্ঘ ১৫ দিন পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিবি আয়িশার সাথে কথোপকথন করেছেন, তিনি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন।
এমতাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা নূরের কয়েকটা আয়াত অবতীর্ণ হলো। অহী অবতরণের পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) অবগত হলেন যে, বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জানতেন না গতিকেই দীর্ঘ ১৫ দিন যাবৎ তার মানসিক কষ্ট হয়েছিল।
(আরবী)
“আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে কল্যাণ সঞ্চয় করে নিতাম এবং অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করত না।”
এর অর্থ হচ্ছে- যেহেতু আমি গায়েব জানি না, সেহেতু অধিক কল্যাণ সঞ্চয় করতে পারিনি, ফলে অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করেছে।
মক্কা বিজয়ের পর বিদায় হজ্জে রসূল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন?
(আরবী)
যদি আমি মদিনা থেকে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বের হবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে পারতাম যা আমি মক্কায় উপনীত হয়ে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর পশু আমার সাথে আনতাম না। (বুখারী)
উল্লিখিত আয়াতসমূহ ও বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন না। যদি তিনি অদৃশ্য বিদিত হতেন, তাহলে তিনি আপনার জন্যে অনেক কল্যাণ সঞ্চয় করতেন এবং কোন অমঙ্গল তাঁকে স্পর্শ করতে পারত না। কিন্তু অমঙ্গল তাঁকে স্পর্শ করেছে, লৌহ শিরস্ত্রাণের লৌহ শলাকা তাঁর মস্তকে প্রবেশ করেছে, উহুদ সমরে তার দাঁত ভেঙ্গে গেছে। শত্রুর আঘাতে তিনি ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন। তিনি বিষ মিশ্রিত গোশত ভক্ষণ করেছে। রসূল (সাঃ) গায়েব জানলে এসব বিপদ তাকে স্পর্শ করতে পারত না। বিপদ আসার প্রাক্কালেই তিনি সজাগ হতেন। ফলে তিনি কেবলমাত্র কল্যাণই সঞ্চয়। করতেন।
এতদভিন্ন রসূল (সাঃ)-এর দৈনন্দিন জীবনে এরূপ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, যদ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি ‘ইলমে গায়েব জানতেন না। উদাহরণ স্বরূপ রসূল (সাঃ)-এর বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। কোন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং মুসলিম বাহিনী রাত্রি যাপন করতেন। সেখানে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এবং ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে, তাঁর গলায় হার নেই-যে হারটি তিনি তার বড় বোন আসমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। হারের অন্বেষণে তিনি পুনরায় ফিরে যান। কিন্তু উষ্ট্র চালক মনে করেন যে, আয়িশা হাওদার মধ্যে প্রবেশ করেছেন। যেহেতু তিনি অল্প বয়স্কা ও ওজনে হালকা রমনী ছিলেন, কাজে হাওদা উটের পৃষ্ঠে উত্তোলন করার সময় চালক টের পাননি।
পক্ষান্তরে রসুলুল্লাহ (সাঃ)-ও মনে করেছেন যে, তার বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা হাওদায় অবস্থান করছেন। নবী (সাঃ) সৈন্য বাহিনীকে যাত্রা করার নির্দেশ প্রদান করেন। এ কারণেই ভ্রমবশতঃ আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-কে পিছনে রেখে রসূল (সাঃ) মদীনার পথে যাত্রা করেন। সৈন্য বাহিনীর পিছনে আগত সাহাবীর উষ্ট্রে আরোহন করে হযরত আয়িশা মদিনায় পৌছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল্লাহ বিন উবাই মুনাফিক কয়েকজন সাদাসিধে সহচরের মাধ্যমে আয়িশার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা তহমত আরোপ করে। এ কারণে মুহাম্মাদ (সাঃ) দীর্ঘ ৩০ দিন যাবৎ চিন্তিত অবস্থায় কালাতিপাত করেন। এমনকি বিবি আয়িশার অসুখ হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রশান্তি মনে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। এ দিনগুলোতে তিনি বিবি সাহেবার সম্পর্কে অন্যের সাথে শলা-পরামর্শও করেছেন। তিনি যাদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন তন্মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁকে পরিত্যাগ করারও পরামর্শ
দিয়েছিলেন। এমনকি বিবি আয়িশা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পিতা আবু বকরের গৃহে গমন করেন। দীর্ঘ ১৫ দিন পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিবি আয়িশার সাথে কথোপকথন করেছেন, তিনি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন।
এমতাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা নূরের কয়েকটা আয়াত অবতীর্ণ হলো। অহী অবতরণের পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) অবগত হলেন যে, বিবি আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জানতেন না গতিকেই দীর্ঘ ১৫ দিন যাবৎ তার মানসিক কষ্ট হয়েছিল।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর কাছে মেহমানরূপে কয়েকজন ফেরেশতার আগমন ঘটেছিল। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের সামনে খাদ্য সামগ্রী রেখে খাবারের জন্য মেহমানদেরকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আগন্তুকগণ কিছুতেই খাদ্য সামগ্রী গ্রহণ না করায় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন। আগত মেহমানগণ বলেনঃ “আমরা আল্লাহর বার্তাবাহক ফেরেশতা।” একথা শ্রবণের পর ইবরাহীমের ভীতি দূর হয়।
যদি কোন নবী গায়েব জানতেন, তাহলে তিনি গায়েবী ইলমের দ্বারা পূর্বেই অবহিত হয়ে যেতেন; তাদের সামনে খাবার সামগ্রী রেখে অনুরোধ উপরোধ কিছুই করতেন না। কুরআন মাজীদে এ কথা স্পষ্টাক্ষরে উল্লেখ করেছি। আমরা সে সব সন্তান দান অধ্যায়ে উদ্ধৃতি সহ উল্লেখ আছে। সেখানে পড়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। এবারে আর দু'একজন নবীর ঘটনা শুনুন।
লুত আলাইহিস সালাম-এর জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কয়েকজন ফেরেশতা সুন্দর বালকের আকৃতি ধারণ করে এসেছিলেন। লুত আলাইহিস সালাম তাদেরকে মানব সন্তান মনে করে স্বজাতীয় গুণ্ডাপাণ্ডা লোকদের হাত রেখে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে স্বগৃহে লুকিয়ে রাখেন-যাতে আগত মেহমানগণ অপমানিত না হন। মূসা আলাইহিস সালাম তার অগ্রজ হারুন আলাইহিস সালাম-কে স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি বানিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন।
সে সময় ইয়াহুদী সম্প্রদায় হারুনের আদেশ লঙ্ঘন করে গাভী পূজা আরম্ভ করে। তিনি তুর পাহাড় থেকে ফিরে এসে স্বজাতির অবস্থা অবলোকন করেই স্থলাভিষিক্ত খলীফাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাঁর মাথা ও দাড়ি ধরে অপমান করেন। পক্ষান্তরে হারুন আলাইহিস সালাম বিনয়াবনত হয়ে সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করেন। কুরআন মাজীদে নবীগণের ঘটনাসমূহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যদ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায়
একথা প্রমাণিত হয় যে, নবীগণ গায়েব জানতেন না। ফিকাহ শাস্ত্র বিশারদ পণ্ডিতগণ ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, নবীগণ গায়েব জানতেন বলে যারা বিশ্বাস করবে, তারা কাফের। (১) মোল্লা আলী (২) কাজি খান। হযরতুল আল্লামা সানাউল্লাহ মরহুম স্বীয় পুস্তক আহলে হাদীসকা মযহাব’ ১০ পৃষ্ঠায় মোল্লা কারীর একটি ফতওয়া উল্লেখ করেছেনঃ
(আরবী)
তুমি সঠিকভাবে জেনে রাখ যে, নবীগণ গায়েব জানতেন না, কিন্তু মহান আল্লাহ তাদেরকে যতটুকু শিক্ষা দিয়েছেন, ততটুকু। হানাফী বিদ্বানগণ সরাসরি ঐ ব্যক্তির কাফের হওয়ার ফতওয়া প্রদান করেছেন, যে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ‘গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। এরূপ আকীদা আল্লাহর কালামের সাথে সংঘাত ঘটায়। আল্লাহ বলেছেনঃ “নভোমণ্ডলে ভূমণ্ডলে আল্লাহ ছাড়া কেউই গায়েব জানে না।
অনুরূপভাবে ফিকাহ শাস্ত্রের বিখ্যাত পুস্তক কাজি খানের বরাতে মাওলানা মরহুম সানাউল্লাহ সাহেব আর একটি ফতওয়া উল্লেখ করেছেন।
(আরবী)
“বিনা সাক্ষীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সময় যে ব্যক্তি বলবে যে, আল্লাহ এবং তদীয় রসূলকে সাক্ষী করলাম সে কাফের হয়ে যাবে।” তার কথায় পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, সে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। অথচ নবী (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় গায়েব জানতেন না-মৃত্যুর পরে কি করে গায়েব জানা সম্ভব।” (আহলে হাদীসকা মযহাব ১১পৃঃ)
যেমন বিনা সাক্ষীতে বিবাহকারী আল্লাহর সাথে রসূলুল্লাহকে সাক্ষী করার দরুন কাফের হয়ে যায়, ঠিক তেমনি যদি কোন ব্যক্তি ফেরেশতা অথবা মৃত পীরকে সাক্ষী রেখে বিবাহ করে তবে সেও কাফের হয়ে যাবে।
‘ইলমে গায়েব সম্বন্ধে আলোচনা করে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন নবী, অলী, জীন, ফেরেশতা গায়েব জানেন না। এতদসত্ত্বেও অনেক বিদআতী কুরআন মাজীদের কোন আয়াতের একাংশ উল্লেখ করে অথবা সন্দেহযুক্ত ভাষায় অনুবাদ করে রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জান্তা বলে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে। আল্লাহ চাহে আমরা আয়াত ও পূর্ণ হাদীসকে উদ্ধৃত করে তাদের অপচেষ্টার অসারতা প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ।
যদি কোন নবী গায়েব জানতেন, তাহলে তিনি গায়েবী ইলমের দ্বারা পূর্বেই অবহিত হয়ে যেতেন; তাদের সামনে খাবার সামগ্রী রেখে অনুরোধ উপরোধ কিছুই করতেন না। কুরআন মাজীদে এ কথা স্পষ্টাক্ষরে উল্লেখ করেছি। আমরা সে সব সন্তান দান অধ্যায়ে উদ্ধৃতি সহ উল্লেখ আছে। সেখানে পড়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। এবারে আর দু'একজন নবীর ঘটনা শুনুন।
লুত আলাইহিস সালাম-এর জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কয়েকজন ফেরেশতা সুন্দর বালকের আকৃতি ধারণ করে এসেছিলেন। লুত আলাইহিস সালাম তাদেরকে মানব সন্তান মনে করে স্বজাতীয় গুণ্ডাপাণ্ডা লোকদের হাত রেখে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে স্বগৃহে লুকিয়ে রাখেন-যাতে আগত মেহমানগণ অপমানিত না হন। মূসা আলাইহিস সালাম তার অগ্রজ হারুন আলাইহিস সালাম-কে স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি বানিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন।
সে সময় ইয়াহুদী সম্প্রদায় হারুনের আদেশ লঙ্ঘন করে গাভী পূজা আরম্ভ করে। তিনি তুর পাহাড় থেকে ফিরে এসে স্বজাতির অবস্থা অবলোকন করেই স্থলাভিষিক্ত খলীফাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাঁর মাথা ও দাড়ি ধরে অপমান করেন। পক্ষান্তরে হারুন আলাইহিস সালাম বিনয়াবনত হয়ে সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করেন। কুরআন মাজীদে নবীগণের ঘটনাসমূহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যদ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায়
একথা প্রমাণিত হয় যে, নবীগণ গায়েব জানতেন না। ফিকাহ শাস্ত্র বিশারদ পণ্ডিতগণ ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, নবীগণ গায়েব জানতেন বলে যারা বিশ্বাস করবে, তারা কাফের। (১) মোল্লা আলী (২) কাজি খান। হযরতুল আল্লামা সানাউল্লাহ মরহুম স্বীয় পুস্তক আহলে হাদীসকা মযহাব’ ১০ পৃষ্ঠায় মোল্লা কারীর একটি ফতওয়া উল্লেখ করেছেনঃ
(আরবী)
তুমি সঠিকভাবে জেনে রাখ যে, নবীগণ গায়েব জানতেন না, কিন্তু মহান আল্লাহ তাদেরকে যতটুকু শিক্ষা দিয়েছেন, ততটুকু। হানাফী বিদ্বানগণ সরাসরি ঐ ব্যক্তির কাফের হওয়ার ফতওয়া প্রদান করেছেন, যে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ‘গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। এরূপ আকীদা আল্লাহর কালামের সাথে সংঘাত ঘটায়। আল্লাহ বলেছেনঃ “নভোমণ্ডলে ভূমণ্ডলে আল্লাহ ছাড়া কেউই গায়েব জানে না।
অনুরূপভাবে ফিকাহ শাস্ত্রের বিখ্যাত পুস্তক কাজি খানের বরাতে মাওলানা মরহুম সানাউল্লাহ সাহেব আর একটি ফতওয়া উল্লেখ করেছেন।
(আরবী)
“বিনা সাক্ষীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সময় যে ব্যক্তি বলবে যে, আল্লাহ এবং তদীয় রসূলকে সাক্ষী করলাম সে কাফের হয়ে যাবে।” তার কথায় পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, সে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে বিশ্বাস করে। অথচ নবী (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় গায়েব জানতেন না-মৃত্যুর পরে কি করে গায়েব জানা সম্ভব।” (আহলে হাদীসকা মযহাব ১১পৃঃ)
যেমন বিনা সাক্ষীতে বিবাহকারী আল্লাহর সাথে রসূলুল্লাহকে সাক্ষী করার দরুন কাফের হয়ে যায়, ঠিক তেমনি যদি কোন ব্যক্তি ফেরেশতা অথবা মৃত পীরকে সাক্ষী রেখে বিবাহ করে তবে সেও কাফের হয়ে যাবে।
‘ইলমে গায়েব সম্বন্ধে আলোচনা করে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন নবী, অলী, জীন, ফেরেশতা গায়েব জানেন না। এতদসত্ত্বেও অনেক বিদআতী কুরআন মাজীদের কোন আয়াতের একাংশ উল্লেখ করে অথবা সন্দেহযুক্ত ভাষায় অনুবাদ করে রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জান্তা বলে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে। আল্লাহ চাহে আমরা আয়াত ও পূর্ণ হাদীসকে উদ্ধৃত করে তাদের অপচেষ্টার অসারতা প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ।
বিদআতী বলে থাকে যে, কুরআন মাজীদে নবী করীম (সাঃ)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে?
(আরবী)
“হে নবী! আল্লাহ তোমাকে এমন সব কথা শিখিয়েছেন যা তুমি জানতে না।” এখানে ‘মা’ শব্দটি এছেম মৌছুল, যা অনির্দিষ্ট বাচক শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ হয় যা কিছু, সব কিছু ইত্যাদি। এ আয়াতের দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সমুদয় বস্তুর বিদ্যা শিখানো হয়েছে। এরই নাম ইলমে গায়েব'। সুতরাং নবী (সাঃ) ‘গায়েব দা’ ছিলেন। উত্তরে আমরা বলব যে, এ ‘মা’ শব্দটি সাধারণ মুসলমানের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
‘যা তোমরা জানতে না তা তোমাদেরকে (আল্লাহ) শিখিয়েছেন।' (সূরা আল-বাকারার শেষাংশ)
তবে কি আমরা সমস্ত মুসলমান (যাদেরকে এ আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে) গায়েব জানি? কস্মিনকালেও না। অর্থাৎ মুসলমানেরা কোন সময়ই গায়েব জানে না।
কুরআন মাজীদে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও ‘মা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(আরবী)
“মানুষ যা জানত না আল্লাহ সে জ্ঞান তাদেরকে শিখিয়েছেন।” সূরা আলাক ৫) তবে কি মানব জাতির সকলে গায়েব জান্তা? কষ্মিনকালেও না। অনুরূপভাবে ‘মা’ শব্দ রসূল (সাঃ)-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। সুতরাং আল্লামাকা মা লাম তাকুন তালামু-এর অর্থ হচ্ছে যে সব ধর্মীয় তত্ত্বজ্ঞান তোমার ছিল না, আল্লাহ তাআলা সেগুলো তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন মাজীদের যত্রতত্র ‘মা’ শব্দে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সম্বোধন করে ব্যবহার করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ! (অহী আসার) পূর্বে তুমি জানতে না যে, কিতাব কি আর ঈমানই বা কি? কিন্তু আমরা সে কুরআনকে তোমার অন্তরে জ্যোতি বা নূর স্বরূপ করেছি, এর দ্বারা আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করে থাকি”- (সূরা শুরা ৫২)। এ আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষাকে তো ‘ইলমে গায়েব বলা হয় না।
বিদআতীদের পক্ষ থেকে এও প্রশ্ন করা হয় যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
(আরবী)
“অতীত ও ভবিষ্যতের, বিগত ও আগত সকল জ্ঞান আমাকে দান করা হয়েছে।”
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বিগত ও আগত সব কিছুর জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি গায়েব জানতেন।
এর উত্তরে আলোচ্য হাদীসটির অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে চেনার যে সব তত্ত্বজ্ঞান আমার পূর্বের বিগত সৎলোকগণের ছিল এবং আমার পরে আগত লোক সকলের যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ হবে, সেগুলো আমাকে দেয়া হয়েছে। এজন্যে তাঁকে এসব তত্ত্বজ্ঞান দিয়ে ভূষিত করা হয়েছে, যেহেতু তিনি আদম সন্তানাদির সরদার বা নেতা এবং সবচেয়ে বড় সাধু। সুতরাং তার জ্ঞান বেশী থাকা সম্বন্ধে কারোর কোন দ্বিমত নেই। এবারে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করছি।
উদ্ধৃত হাদীসে 'ইলম' শব্দটি ‘আউয়ালীন’ শব্দের-যা কর্তা-এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, যতটুকু তত্ত্বজ্ঞান ও ধর্মীয় জ্ঞান আগের ও পরের লোক সকলের অর্জন হয়েছিল এবং হবে তার সবগুলোই আমার জানা আছে।
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ বল ও নভোমণ্ডলে এবং ভূমণ্ডলে যারা অবস্থান করছে, আল্লাহ ব্যতীত তাদের কেউই গায়েব জানে না।”-অনুযায়ী অতীত ও ভবিষ্যতের কেউই গায়েব জানে না। সুতরাং “ইলমুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন’ এর তাৎপর্য হচ্ছে যতটুকু শরীয়তের জ্ঞান বিগত ও আগত মানবমণ্ডলীর ছিল, হবে এবং আছে-তার সবগুলো মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যদি উক্ত হাদীস থেকে নবী (সাঃ)-এর ‘গায়েব দা’ হওয়া প্রমাণ হয়, তাহল কুরআনী আয়াতসমূহের, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের, ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের, সমস্ত মুহাদ্দিসীন এবং কামিল আউলিয়া কিরামের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করা হবে। এতদভিন্ন কুরআন মাজীদে প্রা ল ভাষায় বলা হয়েছে?
(আরবী)
“হে রসূল! এদেরকে বল ও ভবিষ্যতে আমার ও তোমাদের সাথে কি কি আচরণ করা হবে, আমি তা জানি না।” (সূরা আহকাফ)
আয়াতের তাৎপর্য এই যে, আল্লাহ গায়েব জানেন, আমি জানি না। আমার ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র কোথায় হবে, সত্য ধর্ম প্রচারের কোন ভাল পন্থা অবলম্বন করা হবে, আমি তা জানি না। পক্ষান্তরে তোমাদের ভবিষ্যৎ পরিণাম কি আছে, আমি তাও জানি না। তাহলে কি করে মুহাম্মাদ (সাঃ) গায়েব জান্তা হতে পারেন?
ইলমুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন-এর অর্থ এও হতে পারে, যে সমস্ত ঘটনা প্রবাহের কুরআন মাজীদে ও হাদীসে উল্লেখ আছে যার বিবরণ রসূল (সাঃ) প্রদান করেছেন, সেগুলো রসূল (সাঃ)-কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা যে পরিমাণ জ্ঞানের কথা আল্লাহ বলেছেন, সে পরিমাণ সম্পর্কে কোন মতভেদ নেই এবং সেটাকে কেউ অস্বীকারও করে না। অস্বীকার করা হয় কেবলমাত্র “মুহাম্মাদ (সাঃ) ও অন্যান্য নবীগণ গায়েব জানতেন-এ কথাকে।
আরও বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রকাশ্য আয়াতের বিরুদ্ধে, বরং ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের সম্মিলিত মতামতের বিরুদ্ধে অহেতুক অপচেষ্টা করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা হিসাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপরের বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউই গায়েব জানে না। আমরা এও প্রমাণ করেছি যে, নবী, অলী, ফেরেশতা ইত্যাদি কেউই গায়েব জানে না। কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি সত্ত্বেও বিদআতীরা রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে মতামত ব্যক্ত করে থাকে। সত্যিই বড় পরিতাপের বিষয়। তারা বলে থাকে যে, আসলে রসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন কিন্তু তিনি বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন যে, আমি গায়েব জানি না।
একটা উদাহরণঃ কুরআন হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের পণ্ডিত একজন পীর সাহেবকে স্নাতক শ্রেণীর ইংরেজী গদ্য ও পদ্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি ইংরেজী জানি না; আর ইংরেজী লেখা পড়াও শিখি না। এক্ষেত্রে যদি কোন অন্ধভক্ত মুরীদ ব্যাখ্যা করে বলে যে, পীর সাহেব বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন, তিনি ইংরেজী জানেন।
তিনি জন্মগতভাবে ইংরেজ নন। আসলে তিনি ইংরেজীতে মহাপণ্ডিত। পীর সাহেব পরিষ্কার ভাষায় উত্তর প্রদান করার পরেও যদি অন্ধ ভক্ত মুরীদ অপব্যাখ্যা দিয়ে পীর সাহেবকে ইংরেজী জান্তা মনে করে তাহলে আমাদের বলার কিছুই নেই। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ! আশা করি উল্লিখিত অপব্যাখ্যাকে কেউই শুদ্ধ বলে মেনে নিবেন না। এরূপ অপব্যাখ্যা কোন ভাবেই শুদ্ধ হতে পারে না।
অনুরূপভাবে নিখিল। ধরণীর রহমত, রসূলগণের সম্রাট, সরওয়ারে কায়েনাত, মোফাখখারে মওজুদাত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জান্তা ছিলেন না। তার কাছে যে ওয়াহী বা প্রত্যাদেশ এসেছিল সেগুলো জনসাধারণের মধ্যে প্রকাশের জন্যই এসেছিল। ওয়াহী প্রকাশের পর আর গায়েব থাকে না। এতদসত্ত্বেও যারা রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে মনে করে তাদের মূল প্রমাণাদি নিয়ে আলোচনা করে এ প্রসঙ্গ সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ।
(আরবী)
“হে নবী! আল্লাহ তোমাকে এমন সব কথা শিখিয়েছেন যা তুমি জানতে না।” এখানে ‘মা’ শব্দটি এছেম মৌছুল, যা অনির্দিষ্ট বাচক শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ হয় যা কিছু, সব কিছু ইত্যাদি। এ আয়াতের দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সমুদয় বস্তুর বিদ্যা শিখানো হয়েছে। এরই নাম ইলমে গায়েব'। সুতরাং নবী (সাঃ) ‘গায়েব দা’ ছিলেন। উত্তরে আমরা বলব যে, এ ‘মা’ শব্দটি সাধারণ মুসলমানের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
‘যা তোমরা জানতে না তা তোমাদেরকে (আল্লাহ) শিখিয়েছেন।' (সূরা আল-বাকারার শেষাংশ)
তবে কি আমরা সমস্ত মুসলমান (যাদেরকে এ আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে) গায়েব জানি? কস্মিনকালেও না। অর্থাৎ মুসলমানেরা কোন সময়ই গায়েব জানে না।
কুরআন মাজীদে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও ‘মা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(আরবী)
“মানুষ যা জানত না আল্লাহ সে জ্ঞান তাদেরকে শিখিয়েছেন।” সূরা আলাক ৫) তবে কি মানব জাতির সকলে গায়েব জান্তা? কষ্মিনকালেও না। অনুরূপভাবে ‘মা’ শব্দ রসূল (সাঃ)-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। সুতরাং আল্লামাকা মা লাম তাকুন তালামু-এর অর্থ হচ্ছে যে সব ধর্মীয় তত্ত্বজ্ঞান তোমার ছিল না, আল্লাহ তাআলা সেগুলো তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন মাজীদের যত্রতত্র ‘মা’ শব্দে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সম্বোধন করে ব্যবহার করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ! (অহী আসার) পূর্বে তুমি জানতে না যে, কিতাব কি আর ঈমানই বা কি? কিন্তু আমরা সে কুরআনকে তোমার অন্তরে জ্যোতি বা নূর স্বরূপ করেছি, এর দ্বারা আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করে থাকি”- (সূরা শুরা ৫২)। এ আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষাকে তো ‘ইলমে গায়েব বলা হয় না।
বিদআতীদের পক্ষ থেকে এও প্রশ্ন করা হয় যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
(আরবী)
“অতীত ও ভবিষ্যতের, বিগত ও আগত সকল জ্ঞান আমাকে দান করা হয়েছে।”
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বিগত ও আগত সব কিছুর জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি গায়েব জানতেন।
এর উত্তরে আলোচ্য হাদীসটির অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে চেনার যে সব তত্ত্বজ্ঞান আমার পূর্বের বিগত সৎলোকগণের ছিল এবং আমার পরে আগত লোক সকলের যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ হবে, সেগুলো আমাকে দেয়া হয়েছে। এজন্যে তাঁকে এসব তত্ত্বজ্ঞান দিয়ে ভূষিত করা হয়েছে, যেহেতু তিনি আদম সন্তানাদির সরদার বা নেতা এবং সবচেয়ে বড় সাধু। সুতরাং তার জ্ঞান বেশী থাকা সম্বন্ধে কারোর কোন দ্বিমত নেই। এবারে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করছি।
উদ্ধৃত হাদীসে 'ইলম' শব্দটি ‘আউয়ালীন’ শব্দের-যা কর্তা-এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, যতটুকু তত্ত্বজ্ঞান ও ধর্মীয় জ্ঞান আগের ও পরের লোক সকলের অর্জন হয়েছিল এবং হবে তার সবগুলোই আমার জানা আছে।
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ বল ও নভোমণ্ডলে এবং ভূমণ্ডলে যারা অবস্থান করছে, আল্লাহ ব্যতীত তাদের কেউই গায়েব জানে না।”-অনুযায়ী অতীত ও ভবিষ্যতের কেউই গায়েব জানে না। সুতরাং “ইলমুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন’ এর তাৎপর্য হচ্ছে যতটুকু শরীয়তের জ্ঞান বিগত ও আগত মানবমণ্ডলীর ছিল, হবে এবং আছে-তার সবগুলো মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যদি উক্ত হাদীস থেকে নবী (সাঃ)-এর ‘গায়েব দা’ হওয়া প্রমাণ হয়, তাহল কুরআনী আয়াতসমূহের, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের, ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের, সমস্ত মুহাদ্দিসীন এবং কামিল আউলিয়া কিরামের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করা হবে। এতদভিন্ন কুরআন মাজীদে প্রা ল ভাষায় বলা হয়েছে?
(আরবী)
“হে রসূল! এদেরকে বল ও ভবিষ্যতে আমার ও তোমাদের সাথে কি কি আচরণ করা হবে, আমি তা জানি না।” (সূরা আহকাফ)
আয়াতের তাৎপর্য এই যে, আল্লাহ গায়েব জানেন, আমি জানি না। আমার ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র কোথায় হবে, সত্য ধর্ম প্রচারের কোন ভাল পন্থা অবলম্বন করা হবে, আমি তা জানি না। পক্ষান্তরে তোমাদের ভবিষ্যৎ পরিণাম কি আছে, আমি তাও জানি না। তাহলে কি করে মুহাম্মাদ (সাঃ) গায়েব জান্তা হতে পারেন?
ইলমুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন-এর অর্থ এও হতে পারে, যে সমস্ত ঘটনা প্রবাহের কুরআন মাজীদে ও হাদীসে উল্লেখ আছে যার বিবরণ রসূল (সাঃ) প্রদান করেছেন, সেগুলো রসূল (সাঃ)-কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা যে পরিমাণ জ্ঞানের কথা আল্লাহ বলেছেন, সে পরিমাণ সম্পর্কে কোন মতভেদ নেই এবং সেটাকে কেউ অস্বীকারও করে না। অস্বীকার করা হয় কেবলমাত্র “মুহাম্মাদ (সাঃ) ও অন্যান্য নবীগণ গায়েব জানতেন-এ কথাকে।
আরও বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রকাশ্য আয়াতের বিরুদ্ধে, বরং ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের সম্মিলিত মতামতের বিরুদ্ধে অহেতুক অপচেষ্টা করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা হিসাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপরের বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউই গায়েব জানে না। আমরা এও প্রমাণ করেছি যে, নবী, অলী, ফেরেশতা ইত্যাদি কেউই গায়েব জানে না। কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি সত্ত্বেও বিদআতীরা রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে মতামত ব্যক্ত করে থাকে। সত্যিই বড় পরিতাপের বিষয়। তারা বলে থাকে যে, আসলে রসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন কিন্তু তিনি বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন যে, আমি গায়েব জানি না।
একটা উদাহরণঃ কুরআন হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের পণ্ডিত একজন পীর সাহেবকে স্নাতক শ্রেণীর ইংরেজী গদ্য ও পদ্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি ইংরেজী জানি না; আর ইংরেজী লেখা পড়াও শিখি না। এক্ষেত্রে যদি কোন অন্ধভক্ত মুরীদ ব্যাখ্যা করে বলে যে, পীর সাহেব বিনয়াবনত হয়ে বলেছেন, তিনি ইংরেজী জানেন।
তিনি জন্মগতভাবে ইংরেজ নন। আসলে তিনি ইংরেজীতে মহাপণ্ডিত। পীর সাহেব পরিষ্কার ভাষায় উত্তর প্রদান করার পরেও যদি অন্ধ ভক্ত মুরীদ অপব্যাখ্যা দিয়ে পীর সাহেবকে ইংরেজী জান্তা মনে করে তাহলে আমাদের বলার কিছুই নেই। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ! আশা করি উল্লিখিত অপব্যাখ্যাকে কেউই শুদ্ধ বলে মেনে নিবেন না। এরূপ অপব্যাখ্যা কোন ভাবেই শুদ্ধ হতে পারে না।
অনুরূপভাবে নিখিল। ধরণীর রহমত, রসূলগণের সম্রাট, সরওয়ারে কায়েনাত, মোফাখখারে মওজুদাত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ) গায়েব জান্তা ছিলেন না। তার কাছে যে ওয়াহী বা প্রত্যাদেশ এসেছিল সেগুলো জনসাধারণের মধ্যে প্রকাশের জন্যই এসেছিল। ওয়াহী প্রকাশের পর আর গায়েব থাকে না। এতদসত্ত্বেও যারা রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলে মনে করে তাদের মূল প্রমাণাদি নিয়ে আলোচনা করে এ প্রসঙ্গ সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ।
যারা রসূলগণকে গায়েব জান্তা বলে মনে করে, তারা সূরা জীন-এর নিম্নলিখিত আয়াতের অর্ধেকাংশ প্রকাশ করে প্রমাণ করার চেষ্টা পায় যে, রসূলগণ গায়েব জানতেন।
(আরবী)
“আল্লাহই একমাত্র গায়েব জান্তা। তিনি কারো নিকট অদৃশ্য বিদিত করেন না, কিন্তু নির্বাচিত রসূলগণের কাছে অদৃশ্য বিদিত করেন।” অর্থাৎ তাদেরকে গায়েবের সংবাদ দেন। আল্লাহ তা'আলার অদৃশ্য বিদিত করেন মাত্র রসূলগণের নিকট। সুতরাং রসূলগণ গায়েব জানেন।
উত্তরঃ উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র নবী ও রসূলগণকে গায়েবের সংবাদ ওয়াহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। এই প্রত্যাদেশসমূহ আদেশ বাচকও হতে পারে। যেমন তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর। অথবা এই ওয়াহী সংবাদ বাচক হতে পারে।
(আরবী)
“নিকটবর্তী অঞ্চলে রোমকগণ পরাজিত হয়েছে, কিন্তু তারা এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে।” (সূরা রূম ১-২) প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! এক্ষণে সূরা জীনের পূর্ণ আয়াতের অর্থ শুনুন ও করুনঃ
(আরবী)
“আল্লাহই একমাত্র গায়েব জান্তা। তিনি কারোর নিকটে অদৃশ্য বিদিত করেন না। কিন্তু নির্বাচিত রসূলগণের কাছে অদৃশ্য বিদিত করেন। এই গায়েবের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অগ্রে-পশ্চাতে রক্ষণশীল ফেরেশতা পাঠিয়েছেন যাতে করে আল্লাহ (প্রকাশ্য ‘ইলমের দ্বারা) জানতে পারেন যে, ফেরেশতামণ্ডলী আল্লাহর পয়গামকে অবিকল নবীগণের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা সমুদয় বস্তুকে গণনা করে রেখেছেন”। (সূরা জীন ২৬-২৮)
এই আয়াতে যে গায়েবের সংবাদ নবীগণকে প্রদান করা হয় বলা হয়েছে, তা আল্লাহর প্রত্যাদেশ ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ আল্লাহ শরীয়ত সংক্রান্ত জ্ঞান-বিশ্বাস সংক্রান্ত হোক অথবা অবশ্য প্রতিপালনীয় হোক শুধু নবীগণকেই অবহিত করেন। সূরা আলে ইমরানের আয়াতটি আমাদের বক্তব্যের সমর্থন করছে।
(আরবী)
“আল্লাহর নিয়ম বহির্ভূত যে, তিনি তোমাদেরকে গায়েবের সংবাদ প্রদান করবেন: কিন্তু তিনি (এই গায়েবের সংবাদ প্রদানের জন্য) রসূলগণকে নির্বাচন করে থাকেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলগণের প্রতি ঈমান আন।” অর্থাৎ তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর- (সূরা আলে ইমরান ১৭৯)। এখানে গায়েবের সংবাদ রসূলগণকে প্রদান করা হয় বলা হয়েছে। আবার তার প্রতি ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ রসূলগণের কাছে যে গায়েবের সংবাদ আসত, সর্বসাধারণের মধ্যে প্রকাশের জন্য আসত। নবীগণ সে গায়েবের এক ক্ষুদ্র অংশও গোপন করতে সক্ষম ছিলেন না। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
হে রসূল! তোমার কাছে (প্রত্যাদেশ আকারে) যা কিছু অবতরণ করা হয়েছে, তার সবটুকু মানবমণ্ডলীর কাছে পৌছিয়ে দাও। মনে রেখ যদি তুমি এ প্রত্যাদেশের এক (ক্ষুদ্র) অংশও লোক সকলের নিকট প্রচার না কর, তবে তুমি আল্লাহর রিসালাতের (বার্তা বাহকের) কোন কাজই সম্পাদন করলে না- (সূরা আল-মায়িদা ৬৬)। সরওয়ারে কায়েনাত, মোফাখখারে মওজুদাত সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি অর্পিত গুরু দায়িত্বকে পূর্ণমাত্রায় পালন করেছেন। আল্লাহ তা'আলা নিজেই প্রমাণ দিচ্ছেন?
(আরবী)
আমার রসূল গায়েবের সংবাদ (ওয়াহী) প্রকাশ করতে কোন ত্রুটি করেননি, কোন কৃপণতাও করেননি- (সূরা তাকবীর ২৪)। অর্থাৎ যা কিছু প্রত্যাদেশরূপে এসেছিল তার সবটুকুই তিনি পৌছিয়ে দিয়েছেন।
মূল কথা এই যে, আকাশে বাতাসে, জলে, স্থলে, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং দিবারাত্রি ঘটনা প্রবাহের বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের জ্ঞান রসূল (সাঃ)-এর ছিল না। অন্য কথায় তিনি গায়েব জানতেন না।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকার কাছে সূরা আল-বাকারার নিম্নলিখিত আয়াতের বক্তব্য রেখে বিচারের আবেদন জানাচ্ছি।
(আরবী)
আল্লাহর অগাধ জ্ঞানের এক ক্ষুদ্র অংশকেও কেউ আয়ত্ব করতে পারে না। আল্লাহ যতটুকু ইচ্ছে করেন তা ব্যতীত- (সূরা আল-বাকারা ২৫৫)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মানব, দানব, ফেরেশতা ইত্যাদিকে যে জ্ঞান প্রদান করেছেন, তা ইল্লা বিমা-শা-য়া” এর অন্তর্ভুক্ত। এটা আবাল বৃদ্ধবনিতা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলকে বেষ্টন করেছে। এর বাইরে যাবার কারোর ক্ষমতা হয়নি, হবেও না। পৃথিবীর অধিবাসীবৃন্দ যে পরমাণ জ্ঞান আহরণ করেছে এবং ভবিষ্যতে করবে, তা বিজ্ঞান সংক্রান্ত হোক, কারিগরি সংক্রান্ত হোক অথবা অন্য কোন বিষয় সংক্রান্ত হোক এবং তার ধারক বিশ্বাসী হোক, অবিশ্বাসী হোক, পৌত্তলিক হোক, নাস্তিক হোক তা ইল্লা-বিমা-শা-য়া” এর অন্তর্ভুক্ত। এ জ্ঞানগুলোকে আল্লাহ শিক্ষা প্রদান করেছেন। এরশাদ হচ্ছেঃ
(আরবী)
তোমরা যা জানতে না, আল্লাহ তা তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন- (সূরা আল-বাকারা ২৩৯)। আমাদের মধ্যে কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ অর্থনীতিবিদ, কেউ সমাজনীতিবিদ, কেউ আইন শাস্ত্রবিদ, কেউ ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, কেউ কুরআন ও সুন্নাহর পারদর্শী পণ্ডিত, কেউ বিজ্ঞানী কারিগর। সকলের জ্ঞান ‘ইল্লা বিমা-শা-য়া’ এর অন্তর্ভুক্ত এবং তা অতি সামান্য ও নগণ্য। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“তোমাদেরকে জ্ঞানের অতি সামান্য অংশ প্রদান করা হয়েছে”- (সূরা বানী ইসরাঈল ৮৫)। নবী, অলী, জীন, ফেরেশতা এবং আদম সন্তানাদিগকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, তোমরা সামান্য জ্ঞানের অধিকারী। সামান্য জ্ঞানের অধিকারী হয়ে জলে, স্থলে, খেচরে, ভূচরে, ভূমণ্ডলে, নভোমণ্ডলে এবং বিভিন্ন মণ্ডলে যা কিছু আছে, সেগুলোকে সমষ্টিগতভাবে একই সাথে কোন সৃষ্টজীব জানে না, জানতে পারে না, জানার দাবীও করতে পারে না। সুতরাং কোন সৃষ্টজীব গায়েবও জানে না।
মুহাম্মাদ (সাঃ) ও এ সৃষ্টজীবের অন্তর্ভুক্ত। সেজন্যে তিনিও গায়েব জানেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা নবীগণকে যে বিশেষ ‘গায়েব’ সম্পর্কে অবহিত করার কথা বলেছেন, তা ছিল ধর্ম সংক্রান্ত। রসূলগণ প্রত্যাদেশ আকারে যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছিলেন, তার সবগুলোকে তারা আপনার উম্মতবর্গের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, কোন তত্ত্ব ফাঁস হবার পর তা আর গায়েব থাকে না।
এ দীর্ঘ আলোচনার ফল এ দাঁড়াল যে, কোন রসূল, অলী, জীন ও ফেরেশতা কেউই গায়েব জানে না। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ উল্লিখিত মহাজনদের মধ্যে কাউকে। গায়েব জান্তা বলে মনে করে তাহলে সে হানাফী বিদ্বানগণের সম্মিলিত ফতওয়া অনুযায়ী কাফের হয়ে যাবে। পূর্বে আমরা সে মতগুলো উল্লেখ করেছি। এক্ষণে দ্বিরুক্তি করব না।
(আরবী)
“আল্লাহই একমাত্র গায়েব জান্তা। তিনি কারো নিকট অদৃশ্য বিদিত করেন না, কিন্তু নির্বাচিত রসূলগণের কাছে অদৃশ্য বিদিত করেন।” অর্থাৎ তাদেরকে গায়েবের সংবাদ দেন। আল্লাহ তা'আলার অদৃশ্য বিদিত করেন মাত্র রসূলগণের নিকট। সুতরাং রসূলগণ গায়েব জানেন।
উত্তরঃ উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র নবী ও রসূলগণকে গায়েবের সংবাদ ওয়াহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। এই প্রত্যাদেশসমূহ আদেশ বাচকও হতে পারে। যেমন তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর। অথবা এই ওয়াহী সংবাদ বাচক হতে পারে।
(আরবী)
“নিকটবর্তী অঞ্চলে রোমকগণ পরাজিত হয়েছে, কিন্তু তারা এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে।” (সূরা রূম ১-২) প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! এক্ষণে সূরা জীনের পূর্ণ আয়াতের অর্থ শুনুন ও করুনঃ
(আরবী)
“আল্লাহই একমাত্র গায়েব জান্তা। তিনি কারোর নিকটে অদৃশ্য বিদিত করেন না। কিন্তু নির্বাচিত রসূলগণের কাছে অদৃশ্য বিদিত করেন। এই গায়েবের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অগ্রে-পশ্চাতে রক্ষণশীল ফেরেশতা পাঠিয়েছেন যাতে করে আল্লাহ (প্রকাশ্য ‘ইলমের দ্বারা) জানতে পারেন যে, ফেরেশতামণ্ডলী আল্লাহর পয়গামকে অবিকল নবীগণের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা সমুদয় বস্তুকে গণনা করে রেখেছেন”। (সূরা জীন ২৬-২৮)
এই আয়াতে যে গায়েবের সংবাদ নবীগণকে প্রদান করা হয় বলা হয়েছে, তা আল্লাহর প্রত্যাদেশ ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ আল্লাহ শরীয়ত সংক্রান্ত জ্ঞান-বিশ্বাস সংক্রান্ত হোক অথবা অবশ্য প্রতিপালনীয় হোক শুধু নবীগণকেই অবহিত করেন। সূরা আলে ইমরানের আয়াতটি আমাদের বক্তব্যের সমর্থন করছে।
(আরবী)
“আল্লাহর নিয়ম বহির্ভূত যে, তিনি তোমাদেরকে গায়েবের সংবাদ প্রদান করবেন: কিন্তু তিনি (এই গায়েবের সংবাদ প্রদানের জন্য) রসূলগণকে নির্বাচন করে থাকেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলগণের প্রতি ঈমান আন।” অর্থাৎ তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর- (সূরা আলে ইমরান ১৭৯)। এখানে গায়েবের সংবাদ রসূলগণকে প্রদান করা হয় বলা হয়েছে। আবার তার প্রতি ঈমান আনতে বলা হয়েছে। কারণ রসূলগণের কাছে যে গায়েবের সংবাদ আসত, সর্বসাধারণের মধ্যে প্রকাশের জন্য আসত। নবীগণ সে গায়েবের এক ক্ষুদ্র অংশও গোপন করতে সক্ষম ছিলেন না। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
হে রসূল! তোমার কাছে (প্রত্যাদেশ আকারে) যা কিছু অবতরণ করা হয়েছে, তার সবটুকু মানবমণ্ডলীর কাছে পৌছিয়ে দাও। মনে রেখ যদি তুমি এ প্রত্যাদেশের এক (ক্ষুদ্র) অংশও লোক সকলের নিকট প্রচার না কর, তবে তুমি আল্লাহর রিসালাতের (বার্তা বাহকের) কোন কাজই সম্পাদন করলে না- (সূরা আল-মায়িদা ৬৬)। সরওয়ারে কায়েনাত, মোফাখখারে মওজুদাত সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি অর্পিত গুরু দায়িত্বকে পূর্ণমাত্রায় পালন করেছেন। আল্লাহ তা'আলা নিজেই প্রমাণ দিচ্ছেন?
(আরবী)
আমার রসূল গায়েবের সংবাদ (ওয়াহী) প্রকাশ করতে কোন ত্রুটি করেননি, কোন কৃপণতাও করেননি- (সূরা তাকবীর ২৪)। অর্থাৎ যা কিছু প্রত্যাদেশরূপে এসেছিল তার সবটুকুই তিনি পৌছিয়ে দিয়েছেন।
মূল কথা এই যে, আকাশে বাতাসে, জলে, স্থলে, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং দিবারাত্রি ঘটনা প্রবাহের বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও অতীতের জ্ঞান রসূল (সাঃ)-এর ছিল না। অন্য কথায় তিনি গায়েব জানতেন না।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকার কাছে সূরা আল-বাকারার নিম্নলিখিত আয়াতের বক্তব্য রেখে বিচারের আবেদন জানাচ্ছি।
(আরবী)
আল্লাহর অগাধ জ্ঞানের এক ক্ষুদ্র অংশকেও কেউ আয়ত্ব করতে পারে না। আল্লাহ যতটুকু ইচ্ছে করেন তা ব্যতীত- (সূরা আল-বাকারা ২৫৫)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মানব, দানব, ফেরেশতা ইত্যাদিকে যে জ্ঞান প্রদান করেছেন, তা ইল্লা বিমা-শা-য়া” এর অন্তর্ভুক্ত। এটা আবাল বৃদ্ধবনিতা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলকে বেষ্টন করেছে। এর বাইরে যাবার কারোর ক্ষমতা হয়নি, হবেও না। পৃথিবীর অধিবাসীবৃন্দ যে পরমাণ জ্ঞান আহরণ করেছে এবং ভবিষ্যতে করবে, তা বিজ্ঞান সংক্রান্ত হোক, কারিগরি সংক্রান্ত হোক অথবা অন্য কোন বিষয় সংক্রান্ত হোক এবং তার ধারক বিশ্বাসী হোক, অবিশ্বাসী হোক, পৌত্তলিক হোক, নাস্তিক হোক তা ইল্লা-বিমা-শা-য়া” এর অন্তর্ভুক্ত। এ জ্ঞানগুলোকে আল্লাহ শিক্ষা প্রদান করেছেন। এরশাদ হচ্ছেঃ
(আরবী)
তোমরা যা জানতে না, আল্লাহ তা তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন- (সূরা আল-বাকারা ২৩৯)। আমাদের মধ্যে কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ অর্থনীতিবিদ, কেউ সমাজনীতিবিদ, কেউ আইন শাস্ত্রবিদ, কেউ ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, কেউ কুরআন ও সুন্নাহর পারদর্শী পণ্ডিত, কেউ বিজ্ঞানী কারিগর। সকলের জ্ঞান ‘ইল্লা বিমা-শা-য়া’ এর অন্তর্ভুক্ত এবং তা অতি সামান্য ও নগণ্য। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“তোমাদেরকে জ্ঞানের অতি সামান্য অংশ প্রদান করা হয়েছে”- (সূরা বানী ইসরাঈল ৮৫)। নবী, অলী, জীন, ফেরেশতা এবং আদম সন্তানাদিগকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, তোমরা সামান্য জ্ঞানের অধিকারী। সামান্য জ্ঞানের অধিকারী হয়ে জলে, স্থলে, খেচরে, ভূচরে, ভূমণ্ডলে, নভোমণ্ডলে এবং বিভিন্ন মণ্ডলে যা কিছু আছে, সেগুলোকে সমষ্টিগতভাবে একই সাথে কোন সৃষ্টজীব জানে না, জানতে পারে না, জানার দাবীও করতে পারে না। সুতরাং কোন সৃষ্টজীব গায়েবও জানে না।
মুহাম্মাদ (সাঃ) ও এ সৃষ্টজীবের অন্তর্ভুক্ত। সেজন্যে তিনিও গায়েব জানেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা নবীগণকে যে বিশেষ ‘গায়েব’ সম্পর্কে অবহিত করার কথা বলেছেন, তা ছিল ধর্ম সংক্রান্ত। রসূলগণ প্রত্যাদেশ আকারে যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছিলেন, তার সবগুলোকে তারা আপনার উম্মতবর্গের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, কোন তত্ত্ব ফাঁস হবার পর তা আর গায়েব থাকে না।
এ দীর্ঘ আলোচনার ফল এ দাঁড়াল যে, কোন রসূল, অলী, জীন ও ফেরেশতা কেউই গায়েব জানে না। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ উল্লিখিত মহাজনদের মধ্যে কাউকে। গায়েব জান্তা বলে মনে করে তাহলে সে হানাফী বিদ্বানগণের সম্মিলিত ফতওয়া অনুযায়ী কাফের হয়ে যাবে। পূর্বে আমরা সে মতগুলো উল্লেখ করেছি। এক্ষণে দ্বিরুক্তি করব না।
সীমালঙ্ঘনকারী বিদআতীরা কয়েকটি হাদীস দ্বারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গায়েব জানার সপক্ষে মতামত ব্যক্ত করে থাকে। তাদের প্রমাণপঞ্জির অন্যতম একটি হাদীস আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। একদা নবী করীম (সাঃ) ফজরের নামাযের জন্যে অনেক বিলম্বে কিন্তু সূর্য উদয়ের প্রাক্কালে তাড়াহুড়া করে বাড়ী থেকে বের হয়ে মাসজিদে আসলেন। ইকামত দেয়া হলে তিনি ছোট ছোট সূরা পড়ার মাধ্যমে নামায সংক্ষেপ করলেন। নামাযান্তে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে সকলকে স্ব স্ব স্থানে বসবার আদেশ প্রদান করে বললেনঃ
(আরবী)
আজ রাতে অযু করে নামাযে ভাগ্যে যতটুকু নামায লিপিবদ্ধ ছিল তা পড়েছি বটে কিন্তু নামাযে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়েছি। এমনকি তন্দ্রা নিন্দ্রার আকার ধারণ করায় নিজেকে নিজের প্রতি ভারি বোধ করছিলাম। এমতাবস্থায় উৎকৃষ্ট আকৃতিতে মহান ও সমৃদ্ধ প্রভু পরওয়ারদেগারের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করলাম। আল্লাহ। তাআলা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে মুহাম্মাদ! উত্তরে আরজ করলাম-হে আমার প্রভু পরওয়ারদেগার আমি উপস্থিত। (পুনরায়) আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, আকাশের ফেরেশতামণ্ডলী কিসের আলোচনা করছে? উত্তরে আরজ করলাম জানি না। এরূপ
প্রশ্নোত্তর তিনবার হয়েছিল। অতঃপর আমি আল্লাহকে তদীয় পবিত্র হাত আমার দু’স্কন্ধের মাঝে রাখতে দর্শন করলাম। শেষ পর্যন্ত তাঁর অঙ্গুলীসমূহের স্নিগ্ধতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। ফলে সমুদয় বস্তুর তত্ত্ব আমার কাছে উদঘাটিত হয়ে গেল এবং আমি জানতে পারলাম। এবারে আল্লাহ বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! উত্তরে আমি নিবেদন করে জানালামঃ হে প্রভু পরওয়ারদেগার! আমি তোমার আদেশ পালনের জন্য উপস্থিত। আল্লাহ বলেন, উর্ধ্বাকাশের ফেরেশতাগণ কিসের আলোচনা করছে? আমি নিবেদন করলামঃ তারা আলোচনা করছেন, অপরাধসমূহ কিসে বিদূরিত হয়।
তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন। সেগুলো কি? আমি উত্তর প্রদান করলামঃ পায়ে হেঁটে বিভিন্ন নামাযের জামাআতের সাথে পড়ার জন্য চলা, নামাযান্তে মসজিদসমূহে (আল্লাহর স্মরণের) জন্য উপবেশন করা, প্রচণ্ড শীতের সময় পূর্ণভাবে অযু করা। (অর্থাৎ এ কাজগুলো সম্পাদন করলে অপরাধসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়।) অতঃপর আল্লাহ বললেনঃ আর কিসের আলোচনা করছে? উত্তরে আমি বললামঃ পদ মর্যাদাসমূহ কিসে বৃদ্ধি হয় সে নিয়ে আলোচনা করছেন
তিনি বললেন, সেগুলো কি? আমি বললাম, অন্নদান, নরম কথোপকথন এবং লোক সকল যখন গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত হয় তখন একাকী নামায পড়ন। অর্থাৎ এ কাজগুলো সম্পাদন করলে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।) আল্লাহ বললেন, ভিক্ষা চাও। আমি বললাম, হে আল্লাহ! মঙ্গল কার্য সাধনে অমঙ্গল থেকে বিরত থাকার, মিসকীনকে ভালবাসার, তুমি আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে ক্ষমা প্রদান করবে তার এবং কোন জাতিকে বিপদগ্রস্ত করার ইচ্ছে পোষণ করলে আমাকে বিনা বিপদে তোমার কাছে তুলে নিবার প্রার্থনা জানাচ্ছি।
আমি আরও ভিক্ষা চাচ্ছি, যাতে করে আমি তোমায় ভালবাসি, যে তোমায় ভালবাসে, তাকে ভালবাসি এবং যে কাজ সম্পাদন করলে তোমার ভালবাসার নিকটবর্তী করে দেয় সে কাজকে ভালবাসি! অতঃপর রসূল (সাঃ) বললেনঃ এ ঘটনা সত্য। এ দু'আকে পাঠ কর। এ কলেমাগুলো মুখস্থ করে শিক্ষা দাও। হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন আহমদ ইবনে হাম্বল ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। তিনি হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি মন্তব্য করেছেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ।
হাদীসটির সরল বঙ্গানুবাদ হৃদয়ঙ্গমের পর সীমালঙ্গনকারী বিদআতীদের (রসূলের গায়েব জান্তা হবার) প্রমাণ শুনুন। তারা বলে যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের হাত রসূল (সাঃ)-এর স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করার দরুন
রসূল (সাঃ) সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব জ্ঞাত হয়েছেন। একবার সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব অবহিত হবার অর্থ হচ্ছে, রসূল (সাঃ) চিরদিনের জন্য সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব জেনে ফেলেছেন। সুতরাং তিনি (রসূল সঃ) গায়েব জানতেন।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ গভীর মনোনিবেশের সাথে বিষয়টিকে হৃদয়ঙ্গম করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা হাদীসের সরল বঙ্গানুবাদে অবলোকন করেছেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাযের মধ্যে তন্দ্রা আসার অবস্থায় আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে তার উৎকৃষ্ট আকৃতিতে দর্শন লাভ করেছেন।
প্রশ্নোত্তরের পর তিনি (আল্লাহ) তাঁর পবিত্র হস্ত রসূল (সাঃ)-এর স্কন্ধ দ্বয়ের মাঝখানে স্থাপন করায় নভোমণ্ডলের ফেরেশতামণ্ডলী, কি বিষয়ে আলোচনা করছিলেন তা সাময়িকভাবে তিনি অবগত হন এবং (বলেন, সেখানকার) সব বিষয়ের তত্ত্ব আমার জন্য উদ্ভাসিত হয়ে গেল; এখানে একথাও সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ রব্বল আলামীন রসূল (সাঃ)-কে উর্ধ্বাকাশের ফেরেশতামণ্ডলী কি বিষয়ের আলোচনায় রত আছেন জিজ্ঞেস করেছেন? এবং তিনিই সে বিষয়গুলোর উত্তর প্রদান করেছেন। স্মরণ রাখবেন, আল্লাহর দর্শন, নভোমণ্ডলের সমস্ত অবস্থান দর্শন সবই সাময়িকভাবে হয়েছিল। কোন সময়ই সাময়িক জিনিস চিরস্থায়ী হয় না। যুক্তি বিদ্যায়ও সাময়িক জ্ঞান চিরস্থায়ী হবার কোন নজীর খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেখলেন তো! সীমালঙ্ঘনকারী বিদআতীর ফল, স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারীর দল কুরআন ও সুন্নাহয় কোন সুস্পষ্ট প্রমাণাদি খুঁজে না পেয়ে এদিক সেদিক থেকে ধানাই পানাই করে দু'চারটে কথা বানিয়ে বলার চেষ্টা করে থাকে। ধানাই পানাই করলে কি রসূল (সাঃ)-এর গায়েব জান্তা হবার প্রমাণ হয়? সত্যবাদী হলে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা থেকে প্রমাণ করুন। অন্যথায় স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আল্লাহ রব্বল ইজ্জত কুরআন মাজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় রসূল (সাঃ)-কে ব্যক্ত করতে বলেছেনঃ “হে মুহাম্মাদ বল! আমি গায়েব জানি না”- (সূরা আনআম ৫০)। এহেন সুস্পষ্ট ঘোষণার পরে রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গুণ-গরীমা ও মর্যাদা সর্বজনবিদিত। তিনি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই বলে আমরা তাঁকে সৃষ্ট জীবের আসন থেকে উন্নীত করে স্রষ্টার আসনে সমাসীন করতে পারি না। মনে রাখবেন! ভূত-ভবিষ্যৎ গোপন ও প্রকাশ্য জানা একমাত্র আল্লাহর গুণ। সর্বক্ষণে সমুদয় বিশ্বের অবস্থা সম্যকভাবে জ্ঞাত
থাকাও আল্লাহর গুণ। কেবলমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ রব্বল আলামীন যে গুণে গুণান্বিত, সে গুণ রসূল (সাঃ)-কে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও আল্লাহর সমকক্ষ? নাউযুবিল্লাহ! এরূপ ধারণা পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সৃষ্ট জীব থেকে উন্নীত করে স্রষ্টার আসনে সমাসীন করার সমতুল্য। কোন মুসলমান এরূপ ধারণা করতে পারে না। আল্লাহর গুণ কোন সৃষ্ট জীবের আছে বলে যারা বিশ্বাস করে, তারা মূলত পৌত্তলিক। কারণ সৃষ্ট ও স্রষ্টা, কার্য ও কারণ কোন সময়ই এক হতে পারে না। যারা সৃষ্টকে স্রষ্টার গুণে গুণান্বিত করল, তারা আসলে সৃষ্টকে স্রষ্টার সমতুল্য করল এবং এরূপ ধারণা পোষণ করা স্পষ্ট শির্ক।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করুনঃ গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাযে তার অবস্থায় মুহাম্মাদ (সাঃ) স্রষ্টাকে দর্শন করেছেন এবং মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র হাত স্কন্ধদ্বয়ের মাঝে স্থাপন করায় রসূল (সাঃ)-কে আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে যা আছে এবং তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ক্ষণিকের জন্য দেখানো হয়েছিল মাত্র। এতে নিখিল ধরণীর রহমতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, রসূল (সাঃ)-এর ক্ষণিকের জন্য যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ তা সর্বক্ষণের জন্য ছিল না। এ বক্তব্যের সমর্থন নিয়ে উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে পাওয়া যাবে।
এখানে স্মরণযোগ্য যে আল্লাহকে দর্শনের ঘটনা হুদায়বিয়া সন্ধির প্রাক্কালে সংঘটিত হয়েছিল, এর প্রমাণ রিজাল শাস্ত্রে ও হাদীসে বিদ্যমান আছে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আপনারা বিদিত আছেন যে, ৬ষ্ঠ হিজরী সনে মুহাম্মাদ (সাঃ) ন্যুনাধিক ১৫০০ সহচরবৃন্দকে সাথে নিয়ে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মদীন থেকে মক্কাভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। এ যাত্রায় রসূল (সাঃ) কুরবানীর পশু পালও সাথে নিয়েছিলেন। মক্কাবাসীদের প্রবল বাধা ও বিরোধিতার দরুন রসুল (সাঃ) হুদায়বিয়ায় কয়েকদিন অবস্থান করেন। উক্ত স্থানে কুরাইশদের সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী রসূল (সাঃ)-কে সহচরবৃন্দগণ সমেত মদীনা মুনাওয়ারা প্রত্যাবর্তন করতে হয়। এমতাবস্থায় মুহাম্মাদ (সাঃ) সহচরবৃন্দকে সম্বোধন করে বললেন?
(আরবী)
“আমি যদি মদিনা থেকে বের হবার প্রাক্কালে জানতে পারতাম যা আমি এখন হুদায়বিয়ায় এসে) জানতে পারলাম, তবে কুরবানীর পশুপাল সঙ্গে নিয়ে আসতাম না।” হাদীসটি বুখারীর। স্বপ্নে আল্লাহকে দর্শন লাভের পর নবী (সাঃ) গায়েব জান্তা হয়ে গেলে এবং সর্বক্ষণের জন্য সর্ববিষয়ের তত্ত্বজ্ঞান তার জানা থাকলে তিনি কুরবানীর পশুপাল সঙ্গে নিয়ে মক্কাভিমুখে যাত্রা করতেন না। এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হচ্ছে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি (রসূল) জানতেন না যে কি হবে। সুতরাং তিনি গায়েব জানতেন না।
(আরবী)
সাহাল বিন সা’দ বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি রসূল (সাঃ)-এর গৃহ দ্বারের পর্দা উত্তোলন পূর্বক গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করেছিল। রসূল (সাঃ) দ্বার দেশের দিকে পিঠ রেখে একটা লোহার চিরুনী দ্বারা মাথার চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। তিনি লোহার চিরুনীটি মাটিতে রেখে দ্বার দেশের দিকে ফিরে লোকটিকে দেখেই বলে উঠলেনঃ যদি আমি পূর্বে জানতে পারতাম যে, তুমি গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করছ, তাহলে আমি এ লোহার চিরুনী দিয়ে তোমার চোখে আঘাত হানতাম।
এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হচ্ছে যে, লোকটির দিকে দেখার পূর্বে রসূল (সাঃ) জানতেন না যে, লোকটি গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করছিল।
(আরবী)
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর বর্ণনা মতে নবী করীম (সাঃ) কখনও কখনও নগরের বাইরে গমন করে, প্রস্রাব করে তায়াম্মুম করতেন। আমি আরজ করে বলতামঃ “হে আল্লাহর রসূল! নিকটেই পানি আছে। তায়াম্মুমের প্রয়োজন কি? উত্তরে রসূল (সাঃ) বলতেন, “আমি অবগত নই যে, সে স্থান পর্যন্ত পৌঁছতে পারব
কিনা? অর্থাৎ আমি সেখানে পৌছার পূর্বেও পরলোক গমন করতে পারি। এ বিষয়ে আমার কোন জ্ঞানই নেই। এ হাদীস দ্বারাও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন না।
উল্লিখিত ঘটনা প্রবাহ ব্যতীতও রসূল (সাঃ)-এর মাদানী জিন্দেগীতে বহু এরূপ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, যার দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকের মত প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) গায়েব জানতেন না। তন্মধ্যে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ, বিষ মিশ্রিত গোশত খণ্ড ভক্ষণ ইত্যাদি সমধিক প্রসিদ্ধ।
(আরবী)
আজ রাতে অযু করে নামাযে ভাগ্যে যতটুকু নামায লিপিবদ্ধ ছিল তা পড়েছি বটে কিন্তু নামাযে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়েছি। এমনকি তন্দ্রা নিন্দ্রার আকার ধারণ করায় নিজেকে নিজের প্রতি ভারি বোধ করছিলাম। এমতাবস্থায় উৎকৃষ্ট আকৃতিতে মহান ও সমৃদ্ধ প্রভু পরওয়ারদেগারের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করলাম। আল্লাহ। তাআলা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে মুহাম্মাদ! উত্তরে আরজ করলাম-হে আমার প্রভু পরওয়ারদেগার আমি উপস্থিত। (পুনরায়) আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, আকাশের ফেরেশতামণ্ডলী কিসের আলোচনা করছে? উত্তরে আরজ করলাম জানি না। এরূপ
প্রশ্নোত্তর তিনবার হয়েছিল। অতঃপর আমি আল্লাহকে তদীয় পবিত্র হাত আমার দু’স্কন্ধের মাঝে রাখতে দর্শন করলাম। শেষ পর্যন্ত তাঁর অঙ্গুলীসমূহের স্নিগ্ধতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। ফলে সমুদয় বস্তুর তত্ত্ব আমার কাছে উদঘাটিত হয়ে গেল এবং আমি জানতে পারলাম। এবারে আল্লাহ বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! উত্তরে আমি নিবেদন করে জানালামঃ হে প্রভু পরওয়ারদেগার! আমি তোমার আদেশ পালনের জন্য উপস্থিত। আল্লাহ বলেন, উর্ধ্বাকাশের ফেরেশতাগণ কিসের আলোচনা করছে? আমি নিবেদন করলামঃ তারা আলোচনা করছেন, অপরাধসমূহ কিসে বিদূরিত হয়।
তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন। সেগুলো কি? আমি উত্তর প্রদান করলামঃ পায়ে হেঁটে বিভিন্ন নামাযের জামাআতের সাথে পড়ার জন্য চলা, নামাযান্তে মসজিদসমূহে (আল্লাহর স্মরণের) জন্য উপবেশন করা, প্রচণ্ড শীতের সময় পূর্ণভাবে অযু করা। (অর্থাৎ এ কাজগুলো সম্পাদন করলে অপরাধসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়।) অতঃপর আল্লাহ বললেনঃ আর কিসের আলোচনা করছে? উত্তরে আমি বললামঃ পদ মর্যাদাসমূহ কিসে বৃদ্ধি হয় সে নিয়ে আলোচনা করছেন
তিনি বললেন, সেগুলো কি? আমি বললাম, অন্নদান, নরম কথোপকথন এবং লোক সকল যখন গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত হয় তখন একাকী নামায পড়ন। অর্থাৎ এ কাজগুলো সম্পাদন করলে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।) আল্লাহ বললেন, ভিক্ষা চাও। আমি বললাম, হে আল্লাহ! মঙ্গল কার্য সাধনে অমঙ্গল থেকে বিরত থাকার, মিসকীনকে ভালবাসার, তুমি আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে ক্ষমা প্রদান করবে তার এবং কোন জাতিকে বিপদগ্রস্ত করার ইচ্ছে পোষণ করলে আমাকে বিনা বিপদে তোমার কাছে তুলে নিবার প্রার্থনা জানাচ্ছি।
আমি আরও ভিক্ষা চাচ্ছি, যাতে করে আমি তোমায় ভালবাসি, যে তোমায় ভালবাসে, তাকে ভালবাসি এবং যে কাজ সম্পাদন করলে তোমার ভালবাসার নিকটবর্তী করে দেয় সে কাজকে ভালবাসি! অতঃপর রসূল (সাঃ) বললেনঃ এ ঘটনা সত্য। এ দু'আকে পাঠ কর। এ কলেমাগুলো মুখস্থ করে শিক্ষা দাও। হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন আহমদ ইবনে হাম্বল ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। তিনি হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি মন্তব্য করেছেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ।
হাদীসটির সরল বঙ্গানুবাদ হৃদয়ঙ্গমের পর সীমালঙ্গনকারী বিদআতীদের (রসূলের গায়েব জান্তা হবার) প্রমাণ শুনুন। তারা বলে যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের হাত রসূল (সাঃ)-এর স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করার দরুন
রসূল (সাঃ) সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব জ্ঞাত হয়েছেন। একবার সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব অবহিত হবার অর্থ হচ্ছে, রসূল (সাঃ) চিরদিনের জন্য সমুদয় বিষয়ের তত্ত্ব জেনে ফেলেছেন। সুতরাং তিনি (রসূল সঃ) গায়েব জানতেন।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ গভীর মনোনিবেশের সাথে বিষয়টিকে হৃদয়ঙ্গম করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা হাদীসের সরল বঙ্গানুবাদে অবলোকন করেছেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাযের মধ্যে তন্দ্রা আসার অবস্থায় আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে তার উৎকৃষ্ট আকৃতিতে দর্শন লাভ করেছেন।
প্রশ্নোত্তরের পর তিনি (আল্লাহ) তাঁর পবিত্র হস্ত রসূল (সাঃ)-এর স্কন্ধ দ্বয়ের মাঝখানে স্থাপন করায় নভোমণ্ডলের ফেরেশতামণ্ডলী, কি বিষয়ে আলোচনা করছিলেন তা সাময়িকভাবে তিনি অবগত হন এবং (বলেন, সেখানকার) সব বিষয়ের তত্ত্ব আমার জন্য উদ্ভাসিত হয়ে গেল; এখানে একথাও সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ রব্বল আলামীন রসূল (সাঃ)-কে উর্ধ্বাকাশের ফেরেশতামণ্ডলী কি বিষয়ের আলোচনায় রত আছেন জিজ্ঞেস করেছেন? এবং তিনিই সে বিষয়গুলোর উত্তর প্রদান করেছেন। স্মরণ রাখবেন, আল্লাহর দর্শন, নভোমণ্ডলের সমস্ত অবস্থান দর্শন সবই সাময়িকভাবে হয়েছিল। কোন সময়ই সাময়িক জিনিস চিরস্থায়ী হয় না। যুক্তি বিদ্যায়ও সাময়িক জ্ঞান চিরস্থায়ী হবার কোন নজীর খুঁজে পাওয়া যায় না।
দেখলেন তো! সীমালঙ্ঘনকারী বিদআতীর ফল, স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারীর দল কুরআন ও সুন্নাহয় কোন সুস্পষ্ট প্রমাণাদি খুঁজে না পেয়ে এদিক সেদিক থেকে ধানাই পানাই করে দু'চারটে কথা বানিয়ে বলার চেষ্টা করে থাকে। ধানাই পানাই করলে কি রসূল (সাঃ)-এর গায়েব জান্তা হবার প্রমাণ হয়? সত্যবাদী হলে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা থেকে প্রমাণ করুন। অন্যথায় স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আল্লাহ রব্বল ইজ্জত কুরআন মাজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় রসূল (সাঃ)-কে ব্যক্ত করতে বলেছেনঃ “হে মুহাম্মাদ বল! আমি গায়েব জানি না”- (সূরা আনআম ৫০)। এহেন সুস্পষ্ট ঘোষণার পরে রসূল (সাঃ)-কে গায়েব জান্তা বলার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গুণ-গরীমা ও মর্যাদা সর্বজনবিদিত। তিনি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই বলে আমরা তাঁকে সৃষ্ট জীবের আসন থেকে উন্নীত করে স্রষ্টার আসনে সমাসীন করতে পারি না। মনে রাখবেন! ভূত-ভবিষ্যৎ গোপন ও প্রকাশ্য জানা একমাত্র আল্লাহর গুণ। সর্বক্ষণে সমুদয় বিশ্বের অবস্থা সম্যকভাবে জ্ঞাত
থাকাও আল্লাহর গুণ। কেবলমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ রব্বল আলামীন যে গুণে গুণান্বিত, সে গুণ রসূল (সাঃ)-কে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও আল্লাহর সমকক্ষ? নাউযুবিল্লাহ! এরূপ ধারণা পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সৃষ্ট জীব থেকে উন্নীত করে স্রষ্টার আসনে সমাসীন করার সমতুল্য। কোন মুসলমান এরূপ ধারণা করতে পারে না। আল্লাহর গুণ কোন সৃষ্ট জীবের আছে বলে যারা বিশ্বাস করে, তারা মূলত পৌত্তলিক। কারণ সৃষ্ট ও স্রষ্টা, কার্য ও কারণ কোন সময়ই এক হতে পারে না। যারা সৃষ্টকে স্রষ্টার গুণে গুণান্বিত করল, তারা আসলে সৃষ্টকে স্রষ্টার সমতুল্য করল এবং এরূপ ধারণা পোষণ করা স্পষ্ট শির্ক।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করুনঃ গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাযে তার অবস্থায় মুহাম্মাদ (সাঃ) স্রষ্টাকে দর্শন করেছেন এবং মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র হাত স্কন্ধদ্বয়ের মাঝে স্থাপন করায় রসূল (সাঃ)-কে আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে যা আছে এবং তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ক্ষণিকের জন্য দেখানো হয়েছিল মাত্র। এতে নিখিল ধরণীর রহমতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, রসূল (সাঃ)-এর ক্ষণিকের জন্য যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ তা সর্বক্ষণের জন্য ছিল না। এ বক্তব্যের সমর্থন নিয়ে উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে পাওয়া যাবে।
এখানে স্মরণযোগ্য যে আল্লাহকে দর্শনের ঘটনা হুদায়বিয়া সন্ধির প্রাক্কালে সংঘটিত হয়েছিল, এর প্রমাণ রিজাল শাস্ত্রে ও হাদীসে বিদ্যমান আছে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আপনারা বিদিত আছেন যে, ৬ষ্ঠ হিজরী সনে মুহাম্মাদ (সাঃ) ন্যুনাধিক ১৫০০ সহচরবৃন্দকে সাথে নিয়ে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মদীন থেকে মক্কাভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। এ যাত্রায় রসূল (সাঃ) কুরবানীর পশু পালও সাথে নিয়েছিলেন। মক্কাবাসীদের প্রবল বাধা ও বিরোধিতার দরুন রসুল (সাঃ) হুদায়বিয়ায় কয়েকদিন অবস্থান করেন। উক্ত স্থানে কুরাইশদের সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী রসূল (সাঃ)-কে সহচরবৃন্দগণ সমেত মদীনা মুনাওয়ারা প্রত্যাবর্তন করতে হয়। এমতাবস্থায় মুহাম্মাদ (সাঃ) সহচরবৃন্দকে সম্বোধন করে বললেন?
(আরবী)
“আমি যদি মদিনা থেকে বের হবার প্রাক্কালে জানতে পারতাম যা আমি এখন হুদায়বিয়ায় এসে) জানতে পারলাম, তবে কুরবানীর পশুপাল সঙ্গে নিয়ে আসতাম না।” হাদীসটি বুখারীর। স্বপ্নে আল্লাহকে দর্শন লাভের পর নবী (সাঃ) গায়েব জান্তা হয়ে গেলে এবং সর্বক্ষণের জন্য সর্ববিষয়ের তত্ত্বজ্ঞান তার জানা থাকলে তিনি কুরবানীর পশুপাল সঙ্গে নিয়ে মক্কাভিমুখে যাত্রা করতেন না। এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হচ্ছে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি (রসূল) জানতেন না যে কি হবে। সুতরাং তিনি গায়েব জানতেন না।
(আরবী)
সাহাল বিন সা’দ বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি রসূল (সাঃ)-এর গৃহ দ্বারের পর্দা উত্তোলন পূর্বক গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করেছিল। রসূল (সাঃ) দ্বার দেশের দিকে পিঠ রেখে একটা লোহার চিরুনী দ্বারা মাথার চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। তিনি লোহার চিরুনীটি মাটিতে রেখে দ্বার দেশের দিকে ফিরে লোকটিকে দেখেই বলে উঠলেনঃ যদি আমি পূর্বে জানতে পারতাম যে, তুমি গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করছ, তাহলে আমি এ লোহার চিরুনী দিয়ে তোমার চোখে আঘাত হানতাম।
এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হচ্ছে যে, লোকটির দিকে দেখার পূর্বে রসূল (সাঃ) জানতেন না যে, লোকটি গৃহাভ্যন্তরে অবলোকন করছিল।
(আরবী)
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর বর্ণনা মতে নবী করীম (সাঃ) কখনও কখনও নগরের বাইরে গমন করে, প্রস্রাব করে তায়াম্মুম করতেন। আমি আরজ করে বলতামঃ “হে আল্লাহর রসূল! নিকটেই পানি আছে। তায়াম্মুমের প্রয়োজন কি? উত্তরে রসূল (সাঃ) বলতেন, “আমি অবগত নই যে, সে স্থান পর্যন্ত পৌঁছতে পারব
কিনা? অর্থাৎ আমি সেখানে পৌছার পূর্বেও পরলোক গমন করতে পারি। এ বিষয়ে আমার কোন জ্ঞানই নেই। এ হাদীস দ্বারাও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন না।
উল্লিখিত ঘটনা প্রবাহ ব্যতীতও রসূল (সাঃ)-এর মাদানী জিন্দেগীতে বহু এরূপ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, যার দ্বারা প্রকাশ্য দিবালোকের মত প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) গায়েব জানতেন না। তন্মধ্যে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা-এর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ, বিষ মিশ্রিত গোশত খণ্ড ভক্ষণ ইত্যাদি সমধিক প্রসিদ্ধ।
বিদআতী পীর ফকীরের দল ছিনা জোরী করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে এমন কত স্ব-কপোল কল্পিত বিশেষণে বিশেষিত করে থাকে, যে বিশেষণগুলো কেবল এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। তাদের স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা প্রদানের ফলে স্রষ্টা ও সৃষ্ট জীবের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকে না, কোন প্রভেদ থাকে না। এরা অতিরিক্ত জ্ঞান বাচক নাম রসূল (সাঃ)-এর নামের সাথে যোগ করে মনে করে থাকে যে, এতে নবী (সাঃ)-এর সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। এরা এও মনে করে থাকে যে, এর দ্বারা রসূল (সাঃ) আনন্দিত হবেন এবং পরকালে এদের জন্য শাফাআত করবেন।
এরা এতটুকু বিবেচনা করে দেখার মত অবকাশও পায় না যে, সৃষ্ট জীবের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে মর্যাদা প্রদান করার কোন ক্ষমতাই তাদের নেই। এরা কি রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা প্রদানকারী সংস্থা না এরা স্ব-কপোল কল্পিত সম্মান ও প্রতিপত্তি প্রদানের অধিকারী? কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করে জানতে পাচ্ছি যে, মর্যাদা দানকারী সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধিকারী সত্ত্বা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আল্লাহ রাব্দুল আলামীন যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তিনি সে সমস্ত গুণের অধিকারী বটে। কোন উম্মতই রসূল (সাঃ)-কে এমন কোন অতিরিক্ত গুণে গুনান্বিত করতে পারে না, যদ্বারা স্রষ্টার ও সৃষ্ট জীবের মধ্যকার ব্যবধান উঠে যায়। কেননা উঁচু মর্যাদা দানকারী সত্ত্বা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ দাবীর সমর্থনে কুরআন মাজীদের একটি আয়াত তুলে ধরছি। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“আরশের অধিপতি সত্তাই উঁচু মর্যাদাসমূহ দানকারী, নিজ আদেশ বলে জিবরাঈলকে পাঠিয়ে আপনার দাসদের মধ্য থেকে যার প্রতি ইচ্ছা অহী নাযিল করেন তিনি।” (সূরা মুমিন ১৫)।
এ আয়াতের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, মর্যাদার মহান সত্তাই উঁচু মর্যাদা দানকারী, তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে নবুওত দান করতে ইচ্ছে করেন তাঁর কাছে জিবরাঈলকে পাঠিয়ে দেন। নবুওত দানের মাধ্যমে মর্যাদা দানকারী সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তিনি সকল দাসদের মর্যাদা দান করে থাকেন। পক্ষান্তরে সমস্ত সৃষ্টজীব তার দাস। দাস হয়ে অন্য দাসকে মর্যাদা দান করতে পারে না। স্মরণ রাখবেন! মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনই মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে নবুওত ও রিসালাত দান করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। সে আল্লাহই রসূল (সাঃ)-কে নবীগণের শেষ, নিখিল ধরণীর রহমত, পাপীদের সুপারিশকারী, রসূলগণের সম্রাট, বিগত ও আগত সবার চেয়ে সম্মানী ও আদম সন্তানাদির সরদার-উচ্চ মর্যাদাসমূহ দান করেছেন।
বড় পরিতাপের বিষয়! অনেক বিদআতী বলে থাকে যে, “আমরা রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকি-রসূল (সাঃ) যা ইচ্ছে তা করতে পারেন, সদাসর্বক্ষণে উপস্থিত তিনি, অদৃশ্য বিদিত তিনি, খাদ্য বণ্টনকারী তিনি, ভাল ও মন্দের অধিকারী তিনি, মানুষ নবী ছিলেন না তিনি, বরং তিনি ছিলেন নূরের তৈরী নূর নবী।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! বিদআতীদের স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদাসমূহ রসূলকে দান করার কথা অধ্যয়ন করে অবগত হয়েছেন যে, এরা এ গুণগুলো রসূল (সাঃ)-কে প্রদান করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকে বলে মনে করে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন। আল্লাহ কেবল আপনার জন্য উল্লিখিত গুণগুলো নির্ধারণ করেছেন। এক্ষণে সে গুণগুলোকে মুহম্মাদ (সাঃ)-কে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে, রসূল (সাঃ)-কে আল্লাহর সমতুল্য করা। আর আল্লাহর স্বীয় গুণগুলোকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে দান করলে রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা তো কোন ক্রমেই বৃদ্ধি হবে না-বরং তা হবে স্পষ্ট শির্ক। সুতরাং আল্লাহর এক একাধিক গুণকে অন্যের প্রতি আরোপ করা চলবে না।
এবারে আসুন আমরা প্রতিপক্ষের দলিল প্রমাণাদি নিয়ে আলোচনা করি। এ প্রসঙ্গে প্রথমে তৌহীদপন্থী মুসলমানদের আকীদা ও বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের দলিল গ্রহণ পদ্ধতি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
এরা এতটুকু বিবেচনা করে দেখার মত অবকাশও পায় না যে, সৃষ্ট জীবের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে মর্যাদা প্রদান করার কোন ক্ষমতাই তাদের নেই। এরা কি রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা প্রদানকারী সংস্থা না এরা স্ব-কপোল কল্পিত সম্মান ও প্রতিপত্তি প্রদানের অধিকারী? কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করে জানতে পাচ্ছি যে, মর্যাদা দানকারী সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধিকারী সত্ত্বা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আল্লাহ রাব্দুল আলামীন যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তিনি সে সমস্ত গুণের অধিকারী বটে। কোন উম্মতই রসূল (সাঃ)-কে এমন কোন অতিরিক্ত গুণে গুনান্বিত করতে পারে না, যদ্বারা স্রষ্টার ও সৃষ্ট জীবের মধ্যকার ব্যবধান উঠে যায়। কেননা উঁচু মর্যাদা দানকারী সত্ত্বা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ দাবীর সমর্থনে কুরআন মাজীদের একটি আয়াত তুলে ধরছি। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“আরশের অধিপতি সত্তাই উঁচু মর্যাদাসমূহ দানকারী, নিজ আদেশ বলে জিবরাঈলকে পাঠিয়ে আপনার দাসদের মধ্য থেকে যার প্রতি ইচ্ছা অহী নাযিল করেন তিনি।” (সূরা মুমিন ১৫)।
এ আয়াতের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, মর্যাদার মহান সত্তাই উঁচু মর্যাদা দানকারী, তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে নবুওত দান করতে ইচ্ছে করেন তাঁর কাছে জিবরাঈলকে পাঠিয়ে দেন। নবুওত দানের মাধ্যমে মর্যাদা দানকারী সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তিনি সকল দাসদের মর্যাদা দান করে থাকেন। পক্ষান্তরে সমস্ত সৃষ্টজীব তার দাস। দাস হয়ে অন্য দাসকে মর্যাদা দান করতে পারে না। স্মরণ রাখবেন! মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনই মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে নবুওত ও রিসালাত দান করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। সে আল্লাহই রসূল (সাঃ)-কে নবীগণের শেষ, নিখিল ধরণীর রহমত, পাপীদের সুপারিশকারী, রসূলগণের সম্রাট, বিগত ও আগত সবার চেয়ে সম্মানী ও আদম সন্তানাদির সরদার-উচ্চ মর্যাদাসমূহ দান করেছেন।
বড় পরিতাপের বিষয়! অনেক বিদআতী বলে থাকে যে, “আমরা রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকি-রসূল (সাঃ) যা ইচ্ছে তা করতে পারেন, সদাসর্বক্ষণে উপস্থিত তিনি, অদৃশ্য বিদিত তিনি, খাদ্য বণ্টনকারী তিনি, ভাল ও মন্দের অধিকারী তিনি, মানুষ নবী ছিলেন না তিনি, বরং তিনি ছিলেন নূরের তৈরী নূর নবী।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! বিদআতীদের স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদাসমূহ রসূলকে দান করার কথা অধ্যয়ন করে অবগত হয়েছেন যে, এরা এ গুণগুলো রসূল (সাঃ)-কে প্রদান করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকে বলে মনে করে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন। আল্লাহ কেবল আপনার জন্য উল্লিখিত গুণগুলো নির্ধারণ করেছেন। এক্ষণে সে গুণগুলোকে মুহম্মাদ (সাঃ)-কে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে, রসূল (সাঃ)-কে আল্লাহর সমতুল্য করা। আর আল্লাহর স্বীয় গুণগুলোকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে দান করলে রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা তো কোন ক্রমেই বৃদ্ধি হবে না-বরং তা হবে স্পষ্ট শির্ক। সুতরাং আল্লাহর এক একাধিক গুণকে অন্যের প্রতি আরোপ করা চলবে না।
এবারে আসুন আমরা প্রতিপক্ষের দলিল প্রমাণাদি নিয়ে আলোচনা করি। এ প্রসঙ্গে প্রথমে তৌহীদপন্থী মুসলমানদের আকীদা ও বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের দলিল গ্রহণ পদ্ধতি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
উত্তর : খাটি তৌহিদপন্থী মুসলমানদের বিশ্বাস এই যে, সর্বক্ষমতা সম্পন্ন সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনিই মাত্র যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। এ গুণে কোন নবী, অলী, জীন ও ফেরেশতা গুণান্বিত হতে পারে না। মোটকথা কোন সৃষ্ট জীব উল্লিখিত গুণের অধিকারী হতে পারে না। যদি কোন ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে এ বিশেষণে বিশেষিত করে, তবে নিঃসন্দেহে সে পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এতক্ষণে প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হাদীসের অনুবাদ হৃদয়ঙ্গম করে দলিল গ্রহণ পদ্ধতিকে গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
(আরবী)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেনঃ একদা জনাবে রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ প্রদাণ করে বলেন, “হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি হাজ্জ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হাজ্জ পালন কর।” জনৈক ব্যক্তি একে একে তিনবার রসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললঃ হে আল্লাহর রসূল! কি প্রতি বছর কি হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ? উত্তরে তিনি (সাঃ) এরশাদ করলেনঃ আমি যদি হাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ওয়াজিব হয়ে যেতো এবং তাহলে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হতে না।” (মুসলিম)।
এ হাদীসে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, তোমাদের প্রতি হাজ্জব্রত পালন করাকে ফরজ করা হয়েছে। স্মরণ রাখবেন! একবার হাজ্জব্রত পালন করলেই এ আদেশ যথাযথভাবে পালন করা হবে।
কিন্তু বড় আশ্চর্যের বিষয়! প্রতিপক্ষের জনৈক মৌলবী সাহেব উল্লিখিত হাদীসটিকে কেন্দ্র করে বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেনঃ রসূল (সাঃ) প্রতি বছর হাজ্জ ফরজ করার অধিকারী ছিলেন। সুতরাং তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী, সর্বক্ষমতা সম্পন্ন। তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন! বিপদ আপদের ত্রাণকর্তা, চিন্তা দূরকারী, খাদ্যদাতা, সন্তান দানকারী, হাজত নায়াজ পূর্ণকারী ইত্যাদি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ প্রতিপক্ষের প্রমাণ গ্রহণ পদ্ধতি অধ্যয়ন করেছেন।
কাহাঁকা হঁটা, কাহাঁকা রোড়া
ভাণমতিতে খাম্বা জোড়া।
কোথায় প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন হবার কথা! আর কোথায় রসূল (সাঃ) সর্বক্ষমতা সম্পন্ন, সদা সর্বাস্থানে বিদ্যমান ও বিরাজমান। অন্য কথায় রসূল (সাঃ) সদা সকলের সামনে হাজের ও নাজের? আবার কোথায় তিনি আপদ বিপদের ত্রাণকর্তা, খাদ্যদাতা, সন্তানদাতা? হাজ্জের সাথে এ বিষয়গুলো কোন যোগসূত্র আছে বলে কোন বিবেক সম্পন্ন লোক মনে করতে পারে না। কিন্তু বিদআতী মৌলবী জোর করেই রসূল (সাঃ)-কে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত করতে চায়। প্রমাণহীন কোন কথা বললেই, তা দলিলরূপে পরিগণিত হয় না। বিস্তারিতভাবে জবাব প্রদানের প্রাক্কালে স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারী মৌলবী সাহেবদের খেদমতে আরজ এই যে, জনসাধারণকে ফাঁকি দিবেন না। এহেন জঘন্য প্রতারণা করে আপনাদের লাভ কি? আল্লাহর কাছে জবাব দেবেন কি? সুতরাং বুঝে সুঝে কথা বলবেন বটে, প্রমাণহীন কোন কথা বলবেন না। কেননা এরূপ কথা বললে শিক্ষিত জনসাধারণের কাছে হাস্যাস্পদ হতে হবে এবং আল্লাহর প্রতি ও নবীর প্রতি চরম অবমাননার দায়ে জ্বলন্ত হুতাশনে প্রবেশ করতে হবে।
মুসলিম পাঠকবৃন্দের অবগতির জন্য উক্ত বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি। নবী করীম (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত দীন ইসলামের প্রবর্তক ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচারকর্তা ছিলেন। তিনি দীন ইসলামের নিয়ম-কানুনগুলোকে আল্লাহর আদেশ ব্যতীত বলতেন না এবং বলতেও পারতেন না।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“অবস্থা এই যে, তিনি নিজের খেয়ালখুশী মত কোন কথা বলেন না। (তার) উক্তিগুলো অহী বৈ আর কিছুই নয়-যা তাঁর প্রতি প্রেরণ করা হয়।” সূরানাজম ৩-৪) এ আয়াতের তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বল আলামীন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট যা অহী করেন, কেবলমাত্র তিনি সে কথা বলেন, অন্য কোন কথা বলেন না। স্মরণ রাখবেন! আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতাআলা এ কথা বলেছেন, নবুওতের প্রসঙ্গে রিসালাতের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্বন্ধে। মুহাম্মাদ (সাঃ) আপনার শিক্ষা ও আদর্শের মধ্য দিয়ে মানব সমাজের চিরন্তন সাথী, বিভ্রান্তদের শাশ্বত দিশারী এবং লক্ষ ভ্রষ্টদের জন্য অমর আদর্শ ছিলেন।
উক্ত আয়াত দ্বারা এরও প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কথাই অহী। আল্লাহর কাছ থেকে আদেশ পাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কোন কিছুই বলেন না। যখন তিনি অহী বহির্ভূত কোন কিছুই বলেন না ও বলতেও পারেন না, তখন কি করে তাকে সর্বক্ষমতা সম্পন্ন বলা যাবে? এবং কেমনই বা প্রমাণ হবে যে, রসূল (সাঃ) যা ইচ্ছে, তা করতে পারেন? উল্লিখিত হাদীসে রসূল (সাঃ) প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা অবশ্য অবশ্য প্রতিপালনীয় নয় বলে মন্তব্য ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। সূরা নাজমের ৩-৪ আয়াতকে সামনে রেখে বিষয়টিকে হৃদয়ঙ্গম করুন।
রসূল (সাঃ) জীবনে একবার হাজ্জব্রত পালনের স্বপক্ষে রায় প্রদান করেছেন। কারণ, তার কাছে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করার কোন নির্দেশ আল্লাহর কাছ থেকে আসেনি। উপরন্তু তিনি আপনার খেয়াল খুশী অনুসারে কিছুই বলতেন না। প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ কিনা-সম্বন্ধে তিনি জিজ্ঞাসিত হলে, তিনি বলেছেন : “আমি একবার হা বললেই হাজ্জব্রত পালন করা প্রতি বছরের জন্য ফরজ হয়ে যেত।” অর্থাৎ আমি যদি আল্লাহর আদেশে হাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ হয়ে যেত। কেননা রসূল (সাঃ)-এর হাঁ বাচক শব্দ
অহী। তিনি হাঁ বাচক শব্দ অহী প্রাপ্তির পরই বলতেন। যেহেতু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অহী মারফত হাঁ বাচক জবাব প্রদানের আদেশ প্রাপ্ত হননি, সেহেতু তিনি হাঁ শব্দও বলেননি এবং প্রতি বছর হাজ্জ পালন করাও ফরজ হয়নি। এবারে সুধী পাঠকবৃন্দের কাছে আরজ এই যে, কোন্ প্রমাণের বলে মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বক্ষমতা সম্পন্ন? হাজ্জ সংক্রান্ত হাদীস দ্বারা রসূল (সাঃ)-এর সর্বক্ষমতা সম্পন্ন হবার কথা তো প্রমাণিত হয় না।
(আরবী)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেনঃ একদা জনাবে রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ প্রদাণ করে বলেন, “হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি হাজ্জ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হাজ্জ পালন কর।” জনৈক ব্যক্তি একে একে তিনবার রসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললঃ হে আল্লাহর রসূল! কি প্রতি বছর কি হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ? উত্তরে তিনি (সাঃ) এরশাদ করলেনঃ আমি যদি হাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ওয়াজিব হয়ে যেতো এবং তাহলে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হতে না।” (মুসলিম)।
এ হাদীসে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে যে, তোমাদের প্রতি হাজ্জব্রত পালন করাকে ফরজ করা হয়েছে। স্মরণ রাখবেন! একবার হাজ্জব্রত পালন করলেই এ আদেশ যথাযথভাবে পালন করা হবে।
কিন্তু বড় আশ্চর্যের বিষয়! প্রতিপক্ষের জনৈক মৌলবী সাহেব উল্লিখিত হাদীসটিকে কেন্দ্র করে বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেনঃ রসূল (সাঃ) প্রতি বছর হাজ্জ ফরজ করার অধিকারী ছিলেন। সুতরাং তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী, সর্বক্ষমতা সম্পন্ন। তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন! বিপদ আপদের ত্রাণকর্তা, চিন্তা দূরকারী, খাদ্যদাতা, সন্তান দানকারী, হাজত নায়াজ পূর্ণকারী ইত্যাদি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ প্রতিপক্ষের প্রমাণ গ্রহণ পদ্ধতি অধ্যয়ন করেছেন।
কাহাঁকা হঁটা, কাহাঁকা রোড়া
ভাণমতিতে খাম্বা জোড়া।
কোথায় প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন হবার কথা! আর কোথায় রসূল (সাঃ) সর্বক্ষমতা সম্পন্ন, সদা সর্বাস্থানে বিদ্যমান ও বিরাজমান। অন্য কথায় রসূল (সাঃ) সদা সকলের সামনে হাজের ও নাজের? আবার কোথায় তিনি আপদ বিপদের ত্রাণকর্তা, খাদ্যদাতা, সন্তানদাতা? হাজ্জের সাথে এ বিষয়গুলো কোন যোগসূত্র আছে বলে কোন বিবেক সম্পন্ন লোক মনে করতে পারে না। কিন্তু বিদআতী মৌলবী জোর করেই রসূল (সাঃ)-কে উল্লিখিত গুণে গুণান্বিত করতে চায়। প্রমাণহীন কোন কথা বললেই, তা দলিলরূপে পরিগণিত হয় না। বিস্তারিতভাবে জবাব প্রদানের প্রাক্কালে স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারী মৌলবী সাহেবদের খেদমতে আরজ এই যে, জনসাধারণকে ফাঁকি দিবেন না। এহেন জঘন্য প্রতারণা করে আপনাদের লাভ কি? আল্লাহর কাছে জবাব দেবেন কি? সুতরাং বুঝে সুঝে কথা বলবেন বটে, প্রমাণহীন কোন কথা বলবেন না। কেননা এরূপ কথা বললে শিক্ষিত জনসাধারণের কাছে হাস্যাস্পদ হতে হবে এবং আল্লাহর প্রতি ও নবীর প্রতি চরম অবমাননার দায়ে জ্বলন্ত হুতাশনে প্রবেশ করতে হবে।
মুসলিম পাঠকবৃন্দের অবগতির জন্য উক্ত বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি। নবী করীম (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত দীন ইসলামের প্রবর্তক ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচারকর্তা ছিলেন। তিনি দীন ইসলামের নিয়ম-কানুনগুলোকে আল্লাহর আদেশ ব্যতীত বলতেন না এবং বলতেও পারতেন না।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“অবস্থা এই যে, তিনি নিজের খেয়ালখুশী মত কোন কথা বলেন না। (তার) উক্তিগুলো অহী বৈ আর কিছুই নয়-যা তাঁর প্রতি প্রেরণ করা হয়।” সূরানাজম ৩-৪) এ আয়াতের তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বল আলামীন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট যা অহী করেন, কেবলমাত্র তিনি সে কথা বলেন, অন্য কোন কথা বলেন না। স্মরণ রাখবেন! আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতাআলা এ কথা বলেছেন, নবুওতের প্রসঙ্গে রিসালাতের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্বন্ধে। মুহাম্মাদ (সাঃ) আপনার শিক্ষা ও আদর্শের মধ্য দিয়ে মানব সমাজের চিরন্তন সাথী, বিভ্রান্তদের শাশ্বত দিশারী এবং লক্ষ ভ্রষ্টদের জন্য অমর আদর্শ ছিলেন।
উক্ত আয়াত দ্বারা এরও প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কথাই অহী। আল্লাহর কাছ থেকে আদেশ পাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কোন কিছুই বলেন না। যখন তিনি অহী বহির্ভূত কোন কিছুই বলেন না ও বলতেও পারেন না, তখন কি করে তাকে সর্বক্ষমতা সম্পন্ন বলা যাবে? এবং কেমনই বা প্রমাণ হবে যে, রসূল (সাঃ) যা ইচ্ছে, তা করতে পারেন? উল্লিখিত হাদীসে রসূল (সাঃ) প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা অবশ্য অবশ্য প্রতিপালনীয় নয় বলে মন্তব্য ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। সূরা নাজমের ৩-৪ আয়াতকে সামনে রেখে বিষয়টিকে হৃদয়ঙ্গম করুন।
রসূল (সাঃ) জীবনে একবার হাজ্জব্রত পালনের স্বপক্ষে রায় প্রদান করেছেন। কারণ, তার কাছে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করার কোন নির্দেশ আল্লাহর কাছ থেকে আসেনি। উপরন্তু তিনি আপনার খেয়াল খুশী অনুসারে কিছুই বলতেন না। প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ কিনা-সম্বন্ধে তিনি জিজ্ঞাসিত হলে, তিনি বলেছেন : “আমি একবার হা বললেই হাজ্জব্রত পালন করা প্রতি বছরের জন্য ফরজ হয়ে যেত।” অর্থাৎ আমি যদি আল্লাহর আদেশে হাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হাজ্জব্রত পালন করা ফরজ হয়ে যেত। কেননা রসূল (সাঃ)-এর হাঁ বাচক শব্দ
অহী। তিনি হাঁ বাচক শব্দ অহী প্রাপ্তির পরই বলতেন। যেহেতু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অহী মারফত হাঁ বাচক জবাব প্রদানের আদেশ প্রাপ্ত হননি, সেহেতু তিনি হাঁ শব্দও বলেননি এবং প্রতি বছর হাজ্জ পালন করাও ফরজ হয়নি। এবারে সুধী পাঠকবৃন্দের কাছে আরজ এই যে, কোন্ প্রমাণের বলে মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বক্ষমতা সম্পন্ন? হাজ্জ সংক্রান্ত হাদীস দ্বারা রসূল (সাঃ)-এর সর্বক্ষমতা সম্পন্ন হবার কথা তো প্রমাণিত হয় না।
১৩
তৌহিদপন্থী মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যেঃ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতিটি বাক্য ওআচরণ আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত অহীআল্লাহরই আদেশ তিনি আপনার ভাষায় মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারীর দল রসূল (সাঃ)-কে এমন বিশেষণে বিশেষিত করেছে, যা কেবলমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য নির্দিষ্ট। মনে রাখবেন! সর্বক্ষমতা সম্পন্ন সত্তা হচ্ছেন-একমাত্র আল্লাহ।
আল্লাহর স্বীয় গুণ দ্বারা অন্য কোন নবী, অলী, ফেরেশতাকে গুণান্বিত করা শির্কের পর্যায়ভুক্ত হবে-যা স্পষ্ট শির্ক হিসেবে বর্জনীয়। মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে মুখতারে কুল’ বলার অর্থই হলো তাঁকে আল্লাহর সমতুল্য করা। আর এরূপ মত পোষণ করা তৌহিদপন্থী মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট শির্ক। এ মত দল মত নির্বিশেষে সকল মুসলমানের। সুতরাং সকলে এরূপ মত পোষণ করতে বারণ করেছেন।
আল্লাহর স্বীয় গুণ দ্বারা অন্য কোন নবী, অলী, ফেরেশতাকে গুণান্বিত করা শির্কের পর্যায়ভুক্ত হবে-যা স্পষ্ট শির্ক হিসেবে বর্জনীয়। মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে মুখতারে কুল’ বলার অর্থই হলো তাঁকে আল্লাহর সমতুল্য করা। আর এরূপ মত পোষণ করা তৌহিদপন্থী মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট শির্ক। এ মত দল মত নির্বিশেষে সকল মুসলমানের। সুতরাং সকলে এরূপ মত পোষণ করতে বারণ করেছেন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনারা বিদআতী মৌলভী সাহেবের হাজ্জ পালন সংক্রান্ত হাদীস থেকে প্রমাণ গ্রহণ করার পদ্ধতি অবলোকন করেছেন। তন্মধ্যে একটি অসারতা প্রমাণ করেছি। এক্ষণে তার দ্বিতীয় দাবীর অসারতা হৃদয়ঙ্গম করুন। বিদআতী পীর ফকীরের দল হাজ্জ পালন সংক্রান্ত হাদীস থেকে রসূল (সাঃ)-কে
সদা সর্বস্থানে হাজের নাজের থাকার কথা গ্রহণ করতে চেয়েছেন। আসলে কিন্তু উক্ত হাদীসে রসূল (সাঃ)-এর হাজের নাজের থাকার কথা ইশারা ইঙ্গিতের দ্বারায়ও বলা হয়নি। এদের দাবীর সাথে প্রমাণের কোন সামঞ্জস্যই নেই। তবুও এরা রসূল (সাঃ)-কে হাজের নাজের বলতে কোন ত্রুটিই করে না। কুরআন সুন্নাহ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রসূল (সাঃ)-কে সদা সর্বস্থানে হাজের নাজের হবার কোন প্রমাণই পাওয়া যাবে না।
স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারী দল রসূলকে এমন বিশেষণে বিশেষিত করেছে, যা কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। সর্বক্ষমতা সম্পন্ন সত্তা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর গুণে কাউকে গুণান্বিত করা শির্কের পর্যায়ভুক্ত হবে-যা বর্জনীয়। রসূলকে মুখতারে কুল বলার অর্থই হলো আল্লাহর সমতুল্য করা। এ কাজ সকল মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ।
সদা সর্বস্থানে হাজের নাজের থাকার কথা গ্রহণ করতে চেয়েছেন। আসলে কিন্তু উক্ত হাদীসে রসূল (সাঃ)-এর হাজের নাজের থাকার কথা ইশারা ইঙ্গিতের দ্বারায়ও বলা হয়নি। এদের দাবীর সাথে প্রমাণের কোন সামঞ্জস্যই নেই। তবুও এরা রসূল (সাঃ)-কে হাজের নাজের বলতে কোন ত্রুটিই করে না। কুরআন সুন্নাহ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রসূল (সাঃ)-কে সদা সর্বস্থানে হাজের নাজের হবার কোন প্রমাণই পাওয়া যাবে না।
স্ব-কপোল কল্পিত মর্যাদা দানকারী দল রসূলকে এমন বিশেষণে বিশেষিত করেছে, যা কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। সর্বক্ষমতা সম্পন্ন সত্তা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর গুণে কাউকে গুণান্বিত করা শির্কের পর্যায়ভুক্ত হবে-যা বর্জনীয়। রসূলকে মুখতারে কুল বলার অর্থই হলো আল্লাহর সমতুল্য করা। এ কাজ সকল মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ।
কুরআন ও সুন্নাহ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও কোন দলিল প্রমাণ পাওয়া যায় না, যদ্বারা রসূলের সর্বস্থানে উপস্থিত থাকার কথা প্রমাণ হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“আর যে কোন স্থানে তোমরা অবস্থান কর না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং তোমাদের কৃত কর্মগুলো সম্বন্ধে আল্লাহ হচ্ছেন সম্যক পর্যবেক্ষক।” সূরা হাদীদ৪) উক্ত আয়াতে আল্লাহ তোমাদের সাথে (সঙ্গে) আছেন অর্থ তোমরা তাঁর গোচরে আছ। এর অর্থ এ নয় যে, প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ বিরাজমান। যেমন অদ্বৈতবাদীরা আকীদা পোষণ করে থাকে যে, প্রত্যেকে আসলে আল্লাহ। ভ্রমবশতঃ অনেক মানুষ এ রকম মনে করে থাকে। তাদের মতে কিছু তপজপ করলে সে ভ্রম ভেঙ্গে যায়। প্রতিটি মানুষ আল্লাহরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! অদ্বৈতবাদের আকীদা বেদান্তবাদ থেকে নেয়া হয়েছে। তারা বহু ইশ্বর আছে বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। এ মতবাদকে সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলামে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা বলতে চাচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ সদা সর্বস্থানে উপস্থিত। আল্লাহ এ গুণকে কোন বান্দার সাথে জড়িত করার অর্থই হলো আল্লাহর সাথে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সমতুল্য করা। আল্লাহর সাথে অন্য যে কোন সত্তাকে সমতুল্য করা স্পষ্ট শির্ক। এ মহাপাপ সম্পাদনকারীরা চিরস্থায়ী জ্বলন্ত হুতাশনে জ্বলবে।
এবারে শুনুন! যারা রসূলকে সদা সর্বস্থানে উপস্থিত জানে, তারা ‘ইয়া আল্লাহ' এর সাথে ইয়া মুহাম্মাদু' বা 'ইয়া রসূলাল্লাহ' বলে সমভাবে আহ্বান করে থাকে। আরবী ভাষায় ‘ইয়া’ শব্দটি জীবিত সত্তা ব্যক্তিকে নিকটে থেকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এভাবে সম্বোধন করে আহ্বান করার অর্থ হচ্ছে, সে শুনতে পায়। যেহেতু আমরা সকলে আল্লাহর গোচরে আছি এবং মহান আল্লাহ তার মহতী জ্ঞানের মাধ্যমে সদা আমাদের সাথে বিরাজমান।
সেহেতু তাকে বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বীয় প্রজ্ঞা দ্বারা সদা সর্বস্থানে উপস্থিত নন গতিকে অথবা বা এরূপ আর কোন আহ্বানসূচক শব্দ ব্যবহার করে ডাকা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এরূপ আহ্বান করা সিদ্ধ থাকলে আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। এ কথাকে যে কোন বিচার-বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীকার করতে পারে না। যারা খাঁটি একত্ববাদে বিশ্বাসী, তারা কোন মতেই বা বলে রসূলকে সম্বোধন করতে পারে না। রসূল যখন জীবিত ছিলেন তখন বা, অথবা ইত্যাদি বলা বৈধ ছিল। রসূলের মৃত্যুর পরই সাহাবাবৃন্দ নামাযে আত্তাহিয়্যাতু ......... পাঠের সময় “আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীও এর স্থলে ‘আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি’ বলেছিলেন।
যেহেতু রসূল জীবিত নেই, সেহেতু রসূলের সাহাবাবৃন্দ আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিও’ অর্থাৎ হে নবী তোমার প্রতি সালাম, বললে নবী করীম (সাঃ)-কে জীবিত অবস্থায় সম্বোধন করার মতো মনে হয়। সুতরাং তারা ‘আইয়ুহান্নাবীও’ ‘হে নবী তোমার প্রতি সালাম' এর স্থলে নবীর প্রতি সালাম হোক’-‘আলান্নাবী' বলেছেন। সাহাবাবৃন্দ সতর্কতামূলক এ কাজ করেছেন। অন্যথায় পরে আগত উম্মতবৃন্দ মনে করতে পারে যে,-বলতে নবী করীম (সাঃ) জীবিত আছেন বলে বুঝায়। অথবা এভাবে আহ্বান করলে রসূল শ্রবণ করতে পারেন ইত্যাদি দ্বারা এ পথ পূর্বেই বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছেন। এতদসত্ত্বেও
বিদআতীর দল রসূলকে বা অথবা অনুরূপ শব্দ প্রয়োগে ডাকতে কোন ত্রুটি করে না। বড় আশ্চর্যের বিষয়! প্রায় মসজিদের ডান পাশে। এবং বাম পাশে লিখে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাহলে কি আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ সমান? কস্মিনকালেও না। উপরন্তু কথা হচ্ছে এই যে, ইয়া মুহাম্মাদ বললে রসূল (সাঃ) কস্মিনকালেও শ্রবণ করেন না। ইয়া রসূলাল্লাহ বলতে রসূল শ্রবণ করেন-এরূপ কোন দলিল প্রমাণ কুরআন-সুন্নাহতে নেই। রসূল সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকলে শ্রবণ করা সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে কুরআন কি বলছে? আমরা সেই দিকে পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কুরআনের বর্ণনা মতে বিবি মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর ‘অভিভাবক’ কে হবেন এ নিয়ে বাদানুবাদ হয়েছিল। প্রত্যেকের মন-বাসনা ছিল যে, সে বিবি মারইয়ামের অভিভাবক হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদের সূচনা হয়। তদানিন্তন কালে ইয়াহুদ সমাজে কোন মতভেদ ঘটলে তার ফয়সালা লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা করার নিয়ম প্রচলিত ছিল। বিবি মারইয়ামের অভিভাবক নির্বাচনের জন্যও তারা লটারীর তীরগুলো অথবা কলমগুলো ব্যবহার করেছিল। লটারীতে রসূল জাকারিয়া আলাইহিস সালাম বিবি মারইয়ামের অভিভাবক নিযুক্ত হন। এ ঘটনা ব্যক্ত করে আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
হে রসূল! এগুলো হচ্ছে অতীতের অজ্ঞাত সংবাদ যা আমরা তোমাকে অহী দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছি; তাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি মারইয়ামের অভিভাবক হতে পারবে-(এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্য) যখন তারা নিজেদের লটারীর তীরগুলো নিক্ষেপ করেছিল, তখন তো তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না, আর যখন তারা (এ ব্যাপারে নিয়ে) বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না। (সূরা আলে ইমরান ৪৪)
উক্ত আয়াতে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আল্লাহ সম্বোধন করে বলেছেন যে, “বিবি মারইয়ামের ঘটনা প্রবাহ যা তোমার অজ্ঞাত ছিল, অহী দ্বারা আল্লাহ তোমার কাছে তা ব্যক্ত করে দিয়েছেন।” অহী আসার পূর্বে রসূল এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। প্রমাণিত হলো, রসূল অজ্ঞাত জানতেন না। একই আয়াতে আল্লাহ আরও বলেছেন যে, যখন তারা জুয়ার তীরগুলো নিক্ষেপ করছিল, সে সময়ে তুমি তাদের নিকটে উপস্থিত ছিলে না। অর্থাৎ রসূল যদি সদা সর্বস্থানে উপস্থিত বা হাজের নাজের হতেন, তাহলে আল্লাহ এ আয়াত দু’দু' বার তখন তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না’ বলতেন না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! জেনে রাখুন সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকা আল্লাহর গুণ। এ গুণ দ্বারা কোন দাসকে বা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গুণান্বিত করা চলে না। কল্পিত মর্যাদা। দানের মাধ্যমে রসূলের মর্যাদা কস্মিনকালেও বৃদ্ধি হয় না বরং আল্লাহর সাথে রসূলকে তুলনা করলে শির্ক নামের পাপই উপার্জন হবে। মনে করুন, থানার সাধারণ একজন কনস্টেবলকে পুলিশের জেনারেল বললে যে ওর সাথে বিদ্রুপ ও উপহাস করা হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তদ্রুপ, সৃষ্ট জীবকে স্রষ্টার সমতুল্য হাজের নাজের মনে করা হলে রসূলের অবমাননাই যে করা হবে, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। এরা কল্পিত মর্যাদা দান করে রসূলের অবমাননা করতেও ত্রুটি করছে না।
কিয়ামত দিবসে যখন রসূল (সাঃ)-কে অবহিত করা হবে যে, এরা তোমাকে আল্লাহর মতো হাজের নাজের জানত, সেদিন রসূল রাগান্বিত হয়ে আল্লাহর নিকট অভিহিত করবেন। তিনিই কেনই বা অভিযোগ করবেন না? আল্লাহর একত্ববাদ ভিন্ন, আর আল্লাহর বান্দা মুহাম্মাদের নবুওত ও রিসালাত ভিন্ন জিনিস। সৃষ্টি ও সৃষ্টা কস্মিনকালেও সমতুল্য পদাধিকারী ও মর্যাদাবান হতে পারে না।
আরও শুনুন! আল্লাহ তা'আলা অহী দ্বারা পূর্বের উম্মত বর্গের ও নবীগণের সংবাদ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে অবহিত করেছেন। যে বিষয়গুলো রসূল জ্ঞাত ছিলেন না, সেগুলো তাকে জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে এই যে, তিনি আপনার উম্মতের কাছে। তা পাঠ করে শুনাবেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। অনুরূপভাবে মূসা আলাইহিস সালাম মিসর থেকে মাদইয়ানে গমন করেছিলেন। সেখান থেকে মিসরে প্রত্যাবর্তনের সময় তুর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে তাকে নবুওত দান করে ফিরআউনের নিকটে পাঠানো হয়েছিল। এ সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করে রসূলকে সম্বোধন করে আল্লাহ এরশাদ করেছেন?
(আরবী)
“আর তুমি (পর্বতের) পশ্চিম দিকে উপস্থিত ছিলে না যখন আমরা মূসার প্রতি নবুওতের ব্যাপারটাকে সুসম্পন্ন করে দিলাম এবং তুমি তার সাক্ষাৎ দর্শকও ছিলে না।” (সুরা কাসাস ৪৪)
কুরআনের বাহক মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) মূসার যুগে জন্মগ্রহণ করেননি। সে ইতিবৃত্তগুলো অবগত হওয়ারও তার কোন সম্ভাবনা ছিল না। বস্তুত তিনি এসব তত্ত্ব অবগত হয়েছেন অহী দ্বারা। অহীর মারফতে জেনে সঠিক ঘটনা বর্ণনা করতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি। রসূল (সাঃ) হাজের নাজের হলে মূসা আলাইহিস সালাম-কে নবুওত প্রদানের সময় তূর পর্বতের পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং সাক্ষাৎ দর্শকও ছিলেন না। প্রমাণিত হলো, রসূল (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকেন না এবং তিনি হাজের নাজেরও নন।
(আরবী)
কিন্তু (অবস্থা এই যে) বহু যুগ সমাজকে আমরা পয়দা করলাম, সে মতে এদের জীবনকাল দীর্ঘ হয়ে গেল, অধিকন্তু তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যেও বসবাস করনি, যে মতে মক্কাবাসীদিগের নিকট আমাদের আয়াতগুলোর আবৃত্তি করছ। বরং হে মুহাম্মাদ! আমরা তোমাকে নবীরূপে প্রেরণ করতে কৃত সংকল্প ছিলাম। সূরা কাসাস৪৫), কাল চক্রের আবর্তন ও বিবর্তনে বহু যুগ সমাজের আবর্তন ও বিবর্তন ঘটেছিল, তাদের ঘটনা এবং মাদইয়ানবাসীদের ঘটনা অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়ে মক্কাবাসীদের কাছে পড়ে শুনাচ্ছ। অথচ তুমি মাদইয়ান নগরীতে বসবাস করনি। বিগত উম্মতের কাহিনী অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়েই বলতে পারছ। অন্যথায় তুমি কিছুই বলতে পারতে না। রসূল (সাঃ) যদি হাজের নাজের হতেন, তাহলে তাঁর অহীর
প্রয়োজন থাকত না। কিন্তু রসূল (সাঃ) যেহেতু সদা সর্বস্থানে উপস্থিত ছিলেন না, কাজেই কোন কিছুর বর্ণনা দান করা নবুওত লাভের দরুনই সম্ভব হয়েছে।
আল্লাহ আরও বলেন।
(আরবী)
“আর তুমি (সে সময়) তুর পর্বতের পার্শ্বেও উপস্থিত ছিলে না যখন (মূসাকে) আমরা আহ্বান করেছিলাম। তবে তোমার প্রভুর রহমত বশতঃ (তুমি এসব বৃত্তান্ত অবগত হতে পারলে)।” (সূরা কাসাস ৪৬)
আলোচ্য আয়াতেও বলা হয়েছে- মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের কথোপকথনের সময় নবী (সাঃ) তূর পর্বতের পার্শ্বে উপস্থিত ছিলেন। হাজের নাজের থাকলে তা বলা সম্ভব হতো। কিন্তু আল্লাহর রহমত নবুওত লাভের দরুন অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়ে সঠিক ঘটনা বলা সম্ভব হচ্ছে।
দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণ করেছি যে, নবী (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত নন। সুতরাং তাকে! বলে সম্বোধন করার মত ... বা অনুরূপ শব্দ ইয়া রসূলাল্লাহ ইত্যাদি প্রয়োগ করা শরীয়ত সম্মত হতে পারে না। তবে কুরআনের আয়াত পাঠের সময় অথবা হাদীসের মধ্যে যেখানে রসূলকে সম্বোধন করা হয়েছে, সেগুলোকে হুবহু পাঠ করা বৈধ আছে। আর একটি কথা স্মরণ রাখবেন! নিয়ত গুণে সব কিছুর ফয়সালা আল্লাহ করবেন। নিয়ত ভাল তো সব ভাল, অন্যথায় পুণ্যের পরিবর্তে শির্ক নামের মহাপাপের দায়ে অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে। খুব সাবধানে কথাবার্তা বলা উচিত। আল্লাহ বলেনঃ মুহাম্মাদ (সাঃ) হাজের নাজের নন। আর এক শ্রেণীর বিদআতী মৌলবী কল্পিত মর্যাদা দান করতে গিয়ে বলছে যে, তিনি (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত এবং হাজের ও নাজের। তবু বলুন! আল্লাহ সত্যবাদী না যারা বলে যে, হাজের নাজের তারা সত্যবাদী? নিশ্চয় বলবেন যে, আল্লাহ সত্যবাদী এবং কল্পিত মর্যাদা দানকারীর দল মিথ্যাবাদী।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ
কল্পিত মর্যাদা দানকারীরা রসূলকে আল্লাহর যাবতীয় গুণ গরিমা দান করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। এমনকি তারা রসূলকে আল্লাহর অবতার বলতেও ত্রুটি করেনি। বক্ষ্যমান প্রবন্ধে আমরা দু'একটি কল্পিত মর্যাদা দান করার উল্লেখ করতে প্রয়াশ পাব ইনশাআল্লাহ। তাজ কোম্পানী কর্তৃক প্রকাশিত কুরআন মাজীদের প্রারম্ভে আল্লাহ তাআলার একশত গুণ বাচক নামের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে শেষের দিকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরও একশত গুণ বাচক নাম প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। রসূলের গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে রসূলের চারটি এমন গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুণগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, অন্য কথায়। যেগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর সত্তায় প্রযোজ্য। সে গুণগুলো নির্ধারণঃ
“মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বপ্রথম যার সত্তার পূর্বে কোন কিছুই ছিল না এবং সব কিছু ধ্বংসের পরও তিনি একাই থাকবেন অর্থাৎ সর্বশেষ। তিনি সদা প্রকাশ ও প্রচ্ছন্ন।” অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ আদি, অন্ত, সদা প্রকাশিত ও সদা প্রচ্ছন্ন। তাজ কোম্পানী লিমিটেড রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করণার্থে রসূলকে এমন কতকগুলো বিশেষ গুণে গুণান্বিত করেছেন, যা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। হাদীসের পুস্তকগুলিতে রসূলের যে সমস্ত গুণের বর্ণনা করা হয়েছে, তা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রসূলের উক্ত রূপ গুণ পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে আমরা কুরআন মাজীদে ঐ গুণগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা সূরা হাদীদে ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
“তিনি অনাদি হিসাবে আদি ও অনন্ত হিসাবে অন্ত এবং বাহ্যজ্ঞানের হিসাবে স্বতঃ প্রকাশিত ও তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে সদা প্রচ্ছন্ন এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয় সম্বন্ধে সর্ববেত্তা।” (সূরা হাদীদ ৩)
আল্লাহ আদি এবং অন্তের ব্যাখ্যা হচ্ছে, সমস্ত সৃষ্টির পূর্বেও আল্লাহ বিদ্যমান ছিলেন এবং সব কিছু লয় হবার পরেও আল্লাহ বিদ্যমান থাকবেন। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“যা কিছু তাতে আছে, সমস্তই নশ্বর। আর অবিনশ্বর হয়ে রবে তোমার মহাপ্রতাপ মঙ্গল বিধান প্রভুর জাত (সত্তা)।” উল্লিখিত মহাবিনাশের পর যে সত্তা বিরাজমান থাকবেন তিনিই হচ্ছেন অন্ত এবং তিনিই আমাদের আল্লাহ। তিনি মুহাম্মাদ নন। সূরা হাদীদের আয়াত “জাহের ও বাতেন শব্দের অর্থ যথাক্রমে প্রকাশমান ও প্রচ্ছন্ন। ইমাম রাগেত ও শওকানী অনুরূপ অর্থ করেছেন। বাহ্য জ্ঞানের হিসেবে আল্লাহ সদা স্বতঃ প্রকাশমান এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে আল্লাহ প্রচ্ছন্ন বা লুক্কায়িত
মুসলমানদের আকীদা এবং বিশ্বাস এই যে, আল্লাহই একমাত্র সত্তা যিনি অনাদি হিসেবে আদি অর্থাৎ সর্বপ্রথম। অন্য কথায় সৃষ্টির পূর্বে তিনিই প্রথম এবং অনন্ত হিসেবে অন্ত, অর্থাৎ সব কিছুর ধ্বংসের পরেও তিনি একাই বিরাজমান। আর বাহ্য জ্ঞানের হিসেবে সদা প্রকাশ তিনি এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে সদা প্রচ্ছন্ন তিনি। এই আকীদা ছাড়া ভিন্ন আকীদা বা বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে রসূলকে আল্লাহ বলে বিশ্বাস করার সমতুল্য। কারণ আল্লাহ যে গুণ গরিমা নিজের সত্তার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা রসূলকে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে রসূল তাহলে আল্লাহর সমতুল্য? এরূপ আকীদা কোন ক্রমেই পোষণ করা যেতে পারে না
মনে রাখবেন! যে কেউই এরূপ আকীদা পোষণ করবে সেই পৌত্তলিক হয়ে যাবে। উপরন্তু যখন কিছুই ছিল না তখনও একমাত্র আল্লাহর সত্তাই ছিল বিরাজমান এবং যখন সব কিছুই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাবে, তখনও একমাত্র আল্লাহই স্বতঃই প্রকাশমান এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়েও আল্লাহই সদা প্রচ্ছন্ন বা লুক্কায়িত। অহেতুক মর্যাদা দান করলেই রসূলের পদ মর্যাদা বৃদ্ধি ও হবে না এবং তিনি সৃষ্টি থেকে স্রষ্টার আসনও লাভ করবেন না। সাধারণ নিয়মানুযায়ী সর্বদা অতি ভক্তি কল্যাণের
পরিবর্তে অকল্যাণই ধারণ করে। অনুরূপভাবে উক্ত বিশেষণগুলোর দ্বারা রসূলকে বিশেষিত করলে, তিনি আল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবেন না এবং এরূপ আকীদা পোষণকারীদেরকে শাফা'আত করে বেহেশতেও প্রবেশ করাতে পারবেন না। প্রত্যেকের স্মরণ রাখা উচিত যে, স্বয়ং আল্লাহ শির্ক গুনাহ ক্ষমা করবেন না। যারা আল্লাহর গুণে রসূলকে গুণান্বিত করে পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে এবং হবে। তাদেরকে শাফাআতের মাধ্যমে তরিয়ে নেবার প্রশ্নই উঠে না।
(আরবী)
“আর যে কোন স্থানে তোমরা অবস্থান কর না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং তোমাদের কৃত কর্মগুলো সম্বন্ধে আল্লাহ হচ্ছেন সম্যক পর্যবেক্ষক।” সূরা হাদীদ৪) উক্ত আয়াতে আল্লাহ তোমাদের সাথে (সঙ্গে) আছেন অর্থ তোমরা তাঁর গোচরে আছ। এর অর্থ এ নয় যে, প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ বিরাজমান। যেমন অদ্বৈতবাদীরা আকীদা পোষণ করে থাকে যে, প্রত্যেকে আসলে আল্লাহ। ভ্রমবশতঃ অনেক মানুষ এ রকম মনে করে থাকে। তাদের মতে কিছু তপজপ করলে সে ভ্রম ভেঙ্গে যায়। প্রতিটি মানুষ আল্লাহরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! অদ্বৈতবাদের আকীদা বেদান্তবাদ থেকে নেয়া হয়েছে। তারা বহু ইশ্বর আছে বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। এ মতবাদকে সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলামে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা বলতে চাচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ সদা সর্বস্থানে উপস্থিত। আল্লাহ এ গুণকে কোন বান্দার সাথে জড়িত করার অর্থই হলো আল্লাহর সাথে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সমতুল্য করা। আল্লাহর সাথে অন্য যে কোন সত্তাকে সমতুল্য করা স্পষ্ট শির্ক। এ মহাপাপ সম্পাদনকারীরা চিরস্থায়ী জ্বলন্ত হুতাশনে জ্বলবে।
এবারে শুনুন! যারা রসূলকে সদা সর্বস্থানে উপস্থিত জানে, তারা ‘ইয়া আল্লাহ' এর সাথে ইয়া মুহাম্মাদু' বা 'ইয়া রসূলাল্লাহ' বলে সমভাবে আহ্বান করে থাকে। আরবী ভাষায় ‘ইয়া’ শব্দটি জীবিত সত্তা ব্যক্তিকে নিকটে থেকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এভাবে সম্বোধন করে আহ্বান করার অর্থ হচ্ছে, সে শুনতে পায়। যেহেতু আমরা সকলে আল্লাহর গোচরে আছি এবং মহান আল্লাহ তার মহতী জ্ঞানের মাধ্যমে সদা আমাদের সাথে বিরাজমান।
সেহেতু তাকে বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) স্বীয় প্রজ্ঞা দ্বারা সদা সর্বস্থানে উপস্থিত নন গতিকে অথবা বা এরূপ আর কোন আহ্বানসূচক শব্দ ব্যবহার করে ডাকা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এরূপ আহ্বান করা সিদ্ধ থাকলে আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। এ কথাকে যে কোন বিচার-বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীকার করতে পারে না। যারা খাঁটি একত্ববাদে বিশ্বাসী, তারা কোন মতেই বা বলে রসূলকে সম্বোধন করতে পারে না। রসূল যখন জীবিত ছিলেন তখন বা, অথবা ইত্যাদি বলা বৈধ ছিল। রসূলের মৃত্যুর পরই সাহাবাবৃন্দ নামাযে আত্তাহিয়্যাতু ......... পাঠের সময় “আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীও এর স্থলে ‘আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি’ বলেছিলেন।
যেহেতু রসূল জীবিত নেই, সেহেতু রসূলের সাহাবাবৃন্দ আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিও’ অর্থাৎ হে নবী তোমার প্রতি সালাম, বললে নবী করীম (সাঃ)-কে জীবিত অবস্থায় সম্বোধন করার মতো মনে হয়। সুতরাং তারা ‘আইয়ুহান্নাবীও’ ‘হে নবী তোমার প্রতি সালাম' এর স্থলে নবীর প্রতি সালাম হোক’-‘আলান্নাবী' বলেছেন। সাহাবাবৃন্দ সতর্কতামূলক এ কাজ করেছেন। অন্যথায় পরে আগত উম্মতবৃন্দ মনে করতে পারে যে,-বলতে নবী করীম (সাঃ) জীবিত আছেন বলে বুঝায়। অথবা এভাবে আহ্বান করলে রসূল শ্রবণ করতে পারেন ইত্যাদি দ্বারা এ পথ পূর্বেই বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছেন। এতদসত্ত্বেও
বিদআতীর দল রসূলকে বা অথবা অনুরূপ শব্দ প্রয়োগে ডাকতে কোন ত্রুটি করে না। বড় আশ্চর্যের বিষয়! প্রায় মসজিদের ডান পাশে। এবং বাম পাশে লিখে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাহলে কি আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ সমান? কস্মিনকালেও না। উপরন্তু কথা হচ্ছে এই যে, ইয়া মুহাম্মাদ বললে রসূল (সাঃ) কস্মিনকালেও শ্রবণ করেন না। ইয়া রসূলাল্লাহ বলতে রসূল শ্রবণ করেন-এরূপ কোন দলিল প্রমাণ কুরআন-সুন্নাহতে নেই। রসূল সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকলে শ্রবণ করা সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে কুরআন কি বলছে? আমরা সেই দিকে পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কুরআনের বর্ণনা মতে বিবি মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর ‘অভিভাবক’ কে হবেন এ নিয়ে বাদানুবাদ হয়েছিল। প্রত্যেকের মন-বাসনা ছিল যে, সে বিবি মারইয়ামের অভিভাবক হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদের সূচনা হয়। তদানিন্তন কালে ইয়াহুদ সমাজে কোন মতভেদ ঘটলে তার ফয়সালা লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা করার নিয়ম প্রচলিত ছিল। বিবি মারইয়ামের অভিভাবক নির্বাচনের জন্যও তারা লটারীর তীরগুলো অথবা কলমগুলো ব্যবহার করেছিল। লটারীতে রসূল জাকারিয়া আলাইহিস সালাম বিবি মারইয়ামের অভিভাবক নিযুক্ত হন। এ ঘটনা ব্যক্ত করে আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
হে রসূল! এগুলো হচ্ছে অতীতের অজ্ঞাত সংবাদ যা আমরা তোমাকে অহী দ্বারা জানিয়ে দিচ্ছি; তাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি মারইয়ামের অভিভাবক হতে পারবে-(এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্য) যখন তারা নিজেদের লটারীর তীরগুলো নিক্ষেপ করেছিল, তখন তো তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না, আর যখন তারা (এ ব্যাপারে নিয়ে) বাদানুবাদ করছিল তখনও তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না। (সূরা আলে ইমরান ৪৪)
উক্ত আয়াতে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আল্লাহ সম্বোধন করে বলেছেন যে, “বিবি মারইয়ামের ঘটনা প্রবাহ যা তোমার অজ্ঞাত ছিল, অহী দ্বারা আল্লাহ তোমার কাছে তা ব্যক্ত করে দিয়েছেন।” অহী আসার পূর্বে রসূল এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। প্রমাণিত হলো, রসূল অজ্ঞাত জানতেন না। একই আয়াতে আল্লাহ আরও বলেছেন যে, যখন তারা জুয়ার তীরগুলো নিক্ষেপ করছিল, সে সময়ে তুমি তাদের নিকটে উপস্থিত ছিলে না। অর্থাৎ রসূল যদি সদা সর্বস্থানে উপস্থিত বা হাজের নাজের হতেন, তাহলে আল্লাহ এ আয়াত দু’দু' বার তখন তুমি তাদের কাছে উপস্থিত ছিলে না’ বলতেন না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! জেনে রাখুন সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকা আল্লাহর গুণ। এ গুণ দ্বারা কোন দাসকে বা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গুণান্বিত করা চলে না। কল্পিত মর্যাদা। দানের মাধ্যমে রসূলের মর্যাদা কস্মিনকালেও বৃদ্ধি হয় না বরং আল্লাহর সাথে রসূলকে তুলনা করলে শির্ক নামের পাপই উপার্জন হবে। মনে করুন, থানার সাধারণ একজন কনস্টেবলকে পুলিশের জেনারেল বললে যে ওর সাথে বিদ্রুপ ও উপহাস করা হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তদ্রুপ, সৃষ্ট জীবকে স্রষ্টার সমতুল্য হাজের নাজের মনে করা হলে রসূলের অবমাননাই যে করা হবে, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। এরা কল্পিত মর্যাদা দান করে রসূলের অবমাননা করতেও ত্রুটি করছে না।
কিয়ামত দিবসে যখন রসূল (সাঃ)-কে অবহিত করা হবে যে, এরা তোমাকে আল্লাহর মতো হাজের নাজের জানত, সেদিন রসূল রাগান্বিত হয়ে আল্লাহর নিকট অভিহিত করবেন। তিনিই কেনই বা অভিযোগ করবেন না? আল্লাহর একত্ববাদ ভিন্ন, আর আল্লাহর বান্দা মুহাম্মাদের নবুওত ও রিসালাত ভিন্ন জিনিস। সৃষ্টি ও সৃষ্টা কস্মিনকালেও সমতুল্য পদাধিকারী ও মর্যাদাবান হতে পারে না।
আরও শুনুন! আল্লাহ তা'আলা অহী দ্বারা পূর্বের উম্মত বর্গের ও নবীগণের সংবাদ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে অবহিত করেছেন। যে বিষয়গুলো রসূল জ্ঞাত ছিলেন না, সেগুলো তাকে জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে এই যে, তিনি আপনার উম্মতের কাছে। তা পাঠ করে শুনাবেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। অনুরূপভাবে মূসা আলাইহিস সালাম মিসর থেকে মাদইয়ানে গমন করেছিলেন। সেখান থেকে মিসরে প্রত্যাবর্তনের সময় তুর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে তাকে নবুওত দান করে ফিরআউনের নিকটে পাঠানো হয়েছিল। এ সমুদয় ঘটনা বর্ণনা করে রসূলকে সম্বোধন করে আল্লাহ এরশাদ করেছেন?
(আরবী)
“আর তুমি (পর্বতের) পশ্চিম দিকে উপস্থিত ছিলে না যখন আমরা মূসার প্রতি নবুওতের ব্যাপারটাকে সুসম্পন্ন করে দিলাম এবং তুমি তার সাক্ষাৎ দর্শকও ছিলে না।” (সুরা কাসাস ৪৪)
কুরআনের বাহক মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) মূসার যুগে জন্মগ্রহণ করেননি। সে ইতিবৃত্তগুলো অবগত হওয়ারও তার কোন সম্ভাবনা ছিল না। বস্তুত তিনি এসব তত্ত্ব অবগত হয়েছেন অহী দ্বারা। অহীর মারফতে জেনে সঠিক ঘটনা বর্ণনা করতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি। রসূল (সাঃ) হাজের নাজের হলে মূসা আলাইহিস সালাম-কে নবুওত প্রদানের সময় তূর পর্বতের পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং সাক্ষাৎ দর্শকও ছিলেন না। প্রমাণিত হলো, রসূল (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত থাকেন না এবং তিনি হাজের নাজেরও নন।
(আরবী)
কিন্তু (অবস্থা এই যে) বহু যুগ সমাজকে আমরা পয়দা করলাম, সে মতে এদের জীবনকাল দীর্ঘ হয়ে গেল, অধিকন্তু তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যেও বসবাস করনি, যে মতে মক্কাবাসীদিগের নিকট আমাদের আয়াতগুলোর আবৃত্তি করছ। বরং হে মুহাম্মাদ! আমরা তোমাকে নবীরূপে প্রেরণ করতে কৃত সংকল্প ছিলাম। সূরা কাসাস৪৫), কাল চক্রের আবর্তন ও বিবর্তনে বহু যুগ সমাজের আবর্তন ও বিবর্তন ঘটেছিল, তাদের ঘটনা এবং মাদইয়ানবাসীদের ঘটনা অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়ে মক্কাবাসীদের কাছে পড়ে শুনাচ্ছ। অথচ তুমি মাদইয়ান নগরীতে বসবাস করনি। বিগত উম্মতের কাহিনী অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়েই বলতে পারছ। অন্যথায় তুমি কিছুই বলতে পারতে না। রসূল (সাঃ) যদি হাজের নাজের হতেন, তাহলে তাঁর অহীর
প্রয়োজন থাকত না। কিন্তু রসূল (সাঃ) যেহেতু সদা সর্বস্থানে উপস্থিত ছিলেন না, কাজেই কোন কিছুর বর্ণনা দান করা নবুওত লাভের দরুনই সম্ভব হয়েছে।
আল্লাহ আরও বলেন।
(আরবী)
“আর তুমি (সে সময়) তুর পর্বতের পার্শ্বেও উপস্থিত ছিলে না যখন (মূসাকে) আমরা আহ্বান করেছিলাম। তবে তোমার প্রভুর রহমত বশতঃ (তুমি এসব বৃত্তান্ত অবগত হতে পারলে)।” (সূরা কাসাস ৪৬)
আলোচ্য আয়াতেও বলা হয়েছে- মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের কথোপকথনের সময় নবী (সাঃ) তূর পর্বতের পার্শ্বে উপস্থিত ছিলেন। হাজের নাজের থাকলে তা বলা সম্ভব হতো। কিন্তু আল্লাহর রহমত নবুওত লাভের দরুন অহী দ্বারা জ্ঞাত হয়ে সঠিক ঘটনা বলা সম্ভব হচ্ছে।
দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণ করেছি যে, নবী (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত নন। সুতরাং তাকে! বলে সম্বোধন করার মত ... বা অনুরূপ শব্দ ইয়া রসূলাল্লাহ ইত্যাদি প্রয়োগ করা শরীয়ত সম্মত হতে পারে না। তবে কুরআনের আয়াত পাঠের সময় অথবা হাদীসের মধ্যে যেখানে রসূলকে সম্বোধন করা হয়েছে, সেগুলোকে হুবহু পাঠ করা বৈধ আছে। আর একটি কথা স্মরণ রাখবেন! নিয়ত গুণে সব কিছুর ফয়সালা আল্লাহ করবেন। নিয়ত ভাল তো সব ভাল, অন্যথায় পুণ্যের পরিবর্তে শির্ক নামের মহাপাপের দায়ে অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে। খুব সাবধানে কথাবার্তা বলা উচিত। আল্লাহ বলেনঃ মুহাম্মাদ (সাঃ) হাজের নাজের নন। আর এক শ্রেণীর বিদআতী মৌলবী কল্পিত মর্যাদা দান করতে গিয়ে বলছে যে, তিনি (সাঃ) সদা সর্বস্থানে উপস্থিত এবং হাজের ও নাজের। তবু বলুন! আল্লাহ সত্যবাদী না যারা বলে যে, হাজের নাজের তারা সত্যবাদী? নিশ্চয় বলবেন যে, আল্লাহ সত্যবাদী এবং কল্পিত মর্যাদা দানকারীর দল মিথ্যাবাদী।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ
কল্পিত মর্যাদা দানকারীরা রসূলকে আল্লাহর যাবতীয় গুণ গরিমা দান করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। এমনকি তারা রসূলকে আল্লাহর অবতার বলতেও ত্রুটি করেনি। বক্ষ্যমান প্রবন্ধে আমরা দু'একটি কল্পিত মর্যাদা দান করার উল্লেখ করতে প্রয়াশ পাব ইনশাআল্লাহ। তাজ কোম্পানী কর্তৃক প্রকাশিত কুরআন মাজীদের প্রারম্ভে আল্লাহ তাআলার একশত গুণ বাচক নামের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে শেষের দিকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরও একশত গুণ বাচক নাম প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। রসূলের গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে রসূলের চারটি এমন গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুণগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, অন্য কথায়। যেগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর সত্তায় প্রযোজ্য। সে গুণগুলো নির্ধারণঃ
“মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বপ্রথম যার সত্তার পূর্বে কোন কিছুই ছিল না এবং সব কিছু ধ্বংসের পরও তিনি একাই থাকবেন অর্থাৎ সর্বশেষ। তিনি সদা প্রকাশ ও প্রচ্ছন্ন।” অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ আদি, অন্ত, সদা প্রকাশিত ও সদা প্রচ্ছন্ন। তাজ কোম্পানী লিমিটেড রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করণার্থে রসূলকে এমন কতকগুলো বিশেষ গুণে গুণান্বিত করেছেন, যা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। হাদীসের পুস্তকগুলিতে রসূলের যে সমস্ত গুণের বর্ণনা করা হয়েছে, তা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রসূলের উক্ত রূপ গুণ পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে আমরা কুরআন মাজীদে ঐ গুণগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা সূরা হাদীদে ইরশাদ করেছেনঃ
(আরবী)
“তিনি অনাদি হিসাবে আদি ও অনন্ত হিসাবে অন্ত এবং বাহ্যজ্ঞানের হিসাবে স্বতঃ প্রকাশিত ও তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে সদা প্রচ্ছন্ন এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয় সম্বন্ধে সর্ববেত্তা।” (সূরা হাদীদ ৩)
আল্লাহ আদি এবং অন্তের ব্যাখ্যা হচ্ছে, সমস্ত সৃষ্টির পূর্বেও আল্লাহ বিদ্যমান ছিলেন এবং সব কিছু লয় হবার পরেও আল্লাহ বিদ্যমান থাকবেন। আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“যা কিছু তাতে আছে, সমস্তই নশ্বর। আর অবিনশ্বর হয়ে রবে তোমার মহাপ্রতাপ মঙ্গল বিধান প্রভুর জাত (সত্তা)।” উল্লিখিত মহাবিনাশের পর যে সত্তা বিরাজমান থাকবেন তিনিই হচ্ছেন অন্ত এবং তিনিই আমাদের আল্লাহ। তিনি মুহাম্মাদ নন। সূরা হাদীদের আয়াত “জাহের ও বাতেন শব্দের অর্থ যথাক্রমে প্রকাশমান ও প্রচ্ছন্ন। ইমাম রাগেত ও শওকানী অনুরূপ অর্থ করেছেন। বাহ্য জ্ঞানের হিসেবে আল্লাহ সদা স্বতঃ প্রকাশমান এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে আল্লাহ প্রচ্ছন্ন বা লুক্কায়িত
মুসলমানদের আকীদা এবং বিশ্বাস এই যে, আল্লাহই একমাত্র সত্তা যিনি অনাদি হিসেবে আদি অর্থাৎ সর্বপ্রথম। অন্য কথায় সৃষ্টির পূর্বে তিনিই প্রথম এবং অনন্ত হিসেবে অন্ত, অর্থাৎ সব কিছুর ধ্বংসের পরেও তিনি একাই বিরাজমান। আর বাহ্য জ্ঞানের হিসেবে সদা প্রকাশ তিনি এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে সদা প্রচ্ছন্ন তিনি। এই আকীদা ছাড়া ভিন্ন আকীদা বা বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে রসূলকে আল্লাহ বলে বিশ্বাস করার সমতুল্য। কারণ আল্লাহ যে গুণ গরিমা নিজের সত্তার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা রসূলকে প্রদান করার অর্থ হচ্ছে রসূল তাহলে আল্লাহর সমতুল্য? এরূপ আকীদা কোন ক্রমেই পোষণ করা যেতে পারে না
মনে রাখবেন! যে কেউই এরূপ আকীদা পোষণ করবে সেই পৌত্তলিক হয়ে যাবে। উপরন্তু যখন কিছুই ছিল না তখনও একমাত্র আল্লাহর সত্তাই ছিল বিরাজমান এবং যখন সব কিছুই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাবে, তখনও একমাত্র আল্লাহই স্বতঃই প্রকাশমান এবং তত্ত্ব জ্ঞানের দিক দিয়েও আল্লাহই সদা প্রচ্ছন্ন বা লুক্কায়িত। অহেতুক মর্যাদা দান করলেই রসূলের পদ মর্যাদা বৃদ্ধি ও হবে না এবং তিনি সৃষ্টি থেকে স্রষ্টার আসনও লাভ করবেন না। সাধারণ নিয়মানুযায়ী সর্বদা অতি ভক্তি কল্যাণের
পরিবর্তে অকল্যাণই ধারণ করে। অনুরূপভাবে উক্ত বিশেষণগুলোর দ্বারা রসূলকে বিশেষিত করলে, তিনি আল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবেন না এবং এরূপ আকীদা পোষণকারীদেরকে শাফা'আত করে বেহেশতেও প্রবেশ করাতে পারবেন না। প্রত্যেকের স্মরণ রাখা উচিত যে, স্বয়ং আল্লাহ শির্ক গুনাহ ক্ষমা করবেন না। যারা আল্লাহর গুণে রসূলকে গুণান্বিত করে পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে এবং হবে। তাদেরকে শাফাআতের মাধ্যমে তরিয়ে নেবার প্রশ্নই উঠে না।
মুহাম্মাদ (সাঃ) মানুষ নবী ছিলেন। নিম্নবর্ণিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস থেকে এ দাবীর সমর্থন পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন?
(আরবী)
বলে দাওঃ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনুরূপ একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নই, আমার প্রতি অহী করা হয়।” (সূরা কাহাফ ১১০)।
আলোচ্য আয়াতের মুহাম্মাদ (সাঃ) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন ও আমি মানুষ, তোমাদের মতোই মানুষ। তবে পার্থক্য এই যে, আমার কাছে অহী আসে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আকরাম খা লিখেছেন : “মানুষের জন্য এসেছেন মানুষ মোস্তফা, মাটির মানুষ মোস্তফা, মানুষের সব দুঃখ দরদের সঙ্গী মোস্তফা, সব অভাব অনুভবে সমভাগী মোস্তফা। তিনি দেবতা নন, ফেরেশতা নন, অবতার নন-তিনি হচ্ছেন আমেনা মায়ের ইয়াতিম পুত্র মোস্তফা, আব্দুল মুত্তালিবের কাঙ্গাল পৌত্র মোস্তফা, কোরেশের রাখাল বালক মোস্তফা।” তফসিরুল কুরআন, ৩য় খণ্ড, ৫৯৮ পৃঃ)
প্রথম প্রমাণঃ
মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) অন্যান্য মানুষেরই মত আদম সন্তান ছিলেন। মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও পানাহার করতেন। অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রসূলেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল। মানুষের মত ভুল-ভ্রান্তি রসূলের হতো। তিনি বলেছেন :
(আরবী)
“আমি মানুষ, তোমাদের মতোই ভুলে যাই। ভুলে গেলে অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দেবে।”
দ্বিতীয় প্রমাণঃ
অন্যান্য মানুষের মত রসূলেরও বংশ তালিকা ছিল। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমেনা, দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব। এ কথা সকলেই জানে। রসূল যে মানুষ নবী ছিলেন, কোরেশ বংশে জন্মগ্রহণ তার বিরাট প্রমাণ।
তৃতীয় প্রমাণঃ
মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষেরই মতো পানাহার করতেন। হযরতু পানাহার করতেন এজন্যেই কাফের সংঘ বলত
(আরবী)
“মুহাম্মাদ কেমন রসূল যে, খাদ্য ভক্ষণ করে?” এ কথাটি মক্কাবাসী পৌত্তলিকদের। এ প্রশ্নের উত্তর দানকালে আল্লাহ রসূলের খাদ্য গ্রহণের কথা স্বীকার করে বলেছেন যে, যত রসূল পাঠিয়েছি, তাদের সকলে খাদ্য ভক্ষণকারী ছিলেন।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“আমরা যত রসূল পাঠিয়েছি, তারা সকলেই খাদ্য ভক্ষণ করতেন। আমরা তাদের এমন দেহ গঠন করিনি যে, তারা খাদ্য গ্রহণ করবে না এবং চিরস্থায়ী বসবাস করবে।”
অর্থাৎ মানুষের গঠন প্রণালী অনুযায়ী বিনা আহারে বাঁচতেও পারবে না এবং মানুষ হিসেবে তাদের কেউই চিরস্থায়ী বসবাসও করতে পারে না। ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তার মাতা খাদ্য গ্রহণ করতেন। এজন্যে তারা আল্লাহর অবতারও হতে পারেননি বা পরমেশ্বর ইত্যাদি কিছুই হতে পারেননি।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“বিবি মারইয়ামের পুত্র মাসীহ রসূল বৈ আর কিছুই ছিলেন না। তার পূর্বে বহু রসূল অতীত হয়ে গেছেন, আর তাঁর মাতা সত্যভাষীণী। তারা উভয়ই খাদ্য ভক্ষণ করতেন।” (সূরা আল-মায়িদা ৭৫)
যেহেতু সমস্ত নবী খাদ্য ভক্ষণ করতেন, সেহেতু মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও একজন খাদ্য ভক্ষণকারী রসূল ছিলেন। এটা তার মানুষ হবার প্রধান প্রমাণ।
চতুর্থ প্রমাণঃ
রসূল অন্যান্য নবীগণের মতোই পরলোক গমন করেছেন। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
“নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যু বরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে।” সূরা যুমার ৩০) নবী (সাঃ) অতি মানব বা পরমেশ্বর আল্লাহ হলে পরলোক গমন করতেন না। মুহাম্মাদ (সাঃ) মানুষ নবী ছিলেন, তাই তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ছিল। পক্ষান্তরে আল্লাহ হচ্ছেন চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই।
আল্লাহ বলেনঃ
“আর হে মুহাম্মাদ! তুমি এমন চিরঞ্জীব সত্তার প্রতি আস্থা স্থাপন কর, যার মৃত্যু নেই। সুতরাং মৃত্যু বরণ করা মানুষ হবারই প্রমাণ।
উল্লিখিত প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা দিবালোকের মতো প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) একজন মানুষ রসূল ছিলেন। অন্যান্য মানুষেরই মতো তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছিল। অন্যান্য মানুষের মতো তিনিও পানাহার করতেন এবং সকলের মতো তিনিও পরলোক গমন করেছেন। এ সবই হচ্ছে মানুষ নবী হবার প্রমাণ। পক্ষান্তরে তিনি পরমেশ্বর হলে বা আল্লাহর অবতার হলে বা অতি মানব হলে বা নূর নবী হলে উল্লিখিত কোন বৈশিষ্ট্যই তাঁর থাকত না।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন কুরআনে রসূলকে সম্বোধন করে বলেছেন :
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ।” এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, আলোচ্য আয়াতটি (সূরা কাহাফের শেষের আয়াত) আল্লাহর কালাম হিসেবে চির সত্য। মিথ্যার লেশ মাত্র এতে নেই। এক্ষণে বলুন? আল্লাহ বলেন, মুহাম্মাদ মানুষের মতোই একজন মানুষ নবী ছিলেন। এ কথার অর্থ হচ্ছে এই যে, নবী (সাঃ) নূর নবী বা অবতার বা পরমেশ্বর ইত্যাদি কিছুই ছিলেন না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এবারে বলুন তো, আল্লাহ সত্যবাদী, না যারা নিজ নিজ কল্পনানুযায়ী রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করণার্থে উপাধি দানকারী তারা সত্যবাদী? আমরা আশা করি আপনারা প্রত্যেকেই আল্লাহর কালামকে সত্য বলে মনে করবেন।
(আরবী)
বলে দাওঃ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনুরূপ একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নই, আমার প্রতি অহী করা হয়।” (সূরা কাহাফ ১১০)।
আলোচ্য আয়াতের মুহাম্মাদ (সাঃ) উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন ও আমি মানুষ, তোমাদের মতোই মানুষ। তবে পার্থক্য এই যে, আমার কাছে অহী আসে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আকরাম খা লিখেছেন : “মানুষের জন্য এসেছেন মানুষ মোস্তফা, মাটির মানুষ মোস্তফা, মানুষের সব দুঃখ দরদের সঙ্গী মোস্তফা, সব অভাব অনুভবে সমভাগী মোস্তফা। তিনি দেবতা নন, ফেরেশতা নন, অবতার নন-তিনি হচ্ছেন আমেনা মায়ের ইয়াতিম পুত্র মোস্তফা, আব্দুল মুত্তালিবের কাঙ্গাল পৌত্র মোস্তফা, কোরেশের রাখাল বালক মোস্তফা।” তফসিরুল কুরআন, ৩য় খণ্ড, ৫৯৮ পৃঃ)
প্রথম প্রমাণঃ
মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) অন্যান্য মানুষেরই মত আদম সন্তান ছিলেন। মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও পানাহার করতেন। অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রসূলেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল। মানুষের মত ভুল-ভ্রান্তি রসূলের হতো। তিনি বলেছেন :
(আরবী)
“আমি মানুষ, তোমাদের মতোই ভুলে যাই। ভুলে গেলে অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দেবে।”
দ্বিতীয় প্রমাণঃ
অন্যান্য মানুষের মত রসূলেরও বংশ তালিকা ছিল। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমেনা, দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব। এ কথা সকলেই জানে। রসূল যে মানুষ নবী ছিলেন, কোরেশ বংশে জন্মগ্রহণ তার বিরাট প্রমাণ।
তৃতীয় প্রমাণঃ
মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষেরই মতো পানাহার করতেন। হযরতু পানাহার করতেন এজন্যেই কাফের সংঘ বলত
(আরবী)
“মুহাম্মাদ কেমন রসূল যে, খাদ্য ভক্ষণ করে?” এ কথাটি মক্কাবাসী পৌত্তলিকদের। এ প্রশ্নের উত্তর দানকালে আল্লাহ রসূলের খাদ্য গ্রহণের কথা স্বীকার করে বলেছেন যে, যত রসূল পাঠিয়েছি, তাদের সকলে খাদ্য ভক্ষণকারী ছিলেন।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“আমরা যত রসূল পাঠিয়েছি, তারা সকলেই খাদ্য ভক্ষণ করতেন। আমরা তাদের এমন দেহ গঠন করিনি যে, তারা খাদ্য গ্রহণ করবে না এবং চিরস্থায়ী বসবাস করবে।”
অর্থাৎ মানুষের গঠন প্রণালী অনুযায়ী বিনা আহারে বাঁচতেও পারবে না এবং মানুষ হিসেবে তাদের কেউই চিরস্থায়ী বসবাসও করতে পারে না। ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তার মাতা খাদ্য গ্রহণ করতেন। এজন্যে তারা আল্লাহর অবতারও হতে পারেননি বা পরমেশ্বর ইত্যাদি কিছুই হতে পারেননি।
আল্লাহ বলেন :
(আরবী)
“বিবি মারইয়ামের পুত্র মাসীহ রসূল বৈ আর কিছুই ছিলেন না। তার পূর্বে বহু রসূল অতীত হয়ে গেছেন, আর তাঁর মাতা সত্যভাষীণী। তারা উভয়ই খাদ্য ভক্ষণ করতেন।” (সূরা আল-মায়িদা ৭৫)
যেহেতু সমস্ত নবী খাদ্য ভক্ষণ করতেন, সেহেতু মুহাম্মাদ (সাঃ)-ও একজন খাদ্য ভক্ষণকারী রসূল ছিলেন। এটা তার মানুষ হবার প্রধান প্রমাণ।
চতুর্থ প্রমাণঃ
রসূল অন্যান্য নবীগণের মতোই পরলোক গমন করেছেন। এরশাদ হচ্ছে?
(আরবী)
“নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যু বরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে।” সূরা যুমার ৩০) নবী (সাঃ) অতি মানব বা পরমেশ্বর আল্লাহ হলে পরলোক গমন করতেন না। মুহাম্মাদ (সাঃ) মানুষ নবী ছিলেন, তাই তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ছিল। পক্ষান্তরে আল্লাহ হচ্ছেন চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই।
আল্লাহ বলেনঃ
“আর হে মুহাম্মাদ! তুমি এমন চিরঞ্জীব সত্তার প্রতি আস্থা স্থাপন কর, যার মৃত্যু নেই। সুতরাং মৃত্যু বরণ করা মানুষ হবারই প্রমাণ।
উল্লিখিত প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা দিবালোকের মতো প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) একজন মানুষ রসূল ছিলেন। অন্যান্য মানুষেরই মতো তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ছিল। অন্যান্য মানুষের মতো তিনিও পানাহার করতেন এবং সকলের মতো তিনিও পরলোক গমন করেছেন। এ সবই হচ্ছে মানুষ নবী হবার প্রমাণ। পক্ষান্তরে তিনি পরমেশ্বর হলে বা আল্লাহর অবতার হলে বা অতি মানব হলে বা নূর নবী হলে উল্লিখিত কোন বৈশিষ্ট্যই তাঁর থাকত না।
আল্লাহ রাব্বল আলামীন কুরআনে রসূলকে সম্বোধন করে বলেছেন :
(আরবী)
“হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ।” এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, আলোচ্য আয়াতটি (সূরা কাহাফের শেষের আয়াত) আল্লাহর কালাম হিসেবে চির সত্য। মিথ্যার লেশ মাত্র এতে নেই। এক্ষণে বলুন? আল্লাহ বলেন, মুহাম্মাদ মানুষের মতোই একজন মানুষ নবী ছিলেন। এ কথার অর্থ হচ্ছে এই যে, নবী (সাঃ) নূর নবী বা অবতার বা পরমেশ্বর ইত্যাদি কিছুই ছিলেন না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এবারে বলুন তো, আল্লাহ সত্যবাদী, না যারা নিজ নিজ কল্পনানুযায়ী রসূলের মর্যাদা বৃদ্ধি করণার্থে উপাধি দানকারী তারা সত্যবাদী? আমরা আশা করি আপনারা প্রত্যেকেই আল্লাহর কালামকে সত্য বলে মনে করবেন।
১। জন্ম থেকে নবুওত লাভ পর্যন্ত।
২। নবুওত থেকে মৃত্যু বরণ পর্যন্ত।
জন্ম থেকে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মানুষ ছিলেন। এতে কারো কোন মতভেদ নেই। মতভেদ দেখা দিয়েছে, নবী হবার পর তিনি মানবকূলের বন্ধনকে ছেদ করে গেছেন কিনা?
উপরে আমরা যে আলোচনা করেছি, তাতে অবশ্য দিবালোকের মতো প্রকাশ হয়ে গেছে যে, রসূল নবুওত লাভের পরেও চিরকাল মানুষই ছিলেন। তিনি কখনও নূর বা পরমেশ্বর বা অবতার ইত্যাদি কিছুই হয়ে যাননি।
২। নবুওত থেকে মৃত্যু বরণ পর্যন্ত।
জন্ম থেকে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মানুষ ছিলেন। এতে কারো কোন মতভেদ নেই। মতভেদ দেখা দিয়েছে, নবী হবার পর তিনি মানবকূলের বন্ধনকে ছেদ করে গেছেন কিনা?
উপরে আমরা যে আলোচনা করেছি, তাতে অবশ্য দিবালোকের মতো প্রকাশ হয়ে গেছে যে, রসূল নবুওত লাভের পরেও চিরকাল মানুষই ছিলেন। তিনি কখনও নূর বা পরমেশ্বর বা অবতার ইত্যাদি কিছুই হয়ে যাননি।
মুহাম্মাদ (সাঃ) ফজরে দু'রাকআত সুন্নাত পড়ে ডান পার্শ্বে মাথায় হাত দিয়ে শয়ন করে একটি দু'আ পাঠ করতেন। দু'আটি নিম্নরূপঃ
“হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর, আমার চোখে নূর, আমার কানে নূর, আমার দক্ষিণে নূর, আমার বামে নূর, আমার উপরে এবং নীচে নূর, আমার সামনে এবং পিছনে নূর, আমার জিহ্বায় নূর, আমার মাথায় রক্ত গোসতে নূর, আমার চুলে নূর, আমার শরীরের চর্মে নূরের আবির্ভাব করে দাও। আমার আত্মাতে আলোক তৈরী করে দাও, আমার জন্যে আলোক বা নূর বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে নূর দান কর।”
রসূলকে যারা নূর নবী বলে, তারা এ দু'আ থেকে এভাবে দলীল গ্রহণ করে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর কাছে যে মুনাজাত করেছেন, আল্লাহ তা'আলা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। রসূলের প্রার্থনা যে গ্রহণীয় তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। যখন আল্লাহ তা'আলা রসূলের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন, তখন রসূল নূরের নূর হয়ে গেছেন। নূর হবার পর তিনি মানুষ কিরূপে থাকেন? সুতরাং মুহাম্মাদ নূর নবী ছিলেন।
“হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর, আমার চোখে নূর, আমার কানে নূর, আমার দক্ষিণে নূর, আমার বামে নূর, আমার উপরে এবং নীচে নূর, আমার সামনে এবং পিছনে নূর, আমার জিহ্বায় নূর, আমার মাথায় রক্ত গোসতে নূর, আমার চুলে নূর, আমার শরীরের চর্মে নূরের আবির্ভাব করে দাও। আমার আত্মাতে আলোক তৈরী করে দাও, আমার জন্যে আলোক বা নূর বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে নূর দান কর।”
রসূলকে যারা নূর নবী বলে, তারা এ দু'আ থেকে এভাবে দলীল গ্রহণ করে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর কাছে যে মুনাজাত করেছেন, আল্লাহ তা'আলা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। রসূলের প্রার্থনা যে গ্রহণীয় তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। যখন আল্লাহ তা'আলা রসূলের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন, তখন রসূল নূরের নূর হয়ে গেছেন। নূর হবার পর তিনি মানুষ কিরূপে থাকেন? সুতরাং মুহাম্মাদ নূর নবী ছিলেন।
উক্ত প্রার্থনায় রসূল যে নূরের প্রার্থনা করেছেন, আল্লাহ তা'আলা তা সমস্ত মুসলমানকে দান করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী)
“এবং তোমাদের জন্য এমন এক নূর সৃষ্টি করে দিবেন, যার সাহায্যে তোমরা সত্য পথ চিনে চলতে পারবে এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করবেন।” (সূরা হাদীদ ২৮)
যখন আল্লাহ মুসলমানদিগকে নির্দিষ্টভাবে প্রথম শ্রেণীর মুমিন বান্দাদেরকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নূর প্রদান করেছেন, তখন কি সমস্ত মুসলমান নূরের মিশ্রিত হয়ে আল্লাহ হয়ে গেছেন? “নাউযুবিল্লাহ” এ কথা তো কেউই বলে না। এক বিশেষ নূরের জন্য প্রার্থনা করেছেন এজন্যে তিনি মানুষের বন্ধন ভেদ করে আল্লাহর নূরে মিশে গেছেন অথবা তিনি স্বয়ং আল্লাহ হয়ে গেছেন? এর যৌক্তিকতা কোথায়? মুসলমানদের প্রতি নূর প্রদান করা সত্ত্বেও তারা মানুষই ছিলেন আর ভবিষ্যতেও মানুষই থাকবেন। অনুরূপভাবে রসূলকে নূর প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি মানুষ নবী ছিলেন-নূর নবী ছিলেন না। কুরআন মাজীদ অবতরণ আরম্ভ হলে রসূলের নবুওত জীবনের সূচনা হয়। কুরআন অবতরণের জন্য আল্লাহ তাআলা যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা লক্ষণীয়ঃ
(আরবী)
“যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য যিনি নিজ বান্দার (মুহাম্মাদের) প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে বক্রতার লেশমাত্রও থাকতে দেননি।” (সূরা কাহাফ ১)
নবুওতের সূচনায় আল্লাহ রসূলকে দাস বা বান্দা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। নবী জীবনের প্রারম্ভে তিনি মানুষ ছিলেন, নূর ছিলেন না। রসূলের চাচা ও স্ত্রীর পরলোক গমনের পর এবং তিনি তায়েফ নগরী থেকে ফিরে আসার পর নবুওতের দশম সনে শবে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই রাত্রিতে রসূল যেভাবে আল্লাহর সন্নিধানে পৌছে নৈকট্য লাভ করেছেন, তা অন্যান্য নৈকট্যের তুলনায় নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট ছিল। এবারে শুনুন আল্লাহ এ সময়েও রসূলকে কি উপাধি দান করেছেন?
(আরবী)
“মহা মহিম তিনি, যিনি নিজ বান্দা (মুহাম্মাদকে) এক রাত্রি যোগে পর্যটন করালেন কাবা মসজিদ হতে দূরবর্তী (বায়তুল মুকাদ্দাস) মসজিদ পর্যন্ত।”
এখানেও রসূলকে ‘আব্দ' বলা হয়েছে। এই রাত্রিতে রসূল আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের অতীব নিকটবর্তী হয়েছিলেন। এতদসত্ত্বেও রসূলকে ‘আব্দিহি’ বা নিজ ‘বান্দা’ ছাড়া অন্য কোন শব্দ প্রয়োগ করা হয়নি। কারণ মানুষের জন্য ‘আব্দ’ উপাদির চেয়ে কোন বড় উপাধি নেই।
এই আলোচনায় আমরা দেখলাম যে, নবুওত জীবনের সূচনায়ও রসূল মানুষ নবী ছিলেন এবং নবুওত জীবনের দশম সনেও রসূল মানুষ নবী ছিলেন। আমাদের দাবী যে রসূল জীবনের শেষ পর্যন্ত মানুষই ছিলেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে নিশ্চয় আল্লাহ কুরআনের উল্লেখ পূর্বক জ্ঞাত করাতেন। রসূল কবে নূর নবী হলেন? তা আমাদের জানা নেই। কুরআন ও সুন্নাহতে রসূলকে কোথায়ও নূর নবী বলা হয়নি বরং তিনি যে অতি মানব বা ফেরেশতা ছিলেন না তার প্রমাণ কুরআনে বিদ্যমান।
আল্লাহ রসূলকে নির্দেশ প্রদান করে বলেন যে, তুমি ঘোষণা করঃ
“আমি তোমাদিগকে বলছি না যে, আমি অতি মানুষ নূরের তৈরী ফেরেশতা হয়ে গেছি।” বরং আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ।
সমাপ্ত
(আরবী)
“এবং তোমাদের জন্য এমন এক নূর সৃষ্টি করে দিবেন, যার সাহায্যে তোমরা সত্য পথ চিনে চলতে পারবে এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করবেন।” (সূরা হাদীদ ২৮)
যখন আল্লাহ মুসলমানদিগকে নির্দিষ্টভাবে প্রথম শ্রেণীর মুমিন বান্দাদেরকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নূর প্রদান করেছেন, তখন কি সমস্ত মুসলমান নূরের মিশ্রিত হয়ে আল্লাহ হয়ে গেছেন? “নাউযুবিল্লাহ” এ কথা তো কেউই বলে না। এক বিশেষ নূরের জন্য প্রার্থনা করেছেন এজন্যে তিনি মানুষের বন্ধন ভেদ করে আল্লাহর নূরে মিশে গেছেন অথবা তিনি স্বয়ং আল্লাহ হয়ে গেছেন? এর যৌক্তিকতা কোথায়? মুসলমানদের প্রতি নূর প্রদান করা সত্ত্বেও তারা মানুষই ছিলেন আর ভবিষ্যতেও মানুষই থাকবেন। অনুরূপভাবে রসূলকে নূর প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি মানুষ নবী ছিলেন-নূর নবী ছিলেন না। কুরআন মাজীদ অবতরণ আরম্ভ হলে রসূলের নবুওত জীবনের সূচনা হয়। কুরআন অবতরণের জন্য আল্লাহ তাআলা যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা লক্ষণীয়ঃ
(আরবী)
“যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য যিনি নিজ বান্দার (মুহাম্মাদের) প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে বক্রতার লেশমাত্রও থাকতে দেননি।” (সূরা কাহাফ ১)
নবুওতের সূচনায় আল্লাহ রসূলকে দাস বা বান্দা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। নবী জীবনের প্রারম্ভে তিনি মানুষ ছিলেন, নূর ছিলেন না। রসূলের চাচা ও স্ত্রীর পরলোক গমনের পর এবং তিনি তায়েফ নগরী থেকে ফিরে আসার পর নবুওতের দশম সনে শবে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই রাত্রিতে রসূল যেভাবে আল্লাহর সন্নিধানে পৌছে নৈকট্য লাভ করেছেন, তা অন্যান্য নৈকট্যের তুলনায় নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট ছিল। এবারে শুনুন আল্লাহ এ সময়েও রসূলকে কি উপাধি দান করেছেন?
(আরবী)
“মহা মহিম তিনি, যিনি নিজ বান্দা (মুহাম্মাদকে) এক রাত্রি যোগে পর্যটন করালেন কাবা মসজিদ হতে দূরবর্তী (বায়তুল মুকাদ্দাস) মসজিদ পর্যন্ত।”
এখানেও রসূলকে ‘আব্দ' বলা হয়েছে। এই রাত্রিতে রসূল আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের অতীব নিকটবর্তী হয়েছিলেন। এতদসত্ত্বেও রসূলকে ‘আব্দিহি’ বা নিজ ‘বান্দা’ ছাড়া অন্য কোন শব্দ প্রয়োগ করা হয়নি। কারণ মানুষের জন্য ‘আব্দ’ উপাদির চেয়ে কোন বড় উপাধি নেই।
এই আলোচনায় আমরা দেখলাম যে, নবুওত জীবনের সূচনায়ও রসূল মানুষ নবী ছিলেন এবং নবুওত জীবনের দশম সনেও রসূল মানুষ নবী ছিলেন। আমাদের দাবী যে রসূল জীবনের শেষ পর্যন্ত মানুষই ছিলেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে নিশ্চয় আল্লাহ কুরআনের উল্লেখ পূর্বক জ্ঞাত করাতেন। রসূল কবে নূর নবী হলেন? তা আমাদের জানা নেই। কুরআন ও সুন্নাহতে রসূলকে কোথায়ও নূর নবী বলা হয়নি বরং তিনি যে অতি মানব বা ফেরেশতা ছিলেন না তার প্রমাণ কুরআনে বিদ্যমান।
আল্লাহ রসূলকে নির্দেশ প্রদান করে বলেন যে, তুমি ঘোষণা করঃ
“আমি তোমাদিগকে বলছি না যে, আমি অতি মানুষ নূরের তৈরী ফেরেশতা হয়ে গেছি।” বরং আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন