hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত শাফা‘আত এবং শাফা‘আতকারী

লেখকঃ শাইখ ইবরাহীম ইবন আবদিল্লাহ আল-হাযেমী

শাফা‘আত সম্পর্কিত অধ্যায় [শাইখ আবদুল্লাহ ইবন সুলাইমান ইবন মুহাম্মদ ইবন আবদিল ওহ্হাব তার গ্রন্থ ‘তাইসীরুল ‘আযীযিল হামীদ ফী শরহে কিতাবিত তাওহীদ’ ( تيسير العزيز الحميد في شرح كتاب التوحيد ), পৃ. ২৩৫ থেকে উদ্ধৃত।]
প্রাচীনকালে ও আধুনিক কালে মুশরিকগণ শির্কে লিপ্ত হয়ে থাকে কেবলমাত্র শাফা‘আতের আঁচলে লটকে থাকার কারণে; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ﴾ [ يونس : ١٨ ]

“আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ‘ইবাদাত করছে, যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَ مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [ الزمر : ٣ ]

“আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৩]

সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা (এ মুশরিকরা যাদের কাছে শাফা‘আত কামনা-বাসনা করে শির্ক করছে) তাদের সেসব বাসনাকে কর্তন করে দিয়েছেন এবং তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, তা হলো শির্ক, তিনি নিজে তা থেকে পবিত্র এবং তিনি ব্যতীত সৃষ্টির জন্য কোনো বন্ধু অথবা সুপারিশকারী হয় না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ٤ ﴾ [ السجدة : ٤ ]

“আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের অন্তর্বর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৪]

এই অধ্যায়ে লেখক (শাইখ ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওহহাব) এটার সপক্ষে দলীল দিতে চেয়েছেন যে, এটা (শাফা‘আত কামনা-বাসনা-ই) হলো প্রকৃত শির্ক, আর শাফা‘আতের ব্যাপারে ঐ ব্যক্তির ধারণা দুনিয়া ও আখিরাতে একেবারেই অস্তিত্বহীন-অসম্ভব ও অবাস্তব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকে এ অজুহাতে যে, সে তার জন্য সুপারিশ করবে, যেমনিভাবে মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করে। অথচ আল্লাহই প্রথমে সুপারিশকারীকে সুপারিশের অনুমতি দিবেন; সুপারিশকারী প্রথমে সুপারিশ করবে না, যেমনটি ধারণা করে আল্লাহর শত্রুগণ।

অতঃপর যদি তুমি বল: যখন কোনো লোক আল্লাহর নিকট কাউকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করবে, তখন তো এভাবে সুপারিশকারীদের মাধ্যমে মহান রবকে সম্মান করাই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তখন এই সম্মান করাটা শির্ক কীভাবে হবে?

জবাবে বলা হবে: তার সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য প্রমাণ করে না যে, এটা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। কারণ, এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা কোনো কোনো ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য করে থাকে, অথচ তারা তাকে সম্মান করার দ্বারা মূলত তাকে অসম্মানই করে থাকে, আর এ জন্যই প্রসিদ্ধ প্রবাদের মধ্যে বলা হয়েছে: ‘মূর্খ বন্ধু ক্ষতি করবে কিন্তু জ্ঞানী শত্রু অনিষ্ট করবে না।’ কেননা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সুপারিশকারী ও শরীকদের গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রভূত্বের হক নষ্ট করা হয়, ইলাহ’র বড়ত্বকে খাট করে দেখা হয় এবং জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَيُعَذِّبَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡمُنَٰفِقَٰتِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ وَٱلۡمُشۡرِكَٰتِ ٱلظَّآنِّينَ بِٱللَّهِ ظَنَّ ٱلسَّوۡءِۚ عَلَيۡهِمۡ دَآئِرَةُ ٱلسَّوۡءِۖ ﴾ [ الفتح : ٦ ]

“আর যাতে তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দেন। অমঙ্গল চক্র তাদের ওপরই আপতিত হয়।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৬] কারণ, তারা তাঁর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা তাঁর সাথে শির্ক করেছে; তারা যদি তাঁর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করত, তাহলে তারা তাঁকে সত্যিকার অর্থে একক সত্তা হিসেবে মেনে নিত। আর এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুশরিকদের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দান করে না। আর কীভাবেই বা ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে যথাযথ মর্যাদা দান করবে, যে ব্যক্তি অন্যকে তাঁর সমকক্ষ বা সুপারিশকারী গ্রহণ করে, তাকে ভালোবাসে, ভয় করে, তার নিকট পাওয়ার প্রত্যাশা করে, তার প্রতি বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করে, তার ক্রোধ থেকে পলায়ন করে, তার সন্তুষ্টিতে প্রভাবিত হয়, তাকে ডাকে এবং তার উদ্দেশ্যে জবাই ও মানত করে। আর এসবই হলো সমতা বিধান করা, যা মুশরিকগণ আল্লাহ তা‘আলা ও তাদের উপাস্যগণের মধ্যে সাব্যস্ত করে থাকে। আর তারা জাহান্নামে অবস্থানকালে জানতে পারবে যে, এসব ছিল বাতিল ও ভ্রষ্টতা; তাই তখন তারা জাহান্নাম থেকে বলবে:

﴿تَٱللَّهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٩٧ إِذۡ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٨ ﴾ [ الشعراء : ٩٧، ٩٨ ]

“আল্লাহর শপথ! আমরা তো স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিলাম, যখন আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টিকুলের রব-এর সমকক্ষ গণ্য করতাম।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৯৭-৯৮] আর এটা জানা কথা যে, তারা সত্ত্বাগত, গুণগত ও কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে তাদেরকে সমকক্ষ মনে করে না, আর তারা এটাও বলে না যে, তাদের উপাস্যগণ (ইলাহগণ) আকাশমণ্ডলী ও যমীন সৃষ্টি করেছে কিংবা তারা জীবন ও মৃত্যু দান করেছে; বরং (তারা যে বিষয়ে তাদের উপাস্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে, তা হচ্ছে) তারা ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে তাদের উপাস্যদেরকে সমকক্ষ মনে করেছে; যেমন তুমি যার ওপর মুসলিম নামধারী শির্কপন্থীদেরকে দেখতে পাও।

আর (আমরা যে বলেছি যে) এটা (আল্লাহ কাছে অন্যকে সুপারিশকারী হিসেবে নির্ধারণ করা) দ্বারা প্রভূত্বের হক নষ্ট করা হয়, ইলাহের শ্রেষ্ঠত্বকে খাট করা দেখা হয় এবং জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা হয়; এর কারণ হচ্ছে, সুপারিশকারী নির্ধারণ ও সমকক্ষ গ্রহণকারী ব্যক্তি- হয় ধারণা করে থাকে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বিশ্বের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাঁর সাথে ওযীর (মন্ত্রী) অথবা সাহায্য ও সহায়তাকারীর প্রয়োজন মনে করেন, আর এটা (এ ধরনের ধারণা) হলো ঐ সত্ত্বার জন্য বড় ধরনের খুঁত, যিনি সত্ত্বাগতভাবে তিনি ভিন্ন সকল কিছু থেকে মুখাপেক্ষীহীন এবং তিনি ভিন্ন সকল কিছুই প্রকৃতিগতভাবে তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী। অথবা সে ধারণা করে থাকে যে, তিনি (আল্লাহ) জানেন না, যতক্ষণ না সুপারিশকারী তাঁকে জানিয়ে দেয় অথবা তিনি (কারও ওপর) দয়া করবেন না, যতক্ষণ না তার প্রতি সুপারিশকারী ব্যক্তি দয়া করা শুরু করবে অথবা তিনি একা একা কোনো কাজের জন্য যথেষ্ট নন অথবা তিনি বান্দার প্রার্থিত বিষয় বান্দাকে প্রদান করেন না, যতক্ষণ না সে (সুপারিশকারী বা সমকক্ষ) তাঁর নিকট সুপারিশ করবে, যেমনিভাবে বান্দাদের মধ্যে এ ধরণের সুপারিশের প্রচলন রয়েছে অথবা তিনি তাঁর বান্দাদের দো‘আ কবুল করেন না, যতক্ষণ না তারা সুপারিশকারীর নিকট আবেদন করে যে, সে যেন তাদের প্রয়োজনের কথা তাঁর নিকট উপস্থাপন করে, যেমনটি দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের দরবারে হয়ে থাকে। আর বস্তুত এটাই হলো সৃষ্টির (মানুষের) শির্ক সংঘটিত হওয়ার প্রকৃত কারণ। অথবা তার ধারণা, তিনি (আল্লাহ) শুনেন না, যতক্ষণ না সুপারিশকারী এই বিষয়টি তাঁর নিকট পেশ করে; অথবা তার ধারণা, তাঁর ওপর সুপারিশকারীর অধিকার রয়েছে, ফলে সে অধিকারের জোরে তার ওপর কসম করে সে দাবী আদায় করে নিবে ও সে এই সুপারিশকারীর মাধ্যমে তাঁর নিকট মিনতি করে, যেমনিভাবে মানুষ মহাজন ও রাজা-বাদশাদের নিকট তাদের প্রিয় ব্যক্তির মাধ্যমে আবেদন-নিবেদন পেশ করে। বস্তুতঃ এ ধরনের সব কিছুই প্রভূত্বকে অসম্মান করে ও তার অধিকারকে ক্ষুন্ন করে। ইবনুল কাইয়্যেম অনুরূপ আলোচনা করেছেন। সুতরাং এসব বিষয় ও অন্যান্য বিষয়ের কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ ধরনের সব কিছুই শির্ক এবং তা থেকে তিনি নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ قُلۡ أَتُنَبِّ‍ُٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ١٨ ﴾ [ يونس : ١٨ ]

“আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ‘ইবাদাত করছে, যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।’ বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আসমানসমূহ ও যমীনের এমন কিছুর সংবাদ দিবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮]

অতঃপর যদি তুমি বল: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তো ঐ ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে শির্ক সাব্যস্ত করেছেন, যে সুপারিশকারীদের উপাসনা করে; পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাদেরকে শুধু সুপারিশ করার জন্য ডাকে, সে তো তাদের উপাসনা করে না। সুতরাং এটা শির্ক হবে না।

জবাবে বলা হবে: শুধুমাত্র কাউকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করাই শির্ক আবশ্যক করে, আর শির্কও সুপারিশের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত; যেমনিভাবে শির্কের সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে হীনতা ও অপমান অবশ্যম্ভাবী উপাদান, আর হীনতা বা অসম্মানও শির্কের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শির্ককারী মুশরিক সেটা স্বীকার করুক বা অস্বীকার করুক। এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, প্রকৃত অর্থে উপরোক্ত প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে অসার, এ প্রশ্নের কোনো অস্তিত্ব বাইরে নেই, এটা শুধু এমন জিনিস যা মুশরিকরা তাদের স্মৃতিপটে স্থির করেছে। কারণ, দো‘আ বা আহ্বান করাই তো ‘ইবাদত, বরং তা ইবাদতের মগজ তথা মূল। সুতরাং সে যখন তাদেরকে সুপারিশ করার জন্য ডাকে, তখন সে তাদের উপাসনা করে এবং সে আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শির্ক করে, সে সেটা স্বীকার করুক বা না করুক।

তিনি (অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহহাব) বলেন: আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿وَأَنذِرۡ بِهِ ٱلَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحۡشَرُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ لَيۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ﴾ [ الانعام : ٥١ ]

“আর আপনি এর দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করুন, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫১]

ব্যাখ্যা: الإنذار (ভয় প্রদর্শন) অর্থ: ভয়ানক জায়গা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া, আর তাঁর বাণী: به -এর ব্যাখায় আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, بالقرآن (আল-কুরআনের মাধ্যমে) আর তাঁর বাণী: ﴿ٱلَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحۡشَرُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ ﴾ [ الانعام : ٥١ ] “যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে...” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫১] অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! আপনি আল-কুরআনের মাধ্যমে ঐসব লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন করুন, যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে শঙ্কিত। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, ভয় করে মন্দ হিসাবকে এবং তারা মুমিন যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ও সুদ্দী রহ. থেকে। আর ফুদাইল ইবন ‘ইয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত: তিনি তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকে সাবধান করেন না, বরং তিনি সাবধান করেন শুধু তাদেরকে, যারা বুদ্ধিমান; তাই তো তিনি বলেন: ﴿وَأَنذِرۡ بِهِ ٱلَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحۡشَرُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ﴾ “আর আপনি এর দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করুন, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রব-এর কাছে সমবেত করা হবে” অর্থাৎ তারা হলেন মুমিন, সতর্ক হৃদয়ের অধিকারী। সুতরাং তারা কাঙ্খিত ব্যক্তিবর্গ, যাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। তারা ঐশ্বর্যশালী দাম্ভিক ও কর্তৃত্বের অধিকারী অহংকারী নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা-ছবি ও ধন-সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করেন।

আর তাঁর বাণী: ﴿لَيۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ ﴾ [ الانعام : ٥١ ] “তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫১] এ আয়াত সম্পর্কে যাজ্জাজ বলেন: ليس এর জায়গাটি হাল ( حال ) হওয়ার ভিত্তিতে নসবের অবস্থানে, মনে হয় যেন তিনি বলেন: (হাশরের মাঠে আসবে) এমতাবস্থায় যে, তারা বন্ধু ও সুপারিশকারী থেকে মুক্ত, আর তাতে ‘আমিল ( عامل ) হলো: يخافون (তারা ভয় করে) আর ইবন কাসীর বলেন: সেদিন তিনি ব্যতীত তাদের জন্য, তিনি যদি তাদেরকে শাস্তি দিতে চান, তাহলে তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষাকারী কোনো বন্ধু ও সুপারিশকারী নেই। (তারপর আল্লাহ বলেন) ﴿لَّعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ﴾ তাহলে আশা করা যায় তারা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে, (ভয় করবে), ফলে তারা এ দুনিয়ার জগতে এমন আমল করবে, যার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর শাস্তি থেকে তাদেরকে মুক্তি দিবেন।

আমি (শাইখ সুলাইমান ইবন মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহহাব) বলি: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিনদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য কোনো বন্ধু ও সুপারিশকারী হওয়ার ব্যাপারটি সে অর্থে অস্বীকার করেছেন, যেমনটি মুশরিকদের বিশ্বাস [কারণ, মুশরিকরা মনে করে থাকে যে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত বা কোনো রূপ শর্ত ছাড়াই কোনো কোনো লোক তাদের জন্য সুপারিশ করবে, আর তারা তাই তাদের কাছে সুপারিশ চেয়ে বেড়ায়। এটাই আয়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যে সুপারিশ কবিরা গোনাহগার মুমিনদের কাজে আসবে, তা হচ্ছে ঐ সুপারিশ যাতে মুমিনরা বিশ্বাস করে যে তা সংঘটিত হবে শর্ত সাপেক্ষে, আর তারা তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে চেয়ে বেড়ায় না। [সম্পাদক]] সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কোনো সুপারিশকারী গ্রহণ করে, সে ব্যক্তি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার শাফা‘আত নসীব হবে না। তবে আয়াতের মধ্যে আল্লাহর অনুমতিক্রমে কবীরা গুনাহকারী ব্যক্তিদের জন্য শাফা‘আত সাব্যস্ত না হওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই, যেমনটি দাবি করে মু‘তাযিলাগণ, বরং তাঁর অনুমতিক্রমে শাফা‘আত সাব্যস্ত হয়েছে (আল-কুরআনের) অনেক জায়গায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِۦۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٣﴾ [ يونس : ٣ ]

“তাঁর অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; কাজেই তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত কর। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩]

তিনি (অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহহাব) বলেন: আর তাঁর (আল্লাহর) বাণী:

﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [ الزمر : ٤٤ ]

“বলুন, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন’।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৪৪]

ব্যাখ্যা: লেখক এভাবেই তা পেশ করেছেন, আর আমরা তার ওপর এবং তার পূর্ববর্তী আয়াতের ওপর আলোচনা করব, যাতে অর্থটি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُفَعَآءَۚ قُلۡ أَوَلَوۡ كَانُواْ لَا يَمۡلِكُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَعۡقِلُونَ ٤٣ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ لَّهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٤٤﴾ [ الزمر : ٤٣، ٤٤ ]

“তবে কি তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সুপারিশকারী ধরেছে? বলুন, ‘তারা কোনো কিছুর মালিক না হলেও এবং তারা না বুঝলেও?’ বলুন, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন, আসমানসমূহ ও যমীনের মালিকানা তাঁরই, তারপর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৪৩-৪৪]

এখানে আল্লাহর বাণী: ﴿أَمِ ٱتَّخَذُواْ ﴾ এর হামযা (أ ) টি অস্বীকার করার অর্থে; অর্থাৎ বরং মুশরিকগণ আল্লাহ ব্যতীত কিছু সুপারিশকারী নির্ধারণ করে নিয়েছে [এভাবে সুপারিশকারী নির্ধারণ করার কাজটি তারা মোটেই ঠিক করে নি। আর এটাই استفهام إنكاري বা অস্বীকারমূলক প্রশ্ন করার অর্থ। যখনই কোথাও এ ধরনের প্রশ্ন আসে, তখন পূর্বের কাজটিকে অস্বীকার করা হয়, অনুমোদিত নয় বলা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [সম্পাদক]]। অর্থাৎ তারা (সুপারিশকারীগণ) কি তাদের জন্য তাদের ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করবে [অর্থাৎ কখনও তারা তা করবে না। কারণ তারা সে শাফা‘আতের মালিক নয়। [সম্পাদক]]? যেমনটি তিনি বলেছেন:

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ﴾ [ يونس : ١٨ ]

“আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ‘ইবাদাত করছে, যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী [অর্থাৎ পূর্ববর্তী আয়াতের শাফা‘আতের বিষয়টি এ আয়াতের আলোকে বুঝতে হবে। এখানে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা এভাবে কাউকে শাফা‘আতকারী ভেবে ভুল করছে, তেমনি পূর্ববর্তী আয়াতেও শাফা‘আতকারী নির্ধারণ করাকে ভুল ও গর্হিত কাজ হিসেবে দেখানো হয়েছে। [সম্পাদক]]।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮] তিনি আর বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَ مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحۡكُمُ بَيۡنَهُمۡ فِي مَا هُمۡ فِيهِ يَخۡتَلِفُونَۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي مَنۡ هُوَ كَٰذِبٞ كَفَّارٞ ٣﴾ [ الزمر : ٣ ]

“আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যে এনে দিবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে সে ব্যাপারে ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৩] সুতরাং এই (আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী সাব্যস্ত করার) কারণে তিনি তাদেরকে মিথ্যাবাদী ও প্রচণ্ড কাফির বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿فَلَوۡلَا نَصَرَهُمُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ قُرۡبَانًا ءَالِهَةَۢۖ بَلۡ ضَلُّواْ عَنۡهُمۡۚ وَذَٰلِكَ إِفۡكُهُمۡ وَمَا كَانُواْ يَفۡتَرُونَ ٢٨ ﴾ [ الاحقاف : ٢٨ ]

“অতঃপর তারা আল্লাহ সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছিল তারা তাদেরকে সাহায্য করল না কেন? বরং তাদের ইলাহগুলো তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। আর এটা ছিল তাদের মিথ্যাচার; এবং যা তারা অলীক উদ্ভাবন করছিল।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ২৮]

সুতরাং এটাই হলো মুশরিকগণ যাদের ইবাদত বা উপাসনা করে, তাদের নিকট থেকে তাদের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া, আর তা হল, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করা।

আর তাঁর বাণী: ﴿مِن دُونِ ٱللَّهِ﴾ (আল্লাহ ছাড়া) অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ও নির্দেশ ছাড়া; বাস্তব অবস্থা হল, তাঁর নিকট তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ সুপারিশ করতে পারবে না, আর যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তাকেও তাঁর পছন্দসই ব্যক্তি হওয়া লাগবে, আর এখানে দু’টি শর্তই নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ছাড়া অন্যদেরকে সুপারিশকারী গ্রহণ করা এবং তাদের ডাকাডাকি করাকে তাঁর অনুমতি ও সন্তুষ্টির উপলক্ষ্য বানান নি, বরং এটা হলো তাঁর অনুমতি না পাওয়া ও অসন্তুষ্টির কারণ।

তাঁর বাণী: ﴿قُلۡ أَوَلَوۡ كَانُواْ لَا يَمۡلِكُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَعۡقِلُونَ﴾ “বলুন, ‘তারা কোনো কিছুর মালিক না হলেও এবং তারা না বুঝলেও?” [সূরা যুমার, আয়াত: ৪৩] অর্থাৎ এই ধরনের (হীন) গুণাগুণবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কি তারা সুপারিশ করতে পারবে? যেমন তোমরা তাদেরকে দেখতে পাচ্ছ নিষ্প্রাণ, শক্তি-সামর্থ্যহীন ও অবুঝ অথবা মৃত, এমনকি তারা সুপারিশের মালিকও নয়, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [ الزمر : ٤٤ ]

“বলুন, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন’।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৪৪] অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে তিনিই সে সুপারিশের মালিক। সুতরাং তোমরা যাদেরকে ডাক, তা থেকে তারা কোনো কিছুরই মালিক নয়। বায়যাবী রহ. বলেন, এটা সম্ভবত: তাদের একটি অভিযোগের উত্তর, তারা অভিযোগ করে বলতে পারে যে, সুপারিশকারীরা (যাদেরকে তার সুপারিশ করার মালিক মনে করছে) তারা তো আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা, আর এগুলো সেসব (নৈকট্যপ্রাপ্ত) বান্দাদেরই প্রতিকৃতি সুতরাং তারা সুপারিশের মালিক হতে পারে, তখন তার উত্তরেই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, বলুন, সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন। তার মানে- তিনি শাফা‘আতের একচ্ছত্র মালিক, তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউই সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে না এবং তিনি ব্যতীত কেউই এর ব্যাপারে স্বনির্ভর হতে পারে না।

আর তাঁর বাণী: ﴿لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ﴾ [ الحديد : ٢ ] “আসমানসমূহ ও যমীনের সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২] এখানেও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সুপারিশকারী গ্রহণের অসারতার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কারণ, তিনি হলেন গোটা সাম্রাজ্য ও কর্তৃত্বের মালিক; তাঁর কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি তাঁর অনুমতি ও সম্মতি ব্যতীত কথা বলার অধিকার রাখে না। সুতরাং শাফা‘আতের মালিকানার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। অতএব, তিনিই যখন শাফা‘আতের মালিক, তখন তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে, সে যে-ই হোক না কেন, শাফা‘আতের অধিকারী (মালিক) হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়।

আর তাঁর বাণী: ﴿ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ﴾ “তারপর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে”। অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখ যে, তারা সুপারিশ করবে না, আর তাদের পূজা করার ক্ষেত্রে তোমাদের সকল চেষ্টা প্রচেষ্টা বিফল হবে, বরং তারা তোমাদের জন্য হিতে বিপরীত হবে এবং তোমাদের পূজা-অর্চনা থেকে তারা দায়মুক্ত হয়ে পড়বে, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَيَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ مَكَانَكُمۡ أَنتُمۡ وَشُرَكَآؤُكُمۡۚ فَزَيَّلۡنَا بَيۡنَهُمۡۖ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُم مَّا كُنتُمۡ إِيَّانَا تَعۡبُدُونَ ٢٨ فَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدَۢا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ إِن كُنَّا عَنۡ عِبَادَتِكُمۡ لَغَٰفِلِينَ ٢٩﴾ [ يونس : ٢٨، ٢٩ ]

“আর যেদিন আমরা তাদের সবাইকে একত্র করে যারা মুশরিক তাদেরকে বলব, ‘তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর।’ অতঃপর আমরা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেব এবং তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, ‘তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদাত করতে না।’ সুতরাং আল্লাহই আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট যে, তোমরা আমাদের ‘ইবাদাত করতে এ বিষয়ে তো আমরা গাফিল ছিলাম।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৮-২৯]

তিনি (মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহহাব) বলেন, আর তাঁর বাণী:

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ ﴾ [ البقرة : ٢٥٥ ]

“কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]

“ব্যাখ্যা: এই আয়াতের মধ্যে ঐসব মুশরিকদের দাবির জবাব রয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে ফিরিশতা ও নবীগণের মধ্য থেকে এবং নেক বান্দা ও অন্যান্যদের আকৃতিতে রূপ দেওয়া মূর্তিসমূহ থেকে সুপারিশকারী গ্রহণ করে এবং ধারণা করে যে, তারা তাঁর নিকট তাঁর অনুমতি ছাড়াই সুপারিশ করবে। ফলে এই আয়াতটি তাদের এমন বিশ্বাসের প্রতিবাদ করেছে এবং তাঁর ক্ষমতার মহত্ব ও বড়ত্ব বর্ণনা করেছে, আরও বর্ণনা করছে যে, কিয়ামতের দিন কোনো ব্যক্তির কথা বলার ক্ষমতা হবে না যতক্ষণ না তিনি কথা বলার অনুমতি দিবেন, যেমন তাঁর বাণী:

﴿لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَقَالَ صَوَابٗا ٣٨﴾ [ النبا : ٣٨ ]

“সেদিন কেউ কথা বলবে না, তবে ‘রহমান’ যাকে অনুমতি দিবেন সে ছাড়া এবং সে সঠিক কথা বলবে।” [সূরা আল-নাবা, আয়াত: ৩৮] তিনি আরও বলেন:

﴿يَوۡمَ يَأۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ ﴾ [ هود : ١٠٥ ]

“যখন সেদিন আসবে, তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০৫] ইবন জারির রহ. এই আয়াতের ব্যাপারে বলেন: এ আয়াতটি তখনি নাযিল হয়েছে যখন কাফিরগণ বলল: আমরা এসব দেব-মূর্তিদের পূজা-অর্চনা করি শুধু এই জন্য যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلٗا ١٧١﴾ [ النساء : ١٧١ ]

“আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই, আর কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১] আর এই আয়াতের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা শাফা‘আত (সুপারিশ) করার ব্যাপারে অনুমতি দিবেন, আর তাঁরা হলেন নবী, আলেম প্রমূখ। আর অনুমতিটি কখনও কখনও নির্দেশে রূপান্তরিত হবে, যেমনটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলায় বর্ণিত হয়েছে, যখন তাঁকে বলা হবে: আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। একাধিক মুফাসসির অনুরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন।

তিনি (মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহহাব) বলেন: আর তাঁর বাণী:

﴿وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ ٢٦ ﴾ [ النجم : ٢٦ ]

“আর আসমানসমূহে বহু ফিরিশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হবে না, তবে আল্লাহর অনুমতির পর। যার জন্য তিনি ইচ্ছে করেন ও যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৬]

ব্যাখ্যা: আবূ হাইয়্যান রহ. বলেন: আয়াতে উল্লিখিত كم টি খবরিয়া ( خبرية ) এবং তার অর্থ অধিক, আর তা মুবতাদা ( مبتدأ ) হওয়ার কারাণে রফা‘ ( رفع ) এর অবস্থানে এবং তার খবর ( خبر ) হলো: لَا تُغۡنِي । আর الغناء শব্দের অর্থ, কল্যণ বয়ে আনা বা অকল্যাণ দূর করা, যেখানে যেটা প্রয়োজন। আর كم শব্দগতভাবে একবচন এবং অর্থগতভাবে বহুবচন। আর নৈকট্যবান ফিরিশতাগণের সুপারিশ যখন কোনো উপকার করবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্টি চিত্তে কারও জন্য সুপারিশ করার অনুমতি ও সম্মতি দিবেন, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি তখনই হবে যখন তাকে সুপারিশকারী হিসেবে যোগ্য মনে করবেন। সুতরাং দেব-মূর্তিসমূহ কীভাবে তাদের পূজারী’র জন্য সুপারিশ করবে? আমি বলি: এই আয়াতের মধ্যে শাফা‘আত লাভ অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি ফিরিশতা ও সৎলোকদের উপাসনা করে, তার দাবিটি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে রদ করা হয়েছে। কারণ, তারা যখন শুরুতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করতে পারবে না। সুতরাং কোনো অর্থে তাদেরকে ডাকা হবে এবং তাদের উপাসনা করা হবে? তাছাড়া আল্লাহ তা‘আালাও এমন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে (শাফা‘আত করার জন্য) অনুমতি দিবেন না, যার কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করবেন। আর তিনি হবেন ঐ ব্যক্তি যিনি তাওহীদ তথা একত্ববাদী, মুশরিক নন; যেমনটি তিনি বলেছেন:

﴿يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا ١٠٩ ﴾ [ طه : ١٠٩ ]

দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, সে ছাড়া কারো সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১০৯] আর আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদ ব্যতীত অন্য কোনো মতে সন্তুষ্ট হবেন না। যেমন, তিনি বলেন,

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ ال عمران : ٨٥ ]

“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫] আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أَسْعَد النَّاس بِشَفَاعَتِي يَوْم الْقِيَامَة مَنْ قَالَ : لَا إِلَه إِلَّا اللَّه خالصا من قلبه» .

“কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আতের মাধ্যমে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ হবে ঐ ব্যক্তি, যে একান্ত আন্তরিকতার সাথে বলে: لَا إِلَه إِلَّا اللَّه (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই)” [সহীহ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯।]। লক্ষ্য করুন, তিনি বলেন নি যে, আমার শাফা‘আতের মাধ্যমে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ হবে ঐ ব্যক্তি, যে আমাকে ডাকে।

আর মুশরিক ব্যক্তি যদি বলে, আমি জানি যে, তারা তাঁর অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করবে না, কিন্তু আমি তাদেরকে ডাকি এই জন্য যে, যাতে আল্লাহ আমার জন্য সুপারিশ করার ক্ষেত্রে তাদেরকে অনুমতি প্রদান করেন; তাহলে বলা হবে: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শির্ক করা ও তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে আহ্বান করাকে তাঁর অনুমতি ও সম্মতির কারণ বা উপলক্ষ নির্ণয় করেন নি, বরং এটা তাঁর ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর এ জন্যই তিনি অপর এক আয়াতে তিনি ভিন্ন অপর কাউকে ডাকাডাকি করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, তিনি বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [ يونس : ١٠٦ ]

“আর আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যা আপনার উপকারও করে না, অপকারও করে না। কারণ, এটা করলে তখন আপনি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]

সুতরাং পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ফিরিশতা, নবী ও তাঁরা ভিন্ন অন্যদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদেরকে ডাকাডাকি (পূজা) করা শির্ক, যেমনিভাবে প্রথম কালের মুশরিকগণ তাদেরকে আহ্বান করত, যাতে তারা তাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতে পারে, আর আল্লাহ তা‘আলা এই পদ্ধতির প্রতিবাদ করেছেন এবং তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তা পছন্দ করেন না এবং তিনি তা নির্দেশও করেন না, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَا يَأۡمُرَكُمۡ أَن تَتَّخِذُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ أَرۡبَابًاۗ أَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡكُفۡرِ بَعۡدَ إِذۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ٨٠ ﴾ [ ال عمران : ٨٠ ]

“অনুরূপভাবে ফিরিশতাগণ ও নবীগণকে রবরূপে গ্রহণ করতে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দেন না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফুরীর নির্দেশ দিবেন?” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿إِذۡ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ ﴾ [ يونس , البقرة : ١٦٦ ]

“যখন যাদের অনুসরণ করা হয়েছে তারা, যারা অনুসরণ করেছে তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে।” [সূরা ইউনুস/আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৬] ইবন কাসীর রহ. বলেন, ফিরিশতাগণ তাদের থেকে নিজেদেরকে বিমুক্ত ঘোষণা করে নেবে, যারা ধারণা করত যে, তারা দুনিয়াতে তাদের উপাসনা করেছে। অতঃপর ফিরিশতাগণ বলবে: আমরা তাদের থেকে বিমুক্ত হয়ে আপনার নিকট আশ্রয় চাই, তারা আমাদের ইবাদত করতো না। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ مَا يَكُونُ لِيٓ أَنۡ أَقُولَ مَا لَيۡسَ لِي بِحَقٍّۚ ﴾ [ المائ‍دة : ١١٦ ]

“আরও স্মরণ করুন, আল্লাহ যখন বলবেন, ‘হে মারইয়াম তনয় ‘ঈসা! আপনি কি লোকদেরকে বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর?’ তিনি বলবেন, ‘আপনিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই, তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়।” [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১১৬] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦﴾ [ الاسراء : ٥٦ ]

“বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ইলাহ মনে কর, তাদেরকে আহ্বান কর; তাহলে দেখতে পাবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৬] আর সা‘ঈদ ইবন মানসুর, ইমাম বুখারী, নাসায়ী ও ইবন জারীর রহ. আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন: মানুষের মধ্য থেকে এক দল জিন্নের মধ্য থেকে এক দলের ‘ইবাদত করত, অতঃপর জিন্নের মধ্য থেকে এক দল ইসলাম গ্রহণ করল, অথচ মানুষেরা সেসব জিন্নের উপাসনায় মগ্ন থাকল তখন আল্লাহ নাযিল করলেন:

﴿أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ ﴾ [ الاسراء : ٥٧ ]

“ওরা যাদেরকে আহ্বান করে, তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৭] এখানে يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ দু’টি শব্দটি ياء দ্বারা পঠিত হয়েছে [অর্থাৎ যাদেরকে তারা ডাকছে, আহ্বান করছে, তারা কিন্তু নিজেরা নিজেদেরকে ইলাহ হওয়ার দাবী করছে না; উপরন্তু তারাই (যাদেরকে কাফের-মুশরিকরা ডাকছে) তাদের রবের নৈকট্য তালাশে ব্যস্ত। [সম্পাদক]]। আর ইবন জারীর ও ইবন আবি হাতেম আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন: শির্কপন্থীগণ ফিরিশতা, মাসীহ ও ওযায়ের আলাইহিস সালামের উপাসনা করত [তখন অর্থ হবে, শির্কপন্থীরা ফিরিশতা, মাসীহ কিংবা উযায়েরকে আহ্বান করছে, অথচ সকল ফিরিশতা, মাসীহ এবং উযায়ের কখনও এ আহ্বানে রাজী নয়, তারা আল্লাহ তা‘আলা নৈকট্য তালাশে ব্যস্ত। [সম্পাদক]]। উপরোক্ত গ্রন্থদ্বয়ে আল্লাহর এই বাণীর

﴿فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ ﴾ [ الاسراء : ٥٦ ]

“তাহলে দেখতে পাবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার অথবা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৫৬] এই বাণীর ব্যাপারে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, এখানে যাদের ক্ষমতা নেই বলা হয়েছে, তারা হচ্ছেন, ‘ঈসা, তাঁর মাতা ও ‘ওযায়ের।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَٰرِدُونَ ٩٨ لَوۡ كَانَ هَٰٓؤُلَآءِ ءَالِهَةٗ مَّا وَرَدُوهَاۖ وَكُلّٞ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٩٩ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَهُمۡ فِيهَا لَا يَسۡمَعُونَ ١٠٠ إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١﴾ [ الانبياء : ٩٨، ١٠١ ]

“নিশ্চয় তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ হত, তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না, আর তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে, সেখানে থাকবে তাদের নাভিশ্বাসের শব্দ এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না। নিশ্চয় যাদের জন্য আমাদের কাছ থেকে পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা থেকে দূরে রাখা হবে।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯৮-১০১] ইবন ইসহাক রহ. এই আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় ইবনুয যাব‘য়ারী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যকার বিতর্কের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন [ইবনুয যাব‘য়ারী বলতে আরম্ভ করল যে, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকেই ইবাদাত করা হয়, তারা সবাই যদি জাহান্নামের ইন্ধন হয়, তবে সেখানে ঈসা, উযায়ের ও অন্যান্য সৎলোকদেরও ইবাদাত করা হয়েছে, তারাও তো জাহান্নামের ইন্ধন হওয়া আবশ্যক হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াত নাযিল করে তাদেরকে পূর্বোক্ত বিধানের আলাদা ঘোষণা করলেন। কারণ, তারা কেউই আল্লাহ ছাড়া তাদের ইবাদাত করা হোক সেটাতে রাযী নন। (আল-আহাদীসুল মুখতারা, ১১/৩৪৫, নং ৩৫১) [সম্পাদক]], আর তখন-ই আল্লাহ নাযিল করেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ١٠١ ﴾ [ الانبياء : ١٠١ ]

“নিশ্চয় যাদের জন্য আমাদের কাছ থেকে পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা থেকে দূরে রাখা হবে।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০১] অর্থাৎ ‘ঈসা ও ‘ওযায়ের আলাইহিস সালাম এবং ঐসব পণ্ডিত ও দুনিয়া বিমুখদের মধ্য থেকে যাদের উপাসনা করা হয়েছে, যারা আল্লাহর বিধানের ওপর জীবন অতিবাহিত করেছেন; অথচ পথভ্রষ্টরা আল্লাহকে ছাড়া তাদেরকেই রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে [অর্থাৎ তাদের কোনো অপরাধ নেই। কারণ, তারা এসব বিভ্রান্ত ও ভ্রষ্ট লোকদের ইবাদাতে রাজী ছিল না। সুতরাং তারা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে। [সম্পাদক]]।

আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٖ وَلَا نَبِيٍّ إِلَّآ إِذَا تَمَنَّىٰٓ أَلۡقَى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِيٓ أُمۡنِيَّتِهِۦ فَيَنسَخُ ٱللَّهُ مَا يُلۡقِي ٱلشَّيۡطَٰنُ ثُمَّ يُحۡكِمُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٥٢﴾ [ الحج : ٥٢ ]

“আর আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি, তাদের কেউ যখনই (ওহীর কিছু) তিলাওয়াত করেছে, তখনই শয়তান তাদের তিলাওয়াতে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। তারপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৫২] ইবন আবি হাতেম ইমাম যুহুরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: সূরা আন-নাজম নাযিল (শুরু) হয়েছে, আর মুশরিকগণ বলাবলি করত যে, এই লোকটি যদি আমাদের ইলাহসমূহের ব্যাপারে ভালো আলোচনা করত, তাহলে আমরা তাকে ও তার সাথীদেরকে স্বীকৃতি দিতাম; কিন্তু ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি তার দীনের বিরোধিতা করে সে তার সমালোচনা করে না, যেভাবে সে গাল-মন্দের মাধ্যমে আমাদের উপাস্যদের সমালোচনা করে, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাদের পক্ষ থেকে যে কষ্ট ও মিথ্যারোপের শিকার হচ্ছিলেন, তাঁর ওপর তা খুব কষ্টকর মনে হচ্ছিল এবং তাদের পথভ্রষ্টতা তাঁকে চিন্তিত করে তুলছিল; তখন তিনি তাদের হিদায়াতের প্রত্যাশা করতেন; অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নাজম নাযিল করলেন, তখন তিনি বললেন:

﴿أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠﴾ [ النجم : ١٩، ٢٠ ]

“অতএব, তোমরা আমাকে জানাও ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে?” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১৯-২০] এই তাগুতদের (অর্থাৎ লাত- উয্যা ও মানাত, এদের) আলোচনার সময় শয়তান এগুলো উচ্চারণের পর তার নিকট থেকে কতিপয় কথা ছেড়ে দিল, সে বলল:

تلك الغرانيق العُلى وأن شفاعتهن لترتجى

(যার অর্থ, ‘এগুলো হচ্ছে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং তাদের সুপারিশ অবশ্যই আশা করা যাবে’) বস্তুত এটা ছিল শয়তানের অন্তমিলযুক্ত কথা ও তার ফিতনা (পরীক্ষা); (যা সে আল্লাহর বাণীর পরে প্রক্ষিপ্ত করেছিল) অতঃপর এই বাণী দু’টি মক্কার মুশরিকদের মনে প্রভাব বিস্তার করল এবং তার কারণে তাদের ভাষাসমূহ সংযত হতে লাগল, আর তারা এর দ্বারা পরস্পরকে সুসংবাদ দিল এবং তারা বলল: নিশ্চয় মুহাম্মাদ তার প্রথম তথা পূর্বের ধর্মে এবং তার সম্প্রদায়ের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেছে। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তিলাওয়াত করতে করতে) সূরা আন-নাজমের শেষ প্রান্তে পৌঁছলেন, তখন তিনি সাজদাহ করলেন এবং উপস্থিত সকল মুসলিম ও মুশরিকরাও সাজদাহ করল। তারপর এ কথা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে গেল এবং শয়তান তা প্রকাশ করে দিল, এমনকি এই সংবাদ হাবশা পর্যন্ত পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন:

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٖ وَلَا نَبِيٍّ إِلَّآ إِذَا تَمَنَّىٰٓ أَلۡقَى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِيٓ أُمۡنِيَّتِهِۦ﴾ [ الحج : ٥٢ ]

“আর আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি, তাদের কেউ যখনই (ওহীর কিছু) তিলাওয়াত করেছে, তখনই শয়তান তাদের তিলাওয়াতে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৫২] অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সিদ্ধান্ত ও শয়তানের অপপ্রচার থেকে তাঁর মুক্ত থাকার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করলেন, তখন মুশরিকগণ মুসলিমদের জন্য তাদের শত্রুতা ও ভ্রষ্টতাকে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসল এবং সে ব্যাপারে তারা কঠোর হয়ে উঠল। আর এটা একটা প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ ঘটনা (কাহিনী), যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে কয়েকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্য থেকে কিছু কিছু সনদ বিশুদ্ধ। আর তাবে‘য়ীগণের একদল থেকেও বিশুদ্ধ সনদে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, যাদের রয়েছেন ‘ওরওয়া, সা‘ঈদ ইবন জুবায়ের, আবূল ‘আলীয়া, আবূ বকর ইবন আবদির রহমান, ‘ইকরামা, দাহহাক, কাতাদা, মুহাম্মাদ ইবন কা‘ব আল-কুরাযী, মুহাম্মাদ ইবন কায়েস ও সুদ্দী রহ. প্রমূখ। আর এই ঘটনাটি ঐতিহাসিকগণ ও অন্যান্যরাও আলোচনা করেছেন এবং তার মূলবিষয় ‘সহীহাইন’ তথা সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে রয়েছে [এ বর্ণনাটি সম্পর্কে বিবিধ মত রয়েছে। শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী রহ. এ ঘটনাটিকে পুরোপুরিই অস্বীকার করেছেন এবং একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম দিয়েছেন, نصب المجانيق على قصة الغرانيق তবে বিভিন্ন বর্ণনায় আসার কারণে এবং সেগুলোর কোনো কোনোটি গ্রহণযোগ্য তাবে‘ঈদের কাছ থেকে আসায় অনেক আলেম ঘটনাটির মূল সাব্যস্ত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, যদিও বিস্তারিত কিছু বর্ণনা সম্পর্কে আপত্তি দিয়েছেন। [সম্পাদক]]।

মূল উদ্দেশ্য হল, এ ঘটনাতে উল্লিখিত, ‘এগুলো হচ্ছে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং তাদের সুপারিশ অবশ্যই আশা করা যাবে’ এ কথাটুকু। কারণ, এক মতানুসারে الغرانيق তথা উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি হলো ফিরিশতাগণ। আর অপর মতে, الغرانيق তথা উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি হলো ‘দেব-মূতিসকল’। তবে উভয় মতের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধ নেই। কারণ, তাদের উপাসনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো দেবদেবতা, ফিরিশতা ও সৎ ব্যক্তিগণ, যেমন বায়যাবী রহ. থেকে পূর্বের আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে। সুতরাং যখন মুশরিকগণ এমন কথা শ্রবণ করল, যা আল্লাহর নিকট সুপারিশ করার আশায় ফিরিশতাদের ইবাদত করাটাকে বৈধ বলে দাবি করে, তখন তারা ধারণা করেছে যে, এটা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামই বলেছেন। ফলে তারা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেল, তাঁর সাথে তারাও সাজদাহ করল এবং তারা অভিমত প্রকাশ করল যে, সুপারিশের জন্য ফিরিশতা ও দেব-দেবীর প্রার্থনা করার ব্যাপারে তিনি তাদের ধর্মের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, এমনকি এ কথা দিকদিগন্তে ছড়িয়ে গেল এবং হাবশার মুহাজিরগণের নিকট এ সংবাদ পৌঁছে গেল যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সন্ধি করেছে। সুতরাং বুঝা গেল যে, তাদের এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে বিরোধের অন্যতম বিষয় ছিল ‘শাফা‘আত’। কারণ, তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তারা বলে, আমরা ফিরিশতা ও তাদের আকৃতিতে তৈরি করা কল্পিত দেব-দেবীগণের নিকট চাই যে, তারা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে; অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট আগমন করেছেন এ ধরনের চিন্তাধারাকে বাতিল করার জন্য; তা থেকে বিরত রাখতে; যে ব্যক্তি এ মতে বিশ্বাসী হবে, তাকে কাফির ও পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করতে; তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে নিবুদ্ধিতা বলে প্রমাণ করতে। শাফা‘আত প্রশ্নে তিনি তাদের জন্য কোনো ফিরিশতা, নবী ও দেব-দেবীর অধিকার আছে বলার সুযোগ দেন নি, বা ছাড় দেন নি; বরং তিনি তাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণী নিয়ে এসেছেন, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [ الزمر : ٤٤ ]

বলুন, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন’।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ءَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً إِن يُرِدۡنِ ٱلرَّحۡمَٰنُ بِضُرّٖ لَّا تُغۡنِ عَنِّي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يُنقِذُونِ ٢٣ إِنِّيٓ إِذٗا لَّفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٢٤﴾ [ يس : ٢٣، ٢٤ ]

“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করব? রহমান আমার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না। এরূপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ২৩-২৪] আর কুরআনে এ ধরনের নির্দেশ যদি খোঁজা হয়, তবে তার সংখ্যা অনেক হবে।

উদ্দেশ্য হচ্ছে, (একথা সাব্যস্ত করা যে) প্রথম পর্যায়ের মুশরিকগণ ফিরিশতা ও সৎ ব্যক্তিদেরকে আহ্বান করত, যাতে তারা তাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতে পারে, তার প্রমাণ আল-কুরআনের বক্তব্যসমূহ এবং তাফসীর ও সীরাত গ্রন্থসমূহ, আর আসার তথা হাদীসের কিতাবসমূহে ভরপুর, আর ন্যায়নীতিবান বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীই যথেষ্ট, যাতে তিনি বলেন:

﴿وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ ٤١﴾ [ سبا : ٤٠، ٤١ ]

“আর স্মরণ করুন, যেদিন তিনি তাদের সকলকে একত্র করবেন, তারপর ফিরিশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘এরা কি তোমাদেরই ইবাদাত করত? ফিরিশতারা বলবে, ‘আপনি পবিত্র, মহান! আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়; বরং তারা তো ইবাদাত করত জিন্নদের। তাদের অধিকাংশই জিন্নদের প্রতি ঈমান রাখত।” [সূরা সাবা, আয়াত: ৪০-৪১]

তিনি (মুহাম্মাদ ইবন আবদিল ওহ্‌হাব রহ.) বলেন: আর মহান আল্লহার বাণী:

﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ্ মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা আসমানসমূহে অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, যমীনেও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

ব্যাখ্যা: এ আয়াতটির ব্যাপারে আলেমদের কেউ কেউ বলেন: যে ব্যক্তি এই আয়াতটি অনুধাবন করেছে, তা সেই ব্যক্তির অন্তর থেকে শির্ক নামক বৃক্ষের শিকড়সমূহ কেটে যাবে। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: আল্লাহ তা‘আলা শির্কের সকল উপায় বা উপলক্ষ্যসমূহ মুশরিকরা যে গুলোর সাথে তারা সম্পৃক্ত থাকে; সে সবই মূলোৎপাটন করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, সে জানতে ও বুঝতে পারবে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক বা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সার মত, যে ঘর বানায়, আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম। কারণ, মুশরিক ব্যক্তি তো তাকেই উপাস্যরূপে গ্রহণ করে, যার দ্বারা সে কোনো প্রকার উপকার হাসিল করতে পারে, আর কারও কাছ থেকে তখনই উপকার হাসিল করতে পারে, যখন সে ব্যক্তির মধ্যে এ চারটি বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে: হয় সে তার উপাসক তার নিকট যা চায়, তার মালিক হবে, আর যদি সে সেটার মালিক না হয়, তাহলে সে মূল মালিকের সাথে শরীক বা অংশিদার হবে, আর যদি সে তাতে শরীকও না হয়, তাহলে সে তার সহায়ক ও সাহায্যকারী হবে, আর সে যদি তার সহায়ক ও সাহায্যকারীও না হয়, তাহলে সে তার নিকট সুপারিশকারী হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই চারটি বৈশিষ্ট্যকেই উপর থেকে নিচ (প্রথম বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে শেষ বৈশিষ্ট্য) পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সবগুলোকে অন্য কারও কাছে থাকার কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং তিনি মালিকানা, অংশীদারিত্ব, সাহায্য-সহযোগিতা ও মুশরিকদের দাবী করা শাফা‘আতকে অস্তিত্বহীন ঘোষণা করেছেন, আর তিনি এমন শাফা‘আতকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যাতে মুশরিকের জন্য কোনো অংশ নেই, আর তা হচ্ছে, তাঁর অনুমতি সাপেক্ষ শাফা‘আত।

তিনি (ইবনুল কাইয়্যেম রহ.) বলেন: সুতরাং তিনিই (আল্লাহ তা‘আলাই) সুপারিশকারীকে অনুমতি দিবেন, আর তিনি যদি তাকে অনুমতি না দেন, তাহলে সে তাঁর সম্মুখে শাফা‘আতের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না; যেমনটি ঘটে থাকে [অর্থাৎ দুনিয়ায় মানুষ একে অপরের কাছে যখন সুপারিশ করে, তখন সুপারিশ যার কাছে করা হচ্ছে, তার অনুমতি ব্যতীতই কখনও কখনও সুপারিশ অনুষ্ঠিত হয়ে যায়; সেখানে যার কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে, তিনি হয়ত সুপারিশকারীর কথা শুনতে বাধ্য; কারণ, সুপারিশকারীর কাছে তার এমন কিছু প্রয়োজন আছে যা পেতে হলে তাকে সুপারিশকারীর কথা অনিচ্ছাস্বত্বেও শুনতে হবে, নতুবা তার প্রয়োজন পূরণ হবে না। সুতরাং ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় দুনিয়ার রাজা-বাদশারা তাদের মন্ত্রীদের সুপারিশ, অনুরূপভাবে মন্ত্রীরা তাদের সচিবদের সুপারিশ, জনপ্রতিনিধিরা তাদের দলীয় নেতৃস্থানীয়দের সুপারিশ শুনতে বাধ্য, নতুবা সে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, তাদের সমর্থন কমে যাবে, তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি প্রয়োজন বশত কারও সুপারিশ বিনা অনুমতিতে শুনতে বাধ্য নন। কারণ, উপরোক্ত সম্ভাবনার কোনোটিই আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না; হতে পারে না। বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। [সম্পাদক]] সৃষ্টির বেলায়। কারণ, সৃষ্টির ক্ষেত্রে সুপারিশকারীর নিকট সুপারিশকৃত ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে [যে প্রয়োজন সে একা পূরণ করতে অসমর্থ, তাই তাকে সুপারিশকারীর সুপারিশ শুনতে বাধ্য করে। [সম্পাদক]] সুতরাং যার নিকট সুপারিশ করা হচ্ছে সে ব্যক্তি, সুপারিশকারীর মুখাপেক্ষী, সে তার সহযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করে। ফলে সে তার সুপারিশ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়; যদিও সে ব্যক্তি সুপারিশের অনুমতি তাকে না দেয়।

আল্লাহর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, তিনি ব্যতীত সকলেই মৌলিকভাবে তাঁর মুখাপেক্ষী, আর তিনি মৌলিকভাবে সকল কিছু থেকে মুখাপেক্ষীহীন ও স্বনির্ভর। সুতরাং কীভাবে তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তি তাঁর নিকট সুপারিশ করবে? সুতরাং এই আয়াতটি আলো, দলীল, নাজাত (মুক্তি), নির্ভেজাল তাওহীদ হিসেবে এবং শির্ক ও তার শিকড়সমূহের মূলোৎপাটনের মাধ্যম হিসেবে ঐ ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট, যে তা অনুধাবন করে। আর আল-কুরআন এ ধরণের উপমা ও দৃষ্টান্তে ভরা [যেমন, কেউ যদি এ আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে তবে তার কাছে এ বিষয়টি সর্বসময়ের জন্যই স্পষ্ট হয়ে যাবে, আয়াতটি হচ্ছে, ﴿وَقُلِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي لَمۡ يَتَّخِذۡ وَلَدٗا وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٞ فِي ٱلۡمُلۡكِ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ وَلِيّٞ مِّنَ ٱلذُّلِّۖ وَكَبِّرۡهُ تَكۡبِيرَۢا ١١١﴾ [ الاسراء : ١١١ ] “বলুন, ‘প্রশংসা আল্লাহ্‌রই যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নেই এবং দুর্দশাগ্রস্ততা থেকে বাঁচতে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন নেই। আর আপনি সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১১] সুতরাং তাঁর যেমন সন্তান নেই যে সন্তানের মায়ায় তাকে সন্তানের অবৈধ আব্দার রাখতে হবে, তেমনি তার রাজত্বে কারও কোনো অংশিদারিত্ব নেই যে, অংশিদারের কথা না শুনলে রাজত্বের স্থায়ীত্ব নষ্ট হবে, তদ্রূপ তার রাজত্ব চালাতে কোনো সহকারী বা ডেপুটিরও প্রয়োজন পড়ে না যে, তাকে সে ডেপুটির কথা না শুনলে তার রাষ্ট্র যন্ত্র বিকল হয়ে পড়বে। সুতরাং সর্বকাজে তিনিই সর্বেসর্বা। তিনি কারও সুপারিশ শুনতে বাধ্য নন। তাই আমরা সসম্ভ্রমে তার মহত্ব ঘোষণা করব। [সম্পাদক]], কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বাস্তব ঘটনাগুলোকে সে আয়াতসমূহের অধীনে নিয়ে আসা, সেটার অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। তারা সেসব দৃষ্টান্তকে মনে করে এমন এক জাতি ও সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ইতোপূর্বে গত হয়ে গেছে এবং তারা কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যায় নি [অর্থাৎ তারা মনে করে যে, কুরআনের আয়াতসমূহ এক বিগত জাতির জন্য প্রদত্ত হয়েছে; তাদের মত আর কারও জন্য সেটা প্রযোজ্য হতে পারে না। সে জাতিসমূহের মত আর কোনো জাতি যেন হতে পারে না। এটা যে ভুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না; কারণ কুরআন সর্বকালের সর্বযুগের সর্ব এলাকার লোকদের জন্যই তার উপমা ও দৃষ্টান্তসমূহ প্রদান করেছে। আগে যেমন এ ধরনের লোকের অস্তিত্ব ছিল, এখনও তেমনি সে ধরণের লোকদের ওয়ারিস রয়ে গেছে। সুতরাং সেগুলোকে বাস্তবে নিয়ে এসে সেটার আলোকে বিধান দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। [সম্পাদক]], আর এটাই অন্তর ও কুরআন বুঝার মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আল্লাহর কসম! যদি ঐসব লোক গত হয়ে যায়, তাহলে তাদের উত্তরাধিকারী হয় এমন ব্যক্তি, যে তাদের মত, তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট ব তাদের কাছাকাছি, আর কুরআন যেভাবে পূর্বাক্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেভাবে পরবর্তী শ্রেণীর লোকদেরকেও সে বিধি-বিধান ও দৃষ্টান্তের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু বাস্তব বিষয়টি হলো যেমন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: ‘ইসলামের রশি [আকীদা-বিশ্বাস, হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান ইত্যাদি। [সম্পাদক]]সমূহ একটা একটা করে নষ্ট হয়ে যাবে, যখন কোনো ব্যক্তি জাহেলিয়াত সম্পর্কে না জেনেই ইসলামের মধ্যে বেড়ে উঠে।’ [ইবনুল কাইয়্যেম রহ. এ বাণীটি উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম ইবন কাসীর তাঁর তাফসীরে এ বাণীটি উসমান রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবতঃ তারা দুজনেই এ বাণীটি বলে থাকবেন। [সম্পাদক]] আর এটা এ জন্য যে, যখন সে জানবে না জাহেলিয়াত ও শির্ক সম্পর্কে এবং জানবে না কুরআন কোনো বিষয়কে সমর্থন করে ও কোনোটাকে নিন্দা করে, তখন সে তাতে জড়িয়ে যাবে, তাকে স্বীকৃতি দিবে, তার দিকে অন্যকে আহ্বান করবে, তাকে সঠিক এবং উত্তম বলে মনে করবে, আর সে বুঝতে পারবে না যে, সে যার ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তা যে জাহেলিয়াত অথবা তার অনুরূপ কিছু অথবা তার চেয়ে নিকৃষ্ট অথবা তার কাছাকাছি কোনো কিছু; ফলে এর দ্বারা ইসলামের রশি বা খুঁটিসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে, আর ভালো কাজ মন্দ কাজে পরিণত হবে, মন্দ কাজ ভালো কাজে পরিণত হবে, আর বিদ‘আত সুন্নাতে পরিণত হবে, সুন্নাত বিদ‘আতে পরিণত হবে, আর কোনো ব্যক্তিকে নির্ভেজাল ঈমান ও তাওহীদের কারণে কাফের বলে বসবে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা এবং প্রবৃত্তি ও বিদ‘আত থেকে দূরে থাকাটাকে বিদ‘আত বলবে। আর যে ব্যক্তির দূরদৃষ্টি ও প্রাণবন্ত হৃদয় আছে, সে এটাকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাই হলেন সাহায্যস্থল। আর ঐসব পূর্ববর্তী মুশরিকদের বক্তব্য নকল করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَ مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحۡكُمُ بَيۡنَهُمۡ فِي مَا هُمۡ فِيهِ يَخۡتَلِفُونَۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي مَنۡ هُوَ كَٰذِبٞ كَفَّارٞ ٣﴾ [ الزمر : ٣ ]

“আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যে এনে দিবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে সে ব্যাপারে ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” [সূরা যুমার, আয়াত: ৩] সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে এবং ধারণা করে যে, সে তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে সে লোকের প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে এটিই। আর যে এই বিশ্বাস থেকে মুক্ত হতে পেরেছে, সে কতই না সম্মানিত হতে পেরেছে, বরং সে কতই না সম্মানিত, যে এ ধরণের আকীদা-বিশ্বাস অপছন্দকারী ব্যক্তির সাথে শত্রুতা পোষণ করে না। আর ঐসব মুশরিক ও তাদের পূর্বসুরীদের অন্তরের মধ্যে যা আছে, তা হলো তাদের উপাস্যগণ তাদের জন্য সুপারিশ করবে, আর এটা হলো প্রকৃত শির্ক, আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের মধ্যে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, তা বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, শাফা‘আত সম্পূর্ণভাবে তাঁর মালিকানায়, তাঁর নিকট কেউ সুপারিশ করতে পারবে না, তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে কারও ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিলে এবং তিনি তার কথা ও কাজে সন্তুষ্ট হলে, সে সুপারিশ করতে পারবে। আর তারা হলো তাওহীদপন্থী লোক সকল, যারা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ করে নি। সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য যাকে ইচ্ছা অনুমতি দান করবেন, যেহেতু তারা তাঁকে বাদ দিয়ে তাদেরকে সুপারিশকারী বলে গ্রহণ করে নি। সুতরাং যাকে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দিবেন, তার সুপারিশ দ্বারা সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ হবে তাওহীদপন্থী ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ করেন নি। আর যে শাফা‘আতকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথ বলে সুনিশ্চিত করেছেন, তা হলো তাঁর অনুমতিক্রমে তাওহীদপন্থী ব্যক্তির জন্য অনুষ্ঠিত শাফা‘আত, আর যে শাফা‘আতকে আল্লাহ তা‘আলা অনুমোদন দেন নি, তা হলো শির্ক মিশ্রিত শাফা‘আত, যা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সুপারিশকারীদেরকে গ্রহণকারী মুশরিকদের অন্তরে বদ্ধমূল, ফলে তাদেরকে তাদের সুপারিশ সংক্রান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিপরীত প্রতিফল দেওয়া হবে [অর্থাৎ তাদের সুপারিশ নসীব হবে না। [সম্পাদক]] এবং তাওহীদ তথা একত্ববাদীগণ তার দ্বারা সফল হয়ে যাবে।

কিন্তু আপনি আয়াতটি [উদ্দেশ্য, কুরআনুল কারীমের যেখানে যেখানে কাফের-মুশরিকদেরকে তাদের মা‘বুদদের ডাকার নির্দেশ দিয়েছে, সে সকল আয়াত। যেমন সূরা আল-আ‘রাফের এই আয়াত: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٩٤﴾ [ الاعراف : ١٩٤ ] অনুরূপভাবে, সূরা আল-ইসরার এই আয়াত: ﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦﴾ [ الاسراء : ٥٦ ]অনুরূপভাবে সূরা সাবার এই আয়াত: ﴿قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ﴾ [ سبا : ٢٢ ]] নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন, দেখবেন, কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ফিরিশতাদেরকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন, যে নির্দেশ পালন করতে তারা ব্যর্থ হবেই হবে। উদ্দেশ্য হলো, তারা যে কোনো কিছুরই মালিক নয়, তা বর্ণনা করা। সুতরাং তাদেরকে শাফা‘আতের জন্য অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ডাকা যাবে না; অতঃপর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যাদেরকে তাদের ধারণা বা বিশ্বাস অনুযায়ী সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে, তিনি সেই বিষয়টিকে তাদের ধারণা ও মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পৃক্ত করেছেন [অর্থাৎ শাফা‘আত সংক্রান্ত এসব আকীদা-বিশ্বাস একান্তভাবেই তাদের ধারণা-প্রসূত। যাদেরকে শাফা‘আতকারী নির্ধারণ করেছে তারাও যেমন তা বলেন নি, তেমনি আল্লাহ তা‘আলাও এ আকীদা-বিশ্বাসের পক্ষে কোনো প্রমাণাদি নাযিল করেন নি। [সম্পাদক]], তারা যার সূত্রপাত করেছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়াই, আর এই আয়াতটি ফিরিশতাদের আহ্বানের ব্যাপারেই মূলত নাযিল হয়েছে। একইভাবে তাতে (আহ্বানে সাড়া দিতে অপারগ হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে) অন্যান্য মা’বুদরা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে [অর্থাৎ ফিরিশতারা যদি আহ্বানে সাড়া দিতে না পারে, তবে অন্যরা তো মোটেই পারবে না। [সম্পাদক]]। যেমনিভাবে তাঁর বাণী: ﴿وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢﴾ [ سبا : ٢٢ ] “আর তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২] –এর ব্যাপারে ইবন আবি হাতিম সুদ্দী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে সহায়তা [অর্থাৎ আয়াতে বর্ণিত, [তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়] দ্বারা ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর কোনো সাহায্যকারী নেই সেটা বলা উদ্দেশ্য। [সম্পাদক]]। আর যেমনিভাবে তার ওপর প্রমাণ পেশ করে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿حَتَّىٰٓ إِذَا فُزِّعَ عَن قُلُوبِهِمۡ ...﴾ [ سبا : ٢٣ ]

“অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হয়...” [সূরা সাবা, আয়াত: ২৩] [এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা পক্ষ থেকে যখন কোনো নির্দেশ আসে তখন তা যেন পাথরের উপর জিঞ্জির পড়ার মত শব্দ হয়, আর ফিরিশতারা তা শুনেই বেহুঁস হয়ে পড়েন। তারপর যখন তাদের হুঁস আসে, তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করে যে, তোমাদের রব কি বলেছেন, তখন তারা সে নির্দেশ নিয়ে আলোচনা করেন ও বাস্তবায়ন করেন।’ সুতরাং ফিরিশতারাই প্রথম নির্দেশ শ্রোতা ও বাস্তবায়নে আদিষ্ট। তারা কখনও আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের আগে কিছুই করতে সক্ষম নয়। সুতরাং তারাই যেহেতু আল্লাহর সামনে এ অবস্থার সম্মুখীন হয়, তখন অন্যদের অবস্থা কেমন হতে পারে তা কল্পনাতীত। [সম্পাদক]]। সুতরাং যখন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ফিরিশতাদেরকে সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ করাটা শির্ক হয়, তখন কীভাবে মৃতদেরকে (সুপারিশকারীরূপে) গ্রহণ করা যাবে, যেমনটি কবর পূজারীগণ করে? অথবা কীভাবে অপরাধী ও পাপী শয়তানের ভাইদেরকে সুপারিশকারীরূপে গ্রহণ করা যাবে, যাদেরকে ইবলিস তার পাশে অবস্থান ও তার আনুসরণ করতে আকৃষ্ট করেছে? আর এর চেয়ে জঘন্য ঐসব অন্তসার শূন্য অভিশপ্ত ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে প্রভূত্বের বিশ্বাস লালন করা, অথচ মানুষ তাদের মধ্য থেকে প্রত্যক্ষ করে পাপাচারিতা, বিভিন্ন প্রকারের ফাসেকী, সালাত বর্জন, অন্যায় ও অশ্লীল কাজসমূহ এবং বাজারের মধ্যে উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করা।

যেমনিভাবে পরবর্তী যুগের কোনো কোনো আলেম বলেন:

كقوم عراة في ذرى مصرما على عورة منهم هناك ثياب

يدورون فيها كاشفين لعورة تواتر هذا لا يقال كذاب

يعدونهم في مصرهم فضلاءهم دعاؤهم فيما يرون مجاب

যেমন এক সম্প্রদায় যারা কোনো শহরে ঘুরাফিরা করে,

সেখানে তাদের লজ্জাস্থানের ওপর নেই কোনো কাপড়;

তারা তাতে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে ঘুরে বেড়ায়

এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে, বলা যাবে না তাকে মিথ্যাবাদী;

তাদের শহরে তাদেরকে মর্যাদাবান গণ্য করা হয়

আর মনে করা হয় যে, তাদের দো‘আ কবুল করা হয়!!

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা এমন কিছু নিয়ে আসতে পারে নি, যা প্রমাণ করবে যে ঐসব শয়তানেরা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহর ওলী হওয়া তো সুদূর পরাহত। আর তাদেরকে আহ্বান করা ও তাদের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা তো দূরের কথা। তবে তারা কিছু অলৌকিক ঘটনা, জাদু ও ভেলকি নিয়ে আসতে পারে এবং দাবি করতে পারে যে, তাদের কিছু কারামত রয়েছে, আর মনে করতে পারে যে, তারা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ করার কারণে নিশ্চিত তারা ওলী [বস্তুতঃ অলৌকিক কিছু ঘটাতে পারলেই অলী হতে পারে না। আর আল্লাহর অলী হওয়ার জন্য অলৌকিক কিছু ঘটানোও শর্ত নয়। আল্লাহর অলী হতে হলে শরী‘আতকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে সক্ষম হচ্ছে কি না তাই দেখার ও বিবেচনার বিষয়। যারাই শরী‘আত পুরোপুরি মানবে তারাই আল্লাহর অলী, নয়তো তারা শয়তানের অলী। [সম্পাদক]]।

জেনে রাখুন, নিশ্চয় পথভ্রষ্টতা ও কুফুরী পরবর্তীদের অধিকাংশের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কারণ, তারা আল্লাহর কিতাবকে তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলেছে, যে ব্যক্তি তাদেরকে জাদু করেছে ও তার ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে ডাকছে, তার প্রতি সুধারণা পোষণ করে থাকে। তাছাড়া আরও কারণ হচ্ছে, তারা তাদের নিজেদের জন্য বানানো নিয়মকানুন, অন্তসারশূণ্য ব্যাপক দাবী ও নিজেদের জন্য জারী করা ব্যবস্থাপনার পিছনে নিজেদেরকে বেঁধে ফেলেছে। তা না করে তারা যদি আল্লাহর কিতাব পাঠ করতো, তার মধ্যে যা আছে তা জেনে নিত এবং মতবিরোধের সময় তার দিকে ফিরে আসত, তাহলে তার মধ্যে তারা হিদায়াত, (মনের) সুস্থতা ও আলো পেয়ে যেত; কিন্তু তারা তাকে তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলেছে এবং তাকে কম মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করেছে। সুতরাং তারা যা ক্রয়-বিক্রয় করে, তা কতই না নিকৃষ্ট, আর বাকি আয়াতের ওপর আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।

লেখক বলেন,

قال أبو العباس : نَفَى الله عَمَّا سِوَاهُ كُلَّ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ الْمُشْرِكُونَ فَنَفَى أَنْ يَكُونَ لِغَيْرِهِ مُلْكٌ أَوْ قِسْطٌ مِنْ الْمُلْكِ أَوْ يَكُونَ عَوْنًا لِلَّهِ وَلَمْ يَبْقَ إلَّا الشَّفَاعَةُ ؛ فَبَيَّنَ أَنَّهَا لَا تَنْفَعُ إلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّبُّ كَمَا قَالَ تَعَالَى : ﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ ﴾ [ الانبياء : ٢٨ ]. فَهَذِهِ الشَّفَاعَةُ الَّتِي يَظُنُّهَا الْمُشْرِكُونَ ؛ هِيَ مُنْتَفِيَةٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَمَا نَفَاهَا الْقُرْآنُ , وَ أَخْبَرَ بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « أَنَّهُ يَأْتِي فَيَسْجُدُ لِرَبِّهِ وَيَحْمَدُهُ لَا يَبْدَأُ بِالشَّفَاعَةِ أَوَّلًا , ثم يُقَالُ لَهُ : أَيْ مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَك وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ . وَقَالَ لَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ : مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِك يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ : مَنْ قَالَ : لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ » . فَتِلْكَ الشَّفَاعَةُ هِيَ لِأَهْلِ الْإِخْلَاصِ بِإِذْنِ اللَّهِ , وَلَا تَكُونُ لِمَنْ أَشْرَكَ بِاَللَّهِ . وَحَقِيقَتُهُ أَنَّ اللَّهَ هُوَ الَّذِي يَتَفَضَّلُ عَلَى أَهْلِ الْإِخْلَاصِ وَالتَّوْحِيدِ فَيَغْفِرُ لَهُمْ بِوَاسِطَةِ دُعَاءِ من أَذِنَ لَهُ أَنْ يَشْفَعَ لِيُكْرِمَهُ وَيَنَالَ بِهِ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ . فَالشَّفَاعَةُ الَّتِي نَفَاهَا الْقُرْآنُ مُطْلَقًا ؛ مَا كَانَ فِيهَا شِرْكٌ وَتِلْكَ مُنْتَفِيَةٌ مُطْلَقًا ؛ وَلِهَذَا أَثْبَتَ الشَّفَاعَةَ بِإِذْنِهِ فِي مَوَاضِعَ وَتِلْكَ قَدْ بَيَّنَ الرَّسُولُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا لَا تَكُونُ إلَّا لِأَهْلِ التَّوْحِيدِ وَالْإِخْلَاصِ .

আবুল আব্বাস বলেন, ‘আল্লাহ তিনি ব্যতীত এমন প্রত্যেক কিছুকে (সুপারিশ করার) অযোগ্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যার সাথে মুশরিকগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সুতরাং তিনি ব্যতীত অন্যের জন্য মালিকানা অথবা মালিকানার অংশীদার হওয়াকে তিনি না করেছেন অথবা না করেছেন আল্লাহর জন্য সাহায্যকারী সাব্যস্ত হওয়াকে, আর বাকি থাকল শুধু শাফা‘আতের বিষয়টি; তারপর তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, প্রতিপালক আল্লাহ যার জন্য অনুমতি দিবেন, শাফা‘আত বা সুপারিশ সে ভিন্ন অন্য কারও উপকার করতে পারবে না; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্যই যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮ সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮] সুতরাং মুশরিকগণের ধ্যান-ধারাণায় লালিত এই শাফা‘আত কিয়ামতের দিন অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য, যেমনিভাবে আল-কুরআন তাকে না করে দিয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আসবেন, অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সাজদাহ করবেন, তাঁর প্রশংসা করবেন, প্রথমেই তিনি শাফা‘আতের মাধ্যমে সূচনা করবেন না; তারপর তাঁকে বলা হবে: হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার মাথা উঠান; আপনি বলুন, আপনার কথা শুনা হবে; আপনি চান, আপনাকে দেওয়া হবে; আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বললেন: কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের দ্বারা কোনো ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি একান্ত আন্তরিকতার সাথে বলে: لَا إِلَه إِلَّا اللَّه (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই] আর এই শাফা‘আত আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাওহীদের অনুসারী একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হবে না, যে আল্লাহর সাথে শরীক করে। আর বাস্তব ব্যাপার হল, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্ভেজাল একত্ববাদের অনুসারীদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। ফলে তিনি তাদেরকে ঐ ব্যক্তির দো‘আর মাধ্যমে ক্ষমা করবেন, যাকে তিনি সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন, যাতে তিনি তাকে সম্মানিত করতে পারেন এবং তিনি প্রশংসিত স্থান লাভ করতে পারেন। আর আল-কুরআন যে শাফা‘আতকে না করে দিয়েছে, তা হলো যার মধ্যে শির্ক থাকে, আর এ জন্যই তিনি তাঁর অনুমতিক্রমে (আল-কুরআনের) বিভিন্ন জায়গায় শাফা‘আতকে বিধিবদ্ধ করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, শাফা‘আত শুধু তাওহীদ ও ইখলাসের (একনিষ্ঠতার) অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য।

ব্যাখ্যা: তার (লেখকের) কথা: قال أبو العباس (অর্থাৎ আবুল আব্বাস বলেন) এখানে আবূল আব্বাস হলেন, শাইখুল ইসলাম তকী উদ্দিন আহমদ ইবন আবদিল হালিম ইবন আবদিস সালাম ইবন তাইমিয়্যা, প্রসিদ্ধ ইমাম ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা; ইসলামের বিভিন্ন বিষয় ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাঁর খ্যাতি ও নেতৃত্ব রয়েছে, যা তাঁর গুণাগুণ বর্ণনায় বাড়তি কিছু বলার অপেক্ষায় রাখে না। ইমাম যাহাবী বলেন, তার পূর্বে পাঁচশত বছর যাবত তাঁর মত কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটে নি। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, চারশত বছর। তিনি আরও বলেন: আমি যদি (কা‘বা ঘরের) রুকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে শপথ করে বলতে পারতাম, তাহলে আমি শপথ করে বলতাম যে, আমি তাঁর মত কাউকে দেখি নি, আর তিনি তাঁর দু’চোখ দ্বারা তাঁর নিজের মত কাউকে দেখেন নি। আর ইবন দাকীকুল ‘ঈদ বলেন: আমি যখন ইবন তাইমিয়্যা’র নিকট সমবেত হয়েছি, তখন আমি তাকে দেখেছি এমন এক ব্যক্তি হিসেবে, যার দু’চোখের সামনে সকল জ্ঞানের সমাহার, তিনি যা ইচ্ছা গ্রহণ করেন এবং যা ইচ্ছা ছেড়ে দেন। মোটকথা, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. এর যুগের পরে তাঁর মত কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটে নি, আর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ৭২৮ সনে।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: نَفَى الله عَمَّا سِوَاهُ كُلَّ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ الْمُشْرِكُونَ (আল্লাহ তিনি ব্যতীত এমন প্রত্যেক কিছুকে (সুপারিশ করার) অযোগ্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যার সাথে মুশরিকগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াতের মধ্যে এমন প্রত্যেক বস্তুকে না করেছেন, যার সাথে মুশরিকগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যেমন তারা বিশ্বাস করে যে, ‘গাইরুল্লাহ’ তথা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের মধ্যে মালিকানা, তার মধ্যে অংশীদারীত্ব, তার সহযোগিতা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এই চারটি বিষয় এমন, যার সাথে মুশরিকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: فَنَفَى أَنْ يَكُونَ لِغَيْرِهِ مُلْكٌ (সুতরাং তিনি ব্যতীত অন্যের জন্য মালিকানা সাব্যস্ত হওয়াকে তিনি না করেছেন), আর এই বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা’র বাণীর মধ্যে রয়েছে, তিনি বলেন:

﴿لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“তারা আসমানসমূহে অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, যমীনেও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২] সুতরাং যে ব্যক্তি এই (অণু) পরিমাণের মালিক হতে পারে না, তাহলে সে এমন ব্যক্তি হতে পারে না, যাকে আহ্বান করা হবে।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: أو قسط منه (অথবা তার অংশিদারীত্ব) অর্থাৎ মালিকানার অংশিদারীত্ব, আর القسط শব্দটি ‘কাফ’ অক্ষরে যের যোগে অর্থ হলো কোনো কিছুর অংশ, আর এই বিষয়টি রয়েছে আল্লাহর বাণীর মধ্যে, তিনি বলেন:

﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“আর এ দু’টিতে তাদের কোনো অংশও নেই”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২২] অর্থাৎ ফিরিশতা ও অন্যান্যদের মধ্য থেকে তোমরা যাকে ডাক, আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে তার কোনো অংশ নেই, আর যে ব্যক্তি মালিক নয় এবং মালিকের অংশীদারও নয়, আল্লাহ ব্যতীত তাকে কীভাবে আহ্বান করা হয়?

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: أَوْ يَكُونَ عَوْنًا لِلَّهِ (অথবা তিনি আল্লাহর জন্য সাহায্যকারী হওয়াকে না করেছেন), আর এটা রয়েছে তাঁর বাণীর মধ্যে, তিনি বলেন:

﴿وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“আর তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২] অর্থাৎ তোমরা যাদেরকে আহ্বান কর, তাদের মধ্য থেকে কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: وَلَمْ يَبْقَ إلَّا الشَّفَاعَةُ ؛ فَبَيَّنَ أَنَّهَا لَا تَنْفَعُ إلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّبُّ .... إلخ (আর বাকি থাকল শুধু শাফা‘আতের বিষয়টি; তারপর তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, প্রতিপালক আল্লাহ যার জন্য অনুমতি দিবেন, শাফা‘আত সে ভিন্ন অন্য কারও উপকার করতে পারবে না... শেষ পর্যন্ত)

যে সকল শর্তের মধ্য থেকে কোনো একটি যাকে ডাকবে সে আহুত ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া জরুরি। আর তা হচ্ছে চারটি, যা পাওয়া গেলেই শুধু সে আহ্বানে সাড়া দিতে সক্ষম হবে।

প্রথমত: মালিকানা। সুতরাং তিনি তা তাঁর বাণীর মাধ্যমে না করে দিয়েছেন, তিনি বলেন,

﴿لَا يَمۡلِكُونَ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“তারা আসমানসমূহে অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, যমীনেও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

দ্বিতীয়ত: যখন সে মালিক না হবে, তখন সে মালিকের অংশিদার হবে, আর তিনি তাও না করে দিয়েছেন তাঁর বাণীর মাধ্যমে:

﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ ﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“আর এ দু’টিতে তাদের কোনো অংশও নেই।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

তৃতীয়ত: যখন সে মালিকও হবে না এবং মালিকের শরীক বা অংশিদারও হবে না, তখন সে তার সাহায্যকারী ও ওযীর (মন্ত্রী) হবে, আর তিনি তাও না করে দিয়েছেন তাঁর বাণীর মাধ্যমে:

﴿وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢﴾ [ سبا : ٢٢ ]

“আর তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়।” [সূরা সাবা, আয়াত: ২২]

চতুর্থত: যখন সে মালিক হবে না, মালিকের শরীকও হবে না এবং মালিকের সাহায্যকারীও হবে না, তখন সে সুপারিশকারী হবে, আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করার বিষয়ে না করেছেন। কারণ, তিনিই প্রথম সুপারিশকারীকে অনুমতি দিবেন, অতঃপর সে সুপারিশ করবে। সুতরাং এসব বিষয়কে না করার দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আহ্বান করার বিষয়টি বাতিল হয়ে গেছে; যখন তাঁর নিকট অন্যরা উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, তখন তার প্রতি ইবাদত থেকে কোনো কিছুর ইচ্ছা পোষণ করাও আবশ্যক হয় না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣ ﴾ [ الفرقان : ٣ ]

“আর তারা তাঁর পরিবর্তে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। আর মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের ওপরও কোনো ক্ষমতা রাখে না।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৩] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ ءَالِهَةٗ لَّعَلَّهُمۡ يُنصَرُونَ ٧٤ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَهُمۡ وَهُمۡ لَهُمۡ جُندٞ مُّحۡضَرُونَ ٧٥﴾ [ يس : ٧٤، ٧٥ ]

“আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য ইলাহ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু তারা (এ সব ইলাহ্) তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম নয়, আর তারা তাদের বাহিনীরূপে উপস্থিতকৃত হবে।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৭৪-৭৫] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُهُمۡ وَلَا يَضُرُّهُمۡۗ وَكَانَ ٱلۡكَافِرُ عَلَىٰ رَبِّهِۦ ظَهِيرٗا ٥٥﴾ [ الفرقان : ٥ 5]

“আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদাত করে, যা তাদের উপকার করতে পারে না এবং তাদের অপকারও করতে পারে না। আর কাফের তো তার রব-এর বিরোধিতায় সহযোগিতাকারী”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৫৫]

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: فَهَذِهِ الشَّفَاعَةُ الَّتِي يَظُنُّهَا الْمُشْرِكُونَ ؛ هِيَ مُنْتَفِيَةٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَمَا نَفَاهَا الْقُرْآنُ (সুতরাং মুশরিকগণের ধ্যান-ধারাণায় লালিত এই শাফা‘আত কিয়ামতের দিন অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য, যেমনিভাবে আল-কুরআন তাকে না করে দিয়েছে) অর্থাৎ মুশরিকগণ আল্লাহকে ছাড়া অন্যান্য সুপারিশকারী ও শরীকদের নিকট যে সুপারিশ প্রার্থনা করে, তা দুনিয়া ও আখিরাতে অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য; যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা একজন মুমিনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সূরা ইয়াসীনে বলেন,

﴿ءَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً إِن يُرِدۡنِ ٱلرَّحۡمَٰنُ بِضُرّٖ لَّا تُغۡنِ عَنِّي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يُنقِذُونِ ٢٣ إِنِّيٓ إِذٗا لَّفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ٢٤ ﴾ [ يس : ٢٣، ٢٤ ]

“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করব? রহমান আমার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না। এরূপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ২৩-২৪] আর আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউন বংশের কোনো এক মুমিনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,

﴿لَا جَرَمَ أَنَّمَا تَدۡعُونَنِيٓ إِلَيۡهِ لَيۡسَ لَهُۥ دَعۡوَةٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَلَا فِي ٱلۡأٓخِرَةِ﴾ [ غافر : ٤٣ ]

নিঃসন্দেহ যে, তোমরা আমাকে যার দিকে ডাকছ, সে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও ডাকের যোগ্য নয়।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৪৩); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿فَلَوۡلَا نَصَرَهُمُ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ قُرۡبَانًا ءَالِهَةَۢۖ بَلۡ ضَلُّواْ عَنۡهُمۡۚ وَذَٰلِكَ إِفۡكُهُمۡ وَمَا كَانُواْ يَفۡتَرُونَ ٢٨﴾ [ الاحقاف : ٢٨ ]

“অতঃপর তারা আল্লাহ সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহ পরিবর্তে যাদেরকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছিল তারা তাদেরকে সাহায্য করল না কেন? বরং তাদের ইলাহগুলো তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। আর এটা ছিল তাদের মিথ্যাচার; এবং যা তারা অলীক উদ্ভাবন করছিল।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ২৮] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَمَا ظَلَمۡنَٰهُمۡ وَلَٰكِن ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡۖ فَمَآ أَغۡنَتۡ عَنۡهُمۡ ءَالِهَتُهُمُ ٱلَّتِي يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖ لَّمَّا جَآءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَمَا زَادُوهُمۡ غَيۡرَ تَتۡبِيبٖ ١٠١﴾ [ هود : ١٠١ ]

“আর আমরা তাদের প্রতি যুলুম করি নি কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। অতঃপর যখন আপনার রবের নির্দেশ আসল, তখন আল্লাহ ছাড়া তারা যে ইলাহসমূহের ‘ইবাদাত করত, তারা তাদের কোনো কাজে আসল না। আর তারা ধ্বংস ছাড়া তাদের অন্য কিছুই বৃদ্ধি করল না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০১] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَقَدۡ جِئۡتُمُونَا فُرَٰدَىٰ كَمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةٖ وَتَرَكۡتُم مَّا خَوَّلۡنَٰكُمۡ وَرَآءَ ظُهُورِكُمۡۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمۡ شُفَعَآءَكُمُ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُمۡ أَنَّهُمۡ فِيكُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيۡنَكُمۡ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمۡ تَزۡعُمُونَ ٩٤ ﴾ [ الانعام : ٩٤ ]

“আর অবশ্যই তোমরা আমাদের কাছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমন আমরা প্রথম বার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম, আর আমরা তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম তা তোমরা তোমাদের পিছনে ফেলে এসেছ। আর তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে (আল্লাহর সাথে) শরীক মনে করতে, তোমাদের সে সুপারিশকারীদেরকেও আমরা তোমাদের সাথে দেখছি না। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে, তাও তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯৪] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَقِيلَ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَهُمۡ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَۚ لَوۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ يَهۡتَدُونَ ٦٤ ﴾ [ القصص : ٦٤ ]

“আর তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের (পক্ষ থেকে আল্লাহর জন্য শরীক করা) দেবতাগুলোকে ডাক।’ তখন তারা ওদেরকে ডাকবে। কিন্তু ওরা এদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা শাস্তি দেখতে পাবে। হায়! এরা যদি সৎপথ অনুসরণ করত।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৬৪] সুতরাং দুনিয়া ও আখিরাতে এটাই হবে প্রত্যেকের অবস্থা, আল্লাহ ব্যতীত যাকে সুপারিশ করার জন্য অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হবে।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: أَخْبَــرَ بِــهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَنَّهُ يَأْتِي فَيَسْجُدُ لِرَبِّهِ وَيَحْمَدُهُ لَا يَبْدَأُ بِالشَّفَاعَةِ أَوَّلًا ...» إلى آخره . (আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আসবেন, অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সাজদাহ করবেন, তাঁর প্রশংসা করবেন, প্রথমেই তিনি শাফা‘আতের মাধ্যমে সূচনা করবেন না... হাদীসের শেষ পর্যন্ত)। এই হাদীসটি সহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত ও প্রমাণিত। শাফা‘আতের হাদীসের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَأَقُومُ فَأَمْشِي بَيْنَ سِمَاطَيْنِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ عَلَى رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ , فَيُؤْذَنَ لِي فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِّي وَقَعْتُ أَوْ خَرَرْتُ سَاجِدًا إِلَى رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي , قَالَ : ثُمَّ يُقَالُ : ارْفَعْ مُحَمَّدُ , قُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ , فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَحْمَدُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ , ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأُدْخِلُهُمْ الْجَنَّة , َ ثُمَّ أَعُودُ إِلَيْهِ الثَّانِيَةَ , فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ وَقَعْتُ أَوْ خَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي , فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي , ثُمَّ يُقَالُ : ارْفَعْ مُحَمَّدُ , قُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ , فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ , ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأُدْخِلُهُمْ الْجَنَّةَ , ثُمَّ أَعُودُ إِلَيْهِ الثَّالِثَةَ , فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِّي وَقَعْتُ أَوْ خَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ , فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي , ثُمَّ يُقَالُ : ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ , فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ , ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأُدْخِلُهُمْ الْجَنَّةَ , ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ , فَأَقُولُ : يَا رَبِّ مَا بَقِيَ إِلَّا مَنْ حَبَسَهُ الْقُرْآن » .

“অতঃপর আমি দাঁড়াবো এবং মুমিনদের দুই কাতার বা সারির মাঝখান দিয়ে হাঁটব, শেষ পর্যন্ত আমি আমার রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব, অতঃপর আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। তারপর যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখতে পাব, তখন আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদায় অবনত হয়ে পড়ব। অতঃপর আল্লাহ আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থার মধ্যে রেখে দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাকে এই অবস্থায় রেখে দিতে চাইবেন; অতঃপর তিনি বলবেন: মুহাম্মাদ! আপনি উঠুন। বলুন, আপনার কথা শোনা হবে। আপনি চান, আপনাকে তা দেওয়া হবে, আর আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। অতঃপর আমি আমার মাথা উঠাব, তারপর আমি এমন প্রশংসার দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করব, তারপর তিনি আমাকে সুপারিশ করার ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন। তারপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট দ্বিতীয় বারের মত ফিরে আসব। তারপর যখন আমি আমার রবকে দেখতে পাব, তখন আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদায় অবনত হয়ে পড়ব। অতঃপর আল্লাহ আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থার মধ্যে রেখে দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাকে এই অবস্থায় রেখে দিতে চাইবেন, অতঃপর তিনি বলবেন: মুহাম্মাদ! আপনি উঠুন। বলুন, আপনার কথা শোনা হবে। আপনি চান, আপনাকে তা দেওয়া হবে, আর আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। অতঃপর আমি আমার মাথা উঠাব; তারপর আমি এমন প্রশংসার দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করব, তারপর তিনি আমাকে সুপারিশ করার ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন, তারপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট তৃতীয় বারের মত ফিরে আসব, তারপর যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখতে পাব, তখন আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদায় অবনত হয়ে পড়ব। অতঃপর আল্লাহ আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থার মধ্যে রেখে দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাকে এই অবস্থায় রেখে দিতে চাইবেন। অতঃপর তিনি বলবেন: মুহাম্মাদ! আপনি উঠুন। বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আপনি চান, আপনাকে তা দেওয়া হবে, আর আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। অতঃপর আমি আমার মাথা উঠাব, তারপর আমি এমন প্রশংসার দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করব, তারপর তিনি আমাকে সুপারিশ করার ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন, তারপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব; অতঃপর আমি তাঁর নিকট চতুর্থ বারের মত ফিরে আসব, তারপর আমি বলব: হে আমার রব! যে ব্যক্তিকে আল-কুরআন আটকিয়ে ফেলেছে, সে ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট নেই। [মুসনাদে আহমাদ ৩/১১৬; ৩/২৪৪।]

সুতরাং হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করে দিলেন যে, তিনি সুপারিশের অনুমতি এবং যাদের জন্য সুপারিশ করা হবে, তাদের ব্যাপারটি অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত সুপারিশ করবেন না। কারণ, তিনি বলেছেন, অতঃপর তিনি আমাকে সুপারিশের ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন, ফলে আমি তাদেরকে জান্নাত প্রবেশ করাব।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা: وَقَالَ لَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ : مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِك يَوْمَ الْقِيَامَةِ ... إلى آخره . (আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বললেন: কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশের দ্বারা কোনো ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে?... শেষ পর্যন্ত)। এই হাদীসটি ইমাম বুখারী, মুসলিম ও নাসায়ী রহ. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম:

«يا رسول الله من أسعد الناس بشفاعتك يوم القيامة ؟ قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لقد ظننت يا أبا هريرة أن لا تسألني عن هذا الحديث أحد أول منك , لما رأيت من حرصك على الحديث , اسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال : لا إله إلا الله خالصا من قلبه أو نفسه» .

“হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আপনার শাফা‘আত লাভে কে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি ধারণা করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ প্রশ্ন করবে না। কারণ, আমি দেখেছি হাদীসের প্রতি তোমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি একান্ত আন্তরিকতার সাথে বলে: لَا إِلَه إِلَّا اللَّه (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই) [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯।] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: «خالصا مخلصا من قلبه أو نفسه» . (একান্ত আন্তরিকতাসহকারে অথবা বিশুদ্ধ মনে)” [এভাবে একসাথে কোথাও পাওয়া যায়নি, তবে এক হাদীসে خالصا এসেছে যেমন বুখারীর বর্ণনা, অপর হাদীসে خالصا এর স্থানে مخلصا শব্দটি এসেছে, যেমন ইবন আবী আসেমের আস-সুন্নাহর (৮২৫) বর্ণনা। [সম্পাদক]]। ইমাম আহমদ রহ. এই হাদীসটি অপর এক সনদে বর্ণনা করেছেন এবং তাকে ইবন হিব্বান সহীহ বলেছেন, আর তাতে রয়েছে:

«وشفاعتي لمن شهد أن لا إله إلا الله مخلصا يصدق قلبه لسانه و لسانه قلبه» .

“আর আমার শাফা‘আত ঐ ব্যক্তির জন্য, যে একনিষ্ঠভাবে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তার অন্তর তার মুখের কথাকে সত্যায়িত করে এবং তার মুখের কথা তার অন্তরকে সত্যায়িত করে [মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৭, ৫১৮; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৬৬৬৪।]।”

শাইখুল ইসলাম বলেন: সুতরাং তিনি তাঁর শাফা‘আতের দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান বলে চিহ্নিত করেছেন, যে তাদের মধ্যে একনিষ্ঠতার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি কামিল বা পরিপূর্ণ। আর তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহীহ হাদীসের মধ্যে বলেন:

« مَنْ سَأَلَ الله لِىَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عليهُ شفاعتي يوم القيامة » .

“যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর নিকট অসীলার (উচ্চ মর্যাদার) দো‘আ করবে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত হালাল হয়ে যাবে।” সেখানে তিনি এটা বলেন নি যে, ‘আমার শাফা‘আত তথা সুপারিশ দ্বারা মানুষের মধ্যে সে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে।

এর দ্বারা জানা গেল যে, বান্দার জন্য তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ) ও ইখলাসের মাধ্যমেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত ও অন্যান্য বিষয় অর্জিত হবে, যা এতদ্ভিন্ন অন্য আমল দ্বারা অর্জিত হবে না। যদিও সে বান্দা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অসীলার (উচ্চ মর্যাদার) প্রার্থনা করার মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হতে পারে [কিন্তু সুপারিশ লাভ করবে, তা বলা হয় নি। বরং নিছক ন্যূনতম যোগ্যতা বিবেচিত হবে। অথচ পূর্বোক্ত তাওহীদের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে সুপারিশ লাভের সৌভাগ্যবান হবে বলে ঘোষিত হয়েছে। [সম্পাদক]]। (কিন্তু রাসূলের প্রদর্শিত আদেশ-নিষেধ ও নীতির বাইরে চলে কেউই শাফা‘আতের যোগ্য হতে পারে বলে কোথাও বলা হয় নি) তাহলে কীভাবে তিনি যে কাজের নির্দেশ তিনি দেন নি, বরং তা থেকে নিষেধ করেছেন, তার দ্বারা তার শাফা‘আত অর্জিত হবে? সুতরাং এ অবস্থায় সে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। যেমন, মসীহের ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের বাড়াবাড়ি তা তাদের ক্ষতি করে, তাদের কোনো উপকার করে না, আর এর দৃষ্টান্ত রয়েছে ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لِكُلِّ نَبِىٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِىٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّى اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِى شَفَاعَةً لأُمَّتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَهِىَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِى لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا » .

“প্রত্যেক নবীর জন্য একটি বিশেষ মাকবুল দো‘আ আছে। তন্মধ্যে সকলেই তাদের দো‘আ পৃথিবীতেই করে নিয়েছেন। আমি আমার দো‘আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের জন্য রেখে দিয়েছি। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি কোনো প্রকার শির্ক না করা অবস্থায় মারা যাবে সে ইনশাআল্লাহ আমার এই দো‘আ পাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৮, ১৯৯।] অনুরূপভাবে শাফা‘আত সংক্রান্ত সকল হাদীসে রয়েছে যে, তিনি শুধু তাওহীদপন্থীদের ব্যাপারে সুপারিশ করবেন। সুতরাং শুধুমাত্র বান্দা কর্তৃক তার রবের প্রতি তাওহীদ তথা একত্ববাদ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার জন্য তার দীনের ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার কারণেই সে শাফা‘আত ও অন্যান্য বিষয় দ্বারা আল্লাহর অনুগ্রহের অধিকারী হবে।

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার অর্থ সম্পর্কে যা বলেন তার অর্থ হচ্ছে, এই হাদীসটি সম্পর্কে ভেবে দেখুন, কীভাবে তিনি শুধু তাওহীদ তথা একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাসকে শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে নির্ণয় করে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তাঁর শাফা‘আত লাভ করা যাবে। অপরদিকে মুশরিকদের ধ্যানধারণা হলো সুপারিশকারী গ্রহণ করা, তাদের উপাসনা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদেরকে বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে শাফা‘আত লাভ করা যাবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মিথ্যা ধ্যানধারণাকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, কেবল তাওহীদের অনুসরণই হচ্ছে শাফা‘আত লাভের উপায়, আর তা তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন আল্লাহ তা‘আলা সুপারিশকারীকে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন। আর মুশরিক ব্যক্তির অন্যতম অজ্ঞতা হলো, সে বিশ্বাস করে যে, সে যাকে ওলী তথা অভিভাবক অথবা সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তার জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহর দরবারে তাকে উপকৃত করবে, যেমনিভাবে রাষ্ট্রনায়ক ও প্রশাসকগণের বিশেষ ব্যক্তিগণ ঐ ব্যক্তির উপকার করে থাকে, যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে, অথচ তারা জানে না যে, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ সুপারিশ করতে পারবে না, আর তিনি সুপারিশ করার জন্য শুধু ঐ ব্যক্তির ব্যাপারেই অনুমতি দিবেন, যার কথা ও কাজে তিনি সন্তুষ্ট। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা প্রথম অংশে বলেন:

﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ ﴾ [ البقرة : ٢٥٥ ]

“কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫], আর দ্বিতীয় অংশে তিনি বলেন:

﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ ﴾ [ الانبياء : ٢٨ ]

“আর তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্যই, যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮] আর অবশিষ্ট থাকল তৃতীয় অংশ, আর তা হলো, তিনি তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা ব্যতীত কোনো ব্যক্তির কথা ও কাজে সন্তুষ্ট হবেন না। সুতরাং এই তিনটি অংশ ঐ ব্যক্তির অন্তর থেকে শির্ক নামক বৃক্ষের মূলোৎপাটন করবে, যে ব্যক্তি তা সচেতনার সাথে ধারণ ও অনুধাবন করতে পারবে...।

হাফেয ইবন হাজার ‘আসকালানী রহ. বলেন: এখানে যে শাফা‘আতের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তা হচ্ছে ঐ শাফা‘আত, যারা প্রকারসমূহ থেকে কোনো কোনো প্রকারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন: ‘আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ তখন তাঁকে বলা হবে: যার অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান আছে, আপনি তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিন। সুতরাং এই শাফা‘আতের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ হবে, শেষ পর্যন্ত যার ঈমান তার চেয়ে নিম্নস্তরের ব্যক্তির চেয়ে অধিক পরিপূর্ণ হবে। আর মহান শাফা‘আত বা ‘বড় শাফা‘আত’ তার মানে হলো (হাশরের ময়দানে) অবস্থানস্থলের মহাসঙ্কট থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করার শাফা‘আত, আর এ ধরনের সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ হবে, যে ব্যক্তি সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর এ শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ হলেন, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর ঐ ব্যক্তি, যে তাদের পরপর জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর সে এমন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি হিসাবের মুখোমুখি ও শাস্তির উপযুক্ত হওয়ার পর শাস্তি ভোগ না করেই তাতে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। অতঃপর ঐ ব্যক্তি সৌভাগ্যবান হবে, যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে আক্রান্ত হবে এবং তাতে পতিত হবে না।

আর জেনে রাখুন, কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত হবে ছয় প্রকারের, যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম রহ. উল্লেখ করেছেন:

প্রথমত: মহান শাফা‘আত, যার ব্যাপারে সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ তথা নবীগণ পিছিয়ে থাকবেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে পৌঁছবে, অতঃপর তিনি বলবেন: أنا لها অর্থাৎ ‘তার জন্য আমি আছি’। আর এটা তখন হবে, যখন সকল মানুষ নবীদের নিকট গিয়ে তাদের আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে, যাতে তারা তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করেন, যাতে তিনি তাদেরকে হাশরের ময়দানের সঙ্কটময় অবস্থান থেকে মুক্তি দান করেন। আর এটা এমন শাফা‘আত, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যই বরাদ্ধ, যাতে অন্য কোনো ব্যক্তি অংশীদার হবে না।

দ্বিতীয়ত: জান্নাতবাসীদের জন্য তাতে প্রবেশের ব্যাপারে তাঁর শাফা‘আত, যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. কর্তৃক বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আলোচনা করেছেন।

তৃতীয়ত: তাঁর উম্মতের মধ্য থেকে পাপী সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর শাফা‘আত, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব (অবধারিত) হয়ে গেছে, ফলে তিনি তাদের জন্য সুপারিশ করবেন, যাতে তারা তাতে (জাহান্নামে) প্রবেশ না করে।

চতুর্থত: তাওহীদ তথা একত্ববাদের অনুসারীদের মধ্য থেকে ঐসব পাপীদের ব্যাপারে তাঁর শাফা‘আত, যারা তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, আর এই প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির সনদে হাদীসসমূহ বর্ণিত, আর সকল সাহাবী ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণ এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। যারা এটাকে অস্বীকার করে তারা তাদেরকে বিদ‘আতের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং চতুর্দিক দিকে তাদেরকে পাকড়াও করার জন্য বলেছেন এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

পঞ্চমত: জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে কোনো এক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের সাওয়াব বৃদ্ধি ও উচ্চ মর্যাদার ব্যাপারে তাঁর শাফা‘আত, আর এর ব্যাপারে কারও পক্ষ থেকে কোনো বিরোধ নেই।

ষষ্ঠত: জাহান্নামবাসী কোনো কোনো কাফিরের ব্যাপারে তাঁর শাফা‘আত, এমনকি তাতে তার শাস্তি হালকা করা হবে, আর এই শাফা‘আত শুধুমাত্র একমাত্র আবূ তালিবের সাথে নির্দিষ্ট।

তার (ইবন তাইমিয়্যা’র) কথা:

وَحَقِيقَتُهُ أي حقيقة الأمر , أي أمر الشفاعة أَنَّ اللَّهَ هُوَ الَّذِي يَتَفَضَّلُ عَلَى أَهْلِ الْإِخْلَاصِ وَالتَّوْحِيدِ فَيَغْفِرُ لَهُمْ بِوَاسِطَةِ دُعَاءِ من أَذِنَ لَهُ أَنْ يَشْفَعَ لِيُكْرِمَهُ وَيَنَالَ بِهِ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ

(আর শাফা‘আতের বিষয়টির বাস্তবতা হলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্ভেজাল একত্ববাদের অনুসারীদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। ফলে তিনি তাদেরকে ঐ ব্যক্তির দো‘আর মাধ্যমে ক্ষমা করবেন, যাকে তিনি সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন, যাতে তিনি তাকে সম্মানিত করতে পারেন এবং সে প্রশংসিত স্থান লাভ করতে পারে)। সুতরাং এটাই হলো শাফা‘আতের বাস্তব চিত্র। বিষয়টি এমন নয় যেমনটি ধারণা করে মুশরিক ও জাহিলগণ; তারা মনে করে যে, শাফা‘আত মানে হলো সুপারিশকারী প্রথম দিকেই যাকে ইচ্ছা তার ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারবে, ফলে সে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। আর এই জন্য তারা মৃত ব্যক্তিগণ ও অন্যান্যদের নিকট তা (সুপারিশ) প্রার্থনা করে, যখন তারা তাদেরকে যিয়ারত করে, আর এরাই বলে: সম্মানিত মৃত ব্যক্তি, আল্লাহ তা‘আলার নিকট যার আত্মার নৈকট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, সার্বক্ষণিক তার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহ আসে এবং তার আত্মার ওপর কল্যাণসমূহ প্রবাহিত হয়। সুতরাং যিয়ারতকারী যখন তার আত্মাকে তার সাথে সম্পর্কিত করে এবং তাকে তার নিকটবর্তী করে, তখন যিয়ারতকৃত ব্যক্তির আত্মা থেকে যিয়ারতকারীর আত্মার ওপর তার মাধ্যমে ঐসব ভৌতিক ও অবাস্তব কল্যাণসমূহ প্রবাহিত হয়, যেমনিভাবে স্বচ্ছ আয়না, পানি ও অনুরূপ কোনো বস্তু থেকে তার সামনে দণ্ডায়মানরত ব্যক্তির উপর আলোক রশ্মি বা প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়। তারা বলে: পরিপূর্ণ যিয়ারত মানেই, যিয়ারতকারী ব্যক্তি কর্তৃক তার আত্মা ও অন্তরকে মৃত ব্যক্তির অভিমুখি করা, তার অভিপ্রায়কে তার ওপর ন্যস্ত করা এবং তার সকল ইচ্ছা ও মনোযোগকে তার ওপর এমনভাবে ন্যস্ত করা, যাতে অন্যের প্রতি দৃষ্টির দেওয়ার অবকাশ থাকে না [ইবন তাইমিয়্যা রহ. এর উদ্দেশ্য হলো, এগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ ভ্রষ্ট কথা। যা তারা কবর যিয়ারতের মাধ্যমে লাভ হয় বলে মনে করে। অথচ এটা শির্কী ও কুফুরীর মধ্যেই মানুষকে নিমজ্জিত করে। [সম্পাদক]]।

ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই যিয়ারতের কথা বলেছ ইবন সীনা, আল-ফারাবী ও অন্যান্যরা, আর নক্ষত্র পূজারীরা গ্রহ-নক্ষত্র পূজার ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট বর্ণনা করেছে এবং তারা বলেছে: যখন বাকশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি উর্ধ্বতন আত্মাসমূহের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়, তখন তাদের পক্ষ থেকে তার ওপর আলো সঞ্চারিত হয়। আর এই রহস্যময় কারণেই সে নক্ষত্র পূজা করেছে, তার প্রতিমূর্তি গ্রহণ করেছে, তার জন্য দো‘আ বা প্রর্থনা রচনা করেছে এবং তার শরীরী মূর্তিকে (উপাস্য হিসেবে) গ্রহণ করেছে, আর এটাই মূল দর্শন, যা কবর পূজারীদের জন্য আবশ্যক করে দিয়েছে কবরকে উৎসবের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করা, তার ওপর পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া, তার ওপর বাতি জ্বালানো এবং মাসজিদ নির্মাণ করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা করেছিলেন তাদের এ সব কিছুকেই পুরোপুরিভাবে বাতিল ও সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করার এবং তার দিকে ধাবিত করে এমন সব উপলক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার। অতঃপর মুশরিকগণ তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো এবং তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর বিরোধিতা করল, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পক্ষ নিয়েছিলেন এবং ঐসব মুশরিকগণ আরেক পক্ষ নিয়েছিল।

আর ঐসব মুশরিকগণ কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে যা আলোচনা করেছে, তাই হলো (তাদের নিকট) শাফা‘আত, যার ব্যাপারে তারা ধারণা করে যে, তাদের উপাস্যগণ তার দ্বারা তাদেরকে উপকৃত করবে এবং তারা তার জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। তারা বলে: বান্দা যখন আল্লাহর নৈকট্যবান বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান ব্যক্তির আত্মার সাথে সম্পর্ক রাখবে, তার অভিপ্রায়কে তার অভিমুখী করবে এবং তার অন্তরকে আল্লাহ থেকে বিরত রাখবে, তাহলে সে হবে তার সাথে কঠিন সম্পর্ককারী ব্যক্তি, আর এটাকে তারা ঐ ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছে, যে ব্যক্তি কোনো সম্মানিত ও সম্রাটের নিকটতম ব্যক্তির খিদমত করেছে। সুতরাং সেই ব্যক্তি সম্রাটের কারণে যে পুরস্কার ও সম্মান লাভ করবে, সেও এই সংশ্লিষ্ট পুরস্কারটি তার সাথে সম্পর্ক অনুসারে লাভ করবে। সুতরাং এটাই হলো মূর্তিপূজার মূল রহস্য, আর যাকে বাতিল করার জন্য এবং তার অনুসরণকারীদেরকে কাফির বলে চিহ্নিত করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন এবং কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, আর তিনি তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, তাদের রক্ত, সম্পদ ও তাদের বংশধরদের বন্দী করাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নামকে আবশ্যক করে দিয়েছেন, আর আল-কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার (মূর্তিপূজার) অনুসারীকে ও তাদের মতবাদকে বাতিলকরণ প্রসঙ্গে বর্ণিত আয়াত দ্বারা পরিপূর্ণ।

[ ১ ]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন