hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত শাফা‘আত এবং শাফা‘আতকারী

লেখকঃ শাইখ ইবরাহীম ইবন আবদিল্লাহ আল-হাযেমী

মহান শাফা‘আত
১. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে গোশত এনে তাঁকে সামনের রান পরিবেশন করা হলো, যা তিনি পছন্দ করতেন। অতঃপর তিনি তার থেকে কামড় দিয়ে খেলেন এবং এরপর বললেন:

«أنا سيد الناس يوم القيامة وهل تدرون مم ذلك ؟ يجمع الله الناس الأولين والآخرين في صعيد واحد يسمعهم الداعي وينفذهم البصر , وتدنو الشمس فيبلغ الناس من الغم والكرب ما لا يطيقون ولا يحتملون , فيقول الناس : ألا ترون ما قد بلغكم ؟ ألا تنظرون من يشفع لكم إلى ربكم ؟ فيقول بعض الناس لبعض : عليكم بآدم , فيأتون آدم عليه السلام : فيقولون له : أنت أبو البشر خلقك الله بيده , ونفخ فيك من روحه , وأمر الملائكة فسجدوا لك , اشفع لنا إلى ربك , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ ألا ترى إلى ما قد بلغنا ؟ فيقول آدم : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ولن يغضب بعده مثله , وإنه نهاني عن الشجرة فعصيته , نفسي , نفسي , نفسي , اذهبوا إلى غيري , اذهبوا إلى نوح , فيأتون نوحا فيقولون : يا نوح إنك أنت أول الرسل إلى أهل الأرض , وقد سماك الله عبدا شكورا , اشفع لنا إلى ربك , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي عز و جل قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ولن يغضب بعده مثله , وإنه قد كانت لي دعوة , دعوتها على قومي , نفسي , نفسي , نفسي , اذهبوا إلى غيري , اذهبوا إلى إبراهيم , فيأتون إبراهيم , فيقولون : يا إبراهيم أنت نبي الله وخليله من أهل الأرض , اشفع لنا إلى ربك , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول لهم : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ولن يغضب بعده مثله , وإني قد كنت كذبت ثلاث كذبات-فذكرهن أبو حيان في الحديث نفسي , نفسي , نفسي , اذهبوا إلى غيري , اذهبوا إلى موسى . فيأتون موسى , فيقولون : يا موسى أنت رسول الله , فضلك الله برسالته وبكلامه على الناس , اشفع لنا إلى ربك , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ولن يغضب بعده مثله , وإني قد قتلت نفسا لم أومر بقتلها , نفسي , نفسي , نفسي , اذهبوا إلى غيري , اذهبوا إلى عيسى , فيأتون عيسى فيقولون : يا عيسى أنت رسول الله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه , وكلمت الناس في المهد صبيا , اشفع لنا , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول عيسى : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله قط ولن يغضب بعده مثله-ولم يذكر ذنبا نفسي , نفسي , نفسي , اذهبوا إلى غيري , اذهبوا إلى محمد صلى الله عليه و سلم . فيأتون محمدا صلى الله عليه و سلم , فيقولون : يا محمد أنت رسول الله , وخاتم الأنبياء , وقد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما تأخر , اشفع لنا إلى ربك , ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فأنطلق فآتي تحت العرش فأقع ساجدا لربي عز و جل , ثم يفتح الله علي من محامده , وحسن الثناء عليه شيئا لم يفتحه على أحد قبلي , ثم يقال : يا محمد ارفع رأسك سل تعطه , واشفع تشفع , فأرفع رأسي فأقول : أمتي يا رب , أمتي يا رب , فيقال : يا محمد أدخل من أمتك من لا حساب عليهم من الباب الأيمن من أبواب الجنة وهم شركاء الناس فيما سوى ذلك من الأبواب , ثم قال : والذي نفسي بيده إن ما بين المصراعين من مصاريع الجنة كما بين مكة وحمير أو كما بين مكة وبصرى » .

“আমি হব কিয়ামতের দিন মানবকুলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পূর্ববর্তী সকল মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহ্বানকারী’র আহ্বান সকলে শুনতে পাবে এবং সকলেই এক সঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনি কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হবে, যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কী বিপদের সম্মুখীন হয়েছ, তা কি দেখতে পাচ্ছ না? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদম আলাইহিস সালামের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবুল বাশার [‘আবুল বাশার’ অর্থ: মানব জাতির পিতা।]। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে স্বীয় হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তাঁর রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন এবং তিনি ফিরিশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ করেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কী অবস্থায় পৌঁছেছি? তখন আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যে, যার আগেও কোনো দিন এত রাগান্বিত হন নি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি, নাফসী! নাফসী! নাফসী! (আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আছি) তোমরা অন্যের কাছে যাও, তোমরা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন সকলে নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয় আপনি পৃথিবীর মানুষের প্রতি প্রেরিত প্রথম রাসূল। [কারণ, তিনি শরী‘য়তের হুকুম-আহকামের প্রথম রাসূল। কারণ, রাসূলগণ সাধারণত; ঈমানদার ও কাফের উভয় কাউমের কাছেই প্রেরিত হন। নূহ আলাইহিস সালামের কওমের পূর্বে অপরাধ থাকলেও শির্ক ছিল না। সুতরাং তিনিই প্রথম রাসূল। আর আদম আলাইহিস সালাম প্রথম নবী। অথবা সমস্ত পৃথিবী প্রলয়ংকারী বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পর পৃথিবীর তিনি সর্বপ্রথম রাসূল ছিলেন। [সম্পাদক]] আর আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আজ আমার রব এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, যার আগেও কোনো দিন এত রাগান্বিত হন নি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দো‘আ ছিল, যা আমি আমার কাওমের ব্যাপারে করে ফেলেছি, (এখন) নাফসী! নাফসী! নাফসী!। তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে থেকে আপনি (বিশেষভাবে অন্তরঙ্গ) আল্লাহর বন্ধু। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি তাদের বলবেন, আজ আমার রব এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, যার আগেও তিনি কোনো দিন এত রাগান্বিত হন নি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। বর্ণনাকারী আবূ হাইয়ান তাঁর বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন- (এখন) নাফসী! নাফসী! নাফসী!। তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে মূসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাতের সম্মান দান করেছেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি তাদের বলবেন, আজ আমার রব এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, যার আগেও তিনি কোনো দিন এত রাগান্বিত হন নি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম, যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় নি। (এখন) নাফসী! নাফসী! নাফসী!। তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও ‘ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন তারা ‘ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ‘ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসূল এবং কালেমা [‘কালেমা’ দ্বারা " كُن " শব্দকে বুঝানো হয়েছে। যেহেতু এই শব্দটি বলার সাথে সাথে ‘ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কুদরতে মাতৃগর্ভে আসেন, সেহেতু তাকে ‘তাঁর কালেমা’ বলা হয়।], যা তিনি মরিয়ম আলাইহিস সালামের উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি ‘রূহ’ [‘রূহ’ দ্বারা ফিরিশতাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান ফিরিশতা জিবরীল আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে অথবা রূহ দ্বারা আল্লাহর আদেশকে বুঝানো হয়েছে, যেহেতু আল্লাহর নির্দেশে তিনি (জিবরীল) এসে মারইয়ামকে তার পুত্রের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, তাই বলা হয় ‘তাঁর রূহ’।]। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। সুতরাং আজ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন ‘ঈসা আলাইহিস সালাম বলবেন, আজ আমার রব এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, যার আগেও তিনি কোনো দিন এত রাগান্বিত হন নি এবং পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কোনো গুনাহের কথা বলবেন না। নাফসী! নাফসী! নাফসী!। তোমরা অন্যের কাছে যাও- যাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন আমি ‘আরশের নিচে এসে আমার রবের সামনে সাজদায় অবনত হয়ে যাব। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন, যা এর পূর্বে কাউকে খুলে দেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার মাথা উঠান। আপনি যা চান, তা আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এরপর আমি আমার মাথা উঠিয়ে বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত। হে আমার রব! আমার উম্মত। হে আমার রব! আমার উম্মত। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পার্শ্বের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজা দিয়েও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যার হাতে আমার প্রাণ, সে সত্তার কসম! বেহেশতের এক দরজার দুই পার্শ্বের মধ্যবর্তী প্রশস্ততা হলো যেমন মক্কা ও হিমইয়ারের মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা মক্কা ও বসরার মাঝখানের দূরত্ব।” [সহীহ বুখারী, তাফসীর অধ্যায় (২/৩৮৫), হাদীস নং ৪৩৫৭; সহীহ মুসলিম (১/১৮৪); তিরমিযী; আহমদ (২/৪৩৫)।]

২. কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«يَجْمَعُ الله المؤمنين يوم القيامة كذلك فيقولون لو استشفعنا إلى ربنا حتى يريحنا من مكاننا هذا فيأتون آدم فيقولون يا آدم أما ترى الناس خلقك الله بيده وأسجد لك ملائكته وعلمك أسماء كل شيء اشفع لنا إلى ربنا حتى يريحنا من مكاننا هذا فيقول لست هناك ويذكر لهم خطيئته التي أصاب ولكن ائتوا نوحا فإنه أول رسول بعثه الله إلى أهل الأرض فيأتون نوحا فيقول لست هناكم ويذكر خطيئته التي أصاب ولكن ائتوا إبراهيم خليل الرحمن فيأتون إبراهيم فيقول لست هناكم ويذكر لهم خطاياه التي أصابها ولكن ائتوا موسى عبدا آتاه الله التوراة وكلمه تكليما فيأتون موسى فيقول لست هناكم ويذكر لهم خطيئته التي أصاب ولكن ائتوا عيسى عبد الله ورسوله وكلمته وروحه فيأتون عيسى فيقول لست هناكم ولكن ائتوا محمدا صلى الله عليه و سلم عبدا غفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر فيأتونني فأنطلق فأستأذن على ربي فيؤذن لي عليه فإذا رأيت ربي وقعت له ساجدا فيدعني ما شاء الله أن يدعني ثم يقال لي ارفع محمد وقل يسمع وسل تعطه واشفع تشفع فأحمد ربي بمحامد علمنيها ثم أشفع فيحد لي حدا فأدخلهم الجنة ثم أرجع فإذا رأيت ربي وقعت ساجدا فيدعني ما شاء الله أن يدعني ثم يقال ارفع محمد وقل يسمع وسل تعطه واشفع تشفع فأحمد ربي بمحامد علمنيها ربي ثم أشفع فيحد لي حدا فأدخلهم الجنة ثم أرجع فإذا رأيت ربي وقعت ساجدا فيدعني ما شاء الله أن يدعني ثم يقال ارفع محمد قل يسمع وسل تعطه واشفع تشفع فأحمد ربي بمحامد علمنيها ثم أشفع فيحد لي حدا فأدخلهم الجنة ثم أرجع فأقول يا رب ما بقي في النار إلا من حبسه القرآن ووجب عليه الخلود » .

قال النبي صلى الله عليه و سلم : « يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وكان في قلبه من الخير ما يزن شعيرة ثم يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وكان في قلبه من الخير ما يزن برة ثم يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وكان في قلبه ما يزن من الخير ذرة » .

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে অনুরূপভাবে একত্রিত করবেন, তখন তারা বলবে, আমরা যদি কাউকে আমাদের প্রতিপালকের কাছে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করতাম, যাতে তিনি আমাদেরকে আমাদের এই সংকটময় স্থান থেকে স্বস্তি প্রদান করতেন। অতঃপর তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে বলবে: হে আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? অথচ আল্লাহ তা‘আলা স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, আপনাকে তাঁর ফিরিশতাগণ সাজদাহ করেছেন এবং আপনাকে তিনি সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আপনি আমাদের প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন, যাতে তিনি আমাদেরকে আমাদের এই সংকটময় স্থান থেকে স্বস্তি প্রদান করেন। আদম আলাইহিস সালাম তখন বলবেন, আমি এই কাজের জন্য যোগ্য নই। তিনি তাঁর ত্রুটির কথা স্মরণ করিয়ে তাদেরকে বলবেন, তোমরা বরং নূহ আলাইহিস সালামের কাছে যাও; যেহেতু তিনিই আল্লাহর প্রথম রাসূল, যাকে তিনি যমীনবাসীর নিকট পাঠিয়েছেন। (এ কথা শুনে) তারা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তখন তিনিও বলবেন, আমি এই কাজের জন্য যোগ্য নই। তিনি তাঁর ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং আল্লাহ’র খলীল (বন্ধু) ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তখন তিনিও বলবেন, আমি এই কাজের জন্য যোগ্য নই। তিনি তাঁর ত্রুটিসমূহের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা, যাকে আল্লাহ তাওরাত প্রদান করেছেন এবং তাঁর সাথে প্রত্যক্ষ বাক্যালাপ করেছেন। তখন তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তখন তিনিও বলবেন, আমি এই কাজের জন্য যোগ্য নই। তিনি তাঁর ত্রুটিসমূহের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং ‘ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও; যিনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, ‘কালিমা’ ও ‘রূহ’ [রূহ অর্থ: আত্মা, আদেশ; আর কালিমা অর্থ: কথা। যেহেতু ‘ঈসা আলাইহিস সালাম সরাসরি আল্লাহ’র আদেশে সৃষ্ট, সেজন্য তাকে ‘রূহুল্লাহ’ ও ‘কালিমাতুল্লাহ’ বলা হয়।]; তখন তারা ‘ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তখন তিনিও বলবেন, আমি এই কাজের যোগ্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও; তিনি এমন এক বান্দা, যার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব এবং আমাকে এর অনুমতি দেওয়া হবে। অতঃপর আমি যখন আমার প্রতিপালককে দেখতে পাব, তখনই আমি তাঁর সামনে সাজদায় অবনত হয়ে যাব; অতঃপর আল্লাহ তাঁর মরজী অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দিবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। (যা বলার) বলুন, শুনা হবে। (যা চাওয়ার) চান, দেওয়া হবে। (যা সুপারিশ করার) করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি আমার প্রতিপালকের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসারাজির দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, তারপর আমি শাফা‘আত করব। আর আমার জন্য (শাফা‘আতের) একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এরপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিব। তারপর আমি ফিরে আসব। আবার যখন আমি আমার রবকে দেখতে পাব, তখনই আমি তাঁর সামনে সাজদায় অবনত হয়ে যাব। অতঃপর আল্লাহ তাঁর মর্জি অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দিবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, শুনা হবে। চান, দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি আমার রবের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসারাজির দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, তারপর আমি শাফা‘আত করব। তখনও আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এরপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব। তারপর আমি ফিরে আসব। এবারও যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখতে পাব, তখনই আমি তাঁর সামনে সাজদায় অবনত হয়ে যাব। অতঃপর আল্লাহ তাঁর মর্জি অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দিবেন। তারপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, শুনা হবে। চান, দেওয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি আমার রবের শিখিয়ে দেওয়া প্রশংসারাজির দ্বারা তাঁর প্রশংসা করব, তারপর আমি শাফা‘আত করব। তখনও আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এরপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলব, হে রব! এখন একমাত্র তারাই জাহান্নামে অবশিষ্ট রয়েছে, যাদেরকে কুরআন আটক করে রেখে দিয়েছে এবং যাদের ওপর স্থায়ীভাবে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ পড়েছে, অথচ তার হৃদয়ে একটি যবের ওজনের পরিমাণ ভালো কিছু (ঈমান) আছে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপর জাহান্নাম থেকে বের করা হবে তাকেও, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ পড়েছে এবং তার হৃদয়ে একটি গমের ওজনের পরিমাণ ভালো কিছু (ঈমান) আছে। (সর্বশেষে) জাহান্নাম থেকে তাকে বের করা হবে, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ পড়েছে এবং তার হৃদয়ে অণু পরিমাণ মাত্র ভালো কিছু (ঈমান) আছে।” [সহীহ বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: মহান আল্লাহ’র বাণী: ‘যাকে আমি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি’ ( باب قول الله تعالى : لما خلقت بيدي ); হাদীস নং ৬৯৭৫; সহীহ মুসলিম (১/১৮০); আহমদ (৩/১১৬)]

৩. হাম্মাদ ইবন যায়েদ মা‘বাদ ইবন হিলাল আল-আনাযী রহ. থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা বসরার অধিবাসী কিছু লোক একত্রিত হয়ে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র নিকট গেলাম এবং আমাদের সাথে সাবিত আল-বুনানীকে নিয়ে গেলাম, যাতে তিনি আমাদের জন্য আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত শাফা‘আত সম্পর্কিত হাদীসটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। আমরা তাকে তার মহলেই চাশতের সালাত আদায়রত অবস্থায় পেলাম। তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি তার বিছানায় বসা অবস্থায় আছেন। অতঃপর আমরা সাবিতকে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন শাফা‘আতের হাদীসটি জিজ্ঞাসা করার পূর্বে অন্য কিছু জিজ্ঞাসা না করেন। তখন সাবিত বললেন, হে আবূ হামযা! এরা বসরাবাসী আপনার ভাই, তারা শাফা‘আতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে। তারপর আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমাদের কাছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন:

«إذا كان يوم القيمة ماج الناس بعضهم في بعض فيأتون آدم فيقولون اشفع لنا إلى ربك فيقول لست لها ولكن عليكم بإبراهيم فإنه خليل الرحمن فيأتون إبراهيم فيقول لست لها ولكن عليكم بموسى فإنه كليم الله فيأتون موسى فيقول لست لها ولكن عليكم بعيسى فإنه روح الله وكلمته فيأتون عيسى فيقول لست لها ولكن عليكم بمحمد صلى الله عليه و سلم فيأتونني فأقول أنا لها فأستأذن على ربي فيؤذن لي ويلهمني محامد أحمده بها لا تحضرني الآن فأحمده بتلك المحامد وأخر له ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع لك وسل تعط واشفع تشفع فأقول يا رب أمتي أمتي فيقال انطلق فأخرج منها من كان في قلبه مثقال شعيرة من إيمان فأنطلق فأفعل ثم أعود فأحمده بتلك المحامد ثم أخر له ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع لك وسل تعط واشفع تشفع فأقول يا رب أمتي أمتي فيقال انطلق فأخرج منها من كان في قلبه مثقال ذرة أو خردلة من إيمان فأنطلق فأفعل ثم أعود فأحمده بتلك المحامد ثم أخر له ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع لك وسل تعط واشفع تشفع فأقول يا رب أمتي أمتي فيقول انطلق فأخرج من كان في قلبه أدنى أدنى أدنى مثقال حبة خردل من إيمان فأخرجه من النار فأنطلق فأفعل » . فلما خرجنا من عند أنس قلت لبعض أصحابنا لو مررنا بالحسن وهو متوار في منزل أبي خليفة فحدثناه بما حدثنا أنس بن مالك فأتيناه فسلمنا عليه فأذن لنا فقلنا له يا أبا سعيد جئناك من عند أخيك أنس بن مالك فلم نر مثل ما حدثنا في الشفاعة فقال هيه فحدثناه بالحديث فانتهى إلى هذا الموضع فقال هيه فقلنا لم يزد لنا على هذا فقال لقد حدثني وهو جميع منذ عشرين سنة فلا أدري أنسي أم كره أن تتكلوا قلنا يا أبا سعيد فحدثنا فضحك وقال خلق الإنسان عجولا ما ذكرته إلا وأنا أريد أن أحدثكم حدثني كما حدثكم به وقال : « ثم أعود الرابعة فأحمده بتلك المحامد ثم أخر له ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع وسل تعطه واشفع تشفع فأقول يا رب ائذن لي فيمن قال لا إله إلا الله فيقول وعزتي وجلالي وكبريائي وعظمتي لأخرجن منها من قال لا إله إلا الله» .

“যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন মানুষ (ভয়ে) সমুদ্রের ঢেউয়ের মত একে অপরের উপর পড়বে। ফলে তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন: এ কাজের জন্য আমি উপযুক্ত নই। তোমরা বরং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাও। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীল (বন্ধু) তখন তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তিনি বলবেন: আমি এ কাজের উপযুক্ত নই। তবে তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। কারণ, তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। তখন তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে এবং তিনি বলবেন: আমি তো এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি চাইব, অতঃপর আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমাকে প্রশংসা সম্বলিত বাক্য ইলহাম করা হবে, যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানা নেই, আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে তাঁর প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। তুমি বল, তোমার কথা শোনা হবে। তুমি চাও, তা দেওয়া হবে; সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত! বলা হবে, যাও, যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও, আমি গিয়ে তাই করব। তারপর আমি ফিরে আসব এবং পুনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে তাঁর প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা উঠান; আপনি বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আপনি যা চান, তা আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত! আমার উম্মত! অতঃপর বলা হবে, যান, যাদের এক অণু কিংবা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করুন। আমি গিয়ে তাই করব। আমি পুনরায় প্রত্যাবর্তন করব এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে তাঁর প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা উঠান; আপনি বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আপনি যা চান, তা আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত! আমার উম্মত! এরপর আল্লাহ বলবেন: যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানা অপেক্ষা ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান থাকে, তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনুন। আমি যাব এবং তাই করব। আমরা যখন আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র নিকট থেকে বের হয়ে আসছিলাম, তখন আমি আমার সাথীদের কোনো একজনকে বললাম, আমরা যদি আবূ খলীফার বাড়িতে আত্মগোপনরত হাসান বসরী’র কাছে গিয়ে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র বর্ণিত হাদীসটি তাঁর কাছে বর্ণনা করতাম। এরপর আমরা হাসান বসরী’র কাছে এসে তাঁকে অনুমতির সালাম দিলাম। তিনি আমাদেরকে প্রবেশ করতে অনুমতি দিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, হে আবূ সাঈদ! আমরা আপনারই ভাই আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র কাছ থেকে আপনার কাছে আসলাম। শাফা‘আত সম্পর্কে তিনি যেরূপ বর্ণনা দিয়েছেন, অনুরূপ বর্ণনা করতে আমরা আর কাউকে দেখিনি। তিনি বললেন, আমার কাছে সেটি বর্ণনা কর। আমরা তাঁকে হাদীসটি বর্ণনা করে শোনালাম। এরপর আমরা শেষস্থলে এসে বর্ণনা শেষ করলাম। তিনি বললেন, আরও বর্ণনা কর। আমি বললাম, তিনি তো এর বেশি আমাদের কাছে বর্ণনা করেন নি। তিনি বললেন, জানি না, তিনি কি ভুলেই গেলেন, না তোমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলে অবশিষ্টটুকু বর্ণনা করতে অপছন্দ করলেন, বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি শক্তি সামর্থ্যে ও স্মরণশক্তিতে মজবুত ছিলেন, তখন আমার কাছেও হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন। আমরা বললাম, হে আবূ সা‘ঈদ! আমাদের কাছে হাদীসটি বর্ণনা করুন। তিনি হাসলেন এবং বললেন, মানুষকে তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয় করে সৃষ্টি করা হয়েছে; আমি তো বর্ণনার উদ্দেশ্যেই তোমাদের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, আমার কাছেও তা বর্ণনা করেছেন, তবে পরে এটুকুও বলেছিলেন: আমি চতুর্থ বার ফিরে আসব এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে তাঁর (আল্লাহর) প্রশংসা করব এবং সাজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা উঠান; আপনি বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আপনি যা চান, তা আপনাকে দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফা‘আত করার অনুমতি দান কর, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে। তখন আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জত, আমার পরাক্রমশীলতা, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্তের কসম! যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব।” [সহীহ বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: কিয়ামতের দিনে নবী ও অপরাপরের সাথে মহান আল্লাহর কথাবার্তা ( باب كلام الرب يوم القيامة مع الأنبياء وغيرهم ); হাদীস নং ৬৮৮৭; সহীহ মুসলিম: (১/১৮২)]

৪. আবূ হাযেম রহ. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন এবং আবূ মালেক রাব‘য়ী থেকে বর্ণনা করেন, আর তিনি বর্ণনা করেন হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে, তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« يَجْمَعُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ فَيَقُومُ الْمُؤْمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ الْجَنَّةُ فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ يَا أَبَانَا اسْتَفْتِحْ لَنَا الْجَنَّةَ . فَيَقُولُ وَهَلْ أَخْرَجَكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلاَّ خَطِيئَةُ أَبِيكُمْ آدَمَ لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ اذْهَبُوا إِلَى ابْنِى إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ اللَّهِ-قَالَ-فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ إِنَّمَا كُنْتُ خَلِيلاً مِنْ وَرَاءَ وَرَاءَ اعْمِدُوا إِلَى مُوسَى -صلى الله عليه وسلم- الَّذِى كَلَّمَهُ اللَّهُ تَكْلِيمًا . فَيَأْتُونَ مُوسَى -صلى الله عليه وسلم- فَيَقُولُ لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى كَلِمَةِ اللَّهِ وَرُوحِهِ . فَيَقُولُ عِيسَى -صلى الله عليه وسلم- لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ . فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا -صلى الله عليه وسلم- فَيَقُومُ فَيُؤْذَنُ لَهُ وَتُرْسَلُ الأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ فَتَقُومَانِ جَنَبَتَىِ الصِّرَاطِ يَمِينًا وَشِمَالاً فَيَمُرُّ أَوَّلُكُمْ كَالْبَرْقِ » . قَالَ قُلْتُ بِأَبِى أَنْتَ وَأُمِّى أَىُّ شَىْءٍ كَمَرِّ الْبَرْقِ قَالَ : « أَلَمْ تَرَوْا إِلَى الْبَرْقِ كَيْفَ يَمُرُّ وَيَرْجِعُ فِى طَرْفَةِ عَيْنٍ ثُمَّ كَمَرِّ الرِّيحِ ثُمَّ كَمَرِّ الطَّيْرِ وَشَدِّ الرِّجَالِ تَجْرِى بِهِمْ أَعْمَالُهُمْ وَنَبِيُّكُمْ قَائِمٌ عَلَى الصِّرَاطِ يَقُولُ رَبِّ سَلِّمْ سَلِّمْ حَتَّى تَعْجِزَ أَعْمَالُ الْعِبَادِ حَتَّى يَجِىءَ الرَّجُلُ فَلاَ يَسْتَطِيعُ السَّيْرَ إِلاَّ زَحْفًا-قَالَ-وَفِى حَافَتَىِ الصِّرَاطِ كَلاَلِيبُ مُعَلَّقَةٌ مَأْمُورَةٌ بِأَخْذِ مَنْ أُمِرَتْ بِهِ فَمَخْدُوشٌ نَاجٍ وَمَكْدُوسٌ فِى النَّارِ » . وَالَّذِى نَفْسُ أَبِى هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ إِنَّ قَعْرَ جَهَنَّمَ لَسَبْعُونَ خَرِيفًا » .

“আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে সমবেত করবেন। মুমিনগণ দাঁড়িয়ে থাকবে, জান্নাতকে তাদের নিকটবর্তী করা হবে। অবশেষে সবাই আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার প্রার্থনা করুন। আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, তোমাদের পিতা আদমের পদস্খলনের কারণেই তো তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। তোমরা পুত্র ইবরাহীমের কাছে যাও, তিনি আল্লাহর বন্ধু। (এরপর সবাই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে এলে) তিনি বললেন: না, আমিও এর যোগ্য নই, আমি আল্লাহর বন্ধু ছিলাম বটে, তবে তা ছিল অন্তরাল থেকে। [অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর সাথে আমার কথা হয় নি, যেমন মূসার হয়েছিল।] তোমরা মূসার কাছে যাও। কারণ, তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলতেন। সবাই মূসার কাছে আসবে। তিনি বলবেন: আমিও এর যোগ্য নই; বরং তোমারা ‘ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তিনি আল্লাহর দেওয়া ‘কালেমা’ ও ‘রূহ’। সবাই তাঁর কাছে আসলে তিনি বলবেন: আমিও তার উপযুক্ত নই। তখন সকলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসবে; তিনি দো‘আর জন্য দাঁড়াবেন এবং তাকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আমানত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক পুলসিরাতের ডানে-বামে এসে দাঁড়াবে। আর তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে। সাহাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হউক। আমাকে বলে দিন, ‘বিদ্যুৎ গতির ন্যায়’ কথাটির অর্থ কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনও দেখ নি? চক্ষের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায়, আবার ফিরে আসে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এর পরবর্তী দলগুলো যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে যাবে। প্রত্যেকেই তার আমল অনুযায়ী তা অতিক্রম করবে। আর তোমাদের নবী সেই অবস্থায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দো‘আ করতে থাকবে: ‘আল্লাহ এদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিন। এরূপে মানুষের আমল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম করতে থাকবে। শেষে এক ব্যক্তিকে দেখা যাবে, সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, সিরাতের উভয় পার্শ্বে ঝুলান থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহশলকা। এরা আল্লাহর নির্দেশক্রমে চিহ্নিত পাপীদেরকে পাকড়াও করবে। তন্মধ্যে কাউকে তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; সে নাজাত পাবে। আর কতক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হবে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ; জেনে রাখ, জাহান্নামের গভীরতা সত্তর খরীফ (অর্থাৎ সত্তর হাজার বছরের মত) [ইবন খুযাইমা তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন, পৃ. ২৪৫; আবূ ‘আওয়ানা (১/১৭৪); সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় (১/১৮৬)।]

৫. আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোনো একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল বেলায় উপনীত হলেন, অতঃপর ফজরের সালাত আদায় করলেন, তারপর বসলেন, শেষ পর্যন্ত যখন দ্বিপ্রহর হয়ে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন, তারপর তাঁর জায়গায় বসে থাকলেন, শেষ পর্যন্ত (সেখানে একাধারে) যোহর, আসর ও মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। এই গোটা সময়ে তিনি কোনো কথা বললেন না, এমনকি সবশেষে এশা’র সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তাঁর পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, তারপর জনগণ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন: আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করুন, তাঁর অবস্থা কী? তিনি আজকে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা আর কখনও করেন নি; বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, জবাবে তিনি বললেন:

«نعم عرض علي ما هو كائن من أمر الدنيا وأمر الآخرة , فجمع الأولون والآخرون بصعيد واحد ففظع الناس بذلك حتى انطلقوا إلى آدم عليه السلام والعرق يكاد يلجمهم , فقالوا : يا آدم أنت أبو البشر , وأنت اصطفاك الله عز و جل , اشفع لنا إلى ربك , قال : لقد لقيت مثل الذي لقيتم , انطلقوا إلى أبيكم بعد أبيكم إلى نوح { إن الله اصطفى آدم ونوحا وآل إبراهيم وآل عمران على العالمين } قال : فينطلقون إلى نوح عليه السلام , فيقولون : اشفع لنا إلى ربك فأنت اصطفاك الله واستجاب لك في دعائك ولم يدع على الأرض من الكافرين ديارا , فيقول : ليس ذاكم عندي , انطلقوا إلى إبراهيم عليه السلام , فإن الله عز و جل اتخذه خليلا , فينطلقون إلى إبراهيم فيقول : ليس ذاكم عندي , ولكن انطلقوا إلى موسى عليه السلام , فإن الله عز و جل كلمه تكليما فيقول موسى عليه السلام : ليس ذاكم عندي , ولكن انطلقوا إلى عيسى بن مريم , فإنه يبرئ الأكمه والأبرص ويحيى الموتى فيقول عيسى : ليس ذاكم عندي , ولكن انطلقوا إلى سيد ولد آدم , فإنه أول من تنشق عنه الأرض يوم القيامة , انطلقوا إلى محمد صلى الله عليه و سلم فيشفع لكم إلى ربكم عز و جل , قال : فينطلق فيأتي جبريل عليه السلام ربه فيقول الله عز و جل : ائذن له وبشره بالجنة , قال : فينطلق به جبريل فيخر ساجدا قدر جمعة , ويقول الله عز و جل : ارفع رأسك يا محمد , وقل يسمع , واشفع تشفع , قال : فيرفع رأسه , فإذا نظر إلى ربه عز و جل خر ساجدا قدر جمعة أخرى , فيقول الله عز و جل : ارفع رأسك , وقل يسمع , واشفع تشفع , قال : فيذهب ليقع ساجدا فيأخذ جبريل عليه السلام بضبعيه فيفتح الله عز و جل عليه من الدعاء شيئا لم يفتحه على بشر قط , فيقول : أي رب خلقتني سيد ولد آدم ولا فخر , وأول من تنشق عنه الأرض يوم القيامة ولا فخر حتى أنه ليرد على الحوض أكثر مما بين صنعاء وأيلة , ثم يقال : ادعوا الصديقين فيشفعون , ثم يقال : ادعوا الأنبياء , قال : فيجيء النبي ومعه العصابة , والنبي ومعه الخمسة والستة , والنبي وليس معه أحد , ثم يقال : ادعوا الشهداء فيشفعون لمن أرادوا , وقال : فإذا فعلت الشهداء ذلك قال : يقول الله عز و جل : أنا أرحم الراحمين , ادخلوا جنتي من كان لا يشرك بي شيئا , قال : فيدخلون الجنة , قال : ثم يقول الله عز و جل : انظروا في النار , هل تلقون من أحد عمل خيرا قط , قال : فيجدون في النار رجلا , فيقول له : هل عملت خيرا قط ؟ فيقول : لا , غير أني كنت أسامح الناس في البيع والشراء , فيقول الله عز و جل : اسمحوا لعبدي كإسماحه إلى عبيدي , ثم يخرجون من النار رجلا فيقول له : هل عملت خيرا قط ؟ فيقول : لا , غير أني قد أمرت ولدي إذا مت فاحرقوني بالنار , ثم اطحنوني حتى إذا كنت مثل الكحل فاذهبوا بي إلى البحر فاذروني في الريح , فوالله لا يقدر علي رب العالمين أبدا , فقال الله عز و جل : لم فعلت ذلك ؟ قال : من مخافتك , قال : فيقول الله عز و جل : انظر إلى ملك أعظم ملك فإن لك مثله وعشرة أمثاله , قال : فيقول : لم تسخر بي وأنت الملك ؟ قال : وذاك الذي ضحكت منه من الضحى» .

“হ্যাঁ, দুনিয়া ও আখিরাতের যেসব বিষয় সৃষ্টি হওয়ার, সেসব কিছু আমার নিকট পেশ করা হয়েছে, অতঃপর একই ভূমিতে প্রথম ও শেষ ব্যক্তিগণকে একত্রিত করা হয় এবং এই কারণে মানুষ কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়, শেষ পর্যন্ত তারা আদম আলাইহিস সালামের নিকট ছুটে যায়, আর তখন ঘাম তাদের মুখের ভিতরে ডুকে যাওয়ার উপক্রম হয়; অতঃপর তারা বলল, হে আদম আলাইহিস সালাম! আপনি মানব জাতির পিতা, আর আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে মনোনীত করেছেন, আপনি আপনার রবের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তখন তিনি বলেন, আমিও তোমাদের মতো একই পরিস্থিতির শিকার; তোমরা বরং তোমাদের পিতার পর তোমাদের আরেক পিতা নূহ আলাইহিস সালামের নিকট যাও (নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ ও ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের ওপর মনোনীত করেছেন); তিনি বলেন: অতঃপর তারা নূহ আলাইহিস সালামের নিকট ছুটে গেল, তারপর তারা বলল, আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে মনোনীত করেছেন, আপনার দো‘আ কবুল করেছেন এবং তিনি যমীনে কাফিরদের মধ্যে কোনো গৃহবাসীকে (ধ্বংসের কবল থেকে) অব্যাহতি দেন নি। তখন তিনি বলেন: তোমাদের এহেন পরিস্থিতিতে আমার কিছুই করার নেই। তোমরা বরং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট চলে যাও; কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অতঃপর তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট চলে যায়, তখন তিনি বলেন: তোমাদের এহেন পরিস্থিতিতে আমার কিছুই করার নেই। তোমরা বরং মূসা আলাইহিস সালামের নিকট চলে যাও। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কথা বলেছেন, তখন মূসা আলাইহিস সালাম বলেন: তোমাদের এহন পরিস্থিতিতে আমার কিছুই করার নেই। তোমরা বরং ‘ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালামের নিকট চলে যাও। কারণ, তিনি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে রোগমুক্ত করেছেন এবং জীবিত করেছেন মৃত ব্যক্তিদেরকে। তখন ‘ঈসা আলাইহিস সালাম বলেন: তোমাদের এহেন পরিস্থিতিতে আমার কিছুই করার নেই। তোমরা বরং আদম সন্তানদের নেতার নিকট চলে যাও। কারণ, তিনিই প্রথম ব্যক্তি, কিয়ামতের দিনে যার থেকে যমীন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চলে যাও, অতঃপর তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করবেন; তিনি বলেন: অতঃপর তিনি ছুটে যাবেন, তারপর জিবরীল আলাইহিস সালাম তার রবের নিকট আসবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দান কর। তিনি বলেন, তারপর জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে ছুটে যাবেন, অতঃপর তিনি এক সপ্তাহ পরিমাণ সময় ধরে সাজদায় অবনত হয়ে থাকবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার মাথা উত্তোলন করুন এবং কথা বলুন, আপনার কথা শুনা হবে; আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে; তিনি বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর মাথা উঠাবেন। তারপর তিনি যখন তাঁর প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃষ্টি দিবেন, তখন আরও এক সপ্তাহ সাজদায় অবনত হয়ে থাকবেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: আপনি আপনার মাথা উত্তোলন করুন এবং কথা বলুন, আপনার কথা শুনা হবে; আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে; তিনি বলেন, অতঃপর তিনি সাজদায় অবনত হতে যাবেন, তখনই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর বাহুদ্বয়ে ধরে ফেলবেন; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ব্যাপারে এমন কিছু দো‘আর সূচনা করবেন, যা অন্য কোনো মানুষের ব্যাপারে করেন নি। অতঃপর তিনি বলবেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে আদম সন্তানতের নেতা করে সৃষ্টি করেছেন, এতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই এবং আমাকে প্রথম ব্যক্তি বনিয়েছেন, কিয়ামতের দিনে যার থেকে যমীন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, এতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই, শেষ পর্যন্ত তাঁকে এমন এক হাউযের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, যার প্রশস্ততা সান‘আ ও আয়লার মধ্যকার দূরেত্বের চেয়ে বেশি। অতঃপর বলা হবে, আপনি সিদ্দীকগণকে আহ্বান করুন, তারপর তারা সুপারিশ করবে; অতঃপর বলা হবে, আপনি নবীগণকে আহ্বান করুন, তিনি বলেন, (ডাকার পর) এক নবী আসবেন এবং তার সাথে একদল লোক থাকবে; আরেক নবী আসবেন, যার সাথে পাঁচ-ছয় জন লোক থাকবে; আরেক নবী আসবেন, যার সাথে কেউই নেই। অতঃপর বলা হবে, আপনি শহীদদেরকে আহ্বান করুন, অতঃপর তারা যার জন্য ইচ্ছা সুপারিশ করবে, আর তিনি বলেন, তারপর যখন শহীদগণ এই কাজ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি দয়াবানদের চেয়ে আরও অনেক বেশি দয়ালু, তোমরা যারা আমার সাথে কোনো কিছুর শরীক কর নি, তারা জান্নাতে প্রবেশ কর, তিনি বলেন: অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমরা জাহান্নামের দিকে লক্ষ্য কর, এমন কারও দেখা পাও কিনা, যে কখনও কোনো ভালো কাজ করেছে; তিনি বলেন: অতঃপর তারা জাহান্নামের মধ্যে এক ব্যক্তিকে পাবে, তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, তুমি কি কখনও কোনো ভালো কাজ করেছ? জবাবে সে বলবে: না, তবে আমি বেচাকেনার ক্ষেত্রে মানুষের সাথে নম্র ব্যবহার করতাম; তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি কোমল আচরণ কর, যেমনিভাবে সে আমার বান্দাদের প্রতি কোমল আচরণ করত; অতঃপর তারা জাহান্নাম থেকে এক ব্যক্তিকে বের করে আনবে, তারপর তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, তুমি কি কখনও কোনো ভালো কাজ করেছ? জবাবে সে বলবে: না, তবে আমি আমার সন্তানদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, যখন আমি মারা যাই, তখন তোমরা আমাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে, অতঃপর তোমরা আমাকে পিষে ফেলবে, শেষ পর্যন্ত যখন আমি সুরমার মতো হয়ে যাবে, তখন তোমরা আমাকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে যাবে এবং আমাকে বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিবে; তাহলে আল্লাহর কসম করে বলছি, জগতসমূহের রব আল্লাহ আমার ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না। তার কথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জিজ্ঞেসা করে বলবেন, তুমি কেন এ ধরনের কাজ করলে? জবাবে সে বলবে, তোমার ভয়ে; তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি কোনো রাজত্বের দিকে লক্ষ্য করে তার মতো রাজত্ব কামনা কর, নিশ্চয় তোমার জন্য রয়েছে তার অনুরূপ ও তার মত করে আরও দশটি অনুরূপ রাজত্ব; তিনি বলেন: তখন সে বলবে, (হে রব!) কেন তুমি আমার সাথে উপহাস করছ? অথচ তুমি হলে রাজা বা ক্ষমতাধর; তিনি বলেন: আর এ কারণেই আমি দ্বিপ্রহরে হেসেছিলাম।” [আহমদ (১/৪); ইবন খুযাইমা হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন, পৃ. ৩১০; আবূ ‘আওয়ানা (১/১৭৫); ইবন হিব্বান, পৃ. ৬৪২ (মাওয়ারেদ); আর হাইছামী ‘আল-মাজমা‘’-এর মধ্যে বলেন, হাদীসটি ইমাম আহমদ, আবূ ই‘য়ালা ও বাযার প্রায় একই রকমভাবে বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাকারীগণ সকলেই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।]

৬. আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«إن الناس يصيرون يوم القيامة جثا كل أمة تتبع نبيها , يقولون : يا فلان اشفع لنا , حتى تنتهي الشفاعة إلى النبي صلى الله عليه و سلم , فذلك يوم يبعثه الله المقام المحمود » .

“নিশ্চয় কিয়ামতের দিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক নবীর উম্মত নিজ নিজ নবীর অনুসরণ করবে। তারা বলবে: হে অমুক (নবী)! আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। হে অমুক (নবী)! আপনি সুপারিশ করুন। (তারা কেউ সুপারিশ করতে রাজি হবেন না) শেষ পর্যন্ত সুপারিশের দায়িত্ব নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বর্তাবে। আর এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ‘মাকামে মাহমুদ’ তথা প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” [এই হাদীসটি মাওকুফ হাদীস (আর সাহাবীর কথা বা কাজকে ‘মাওকুফ’ হাদীস বলা হয়); ইমাম বুখারী রহ. হাদীসখানা তাঁর গ্রন্থের ‘তাফসীর’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন, সূরা আল-ইসরা, পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩﴾ “আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে”; কিন্তু ইবন জারিরের নিকট হাদীসটি ‘মারফু’ হিসেবে এসেছে, ১৫ খণ্ড, পৃ. ১৪৬, মুহাম্মদ ইবন আবদিল্লাহ ইবন আবদিল হেকাম বলেন, আমাদের নিকট শো‘আইব ইবন লাইস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমার নিকট ‘উবায়দুল্লাহ ইবন আবি জা‘ফর বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হামযা ইবন আবদিল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা. কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এবং তিনি হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী বিশুদ্ধ হাদীসের বর্ণনাকারী; আর হাফেয হাইছামী ‘মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ’ ( مجمع الزوائد ) দশম খণ্ড, পৃ. ৩৭১–এর মধ্যে হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন: আমি বলি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: فيقضي الله بين الخلق إلى آخره থেকে সংক্ষেপ করে ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।]

৭. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ , وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ » .

“আমি কিয়ামতের দিনে আদম সন্তানদের নেতা হব এবং আমিই হব প্রথম ব্যক্তি যার কবর উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, আর আমিই প্রথম সুপারিশকারী হব এবং আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ফযীলত ( الفضائل ), পরিচ্ছেদ: আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমুদয় সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান প্রসঙ্গে ( باب تَفْضِيلِ نَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم عَلَى جَمِيعِ الْخَلاَئِقِ ), হাদীস নং ৬০৭৯।]

৮. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾ [ الاسراء : ٧٩ ]

“আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭৯] -এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন:

«هي الشفاعة » . هذا حديث حسن

তা হলো শাফা‘আত।” এই হাদীসটি হাসান পর্যায়ের। [তিরমিযী (৪/৩৬৫); আহমদ (২/৪৪১); আবূ না‘ঈম, আল-হিলইয়া [ الحلية ] (৮/৩৭২), আর এটা হাসান হাদীস, যেমনটি ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন।]

৯. আবূ সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أنا سيد ولد آدم ولا فخر , وأنا أول من تنشق الأرض عنه يوم القيامة ولا فخر , وأنا أول شافع وأول مشفع ولا فخر , ولواء الحمد بيدي يوم القيامة ولا فخر » .

“আমি আদম সন্তানদের নেতা হব এবং তাতে অহঙ্কারের কিছু নেই। আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, কিয়ামতের দিনে যার যমীন (কবর) উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং তাতে অহঙ্কারের কিছু নেই, আর আমিই প্রথম সুপারিশকারী হব এবং আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে এবং তাতে আমি অহঙ্কার করি না, আর কিয়মাতের দিনে প্রশংসার পতাকা আমার হাতে থাকবে এবং তাতে আমি অহঙ্কার করি না।” [ইবন মাজাহ, জুহুদ অধ্যায় ( كتاب الزهد ), পরিচ্ছেদ: শাফা‘আতের আলোচনা ( باب ذكر الشفاعة ), হাদীস নং ৪৩০৮; তিরমিযী হাদীসটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করেছেন, আর এটা হাসান হাদীস।]

১০. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أنا سيد ولد آدم يوم القيامة , وأنا أول من تنشق عنه الأرض , و لواء الحمد معي و تحته آدم , و من دونه و من بعده من المؤمنين » .

“আমি কিয়ামতের দিনে আদম সন্তানদের নেতা হব, আর আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, কিয়ামতের দিনে যার যমীন (কবর) উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, আর প্রশংসার পতাকা আমার সাথে থাকবে এবং তার নিচে থাকবে আদম আলাইহিস সালাম, তাঁর নিকটতম স্তরের ব্যক্তিগণ ও তাঁর পরবর্তী মুমিন বান্দাগণ।” [আবূ না‘ঈম, দালায়েল (১/১৩); তার সমর্থনে হাদীস বর্ণনা করেছেন দারেমী (১/২৭); আহমদ (৩/১৪৪); হাদীসটি ইনশাআল্লাহ হাসান। দেখুন: ইবন ‘আসেম, আস-সুন্নাহ (২/৩৭০)।]

১১. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মধ্য থেকে একদল লোক তাঁর অপেক্ষায় বসে আছে, তিনি বলেন: অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হলেন, এমনকি যখন তিনি তাদের নিকটবর্তী হয়ে গেলেন, তখন তিনি তাদেরকে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করতে শুনলেন; অতঃপর তিনি তাদের কথা শুনলেন, তাদের কেউ কেউ বলেন: আশ্চর্য্যের বিষয় হলো যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে বন্ধু গ্রহণ করেছেন। তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন, অতঃপর ‘ঈসা আলাইহিস সালাম হলেন আল্লাহর ‘কালেমা’ ও ‘রূহ’; অপর একজন বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে মনোনীত করেছেন। অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করলেন এবং বললেন:

«قد سمعت كلامكم وعجبكم , إن إبراهيم خليل الله وهو كذلك , وموسى نجي الله وهو كذلك , وعيسى روحه وكلمته وهو كذلك , وآدم اصطفاه الله تعالى وهو كذلك , ألا وأنا حبيب الله ولا فخر , وأنا حامل لواء الحمد يوم القيامة ولا فخر , وأنا أول من يحرك بحلق الجنة ولا فخر , فيفتح الله لي فيدخلنيها ومعي فقراء المؤمنين ولا فخر , وأنا أكرم الأولين والآخرين على الله ولا فخر » .

“আমি তোমাদের কথাবার্তা এবং তোমাদের বিস্ময় প্রকাশের বিষয়টি শ্রবণ করেছি; নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর খলিল তথা অন্তরঙ্গ বন্ধু, আর তিনি এ রকমই, আর মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ নাজাত দিয়েছেন, আর তিনি এ রকমই, আর ‘ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর ‘রূহ’ ও ‘কালেমা’, আর তিনি এ রকমই, আর আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা মনোনীত করেছেন, আর তিনি এ রকমই। জেনে রাখ, আমি হলাম আল্লাহর হাবীব তথা প্রিয় ব্যক্তি এবং এতে আমি অহঙ্কার করি না, আর আমি কিয়ামতের দিনে প্রশংসার পতাকা বহনকারী এবং এতে আমি অহঙ্কার করি না, আর আমিই হলাম প্রথম ব্যক্তি, যে সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া ধরে নাড়া দিবে এবং এতে আমি অহঙ্কার করি না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য (জান্নাত) খুলে দিবেন এবং তিনি আমাকে তাতে প্রবেশ করাবেন, আর আমার সাথে থাকবে মুমিন ফকীরগণ, আর এতে আমি অহঙ্কার করি না, আর আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ব্যক্তির চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং এতে আমার অহঙ্কার নেই।” [দারেমী (১/২৬); দায়লামী (১/২/৩০৮); অন্য হাদীসের সমর্থনের কারণে হাদীসটি হাসান। -দেখুন: ‘আস-সিলসিলা আস-সহীহা’ ( السلسلة الصحيحة ): ৪/পৃ. ৯৭–৯৯ [লেখক](তবে বিস্তারিত বর্ণনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হাদীসে উল্লিখিত, وأنا حبيب الله এ অংশটুকু দুর্বল। দেখুন, সিলসিলা সহীহা, ৫/৪৮০) [সম্পাদক]]

১২. উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«كُنْتُ فِى الْمَسْجِدِ فَدَخَلَ رَجُلٌ يُصَلِّى فَقَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ ثُمَّ دَخَلَ آخَرُ فَقَرَأَ قِرَاءَةً سِوَى قِرَاءَةِ صَاحِبِهِ فَلَمَّا قَضَيْنَا الصَّلاَةَ دَخَلْنَا جَمِيعًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ إِنَّ هَذَا قَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ وَدَخَلَ آخَرُ فَقَرَأَ سِوَى قِرَاءَةِ صَاحِبِهِ فَأَمَرَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , فَقَرَءَا فَحَسَّنَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم شَأْنَهُمَا فَسُقِطَ فِى نَفْسِى مِنَ التَّكْذِيبِ وَلاَ إِذْ كُنْتُ فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا قَدْ غَشِيَنِى ضَرَبَ فِى صَدْرِى فَفِضْتُ عَرَقًا وَكَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَرَقًا فَقَالَ لِى : « يَا أُبَىُّ أُرْسِلَ إِلَىَّ أَنِ اقْرَإِ الْقُرْآنَ عَلَى حَرْفٍ فَرَدَدْتُ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِى . فَرَدَّ إِلَىَّ الثَّانِيَةَ اقْرَأْهُ عَلَى حَرْفَيْنِ .

فَرَدَدْتُ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِى . فَرَدَّ إِلَىَّ الثَّالِثَةَ اقْرَأْهُ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَلَكَ بِكُلِّ رَدَّةٍ رَدَدْتُكَهَا مَسْأَلَةٌ تَسْأَلُنِيهَا . فَقُلْتُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأُمَّتِى . اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأُمَّتِى . وَأَخَّرْتُ الثَّالِثَةَ لِيَوْمٍ يَرْغَبُ إِلَىَّ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ حَتَّى إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم » .

“আমি মাসজিদে ছিলাম। এক ব্যক্তি প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে লাগল এবং সে এমন এক ধরনের কিরাত পাঠ করতে লাগল, যা আমার কাছে অভিনব মনে হলো। পরে আরেকজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী ব্যক্তি হতে ভিন্ন ধরনের কিরাত পাঠ করতে লাগল। সালাত শেষে আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। অতঃপর আমি বললাম, এই ব্যক্তি এমন কিরাত পাঠ করেছে, যা আমার কাছে অভিনব মনে হয়েছে এবং অন্যজন প্রবেশ করে তার পূর্ববর্তী জন হতে ভিন্ন কিরআত পাঠ করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে (কিরাত পাঠ করতে) নির্দেশ দিলেন। তারা উভয়েই কিরাত পাঠ করল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দু’জনের (কিরাতের) ধরনকে সুন্দর বললেন। ফলে আমার মনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরআনের প্রতি মিথ্যা অবিশ্বাস ও সন্দেহের উন্মেষ দেখা দিল। এমনকি জাহেলী যুগেও আমার এমন খটকা জাগেনি। আমার ভিতরে সৃষ্ট খটকা অবলোকন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে সজোরে আঘাত করলেন। ফলে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম এবং যেন আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর দিকে দেখছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উবাই! আমার কাছে (জিবরীল আলাইহিস সালামকে) প্রেরণ করা হয়েছে যে, আমি যেন কুরআন এক হরফে তিলাওয়াত করি। আমি তখন তাঁর কাছে পুনরায় অনুরোধ করলাম, আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। দ্বিতীয়বার আমাকে বলা হলো যে, দুই হরফে তা তিলাওয়াত করবে। তখন তাঁর কাছে আবার অনুরোধ করলাম, আমার উম্মতের জন্য সহজ করে দিতে। তৃতীয়বার আমাকে বলা হলো যে, সাত হরফে তা তিলাওয়াত করবে এবং যতবার আপনাকে জবাব দিয়েছি তার প্রতিটির বদলে আপনার জন্য একটি আবেদনের সুযোগ থাকবে। অতঃপর আমি বললাম: হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় প্রার্থনাটি বিলম্বিত করে রেখেছি সেদিনের জন্য, যেদিন সারা সৃষ্টি, এমনকি ইবরাহীম আলাইহিস সালামও আমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের সালাত ( صلاة المسافرين ), পরিচ্ছেদ: কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ ও এর মর্মার্থ ( باب بَيَانِ أَنَّ الْقُرْآنَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ وَبَيَانِ مَعْنَاهُ ), হাদীস নং ১৯৪১।]

১৩. আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إذا كان يوم القيامة كنت إمام النبين و خطيبهم و صاحب شفاعتهم غير فخر» .

“যখন কিয়ামতের দিন হবে, তখন আমি নবীদের ইমাম ও খতীব হব এবং কোনো প্রকার অহঙ্কার ছাড়াই বলছি আমি তাদের শাফা‘আতের লোক হব।”

বর্ণনাকারী আরও বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«لولا الهجرة لكنت امرءا من الأنصار و لو سلك الناسُ واديا أو شِعبا لكنتُ مع الأنصار» .

“যদি হিজরত না হত, তাহলে আমি আনসারদের অন্তর্ভুক্ত এক ব্যক্তি হতাম, আর যদি মানুষ কোনো উপাত্যকা বা গিরিপথ অতিক্রম করত, তাহলে আমি আনসারদের সাথে থাকতাম।”

বর্ণনাকারী আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إذا كان يوم القيامة كنت إمام الناس وخطيبهم وصاحب شفاعتهم ولا فخر» .

“যখন কিয়ামতের দিন হবে, তখন আমি মানুষের ইমাম ও খতীব হব এবং তাদের শাফা‘আতের অধিকারী হব, আর তাতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।” [আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমদ, ‘যাওয়ায়েদুল মুসনাদ’ ( زوائد المسند ) (৫/১৩৮); তিরমিযী (৫/২৪৭); হাকেম (১/৭১) এবং (৪/৮৭), তিনি হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন এবং হাদীসটি এরকমই।]

১৪. আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ بِالسُّجُودِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ , وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ فَأَنْظُرَ إِلَى بَيْنِ يَدَيَّ فَأَعْرِفَ أُمَّتِي مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ , وَمِنْ خَلْفِي مِثْلُ ذَلِكَ , وَعَنْ يَمِينِي مِثْلُ ذَلِكَ . وَعَنْ شِمَالِي مِثْلُ ذَلِكَ » . فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! كَيْفَ تَعْرِفُ أُمَّتَكَ مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ فِيمَا بَيْنَ نُوحٍ إِلَى أُمَّتِكَ ؟ قَالَ : «هُمْ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ . لَيْسَ أَحَدٌ كَذَلِكَ غَيْرَهُمْ , وَأَعْرِفُهُمْ أَنَّهُمْ يُؤْتَوْنَ كُتُبَهُمْ بِأَيْمَانِهِمْ , وَأَعْرِفُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ ذُرِّيَّتُهُمْ» .

“আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে কিয়ামতের দিনে সাজদাহ করার অনুমতি দেওয়া হবে, আর আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে সাজদাহ থেকে মাথা উঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে; অতঃপর আমি আমার সামনের দিকে লক্ষ্য করব এবং আমি (বিভিন্ন নবীর) উম্মতদের মধ্য থেকে আমার উম্মতকে চিনে নিব, আর অনুরূপভাবে আমি আমার পিছনের দিকে তাকাব এবং আমার উম্মতকে চিনে নিব, আর অনুরূপভাবে আমি আমার ডান দিকে ও বাম দিকে তাকাব এবং আমার উম্মতকে চিনে নেব; (বর্ণনাকারী বলেন) অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আপনি অন্যান্য উম্মতের মধ্য থেকে আপনার উম্মতকে চিনে নিবেন, যেখানে আপনার উম্মতের সাথে নূহ আলাইহিস সালামের উম্মত থাকবে? তখন তিনি বললেন: তাদের আযুর চিহ্নসমূহের মধ্যে বিশেষ উজ্জ্বলতা পরিলক্ষিত হবে; তারা ব্যতীত আর কেউ অনুরূপ হবে না, আর আমি তাদেরকে আরও চিনতে পারব যে, তাদেরকে তাদের আমলনামাসমূহ ডান হাতে দেওয়া হবে এবং আমি তাদেরকে চিনতে পারব তাদের সম্মুখে তাদের সন্তানগণ ছুটাছুটি করবে।” [আহমদ, মুসনাদ, হাদীস নং ২১৭৩৭; এই হাদীসটি ‘হাসান হাদীস’ ইনশাআল্লাহ।]

আবদুর রহমান ইবন যোবায়ের ইবন নুফায়ের থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ যর ও আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনেছেন, তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ فِي السُّجُودِ » فَذَكَرَ مَعْنَاهُ .

“আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে কিয়ামতের দিনে সাজদাহ করার অনুমতি দেওয়া হবে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত হাদীসের অর্থে (হাদীস) উল্লেখ করেছেন।” [আহমদ, মুসনাদ, হাদীস নং ২১৭৩৯।]

১৫. আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أنا أولهم خروجا وأنا قائدهم إذا وفدوا , وأنا خطيبهم إذا أنصتوا , وأنا مشفعهم إذا حبسوا , وأنا مبشرهم إذا آيسوا , الكرامة والمفاتيح يومئذ بيدي , وأنا أكرم ولد آدم على ربي , يطوف علي ألف خادم كأنهم بيض مكنون أو لؤلؤ منثور» .

“বের হওয়ার দিক থেকে আমিই তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি, আর তারা যখন গমন করে, তখন আমি তাদের নেতা, আর যখন তারা চুপ থাকে, তখন আমি তাদের খতীব, আর তারা যখন অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তখন আমি তাদের জন্য সুপারিশকারী, আর তারা যখন নিরাশ হয়, তখন আমি তাদেরকে সুসংবাদ দানকারী, আর সেদিন মর্যাদা ও চাবিকাঠিসমূহ আমার হাতে থাকবে, আর আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আদম সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয়, আমার খেদমতে এক হাজার খাদেম আমার নিকট প্রদক্ষিণ করবে, তারা যেন সুরক্ষিত ডিন্ব অথবা বিক্ষিপ্ত মণিমুক্তা।” [দারেমী (১/২৬); তিরমিযী (৫/২৪৫); আর এই হাদীসের সমর্থনে আরও হাদীস রয়েছে।]

১৬. জাবের ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أنا قائد المرسلين ولا فخر وأنا خاتم النبيين ولا فخر وأنا أول شافع ومشفع ولا فخر»

“আমি হলাম রাসূলগণের নেতা এবং তাতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই, আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী এবং তাতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই, আর আমিই প্রথম সুপারিশকারী হব এবং আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে এবং তাতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।” [দারেমী (১/২৭); ইবন ‘আসেম, আস-সুন্নাহ (২/৩৭০); আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]

১৭. জাবের ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أعطيت خمسا لم يعطهن أحد قبلي : نصرت بالرعب مسيرة شهر , وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا , فأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصل , وأحلت لي المغانم ولم تحل لأحد قبلي , وأعطيت الشفاعة , وكان النبي يبعث إلى قومه خاصة وبعثت إلى الناس عامة» .

“আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয় নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, এক মাসের দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়। (২) সমস্ত যমীন আমার জন্য পবিত্র ও সালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোনো লোকের সালাতের সময় হলেই সে যেন সালাত আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারও জন্য হালাল করা হয় নি। (৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফা‘আতের অধিকার দেওয়া হয়েছে। (৫) সমস্ত নবী প্রেরিত হতেন কেবল তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।” [সহীহ বুখারী, তায়াম্মুম অধ্যায়, হাদীস নং ৩২৮]

১৮. আবদুর রহমান ইবন আবদিল্লাহ ইবন কা‘ব ইবন মালেক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি কা‘ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«يبعث الناس يوم القيامة فأكون أنا وأمتى على تل , ويكسونى ربى تبارك وتعالى حلة خضراء , ثم يؤذن لى فأقول ما شاء الله أن أقول فذلك المقام المحمود» .

কিয়ামতের দিনে মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে, তখন আমি ও আমার উম্মত মাটির টিলার উপর থাকব, আর আমার রব মহান আল্লাহ আমাকে সবুজ পোষাক পরিধান করাবেন। অতঃপর তিনি আমাকে (শাফা‘আতের) অনুমতি দিবেন, তারপর আমি তাই বলব, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দিয়ে যা বলাতে চান, আর এটাই হলো ‘মাকামে মাহমুদ’ তথা প্রশংসিত স্থান।” [ইবন জারীর (১৫/১৪৬); হাকেম (২/৩৬৩) এবং তিনি বলেন, হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তের আলোকে সহীহ, আর যাহাবী তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর হাইছামী, আল-মাজমা‘ (২/৩৭৭); আর তাবারানী ‘আল-কাবীর’ ও ‘আল-আওসাত’ এর মধ্যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আর ‘আল-কাবীর’ এর একটি সনদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী; আর ইবন জারীরের নিকট হাদীসটির সমর্থনে একটি বিশুদ্ধ ‘মাওকুফ’ হাদীস বর্ণিত আছে (১৫/১৪৬)।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন