hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

১৬
ক্রমবিকাশ ও শিক্ষা-দীক্ষা
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মদীনাতেই তিনি প্রতিপালিত হন। সালেহ ইবনে কাইসান এবং আবদুল্লাহ ইবনে উতবার মত বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণ ছিলেন তাঁর শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক। আল্লামা যুহরীর মতে, সালহ ইবনে কাইসানকে তাঁর পিতা আবদুল আজীজকে অবহিত করতেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ আল্লামা যুহরীর কথা উল্লেখ্য যে, একদা সালেহ ইবনে কাইসান আবদুল আজীজের নিকট তার পুত্র সম্পর্কে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাতে তিনি এ অভিযোগও করেছিলেন যে, ওমর মাথার চুল আছরাতে নামাযে বিলম্ব করেছে। (তাযকেরাতুন হুফফায, ১ম খণ্ড, ১৩৩ পৃ, ইবনুল জাওযি ৯ পৃ.)

এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) এমন সময়েই সালেহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যখন নামাযে বিলম্বের কারণে কঠোরতা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং যখন মাথর চুল পরিপাটি সম্পর্কেও তাঁর পূর্ণ ধারণা ছিল, আর এটা বার বছর বয়সের উপর ছাড়া কম নয়।

আমাদের ধারণা বার বছরের বয়সের পর সালেহ ইবনে কাইসান হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)-এর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বার বছ বয়সের পূর্বে তিনি তাঁর নানা এবং মায়ের চাচা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এ তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ইবনে আবদুল হাকামের নিম্নোক্ত বর্ণনাটি আমাদের এ বিশ্বাসের মূল ভিত্তি “তিনি অধিকাংশ সময় হযরত আবদুল্লাহ িইবনে ওমর (রা) এর নিকট আসতেন এবং মায়ের নিকটে গিয়ে বলতেন, মা! আমার ইচ্ছা হয় যে, আমিও তোমার চাচার মত হই!” এতে মা তাঁকে আদর করে সান্ত্বনা দিতেন, চিন্তা করো না, তুমিও আমার চাচার মত হবে ইনশাআল্লাহ।” (ইবনে আবদুল হাকাম, ১৯ পৃ.)

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন, না তিনি ওমরকে নিয়মিত শিক্ষা দিতেন একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত যে, যখন আবদুল আজীজ মিশর য় করে সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, তখন উম্মে আসেম এবং তার পুত্র ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) উভয়েই মদীনাতে ছিলেন। আর যেহেতু হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (র) ছিলেন আসেমের পিতৃব্য এবং তখন আসেম ইন্তেকাল করেছিলেন, কাজেই মা-পুত্র উভয়েই তাঁর তত্ত্বাবধানেই ছিলেন। উম্মে আসেব সকল কাজকর্মেই চাচার পরামর্শ গ্রহণ করতেন এবং তিনি যে পরামর্শই দিতেন সে অনুযায়ী কাজ করতেন। উদাহরণস্বরূপ ইবনে আবদুল হাকারে এ বর্ণনাটি প্রণিধানযোগ্য।

যখন তাঁর পিতা আবদুল আজীজ মিশরে গিয়ে সেখানকার শাসনকর্তার দায়িত্ববার গ্রহণ কলেন, তখন তিনি তাঁর স্ত্রী উম্মে আসেমকে পুত্র ওমরসহ তার নিকট চলে যাওয়ার জন্য লিখে পাঠালেন। উম্মে আসেম তার পিতৃব্যের নিকট এসে স্বামীর পত্র সম্পর্কে জানালে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বললেন, যে ভ্রাতুষ্পুত্রী! তিনি তোমার স্বামী তাঁর নিকট চলে যাও। উম্মে আসেম যখন স্বামীর নিকট চলে যেতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) তাঁকে বললেন, বালকটিকে আমার নিকট রেখে যাও, সে আমার সাথে অধিক সাদৃশ্য পূর্ণ। অতেএব উম্মে আসেম ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)কে তাঁর চাচার নিকট রেখে তিনি স্বামীর নিকট চলে গেলেন। আবদুল আজীজ পুত্রকে দেখতে না পেয়ে উম্মে আসেমকে বললেন, ওমর কোথায়? উম্মে আসেম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর কথা বললেন এবং বললেন যে, চাচা আবদুল্লাহ স্বগোত্রের সাদৃশ্যের কারণে তাকে তাঁর নিকট রেখে যেতে বলেছিলেন। আবদুল আজীজ এতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন এবং স্বীয় ভ্রাতা আবদুল মালেককে এ বিষয়ে জানিয়ে দিলেন। খলীফা আবদুল মালেক ওমর ইবনে আজদুল আজীজের জন্য মাসিক এক হাজার দীনার ভাতা দানের নির্দেশ প্রদান করলেন। ( ইবনুল জাওযি ৯)

মাতা যতদিন মদীনায় ছিলেন তনিও মায়ের সাথে মারওয়ানের ব্যক্তিগত গৃহেই থাকতেন। কিন্তু তবুও তাঁর অধিকাংশ সময় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর নিকট কাটতো। মা মিশরে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর তত্ত্বাবধানে চলে আসলেন এবং তাঁর নিকট অবস্থান করতে লাগলেন। তাঁর মা স্বী পিৃতব্যের নিকট তাঁকে রেখে গিয়েছিলেন, এতে তাঁর তত্ত্বাবধান গ্রহণ করার কারণে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন।

এবস বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ধাণা করা যায় যে, আবদুল আজীজ নিজে তার পত্রের শিক্ষকমণ্ডলী নিয়োগ করেননি, বরং আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) তাঁর শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন, তবে তাতে আবদুল আজীজের অনুমোদন ছিল। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) তার ওস্তাতগণের প্রভাবে কুবই প্রভাবিত ছিলেন। বিশেষত জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওতবাহর প্রভাব তাঁর উপর বিশেষভাবে কার্যকারী ছিল।

ইবনুল জাওযি বলেন- (আরবী)

অর্থাৎ ওমর বলতেন, যদি উবায়দুল্লাহ জীবিত থাকতেন তবে তাঁর পরামর্শ ব্যতীত আমি কোন আদেশ জারী করতাম না।

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) অন্যান্য ওস্তাদগণের তুলনায় উবায়দুল্লাহর নিকট অনেক কিছু শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। বিশেষথঃ অধিকাংশ হাদীস তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা করেছিলেন।

তাঁর ব্যক্তিগত কথা হল- (আরবী)

অর্থাৎ আমি অন্যান্য সকলের নিকট থেকে যে সমস্ত হাদীস বর্ণনা করেছি তার চেয়ে অধিক বর্ণনা করেছি উবায়দুল্লাহর নিকট থেকে। (ইবনুল জাওযি-৯)

উবায়দুল্লাহ ইবনে উতবা একজন শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস এবং বিশিষ্ট লোক ছিলেন যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) যখন মদীনার গভর্ণর তখন তিনি কোন দিনই তঁর গৃহে গমন করেননি। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) অধিকাংশ সময় তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে তাঁর গরে আসতেন। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, উবায়দুল্লাহ ইবনে ওতবা তাঁর আগমনের কোন মূল্যই দেননি, খাদেরে মাধ্যমে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে ওতবা ছাড়াও সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাফর, সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব, ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম হযরত আনাস ইবনে মালেক এবং আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) প্রমুখ মনীষীদের নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

ইবনুল জাওযি ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)-এর শ্রদ্ধেয় ওস্তাগণের নাম ও তাঁদের নিকট থেকে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমীহ লিপিবদ্ধ করেছেন- যা বিবিন্ন হাদীসের কিতাবে বর্ণিত আছে। উদাহরণস্বরূপ দু’ একটি এখানে উল্লেখ করছি। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা)-এর নিকট থেকে বেশ কিছুসংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে দু’টি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল।

(আরবী)

অর্থাৎ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি- “তোমরা লোকদেরকে সৎকার্যের আদেশ কর এবং অসৎ কার্যের নিষেধ কর, তারপর তোমরা তাঁকে যতই ডাক না কেন কিন্তু তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবেন না।

(আরবী)

অর্থাৎ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামায ছিল সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ অথচ সংক্ষিপ্ত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ৯রা)-এর নিকট থেকে তিনি বহু হাদীস শিক্ষা করেছিলেন এবং কতিপয় হাদীস বর্ণনাও করে গিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল- (আরবী)

অর্থাৎ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে তার যৌবন অতিবাহিত করে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককেও আল্লাহ ভালবাসেন এবং যে ব্যক্তি দু’ বছর ব্যাপী দিনে রোযা রাখে ও রাতে আল্লাহর ইবাদত করে তাকে তার সমান পুরষ্কার দেন।

আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা)-এর নিকট থেকেও তিনি অনেক হাদীস শিক্ষা করেছিলেন, কিন্তু মুহাদ্দিসগণ শুধু একটি হাদীসের সন্ধান পেয়েছেন। (আরবী)

অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা) হযরত আসমা (রা) থেকে বর্ণনা করেছন, তিনি বলেছেন, যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বিপদের সময়কার একটি দুআ শিক্ষা দিয়ে বললেন, যখন তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন তুমি বল যে, (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ, আল্লাহই আমার প্রতিপালক বা রব, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) ইউসুফ ইউসুফ ইবন সালামের নিকট থেকে অনেক হাদীস শিক্ষা কছিলেন এবং বহু হাদীস বর্ণনাও করেছেন; কিন্তু হাদীসের গ্রন্থসমূহে মাত্র এই একটি হাদীসই লিপিবদ্ধ দেখা যায়।

(আরবী)

অর্থাৎ ইউসুফ ইবনে আবদুস সালাম বলেছেন, নবী (ﷺ) যখনই কোন হাদীস বলতেন, তখন তিনি আকাশের দিক তাকাতেন।

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকেও তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করেছন। তিনিও তাঁর অন্যতম উস্তাদ ছিলেন। এছাড়া আবু বকর ইবনে আবদুর রহমান, আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান, উরুয়া ইবনে আবু ওয়াক্কাস আবু বুরদা, রবী ইবনে সারাতুল জুহানী, উরান ইবনে মালেক আয্-যাহরী, মুহা্ম্মত ইবনে কা, আবু সালাম এবং আবু হাযিম প্রমুখ মনীষীগণ তার শ্রদ্ধাষ্পদ উস্তাদ ছিলেন।

তন্মধ্যে কয়েকজন মুহাদ্দিস বিশেষ করে উরুয়া ইবনে যুবাইর, আবু বুরদা, আয-যাহরী, আবু সালাম, খারেজা এবং আবুবকর ইবনে আবদুর রহমান প্রমুখ বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ছিলেন। (ইবনে জাওযি ১২ থেকে ৩৫)

ইবনে জাওযি বলেন, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) এ সমস্ত বিশিষ্ট ওলামাগণ ছাড়াও অন্যান্যদের নিকট থেকে হাদীস শিক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি আরবী সাহ্যি ও আরবী কাব্য কার নিকট থেকে শিখেছিলেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে তাঁর উক্তি দ্বারা বুঝা যায় যে, মদীনায় থাকাকালে তিনি আরবী ভাসা ও সহিত্যে বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। (ইবনুল জাওযি ১২-৩৫)

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)-এর নানা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) যদিও স্বভাবত: ধর্মপ্রাণ ছিলেন, তথাপি পবিত্র করআন বোঝর জন্য সম-সাময়িক ভাষা ও সাহ্যিজ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করতেন। সুতরাং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, এজন্যই আবদুল্লাহ ইবনে ওরম (রা) তাঁর মাহান পিতা হযরত ওমর (রা)-এর আদর্শ বিচ্যুত না হয়েই তাঁর নাতী ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে আরবী ভাষা ও সাহিত্য হয়েই তাঁর নাতী ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে আরবী ভাষা ও সাত্যি শিক্ষা দিয়েছেন।

হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর শাসন-পদ্ধতির ইতিহাস পাঠ করলে জানা যায় যে, হযরত ওমর (রা) প্রত্যেক মুসলিম বালককে বিশেষতঃ প্রত্যেক যুবককে আরবী ভাসা ও সাহিত্য শিক্ষা দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করতেন। তিনি যখন মুসলমান বালক ও যুবকদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষক নিযোগ করেন তখন ভাষা শিক্ষা দেয়ার মত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) মদীনায অবস্থানাকালে আরবী ভাষা ও সাহ্যি এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যেমন- ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র ইত্যাদি এবং কুরআন ও হাদীসের অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি যখন মদীনা থেকে বের হেয় সিরিয়অ তারপর মিশরে গমন করেন তখন কিনি ছিলেন একজন বিশেষ যোগ্যতাসমপন্ন আলেম। তাঁর জ্ঞানের স্বীকৃতি দিয়ে মায়মুন ইবনে মেহরানের মত যোগ্য আলেমও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন- (আরবী)

অর্থাৎ আমরা ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)-এর নিকট আগমন করলাম, আমাদের ধারণা ছিল যে, জ্ঞান সম্পর্কে তিনি আমাদের মুখাপেক্ষী হবেন, কিন্তু তাঁর নিকট এসে উপলব্ধি করলাম যে, আমরা তাঁর ছাত্রতুল্য। (ইবনুল জাওযি ২৭)

অন্য এক স্থানে মায়মুন ইবনে মেহরান ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)কে মুআল্লিশূল উলামা অর্থাৎ আলেমদের শিক্ষক এবং সম-সাময়িক সমস্ত আলেমকে তাঁর শিষ্য বলে অভিহিত করেছিলেন। (ইবনুল জাওযি ৩৭)

ইবনুল আবদুল হাকামের একটি বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) দু’বা মদীনায় আগমন করেছিলেন।

তার ভাষ্যটি হল- তারপর ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) তাঁর পিতার নিকট মিশরে গমন করলেন এবং আল্লহর মর্জি অনুযায়ী কিছুদিন পিতার নিকট অবস্থান করলেন।

একদিন তিনি গাধার পিঠে আরোহণ করে কোথাও যাচ্ছিলেন। ঘটনাক্রমে গাধার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হলেন। তাঁর ভাই “আছবাগ” এ খবর শুনে হেসে উঠলেন। আবদুল আজীজ তাকে তিরস্কার করে বললেন, তোমার ভই পড়ে আহত হয়েছে, আর তুমি তাঁর বিপদে হাসছ! আছবাদ উত্তরে বলল, পিতা! আমি ভাইযেল অমঙ্গল কামনা করে হাসিনি এবং আমি তার আহত হওয়ায় মোটেই খুশী হইনি। তাবে তিনি পড়ে আহত না হরে বনী উমাইয়ার শীর্ণ দেহধারীর নিদর্শন পূর্ণ হত না। তিনি পড়ে আহত না হলে বনী উমাইয়ার শীর্ণ দেহদধারীর নিদর্শন পূর্ণ হয়েছে এ কারণেই আমি হাসলাম।

আবদুল আজীজ এটা চুপ করে রইলেন এবং বললৈন, যার সাথে অনেকের অনেক আমা-আকাঙ্ক্ষা জড়িত রয়েছে, মদীনা ছাড়া তার উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষঅর ব্যবস্থা করা সম্ভন হবে না। তারপর তিনি তাঁকে আবর মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন। (ইবনে আবদুল হাকাম ১৯-২০ ও ইবনে কাছীর ১৯১৭)

এ ঘটনায় আছবাগ যে কথার প্রতি ইঙ্গিত করেছিল, তা ছিল একটি ভবিষ্যদ্বাণী, যা বনুত উমাইয়াদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত লাভ করেছি। ইবনে কাঝীর বলেছেন যে, উমাইয়া বংশের লোকেরা বলাবলি করত যে, আমাদের সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ খলীফা হবেন তিনিই যিনি হবেন দুর্বল দেহের অধিকার। আর তিনি ছিলেন ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) (ইবন কাছীর, ৮ম খন্ড, পৃ. ১১৯)

ইবনুল জাওযি তার গ্রন্থের টীকায় লিখেছেন যে, খোরাসনের একজন বুযুর্গ স্বপ্নে দেখলেন যে, কোন মহান ব্যক্তি তাকে বলেছেন- যখন বনী উমাইযঅর সবচেয়ে দুর্বল দেহধারী ব্যক্তি খলীফা নির্বাচিত হবেন তখন তিনি দুনিয়াকে ন্যায়পরায়ণতার আবরণ দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন। যেমন আজ অন্যায়-অত্যাচারে পূর্ণ হয়ে আছে। (ইবনুল জাওযি ৭)

ইবন কাছীল আরও বলেছেন যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) যখন গাভার পিঠ থেকে পড়ে আহত হলেন, তখন তাঁর পিতা আবদুল আজীজ তাঁর ক্ষত স্থানের রক্ত মুছতে মুছতে বলেছিলেন-

অর্থাৎ তুমি যদি বনী উমাইয়াদের সেই শীর্ণকায় লোক হয়ে থাক তবে তুমি সৌভাগ্যশালী। (আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৭ম খন্ড পৃ. ১৯২)

উপরোক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল মিশরে, তখন আবদুল আজীজ মিশরের শাসনকর্তা এবং ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) তাঁর পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সেখানে গিয়েছিলেন।

ইবনে কাছীরের অপর একটি বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, আবদুল আজীজ যখন মক্কায় হজ্জ করতে আসতেন, তখন তিনি তাঁর পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধায়ক এবং শিক্ষক সালেহ ইবনে কাইসানের সাথে সাক্ষাৎ করে নিজ পুত্র সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করে অবগত হতনে। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ৮ম খন্ড, ১৯২ পৃ.)

ইবনে কাছীর তাঁর শিক্ষা জীবনের একটি ঘটনা বর্ণননা করে বলেছেন যে, বনু উমাইয়াদের সাধারণ লোকদের মত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ ও হযরত আলী (রা)-এ দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন। এটা জানতে পেরে তাঁর উস্তাত হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে ওতবা অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত হলেন। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে তাঁর সাথে কোন কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) এই অসন্তুষ্টির কারণ জানতে চাইলে হযরত উবায়দুল্লাহ (র) অত্যন্ত ক্রুদ্ধস্বরে বললেন-

অর্থাৎ তুমি কখন অবগত হলে যে, বদরবাসীদের প্রতি আল্লাহ পাকের সন্তুষ্ট হওয়ার পর তিনি আবর তাঁদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন?

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) শ্রদ্ধেয় উস্তাদের কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করে খুব অনুশোচনা করলেন, ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং ওয়াদা করলেন, যে, ভবিষ্যতে আর কোন দিন হযরত আলী (রা)-এর দোষ বর্ণনা করবেন না। বাকী জীবন তিনি সে ওয়াদা পালন করেছিলেন। (ইবনে কাছীর ৮ম খন্ড, পৃ. ১)

এখানে এ উদ্দেশ্যে এ ঘটনাটি উল্লেখ করা হল, যাতে পাঠকসমাজ উপলব্ধি করতে পারেন যে, তাঁর মদীনার উপস্তদগণ কিরূপে তাঁর মন-মস্তিষ্ক সৃষ্টি করেছিলেন।

এ সময়কার উল্লেখযোগ্য অপর একটি ঘটনা হল, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) একদিন নামাযে শরীক হলেন না। তাঁর তত্ত্বাবধায়ক হযরত সালেহ (রা) এর কৈফয়ত তলব করলে তিনি বললেন, আমি চুলে চিরুনী করছিলাম। এতে হযরত সালেহ (রা) অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে তিরষ্কার করলেন- তুমিচুলে চিরুনী করাকে নামাযের উপর প্রাধান্য দিলে?

এরপর তাঁর পিতা আবদুল আজীজের নিকট এ অভিযোগ লিখে পাঠালেন। তখন এক বিশেষ দূত তাঁর শাস্তি প্রয়োগ করতে মদীনায় আসলেন এবং তাঁর মাথার চুল মুণ্ডন করে ফেললেন এবং তাঁর সাথে কথা বললেন। (ইবনে কাছীর ৮ম খন্ড, পৃ. ১৯২)

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপার তাঁর পিতার এরূপ মানোবৃত্তিই তাঁকে যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল, যার ফলে মেহরানের মত বিশিষ্ট আলেমগণও তাদের উপর প্রাধান্য দিতেন।

েইবনে কাছীরের অন্য একটি বর্ণনায় জানা যায় যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র) মদীনায় অবস্থানকালে তাঁর দেখা-শুনার জন্য একদল সেবক নিযুক্ত ছিল। তিনি শাহী পরিবারর এক উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সদস্যের মতই মদীনায় অবস্থান করতেন। কিনতু এসব ভোগ-বিলাসের প্রতি তার কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি সর্বক্ষণ আল্লাহর ধ্যানে বিভোর হয়ে থাকতেন। তাই সালে ইবনে কাইসান (রা) তার পিতাকে বলেছিলেন, এ বালকের অন্তরে আল্লাহর ধ্যানে যত গভীরভাবে দাগ কেচেঠে, আমার জানা মতে এরূপ আর কারও অন্তরে দাগ কাটতে পারেনি।

মদীনায় হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (র)-এর জন্য খুবই উচ্চ ধরনৈর শিক্ষা-দীক্ষার ব্যস্থা করা হয়েছিল। তাঁর উস্তাদগণ তাঁকে শুধু ব্যবহারিক জ্ঞান শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং তাঁর মন-মস্তিষ্ককেও খুব মার্জিত ও পরিশীলিত করে দিয়েছিনে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন