hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

২০
খেলাফতের উত্তরাধিকার লাভ
সুলায়মানের চরিত্র যদিও দোষ-ত্রুটির কোন সীমা ছিল না, তবুও তাঁর মহত্ব ছিল যে, তিনি হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতেন। সাধারণতা তিনি তাকে সঙ্গে করেই সফর করতেন এবং অধিকাংশ ব্যাপারেই তিন তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। ইতোপূর্বে আমরা ওমর ইবনে আবদুল আজীজ ও সুলায়মানের প্রিয় পুত্র আয়্যূবের মধ্যে এবং সুলায়মান ও ওমর ইবনে আবদুল আজীজের মধ্যে মতবিরোধ সম্পর্কি তিনটি ঘটনা বর্ণনা করেছি।

আয়্যূব সুলায়মানে প্রিয় পুত্র এবং খেলাফতের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত ছিল। ওমর ইবনে আবদুল আজীজের খাতিরেই সুলায়মান তাঁর এ পুত্রকে দুই বার তিরস্কার করেছেন এবং ওমর ইবনে আবদুল আজীজের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সুলায়মান তাঁকে মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ দেয়ার পর ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। অথচ এতসব হওয়ার পর ধারণা কারও ধারণা ছিল না যে, মৃত্যুর কঠিন হাত যখন তাঁর দ্বারে করাঘাত করবে তখন তিন ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে খেলাফতের উত্তরাধিকারী মনোনীত করবনে। তাঁর প্রধানমন্ত্রী রেজা বিন হায়াতের পরামর্শেই সুলায়মান এ মহৎ কর্ম করতে উদ্বুদ্ধ হলেন।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন- সুলায়মানের পুত্র আয়্যূব খেলাফতের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিল। কিন্তু সুলায়মানের পূর্বেই সে ইন্তেকাল করল। এছাড়া সুলায়মানের অন্যান্য সন্তানগণ সকলেই ছিল অল্প বয়স্ক। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসল এবং তিনি কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে ইচ্ছা করলেন, তখন ওমর ইবনে আবদুল আজীজ এবং রেজা ইবনে হায়াত এসে উপস্থিত হলেন। সুলায়মান রেজাকে বললেন, আমার সন্তানগণকে জামা-কাপড় পরিধান করিয়ে আমার নিকট নিয়ে আস। তারপর সন্তানগনকে তার নিকট হাজির করা হল। তারা এতই অল্পবয়স্ক ছিল যে, তারা জামা কাপড় পর্যন্ত ঠিক রাখতে পারত না। সুলায়মান তাদের প্রতি তাকিয়ে এ কথা কয়টি আবৃত্তি করলেন। আমার সন্তানগণ ছোট ছোট তারা যদি বড় হতো তবে আমি সফল হতাম। এতে ওমর ইবনে আবদুল আজীজ পবিত্র কুরআনের আশ্রয় গ্রহণ করলেন এবং পাঠ করলেন-

অর্তাৎ যে ব্যক্ত আত্মশুদ্ধ লাভ করে আল্লাহর স্মরণ করে নামায পড়ে সেই সফল হয়েছে।

সুলায়মান রেজাকে পুনরায় আদেশ করলেন যে, আমার পুত্রগণকে অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত করে আমার নিকট নিয়ে আস। তারপর তাদেরকে আনা হল, তখন দেখা গের যে তাদের কোমরে বাঁধা তরবারী মাটি স্পর্শ করছে।

ইবনে সাদ বলেন, রেজা বিন হায়াত বলেছেন, শুক্রবার দিন সুলায়মান সবুজ রঙের রেশমী কাপড় পরিধান করলেন। তারপর আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে আক্ষেপ করে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি একজন যুবক বাদশাহ। তারপর লোকের সাথে জুমার নামাযে শরীক হবার জন্য বের হলেন। নামায হতে ফিরে এসে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন এবং একটি অছিয়তনামা তিনি তার অল্প বয়স্ক পুত্র আয়্যূবকে খেলাফতের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করলেন। এতে আমি নিবেদন করলাম আমীরুল মোমিনীন! যে খলিফা কোন যোগ্য লোককে তার স্থলাভিষিক্ত না মনোনীত না করে যায়, তিনি কিরূপে কবরে শান্তি ও নিরাপত্তা আশা করতে পারেন? সুলায়মান বললেন, আমি আল্লাহর কিতাব দ্বারা এস্তেখারা করব এবং আরও চিন্তা ভাবনা করব। এভাবে এক দুই দিন চলে গেল। অবশেষে তিনি তার পূর্ব লিীখত অছিয়তনামাটি ছিড়ে ফেললেন এবং আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, দাউদ ইবনে সুলায়মান সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? আমি বললা, তিনি আছেন কনস্টান্টিনোপলে। আপনি জানেন না যে, তিনি কি জীবিত আছেন না ইন্তেকাল করেছেন। সুলায়মান পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তবে তোমার মতমত কি? আমি বললাম, মতামতের অধিকারী তো আপনিই। আমার কর্তব্য হল আপনার মতামত সম্পর্কে চিন্তা করা ও পরীক্ষ নিরীক্ষা করে যথাযথ বাস্তবায়িত করা।

সুলায়মান বললেন, ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? আমি বললাম, তিনি একজন সৎ যোগ্য লোক। সুলায়মান বললেন, তোমার কথা সঠিক। তিনি যথার্থই একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি। কিন্ত যদি আমি তাঁকে খলিফঅ মনোনীত করি এবং আবদুল মালেকের সন্তানদের মধ্যে কাউকেও খলিফা মনোনীত না করি তবে খুব গোলমান হবে এবং ওমর ইবনে আবদুল আজীজ তাদের উপর শাসন পরিচালনা করুক তারা একটা কখনও সহ্য করবে না। কিন্তু যদি ওমর ইবনে আবদুল আজীজের পর তাদের কাউকে খলীফা মনোনিত করে যাই তবে হয়ত তারা এটা মেনে নিতে পারে। ইয়াযিদ ইবনে আবদুল মালেক এখন রাজধানীতে উপস্থিত নেই। আমি তাকেই ওমর ইবনে আবদুল আজীজের পরবর্তী খলীফা মনোনীত করছি। এতে সে কিছুটা সান্ত্বনা লাভ করে আমার মনোয়নে রাজী হতে পারে। আমি বললাম, আপনার মতামত যথার্থ এবং মতামত প্রকাশের জন্য আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।

ইবনে সাদ বলেন ইবনে জাওযি, ইবনে কাছীর, ইবনে হাকাম ও তাবারীসহ প্রায় সকল ঐতিহাসিকিই এ ব্যাপারে এক মত যে, এই রেজা বিন হায়তই ওমর ইবনে আবদুল আজীজের খেলাফতের পক্ষে সুলায়মানকে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি যদি সুলায়মানকে কবরে শাস্তি সম্পর্কে ভয় না দেখাতেন তবে ওমর ইবনে আবদুল আজীজের মনোয়নের ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি হতো।

ইবনে হাকাম ও ইবনে সাদের বর্ণনা যদিও পরস্পর বিরোধী, তবু তারা উভয়েই স্বীকার করছেন য, রেজা বিন হায়াতই হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে খলীফা মনোনিত করার জন্যসুলায়মানকে সম্মত করিয়েছিলেন।

রেজা বিন হায়াত খুব দৃঢ় ব্যক্তিত্বশীল, সংকল্পে অটল ও বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উজির ছিলেন এবং কারো ব্যক্তিত্বে তিনি আকৃষ্ট হতেন না। তিনি কুবই বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে ওমর ইবনে আবদুল আজীজের প্রতি সুলায়মানের মন আকৃষ্ট করেছিলেন।

ইবনে সাৎদ পূর্ববর্তী ঘটনাবলি ছাড়াও এক বর্ণনায় বলেছিলেন যে, রেজা বিন হায়াত ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে খলিফা মনোয়নের জন্য নিজের পক্ষ থেকে সুলায়মানকে পরামর্শ দিয়েছেন।

ইবনে জাওযি ইমাম শাফী (র) এর একটি কথা বর্ণনা করছিলেন যে, (আরবী)

অর্থাৎ আমি আশা করি যে, আল্লাহপাক সুলায়মানকে এ জন্যই জান্নাতে স্থান দিবেন যে, তিনি ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে খলীফা মনোনীত করেছিলেন।

রেজা বিন হায়াতো পরামর্শক্রমেই সুলায়মান ওমর ইবনে আবদুল আজীজের পক্ষে মনোয়ন পত্র লিখেছিলেন।

ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ সুলাইমানের উজীর আজম রেজা বিন হায়াতের মৌখিক ভাষ্যটি এরূপ বর্ণনা করেছন:

সুলাইমান অছিয়তনামাটি লিপিবদ্ধ করে তাতে সীল মোহর করলেন এবং দেহরক্ষী প্রধান কাব ইবনে হামেদুল আইসীকে ডেকে তাঁর বাড়ীর লোকজনকে ডেকে একত্রিত করল। তখন খলিফা সুলাইমান রেজাকে বললেন, তুমি আমার লিখিত চিঠিসহ তাদের নিকট গিয়ে বল যে, এটা আমার লিখিত অছিয়তনামা এবং তাদেরকে এটা মেন নিতে এবং এতে আমি যাকে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেছি তার আনুগত্য স্বীকার করতে দাও। তারপর যখন প্রধানমন্ত্রী রেজা তার কথামত তাদের নিকট গিয়ে উক্ত নির্দেশ দিলেন, তখন তারা বলল, আমরা আমিরুল মোমিনীনের নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম করতে চােই। রেজা বিন হায়াত তাদের অনুমতি দিলেন। তারা যখন সুলাইমানের নিকট উপস্থিত হল, তখন সুলাইমান তাদেরকে উক্ত অছীয়তনামার প্রতি ইঙ্গিত করলেন, তারা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে খলীফা তাদেরকে বললেন, এটাই আমার অছীয়তনামা, আমার নির্দেশ মেনে নাও এবং আমি যার জন্য খেলাফতের অছীয়ত করেছি তার আানুগত্য স্বীকার করে তারপর তা একের পর এক এক কর। সকলেই বায়আত গ্রহণ করল। তারপর প্রধানমন্ত্রী রেজা বিন হায়াত সেই সীল মোরকৃত অছয়তনাম নিয়ে বাইরে আসলেন।

রেজা বিন হায়াত আরো বলেছেন যে, যখন সমস্ত লোক চলে গেল, তখন ওমর ইবনে আবদুল আজীজ আমার নিকট এসে বললেন, আমার সন্দেহ হয় যে, এ অছয়তনামাতে আমার সম্পর্কে কিছু লেখা হয়েছে। তিনি আরো বললেন, রেজা! “তোমার প্রতি আল্লাহ সদয় হোন” তুমি আমার বন্ধুত্বের প্রতি লক্ষ্য করে এ সম্পর্কে আমাকে কিছু জানাও। যদি আমার সন্দেহই সঠিক হয়, তবে তুমি বল আমি এখনই পদ হতে ইস্তফা দিয়ে মুক্তিলাভ করি। কারণ এখনও সময় আছে। রেজা বিন হায়াত বললেন, এ সম্পর্কে আমি আপনাকে কোন কিছুই বলতে পারব না। এ কথা শুনে ওমর ইবনে আবদুল আজীজ রাগ করে সেখা হতে চলে গেলেন।

রেজা বিন হায়াত বলেন, এরপর হিশাম ইবনে আবদুল মালেক আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বলল, “রেজা! তুমি আমাকে এ অছীয়তনামর বিষযবস্তু সম্পর্কে জানাও।”

যদি এতে আমার সম্পর্কে কিছু বলা হয়ে থাকে তবে এখন হতেই আমি তা জেনে নিলাম, আর যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকেও এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে, তবে এখনই তার প্রতিবা করব। কারণ আমার মত লোক এরূপ অন্যায় অবিচার নীরবে মেনে নিতে পারে না।

রেজা নি হায়াত গোপন রহস্য উদঘাটন করতে দৃঢ়তার সাথে অস্বীকার করলেন। হিশাম নিরাশ হয়ে ফিরে গেল এবং এক হাত দিয়ে অপর হাতে মারতে মারতে বলতে লাগল, “যদি খেলাফতের দায়িত্ব আমি না পাই, তবে আবদুল মালেকের বংশে আর কে আছে?

রেজা বিন হায়াত আরো বলেন, এরপর আমি সুলাইমানের নিকট এসে দেখি তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আমি কেবলামুখী করে দিলাম। তখন তিনি বললেন, যদি তুমি তাদের নিকট হতে দ্বিতীয়বার বায়আত না নাও তবে তারা মানবে না। তারপর সুলাইমান আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” বলতে বলতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

রেজা বিন হায়াত বলেন আমি সবুজ রঙ্গের একটি চাদ দিয়ে তাঁর দেহ আবৃত করে দরজা বন্ধা করে দিলাম। তাঁর স্ত্রী সংবাদ বাহক পাঠিয়ে তার অবস্থা অবগত হতে চাইলেন। আমি বললা, খলীফা এখন ঘুমন্ত অবস্থায় আছেন। সংবাদ বাহক চাদর দিয়ে খলিফার দেহ আবৃত দেখে তাঁর স্ত্রীকে এই সংবাদ দিল। বেগম সাহেবাও তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করলেন। আমি উক্ত সংবাদবাহককে দরজায় দাঁড় করিয়ে তার নিকট থেকে অঙ্গিকার নিলাম যে, কাউকে এখানে আসতে অনুমতি দেবে না। তারপর আমি সেখান হতে বের হয়ে কাব ইবনে হামিদুল আইসীর নিকট লোক পাঠালাম এবং খলিফা পরিবারের সমস্ত লোকজনকে “মসজিদে ওয়াবিতে” হাজির করার ব্যবস্থা করলাম এবং তাদেরকে বললাম যে, তোমরা অছিয়ত নামর প্রতি বায়আত কর। তারা বলল, আমরা একবার বায়আত করেছি আবর কেন? তুমি দ্বিতীয় বার বায়আত গ্রহণ করতে চাও? আমি বললাম এটা আমিরুল মুমিনীনের অছিয়তনামা। প্রতিশ্রুটি দাও যে, এ মোহরকৃত অছিয়তনামার যাকে খলিফঅ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, তোমরা তার আনুগত্য স্বীকার করবে। তখন একে একে সকলেই দ্বিতীয় বার বায়আত করল।

রেজা বিন হায়াত বলেন, যখন সকলেই দ্বিতীয় বায়আত করল, তখন আমি মনে করলাম যে, এখন কথা মজবুত হয়ে গিয়েছে, কাজেই তাদেরকে খলিফার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে দেওয়া উচিত। তখন আমি বললাম, তোমরা সকলেই দাঁড়িয়ে যাও, শোন তোমারেদ খলিফা ইন্তেকাল করেছেন। এরপর আমি সীলমোহরকৃত চিঠি খুলে সকলেই সামনে পাঠ করতে লাগলাম, কিন্তু যখন ওমর ইবনে আবদুল আজীজের নাম ঘোষণা করলাম, তখন হিশাম ইবনে আবদুল মালেক চিৎকার করে বলতে লাগল, আল্লাহর কসম! আমি তার বায়আত করব না। আমিও চিৎকার করে বললাম, আল্লাহর কসম! তুমি বায়আত না করলে আমি এখনই তোমাকে হত্যা করব। উঠ, বায়আত কর। তারপর সে বাধ্য হয়ে উঠলো। তখন সে দু’ পা ফরামের উপর মারছিল এবং ইন্না লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন পড়ছিল। আমি ওমর ইবনে আবদুল আজীজকে বললাম, উঠুন! মিম্বরে আরোহন করুন। তিনি অতন্ত বিরক্তির সাথে ইন্না লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন বলতে বলতে মিম্বরে আরোহন করে বললেন, এমন হল কেন?

রেজা বিন হায়াত আরো বলেন, যখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মিম্বরে আরোহন করলেন এবং হিশাম ইবনে মালেক ইন্না লিল্লাহি বলতৈ বলতে বায়আত করতে আসল, তখন যে ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে বলল, আফসুসের বিষয়- আব্দুল মালেকের সন্তানরা বঞ্চিত হল আর তোমাকে খলিফা মনোনীত করা হল। ওমর ইবনে আবদুল আজীজ উত্তরে বললেন, হ্যাঁ আমিত কখনও এটা কামননা করিনি, বরং অপছন্দই করতাম। আবার তিনি ইন্না লিল্লাহি পাঠ করলেন। এরপর সুলায়মানের কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা হল। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ জানাযার নামায পড়ালেন। আল্লামা দা, তাবারী ইবনুল জাওযী ইবনে কাছীর যে বর্ণনা প্রদান করেছন তা দ্বারা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়েছে যে, সুলায়মান ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে যেরূপ প্রীতির চোখে দেখতেন তাতেই তিনি সন্দেহ প্রবণ হয়ে পড়লেন যে, হয়তঃ তাকেই খেলাফতের জন্য মনোনয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলনা, কাজেই তিনি রেজা বিন হায়াতের মাধ্যমে দঢ় অবতির পর পদ হতে ইস্তফা দিয় মুক্তি লাভ করতে চেয়েছিলেন, অন্যতায় তিনি এরূপ করতেন না। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের খেলাফরেত ঘটনা বর্ণনা করে অন্যান্য ঐতিহাসিকদের হাতে কিছুটা ভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ণ তথ্য সংযোজন করেছেন। তিনি বলেন যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ পূর্ব হতেই অবগত ছিলেন এবং রেজা বিন হায়াতের নিকট এসে তাকে তার বন্ধুত্ব ও আল্লাহর রহমতের দোহাই দিয়ে কোন মতে এ পদ হতে ইস্তফা গ্রহণ করে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য রেজা বিন হায়াতকে উদ্বুদ্ধ করতে চাইলেন। কিন্তু রেজা বিন হায়াত কোন মতে তাতে রাজী হলেন না।

ইবনে খালদুনের এ বর্ণনায় বুঝা যায় যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ পূর্বেই জানতে পেরেছিলেন এবং পদ হতে ইস্তফা দিয়ে মুক্তি লাভ করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে রেজা বিন হায়াতই ছিল তার একমাত্র প্রতিবন্ধক।

যা হোক আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ সত্য যে, রেজা বিন হায়াতই হযরত ইবনে আবদুল আজীজকে খেলাফতের পদ গ্রহণের জন্য রাজী করেছিলেন। এ ব্যাপারে ইবনে সাদের এ বর্ণনাটিও বিশেষ প্রণিধান যোগ্য। রেজা ইবনে হায়াত বলেন যে, যখন সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেকের মৃত্যুযন্ত্রণা বৃদ্ধি পেতে লাগলো, তখন আমি অস্থিরভাবে ঘরে ভিতর বাইরে আসা যাওয়অ করতে লাগলাম। এই অবস্তায় ওমর ইবনে আবদুল আজীজ আমাকে ডেকে বললেন, রেজা তুমি আমার পরম হিতৈষী বন্ধু, তোমাকে ইসলাম ও আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, যদি প্রসঙ্গক্রমে খলীফার সামনে আমার আলোচনা উঠে এবং যদি তিনি তোমার পরামর্শ চান, তবে অনুরেধ করে আমার পক্ষ হতে তার দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিও। আমি তোমার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করব। কারণ এ ব্যাপরে তোমার পরামর্শ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

রেজা বিন হায়াত বলেন, আ ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে তিরষ্কার করে বললামম, তুমি তো কম লোভী নও! তোমার ইচ্ছ যে,, আমি তোমাকে খলীফঅ মনোনীত করার জন্য সুলায়মানের নিকট সুপারিশ করি। এতে ওমর ইবনে আবদুল আজীজ খুব লজ্জিত হয়ে চলে গেলেন। আমিও ভিতহর চলে গেলাম। তখন সুলায়মান বললেন, তুমি কাকে খলীফা মনোনীত করতে পরামর্শ দাও এবং তার সম্পর্কে অছীয়তনামা লিখতে বল? আমি বললাম আমিরুল মুমিনীন, আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। কেননা, আপনি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছেন। তিনি আপনাকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সুলায়ান বললেন, তবে তোমার ইচ্ছ কী? তখন আমি ওমর ইবনে আবদুল আজজের নাম প্রস্তাব করলাম। সুলায়মান এ বলে প্রতিবাদ করলেন যে, তবে আবদুল মালেকের অছীয়তনামা কী হবে? তিনি আমার নিকট তার জীবিত সন্তানদের ব্যাপারে এবং ওয়ালিদের নিকট হতেও এ প্রতিশ্রুটি নিয়েছেন। আমি বললাম, তাদের কাউকেও ওমর েইবনে আবদুল আজীজের পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে দেন, কোন ঝামেলা থাকবে না। সুলায়মান আমার কথা সম্পূর্ণ রূপেই বঝতে পারলেন এবং বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ, কাগজ কলম নাও। আমি কাগজ কলম এনে দিলাম, তিনি ওমর ইবনে আবদুল আজীজের খেলাফতের অছিয়তনামা লিখে দিলেন।

ইবনে সা’দের অপর এক বর্ণনায় স্পষ্টই জানা যায় যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজ খেলাফতের পদ লাভের জন্য মোটেই আশা করতেন না। তিনি অছিয়তনামা শুনে শপথ করে বললেন যে তিনি কখনও খেলাফরেত পদ লাভের আশা করেননি। তার বক্তব্য ছিল এই (আরবী) আল্লাহর কসম! কখনও আমি আমা করিনি।

ইবনে আবদুল হাকাম এ ঘটনাটি যদিও খুব সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এতে নতুন তথ্য যোগ করা হয়েছে। তার ভাষ্যটি এরূপ-

১। তারপর সুলাইমান যখন মৃত্যুমুখে পতিত হলেন, তখন রেজা বিন হায়াত তাঁর মৃত্যুর সংবাদ গোপন করে লোকদের কাছে গমন করে বললেন, খলিফঅ তোমাদের অছিয়ত নামায় লিখিত ব্যক্তি ব্যক্তি সম্পর্কে নতুনভাবে বায়আত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

২। রেজা বিন হায়াতের এ কথা শুনে তারা বলল, আমাদেরকে খলিফার কাছে নিয়ে চলূন। তখন রেজা ভিতর প্রবেশ কর মৃত খলিফাকে বালিমৈর সাহায্যে সোটা করে বসিয়ে দিলেন এবং একজন খাদেমকে তাঁর নিকট দাঁড় করিয়ে তিনি নিজে বাইরে আসলেন এবং লোকজনকে ভিতরে প্রবেশ করতে বললেন। লোকেরা ভিতরে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে দূর হতেই তাঁকে দেখছিল এবং সালাম করে বের হয়ে যাচ্ছিল। তখন একজন খাদেম রোগীর ন্যায় খলিফার গাযের চাদর এদিক ওদিক করছিল।

৩। রেজা বিন হায়াত তখন লোকদেরকে মসজিদে একত্রিত করলেন, তখন খলিফা পরিবারের লোকজনের সাথ অন্যান্য গণমান্য লোকেরাও একত্রিত হয়েছিল। এবং তারা সকলেই এক সঙ্গে অছীয়তনামায় নির্দেশিত ব্যব্তর প্রতি বায়আত করলেন।

৪। তারপর যখন অছীয়ত নামা পাঠ করা হল, তখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজের নাম শুনে হিশাম ইবনে মালেককে উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠল, তখন একজন সিরিয়বাসী যুবক তরবারী উত্তোলন করে হিশাম ইবনে মালেককে ধমক দিয়ে বলল, “খলিফার অছিয়তনামা পড়া শেষ হোক, তারপর তুমি চিৎকার করবে।”

তারপর ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালেকের নাম শুনে হিশাম বলল, আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য স্বীকার করলাম। এরপর সকলে উঠে ওমর ইবনে আবদুল আজিজের হাতে বায়আত করল।

এ ব্যাপারে ইবনুল জাওযিও একটি মূলব্রন তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, হিশাম ইবনে মালেক বলল, আমি তখনই এ অছিয়তনাম মেনে যখন আমি জানতে পারব যে, তাতে আবদুল মালেকের সন্তানদের অধিকার স্বীকা করা হয়েছে। লোকেরা তার এই কথার জন্য তাকে তিরস্কর করল এবং সে ভীষণ লজ্জা পেল। তখন সমস্ত লোক সামি’না ওয়া আত’না অর্থাৎ আমরা আনুগত্যের শপথ করলাম বলে নতুনভাবে বায়আত করল। যখন রেজা ইবনে হায়াত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ মিম্বরে দাঁড়াতে অনুরোধ করলেন। তিনি মিম্বরের নিকটিই ছিলেন, তিনি বললেন, “আল্লাহর কমস”! আমি প্রকাশ্য বা গোপন কোনভাবেই এর আশা করিনি।

ইবনুল জাওযি আরো বলেন, এ দ্বিতীয় বায়আতের পর সুলাইমানকে দাফন করে যখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মসজিদে আসলেন, তখন ম্বিরে আরোহণ করে বলনে, হে লোক সকল! আমাকে আমাকে আমার মতামত ও ইচ্ছা ছাড়াই খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তোমাদেরকে আমার বায়আত হতে মুক্তি দিলাম। তোমরা স্বাধীনভাবে যাকে ইচ্ছা খলীফা নির্বাচন কর। সমস্ত লোক সমস্বরে চিৎকার কর বলে উঠল, আমরা আপনাকেই খলীফা মনোনীত করেছি, আমরা আপনাকেই খলিফা মনোনীত করেছি। আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন