hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

২৫
শরীয়ত বিরোধী আইনের সংস্কার
শরিয়ত বিরোধী আইনের সংস্কারের মহান খেদমতের কারণে সমকালীন আলেম সমাজ ও ঐতিহাসিকগণ ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে খুলঅফায়ে রাশেদার যুগের হাদী প্রভৃত সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তিনি এ মহান খেদমতের ফলেই দ্বিতীয় ওমর ও যুগের আবু বকর হিসেবে প্রশংসিত হতে পেরেছিলেন।

খেলাফরেত দায়িত্ব গ্রণ করে প্রথম দিনই রাষ্ট্রের শাসনকর্তাদের নিকট তিনি যে আদেশ নামা লিখেছিলেন- তাতে সুস্পষ্ট রূপেই ব্যক্ত করেছিলেন যে, ইসলামের কতকগুলি শরায়ে ও সুনাম রয়েছে। যে ব্যক্তি সে অনুযায়ী কাজ করে না, তার ঈমান অপূর্ণ রয়ে গেছে। যদি আমি জীবিত থাকি তবে তোমাদেরকে এ সমস্ত নমুনা বা পদ্ধতি শিক্ষা দেব। সে অনুযায়ী কাজ করতে তোমাদেরকে বাধ্য করব। আর যদি মরে যাই তবে আমি তোমাদের মধ্যে থাকার জন্য লোভী নই।

ইবনে আল হাকাম বলেন যে, তিনি সেদনি সাধারণ ভাষণে এ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন-

(আরবী)

আল্লাহ রাসুল (ﷺ) এবং তার মহান খলিফাগণ আমারেদ জন্য একটি কর্মপদ্ধতি রেখে গিয়েছেন। সে কর্ম পদ্ধতির অনুসরণ করেই আল্লাহর বিতাবের বাস্তবায়ন ও তাঁর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা সম্ভব-অন্য কোন উপায়ে তা সম্ভব নয়। কোন ব্যক্তিই তা পরিবর্তনের সাহস দেখাতে পারে না, এমনকি এ কর্মপদ্ধতির পরিপন্থী কোন চিন্তাও করতে পারে না। যে এর দ্বারা পথের সন্ধান করবে সে সুষ্ঠুপতেল সন্ধান পাবে, যে এর সাহায্য কামনা করবে সে সফলকাম হবে, আর যে এটা বর্জন করে অন্য কোন পথে চলবে, তার পরিণাম হবে দুঃখময় জাহান্নাম।

অপর এক বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মুসলমানদেরকে বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমাদের নবীর পর আর কোন নবী আসবেন না। তোমাদের নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে এরপর আর কোন কিতাবও অবতীর্ণ হবে না। অতএব আল্লাহ কাপ তাঁর মাধ্যমে যা হালাল করেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত হালাল থাকবে এবং যা হারাম করেছেন তা কিয়ামত পর্য্ত হারাম হিসেবে গণ্য হবে। আমি এমন বিচারক নই যে, আমি আমার স্বাধীন ইচ্ছ অনুযায়ী কোন কিছুর মীমাংসা দার করব। আমি শুধু আল্লাহর নির্দেশসমূহকেই বাস্তবায়িত করব এবং ব্যতিক্রম কিছুই করব না।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাঁর প্রথম দিনের ভাষণে এ কথাও বলেছিলেন, আল্লাহ পাক কতকগুলো কাজ ফরয করে দিয়েছেন, কিছু কর্ম-পদ্ধতিও স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে সে সফলতা লাভ করতে আর যে বিরোধীতা করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

সাধারণ ভাষণে তিনি জনসাধারণকে আরো বলেছিলেন, সুন্নাতের বিপরীত জীবনে কোন শান্তি নেই। আর আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে কোন সৃষ্ট জীবের অনুসরণ করা উচিত নয়।

ইবনে জাওযি বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের প্রত্যেকটি চিঠিতে এ তিনটি বিষয়ের নির্দেশ অবশ্যই থাকত; সুন্নাতের সংস্কার, বেদআত প্রতিরোধ ও মুসলমানদের মধ্রে সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন। উদাহরন স্বরূপ তাঁর প্রথম আদেশ নামটির মর্মার্থ উল্লেখ করা হল।

আমি তোমাদেরকে আল্লহর কিতাব ও নবী এর সুন্নাতের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিচ্ছি।

যে সমস্ত কাজ করতে হবে এবং যে সমস্ত কাজ করতে হবে না আল্লাহ পাক সে সমস্ত তার কিতাবে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ মত চল তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি মেনে নাও। তিনি যে সমস্ত কাজের নির্দেশ দিয়েছেন সেটাও কর্তব্য বলে মনে কর। তার মুশাবিহাত গুলোর প্রতি ঈমান আন। আল্লাহ তোমাদের যা শিখাতে চান তা স্পষ্টরূপে বলে দিয়েছেন।

তিনি যা হালাল করেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত হালাল আর যা হারাম করেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। আল্লাহ তাঁর পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর নবীকে অবহিত করেছেন। নবী তা উত্তম রূপে উপলব্ধি করেছেন এবং সে পদ্ধতির অনুসরণেই তিনি তাঁর উম্মাতের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছেন।

আল্লাহ পাক তাঁর কিতাব ও তার নবীর মাধ্যমে দ্বীন-দুনিয়ার সকল বিষয়েই শিক্ষা দিয়েছেন কোন কিছুই বাদ দেননি। এটা তোমদের জন্য এক বিরাট নেয়ামত। এর জন্য তোমাদের আল্লাহর শোকর আদায় করা ওয়াজিব।

আল্লাহর কিতাব ও নবীর পদ্ধতে তোমাদের কারো শোকর আদায় করা ওয়াজিব।

আল্লাহর কিতাব ও নবীর পদ্ধতিতে তোমাদের কারো কোন প্রকার ছল চাতুরীর সুযোগ নেই। সে সমস্ত নির্দেশের সামনে তোমাদের কারো ব্যক্তিগত মতামতের কোনমূল্য নেই। তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হল সে সমস্ত নির্দেশকে বাস্তাবিয়ত করা , তার জন্য চেষ্টা করা। অবশ্য যে সমস্ত বিষয়ে মীমাংসা করাশুধু শাসকেরই দায়িত্ব তাতে বাড়াবাড়ি করবে না এবং তার মতামত ব্যতীত কোন ফায়সালা করবে না।

আমি আমার চিঠির মোধ্যমে তোমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করলাম। আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের পূর্বে তোমরা ভ্রষ্ট ও অজ্ঞতার অন্ধাররে নিমজ্জিত ছিলে। তোমাদের জীবন ছিল বেকার। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তোমাদের সে দুর্বলতাকে সম্মান, শান্তি ও সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমে পরিবন্তন করে দিয়েছেন। অন্যের হস্তস্থিত যে সমস্ত সম্পদ তোমরা লাভ করতে সমর্থ ছিলেনা, আল্লাহ সেসব তোমাদের দান করেছেন। আল্লাহ পাক বিশ্বাসীদের সাথে এ প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন।

আমি শুধু এ উদ্দেশ্যেই এ পত্র লিখেছি, আমার চিন্তাধারা সম্পর্কে যারা আজও অজ্ঞ, তারা যেন সাবধান হয়ে যায় এবং তারা যেন এটাও জেনে রাখে যে, আমি বাকপ্রিয় নই, তবে হ্যাঁ, যে সমস্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন সেখানে ভিন্ন কথা।

স্মরণ রেখ, আমি আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাত এবং আমার পূর্ববর্তীদের আদর্শ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছি।

এ পবিত্র পত্রটি খুব দীর্ঘ। আমরা এর কিচু অংশ এ উদ্দেশ্যে উল্লেখ করলাম যেন সম্মানিত পাঠকবৃন্দ জানতে পারেন যে, এক বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা হয়েও হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার কর্মচারীদের সামনে কোন ধরণের কর্মপদ্ধতি পেশ করেছিলেন।

এ পত্রে একজন বিজ্ঞ আইনজ্ঞের যুক্তিও আছে, অপরদিকে একজন দৃঢ়চেতা শাসকের আত্মবিশ্বাসেরও অভিব্যক্তি রয়েছে।

এরপর তিনি অপর একটি পত্রে তার কর্মচারীদেরকে শুধু একজন দৃঢ়চেতা শাসক হিসেবে সম্বোধন করেছেন।

তিনি লিখেছিলেন, তোমরা এটা নিজের জন্য অপরিহার্য মনে কর, যখন তোমরা কোন মজলিসে কথা বলবে বা নিজ বন্ধু-বান্ধবের সাথে মেলা মেশা করবে তখন আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই উল্লেখ করবে। তাদেরকে আল্লাহর কিতাব এবং নবীর সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ হতে ফিরিয়ে রাখবে। মনে রেখ, সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বর্তমান, যেমন আলোকের বিরুদ্ধে অন্ধকার বর্তমান। জাতি সৎপথ স্বরূপ দৃষ্টিশক্তি লাভ করার পর তাকে ভ্রষ্টতা স্বরূপ অন্ধকার হতে বাঁচিয়ে রাখা তোমাদের মৌলিক দায়িত্ব।

আমি তোমাদের যে সমস্ত নির্দেশ দিয়েছি যথাযথ ভাবে তার অনসরণ কর এবং যে সমস্ত কাজ করতে নিষেধ করেছি তা হতে বিরত থাক। তোমাদের কেই যেন আমার ইচ্ছা বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। কারণ তোমাদের নিকট যে ধন-সম্পদ রয়েছে আমি তার অকাঙ্ক্ষী নই এবং আমার নিকট যা আছে তাতেও আমার খুব একটা আসক্তি নেই।

মনে রেখ, আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের সাথে যে কো প্রকার বিরোধ সহ্য করা হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল এবঙ আমার নির্দেশের বিরোধীতা করবে ইমও কখনও তাকে শাসন ক্ষমতায় থাকতে দিব না।

উপরের লাইন কয়টির উপর গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ভালভাবেই জানতেন যে, তার কর্মচারীদের কারও নিকট অগাধ ধন-সম্পদ রয়েছে। সে হয়ত তার ধন-সম্পদের জোরে তাঁর অন্তর জয় করতে চেষ্টা করবে। এ জন্যই তিনি প্রথম হতেই তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের লেখা সমস্ত চিঠিসমূহ সামনে রাখলে ইবনে জাওযির বর্ণনাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে মনে হবে। উদাহরণ স্বরূপ তাঁর লেখা একটি চিঠির মর্মার্থ উল্লেখ করা হল।

যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, তুমি যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত আছ এবং ভবিষ্যতে যেখানে পৌছাবে তার প্রতিও সদা লক্ষ্য রেখ। শত্রুর সাথে তোমার সংগ্রাম কর নিজ প্রবৃত্তির সাথে সে রূপেই সংগ্রাম কর। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঘৃণিত কাজে ধৈর্য ধারণ কর। তিনি মুমিনদের যে সব প্রতিশ্রুটি দিয়েছেন, তাঁর সেই সব প্রতিশ্রুতির প্রতি গভীর ভাবে বিশ্বাস রেক।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার অধীনস্থ লোকদের প্রতি কড়াকড়ি করতে এবং সৈনিকদের কঠোর শাস্তি দিতে নিষেধ করে সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ চিঠিতে তিনি আরও লিখলেন, নিজের অধীনস্থদের প্রতি সদয় ব্যবহার কর। তাদের নগদ অর্থ বা অন্য কোন বস্তু সামগ্রীর ভেট গ্রহণ করবে না, এমনকি প্রশংসা এবং কাব্যের দ্বারাও না।

তোমার নিজের দ্বার রক্ষক সৈনিকের, প্রহরীদের এবং বাইরের যাতায়াতকারী কর্মচারীদের নিকট হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুটি গ্রহণ কর যে, তাঁরা কারো প্রতি জুলুম –অন্যায় করবে না, কাউকে কষ্ট দেবে না। সবসময় তাদের কঠোর হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করবে! তাদের মধ্যে যে সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ তাকে উত্তমরূপে পুরস্কার প্রদান করবে। আর যে অসৎ ও অলস তাকে চাকরী হতে বরখাস্ত করবে এবং তার পরিবর্তে সৎ কর্তব্য সচেতন ঈমানদার লোক নিয়োগ দিবে। আল্লাহ পাক তার নিকট তাঁর সৃষ্টি জীবের উপর আমাকের যে ক্ষমাত দিয়েছেন সে জন্য আমি তাঁর নিক ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের কাজ সহজ করে দেন, আমাদের অন্তরে সৎকর্মের প্রেরণা দান করেন, আমাদেরকে সংযমশীলতার তওফিক দান করেন এবং তিনি যে কাজে সন্তুষ্ট তাই যেন করতে সুযোগ দান করেন তার অপছন্দনীয় কাজ হতে যেন আমাদেরকে বিরত রাখেন।

তিনি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তদের নিকট যকন এ দুটি পত্র প্রেরণ করেন, প্রায় সে সময়ই খাওয়ারেজেদের কতিপয় দলপরিত নিটরও একটি পত্র লিখেছিলেন। নিম্নে তার মর্মার্থ উল্লেখ করা হলো-

আল্লাহ পাক নগন্য বান্দা আমিরুল মুমিনীন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের নিকট হতে তাদের নামে যারা দল ত্যাগ করে পৃথক হয়ে গিয়েছে আমি তোমাদের আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাত অনুসরণের জন্য আহবান করছি। মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং সৎকর্মের আহবান করে, তার কথার চেয়ে উত্তম আর কার আছে? এবং বলে আম আত্মসমর্পণকারী। আমি তোমাদেরকে তোমাদের নিতাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আল্লহর স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি, তোমরা কিসের ভিত্তিতে দ্বীন ত্যাগ করেছ, হারাম রক্তকে হালাল করেছ এবঙ হারাম মাল গ্রহণ করেছ?

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সেনাপতি মনসুর ইবনে সালেবকে যখনদুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নির্বাচন করলেন এবং সৈন্য বাহিনীসহ তাকে বাহিরে প্রেরণ করলেন তখনও তিনি তাকে যেসব নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সর্বপ্রকার নির্দেশ চিল- প্রত্যেক কাজ ও কথায় আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ আল্লাহর ভয়ই সর্বপ্রকার সৎকর্মের উৎস। তারপর তাকে নির্দেশ দিলেন, তোমার ও তোমার সঙ্গীদের আল্লা দ্রোহীতাকেই সবচেয়ে বড় দুশমন মনে করবে এবং সবসময় তা হতে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে।

এরূপ একটি সাধারণ পত্র তিনি তাঁর সেনাপতিদেরকেও লিখেছিলেন। তাদেরকেও এ কথাই বুঝিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিতাবের অনুরসরণ করবে তার দ্বীন তার জীবন ও তার পরকাল সব কিছুতেই সীমাহীন সুখ-শান্তি লাভ কবে।

সামরিক বেসারিক সমস্ত কর্মচারী নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা এর চেয়ে আরও পরিষ্কার ভাষায় বর্ণিত ছিল।

আমি প্রত্যেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করতে, আমানত রক্ষা করতে এবঙ আল্লাহর নির্দেশসমূহ বাস্তবায়িত করতে এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকার জন্যে নির্দেশ দিচ্ছি। অপর একটি আদেশে তিনি সমস্ত কর্মচারীদের বলেছিলেন যে, স্মরণ রেখ, আল্লাহজ পাক মুহাম্মদ (ﷺ) কে যে সত্য দ্বীন, যে আলো ও জীবন ব্যবস্থাসহ প্রেরণ করেছেন তা প্রচলিত সমস্ত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থাসহ প্রেরণ করেছেন তা প্রচলিত সমস্ত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার উপর জয়ী হবে, যদিও অংশীবাদীগণ তা অপছন্দ করে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে যে কিতাবসহ দেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য এবং তার নির্দেশ সমূহের অনুসরণ কর, আল্লাহর কিতাবা যে কাজ হতে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক, তার নির্দেশ মত হুদুদ প্রতিষ্ঠিত কর, তাঁর নির্ধারিত কর্মপদ্ধতি বাস্তবায়িত কর, তার হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মনে কর। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে সেই সৎপথ প্রাপ্ত হয়; আর যে তার বিরুদ্ধাচরণ করে, সে কুপথ ও অশুভ পরিণামের প্রতিই ধাবিত হয়।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার সামরিক ও বেসামরিক কর্ম-কর্তাদেরকে শুধু সংক্ষিপ্ত নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। সময় সময় তিনি তাদেরকে প্রয়োজনীয় বিষয়ে শরীয়তের কার্য পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, তিনি তার এক পত্রে লিখেছিলন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আমার মতে সকল মুসলমানকেই তা হতে বিরত থাকতে হবে, সকলেই এর ব্যবহার নিজের জন্য হারাম মনে করবে। কেননা এটা সমস্ত অন্যায় কর্মের মূল উৎস। আমার ভয় হয়, যদি মুসলমানগণ এর ব্যবহার করে তবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

বাজারের জিনিস পত্রে মাপ ও পরিমাণ সম্পর্কেও তিনি নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন, আমার মতে সমগ্র রাষ্ট্রে সর্বত্রেই পরিমাপও বাটখারা একই হওয়াউচিত। এতে কোন বেশকম যেন না থাকে। ফলে মাপে কম দেয়ার আর সম্ভাবনা থাকবে না তিনি লিখলেন উশর (উৎপন্ন শষ্যের দশমাংশ) শুধু কৃষকদের নিকট হতেই গ্রহণ করা যাবে। কৃষকগণই শুধু এর যোগ্য অন্য কেহ নয়।

জিযিয়ার-কর দেয়ার যোগ্য তিন ব্যক্তি। জমির মালিক, এমন শিল্পী যে উৎপাদন করতে সক্ষম এবং যে ব্যবসায়ী ব্যবসা বাণিজ্য করে তার সম্পদ বৃদ্ধি করে লাভবান হয়। এ তিন ব্যক্তির জিযিয়া-কর সমান সমান হবে। তাদের সম্পদের মুসলমানদের সাদকা প্রাপ্য। বছরে তা একবর গ্রহণীয়। যখনই তা তাদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে, তার প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রমাণ দিতে হবে যে, এ বৎসর তার নিকট হতে আর কোন কিছুই গ্রহণ করা যাবে না। নগরশুল্ক, এটা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। মানুষের সম্পদ হতে নগরশুল্ক গ্রহণ করোনা এবং আল্লাহর জমিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা। তরপর লিখলেন- আমর মতে কোন শাসনকর্তা বা কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিজ নিজ কর্মস্থলে কোন ব্যবসা করতে পারবে না।

তিনি তা বর্ণনা করে বলেছেন, এতে তারা অবৈধভাবে অতিরিক্ত লাভবান হবার সুযোগ পাবে। কারণ মানুষ অধিক মূ্ল্যে তার জিনিষপত্র ক্রয় করবে, ফলে শাসক ও কর্মকর্তাদের মনে অধিক অর্থের লোভ সৃষ্টি হবে। তিনি আরও লিখলেন, জমির উত্তরাধিকার তার সত্বাধিকারীদের উত্তরাধকারীদের জন্য অথবা যারা তাদের মত শুল্ক প্রদান করে, তাদের জন্য। তাদেরনিকট হতে জিযিয়া-কর যাবে না অবশ্য শাসকবৈধ খেরাজ গ্রহন করার জন্য তাদের নিকট আদায়কারী পাঠাতে পারবেন এবং সে তার নিকট হতে বৈধ রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

এ ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা্কে পূর্ণনাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি জমির মালিক, কৃষকুকুল ও সাধারণ নাগরিকদের নিকট হতে সর্বপ্রকার অবৈধ কর যা কুরআন অথবা রাসুলূল্লাহ (ﷺ) প্রবর্তন করেননি, তার সব কিছুই বন্ধ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রাজস্বের যে হার ধার্য করেছিলেন, তিনি সেই হারকেই বহাল বা পূনঃপ্রবর্তন করলেন। এমনকি জিযিয়া-কর ও রাজস্বের শরিয়ত নির্ধারিত হার পূণপ্রবর্তন করলেন অমুসলিম ধনীরেদ নিকট হতে ৪৮ দেরহারম এবং ব্যতীত অন্য কোন প্রকার কর আদায় বৈধ মনে করতেন না। হযরত ওমর ফারুক (রা) জমির উৎপাদনের স্তর ভিত্তিক বিভিন্ন জমির যে কর ধার্য করেছিলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ও তার সাম্রাহেজ্যর সর্বত্র তাই পুনঃপ্রবর্তন করলেন। ইবনে সাদ বলেন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ স্বীয় কর্মচারীগণকে নির্দেশ দিলেন যে, যে ব্যক্তি তার সম্পদরে যাকাত দেয় তা আদায় কর আর যে না দেয় তাকে আল্লহর জন্য ছেড়ে দাও।

একবার তিনি তার কর্মচারীগণকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বললেন, জন সাধারণের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও তাদের সংস্কারের জন্য কমপক্ষে ততটুকু করবে, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ জোর-জুলুম করতে চেষ্টা করেছিল। একবার তিনি তার কর্মাচারী আদী ইবনে আরতাতকে লিখলেন, আমি বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারলাম যে, আকরাদের (স্থান বিশেষ) পথে চলন্ত পথিকদের নিকট হতে কতিপয় লোক উশর আদায় করছে। যদি আমি তা জানতে পারি যে, তুমি তাদেরকে এরূপ কিছু কতে নির্দেশ দিয়েছ অথবা জানার পর তুমি তা প্রতিরোধ করনি, তবে আমি কখনও তোমার চেহারা দেখব না।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ শুধু অপছন্দনীয় কাজ-কর্মের জন্য তার কর্মচারীগণকে সতর্কই করতেন না, বরং তাদেরকে নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত করার সময় স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদিও তাদেরকে প্রদান করতেন। উহারণ স্বরূপ বলা যায়- তিনি মিশরের শাসনকরাতা আয়্যুব ইবনে মুযরাহিলকে একটি দীর্ঘ পত্র লিখলেন, এতে তিনি বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজের কথা উল্লেখ করে তাদের হুরমত বা অবৈধতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়তও উদ্ধৃত করলেন।

তিনি লিখলেন, আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের তিনটি সূরায় মদ সম্পর্কে তিনিটি আয়াত নাযিল করেছেন। প্রথম দু’টি আয়াত অবতীর্ণ হবার পরও মানুষ মদ্যপান করত, তৃতীয় আয়াত দ্বারা মদ্যপান হারান ঘোষণা করা হয় এবং স্থায়ীভাবে হারামের হুকুম বলবত করা হয়।

আল্লাহ সর্বপ্রথম বললেন- (আরবী)

অর্থাৎ তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন যে এ দুইয়েল মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য ভীষণ গোণাহ। তবে কিছু লাভও আছে। যেহেতু এই আয়াতে লাভের কথাও আছে, কাজেই এরপও লোক মদ্যপান করত। অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত অবতীর্ণ হল- (আরবী)

অর্থা হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা মাতাল অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হইয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা বল তা হৃদয়ঙ্গম করতে পার। তখনও লোক নামাযের সময় ব্যতীত অন্যান্য সময়ে মদ্যপান করত। তারপর আল্লাহ পাক এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন-

(আবরী

অর্থাৎ হে বিশ্ববাসীগণ! মদ, জুয়া, জুয়ার কাঠিও শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব তোমরা এ সমস্ত কাজ হতে দূরে থাক, তা হলে তোমরা সফলাম লাভ করবে। এ মদের দ্বারা বহু লোক চরিত্র বিনষ্ট করে ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। অনেক নেশার ঘোরে হারাম বস্তুকে হালাল করে নেয়। অন্যায় রক্তপাত, হারাম সম্পদ ভোগ এবং অবৈধ যৌন ক্রিয়াকে হালাল মনে করে। কোন কোন লোক বলেন যে, “আলা” (এক প্রকার হালকা মাদক দ্রব।) পান করা যায়, কিন্তু আমার জীবনের শপথ, পানাহারের যে দ্রব্যই মদের সাথে সম্পর্কযুক্ত তবে তা নিরাপদ দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন