hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

৩৫
ইবনে কাছীরের ভাষ্যটি এই
মানুষ মনে করে যে, ইয়াযিদ খলিফার ব্যক্তিগত খাদেমকে এক হাজার দীনার দিয়ে তার সহযোগী করেছিল। সে খাদেমই তার নখের নীচে বিষ লুকিয়ে রেখে ছিল। তখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পান করার জন্য পানি চাইলেন তখন পানিতে সে নখটি ডুবিয়ে সে পানি ওমর ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে পান করতে দিল। এর ফলেই তিনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন অবশেষে এরোগেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পীড়িত হলে প্রথমতঃ সাধারণ লোক ও তার পরিবারের লোকদের ধারণ ছিল যে, তাঁকে যাদু করা হয়েছে। ইববে কাছীর বলেন, যখন তাঁকে বিশ প্রয়োগের কথা বলা হল তখন তিনি বললেন, আমি সে দিনিই জানতে পেরেছি যে, আমি বিষাক্রান্ত হয়েছি।

তারপর তিনি তার সে খাদেমকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ করলে কেন? সে বলল, আমাকে এক হাজার দীনার দিয়ে এরূপ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

হযত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েও তার বংশের এ হীন ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেননি। তরপর যখন চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসার জন্য আগমন করলেন তখন তিনই তা প্রকাশ করে দিলেন।

ইবনে জওযি এ প্রসঙ্গে জনৈক ইহুদির কথা উল্লেক করেছেন যে, সর্বপ্রথম খলিফা বিষাক্রান্ত হওয়ার সংবাদ দিয়ে খলিফার খাদেমের নিকট তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিল।

হয়ত এ ইহুদি সে বিষ প্রয়োগকারী খাদেমের বন্ধু ছিল অথবা ইয়াযিদ ইবনে আবদুল মালেকের এ অপকর্মে শরীক করেছিল।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে বিষ পান করান হল, আর তিনি সে দিনেই এ বিষয় অবহিত হয়েছিলেন কিন্তু লজ্জাবোধ করে তা প্রকাশ করেননি। তারপর যখন এটা প্রকাশ হয়ে পড়ল তখন তিনি সে খাদেমকে ডেকে তার নিকট হতে এক হাজার দীনার নিয়ে নেন সে ঘুষ বাবদ গ্রহণ করেছিল সেই অর্থ বায়তুল মালে জমা করে দিলেন এবং তাকে বললেন, এখান হতে এখনই ভেগে যাও। যদি আমার পরিবারের লোকেরা জানতে পারে তাহলে তোমার প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়বে না। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তখন হেমছের দিয়াররে সামআন বস্তিতে অবস্থান করছিলেন। তিনি এখানেই দীর্ঘ বিশ দিন পর্যন্ত রোগ শয্যায় শায়িত ছিলেন।

ইবনে হাকাম বলেন, রোম সম্রাট তার অসুকের সংবাদ শুনেই তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে তার চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করলেন। এ চিকিৎসক দিয়ারে সামআনে এসে খলিফাকে দেখে বললেন, সত্যিই তাকে বিষপান করান হয়েছে। এরপর চিকিৎসক তাকে চিকিৎসার প্রতি মনোযোগ দিলেন। কিন্তু খলিফা আর চিকিৎসা করাতে রাজী হলেন না।

ইবনে কাছীর বলেন, তখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমার চিকিৎসার জন্য শুধু এটুকুও বলা হয় যে, আমি আমার কান স্পর্শ করব, তবুও আমি এটা করব না।

বস্তুতঃ তিনি জীবনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ পরিবেশকে তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, যখন তার প্রাণপ্রিয় পুত্র আব্দুল মালেক এবং ভাই সুহাইল ও বিশ্বস্ত খাদেম মুজাহিম ইন্তেকাল করলেন, তখন হতে তিনি খুব বিমর্ষ থাকতেন এবং দুনিয়ার প্রতি তার আর কোন আকর্ষণই অবশিষ্ট ছিল না।

বিশেষতঃ প্রাণপ্রিয় পুত্র আবদুল মালেকের মৃত্যুতে তার হৃদয়ে এমন আঘাত করেছিল যে, তিনি শোকে জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছিলেন। তারপর ভাই ও বিশ্বস্ত খাদেমের মৃত্যু তাঁর ব্যাথা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছল। এরপর তিনি দামেস্কের বিশিষ্ট ওলী, আরেফ বিল্লাহ ইবনে মাকারয়াকে ডেকে আনলেন। যখন তিনি তার নিকট আসলেন, তখন খলীফা তাঁকে বললেন, আমি আপনাকে কেন ডেকেছি আপনি কি সে সম্পর্কে কিছু অবগত আছেন? তিনি বললেন, না আমি অবগত নই।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বললেন, আপনাকে আমি একটি কথা বলব, কিন্তু আপনি কসম না করলে আপনাকে তা বলব না। ইবনে যাকারিয়া কসম করলেন। তারপর হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বললেন, আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, যাতে তিনি আমাকে মৃত্যু দান করেন। ইবনে যাকারিয়া বললেন, মুসলমানদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এটা হবে উম্মতে মুহাম্মাদির সাথে চরম শত্রুতিা। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার কসমের কথা স্মরণ করে দিলেন অতঃপর ইবনে যাকারিয়া তাঁর মৃত্যুর জন্যও দোয়া করলে। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার একটি ছোট ছেলেকে ডেকে আনলেন এবং ইবনে আবু যাকারিয়ার নিকট তার জন্য দোয়অ করতে অনুরোধ করলেন। কারণ একেও তিনি অতন্ত মহব্বত করতেন। ইবনে আবু যাকারিয়া তার মৃত্যুর জন্যও দোয়া করলেন।

বর্ণনাকারী বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে আবু যাকারিয়া ও সে বালকটি মারা গেল। এ তিনজনের মৃত্যু ও এক জায়গায় হয়েছিল।

তবে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ আবু যাকারিয়াকে এ পীড়ার সময়ই ডেকেছিলেন না এর পূর্বে তা স্পষ্ট রূপে জানা যায়নি।

ইবনে হাকামের অপর একটি ভাষ্য দ্বারা জানা যায় যে, যখন তার পুত্র আবদুল মালেক, ভাই সুহাইল এবং বিশ্বস্ত খাদেম মুজাহিম একের পর এক ইন্তেকাল করলেন তখন খলীফঅ শোকে দুঃখে মুহ্যমান হয়ে পীড়াগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এ পীড়িত অবস্থাই তিনি ওযু করে নামায পড়লেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট কাতর আবেদন করলেন।

আল্লাহ! তুমিসুহাইল, আবদুল মালেক ও মুজাহিমের মৃত্যু দান করেছ। এরা ছিল আমার সহকর্মী ও সঙ্গী। এখন আমাকেও মৃত্যু দান কর। অতঃপর তাঁর এই দোয়া কবুল হল এবং তিনি ইন্তেকাল করলেন।

তার এ দীর্ঘ রোগশয্যায় শ্রশ্রুসা করতেন তার প্রাণপ্রিয় পত্নী ফাতেমা ও শ্যালকমুসলিমা। এ দুই জনকেই তিনি প্রাণাধিক মহব্বত করতেন। একদিন মুসলিমান তার নিকট আবেদন করল যে, আমিরুল মুমিনিন! আপনার সন্তান সন্ততির সংখ্যা কম নয়। আপনি এদেরকে বায়তুল মাল হতে বঞ্চিত করেছেন। আপনি আমাকে অথবা আমাদের পরিবারের জন্য কাউকে বলুন যে, আপনার জীবিত অবস্থায় আমরা তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করে নেই। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এ কথা শুনে বললেন, তোমরা আমাকে বসাও। তার তাকে বসালেন। তিনি মুসলিমাকে বললেন, হে মুসলিমা! তোমরা বলছ, আমি আমার সন্তানদের বায়তুল মাল হতে বঞ্চিত করেছি।

আল্লাহর কসম! আমি তাদের কোন অধিকার হরণ করিনি। কিন্তু আমি তাদেরকে অন্যেল সম্পদ দিতে পারি না। তোমাদের ধারণা যে, আমি তাদের জন্য ওছিয়ত করে যাব। কিন্তু আল্লাহিই তাদের হেফাযতকারী যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছন। যে সৎ তিনি তার বন্ধু ও সাথী। ঐতিহাসিক ইবনে কাছীর এতে এতটুকু যোগ করেছেন।

আল্লাহর কসম! আমি তাদেরকে অন্যের হক দেবনা। তাদের অবস্থা দু ব্যক্তির মতই হতে পারে। হয়ত তারা সৎকার হবে এ অবস্থায় আল্লাহ সৎকর্ম পরয়াণদের হেফাজতকারী বন্ধু অথবা তারা অসৎ পথে চলবে এ অবস্থায় আমি তাদের সাহায্যকারী হতে চাই না। আমার জানা নেই, তাদের মৃত্যু কোথায় হবে। আমি কি তারে পাপকর্মে সাহায্য করার জন্য সম্পদ রেখে যাবো। আর মৃত্যুর পর তাদের অপকর্মে অংশগ্রহণ করব? না কখনও না।

এরপর তিনি তার সন্তানদেরকে ডেকে আনলেন, তাদের নিকট হতে তিনি বিদায় গ্রহণ করলেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাদেরকে এ সব কথা বোঝালেন এবং অবশেষে বললেন, যাও আল্লাহ তোমারেদ নেগাহবান, তোমরা সুখ শান্তিতেই জীবন কাটাবে।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, তাঁর অন্তিম সময়ে যখন তাঁর সন্তানদেরকে তার নিকট আনা হল, তখন তিন তাদেরকে দেখে কাঁগতে লাগলেন। সন্তানরাও কাঁদতে ছিল। আর বাস্তবিকই তখন ক্রন্দনের সময় ছিল। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের অন্তিম সময় ঘনিয়ে আসছিল তখন তার স্ত্রী ফাতেমা ও শ্যালক মুসলিমা তাঁর পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকট হতে সরে যাও। কারণ আমার বিপুল সংখ্যক সৃষ্টিজীব এসে ভিড় করছে, তারা মানুষ অথবা জ্বিন কিছুই নয়।

মহান আল্লাহই জানেন, এরা কি আল্লাহর ফেরেস্তা না অন্য কোন অদৃষ্ট সৃষ্টি যারা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের অন্তিম মুহূর্তে তার নিকট এসে ভীড় জমাচ্ছিলেন।

অতঃপর মুসলিমা এবং স্ত্রী ফাতেমা তাঁর কথা অনুযায়ী অন্য কক্ষে চলে গেলেন, সেখান হতে তারা শুনলেন, কে যেন পাঠ করতেছে- (আরবী)

অর্থাৎ যারা দুনিয়ার মান মর্যাদার কামনা করে না বিপর্য় ঘটাতে চায় না, তাদের জন্য ই আমরা সেই পরলৌকিক গৃহের ব্যবস্থা করব।

এরপর সে আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেল। ফাতেমা, মুসলিমা ও অন্যান্য পরিচর্যাকারীরা কক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন যে, মুসলিম বিশ্বের মহামানব পঞ্চম খলিফা, আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী (রা)-এর সত্যিকার উত্তরসূরী এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নব প্রাণ সৃষ্টিকারী হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রত) দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্বীয় প্রতিপালকের নিকট চলে গিয়েছেন।

বাস্তবিক তাঁর মৃত্যু ছিল পঞ্চম খলিফাযে রাশেদের মৃত্যু। তিনি ছিলেন বিশ্বে দ্বিতীয় ওমর । তিনি ছিলেন যুগের আবু বকর ও আলী। তিনি আজ দিয়ারে সামআনের নির্জন বস্তিতে মৃত্যুর কোলে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন।

এ দিন ছিল ১০১ হিজরীর জুমার রাত্র। তখনও রজব মাসের পাঁচদিন অথবা দশ দিন বাকী। এ সময় তাঁর বয় হয়েছিল ৩৯ বা ৪০ বছর এক মাস। তিনি সর্বমোট দু’বছর ৫ মাস খেলাফতের পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাস্তবিক পক্ষে তাঁর মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্ব একজন সর্বগুণ সম্পন্ন আলেমকে হারালো। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এলো। শুধু সিরিয়া নয়, মিশর, ইরাক, ইরান ও হেজাজসহ যেখানেই তাঁর মৃত্যুর খরব পৌঁছলে সর্বত্রই ক্রন্দনের রোল উঠল।

এমনকি রোমের ঈসায়ী সম্রাটও তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়লেন; সিংহাসন ছেড়ে চাটাইতে এসে বসলেন, কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসালেন। যেহেতু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একজন সৎশাসক দুনিয়া থেকে চির দিনের জন্য বিদায় গ্রহন করেছেন।

কবি কাছীর এই বিশ্ব শোকের চিত্রটি এঁকে শোক গাথা রচনা করেছেন- (আরবী)

সকল লোকেরই তাঁর মৃত্যশোকে শোকাভিভত, প্রত্যেক ঘরেই ক্রন্দন ধ্বনী (আরবী)

তাঁর কর্মাবলী তাঁর জীবনকে বারবার ফিরিয়ে দেয় এবং তিনি কর্মাবলীর সাথে সাথে উজ্জল হয়ে উঠেন।

তাঁর শোকগাথা রচনা করে যুগশ্রেষ্ঠ কবি জারীর লিখেছিলেন- (আরবী)

তোমার শোকে সূর্য ম্লান সে আর চেহারা দেখায় না। তোমার শোকে ক্রন্দন করে চাঁদ, আর নিশির সেতারা।

বাস্তবিক সেই দিন সূর্য ছিল না, কারণ তার মৃত্যু কোন সাধারণ মানুষের মৃত্যু ছিল না। তার মৃত্যু ছিল এ উম্মতের মাহদী ও দিশারীর মৃত্যু।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন