hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

৩২
জনগণের শিক্ষা ও অগ্রগতি
নির্যাতিত, নিপিড়ীত ও অধিকার বঞ্চিত মানবতার সংস্কার ও অগ্রগতি যদিও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর জন্য দিবারাত্র পরিশ্রম করে গিয়েছেন। ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক বলেন, তাঁর অধিকাংশ দিনই এভাবে অতিক্রমত হত, সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু সরকারী কাজ শেষ হয়নি। প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি বসে যেতেন এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতেন না।

এ কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি জনগণের শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি। অর্থাৎ ভগ্ন রাজপ্রাসাদের সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা সজ্জিতও করেছিলেন।

তিনি শুধু অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, নির্যাতিত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছেন শুধু তাই নয়। বরং গণচরিত্র সংশোধন করতে এবং ইসলামের ছাঁচ তাদের মন মানসিকতা গঠন করতেও অবিরাম প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন এবং তিনি যেরূপভাবে এসব দায়িত্ব পালন করেছেন হয়ত আল্লাহর নিকটতম বান্দা ছাড়া এমন করা আর কারো পক্ষে সম্ভব হত না।

এটা কোন ছোট সাম্রাজ্য ছিল না, এ জনবসতি কোন ছোট জনবসতি ছিল না। তদুপরি এখানে শুধু একটি মাত্র জাতির বাস ছিল না বিভিন্ন জাতি বাস করত। একটি রাজ্য ছিল না বরং কয়েকটি রাজ্য নিয়ে এই সাম্রাজ্য গঠিত ছিল। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল হেজাজের মরুভূমি, সিরিয়ার শষ্যশ্যামল কৃষিক্ষেত্র, ইরাকের ঘনবসতি অঞ্চল তত্কালীন দুনিয়ার সব চেয়ে বেশী লোকের বাস ছিল এই সাম্রাজ্যে। এখানকার শষ্যক্ষেত্র ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে উর্বর শষ্যক্ষেত্র। তারপর ইরান, তুরস্ক, কাশগর, কেরমান, সিন্ধু, বলখ, বুখারা, কাবুল, ফরগানা মোসুল, মিশর, আফ্রিকা, স্পেন বিভিন্ন রাজ্যসহ এই রাষ্ট্র এতই বিশাল ছিল যা বৃটিশ সাম্রাজ্য হতে ও বহুগুন বিস্তৃত ছিল। তাবারী বলেন, যখন হযরত উমর ইবনে আব্দুর আজিজ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন তার সাহচর্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির কল্যানে গণচরিত্র এমনভাবে সংশোধিত ও পরিবর্তন হয়েছিল যে, যখন তাদের একজন তাদের অপর জনের সঙ্গে সাক্ষাত করত, তখন একে অপরকে জিজ্ঞাস করত, রাত্রে তুমি কত বার দরুদ পাঠ করেছি, কত দোয়া পড়েছ, কতটুকু কোরআন পাঠ করেছ, কখন খতম করবে, এ মাসে রোজা রাখবে ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে এমন একটি ঘটনাও বর্নিত হয়েছে, বর্ণনাকারী হয়ত তা মর্ম বুঝতে ভুল করেছে। খুরাসানের সুদৃঢ় পল্লীতে উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয় বলে কথিত আছে। বর্ণনাকারীর বক্তব্য হলো, ক্রমাগত তিন বছর পর্যন্ত বাঘ ও বকরিতে একই ঘাটে পানি পান করছিল কিন্তু একদিন হঠাৎ একটি বাঘ একটি বকরীকে হত্যা করে ফেলল। সে দিনই খবর আসল যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেছেন।

এটা একটি রূপকথা নয়। এটা দিয়ে শুধু এ বাস্তবতার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের যুগে সাধারণ ও বিশিষ্ট লোকেরা এমন এক সূত্রে গ্রথিত হয়েছিল যে, একে অন্যের উপর তারা আর জুলুম নির্যাতন করত না। এটা বাস্তব সত্য যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এ সংক্ষিপ্ত শাসনামলের মধ্যে ছোট বড় নির্বিশেষে মানবচরিত্র যেরূপ সংশোধন করেছিলেন এবং তাদের মন মানসিকতা যেভাবে গঠন করেছিলেন উহার ফলেই তারা ছোট বড় সকল প্রকার অন্যায়-অপকর্ম হতে বিরত থাকতে চেয়েছিল।

তিনি শাসনকর্তাদের নিকট যে সব চিঠিপত্র লিখতেন, তাতে গণচরিত্র সংস্কারের নির্দেশ অবশ্যই থাকত। যেমন শাসনকর্তাদের হিসাব নিকাশ অধ্যায়ে তার লিখিত একটি চিঠি রবাত উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি মিশরের শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন, “আমি বিশ্বস্ত সুত্রে জানতে পেরেছি যে, খাদেমগণ যখন মজলিসে আহ ধৌত করে তখন তাঁর এক ব্যক্তি হাত ধৌত করার পরই তস্তরী উঠিয়ে নেয়। এটা অনারবদের তরীকা। এটা ত্যাগ কর এবং যতক্ষণ তস্তরী পূর্ণ না হয় ততক্ষন সেটা উঠাতে নিষেধ কর।

এ ব্যাপারে ইবনে সা’দ বসরা শাসনকর্তা আরতাতকে লিখিত হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সেই চিঠিটিও উদ্বৃত করেছেন- যাতে তিনি মদ্য তৈরির নাবিয (এক প্রকার পানীয় বস্তু) ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছিলেন।

সামাজিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ও হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের দৃষ্টি এড়াত না। স্বামী বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মৃত্যুর পর স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীগণ খোলা মাথায় ক্রন্দন করতে করতে জানাযার পিছনে গমন করত। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অপকর্ম ছাড়া আর কিছু নয়। হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ সমস্ত প্রাদেশিক শাসকদেরকে এ জাতীয় অপকর্ম বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ এটা অমুসলমানের রীতি ছিল। এরূপ, নাচ-গান ও বাদ্য যন্ত্রসহ সমাজ জীবনে উশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টিকারী এবং গণচরিত্র বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ তাঁর নিকট খুবই অপছন্দনীয় ছিল। তিনি জনসাধারণকে এ সমস্ত অপকর্ম হতে বিরত করার জন্য পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিলেন। এ জন্যই ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, তাঁর যুগে নাচ-গানের আসর বন্ধ হয়ে গেল, কাব্যমুখর মজলিস নীরব হয়ে গেল, নাচ-গান তাঁর রাজত্ব ছেড়ে চলে গেল। কারণ তার আদেশ অমান্যকারীকে কঠোর শাস্তি দিতেন এবং তার বংশ মর্যাদার প্রতি মোটেই গুরুত্ব দেয়া হত না।

ইবনে সাদ বলেন, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ গণচরিত্র সংস্কারের এতই গুরুত্ব দিতেন যে, নৈতিক অপরাধীগণকে তার সামনে শাস্তি দেয়া হত। ইবনে সা’দের একটি সাক্ষ্য উল্লেখ করেছেন, তার ভাষ্য এই, আমি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজকে মদ্যপান করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে দেখেছি। তিনি তার গায়ের কাপড় খুলে তাকে ৮০ টি বেত্রঘাত করে বললেন, যদি আবার এরূপ কর তাহলে আমি পুনরায় তোমাকে এরূপ প্রহার করব এবং তোমাকে বন্দী করে রাখব যতক্ষন না তুমি সংশোধন হও। সে ব্যক্তি নিবেদন করল, আমি তাওবা করছি। আর কখনও এরূপ করব না। অতপর হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ তাকে ছেড়ে দিলেন।

ইবনে সা’দ অপর একটি ঘটনার কথা বর্ণনা করছেন যাতে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ শাস্তির সময় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বর্ননাকারী বলেন এক ব্যক্তিকে কোন চতুস্পদ জন্তুর সাথে দুস্কর্ম করার অভিযোগে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের নিকট আসা হলে তিনি তাকে শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি হতেও কঠোর শাস্তি প্রদান করলেন।

মানব চরিত্র সংস্কারের জন্য শাস্তি বিধান একটি উপায় মাত্র। এটা ছারাও অন্যান্য পন্থায় তিনি জনগণের শিক্ষা-সংস্কৃতির অগ্রগতি সাধন করেছিলেন। যুগশ্রেষ্ট মনিষীগণকে তিনি বেতন ভুক্ত কর্মচারী নিয়োগ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গণচরিত্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন। তারা মানুষকে শরিয়তের হুকুম আহকাম শিক্ষা দিতেন ও অন্যান্য অপকর্ম হতে বিরত থাকতে বলতেন।

এ সমস্ত বিশিষ্ট মনিষীদের মধ্যে ছিরেন হযরত নাফে, হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবু মালেক, হযরত মেহরান, জাআসাল হাল্লাজ্জ, হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবু হাবিব, হযরত হারেছুল আশারী এবং আছেম প্রমুখ মনিষীবৃন্দ।

এ সমস্ত মনিষীগণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণকে ইসলামী শিক্ষা দিতেন এবং তাদের ছাড়াও তিনি রাষ্ট্রের স্থানে স্থানে হাজার হাজার শিক্ষক নিযুক্ত করেছিলেন। তারা প্রাদেশিক গভর্ণরদের সমতুল্য বেতন পেতেন।

আবু বকর ইবনে হাজম (রা) একজন বিশিষ্ট আলেমও ফকীহ ছিলেন। তাকে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ মদীনার গভর্ণর নিয়োগ করলেন এবং এক নির্দেশ দিয়ে বললেন যে, আলেমগণকে বল, তারা যেন মসজিদকে কেন্দ্র করে এলেমের প্রসার করেন, কারণ সুন্নাতের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ মহানবী (ﷺ) যে চরিত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন তা দীর্ঘ দিনের কুসংস্কারে বিস্মৃত প্রায় হয়ে গিয়েছিল। হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ যথার্থই বলেছিলেন যে, সুন্নাতের মৃত্যু ঘটেছে। সর্বত্র অন্যায় অবিচার আর কুসংস্কার আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।

ইবনে কাছীরও এ বক্তব্যের সমর্থন করে বলেছিলেন যে, জনগণের শিক্ষা দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধনের উদ্দেশ্যে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ দেশের আলেম সমাজকে নিযুক্ত করেছিলেন। নিয়মিত বেতন ছাড়াও বিশেষ উপহার উপঢৌকনের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে উত্সাহিত করতেন। তিনি হযরত মেহরানকে জাযিরার শাসনকর্তা নিয়োগ করে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন সরকারী অর্থ দিয়ে আলেম সমাজের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ গণচরিত্র গঠনের জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করার পর প্রথম অথবা দ্বিতীয় ভাষনে বলেছিলেন যে, যদি আমি জীবিত থাকি তবে তোমাদেরকে ভালভাবে অবহিত করব যাতে তোমরা আমল করতে পার। কিন্তু যদি মারে যাই তাহলে মনে রেখ আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য লালায়িত নই।

তিনি তাঁর এই পবিত্র ইচ্ছা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মহাবনী (ﷺ) এর সুন্নাত ও তার হাদীস সমুহ সংকলন করতে নির্দেশ দিলেন। তার এই নির্দেশ পালন করে সমস্ত বিশিষ্ট আলেম ও মুহাদ্দেসগণ দিবারাত্র পরিশ্রম করে হাদীসে নববীর বিরাট দফতর রচনা করতে লাগল। অতপর তিনি এ সমস্ত হাদীস নকল করিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতে লাগলেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রদেশের শাসনকর্তাকে এ সমস্ত হাদীস জনগণের মধ্যে প্রচার করতে নির্দেশ দিলেন। মদীনা যেহেতু আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর আশ্রয়স্থল ছিল, তিনি এখানেই জীবন অতিবাহিত করেছেন। এ জন্য তথাকার আলেমগণকেই বিশেষত এ কাজে নিয়োগ করলেন। এ ব্যাপারে মদীনার গভর্ণর ইবনে হাজমকে লিখিত তাঁর পত্রটির মর্ম ছিল এই মহানবী (ﷺ) এর হাদীস সমূহ অনুসন্ধান করে তা লিপিবদ্ধ কর। শুধু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদীস লিপিবদ্ধ করা হবে।

উলামাদের ধারনা এই যদি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এ উদ্যোগ গ্রহণ করতেন তাহলে হয়ত হাদীসে নবুবীর এ বিরাট ভান্ডার সংকলিত হতনা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন