hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ওমর ইবনে আবদুল আজীজ

লেখকঃ রশীদ আখতার নদভী

২১
প্রথম পদক্ষেপ
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ সুলায়মানের জানাযায় নামায পড়িয়ে যখন তাকে দাফন কররেণ তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ অন্য কোন কাজ করার পূর্বেই দোয়াত-কলম আনিয়ে সর্বপ্রথম তিনটি নির্দেশ প্রদান করলেন।

লোকজন তাঁর ব্যস্তায় কানাঘোষা করতে লাগল। কেউ কেই বলল, “এতো তাড়াহুড়া কেন, এ কাজ তো তিনি ঘরে ফিরেও করতে পারতেন। মনে হয় খেলাফতের লোভ-লালসায় তাঁকে পেয়ে বসেছে।

ইবনুল হাকাম বলেন, খেলাফরেত লোভ-লালসার কারণেই ওমর ইবনে আবদুল আজিজ দোয়াত-কলম আনার ব্যবস্থা করেননি, বরং তিনি নিজেই নিরেজর পর্যালোচনা করেছেন এবং এই অবহেলাও তার অনুভূতি এবং কর্তব্য পরায়ণতার প্রতিকুলে ছিল বলেই তিনি এরূপ ব্যস্ততা প্রকাশ করেছিলেন।

এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ওমর ইবনে আবদুল আজীজের এ ব্যস্ততার কারণ কর্তব্যপরায়ণতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কেননা, যদি তিনি বাদশাহী পছন্দ করতেন, যদি তিন বাদশাহীর উপকরণাদি লাভ করতে ভালবাসতেন তবে ওয়ালিদ বা সুলাইমানের যুগে প্রকাশ্যে না হোক গোপনে হলেও এর জন্য কোন প্রচেষ্টা চালাতেন । অথচ বাস্তব ও সত্য কথা হলো ঐতিহাসিক ইবনে আবদুল হাকাম স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, সমগ্র বনু উমাইয়ার মধ্যে ওয়ালিদ ও সুলায়মান ব্যতীত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বনু উমাইয়ার সকলের নিকটই প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি দেশব্যাপী উলামা, ফুকাহা এবং মুহাদ্দেসিন সকলের নিকটই প্রশংসনীয় ছিলেন। তদুপরি মিশর ও আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর যথেষ্ট সংখ্যক ভক্ত- অনুরক্ত ছিল। তিনি ইচ্ছ করলে ওয়ালিদ বা সুলায়মানর যুগেও মিশরে স্বাধীনভাবে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। কারণ তৎকালীন তিনজন নামকরা সেনাপতি মোহাম্মদ ইবনে কাসেম মূসু ইবনে নাছীর এবং কুতাইবা ইবনে মুসলিম ওমর ইবনে আবদুল আজিজের পরম ভক্ত ছিল। বিশেষতঃ মূসা ও কুতাইবা তাঁর ইশারায় লাখ লাখ সৈন্যসহ ময়দানে হাজির হতে দ্বিধাবো করত না।

মূসা ইবনে নাছীর সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের ধারণা হলো, মূসার সাথে ওমর ইবনে আবদুল আজীজেরে পিতা আবদুল আজিজের বন্ধুত্ব ছিল। ওমরের সাথেও মূসার সম্পর্ক সেরূপ ঘনিষ্ট ছিল। কারণ মূসা যখন ইরাকের মন্ত্রী ছিলেন, তকন খলীফা আব্দুল মালেকের রোষে পড়ে তিনি কুফা হতে পারিয়ে মিশরে আবদুল আজিজের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। এটা জানতে পেরে আবদুল মালেক তার ভাই আবদুল আজিজতে লিখলেন যে, মূসা পলাতক ব্যক্তি-তাকে দামেশকে পাঠিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু আবদুল আজিজ কোন পরওয়াই করলেন না। বরং তাকে তিনি আফ্রিকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে সেখানকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে দিলেন। মূসাও সেই সুযোগে বিপুল পরিমাণে শক্তি বৃদ্ধি করে নিলেন।

সুলাইমান তার অভিষেকের সময় যখন মূসাকে গ্রেফতার করেন, তখন ওমর ইচ্ছা করলে মূসাকে স্বপক্ষে আনতে পারতেন এবং মূসাও তার সমর্থন পেলে এমন এক বিদ্রোহ ঘটাতে পারতেন যার ফলে সুলাইমান কেন, সমগ্র বনু উমাইয়ার নাম-নিশানা পর্যন্ত মুছে যেত। কিন্তু ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এমনটা করলেন না।

যদি তিনি খেলাফত পরিচালনার লোভ করতেন তবে কুতাইবা ইবনে মুসলিম- যিনি প্রাচ্যের মহান বিজেতা ছিলেন, তার দ্বারাও তিনি সে দিনই খেলাফতের পতাকা উড্ডীন করতে পারতেন, যেদিন দামেশকে সুলাইমানের খেলাফতের সাধারণ বায়আত গ্রহণ করা হয়েছিল। ইবনে কাছীর স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াজিদ ইবনে মুহারিবের কারণে কুতাইবা সুলাইমানের প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি সুলায়মানকে পদচ্যুত করার জন্যে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছিলেন। যদি ওম ইবনে আবদুল আজীজ গোপনে ও একজন সংবাদ বাহকের মাধ্যমে তাকে কোন ইঙ্গিত দান করতেন যে সুলাইমানের পরিবর্তে তুমি আমার বায়আত গ্রহণ কর তবে কুতাইবা তাঁর এতটুকু ইশারায় তার খেলাফতের পতাকা উড্ডীন করে দিতেন। এবং তার এ কর্মতৎপরতায় কেউ বাধা দিতে সাহস পেত না। তিনি প্রকাশ্যে রাজধানী দামেস্কে এস উপস্থিত হতেন, আর একজন উমবী যুবরাজের পৃষ্ঠপোষকতাই তাকে তাঁর এ সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিত।

কিন্তু ওমর ইবনে আবদুল আজীজ খেলাফতের মসনদকে শুধু কন্টাকাপূর্ণ নয় বরং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ পূর্ণ মনে করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তির ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতা থাকে, সে খলিফা নিযুক্ত হবার পর তার সে অধিকারটুকুও খর্ব হয়ে যায়।

যা হোক, তাঁর এরূপ কর্তব্যপরায়ণতাই সুলাইমানের জানাযার পর তাঁকে তিনটি ফরমান জারি করতে বাধ্য করেছিলি। তন্মধ্যে প্রথম ফরমান ছিল মুসলিম ইবনে মালেককে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে।

বিখ্যাত ঐতিহাসিক তাবারীর মতে, সুলাইমান ইবনে মালেক তার ভাই মুসলিমকে ৯৮ হিজরীতে কনষ্টান্টিনোপল প্রেরণ করে নির্দেশ দিয়েছেন যে, কনষ্টান্টিনোপল জয় না করা পর্যন্ত সে সেখানেই অবস্থান করবে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সে ফিরে আসতে পারবে না।

মুসলিমা যখন সেখানে গিয়ে কনষ্টান্টিনোপুলের নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি প্রত্যেক অশ্বারোহীকে দুই মণ গম সঙ্গে নিতে নির্দেশ দিলেন। অশ্বরোহী সৈনিকগণ তাঁর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করল এবং তারা কনষ্টান্টিনোপুলের নিকটে গমের একটি পাহাড় সৃষ্টি করে দিল। মুসলিমা তাদেরকে এ গম খেতে নিষেধ করলেন এবং রোমানদের ভান্ডার লুন্ঠন করে এবং তাঁদের কৃষিক্ষেত্রে চাষ করা খাদ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিলেন।

সৈন্যবাহিনী কাঠ-খড় দ্বারা সেখানেই ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে কৃষিকাজ শুরু করে দিল। তাদের কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা লুটতরাজ করে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতো। যখন তাদের কৃষি ক্ষেত্রে ফসল উৎপন্ন হল তখন পূর্বের খাদ্য সংরক্ষণ করে উৎপননদ্রব্য তারা খেতে লাগল।

তাবারী বলেন, বাহ্যতঃ মুসলিমার এ কর্মসূচী খুবই উত্তম ছিল। কিন্তু রোমানগণ চালাকী করে তাদের এ কর্মসূচী সম্পূর্ণরূপে ভুন্ডুল করে দিল। রোমান সেনাপতি এক রাত্রিতে অতর্কিতে আক্রমণ করে মুসলমানদের নতুন ও পুরাতন উভয় শষ্য ভান্ডারে আগুন ধরিয়ে দিল। সমস্ত শষ্য ভান্ডার পুড়ে ভষ্ম হয়ে গেল। এখন সুলাইমানের সৈন্যবাহিনী খাদ্যের বিরাট সংকটের সম্মুখীন হয়েমৃত্যুবরণ করতে লাগল।

মুসলমানরা খাদ্যের অভাবে তাদের বাহনের জন্তুগুলি খেয়ে অবশেষে বৃক্ষের মূল ও পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে লাগল।। সুলাইমান যথারীতি এ সংবাদ অবগত হয়ে এর কোন প্রতিকার করলেন না। তিনি অত্যন্ত একগুঁয়ে ছিলেন। তিনি ওয়াবেক নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু মুসলমান সৈন্যবাহিনীকে কনষ্টান্টিনোপুল ত্যাগ করতে অনুমতি দিলেন না। তাবারী এ ঘটনা উল্লেখ করে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বাস্তবিকই করুণ ও মর্মান্তিক। তিনি বলেন, তারা অনাহারে তাদের বাহনের সমস্ত পশু খেয়ে ফেলল, মাটি ব্যতিত গাচের শিকড় ও পাতাসহ সবকিছুই তারা ভক্ষণ করছিল, অথচ সুলাইমান ওয়াবেকে অবস্থান করেও এর কোন প্রতিকার বিধান করতে এগিয়ে আসলেন না। এভাবেই শীতকাল এসে পড়ল এবয় সুলায়মান মৃত্যুমুখে পতিত হলেন।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, রোমানরা যখন মুসলমানদের সাথে প্রবঞ্চনা করে তাদের খাদ্যসামগ্রী জ্বালিয়ে দিল এ সংবাদ শুনে সুলাইমান খুবই রাগান্বিত হয়ে কসম করলেন যে, তিনি মুসলিমাকে আর ফেরত আনবেন না।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের নিকট এটা একটি নিবর্তনমূলক কসম ছিল, কাজেই তিনি সুলাইমানের জানাযা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ কসম ভঙ্গ করে মুহূর্তকাল বিলম্ব না করেই মুসলিমাকে দেশে ফিরে আসতে নির্দেশ দিলেন। তিনি লিখলেন তুমি ফিরে আস। এবং সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে দামেস্কে ফিরিয়ে আন।

সালায়মান জীবিত অবস্থায় যখন তিনি মুসলমানদের এ দুঃখ কষ্টের কথা জানতে পারলেন তখন সুলায়মান একগুঁয়েমিতে অবিচল ছিলেন কিন্তু ওমর ইবনে আবদুল আজিজ অত্যন্ত বিচলিত ও মর্মাহত হয়েছিলেন।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, এটা ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে বিচলিত ও মর্মাহত করেছিল অতঃপর তিনি খেলাফতের পদ লাভ করার পর এক মুহূর্তও মুসলমানদের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারলেন না। এ কারণেই তিনি পত্র লিখতে ব্যস্ততা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি দ্বিতীয় যে পত্র লিখেছিলেন, তা প্রথম পত্র অপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি এ পত্রের মাধ্যমে মিশরে রাজস্ব সচিব উসামান ইবনে যাযেত আততানুহীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। তিনি আরো নির্দেশ দিলেন যে, তাকে প্রত্যেক ঘাটিতে এক বছর করে বন্দী করে রাখা হোক।

ইবনে হাকাম এ কঠোর নির্দেশের কারণ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, সে ছিল একজন অত্যাচারী ও আল্লাহর সীমালঙ্ঘনকারী শাসক। সে মানুষকে আল্লাহর বিধানের বিপরীতে শাস্তি দিত। সে এমন সব অপরাধে মানুষের হাত কেটে দিত যাতে আল্লাহ পাক অনুরূপ বিধান দেননি। সুতরাং ওমর ইবনে আবদুল আজীজের ন্যায় কর্তব্যপরায়ণ আল্লাহভীরু শাসনকর্তা এরূপ জালেম ও জল্লাদ কর্মকর্তাকে কিভাবে বরদাশত করতে পারেন? অতএব তিনি যথাশীঘ্র সম্ভব মুসলমানগণকে এরূপ পাপিষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে মুক্তি দিতে ব্যস্তার সাথে লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিনি তৃতীয় ফরমান লিখেছিলেন আফ্রিকার শাসনকর্তা ইয়াযিদ ইবনে আবু মুসলিমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে। ইয়াযিদ ইবনে মুসলিম শাহী নির্দেশাবলী অতি কঠোরভাবে কর্যকরী করত, মানুষের উপর সীমাহীন যথারীতি আল্লহর যিকির ও তসবীহ তাহলীলও পাঠ করত। সে যখন কাউকে শাস্তি দিত তখন তার গোলামকে আদেশ দিত, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, হে বালক! তার শীরের অমুক অমুক স্থানে জোরে জোরে আঘাত কর। কখনো কখনো লা-ইলাহা ইল্লাহ আল্লাহআকবার ধ্বনী করে এসব নির্দেশ দিত।

বাস্তবিক পক্ষে এটা আল্লাহর যিকির ও ইসলারে প্রতি বিদ্রূপেরই নামান্তর ছিল। সে যেন আল্লাহর নাম নিয়েই মানুষের উপর জুলুম অত্যাচর করত এবং মানুষকে শাস্তি দিত।

এ তিনটি ফরমান লিখে যখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ সুলায়মানের কবস্থান হতে উঠে আসলেন, তখন তাঁর শাহী সওয়ারী হাজির করা হল। তিনি এ সমস্ত সওয়ারী দেখে বললেন, এ সমস্ত কিসের সওয়ারী? উত্তর দেওয়া হল, এ নবনির্বাচিত খলিফার জন্য নির্ধারিত সওয়ারী। ইতোপূর্বে এসব বাহনে আর কেউ আরোহন করেনি। এতে নবনির্বাচিত খলিফা প্রথম দিন আরোহন করে থাকেন। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ এসব সওয়ারী ফিরিয়ে দিয়ে তার নিজের খচ্চরের দিকে এগিয়ে চললেন এবং ব্যক্তিগত সেবক মুজাহিমকে বললেন, এ সমস্ত বায়তুল মালে নিয়ে যাও। এগুলি সাধারণষ মুসলমানের সম্পদ।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, তাঁর জন্য এরূপ নতুন তাঁবু ও শামিয়ানা টানানো হল-যাতে ইতোপূর্ব আর কেউ তাতে বসবাস করেনি। এটাই সাধারণ প্রচলিত প্রথা ছিল। যে ব্যক্তি নতুন খলিফা নির্বাচিত হবেন তার জন্য এরূপ নতুন তাবুর ব্যবস্থা করা হত।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এ সমস্ত নতুন তার দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলি কিসের তাবু? উত্তর দেওয়া হল, এ সমস্ত তাবুতে ইতিপূর্বে কারও বসার সৌভাগ্য হয়নি। কোন নবনির্বাচিত খলিফা খেলাফতের মর্য়াদায় আসীন হবার পরই এসব তাবুতে অবস্থান করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মুজাহিমকে বললেন, এগুলিও মুসলমানদের সম্পদ, এগুলোও বায়তুলমালে জমা করে দাও। এরপর তিনি তার খচ্চরে আরোহন করে সে সব বিছানার প্রতি অগ্রসর হলেন যা পূর্বনিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ন নতুন ছিল এবং যা ইতোপূর্বে আর কারও জন্য বিছানো হয়নি এবং কোন খলিফাও যাতে বসার সৌভাগ্য লাভ করেননি। মোটকথা এসব বিছানা সম্পূর্ণ নতুন ছিল শুধু অভিষেক অনুষ্ঠানের মর্যাদার খাতিরেই ঐসব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বাহন হতে অবতরণ করে এ বিছানার নিকটবর্তী হয়ে তার হাতের ছড়িয়ে অগ্রভাগ দিয়ে তা গুটিয়ে দিলেন এবং খালি চাটাই বের করে তাতে উপবেশন করলেন।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, যখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ খলিফা হলেন তখন সমসত লোক তার সামনে দন্ডয়মান হল, তিনি উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, লোক সকল! তোমরা যদি আমার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাক তবে আমিও দাঁড়িয়ে যাব। যদি তোমরা বস আমিও বসব। মানুষ শুধু আল্লাহর সামনেই দাঁড়াবে। আল্লাহ মানুষের জন্য কিছু কাজ ফরযও কিছু কাজ সুন্নত করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এগুলি যথারীতি পালন করবে, সে সফলকাম হবে আর যে ব্যক্তি একথার প্রতি অবহেলা করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তোমাদের মধ্যে যে আমাদের সাহচর্যে আসবে তার পাঁচটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

১। সে আমারেদ নিকট তার সেসব প্রয়োজনীয় কথা পৌঁছাবে, আমরা যা অবগত নই।

২। আমারেদকে এরূপ সুবিচারের প্রতি ধাবিত করবে- যা আমারেদ দ্বারা হওয়া সম্ভব ছিল না।

৩। সত্যৗবাদিতার দিক দিয়ে সর্বদাই আমাদের সঙ্গী হবে।

৪। সবসময় আমাদের ও মুসলমান জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করবে।

৫। আমারেদ নিকট কারও বদনাম না গীবত করবে না।

এই পাঁচটি বিষয় যে লক্ষ্য রাখবে না তার জন্য আমারেদ দরজা বন্ধ থাকবে।

এ সম্পর্কে ইবনুল জাওযি মুহাম্মদুল মারুযির মাধ্যমে যে বর্ণনা করেছেন তাতে সুলায়মানের দাফন শেষ এবং খলিফার জন্য নতুন সওয়ারী হাজির করার বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বিষয়ও বর্ণিত হয়েছে- তিনি বললেন, আমার বাহন আন। যখন তাঁর বাহনের জন্তুটি তাঁর নিকট উপস্থিত করা হল এবং তিনি তাতে আরোহন করলেন, তখন শহররক্ষী প্রধান এসে তার সামনে হাজির হল এবং খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে আগে আগে চলল। খলীফা তাকে বললেন, আমার সামনে হতে সরে যাও, তোমার কোন প্রয়োজন নেই। আমার নিকট তোমার কোন কাজও নেই। আমি একজন সাধারণ মুসলমান, একজন সাধারণ মানুষ মাত্র। তিনি চলতে লাগলেন। মানুও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলল। তিনি মসজিদে এসে মিম্বরে আরোহন করে বসলেন, সমস্ত লোক তার চারদিকে জমায়েত হল। এরপর তিনি এই ভাষণ দিলেন,

হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে আল্লহর ভয় করার পরামর্শ দিচ্ছি। আল্লাহর ভয় সর্বপ্রথমে। আল্লাহর ভয় ব্যতীত কোন উপায় নেই। নিজের জীবন পরিপাটি করার জন্য যা কিচু প্রয়োজন মনে কর তবে যে ব্যক্তি পরকালের কাজ করে যায় আল্লাহ তার দুনিয়ার কাজ সঠিক করে দেন। যদি তোমরা তোমাদের অভ্যন্তরকে ঠিক রাখ তাহলে আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক দিক ঠিক রাখবেন। মৃত্যুকে বেশি স্মরণ কর। মৃত্যু যখন আসবে তখন তার জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুত থাকা উচিত। মৃত্যু মানুষের জীবনের সমস্ত আনন্দে উপবোগ কেড়ে নেয়। এ উম্মত আল্লাহ ও তার রাসূল এবং আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে কোন মতবিরোধ করবে না। কিন্তু তারা ধন-সম্পদ নিয়ে ঝগড়া ফাসাদ করবে। আল্লাহর কসম, প্রাপ্য অধিকার ছাড়া আমি কাউকে কোন কিছুই দেবনা, কারও অধিকারে হস্তক্ষে করব না। তারপর তার কণ্ঠস্বর আরও গম্ভীর হয়ে গেলে। তিনি বলরেন, হে লোক সকল! যে আল্লাহর আনুগত্য করে মানুষের উপর তার অধীনতা স্বীকার করা ফরজ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করে মানুষের উপর তার আনুগত্য স্বীকার করা জায়েয নেই। আমি যদি আল্লাহর নাফরমানী করি তবে তোমরাও আমার কথা অমান্য করবে।

অপর এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এ সময় নিম্নলিখিত ভাষণ দিয়েছেন, “হে লোক সকল! এটা বাস্তব সত্য যে, তোমাদের নবীর পর আর কোন নবী আগন করবেন না, তোমাদের কিতাবের পর আর কোন কিতাব অবতীর্ণ হবে না। মহান আল্লাহ যে সমস্ত বস্তু হালাল করেছেন সেগুলো হালাল আর তিনি যা হারাম করেছেন তাই হারাম। আর এ হারামের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। হে লোক সকল! স্মরণ রেখো, আমি চুড়ান্ত বিচারক হিসেবে এ আসনে উপবেশন করিনি। আমি শুধু আল্লহর বিধানসমূহ কার্যকরী করতেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি কোন নতুন বিষয়ের দাবী করব না, আমি আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে চলব। হে লোক সকল! দেখো, আল্লাহর বিধানের বিপরীতে কারোও আনুগত্য তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে না।

আরও মনে রেখো, আমি তোমাদের মধ্যে সকলের চেয়ে উত্তম ব্যক্তি নই। আমি তোমাদেরই ম একজন সাধারন মানুষ। কিন্তু আল্লাহপাক তোমাদের চেয়ে আমাকে অনেক বেশী দায়িত্ব দিয়েছেন।

ইবনুল জাওযি বলেন, তার এ ভাষণ হওয়া মাত্রই একজন আনসারী সর্বপ্রথম উঠে এসে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করলেন। তারপর একের পর এক লোক এসে বায়আত গ্রহণ করতে লাগল, এরূপে সাধারণ বায়আত অনুষ্ঠান শেষ হল। তারপর তিনি তার তাবুতে আসেলন, পূর্ব হতেই তাঁর জন্য সুলায়মানের গালিচা বিছানো ছিল, তিনি এ গালিচা উঠিয়ে একটি আরমানি বিচানা বিছিয়ে তাতে বসলেনস এবঙ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি মুসলিম জনতার দায়িত্ব গ্রহণ না করতাম তবে তোমার উপর বসতাম না।

এ আরমানি বিছানাটি খুবই নিম্নমানের ছিল বলেই তিনি তাকে পছন্দ করেছিলেন তা না হলে তিনি তা পছন্দ করতেন না।

ইবনুল জাওযির অপর এক বর্ণনায় জানা যায় যে, তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি তাঁর সামনে এসেছিল তার দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে তিনি কেঁদে অস্থির হয়ে গেলেন, তাঁর চোখের পানিতে হাতের লাঠিটিও ভিজে গিয়েছিল। অবশেষে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ তাকে নিজের তরফ হতে দুশত দীনার এবং বায়তুল মাল হতে আর তিনশ দীনার প্রদান করলেন এবঙ তার জন্য পৃথকভাবে মাসিক দশ দীনার ভাতা ধার্য করে দিলেন।

তারপর তিনি তার বাসস্থানে আসলেন, তখন রাত অনেক হয়েছিল। কাজেই তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। পরের দিন সকালে সুলায়মানের বাসগৃহে চলে গেলেন।

ইবনে আাবদুল হাকাম বলেন, সারা রাত ধরে সুলায়মানের পরিবারের লোকেরা শাহী আসবাবপত্র উল্টাপাল্টা করতে লাগল, অব্যহৃত সুগন্ধি ব্যবহৃত বোতলে রাখল, নতুন কাপড় পরিধান করতে লাগল, যেন সেগুলোও ব্যবহৃত দেখা যায়। তারা এসব করার কারণ হলো, পূর্ব হতে প্রচলিত ছিল যে, যখন কোন খলিফার মৃত্যু হত তখন খলিফার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, সুগন্ধি ও অন্যান্য সামগ্রী তার সন্তানগণ অংশীদার হতো, আর যা অব্যবহৃত থাকত তা নতুন খলিফা লাভ করত।

পরের দিন সকালে সুলায়মানের পরিবারের লোকেরা ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে এ সমস্ত সামান-পত্র দেখিয়ে বলল, এগুলি তোমার আর এগুলি আমাদের। খলিফা এ কথার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তারা বলল, সুলায়মান যে সব কাপড় পরিধান করেছেন, যে সব সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন সেগুলো তার সন্তানদের আর যেগুলি ব্যবহার করেননি সেগুলো আপনার।

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এ ব্যাখ্যা শুনে বললেন, এসব আমারও নয় তোমাদেরও নয়। এসবমুসলমানদের সম্পদ। তখন তার খাদেমকে বললেন, মুজাহিম এসব বায়তুল মালে জমা করে দাও।

এখন শুধু বাঁদীগণ অবশিষ্ট থাকল। এই সমস্ত বাঁদী তাঁর সামনে হাজির করা হল, এরা জীবিকার জন্য এ পেশা গ্রহন করেছিল। তাদের প্রত্যেকের পরিচয়, বংশ, দেশ সম্পর্কে অবহিত হয়ে তিনি নির্দেশ দিলেন যে, এদের প্রত্যেককে তাদের পিতা-মাতার নিকট পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, মন্ত্রীগণ, পরিষদবর্গ এবং উমাইয়া বংশের লোকেরা এসব দেখে নিরাশ হয়ে পড়ল, তারা বুঝল যে, তিনি শুধু ইনসাফ তথা ন্যায় বিচারকেই বেছে নিবেন। তিনি কোন অন্যায়-অবিচার প্রশ্রয় দিবেন না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন