HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুজাহাদা মুমিন জীবনের দিশারী

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
মুজাহাদা : মুমিন জীবনের দিশারী

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সম্পাদানা : ইকবাল হোছাইন মাছুম

মুজাহাদা : মুমিন জীবনের দিশারী
মুজাহাদা শব্দের আভিধানিক অর্থ হল : চেষ্টা, সাধনা, সংগ্রাম।

পরিভাষায় মুজাহাদা বলা হয় : দীনে ইসলামের আনুগত্য, অনুসরণ, প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-সাধনা ও সংগ্রাম করা।

মুজাহাদা ও জিহাদ একই শব্দ হলেও পরিভাষায় মুজাহাদার অর্থ ব্যাপক। জিহাদ বিশেষ অর্থ নির্দেশ করে।

মুজাহাদা বা চেষ্টা, সংগ্রাম, সাধনা করতে যেয়ে যদি প্রতিপক্ষের মুকাবেলা করতে হয়, তখন আমরা বলি জিহাদ।

তাই সব জিহাদই মুজাহাদা বলে পরিগণিত হয়, কিন্তু সব মুজাহাদা জিহাদ অর্থ বহন করে না।

মুজাহাদা বিষায়ক কুরআনের আয়াত
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,

(আরবি)

‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ (সূরা আল আনকাবুত: ৬৯)

আল্লাহ রাববুল আলামীন আরো বলেন :

(আরবি)

‘আর ইয়াকীন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।’ (সূরা আল হিজর: ৯৯)

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :

(আরবি)

‘আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।’ (সূরা আল মুযযাম্মিল: ৮)

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :

(আরবি)

‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালকাজ করলে তা সে দেখতে পাবে।’ (সূরা যিলযাল: ৭)

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :

(আরবি)

‘আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আল মুযযাম্মিল: ২০)

আল্লাহ তাআলা বলেন :

(আরবি)

‘আর তোমরা কল্যাণকর যা কিছু ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী।’ (সূরা বাকারা : ২৭৩)

উল্লেখিত আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারিঃ
১- যে আল্লাহর দীনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাবে আল্লাহ তাকে অনেক পথ খুলে দেবেন।

২- আল্লাহর দীন অর্জন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-সাধনা ও সংগ্রাম করতে হবে।

৩- মুজাহাদা শব্দের অর্থ হল: কোনো বিষয় অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা, সংগ্রাম করা।

৪- যারা আন্তরিকভাবে, ইখলাসের সাথে আল্লাহর দীনের জন্য প্রচেষ্টা চালায় তারা হল মুহসিন। আর আল্লাহর রহমত ও সাহায্য মুহসিনদের সাথেই আছে।

৫- আললাহর দীনের পথে চেষ্টা চালাতে হবে বিরামহীনভাবে। জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। কখনো বিরতি নেই। বিরাম নেই। নেই কোনো বিশ্রাম ।

৬- দ্বিতীয় আয়াতে ইয়াকীন শব্দের অর্থ হল মৃত্যু। এটা রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ইয়াকীন শব্দের আভিধানিক অর্থ হল দৃঢ়-বিশ্বাস।

৭- আল্লাহর স্মরণের সাথে সাথে একাগ্রচিত্তে তার পথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

৮- কেহ অনু পরিমাণ ভাল কাজ করলেও তা বৃথা যাবে না। তাই বিরামহীনভাবে ভাল কাজ করে যেতে হবে।

৯- যত টুকু ভাল কাজ করা হবে সবই আল্লাহ তাআলার কাছে জমা থাকবে। তিনি এর যথাযথ বরং অনেক বেশি পরিমাণে প্রতিদান দেবেন। তাই কোনো সময় নষ্ট করা যাবে না।

১০- ইস্তেগফার বা আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

১১- আল্লাহর দীনের পথে সম্পদ ব্যয় করার ফজিলত প্রমাণিত হল। তিনি তার পথে, তার দীনের জন্য ব্যয় করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

হাদীস -১.
1 - عن أبي هريرة رضي اللهُ عنه . قال قال رسول اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «إِنَّ اللهَ تعالى قال : منْ عادى لي وليًّاً . فقدْ آذنتهُ بالْحرْب . وما تقرَّبَ إِلَيَ عبْدِي بِشْيءٍ أَحبَّ إِلَيَ مِمَّا افْتَرَضْت عليْهِ : وما يَزالُ عبدي يتقرَّبُ إِلى بالنَّوافِل حَتَّى أُحِبَّه، فَإِذا أَحبَبْتُه كُنْتُ سمعهُ الَّذي يسْمعُ به، وبَصره الذي يُبصِرُ بِهِ، ويدَهُ التي يَبْطِش بِهَا، ورِجلَهُ التي يمْشِي بها، وَإِنْ سأَلنِي أَعْطيْته، ولَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَّنه» رواه البخاري .

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দেই। আমার বান্দা ফরজ ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারা প্রতি নিয়ত: আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি তাকে আমার প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই। আর আমি যখন তাকে আমার প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। (বর্ণনায়, সহিহ বুখারি)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- আল্লাহর ওলীদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা কর্তব্য। যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তারা হলেন আল্লাহর ওলী বা বন্ধু। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

‘শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর ওলীদের কোনো ভয় নেই, আর তারা পেরেশান হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।’ (সূরা ইউনুস: ৬২-৬৩)

এ আয়াতে আল্লাহর ওলীদের দুটো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমটি হল ঈমান, আর দ্বিতীয় হল জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ-কে ভয় করে চলা, আল্লাহর হুকুম আহকামের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে পথ চলা। এক কথায় তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করা।

২- যারা আল্লাহর এমন সব ওলীদের সাথে আল্লাহর ওলী হওয়ার গুণাবলি বহন করার কারণে শত্রুতা পোষণ করবে, আল্লাহ তাদের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

৩- ফরজ ইবাদতসমূহের গুরুত্ব বুঝা গেল।

৪- ফরজ ইবাদত আদায়ের পর যত বেশি সম্ভব নফল আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চেষ্টা করা।

৫- যথাযথ ঈমান আনা ও তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করা, ফরজগুলো আদায় করা, ফরজ ছাড়া যত ইবাদত আছে তা আদায় করলে এমন মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায় যে, তার কান, চোখ, হাত, পা ইত্যাদি এক কথায় সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গ আল্লাহর রহমত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। সে আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তা-ই দান করেন।

হাদীস -২.
2 - عن أَنس رضي اللَّه عنه عن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فيمَا يرْوِيهِ عنْ ربهِ عزَّ وجَلَّ قال : «إِذَا تقرب الْعبْدُ إِليَّ شِبْراً تَقرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِراعاً، وإِذَا تقرَّب إِلَيَّ ذراعاً تقرَّبْتُ منه باعاً، وإِذا أَتانِي يَمْشِي أَتيْتُهُ هرْوَلَة» رواه البخاري .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তখন তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এ কায়া পরিমাণ এগিয়ে যাই। আর সে যখন আমার দিকে হেটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’

(বর্ণনায় : বুখারী)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- এ হাদীসটি হাদীসে কুদসী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল কথা আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করে বর্ণনা করেছেন সেগুলোকে হাদীসে কুদসী বলা হয়।

২- আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার অর্থ হল, তার আদেশ নির্দেশগুলো মেনে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জনের জন্য চেষ্টা সাধনা করা। এ চেষ্টা সাধনায় যে যত বেশি এগিয়ে যাবে, আল্লাহর রহমত তার দিকে আনুপাতিক হারে ততবেশী এগিয়ে আসবে।

৩- এ হাদীসে আল্লাহ তাআলার পথে বেশি করে মুজাহাদা তথা চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানোর প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে ও এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।

হাদীস -৩.
3 - عن ابن عباس رضي اللهُ عنه قال : قال رسول اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «نِعْمتانِ مغبونٌ فيهما كثير من الناس : الصحة والفراغ» رواه مسلم .

ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘দুটি নেয়ামত এমন যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। আর তা হল: সুস্থতা (সুস্বাস্থ্য) ও অবসর সময়।’ (বর্ণনায়: বুখারী)

১০
হাদীসের শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- মানুষ যে সকল নেয়ামত বা দান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনায়াসে লাভ করে থাকে তার মধ্যে দুটো হল: সুস্থতা ও অবসর সময়।

২- কিন্তু মানুষ এ দুটো দান বা নেয়ামাত-কে কাজে লাগানোর ব্যাপারেই বেশি উদাসীন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা যেমন সুস্থতা-কে পুরোপুরি কাজে লাগায় না, তেমনি সময়টাকেও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না।

৩- এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থতা ও সময়কে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে উপদেশ দিয়েছেন। যে যত বেশি সুস্থতা ও সময়কে কাজে লাগাতে পারবে সে তত কম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

৪- যে যত বেশি সময়-কে অযথা ব্যয় করবে ও সুস্থাবস্থায় খারাপ কাজ করবে, সে তত বেশি ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

৫- এ হাদীস সুস্থতা ও সময়-কে মুল্যায়ন করতে শিক্ষা দিয়েছে। সময় থাকতেই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। সুযোগ থাকতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।

হাদীসে এসেছে :

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لرجل وهو يعظه : اغتنم خمسًا قبل خمس : شبابك قبل هرمك ، وصحتك قبل سقمك ، وغناك قبل فقرك ، وفراغك قبل شغلك ، وحياتك قبل موتك .

الراوي : عبدالله بن عباس المحدث : المنذري - المصدر : الترغيب والترهيب - الصفحة أو الرقم : 4/203 خلاصة حكم المحدث : [ إسناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما ]

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ওয়াজ করার সময় বলেছেন: তুমি পাঁচটি অবস্থা আসার পূর্বে পাঁচটি বিষয়-কে গণীমত (সুবর্ণ সুযোগ) মনে করবে। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবন-কে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা-কে, ব্যস্ততা আসার পূর্বে অবসর-কে, দারিদ্র আসার পূর্বে সচ্ছলতা-কে আর মৃত্যু আসার পূর্বে জীবন-কে।’

(বর্ণনায় : আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)

৬- সময় ও সুযোগ-কে পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর পথে তার নির্দেশ অনুযায়ী সময় ও শ্রম ব্যয় করে চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

১১
হাদীস -৪.
4 - عن عائشة رضي اللهُ عنها أَنَّ النَّبِيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم كَان يقُومُ مِنَ اللَّيْلِ حتَّى تتَفطَرَ قَدمَاهُ، فَقُلْتُ لَهُ، لِمْ تصنعُ هذا يا رسولَ اللهِ وقدْ غفَرَ اللهُ لَكَ مَا تقدَّمَ مِنْ ذَنبِكَ وما تأخَّرَ؟ قال : «أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أكُونَ عبْداً شكُوراً؟» متفقٌ عليه .

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে এত দীর্ঘ সময় নামাজে দাড়িয়ে থাকতেন যে তার পা দুটো ফুলে যেত। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ রকম করছেন কেন, যখন আল্লাহ তাআলা আপনার পূর্বের ও পরের পাপগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন? তিনি বললেন, ‘আমি কি পছন্দ করবো না যে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাই?’

(বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

১২
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন।

২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ ছিলেন। তার কোনো পাপ ছিল না।

৩- মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে অর্পিত সকল প্রকার দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে আদায় করার পরও তিনি তৃপ্ত ছিলেন না। তিনি মনে করতেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাকে আরো কিছু করতে হবে। আমি যা কিছু করেছি তা তো তার তাওফিকে করতে পেরেছি। তার ইচ্ছায়, তার দেয়া সামর্থে করেছি। আমার কৃতিত্ব এখানে কি আছে? কাজেই তার কৃতজ্ঞ বান্দা হতে হলে আমার ঘুমিয়ে থাকা চলবে না। কাজেই নিজের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য ত্যাগ ও কোরবানি করতে হবে।

৪- সকলেরই এ অনুভূতি থাকা উচিত যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যা কিছু করছি তার নৈকট্য অর্জনের জন্য এতটুকু যথেষ্ট নয়। আরো অনেক বেশি করা উচিত।

৫- আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য, তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য, তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার জন্য মুজাহাদা ও সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর গুরুত্ব শিক্ষা দিচ্ছে আমাদেরকে রাসূলের এ হাদীসটি।

১৩
হাদীস -৫.
5 - عن عائشة رضي اللهُ عنها أنها قالت : «كان رسولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إذَا دَخَلَ الْعشْرُ أحيا اللَّيْلَ، وأيقظ أهْلهْ، وجدَّ وشَدَّ المِئْزَرَ» متفقٌ عليه .

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। নিজের পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন। শক্তভাবে লুঙ্গি বেধে নিতেন।’

বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম

১৪
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাতেন। অন্যদের উৎসাহিত করতেন।

২- লুঙ্গি শক্তভাবে বেধে নেয়ার অর্থ হল, ইবাদত-বন্দেগীতে এত মনোযোগী হয়ে পড়তেন যে, তিনি এ সময়ে স্ত্রীদের সাথে মেলা মেশা থেকে দূরে থাকতেন।

৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কত বেশি মুজাহাদা করতেন, এ হাদীস তার একটি অনুপম দৃষ্টান্ত।

১৫
হাদীস -৬.
6 - عن أبي هريرة رضي اللهُ عنه قال : قال رسولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «المُؤمِن الْقَوِيُّ خيرٌ وَأَحبُّ إِلى اللهِ مِنَ المُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وفي كُلٍّ خيْرٌ . احْرِصْ عَلَى مَا ينْفَعُكَ، واسْتَعِنْ بِاللهِ وَلاَ تَعْجَزْ . وإنْ أصابَك شيءٌ فلاَ تقلْ : لَوْ أَنِّي فَعلْتُ كانَ كَذَا وَكذَا، وَلَكِنْ قُلْ : قدَّرَ اللهُ ومَا شَاءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَان» . رواه مسلم .

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে উত্তম ও বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তোমার জন্য যা উপকারী তার প্রতি আগ্রহ রাখো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিজেকে অক্ষম মনে করবে না। যদি তোমার কোনো বিপদ-আপদ আসে তাহলে এমন বলবে না যে, যদি আমি এ রকম করতাম তাহলে এরকম হত। বরং এ কথা বলবে যে, আল্লাহ তাকদীরে এটা রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের কাজের দরজা খুলে দেয়।’

(বর্ণনায়: সহিহ মুসলিম)

১৬
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- শক্তিশালী মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি প্রিয়। তাই এ হাদীসাটি প্রতিটি মুমিনকেই শক্তিশালী হতে আহবান জানায়।

২- মুমিন ব্যক্তি দুর্বল হলেও তার মধ্যে কল্যাণ আছে।

৩- যা কিছু উপকারী, তা অর্জন করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তাই যা কিছু উপকারী নয়, যা অনর্থক, তা বর্জন করতে হবে।

৪- উপকারী বিষয় অর্জন করতে আল্লাহ তাআলার কাছে শক্তি-সামর্থ্য ও সাহায্য চাইতে হবে।

৫- উপকারী বিষয়গুলো অর্জন করতে গিয়ে নিজেকে কখনো অক্ষম মনে করা যাবে না। সর্বক্ষেত্রে ‘আমি পারবই’ এমন প্রত্যাশা ধারণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ হাদীসে। এমনিভাবে একজন মুমিন কোনো কাজে কখনো নিজেকে অক্ষম ভাবতে পারবে না।

৬- উপরের এ শিক্ষাগুলো মেনে নিয়ে যখন মুমিন ব্যক্তি কোনো কাজ করে এবং তাতে ব্যর্থ হয় বা বিপদে পড়ে যায় অথবা পরিণতি প্রত্যাশার বিপরীত হয় তখন বলা যাবে না যে, আমি এটা না করলে ভাল হত। অথবা ওরকম না করলেই এ বিপদ এড়াতে পারতাম। কারণ এ ধরনের কথা তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের পরিপন্থী। তাই ‘যদি এ রকম করতাম তাহলে এমন হত’ জাতীয় কথাগুলো শয়তানের প্ররোচণা ব্যতীত আর কিছুই নয়।

৭- যে কোনো বিপদ-মুসিবত আসে তা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল বলে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :

(আরবি)

‘জমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোনো মুসিবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর, যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোনো উদ্ধত ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা হাদীদ : ২২-২৩)

১৭
হাদীস -৭.
7 - عن أبي هريرة رضي الله عنه أَنَّ رسول اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : «حُجِبتِ النَّارُ بِالشَّهَواتِ، وحُجِبتْ الْجَنَّةُ بَالمكَارِهِ» متفقٌ عليه .

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম লোভনীয় বস্ত্ত দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আর জান্নাত দুঃখ কষ্ট দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছে।

(বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

১৮
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- জাহান্নাম লোভনীয় বস্ত্ত দিয়ে ঢেকে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ার লোভনীয় বস্ত্ত সামগ্রীর প্রতি অধিক আগ্রহ দ্বারা জাহান্নামের পথ তৈরী হয়। যে যত এ দিকে অগ্রসর হবে সে তত জাহান্নামের পর্দা উঠিয়ে নেবে। ফলে জাহান্নামে যাওয়া তার জন্য সহজ হয়ে যায়।

২- আর জান্নাতকে দুঃখ কষ্ট দিয়ে ঢেকে দেয়ার অর্থ হল, দীনের জন্য যে যত দুঃখ কষ্ট ভোগ করবে সে তত জান্নাতের প্রতিবন্ধক পর্দা উঠিয়ে নেবে। ফলে জান্নাত তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

৩- এ হাদীস ভাল কাজে কষ্ট-সাধনা ও মুজাহাদা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। জান্নাতে যেতে হলে তাকে দুনিয়াতে দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকুলতার সম্মুখীন হয়ে চেষ্টা-সাধনা করতে হবে।

১৯
হাদীস -৮.
8 - عن أبي عبد اللَّه حُذَيْفةَ بن اليمانِ، رضي اللهُ عنهما، قال : صَلَّيْتُ مع النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ذَاتَ ليْلَةٍ، فَافَتَتَحَ الْبقرة، فقُلْت يرْكَعُ عِندَ المائة، ثُمَّ مضى، فَقُلْت يُصلِّي بِهَا في رَكْعةٍ، فَمَضَى . فَقُلْت يَرْكَع بهَا، ثمَّ افْتتَح النِّسَاءَ، فَقَرأَهَا، ثمَّ افْتتح آلَ عِمْرانَ فَقَرَأَهَا، يَقْرُأُ مُتَرَسِّلاً إذَا مرَّ بِآيَةٍ فِيها تَسْبِيحٌ سَبَّحَ، وإِذَا مَرَّ بِسْؤالٍ سَأل، وإذَا مَرَّ بِتَعَوذٍ تَعَوَّذَ، ثم ركع فَجعل يقُول : «سُبحانَ رَبِّيَ الْعظِيمِ» فَكَانَ ركُوعُه نحْوا مِنْ قِيامِهِ ثُمَّ قَالَ : «سمِع اللهُ لِمن حمِدَه، ربَّنا لك الْحمدُ» ثُم قَام قِياماً طوِيلاً قَريباً مِمَّا ركَع، ثُمَّ سَجَدَ فَقالَ : «سبحان رَبِّيَ الأعلَى» فَكَانَ سُجُوده قَرِيباً مِنْ قِيامِهِ» . رواه مسلم

হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক রাতে নামাজ পড়লাম। তিনি সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করলেন। আমি ভাবলাম একশ আয়াত পাঠ করে তিনি রুকু করবেন। কিন্তু তিনি পাঠ করতেই থাকলেন। ভাবলাম, হয়তো এক রাকাআতেই এ সূরা শেষ করবেন। কিন্তু তিনি পাঠ চালিয়ে গেলেন। মনে করলাম তিনি রুকু করবেন। কিন্তু তিনি সূরা আন নিসা শুরু করে দিলেন। পাঠ করলেন। এরপর সূরা আলে ইমরান আরম্ভ করলেন। তিনি ধীরস্থিরভাবে পাঠ করছিলেন। যখন এমন কোনো আয়াত পড়তেন যাতে আল্লাহর তাসবিহ রয়েছে, তিনি সেখানে তাসবিহ পড়তেন। আর যেখানে কোনো কিছু চাওয়ার আয়াত আসত, তিনি সেখানে প্রার্থনা করতেন। আবার যেখানে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত আসত সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। এরপর তিনি রুকুতে গিয়ে বলতে লাগলেন, সুবহানা রাবিবয়াল আজীম। তার রুকুও দাঁড়ানো অবস্থার মত দীর্ঘ ছিল। এরপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বললেন। এরপর প্রায় রুকুর মত দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেন। তারপর সেজদায় গিয়ে বললেন, সুবহানা রাবিবয়াল আলা। তার সেজদাও দাঁড়ানোর মত দীর্ঘ ছিল।

(বর্ণনায়: সহিহ মুসলিম)

২০
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- এ হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদত-বন্দেগীতে কত মেহনত ও মুজাহাদা করেছেন। এক রাকাআতে সর্ব বৃহৎ তিনটি সূরা পাঠ করেছেন। তার সাথের সাহাবী ক্লান্ত হলেও তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েননি।

২- সূরা পাঠ করার সময় তারতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা শর্ত নয়। তারতীবের খেলাফ করা যায়। যেমন তিনি সূরা বাকারার পরে সূরা নিসা পাঠ করেছেন। এর পর পাঠ করেছেন সূরা আলে ইমরান। কিন্তু তারতীব জরুরী হলে সূরা বাকারার পর সূরা আলে ইমরান পাঠ করতেন। এমনিভাবে একটি সূরা রেখে আরেকটি পাঠ করা যায়। এতেও কোনো সমস্যা নেই।

৩- হাদীসে বর্ণিত নামাজটি ছিল রাতের নফল নামাজ।

৪- তার রুকু ছিল দাড়ানোর মত দীর্ঘ। এখন ভেবে দেখুন তিনি কত মুজাহাদা করেছেন।

২১
হাদীস -৯.
9 - عن ابن مسعودٍ رَضِيَ اللهُ عنه قال : صلَّيْت مع النَبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم لَيلَةً، فَأَطَالَ الْقِيامَ حتَّى هممْتُ بأمر سوء، قيل وما هممت به؟ قال هممت أَنْ أجْلِسَ وَأدعَهُ . متفقٌ عليه .

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সাথে এক রাতে নামাজ আদায় করলাম। তিনি নামাজে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে ছিলেন। তখন আমি একটি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলেন? তিনি বললেন, আমি তাকে ছেড়ে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম।

বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম

২২
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদত-বন্দেগীতে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কত মুজাহাদা করেছেন, তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হল এ হাদীস। সাহাবি ইবনে মাসউদ তখন যুবক। তিনি রাসূলের সাথে দাড়িয়ে থেকে অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের মাধ্যমে মুজাহাদা অব্যাহত রাখলেন।

২৩
হাদীস -১০.
10 - عن أنس رضي اللهُ عنه عن رسولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : «يتْبعُ الميْتَ ثلاثَةٌ : أهلُهُ ومالُه وعمَلُه، فيرْجِع اثنانِ ويبْقَى واحِدٌ : يرجعُ أهلُهُ ومالُهُ، ويبقَى عملُهُ» متفقٌ عليه .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: ‘তিনটি বস্ত্ত মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। তার পরিবারবর্গ, তার ধন-সম্পদ ও তার কর্ম। এরপর দুটো ফিরে আসে আর একটি তার সাথে থেকে যায়। পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে আর আমল (কর্ম) তার সাথে থেকে যায়।’

বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম

২৪
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর দিকে অগ্রসরমান। সব সময় তাকে তিনটি বস্ত্ত অনুসরণ করে। এ তিনটি বস্ত্ত দ্বারা সে উপকৃত হয়। প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরিচিত হয় মানব সমাজে। যখন মৃত্যু ঘটে যায়, তখন প্রথম দুটি তার সঙ্গ ত্যাগ করে ফিরে আসে। তাকে আর উপকার করে না। কাছে থাকে না। কিন্তু তার ভাল কাজগুলো দ্বারা সে উপকৃত হতে থাকে। ভাল কাজের মাধ্যমে সে মানুষের সমাজে বেঁচে থাকে। মৃত্যু পরবর্তী জীবেন তার একমাত্র সম্বল হল এ সৎকর্মগুলো।

২- এ হাদীসটি আমাদের সৎ কর্মে ও নেক আমলে যত্নবান হয়ে মুজাহাদা বা সর্বাত্নক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাতে উদ্বুদ্ধ করছে।

২৫
হাদীস -১১.
11 - عن ابن مسعودٍ رضيَ اللهُ عنه قال : قال النبيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «الجنة أقَربُ إلى أَحدِكُم مِنْ شِراكِ نَعْلِهِ والنَّارُ مِثْلُ ذلِكَ» رواه البخاري .

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও জান্নাত তোমাদের নিকটবর্তী। আর জাহান্নামও এ রকম।’

বর্ণনায়: বুখারী

২৬
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- জান্নাত ও জাহান্নাম মানুষের এত কাছে যে, একটু চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও মুজাহাদা করলেই সে তা অর্জন করতে পারে।

২- জুতার ফিতাটাকে কাজে লাগাতে হলে যেমন একটু কষ্ট করতে হয়, জান্নাত অর্জনের জন্যও তেমন মুজাহাদা করতে হবে।

২৭
হাদীস -১২.
12 - عن أبي فِراس رَبِيعةَ بنِ كَعْبٍ الأسْلَمِيِّ خادِم رسولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم، ومِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ رضي اللهُ عنه قال : كُنْتُ أبيتُ مع رسول اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم، فآتِيهِ بِوَضوئِهِ، وحاجتِهِ فقال : «سلْني» فقُلْت : أسْألُكَ مُرافَقَتَكَ في الجنَّةِ . فقالَ : «أوَ غَيْرَ ذلِك؟» قُلْت : هو ذَاك . قال : «فأَعِنِّي على نَفْسِكَ بِكَثْرةِ السجُودِ» رواه مسلم .

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম ও আসহাবে সুফফার সদস্য আবু ফিরাস রাবিয়া ইবনে কাআব আল আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে রাত যাপন করতাম। তাকে অজুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্ত্ত এনে দিতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে (চাওয়ার থাকলে) চাও।’ আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই। তিনি বললেন, ‘এ ছাড়া আর কিছু?’ আমি বললাম, না, এটাই চাই। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি তোমার নিজের জন্য বেশি বেশি করে সেজদা দিয়ে আমাকে সাহায্য কর।’

বর্ণনায়: মুসলিম

২৮
হাদীসের শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- আসহাবে সুফফা বলতে সাহাবায়ে কেরামের সেই জামাআতকে বুঝায় যারা সর্বদা মসজিদে নববীতে অবস্থান করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে দীনি শিক্ষা গ্রহণ করতেন।

২- বিনা পারিশ্রমিকে উস্তাদের খেতমত করা ও খেদমত গ্রহণের বৈধতা প্রমাণিত হল এই হাদীসের মাধ্যমে।

৩- সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কত বেশি ভালবাসতেন তার একটি প্রমাণ হল এই হাদীস। তাকে চাইতে বলা হল, কিন্তু তিনি দুনিয়ার কিছু চাইলেন না। নিজের জন্য কিছু চাইলেন না। চাইলেন জান্নাতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথি হতে। এটা একটা বিরাট বিস্ময়।

৪- শুধু ভালবাসার দাবী করলে চলে না। ভালবাসার প্রমাণও দিতে হয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আমল করতে বললেন।

৫- ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি করে মুজাহাদা তথা চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর প্রতি এ হাদীসে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

৬- আমল ছাড়া কেবল রাসূলের ভালবাসার দাবীর মাধ্যমেই জান্নাতে যাওয়া যাবে, এই হাদীসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সেসব আশার অসারতা প্রমাণ হয়।

২৯
হাদীস -১৩.
13 - عن أبي عبد اللهِ ويُقَالُ : أبُو عبْدِ الرَّحمنِ ثَوْبانَ موْلى رسولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : سمِعْتُ رسولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقول : عليكَ بِكَثْرةِ السُّجُودِ، فإِنَّك لَنْ تَسْجُد للهِ سجْدةً إلاَّ رفَعكَ اللهُ بِهَا درجةً، وحطَّ عنْكَ بِهَا خَطِيئَةً» رواه مسلم .

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুক্তি দেয়া গোলাম আবু আব্দুল্লাহ -তাকে আবু আব্দুর রহমানও বলা হয় - সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তোমার বেশি বেশি করে সেজদা করা উচিত। কারণ তুমি আল্লাহর জন্য যে সেজদাটাই করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার জন্য একটি উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দেন।’

বর্ণনায়: সহিহ মুসলিম

৩০
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- আল্লাহর জন্য সেজদা করার ফজিলত প্রমাণিত হল।

২- আল্লাহর জন্য প্রতিটি সেজদার বিনিময়ে সেজদাকারীর মর্যাদা বেড়ে যায়। গুনাহ মাফ হয়।

৩- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত-বন্দেগীতে মুজাহাদা করার জন্য এ হাদীস আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে।

৩১
হাদীস -১৪.
14 - عن أبي صَفْوانَ عبدِ اللهِ   بن بُسْرٍ الأسلَمِيِّ، رضي اللهُ عنه، قال : قال رسولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «خَيْرُ النَّاسِ مَن طالَ عمُرُه وَحَسُنَ عملُه» رواه الترمذي، وقال حديثٌ حسنٌ .

الراوي : عبدالله بن بسر المحدث : الألباني - المصدر : صحيح الترمذي - الصفحة أو الرقم : 2329

خلاصة حكم المحدث : صحيح .

আবু সফওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর আল আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ মানুষের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে ও তার কর্ম সুন্দর হয়েছে।’

বর্ণনায়: তিরমিজি, হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন।

৩২
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- যে ব্যক্তি দীর্ঘ আয়ু পেয়েছে ও তা ভাল কাজে লাগাতে পেরেছে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবোত্তম মানুষ বলে ঘোষণা দিয়েছেন এ হাদীসে।

২- হাদীসটি ভাল ও কল্যাণকর কাজে মুজাহাদা করার জন্য আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে।

৩৩
হাদীস -১৫.
15 - عن أنسٍ رضي اللهِ عنه، قال : غَاب عمِّي أَنَسُ بنُ النَّضْرِ رضي اللهُ عنه، عن قِتالِ بدرٍ، فقال : يا رسولَ اللهِ غِبْت عن أوَّلِ قِتالٍ قَاتلْتَ المُشرِكِينَ، لَئِنِ اللهُ أشْهَدَنِي قتالَ المشركين لَيُرِيَنَّ اللهُ ما أصنعُ، فلما كانَ يومُ أُحدٍ انْكشَفَ المُسْلِمُون فقال : اللَّهُمَّ أعْتَذِرُ إليْكَ مِمَّا صنَع هَؤُلاءِ يَعْني أصْحَابَه وأبرأُ إلَيْكَ مِمَّا صنعَ هَؤُلاَءِ يعني المُشْرِكِينَ ثُمَّ تَقَدَّمَ فَاسْتَقْبَلَهُ سعْدُ بْنُ مُعاذٍ، فَقالَ : يا سعْدُ بْنَ معُاذٍ الْجنَّةُ ورَبِّ الكعْبةِ، إِنِى أجِدُ رِيحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ . قال سعْدٌ : فَمَا اسْتَطعْتُ يا رسول اللهِ ماصنَعَ، قَالَ أنسٌ : فَوجدْنَا بِهِ بِضْعاً وثمانِينَ ضَرْبةً بِالسَّيفِ، أوْ طَعْنَةً بِرُمْحٍ، أو رمْيةً بِسهْمٍ، ووجدْناهُ قَد قُتِلَ وَمثَّلَ بِهِ المُشرِكُونَ فَما عرفَهُ أَحدٌ إِلاَّ أُخْتُهُ بِبنَانِهِ . قال أنسٌ : كُنَّا نَرى أوْ نَظُنُّ أنَّ هَذِهِ الآيَة نزلَتْ فيهِ وَفِي أشْباهِهِ : [ مِنَ المُؤْمِنِينَ رِجالٌ صدقُوا ما عَاهَدُوا اللهَ علَيه ] [ الأحزاب : 23 ] إلى آخرها . متفقٌ عليه .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নাদার বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রথম যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলাম। যে যুদ্ধ আপনি করেছিলেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। যদি আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে হাজির করেন, তাহলে আমি কি করি আল্লাহ তা নিশ্চয় দেখতে পাবেন। এরপর উহুদ যুদ্ধের দিন মুসলিমরা কাফেরদের আক্রমণের পথ খুলে দিল। তখন আনাস ইবেন নাদর বললেন, হে আল্লাহ! আমার সাথীরা যা করেছে আমি সে জন্য আপনার কাছে ওজর পেশ করছি। আর মুশরিকদের কার্যকলাপ থেকে আমি সর্ব প্রকার সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিচ্ছি। এরপর তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলে সাআদ বিন মুয়াজের সাথে দেখা হয়। তখন তিনি তাকে বললেন, হে সাআদ ইবনে মুয়াজ! কাবার প্রভুর শপথ, আমি উহুদের পিছন থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। সাআদ রা. (এ ঘটনা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন) ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারপর সে যে কি করেছে, আমি তা বর্ণনা করতে পারছি না। আনাস রা. বলেন, আমরা তার শরীরে তরবারি অথবা বর্শা কিংবা তীরের আশিটির বেশি আঘাত দেখতে পেয়েছি। আরো দেখেছি তিনি শহীদ হয়েছেন আর মুশরিকরা তার নাক, কান কেটে চেহারা বিকৃত করে দিয়েছে। তার বোন ব্যতীত অন্য কেউ লাশ সনাক্ত করতে পারেনি। তার বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে তাকে সনাক্ত করেছে। আনাস বলতেন, আমরা ধারণা করতাম তার মত লোকদের ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়েছে : ‘মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা-কে সত্যে পরিণত করেছে।’ সূরা আল আহযাব, আয়াত ২৩

বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম

৩৪
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- বদর যুদ্ধে আনাস বিন নাদার অনুপস্থিত থাকার কারণে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করতে না পারে তাহলে তার জন্য অনুশোচনা করা সঙ্গত। এ ধরনের অনুশোচনা এর চেয়ে ভাল কাজ করার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।

২- ইসলামের গৌরবজনক ইতিহাস আলোচনা করার প্রতি গুরুত্ব। সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সহ অন্যান্য সাহাবীগণ মুসলিম মুজাহিদদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা, ধৈর্য, সংকট, দু:খ, কষ্ট, নির্যাতন, কোরবানী ও শাহাদাতের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কাজেই এ সকল ঘটনা বর্ণনা করা সুন্নাত।

৩- উহুদ যুদ্ধে মুশরিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পরও মুসলিম বাহিনীর ভুলের কারণে আক্রমণের সুযোগ পেয়েছে। এটাকে বলা হয়েছে, ‘উহুদ যুদ্ধের দিন মুসলিমরা কাফেরদের আক্রমণের পথ খুলে দিল।’

৪- নিজেদের সাথী-সহকর্মীদের ভুলের কারণে আফসোস করা, তাদের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করা একটি ভাল কাজ।

৫- ইসলামের শত্রুদের মোকাবেলায় সাহাবী আনাস বিন নাদারের বীরত্ব ও সাহস কত দৃঢ় ছিল তার প্রমাণ এ হাদীস।

৬- যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের লাশ বিকৃত করা অন্যায়। ইসলামে এটা চরমভাবে নিষিদ্ধ।

৭- এ সকল আত্মত্যাগী বীর মুজাহিদ ও শহীদদের জন্যই এ আয়াত নাযিল হয়েছে :

(আরবি)

‘মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের কৃত প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ [যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে] তার দায়িত্বপূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ [শাহাদাত বরণের] প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোনো পরিবর্তনই করেনি। যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার জন্য পুরস্কৃত করতে পারেন এবং তিনি চাইলে মুনাফিকদের আজাব দিতে পারেন অথবা তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ২৩-২৪)

৮- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার যোগ্য সাহাবায়ে কেরাম দীনে ইসলামের জন্য কত মুজাহাদা করেছেন। কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কত দু:খ-কষ্ট, জুলুম নির্যাতন বরদাশত করেছেন এ হাদীসে তার একটি ছোট চিত্র আমরা প্রত্যক্ষ করলাম।

৩৫
হাদীস -১৬.
16 - عن أبي مسعود عُقْبَةَ بن عمروٍ الأنصاريِّ البدريِّ رضي اللهُ عنه قال : لمَّا نَزَلَتْ آيةُ الصَّدقَةِ كُنَّا نُحَامِلُ عَلَى ظُهُورِنا . فَجَاءَ رَجُلٌ فَتَصَدَّقَ بِشَيْءٍ كَثِيرٍ فَقَالُوا : مُراءٍ، وجاءَ رَجُلٌ آخَرُ فَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ فقالُوا : إنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ عَنْ صاعِ هَذَا، فَنَزَلَتْ { الَّذِينَ يَلْمِزُونَ المُطَّوِّعِينَ مِنَ المُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ إلاَّ جُهْدَهُمْ } [ التوبة : 79] الآية . متفقٌ عليه .

আবু মাসউদ উকবা ইবনে আমর আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত - যিনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন - তিনি বলেন, যখন সদকা করার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত নাযিল হল, তখন আমরা সদকার সম্পদ পিঠে বহন করতাম (তা থেকে সদকা করতাম) একজন লোক আসল সে প্রচুর সম্পদ সদকা করল। কিছু লোক বলল, এ লোক দেখানোর জন্য সদকা করেছে। আরেকজন এসে মাত্র এক সা পরিমাণ সদকা করল। তখন কিছু লোক বলল, আল্লাহ এক সা সদকার মুখাপেক্ষী নন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হল:

‘যারা দোষারোপ করে সদকার ব্যাপারে মুমিনদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাদানকারীদেরকে এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না। অতঃপর তারা তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহও তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন এবং তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরা তাওবা: ৭৯)

বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম

৩৬
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- সদকা প্রদানের জন্য সাহাবায়ে কেরাম কষ্ট করেছেন, করেছেন মুজাহাদা।

২- যে প্রচুর পরিমাণে সদকা করল, তারও সমালোচনা করা হল আর যে কম সদকা করল তারও সমালোচনা করা হল। এটা হল মুনাফিক চরিত্র। তারা সর্বদা মুমিনের দোষ খুঁজে বেড়ায়।

৩- মানুষ কি বলবে, অনেকে সেদিকে খুব গুরুত্ব দেয়। যারা মানুষের কথা থেকে বাঁচার জন্য কিছু করতে বা বর্জন করতে চায়, তারা আসলে কখনো মানুষের কথা থেকে বাঁচতে পারে না।

৪- দীন-ধর্মের যে কোনো কাজ কেউ করলে তার সমালোচনা বা অবজ্ঞা কিংবা অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

لا تحقرن من المعروف شيئًا

‘ তোমরা ভাল কাজের কোনো কিছুকেই ছোট মনে করবে না।’

৫-সৎ কাজের অবজ্ঞা করা মুমিনের গুণাবলীর মধ্যে গণ্য হয় না। এটা মুনাফিকের স্বভাব।

৬- প্রত্যেকে তার নিজ সামর্থানুযায়ী ব্যয় করবে। অসচ্ছল ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুপাতে ব্যয় করবে আর সচ্ছল ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী ব্যয় করবে। কত দিতে পারল, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, দিতে পেরেছে কি না।

৭- কেউ কেউ প্রচুর সদকা দেয়। আবার কেউ দরিদ্র, বেশি সদকা দিতে পারে না। আবার কেউ আছে কোনো কিছুই দেয়ার সামর্থ্য রাখে না। তারা নিজ সময় ও শ্রম দিতে পারে। এরা সকলেই আল্লাহর কাছে প্রিয়। আয়াতে সেটাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সঠিক নিয়ত ও মনের অবস্থা দেখেন।

৮- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের এক সা হল কর্তমানে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম।

৯- কেউ দীন-ইসলামের জন্য কোনো কাজ করলে - তা যত ছোটই হোক- তা নিয়ে উপহাস বা বিদ্রুপ করা অন্যায়। যারা এ রকম করবে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা উল্লেখিত আয়াতে শাস্তির কথা শুনিয়েছেন।

৩৭
হাদীস -১৭.
17 - عن سعيدِ بنِ عبدِ العزيزِ، عن رَبيعةَ بنِ يزيدَ، عن أَبِي إدريس الخَوْلاَنيِّ، عن أَبِي ذَرٍّ جُنْدُبِ بنِ جُنَادَةَ، رضي اللهُ عنه، عن النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فيما يَرْوِى عَنِ اللهِ تباركَ وتعالى أنه قال : «يا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّماً فَلاَ تَظالمُوا، يَا عِبَادِي كُلُّكُم ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ، فَاسْتَهْدُوني أهْدكُمْ، يَا عِبَادي كُلُّكُمْ جائعٌ إِلاَّ منْ أطعمتُه، فاسْتطْعموني أطعمْكم، يا عبادي كلكم عَارٍ إلاَّ مِنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوني أكْسُكُمْ، يَا عِبَادِي إنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً، فَاسْتَغْفِرُوني أغْفِرْ لَكُمْ، يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِّي فَتَضُرُّوني، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُوني، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أوَّلَكُمْ وآخِركُمْ، وَإنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أتقَى قلبِ رجلٍ واحدٍ منكم ما زادَ ذلكَ فِي مُلكي شيئاً، يا عِبَادِي لو أَنَّ أوَّلكم وآخرَكُم وإنسَكُم وجنكُمْ كَانوا عَلَى أفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئاً، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِركُمْ وَإنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ، قَامُوا فِي صَعيدٍ وَاحدٍ، فَسألُوني فَأعْطَيْتُ كُلَّ إنْسانٍ مَسْألَتَهُ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلاَّ كَمَا َيَنْقُصُ المِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ البَحْرَ، يَا عِبَادِي إنَّما هِيَ أعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ، ثُمَّ أوَفِّيكُمْ إيَّاهَا، فَمَنْ وَجَدَ خَيْراً فَلْيَحْمِدِ اللَّه، وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلاَ يَلُومَنَّ إلاَّ نَفْسَهُ» . قَالَ سعيدٌ : كان أبو إدريس إذا حدَّثَ بهذا الحديث جَثَا عَلَى رُكبتيه . رواه مسلم . وروينا عن الإمام أحمد بن حنبل رحمه اللهُ قال : ليس لأهل الشام حديث أشرف من هذا الحديث .

আবু জর গিফারী জুনদুব ইবনে জুনাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের উপর জুলুম হারাম করে নিয়েছি তোমাদের উপরও তা হারাম করলাম। অতএব তোমরা একজন অপর জনের উপর জুলুম করবে না। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হিদায়াত দিয়েছি সে ব্যতীত তোমাদের সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা করো আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে খাদ্য দিয়েছি সে ব্যতীত তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। অতএব আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি খাদ্য দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে পোশাক দান করেছি সে ব্যতীত তোমরা সকলেই উলঙ্গ। অতএব তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও, আমি তোমাদের পোশাক দান করব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত দিন পাপাচারে লিপ্ত। আর আমি সকল পাপ ক্ষমা করে দেই। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি ক্ষমা করে দেব।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার কোনো ক্ষতি করতে কখনো সমর্থ হবে না, যে তোমরা আমার ক্ষতি করবে।

হে আমার বান্দাগন! তোমরা আমার কোনো উপকার করতে সক্ষম নও, যে তোমরা আমার উপকার করবে।

হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও পরের সকল জিন ও মানুষ যদি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আল্লাহ ভীরু ব্যক্তির হৃদয়ের মত হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যায় তাতে আমার রাজত্বে কোনো কিছু বৃদ্ধি পায় না।

হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সকল জিন ও মানুষ তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে খারাপ মানুষের হৃদয়ের মত হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যায়, তাতে আমার রাজত্বে কোনো কিছু হ্রাস পায় না।

হে আমার বান্দাগন! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সকল জিন ও মানুষ এক মাঠে দাঁড়িয়ে আমার নিকট (তাদের যা চাওয়ার) চায়, আর আমি যদি তাদের সকলকে তা দিয়ে দেই, তাহলে আমার কাছে যা রয়েছে তার থেকে এতটুকু কমে যায় যেমন সমুদ্রে একটি সুচ ফেলে তুললে যতটুকু পানি কমে যায়।

হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের ভাল কাজগুলোকে আমি তোমাদের জন্য জমা করে রাখছি। আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেব। অতএব যে ব্যক্তি ভাল কিছু পায়, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি খারাপ কিছু পায়, সে যেন নিজেকে ব্যতীত অন্য কাউকে তিরস্কার না করে।’

হাদীসটির বর্ণনাকারী সায়ীদ রহ. বলেন, আবু ইদ্রীস রহ. যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন তখন হাটু ভাজ করে ঝুঁকে বসতেন।

বর্ণনায়: মুসলিম।

ইমাম নববি রহ. বলেন, আমরা এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. থেকেও বর্ণনা করেছি। তিনি বলেছেন, সিরিয়াবাসীদের জন্য এর চেয়ে সম্মানিত কোনো হাদীস নেই। অর্থাৎ সিরিয়াবাসী হাদীস বর্ণনাকারীগণ যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ হাদীস।

৩৮
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- হাদীসটি একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে কুদসী। অর্থাৎ বক্তব্য আল্লাহ রাববুল আলামীনের, আর ভাষা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের।

২- জুলুম করা হারাম করা হয়েছে। এখানে যে জুলুম উল্লেখ করা হয়েছে সেটা হল মানুষের প্রতি জুলুম।

৩- আল্লাহ নিজে কখনো মানুষের উপর জুলুম করেন না। এ কথা তিনি আল কোরআনে বহু স্থানে বলেছেন।

৪- আল্লাহর কাছে নিজের হিদায়াতের জন্য প্রার্থনা করা কর্তব্য।

৫- আল্লাহর কাছে খাদ্য চাওয়া বান্দার কর্তব্য।

৬- আল্লাহর কাছে পোশাক চাওয়া বান্দার কর্তব্য।

৭- নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা বান্দার কর্তব্য।

৮- আল্লাহর কাছে হিদায়াত চাইলে, ক্ষমা প্রার্থনা করলে, নিজের যা কিছু প্রয়োজ তা তাঁর কাছে চাইলে তিনি সন্তুষ্ট হন।

৯- সকল সৃষ্টি একত্র হয়েও আল্লাহ তাআলার কোনো ক্ষতি করার সামর্থ্য অর্জন করতে পারে না।

১০- সকল সৃষ্টি একত্র হয়েও আল্লাহ তাআলার কোনো উপকার করতে সক্ষম হয় না।

১১- সকল মানুষ মুত্তাকী পরহেজগার হয়ে গেলে আল্লাহর রাজত্বে কোনো কিছু বৃদ্ধি করে না।

১২- সকল মানুষ অবাধ্য হয়ে গেলেও তাঁর রাজত্বে কোনো কিছু কমে না।

১৩- আল্লাহ রাববুল আলামীন যদি সকল মানুষ ও সৃষ্টিজীবের সকল চাহিদা মিটিয়ে দেন তাহলে তাঁর ভান্ডার থেকে কিছু কমে না। যেমন সমুদ্রে একটা সুই ফেলে দিয়ে তা উঠালে পানি কমে না।

১৪- মানুষ ও জিন যা কিছু ভাল কাজ করবে তা কখনো বৃথা যাবে না। আল্লাহ এটাকে সংরক্ষণ করবেন ও বহুগুণে বাড়িয়ে প্রতিদান দেবেন।

১৫- যদি কেউ ভাল কিছু অর্জন করে তাহলে আল্লাহর প্রশংসা করবে। আর খারাপ কিছু অর্জন করলে এটা তার নিজের দোষ বলে স্বীকার করে নেবে।

১৬- আল্লাহ তাআলার কাছে সঠিক পথের দিশা প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া, তার কাছে খাদ্য-খাবার চাওয়া, পোশাক চাওয়া ইত্যাদি সব কিছুই মুজাহাদা বলে গণ্য। অধ্যায় শিরোনামের সাথে হাদীসটির সম্পর্ক এখানেই।

বি: দ্র: হাদীসগুলো ইমাম নববী রহ. এর রিয়াদুস সালেহীন গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন