HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
শিয়া ও মসজিদে আকসা
লেখকঃ তারেক আহমদ হিজাযী
সকল প্রশংসা দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য। সালাত ও সালাম সর্বোত্তম রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মদ এবং তার পরিবার ও সকল সাহাবিদের ওপর। অতঃপর,
ইসলাম ও মুসলিমের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসার মর্যাদার বিষয়ে আমার লেখার উদ্যোগকে অনেকে অযথা শ্রম ব্যয় ও অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন। কারণ সবার নিকট মসজিদে আকসার সম্মান স্বীকৃত ও প্রমাণিত, এ নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমের মাঝে কোন বিরোধ নেই, বরং এতো স্পষ্ট যে, বেশী বুঝিয়ে বলারও প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা‘আলার স্পষ্ট বাণী, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ হাদিস ও উম্মতের ইজমা সবখানে রয়েছে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বক্ষ্যমাণ নিবন্ধ পাঠ করে, পাঠকবর্গ যখন প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হবেন, অবশ্যই এ বিষয়ে আমার লেখার উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাবেন। নিশ্চিত তিনি একটি সম্প্রদায়ের প্রতারণা সম্পর্কে অবহিত হবেন, যাদের মুখে মসজিদে আকসা ও মেরাজের পবিত্র ভূমি রক্ষার শ্লোগান, যারা ফিলিস্তিনি দুর্বল জনগণ ও তাদের পবিত্র নিদর্শনসমূহ রক্ষার দাবিদার!
তাই জরুরী হয়েছে মসজিদে আকসার মর্যাদা রক্ষা করা, এবং শিয়াদের প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে মসজিদে আকসার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে তাদের ভণ্ডামীর মুখোশ উন্মোচন করা। তাদের কিতাবে তারা লিখেছে মসজিদে আকসার বর্তমান অবস্থানের কোন মূল্য নেই, বরং প্রকৃত মসজিদে আকসার অবস্থান আসমানে! ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসাকে মসজিদে কুদস বলে সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে!!
আমরা এসব বাতিল ধারণার অসারতা প্রমাণ করে শিয়াদের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, যেন আমাদের কথা ও লেখার দ্বারা সত্য প্রকাশ পায়, মিথ্যার আবরণ দূরীভূত হয়। সবাই জেনে নেয় শিয়াদের ষড়যন্ত্র ও ধোঁকার দীর্ঘ ফাঁদ, যা দিয়ে তাদের লেখা পরিপূর্ণ!
আমাদের গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি যে, যারা মসজিদে আকসার মর্যাদার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে,- বিশেষ করে ইহুদি ও পাশ্চাত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত কতক লেখক- তারা শিয়াদের প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহের বানোয়াট ও উদ্ভট তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। তাদের উদ্দেশ্য এসব ভ্রান্ত তথ্য দ্বারা আমাদের দৃঢ়তা ও অকাট্য বিশ্বাসকে নড়বড়ে করা ও আমাদের অন্তর থেকে মসজিদে আকসার মর্যাদা মুছে ফেলা।
এখানে আমি বলতে চাই, আমার এ লেখার উদ্দেশ্য উম্মতের একতা, ইসলামের পবিত্র নিদর্শনসমূহের ওপর মুসলিমের ঐক্য ও মুসলিমে মুসলিমে ইত্তেহাদ প্রতিষ্ঠা করা। এবং মুসলিম উম্মার অন্তরে সেসব মনীষীদের মহব্বত দৃঢ় করা, যাদের হাতে আল্লাহ এসব পবিত্র ভূমির বিজয় দান করেছেন। শিয়াদের গ্রন্থে বর্ণিত মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যখন বক্র পথের অনুসারী ইহুদি ও প্রাচ্যবিদ পাশ্চাত্যের প্রফেসরগণ বায়তুল মাকদিসকে অসম্মান করার অসৎ উদ্দেশ্যে মেতেছিল, তখন এ মনীষীগণ তাদের যাত্রা রোধ করেছিলেন। তাই মসজিদে আকসা সম্পর্কে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এসব বর্ণনার অসারতা প্রকাশ করে দলিল ও প্রমাণ দ্বারা মসজিদে আকসার মর্যাদা প্রমাণ করা অপরিহার্য হয়। সকল প্রশংসা দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
তারেক আহমদ হিজাযী।
ইসলাম ও মুসলিমের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসার মর্যাদার বিষয়ে আমার লেখার উদ্যোগকে অনেকে অযথা শ্রম ব্যয় ও অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন। কারণ সবার নিকট মসজিদে আকসার সম্মান স্বীকৃত ও প্রমাণিত, এ নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমের মাঝে কোন বিরোধ নেই, বরং এতো স্পষ্ট যে, বেশী বুঝিয়ে বলারও প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা‘আলার স্পষ্ট বাণী, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ হাদিস ও উম্মতের ইজমা সবখানে রয়েছে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বক্ষ্যমাণ নিবন্ধ পাঠ করে, পাঠকবর্গ যখন প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হবেন, অবশ্যই এ বিষয়ে আমার লেখার উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাবেন। নিশ্চিত তিনি একটি সম্প্রদায়ের প্রতারণা সম্পর্কে অবহিত হবেন, যাদের মুখে মসজিদে আকসা ও মেরাজের পবিত্র ভূমি রক্ষার শ্লোগান, যারা ফিলিস্তিনি দুর্বল জনগণ ও তাদের পবিত্র নিদর্শনসমূহ রক্ষার দাবিদার!
তাই জরুরী হয়েছে মসজিদে আকসার মর্যাদা রক্ষা করা, এবং শিয়াদের প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে মসজিদে আকসার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে তাদের ভণ্ডামীর মুখোশ উন্মোচন করা। তাদের কিতাবে তারা লিখেছে মসজিদে আকসার বর্তমান অবস্থানের কোন মূল্য নেই, বরং প্রকৃত মসজিদে আকসার অবস্থান আসমানে! ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসাকে মসজিদে কুদস বলে সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে!!
আমরা এসব বাতিল ধারণার অসারতা প্রমাণ করে শিয়াদের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, যেন আমাদের কথা ও লেখার দ্বারা সত্য প্রকাশ পায়, মিথ্যার আবরণ দূরীভূত হয়। সবাই জেনে নেয় শিয়াদের ষড়যন্ত্র ও ধোঁকার দীর্ঘ ফাঁদ, যা দিয়ে তাদের লেখা পরিপূর্ণ!
আমাদের গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি যে, যারা মসজিদে আকসার মর্যাদার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে,- বিশেষ করে ইহুদি ও পাশ্চাত্যের শিক্ষায় শিক্ষিত কতক লেখক- তারা শিয়াদের প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহের বানোয়াট ও উদ্ভট তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। তাদের উদ্দেশ্য এসব ভ্রান্ত তথ্য দ্বারা আমাদের দৃঢ়তা ও অকাট্য বিশ্বাসকে নড়বড়ে করা ও আমাদের অন্তর থেকে মসজিদে আকসার মর্যাদা মুছে ফেলা।
এখানে আমি বলতে চাই, আমার এ লেখার উদ্দেশ্য উম্মতের একতা, ইসলামের পবিত্র নিদর্শনসমূহের ওপর মুসলিমের ঐক্য ও মুসলিমে মুসলিমে ইত্তেহাদ প্রতিষ্ঠা করা। এবং মুসলিম উম্মার অন্তরে সেসব মনীষীদের মহব্বত দৃঢ় করা, যাদের হাতে আল্লাহ এসব পবিত্র ভূমির বিজয় দান করেছেন। শিয়াদের গ্রন্থে বর্ণিত মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যখন বক্র পথের অনুসারী ইহুদি ও প্রাচ্যবিদ পাশ্চাত্যের প্রফেসরগণ বায়তুল মাকদিসকে অসম্মান করার অসৎ উদ্দেশ্যে মেতেছিল, তখন এ মনীষীগণ তাদের যাত্রা রোধ করেছিলেন। তাই মসজিদে আকসা সম্পর্কে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এসব বর্ণনার অসারতা প্রকাশ করে দলিল ও প্রমাণ দ্বারা মসজিদে আকসার মর্যাদা প্রমাণ করা অপরিহার্য হয়। সকল প্রশংসা দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
তারেক আহমদ হিজাযী।
“মসজিদে আকসা কোথায়?” শিয়াদের আল্লামা ‘জাফর মুরতাযা আল-আমেলি’ লিখিত কিতাবের একটি শিরোনাম। [জাফর মুরতাযা আল-আমেলি ১৯৪৫ইং সনে দক্ষিণ লেবাননে জাবালে আমেল অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নাজাফ ও কুম শহরে জ্ঞানার্জন করেন। তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”।] এ শিরোনামে তিনি লিখেছেন: “আমাদের সামনে মসজিদে আকসা সম্পর্কে অনেক সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে মসজিদে আকসা ফিলিস্তিনে নেই”! তিনি প্রচুর বাণী ও বর্ণনার উল্লেখ করে মিরাজের ঘটনার অপব্যাখ্যা করেন। শিয়াদের মৌলিক গ্রন্থ, ইতিহাস ও তাফসিরের বরাত দিয়ে তিনি স্পষ্ট ঘোষণা করেন: মসজিদে আকসা আসমানে!
তিনি আরো স্পষ্ট করেন, মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ! মসজিদে কুদস মসজিদে আকসা নয়, যেমন সাধারণ মানুষের ধারণা!
আমেলি “আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম” [এ কিতাব লিখে তিনি “লেখকদের জন্য বরাদ্দ ইরানী পুরষ্কার” লাভ করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদি নেজাদ নিজে তাকে সম্মানিত করেন! অথচ মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা, মসজিদে আকসা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও আসমানে মসজিদে আকসা বলার কারণে বইটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হওয়ার উপযুক্ত ছিল!] গ্রন্থে বলেন: “ওমর যখন বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করেন, তখন সেখানে কোন মসজিদ ছিল না, আকসা নাম তো ছিলই না”। মসজিদে আকসা- যেখানে ইসরার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল- এবং যার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন, প্রকৃত পক্ষে তার ওজুদ আসমানে”! [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১০৬)]
“আমেলি” আরো যোগ করেন: “মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানে ইসরা হয়েছে, তার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন”। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১২৮, ১২৯)]
সূরা ইসরায় বর্ণিত জমিনে [ফিলিস্তিনে] ইহুদিদের দু’বার ফ্যাসাদ সৃষ্টির ঘটনা ও মসজিদে কুদসই মসজিদে আকসার দলিল উল্লেখ করে বলেন: “এসব ধারণা প্রসূত”। এরপর বলেন: এসব তাদের প্রচারণা যারা মনে করে মসজিদ অর্থ বায়তুল মাকদিসে মজুদ মসজিদে আকসাই। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১৩৯)]
তিনি যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন মসজিদে আকসা আসমানে বিদ্যমান, তার একটি মাজলিসি লিখিত “বিহারুল আনওয়ার” [বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি: (২২/৯০)] গ্রন্থের বর্ণনা: “আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ সংগঠিত হয়ে ছিল। আমি বললাম: মানুষেরা মনে করে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: কুফার মসজিদ তার চেয়ে উত্তম”!
এখানে আমাদের জিজ্ঞাসা: মসজিদে আকসা সম্পর্কে আমেলির বক্তব্য শিয়াদের দৃষ্টিতে উদ্ভট ও বিদআত, না এটাই তাদের দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত আকিদা?! এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে আমরা তাদের তাফসির গ্রন্থগুলো দেখব, মসজিদে আকসা কোথায়?!
তিনি আরো স্পষ্ট করেন, মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ! মসজিদে কুদস মসজিদে আকসা নয়, যেমন সাধারণ মানুষের ধারণা!
আমেলি “আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম” [এ কিতাব লিখে তিনি “লেখকদের জন্য বরাদ্দ ইরানী পুরষ্কার” লাভ করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদি নেজাদ নিজে তাকে সম্মানিত করেন! অথচ মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা, মসজিদে আকসা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও আসমানে মসজিদে আকসা বলার কারণে বইটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হওয়ার উপযুক্ত ছিল!] গ্রন্থে বলেন: “ওমর যখন বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করেন, তখন সেখানে কোন মসজিদ ছিল না, আকসা নাম তো ছিলই না”। মসজিদে আকসা- যেখানে ইসরার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল- এবং যার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন, প্রকৃত পক্ষে তার ওজুদ আসমানে”! [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১০৬)]
“আমেলি” আরো যোগ করেন: “মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানে ইসরা হয়েছে, তার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন”। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১২৮, ১২৯)]
সূরা ইসরায় বর্ণিত জমিনে [ফিলিস্তিনে] ইহুদিদের দু’বার ফ্যাসাদ সৃষ্টির ঘটনা ও মসজিদে কুদসই মসজিদে আকসার দলিল উল্লেখ করে বলেন: “এসব ধারণা প্রসূত”। এরপর বলেন: এসব তাদের প্রচারণা যারা মনে করে মসজিদ অর্থ বায়তুল মাকদিসে মজুদ মসজিদে আকসাই। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতিন নাবীয়্যীল আ’যম”: (৩/১৩৯)]
তিনি যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন মসজিদে আকসা আসমানে বিদ্যমান, তার একটি মাজলিসি লিখিত “বিহারুল আনওয়ার” [বিহারুল আনওয়ার লিল মাজলিসি: (২২/৯০)] গ্রন্থের বর্ণনা: “আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ সংগঠিত হয়ে ছিল। আমি বললাম: মানুষেরা মনে করে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: কুফার মসজিদ তার চেয়ে উত্তম”!
এখানে আমাদের জিজ্ঞাসা: মসজিদে আকসা সম্পর্কে আমেলির বক্তব্য শিয়াদের দৃষ্টিতে উদ্ভট ও বিদআত, না এটাই তাদের দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত আকিদা?! এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে আমরা তাদের তাফসির গ্রন্থগুলো দেখব, মসজিদে আকসা কোথায়?!
১. তাফসিরুস সাফি:
শিয়াদের মুফাসসির “আল-ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”তে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: “অর্থাৎ [তার ইসরা হয়েছিল] আসমানে বিদ্যমান মসজিদে আকসা পর্যন্ত, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়”। [“ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”: (৩/১৬৬)]
এ সিদ্ধান্তের পশ্চাতে উল্লেখ করেছেন: “কুম্মি বর্ণনা করেন একদা বাকের আলাইহিস সালাম মসজিদে হারামে বসে ছিলেন। একবার আসমানের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন, আরেকবার কাবার দিকে। অতঃপর বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত তিনি তিনবার পাঠ করলেন, অতঃপর ইসমাইল জুফি-র দিকে তাকিয়ে বলেন: হে ইরাকি, ইরাকিরা এ আয়াত সম্পর্কে কি বলে? তিনি বলেন: তারা বলে: তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত। তিনি বললেন: তারা যেরূপ বলে সেরূপ নয়। তবে তাকে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি হাত দ্বারা আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং বললেন: উভয়ের মধ্যবর্তী স্থান হারাম”। [“ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”: (৩/১৬৬)]
২. তাফসিরে নুরুস সাকলাইন:
শিয়া আলেম “হুওয়াইযি” [সম্পূর্ণ নাম: আব্দুল আলি ইব্ন জাম‘আ আল-আরুসি আল-হুওয়াইযি, মৃত: (১১১২)হি.] রচিত “নুরুস সাকলাইন” তাফসির গ্রন্থে সূরা ইসরার প্রথম আয়াতের তাফসিরে প্রাগুক্ত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে সমর্থন স্বরূপ বলেন: সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম সূত্রে বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বললেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা মনে করে মসজিদে আকসা বায়তুল মাকদিস? তিনি বললেন: “কুফার মসজিদ তার থেকে উত্তম”! [তাফসিরে নুরুস সাকলাইন, আব্দুল আলি আল-হুওয়াইযি। হাশেম আল-মহল্লাতি কর্তক সংস্কৃত ও টিকা সংযোজিত: (৩/৯৭), প্রথম প্রকাশ: ১৪২৪হি. দারুদ তাফসির- কুম, ইরান।]
হুওয়াইযি নিজ তাফসির গ্রন্থে যোগ করেন: আলি ইব্ন ইবরাহিম বলেন, আমাকে বলেছে খালেদ হাসান ইব্ন মাহবুব, তিনি মুহাম্মদ ইব্ন সাইয়ার থেকে, তিনি আবু মালেক আযদি থেকে, তিনি ইসমাইল জুফি থেকে, তিনি বলেন: আমি মসজিদে বসে ছিলাম, আবু জাফর অপর প্রান্তে ছিলেন। তিনি একবার আসমানের দিকে মাথা তুলছেন, আরেকবার কাবার দিকে। অতঃপর বললেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত তিনি তিনবার পাঠ করলেন। অতঃপর আমার দিকে ফিরে বললেন: হে ইরাকি, ইরাকিরা এ আয়াত সম্পর্কে কি বলে? আমি বললাম: তারা বলে তাকে মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন: তারা যেরূপ বলে সেরূপ নয়, কিন্তু তাকে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করেন, এবং বলেন: উভয়ের মধ্যবর্তী হারাম”। [তাফসিরে নুরুস সাকলাইন: (৩/৯৮)]
৩. তাফসিরুল আইয়াশি:
শিয়া মুফাসসির ‘আইয়াশি’ নিজ তাফসির গ্রন্থে সূরা ইসরার শুরুতে কতক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যার থেকে প্রতিয়মান হয় মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। তিনি বলেন: সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা সেখানেই হয়েছে। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [তাফসিরুল আইয়াশি, লি মুহাম্মদ ইব্ন আইয়াশ আস-সালামি, আস-সামারকান্দি। তাহকিক করেছেন হাশেম আল-মুহাল্লাতি: (২/৩০২), প্রথম প্রকাশ ১৪১১হি.]
৪. আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন:
বাহরানি “আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন” গ্রন্থে এবং অপর শিয়া মুফাসসির তাবাতাবায়ি “তাফসিরুল মিযান” গ্রন্থে শিয়াদের অধিকাংশ তাফসির গ্রন্থে বর্ণিত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রতিয়মান হয় মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন, লি হাশেম আল-বাহরানি: (৪/৫২২), প্রথম প্রকাশ: ১৪১৯হি. ১৯৯৯ইং]
৫. বায়ানুস সাআদাহ:
সুলতানুল জানাবাযি “বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ” গ্রন্থে সূরা ইসরার প্রথম আয়াতের তাফসির সংক্রান্ত বাণীগুলো জমা করে বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
মসজিদে আকসা বায়তুল মাকদিসে মজুদ, অথবা চতুর্থ আসমানে মজুদ, যার নাম বায়তুল মামুর। মসজিদে আকসা তার পার্থিব অবস্থান, বায়তুল মামুর তার ঊর্ধ্বলোকের অবস্থান। যেমন মসজিদে হারাম তার বাহ্যিক রূপ, বায়তুল মামুর তার ঊর্ধ্বলোক”। [“বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ”: (২/৪৩১), লি সুলতান মুহাম্মদ আল-জানাবাযি, উপাধি সুলতান আলি শাহ। দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৪০৮হি. ১৯৮৮ইং.]
ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ [যার চারপাশে আমি বরকত দান করেছি] এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: বায়তুল মাকদিসের দু’পাশে রয়েছে শাম ও মিসর। উভয় দেশই বিভিন্ন নিআমতের কারণে অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও বরকতময়। অনুরূপ চতুর্থ আসমানে বিদ্যমান বায়তুল মামুরের চারপাশও বরকতে পরিপূর্ণ”। [“বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ”: (২/৪৩১)]
এসব বর্ণনা থেকে আমরা জানলাম শিয়াদের অধিকাংশ তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে মসজিদে আকসা, যেখানে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল আসমানে অবস্থিত বায়তুল মামুরে একটি মসজিদ। যার নাম মসজিদে আকসা, মসজিদে কুদসের নামের ন্যায়!
পাঠকদের নিয়ে এখন শিয়াদের অন্যান্য প্রামাণ্য গ্রন্থের দিকে মনোযোগ দিব, তাহলে আমাদের নিকট তাদের বিশ্বাসে মসজিদে আকসার প্রকৃত স্বরূপ আরো স্পষ্ট হবে।
শিয়াদের মুফাসসির “আল-ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”তে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: “অর্থাৎ [তার ইসরা হয়েছিল] আসমানে বিদ্যমান মসজিদে আকসা পর্যন্ত, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়”। [“ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”: (৩/১৬৬)]
এ সিদ্ধান্তের পশ্চাতে উল্লেখ করেছেন: “কুম্মি বর্ণনা করেন একদা বাকের আলাইহিস সালাম মসজিদে হারামে বসে ছিলেন। একবার আসমানের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন, আরেকবার কাবার দিকে। অতঃপর বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত তিনি তিনবার পাঠ করলেন, অতঃপর ইসমাইল জুফি-র দিকে তাকিয়ে বলেন: হে ইরাকি, ইরাকিরা এ আয়াত সম্পর্কে কি বলে? তিনি বলেন: তারা বলে: তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত। তিনি বললেন: তারা যেরূপ বলে সেরূপ নয়। তবে তাকে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি হাত দ্বারা আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং বললেন: উভয়ের মধ্যবর্তী স্থান হারাম”। [“ফায়েদ আল-কাশানি” লিখিত “তাফসিরে সাফি”: (৩/১৬৬)]
২. তাফসিরে নুরুস সাকলাইন:
শিয়া আলেম “হুওয়াইযি” [সম্পূর্ণ নাম: আব্দুল আলি ইব্ন জাম‘আ আল-আরুসি আল-হুওয়াইযি, মৃত: (১১১২)হি.] রচিত “নুরুস সাকলাইন” তাফসির গ্রন্থে সূরা ইসরার প্রথম আয়াতের তাফসিরে প্রাগুক্ত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে সমর্থন স্বরূপ বলেন: সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম সূত্রে বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বললেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা মনে করে মসজিদে আকসা বায়তুল মাকদিস? তিনি বললেন: “কুফার মসজিদ তার থেকে উত্তম”! [তাফসিরে নুরুস সাকলাইন, আব্দুল আলি আল-হুওয়াইযি। হাশেম আল-মহল্লাতি কর্তক সংস্কৃত ও টিকা সংযোজিত: (৩/৯৭), প্রথম প্রকাশ: ১৪২৪হি. দারুদ তাফসির- কুম, ইরান।]
হুওয়াইযি নিজ তাফসির গ্রন্থে যোগ করেন: আলি ইব্ন ইবরাহিম বলেন, আমাকে বলেছে খালেদ হাসান ইব্ন মাহবুব, তিনি মুহাম্মদ ইব্ন সাইয়ার থেকে, তিনি আবু মালেক আযদি থেকে, তিনি ইসমাইল জুফি থেকে, তিনি বলেন: আমি মসজিদে বসে ছিলাম, আবু জাফর অপর প্রান্তে ছিলেন। তিনি একবার আসমানের দিকে মাথা তুলছেন, আরেকবার কাবার দিকে। অতঃপর বললেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত তিনি তিনবার পাঠ করলেন। অতঃপর আমার দিকে ফিরে বললেন: হে ইরাকি, ইরাকিরা এ আয়াত সম্পর্কে কি বলে? আমি বললাম: তারা বলে তাকে মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন: তারা যেরূপ বলে সেরূপ নয়, কিন্তু তাকে এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করেন, এবং বলেন: উভয়ের মধ্যবর্তী হারাম”। [তাফসিরে নুরুস সাকলাইন: (৩/৯৮)]
৩. তাফসিরুল আইয়াশি:
শিয়া মুফাসসির ‘আইয়াশি’ নিজ তাফসির গ্রন্থে সূরা ইসরার শুরুতে কতক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যার থেকে প্রতিয়মান হয় মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। তিনি বলেন: সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা সেখানেই হয়েছে। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [তাফসিরুল আইয়াশি, লি মুহাম্মদ ইব্ন আইয়াশ আস-সালামি, আস-সামারকান্দি। তাহকিক করেছেন হাশেম আল-মুহাল্লাতি: (২/৩০২), প্রথম প্রকাশ ১৪১১হি.]
৪. আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন:
বাহরানি “আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন” গ্রন্থে এবং অপর শিয়া মুফাসসির তাবাতাবায়ি “তাফসিরুল মিযান” গ্রন্থে শিয়াদের অধিকাংশ তাফসির গ্রন্থে বর্ণিত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রতিয়মান হয় মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। সালেম আল-হান্নাত থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [আল-বুরহান ফি তাফসিরিল কুরআন, লি হাশেম আল-বাহরানি: (৪/৫২২), প্রথম প্রকাশ: ১৪১৯হি. ১৯৯৯ইং]
৫. বায়ানুস সাআদাহ:
সুলতানুল জানাবাযি “বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ” গ্রন্থে সূরা ইসরার প্রথম আয়াতের তাফসির সংক্রান্ত বাণীগুলো জমা করে বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
মসজিদে আকসা বায়তুল মাকদিসে মজুদ, অথবা চতুর্থ আসমানে মজুদ, যার নাম বায়তুল মামুর। মসজিদে আকসা তার পার্থিব অবস্থান, বায়তুল মামুর তার ঊর্ধ্বলোকের অবস্থান। যেমন মসজিদে হারাম তার বাহ্যিক রূপ, বায়তুল মামুর তার ঊর্ধ্বলোক”। [“বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ”: (২/৪৩১), লি সুলতান মুহাম্মদ আল-জানাবাযি, উপাধি সুলতান আলি শাহ। দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৪০৮হি. ১৯৮৮ইং.]
ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ [যার চারপাশে আমি বরকত দান করেছি] এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: বায়তুল মাকদিসের দু’পাশে রয়েছে শাম ও মিসর। উভয় দেশই বিভিন্ন নিআমতের কারণে অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও বরকতময়। অনুরূপ চতুর্থ আসমানে বিদ্যমান বায়তুল মামুরের চারপাশও বরকতে পরিপূর্ণ”। [“বায়ানুস সা‘আদাহ ফি মাকামাতিল ইবাদাহ”: (২/৪৩১)]
এসব বর্ণনা থেকে আমরা জানলাম শিয়াদের অধিকাংশ তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে মসজিদে আকসা, যেখানে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল আসমানে অবস্থিত বায়তুল মামুরে একটি মসজিদ। যার নাম মসজিদে আকসা, মসজিদে কুদসের নামের ন্যায়!
পাঠকদের নিয়ে এখন শিয়াদের অন্যান্য প্রামাণ্য গ্রন্থের দিকে মনোযোগ দিব, তাহলে আমাদের নিকট তাদের বিশ্বাসে মসজিদে আকসার প্রকৃত স্বরূপ আরো স্পষ্ট হবে।
শিয়াদের তাফসির গ্রন্থে মসজিদে আকসা সম্পর্কে যেরূপ বলা হয়েছে, তাদের প্রামাণ্য অন্যান্য গ্রন্থসমূহে মূলত তারই দ্বিরুক্ত হয়েছে, যেমন:
১. বিহারুল আনওয়ার:
মাজলিসি বর্ণনা করেন: আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [বিহারুল আনওয়ার: (৯৭/৪০৫), লি মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি, তৃতীয় প্রকাশ ১৪০৩হি. ১৯৮৩ইং. দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি।]
২. মুনতাহাল আমাল:
আব্বাস আল-কুম্মি “মুনতাহাল আমাল” গ্রন্থে বলেন: “প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী বায়তুল মাকদিস-ই মসজিদে আকসা, কিন্তু অধিকাংশ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আকসার অর্থ বায়তুল মামুর, যা চতুর্থ আসমানে বিদ্যমান। বায়তুল মামুরই সবচেয়ে দূরের মসজিদ”। [মুনতাহাল আমাল লি আব্বাস আল-কুম্মি: (পৃ.৭০)] [আকসা অর্থ দূরবর্তী]
৩. কামেলুয যিয়ারাত:
ইব্ন কুলুব “কামেলুয যিয়ারাত” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আবু আব্দুল্লাহ সাদেক আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালামের নিকট আগমন করে, তিনি তখন কুফার মসজিদে। সে বলল: “আস্সালামু আলাইকুম হে আমিরুল মুমেনিন, তিনি তার উত্তর দিলেন। অতঃপর বলল: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ, আমি মসজিদে আকসার ইচ্ছা করেছি, তাই প্রথমে আপনাকে সালাম করে যাত্রা আরম্ভ করব। তিনি বললেন: তোমার উদ্দেশ্য কি? সে বলল: ফজিলত অর্জন করা, আমি আপনার ওপর উৎসর্গ। তিনি বললেন: তোমার উট ও সকল আসবাব-পত্র বিক্রি করে দাও। তুমি এ মসজিদে সালাত আদায় কর, এ মসজিদে ফরয সালাত একটি মবরুর হজের সমান, এ মসজিদে নফল সালাত একটি মবরুর ওমরার সমান। এখান থেকে বারো মাইল পর্যন্ত বরকতে পরিপূর্ণ। এ মসজিদের ডান পাশে বরকত ও বাম পাশে ষড়যন্ত্র। এর মধ্যবর্তী রয়েছে তেলের নহর, দুধের নহর ও পানির নহর যা মুমিনদের জন্য সুপেয়। অপর একটি পানির নহর মুমিনদের পবিত্রকারী। এখান থেকে নূহের নৌকা যাত্রা আরম্ভ করেছিল। এখানেই ছিল নাসর, ইয়াগুস ও ইয়াউক। এখানে সত্তুর জন নবী ও সত্তুর জন অসি সালাত আদায় করেছেন, আমি তাদের একজন। তিনি হাত দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। এখানে যদি কোন মুসিবতগ্রস্ত তার প্রয়োজন সম্পর্কে আল্লাহর নিকট দরখাস্ত পেশ করে, আল্লাহ অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দিবেন ও তার মুসিবত দূর করবেন”। [কামেলুয যিয়ারাত: (পৃ.৮০), বিহারুল আনওয়ার: (৯৭/৪০৪), আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫২৯), ফুরুল উল কাফি, লি আবু জাফর আল-কুলাইনি: (৩/৪৯১)]
৪. “আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম”:
“আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম” গ্রন্থে জাফর আল-আমেলি প্রমাণ করেছেন: মসজিদে আকসা মূলত আসমানের একটি মসজিদ। তিনি এর স্বপক্ষে কতক হাদিস পেশ করেছেন, যার সনদ ও মাত্ন (ভাষা) কোনটিই বিশুদ্ধ নয়, তবুও তিনি সেসব কথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমাকে যখন আসমানে নিয়ে যাওয়া হল, দেখলাম আরশে লিখা: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, আমি এ কালিমাকে আলি আলাইহিস সালাম দ্বারা শক্তিশালী করেছি”। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম”: (৩/১০১)]
তিনি নিজ গ্রন্থে “মসজিদে আকসা কোথায়” শিরোনামে বিকৃতির অপপ্রয়াস চালান এভাবে: “অভিধানে الأقصى অর্থ দূরবর্তী, কুরআনের ভাষায় এর সুন্দর উদাহরণ:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
ইসরা অর্থ রাতের সফর, হোক জমিনে কিংবা আসমানে। আকসা অর্থ দূরত্ব ও দূরবর্তী। যদি মেনে নেয়া হয় বায়তুল মাকদিস মসজিদে আকসা, তাহলে তা হিজায থেকে দূরবর্তী সন্দেহ নেই, কিন্তু শাম থেকে নিকটবর্তী। তাই আকসা অর্থ সব মানুষ থেকে সমান দূরত্বে অর্থ নেয়া অধিক যুক্তিযুক্ত, বরং ওয়াজিব। আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি মাসজিদে আকসা চতুর্থ আসমানে অবস্থিত বায়তুল মামুরে!
৫. আল-কাফি:
আল-কাফির এক বর্ণনায় এসেছে: আমি তাকে বললাম: আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনার নিকট আল্লাহর একটি ইসম রয়েছে, যার দ্বারা প্রতি রাত-দিনে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছেন ও বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি বললেন: তুমি কি বায়তুল মাকদিস জান? আমি বললাম: আমি শুধু শামে অবস্থিত বায়তুল মাকদিস-ই জানি। তিনি বললেন: সেটা বায়তুল মাকদিস নয়, প্রকৃত বায়তুল মাকদিস মুহাম্মদ ও তার পরিবারের ঘর। আমি তাকে বললাম: আপনি কি আজকের পূর্বে কখনো এ কথা শুনেননি? তিনি বললেন: এ হচ্ছে নবীদের মেহরাব। পূর্বে এ স্থানের নাম ছিল হাযিরাতুল মাহারিব, কিন্তু যখন মুহাম্মদ ও ঈসা আলাইহিমুস সালামের মধ্যবর্তী যুগে আহলে শিরকের ফিতনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ও দুষ্কৃতকারী শয়তানদের যুগে বিভিন্ন ধ্বংস সংগঠিত হয়, তখন তাদের দ্বারা এসব নামে পরিবর্তন, বিকৃতি ও সংস্কার ঘটে। এ কথাই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: [আল-কাফি লিল কুলাইনি: (১/৪৮১)]
﴿ إِنۡ هِيَ إِلَّآ أَسۡمَآءٞ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ ٢٣ ﴾ [ النجم : ٢٣ ]
“এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীলÑপ্রমাণ নাযিল করেননি”। [সূরা আন-নাজম: (২৩)]
৬. ইলালুশ শারায়ে:
ইলালুশ শারায়ে গ্রন্থের লেখক নিজ সনদে বর্ণনা করেন, আলি ইব্ন সালেম তার পিতা থেকে, তিনি সাবেত ইব্ন দিনার থেকে। তিনি বলেছেন: “আমি জয়নুল আবেদিন আলি ইব্ন হুসাইন ইব্ন আলি ইব্ন আবি তালেব আলাইহিমুস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি কি কোন স্থানের সাথে নির্দিষ্ট? তিনি বললেন: আল্লাহ স্থান থেকে পবিত্র। আমি বললাম: তাহলে কেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হল? তিনি বললেন: আসমানের রাজত্ব, তাতে বিদ্যমান আশ্চর্য সৃষ্টি ও অদ্ভুত জগত দেখানোর জন্য তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে...”। [ইলালুশ শারায়ে, মুহাম্মদ বাবুইয়াহ আল-কুম্মি: (১/১৬০), প্রথম প্রকাশ ১৪০৮হি. ১৯৮৮ইং।]
৭. আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত:
তাকিউদ্দিন আল-কাফ‘আমি লিখিত “আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত” গ্রন্থে মিরাজের রাতের দোয়ার টিকায় রয়েছে: “এ দোয়ার মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশী, আমিরুল মুমেনিন আলি আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যার সারাংশ: যখন আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হল, আমি এক এক পর্দা অতিক্রম করতে লাগলাম, এভাবে আমি সত্তুর হাজার পর্দা অতিক্রম করি। প্রতি দু’পর্দার মধ্যবর্তী দূরত্ব পূর্ব-পশ্চিমের ন্যায় সত্তুর হাজার গুণ বড়...। [“আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত, ওয়াল আহরায, ওয়াল আউযাত”। লি তাকিউদ্দিন ইবরাহিম ইব্ন আলি আল-আমেলি আল-কাফ‘আমি, মৃত: (৯০০হি.), সংস্কারক ও প্রকাশক হুসাইন আমালি: (পৃ.৩৬৩), দ্বিতীয় প্রকাশ ১৪২৪হি. ২০০৩ইং।]
৮. তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ:
মুহাম্মদ ইব্ন হাসান আল-হুর আমেলি (মৃত: ১১০৪হি.) “তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ” গ্রন্থে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন, যার শিরোনাম: “মক্কা, মদিনা ও কুফার সম্মান করা ওয়াজিব, সেখানে অবস্থান করা, তার জন্য সদকা করা, সেখানে অধিক সালাত আদায় করা ও তার উদ্দেশ্যে সফর করা মুস্তাহাব”। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”। লেখক মুহাম্মদ ইব্ন হাসান আল-হুর আমেলি: (১৪/৩৬০), প্রথম প্রকাশ: ১৪১৩হি. ১৯৯৩ইং, তাহকিক মুয়াসসাসাতু আহলুল বায়েত আলাইহিমুস সালাম লি ইহয়াইত তুরাস, বইরুত, লেবানন।]
এ কিতাবে আরো বর্ণনা রয়েছে, যার সারাংশ: “মক্কা আল্লাহর হারাম, মদিনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হারাম এবং কুফা আমিরুল মুমেনিন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হারাম। ক্ষমতাধর যে কেউ এখানে অনিষ্টের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবেন”!
মুহাম্মদ ইব্ন আলি ইব্ন হুসাইন “মা‘আনিল আখবার” গ্রন্থে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, সে মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া থেকে, সে আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন খালেদ থেকে, সে আবু আব্দুল্লাহ রাযি থেকে, সে হাসান আলি ইব্ন আবু উসমান থেকে, সে মুসা ইব্ন বকর থেকে, সে আবুল হাসান মুসা ইব্ন জাফর থেকে, সে তার পূর্বপুরুষ থেকে বর্ণনা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ চারটি শহর গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ ١ وَطُورِ سِينِينَ ٢ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣﴾ [ التين : 1-3]
“কসম ‘তীন ও যায়তূন এর। কসম ‘সিনাই পর্বতের, কসম এই নিরাপদ নগরীর”। [সূরা তীন: (১-৩)]
তীন অর্থ মদিনা, জয়তুন অর্থ বায়তুল মাকদিস, তুরে সিনিন অর্থ কুফা এবং এ নিরাপদ শহর অর্থ মক্কা। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”: (১৪/৩৬১)]
আবু জাফর আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালাম বলেছেন:
﴿ وَءَاوَيۡنَٰهُمَآ إِلَىٰ رَبۡوَةٖ ذَاتِ قَرَارٖ وَمَعِينٖ ٥٠ ﴾ [ المؤمنون : ٥٠ ]
“এবং আমি তাদেরকে আবাসযোগ্য ও ঝর্নাবিশিষ্ট এক উঁচু ভূমিতে আশ্রয় দিলাম”। [সূরা মুমিনুন: (৫০)]
রাবওয়াহ অর্থ কুফা, কারার অর্থ মসজিদ, মুঈন অর্থ ফুরাত। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”: (১৪/৩৬২)]
১. বিহারুল আনওয়ার:
মাজলিসি বর্ণনা করেন: আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি তাকে ফজিলতপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন: মসজিদে হারাম ও মসজিদুর রাসূল। আমি বললাম: আপনার ওপর আমি উৎসর্গ মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে আকসা আসমানে, সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। আমি বললাম: মানুষেরা বলে বায়তুল মাকদিসই মসজিদে আকসা? তিনি বললেন: মসজিদে কুফা তার থেকে উত্তম? [বিহারুল আনওয়ার: (৯৭/৪০৫), লি মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসি, তৃতীয় প্রকাশ ১৪০৩হি. ১৯৮৩ইং. দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি।]
২. মুনতাহাল আমাল:
আব্বাস আল-কুম্মি “মুনতাহাল আমাল” গ্রন্থে বলেন: “প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী বায়তুল মাকদিস-ই মসজিদে আকসা, কিন্তু অধিকাংশ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আকসার অর্থ বায়তুল মামুর, যা চতুর্থ আসমানে বিদ্যমান। বায়তুল মামুরই সবচেয়ে দূরের মসজিদ”। [মুনতাহাল আমাল লি আব্বাস আল-কুম্মি: (পৃ.৭০)] [আকসা অর্থ দূরবর্তী]
৩. কামেলুয যিয়ারাত:
ইব্ন কুলুব “কামেলুয যিয়ারাত” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আবু আব্দুল্লাহ সাদেক আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালামের নিকট আগমন করে, তিনি তখন কুফার মসজিদে। সে বলল: “আস্সালামু আলাইকুম হে আমিরুল মুমেনিন, তিনি তার উত্তর দিলেন। অতঃপর বলল: আমি আপনার ওপর উৎসর্গ, আমি মসজিদে আকসার ইচ্ছা করেছি, তাই প্রথমে আপনাকে সালাম করে যাত্রা আরম্ভ করব। তিনি বললেন: তোমার উদ্দেশ্য কি? সে বলল: ফজিলত অর্জন করা, আমি আপনার ওপর উৎসর্গ। তিনি বললেন: তোমার উট ও সকল আসবাব-পত্র বিক্রি করে দাও। তুমি এ মসজিদে সালাত আদায় কর, এ মসজিদে ফরয সালাত একটি মবরুর হজের সমান, এ মসজিদে নফল সালাত একটি মবরুর ওমরার সমান। এখান থেকে বারো মাইল পর্যন্ত বরকতে পরিপূর্ণ। এ মসজিদের ডান পাশে বরকত ও বাম পাশে ষড়যন্ত্র। এর মধ্যবর্তী রয়েছে তেলের নহর, দুধের নহর ও পানির নহর যা মুমিনদের জন্য সুপেয়। অপর একটি পানির নহর মুমিনদের পবিত্রকারী। এখান থেকে নূহের নৌকা যাত্রা আরম্ভ করেছিল। এখানেই ছিল নাসর, ইয়াগুস ও ইয়াউক। এখানে সত্তুর জন নবী ও সত্তুর জন অসি সালাত আদায় করেছেন, আমি তাদের একজন। তিনি হাত দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। এখানে যদি কোন মুসিবতগ্রস্ত তার প্রয়োজন সম্পর্কে আল্লাহর নিকট দরখাস্ত পেশ করে, আল্লাহ অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দিবেন ও তার মুসিবত দূর করবেন”। [কামেলুয যিয়ারাত: (পৃ.৮০), বিহারুল আনওয়ার: (৯৭/৪০৪), আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫২৯), ফুরুল উল কাফি, লি আবু জাফর আল-কুলাইনি: (৩/৪৯১)]
৪. “আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম”:
“আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম” গ্রন্থে জাফর আল-আমেলি প্রমাণ করেছেন: মসজিদে আকসা মূলত আসমানের একটি মসজিদ। তিনি এর স্বপক্ষে কতক হাদিস পেশ করেছেন, যার সনদ ও মাত্ন (ভাষা) কোনটিই বিশুদ্ধ নয়, তবুও তিনি সেসব কথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমাকে যখন আসমানে নিয়ে যাওয়া হল, দেখলাম আরশে লিখা: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, আমি এ কালিমাকে আলি আলাইহিস সালাম দ্বারা শক্তিশালী করেছি”। [“আস-সাহিহ মিন সিরাতির রাসূলিল আ’যম”: (৩/১০১)]
তিনি নিজ গ্রন্থে “মসজিদে আকসা কোথায়” শিরোনামে বিকৃতির অপপ্রয়াস চালান এভাবে: “অভিধানে الأقصى অর্থ দূরবর্তী, কুরআনের ভাষায় এর সুন্দর উদাহরণ:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
ইসরা অর্থ রাতের সফর, হোক জমিনে কিংবা আসমানে। আকসা অর্থ দূরত্ব ও দূরবর্তী। যদি মেনে নেয়া হয় বায়তুল মাকদিস মসজিদে আকসা, তাহলে তা হিজায থেকে দূরবর্তী সন্দেহ নেই, কিন্তু শাম থেকে নিকটবর্তী। তাই আকসা অর্থ সব মানুষ থেকে সমান দূরত্বে অর্থ নেয়া অধিক যুক্তিযুক্ত, বরং ওয়াজিব। আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি মাসজিদে আকসা চতুর্থ আসমানে অবস্থিত বায়তুল মামুরে!
৫. আল-কাফি:
আল-কাফির এক বর্ণনায় এসেছে: আমি তাকে বললাম: আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনার নিকট আল্লাহর একটি ইসম রয়েছে, যার দ্বারা প্রতি রাত-দিনে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছেন ও বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি বললেন: তুমি কি বায়তুল মাকদিস জান? আমি বললাম: আমি শুধু শামে অবস্থিত বায়তুল মাকদিস-ই জানি। তিনি বললেন: সেটা বায়তুল মাকদিস নয়, প্রকৃত বায়তুল মাকদিস মুহাম্মদ ও তার পরিবারের ঘর। আমি তাকে বললাম: আপনি কি আজকের পূর্বে কখনো এ কথা শুনেননি? তিনি বললেন: এ হচ্ছে নবীদের মেহরাব। পূর্বে এ স্থানের নাম ছিল হাযিরাতুল মাহারিব, কিন্তু যখন মুহাম্মদ ও ঈসা আলাইহিমুস সালামের মধ্যবর্তী যুগে আহলে শিরকের ফিতনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ও দুষ্কৃতকারী শয়তানদের যুগে বিভিন্ন ধ্বংস সংগঠিত হয়, তখন তাদের দ্বারা এসব নামে পরিবর্তন, বিকৃতি ও সংস্কার ঘটে। এ কথাই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: [আল-কাফি লিল কুলাইনি: (১/৪৮১)]
﴿ إِنۡ هِيَ إِلَّآ أَسۡمَآءٞ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ ٢٣ ﴾ [ النجم : ٢٣ ]
“এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীলÑপ্রমাণ নাযিল করেননি”। [সূরা আন-নাজম: (২৩)]
৬. ইলালুশ শারায়ে:
ইলালুশ শারায়ে গ্রন্থের লেখক নিজ সনদে বর্ণনা করেন, আলি ইব্ন সালেম তার পিতা থেকে, তিনি সাবেত ইব্ন দিনার থেকে। তিনি বলেছেন: “আমি জয়নুল আবেদিন আলি ইব্ন হুসাইন ইব্ন আলি ইব্ন আবি তালেব আলাইহিমুস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি কি কোন স্থানের সাথে নির্দিষ্ট? তিনি বললেন: আল্লাহ স্থান থেকে পবিত্র। আমি বললাম: তাহলে কেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হল? তিনি বললেন: আসমানের রাজত্ব, তাতে বিদ্যমান আশ্চর্য সৃষ্টি ও অদ্ভুত জগত দেখানোর জন্য তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে...”। [ইলালুশ শারায়ে, মুহাম্মদ বাবুইয়াহ আল-কুম্মি: (১/১৬০), প্রথম প্রকাশ ১৪০৮হি. ১৯৮৮ইং।]
৭. আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত:
তাকিউদ্দিন আল-কাফ‘আমি লিখিত “আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত” গ্রন্থে মিরাজের রাতের দোয়ার টিকায় রয়েছে: “এ দোয়ার মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশী, আমিরুল মুমেনিন আলি আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যার সারাংশ: যখন আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হল, আমি এক এক পর্দা অতিক্রম করতে লাগলাম, এভাবে আমি সত্তুর হাজার পর্দা অতিক্রম করি। প্রতি দু’পর্দার মধ্যবর্তী দূরত্ব পূর্ব-পশ্চিমের ন্যায় সত্তুর হাজার গুণ বড়...। [“আল-মিসবাহ ফিল আদইয়াতি, ওয়াস সালাওয়াতি ওয়ায যিয়ারাত, ওয়াল আহরায, ওয়াল আউযাত”। লি তাকিউদ্দিন ইবরাহিম ইব্ন আলি আল-আমেলি আল-কাফ‘আমি, মৃত: (৯০০হি.), সংস্কারক ও প্রকাশক হুসাইন আমালি: (পৃ.৩৬৩), দ্বিতীয় প্রকাশ ১৪২৪হি. ২০০৩ইং।]
৮. তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ:
মুহাম্মদ ইব্ন হাসান আল-হুর আমেলি (মৃত: ১১০৪হি.) “তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ” গ্রন্থে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন, যার শিরোনাম: “মক্কা, মদিনা ও কুফার সম্মান করা ওয়াজিব, সেখানে অবস্থান করা, তার জন্য সদকা করা, সেখানে অধিক সালাত আদায় করা ও তার উদ্দেশ্যে সফর করা মুস্তাহাব”। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”। লেখক মুহাম্মদ ইব্ন হাসান আল-হুর আমেলি: (১৪/৩৬০), প্রথম প্রকাশ: ১৪১৩হি. ১৯৯৩ইং, তাহকিক মুয়াসসাসাতু আহলুল বায়েত আলাইহিমুস সালাম লি ইহয়াইত তুরাস, বইরুত, লেবানন।]
এ কিতাবে আরো বর্ণনা রয়েছে, যার সারাংশ: “মক্কা আল্লাহর হারাম, মদিনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হারাম এবং কুফা আমিরুল মুমেনিন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হারাম। ক্ষমতাধর যে কেউ এখানে অনিষ্টের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবেন”!
মুহাম্মদ ইব্ন আলি ইব্ন হুসাইন “মা‘আনিল আখবার” গ্রন্থে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, সে মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া থেকে, সে আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন খালেদ থেকে, সে আবু আব্দুল্লাহ রাযি থেকে, সে হাসান আলি ইব্ন আবু উসমান থেকে, সে মুসা ইব্ন বকর থেকে, সে আবুল হাসান মুসা ইব্ন জাফর থেকে, সে তার পূর্বপুরুষ থেকে বর্ণনা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ চারটি শহর গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ ١ وَطُورِ سِينِينَ ٢ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣﴾ [ التين : 1-3]
“কসম ‘তীন ও যায়তূন এর। কসম ‘সিনাই পর্বতের, কসম এই নিরাপদ নগরীর”। [সূরা তীন: (১-৩)]
তীন অর্থ মদিনা, জয়তুন অর্থ বায়তুল মাকদিস, তুরে সিনিন অর্থ কুফা এবং এ নিরাপদ শহর অর্থ মক্কা। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”: (১৪/৩৬১)]
আবু জাফর আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালাম বলেছেন:
﴿ وَءَاوَيۡنَٰهُمَآ إِلَىٰ رَبۡوَةٖ ذَاتِ قَرَارٖ وَمَعِينٖ ٥٠ ﴾ [ المؤمنون : ٥٠ ]
“এবং আমি তাদেরকে আবাসযোগ্য ও ঝর্নাবিশিষ্ট এক উঁচু ভূমিতে আশ্রয় দিলাম”। [সূরা মুমিনুন: (৫০)]
রাবওয়াহ অর্থ কুফা, কারার অর্থ মসজিদ, মুঈন অর্থ ফুরাত। [“তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ ইলা তাহসিলে মাসায়েলিশ শারিয়াহ”: (১৪/৩৬২)]
শিয়াদের নিকট মসজিদে আকসার ওপর মসজিদে কুফার ফজিলত তো আছেই। তাদের নিকট এ ছাড়া আরো বর্ণনা রয়েছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে কুফা সকল মসজিদ থেকে উত্তম বায়তুল্লাহ ব্যতীত। কুফা পবিত্র নগরী, তার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন! আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির পূর্বে ইহা ফেরেশতাদের ইবাদতগাহ ছিল। ইহাই হচ্ছে আদম ও তার পরবর্তী নবী, রাসূল, ওলী ও সিদ্দিকদের ইবাদতগাহ। এর মধ্যবর্তী রয়েছে জান্নাতের একটি বাগান, এখান থেকে কিয়ামতের দিন সকল মখলুক উত্থিত হবে। আরো আশ্চর্য হল মসজিদে কুফা ফজিলতপূর্ণ তিনটি মসজিদের একটি, যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করে যাওয়া যায়! [শিয়াদের ন্যায় –গোমরাহ, পথভ্রষ্ট ও বাতেনি ফেরকা- কাদিয়ানীরা হিন্দুস্তানে অবস্থিত কাদিয়ান শহর সম্পর্কে একই বিশ্বাস পোষণ করে। তাদের বিশ্বাস মসজিদে আকসা দ্বারা উদ্দেশ্য কাদিয়ানে অবস্থিত মির্জার মসজিদ, বায়তুল মাকদিস নয়! “ফাদলুল কাদিয়ানিয়াহ” পত্রিকায় এসেছে: “আল্লাহ তা‘আলা এ তিনটি স্থানকে পবিত্রতার মর্জাদায় ভূষিত করেছেন: মক্কা, মদিনা ও কাদিয়ান। তার জ্যোতি প্রকাশের জন্য এ তিনটি স্থানকে মনোনীত করেছেন”। সংখ্যা: (৩), সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ইং। ২৩নং সংখ্যায় এসেছে: “মসজিদে হারাম দ্বারা উদ্দেশ্য কাদিয়ান মসজিদ, যার চারপাশে আল্লাহ বরকত দান করেছেন”!]
শায়খ সাদুক বর্ণনা করেন: “তিনটি স্থান ব্যতীত (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, মসজিদে রাসূল ও মসজিদে কুফা”। [কামেলুয যিয়ারাত: (পৃ.১৩৭)]
শায়খ সাদুক “মান-লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহু” ও “আল-খেসাল” গ্রন্থে নিজ সনদে আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, মসজিদে রাসূল ও মসজিদে কুফা”। [আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫২৫)]
শিয়াদের নিকট মসজিদে কুফার [মসজিদে কুফা নির্মাণ করেন বিশিষ্ট সাহাবি সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু (১৭হি.)তে, কাদেসিয়া যুদ্ধের পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত আমলে। আশ্চর্য হল বিশিষ্ট এ সাহাবিকে শিয়া রাফেযিরা তাদের কিতাবে “উম্মতের কারুন” বলে! আবুল হাসান আমেলি রচিত “আল-বুরহান” গ্রন্থের ভূমিকায় (পৃ.২৮০) এসেছে: আবুল হাসান আমেলি বলেছেন: সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস এ উম্মতের কারুন। কারণ সে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল ও আমিরুল মুমেনিন আলি ইব্ন আবি তালেবের হাতে বায়আত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল!এখানে আমাদের কতক প্রশ্ন: আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কুফায় প্রস্থান করেন, তখন কেন তিনি এ মসজিদ ধ্বংস করেননি, অথচ তিনি সে সময় খলিফা ও হাকেম ছিলেন, যদি তার প্রতিষ্ঠাতা মুরতাদ হয়, -যেমন তাদের ধারণা-?! সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাসকে মুরতাদ ও কারুন বলা সত্যেও কেন তাদের ইমামগণ এখানে সালাত আদায় করার ওসিয়ত করেন?! এ মসজিদের কেন এতো ফজিলত, যা আমিরুল মুমেনিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশে নির্মাণ করা হয়েছে?! জাফর সাদেক কি বলেননি! তাকওয়া ব্যতীত যেসব ইবাদত সম্পন্ন করা হয়, বিক্ষিপ্ত খড়কুটার ন্যায়?!] ফজিলত ও মর্যাদা মসজিদে আকসার চেয়েও ঊর্ধ্বে। তাদের কিতাবে লিখিত হাদিসগুলো তাই প্রমাণ করে। আরো কতক বাতিল বর্ণনা দেখুন:
কুলাইনি আল-কাফি গ্রন্থে নিজ সনদে খালেদ আল-কালানিসি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিমুস সালামকে বলতে শুনেছি: “মসজিদে কুফার এক সালাত এক হাজার সালাতের সমপরিমাণ”! [আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫৪৭)]
হাসান ইব্ন মেহরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছি: আমিরুল মুমেনিন বলেছেন: “মক্কা আল্লাহর হারাম, মদিনা রাসূলের হারাম ও কুফা আমার হারাম, কোন ক্ষমতাধর যদি এতে অনিষ্টের ইচ্ছা করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিবেন”। [তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ: (১৪/৩৬০)]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: “কুফা আল্লাহর হারাম, রাসূলের হারাম ও আমিরুল মুমেনিন এর হারাম। এখানে এক সালাত হাজার সালাতের সমান এবং এক দিরহাম হাজার দিরহামের সমান”। [কামেলুয যিয়ারাত: (পৃ.৭৩-৭৪)]
অপর বর্ণনায় রয়েছে: “নিশ্চয় আল্লাহর হারাম মক্কা, রাসূলের হারাম মদিনা এবং আমিরুল মুমেনিনের হারাম কুফা। আর আমাদের হারাম কুম, [“কুম্ম” ফারসি শব্দ, কুম্ম শিয়াদের পবিত্র শহর, যা ইরানে প্রসিদ্ধ। সেখানে অধিবাসী সবাই শিয়া ইমামিয়াহ। দেখুন: মুজামুল বুলদান: (৪/৩৯৭), কুম্ম শহরকে পবিত্র জ্ঞান করার কারণ সেখানে তাদের সপ্তম ইমাম মুসা ইব্ন জাফর এর মেয়ে ফাতেমার কবর রয়েছে। দেখুন: আব্দুর রাজ্জাক আল-হুসাইনি লিখিত “মাশাহেদুল ইতরাহ”: (পৃ.১৬২)] সেখানে ফাতেমা নামে আমার সন্তানের একজন নারী দাফন করা হবে, যে তার যিয়ারত করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে”। [বিহারুল আনওয়ার: (১০২/৩৬৭)]
শায়খ সাদুক “মান-লা ইয়াহদুরুহুল ফাকিহু” ও “আল-খেসাল” গ্রন্থে নিজ সনদে আমিরুল মুমেনিন আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, মসজিদে রাসূল ও মসজিদে কুফা”। [আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫২৫)]
শিয়াদের নিকট মসজিদে কুফার [মসজিদে কুফা নির্মাণ করেন বিশিষ্ট সাহাবি সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু (১৭হি.)তে, কাদেসিয়া যুদ্ধের পর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত আমলে। আশ্চর্য হল বিশিষ্ট এ সাহাবিকে শিয়া রাফেযিরা তাদের কিতাবে “উম্মতের কারুন” বলে! আবুল হাসান আমেলি রচিত “আল-বুরহান” গ্রন্থের ভূমিকায় (পৃ.২৮০) এসেছে: আবুল হাসান আমেলি বলেছেন: সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস এ উম্মতের কারুন। কারণ সে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল ও আমিরুল মুমেনিন আলি ইব্ন আবি তালেবের হাতে বায়আত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল!এখানে আমাদের কতক প্রশ্ন: আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কুফায় প্রস্থান করেন, তখন কেন তিনি এ মসজিদ ধ্বংস করেননি, অথচ তিনি সে সময় খলিফা ও হাকেম ছিলেন, যদি তার প্রতিষ্ঠাতা মুরতাদ হয়, -যেমন তাদের ধারণা-?! সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাসকে মুরতাদ ও কারুন বলা সত্যেও কেন তাদের ইমামগণ এখানে সালাত আদায় করার ওসিয়ত করেন?! এ মসজিদের কেন এতো ফজিলত, যা আমিরুল মুমেনিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশে নির্মাণ করা হয়েছে?! জাফর সাদেক কি বলেননি! তাকওয়া ব্যতীত যেসব ইবাদত সম্পন্ন করা হয়, বিক্ষিপ্ত খড়কুটার ন্যায়?!] ফজিলত ও মর্যাদা মসজিদে আকসার চেয়েও ঊর্ধ্বে। তাদের কিতাবে লিখিত হাদিসগুলো তাই প্রমাণ করে। আরো কতক বাতিল বর্ণনা দেখুন:
কুলাইনি আল-কাফি গ্রন্থে নিজ সনদে খালেদ আল-কালানিসি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিমুস সালামকে বলতে শুনেছি: “মসজিদে কুফার এক সালাত এক হাজার সালাতের সমপরিমাণ”! [আল-ওয়াসায়েল: (৩/৫৪৭)]
হাসান ইব্ন মেহরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছি: আমিরুল মুমেনিন বলেছেন: “মক্কা আল্লাহর হারাম, মদিনা রাসূলের হারাম ও কুফা আমার হারাম, কোন ক্ষমতাধর যদি এতে অনিষ্টের ইচ্ছা করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিবেন”। [তাফসিলু ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ: (১৪/৩৬০)]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: “কুফা আল্লাহর হারাম, রাসূলের হারাম ও আমিরুল মুমেনিন এর হারাম। এখানে এক সালাত হাজার সালাতের সমান এবং এক দিরহাম হাজার দিরহামের সমান”। [কামেলুয যিয়ারাত: (পৃ.৭৩-৭৪)]
অপর বর্ণনায় রয়েছে: “নিশ্চয় আল্লাহর হারাম মক্কা, রাসূলের হারাম মদিনা এবং আমিরুল মুমেনিনের হারাম কুফা। আর আমাদের হারাম কুম, [“কুম্ম” ফারসি শব্দ, কুম্ম শিয়াদের পবিত্র শহর, যা ইরানে প্রসিদ্ধ। সেখানে অধিবাসী সবাই শিয়া ইমামিয়াহ। দেখুন: মুজামুল বুলদান: (৪/৩৯৭), কুম্ম শহরকে পবিত্র জ্ঞান করার কারণ সেখানে তাদের সপ্তম ইমাম মুসা ইব্ন জাফর এর মেয়ে ফাতেমার কবর রয়েছে। দেখুন: আব্দুর রাজ্জাক আল-হুসাইনি লিখিত “মাশাহেদুল ইতরাহ”: (পৃ.১৬২)] সেখানে ফাতেমা নামে আমার সন্তানের একজন নারী দাফন করা হবে, যে তার যিয়ারত করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে”। [বিহারুল আনওয়ার: (১০২/৩৬৭)]
শিয়ারা কিছু জায়গাকে পবিত্র জ্ঞান করে, আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নতে যার কোন ফজিলত নেই। তন্মধ্যে কারবালা অন্যতম, বিশেষ করে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর। আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যদি তুমি হজের ইচ্ছা কর, কিন্তু তার তাওফিক লাভ না হয়, তাহলে হুসাইনের কবরে আস, তোমার জন্য হজ লিখা হবে। যদি তুমি ওমরার ইচ্ছা কর, কিন্তু তোমার তার তাওফিক না হয়, তাহলে হুসাইনের কবরে আস, তোমার জন্য ওমরা লিখা হবে”। [ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ: (১০/৩৩২)]
বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে রয়েছে: “বায়তুল্লাহর মাটি সৃষ্টি ও তাকে হারাম ঘোষণার চব্বিশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা কারবালাকে নিরাপদ, বরকতময় ও পবিত্র হারাম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর মখলুক সৃষ্টি করার পূর্ব থেকে কারবালা পবিত্র ও বরকতময় ছিল, অনুরূপ বিদ্যমান থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোত্তম ভূমি, সর্বোত্তম বাড়ি ও সর্বোত্তম আবাস্থল আখ্যা দিবেন। জান্নাতে সেখানে তার ওলীগণ বাস করবেন”। [বিহারুল আনওয়ার: (১০১/১০৭)]
বরং হুসাইনের কবরের ফজিলত সম্পর্কে তাদের গোঁড়ামি এতটাই কঠিন আকার ধারণ করেছে যে, কারবালায় অবস্থিত হুসাইনের কবর যিয়ারত করা তাদের নিকট আল্লাহর ঘরের হজ করার চেয়ে অধিক ফজিলত পূর্ণ! আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আরাফার দিন যে ব্যক্তি হুসাইনের কবর যিয়ারত করল, আল্লাহ তার জন্য কায়েম আলাইহিস সালামের সাথে হাজার হাজার হজের সাওয়াব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাজার হাজার ওমরার সাওয়াব, এক হাজার ব্যক্তি আজাদ করা ও আল্লাহর রাস্তায় এক হাজার ঘোড়া সজ্জিত করার সমপরিমাণ সাওয়াব লিখবেন। আল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন আমার বান্দা সিদ্দিক, আমার ওয়াদার ওপর ইমান এনেছে। ফেরেশতাগণ বলেন: অমুক বান্দা সিদ্দিক, আল্লাহ আরশের ওপর থেকে তার পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন। জমিনে তাকে কারুবি বলা হয়”। [ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ: (১০/৩৬০)]
তাদের নিকট হুসাইনের কবর যিয়ারত শুধু হজ থেকে উত্তম নয়, বরং তা সর্বোত্তম আমল। তাদের বর্ণনায় এসেছে হুসাইনের কবর যিয়ারত করা সর্বোত্তম আমল। অপর বর্ণনায় এসেছে: “হুসাইনের কবর যিয়ারত করা অধিক পছন্দনীয় আমল”। [কামেলুযযিয়ারাত: (পৃ.১৪৬), বিহারুল আনওয়ার: (১০১/৪৯)] মাজলিসি এ শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তাতে এ জাতীয় অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তিনি। [শিরোনাম: “অধ্যায়: হুসাইনের কবর যিয়ারত সর্বোত্তম আমল”। দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (১০১/৪৯)]
শিয়াদের শায়খ আল-ফায়দুল কাশানি হুসাইনের কবর যিয়ারতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত বর্ণনাসমূহের টিকায় বলেন: “আল্লাহ যাকে মুমিনদের ইমাম বানিয়েছেন তার জন্য এসব ফজিলত বেশী নয়, তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে আসমান ও জমিনসমূহ। তাকে আল্লাহ স্বীয় সিরাত, রাস্তা, চোখ, দলিল ও দরজা বানিয়েছেন, যা দিয়ে প্রবেশ করা হয়। তিনি রব ও বান্দার মাঝে যোগসূত্র, হোক সে বান্দা রাসূল, নবী, হুজ্জত ও ওলী। অধিকন্তু তার কবরে দান করা, উদ্দেশ্য হাসিলের আশা করা, কুরবানি পেশ করা, হিজরত করা, কষ্ট সহ্য করা, ওয়াদা করা, কবর দর্শন করা ও উৎসবে অংশ গ্রহণ করা অধিক সাওয়াবের কাজ”। [আল-ওয়াফি: (খ.২), (৮/২২৪)]
শিয়াদের দৃষ্টিতে মসজিদে কুফা ও কারবালার ফজিলত থেকে সামান্য উল্লেখ করলাম, অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছি যেন দীর্ঘ না হয়। আরো জানার যার ইচ্ছা রয়েছে, তিনি ইমামিয়াদের ফিকাহ, মাযার ও তাদের হাদিসের কিতাবগুলো দেখুন।
এতে সন্দেহ নেই যে, শিয়ারা বনু উমাইয়াদের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা থেকে মসজিদে আকসার ওপর অন্যান্য স্থানকে অধিক ফজিলতপূর্ণ মনে করে ও তার ফজিলত অস্বীকার করে। কারণ উমাইয়া খলিফারাই মসজিদে আকসার পুনঃ নির্মাণ ও তার আবাদ করেন নতুনভাবে। গোঁড়ামির আতিশয্যয় শিয়ারা নিজেদের পবিত্র ভূমিগুলোকে ফজিলতপূর্ণ তিনটি মসজিদ থেকে উত্তম দাবি করে, যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ, বরং সাওয়াবের কাজ। তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট ফজিলতপূর্ণ স্থানসমূহের মানহানিতে কোন কসুর করে না। তারা কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত মসজিদে আকসার ফজিলত অস্বীকার করে।
কিভাবে তারা বায়তুল মাকদিসের মর্যাদা অন্তরে স্থান দিবে, যা বিজয় করেছেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, স্বাধীন করেছেন সালাহুদ্দিন আইয়ূবী –রাহিমাহুল্লাহ-। যে মসজিদ দীর্ঘকাল ইলম, আলেম ও আহলে সুন্নাহর তীর্থ ভূমি হিসেবে স্বীকৃত ছিল!
উপরন্তু মসজিদে আকসার ফজিলত ও তার অবস্থান নির্ণয়ে- আসমানে না জমিনে- শিয়াদের বর্ণনাগুলো সিদ্ধান্তহীন। তাদের কারো নিকট ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদই মসজিদে আকসা। তারা এর ফজিলত বর্ণনা করেছেন: যেমন তুসি “আল-খিলাফ” গ্রন্থে, হুলি “তাহরিরুল আহকাম” ও তাযকিরাতুল ফোকাহা গ্রন্থে। তবে শিয়াদের অধিকাংশ আলেমের মতে মসজিদে কুফা মসজিদে আকসা থেকে উত্তম! [এদত সত্যেও তারা প্রচার করে যে, কুদস-ই তাদের প্রথম বিষয় এবং তারা দুর্বল ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। তারা মসজিদে আকসাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করবে। এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। তারা কুদসকে সাহায্য করার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে তার নাম রেখেছে ‘কুদস দিবস’। কুদসকে মুক্ত করার জন্য একটি বাহিনীর নাম রেখেছে “জায়শুল কুদস” ও “ফায়লাকুল কুদস”। কুদসের জন্য একটি সম্প্রচার সংস্থা করেছে, যার নাম “কুদস সম্প্রচার সংস্থা”। কুদসের জন্য তাদের নির্দিষ্ট একটি পথ রয়েছে, যার নাম “তারিকুল কুদস”। অথচ আমরা দেখছি সে পথ মোড় ঘুরিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের দিকে দাবিত হচ্ছে! আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি, ইরানের কে কুদসকে মুক্ত করার জন্য জীবন দেয়!]
বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে রয়েছে: “বায়তুল্লাহর মাটি সৃষ্টি ও তাকে হারাম ঘোষণার চব্বিশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা কারবালাকে নিরাপদ, বরকতময় ও পবিত্র হারাম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর মখলুক সৃষ্টি করার পূর্ব থেকে কারবালা পবিত্র ও বরকতময় ছিল, অনুরূপ বিদ্যমান থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোত্তম ভূমি, সর্বোত্তম বাড়ি ও সর্বোত্তম আবাস্থল আখ্যা দিবেন। জান্নাতে সেখানে তার ওলীগণ বাস করবেন”। [বিহারুল আনওয়ার: (১০১/১০৭)]
বরং হুসাইনের কবরের ফজিলত সম্পর্কে তাদের গোঁড়ামি এতটাই কঠিন আকার ধারণ করেছে যে, কারবালায় অবস্থিত হুসাইনের কবর যিয়ারত করা তাদের নিকট আল্লাহর ঘরের হজ করার চেয়ে অধিক ফজিলত পূর্ণ! আবু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আরাফার দিন যে ব্যক্তি হুসাইনের কবর যিয়ারত করল, আল্লাহ তার জন্য কায়েম আলাইহিস সালামের সাথে হাজার হাজার হজের সাওয়াব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাজার হাজার ওমরার সাওয়াব, এক হাজার ব্যক্তি আজাদ করা ও আল্লাহর রাস্তায় এক হাজার ঘোড়া সজ্জিত করার সমপরিমাণ সাওয়াব লিখবেন। আল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন আমার বান্দা সিদ্দিক, আমার ওয়াদার ওপর ইমান এনেছে। ফেরেশতাগণ বলেন: অমুক বান্দা সিদ্দিক, আল্লাহ আরশের ওপর থেকে তার পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন। জমিনে তাকে কারুবি বলা হয়”। [ওয়াসায়েলুশ শিয়াহ: (১০/৩৬০)]
তাদের নিকট হুসাইনের কবর যিয়ারত শুধু হজ থেকে উত্তম নয়, বরং তা সর্বোত্তম আমল। তাদের বর্ণনায় এসেছে হুসাইনের কবর যিয়ারত করা সর্বোত্তম আমল। অপর বর্ণনায় এসেছে: “হুসাইনের কবর যিয়ারত করা অধিক পছন্দনীয় আমল”। [কামেলুযযিয়ারাত: (পৃ.১৪৬), বিহারুল আনওয়ার: (১০১/৪৯)] মাজলিসি এ শিরোনামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তাতে এ জাতীয় অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তিনি। [শিরোনাম: “অধ্যায়: হুসাইনের কবর যিয়ারত সর্বোত্তম আমল”। দেখুন: বিহারুল আনওয়ার: (১০১/৪৯)]
শিয়াদের শায়খ আল-ফায়দুল কাশানি হুসাইনের কবর যিয়ারতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত বর্ণনাসমূহের টিকায় বলেন: “আল্লাহ যাকে মুমিনদের ইমাম বানিয়েছেন তার জন্য এসব ফজিলত বেশী নয়, তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে আসমান ও জমিনসমূহ। তাকে আল্লাহ স্বীয় সিরাত, রাস্তা, চোখ, দলিল ও দরজা বানিয়েছেন, যা দিয়ে প্রবেশ করা হয়। তিনি রব ও বান্দার মাঝে যোগসূত্র, হোক সে বান্দা রাসূল, নবী, হুজ্জত ও ওলী। অধিকন্তু তার কবরে দান করা, উদ্দেশ্য হাসিলের আশা করা, কুরবানি পেশ করা, হিজরত করা, কষ্ট সহ্য করা, ওয়াদা করা, কবর দর্শন করা ও উৎসবে অংশ গ্রহণ করা অধিক সাওয়াবের কাজ”। [আল-ওয়াফি: (খ.২), (৮/২২৪)]
শিয়াদের দৃষ্টিতে মসজিদে কুফা ও কারবালার ফজিলত থেকে সামান্য উল্লেখ করলাম, অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছি যেন দীর্ঘ না হয়। আরো জানার যার ইচ্ছা রয়েছে, তিনি ইমামিয়াদের ফিকাহ, মাযার ও তাদের হাদিসের কিতাবগুলো দেখুন।
এতে সন্দেহ নেই যে, শিয়ারা বনু উমাইয়াদের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা থেকে মসজিদে আকসার ওপর অন্যান্য স্থানকে অধিক ফজিলতপূর্ণ মনে করে ও তার ফজিলত অস্বীকার করে। কারণ উমাইয়া খলিফারাই মসজিদে আকসার পুনঃ নির্মাণ ও তার আবাদ করেন নতুনভাবে। গোঁড়ামির আতিশয্যয় শিয়ারা নিজেদের পবিত্র ভূমিগুলোকে ফজিলতপূর্ণ তিনটি মসজিদ থেকে উত্তম দাবি করে, যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ, বরং সাওয়াবের কাজ। তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট ফজিলতপূর্ণ স্থানসমূহের মানহানিতে কোন কসুর করে না। তারা কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত মসজিদে আকসার ফজিলত অস্বীকার করে।
কিভাবে তারা বায়তুল মাকদিসের মর্যাদা অন্তরে স্থান দিবে, যা বিজয় করেছেন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, স্বাধীন করেছেন সালাহুদ্দিন আইয়ূবী –রাহিমাহুল্লাহ-। যে মসজিদ দীর্ঘকাল ইলম, আলেম ও আহলে সুন্নাহর তীর্থ ভূমি হিসেবে স্বীকৃত ছিল!
উপরন্তু মসজিদে আকসার ফজিলত ও তার অবস্থান নির্ণয়ে- আসমানে না জমিনে- শিয়াদের বর্ণনাগুলো সিদ্ধান্তহীন। তাদের কারো নিকট ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদই মসজিদে আকসা। তারা এর ফজিলত বর্ণনা করেছেন: যেমন তুসি “আল-খিলাফ” গ্রন্থে, হুলি “তাহরিরুল আহকাম” ও তাযকিরাতুল ফোকাহা গ্রন্থে। তবে শিয়াদের অধিকাংশ আলেমের মতে মসজিদে কুফা মসজিদে আকসা থেকে উত্তম! [এদত সত্যেও তারা প্রচার করে যে, কুদস-ই তাদের প্রথম বিষয় এবং তারা দুর্বল ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। তারা মসজিদে আকসাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করবে। এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। তারা কুদসকে সাহায্য করার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে তার নাম রেখেছে ‘কুদস দিবস’। কুদসকে মুক্ত করার জন্য একটি বাহিনীর নাম রেখেছে “জায়শুল কুদস” ও “ফায়লাকুল কুদস”। কুদসের জন্য একটি সম্প্রচার সংস্থা করেছে, যার নাম “কুদস সম্প্রচার সংস্থা”। কুদসের জন্য তাদের নির্দিষ্ট একটি পথ রয়েছে, যার নাম “তারিকুল কুদস”। অথচ আমরা দেখছি সে পথ মোড় ঘুরিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের দিকে দাবিত হচ্ছে! আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি, ইরানের কে কুদসকে মুক্ত করার জন্য জীবন দেয়!]
শিয়ারা তাদের পবিত্র স্থানসমূহের বিশেষ মর্যাদা ঘোষণার জন্য বিভিন্ন মন্তব্য ও বক্তব্য দ্বারা মসজিদে আকসার মানহানি করে। তাদের মতে ফজিলতপূর্ণ তিনটি মসজিদ, যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা যায়, তাদের পবিত্র স্থানসমূহের সমমর্যাদার নয়। তার কতক বর্ণনা নিন্মে তুলে ধরা হল:
শিয়া মতবাদ প্রচারকারী “আল-মিম্বার” [“আল-মিম্বার” পত্রিকা “খুদ্দামুল মাহদি” সংস্থা থেকে মাসিক প্রকাশিত হয়, কুয়েতে যার প্রধান ইয়াসির হাবিব। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ইউসূফ আব্দুল হাদি। এ পত্রিকা ডিসেম্বর ১৯৯৯ইং থেকে কুয়েত সরকারের ২০০৪ইং সনে “খুদ্দামুল মাহিদ” সংস্থা নিষিদ্ধ করা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের গালি দেয়ার অপরাধে ইয়াসির হাবিবকে জেলে দেয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হত। তাদের ওয়েব সাইটের ঠিকানা: www.14masom.com/menber] পত্রিকায় “কুদসের পূর্বে.. কারবালা স্বাধীন কর” শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল:
“নিশ্চয় কারবালা পৃথিবীর –যেখানে মক্কা ও মদিনা বিদ্যমান- সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ ভূমি, নিষ্পাপ ইমামদের স্পষ্ট বাণী তাই প্রমাণ করে। কারবালা এ মর্যাদা লাভ করেছে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন আলাইহিস সালামের মরদেহ ধারণ করে। কারণ তিনি আল্লাহর পক্ষ গ্রহণকারী ও তার রাসূলের অংশ। তার পবিত্র রক্ত কারবালার বালু-কণার সাথে মিশেছে, তাই সে এ মহান ফজিলত অর্জন করেছে, যার ঊর্ধ্বে কোন ফজিলত নেই। কারবালা এখন মুক্ত লোকের কাবা, অন্তরের ঠিকানা, ওলীদের দলিল ও প্রত্যেক অভাবীর তীর্থ ভূমি।
লিখক আরো বলেন: “কুদসের যত মর্যাদা ও পবিত্রতাই থাক, তা কখনো কারবালার সমপরিমাণ নয়। কুদস কারবালার মত নয়, যেমন পাথর হুসাইন ও মসজিদে হারামের মত নয়... কুদস স্বাধীন করার পূর্বে আমাদের কর্তব্য কারবালা স্বাধীন করা”। [আমেরিকার হাতে ইরাকের পতন ঘটার পূর্বে ইরাক বার্থ পার্টির অধীনে ছিল।] সেখান থেকে আমরা ফিলিস্তিনের দিকে রওয়ানা করব, সেখান থেকে দুনিয়ার সর্বত্র নূর ও হিদায়েতের মশাল নিয়ে ছড়িয়ে পড়ব। আমরা ইতিপূর্বে বলেছি কুদস কখনো এ উম্মতের হাতে আসবে না, যতক্ষণ না তারা মুহাম্মদ ও আলি আলাইহিমুস সালামের দিকে ফিরে আসবে”!
তিনি আরো বলেন: “তোমরা মুহাম্মদ ও আলির দিকে ফিরে যাও... কুদস তোমাদের হাতে আসবে... প্রথমে বরং সবার পূর্বে কারবালাকে মুক্ত কর, অতঃপর কুদস ও অন্যান্য বিষয়ে চিন্তা কর”! [“আল-মিম্বারিয়াহ” পত্রিকা, সংখ্যা: ২৩, মুহাররম ১৪২৩হি. মার্চ ২০০২ইং]
“নিশ্চয় কারবালা পৃথিবীর –যেখানে মক্কা ও মদিনা বিদ্যমান- সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ ভূমি, নিষ্পাপ ইমামদের স্পষ্ট বাণী তাই প্রমাণ করে। কারবালা এ মর্যাদা লাভ করেছে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন আলাইহিস সালামের মরদেহ ধারণ করে। কারণ তিনি আল্লাহর পক্ষ গ্রহণকারী ও তার রাসূলের অংশ। তার পবিত্র রক্ত কারবালার বালু-কণার সাথে মিশেছে, তাই সে এ মহান ফজিলত অর্জন করেছে, যার ঊর্ধ্বে কোন ফজিলত নেই। কারবালা এখন মুক্ত লোকের কাবা, অন্তরের ঠিকানা, ওলীদের দলিল ও প্রত্যেক অভাবীর তীর্থ ভূমি।
লিখক আরো বলেন: “কুদসের যত মর্যাদা ও পবিত্রতাই থাক, তা কখনো কারবালার সমপরিমাণ নয়। কুদস কারবালার মত নয়, যেমন পাথর হুসাইন ও মসজিদে হারামের মত নয়... কুদস স্বাধীন করার পূর্বে আমাদের কর্তব্য কারবালা স্বাধীন করা”। [আমেরিকার হাতে ইরাকের পতন ঘটার পূর্বে ইরাক বার্থ পার্টির অধীনে ছিল।] সেখান থেকে আমরা ফিলিস্তিনের দিকে রওয়ানা করব, সেখান থেকে দুনিয়ার সর্বত্র নূর ও হিদায়েতের মশাল নিয়ে ছড়িয়ে পড়ব। আমরা ইতিপূর্বে বলেছি কুদস কখনো এ উম্মতের হাতে আসবে না, যতক্ষণ না তারা মুহাম্মদ ও আলি আলাইহিমুস সালামের দিকে ফিরে আসবে”!
তিনি আরো বলেন: “তোমরা মুহাম্মদ ও আলির দিকে ফিরে যাও... কুদস তোমাদের হাতে আসবে... প্রথমে বরং সবার পূর্বে কারবালাকে মুক্ত কর, অতঃপর কুদস ও অন্যান্য বিষয়ে চিন্তা কর”! [“আল-মিম্বারিয়াহ” পত্রিকা, সংখ্যা: ২৩, মুহাররম ১৪২৩হি. মার্চ ২০০২ইং]
ইব্ন মাসুম কট্টর শিয়া, সে তার কবিতার সর্বশক্তি ব্যয় করেছে শিয়া ধর্মের জন্য। তার রচিত “সালাফাতুল আসর” গ্রন্থ এর স্পষ্ট প্রমাণ। হজের উদ্দেশ্যে সে নাজাফ যায় ও মসজিদে আকসার ওপর তাকে প্রাধান্য দিয়ে কবি আবৃতি করে:
يا صاحب هذا المشهد الأقدس ***** قرت به الأعين والأنفس
والنجف الأشرف بانت لنا ***** أعلامه والمعهد الأنفس
والقبة البيضاء قد أشرقت ***** ينجاب عن لآلئها الخندس
حضرة قدس لم ينل فضلها ***** لا المسجد الأقصى ولاالمقدس
এ পবিত্র ভূমির হে অধিপতি, যার ফলে চোখ ও অন্তর শীতল হয়; নাজাফই উত্তম, আমাদের নিকট তার নিদর্শন ও পবিত্র স্থান স্পষ্ট; সাদা গুম্বজ বিকশিত হয়েছে, সে তার ঝিনুক থেকে মুতি আহরণ করছে; কুদস কখনোই তার ফজিলত পাবে না, না মসজিদে আকসা, না মুকাদ্দাস।
يا صاحب هذا المشهد الأقدس ***** قرت به الأعين والأنفس
والنجف الأشرف بانت لنا ***** أعلامه والمعهد الأنفس
والقبة البيضاء قد أشرقت ***** ينجاب عن لآلئها الخندس
حضرة قدس لم ينل فضلها ***** لا المسجد الأقصى ولاالمقدس
এ পবিত্র ভূমির হে অধিপতি, যার ফলে চোখ ও অন্তর শীতল হয়; নাজাফই উত্তম, আমাদের নিকট তার নিদর্শন ও পবিত্র স্থান স্পষ্ট; সাদা গুম্বজ বিকশিত হয়েছে, সে তার ঝিনুক থেকে মুতি আহরণ করছে; কুদস কখনোই তার ফজিলত পাবে না, না মসজিদে আকসা, না মুকাদ্দাস।
ইরাকের সামেরা গুম্বজে বোমা বিস্ফোরণের পর লন্ডনে কুয়েতি শিয়াদের এক সেমিনারে শিয়া ইয়াসির হাবিব বলেছেন:
“অবৈধ দখলকৃত পবিত্র আসকারি হারাম শরীফ ধ্বংসের মুখোমুখি। আমাদের ইমামের শরীর মুবারকের ওপর তা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। কোন সাহায্যকারী নেই যে তাকে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবে, আজও তা নাসেবিদের– আহলে সুন্নাহর- কব্জায়! অবশ্যই তা উদ্ধার করা ওয়াজিব। কুদসকে মুক্ত করার পূর্বে তাকে মুক্ত করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ভূমি পুনরায় উদ্ধার করা আল্লাহ নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইমামের শরীর পাথর থেকে অবশ্যই উত্তম, যদিও তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহণ করেন”। [তার এ বক্তৃতা হুবহু সংরক্ষিত আছে: www.haqeeqa.com ও www.d-sunnah.net ওয়েব সাইট দু’টিতে।]
“অবৈধ দখলকৃত পবিত্র আসকারি হারাম শরীফ ধ্বংসের মুখোমুখি। আমাদের ইমামের শরীর মুবারকের ওপর তা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। কোন সাহায্যকারী নেই যে তাকে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবে, আজও তা নাসেবিদের– আহলে সুন্নাহর- কব্জায়! অবশ্যই তা উদ্ধার করা ওয়াজিব। কুদসকে মুক্ত করার পূর্বে তাকে মুক্ত করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ভূমি পুনরায় উদ্ধার করা আল্লাহ নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইমামের শরীর পাথর থেকে অবশ্যই উত্তম, যদিও তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরোহণ করেন”। [তার এ বক্তৃতা হুবহু সংরক্ষিত আছে: www.haqeeqa.com ও www.d-sunnah.net ওয়েব সাইট দু’টিতে।]
শিয়াদের কতিপয় দায়ী তাদের নেতাদের কুদস নিয়ে মাথা ঘামানোকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন। তারা এটাকে রাজনৈতিক কৌশল মনে করেন। কারণ কুদসের নির্দিষ্ট স্থান নির্ণয়ে শিয়া আলেমগণ পরস্পর বিরোধে জড়িয়েছেন, যা তাদের লেখা ও ব্যাখ্যায় স্পষ্ট। তারা কুদসের প্রতি এ গুরুত্ব প্রদানকে রাজনৈতিক কৌশল মনে করেন, ধর্মীয় আকিদা মানেন না!
ইয়াসির হাবিব লিখেছেন: “পবিত্র স্থানের প্রতি মুমিনদের দৃষ্টি দেয়া অধিক জরুরী, কারণ তার মর্যাদা ও সম্মান বায়তুল মাকদিসের ঊর্ধ্বে, বরং তার সাথে তুলনা করা পাপ। অতএব শিয়ারা শরীয়তের কোন ভিত্তিতে কুদসের সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার জন্য আন্দোলন করেন?! আমরা যদিও পবিত্র কুদসের জন্য আন্দোলন করি, কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য পবিত্র সামেরা ও গারকদ মুক্ত করা। অতঃপর সেখান থেকে আমরা কুদস ও অন্যান্য স্থানের দিকে ধাবিত হবো। সর্বপ্রথম নাসেবিদের হাত থেকে সামেরা ও বাকি গারকদকে মুক্ত করা ওয়াজিব, অতঃপর ইহুদিদের হাত থেকে কুদস মুক্ত করা। শিয়াদের প্রতি অবাক লাগে, তারা এসব বিষয় কিভাবে এড়িয়ে চলে! [দেখুন: www.mezan.net/vb/archive/index.php?t-389.html]
ইয়াসির হাবিব লিখেছেন: “পবিত্র স্থানের প্রতি মুমিনদের দৃষ্টি দেয়া অধিক জরুরী, কারণ তার মর্যাদা ও সম্মান বায়তুল মাকদিসের ঊর্ধ্বে, বরং তার সাথে তুলনা করা পাপ। অতএব শিয়ারা শরীয়তের কোন ভিত্তিতে কুদসের সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার জন্য আন্দোলন করেন?! আমরা যদিও পবিত্র কুদসের জন্য আন্দোলন করি, কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য পবিত্র সামেরা ও গারকদ মুক্ত করা। অতঃপর সেখান থেকে আমরা কুদস ও অন্যান্য স্থানের দিকে ধাবিত হবো। সর্বপ্রথম নাসেবিদের হাত থেকে সামেরা ও বাকি গারকদকে মুক্ত করা ওয়াজিব, অতঃপর ইহুদিদের হাত থেকে কুদস মুক্ত করা। শিয়াদের প্রতি অবাক লাগে, তারা এসব বিষয় কিভাবে এড়িয়ে চলে! [দেখুন: www.mezan.net/vb/archive/index.php?t-389.html]
“ইয়া হুসাইন” [www.yahosein.org/vb/showthread.php?t=79086&page=2] ওয়েব সাইটে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে জনৈক শিয়া মসজিদে আকসার স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যার শিরোনাম: মসজিদে আকসা কোথায়?! প্রশ্নের ব্যাখ্যায় সে বলেছে: ফিলিস্তিনে বিদ্যমান বায়তুল মাকদিসই কি মসজিদে আকসা, যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের নিন্মের বাণীতে বলেছেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: (১)]
শিয়াদের পরস্পরে এ প্রশ্নের উত্তর, সমালোচনা ও পর্যালোচনা ছিল নিন্মরূপ:
এর উত্তরে তাদের কেউ [এসব প্রশ্ন, প্রশ্নের উত্তর ও তার সমালোচনা উল্লেখ করব না, বরং জানার জন্য উল্লেখ করব যে, তারা মসজিদে আকসার ব্যাপারে কি চিন্তা করে এবং তার সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস কি, তাদের স্বাধীন লেখায় যা প্রতিয়মান।] লিখেছে: “মসজিদে আকসা ফিলিস্তিনে বিদ্যমান আহলে বাইতের বর্ণনায় তার কোন প্রমাণ নেই, বরং মসজিদে আকসা আসমানে। ‘মুতাবে’র দৃষ্টিতে এ পাথর ইহুদিদের নিকট পবিত্র। আমিরুল মুমেনিন আলির মসজিদ তথা মসজিদে কুফার অনেক ফজিলত বিকৃত ও পরিবর্তন করে ইহুদিদের পূর্বপুরুষরা ইহুদিদের কিবলার জন্য নির্ধারণ করেছে”!
অপর একজন লিখেছে: “মসজিদে আকসার স্থান ইহুদিদের আবিষ্কৃত, আহলে সুন্নাহ তার সংরক্ষণ করে ও তার ওপর আমল করে”!
অপর একজন বলেছে: “শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসা বায়তুল মামুর বা ফিলিস্তিনে অবস্থিত এ জন্য আমরা ফিরিস্তিন ও তার পবিত্র স্থানসমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করি না, বরং তার প্রতি গুরুত্বারোপের কারণ আমাদের আলেমদের ফতোয়া, যার ইত্তেবা করা আমাদের ওপর ওয়াজিব। আমাদের নেতারা যদি ফিলিস্তিনের জন্য সাহায্য করা, তার দুর্বল জনগণের পক্ষ নেয়া, তাদের ওপর থেকে হামলা প্রতিহত করা এবং সাধ্য মোতাবেক তাদের সাহায্য করার ফতোয়া দেন, তাহলে আমাদের ওপর তা ওয়াজিব, যদিও মসজিদে আকসার অবস্থান বায়তুল মাকদিসে না হয়, বরং যদিও ফিলিস্তিনে ইসলামী কোন চিহ্ন না থাকে”!
অপর অংশ গ্রহণকারী বলেন: “ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মাকদিস যদি এতো ফজিলতপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা কেন আহলে বায়েতের নিকট তার কোন বর্ণনা পাই না, বরং তার উল্টো দেখি, তারা মসজিদে কুফা সম্পর্কে বলেছেন আকসা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ”।
অপর একজন [দেখুন: www.yahosein.com] লিখেছে: “শিয়া ও অপর বাতিল ফেরকার নিকট প্রমাণিত যে দ্বিতীয় [এর দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।] আত্মসাৎকারী মসজিদে কুদস নির্মাণ করেছেন, তাতে কতক খুঁটি [সালাউদ্দিন আইউবির মিম্বার উদ্দেশ্য।] রয়েছে যেখানে খারাবুদ্দিন [সালাউদ্দিন আইয়ূবির পুরো উম্মত সার্টিফাই করেছে। এ রাফেজি তাকে খারাবুদ্দিন বলে অপবাদ দিচ্ছে, কারণ তিনি বাতেনি ফাতেমি রাজত্ব ধ্বংস করেছেন।] খুতবা দিতেন। খুব আফসোস লাগে যখন দেখি শিয়ারা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, একটি দিন তার জন্য ধার্য করে, ইহুদিরা যখন তার পাশে কূপ খনন করে তারা তখন ক্রন্দন করে”!
অপর কেউ লিখেছে: “আল্লাহই ভাল জানেন, স্পষ্ট বুঝে আসে যে, মসজিদে আকসা ফিলিস্তিনে নেই, যদি তার এতো ফজিলত হত, তাহলে অবশ্যই আহলে বায়েতগণ আমাদেরকে তা জানাতেন। তার যিয়ারতের নির্দেশ দিতেন, যেমন অন্যান্য পবিত্র স্থানের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। বুদ্ধিমানের উচিত এসব বিষয়গুলো সুক্ষ্নভাবে চিন্তা করা, যেন সন্দেহের সৃষ্টি না হয়”!
শিয়ারা তাদের লেখা, আলোচনা ও সমালোচনার স্থানে মসজিদে আকসা সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করে!
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: (১)]
শিয়াদের পরস্পরে এ প্রশ্নের উত্তর, সমালোচনা ও পর্যালোচনা ছিল নিন্মরূপ:
এর উত্তরে তাদের কেউ [এসব প্রশ্ন, প্রশ্নের উত্তর ও তার সমালোচনা উল্লেখ করব না, বরং জানার জন্য উল্লেখ করব যে, তারা মসজিদে আকসার ব্যাপারে কি চিন্তা করে এবং তার সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস কি, তাদের স্বাধীন লেখায় যা প্রতিয়মান।] লিখেছে: “মসজিদে আকসা ফিলিস্তিনে বিদ্যমান আহলে বাইতের বর্ণনায় তার কোন প্রমাণ নেই, বরং মসজিদে আকসা আসমানে। ‘মুতাবে’র দৃষ্টিতে এ পাথর ইহুদিদের নিকট পবিত্র। আমিরুল মুমেনিন আলির মসজিদ তথা মসজিদে কুফার অনেক ফজিলত বিকৃত ও পরিবর্তন করে ইহুদিদের পূর্বপুরুষরা ইহুদিদের কিবলার জন্য নির্ধারণ করেছে”!
অপর একজন লিখেছে: “মসজিদে আকসার স্থান ইহুদিদের আবিষ্কৃত, আহলে সুন্নাহ তার সংরক্ষণ করে ও তার ওপর আমল করে”!
অপর একজন বলেছে: “শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদে আকসা বায়তুল মামুর বা ফিলিস্তিনে অবস্থিত এ জন্য আমরা ফিরিস্তিন ও তার পবিত্র স্থানসমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করি না, বরং তার প্রতি গুরুত্বারোপের কারণ আমাদের আলেমদের ফতোয়া, যার ইত্তেবা করা আমাদের ওপর ওয়াজিব। আমাদের নেতারা যদি ফিলিস্তিনের জন্য সাহায্য করা, তার দুর্বল জনগণের পক্ষ নেয়া, তাদের ওপর থেকে হামলা প্রতিহত করা এবং সাধ্য মোতাবেক তাদের সাহায্য করার ফতোয়া দেন, তাহলে আমাদের ওপর তা ওয়াজিব, যদিও মসজিদে আকসার অবস্থান বায়তুল মাকদিসে না হয়, বরং যদিও ফিলিস্তিনে ইসলামী কোন চিহ্ন না থাকে”!
অপর অংশ গ্রহণকারী বলেন: “ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মাকদিস যদি এতো ফজিলতপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা কেন আহলে বায়েতের নিকট তার কোন বর্ণনা পাই না, বরং তার উল্টো দেখি, তারা মসজিদে কুফা সম্পর্কে বলেছেন আকসা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ”।
অপর একজন [দেখুন: www.yahosein.com] লিখেছে: “শিয়া ও অপর বাতিল ফেরকার নিকট প্রমাণিত যে দ্বিতীয় [এর দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।] আত্মসাৎকারী মসজিদে কুদস নির্মাণ করেছেন, তাতে কতক খুঁটি [সালাউদ্দিন আইউবির মিম্বার উদ্দেশ্য।] রয়েছে যেখানে খারাবুদ্দিন [সালাউদ্দিন আইয়ূবির পুরো উম্মত সার্টিফাই করেছে। এ রাফেজি তাকে খারাবুদ্দিন বলে অপবাদ দিচ্ছে, কারণ তিনি বাতেনি ফাতেমি রাজত্ব ধ্বংস করেছেন।] খুতবা দিতেন। খুব আফসোস লাগে যখন দেখি শিয়ারা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, একটি দিন তার জন্য ধার্য করে, ইহুদিরা যখন তার পাশে কূপ খনন করে তারা তখন ক্রন্দন করে”!
অপর কেউ লিখেছে: “আল্লাহই ভাল জানেন, স্পষ্ট বুঝে আসে যে, মসজিদে আকসা ফিলিস্তিনে নেই, যদি তার এতো ফজিলত হত, তাহলে অবশ্যই আহলে বায়েতগণ আমাদেরকে তা জানাতেন। তার যিয়ারতের নির্দেশ দিতেন, যেমন অন্যান্য পবিত্র স্থানের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। বুদ্ধিমানের উচিত এসব বিষয়গুলো সুক্ষ্নভাবে চিন্তা করা, যেন সন্দেহের সৃষ্টি না হয়”!
শিয়ারা তাদের লেখা, আলোচনা ও সমালোচনার স্থানে মসজিদে আকসা সম্পর্কে এমন ধারণাই পোষণ করে!
ইহুদিরা বিভিন্নভাবে মসজিদে আকসার মর্যাদার হানি ও তার পবিত্রতা সম্পর্কে মুসলিমের অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টির নানা কৌশলে লিপ্ত। চরম মুসলিম বিদ্বেষী ইহুদিদের কোন লেখা, কিতাব ও গবেষণা পাওয়া যাবে না, -মসজিদে আকসা সম্পর্কে- যেখানে তারা কুদস শহরের পবিত্রতার ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি করেনি। বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিত ও লেখার মাধ্যমে এ হীন-কাজে তারা লিপ্ত, যদিও প্রত্যেক গবেষণায় তার উপাদান নেই।
তাদের অপচেষ্টার অন্যতম হল মসজিদে আকসার ফজিলত সম্বলিত কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে সন্দেহ সৃষ্টি করা, যার বিশুদ্ধতার ওপর সকল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত একমত। তাদের ধারণা মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ, মসজিদে কুদস নয়, যা মুসলিমদের নিকট প্রসিদ্ধ। আকসা শব্দই প্রমাণ করে আসমানে অবস্থিত সালাতের একটি স্থানের নাম মসজিদে আকসা, অর্থাৎ পবিত্র ঊর্ধ্ব জগত। তাদের কতক শিয়াদের উল্লেখ করা বর্ণনা, বাণী ও হাদিস দেখে তা লুফে নিয়েছে, যেখানে স্পষ্ট রয়েছে মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদে কুদসের নামের ন্যায়ই তার নাম! তাদের লেখা থেকে কতক উদাহরণ পেশ করছি:
বুহেল ও কুদস ধাতু:
ইসলামিক ইনসাইক্লোপিডিয়াতে (Al-Kudse) শব্দের আলোচনায় আছে, যা লিখেছেন ইহুদি বুহেল (Buhl F) [ইহুদি প্রাচ্যবিদ ইসলামিক ইনসাইক্লোপিডিয়াতে “কুদস” ধাতুর ওপর লিখিছেন।]: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনো মনে হত মসজিদে আকসা আসমানে একটি জায়গার নাম”!
এরপর তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম থেকে জানতেন আয়াতে উল্লেখিত মসজিদ আসমানে একটি স্থানের নাম, বায়তুল মাকদিসে নির্মাণকৃত মসজিদ নয়”। [ড. মাহমুদ ইবরাহিম লিখিত “ফাদেয়েলে বায়তুল কুদস”: (পৃ.৪৭), জামেয়া উর্দুনিয়া, প্রকাশক: إصدار معهد المخطوطات العربية : ( المنظمة العربية للتربية والثقافة والعلوم ) الطبعة الأولى 1985م.]
ইসহাক হাসুন:
আবু বকর মুহাম্মদ ইব্ন আহমদ আল-ওয়াসেতি লিখিত “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস” গ্রন্থের সংস্করণের ভূমিকায় “জামেয়া ইবরিয়াতে” এশিয়া ও আফ্রিকা বিষয়ক অনুষদের সদস্য, ইহুদি গবেষক ইসহাক হাসুন বলেন: “প্রসিদ্ধ আছে শিয়াদের একটি গ্রুপ অন্যান্য মসজিদের ওপর বায়তুল মাকদিসের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে না”। [আবু বকর আল-ওয়াসেতি লিখিত: “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস”: (পৃ.৩৫), তাহকিক: ইসহাক হাসুন, معهد الدراسات الآسيوية والأفريقية- الجامعة العبرية، القدس .]
দলিল হিসেবে পেশ করেছে মাজলিসি রচিত “বিহারুল আনওয়ার” ও কান্দুজি রচিত “ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ” গ্রন্থের হাদিস। হাসুন তার পরবর্তী লেখায় লিখেন: “মুসলিমদের সকল আলেম এ বিষয়ে একমত নয় যে, মসজিদে কুদস-ই মসজিদে আকসা। কারণ তাদের কারো মতে মসজিদে আকসা আসমানে, যা সরাসরি কুদস অথবা মক্কার ওপরে”। [ড. মাহমুদ ইবরাহিম রচিত “ফাদায়েলে কুদস ফি মাখতুতাতিন আরাবিয়াতিন কাদিমাতিন”: (পৃ.৪১)]
এভাবে সে আসমানের কুদস ও জমিনের কুদসের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণের চেষ্টা করেছে।
হাওয়া লা-তাসরুস ইয়াফাহ:
প্রাচ্যবিদ লেখিকা “হাওয়া লা-তাসরুস ইয়াফাহ” একটি গবেষণা পত্র লিখেছেন, তাতে তিনি প্রমাণ করেছেন: “শুরু থেকে মনে করা হত আয়াতে ইসরায় উল্লেখিত মসজিদ অনেক দূরে অবস্থিত একটি আসমানি মসজিদ। মসজিদে আকসার অর্থ কখনো উমাইয়াদের যুগে নির্মাণ করা মসজিদে কুদস নয়”।
লা-তাসরুস নিজ গবেষণার সমর্থনে “জুযিফ হুরুফিতাশ” এর লেখা পেশ করেছেন, একই বিষয়ে জুযিফ লিখেছে: “আয়াতে ইসরায় যে মসজিদের কথা বলা হয়েছে, তা মূলত আসমানে সালাতের একটি স্থানের নাম, যা ঊর্ধ্বাকাশের কুদস নামক স্থানে অবস্থিত। তিনি আরো বলেন: “আমাদের প্রয়োজন পূর্বযুগের মুফাসসিরদের ব্যাখ্যা বুঝা, তারা মসজিদে আকসা দ্বারা বায়তুল মাকদিস বুঝতেন। তার মতে তারা কুদস দ্বারা ঊর্ধ্বাকাশের কুদস-ই বুঝতেন, তবে যুগের পরিবর্তনের কারণে পরিভাষায় পরিবর্তন এসেছে। ফলে তারা ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থিত মসজিদে আকসা দ্বারা বর্তমানে কুদসে অবস্থিত মসজিদ বুঝতে আরম্ভ করেছে”। [“আল-কুদস দিরাসাত ফি তারিখিল মদিনা”, লেখক: আমনুন কুহিন, (পৃ.৩৯), প্রকাশক: ইয়াদ ইয়াতিসহাক ইব্ন তিসফি।]
ইয়াহুদা লিতানি:
লেখক “ইয়াহুদা লিতানি” একটি প্রবন্ধ লিখেছেন “ইয়াদিউত আহরুনুত” পত্রিকায়, যার শিরোনাম: “মসজিদে আকসা সম্পর্কে চিন্তার লড়াই”। সেখানে তিনি “মুসলিমদের ঐক্যমত্যে মসজিদে আকসা নিশ্চিতভাবে মসজিদে কুদস” সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন”। তিনি বাড়িয়ে বলেন: মসজিদে আকসার ইসলামী অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, যা থেকে বুঝা যায় মসজিদে আকসা অন্য কোথাও, একটি মতে মদিনার নিকটেই মসজিদে আকসা”! [“ইয়াদিউত আহরুনুত”: (৩/৩/২০০৫ইং)]
কিস্তার এম.জে, (Kister M.J):
কিস্তার এম.জে লিখেছেন: “মুসলিমদের মাঝে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে”। [“ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস ফি মাখতুতাত আরাবিয়াতিন কাদিমাতিন”: (পৃ.৪০)]
তিনি মুসলিমদের নিকট মসজিদে আকসার অবস্থান সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য কয়েকটি বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছেন, যার বর্ণনাকারী প্রত্যেকেই শিয়া”। [প্রাগুক্ত: (পৃ.৪০)]
এ হল ইহুদিদের লেখার বিন্দু মাত্র, যা তারা মুসলিমের অন্তরে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানকে হেয় করার নিমিত্তে লিখেছে। তাদের জোর দাবি মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদের নাম”। [আরো জানার জন্য দেখুন: ড. মাহমুদ ইবরাহিমের লেখা “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস”। আব্দুল লতিফ জাকি আবু হাশেম এর তাহকিক করা: “আদাবু ফাদায়েলিল মুদান ফি দিরাসাতিল মুস্তাশরিকিনিল ইয়াহুদ”। জামেয়াতুল কুদসের অধীন আদব অনুষদের ডিন ড. হাসান আব্দুল হামিদ সালওয়াদি লিখিত: المستشرقون اليهود ومحاولة التهوين من قدسية القدس ومكانتها في الإسلام . এবং প্রফেসর আমনুন কুহিন লিখিত: القدس دراسات في تاريخ المدينة .]
তাদের অপচেষ্টার অন্যতম হল মসজিদে আকসার ফজিলত সম্বলিত কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে সন্দেহ সৃষ্টি করা, যার বিশুদ্ধতার ওপর সকল আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত একমত। তাদের ধারণা মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ, মসজিদে কুদস নয়, যা মুসলিমদের নিকট প্রসিদ্ধ। আকসা শব্দই প্রমাণ করে আসমানে অবস্থিত সালাতের একটি স্থানের নাম মসজিদে আকসা, অর্থাৎ পবিত্র ঊর্ধ্ব জগত। তাদের কতক শিয়াদের উল্লেখ করা বর্ণনা, বাণী ও হাদিস দেখে তা লুফে নিয়েছে, যেখানে স্পষ্ট রয়েছে মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদে কুদসের নামের ন্যায়ই তার নাম! তাদের লেখা থেকে কতক উদাহরণ পেশ করছি:
বুহেল ও কুদস ধাতু:
ইসলামিক ইনসাইক্লোপিডিয়াতে (Al-Kudse) শব্দের আলোচনায় আছে, যা লিখেছেন ইহুদি বুহেল (Buhl F) [ইহুদি প্রাচ্যবিদ ইসলামিক ইনসাইক্লোপিডিয়াতে “কুদস” ধাতুর ওপর লিখিছেন।]: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনো মনে হত মসজিদে আকসা আসমানে একটি জায়গার নাম”!
এরপর তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম থেকে জানতেন আয়াতে উল্লেখিত মসজিদ আসমানে একটি স্থানের নাম, বায়তুল মাকদিসে নির্মাণকৃত মসজিদ নয়”। [ড. মাহমুদ ইবরাহিম লিখিত “ফাদেয়েলে বায়তুল কুদস”: (পৃ.৪৭), জামেয়া উর্দুনিয়া, প্রকাশক: إصدار معهد المخطوطات العربية : ( المنظمة العربية للتربية والثقافة والعلوم ) الطبعة الأولى 1985م.]
ইসহাক হাসুন:
আবু বকর মুহাম্মদ ইব্ন আহমদ আল-ওয়াসেতি লিখিত “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস” গ্রন্থের সংস্করণের ভূমিকায় “জামেয়া ইবরিয়াতে” এশিয়া ও আফ্রিকা বিষয়ক অনুষদের সদস্য, ইহুদি গবেষক ইসহাক হাসুন বলেন: “প্রসিদ্ধ আছে শিয়াদের একটি গ্রুপ অন্যান্য মসজিদের ওপর বায়তুল মাকদিসের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে না”। [আবু বকর আল-ওয়াসেতি লিখিত: “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস”: (পৃ.৩৫), তাহকিক: ইসহাক হাসুন, معهد الدراسات الآسيوية والأفريقية- الجامعة العبرية، القدس .]
দলিল হিসেবে পেশ করেছে মাজলিসি রচিত “বিহারুল আনওয়ার” ও কান্দুজি রচিত “ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ” গ্রন্থের হাদিস। হাসুন তার পরবর্তী লেখায় লিখেন: “মুসলিমদের সকল আলেম এ বিষয়ে একমত নয় যে, মসজিদে কুদস-ই মসজিদে আকসা। কারণ তাদের কারো মতে মসজিদে আকসা আসমানে, যা সরাসরি কুদস অথবা মক্কার ওপরে”। [ড. মাহমুদ ইবরাহিম রচিত “ফাদায়েলে কুদস ফি মাখতুতাতিন আরাবিয়াতিন কাদিমাতিন”: (পৃ.৪১)]
এভাবে সে আসমানের কুদস ও জমিনের কুদসের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণের চেষ্টা করেছে।
হাওয়া লা-তাসরুস ইয়াফাহ:
প্রাচ্যবিদ লেখিকা “হাওয়া লা-তাসরুস ইয়াফাহ” একটি গবেষণা পত্র লিখেছেন, তাতে তিনি প্রমাণ করেছেন: “শুরু থেকে মনে করা হত আয়াতে ইসরায় উল্লেখিত মসজিদ অনেক দূরে অবস্থিত একটি আসমানি মসজিদ। মসজিদে আকসার অর্থ কখনো উমাইয়াদের যুগে নির্মাণ করা মসজিদে কুদস নয়”।
লা-তাসরুস নিজ গবেষণার সমর্থনে “জুযিফ হুরুফিতাশ” এর লেখা পেশ করেছেন, একই বিষয়ে জুযিফ লিখেছে: “আয়াতে ইসরায় যে মসজিদের কথা বলা হয়েছে, তা মূলত আসমানে সালাতের একটি স্থানের নাম, যা ঊর্ধ্বাকাশের কুদস নামক স্থানে অবস্থিত। তিনি আরো বলেন: “আমাদের প্রয়োজন পূর্বযুগের মুফাসসিরদের ব্যাখ্যা বুঝা, তারা মসজিদে আকসা দ্বারা বায়তুল মাকদিস বুঝতেন। তার মতে তারা কুদস দ্বারা ঊর্ধ্বাকাশের কুদস-ই বুঝতেন, তবে যুগের পরিবর্তনের কারণে পরিভাষায় পরিবর্তন এসেছে। ফলে তারা ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থিত মসজিদে আকসা দ্বারা বর্তমানে কুদসে অবস্থিত মসজিদ বুঝতে আরম্ভ করেছে”। [“আল-কুদস দিরাসাত ফি তারিখিল মদিনা”, লেখক: আমনুন কুহিন, (পৃ.৩৯), প্রকাশক: ইয়াদ ইয়াতিসহাক ইব্ন তিসফি।]
ইয়াহুদা লিতানি:
লেখক “ইয়াহুদা লিতানি” একটি প্রবন্ধ লিখেছেন “ইয়াদিউত আহরুনুত” পত্রিকায়, যার শিরোনাম: “মসজিদে আকসা সম্পর্কে চিন্তার লড়াই”। সেখানে তিনি “মুসলিমদের ঐক্যমত্যে মসজিদে আকসা নিশ্চিতভাবে মসজিদে কুদস” সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন”। তিনি বাড়িয়ে বলেন: মসজিদে আকসার ইসলামী অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, যা থেকে বুঝা যায় মসজিদে আকসা অন্য কোথাও, একটি মতে মদিনার নিকটেই মসজিদে আকসা”! [“ইয়াদিউত আহরুনুত”: (৩/৩/২০০৫ইং)]
কিস্তার এম.জে, (Kister M.J):
কিস্তার এম.জে লিখেছেন: “মুসলিমদের মাঝে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে”। [“ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস ফি মাখতুতাত আরাবিয়াতিন কাদিমাতিন”: (পৃ.৪০)]
তিনি মুসলিমদের নিকট মসজিদে আকসার অবস্থান সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য কয়েকটি বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছেন, যার বর্ণনাকারী প্রত্যেকেই শিয়া”। [প্রাগুক্ত: (পৃ.৪০)]
এ হল ইহুদিদের লেখার বিন্দু মাত্র, যা তারা মুসলিমের অন্তরে মসজিদে আকসার শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানকে হেয় করার নিমিত্তে লিখেছে। তাদের জোর দাবি মসজিদে আকসা আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদের নাম”। [আরো জানার জন্য দেখুন: ড. মাহমুদ ইবরাহিমের লেখা “ফাদায়েলে বায়তুল মাকদিস”। আব্দুল লতিফ জাকি আবু হাশেম এর তাহকিক করা: “আদাবু ফাদায়েলিল মুদান ফি দিরাসাতিল মুস্তাশরিকিনিল ইয়াহুদ”। জামেয়াতুল কুদসের অধীন আদব অনুষদের ডিন ড. হাসান আব্দুল হামিদ সালওয়াদি লিখিত: المستشرقون اليهود ومحاولة التهوين من قدسية القدس ومكانتها في الإسلام . এবং প্রফেসর আমনুন কুহিন লিখিত: القدس دراسات في تاريخ المدينة .]
প্রাচ্যবিদরা কুদস, মসজিদে আকসা ও মুসলিমদের নিকট তার মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এসব বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্য ইসলামের দৃষ্টিতে কুদসের কোন বৈশিষ্ট্য নয় প্রমাণ করা। কিংবা রণকৌশল ও প্রশাসনিক দিক থেকে তার কোন আলাদা বিশেষত্ব নেই দেখানো। এ ব্যাপারে তাদের প্রসিদ্ধ কতিপয় অভিমত:
জুলদ তিসহির:
প্রাচ্যবিদ লেখক জুলদ তিসহির (১৮৫০-১৯২০ইং) বংশগত দিক থেকে ইহুদি। কুদস ও মসজিদে আকসা সম্পর্কে গবেষণাকারী অনেক গবেষক তাকে গুরু ও মৌলিক গ্রন্থ প্রণেতা জ্ঞান করেন। পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদ ছাত্রদের জন্য তার লেখা মৌলিক রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম মসজিদে আকসা ও তাতে বরকত সম্পর্কিত হাদিসগুলোতে সন্দেহ করেন। তার ধারণায় আব্দুল্লাহ ইব্ন জুবায়ের এর বিদ্রোহের সময় আব্দুল মালিক ইব্ন মারওয়ান মানুষদেরকে হজ থেকে বারণ করেন। তিনি মসজিদে আকসায় পাথরের একটি গম্বুজ তৈরি করেন, যেন মানুষেরা কাবার পরিবর্তে তার হজ ও তাওয়াফ করে!
তিনি আরো মনে করেন: আব্দুল মালিক চেয়েছেন মানুষ যেন দীন হিসেবে মসজিদে আকসার হজ করে। এ জন্য তিনি জুহরিকে [ইমাম জুহরির পুরো নাম: আবু বকর মুহাম্মদ ইব্ন মুসলিম ইব্ন উবাইদুল্লাহ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন শিহাব আল-কুরাশি আয-যুহরি। ৫১হি.তে জন্ম গ্রহণ করেন। বড় ও প্রখ্যাত তাবেয়ীনদের অন্যতম তিনি। তিনি দশজন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন, তন্মধ্যে আনাস ইব্ন মালেক, ইব্ন ওমর, জাবের, সুহাইল ইব্ন সাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার উস্তাদ ছিল সায়ীদ ইব্নুল মুসাইয়্যীব। ইমাম আহমদ তার সম্পর্কে বলেন: “যুহরি মানুষের মধ্যে সুন্দর হাদিস বর্ণনাকারী ও উত্তম সনদের অধিকারী”। ইব্ন হাজার তার সম্পর্কে তাহযিবুত তাহযিব গ্রন্থে বলেন: “তিনি ফকিহ, হাফেজ ও মাদানী ছিলেন। প্রখ্যাত আলেমদের অন্যতম এবং হিজায ও শামের বড় আলেম ছিলেন”।ইমাম যাহাবি তার সম্পর্কে বলেন: “তিনি ইমাম, হাফেয ও হুজ্জত। অধিক হাদিস বর্ণনাকারী এবং হিযাজ ও শামে অধিক যাতায়াতের কারণে তাকে হিজায ও শামের আলেম বলা হয়। আমর ইব্ন দিনার বলেছেন: “আমি যুহরি থেকে হাদিসের ওপর অধিক পারদর্শী কাউকে দেখিনি”।হাদিসের ইমাম, হাফেয ও সার্টিফাইকারী আলেমগণ তার আমানতদারী, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের স্বীকৃতিতে একমত। প্রাচ্যবিদ কট্টরপন্থী ইহুদি জুলদ তিসহিরের পূর্বে কাউকে শুনিনি হাদিসের মহান ইমামের সততা ও আমানতদারী সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।শুধু জুলদ তিসহির-ই অপবাদ দিলেন যে, তিনি উমাইয়াদের জন্য হাদিস রচনা করেছেন। কোন বিবেক সূলভ নয় যে, সাহাবী, তাবেয়ী, ইসলামের ফকিহ ও হাদিসের ইমামগণ তেরো শতাব্দি যাবত ইব্ন শিহাব যুহরি সম্পর্কে ধোঁকায় পতিত থাকবেন!তারা কেউ ইব্ন শিহাবের হাদিস রচনা ও উমাইয়াদের খুশি করার জন্য মিথ্যা বলার সাহস সম্পর্কে জানলেন না! শুধু জুলদ তিসহিরই জানলেন!] পেয়ে যান। তিনি উম্মতে মুসলিমার মধ্যে বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও হাদিস রচনায় পারঙ্গম ছিলেন, যেমন তিনি রচনা করেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা যাবে না”। তার ধারণায় বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো শুধু যুহরি সূত্রেই বর্ণিত! [দেখুন: ড. মুস্তফা সাবেয়ী লিখিত: “আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত তাশরিঈল ইসলামী”: (পৃ.১৮৯-১৯৯), আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, চতুর্থ প্রকাশ: ১৪০৫হি.-১৯৮৫ইং.]
রিজেস বেলাশীর:
ফ্রান্সের প্রাচ্যবিদ “রিজেস বেলাশীর” [“রিজাশ বেলাশীর” (১৯০০-১৯৭৩ইং) বিংশ শতাব্দির ফ্রান্সের প্রসিদ্ধ প্রাচ্যবিদ। দিমাশকের ইলমী আরবী কমপ্লেস্কের সদস্য! তিনি ১৯৫৭ইং সনে ফ্রান্সের ভাষায় কুরআনের অর্থানুবাদ করেন। ১৯৬৬ইং পুনরায় প্রকাশ করেন। তার তাফসির ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে ভরপুর। তিনি পাঠকদের বুঝাতে চেয়েছেন যে, কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রচনা।] ফ্রান্সের ভাষায় তার নিজের কুরআন অনুবাদে বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
“যেসব মুসলিমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল, তারা মনে করত মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ। আর ইসরা অর্থাৎ মিরাজ হয়েছে আসমানে। কিন্তু উমাইয়াদের যুগে মক্কা মক্কাকে ইসলামের একক রাজধানীর বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চলেছে। সে ধারাবাহিকতায় মসজিদে আকসাকে আসমানি মসজিদ স্বীকার করা হয়নি, তবে পরিণতিতে তা ইসলামী রাজ্যের রাজধানী না হয়ে ইহুদি রাজ্যের একটি শহরে রূপান্তর হয়েছে! [রিজাশ বেলাশীর কর্তৃক ফ্রান্সের ভাষায় কুরআনের অর্থানুবাদ, (পৃ.৩০৫)]
এসব ইহুদি ও প্রাচ্যবিদরা কেন আমাদেরকে বললেন না কোথা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন?! তারা কোন তথ্য ও উৎসের ওপর নির্ভর করে বলেছেন যে, মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ এবং তার স্থান সন্দেহযুক্ত?!
সারাংশ:
আমাদের নিকট প্রমাণিত যে, ইহুদিরা তাদের মতের সমর্থনে শিয়াদের বানোয়াট বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। শিয়ারা যার ওপর ভিত্তি করে উমাইয়া খলিফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে ও তাদের পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা মসজিদে আকসার ঊর্ধ্বে প্রমাণ করেছে। ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে মসজিদে আকসার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য শিয়াদের মিথ্যা ও বানায়োট বর্ণনাগুলো লুফে নিয়েছে। শিয়াদের সুরে তারা বলে ইসলামের দৃষ্টিতে কুদসের কোন মর্যাদা নেই। ইসলাম ও কুদসের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। মসজিদে আকসা প্রকৃত পক্ষে কুদস ব্যতীত অন্য কোন মসজিদ। [জামেয়া কুদস ফিলিস্তিনের দাওয়া ও উসুলে দীন অনুষদের ফিকাহ ও উসূলের উস্তাদ ড. হুসামুদ্দিন ‘আফানাহকে “শিয়াদের নিকট মসজিদে আকসার মর্যাদা” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেন: “মুদ্দাকথা আহলে সুন্নাহ যেভাবে পবিত্র মসজিদে আকসাকে দেখে শিয়ারা সেভাবে দেখে না। শিয়াদের নিকট মসজিদে আকসা আসমানে। তাদের যারা বায়তুল মাকদিসে মসজিদে আকসাকে স্বীকার করে, তাদের নিকট মসজিদে কুফা মসজিদে আকসা থেকে উত্তম। সন্দেহ নেই এ মন্তব্য আল্লাহর দীনের ওপর মিথ্যাচার, কারণ মসজিদে কুফার কোন ফজিলত কুরআন বা হাদিসে নেই”। দেখুন: ড. হুসামুদ্দিন ‘আফানার ওয়েব সাইট: www.yasaloonak.net আরো দেখনু: www.haqeeqa.com]
জুলদ তিসহির:
প্রাচ্যবিদ লেখক জুলদ তিসহির (১৮৫০-১৯২০ইং) বংশগত দিক থেকে ইহুদি। কুদস ও মসজিদে আকসা সম্পর্কে গবেষণাকারী অনেক গবেষক তাকে গুরু ও মৌলিক গ্রন্থ প্রণেতা জ্ঞান করেন। পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদ ছাত্রদের জন্য তার লেখা মৌলিক রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম মসজিদে আকসা ও তাতে বরকত সম্পর্কিত হাদিসগুলোতে সন্দেহ করেন। তার ধারণায় আব্দুল্লাহ ইব্ন জুবায়ের এর বিদ্রোহের সময় আব্দুল মালিক ইব্ন মারওয়ান মানুষদেরকে হজ থেকে বারণ করেন। তিনি মসজিদে আকসায় পাথরের একটি গম্বুজ তৈরি করেন, যেন মানুষেরা কাবার পরিবর্তে তার হজ ও তাওয়াফ করে!
তিনি আরো মনে করেন: আব্দুল মালিক চেয়েছেন মানুষ যেন দীন হিসেবে মসজিদে আকসার হজ করে। এ জন্য তিনি জুহরিকে [ইমাম জুহরির পুরো নাম: আবু বকর মুহাম্মদ ইব্ন মুসলিম ইব্ন উবাইদুল্লাহ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন শিহাব আল-কুরাশি আয-যুহরি। ৫১হি.তে জন্ম গ্রহণ করেন। বড় ও প্রখ্যাত তাবেয়ীনদের অন্যতম তিনি। তিনি দশজন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন, তন্মধ্যে আনাস ইব্ন মালেক, ইব্ন ওমর, জাবের, সুহাইল ইব্ন সাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার উস্তাদ ছিল সায়ীদ ইব্নুল মুসাইয়্যীব। ইমাম আহমদ তার সম্পর্কে বলেন: “যুহরি মানুষের মধ্যে সুন্দর হাদিস বর্ণনাকারী ও উত্তম সনদের অধিকারী”। ইব্ন হাজার তার সম্পর্কে তাহযিবুত তাহযিব গ্রন্থে বলেন: “তিনি ফকিহ, হাফেজ ও মাদানী ছিলেন। প্রখ্যাত আলেমদের অন্যতম এবং হিজায ও শামের বড় আলেম ছিলেন”।ইমাম যাহাবি তার সম্পর্কে বলেন: “তিনি ইমাম, হাফেয ও হুজ্জত। অধিক হাদিস বর্ণনাকারী এবং হিযাজ ও শামে অধিক যাতায়াতের কারণে তাকে হিজায ও শামের আলেম বলা হয়। আমর ইব্ন দিনার বলেছেন: “আমি যুহরি থেকে হাদিসের ওপর অধিক পারদর্শী কাউকে দেখিনি”।হাদিসের ইমাম, হাফেয ও সার্টিফাইকারী আলেমগণ তার আমানতদারী, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের স্বীকৃতিতে একমত। প্রাচ্যবিদ কট্টরপন্থী ইহুদি জুলদ তিসহিরের পূর্বে কাউকে শুনিনি হাদিসের মহান ইমামের সততা ও আমানতদারী সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।শুধু জুলদ তিসহির-ই অপবাদ দিলেন যে, তিনি উমাইয়াদের জন্য হাদিস রচনা করেছেন। কোন বিবেক সূলভ নয় যে, সাহাবী, তাবেয়ী, ইসলামের ফকিহ ও হাদিসের ইমামগণ তেরো শতাব্দি যাবত ইব্ন শিহাব যুহরি সম্পর্কে ধোঁকায় পতিত থাকবেন!তারা কেউ ইব্ন শিহাবের হাদিস রচনা ও উমাইয়াদের খুশি করার জন্য মিথ্যা বলার সাহস সম্পর্কে জানলেন না! শুধু জুলদ তিসহিরই জানলেন!] পেয়ে যান। তিনি উম্মতে মুসলিমার মধ্যে বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও হাদিস রচনায় পারঙ্গম ছিলেন, যেমন তিনি রচনা করেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা যাবে না”। তার ধারণায় বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো শুধু যুহরি সূত্রেই বর্ণিত! [দেখুন: ড. মুস্তফা সাবেয়ী লিখিত: “আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত তাশরিঈল ইসলামী”: (পৃ.১৮৯-১৯৯), আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, চতুর্থ প্রকাশ: ১৪০৫হি.-১৯৮৫ইং.]
রিজেস বেলাশীর:
ফ্রান্সের প্রাচ্যবিদ “রিজেস বেলাশীর” [“রিজাশ বেলাশীর” (১৯০০-১৯৭৩ইং) বিংশ শতাব্দির ফ্রান্সের প্রসিদ্ধ প্রাচ্যবিদ। দিমাশকের ইলমী আরবী কমপ্লেস্কের সদস্য! তিনি ১৯৫৭ইং সনে ফ্রান্সের ভাষায় কুরআনের অর্থানুবাদ করেন। ১৯৬৬ইং পুনরায় প্রকাশ করেন। তার তাফসির ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে ভরপুর। তিনি পাঠকদের বুঝাতে চেয়েছেন যে, কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রচনা।] ফ্রান্সের ভাষায় তার নিজের কুরআন অনুবাদে বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
“যেসব মুসলিমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল, তারা মনে করত মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ। আর ইসরা অর্থাৎ মিরাজ হয়েছে আসমানে। কিন্তু উমাইয়াদের যুগে মক্কা মক্কাকে ইসলামের একক রাজধানীর বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চলেছে। সে ধারাবাহিকতায় মসজিদে আকসাকে আসমানি মসজিদ স্বীকার করা হয়নি, তবে পরিণতিতে তা ইসলামী রাজ্যের রাজধানী না হয়ে ইহুদি রাজ্যের একটি শহরে রূপান্তর হয়েছে! [রিজাশ বেলাশীর কর্তৃক ফ্রান্সের ভাষায় কুরআনের অর্থানুবাদ, (পৃ.৩০৫)]
এসব ইহুদি ও প্রাচ্যবিদরা কেন আমাদেরকে বললেন না কোথা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন?! তারা কোন তথ্য ও উৎসের ওপর নির্ভর করে বলেছেন যে, মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ এবং তার স্থান সন্দেহযুক্ত?!
সারাংশ:
আমাদের নিকট প্রমাণিত যে, ইহুদিরা তাদের মতের সমর্থনে শিয়াদের বানোয়াট বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। শিয়ারা যার ওপর ভিত্তি করে উমাইয়া খলিফাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে ও তাদের পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা মসজিদে আকসার ঊর্ধ্বে প্রমাণ করেছে। ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে মসজিদে আকসার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য শিয়াদের মিথ্যা ও বানায়োট বর্ণনাগুলো লুফে নিয়েছে। শিয়াদের সুরে তারা বলে ইসলামের দৃষ্টিতে কুদসের কোন মর্যাদা নেই। ইসলাম ও কুদসের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। মসজিদে আকসা প্রকৃত পক্ষে কুদস ব্যতীত অন্য কোন মসজিদ। [জামেয়া কুদস ফিলিস্তিনের দাওয়া ও উসুলে দীন অনুষদের ফিকাহ ও উসূলের উস্তাদ ড. হুসামুদ্দিন ‘আফানাহকে “শিয়াদের নিকট মসজিদে আকসার মর্যাদা” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেন: “মুদ্দাকথা আহলে সুন্নাহ যেভাবে পবিত্র মসজিদে আকসাকে দেখে শিয়ারা সেভাবে দেখে না। শিয়াদের নিকট মসজিদে আকসা আসমানে। তাদের যারা বায়তুল মাকদিসে মসজিদে আকসাকে স্বীকার করে, তাদের নিকট মসজিদে কুফা মসজিদে আকসা থেকে উত্তম। সন্দেহ নেই এ মন্তব্য আল্লাহর দীনের ওপর মিথ্যাচার, কারণ মসজিদে কুফার কোন ফজিলত কুরআন বা হাদিসে নেই”। দেখুন: ড. হুসামুদ্দিন ‘আফানার ওয়েব সাইট: www.yasaloonak.net আরো দেখনু: www.haqeeqa.com]
মসজিদে আকসার মর্যাদা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণকারীদের বর্ণনা শেষে, উচিত হবে পাঠকের সামনে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট মসজিদে আকসার ফজিলত তুলে ধরা। যাতে রয়েছে তাদের মিথ্যাচার ও বানোয়াট বর্ণনার উত্তর:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ بَلۡ نَقۡذِفُ بِٱلۡحَقِّ عَلَى ٱلۡبَٰطِلِ فَيَدۡمَغُهُۥ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٞۚ وَلَكُمُ ٱلۡوَيۡلُ مِمَّا تَصِفُونَ ١٨ ﴾ [ الانبياء : ١٨ ]
“বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছ তার জন্য”। [সূরা আম্বিয়া: (১৮)]
মসজিদে আকসা ও বায়তুল মাকদিসের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর দলিল রয়েছে। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা পোষণকারী ব্যতীত কেউ তাতে সন্দেহ করে না। মসজিদে আকসার ফজিলত সম্পর্কে সন্দেহকারীদের যুক্তি ও দলিলগুলো মাকড়সার ঘরের চেয়েও দুর্বল। আমরা সংক্ষেপে তার আলোচনা করছি। আল্লাহর কিতাবের বাণী আমাদের জন্য যথেষ্ট। কুরআন আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছে বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে কতক বেকুবরা প্রশ্ন ও আপত্তি করবে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়ার আগেই আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ سَيَقُولُ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَ ٱلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمۡ عَن قِبۡلَتِهِمُ ٱلَّتِي كَانُواْ عَلَيۡهَاۚ قُل لِّلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٤٢ ﴾ [ البقرة : ١٤٢ ] “অচিরেই নির্বোধ লোকেরা বলবে, ‘কীসে তাদেরকে তাদের কিবলা থেকে ফিরাল, যার উপর তারা ছিল?’ বল, ‘পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে চান সোজা পথ দেখান”। [সূরা বাকরা: (১৪২)]
কিবলা পরিবর্তনে আপত্তিকারী কুরআনের ভাষায় বেকুব। কারণ আল্লাহর হুকুম ও শরীয়তের ওপর সে আপত্তি করেছে। “সুফাহা” শব্দের অর্থ বিবেচনা করলে তাদের কথার উত্তর বা তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন হয় না। তবুও আল্লাহ এ সন্দেহ জিইয়ে রাখেননি, বরং দূরীভূত করেছেন, কতক অন্তরে যার উদ্রেক হয় তার উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন:
قُل لِّلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ “বল: পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই”। অর্থাৎ হে মুহাম্মদ তাদেরকে বল: আল্লাহর জন্যই পূর্ব-পশ্চিম এবং প্রত্যেক দিকই তার মালিকানাধীন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ بَلۡ نَقۡذِفُ بِٱلۡحَقِّ عَلَى ٱلۡبَٰطِلِ فَيَدۡمَغُهُۥ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٞۚ وَلَكُمُ ٱلۡوَيۡلُ مِمَّا تَصِفُونَ ١٨ ﴾ [ الانبياء : ١٨ ]
“বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছ তার জন্য”। [সূরা আম্বিয়া: (১৮)]
মসজিদে আকসা ও বায়তুল মাকদিসের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর দলিল রয়েছে। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা পোষণকারী ব্যতীত কেউ তাতে সন্দেহ করে না। মসজিদে আকসার ফজিলত সম্পর্কে সন্দেহকারীদের যুক্তি ও দলিলগুলো মাকড়সার ঘরের চেয়েও দুর্বল। আমরা সংক্ষেপে তার আলোচনা করছি। আল্লাহর কিতাবের বাণী আমাদের জন্য যথেষ্ট। কুরআন আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছে বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে কতক বেকুবরা প্রশ্ন ও আপত্তি করবে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়ার আগেই আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেন। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ سَيَقُولُ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَ ٱلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمۡ عَن قِبۡلَتِهِمُ ٱلَّتِي كَانُواْ عَلَيۡهَاۚ قُل لِّلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ يَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٤٢ ﴾ [ البقرة : ١٤٢ ] “অচিরেই নির্বোধ লোকেরা বলবে, ‘কীসে তাদেরকে তাদের কিবলা থেকে ফিরাল, যার উপর তারা ছিল?’ বল, ‘পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে চান সোজা পথ দেখান”। [সূরা বাকরা: (১৪২)]
কিবলা পরিবর্তনে আপত্তিকারী কুরআনের ভাষায় বেকুব। কারণ আল্লাহর হুকুম ও শরীয়তের ওপর সে আপত্তি করেছে। “সুফাহা” শব্দের অর্থ বিবেচনা করলে তাদের কথার উত্তর বা তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন হয় না। তবুও আল্লাহ এ সন্দেহ জিইয়ে রাখেননি, বরং দূরীভূত করেছেন, কতক অন্তরে যার উদ্রেক হয় তার উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন:
قُل لِّلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ “বল: পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই”। অর্থাৎ হে মুহাম্মদ তাদেরকে বল: আল্লাহর জন্যই পূর্ব-পশ্চিম এবং প্রত্যেক দিকই তার মালিকানাধীন।
মসজিদে আকসার মর্যাদা ও ফজিলতের ব্যাপারে সন্দেহকারীদের জওয়াব দেয়ার পূর্বে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট মসজিদে আকসার ফজিলত ও ইসরার পবিত্র ভূমির মর্যাদা তুলে ধরব। তাহলে সত্য বের হবে ও ইসলামী নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট জানা যাবে। নিন্মে তার বর্ণনা তুলে ধরলাম:
মসজিদে আকসা: কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে যার উল্লেখ রয়েছে, সকল মুফাসসির যার ফজিলতের ওপর একমত। তাদের দলিল কুদস ও মসজিদে আকসা সম্পৃক্ত সূরা ইসরার শুধু প্রথম আয়াতই নয়, বরং কুরআনের অন্যান্য আয়াতও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَنَجَّيۡنَٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا لِلۡعَٰلَمِينَ ٧١ ﴾ [ الانبياء : ٧١ ]
“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি”। [সূরা আম্বিয়া: (৭১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ عَاصِفَةٗ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦٓ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيۡءٍ عَٰلِمِينَ ٨١ ﴾ [ الانبياء : ٨١ ]
“আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম”। [সূরা আম্বিয়া: (৮১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَجَعَلۡنَا بَيۡنَهُمۡ وَبَيۡنَ ٱلۡقُرَى ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا قُرٗى ظَٰهِرَةٗ وَقَدَّرۡنَا فِيهَا ٱلسَّيۡرَۖ سِيرُواْ فِيهَا لَيَالِيَ وَأَيَّامًا ءَامِنِينَ ١٨ ﴾ [ سبا : ١٨ ]
“আর তাদের ও যে সব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাতে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। (তাদেরকে বলা হয়েছিল) ‘তোমরা এসব জনপদে রাত-দিন (যখন ইচ্ছা) নিরাপদে ভ্রমণ কর”। [সূরা সাবা: (১৮)]
অন্যত্র বলেন:
وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ ١ وَطُورِ سِينِينَ ٢ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣
“কসম ‘তীন ও যায়তূন’ এর। কসম ‘সিনাই’ পর্বতের, কসম এই নিরাপদ নগরীর”। [সূরা তীন: (১-৩)]
কতক মুফাসসির উল্লেখ করেছেন তীন দ্বারা উদ্দেশ্য শাম দেশ ও জয়তুন দ্বারা উদ্দেশ্য বায়তুল মাকদিস।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
﴿ وَإِذۡ قُلۡنَا ٱدۡخُلُواْ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةَ فَكُلُواْ مِنۡهَا حَيۡثُ شِئۡتُمۡ رَغَدٗا وَٱدۡخُلُواْ ٱلۡبَابَ سُجَّدٗا وَقُولُواْ حِطَّةٞ نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطَٰيَٰكُمۡۚ وَسَنَزِيدُ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٥٨ ﴾ [ البقرة : ٥٨ ]
“আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নিচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব”। [সূরা বাকারা: (৫৮)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ يَٰقَوۡمِ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡأَرۡضَ ٱلۡمُقَدَّسَةَ ٱلَّتِي كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡ وَلَا تَرۡتَدُّواْ عَلَىٰٓ أَدۡبَارِكُمۡ فَتَنقَلِبُواْ خَٰسِرِينَ ٢١ ﴾ [ المائدة : ٢١ ]
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় মসজিদ। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الْأَرْضِ أَوَّلَ ؟ قَالَ : " الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ، قَالَ : قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ، قَالَ : الْمَسْجِدُ الْأَقْصَى، قُلْتُ : كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا، قَالَ : أَرْبَعُونَ سَنَةً ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ بَعْدُ فَصَلِّهْ فَإِنَّ الْفَضْلَ فِيهِ»
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল জমিনে কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদে হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বলেন চল্লিশ বছর। অতঃপর যেখানে তোমাকে সালাত পায়, সেখানে তা আদায় কর, কারণ এতেই ফজিলত”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৩৬৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ জুলহজ ১৪১৯হি. মার্চ ১৯৯৯ইং।]
মসজিদে আকসা: বরকতময়, বরকতময় তার চারপাশ। মসজিদে আকসা বরকতময় ভূমির মসজিদ, যার চারপাশেও আল্লাহ বরকত দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত সম্পর্কে বলা হয়, মসজিদে আকসার যদি অন্য কোন ফজিলত না থাকত এ আয়াত ব্যতীত তাহলেও যথেষ্ট ছিল। এখানে সকল বরকতের বর্ণনা রয়েছে। কারণ যার চারপাশ বরকতপূর্ণ, তা অবশ্যই দ্বিগুণ বরকতপূর্ণ। মসজিদে আকসাকে মসজিদে হারাম ও মসজদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াও একটি বরকত।
মসজিদে আকসা: মুসলিমদের প্রথম কিবলা। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْكَعْبَةِ، فَأَنْزَلَ اللَّهُف قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِق، فَتَوَجَّهَ نَحْوَ الْكَعْبَةِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন, তবে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন যেন তাকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿ قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ ١٤٤ ﴾ [ البقرة : ١٤٤ ]
“আকাশের দিকে বারবার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখেছি”। [সূরা বাকারা: (১৪৪)] ফলে তিনি কাবার দিকে ফিরে গেলেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৯৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।] বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে তার মর্যাদা রহিত হয়নি, বরং তার মর্যাদা মুসলিমের অন্তর ও ইসলামী শরীয়তে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে।
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা থেকে এখানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। তিনি আল্লাহর দুই ঘর ও দুই কেবলার ফজিলত, মর্যাদা ও দর্শন লাভ করেন। আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ، طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، قَالَ : فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ، قَالَ : فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الأَنْبِيَاءُ، قَالَ : ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ، فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ : اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ، ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ»
“আমার নিকট বুরাক আনা হল, বুরাক সাদা চতুষ্পদ জন্তু গাধার চেয়ে লম্বা ও খচ্ছরের চেয়ে ছোট। তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে পা রাখে। তিনি বলেন: আমি তাতে সাওয়ার হয়ে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছি। তিনি বলেন: আমি তাকে সেই খুঁটির সাথে বাঁধলাম, যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি বের হলাম। আমার নিকট জিবরিল আলাইহিস সালাম একটি মদ ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসলেন, আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আমাদের নিয়ে দুনিয়ার আসমানে আরোহণ করলেন...”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৫৯), প্রকাশ দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ মুহররম, ১৪২১হি. – এপ্রিল ২০০০ইং।]
মসজিদে আকসা: একমাত্র মসজিদ, যেখানে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমাদের নবী পর্যন্ত সবাই একত্র হয়েছেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইস্তেমা এখানেই সংগঠিত হয়েছে। ইসরার রাতে সকল নবীদের নিয়ে তিনি ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আকসা মুসলিমদের নিদর্শন, উম্মতে মুহাম্মদ সেখানে ইমামতি করবে, শেষ নবী পূর্বের সকল নবীর পবিত্র নিদর্শনসমূহের উত্তরাধিকারী এবং তার রিসালাত সকল পবিত্র ভূমিকে অন্তর্ভুক্তকারী। আরো প্রমাণিত হয় সকল পবিত্র ভূমি দীনে ইসলামের মিরাস, যার ওয়ারিশ কোন দীন হতে পারেনি।
মসজিদে আকসা ব্যতীত দুনিয়ার কোথাও সকল নবী একত্র হননি, এ থেকেও মসজিদে আকসার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
ইমাম মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ، وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَايَ، فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا، فَكُرِبْتُ كُرْبَةً مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ قَطُّ، قَالَ : فَرَفَعَهُ اللَّهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ، إِلَّا أَنْبَأْتُهُمْ بِهِ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ، كَأَنَّهُ مِنَ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ " ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ يَعْنِي نَفْسَهُ، فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنً الصَّلَاةِ، قَالَ قَائِلٌ : يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ»
আমি হিজরে অবস্থান করছিলাম, আর কুরাইশরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, যা আমি ভালো করে আত্মস্থ করেনি। আমি খুব সমস্যায় পড়লাম, এরপূর্বে কখনো এরূপ সমস্যায় পড়িনি। তিনি বলেন আল্লাহ আমার সামনে মসজিদে আকসা উঁচিয়ে ধরলেন, আমি তা দেখতে ছিলাম। তারা আমাকে কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি, যার সংবাদ আমি দেয়নি। আমি নিজেকে নবীদের জমাতের মধ্যে দেখেছি, দেখলাম মুসা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, দেখতে হালকা গড়ন ও কঠিন স্বভাবের, যেন তিনি শানুআ বংশের কেউ। আরো দেখলাম ঈসা ইব্ন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে উরওয়া ইব্ন মাসউদ সাকাফীর। আরো দেখলাম ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে তোমাদের সাথীর, অর্থাৎ তার নিজের। অতঃপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। আমি যখন সালাত থেকে ফারেগ হলাম, কেউ আমাকে বলল হে মুহাম্মদ, তিনি জাহান্নামের ফেরেশতা তাকে সালাম করুন, আমি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম, তিনিই আমাকে প্রথমে সালাম করলেন”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৭৮), সহিহ মুসলিম, প্রকাশক দারুস সালাম।]
মসজিদে আকসা: যার ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন মসজিদে আকসার সাথে মুসলিমের অন্তর এতটা সম্পৃক্ত হবে যে, সে চাইবে তার জন্য ছোট একটু জায়গা হোক, যেখান থেকে সে মসজিদে আকসার দিকে উঁকি দিবে, অথবা যেখান থেকে সে মসজিদে আকসা দেখবে। এতটুকু জায়গা তার নিকট দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«تَذَاكَرْنَا وَنَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ، أَيُّهُمَا أَفْضَلُ : مَسْجِدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ، أَوْ مَسْجِدُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ : " صَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا، أَفْضَلُ مِنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ فِيهِ، وَلَنِعْمَ الْمُصَلَّى، وَلَيُوشِكَنَّ أَنْ لا يَكُونَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الأَرْضِ، حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا جَمِيعًا " ، أَوْ قَالَ : خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আলোচনা করলাম কোনটি উত্তম: মসজিদে রাসূলুল্লাহ না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত সেখানে চার সালাত থেকে উত্তম। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম জায়গা। হয়তো কোন ব্যক্তির জন্য তার ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা হবে, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যাবে, তার জন্য তা সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা তিনি বলেছেন: দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: বিজয়ের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার বিজয়ের সংবাদ দিয়েছেন, যা তার নবুওয়তের আলামত। আউফ ইব্ন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তাবুক যুদ্ধে আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করি, তিনি চামড়ার তাবুতে ছিলেন। তিনি বলেন: কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি আলামত গণনা কর, তন্মধ্যে তিনি বলেন: অতঃপর বায়তুল মাকদিস বিজয় হবে...”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩১৭৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
মসজিদে আকসা: তায়েফায়ে মানসুরা বা সাহায্য প্রাপ্ত দলের আশ্রয়স্থল ও মুমিনদের মধ্যবর্তী ঘর। ইমরান ইব্ন হাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ »
“আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর জিহাদ করতে থাকবে। তাদের সাথে যারা শত্রুতা করবে, তাদের ওপর তারা বিজয়ী হবে, অবশেষে তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি মাসিহ দজ্জালের সাথে জিহাদ করবে”। [আহমদ, আবু দাউদ, হাকেম, তাবরানি ফিল কাবির, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (২৪৮৪), সুনানে আবু দাউদ, প্রকাশক মাকতাবাতুল মাআরেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
আমরা জানি ঈসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনে অবস্থিত বাবে লুদ্দে মাসিহকে পাকড়াও করে হত্যা করবেন।
মসজিদে আকসা: সেই ভূমি যেখানে বান্দাদের উপস্থিতি ও যেখান থেকে পুনরুত্থান ঘটবে। মায়মুনা বিনতে সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর নবী বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বলেন, তিনি বললেন:
« أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَالْمَنْشَرِ»
“উপস্থিতি ও পুনরুত্থানের স্থান”। [আহমদ, ইব্ন মাজাহ, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন রিবঈ রচিত: ফাদায়েলে শাম ও দিমাস্কের হাদিস।]
মসজিদে আকসা: যেখানে দজ্জাল থেকে নিরাপত্তার জন্য মুসলিমরা আশ্রয় নিবে। দজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দজ্জাল সম্পর্কে বলেন:
«عَلَامَتُهُ يَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ أَرْبعِينَ صَباحًا، يَبلُغُ سُلْطَانُهُ كُلَّ مَنْهَلٍ، لَا يَأْتِي أَرْبعَةَ مَسَاجِدَ : الْكَعْبةَ، وَمَسْجِدَ الرَّسُولِ، وَالْمَسْجِدَ الْأَقْصَى، وَالطُّورَ»
“... তার নিদর্শন হল সে জমিনে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। তার রাজত্ব প্রত্যেক ঘাটেই বিস্তার করবে। চারটি জায়গায় সে প্রবেশ করতে পারবে না, মসজিদে কাবা, মসজিদুর রাসূল, মসজিদে আকসা ও তূর...”। [আহমদ, হাদিস নং: (২৪০৮৫), (২৪০৮৪), (২৪০৮৩), (২৩৪৭৮), এ হাদিসের সনদ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। দেখুন: মুসনাদে আহমদ, প্রকাশক বায়তুল আফকারিদ দাওলিয়াহ, (২০০৪ইং)]
মসজিদে আকসা: যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ। সকল আলেম একমত যে, মসজিদে আকসা যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা বৈধ নয়, তন্মধ্যে মসজিদে আকসা অন্যতম। এ তিনটি মসজিদের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা অন্যান্য মসজিদের নেই। বুখারি ও মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ، الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى»
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না, মসজিদে হারাম, মসজিদুর রাসূল ও মসজিদে আকসা”। [বুখারি, হাদিস নং: (১১৮৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
তাই আমরা দেখি অনেক সাহাবিই মসজিদে আকসায় সালাত আদায়ের জন্য দীর্ঘ সফর করেছেন। পরবর্তীতে আদর্শ পূর্বসূরিগণ সেখানে গিয়েছেন, ইলমের দরস ও ছাত্রদের কারণে মুখরিত হয়েছিল মসজিদে আকসা।
ইমাম নববি রহ. বলেন: “এ হাদিসে তিনটি মসজিদের ফজিলত ও অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা রয়েছে। কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ, তাতে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ ও তার জন্য সফর করা বৈধ। আলেমগণ বলেন: এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে সফর করে যাওয়া ফজিলতের নয়। আমাদের মতাবলম্বী শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-জু্ওয়াইনি বলেন: “এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের জন্য সফর করা হারাম”। [আল-মিনহাজ, শারহু সহিহে মুসলিম।]
হাফেজ ইব্ন হাজার বলেন: “হাদিসে এ তিনটি মসজিদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ। প্রথম মসজিদ মুসলিমদের কেবলা, সেখানেই তারা হজ করে। দ্বিতীয় মসজিদ পূর্ববর্তী উম্মতের কেবলা। তৃতীয় মসজিদ তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে”। [ফাতহুল বারি: (৩/৬০৩)]
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বায়তুল মাকদিসের যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করার হুকুম সম্পর্কে বলেন: বুখারি ও মুসলিমে প্রমাণিত যে, তিনটি মসজিদ ব্যতীত (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না... বুখারি ও মুসলিম এ হাদিস আবু সাইদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। অন্যান্য সনদেও বর্ণিত রয়েছে। এ হাদিস প্রসিদ্ধ ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। সকল আলেম এ হাদিস সহিহ বলেছেন, গ্রহণ করেছেন ও তার সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। মুসলিম উম্মার সকল আলেম একমত যে, ইবাদতের জন্য মসজিদে আকসায় সফর করা মুস্তাহাব। ইব্ন ওমর এখানে এসে সালাত আদায় করতেন”। [মাজমু ফতোয়া শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ: (৫-৬/২৭), দ্বিতীয় প্রকাশ (১৩৯৮হি.) আব্দুর রহমান আননাজদি কর্তৃক সংকলিত ও সজ্জিত।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাতের সাওয়াব বর্ধিত হয়। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আলোচনা করলাম উভয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম: মসজিদুর রাসূল না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত তাতে চার সালাতের ফজিলত রাখে। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম স্থান। এমন সময় আসবে যখন ব্যক্তির জন্য ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যায়, সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা বলেছেন: তার জন্য উত্তম হবে দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ। ইমাম নাসায়ি আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্নুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সুলাইমান ইব্ন দাউদ বায়তুল মাকদিস নির্মাণ শেষে আল্লাহর তিনটি দোয়া করেছেন: তার বিচারের ন্যায় বিচারের তাওফিক পাওয়া। এমন বাদশাহি লাভ করা তার পরবর্তী যা কারো লাভ হবে না। এবং যে কেউ এ মসজিদে সালাতের উদ্দেশ্যে আসবে, সে যেন তার মায়ের প্রসবের দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “প্রথম দু’টি তাকে দেয়া হয়েছে। আর আমি আশা করি আমাকে তৃতীয়টি প্রদান করা হয়েছে”। [নাসায়ি, ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং: (১৪০৮), দেখুন: সুনানে নাসায়ি, প্রকাশক মাকতাবাতুল মায়ারেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
মসজিদে আকসা: কুদস ও ফিলিস্তিনে অবিস্থত, আদি যুগ থেকেই পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰقَوۡمِ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡأَرۡضَ ٱلۡمُقَدَّسَةَ ٢١ ﴾ [ المائدة : ٢١ ]
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
ফিলিস্তিনে বনি ইসরাইলের প্রবেশ করার পূর্বে মুসা আলাইহিস সালাম নিজ কওমকে এ নির্দেশ করেছেন, বরং ইহুদিরা নিজেদেরকে যাদের পূর্বসূরি দাবি করে, সেসব নবীদেরও পূর্বে। অতএব প্রমাণিত হল ইহুদিদের পূর্ব থেকে এ ভূমি বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহিম ও লুত আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿ وَنَجَّيۡنَٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا لِلۡعَٰلَمِينَ ٧١ ﴾ [ الانبياء : ٧١ ]
“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি”। [সূরা আম্বিয়া: (৭১)]
অতএব এখানে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পূর্ব থেকে বরকত ছিল। এ জন্য ইয়াবুসিউনরা [ইয়াবুসিউন: পূর্ব যুগের আরবের একটি বংশ। তারা জাযিরা আরাবিয়ার মাঝেই বসবাস করত। অতঃপর কিনআন বংশের কতক লোক সেখান থেকে প্রস্থান করে, তাদের সাথে তারাও প্রস্থান করে। তারাই সর্বপ্রথম কুদসে অবস্থান করে এবং সেখানে বাড়িঘর সবার পূর্বে তারাই নির্মাণ করে।] তার পাশে বসবাস করেছে, তার ভেতরে বসবাস করেনি, যেহেতু তা ইবাদতের স্থান।
মসজিদে আকসা: যেখানে অনেক সাহাবি প্রবেশ করেছেন। বসবাস করার নিয়তে, ইবাদত, ওয়ায ও শিক্ষা-দীক্ষার জন্য অনেক সাহাবি এখানে সফর করে এসেছেন। বিশেষ করে আবু উবাইদাহ ইব্নুল জাররাহ, যিনি শাম জয়কারী মুসলিম সেনাদের সেনাপতি ছিলেন। বেলাল ইব্ন রাবাহ ওমর ইব্নুল খাত্তাবের সাথে এ মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন ও তাতে আযান দিয়েছেন। মুয়ায ইব্ন জাবাল, আবু উবাইদাহ মৃত্যুর পর তাকে মানুষের খলিফা নির্ধারণ করেছিলেন। আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারি খালেদ ইব্নুল ওয়ালিদ, বায়তুল মাকদিসের বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। উবাদাহ ইব্ন সামেত, ফিলিস্তিনে তিনিই সর্বপ্রথম বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বায়তুল মাকদিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তামিম ইব্ন আউস আদ-দারি, আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম বায়তুল মাকদিসে এসেছেন এবং তার বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন। তাদের ছাড়া আরো অনেকে মসজিদে আকসায় এসেছেন ও বসবাস করেছেন”। [যেসব সাহাবিগণ বায়তুল মাকদিসে এসেছেন, তাদের সম্পর্কে আরো জানার জন্য দেখুন: “মুসিরুল গুরাম ইলা যিয়ারাতিল কুদসে ওয়াশ শাম”। এবং “আল-উনসুল জালিল, বি তারিখিল কুদসে ওয়াল খালিল”।]
মসজিদে আকসা: অন্যান্য শহর থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা মুসলিমগণ বিজয় করেন। এটাই একমাত্র শহর, যার চাবি গ্রহণ করার জন্য খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনা থেকে বের হয়ে কুদসে এসেছেন। ১৫হি.তে মসজিদে আকসার সীমানায় তিনি সালাতের জায়গা নির্মাণ করেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের হাতে বায়তুল মাকদিসের বিজয় দান করেছিলন। তিনি এ পবিত্র ভূমি ওয়াকফ করে দেন, যেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর তার আমানতদারী বজায় থাকে।
মসজিদে আকসা: যেখান থেকে রোম ও ক্রুসেডদের তাড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ক্রুসেডদের নয়টি আক্রমণ তারা প্রতিহত করেন, নুরুদ্দিন মাহমুদ যানকি ও সালাহুদ্দিন আইয়ূবীর নেতৃত্বে। তাদের ব্যতীত আরো অনেক মুসলিম শাসক, যারা মুসলিম মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তাদের হাতে (৯১) বছর পর বায়তুল মাকদিস দখলমুক্ত হয়। আকসা ও কুদসের অবস্থান মুসলিমের অন্তরে অনেক বেশী। এটা মুসলিমদের বরকতময় ভূমি। ইহাই আমাদের আকিদা। শত্রুরা যতই মিথ্যা প্রচার করুক, কখনোই আমাদের অন্তর থেকে তার মহব্বত মুছতে সক্ষম হবে না।
মসজিদে আকসা: যার প্রতি পূর্বাপর সকল মুসলিম আলেম মনোযোগ দিয়েছেন। মসজিদে আকসার ফজিলত সম্পর্কে পূর্বাপর রচনাকৃত গ্রন্থগুলো তার বৈশিষ্ট্যের বড় প্রমাণ। যার পঠন-পাঠন ও গবেষণা এখনো হয়। মসজিদে আকসার ওপর আন্তর্জাতিক মানের যে গবেষণা ও পর্যালোচনা হয়েছে, অন্যান্য ইসলামী শহরের ওপর সেরূপ হয়নি। আদর্শ পূর্বসূরিদের মসজিদে আকসা ও তার বরকতময় ভূমির প্রতি বিশেষ মনোযোগ ছিল। তারা লেখার দ্বারা কুদস, বায়তুল মাকদিস ও মসজিদে আকসার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সেখানে সফরের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, যেহেতু কুরআন ও সুন্নায় তার ফজিলত রয়েছে।
মসজিদে আকসার যত ফজিলত আমরা বর্ণনা করি, তা কখনো আল্লাহ তা‘আলা বাণীর অনুরূপ হবে না, তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
মসজিদে আকসার যদি এ ছাড়া অন্য কোন ফজিলত না হত, তবুও যথেষ্ট ছিল। এতে যাবতীয় বরকতের প্রমাণ রয়েছে। কারণ যার চারপাশে বরকত রয়েছে, তাতে অবশ্যই দ্বিগুণ বরকত আছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বও একটি বরকত।
মসজিদে আকসা: কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে যার উল্লেখ রয়েছে, সকল মুফাসসির যার ফজিলতের ওপর একমত। তাদের দলিল কুদস ও মসজিদে আকসা সম্পৃক্ত সূরা ইসরার শুধু প্রথম আয়াতই নয়, বরং কুরআনের অন্যান্য আয়াতও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَنَجَّيۡنَٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا لِلۡعَٰلَمِينَ ٧١ ﴾ [ الانبياء : ٧١ ]
“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি”। [সূরা আম্বিয়া: (৭১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ عَاصِفَةٗ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦٓ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيۡءٍ عَٰلِمِينَ ٨١ ﴾ [ الانبياء : ٨١ ]
“আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম”। [সূরা আম্বিয়া: (৮১)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ وَجَعَلۡنَا بَيۡنَهُمۡ وَبَيۡنَ ٱلۡقُرَى ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا قُرٗى ظَٰهِرَةٗ وَقَدَّرۡنَا فِيهَا ٱلسَّيۡرَۖ سِيرُواْ فِيهَا لَيَالِيَ وَأَيَّامًا ءَامِنِينَ ١٨ ﴾ [ سبا : ١٨ ]
“আর তাদের ও যে সব জনপদের মধ্যে আমি বরকত দিয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে আমি অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাতে ভ্রমণ করার ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। (তাদেরকে বলা হয়েছিল) ‘তোমরা এসব জনপদে রাত-দিন (যখন ইচ্ছা) নিরাপদে ভ্রমণ কর”। [সূরা সাবা: (১৮)]
অন্যত্র বলেন:
وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ ١ وَطُورِ سِينِينَ ٢ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ ٣
“কসম ‘তীন ও যায়তূন’ এর। কসম ‘সিনাই’ পর্বতের, কসম এই নিরাপদ নগরীর”। [সূরা তীন: (১-৩)]
কতক মুফাসসির উল্লেখ করেছেন তীন দ্বারা উদ্দেশ্য শাম দেশ ও জয়তুন দ্বারা উদ্দেশ্য বায়তুল মাকদিস।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
﴿ وَإِذۡ قُلۡنَا ٱدۡخُلُواْ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةَ فَكُلُواْ مِنۡهَا حَيۡثُ شِئۡتُمۡ رَغَدٗا وَٱدۡخُلُواْ ٱلۡبَابَ سُجَّدٗا وَقُولُواْ حِطَّةٞ نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطَٰيَٰكُمۡۚ وَسَنَزِيدُ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٥٨ ﴾ [ البقرة : ٥٨ ]
“আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নিচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব”। [সূরা বাকারা: (৫৮)]
অন্যত্র বলেন:
﴿ يَٰقَوۡمِ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡأَرۡضَ ٱلۡمُقَدَّسَةَ ٱلَّتِي كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡ وَلَا تَرۡتَدُّواْ عَلَىٰٓ أَدۡبَارِكُمۡ فَتَنقَلِبُواْ خَٰسِرِينَ ٢١ ﴾ [ المائدة : ٢١ ]
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় মসজিদ। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الْأَرْضِ أَوَّلَ ؟ قَالَ : " الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ، قَالَ : قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ، قَالَ : الْمَسْجِدُ الْأَقْصَى، قُلْتُ : كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا، قَالَ : أَرْبَعُونَ سَنَةً ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ بَعْدُ فَصَلِّهْ فَإِنَّ الْفَضْلَ فِيهِ»
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল জমিনে কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদে হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বলেন চল্লিশ বছর। অতঃপর যেখানে তোমাকে সালাত পায়, সেখানে তা আদায় কর, কারণ এতেই ফজিলত”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৩৬৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ জুলহজ ১৪১৯হি. মার্চ ১৯৯৯ইং।]
মসজিদে আকসা: বরকতময়, বরকতময় তার চারপাশ। মসজিদে আকসা বরকতময় ভূমির মসজিদ, যার চারপাশেও আল্লাহ বরকত দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
এ আয়াত সম্পর্কে বলা হয়, মসজিদে আকসার যদি অন্য কোন ফজিলত না থাকত এ আয়াত ব্যতীত তাহলেও যথেষ্ট ছিল। এখানে সকল বরকতের বর্ণনা রয়েছে। কারণ যার চারপাশ বরকতপূর্ণ, তা অবশ্যই দ্বিগুণ বরকতপূর্ণ। মসজিদে আকসাকে মসজিদে হারাম ও মসজদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াও একটি বরকত।
মসজিদে আকসা: মুসলিমদের প্রথম কিবলা। বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْكَعْبَةِ، فَأَنْزَلَ اللَّهُف قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِق، فَتَوَجَّهَ نَحْوَ الْكَعْبَةِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন, তবে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন যেন তাকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿ قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ ١٤٤ ﴾ [ البقرة : ١٤٤ ]
“আকাশের দিকে বারবার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখেছি”। [সূরা বাকারা: (১৪৪)] ফলে তিনি কাবার দিকে ফিরে গেলেন। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৯৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।] বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে তার মর্যাদা রহিত হয়নি, বরং তার মর্যাদা মুসলিমের অন্তর ও ইসলামী শরীয়তে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে।
মসজিদে আকসা: পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা থেকে এখানেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছিল। তিনি আল্লাহর দুই ঘর ও দুই কেবলার ফজিলত, মর্যাদা ও দর্শন লাভ করেন। আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ، طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، قَالَ : فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ، قَالَ : فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الأَنْبِيَاءُ، قَالَ : ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ، فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ : اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ، ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ»
“আমার নিকট বুরাক আনা হল, বুরাক সাদা চতুষ্পদ জন্তু গাধার চেয়ে লম্বা ও খচ্ছরের চেয়ে ছোট। তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে পা রাখে। তিনি বলেন: আমি তাতে সাওয়ার হয়ে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছি। তিনি বলেন: আমি তাকে সেই খুঁটির সাথে বাঁধলাম, যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত সালাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি বের হলাম। আমার নিকট জিবরিল আলাইহিস সালাম একটি মদ ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসলেন, আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আমাদের নিয়ে দুনিয়ার আসমানে আরোহণ করলেন...”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৫৯), প্রকাশ দারুস সালাম, রিয়াদ, দ্বিতীয় প্রকাশ মুহররম, ১৪২১হি. – এপ্রিল ২০০০ইং।]
মসজিদে আকসা: একমাত্র মসজিদ, যেখানে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমাদের নবী পর্যন্ত সবাই একত্র হয়েছেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইস্তেমা এখানেই সংগঠিত হয়েছে। ইসরার রাতে সকল নবীদের নিয়ে তিনি ইমাম হিসেবে সালাত আদায় করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আকসা মুসলিমদের নিদর্শন, উম্মতে মুহাম্মদ সেখানে ইমামতি করবে, শেষ নবী পূর্বের সকল নবীর পবিত্র নিদর্শনসমূহের উত্তরাধিকারী এবং তার রিসালাত সকল পবিত্র ভূমিকে অন্তর্ভুক্তকারী। আরো প্রমাণিত হয় সকল পবিত্র ভূমি দীনে ইসলামের মিরাস, যার ওয়ারিশ কোন দীন হতে পারেনি।
মসজিদে আকসা ব্যতীত দুনিয়ার কোথাও সকল নবী একত্র হননি, এ থেকেও মসজিদে আকসার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
ইমাম মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ، وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَايَ، فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا، فَكُرِبْتُ كُرْبَةً مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ قَطُّ، قَالَ : فَرَفَعَهُ اللَّهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ، إِلَّا أَنْبَأْتُهُمْ بِهِ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ، كَأَنَّهُ مِنَ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ " ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ يَعْنِي نَفْسَهُ، فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنً الصَّلَاةِ، قَالَ قَائِلٌ : يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ»
আমি হিজরে অবস্থান করছিলাম, আর কুরাইশরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, যা আমি ভালো করে আত্মস্থ করেনি। আমি খুব সমস্যায় পড়লাম, এরপূর্বে কখনো এরূপ সমস্যায় পড়িনি। তিনি বলেন আল্লাহ আমার সামনে মসজিদে আকসা উঁচিয়ে ধরলেন, আমি তা দেখতে ছিলাম। তারা আমাকে কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি, যার সংবাদ আমি দেয়নি। আমি নিজেকে নবীদের জমাতের মধ্যে দেখেছি, দেখলাম মুসা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, দেখতে হালকা গড়ন ও কঠিন স্বভাবের, যেন তিনি শানুআ বংশের কেউ। আরো দেখলাম ঈসা ইব্ন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে উরওয়া ইব্ন মাসউদ সাকাফীর। আরো দেখলাম ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে তোমাদের সাথীর, অর্থাৎ তার নিজের। অতঃপর সালাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। আমি যখন সালাত থেকে ফারেগ হলাম, কেউ আমাকে বলল হে মুহাম্মদ, তিনি জাহান্নামের ফেরেশতা তাকে সালাম করুন, আমি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম, তিনিই আমাকে প্রথমে সালাম করলেন”। [মুসলিম, হাদিস নং: (২৭৮), সহিহ মুসলিম, প্রকাশক দারুস সালাম।]
মসজিদে আকসা: যার ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন মসজিদে আকসার সাথে মুসলিমের অন্তর এতটা সম্পৃক্ত হবে যে, সে চাইবে তার জন্য ছোট একটু জায়গা হোক, যেখান থেকে সে মসজিদে আকসার দিকে উঁকি দিবে, অথবা যেখান থেকে সে মসজিদে আকসা দেখবে। এতটুকু জায়গা তার নিকট দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«تَذَاكَرْنَا وَنَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ، أَيُّهُمَا أَفْضَلُ : مَسْجِدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ، أَوْ مَسْجِدُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ : " صَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا، أَفْضَلُ مِنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ فِيهِ، وَلَنِعْمَ الْمُصَلَّى، وَلَيُوشِكَنَّ أَنْ لا يَكُونَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الأَرْضِ، حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا جَمِيعًا " ، أَوْ قَالَ : خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا »
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আলোচনা করলাম কোনটি উত্তম: মসজিদে রাসূলুল্লাহ না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত সেখানে চার সালাত থেকে উত্তম। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম জায়গা। হয়তো কোন ব্যক্তির জন্য তার ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা হবে, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যাবে, তার জন্য তা সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা তিনি বলেছেন: দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সবকিছু থেকে উত্তম হবে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: বিজয়ের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার বিজয়ের সংবাদ দিয়েছেন, যা তার নবুওয়তের আলামত। আউফ ইব্ন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তাবুক যুদ্ধে আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করি, তিনি চামড়ার তাবুতে ছিলেন। তিনি বলেন: কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি আলামত গণনা কর, তন্মধ্যে তিনি বলেন: অতঃপর বায়তুল মাকদিস বিজয় হবে...”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩১৭৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
মসজিদে আকসা: তায়েফায়ে মানসুরা বা সাহায্য প্রাপ্ত দলের আশ্রয়স্থল ও মুমিনদের মধ্যবর্তী ঘর। ইমরান ইব্ন হাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ »
“আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর জিহাদ করতে থাকবে। তাদের সাথে যারা শত্রুতা করবে, তাদের ওপর তারা বিজয়ী হবে, অবশেষে তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি মাসিহ দজ্জালের সাথে জিহাদ করবে”। [আহমদ, আবু দাউদ, হাকেম, তাবরানি ফিল কাবির, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (২৪৮৪), সুনানে আবু দাউদ, প্রকাশক মাকতাবাতুল মাআরেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
আমরা জানি ঈসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনে অবস্থিত বাবে লুদ্দে মাসিহকে পাকড়াও করে হত্যা করবেন।
মসজিদে আকসা: সেই ভূমি যেখানে বান্দাদের উপস্থিতি ও যেখান থেকে পুনরুত্থান ঘটবে। মায়মুনা বিনতে সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর নবী বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বলেন, তিনি বললেন:
« أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَالْمَنْشَرِ»
“উপস্থিতি ও পুনরুত্থানের স্থান”। [আহমদ, ইব্ন মাজাহ, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন রিবঈ রচিত: ফাদায়েলে শাম ও দিমাস্কের হাদিস।]
মসজিদে আকসা: যেখানে দজ্জাল থেকে নিরাপত্তার জন্য মুসলিমরা আশ্রয় নিবে। দজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দজ্জাল সম্পর্কে বলেন:
«عَلَامَتُهُ يَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ أَرْبعِينَ صَباحًا، يَبلُغُ سُلْطَانُهُ كُلَّ مَنْهَلٍ، لَا يَأْتِي أَرْبعَةَ مَسَاجِدَ : الْكَعْبةَ، وَمَسْجِدَ الرَّسُولِ، وَالْمَسْجِدَ الْأَقْصَى، وَالطُّورَ»
“... তার নিদর্শন হল সে জমিনে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। তার রাজত্ব প্রত্যেক ঘাটেই বিস্তার করবে। চারটি জায়গায় সে প্রবেশ করতে পারবে না, মসজিদে কাবা, মসজিদুর রাসূল, মসজিদে আকসা ও তূর...”। [আহমদ, হাদিস নং: (২৪০৮৫), (২৪০৮৪), (২৪০৮৩), (২৩৪৭৮), এ হাদিসের সনদ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। দেখুন: মুসনাদে আহমদ, প্রকাশক বায়তুল আফকারিদ দাওলিয়াহ, (২০০৪ইং)]
মসজিদে আকসা: যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ। সকল আলেম একমত যে, মসজিদে আকসা যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা বৈধ নয়, তন্মধ্যে মসজিদে আকসা অন্যতম। এ তিনটি মসজিদের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা অন্যান্য মসজিদের নেই। বুখারি ও মুসলিম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ، الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى»
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না, মসজিদে হারাম, মসজিদুর রাসূল ও মসজিদে আকসা”। [বুখারি, হাদিস নং: (১১৮৯), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
তাই আমরা দেখি অনেক সাহাবিই মসজিদে আকসায় সালাত আদায়ের জন্য দীর্ঘ সফর করেছেন। পরবর্তীতে আদর্শ পূর্বসূরিগণ সেখানে গিয়েছেন, ইলমের দরস ও ছাত্রদের কারণে মুখরিত হয়েছিল মসজিদে আকসা।
ইমাম নববি রহ. বলেন: “এ হাদিসে তিনটি মসজিদের ফজিলত ও অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা রয়েছে। কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ, তাতে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ ও তার জন্য সফর করা বৈধ। আলেমগণ বলেন: এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে সফর করে যাওয়া ফজিলতের নয়। আমাদের মতাবলম্বী শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-জু্ওয়াইনি বলেন: “এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের জন্য সফর করা হারাম”। [আল-মিনহাজ, শারহু সহিহে মুসলিম।]
হাফেজ ইব্ন হাজার বলেন: “হাদিসে এ তিনটি মসজিদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ। প্রথম মসজিদ মুসলিমদের কেবলা, সেখানেই তারা হজ করে। দ্বিতীয় মসজিদ পূর্ববর্তী উম্মতের কেবলা। তৃতীয় মসজিদ তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে”। [ফাতহুল বারি: (৩/৬০৩)]
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বায়তুল মাকদিসের যিয়ারত ও তাতে সালাত আদায় করার হুকুম সম্পর্কে বলেন: বুখারি ও মুসলিমে প্রমাণিত যে, তিনটি মসজিদ ব্যতীত (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না... বুখারি ও মুসলিম এ হাদিস আবু সাইদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। অন্যান্য সনদেও বর্ণিত রয়েছে। এ হাদিস প্রসিদ্ধ ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। সকল আলেম এ হাদিস সহিহ বলেছেন, গ্রহণ করেছেন ও তার সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। মুসলিম উম্মার সকল আলেম একমত যে, ইবাদতের জন্য মসজিদে আকসায় সফর করা মুস্তাহাব। ইব্ন ওমর এখানে এসে সালাত আদায় করতেন”। [মাজমু ফতোয়া শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ: (৫-৬/২৭), দ্বিতীয় প্রকাশ (১৩৯৮হি.) আব্দুর রহমান আননাজদি কর্তৃক সংকলিত ও সজ্জিত।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাতের সাওয়াব বর্ধিত হয়। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আলোচনা করলাম উভয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম: মসজিদুর রাসূল না বায়তুল মাকদিস? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার মসজিদে এক সালাত তাতে চার সালাতের ফজিলত রাখে। তবে মসজিদে আকসা সালাতের জন্য উত্তম স্থান। এমন সময় আসবে যখন ব্যক্তির জন্য ঘোড়ার রশির সমপরিমাণ জায়গা, যেখান থেকে বায়তুল মাকদিস দেখা যায়, সমগ্র দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। তিনি বলেন: অথবা বলেছেন: তার জন্য উত্তম হবে দুনিয়া ও তাতে বিদ্যমান সবকিছু থেকে”। [হাকেম, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি ও আলবানি তার সমর্থন করেছেন।]
মসজিদে আকসা: যেখানে সালাত আদায় করা ফজিলতপূর্ণ। ইমাম নাসায়ি আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্নুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সুলাইমান ইব্ন দাউদ বায়তুল মাকদিস নির্মাণ শেষে আল্লাহর তিনটি দোয়া করেছেন: তার বিচারের ন্যায় বিচারের তাওফিক পাওয়া। এমন বাদশাহি লাভ করা তার পরবর্তী যা কারো লাভ হবে না। এবং যে কেউ এ মসজিদে সালাতের উদ্দেশ্যে আসবে, সে যেন তার মায়ের প্রসবের দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “প্রথম দু’টি তাকে দেয়া হয়েছে। আর আমি আশা করি আমাকে তৃতীয়টি প্রদান করা হয়েছে”। [নাসায়ি, ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং: (১৪০৮), দেখুন: সুনানে নাসায়ি, প্রকাশক মাকতাবাতুল মায়ারেফ, রিয়াদ, প্রথম প্রকাশ।]
মসজিদে আকসা: কুদস ও ফিলিস্তিনে অবিস্থত, আদি যুগ থেকেই পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰقَوۡمِ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡأَرۡضَ ٱلۡمُقَدَّسَةَ ٢١ ﴾ [ المائدة : ٢١ ]
“হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর”। [সূরা মায়েদা: (২১)]
ফিলিস্তিনে বনি ইসরাইলের প্রবেশ করার পূর্বে মুসা আলাইহিস সালাম নিজ কওমকে এ নির্দেশ করেছেন, বরং ইহুদিরা নিজেদেরকে যাদের পূর্বসূরি দাবি করে, সেসব নবীদেরও পূর্বে। অতএব প্রমাণিত হল ইহুদিদের পূর্ব থেকে এ ভূমি বরকতময়। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহিম ও লুত আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন:
﴿ وَنَجَّيۡنَٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَا لِلۡعَٰلَمِينَ ٧١ ﴾ [ الانبياء : ٧١ ]
“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি”। [সূরা আম্বিয়া: (৭১)]
অতএব এখানে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পূর্ব থেকে বরকত ছিল। এ জন্য ইয়াবুসিউনরা [ইয়াবুসিউন: পূর্ব যুগের আরবের একটি বংশ। তারা জাযিরা আরাবিয়ার মাঝেই বসবাস করত। অতঃপর কিনআন বংশের কতক লোক সেখান থেকে প্রস্থান করে, তাদের সাথে তারাও প্রস্থান করে। তারাই সর্বপ্রথম কুদসে অবস্থান করে এবং সেখানে বাড়িঘর সবার পূর্বে তারাই নির্মাণ করে।] তার পাশে বসবাস করেছে, তার ভেতরে বসবাস করেনি, যেহেতু তা ইবাদতের স্থান।
মসজিদে আকসা: যেখানে অনেক সাহাবি প্রবেশ করেছেন। বসবাস করার নিয়তে, ইবাদত, ওয়ায ও শিক্ষা-দীক্ষার জন্য অনেক সাহাবি এখানে সফর করে এসেছেন। বিশেষ করে আবু উবাইদাহ ইব্নুল জাররাহ, যিনি শাম জয়কারী মুসলিম সেনাদের সেনাপতি ছিলেন। বেলাল ইব্ন রাবাহ ওমর ইব্নুল খাত্তাবের সাথে এ মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন ও তাতে আযান দিয়েছেন। মুয়ায ইব্ন জাবাল, আবু উবাইদাহ মৃত্যুর পর তাকে মানুষের খলিফা নির্ধারণ করেছিলেন। আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারি খালেদ ইব্নুল ওয়ালিদ, বায়তুল মাকদিসের বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। উবাদাহ ইব্ন সামেত, ফিলিস্তিনে তিনিই সর্বপ্রথম বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বায়তুল মাকদিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তামিম ইব্ন আউস আদ-দারি, আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম বায়তুল মাকদিসে এসেছেন এবং তার বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন। তাদের ছাড়া আরো অনেকে মসজিদে আকসায় এসেছেন ও বসবাস করেছেন”। [যেসব সাহাবিগণ বায়তুল মাকদিসে এসেছেন, তাদের সম্পর্কে আরো জানার জন্য দেখুন: “মুসিরুল গুরাম ইলা যিয়ারাতিল কুদসে ওয়াশ শাম”। এবং “আল-উনসুল জালিল, বি তারিখিল কুদসে ওয়াল খালিল”।]
মসজিদে আকসা: অন্যান্য শহর থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা মুসলিমগণ বিজয় করেন। এটাই একমাত্র শহর, যার চাবি গ্রহণ করার জন্য খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনা থেকে বের হয়ে কুদসে এসেছেন। ১৫হি.তে মসজিদে আকসার সীমানায় তিনি সালাতের জায়গা নির্মাণ করেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের হাতে বায়তুল মাকদিসের বিজয় দান করেছিলন। তিনি এ পবিত্র ভূমি ওয়াকফ করে দেন, যেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর তার আমানতদারী বজায় থাকে।
মসজিদে আকসা: যেখান থেকে রোম ও ক্রুসেডদের তাড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ক্রুসেডদের নয়টি আক্রমণ তারা প্রতিহত করেন, নুরুদ্দিন মাহমুদ যানকি ও সালাহুদ্দিন আইয়ূবীর নেতৃত্বে। তাদের ব্যতীত আরো অনেক মুসলিম শাসক, যারা মুসলিম মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তাদের হাতে (৯১) বছর পর বায়তুল মাকদিস দখলমুক্ত হয়। আকসা ও কুদসের অবস্থান মুসলিমের অন্তরে অনেক বেশী। এটা মুসলিমদের বরকতময় ভূমি। ইহাই আমাদের আকিদা। শত্রুরা যতই মিথ্যা প্রচার করুক, কখনোই আমাদের অন্তর থেকে তার মহব্বত মুছতে সক্ষম হবে না।
মসজিদে আকসা: যার প্রতি পূর্বাপর সকল মুসলিম আলেম মনোযোগ দিয়েছেন। মসজিদে আকসার ফজিলত সম্পর্কে পূর্বাপর রচনাকৃত গ্রন্থগুলো তার বৈশিষ্ট্যের বড় প্রমাণ। যার পঠন-পাঠন ও গবেষণা এখনো হয়। মসজিদে আকসার ওপর আন্তর্জাতিক মানের যে গবেষণা ও পর্যালোচনা হয়েছে, অন্যান্য ইসলামী শহরের ওপর সেরূপ হয়নি। আদর্শ পূর্বসূরিদের মসজিদে আকসা ও তার বরকতময় ভূমির প্রতি বিশেষ মনোযোগ ছিল। তারা লেখার দ্বারা কুদস, বায়তুল মাকদিস ও মসজিদে আকসার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সেখানে সফরের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, যেহেতু কুরআন ও সুন্নায় তার ফজিলত রয়েছে।
মসজিদে আকসার যত ফজিলত আমরা বর্ণনা করি, তা কখনো আল্লাহ তা‘আলা বাণীর অনুরূপ হবে না, তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [ الاسراء : ١ ]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা ইসরা: আয়াত নং: (১)]
মসজিদে আকসার যদি এ ছাড়া অন্য কোন ফজিলত না হত, তবুও যথেষ্ট ছিল। এতে যাবতীয় বরকতের প্রমাণ রয়েছে। কারণ যার চারপাশে বরকত রয়েছে, তাতে অবশ্যই দ্বিগুণ বরকত আছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে রাসূল ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বও একটি বরকত।
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জয় করার সুসংবাদ দিয়েছেন! এবং তার ফজিলত বর্ণনা করছেন এভাবে: “মসজিদে আকসা সালাতের জন্য সুন্দর জায়গা”?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ আল্লাহ তার চারপাশে বরকত দান করেছেন, বরকত শব্দটি কুরআনুল কারিমে ফিলিস্তিন ও বায়তুল মাকদিসের জন্য সাত বার ব্যবহার করা হয়েছে। আসমান তো পুরোটাই বরকতময়?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের বলছেন, যখন তারা প্রশ্ন করেছিল: কোনটি উত্তম, মসজিদে রাসূলুল্লাহ না বায়তুল মাকদিস? তিনি বলেন: “আমার এ মসজিদে এক সালাত সেখানে চার সালাতের বরাবর”?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ সেখানে মুসলিমের সালাতের সাওয়াব বর্ধিত হয়। সাহাবায়ে কেরাম সেখানে সফর করেছেন। মসজিদে আকসাই সাহায্য প্রাপ্ত মুজাহিদদের আবাস্থল, মুমিনদের নিরাপদ জায়গা এবং হাশর ও পুনরুত্থানের স্থান?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ তা নবীদের ঠিকানা, তাওহীদের দাওয়াতের পূণ্যভূমি?! সেখানে আল্লাহর নবীর ইসরা হয়, সেখান থেকে তিনি ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করেন?! নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না, মুসলিমগণ সেখানে আশ্রয় নিবে”?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ হাদিসে স্পষ্ট এসেছে মসজিদে হারামের পর দুনিয়ার বুকে দ্বিতীয় মসজিদ মসজিদে আকসা?! আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল, সর্বপ্রথম দুনিয়ার বুকে কোন মসজিদ নির্মাণ হয়? তিনি বলেন: মসজিদুল হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত? তিনি বলেন: চল্লিশ বছর, অতঃপর যেখানেই তোমার সালাতের সময় হয় সালাত আদায় করে নাও, এতেই ফজিলত”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৩৬৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ “সফর করা যাবে না” হাদিসটি বিশুদ্ধ ও মুতাওয়াতির। একদল সাহাবি থেকে বর্ণিত, যাদের থেকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন। সকল উম্মত যার ওপর একমত। আজ পর্যন্ত সালাফ-ফালাফ সবাই তার ওপর আমল করেছেন?!
কোন মুসলিমের অন্তরে সন্দেহ নেই, মসজিদে আকসাই মসজিদে কুদস। সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছে।
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ আমাদের জানা নেই, কোন সাহাবি মসজিদে আকসা অর্থ আসমানের কোন মসজিদ বুঝেছেন। মসজিদে আকসার অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মসজিদই বলেছেন। যারা মসজিদে আকসার যিয়ারত করতেন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর সত্যতা স্বীকার করতেন। আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন:
﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [ النجم : ٣، ٤ ]
“আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়”। [সূরা আন-নাজম: (২-৩)]
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ একের পর এক উম্মতে মুসলিমার সবাই জানে যে, মসজিদে কুদস-ই মসজিদে আকসা, অন্য কোন মসজিদ তাদের কল্পনাতেও নেই।
তাই ইহুদি গবেষক, যারা তাদের অগ্রজ প্রাচ্যবিদ লেখক ও রাফেজিদের ন্যায় কথা বলেন, তাদের সবাইকে আমরা বলি: কোন সাহাবি, তাবেয়ি ও মুসলিম উম্মাহর কোন আলেম আপনাদের ন্যায় বলেননি। তারা আয়াত ও হাদিস থেকে মসজিদে আকসা দ্বারা বায়তুল মাকদিসই বুঝেছেন। চৌদ্দশত বছর থেকে আজ পর্যন্ত সকল সাহাবি, তাবেয়ি, মুহাদ্দিস, ফকিহ ও আলেম এ অর্থই গ্রহণ করেছেন, কেউ অস্বীকার করেননি। অতঃপর আপনাদের আবির্ভাব হল, যারা মনে করেন মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ!
আপনারা যতই মিথ্যার বিষ বাষ্প ছড়ান, কখনো সফল হবেন না। শাম দেশ বিজয়ের পূর্বে মুসলিমদের অন্তর তার বিজয়ের জন্য উন্মুখ ছিল। সাহাবায়ে কেরাম বুঝতেন কুরআনুল কারিমে পবিত্র ভূমির অর্থ কুদস ও ফিলিস্তিনের ভূমি।
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করছি আমরা নিজেরা মসজিদে আকসার নামকরণ করিনি, বরং তার নামকরণ করেছেন সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত হয়েছিল, এটা আমাদের ধারণা নয়, বরং অকাট্য সত্য। আল্লাহর কালাম ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতে তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ আল্লাহ তার চারপাশে বরকত দান করেছেন, বরকত শব্দটি কুরআনুল কারিমে ফিলিস্তিন ও বায়তুল মাকদিসের জন্য সাত বার ব্যবহার করা হয়েছে। আসমান তো পুরোটাই বরকতময়?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের বলছেন, যখন তারা প্রশ্ন করেছিল: কোনটি উত্তম, মসজিদে রাসূলুল্লাহ না বায়তুল মাকদিস? তিনি বলেন: “আমার এ মসজিদে এক সালাত সেখানে চার সালাতের বরাবর”?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ সেখানে মুসলিমের সালাতের সাওয়াব বর্ধিত হয়। সাহাবায়ে কেরাম সেখানে সফর করেছেন। মসজিদে আকসাই সাহায্য প্রাপ্ত মুজাহিদদের আবাস্থল, মুমিনদের নিরাপদ জায়গা এবং হাশর ও পুনরুত্থানের স্থান?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ তা নবীদের ঠিকানা, তাওহীদের দাওয়াতের পূণ্যভূমি?! সেখানে আল্লাহর নবীর ইসরা হয়, সেখান থেকে তিনি ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করেন?! নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দজ্জাল সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না, মুসলিমগণ সেখানে আশ্রয় নিবে”?!
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ হাদিসে স্পষ্ট এসেছে মসজিদে হারামের পর দুনিয়ার বুকে দ্বিতীয় মসজিদ মসজিদে আকসা?! আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল, সর্বপ্রথম দুনিয়ার বুকে কোন মসজিদ নির্মাণ হয়? তিনি বলেন: মসজিদুল হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত? তিনি বলেন: চল্লিশ বছর, অতঃপর যেখানেই তোমার সালাতের সময় হয় সালাত আদায় করে নাও, এতেই ফজিলত”। [বুখারি, হাদিস নং: (৩৩৬৬), সহিহ বুখারি, প্রকাশক দারুস সালাম, রিয়াদ।]
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ “সফর করা যাবে না” হাদিসটি বিশুদ্ধ ও মুতাওয়াতির। একদল সাহাবি থেকে বর্ণিত, যাদের থেকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন। সকল উম্মত যার ওপর একমত। আজ পর্যন্ত সালাফ-ফালাফ সবাই তার ওপর আমল করেছেন?!
কোন মুসলিমের অন্তরে সন্দেহ নেই, মসজিদে আকসাই মসজিদে কুদস। সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছে।
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ আমাদের জানা নেই, কোন সাহাবি মসজিদে আকসা অর্থ আসমানের কোন মসজিদ বুঝেছেন। মসজিদে আকসার অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মসজিদই বলেছেন। যারা মসজিদে আকসার যিয়ারত করতেন, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর সত্যতা স্বীকার করতেন। আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন:
﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [ النجم : ٣، ٤ ]
“আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়”। [সূরা আন-নাজম: (২-৩)]
কিভাবে বলা হয় মসজিদে আকসা আসমানে! অথচ একের পর এক উম্মতে মুসলিমার সবাই জানে যে, মসজিদে কুদস-ই মসজিদে আকসা, অন্য কোন মসজিদ তাদের কল্পনাতেও নেই।
তাই ইহুদি গবেষক, যারা তাদের অগ্রজ প্রাচ্যবিদ লেখক ও রাফেজিদের ন্যায় কথা বলেন, তাদের সবাইকে আমরা বলি: কোন সাহাবি, তাবেয়ি ও মুসলিম উম্মাহর কোন আলেম আপনাদের ন্যায় বলেননি। তারা আয়াত ও হাদিস থেকে মসজিদে আকসা দ্বারা বায়তুল মাকদিসই বুঝেছেন। চৌদ্দশত বছর থেকে আজ পর্যন্ত সকল সাহাবি, তাবেয়ি, মুহাদ্দিস, ফকিহ ও আলেম এ অর্থই গ্রহণ করেছেন, কেউ অস্বীকার করেননি। অতঃপর আপনাদের আবির্ভাব হল, যারা মনে করেন মসজিদে আকসা আসমানের একটি মসজিদ!
আপনারা যতই মিথ্যার বিষ বাষ্প ছড়ান, কখনো সফল হবেন না। শাম দেশ বিজয়ের পূর্বে মুসলিমদের অন্তর তার বিজয়ের জন্য উন্মুখ ছিল। সাহাবায়ে কেরাম বুঝতেন কুরআনুল কারিমে পবিত্র ভূমির অর্থ কুদস ও ফিলিস্তিনের ভূমি।
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করছি আমরা নিজেরা মসজিদে আকসার নামকরণ করিনি, বরং তার নামকরণ করেছেন সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত হয়েছিল, এটা আমাদের ধারণা নয়, বরং অকাট্য সত্য। আল্লাহর কালাম ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতে তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
মসজিদে আকসার ফজিলত ও তার মর্যাদার ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন সন্দেহ নেই। আয়াতে যে মসজিদে আকসার উল্লেখ রয়েছে হুবহু সে মসজিদই বায়তুল মাকদিসে বিদ্যমান। কিন্তু শিয়ারা মসজিদে আকসাকে সে নজরে দেখে না, যে নজরে আহলে সুন্নাহগণ দেখেন। তাদের অনেকে মসজিদে আকসা ও কুদসের ফজিলতের স্বীকৃতি দিতেই নারাজ। কারণ মসজিদে আকসার বিজয় করেছেন ওমর ইব্নুল খাত্তাব, উমাইয়া খলিফাগণ তার সংস্কার করেন নতুনভাবে। সালাহুদ্দিন আইয়ূবী পুনরায় তা ক্রুসেডদের হাত থেকে মুক্ত করেন। এবং তাদেরকে মুসলিম দেশ থেকে বিতাড়িত করেন।
এক: তাদের ধারণা মসজিদে কুদস মসজিদে আকসা নয়, বরং সূরা ইসরার আয়াতে উল্লেখিত মসজিদ বায়তুল মামুর, যা চতুর্থ আসমানে বিদ্যমান, সেখানেই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা হয়েছে!
তাদের ধারণা ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসা অন্যতম তিনটি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যেখানে সফর করা বৈধ। শিয়ারা বলে উমাইয়ারা এ মসজিদ নির্মাণ করে তার পবিত্রতা প্রচার করে ও মানুষদেরকে সেখানে হজের নির্দেশ দেয়। উমাইয়ারা তার যিয়ারতের জন্য অনেক হাদিস তৈরি করে। রাজনৈতিক কারণে শিয়া নেতৃবৃন্দ মসজিদে আকসাকে পবিত্র বলেন, আকিদার জন্য নয়।
দুই: তাদের কেউ মনে করেন, যদিও নির্ভরযোগ্য কিতাব, তাফসির ও ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, মসজিদে আকসা প্রকৃত পক্ষে আসমানের একটি মসজিদ, তবুও ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসার মর্যাদা কম নয়, তার ওপর হামলা মোকাবেলা করা ও তাকে মুক্ত করার গুরুত্ব অপরিসীম, যেহেতু মুসলিমদের একটি মসজিদ। কিন্তু মসজিদে কুফা, কারবালা ও কুম মসজিদে আকসা থেকে অধিক ফজিলতের অধিকারী।
তিন: তাদের কারো ধারণা, মসজিদে কুদসই মসজিদে আকসা, যার উল্লেখ সূরা ইসরার প্রথমে আয়াতে রয়েছে। অন্যান্য মসজিদের ওপর তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী ও মসজিদে কুফা ব্যতীত! তবে মসজিদে কুফা, কারবালা ও অন্যান্য পবিত্র স্থানসমূহের সামনে মসজিদে আকসার ফজিলত উল্লেখ করা যাবে না।
তাদের তিনটি অভিমত থেকে প্রমাণিত হয়, মসজিদে কুফা, মসজিদে কারবালা, হুসাইনের কবর ও কুব্বা সামেরা মসজিদে আকসা থেকে অধিক ফজিলতপূর্ণ। হোক তা আসমানে বা জমিনে! এখানে আমাদের আশ্চর্য লাগে, ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা দানা বাঁধে ও স্পষ্ট বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়...
আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। আশা করি তাদের সামনে আমরা সত্য তুলে ধরার তাওফিক পেয়েছি ও তাদের ধারণাগুলো খণ্ডন করতে সক্ষম হয়েছি।
সর্বশেষ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আমার এ আমাল সুন্দরভাবে কবুল করুন এবং একমাত্র তার জন্যই গ্রহণ করুন। যদি ভাল করি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যদি খারাপ করি, আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে...
সকল প্রশংসা দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
সমাপ্ত
তাদের ধারণা ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসা অন্যতম তিনটি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যেখানে সফর করা বৈধ। শিয়ারা বলে উমাইয়ারা এ মসজিদ নির্মাণ করে তার পবিত্রতা প্রচার করে ও মানুষদেরকে সেখানে হজের নির্দেশ দেয়। উমাইয়ারা তার যিয়ারতের জন্য অনেক হাদিস তৈরি করে। রাজনৈতিক কারণে শিয়া নেতৃবৃন্দ মসজিদে আকসাকে পবিত্র বলেন, আকিদার জন্য নয়।
দুই: তাদের কেউ মনে করেন, যদিও নির্ভরযোগ্য কিতাব, তাফসির ও ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, মসজিদে আকসা প্রকৃত পক্ষে আসমানের একটি মসজিদ, তবুও ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসার মর্যাদা কম নয়, তার ওপর হামলা মোকাবেলা করা ও তাকে মুক্ত করার গুরুত্ব অপরিসীম, যেহেতু মুসলিমদের একটি মসজিদ। কিন্তু মসজিদে কুফা, কারবালা ও কুম মসজিদে আকসা থেকে অধিক ফজিলতের অধিকারী।
তিন: তাদের কারো ধারণা, মসজিদে কুদসই মসজিদে আকসা, যার উল্লেখ সূরা ইসরার প্রথমে আয়াতে রয়েছে। অন্যান্য মসজিদের ওপর তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী ও মসজিদে কুফা ব্যতীত! তবে মসজিদে কুফা, কারবালা ও অন্যান্য পবিত্র স্থানসমূহের সামনে মসজিদে আকসার ফজিলত উল্লেখ করা যাবে না।
তাদের তিনটি অভিমত থেকে প্রমাণিত হয়, মসজিদে কুফা, মসজিদে কারবালা, হুসাইনের কবর ও কুব্বা সামেরা মসজিদে আকসা থেকে অধিক ফজিলতপূর্ণ। হোক তা আসমানে বা জমিনে! এখানে আমাদের আশ্চর্য লাগে, ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা দানা বাঁধে ও স্পষ্ট বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়...
আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। আশা করি তাদের সামনে আমরা সত্য তুলে ধরার তাওফিক পেয়েছি ও তাদের ধারণাগুলো খণ্ডন করতে সক্ষম হয়েছি।
সর্বশেষ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আমার এ আমাল সুন্দরভাবে কবুল করুন এবং একমাত্র তার জন্যই গ্রহণ করুন। যদি ভাল করি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যদি খারাপ করি, আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে...
সকল প্রশংসা দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন